ওর লাশের ছবিটার দিকে এখনও ঠিক করে তাকাতে পারি না। কেন জানি মনে হয় লাশটা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। খুব করুন মুখে। বলছে, “মামা-ওরা আমারে মেরে ফেললো! আপনারা কী করলেন?” ওর বীভৎস লাশটার রক্তাক্ত চেহারার মধ্যে একটা মায়াভরা চেহারা উঁকি দেয়, স্বচ্ছ সুন্দর একটা হাসি দেখতে পাই। ও মারা যাবার পরে মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখতাম ওকে, যেন চলে যাচ্ছে কোথাও। ফিরে তাকিয়ে হেসে বলছে, আসিফ মামা, ফোন দিয়েন কিন্তু!
আমার বন্ধু ছিল সে। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুই। ফোন দিতো মাঝে মাঝেই, একবার ফোন দিলে আর ফোন ছাড়তে চাইতো না। দুঘণ্টা তিনঘণ্টা আলাপ। মিশরে চার হাজার বছর আগে কী হয়েছিল, তিব্বতে নারীদের অবস্থা এখন কেমন, পুরান ঢাকার পুরনো বিল্ডিংগুলোর আর্কিটেকচার কেমন, হিন্দুদের উপরে আক্রমণগুলোর কারণ কী কী হতে পারে, আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ থেকে কীভাবে বের হয়ে গেল, জাকির নায়েক কতবড় বেকুবের মত একটা কথা বলেছে এইসব নানান কথাবার্তা। দিনের পর দিন ফোনেই আড্ডা। দেখা হলেও তুমুল আড্ডা। কখনো ধানমণ্ডি রবীন্দ্র সরোবরে, কখনো মিরপুর বিহারী ক্যাম্পের পাশে কাবাবের দোকানে। আমাকে দেখলেই ছুটে আসতো, মনে হতো ওর কথাগুলো ও সবাইকে বলতে পারতো না। আমাকে পেয়ে গেলে মন খুলে কথা বলতে শুরু করতো। আমিও শুনতাম, অনেকক্ষণ ধরে ওর নানান বই পড়ার খবর নিতাম। কোথায় পুরানো বই কমদামে কিনতে পাওয়া যায় সে খবর দিতাম, সে খোঁজ পেলেই সেখানে হানা দিতো।
সেই ২০০৬ বা ২০০৭ সালের কথা। ব্লগার রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবার সাথে পরিচয় হয়েছিল। সে সময় খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। আপাদ মস্তক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অন্ধ ভক্ত। এবং জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার। এই বিষয়ে কোন ছাড় দেবে না সে। আমি বলতাম জামাত শিবির যারা করে তারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, ধর্ম ব্যবস্থা, সমাজ কাঠামোর ফলাফল। মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটলে এসব আস্তে আস্তে কমে যাবে। সে বলতো না, আগে এদের উচ্ছেদ করতে হবে, যেভাবেই হোক। এই নিয়েও তর্ক হতো। অনেক অনেক তর্ক।
অনেকদিন পরে নানান মতাদর্শগত দ্বন্দ্বে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়, আমি তাকে ব্লকও করি ফেসবুকে। তার সাথে আমার আর মিলতো না। প্রথম দিকে যখন একসাথে লিখতাম, একসাথে আড্ডা দিতাম, সেসময়ে ওর লেখাগুলো আমার চমৎকার মনে হতো। বৃহন্নলাদের অধিকার নিয়ে লিখতো, রাস্তায় পরে থাকা প্রতিবন্ধী কিংবা বেশ্যাদের জন্যেও তার মমতা ছিল অনেক। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার সর্বপরি ধর্মের যৌক্তিক বিরোধিতায় ছিল পারদর্শী। পরের দিকে যাদের সাথে মিশেছে, যাদের সাথে আড্ডা দিতো, যা লিখতো, আমার সাথে মিলতো না। আমার ভাল লাগতো না। তবে আমার যে ভাল লাগতেই হবে এমন কোন কথাও নেই। কে কী লিখবে, কোন দলকে সমর্থন করবে, লেখার মান কেমন হবে, তা তার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমি তার লেখার স্বাধীনতাকে সম্মান করতাম। এমনকি আমার বিরুদ্ধে লিখলেও।
কিন্তু তারপরেও আমার বন্ধুই ছিল। পরের দিকে আমাকে আর তেমন পছন্দ করতো না সে, আমি জেনেছিলাম। তারপরেও আমার বন্ধুই ছিল। ইতিহাস সম্পর্কে দারুণ জ্ঞান ছিল, মাঝে মাঝে তর্ক করতে গেলে বোঝা যেত সে ইতিহাস নিয়ে সে পড়ালেখা করে। ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার মানুষ ছিল, মাঝে মাঝে ধর্ম নিয়ে বেমক্কা প্রশ্ন করতে ভালবাসতো। আমাকে বলেছিল, স্কুলে থাকতে- কলেজে থাকতে নানান কৌতূহলী প্রশ্ন করে হুজুর মোল্লাদের ঘোল খাইয়ে দিতে সে ভালবাসতো। যার উত্তর কেউ দিতে পারতো না। কিন্তু সে আসলে তখনও নাস্তিক ছিল না। ধর্ম এবং মিথলজী সম্পর্কে আগ্রহী ছিল বটে, তবে নাস্তিক নয়। অনেকদিন পরে সামহোয়্যার ইন ব্লগে আমার একটা পোস্টে সে লিখেছিল, তার নাস্তিক হবার পিছনে আমার কিছুটা ভূমিকা ছিল। আমার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই সে ধর্মে অবিশ্বাসী হতে শুরু করে, এবং প্রকাশ্যে নিজের অবিশ্বাসের ঘোষণাও দিতে শুরু করে। ওর মৃত্যু আমাকে বারবার তাই অপরাধী করে দেয়।
ওকে মহামানব কিংবা সাক্ষাৎ শয়তান বানাবার দ্বিমুখী প্রক্রিয়া দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সে মহামানব কিংবা শয়তান ছিল না। খুব সাধারণ একজন তরুণ, সাধারণ একজন হাসিখুশি বিনয়ী মানুষ ছিল। যারা মহামানব কিংবা শয়তান বানাতে চায়, তারা তার লাশ বিক্রি করতে চায়, তারা কসাইয়ের মত তার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশ ভাগ বাটোয়ারা করে বাজারে তুলতে চায়। তার অসংখ্য ভাল দিক ছিল, ছিল অসংখ্য দুর্বলতাও। সবকিছু মিলিয়েই একজন মানুষ ছিল সে, মানবিক বোধ আর মুক্তচিন্তার একজন কর্মী। তার স্বপ্ন ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশ, কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেও এখন সবাই ভয় পায়।
ওর মৃত্যুর পরে অনেকগুলো চেহারা পালটে যেতে দেখেছি, দেখে হতবাক হয়েছি। অনেক নাস্তিককে দেখেছি টুপি পরে মোল্লা হয়ে যেতে, অনেকে প্রাণ ভয়ে চুপ হয়ে গেছে। কেউ কেউ এখন খালি রক্ত দিন জীবন বাঁচান, ক্যান্সার রোগীর জন্য সাহায্য দিন এসব লিখে নিজেকে ভাল প্রমাণে ব্যস্ত আছেন। কেউ কেউ পাক্কা মোল্লাও হতে শুরু করেছে! সম্ভবত তাদের গ্রন্থে সবচাইতে বড় যুক্তি হচ্ছে রক্তমাখা চাপাতি দেখানো। রাজীবের রক্তাক্ত লাশ দেখার পরেই হঠাৎ তারা ইসলামের শান্তি এবং সৌন্দর্য বুঝে মসজিদে দৌড়ানো শুরু করলো! ফেসবুকে কোরান হাদিস দেয়া শুরু করলো। অনেক সুশীল আহাম্মক আবার আগ বাড়িয়ে মুখোশ বদলে বলতে শুরু করলো, উগ্র নাস্তিক-যারা লেখালেখি করে আর যারা আল্লাহু আকবর বলে গলা কাটে-সে সব মৌলবাদী, উভয়ই সমান অপরাধী। গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও কতিপয় নির্বোধ বলছিল, শাহবাগ আন্দোলনে কোন নাস্তিক নেই! তা যেন ছিল মৃত রাজীবের লাশের উপরে দাঁড়িয়ে তাকে থুথু দেয়ার চেয়েও বড় নোংরামি। রাজীবকে বানানো হচ্ছিল ধার্মিক, রাজীবের লাশ তারা ভালই বেঁচে খেল। পকেট টাকায় উপচে পরার পরে মঞ্চ থেকে লাথি মেরে ফেলে দিল রাজীবের লাশ!
ওর মায়ের সাথে কথা হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে। পরিবারটিকে একঘরে করে রাখা হয়েছে, ওর পিতার সম্ভবত কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। শাহবাগে যারা ওর লাশ নিয়ে নাকে কেঁদেছিল, তারা পরে আর কোনদিন খোঁজও নেয় নি। লাশের রাজনীতি বড্ড খারাপ আর নোংরা, শাহবাগের নিকৃষ্ট লোভী লোকগুলো তখন নাস্তিক বিরোধী প্রচার চালাতে ব্যস্ত, দেশকে মুসলমান বানাবার চেষ্টায় ব্যস্ত। যারা প্রথমদিনই শাহবাগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, শাহবাগকে ট্রাইবুনাল বিরোধী জামাতি প্রজেক্ট নাম দিয়েছিল, তারাই এখন হর্তাকর্তা। এবং তারা ১০০% খাঁটি মুমিন মুসলমান। নাস্তিক কতলে তারাও কারো চেয়ে কম যায় না। তারা এখন রাজীবের নামে আড়ালে আবডালে নোংরা কথা বলে, কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে ওর পরিবারকে গালাগালিও করেছে। কিন্তু মঞ্চে ওঠা মাত্রই এক একজন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অসাম্প্রদায়িক মানুষ বনে যান। নির্লজ্জ বেহায়া বলা হলেও মনে হয় এদের কম বলা হবে।
হ্যাঁ রাজীব নাস্তিক ছিল। ধর্ম বিরোধী নাস্তিক ছিল সে। এবং সে মরে গিয়ে প্রমাণ করে গিয়েছে, ধর্ম এবং ধর্মান্ধরা কতটা নৃশংস, কতটা যুক্তি বুদ্ধি আর মগজহীন। ধর্মের সমালোচনা করলে, বিরোধিতা করলে জেলে যেতে হয়, শাস্তি পেতে হয়, কল্লা নামানো হয়। অথচ কল্লা কাটা মোল্লাদের এবং তাদের উস্কানি দেয়া লোকদের স্পর্শও করা হয় না। তারা থেকে যায় আড়ালে। কারো সাধ্য নেই আল্লামা শফীদের গ্রেফতার করে। গতকালই আল কায়দা প্রধান হেফাজত আর জামাতকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সুশীল নির্বোধগুলো এখন হয়তো বলবে, আল-কায়দা এবং আল কায়দার বিরুদ্ধে যারা লেখে, আল-কায়দার অনুভূতিতে আঘাত দেয়, উভয়ই সমান অপরাধী!
ডিবি অফিসে থাকার সময়ে রাজীব হত্যা মামলা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলাম। কয়েকজন নিম্নপদস্থ পুলিশের কাছ থেকে জেনেছিলাম, রাজীব হত্যাকারীদের বিন্দুমাত্র শারীরিক নির্যাতন করা হয় নি। আমি রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতনের পক্ষে নই, কিন্তু যেখানে মিন্টুরোডের ডিবি অফিস শারীরিক নির্যাতনের জন্য দুনিয়াজোরা খ্যাত, সেখানে কয়েকজনকে দামী খাবার দাবার খাওয়ানো, আদর আপ্যায়ন করা কেন হয়েছে তা আমার কাছে পরিষ্কার হয় নি কখনো। এবং চার্জশিটে একজনকে সমস্ত অপরাধের দায় দিয়ে অন্যদের অব্যহতি দেয়া হয়েছে। নর্থ সাউথের ধনী পরিবারের ছেলেগুলোর বাবামা বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষও দিয়েছে সেখানে। চার্জশিট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অনেক ফাক ফোকর, এবং আসামীদের বলেও দেয়া হয়েছে কীভাবে মামলা লড়লে মামলায় জেতা যাবে। কারণ পুলিশ থেকে শুরু করে তদন্তকারী কর্মকর্তা সকলেই ধর্মান্ধ, পাক্কা মুমিন মুসলমান। তাই তারা কেমন তদন্ত করবে তা সহজেই অনুমেয়।
ধর্মের পক্ষে কিছু লেখার অধিকার থাকলে বিপক্ষেও লেখার অধিকার থাকবে। সমালোচনা, স্যাটায়ার, প্রশ্ন, পর্যবেক্ষণ, যাচায় বাছাই এসবই থাকবে। সমালোচনা করার মত কিছু থাকলে সমালোচনা হবেই। হাসাহাসি করার মত কোন বিষয় থাকলে হাসাহাসি হবেই। চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে, রক্তাক্ত করে শুধু ভয় আদায় করা সম্ভব, শ্রদ্ধা নয়। হে ধর্মান্ধরা, হে ঘাতকেরা, ভেবো না সবাই তোমাদের ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, পশ্চাৎপদতাকে সম্মান কিংবা শ্রদ্ধা করছে, তোমাদের কেতাব এবং কেতাবধারীদের জয়গান করছে। আসলে তোমাদের মত দাঁতাল পশুদের ভয় পাচ্ছে সবাই। এটাকে শ্রদ্ধা বা সম্মান ভেবে ভুল বুঝো না।
কারণ পাগল বুনো জন্তু সকলেই ভয় পায়।
আপনার লেখা পড়েই উনাকে চিনলাম…
রাজীব মরে গিয়ে প্রমাণ করলো যে ধর্ম, ধর্ম মানসিকতার বীজ যে এত ভয়াবহ।
শাহবাগের পূর্বাপর ঘটনার বিবরন দারুন। জাগরণটিতে যেমন আশান্বিত হয়েছিলাম তেমনি এর পরবর্তী দ্বৈধতায় মাটিতে মিশেও গিয়েছিলাম। তবুও বিশআস করতে চাই এদেশে রাজিবেরা আছে বলেই বাংলাদেশের অহংকার করার মতো ইতিহাস আছে। আর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই অহঙ্কার করবে….!
‘ধর্মকারী’ সাময়িক হাস্যরস সরবরাহ করলেও গভীরতার দিক থেকে শিশুসুলভই। কারণ, আমিও আসিফদার মতই মনে করি যে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটলে ধীরে ধীরে অন্ধবিশ্বাস কমে যাবে। কিন্তু যুক্তিগুলো স্পষ্টভাবে না দেখিয়ে অশ্লীল-ব্যাঙ্গ করলে শেষ বিচারে অনেক মানুষের কাছাকাছি আমরা যুক্তিবাদীরা পৌঁছতে পারব না। তাই সেই অর্থে, আমি ‘ধর্মকারী’-র সঙ্গে একমত নই।
এর আগেও অন্ধবিশ্বাসের হাতে প্রাণ দিয়েছেন অনেক প্রগতিশীল মানুষ। কিন্তু রাজীবের মৃত্যু সকল মুক্তচিন্তার মানুষের কাছেই বড়সড় ধাক্কা। এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেই হবে।
আসিফ মহীউদ্দিন শুভেচ্ছা নিবেন লেখাটার জন্য। (F)
আপনার অসংখ্য মতের সাথেই আমি দ্বিমত পোষন করে থাকি, তবে মানুষ হিসাবে আপনি যে সক্রিয় এবং সাহসী এটার জন্য আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধারও অভাব নেই।
গনজাগরন মঞ্চের পরের দিককার রূপ খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ। টাকা পয়সার ব্যাপারটা জানা নেই তবে গনজাগরন মঞ্চের পরবর্তী অবস্থান আমাকে মারাত্বক হতাশ করেছে।
শহীদ রাজিব, লাল সেলাম! (Y)
চমৎকার নোটের জন্য অসিফকে সাধুবাদ। চলুক।
যে গভীর উত্তেজনা আর আগ্রহ নিয়ে শাহবাগকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করতে শুরু করেছিলাম, রাজীব ভাইয়ের মৃত্যুর পর তা দপ করে হারিয়ে যায় যেনো। শাহবাগ হতে পারতো নতুন বাংলাদেশ গড়ার শুরু, অথচ বিহ্বল হয়ে দেখলাম, মঞ্চের নের্তৃত্বের মৃত্যুভয় আর স্বার্থের ফেরে পড়ে শুরুতেই সব শেষ হয়ে গেল। রাজীব ভাইকে নিয়ে যে নোংড়া খেলাটা শুরু হয়েছিল তার ফলাফল নিয়ে গোড়াতেই সন্দিহান ছিলাম, ঘটলোও তাই। জামাত-শিবির এই ভীরু, কাপুরুষ আর দ্বিমুখী নের্তৃত্বের ১১০% সুবিধা নিল। শাহবাগ এখন ঘুরেফিরে নতুন বোতলে পুরোনো সেই ধর্মীয় বিষের বিতরণই করছে শুধু, এর কোন সুস্পষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই। ১৯৭২ সালে ফিরে যাওয়া তো দূরের কথা, এখনো ২০০১ থেকে ২০০৬-এই ঘুরপাক খাচ্ছে এরা। আন্দোলনাকারি নের্তৃত্বের লেখাতে যে বাংলাদেশ দেখা যায়, মঞ্চের ঘোষণায় বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তার ছিটেফোটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সুযোগ পেলেই নিজেকে প্র্যাকটিসিং মুসলমান দাবি করে আবার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বুলি কপচানো সুস্পষ্ট হঠকারিতা। এই হঠকারিরাই বাংলাদেশকে পথ দেখানোর লিজ নিয়েছে।
কী বলবো, রাজীব ভাইয়ের কথা ভাবলেই মনটা বিষাদে ভরে যায়। যতোই মুক্তমনারা গলার রগ ফুলিয়ে চিল্লাচিল্লি করুক না কেন, এদিকে কেউ কর্ণপাত করবে না। অসমাপ্ত কাজটা তাই আমাদেরকেই করতে হবে। কোন একদিন হয়তো রাজীব ভাইয়ের স্বপ্নরা একটা জায়গা পাবে, সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক দেশ হবে বাংলাদেশ, এদেশে পুরাতন বা নব্য কোন রাজাকার থাকবে না, থাকবে না ধর্মের নামে যা-তা করার স্বাধীনতা, থাকবে না ব্লগীয় আর ফেসবুকীয় ভণ্ডামি। সেদিন পর্যন্ত তাঁর স্বপ্নের সাধ আমাদেরকেই লালন করতে হবে, বাচিয়ে রাখতে হবে, করতে হবে তেজোদীপ্ত। অনেকেই সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, আমি তাই সম্পূর্ণরূপে আশাবাদি।
রাজীব ভাইকে নিয়ে স্বল্প কথায় চমৎকার এই লেখাটার জন্য আসিফ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই প্রাণভরে ভাবার, বলার আর লেখার স্বাধীনতা পাক।
লিখাটার কিছু অংশ পড়েছিলাম ফেসবুকে।এখানে সেটা বিশদভাবে দেয়া হয়েছে।
লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে লিখতে পারছিনা।প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছা করছে।
এক বছর হয়ে গেল।হত্যাকারীদের কোনোরুপ বিচার হল না।
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ
বিপদে পড়লে গর্তে ঢুকা কৌশল হতে পারে কিন্তু শাহবাগ ও তার পরবর্তী অবস্থায় কিছু সুশীলকে চিনলাম যাদের দীর্ঘদিন ধরে আমি ধর্মবিরোধী নাস্তিক হিসেবেই জানতাম। এই সব সুশীল সুবিধাবাদী নাস্তিক শুধু নিজেরা গর্তে ঢুকেছে এমন নয় তার পাশাপাশি গর্তে ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিয়েছে তাদের দর্শনকে। যাদেরকে আমি উগ্র নাস্তিক হিসেবে জানতাম তারা আজকে মডারেট ধার্মিক হয়েছে। তাদের জন্য খুব দুঃখ হয়। :-Y :-Y :-Y
@নিলয় নীল,
খুবই সত্যি কথা বলেছেন। এদের মধ্যে সামান্য দুএকজন কে ব্লগীয় ভাবে জানি, তাঁরা পুরাপুরি ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে জনসেবা আর মানবজাতির বৃহত্তর কল্যান সাধনে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন; বেশিরভাগ লোক যারা তাঁদের বিরোধিতা করে থাকেন তাঁরা হয়ে গেছেন নির্বোধ অযোগ্য অথবা খোকাবাবু।
এইটাইপ ব্লগার একাধিক আছেন। একটু নতুন আর পুরাতন লেখা আর মন্তব্য গুলো খুজে দেখলেই বুঝবেন। প্রশ্ন করলে নান বাহানা করে এড়িয়ে যায়, ভাব দেখায় যে মহা ব্যস্ত; যেন উনারা ছাড়া অন্যদের কোন ব্যস্ততা নেই, কাজ নেই শুধু বাপের অন্ন ধংস করা আর ব্লগে লেখা ছাড়া। এইসব সুবিধাবাদী আর জাজমেন্টাল লোকদের তাদের জন্য আপনার হয় দুঃখ, আমার হয় বিতৃষ্ণা।
আমি যেটা বলি সেটাই ঠিক, আর সেটা যারা মানে না তারা নির্বোধ, এই সস্তা নীতি নিয়ে যারা চলে তাদের সাথে মনে হয় কথাবার্তা বলাই সময় নষ্টের শামিল বলে মনে হয় আজকাল
@নিলয় নীল,
যে কোন প্রকারের “উগ্র” থেকে যেকোন প্রকারের “মডারেট” কি উত্তম নয়!
মানুষের অবস্থান তো পরিবর্তনশীল – অবস্থার সাথে সাথে তাই নয় কি 🙂 আজকাল ইনু-মেনন কেও মসজিদে কিংবা বিভিন্ন দোয়া মাহফিলে দেখা যায়। আর বেশি কি বলার আছে 🙂
আর এসব ক্ষেত্রে “সেট ফাংশনের” ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক নয় কি 😀
ধরুন, একজন নাস্তিক এবং একজন আস্তিক। আস্তিকদের মধ্য “সেট” এর পাবলিক আছে তেমন নাস্তিকদের মধ্যও আছে । যেমন অনেক নাস্তিকই “হোমসেক্স” সমর্থন করেন না আবার বেশরভাগ নাস্তিক “উলঙ্গবাদ” সমর্থন করেননা। এমন আরও সেট আছে।
এখন কোন নাস্তিক যদি চান প্রকাশ্য উলঙ্গবাদি / নগ্নবাদী অন্য কোন নাস্তিক থেকে নিজের পরিবারকে দূরে রাখতে – সেক্ষেত্রে আপনি তাকে দোষ দিবেন ??
@সংবাদিকা,
অবশ্যই এটি তাঁর অধিকার। নগ্নবাদী যে হতেই হবে এর কোন কারন নেই, এটা না হলে তাকে সেকেলে বলার কোন ই যুক্তি নেই, আর নগ্নবাদী হলেও তাকে আধুনিক বলার কোন যুক্তি নেই।
কিন্তু আমার মনে হয় নীলয় বলতে চেয়েছেন যে একটি বিশেষ ঘটনার পরে তাঁরা সবাই ভোল পাল্টে ফেলেছেন।
এখন আমার প্রশ্ন হল উনারা কি আসলেই নগ্নবাদী বা উগ্র নাস্তিক ছিলেন ( আপনার কথার সুত্র ধরে জাস্ট উদাহরন হিসাবে ব্যবহার বললাম), নাকি শুধুই ফ্যাশন হিসাবে নাস্তিকতা আর সুবিধাবাদী তথা নগ্ননারীদেহ উপভোগ করতেই ( অশিষ্ট ভাষায় চেটে খেতে) নগ্নবাদী সেজে ছিলেন? আর তলে তলে নিজের পরিবারকে বোরখা, নেকাবে ঢেকে রাখতেন? এই শ্রেনীর লোক কিন্তু কম নেই এটা আপনি জানেন, যারা প্রেমিকাকে( দুই দিনের অবশ্য) পার্টিতে নিয়ে গেলে যত শর্ট ড্রেস পারে পরায় কারন এটা নাকি আধুনিকতা, অন্যদিকে ঠিকই সেই প্রেমিকাকে ছেড়ে দিয়ে বোরখাওয়ালী কে বিয়ে করে ( দেরীতে হলেও ভুল বুঝতে পেরে!!!)? এইটা কেমন কাজ? এইটা যেমন মেয়েটির সাথে প্রতারনা, তেমনি নিজের সাথেও নয়কি?
বাস্তবে আমি হিজাব বা স্কার্ফে সমস্যা দেখি না যদি সেটা পরতে বাধ্য করা না হয় এটা আগেও বলেছিলাম। কিন্তু অন্যের হিজাব পরার বিরুদ্ধে লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে নিজের বউ, মেয়ে, বোনকে ( সোজা কথায় পরিবার) বোরখা হিজাব নেকাব পরিএয় রাখলে কিন্তু সেটা সন্দেহের উদ্রেকই করবে।
আমি নিজেই যে আদর্শ ধারন করি না, সেটার পক্ষে যদি গলা ফাটাই, তবে ধরা পড়ার পরে আপনি নিশ্চয়ই আমাকে সিদ্ধপুরুষ বলতে চাইবেন না? 🙂
আপনার লেখা সব সময়ই অপূর্ব লাগে। এই লেখার শিরোণামটি আমার বিশেষ করে ভাল লেগেছে।
(Y)
যারা তাকে সাক্ষৎ শয়তান এবং মহামানব বানাতে চেয়েছে – দু পক্ষরই নিজ নিজ পার্থিব এজেন্ডা ছিল… সে ছিল একজন রক্ত মাংসের মানুষ – অন্য সবার মতই ভাল-খারাপ মিলে।
বাংলাদেশের এটাও অন্যতম সমস্যা – হয় শয়তান নাহলে মহামানব – কাউকেই তাঁর কাজ দ্বারা মূল্যয়ন করা হয়না – বাংলায় “সমালোচনা” শব্দটিই নেগেটিভ!!
ফেসবুক এক্টিভিজমের পাশাপাশি ব্লগজগতে পদার্পনের জন্য শুভেচ্ছা আসিফ।
আর অসাধারণ এই লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ!
(Y)