বর্ণপ্রথা বা বর্ণবৈষম্য হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়।হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে এই বিষবাষ্পে দগ্ধ হচ্ছে হিন্দু সমাজ।বর্ণশ্রেষ্ট হিন্দুদের মধ্যে এই প্রথা এখনও প্রবল।তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এখনও নিচুবর্ণের হিন্দুদের ঘৃণার চোখে দেখে।মাত্র কিছুকাল আগেও উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুবাড়ীতে নিন্মবর্ণের হিন্দুদের(যাদের মূলত দিনভিত্তিক কাজ বা জন খাটার জন্য নিয়োগ করা হতো) খাওয়া দাওয়ার জন্য আলাদা থালা বাটি রাখা হতো।তাদেরকে জলও দেওয়া হতো আলাদা গ্লাসে এবং খাওয়া শেষে তাদেরকেই তাদের ব্যাবহৃত থালা বাসন ধুয়ে দিয়ে যেতে হতো।এই ঘৃণ্য প্রথার কারণে শত শত বছর ধরে যে,কত বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে গেছে তার কোন ইয়াত্বা নেই।উনবিংশ শতাব্দিতে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে রচিত সাহিত্য গুলো পড়লে বর্ণভেদের ভয়ংকর রূপ চোখে পড়ে। বিশ্ব বিখ্যাত শিকারী জিম করবেটের ‘মাই ইণ্ডিয়া’ নামে একটা অসাধারণ বই আছে।এই বইটার পাতায় পাতায় বর্ণবৈষ্যমের বেদনাদায়ক রূপ দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।একটা ঘটনার কথা মনেপড়ে, যেখানে জিম করবেট একটা স্কুল ঘর তৈরি করে দিয়েছিলেন মোকমা ঘাট এলাকার বাচ্চাদের পড়াশুনার জন্য।স্কুলটা ছিল গোলপাতার ছাওয়া ও বেড়া দিয়ে ঘেরা।কিন্তু ঐ এলাকার ব্রাহ্মণরা তাদের সন্তানদের,দলিত শ্রেণীর সন্তানদের সাথে একই ঘরে বসার অনুমতি দিল না।তাতে নাকি ব্রাহ্মণদের জাত চলে যাবে।বাধ্য হয়ে জিম করবেট তাই স্কুল ঘরটির শুধুমাত্র চালাটা রেখে পুরো বেড়া সরিয়ে দিলেন।তাহলে সেটা আর একটা নির্দিষ্ট ঘর হিসেবে থাকবে না,এবং ব্রাহ্মণদের জাতও যাবে না।অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা দলিতদের সাথে মোটামুটি একই চালের নীচে বসতে পারবে কিন্তু একটি বদ্ধ ঘরে মোটেই নয়।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখনও বর্ণপ্রথা প্রবল।এদেশে এখনও ব্রাহ্মণের ছেলের বিয়ের জন্য ব্রাহ্মণ মেয়ে ,ঘোষের ছেলের জন্য ঘোষ মেয়ে,দত্ত ছেলের জন্য দত্ত মেয়ে লাগবেই।এর অন্যথা হলে শুরু হয়ে যায় পারিবারিক অশান্তি।এদেশেই এমন অনেক হিন্দু পরিবার আছে,যেখানে অভিভাবকরা তাদের দৃষ্টিতে,তাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে দিতে পারছে না শুধুমাত্র একই বর্ণের সুযোগ্য ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না বলে।
তাছাড়া উচুবর্ণের হিন্দুরা তাদের দৃষ্টিতে যারা নিচুবর্ণ তাদেরকে নিয়ে প্রতিনিয়ত তুচ্ছ তাচ্ছিল,হাসি মসকারা করতে থাকে।এসবের পাশাপাশি তাদের গায়ে লাগানো হয় নানা কুৎসিত বিশেষণের তকমা।যদিও খুব নোংরা তবুও একটা বলি,”শোর(শূকর)তাড়ালে তবুও শোর ফেরে,কিন্তু নমো(শূদ্র)তাড়ালে,নমো ফেরে না।”এরকম আরও আছে।যেসব হিন্দুরা একটু নিন্মশ্রণীর কাজ করে তাদেরকে নানা কুৎসিত নামে ডাকা হয়।যেমন মুচি,মেথর,পোদ,চাড়াল ইত্যাদি যার সবগুলোই এদেশে এক একটা গালি বিশেষ।প্রায় একই চেহারা,একই গড়ন,একই চামড়ার রং, একই গ্রামে পাশাপাশি বসবাস করা সত্ত্বেও প্রতিবেশীদের নিয়ে এরকম নোংরা কথাবার্তা বলার সাহস তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা পায় কোথা থেকে?এদেরকে এই সাহস দেয় মহা পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো।
হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ গুলোর মধ্যে শ্রীমদভগবদগীতা অন্যতম।ভক্তিবাদী হিন্দুরা এটাকে বলে থাকে পরমেশ্বর, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী যা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বিধাগ্রন্থ অর্জুনকে বলেছিলেন।এটাকে বলা হয়ে থাকে একধরণের জীবন বিধান।হিন্দুরা তাদের অনান্য ধর্মগ্রন্থ(বেদ বা পুরান) গুলোর ক্ষেত্রে এমনটা দাবি করে না,যে সেটা সরাসরি ভগবানের মুখনিঃসৃত।শুধুমাত্র গীতার ক্ষেত্রেই এমনটা দাবি করা হয়ে থাকে, যেকারণে অধিকাংশ হিন্দুরা গীতা বলতে পাগল প্রায়।তা হতেই পারে, স্বয়ং ভগবানের বাণী বলে কথা!
এই শ্রীমদভগবদগীতা গ্রন্থটি বেদগুলো রচনার বেশ কিছু পরে রচিত হয়েছে বলে মনেহয়।তৎকালীন আর্য তথা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় প্রথমে মনুসংহিতা পরে গীতার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে,যা আজও বহমান।গীতার মত মনুসংহিতাও এক ধরণের জীবন বিধান।কিন্তু মনুসংহিতায় যেহেতু অত্যান্ত নগ্নভাবে ব্রাহ্মণের শ্রেষ্টত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে,তাই অধিকাংশ হিন্দুরা গীতাকেই বেশী বেশী সামনে আনে।তবে গীতাও কম যায় না।এই গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে,ব্রাহ্মণরা কত শ্রেষ্ঠ,কত জ্ঞানী,ক্ষত্রিয়রা কত উচ্চ বংশীয়,আর শূদ্ররা কত নিকৃষ্ট!
কোন কোন রোমানট্যিক ধার্মিক যদি এরকম মনেকরে থাকেন যে,ভগবান কোন জাত,পাত,বর্ণ,গোত্র এসব সৃষ্টি করেন নি,তিনি শুধুই মানুষ সৃষ্টি করেছেন,তাহলে বিরাট ভূল হয়ে যাবে।ভগবদগীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গর্বের সাথে ঘোষণা দিয়েছেন,
“চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম।।” (৪:১৩)
অর্থাৎ, “প্রকৃতির তিনটি গুণ ও কর্ম অনুসারে আমি মানব-সমাজে চারিটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করেছি।আমি এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।”
মানে ভগবানই সব কিছুর স্রষ্টা।সমাজের চারটি বর্ণও তাঁরই সৃষ্টি।এখানে বলে রাখি গীতার এই শ্লোকগুলোর ব্যাখ্যা বা অনুবাদ কোনটায় আমি করিনি।এক্ষেত্রে আমি সাহায্য নিয়েছি ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ’ বইটির।কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক মূল সংস্কৃত শ্লোকের শব্দার্থ,অনুবাদ ও তাৎপর্য সহ ইংরেজী Bhagavad-Gita As It Is-এর বাংলা অনুবাদক:শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ।প্রকাশ ও মুদ্রণ:ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট প্রেস,শ্রীমায়াপুর,নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ।
চারটি বর্ণ সৃষ্টির ঘোষণার পর ভগবান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি কি কি বর্ণ সৃষ্টি করেছেন এবং কেন সৃষ্টি করেছন।
“ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বাভাবপ্রভবৈগুর্ণৈঃ।।”(১৮:৪১) অর্থাৎ,’হে পরন্তপ! স্বভাব জাতগুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।’
এই স্বাভাবজাত গুণ ও কর্ম কি জিনিস তা শোনার আগে আসুন একটু পরমপিতা মনুর বচন শুনে আসি।ভগবান তো এদের সৃষ্টি করেছেন,এবং কাকে কোথা থেকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা আছে মনুসংহিতায়।
“সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহুরুপজ্জানাং পৃথক্ কর্মাণ্যকল্পয়ৎ।।” (১:৮৭)
অর্থাৎ: ‘এই সকল সৃষ্টি রক্ষার জন্য মহাতেজযুক্ত প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজের মুখ, বাহু, উরু এবং পাদ- এই চারটি অঙ্গ থেকে জাত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের পৃথক পৃথক কার্যের ব্যবস্থা করে দিলেন।’
পা থেকে শূদ্রদের সৃষ্টি করেছেন বলে এখানে আবার কোন বৈষম্য খুজবেন না যেন কারণ ভাগবানের সকল অঙ্গই পবিত্র!
এবার ফিরে আসি গীতায় যেখানে স্বাভাব জাত কর্মের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।
“শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বাভাবজম”(১৮:৪২)
অর্থাৎ, ‘শম দম তপ শৌচ ক্ষান্তি,সরলতা,জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য-এগুলো ব্রাহ্মণদের স্বাভাবজাত কর্ম।’দেখা যাচ্ছে যে জ্ঞান বিজ্ঞান সহ সকল ভাল ভাল কর্মগুলো ব্রাহ্মণদের স্বাভাব জাত।ক্ষত্রিয়দের কর্ম গুলোও বেশ চমৎকার,তেজ,দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন,দান,শাসন ক্ষমতা এগুলি ক্ষত্রিয়দের স্বাভাবজাত।বাকী থাকছে বৈশ্য আর শূদ্ররা।
“কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বাভাবজম।।” (১৮:৪৩)
অর্থাৎ,’কৃষি,গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বাভাব জাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত’
এই পরিচর্যাত্মাক কর্মের অর্থ হলো সেবা করা।উচ্চ তিন বর্ণের মানুষদের ত্রমাগত সেবা করা।মানে যাকে বলে জন্মদাস,এবং এটা নাকি আবার স্বভাবজাত।দাসগিরি করা কিভাবে একটি গোত্রের সকল মানুষের স্বভাব হয়ে গেল তা বোঝ গেল না।ঠিক একই ভাবে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা কিভাবে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদেরই স্বভাব কর্ম হয়ে গেল তাও বোঝা কঠিন।কোন শূদ্র কখনো জ্ঞান চর্চা করতে পারবে না, দেশ শাসন করতে পারবে না,কারণ তার জন্ম একটা শূদ্র পরিবারে। মোটকথা ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয় মিলে খাবে-দাবে,ভোগ করবে,দেশ শাসন করবে, বৈশ্যরা করবে গরু পালন আর চাষবাস,শূদ্ররা হবে জন্মোদাস।কি চমৎকার ভগবানের বাণী!
এখন স্বাভাবিকভাবেই কোন শূদ্রের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে তাকে কেন সারা জীবন জন্মদাস হয়ে কটাতে হবে?অথবা কোন একজন শূদ্র এর প্রতিবাদও করতে পারে।তবে কোন রকম প্রশ্ন বা প্রতিবাদ যেন না করা হয় তার ব্যাবস্থাও ভগবান করে রেখেছেন ১৮ অধ্যায়ের ৪৮ নম্বর শ্লোকে।
“সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ।সর্বারম্ভা হি দোষেণ ধূমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ।।”(১৮:৪৮)
অর্থাৎ,’হে কৌন্তেয়!সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও ত্যাগ করা উচিত নয়।যেহেতু অগ্নি যেমন ধূমের দ্বারা আবৃত থাকে,তেমনি সমস্ত কর্মই দোষের দ্বারা আবৃত থাকে।’ শূদ্রের মরণযাত্রা রচিত হয়েছে এই শ্লোকের মাধ্যমে।উপরে যে বই টার কথা উল্লেক করলাম তাতে এই শ্লোকটার তাৎপর্য লেখা আছে সেটা এরকম..
মায়াবদ্ধ জীবনে সব কাজই জড়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা কুলষিত।এমন কি কেউ যদি ব্রাহ্মণও হন,তা হলেও তাকে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে হয় যাতে পশু বলি দিতে হয়।তেমনি ক্ষত্রিয়কে শ্রত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়,তেমনি,কোন শূদ্রকে যখন কোন অসৎ মনিবের দাসত্ব করতে হয়,তখন তাকে তার মনিবের আজ্ঞা পালন করতেই হয়,যদিও তা করা উচিত নয়।এই সমস্ত দোষ ত্রুটি সত্ত্বেও, মানুষকে তার স্বধর্ম করে যেতে হয়,কেন না সেগুলি তার নিজেরই স্বাভাবজাত।
সঙ্গে আছে পবিত্র আগুনের সাথে ধোয়ার মিশ্রনের চমৎকার উদাহরণ এবং এই দাসগিরি করতে করতেই নাকি জীব পরমগতি লাভ করবে!
স্বাভাবকর্মের পর দেখা যাক স্বাভাবগুণ কি জিনিস।গুণ তিন প্রকার সত্ত্ব,রজো ও তমো।এগুলোর মধ্যে সত্ত্ব শ্রেষ্ট,তমো গুণ নিকৃষ্ট।
“সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং রজোসো লোভ এব চ। প্রমাদমোহৌ তমসো ভবতোহজ্ঞানমেব চ।।”(১৪:১৭)
অর্থাৎ, ‘ সত্ত্বগুণ থেকে জ্ঞান,রজোগুণ থেকে লোভ এবং তমো গুণ থেকে অজ্ঞান,প্রমাদ ও মোহ উৎপন্ন হয়।’
এরপর কোন গুণের ফলে কোন ব্যাক্তি কোথায় গমন করবেন তা বলা হয়েছে
,”ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ।জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।।”(১৪:১৮)
অর্থাৎ,’সত্ত্বগুণ সম্পন্ন ব্যাক্তিগণ উচ্চতর লোকে গমন করে,রজোগুণ সম্পন্ন ব্যাক্তিরা নরলোকে এবং জঘন্য গুণসম্পন্ন তামসিক ব্যাক্তিগণ অধঃপতিত হয়ে নরকে গমন করে।’ আরও আছে,
“রজসি প্রলয়ং গত্বা কর্মসঙ্গিষু জায়তে।তথা প্রলীনস্তমসি মূঢ়যোনিষু জায়তে।।(১৪:১৫)
অর্থাৎ,’রজোগুণে মৃত্যু হলে কর্মাসক্ত মনুষ্যকুলে জন্ম হয়,তেমনি তমোগুণে মৃত্যু হলে পশুযোনিতে জন্ম হয়’
এবং অবধারিত ভাবেই শূদ্ররা যে তমো গুণ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকবে তাতে আর আবাক কি!এজন্য আবার ৪র্থ অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোকে ফিরে যায়।
“চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম।।” (৪:১৩)
অর্থাৎ, “প্রকৃতির তিনটি গুণ ও কর্ম অনুসারে আমি মানব-সমাজে চারিটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করেছি।আমি এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।”উল্লেখিত বইয়ে এই শ্লোকটির তাৎপর্য লেখা আছে যেটা এরকম,
ভগবানই সব কিছুর স্রষ্টা।সমাজের চারটি বর্ণও তারই সৃষ্টি।সমাজের সর্বোচ্চ স্তর সৃষ্টি হয়েছে শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লোকদের নিয়ে,তাদের বলা হয় ব্রাহ্মণ এবং তারা সত্ত্বগুণের দ্বারা প্রভাবিত।পরের স্তর শাসক সম্প্রদায়,এরা ক্ষত্রিয় এবং এরা রজোগুণের দ্বারা প্রভাবিত।তার পরের স্তর বৈশ্য এরা রজ ও তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত।তার পরের স্তর হচ্ছে শ্রমজীবী সম্প্রদায়,এরা শূদ্র,এরা তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত।
খুব সুন্দর তাৎপর্য!মোটকথা স্বভাবগুণ আর জন্মদোষে, দুষ্ট শূদ্রের নরক দর্শন নিশ্চিত।এবং এর পরে ভগবান প্রিয় কথাটি গোপন করেন নি।
“কিং পুনর্ব্রাহ্মণাঃ পুণ্যা ভক্তা রাজর্ষয়স্তথা/অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্॥” (৯:৩৩)
আর্থাৎ,’পূণ্যশীল ব্রাহ্মণ ও রাজর্ষিগণ যে পরম গতি লাভ করিবেন তাহাতে আর কথা কি আছে?অতএব আমার আরাধনা কর।’
মানে ব্রাহ্মণের স্বর্গ যাত্রা নিশ্চিত।
গীতার প্রধান বক্তা মানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় পরম জ্ঞানী এবং পুরো পৃথিবীর সৃষ্ট্রা,তবে তার ভূগোল জ্ঞান দেখি ভীষণভাবে ভারতবর্ষ তথা উপমহাদেশ কেন্দ্রিক।গীতার ১০ম অধ্যায়ের ২১ থেকে ৩৮ নম্বর শ্লোক পর্যন্ত ভগবান তার ভূগোল জ্ঞান দেখিয়েছেন।যেমন, জ্যোতিষ্কদের মধ্যে তিনি সূর্য,নক্ষদের মধ্যে তিনি চন্দ্র,বেদের মধ্যে সামবেদ,বস্তুসমূহের মধ্যে হিমালয়,বৃক্ষের মধ্যে অশ্বত্থ,হস্তীদের মধ্যে ঐবারত,মনুষ্যদের মধ্যে সম্রাট,গাভীদের মধ্যে কামধেনু,পশুদের মধ্যে সিংহ,পক্ষীদের মধ্যে গরুড়,মৎসদের মধ্যে মকর(কুমীর),নদীসমূহের মধ্যে গঙ্গা,মাসের মধ্যে অগ্রহায়ন ইত্যাদি।সূর্য জ্যোতিষ্ক আর চন্দ্র নক্ষত্র!সে যাক,এই অতি পরিচিত চন্দ্র সূর্ষের চেয়েও তো ভগবান কতো বড় বড় গ্যালাক্সি কত নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন,সেসবও দু একটা বলা যেত।গুরু,কুমির,হাতি, সিংহ,গরুড় এসব অতি পরিচিত ভারতীয় অঞ্চলের প্রাণীদের কথায়ই শুধু না বলে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে তারই সৃষ্টি করা বিশাল বিশাল টোরানোসোরাসের দের নামতো বলতে পারতেন।আমরা তাহলে কতই না মুগ্ধ হোতাম।হিমালয় শ্রেষ্ট মানলাম কিন্তু নীলনদ বা আমাজান নদীতো গঙ্গার চেয়ে শৌর্যে বির্যে কম নয়,তাদের কথাও একটু বলা যেত। ভারতবাসীদের মত ভগবানেরও প্রিয় মাস অগ্রহায়ন!এই মাস মূলত এই অঞ্চলের ফসল কাটার মৌসুম।এতে করে কেন যেন মনেহয় ভগবানও বোধহয় এই ভারতীয় উপমহাদেশ এলাকারই নাগরিক ছিলেন। বাকী পৃথিবীর মানুষ,প্রকৃতি বা সংস্কৃতি নিয়ে তার তো কোনরকম আগ্রহ দেখি না।
ভগবান সব কিছুর স্রষ্টা, আমরা সবাই পরমেশ্বর ভগবানের সন্তান,কিংবা ভগবান নিরপেক্ষ,অব্যয় এই ধরণের রোম্যানটিক কথা গুলো বড্ড পানসে লাগে যখন শ্রীকৃষ্ণ বলে,
“মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহ্যপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিম্॥” (৯:৩২)
অর্থাৎ,’আমাকে আশ্রয় করে স্ত্রী,বৈশ্য,শূদ্র এসব পাপযোনিরাও পরম গতি লাভ করে থাকে।’
চরম আপত্তিকর কথা।নারী,বৈশ্য এবং শূদ্রদের প্রতি স্বয়ং ভগবানের মুখ থেকে এরকম নোংরা কথা শুনে মনেহয়,ভগবানও বোধহয় ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের কোন এক সম্ভ্রান্ত পুরুষ সদস্য।নিরপেক্ষ যে না তা তো বোঝায় যাচ্ছে।পাপিষ্ট,জন্মোদোষে দুষ্ট বৈশ্য ও শূদ্রদের কথা নাহয় বাদই দিলাম।কিন্তু ব্রাহ্মণের স্ত্রী বা মেয়েরাও তো ভগবানের কুবাক্য থেকে রক্ষা পেল না।পুরো নারী জাতির প্রতিই ভগবানের এইরকম নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মনে সন্দেহ জাগে।অথচ এই নারীরাই স্নান সেরে পবিত্র হয়ে,মনে ভক্তিভাব জাগ্রত করে প্রতিদিন গীতাপাঠ করে।তারা কি জানে এই গীতায় ভগবান তাদেরকে কি বিশ্রী ভাষায় অপমান করেছে?
কর্মগুণে বর্ণ। লেখাটি দেখে মনে হলো surface thinking না করে deep thinking করলে ভালো হতো। ব্রাক্ষনের ঘরে জন্ম নিলেই ব্রাক্ষণ হয় না। গুণ থাকতে হবে। কর্ম ও জ্ঞান মিশ্রণে বর্ণ হয়। যে কেউ এই গুণ দিয়ে ব্রাক্ষণ হতে পারে বা শুদ্র হতে পারে। তাই বর্ণ।
আমার তো মনে হয় কথাগুলো যিনি লিখেছেন তিনি ভগবানের বিরোধি নয়তো ভগবানে বিশ্বাসী নয় আর নারিদের অপমানের কথাই যদি বলি তবে তিনি তার নিজের মনগড়া কথা লিখেছেন আমি এটা বুঝলামনা যে ভগবান কোন কিছুর পক্ষপাতিত্ব করে নারি ও পুরুষ তাঁর কাছে দুটোই সমান
সবই বুঝলাম শুধু মাত্র এটা বুঝতে পারছিনা যে আপনি ধর্মকে মানেন না নাকি ঈশ্বরকেই মানেন না?নারীদের অসম্মান করা এটা নতুন কিছু নয় কিন্তু আজ আপনার লেখা পড়ার পর মন টা ছোট হয়ে গেলো,স্বয়ং ঈশ্বর এমন কথা বললেন!
লেখকের নারীর প্রতি ভগবানের নোংরা কথা লেখা টা পড়ে সেদিন মন ছোট হলেও আজ লেখককে বলতে চাই যে শ্লোক টির স্বয়ংসম্পুর্ন অর্থ না জানলে এমনটাই হয়,যেমন আমার হয়েছিল,খামোকা ঈশ্বরের উপর নারাজ ছিলাম,,
মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহ্যপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিম্॥” (৯:৩২)
অর্থাৎ,’আমাকে আশ্রয় করে স্ত্রী,বৈশ্য,শূদ্র এসব পাপযোনিরাও পরম গতি লাভ করে থাকে।’
এখানে সকল স্ত্রীকে নয় পাপাযোনী অর্থাৎ বেশ্যা পতিতাদের বলা হয়েছে।কিন্তু বেশ্যাদেরও কেন পাপী বলা হবে আমি আজো বুঝলাম না যেখানে একজন ছেলে হাজার হাজার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে সেখানে মেয়েরা করলে কিসের পাপ? যাই হোক এই নিয়ে তর্ক করাই বৃথা,আমি কেবল শ্লোক টির আসল অর্থ টা নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম তা বললাম।
বর্ণপ্রথা সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন :-
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ তস্য কর্তারমপিমাং বিদ্ব্যকর্তারসব্যয়ম (৪/১৩) অর্থাৎ,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন আমি চার বর্ণের রচনা করেছি। কিন্তু আমি মানুষকে চারটি শ্রেণিতে বিভাগ করিনি। গুণের আধারে কর্মকে চারভাগে বিভক্ত করেছি। গুণ এখানে মানদন্ড। কর্ম একটাই-নিয়ত কর্ম, আরাধনা। অবস্থাভেদে এই কর্মকেই উঁচুনিচু শ্রেণিতে বিভাগ করা হয়েছে। সুতরাং ব্রাহ্মণের সন্তান হলেই যে ব্রাহ্মণ হবে এমনটি নয়। কোন শূদ্রের সন্তানও ব্রাহ্মণ হতে পারে। আবার শূদ্রের সন্তান যে শূদ্র হবে এমনটি নয়। কোন ব্রাহ্মণের সন্তান যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র বলে গণ্য হবে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নিজ নিজ কর্মের উপর। জন্মের উপর কোন বর্ন সৃষ্টি হয় না।
অসাধারণ ব্যখ্যা
সত্যি তো!
আপোনাৰ উত্তৰ আৰু যুক্তি তাৎপৰ্যপূৰ্ণ । দুখৰ বিষয়, বৰ্তমান সনাতন হিন্দু ধর্মৰ ওপৰত ইচ্ছাকৃতভাৱে অবিৰাম আঘাত কৰা হয় । সংস্কৃত শ্লোক সমূহৰ অসম্পূৰ্ণ আৰু অপৰিপক্ক টীকা সমূহে নতুন যুৱ সমাজক বিপথে পৰিচালিত কৰিছে । আশাকৰো সদায় এই ধৰণৰ আক্ৰমণৰ পৰা আমি নিজকে ব্যতিক্ৰমী হৈ প্ৰতিউত্তৰ দিম ।
প্রথমত আপনি সম্ভবত আর্য সমাজী অগ্নিবীর জঙ্গি সংগঠনের সদস্য অর্থাৎ কৃষ্ণ বিরোধী শিশুপালের বংশধর আর নয়তো কোনো উগ্রবাদী মুসলমান ।।
“ভগবান ঐ শ্লোকে সকল নারী জাতিকে উদ্দেশ করে বলেনি,, স্ত্রী পাপ যোনী অর্থাৎ যারা পরপুরুষের সাথে সংগমে লিপ্ত হয় সেইসব ঘৌর পাপাচারী দুরাচারী স্ত্রীলোকের কথা বলা হয়েছে,,।। এবং আগেই বলা হয়েছে যে শুদ্রের স্বভাবজাত অর্থাৎ তারা তখনকার যুগে রাজা বা প্রভাবশালীদের দাসত্ব করত, আর শুদ্রের স্বভাবজাতই হলো তমগুন অর্থাৎ কুকর্ম করা, সয়তান রাজা বা প্রভাবশালীদের ছলে বলে কৌশলে কিছু দাসী নিজের শরীরের মোহে মোহিত করে সংগম করে রাণী হবার বা তার স্ত্রী হবার চেষ্টা করত, ঐ শ্লোকে ঐসব স্ত্রী লোকের কথাই বলা হয়েছে ।।”
ধর্ম বলে কিছু নেই, সব মানুষের তৈরী | বর্ণ একটা মিথ, মানুষ এই সব মানে না | মুসলিম হিন্দুর মেয়েকে বিয়ে করে আর হিন্দুর মেয়ে মুসলিমকে বিয়ে করে, এখানে বর্ণ কোথায়? এইসব ফালতু নিজের মাথা খারাপ হয়ে যাবে | এখন এইসব চলে না, এইগুলো backdated, কার যন্ত্রনা হলো আর কার যন্ত্রনা হলো না এই সব না চিন্তা করাই ভালো | মানুষ নিজেকে নোংরা তৈরী তাই অপরকে নীচ ভাবে | এটা সারা জীবন থাকবে | সুতরাং ………… | ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন |
হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা তাদের নামের পদবির সঙ্গে জড়িত । এই পদবির দ্বারা হিন্দুদের বংশগত পেশা নিদৃষ্ট হয় । গীতায় যে বর্নবাদের কথা বলা হয়েছে তা কর্মবাদের ভিত্তিতে । তা সমাজের ভালর জন্যই বটে ; কিন্তু হিন্দুধর্ম এবং সমাজ নিয়ন্ত্রকদের দুরদর্শিতার অভাবের ফলে ওটা এখন জাতিভেদে মোর নিয়েছে ।
হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা আজও আছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ প্রবল । সরকারি ভাবে নিশিদ্ধ করা হলেও তার উচ্ছেদ সময় সাপেক্ষ । তাকে ত্বরান্বিত করার জন্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যেমন পদবি গ্রহন না করা বা যেসব পদবি পেশা নির্দেশ করে তা প্রত্যাহার করা । পদবি ইচ্ছামতো পরিবর্তন করাও একটি উপায় যা ভবিষ্যতে কে কোন জাতির বা পেশার লোক তা জানা সহজ হবেনা ।
গান্ধী প্রদত্ত ‘হরিজন’ পদবি আর নেই । এখানেও দুরদর্শিতার অভাব ছিল বলে মনে হয় ।
আপনার লেখাটি ভাল লেগেছে , আপনি কুৎসিত বর্ণ ভেদকে তুলে ধরেছেন । কিন্তু একটা সত্য কিন্তু আরো ছিল। যে বর্ণ ভেদ এবং কুসংস্কার আমরা হিন্দু
ধর্মে দেখেছি বা জানি, প্রকৃত হিন্দু ধর্ম যাকে সনাতনী ধর্ম বলে তাতে কিন্তু এর কোন উল্লখে নেই। মোত ৪ টি যুগের কথা বলা হয়েছে হিন্দুশাস্ত্রে, সত্য , ত্রেতা দ্বাপর এবং কলি (আজকের যুগকে কলি যুগ বলে)। সত্য যুগের ধর্ম ই হচ্ছে সনাতন ধর্ম (আসল হিন্দু ধর্ম)। তাঁর পরের যুগের সব ধর্মই কিন্তু অশুদ্ধ।
আর আরো বলা হয়েছে , এই কলিযুগ (আজগের যুগ) হল পাপ ও অন্যায় এর যুগ । এই যুগের ধর্ম সঙ্কুচিত , মানুষ তপস্যা হীণ ও অধঃ পতিত । তাই ৪ টি বেদ হল হিন্দুদের আদি ধর্ম পুস্তক। রামায়ান হয়েছে ত্রেতা যুগে এবং মহাভারত হয়েছে দ্বাপর যুগে, তখন সমাজ অধঃপতিত হয়েছে। আসল যে হিন্দু ধর্ম
তা কিন্তু সেখায় বিশ্বপ্রেম, একতা , সুসম্পর্ক। সব মিলিয়ে হিন্দু ধর্ম (আসল হিন্দু ধর্ম প্রচলিত হিন্দুধর্ম নয়) একটা social science . বর্ণ ভেদ প্রথা , সতী দাহ প্রথা , বিধবা নির্যাতন এগুলো আসলে ধর্ম নয় , হিন্দু ধর্মের অংশ নয় এগুলো , এগুলো কুসংস্কার। স্বামী বিবেকানন্দ নিজেই বলে গেছেন “hindisam not only a religion its a way of life” সেই বিখ্যাত চিকাগো বক্তৃতা তে । তাই রামায়ন , মহাভারত এইগুলি মহ্যাকাব্য কিন্তু একে ঠিক ধর্ম পুস্তক বলা যায় না । লেখককে ধন্যবাদ জানাই তাঁর লেখার জন্য , বর্ণ ভেদ বিসয়ে আলোক পাত করবার জন্য ,এবং অনুরোধ রইল হিন্দু ধর্ম কে আরেকবার ভাল করে পড়ে দেখবার জন্য , আপনি স্বামী বিবেকান্নদের লেখা গুলি পড়ুন আশা করি সব উত্তর পাবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
ভগবান এত সল্প জ্ঞানি সময় অসচেতক হতে পারে!!!
হা মানুস যদি ভগবান হতে চাই তবে সময়ের দাবি মাথায় আসে না। সে তার সময়ের দাবিগুলো কেউ প্রাধান্য দেয়। এই একই কাহিনি অন্য সকল ধরমের খেত্রেও প্রযুক্ত।
লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য । এতবড় একখানি গ্রন্থ থেকে আপনি কেবল বর্নভেদেরই বিষবৃক্ষ,আর ইশ্বরের ভারতকেন্দ্রিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন, তাতে বরং তুলনামুলক খুশই হচ্ছি । কারন জিহাদ, মুরতাদ, নাস্তিক,মৃত্যুর পর কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়া,কবরের আযাব, এই জাতীয কন্সেপ্ট খুঁজে পাননি তাই রক্ষে, যা অনান্য ধর্মগ্রন্থে গিজগিজ করে ।
এবার আসি প্রসঙ্গে । আপনার যুক্তিগূলো পড়ে মনে হল, আগে আপনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারপর আপনার সিদ্ধান্তকে স্বতঃসিদ্ধ করতে রেফারেন্স টেনেছেন । বরং রেফারেন্স আর ব্যাখ্যা দিয়ে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের হাতে ছেড়ে দিতেন, তাহলে আপনাকে পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট মনে হত না ।
যেমন…
”চারটি বর্ণ সৃষ্টির ঘোষণার পর ভগবান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি কি কি বর্ণ সৃষ্টি করেছেন এবং কেন সৃষ্টি করেছন।
“ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বাভাবপ্রভবৈগুর্ণৈঃ।।”(১৮:৪১) অর্থাৎ,’হে পরন্তপ! স্বভাব জাতগুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।’
এই স্বাভাবজাত গুণ ও কর্ম কি জিনিস তা শোনার আগে আসুন একটু পরমপিতা মনুর বচন শুনে আসি।ভগবান তো এদের সৃষ্টি করেছেন,এবং কাকে কোথা থেকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা আছে মনুসংহিতায়।
“সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহুরুপজ্জানাং পৃথক্ কর্মাণ্যকল্পয়ৎ।।” (১:৮৭)
অর্থাৎ: ‘এই সকল সৃষ্টি রক্ষার জন্য মহাতেজযুক্ত প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজের মুখ, বাহু, উরু এবং পাদ- এই চারটি অঙ্গ থেকে জাত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের পৃথক পৃথক কার্যের ব্যবস্থা করে দিলেন।’ ”
এখানে আপনি গীতার ‘স্বাভাবজাত গুণ ও কর্ম কি জিনিস’ তার সূত্র দিচ্ছেন মনুসংহিতা থেকে । আপনি নিজেই এরুপ বলেছেন যে হিন্দুরা একমাত্র গীতাকেই ইশ্বরের বানী বলে মনে করে । তারমানে মনুসংহিতা যা বলছে তা মোটেই ইস্বরের বানী নয় এমন ভাবলেও চলে । কে কার মুখ থেকে বেরলো না কান থেকে বেরলো তাতে কি যায় আসে । এগুলো সব মিথ, সে আপনিও জানেন আর আমিও জানি । গীতায় কোথায় বর্নভেদ জন্ম অনুসারে উল্লেখ আছে সেটা গীতা দিয়েই প্রমান করুন । আমি মোটেও বলছি না যে সেটা অসম্ভব , হতেও পারে , প্রমান করুন তবেইনা আপনার যুক্তি অকট্য হবে ।
তারপর আপনি লিখেছেন…
”“শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বাভাবজম”(১৮:৪২)
অর্থাৎ, ‘শম দম তপ শৌচ ক্ষান্তি,সরলতা,জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য-এগুলো ব্রাহ্মণদের স্বাভাবজাত কর্ম।’দেখা যাচ্ছে যে জ্ঞান বিজ্ঞান সহ সকল ভাল ভাল কর্মগুলো ব্রাহ্মণদের স্বাভাব জাত।ক্ষত্রিয়দের কর্ম গুলোও বেশ চমৎকার,তেজ,দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন,দান,শাসন ক্ষমতা এগুলি ক্ষত্রিয়দের স্বাভাবজাত।বাকী থাকছে বৈশ্য আর শূদ্ররা।
“কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বাভাবজম।।” (১৮:৪৩)
অর্থাৎ,’কৃষি,গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বাভাব জাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত’
এই পরিচর্যাত্মাক কর্মের অর্থ হলো সেবা করা।উচ্চ তিন বর্ণের মানুষদের ত্রমাগত সেবা করা।মানে যাকে বলে জন্মদাস,এবং এটা নাকি আবার স্বভাবজাত।দাসগিরি করা কিভাবে একটি গোত্রের সকল মানুষের স্বভাব হয়ে গেল তা বোঝ গেল না।ঠিক একই ভাবে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা কিভাবে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদেরই স্বভাব কর্ম হয়ে গেল তাও বোঝা কঠিন।কোন শূদ্র কখনো জ্ঞান চর্চা করতে পারবে না, দেশ শাসন করতে পারবে না,কারণ তার জন্ম একটা শূদ্র পরিবারে। মোটকথা ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয় মিলে খাবে-দাবে,ভোগ করবে,দেশ শাসন করবে, বৈশ্যরা করবে গরু পালন আর চাষবাস,শূদ্ররা হবে জন্মোদাস।কি চমৎকার ভগবানের বাণী! ”
এখানে আপনি লিখেছেন ‘ দেখা যাচ্ছে যে জ্ঞান বিজ্ঞান সহ সকল ভাল ভাল কর্মগুলো ব্রাহ্মণদের স্বাভাব জাত।’ আপনার কথাটাকে যদি আমি এভাবে বলি ‘ দেখা যাচ্ছে যে জ্ঞান বিজ্ঞান সহ সকল ভাল ভাল কর্মগুলো যাদের স্বাভাব জাত তারাই ব্রাহ্মণ।’ অর্থাৎ ব্রাহ্মণ গুন স্বরুপ । আপনার বাক্যে জন্মের দ্বারা, আর আমার বাক্যে কর্মের দ্বারা মানুষের ব্রাম্মন্যত্ব সিদ্ধ হয় । যা গীতায় বলেছে । না বুঝলে আবার পড়ুন । তারমানে শল্যচিকিৎসায় পারদর্শী ব্যক্তিকে আমরা ডাক্তার বলি , ডাক্তারের ছেলেকে ডাক্তার বলি না । পরিচর্যাত্মাক কর্মের সাথে শুদ্ররা যুক্ত, তাদের আপনি জন্মদাস বললেন, এককাঠি উপরে । জন্মদাস শব্দটা কিন্তু শ্লোকে নেই, আপনি সমার্থ করলেন । পুরোপুরো ভুল বলছি না, কিন্তু এই সমার্থ আপনি আপনার প্রয়োজনে ব্যাবহার করেছেন যাতে বিষয়টি আরো কদর্যভাবে স্থাপিত করা যায় । পরিচর্যা বলুন বা সেবা প্রদান বা hospitality যাই বলুন, ধরুন আপনি সেলুনএ গেলেন চুল কাটতে, যে ব্যাক্তি আপনার চুল কেটে দিল, সে আপনার পরিচর্যা করল, তাই বলে কি সে আপনার দাস ? আপনি কি তাকে কিনে ফেলেছেন ? অর্থাৎ তার কর্মের দ্বারা তাকে আমি শুদ্র শ্রেনিভুক্ত করতে পারি, তাই বলে সে আপনার দাস নয় ।
তবে জন্মের দ্বারা সিদ্ধ বর্নভেদ কালক্রমে সমাজে প্রচলিত হয়েছে বা রয়েছে । এটা মূলত ব্রাহ্মণদের আধিপত্য বজায় রাখার একটা কৌশল । আর শুদ্রদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম শোষন আর নিষ্পেষণের দিকে ঠেলে দিয়েছে । সেটা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না । আর এটা সমাজের সৃষ্ট বৈষম্য । তারজন্য গীতাকে এককভাবে দায়ী করা যায় না । কোন ধর্মগ্রন্থ ত্রুটিযুক্ত নয় ? ইসলাম খ্রীষ্টানদের তুলনা টানলে প্রসঙ্গ আরো বড় হবে । প্রশ্ন হল, গীতার আধ্যাত্মবাদ আর মানবতাবাদকে আপনি কতটা নিতে পারছেন । কেউ যদি পরিক্ষার তিন মাস আগে আসুস্থ হয়ে মনবল হারিয়ে ফেলে, এবং গীতা পড়ে তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়, তাহলে মন্দ কি ? ধর্মগ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য মানুষের সুচৈতন্যের উদয় ঘটানো । যারা আত্মজ্ঞানে বলীয়ান তাদের না পড়লেও চলে । আপনাকে নিশ্চই কেঊ ঘাড় ধরে বাধ্য করেনি গীতা পড়তে । আর এ কথাও কেউ বলেনি যে, প্রত্যেকটি বানী অবশ্য পাঠ্য এবং পালনীয় । হিন্দুধর্ম সকলকেই প্রশ্ন করার অধিকার দেয় ।
আপনি লিখেছেন…
”এটাকে বলা হয়ে থাকে একধরণের জীবন বিধান।হিন্দুরা তাদের অনান্য ধর্মগ্রন্থ(বেদ বা পুরান) গুলোর ক্ষেত্রে এমনটা দাবি করে না,যে সেটা সরাসরি ভগবানের মুখনিঃসৃত।শুধুমাত্র গীতার ক্ষেত্রেই এমনটা দাবি করা হয়ে থাকে, যেকারণে অধিকাংশ হিন্দুরা গীতা বলতে পাগল প্রায়।তা হতেই পারে, স্বয়ং ভগবানের বাণী বলে কথা!”
এটা কারা দাবী করে ? হিন্দুরা । ইশ্বর নিজে কি সেই দাবী করেছেন কোথাও ? বইয়ের শুরুতে কি লেখা আছে ” প্রতিটি বাণী ইশ্বরের বাণী এবং প্রশ্নাতীত ” তাহলে কে কি বলল তাতে কি যায় আসে । আর লেখা থাকলেও বা কি । আপনি পড়ে আপনার কি অনুভুতি হবে,আপনি কি রায় দেবেন, সেটা একান্ত আপনার ব্যাক্তিগত । আপনি ইশ্বরের ভৌগোলিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে লিখেছেন । অথচ আপনি এটা বুঝলেন না, ইশ্বর টিশ্বর কেউ না, মানুষই এটা রচনা করেছে , সমস্ত ধর্মগ্রন্থই মানুষের রচনা । (এটা শুধু হিন্দুরাই মানে, বাকিদের মান্য করিয়ে দেখান তো ।) তাই তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই ইশ্বরের সীমাবদ্ধতা রুপে প্রকাশ পায় । এজন্যই মরুপ্রধান আরবে, স্বর্গের বর্ননায় কুলুকুলু নদী আরে শীতল আবহাওয়া কল্পনা করা হয়েছে । আসল বিষয় হল, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ কারো উপর এই মতবাদ জোর করে না চাপিয়ে দিচ্ছে, ততক্ষন বিশ্বশান্তি নষ্ট হচ্ছে বলে হা রে রে রে রব তোলার কিছু নেই ।
সবশেষে আপনার পাঠকদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সনাতন ধর্ম সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন সাইজের জামা রেখে দেয় । যার যেটা গায় মানায়, সে সেটা পরতে পারে । ইচ্ছে না হলে না পরেও থাকতে পারে । অনান্য ধর্ম সমাজের সব মানুষের জন্য একই জামা রেখে দেয় । জন ও রহিমকে আটুক না আটুক ওই একই সাইজের জামা পরতে হবে । কথাগুলো আমার নয়, স্বামী বিবেকানন্দের । বেদ,গীতা,উপনিষদ যার যেটা খুশী মান, না মনলে না মান, আস্তিক, নাস্তিক, একেশ্বরবাদী, বহুইশ্বরবাদী যা খুশী হও। একটা ছোট্ট উদাহরন দিচ্ছি । হরিচাদ ঠাকুরকে অনেকে বলেন ধর্মগুরু অনেকে বলেন সমাজ সংস্কারক । আমি দ্বিতীয়টাই বলি । জন্মেছিলেন পুর্ববঙ্গের ওড়াকান্দিতে । তিনি ততকালীন সমাজের পিছিয়ে পড়া শুদ্রদের সামাজিক ও আধ্মাত্যিক উদ্ধারে ব্রতী হয়েছিলান । এইসব অশিক্ষিত মানুষগুলোর না তো বেদ, গীতা পড়ার জ্ঞান ছিল, না তো ব্রাহ্মণদের কার্পণ্যে সে পর্যন্ত পৌছতে পারত । হরিচাদ তাদের একটাই মূল মন্ত্র দিয়েছিলেন ”হাতে কাম, মুখে নাম ” । ওই এক মন্ত্র দিয়েই তার অনুসারিরা ৪০০-৫০০ বছর কাটিয়ে ফেলেছে । তার উপদেশ, বাণী, জীবন ঘটনা নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে,গান রচিত হয়েছে, এবং সেগুলি খুব সরল ভাষায়, মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম । এই হরিচেতনা বা জ্ঞান ই তাদের সামাজিক, নৈতিক ও আধ্মাতিক চরিত্র নির্মান করে আসছে। নিম্নবর্নের মানুষগুলো কিন্তু আপনার উদ্ধৃত গীতার শ্লোকের অপেক্ষায় বসে থাকে নি । তারা জেনেছে ‘ধৃ’ কে ধারন করতে বেদ-গীতার আবশ্যকতা নেই, শুধু ভাবের আবশ্যকতা আছে । এ হল ধর্মের প্রথম শ্রেনির পাঠ । সামাজিক অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন, শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে ক্রমে তারা প্রথম শ্রেনী, দ্বিতীয় শ্রেনী, তৃতীয় শ্রেনীর…পর্যায়ক্রমে পাঠ শেষ করে উত্তরনের পথে চলেছে ।
সময়ের সাথে পরিবর্তীত হয়েই, সতীদাহ, নরবলি, পাঠাবলি, দেবদাসী আজ লোপ পেয়েছে । সে যুগের কট্টরবাদী বর্নভেদ থেকে আমরা আজ অনেকখানি সরে আসতে পেরেছি । এবং ভবিষ্যতে বর্নপ্রথা পুরোপুরি সমাজ থেকে লোপ পাবে এই আশাও করতে পারি । এবং তা সম্ভব হবে আপনাদের মত মুক্তমনাদের চিন্তা চেতনার মধ্যদিয়ে ।
আপনার বিচার বিশ্লেষণ করার দক্ষতা ও সনাতন ধর্মের যে সত্য টা এতো সহজে বোঝালেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সবই পড়লাম এবং বুঝলাম। এখন বর্ণধর্ম সৃষ্টি হয়েছে মানুষের স্বভাব ও গুণ অনুসারে, জন্ম অনুসারে নয়। কিন্তু এর ভুল প্রয়োগে সমাজে বর্ণপ্রথা নামক যে প্রথা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা হিন্দুধর্মের জন্য একটা কাল অধ্যায় হিসেবেই সকল হিন্দু মানে। এখন যারা ঐ মানুষ্যসৃষ্ট বর্ণ-প্রথার দোহাই দিয়ে ঈশ্বরসৃষ্ট বর্ণধর্মকেই উচ্ছেদ করতে চায়, সেইসব সাম্যবাদীদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য হল, চারটি বর্ণের মধ্যে “শূদ্রের” কথা শুনলেই আমাদের চোখে ভাসে সামাজিক বৈষম্য, কিন্তু সমাজের মেথর, মুচি, চাকর-চাকরানী, সাধারণ শ্রমিক ইত্যাদি পেশার মানুষ দেখলে এদের বৈষম্য চোখে পড়ে না (বলা বাহুল্য, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পঙ্গু, অসহায় ভিক্ষারীদের কথা বাদই দিলেম), যেন বর্ণধর্ম নিশ্চিহ্ন হলেই এই পেশার মানুষগুলো সমাজপতি হয়ে যাবে; তবে নিজ যোগ্যতায় কেউ সমাজপতি হতে পারলে অবশ্যই তার শূদ্রত্বের অবসান হবে। এদের চোখে পড়ে না সারাজীবন সংগ্রাম করে ওরা কত কষ্ট করে বাঁচে, বেতন বাড়ানো, দৈনিক শ্রমের সময় কমানো ইত্যাদি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সভ্যতার শুরু থেকেই ওরা সংগ্রাম করেই যাচ্ছে, এরাই শূদ্র – এ এক নির্মম বাস্তবতা। আবার ব্রাহ্মণকে বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে এরা বৈষম্য খোঁজে, কিন্তু এটা ভাবে না ব্রাহ্মণ হয়ে কেউ জন্মায় না, বড় হয়ে যে ব্রাহ্মণের গুণ ও স্বভাব অর্জন করে সেই ব্রাহ্মণ, নিজ মেধার বলে যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সততা, পরোপকার ইত্যাদি বিষয়ে উতকর্ষ সাধন করে সেই ব্রাহ্মণ। একটা ক্লাসে ভর্তি হবার সময় সবাই ছাত্র হিসেবেই ভর্তি হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে ভাল ছাত্র, মধ্যম মানের ছাত্র এবং খারাপ ছাত্রদের শ্রেণীবিভাগ স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যায়, কেউ এতে বৈষম্য খোঁজে না, কারণ সবাই জানে, যে ভাল ছাত্র, সে নিজ যোগ্যতাতেই ভাল ছাত্র, যে খারাপ ছাত্র, সে নিজ যোগ্যতাতেই খারাপ ছাত্র – কেউ তাকে ঐ ক্যাটাগরিতে জোরে করে নিয়ে আসে নি। বাকিটা বুঝে নেন।
@নিরীহ মানুষ,
না,আপনি সবই পড়েনি এবং কিছুই বোঝেন নি।
আজ পর্যন্ত কোথাও শুনেছেন ব্রক্ষণের ছেলে শুদ্র হয়ে গেছে।আপনি শ্রীমদভগবদগীতা যথাযথ বইটির ১৮ অধ্যায়ের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর শ্লোক তাৎপর্যসহ পড়ে দেখতে পারেন,যেখানে নির্দিষ্টভাবে উল্লেক করা আছে কোন শূদ্রদের কখনও ব্রাহ্মণের কর্ম করা উচিত,তেমনি ব্রাহ্মণ উচিত নয় শূদ্রের কর্ম করা।এরপরও আপনাদের রোমান্টিকতা করতে ইচ্ছে করে।গীতা যেখানে বলছে স্বধর্ম শ্রেষ্ঠ,শূদ্রের কখনও ব্রাক্ষণের কর্ম করা উচিত নয়, যেখানে কিভাবে একজন শূদ্র নিজেকে ব্রাক্ষণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে?ভগবান নিজেই তো বলছে শূদ্রের কখনও ব্রাক্ষণের কর্ম করা উচিত নয়।এরপরও যদি রোমান্টিকতা করতে ইচ্ছে করে তবে পরমপিতা মনুর বুলি শোনেন-
ব্রাহ্মণো জায়মানো হি পৃথিব্যামধিজায়তে।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ধর্মকোষস্য গুপ্তয়ে।। (১/৯৯)
অর্থাৎ:ব্রাহ্মণ জন্মগ্রহণ করা মাত্রই পৃথিবীর সকল লোকের উপরিবর্তী হন অর্থাৎ সমস্ত লোকের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হন। কারণ, ব্রাহ্মণই সকলের ধর্মকোষ অর্থাৎ ধর্মসমূহ রক্ষার জন্য প্রভুসম্পন্ন হয়ে থাকেন।
ঐ যে বললাম আপনি পড়েন নি,পড়লেও কিছু বোঝেন নি,এটাই তার প্রমাণ।পড়লে দেখতেন আমি মূল পোষ্টের প্রথমেই আপনার বলা মুচি মেথর ইত্যাদি শ্রেণীর কথা বলেই লেখাটা শুরু করেছি।
এই লাইন গুলো পোষ্টেই ছিল,অথচ আপনার চোখে পড়েনি।
বাহ,বাহ,যেন মধু ঝরে পড়লো!কোথা থেকে পেলেন এই তত্ত্ব?শূদ্রত্ব থেকে অবসান পেতে হলে তাকে সমাজপতি হতে হবে!??এই বিষয়ে পরমপিতা মনুর স্পষ্ট বক্তব্য আছে আপনার মনে ধরতে আবার আঘাতও লাগতে পারে তবু বলছি।
আবার সমাজপতি!
না না ব্রাক্ষণকে মোটেই বেশী সুযোগ দেওয়া হয়নি।পরম পিতা তো সেই কবেই হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন
আশা করি, ব্রাহ্মণ নিয়ে আপনার রোমান্টিসিজমের অবসান হবে।
@আমি কোন অভ্যাগত নই,
রোম্যানটিক ধর্মিকদের চিন্তা চেতনা বোঝার জন্য একেবারে যুতসই মন্তব্য।
মজার ব্যাপার হচ্ছে বর্ণভেদ নিয়ে সাধারণ হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গির নিয়মিত পরিবর্তন ঘটছে। প্রথমত, এককালে বর্ণভেদের আউটকাম হিসেবে অস্পৃশ্যতা হিন্দু সমাজে প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল। তখন বলা হত এই কঠোর বর্ণবৈষম্য, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ধর্মের নির্দেশনা হতে আগত। এখন দিন পাল্টেছে। চাইলেও আগের মত কঠোরভাবে বর্ণবৈষম্য মেইনটেইন করা সম্ভব না। করতে চাইলে এই ২০১৪ সালে এসে একঘরে হয়ে কাটাতে হবে। তাই মানুষ নিজের প্রয়োজনেই কিছুটা রিল্যাকজেশন এনেছে। রিল্যাকজেশনের প্রথম ধাপে ধরা-ছোয়ার ব্যাপারটা শিথিল হয়, কিন্তু বিবাহের ব্যাপারটা আগের মতই থাকে। অর্থাৎ অসমবর্ণের বিবাহ সম্ভব না। তখন সেটাকে ধর্মীয়ভাবে জায়েজ করার জন্য চিপা-চুপা থেকে অনেক রেফারেন্স এনে বলা হত বর্ণবৈষম্যের ভেদে মানুষের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ঈশ্বরের নির্দেশনা নয়, নির্দশনার misinterpretation. বর্তমানে রিল্যাকজেশনের এই ধাপে এসে আমরা দেখ হিন্দুদের মধ্যে অসমবর্ণের বিয়েও হচ্ছে এবং সেটাকে ধর্মীয়ভাবে জায়েজ করা হচ্ছে মহাভারতের একাধিক অসমবর্ণের বিবাহের রেফারেন্সে। এবং দাবি করা হচ্ছে ঈশ্বরের সরাসরি দিক নির্দেশনা ছিল না, মানুষ এগুলা misinterpret করেছে এতোদিন। অথচ আমরা স্বয়ং ঈশ্বরের বাণীতেই এখন বর্ণভেদের নির্দেশনা দেখতে পাচ্ছি। এ থেকে প্রমাণিত হয় misinterpretation আসলে কিছু না, খুব স্পষ্টভাবেই বর্ণবৈষম্য নামক এই কদর্য বিষয়টির উৎস ঈশ্বরের বাণীতেই নিহিত। মানুষ আসলে ধার্মিক থাকতে চায়, কিন্তু ধর্মের সব রীতিনীতি পালন করাও সম্ভব না। তাই যেগুলো পালন করা সম্ভব না সেগুলা misinterpretation বলে নিজেকে safe side এ রাখতে চায়। একই ট্রেন্ড আমরা so called moderate muslim/practising muslim দের মধ্যেও দেখি। সভ্যসমাজে নিজেদের মান বাঁচানোর জন্য এরা অনেক অনৈতিক কর্মকান্ডকেই misinterpretation বলে দাবি করে।
মোদ্দা কথা, হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথা কোন misinterpretation না। একেবারে proper interpretation.
মুশকিল হচ্ছে ইসলামিস্টরাও তাই বলে। কোরান হাদিসে কোন ভায়োলেন্স নাই। সব কেবল সন্ত্রাসী আর কালপ্রিটদের মিসইন্টারপ্রিটেশন। 🙂
পরিস্কার দেখা যাচ্ছে পরমেশ্বর নিজের মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য, আর পা থেকে শূদ্র সৃষ্টি করেছিলেন । বিশ্বাসীরা জোর গলায় বলেন, ঈশ্বরের চোখে নাকি সবাই সমান! অথচ, ব্রাহ্মণদের মাথা থেকে আর শূদ্রদের পা থেকে তৈরি করার পেছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যটি কিন্তু বড়ই মহান! তারপরেও নাকি মিসইন্টারপ্রিটেশন। ক্যামনে কি!
@অভিজিৎ,
The difference is – we can criticize Gita openly without any fear of retaliation, and say that I do not agree with many of the verses in the Gita.
To interpret those verses, you mentioned, one needs to believe in the theory of reincarnation of life. As per that theory, someone becames Shudra in this life because of his/her wrong deeds in the past life. Without theory of reincarnation, I cannot explain why some children suffer from birth, but others don’t. Whether it is true or not – no one knows, but it should deter wrong deeds; I do not see anything wrong there. So, everything depends on your premises of interpretations.
@জিতেন রায়,
আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি। মুক্তমনা নীতিমালায় এই কথাগুলো লেখা রয়েছে:
২.৪। পোস্ট এবং মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে; আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়। মডারেটরের কাছে লেখা পাঠাতে হলে, বাংলা ইউনিকোডে লেখা জমা দিতে হবে। যে কোন সময় বাংলায় লেখার জন্য অভ্র বাংলা কিবোর্ড টুল ব্যবহার করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অভ্র বাংলা কিবোর্ড টুল ডাউনলোড করুন এখান থেকে। এছাড়া বিজয়, বর্ণসফট কিংবা অন্য পুরোনো বাংলা থেকে আপনার লেখা ইউনিকোডে কনভার্টের জন্য অনলাইন লেখনী ও কনভার্টার পাবেন এখান থেকে।
২.৫। বাংলা ব্লগে ইংরেজীতে লেখা মন্তব্য কিংবা রোমান হরফে বাংলায় লেখা মন্তব্য কর্তৃপক্ষ প্রকাশ নাও করতে পারে। এমনকি এ ধরণের মন্তব্য মুছে দেওয়ার অধিকারও মুক্তমনা সংরক্ষণ করে।
আশা করছি আপনি এই ব্যপারটার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। কম্পুটারে বাঙলা লেখা মোটেও কঠিন কাজ নয়। আপনার অদ্ভুত যুক্তিগুলোর উত্তর দেবার আনন্দ থেকে অভিজিৎকে বঞ্চিত করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ।
@জিতেন রায়,
এটা তো ভিন্ন প্রসঙ্গ। গীতায় কি আছে সেটা সেটা বলার জন্য কাউকে যদি ভয় পেতে নাও হয়, গীতায় যেটা লেখা আছে সেটা তো মিথ্যে হয়ে যায় না। গীতায় যে জাতিভেদ সমর্থনের উল্লেখ আছে, ঈশ্বর নিজেই যেখানে বর্নাশ্রমের স্রষ্টা – সেটাই লেখক বলার চেষ্টা করেছেন। এটার সমালোচনা করা জন্য কাউকে মারা যেতে হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা একেবারেই ভিন্ন প্রসংগ।
আপনার বক্তব্য হচ্ছে রিকার্নেশনের জন্য শূদ্রদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। আগের জন্মে তারা পাপ করেছিল তাই। আবার আপনিই বলছেন সেটা সত্য কিনা কেউ জানে না। তো ব্যাপারটা হচ্ছে শূদ্রদের উপর, দলিতদের অত্যাচারের ব্যাপারটা বাস্তবতা। তাদের অত্যাচারের পেছনে রিকারনেশনের যে থিওরি দেয়া হচ্ছে, সেটা সত্য কিনা আপনি নিজেই বলছেন – কেউ জানে না। আপনি বুঝতে পারছেন, অত্যাচার, অনৈতিক ব্যাপারগুলোকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এক কল্পিত রিকার্বেশনের কাহিনি এনে – যেটা সম্বন্ধে কেউই নিশ্চিত নয়। এখন কল্পিত জিনিস দিয়ে বাস্তবের অত্যাচারকে বৈধতা দিতে হলে যে কোন নারী বিদ্বেষী শ্লোক, জাতিভেদ, সব কিছুকেই বৈধতা দেয়া যায় – ব্যাটা নিশ্চয় পূর্বজন্মে খারাপ কাজ করেছিল বলে। জিহাদীরাও নিজেদের সন্ত্রাসের বৈধতা দেয় কল্পিত আল্লাহর বানীর কথা তুলে কিঙ্গাব বেহেস্তের কল্পিত হুরপরীর কথা ভেবে। বাস্তবিক অন্যায়ের সাফাই গাওয়ার জন্য যে কল্পিত রূপকথা হাজির করা হচ্ছে, সেটা বোঝা গেলেই বোধ হয় আপনি বুঝবেন সমস্যাটা কোথায়।
আর বাই দ্য ওয়ে, সবাই যখন বলছে অভ্র ডাউনলোড করে বাংলাতে লিখা শুরু করুন না কেন? অভ্রতে বাংলা লেখা খুবই সোজা। ইংরেজিতে যেভাবে টাইপ করেন, সেভাবে টাইপ করলেই বাংলা হয়ে যায়। যেমন, আপনি যদি bangladesh টাইপ করেন সেটা অটৈমেটিক ‘বাংলাদেশ’ হয়ে যাবে। অভ্র ডাউনলোডের লিঙ্ক এখানে।
আপনার পরবর্তী মন্তব্য বাংলায় আশা করছি।
৯ম অধ্যায় ৩২ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে
মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাং গতিম।।
অর্থাৎ হেপার্থ স্ত্রিলোক বৈশ্য শূদ্র অথবা যাহারা পাপযোনিসম্ভূত অন্তজ জাতি তাহারাওআমার আশ্রয় লইলে নিশ্চই পরম গতি প্রাপ্ত হন।
তাৎপর্য: পড়ালেখা না জানা স্ত্রিলোক জ্ঞানমার্গে ঈশ্বরকে ডেকে মোক্ষ লাভ করা অনেক কঠিন। তারা ভক্তিমার্গে কৃষ্ণকে ডেকে সহজে মুক্তি লাভ করতে পারে।
আগেকার দিনে পুরুষদের শিক্ষা লাভের জন্য গুরুগৃহে পাঠানো হত আর মেয়েদের গৃহের কাজ শিখানো হত।তাই সে সকল মহিলারা শাস্ত্র পরে জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞান মার্গের সকল গুণাবলী অর্জন করে ঈশ্বরকে ডাকা অনেক কঠিন ছিল।কিন্তু তারা সহজে ভক্তিমার্গে ভগবানকে ডাকতে পারবে।
এভাবে বৈশ্য শূদ্র এবং অন্তজ জাত জাদের শাস্ত্রজ্ঞান নেই তারা ভক্তিপথে মুক্তি পাবে এই কথা বোঝানো হয়েছে।
উল্লেখ্য আগে মুক্তি লাভের জন্য জ্ঞান মার্গ প্রধান পন্থা ছিল।
@অভিজিৎ, মানুষ আসলে ধার্মিক থাকতে চায়, কিন্তু ধর্মের সব রীতিনীতি পালন করাও সম্ভব না। তাই যেগুলো পালন করা সম্ভব না সেগুলা misinterpretation বলে নিজেকে safe side এ রাখতে চায়।
:p
অতীব প্রয়োজনীয় লেখা।
এই আলোচনাটির বেশ প্রয়োজন ছিল।
আশ্চর্য্য ব্যপার একটি উপমহাদেশ দ্বিখন্ডিত হল। সনাতন কালের একটা সমাজ দ্বিখন্ডিত হল।শত শত বতসর ধরে নিজ ভিটাতে এক অংশ মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে গেল অন্য অংশ সংখ্যাগুরু হয়ে গেল কিন্তু ধর্ম্ম গ্রন্থে বর্ন বাদের কথা শুধু অনুবাদ কারির ভুল ব্যখ্যার কারনে।
আরেক ধর্ম্ম শুধু শান্তির ধর্ম্ম- হিংসা বিদ্বেষ নির্যাতন সবই শুধু অপব্যখ্যার কারন।
আজকের জগতেও যদি এ সমস্ত বিশ্বাস করতে হয় তা হলে আমাদের মুক্তি কোথায় ?
@জিতেন রায়,
হ্যাঁ এটা হতেই পারে,শূদ্রের সন্তান উচ্চ গুণ সম্পন্ন হতেই পারে।তবে সবাইকে মানুষের সন্তান হিসেবেই দেখা উচিত,যেটা গীতায় করা হয়নি।এখন আপনি যদি গীতায় এরকম(সমতামূলক) কিছু খুঁজতে চান তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে।গীতায় এটাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে স্বভাব গুণ ও স্বভাবকর্ম হিসেবে।এই দুটো মিলে স্বভাব ধর্ম।(শূদ্র আর ব্রাহ্মণ কার স্বভাবগুণ কোনটা,কার কর্ম কোনটা তা পোষ্টে বলা হয়েছে।)আর গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৪৮ এবং ৪৯ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে এই স্বভাব ধর্ম অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং স্বভাবধর্ম বিচ্যূত হওয়া পাপ।অর্থাৎ শূদ্রের কখনও উচিত নয় ব্রাহ্মণের কর্ম করা,তেমনি ব্রাহ্মণের কখনও উচিত নয় শূদ্রের কর্ম করা।অর্জুন তার স্বভাব ধর্ম, যুদ্ধ(যেহেতু সে ক্ষত্রিয়) করতে চাচ্ছিল না বলেই গীতার উদ্ভাব।তাকে নানা উপদেশ দিয়ে প্রয়োচিত করা হয়েছিল যুদ্ধ করার জন্য,কারণ যুদ্ধ করায় নাকি অর্জুনের স্বভাব ধর্ম।গীতায় ব্যাপারটা এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।মোটকথা গীতায় ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের মধ্যে কোন সমতা তৈরি করা হয়নি বরং বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে।গীতা ভগবানের বুলি বা কোন মুনি ঋষির কল্পনা যায় হোক তাতে শূদ্রকে কখনও ব্রাহ্মণের কর্ম করার অধিকার দেওয়া হয়নি।বরং গীতায় শূদ্রকে নানা ভাবে অপমান করা হয়েছে।বাস্তব জীবনে একজন শূদ্রের পক্ষে ব্রাহ্মণের কর্ম করা সম্ভব হলেও গীতায় সেটাকে নিরুৎসায়ীতো করা হয়েছে।সাথে বলা হয়েছে শূদ্র যেন সারাজীবন শূদ্রের কাজই করে যায়।
আর যদি একগ্লাস দুধের মধ্যে হাফ গ্লাস চিনা মিশে থাকে তাহলে সেই দুধ আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকেনা বলেই মনেহয়।তাই গীতায় রোম্যানটিকতা খোঁজা বোকামী।
@প্রাক্তন আঁধারে,
I am sure – Gita contains misinterpretation of caste system; I reject that type of notion of the caste system. That’s what many people are trying to do as well.
When Gita says – Bahmin should remain as Bahmin, and Shudra should remain as Shudra forever, I say Gita is wrong. We know better than that. There could be many other misinterpretations in Gita; after all, it was written by human being with certain purposes in mind. But, this does not mean – everything in the Gita is useless. This is my point.
Obviously, you read Gita thoroughly, what do you think? Is it totally rubish?
@জিতেন রায়,
মুক্তমনা বাংলা ব্লগে বাংলায় মন্তব্য করতে হবে। ইংরেজীতে করা মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
ইংরেজিতে করা আর কোন মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
@জিতেন রায়,
রাবিশ কি রাবিশ না,সেটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যদি একটু নির্মোহ ভাবে গীতা পাঠ করেন।এটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে,অত সময় নেই,সংক্ষেপে দু একটি কথা বলা যেতে পারে।
আপনি নিজেই আপনার দ্বিতীয় মন্তব্যে বলেছিলেন
হ্যাঁ,স্বাভাবিক বিচার বিবেচনায় এটাই আসে।গীতাকে কোন ব্যাক্তির বক্তব্য বলেই প্রতীয়মান হয়,যেটা আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন।তাহলে মানেটা কি দাড়াচ্ছে,যে ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিরা গীতা লিখেছিল তারা তাদের নিজস্ব বক্তব্যকে স্বয়ং ভগবানের বক্তব্য বলে চালিয়ে দিচ্ছে।এটাকে কি বলবেন?নিঃসন্দেহে এটা একটা চরম ভণ্ডামী ও মিথ্যাচার।এখানেই সন্দেহ জাগে এরকম চরম মিথ্যাচার দিয়ে শুরু একটা বইকে আপনি কতটুকু শ্রদ্ধা করবেন?
দ্বিতীয়ত,গীতার শুরু যেখানে অর্থাৎ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, সেটাকে আপনার নিজেরই মনে হচ্ছে Silly.ব্যাপারটা আসলেই অনেকটা ওরকম Silly.ভেবে দেখা প্রয়োজন এরকম একটা Silly কাহিনী দিয়ে শুরু বই কতটুকু শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে আত্মাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এখানে আত্মার অবিনিশ্বরত্ব ও পুনঃজন্ম নিয়ে বলা হয়েছে।আত্মা কিভাবে একদেহ থেকে অন্য দেহে ঘুরে বেড়ায় এবং মানুষ কিভাবে শত শত বার জন্ম গ্রহন করে তা বলা হয়েছে।যাদের এই আত্মার উড়ে বেড়ানো ও শত শত জন্মগ্রহন করার ব্যাপারে বিশ্বাস নেই,তাদের পক্ষে এখানে মূল্যবান কিছু খোজা খুব কঠিন।
গীতার মূল শিক্ষা হল কর্মযোগ,যা তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।এই কর্মযোগ ব্যাপারটা বেশ কিম্ভুদ!ভগবানের বক্তব্য অনুসারে জীবকে কর্ম করতেই হবে।আবার সেই কর্ম হবে নিষ্কাম।মানে আপনি কর্ম করবেন কিন্তু তার ফল ভোগ করতে পারবেন না।অর্থাৎ আপনি চাকরি করবেন কিন্তু বেতন ভোগ করতে পারবেন না।যদি ভোগ করেন তাহলে নাকি আপনার ভেতরে মোহ জন্মাবে এবং একবার মোহ জন্মালে সেই ব্যাক্তির পক্ষে কখনই পরম গতি লাভ করা সম্ভব হবে না।
শুধু এই যুগের মানুষ না কোন যুগের মানুষের পক্ষেই সম্ভব না,প্রাকট্যিকাল জীবনে এই নিষ্কামকর্ম থিওরি প্রয়োগ করা।এরকম অধ্যায় ধরে ধরে বলে আরও কথা বলা যাবে।তবে সময় কম থাকায় এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।
পোষ্টে উল্লেককৃত অংশ ছাড়াও গীতার বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে শূদ্রদের আপমান করা হয়েছে।আরও একটা ব্যাপার,গীতায় ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র ছাড়া বাকীদের কথা স্বীকারই করা হয়নি।এই চারটি বর্ণছাড়াও শুধু হিন্দুদের মধ্যেই ঋষি সম্প্রদায় সহ অন্য গোত্রের মানুষও আছে,যাদেরকে গীতায় স্বীকার করা হয়নি। এছাড়া গীতায় অদ্ভুদ কিছু শ্লোক আছে,যেমন,কোন ব্যাক্তি মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে যে প্রাণীর কথা চিন্তা করবে পরবর্তী জীবনে সে ঠিক সেই প্রাণীরূপে জন্মগ্রহন করবে!
তারপরও গীতায় যদি মূল্যবান কিছু পেয়ে থাকেন তাহলে এই পোষ্টেই মন্তব্য করে জানাতে পারেন।
@প্রাক্তন আঁধারে,
People who respect Gita do so out of the belief that it contains words of God, and respect for religious books comes from that faith. This is a totally different issue altogether.
You said:“ভগবানের বক্তব্য অনুসারে জীবকে কর্ম করতেই হবে।আবার সেই কর্ম হবে নিষ্কাম।মানে আপনি কর্ম করবেন কিন্তু তার ফল ভোগ করতে পারবেন না।অর্থাৎ আপনি চাকরি করবেন কিন্তু বেতন ভোগ করতে পারবেন না।যদি ভোগ করেন তাহলে নাকি আপনার ভেতরে মোহ জন্মাবে এবং একবার মোহ জন্মালে সেই ব্যাক্তির পক্ষে কখনই পরম গতি লাভ করা সম্ভব হবে না।“
As far as I know – Shree Krishna did not say that you are not entitled to the fruits of your work. He asked us to do our duty faithfully, without expectation; he also said that – fruits of our actions will come from him. It makes sense. If you focus all your attention to the result, you cannot concentrate on the work itself. I find this verse very useful in my own life.
Also, “Moha” means fascination or addiction. You should work, but do not get addicted to your work. I find it useful in my life also; isn’t it correct in your own life?
So, I see plenty of oversimplification of the meaning here. You are focusing too much on your perceived result, which is to discredit Gita, and you are not paying much attention to the proper interpretation of those verses. This is exactly the point Shree-Krishna made in those verses.
Gita is a philosophical text, don’t judge everything literally. Yes, it depicts many ills of the society at the time, but there are hidden treasures as well.
As I said before, everything depends on your interpretation. Most of the readers go with the literal meaning because verses are words of God. You are not bound by that constrain.
I believe, if you do not put all your attention to the goal-post, you will be able to concentrate much better on the tricks of the play. That’s the first thing I learned from Gita, when I studied it during the break after my Secondary School Certificate examination.
I can tell you my own life story. My knowledge of Gita, at the time, helped me to get through the crisis before my Higher Secondary Certificate examination. I sudden fell ill due to jaundice attack just 3 months before the examination. I could not study at all. I told my father that I will have to drop out.
When I recovered from jaundice, I had only 1 month left before the examination. Suddenly, I remembered the advice from Gita – do your duty faithfully, and never look at the result; result will be judged by God.
I started to study for the exam, day and night (18 hours a day). I was not thinking about the outcome of my study. I told my father – I am going to sit for the exam, but still could drop out. He said – that will be OK with him.
I sat through the entire exam, and my result came. To my utter surprise, I got First Class. This is my own life story.
@জিতেন রায়,
আপনার করা সবগুলো মন্তব্যগুলো প্রথম থেকে আবার পড়েন।মনেআছে আপনি প্রথম মন্তব্যে কি বলেছিলেন?আপনি বলেছিলেন এসব জাত পাত বর্ণ বিদ্বেষ কোন কিছুই নাকি গীতা সৃষ্টি করেনি,করেছে বল্লাল সেন!পরে বুঝতে পেরেছেন আপনি ভূল ছিলেন এবং আপনার বক্তব্য থেকে পিছলে গিয়েছেন।এ থেকেই বোঝা যায় আপনি কেমন গীতা পড়েছেন এবং কতটা নির্মোহভাবে পড়েছেন।আবেগের অতিশয্য দিয়ে গীতা পড়লে শুধু গদ গদই হতে হবে,ভক্তিতে মথা নুয়িয়ে আসবে।
সমস্ত নারীজাতি, ও শূদ্রদের পাপাযোনি বলার পর আপনি গীতায় স্বর্ণ ভাণ্ডার খুজে পেয়েছেন।গীতার লেখক যে মহাভণ্ড,মিথ্যুক এই কথা মেনে নেবার পর আপনি রত্ন খুজে পেয়েছেন।ভাল কথা কোথায় সে রত্ন,কি সে রত্ন?
নিজে গীতা থেকে কোন একটা শ্লোক কোড করে দেখাতে পারলেন না,যে এই হলো সেই রত্ন ভাণ্ডার।আমি সংক্ষেপে যে চারটি পয়েণ্ট বলেছিলাম তার থেকে নিজের সুবিধা মতো একটা পেয়ে শুধু লম্বা লম্বা বুলি আওরে গেলেন।ঐ শ্লোকটার মূল অর্থ আপনি নিজেও আপনার বাস্তব জীবনে মানেন না,মানতে পারবেন না অথচ শ্লোক টাকে নিজের সুবিধা মত সাইজ করে নিয়ে নিজের ব্যাক্তি জীবনের গল্প বসিয়ে দিলেন।
কি সে মহান গল্প!একদা পরীক্ষা পূর্বে আপনার জ্বর এসেছিল।তারপর গীতা পাঠের মাধ্যমে আপনি জৌলুশ ফিরে পেয়ে পারীক্ষায় উত্তম রেজাল্ট করেন। শুধু আপনি একা নন আপনি ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ এরকম মহান কর্ম করে দেখিয়েছেন কোনরকম গীতা পাঠ ছাড়াই।তাদেরও পরীক্ষা আসন্ন ছিল.তাদেরও কঠিম ব্যামো হয়েছিল তারপর তারাও জৌলুশে ফিরে পেয়ে ভাল ফল করেছিলেন এরকম শত শত নজির আছে এবং তারা এটা করেছিলেন গীতাপাঠ ছাড়াই।ভবিয্যৎতেও এরকম ব্যামো মুক্তি ও পরীক্ষায় ভাল করার ঘটনা ঘটবে কোন রকম গীতা পাঠ ছাড়াই,শুধুমাত্র ব্যাক্তির মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের কারণে।
তবে রোম্যানটিকদের তালগাছও দাড়িয়ে থাকবে।ঐ যে আছে না , ঝড়ে কলা গাছ ভাঙে আর তাতে ফকিরের কেরামতি বাড়ে।
@প্রাক্তন আঁধারে,
I said before: “Gita is not responsible for this misinterpretation; culprits are the people who interpret it wrongly. The caste became a birth-right in the later stages, during the reign of Ballal Sen, if I remember correctly.”
You interpreted it as: “মনেআছে আপনি প্রথম মন্তব্যে কি বলেছিলেন?আপনি বলেছিলেন এসব জাত পাত বর্ণ বিদ্বেষ কোন কিছুই নাকি গীতা সৃষ্টি করেনি,করেছে বল্লাল সেন!”
Now, you compare what you said and I said; you cannot even interpret correctly what I said before.
There was caste-system before Gita was written. That caste system meant classifications of work, not caste-by-birth. Ballal Sen made it caste-by-birth, so a Brahmin can remain as Brahmin even though he/she is illiterate or businessman man.
___________
I said before: “I suddenly fell ill due to jaundice attack just 3 months before the examination.”
You interpreted it as: একদা পরীক্ষা পূর্বে আপনার জ্বর এসেছিল।তারপর গীতা পাঠের মাধ্যমে আপনি জৌলুশ ফিরে পেয়ে পারীক্ষায় উত্তম রেজাল্ট করেন। শুধু আপনি একা নন আপনি ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ এরকম মহান কর্ম করে দেখিয়েছেন কোনরকম গীতা পাঠ ছাড়াই।
I suffered from “jaundice” for 2 months just before the exam. I did not have an over-night fever, as you mentioned. You are misinterpreting my comment again.
@জিতেন রায়,
বাংলা ব্লগে মন্তব্য করতে হলে বাংলায় লেখা শিখতে হবে। ইংরেজিতে উত্তর প্রত্যুত্তর গ্রহণযোগ্য নয়। দয়া করে আর ইংরেজিতে মন্তব্য করবেন না।
Spell correction in my previous post: “genitor” should be “janitor”
Anyway, in response to the counter arguments against my previous post, I would like to clarify my position on the subject of religious scriptures.
This is how I see them – religious scriptures are written by human-beings, and interpreted by human-beings. Therefore, Gita contains somebody’s imaginations.
You are right – I have not read Gita thoroughly enough to know what’s contained in each “sloka.” I tried many times to read it, but could not make much progress because of too many questions about many of those verses. Interpretation of caste system was one of them. Also, the premise of the Kurukhetra War in which blood relatives kill blood relatives for a silly game was not believable to me, even though I think this was just a metaphorical cause of conflict between right and wrong.
Anyway, we have to judge everything with proper context. My view is that – not everything contained in the religious scriptures is trash; there are some philosophical revelations in those books. We can make use of them in our lives. If we trash those books, we will miss those treasures.
Religious scriptures of all religions claim divinity; that’s how those books achieved validity. It is up to the reader to believe it or not. I find validity of the caste system in the modern day labor classes. That’s how I interpret caste system, mentioned in the Gita. Following that line of thought – I can say that, some parents could be Shudra, but their Children could be Bahmin or Khaitriya or Baishya.
I understand that – you are arguing from a different platform. You are arguing from the point of view that – Gita contains words from the mouth of the God. I do not think that way; I think Gita contains imaginations of some Rishi, which were compiled in the Gita. We are judging from two different platforms. That’s why we differ. I am not pleading for the divinity of Gita at all. In fact, I get totally amazed by people, many of them are highly educated, when they entrust their total confidence on the fact that Gita contains words from the mouth of God.
Spell correction in my previous post: “genitor” should be “janitor”
Anyway, in response to the counter arguments against my previous post, I would like to clarify my position on the subject of religious scriptures.
This is how I see them – religious scriptures are written by human-beings, and interpreted by human-beings. Therefore, Gita contains somebody’s imaginations.
You are right – I have not read Gita thoroughly enough to know what’s contained in each “sloka.” I tried many times to read it, but could not make much progress because of too many questions about many of those verses. Interpretation of caste system was one of them. Also, the premise of the Kurukhetra War in which blood relatives kill blood relatives for a silly game was not believable to me, even though I think this was just a metaphorical cause of conflict between right and wrong.
Anyway, we have to judge everything with proper context. My view is that – not everything contained in the religious scriptures is trash; there are some philosophical revelations in those books. We can make use of them in our lives. If we trash those books, we will miss those treasures.
Religious scriptures of all religions claim divinity; that’s how those books achieved validity. It is up to the reader to believe it or not. I find validity of the caste system in the modern day labor classes. That’s how I interpret caste system, mentioned in the Gita. Following that line of thought – I can say that, some parents could be Shudra, but their Children could be Bahmin or Khaitriya or Baishya.
I understand that – you are arguing from a different platform. You are arguing from the point of view that – Gita contains words from the mouth of the God. I do not think that way; I think Gita contains imaginations of some Rishi, which were compiled in the Gita. We are judging from two different platforms. That’s why we differ. I am not pleading for the divinity of Gita at all. In fact, I get totally amazed by people, many of them are highly educated, when they entrust their total confidence on the fact Gita contains words from the mouth of God.
ভারতে বর্ণবাদ আদিতে ছিল না। ভারতের আদি ধর্ম জৈন। তাতে বর্ণবাদ নেই। বর্নবাদের প্রথম প্রকাশ ঋকবেদে। তাও নবীন শ্লোকগুলিতে যখন ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষাটা সংস্কৃত হতে শুরু করেছে। উরাল পর্বতমালা থেকে আগত সাদা চামরার আর্য্যরাই এটা চালুকরে বর্ন সংকর এবং আদিবাসিদের সাথে নিজেদের পার্থক্য রাখতে। প্রথমে শুধু দুটো জাত ছিল। আর্য্য আর অনার্য্য। আর্য্যদের ও সবাইকে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের কাজ করতে হত। অযোধ্যার জনক রাজ, যজ্ঞ করতেন, রাজা ছিলেন, আবার হাল ও চালাতেন। গণরাজ্যগুলিতে বর্ণ বৈষম্য আরো কমছিল, গণতন্ত্রের কারনে। মূলত রাজতান্ত্রিক জনপদেই বর্নভেদ তীব্র আকার ধারন করে।
গণরাজ্যগুলির পতন বর্নভেদ সুতীব্র করে। গণতান্ত্রিক অধিকার হারানোর সাথে সাথে ভারতের মানুষ অনেক কিছু হারিয়েছিল।
মহাভারতে বর্ণভেদ নিয়ে আমি দীর্ঘদিন ভেবেছি এবং ঘেঁটেছি। আমার আবিস্কারগুলি কোনদিন লিখব। আজকাল সময় পায় না। তবে সারসংক্ষেপ এমন
(১) মহাভারতের অনেক ভ্যারিয়ান্ট আছে । দক্ষিন ভারতের মহাভারতগুলিতে বর্নভেদের বিরুদ্ধে প্রচুর উপখ্যান জুরে দেওয়া হয়েছিল
(২) মহাভারতের লেখক মহা চালু।
উনি বর্নভেদের বিরুদ্ধে অনেক ডায়ালোগ মেরে, কর্নের মতন একটা প্রটাগনিস্ট চরিত্র তৈরী করেও, তাকে হারিয়ে দিলেন। মহাভারতে বর্নভেদের বিরুদ্ধে অজস্র উপাখ্যান-কিন্ত সর্বত্র বর্নভেদের জয় হয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ, কর্ন হবু শশুরকে পরাস্ত করলেন-যে সুতপুত্র বলে, নিজের ক্ষত্রিয় কন্যার বিবাহ দিতে চাইছিল না। যুদ্ধে হেরে গিয়ে, তিনি বললেন বাপু-আরত কিছু করার নেই। যেহেতু হেরে গেছি, মেয়ে তোমার।
কর্ন সেই ক্ষত্রিয় কন্যার পানি গ্রহন করেন নি। বরং সেই কন্যার দাসীকে বিবাহ করে, ক্ষত্রিয় কন্যাকে অপমান করেন।
এবার আমি কি বুঝবো?
লেখক বর্নভেদের পাছায় লাথি মেরেছেন?
না সুকৌশলে বর্নভেদকেই টেকালেন?
আমি শেষের টাকেই সত্য বলে সিদ্ধান্তে এসেছি। কারন মহাভারতে মোটে দুটি অসবর্ন বিবাহের সন্ধান আছে।
প্রথমটি ভীম হিরিম্বা। এখানে যুদ্ধিষ্ঠির এবং কুন্তীর ডায়লোগটা ক্লাসিক-তাদের বক্তব্য ছিল-বিবাহে প্রেমই আসল। স্ত্রঈর প্রথম পরিচয় স্বামীর প্রতি প্রেমে। সেখানে যেহেতু হিরিম্বা খাঁটি সেহেতু সে ভীমপত্মী হিসাবে কোয়ালিফায়েড।
দ্বিতীয়টি উলুপির সাথে অর্জুনের বিবাহ। উলুপী নাগকন্যা। রাজকন্যে হলেও নীচু জাতের। আদিবাসীদের বিশেষত নাগেদের মধ্যে নিয়ম ছিল, কন্যা যাকে চাইবে, তাকেই বিয়ে করবে। উলুপী অর্জুনের প্রেমে পড়লেন। অর্জুনের বিয়ে করার বিশেষ ইচ্ছা ছিল না। আবার উলুপীর বাবাকে নাগরাজকে চটানোর ক্ষমতাও ছিল না। তিনি ছিলেন যুধিষ্ঠিরের দূত।
ফলে মহাভারতের দ্বিতীয় অসবর্ন বিবাহটি হয়।
গীতার সংকলন কাল -পোস্ট উপনিষদ পিরিয়ডে। মানে চতুর্থ থেকে পঞ্ছম শতকে। মহাভারত ক্রমশ সংযোযিত হয়েছে প্রায় ১৫০০ বছর ধরে। নতুন নতুন আইটেম, গীতাও একটা আইটেম-মহাভারতে ১৫০০ বছর ধরে যোগ হতে হতে এসেছে।
তবে আমার প্রিয় সাহিত্য মহাভারত। প্রিয় কাহিনী মহাভারত। মানুষ সমাজ ধর্ম রাষ্ট্র প্রেমে যুদ্ধ-হেন রং নেই যা এখানে নেই। একমাত্র টলস্টয়ের ওয়ার এন্ড লাভ এর কাছাকাছি।
@বিপ্লব পাল,
দাদা আপনার বিশ্লেষণ খুব ভাল তবে, আপনার কথা আমার কাছে মাঝে মাঝে খুব ধোয়াটে লাগে কারনটা সম্ভবত এই যে ভারতীয় ধর্মগুলি সম্পর্কের আমার জানাশোনা খুবই ভাসা ভাসা, কাজেই একটু বিস্তারিত বললে আমার জন্য সুবিধা হত বুঝতে । ভারতের আদি ধর্ম জৈন ধর্ম মানে কি তথাকথিত অনার্যরাই জৈন ছিল?
আর আর ভাষাটা সংস্কৃত হতে শুরু করেছিল মানে কি? আর্যদের আদি ভাষাই কি বৈদিক সংস্কৃত না?
অফটপিক, তবু একটা প্রশ্ন করি জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ, আর সেটা হল বৈদিক সংস্কৃত আর ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতের মধ্যে মুল পার্থক্য কি? শুনেছিলাম যে বৈদিক সংস্কৃতের নাকি লিপি নাই, তবে দেবনাগরী কি ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত লিপি? উইকি তে ব্রাহ্মি লিপি দেখলাম, যেটা সেমিটিক লিপির মত দেখা যায়, ফিনিশিয় লিপির মত। আচ্ছা আর্য লিপি বলে কি কিছু ছিল কোনদিন?
মহাভারতের লেখক বেদব্যাস না? এই একই লোকই বেদও লিখেছেন না?
@অর্ফিউস,
সব ব্যাখ্যা করতে অনেক লিখতে হবে। ঋকবেদের ভাষা ইন্দোইউরোপিয়ান-যা ল্যাটিন এবং সংস্কৃতের মাতা। ঋকবেদ ৩০০০ বছর ধরে সংকলিত। ৫০০০ খৃঃপূ থেকে ২০০০ খৃঃপূ। এর মধ্যে আস্তে আস্তে ভাষাটা সংস্কৃত হয়ে যায়।
দেবনাগরী লিপি এসেছে অনেক পরে। সেসব অনেক কথা।
@অর্ফিউস,
চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। বৈদিক সংস্কৃত এবং ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতের প্রধান পার্থক্যগুলো লক্ষনীয় এদের ধ্বনি , বাক্য বিন্যাস তথা ব্যকরণ এবং শব্দ চয়নে। পন্ডিত পানীনী খৃঃপূঃ চতুর্থ শতাব্দীতে ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতির ব্যকরণ প্রণয়ন করেন যা বৈদিক সংস্কৃতের উত্তরসূরী। বৈদিক সংস্কৃত আসলে আদি পারসিক ভাষা আভেস্তানির সাথে ঘনিষ্ট। এ কারনে ভাষাবিদেরা বৈদিক সংস্কৃতকে ইন্দো – ইরানিয়ান পরিবারের একটি সদস্য বলে গন্য করেন। ইন্দো – ইরানিয়ান ভাষা পরিবার আবার ইন্দো – ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য । এ বিষয়ে এক নজরে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন।
@সংশপ্তক ভাই,লিঙ্কগুলার জন্য অশেষ ধন্যবাদ 🙁 । পড়ার ফাঁকে বুদ্ধি করে বৈদিক সংস্কৃত ব্যাকরনে ঢুকেছিলাম, আর এখানেই সর্বনাশ হয়েছে! যাহোক একটা কথা জানার ছিল জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। সংস্কৃত ভাষার কি নিজস্ব কোন লিপি কোনদিন ছিল?
@অর্ফিউস,
সংস্কৃত ভাষা ছিল একটি মৌখিক ভাষা এবং এর কোন নিজস্ব লিপি ছিল না যেমন ইংরেজী সহ বেশীরভাগ ইউরোপীয় ভাষারও নেই ( ইংরেজী লাতিন লিপিতে লেখা হয়) । সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষা বিবর্তিত হওয়ার পরের সময়কালে ব্রাম্মীয় লিপিতে প্রাকৃত ভাষার লিখন শুরু হওয়ার পরে সংস্কৃতও ব্রাম্মীয় লিপিতে লেখার প্রচলন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন সংস্কৃত পান্ডুলিপিটি খৃঃপূঃ প্রথম শতকের যা ব্রাম্মীয় লিপিতে লেখা এবং প্রাকৃতের চেয়ে অনেক নতুন। অর্থাৎ সংস্কৃতের অনেক আগেই সংস্কৃত থেকেই বিবর্তিত প্রাকৃত ভাষার লিখন চর্চা শুরু হয়। বিস্তারিত পাবেন এখানে।
@সংশপ্তক ভাই, ধন্যবাদ লিঙ্কটা পড়লাম। তবে ব্রাহ্মী লিপির আকার গুগল করে আগেও দেখেছিলাম, এখন আবার দেখলাম। দেবনাগরীকেই হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সাথে বেশ মানানসই বলে মনে হয়েছে, ব্রাহ্মী লিপিতে কেমন জানি অনার্য অনার্য বা সেমিটিক গন্ধ আছে :)) ।
লেখাটার দরকার ছিল। (Y)
@অভিজিৎ,
দাদা,আপনি বলেছিলেন বলেই লেখা।
@অভিজিৎ,
দাদা,আপনি বলেছিলেন বলেই লেখা।
The meaning of caste system got lost somewhere in the translation. Four castes are divisions of labor; these divisions were there in the past, and these divisions will be there in the future forever. Gita is not responsible for this misinterpretation; culprits are the people who interpret it wrongly. The caste became a birth-right in the later stages, during the reign of Ballal Sen, if I remember correctly. He is responsible for this.
No one is born as Shudra; people become Shudra due to their profession. There is nothing wrong being a Shudra; only wrong is to treat them as a lower-caste people. I do not know if Gita has advised people to do so.
A genitor gets his/her proper respect in the civilized counties. If our society cannot do so, it’s the problem of our damn society.
@জিতেন রায়,
আপনি পোষ্টের এই বাক্যগুলো পড়েন নি
নাকি পড়েও বিশ্বাস হচ্ছে না।অধ্যায় আর শ্লোক নম্বর তো উল্লেক করা আছে,গীতা খুলে নিজের চোখে একবার পড়ে দ্যাখেন।
আপনি নিজেই বলছেন যে আপনি ঠিক জানেন না গীতায় কি আছে!তো নিজেই যখন জানেন না,নিশ্চিত না,তখন না জেনেই কেন গীতার পক্ষে রোম্যানটিকতা করছেন?এই পোষ্টটা আবার একবার পড়েন,পড়ে যদি সন্দেহ জাগে তো গীতা খুলে যে শ্লোকগুলি এই পোষ্টে কোড করা হয়েছে সেগুলো মনযোগ দিয়ে পড়েন।গীতার বিভিন্ন জায়গায় শূদ্রদের আপমান করা হয়েছে।৯ অধ্যায়ের ৩২ নম্বর শ্লোকে শূদ্রদেরকে ‘পাপযোনি’ বলা হয়েছে।যা চরম আপত্তিকর ও নোংরা।
ব্যক্তির দেবত্বপ্রাপ্তির বিরুদ্ধে বেশ লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদের মূলে কুঠারাঘাত খুব কমই পাওয়া যায়। গ্রন্থভিত্তিক ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে আরেকজন সম্মুখযোদ্ধা যুক্ত হলো।
@এনালিস্ট,
এদেশে যেহেতু হিন্দুধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কম,তাই এই ধর্ম নিয়ে লেখালেখি কিছুটা কম হয়েছে।পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভগবদগীতার বৰ্ণ বৈষম্যমূলক বানী সৰ্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম। :-s
লেখককে ধন্যবাদ।
@তারিক,
শুধু গীতা না অধিকাংশ বৈদিক ধর্মগ্রন্থ গুলোই বৈষম্য মূলক।ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর এবং গুছিয়ে লেখা। তবে কিছু বানান ভুল বেশ চোখে পড়ে। বানানের দিকে আরেকটু সচেতন হলে লেখাটা আর ভালো লাগতো। ধন্যবাদ (Y)
@নিলয় নীল,
হ্যাঁ,বানানে কিছু সমস্যা আছে,পরবর্তীতে এটা মাথায় থাকবে।ধন্যবাদ, নীলয়।
@আদিল মাহমুদ,
শুধু ভারতে নয় বাংলেদেশেরও এসব এখনও প্রচলিত।পোষ্ট আমি দু একটা বলেছি মাত্র।এসব কথাবার্তা উচ্চবর্ণের হিন্দুরা রেনডম ব্যাবহার করে।তবে নিজেদের মধ্যে,প্রকাশ্য বলাটা এখন অনেকাংশে কমে গেছে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই অসাধারন লেখাটি উপহার দেয়ার জন্য। হিন্দু ধর্মের ব্যবচ্ছেদ করে বাংলাতে খুব কম লেখাই আছে। আপনি এই অভাবটা পুর্ন করতে যাচ্ছেন বলেই আমার বিশ্বাস। পাঠক হিসাবে আমার পুর্বেও আপনার লেখার প্রতি খুব উঁচু ধারনা ছিল, এখন সেটা আরো উঁচু হল। নিয়মিত লিখতে থাকলে খুব দ্রুতই আপনি মুক্ত মনার প্রথম সারির লেখকে উন্নিত হতে যাচ্ছেন বলেই আমার বিশ্বাস। চালিয়ে যান। অনেক শুভেচ্ছা ও আন্তরিক শুভ কামনা রইল (F)
@অর্ফি ভাই,
ধন্যবাদ।
😀 , ভগবানের ভূগোল এবং প্রানীবিদ্যার জ্ঞানে আমিও মুগ্ধ হলাম।
হিন্দু ধর্মের জাতভেদ ইত্যাদী নানান তত্ত্ব সম্পর্কে কিছু বলার দেখি না। এখনকার হিন্দু সমাজ প্রচলিত বহু কুসংস্কার, ভয়াবহ সব অমানবিক তত্ত্বের প্র্যাক্টিস মোটামুটি বন্ধ করলেও এত সহজে পুরো দূর হবে না বলাই বাহুল্য। জাত প্রথার ব্যাপারে জানি যে এখনো ধর্ম মানুক না মানুক প্রায় সব হিন্দু পরিবারেই সেটেল্টড ম্যারেজের ক্ষেত্রে জাতপাত মেনে কিসব পূঁজি পুথি খুলে গ্রহ নক্ষত্র মিলিয়ে সম্পর্ক করা হয়। অসবর্ন বিবাহ ধরা হয় ভয়াবহ অমংগলের নিশানা হিসেবে। অমিতাভ পুত্র অভিষেকের সাথে বিয়ের আগে ঐশ্বরিয়া রায়কে কলাগাছের সাথে আগে বিবাহ করে নিতে হয়েছিল। মনে আছে সে সময় পত্রিকার ছবি, পন্ডিতের দেওয়া নিদান অনুসারে অমিতাভ ভাবী পুত্রবধুকে সংগে নিয়ে উপযুক্ত কলাগাছ পাত্রের সন্ধানে বেরিয়েছেন 😀 । পূর্ব পুরুষের সংস্কারের কাছে এখনো কিভাবে আধুনিক বলে পরিচিত মানুষ মানসিকভাবে জিম্মী হতে পারে আবার টের পেয়েছিলাম।
আমি নিশ্চিত নই জাত তুলে গালিগালাজ দেবার ব্যাপারগুলি এখনো কতটা ঘটে। আমার ব্যাক্তিগত ধারনা খুব বেশী নয়, ভারতের অনুন্নত বা পল্লী এলাকায় কিছু ঘটে জানি। বাংলাদেশে এর মাত্রা কেমন?
@আদিল ভাই,
এই খবর পড়ে আমার খুবই অবাক লেগেছিল। ভাবছিলাম যে মুসলিম সমাজেও এই পদ্ধতি থাকলে কি হত !!! সেক্ষেত্রে মনে হয় তসবিহের সাথে বিবাহের ব্যবস্থা হত, যেহেতু গাছ পাথর এইসব পুজা করা হারাম, তাই গাছ বিয়ে গুনাগের কাজ হত বলেই মনে হয় 😀
@আদিল মাহমুদ, শহুরে সমাজে জাত তুলে গালি দেয়ার প্রবণতা কম। তবে পশ্চাদপদ এলাকায় এখনও যথেষ্ট রয়েছে। আর জাত তুলে গালি দেয়াটা কমে আসলেই মনের ভেতরে জাতভেদ পুষে রাখা মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। ক্ষণে ক্ষণে ঠিকই আসল রূপ বের হয়ে আসে।
গীতা মহাভারত লেখার প্রায় এক হাজার বছর বাদে মহাভারতের সাথে জুরে দেওয়া হয়েছিল। এর ভাষার গঠন এবং থীম মহাভারতের মূল রচয়িতাদের সাথে মেলে না।
মহাভারতের অজস্র উপাখ্যানে বর্নভেদের বিরুদ্ধে গরম গরম ডায়ালগ দেওয়া আছে ( আমি এখানে কিছু কিছু মাত্র লিখছি। অথচ গীতাতে বর্ণভেদের পক্ষে চরম সাফাই
– কর্নের সাথে অর্জুনের প্রথম সংঘাত, হস্তিনাপুরের রাজপুত্রদের পরীক্ষাসভায়, কর্ন কৃপাচার্য্যকে প্রশ্ন করেন, কেও জন্মগুনে ক্ষত্রিয় হতে পারে কি না?
– দ্রোপদীর স্বয়ংবর সভায় কর্নকে সূতপুত্র বলে প্রত্যাঘাত করলে, দুর্যোধন এর প্রতিবাদ করে বলেন, ক্ষত্রিয় হয় তার ক্ষমতায়, জন্মে না।
-কর্নের বিবাহেও একই দৃশ্যের পরিনতি। ক্ষত্রিয় রমণীদ্বারা বারে বারে বর্নবিদ্বেশের কারনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হতাশ কর্ন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন। এই সময় তার পিতা সূর্য্য, তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলেন, বর্নভেদ খুব দুর্ভাগ্যজনক প্রথা। তবে তার বিরুদ্ধে লড়ে প্রমান করতে হবে, তা অসার। প্রথাকে মেনে আত্মহত্যা করা কাজের জিনিস না।
-কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ঘটোৎকচের প্রবেশের সময় ও তাকে একই কথা বলেন যা বর্নভেদ অতীব দুর্ভাগ্যজনক।
– কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোনাচার্য্য সেনাপতি হলে, ইন্দ্র তাকে টিপ্পনী করে বলে, এ কাজ কোন ব্রাহ্মনের না। দ্রোন উত্তর দেন, একই মানুষ যখন পড়ায় বা শেখে, সে ব্রাহ্মন, যখন তাকে অস্ত্র ধরতে হয় সে ক্ষত্রিয়, যখন যে লাঙল চালায়-সে বৈশ্য। জন্মগত ভাবে কেও ব্রাহ্মন বা ক্ষত্রিয় না।
গোটা মহাভারত জুরেই বর্নভেদের থিসিস বনাম এন্টিথিসিসে ভর্তি।
সেখানে গীতাতে এসে হঠাৎ করে এতটা পরিস্কার বর্ণবাদ এটাই প্রমান করে, এটি পরে জুরে দেওয়া হয়েছিল ( যা গীতার সংস্কৃত ব্যাকারণ দ্বারাও বোঝা যায়)।
অর্থাৎ ভারতীয় সমাজে বর্নবাদের বিরুদ্ধে একটা চাপা রাগ, আক্রোশ ছিল-সেটা মহাভারতেও দেখা যায়। কিন্ত যত সময় গেছে, সেই বর্নবাদকে আরো জোর করে চাপানো হয়েছে। গীতাই তার প্রমান।
@বিপ্লব পাল,
আমি যতদূর জানি গীতা মহাভারতে শঙ্করাচার্য যোগ করেছিলেন।
তবে মহাভারতের বিভিন্ন স্থানে এবং রামায়নে যে বর্ণবাদ (রাম কর্তৃক শম্বুকের হত্যা দ্রষ্টব্য) আছে, তার সাথে গীতার বর্ণবাদের পার্থক্য আছে বোধহয়। কারন গীতায় জন্মদ্বারা বর্ণ নির্দেশ করা হয়নি। বরং গুণ ও কর্ম অনুসারে বর্ণবাদ করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ।। (১৮-৪১)
এখানে কিন্তু কর্ম ও স্বভাবের ভিত্তিতেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় , বৈশ্য ও শূদ্রের ভাগের কথা বলা হয়েছে।
আমার ধারনা মহাভারত ও রামায়নের যুগের জন্মসূত্রে বর্ণবাদের যে সংস্কার হিন্দুদের মধ্যে ছিল, তা দূর করার জন্য পরবর্তীতে গীতার মধ্যে বলা হয়েছে প্রত্যেকের স্বভাব ও কর্মদক্ষতা দ্বারাই তার বর্ণ নির্নীত হবে।
@রনবীর সরকার,
সত্যি নাকি? আমি তো জানতাম যে গীতা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের অংশ, যদিও বাংলা মহাভারতের ভীষ্ম পর্ব পড়েও গীতার সাথে তেমন মিল পাই নি। হিন্দু ধর্মের বেশ কিছু ব্যাপার সবসময়য়েই আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়েছে।
@অর্ফিউস,
আসলে মহাভারতের ভাষাশৈলীর সাথে গীতার ভাষাশৈলীর অনেকটাই পার্থক্য আছে, আর এটার সাথে শঙ্কারাচার্যের সময়কার ভাষাশৈলীর অনেক মিল পাওয়া যায়। এছাড়া হঠাৎ করে যুদ্ধক্ষেত্রে এরকম একটা দার্শনিক শাস্ত্রের উদ্ভবকে অনেকেই পরে জুড়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন। শঙ্কর না করলেও হয়ত শঙ্করের কোন শিষ্য দ্বারা হয়েছে। আসলে তখনকার যুগে অনেকেই নিজস্ব দর্শন বা মতামত নিজের নামে না করে তা কোন প্রাচীন শাস্ত্রে জুড়ে দিতে চাইতেন কারন তাহলে ওই মতবাদ বা দর্শন লোকের কাছে অধিক প্রচার পাবে।
রামায়নের উত্তরকান্ডও যে পরে জুড়ে দেয়া হয়েছে এ ব্যাপারেও অনেক বিশেষজ্ঞরা একমত।
//হিন্দু ধর্মের বেশ কিছু ব্যাপার সবসময়য়েই আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়েছে//
ইসলাম যেরকম মহম্মদের দ্বারাই রচিত, হিন্দুধর্ম সেক্ষেত্রে বহুকালে বহু মানুষের দ্বারা রচিত। তাই রহস্য থাকাটাই স্বাভাবিক। 🙂
@রনবীর সরকার,
ইসলাম মহম্মদ দ্বারা রচিত না। এটিও বারোভূতের উপাখ্যান। যে মহম্মদ চরিত্র সবাই জানে, তা ঐতিহাসিক না। ঐতিহাসিক মহম্মদ খুব সম্ভবত ধার্মিক না-একজন প্রগতিশীল আরব নেতা ছিলেন, যাকে পরে রূপকথার মাধ্যমে নবী বানানো হয়। এই নিয়ে আগে বিস্তারিত লিখেছি।
@বিপ্লব দা, সিরিজটা শেষ করবেন কবে? ভালই তো চলছিল।
@রনবীর সরকার, ধন্যবাদ ব্যখ্যা করার জন্য।
এটা হলে তো রাম কে আর শুদ্র বধে দোষ দেয়া যায় না কি বলেন? উত্তরকান্ডেই মনে হয় এটা পড়েছিলাম। সমস্যা হল হিন্দু শাস্ত্রের কোন বই তো দুরের কথা, বইয়ের কোন অধ্যায়েই পুরো পড়া হয়নি, মাঝে মাঝে উত্তেজক অংশগুলো ছাড়া 🙂 ।
সেতো বটেই, ইসলাম বা কোরান যেমন মুহাম্মদ আর তার সমসাময়িক শিষ্যদের লেখা এটা নিয়ে আমার কোনই সন্দেহ নেই। তবে ইদানিং বিপ্লব দার লেখা পড়ে বেশ ঘাবড়ে গেছি। মুহাম্মদ বলেই নাকি কেউ ছিলো না বলেই তিনি লিখেছিলেন। দেখা যাক উনার পরের পর্ব গুলিতে কি থাকে।
@রনবীর সরকার, আমি একটা উত্তর দিচ্ছি শেষে।
@বিপ্লব পাল,
আপনার বক্তব্য যৌক্তিক।আর গীতার মত মনুসংহিতাতেও বর্ণবৈষম্য প্রবল।এই মনুসংহিতা গ্রন্থটির রচনাকাল সম্পর্কে আপনার ধারণ কি?
@প্রাক্তন আঁধারে,
মনু স্মৃতির রচনা কাল যখন ইসলাম ভারতে সবে ঢুকছে। ৫০০-৮০০ শতাব্দি। তখন সনাতন ধর্ম পচে গলে গন্ধ বেড়োচ্ছে।
“চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
গীতায় বর্ণিত বর্ণব্যবস্থা কিন্তু গুণ ও কর্ম অনুসারে করা। গীতায় কোথাও ব্যাপারটা জন্ম অনুযায়ী বলা হয়নি।
একজন মানুষ তার পূর্বজন্মজনিত সংস্কারের কারনে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য কিংবা শুদ্র হয়ো জন্মায়।
এছাড়া গুণ ও কর্ম অনুসারে বর্ণ বিভাগ করা হলেও , গীতায় সমদর্শি যারা তাদেরকেই পন্ডিত বলা হয়েছে।
বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ।। (৫:১৮)
@রনবীর সরকার,
গীতায় এটাকে বলা হয়েছে বলা হয়েছে স্বভাবগুণ ও স্বভাবকর্ম।“ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বাভাবপ্রভবৈগুর্ণৈঃ।।”(১৮:৪১) অর্থাৎ,’হে পরন্তপ! স্বভাব জাতগুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।’
কথা হলো সমস্ত ভাল ভাল গুণগুলো কিভাবে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদেরই স্বভাবগুণ হয়ে গেল?(যা আমি পোষ্টে বলেছি)।জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা কিভাবে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদেরই স্বভাব হয়ে গেল?আর তমোগুণ গুলো যেমন অজ্ঞানতা,প্রমাদ,মোহ এগুলো কিভাবে শুধুমাত্র শূদ্রদেরই স্বভাবগুণ হয়ে গেল?
“কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বাভাবজম।।” (১৮:৪৩)
অর্থাৎ,’কৃষি,গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বাভাব জাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত’
এই পরিচর্যাত্মাক কর্মের অর্থ হলো সেবা করা।উচ্চ তিন বর্ণের মানুষদের ত্রমাগত সেবা করা।মানে যাকে বলে জন্মদাস,এবং এটা নাকি আবার স্বভাবজাত।আমাকে বলেন দাসগিরি করা কিভাবে একটি গোত্রের সকল মানুষের স্বভাবকর্ম হয়ে যায়?স্বাভাবিক চিন্তা চেতনায় তো আসে না কিভাবে একটি গোত্রের সকলের স্বভাব গুণগুলো এত নিন্মমানের আর স্বভাবকর্ম শুধুমাত্র দাসগিরি করা হয়ে যায়।যদিও সরাসরি বলা হয়নি,তবুও স্বাভাবিক চিন্তা চেতনায় বুঝতে বাকী থাকে না যে একটি বিশেষ পরিবার বা গোত্রে জন্মেগ্রহন করার জন্যই এমনটা হয়ে থাকে।তবে কেউ যদি সবকিছুর কারণ হিসেবে এটাকে মনেকরে যে
তাহলে আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনেহয় না।
এটা হইলো শুভংকরের ফাঁকি।এরকম ভাল ভাল কথা খুজলে আরও অনেক পাওয়া যাবে।আপনি শ্রীমদভগবদগীতা যথাযথ বইটির ১৮ অধ্যায়ের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর শ্লোক তাৎপর্যসহ পড়ে দেখতে পারেন,যেখানে নির্দিষ্টভাবে উল্লেক করা আছে কোন শূদ্রদের কখনও ব্রাহ্মণের কর্ম করা উচিত.তেমনি ব্রাহ্মণ উচিত নয় শূদ্রের কর্ম করা।
অভিনন্দন (C)
বাছাই করা মূল লক্ষ্যগুলোর বেশ কটাকে ভালই ঝাঁকিয়েছেন দেখছি। এইসব চমৎকার লেখা মানুষের উপকার করবে; সত্য সন্ধানে পথ আলোকিত করবে সন্দেহ নেই।
অর্জুন দ্বিধাগ্রস্থ কেন ছিলো ? সে কি শুধুই যুদ্ধে অনাগ্রহী একটি চরিত্র? এমন কি হতে পারে যে অর্জুন আসলে শ্রীমদভগবদগীতা গ্রন্থাকারে বেরুবার সময়কার সাধারণ প্রতিবাদী মানুষ? “ঠাকুর ঘরে কে রে’র উত্তর যা গীতা লেখকরা অবিরাম চ্যালেঞ্জের মুখে শক্তিধরদের দালাল হিসেবে লিখেছিল?
অর্জুন প্রাচীন সব ত্বত্ত্বজ্ঞান লাভ করতো কৃষ্ণের কাছ থেকে। কিন্তু সময় মিলাতে গিয়ে দেখা গেল কৃষ্ণর সে সময় জন্মই হয়নি। দ্বিধাগ্রস্থ অর্জুনের চ্যলেঞ্জে কৃষ্ণের উত্তর, আমাদের পুনর্জন্ম হয়েছে ( সূত্র:BG-4:3-6). বোঝাই যাচ্ছে, গোঁজামিল স্পষ্ট। মুক্তমন নিয়ে পড়লে আলোর দেখা মিলবে নিশ্চই।
বাঙালি হিন্দুসমাজে শ্রীমদভগবদগীতা বেশ গ্রহনযোগ্য বলেই দেখেছি সবসময়। কিছু সুবিধা আছে নিশ্চয়, কি বলেন? বেদসমূহ, উপনিষদ, পুরান, মনুস্মৃতি কিংবা মহাভারত এসবকে ছাপিয়ে ভগবদগীতাই যেন সনাতন ধর্ম চর্চার সবচেয়ে আদরের গ্রন্থ। বাংলাদেশের হিন্দু সমাজে অনেকেই বলে থাকেন গীতাতে ওসব বর্ণ বিদ্বেষ বলে কিছু নেই। জানা কথা, ওরা বলেন শুনে, গীতা সম্ভবত পড়ে দেখেননি তারা।
@কাজী রহমান,
গীতা বা মহাভারত
পড়ে মনেহয়
না,অর্জুন কোন
প্রতিবাদী চরিত্র
ছিল।অর্জুন ছিল
ক্ষত্রিয়,তৎকালী
ন শাসক শ্রেণীর
অংশ।পৌরাণিক
কাহিনী অনুসারে অর্
করতে দ্বিধাগ্রস্থ
ছিল মূলত
নরকে যাওয়ার
ভয়ে,বর্ণসংকর
সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে।
যুদ্ধে অর্জুনের
প্রতিপক্ষ ছিল
কৌরবরা,যারাও ছিল
ক্ষত্রিয়
এবং সম্পর্কে অর্জুনে
অত্মীয়।এই
আত্মীয়দের
হত্যা করলে অর্জুনের
ঘাড়ে বর্ণসংকর
তৈরির দোষ
এসে পড়তে পারে,যা নর
দর্শনের কারণ।
অর্জুনের বক্তব্য…
“অধর্মাভিভাবাৎক
ৃষ্ণ
প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রি
স্ত ্রীষু দুষ্টাসু
বার্ষ্ণেয়
জায়তে বর্ণসঙ্করঃ॥
“(১: ৪০)
অর্থাৎ’হে কৃষ্ণ,অধর্ম
আবির্ভাব
হলে কুলস্ত্রীরা ব্যভ
হে বার্ষ্ণেয়,কুলনা
রীগণ
ব্যভিচারিণী হলে বর্
সৃষ্টি হয়।’
এই বর্ণসংকর
কি জিনস,তার
ব্যাখ্যা মনুসংহিতায়
আছে।
সেটা পরে বলছি,এখানে
লক্ষণীয়।মহাবীর
অর্জুনের বক্তব্য
অনুসারে অধর্মের
অবির্ভাব
হলে কুলীন নারীগণ
ব্যাভীচারিণী হয়।
যেটা বৈষম্যমূলক
কারণ ব্যাভিচার
করতে হলে শুধুমাত্র
নারীদের একার
পক্ষে তো সম্ভব
না,পুরুষদেরও দরকার।
ব্যাভিচার
যদি দোষের হয় তার
জন্যতো নারী পুরুষ
উভয়ই দায়ী।
একলা একলা নারীদের
পক্ষে তো ব্যাভীচারি
অথচ এই ধর্মগ্রন্থ
গুলো শুধু নারীদের
ঘাড়েই দোষ
চাপাতে চায়।
এর পর
বলা আছে বর্ণসংকর
সৃষ্টি হলে কি হয়,
“সঙ্করো নরকায়ৈব
কুলঘানাং কুলস্য চ।
পতন্তি পিতরো হ্যেষা
রিয়াঃ॥” (১:৪১)
অর্থাৎ,
‘বর্ণসংকর,কুলনা
শকারীদের
এবং কুলের নরকের
কারণ হয়।শ্রাদ্ধ-
তর্প ণাদি ক্রিয়ার
লোপ হওয়াতে ইহাদের
পিতৃপুরুষ
নরকে পতিত হয়।’
এই নরকে যাওয়ার
ভয়েই অর্জুন
দ্বিধাগ্রস্থ ছিল।
আর বর্ণসংকর
ব্যাপারটিও
বৈষম্যমূলক।বর্ণ ের
মূল স্তম্ভ হল
ব্রাহ্মণ।তারা সব
বর্ণের নারীদের
সাঙ্গেই সঙ্গম
করতে পারবে এবং এতে উৎপাদিত
সন্তান হবে বর্ণশুদ্ধ
কিন্তু ব্রাহ্মণ
বা ক্ষত্রিয়
নারীগণের
সঙ্গে বৈশ্য বা শূদ্র
সম্প্রদায়ের কোন
পুরুষের সঙ্গমের
ফলে উৎপাদিত
সন্তান
হবে বর্ণসংকর।
এবং এই বর্ণসংকরের
কারণ
হলে তাকে নরকে যেতে
অর্জুন ভয় পাচ্ছিল
সে তার
সমগোত্রীয়দের
হত্যা করলে তাদের
পরবর্তী প্রজন্ম
বর্ণসংকর হতে পারে।
আর মহাভারত
বা গীতা রচনার
সময়কাল
মিলিয়ে দেখা যেতে পার
এই
ভগবদগীতা যথাযথ
বইটাতেই
কোটি কোটি বছরের
হিসাব
দেখানো হয়েছে,যা বিভ্
তব,
এখানে ভক্তিবাদীদের
একটা সুবিধা আছে,যে
শ্রীকৃষ্ণ নিজেই
ঈশ্বর,তাই
তিনি ইচ্ছে মত
যেখান খুশি,যতবার
খুশি জন্ম নিতে পারে।