বিভ্রান্তিতে ফেসবুক ব্লগ তোলপাড়, লেখার শুরুতেই একটা কথা বলতে চাই, কাদের মোল্লা এবং তার আইনজীবীদের মতে কাদের মোল্লা ও কসাই কাদের আলাদা ব্যাক্তি এবং তাদের দাবী বিহারী কসাই কাদের খুনের দায়ে মোল্লা কাদেরের ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে। কাদের ট্রাইব্যুনালকেও বিভিন্নবার বলেন:
“আজ এই কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালে মিরপুরে কসাই কাদের কর্তৃক যেইসব হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো তার একটি অপরাধের সাথেও আমার দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। কাদের মোল্লা বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি ১৯৭৩ সালের আগে কোনদিন মিরপুরেই যাইনি।”
তাহলে একটা বিষয় পরিস্কার, আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি কসাই এবং মোল্লা এক ব্যাক্তি তাহলে একসাথেই প্রমাণ হয় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়।
বিভিন্ন ভাবেই এটা প্রমাণ করা যায়, এই ছবিটি দেখুন একাত্তরে কাদের মোল্লার:
এই ছবি নিয়েও জল কম ঘোলা করা হয় নি। যারা মানতে নারাজ এই ছবির কাদের মোল্লা সেই কাদের মোল্লা না তাদের জন্য আরেকটি ছবি (ছবির কৃতজ্ঞতা “নিঝুম’দা কে”)।
প্রথম ছবিতে ১৯৭১ সালে নিয়াজির পেছনে দাঁড়িয়ে কাদের মোল্লা। দ্বিতীয় ছবি কাদের মোল্লার ৭০ দশকের ফরমাল ছবি। এই ছবি উদ্ধার করে পাশা পাশি দুইটি ছবির ব্যাবচ্ছেদ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা কথা বলি কাদের মোল্লার বন্ধু “মোজাম্মেল খানে”র সাথেও। তিনি আমাদের জানানঃ
“He was 1 and half year older than me. He was around 23/24 in 1971. The man behind Niazi does not look any older than the age I mentioned. Looking at his hair style he looks no doubt that he is Quader.”
এর পরে কি আর কোন সন্দেহ থাকে এই ছবির ব্যাপারে ?
কিংবা আজকের কথাই ভাবুন:
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার বলেছেন –
“১৯৭১ সালের ঘটনার ৪২ বছর পর কাদের মোল্লার ফাঁসি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুতে সকল পাকিস্তানি মর্মাহত এবং শোকাহত। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে পুরানো ক্ষত আবারো জাগিয়ে তোলা হয়েছে।”
“জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের প্রধান মুনাওয়ার হাসান কাদের মোল্লাকে তাদের ‘বাংলাদেশি সহচর’ আখ্যায়িত করে তার ফাঁসিকে শোচনীয় বলে মন্তব্য করেন।” কাদেরের ফাঁসি দেয়ায় বাংলাদেশ আক্রমণের জন্য নিজেদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামী। কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি না হলে পাকিস্তানী জামাতের এত শখ হল কেন এই বিবৃতি দেবার?
বারবারই বাংলাদেশের জামাত দাবী করে এসেছে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যাক্তি নন, তারা হাজির করে কাদেরের জাবনবন্দী, যেখানে কাদের বলেছিলো:
“১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদ চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। গ্রামে অবস্থানকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও হাই স্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত (পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত) অন্যদের সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) মফিজুর রহমান ডামি রাইফেল দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেন।” (ইত্তেফাক)
কাদেরের ভাষ্য মতে সে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা ছিল অথচ পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু বলেই যাচ্ছেন -,
“পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
এতে কি প্রমাণিত হয়? কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা দুই ব্যাক্তি ?
মিথ্যাচারী এবং মিথ্যার বেসাতি করা জামাত শিবির কেবল কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের থেকে পৃথক করার মিশন নিয়েই মাঠে নামেনি, তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পর্যন্ত প্রমাণ করতে চেয়েছে। তিনি নাকি একাত্তরের যুদ্ধে গ্রামে বসে কলেজ ও হাই স্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে। এই কাদের মোল্লাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করেছিলেন চরম বিদ্রুপাত্মক উক্তি, যেটা ২০০৭ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছিল:
“কেউ সুন্দরী নারীর লোভে, কেউ হিন্দুর সম্পদ লুন্ঠন, কেউ ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কেউই আন্তরিকতা কিংবা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।” – কাদের মোল্লা, সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ অক্টোবর, ২০০৭
এই লোক ‘কসাই কাদের’ না হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হবে, সেটা কি কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে?
এবার কিছু চাক্ষুষ সাক্ষীর বয়ান শুনুন
একঃ ফজর আলী
“মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা ফজর আলী গণতদন্ত কমিশনকে দেওয়া সাক্ষ্যে তার ছোটভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। ২৯ মার্চ নবাবপুর থেকে পল্লবকে তুলে নিয়ে আসে কাদের মোল্লার সাঙ্গপাঙ্গরা। এরপর তার নির্দেশে ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশানের শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেধে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মী পল্লবকে। এরপর আবার ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ২ দিন একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় পল্লবকে। ঘাতকরা এরপর তার দু হাতের সবকটি আঙুল কেটে ফেলে। ৫ এপ্রিল একটি মজার খেলা খেলেন কাদের মোল্লা। সঙ্গীদের নির্দেশ দেওয়া হয় গাছে ঝোলানো পল্লবকে গুলি করতে, যার গুলি লাগবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে। পরে কাদের মোল্লার সঙ্গী আখতার পল্লবের বুকে ৫টি গুলি করে পরপর। পল্লবের লাশ আরো দুইদিন ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কাদের মোল্লা, যাতে মানুষ বোঝে ভারতের দালালদের জন্য কি পরিণাম অপেক্ষা করছে। ১২ নম্বর সেকশানে কালাপানি ঝিলের পাশে আরো ৭ জন হতভাগার সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয় পল্লবকে। অক্টোবরে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশানে একজন মহিলা কবি মেহরুন্নেসাকে প্রকাশ্যে নিজের হাতে নির্মমভাবে হত্যা করে কাদের মো্ল্লা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন সিরাজ এই নৃশংসতায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মূলত বিহারীদের নিয়ে একটি খুনে দল তৈরী করেছিলেন কাদের মোল্লা আর বুলেট বাচাতে জবাই করা ছিলো তার কাছে বেশী প্রিয়।”
দুইঃ ফিরোজ আলী
“ফিরোজ আলী তখন মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি, তিনি একাত্তর সালে স্বপরিবারে মিরপুরে থাকতেন। একাত্তরের ২৫ মাচের্র পর তার ভাই পল্লবকে শুধু ‘জয় বাংলা’র অনুসারী হওয়ার অপরাধে কাদের মোল্লার নির্দেশে অবাঙ্গালি গুন্ডারা অকথ্য নির্যাতন করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তখন সমগ্র মিরপুরে হত্যা আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কাদের মোল্লা ও তার অনুসারী অবাঙ্গালিরা । জবাই করে বাঙ্গালি হত্যা ছিল তাদের প্রতিদিনের রুটিনমাফিক কাজ। একেকটি জবাইর আগে ঘোষনা দিত যারা বাংলাদেশ তথা জয় বাংলা অনুসারী, তারা বিধর্মী-নাস্তিক-ভারতের দালাল, এদের হত্যা করা সওয়াবের কাজ! এমন জবাই’র নেশা বেড়ে যাওয়ায় কাদের মোল্লার নাম তখন এ তল্লাটে আতঙ্কের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয়রা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘কসাই কাদের’ নামকরণ করে । গরু জবাই এর মত মানুষ জবাই এ দক্ষতার নামডাকে(!) কসাই কাদের ‘মিরপুরের কসাই’ নামেও পরিচিতি লাভ করে ব্যাপক ।
কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার শিকার শহীদ পল্লবের ডাক নাম ছিল ‘টুনটুনি’। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বেশকিছু চলচিত্রে পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে সুখ্যাতি অর্জন করে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হন পল্লব। এ কথা জানান ফিরোজ আলীর স্ত্রী। পল্লব ছাড়াও কবি মেহেরুননেছা নামের এলাকায় খুবই শান্ত-নিরীহ প্রকৃতির বাঙ্গালী গৃহবধূ কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার বলি হন। মিরপুর ৬ নং সেকশন, ডি ব্লক মুকুল ফৌজের মাঠের কাছাকাছি একটি বাড়িতে থাকতেন কবি মেহেরুননেছা। তিনি ছিলেন কবি কাজী রোজী’র ঘনিষ্ঠ বান্ধবী । কসাই কাদের মোল্লার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে লেখালেখি’র অপরাধে মেহেরুননেছাসহ তার পুরো পরিবারকে বটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল! এরপর টুকরো করা নরমাংস খন্ডগুলো নিয়ে ফুটবলও খেলা হয়েছিল ৬ নং মুকুল ফৌজ এর মাঠে! কসাই কাদের মোল্লার নির্দেশে ৩০/৩৫ জনের একটি অবাঙ্গালি ঘাতকের দল, মাথায় লাল ফিতা বেঁধে, ধারালো তলোয়ারে সজ্জ্বিত হয়ে অংশ নেয় কবি মেহেরুননেছা ও তার পরিবারকে হত্যাকান্ডে!”
তিনঃ কাদের মোল্লার বন্ধু
মোজাম্মেল এইচ খান (এখানে)-
“১৯৭৩ সালের প্রথমার্ধে আমি যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আসি তখন জানতাম না কাদের কোথায় আছে। ১৯৭৯ সালে আমি দেশে বেড়াতে গেলে একদিন যখন ঢাকার মগবাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি তখন পেছন থেকে একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তুই কি মোজাম্মেল?আমি কাদের।’ আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল,‘কাদের,তুই বেঁচে আছিস?’ কাদেরের উত্তর ছিল,‘হ্যাঁ, আমি ভালভাবে বেঁচে আছি এবং এখন আমি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক। তোর “জয় বাংলা” এখন এদেশ থেকে নির্বাসিত; ফিরে এসেছে আমাদের জিন্দাবাদ এবং এটা এখনপ্রচণ্ড ভাবে জাগ্রত।’ যেহেতু কাদের সত্য কথাই বলেছিল, সেহেতু আমি ওর কথার কোন জবাব দিতে পারিনি। কয়েক সপ্তাহ পরে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাই তখন সংবাদপত্রে পড়লাম প্রেসক্লাবে একটি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিল কাদের মোল্লা; একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!”
(এ ছাড়া মুক্তমনার ইংরেজি ব্লগ থেকে পড়ুন – মোজাম্মেল এইচ খানের Quader Mollah: fact versus fiction প্রবন্ধটি)
ড. মোজাম্মেল এইচ খান কাদের মোল্লার ফাঁসির পর স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন:
শেষ করব…
পাঠক নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন আমি আমার লেখায় এখন পর্যন্ত মোমেনা খাতুনের কথা আনিনি। এই নারী কাদের মোল্লার হাতে ধর্ষিত। তার পরিবারের সব সদস্যকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। তার ভাষ্য পাওয়া যাবে এখানে:
মোমেনার ভাষ্য, বেলা ডোবার আগে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে হামলা হয় তাদের বাড়িতে।
“আব্বা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসে এবং বলতে থাকে- ‘কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে’। আক্তার গুন্ডা, বিহারীরা তারা ও পাক বাহিনীরা দৌড়াইয়া আসছিল। আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগায়ে দেয়।”
হযরত দরজা এঁটে সন্তানদের খাটের নিচে লুকাতে বলে। মোমেনার সঙ্গে তার বোন আমেনা বেগমও খাটের নিচে ঢোকে। তখন দরজায় শোনে কাদের মোল্লাসহ বিহারিদের কণ্ঠস্বর।
“এই হারামি বাচ্চা দরজা খোল, বোম মার দেঙ্গা।”
শুরুতে দরজা না খোলায় বাড়ির দরজার সামনে একটি বোমা ফাটানো হয়। এক পর্যায়ে হযরতের স্ত্রী একটি দা হাতে নিয়ে দরজা খোলে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করা হয়।
“আব্বা তখন আম্মাকে ধরতে যায়। কাদের মোল্লা পেছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বলে, ‘এই শুয়ারের বাচ্চা, এখন আর আওয়ামী লীগ করবি না? বঙ্গবন্ধুর সাথে যাবি না? মিছিল করবি না? জয় বাংলা বলবি না?’
“আব্বা হাত জোড় করে বলে, ‘কাদের ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও’। আক্তার গুন্ডাকে বললো, ‘আক্তার ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও’।”
তবে না ছেড়ে হযরত আলীকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় বিহারীরা।
সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এরপর কাঁদতে কাঁদতে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন মোমেনা।
“দাও দিয়ে আমার মাকে তারা জবাই করে। চাপাতি দিয়ে খোদেজাকে (বোন) জবাই করে। তাসলিমাকেও (বোন) জবাই করে।”
“আমার একটি ভাই ছিল বাবু, বয়স ছিল দুই বছর, তাকে আছড়িয়ে মারে।”
“বাবু মা মা করে চিৎকার করছিল,” বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদেন মোমেনা।
বাবুর চিৎকার শুনে খাটের তলায় লুকানো আমেনা চিৎকার দিলে তার অবস্থান যেনে যায় হামলাকারীরা।
মোমেনা বলেন, “আমেনাকে তারা টেনে বের করে, সব কাপড়-চোপর ছিড়ে ফেলে। এরপর তাকে নির্যাতন করতে থাকে। আমেনা অনেক চিৎকার করছিল, এক সময় চিৎকার থেমে যায়।”
কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অজ্ঞান মোমেনা এরপর শোনান নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা।
এ প্রসঙ্গে একটা উড়ো (কু)যুক্তি চালু আছে – মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাক্ষাতকারে মোল্লার নাম নাই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাক্ষাতকারে মোল্লার নাম নাই… ব্যাপারটা কি খুব সিম্পল না ? কাদের মোল্লার কথা প্রকাশ করলে সে কি বেচে থাকতে পারত ? সরকারের ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিয়ে সাইদির সাক্ষী মারা গেল আর এসব ছাড়াই খোলা মাঠে কাদেরের কথা প্রকাশ করে বেঁচে থাকতে পারত মোমেনা খাতুন ?
এছাড়াও মোমেনা খাতুন নিজ মুখেই বলেছেন
“অনেক মানুষ আমার কাছে এসেছিলো ও আমার ছবি নিয়েছিলো, কিন্তু ভয়ের কারনে আমি কাউকে কাদের মোল্লা এবং আকতার গুন্ডার নাম বলি নাই।”
ট্রাইব্যুনালের বিস্তারিত রায় পড়ে জানা যায় যে,
সাক্ষী নিয়ে বরং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিলেন কাদের মোল্লার পক্ষের আইনজীবিরাই। কাদের মোল্লার এক ভিক্টিম পল্লবের ভাইয়ের স্ত্রী মোসাম্মৎ সায়েরাকে তারা হাত করতে চেষ্টা করে, তাকে দিয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে লেজে গোবরে করে ফেলেছেন তিনি। (ট্রাইবুনালের রায়ের প্যারা ১৮২-১৮৯ )
শুধু মোমেনা বেগম নয়, অনেকের সাক্ষ্য থেকেই জানা গেছে এই কাদের মোল্লাই আক্তার গুন্ডা, নেহাল, হাক্কা গুন্ডা যারা মীরপুরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন একাত্তরে – তাদের সহচর ছিলেন। এদের অনেকেই সরাসরি কাদের মোল্লাকে নিজ চোখে শনাক্ত করেছিল। সেই চাক্ষুষ সাক্ষীর থেকেই দুই জনের বয়ান উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আছে প্রধান সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক মামা, যিনি আদালতে দাঁড়িয়ে কাদের মোল্লাকে সনাক্ত করেছিলেন। শুনুন তার বক্তব্য একাত্তর টিভিতে :
httpv://www.youtube.com/watch?v=sGsTPnuHMPA
আশা করি এই লেখা বিভ্রান্তি দূর করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। খুবই সংক্ষেপে লিখেছি, লিংকগুলোতে বিস্তারিত পাবেন।
সুত্রঃ
১) http:bn.wikipedia.org/wiki/আব্দুল_কাদের_মোল্লা
২)http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article713859.bdnews
৩)http://www.somewhereinblog.net/blog/niandarthal/29905160
৪)http://www.somewhereinblog.net/blog/majoy/29761606
৫)http://www.unmochon.com/2013/12/12/55182.html#.UqyUlWUqaZ_
৬)http://www.bdtomorrow.com/newsdetail/detail/41/58586
৭)http://www.facebook.com/JIPOfficial
৮)http://www.kalerkantho.com/online/world/2013/12/14/30648
৯)http://www.prothom-alo.com/home/article/98515/
১০)http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTJfMTRfMTNfMV8yXzFfOTMyMTI%3D
১১)http://www.newagebd.com/detail.php?date=2013-10-07&nid=68309#.UrCyXmUqaZ9
সংযোজনঃ
বেশীর ভাগ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, জামাত সমর্থক গোষ্ঠীর ধারণা কাদের নির্দোষ ভালো মানুষ। কিছু “বিকৃত তথ্য” এবং তার সাথে একগাদা নির্জলা “মিথ্যাচার” জড়িয়ে সারাদিন এরা করে যাচ্ছে ধর্ম ব্যাবসা।
যারা বলেন কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের এক নন, তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন –
কসাই কাদেরটা তাইলে গেল কই?
আমি মনে করি, কাদের আর কসাই একই লোক সেটা আদালতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে আর শাস্তিও দেয়া হয়েছে, আমার নতুন করে কিছু প্রমাণের নেই। বার্ডেন অব প্রুফটা তাদের কাঁধেই যারা মনে করেন দুই কাদের ভিন্ন ব্যক্তি। মোমেনার মত চাক্ষুষ সাক্ষীরাই যথেষ্ট যাদের পরিবার কাদের মোল্লার হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন, এবং চিনতেন তার বন্ধু এবং সহপাঠীরাও, যেমন ড. মোজাম্মেল এইচ খানের মত ব্যক্তিরা।
অবশ্য বিপরীতপক্ষ বরাবরই বাঁশেরকেল্লা আর গোলাম মওলা রণির মত লোকজনের কথাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।
আসুন দেখি কতটা নির্ভরযোগ্য এই গোলাম মাওলা রনি !!!
… কথিত আছে রনির সাথে মোল্লা সাহেবের কারাগারে সাক্ষাত হয়েছিলো এবং সেই সুবাদে মোল্লা রনিকে একটা চিঠি দেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ আমার ফাঁসির পর একবার হলেও বলো বা লিখো – কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের এক ব্যক্তি নয়’। এই সেই চিঠি:
এই চিঠিকে পুঁজি করেই সহানুভূতির বাণিজ্য শুরু করেছিলেন গোলাম মওলা রনি ফেসবুকে। গোলাম মওলা শুরু করেছিলেন কাদেরের গোলামী।
কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অন্য তথ্য,
কাদের মোল্লার আরেকটি চিঠিও রয়েছে আমাদের হাতে
ব্যাপারটা কি লক্ষ্য করেছেন পাঠক ??
আপনাদের সুবিধার জন্য দুটো ছবি একসাথে দিলাম, একটু ভালো করে খেয়াল করুন
গোলাম মওলা রনি সাহেবের যে ফেসবুক স্ট্যাটাসটা নিয়ে এত চ্যাঁচামেচি, এখন তো থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে : সেই চিরকূটের সিগনেচার আর কাদের মোল্লার পরিবারের কাছে লেখা চিঠির সিগনেচার ভিন্ন !
আরেকটা ব্যাপারঃ
এই ট্রাইবুনাল নাকি স্বচ্ছ না তাহলে ট্রাইবুনালের প্রথম রায়ের পর কসাই কাদের কেন দুই আঙ্গুল দিয়ে জয় সূচক ‘ভিক্টোরী চিহ্ন’ দেখিয়েছিলো? যেই ট্রাইবুনাল স্বচ্ছ না, নিরপেক্ষ না, আন্তর্জাতিক না, সেই ট্রাইবুনালে প্রথম রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়ার পরেও কেন কাদের নিজেকে জয়ী মনে করলো? কাদের মোল্লা যদি কসাই কাদের না হয়, কস্মিনকালে যদি মিরপুরে না গিয়ে থাকে, একটি মানুষও হত্যা না করে থাকে, তবে কতবড় পাগল হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাবার পরেও হাত তুলে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করে? হিসেবটা কি মেলে?
এবার কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেই:
১)১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন যখন রাইফেলসে কর্মরত ছিলেন একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী ? কি করে উদয়ন স্কুলে চাকরি করলেন ?
কি করে ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ২বার সাংবাদিকদের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন? তখনকার সব রিপোর্টার কি জামাত শিবির ছিলেন যে তাকে নির্বাচিত করলেন ?
উত্তরঃ এক খোঁচায় এর উত্তর দেয়া যায়; ১৯৭৭ সালে এই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন রাজাকার, কেবিনেটে ছিলো ১৮ জন রাজাকার এম্পি, ৫-৬ জন রাজাকার মন্ত্রী। সেখানে উদয়ন, রাইফেলসে কাজ করা এমনকি অসম্ভব কাজ… আরে প্রধানমন্ত্রী রাজাকার হলে সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হওয়া কি খুব অবাস্তব ব্যাপার ?
২)কি করে তিনি ১৯৭২ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসাবে হলে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন অব্যাহত রাখতে পারলেন?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালের শেষের দিকে কাদের মোল্লা মোটেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না।
কাদের রাজেন্দ্র কলেজেই বিএসসি পড়ে (১৯৬৬-১৯৬৮)। তার পরিবার বলেছে সে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস কোর্সে এমএসসিতে ভর্তি হয়, স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করে।
এ বক্তব্যের প্রথম অংশটুকু সত্য নয় এবং যে কোন পাঠকই বুঝতে পারবেন দুই বছরের এমএসসি ডিগ্রীর জন্য ৮ বছর (১৯৬৯-১৯৭১, ১৯৭২-১৯৭৭) বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার হিসাব মেলানো যায় না। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী সে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল পড়তে, কিন্তু আসল কাহিনি হল কাদের মোল্লার এইচএসসি পরীক্ষার ফল গড়পড়তা ছাত্রের থেকে অনেক নিচে ছিল যার ফলে সরাসরি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তার সহপাঠী মোজাম্মেল খানই তা ফাঁস করে দিয়েছেন। অথচ ছাগ-বান্ধব সাইটে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিনি নাকি ‘গোল্ড মেডেলিস্ট ছাত্র’ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের পর কাদের আত্মগোপন করে এবং ১৯৭৬ সালে সে আত্মগোপনতা থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভর্তি হয় এবং ১৯৭৭ অবধি সে ছাত্র ছিল।
(মুক্তমনা থেকে পড়ুন – মোজাম্মেল এইচ খানের Quader Mollah: fact versus fiction প্রবন্ধটি)
৩) ডেভিড বার্গম্যান ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে
উত্তরঃ ডেভিড বার্গম্যান ট্রাইব্যুনালের জন্য একটা হুমকি বই কি !!!(পুরান পাগল ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি)। ভাই লোগ এই ডেভিড বার্গম্যান মোটেও তেমন হোমরা চোমরা সাংবাদিক না। বাংলাদেশী একটা ইংরেজি দৈনিক (নিউ এজ) চাকরি করেন, একাধিক বাংলা নিউজ পোর্টাল তাকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে বলেও শোনা যায়। ব্লগস্পটে সাবডোমেনে একটা সস্তা সাইট চালান। ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত করার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা পান। আমাদের মাঝে কেন যেন একটা প্রবণতা আছে সাদা চামড়া একটা কথা বললেই সেটা ঠিক…
মোটেও ওপর কথা হইল ডেভিড বার্গম্যান কোন বড় মাপের সাংবাদিক না, তার থেকেও অনেক বেশী টাকা দিয়ে জামাত লবিস্ট নিয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্রে মীর কাশেম আলীর ২৫ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ২০০ কোটি টাকা) লবিস্ট নিয়োগ করে, তার তুলনায় ডেভিড তো দুধের বাচ্চা !!!
আরেকটা কথা, সাদা চামড়া যদি এতই পছন্দ তাহলে সায়মন ড্রয়িং, লরেন, এন্থনি, ক্যাথরিন…… এরা সাংবাদিক না, এদের পছন্দ হয় না ? নাকি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের চেয়ে ন্যাশনাল অখ্যাত ডেইলির সাংবাদিক বেশী বিশ্বাসযোগ্য??
৪) একটাও চাক্ষুষ সাক্ষী নাই !!
উত্তরঃ আদালতে ২৩ বছর বিচার করা বিচারক সাক্ষী দেখে রায় দিলো, আর আপনি এসেছেন….. সাক্ষী নাই……
ভালো করে মোল্লার বন্ধু মোজাম্মেল খানের লেখাটা পড়ে দেখেন ৬৬-৬৮ ব্যাচে রাজেন্দ্র কলেজের সব ছাত্র এই সাক্ষ্য বহন করে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যাক্তি। স্বাধীনতার পর অনেক রি-ইউনিয়ন হয়েছে সেই ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের, কিন্তু রাজেন্দ্র কলেজের সেই প্রাক্তন ছাত্ররা কখনোই এই কসাইকে প্রবেশ করতে দেয় নি সেই অনুষ্ঠানে।
আর কত সাক্ষী চান ?? আর কত ??
কখন স্বীকার করবেন আমার মাটিতে যে রক্তের বন্যা বইয়ে ছিলো একাত্তরে; সে আর কেউ না সে রাজাকার, কসাই, কাদের মোল্লা। এখনও সময় আছে সত্যকে স্বীকার করুন। না হলে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম কিন্তু চোখে ঘৃণা নিয়ে বলবে, একজন কসাইয়ের পক্ষ নিয়েছিলে ??
ছিঃ ছিঃ ছিঃ
এখন যেহেতু কাদের মোল্লা অলরেডি খতম, ‘ছাগু’ ট্যাগ খাওয়া লাগতে পারে জন্য মনের যে খটকা’র বেপারে কাউকে কিছু জিগ্যেস করতে পারিনি এতদিন… এখন জিগ্যেস করা যেতে পারে আই গেস।
খটকা লেগেছিল মোমেনা বেগমের জবানবন্দীতে।
“”আব্বা বলল ‘কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে’””
১৯৭১’এ কাদের মোল্লা মাদরাসা থেকে পাস করা কোন মওলানা বা মোল্লা তো ছিলনা সম্ভবত। তার সানগ্লাস পরা ক্লিনশেভ্ড ছবি দেখেও তাকে ঠিক ‘মোল্লা’ ম্যাটেরিয়াল মনে হয়নি, বরং কসাই টাইটেলটাই যুৎসই।
তাহলে “”আব্বা বলল ‘কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে’”” এখানে তাকে কাদের মোল্লা বলার কারন কি?
কারো কোন ভাল ব্যাখ্যা থাকলে মনের একটা অশান্তি দুর হত।
@আলমাজি কিশোর,
তার পুরো নাম হচ্ছে ‘আব্দুল কাদের মোল্লা‘।
”কাদের মোল্লার শেষ মুহূর্তগুলো…”
ফাঁসির দিন সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে বাড়তে থাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারাগারে আসেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) মাইন উদ্দিন খন্দকার।কারা মহাপরিদর্শকসহ জেল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে থাকেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। কনডেম সেলে গিয়ে দেখেন ঠিক আছেন কিনা দণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লা। ফাঁসির মঞ্চ, ফাঁসির দড়িও দেখলেন কারা মহাপরিদর্শক। দেখার কারণ- কোনো চক্র যদি কাউকে প্রলোভন দিয়ে কোথাও ক্যামেরা বা ইলেকট্রিক কোনো যন্ত্র লাগিয়ে রাখে! কারা মহাপরিদর্শক পুরো চিত্র দেখে এসে সময় দিলেন ২২০১ অর্থাৎ রাত ১০টা ১ মিনিট।
কাউন্ট ডাউন শুরু…
কারা মহাপরিদর্শককে একজন প্রশ্ন করলেন- স্যার শেষ রাতে করা যায় না? কারা মহাপরিদর্শক বললেন, ওই আইনে (প্রচলিত আইন) রায় কার্যকর হচ্ছে না, এ আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) করছি।
এরপর সব আয়োজন সম্পন্ন হলো। ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে আলোকিত করা হলো ফাঁসির মঞ্চ। নিভিয়ে ফেলা হলো দণ্ডপ্রাপ্তকে নিয়ে যাওয়ার পথের আলো।কারাগারে কয়েদিদের কক্ষগুলোতে ভালো করে তালা দেওয়া হয়েছে কি-না, তাও দেখলেন কারা মহাপরিদর্শক। সমতল থেকে ফাঁসির মঞ্চের উচ্চতা চার ফুট ওপরে। কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক, জেল সুপার, সিভিল সার্জনসহ অন্যরা পাশাপাশি বসা। ফাঁসির মঞ্চের প্লাটফর্ম ঘিরে সাতজন করে কারারক্ষী বন্দুক তাক করে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়, কারা মহাপরিদর্শক চারজন জল্লাদকে পাঠালেন কাদের মোল্লাকে আনতে। একজন কর্মকর্তাকে পাঠালেন কাদের মোল্লাকে শনাক্ত করার জন্য। শনাক্ত করে কনডেম সেল থেকে বের করে জম টুপি পরানো হলো। পিছনে লাগানো হলো হ্যান্ডকাপ। ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মঞ্চের দিকে আসতে চান নি কাদের মোল্লা। চারজন জল্লাদ জোর করে তাকে নিয়ে আসলেন ফাঁসির মঞ্চের কাছে।
উঠতে চাচ্ছিলেন না, প্রায় জোর করেই মঞ্চের প্লাটফর্মে উঠানো হলো। পা ছড়িয়ে রাখেন তিনি। কিন্তু পা ছড়িয়ে রাখলে লিভার কাজ করে কম- কারা কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তিনি… তাই পা দুটো একসঙ্গে বেঁধে ফেলা হলো। গলার দড়ি পরানোর কাজও চলছিল।
‘জেলার সাহেব আছেন’, আছি (ফরমান আলী, জেল সুপার)। ‘আমার কয়েকটা কথা আছে…’ কাউন্ট ডাউনের কাছাকাছি ঘড়ির কাঁটা। জেল সুপার বললেন, কথা আছে ঠিক আছে, আগে পা একখানে করেন।
২২০১ ঘণ্টা। আর এক মুহূর্ত দেরি নেই…।
কারা কর্তৃপক্ষ আগে থেকে ভেবেছিলেন তিনি (কাদের মোল্লা) হয়তো চিৎকার করতে পারেন। তার চিৎকারের প্রতিধ্বনিও আসার শঙ্কা ছিল, সেজন্য কৌশলী ছিলেন তারা। কারাগারে উৎকর্ণ ছিল ৫ হাজার কয়েদি, আজ কিছু একটা হতে যাচ্ছে…। দড়ির মাথায় লাগানো একটা লিভার আছে। লিভার টান দিলে প্লাটফর্ম ফাঁক হয়ে নিচের দিকে নামবে যার দণ্ড কার্যকর হবে। জল্লাদ লিভার টান দেওয়ার পর শুধু দৃশ্যমান দড়িটি একটু নড়ে উঠলো। এরপর স্থির…। ব্যথাহীন মৃত্যু ‘ফাঁসি’। ১৫ মিনিট পর প্লাটফর্মের তালা খুলে লাশ বের করা হলো। দড়ি, হ্যান্ডকাপ ও পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো।
এরপর সিভিল সার্জন অপারেশন টেবিলে তাদের কাজ করলেন। ১০টা ২০ মিনিটের দিকে দুটো অ্যাম্বুলেন্স ভিতরে ঢুকানো হলো। কৌশলে দু’দিকের ফটক খোলা রাখা হলো, যাতে বোঝা না যায় কোন দিকে লাশ যাবে।
দীর্ঘ ৪২ বছর আগের হত্যাযজ্ঞের দায়ে বিজয়ের মাসেই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়।
শেষ হয় একটি নির্মম কবিতার
বাংলানিউজ থেকে ঈষৎ সম্পাদিত
লেখাটি এখন বিডিনিউজে
খুব সুন্দর গোছালো কথা……আমার কিছু প্রশ্ন আছে?..কেউ যদি জানেন জানাবেন…১)ফরিদপুর থেকে এসে DU হল এ থেকে আলোকদি গ্রামের লোকজন কে কার ঘরে মেয়ে আছে জানল কেমনে? ওই গ্রামের বাকি লোক ও তাহলে তাকে চিনত, যেহেতু আনেকদিন ওখানে যেত?২)খন্দকার মাহবুব কি যুদ্ধাপরাধী বিচারের কাজে যুক্ত ছিলেন?সে বলছে ওই তালিকায় সে ছিল না? তাহলে খন্দকার মাহবুব কে ধরছে না কেন? ৩) যেখানে বাড়িতে ছিলেন ১৯৭১ সালে তাদের পক্ষে সে ছিলনা ১৯৭১ এ এমন কিছু আসছে কি না? সে যে বাড়িতে লজিইং ছিল তারা কি বলেছে? ৪)বন্ধু মোজাম্মেল কি ১৯৭১ সালে কি মিরপুরের কসাই কাদের এর সাথে কাদের মোল্লা এক লোক এমন কথা কবে থেকে বলছেন?১৯৭২?৭৫?৮০?৮৫?৯০?৯৫?২০০০?২০০৫?২০১০?২০১২?!তিনি কি সাক্ষ্য দিয়েছেন?৫) সাক্ষী মোমেনা আগে বলেছিলেন যে তিনি ওইসময় শ্বশুর বাড়ী ছিলেন…পরে এখন বলছেন তিনি ছিলেন victim হিসেবে । কিন্তু আদালতে না এসে মুখ লুকিয়ে কেন সাক্ষ্য দিলেন কেন?তাহলে তো জাদুঘরের মোমেনা আর এই মোমেনা নিয়ে কথা হত না ৫) বানান ভূল না আসলে দেখতে হবে হাতের লেখার মিল কি পাওয়া গেছে কি না? মিল না থাকলে রনি কে ধরছে না কেন?৬) যাবজ্জীবন দিল কেন? ভয়ে? বিচারক কি বলেছে তাই? তাহলে ওই বিচারপতি দিয়ে আবার বিচার হল কেন? সে তো অন্য কারও ভয়ে ফাঁসি ও দিতে পারে!!?তাকে তো র প্যানেলে রাখার যুক্তি ছিলনা!?আগের বিচারপতি নিজামুল হক তো skype ও বলেছিল সরকারের পক্ষ থেকে ফাঁসি দেয়ার চাপ ছিল!?৭)কসাই কাদের এর বাকি সাঙ্গ-পাঙ্গ কই? সবাই কি মরছে নাকি?! আলোকদির কেউ কি ছিল?
@রাসেল,
আপনার সব প্রশ্নই অযাচিত… উপরের লেখাতেই অনেক কিছু পরিস্কার করা হয়েছে।
ঐ এলাকার অসংখ্য লোক যে তাকে চিনতো সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ আছে, সাক্ষীর তালিকা দেখেছেন ??
কোন ঘরে মেয়ে আছে সেটা জানতে হলে সেই এলাকায় জন্মাতে হয় নাকি ?
হাসালেন… খন্দকার মাহবুব কাদের মোল্লার বিচারক… এটা সে নিজে স্বীকার করেছে।
আপনাদের মত অশিক্ষিত লোক লোকদের দিয়ে যদি জামাতের কাজ চালাতে হয় তাহলে তো খবর আছে।
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article713544.bdnews
সে কোন বাড়িতে লজিং ছিলো কি না, এমনটা দাবী করেছে তার আইনজীবী । বাডেন অব প্রুভের দায়িত্ব তাদের…
রাষ্ট্র পক্ষের এখানে নাক গলানোর কি দরকার ?
যথেষ্ট সাক্ষ্য তো আছেই…
অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন… প্রমাণ করেন যে উনি ভুল কথা বলেছেন।
উপরে নিঝুম মজুমদারের কমেন্ট পড়ুন।
অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন… আমরা মোটেও বানান ভুল ধরি নাই… প্রকাশ্য মিথ্যাচারিতা করবেন না।
…… ঠিক মত টাইপ করতে পারে না আসছে কমেন্ট করতে…
এর পর আসলে ঠিক করে লিখে যাবেন।
বিচারক কি কাদের মোল্লার পছন্দ মত নিয়োগ হবে ?
উপরে নিঝুম মজুমদারের লেখা দেখুন। সাংগ পাংগদের একজনের ফাঁসি হয়েছিলো……
কাদের মোল্লাকে নিয়ে যত ঘাটছি তত মজার মজার তথ্য বেরিয়ে আসছে…
প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় ২০০৭ সালে দেয়া কাদেরের এক বক্তব্যে পাওয়া গেল
“কেউ সুন্দরী নারীর লোভে, কেউ হিন্দুর সম্পদ লুন্ঠন, কেউ ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কেউই আন্তরিকতা কিংবা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।” ইত্তেফাক, ৩১ অক্টোবর, ২০০৭
আবার কাদেরের জবানবন্দীতে মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণের কথা,
“…গ্রামে অবস্থানকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও হাই স্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। ……।”
তাহলে তার কথা অনুসারেই, তিনি কেনো মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন ??
এই লোকটা যে প্রচণ্ড মিথ্যাবাদী ছিলো সেটাকি ধরতে পারছেন পাঠক ??
অবশেষে পাওয়া গেলো মোমেনা বেগমের সেই কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎকারটি…
বাঁশের কেল্লার মিথ্যাচার আবার প্রমাণিত হল…
বাঁশের কেল্লা দাবী করেছিলো মোমেনা বেগম নাকি বলেছেন তিনি সেই সময় নিজের বাড়িতে ছিলেন না শ্বশুর বাড়িতে ছিলে…
নিজেই দেখুন
httpv://vimeo.com/60136980
কাদের মোল্লাকে সনাক্ত করে সাক্ষী দিয়েছিলেন আমাদের শহিদুল হক মামা।
একাত্তর টিভিতে সরাসরি বললেন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কাদের মোল্লাকে সনাক্ত করার কথা
httpv://www.youtube.com/watch?v=sGsTPnuHMPA
কাদের মোল্লা যে নিজেকে কসাই কাদের হিসেবে অস্বীকার করেছিল তা আমি এই লেখা থেকে জানতে পারলাম। কিন্তু লেখকের লেখা পড়ে আমি খুবই আশাহত।
কারন,
১। লেখক খুব ভালভাবেই প্রমান করতে পেরেছেন, কসাই কাদের নামে একজনের অস্তিত ৭১ এ ছিল। তাঁর প্রতি আনা অপরাধগুলো সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত।
২। লেখক এও প্রমান করতে পেরেছেন কাদের মোল্লা ৭১ এ ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আলবদরের সাথেও তাঁর সম্পর্ক প্রমানিত।
কিন্তু,
১। কাদের মোল্লার বন্ধুর বক্তব্য তাকে একজন রাজাকার প্রমান করলেও, তিনি যে কসাই কাদের তাঁর পক্ষে কোন প্রমান দেয় না।
২। নির্যাতনের স্বীকার পরিবার গুলো কসাই কাদেরের জড়িত থাকার কথা আদালতে প্রমান করতে পারলেও, তাকে কাদের মোল্লা হিসেবে ভেরিফাই করতে ব্যার্থ হয়েছে।কারণ ফজর আলি, আর ফিরোজ আলী দুজনকেই যখন শুনানিতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কি নিশ্চিত ইনি সেই লোক ( কাদের মোল্লাকে দেখিয়ে)…তাদের ইতস্তত ভাব আর ঘামের কারনে আদালত শেষ পর্যন্ত মুলতবি করতে হয়েছিল।
শেষে বলব লেখক মনে হয় একটি শুনানিতেও যায় নাই।
@সাদ,
এই উক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করুণ।
অন্য দিকে শহিদুল হক মামা; যিনি কি না কাদের মোল্লার সাক্ষী… তিনি এটিএন নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন,
তিনি ট্রাইবুনালকে বলেছেন
ধন্যবাদ এতো ভালো এক্টি লেখার জন্য ।
আচ্ছা আপনারা আমারে একটা কথা বলতে পারেন এই ছাগু গুলারে শিখানোর চেষ্টা করে লাভ কি। যারা সন্দেহ প্রকাশ করছে তারা সহানুভুতি থেকেই করছে……নিচের ছবিটিই আসলে প্রমান করে এই কাদের মোল্লাই সেই কাদের মোল্লা… একবার চিন্তা করে দেখেছেন কখন একজন ব্যাক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে নিজের বিজয় মনে করেন? যখন তিনি নিজেও জানেন যে ফাঁসিই তার উপযুক্ত সাক্ষী। একজন সম্পূর্ণ নিরাপরাধ ব্যাক্তি যেকোনো শাস্তিকেই নিজের পরাজয় মনে করত এবং ভেঙ্গে পরত……
[img]https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152445984237892&l=41926e2c18[/img]
গোপন সূত্র (Wikipedia) হইতে জানিতে পারিলাম পাকিস্তান (Pakistan) নামক রাষ্ট্রটির জাতীয় প্রাণী হইতেছেন জনাব মারখর (Markhor) যিনি বংশ পরম্পরায় একজন ছাগল, রাষ্ট্রটির জাতীয় সঙ্গীতের সুরকার জনাব গুলাম আলি ছাগলা (Ahmed Ghulamali Chagla) যিনি নামে একজন ছাগল। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমস্ত পাকিস্তান জাতই ছাগল। সোনার বাঙলায় যেইসব পাকি জারজ আছে সেই গুলাও ছাগল।
মোরাল অব দ্যা স্টোরি: অন্তত এই একটি কারণে হলেও বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া আবশ্যক ছিল। নিজের জাতীয় প্রাণী ছাগল!!! জাতীয় সঙ্গীতের সুরকার ছাগল!!! অসম্ভব…..
তথ্যসূত্র:
o. http://en.wikipedia.org/wiki/Markhor
oo. http://en.wikipedia.org/wiki/Ahmed_Ghulamali_Chagla
বর্তমান বাংলাদেশে যে পরিমান রাজাকার আছে, ১৯৭১ সালেও তত রাজাকার ছিলনা। রাজাকারের চরিত্র কখনো ভালো হয় না। এরা চির জীবনই সত্যকে মিথ্যার আড়ালে ঢেকে রাখে। কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক না এমন দাবি রাজাকারের কাছ থেকে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তো আমরা আর কাঁচা মাছ খাই না। আমরাও সত্য আর মিথ্যার তফাত বুঝি।
@সরজিত চক্রবর্তি,
বর্তমানে আছে নব্য রাজাকার। নব্য নাৎসিরা যেমন হিটলারের দোষ খুঁজে পায় না, আর হলোকস্ট কে অস্বীকার করে, এই নব্য রাজাকাররাও দেখেন সেভাবেই মুক্তিযুদ্ধের গনহত্যা কে অস্বীকার করে ৩০ লাখ শহীদকে ৩ লাখা এমনকি ৩০ হাজারেও নিয়ে আসে।মানে পাক বাহিনী আর রাজাকার – আলবদর এতই ফেরেশতা যে , এরা কেউ কোন মানুষ মারেনি এমন কি গড়ে একজনও না ( ৯৩ হাজার পাকি সেনা বন্দি হয়েছিল না?)।
তাহলে বাকি থাকে বাঙ্গালীরা।মনে হয় এরা ( ফাকিস্তান আর তার সাঙ্গপাঙ্গ রা) সামনে এটাও বলতে যে ৭১ সালে রাজাকার রা মানুষ মারে নাই, আসলে ৩০ লাখ বিহারীকে মুক্তি সেনারা মেরেছিল :-Y
এইবার যারা ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরে পাকিস্তানের সমর্থন করেন ( যারা বাংলাদেশেরও আগে পাকিস্তান কে রাখেন তাদের কথা আর বললাম না, রুচিতে বাধছে তাদের কথা বলতে) এই অজুহাতে যে খেলার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক নাই, তাদের জন্যে ইমরান খানের দাবী; ‘মিথ্যা’ অভিযোগে কাদের মোল্লার ফাঁসি
এইসব অশিক্ষিত এবং কুশিক্ষিত তথাকথিত ক্রিকেটপ্রেমীদের জেনে রাখা ভাল যে পাকি সরকারও কাদেরের সাফাই গেয়েছে এবং মর্মাহত হয়েছে। এইবার বুঝে নেন যে পাকিস্তান প্রেমীরা আসলেই কি বাংলাদেশ প্রেমী হতে পারেন কিনা।
@দারুচিনি দ্বীপ,
বন্ধুরা অনেকেই বলে খেলার মধ্যে রাজনীতি আনিস না;
পারিনা… পারিনা… পারিনা…
যে লোকটা আমার ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, নীলিমা ইব্রাহীমদের ধর্ষণ করল, সোঁদা রক্তের দগদগে ঘা নিয়ে আমার বোন; আমার মা এখনও মাঝরাতে কাঁদে, সেই লোকটার ছেলের হাত ধরে বলতে পারিনা ‘আপ মেরি দ্বীনী ভাই হ্যাঁ’। আসলেই আমিই……… আবাল তোরাই মানুষ। FUCK PAKISTAN , FUCK PAKISTANI SUPPORTER ASS HOLES……
মনে রাখিস রক্তের দাগ এখনও শুকায় নাই…
@আরিফ রহমান,
আর বর্তমানের কিছু বঙ্গললনা নির্লজ্জের মত বলতে থাকে , ” আফ্রিদি ম্যারী মী”। আর এটাকেই আমি বলি নিজেকে বিক্রি করে দেয়া। আচ্ছা এইসব উঠতি বয়সী মেয়েদেরকে এইভাবে পাকি প্রেম তাড়িত ( আসলে প্রোগ্রাম করা) কারা করে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই? করে থাকে আমাদেরই পুর্বপুরুষরা; কেউকেউ মুক্তি যোদ্ধাও ছিলেন ( নিজের পরিচিত এক মুক্তি যোদ্ধাকে জানি জিনি পাকিস্তান প্রেমিক)। আর তাই মনে হয় একবারের রাজাকার চিরকালের রাজাকার, কিন্তু একবারের মুক্তি যোদ্ধা চিরকাল মুক্তি যোদ্ধা নাও থাকতে পারে। :-Y
@দারুচিনি দ্বীপ,
হুমায়ুন আজাদ বহু আগেই বলে গেছেন………
@আরিফ রহমান, জি ভাই জানি, উনারটাই আমি ঝেড়ে দিলাম 🙂
তথ্যবহুল আর ঝরঝরে লেখা।
ফেসবুকে শেয়ার দিলাম 🙂
সবচেয়ে মজার ব্যপার হল – তাদের আইনজীবিরা এতটাই কামেল যে একটি ট্রাইবুনালের বিচারের পর বলে ওঠেন ন্যায়বিচার হয় নি। এখন এই কাদের যদি আসল কাদের না হয়ে থাকে এবং বাঁশের কেল্লা অনুসারে আসল কাদের মোল্লা যদি কানাডায় বসবাসরত হয় তাহলে এই কামেল আইনজীবিগণ কেন তা দেখাতে পারলেন না? জামায়াতের কাদের মোল্লা নির্দোষ এটা প্রমাণের জন্য তো কসাই কাদের মোল্লার পৃথক অস্তিত্ব প্রমাণ করাই যথেষ্ট ছিল। এই কথাটা আমি সাধারন লোক হয়ে বুঝি আর রাজ্জাকের মত আইনজীবিরা তাদের হাতে প্রমাণ(বাঁশের কেল্লা অনুসারে) থাকার পরেও বুঝতে পারে না, এটা কি করে সম্ভব? যদি তাই হয়ে থাকে তাইলে শিবিরের পোলাপানদের উচিত সরকার বা ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে কাদেরের ধ্বজভঙ্গ এইসব আইনজীবিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা।
@দাঙ্গাবাজ,
কসাই কাদের কানাডায় থাকে নাকি? তাহলে কেল্লা ওয়ালাদের জানিয়ে দেন যে কসাই সাহেবকে পাওয়া গেছে। আমিইই সেই কসাই কাদের।
সময়পযোগী অসাধারন লেখা। লেখকের জন্য শুভেচ্ছা
সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় এই তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটা যদি এখনো চোখ থেকেও অন্ধ লোকগুলির চোখ খুলে দিয়ে কসাই কাদের মোল্লার অনুসারীদের উদ্ভাবিত চতুর বিতর্কের অবসান ঘটাতে না পারে, তাইলে ধরে নিতেই হবে যে, সেই সব অন্ধরা হয় জন্মান্ধ, নয় তো কসাই মোল্লারই অনুসারী !
@রণদীপম বসু,
কিংবা জারজ পাকিমন পেয়ারু
মানুষের স্বাভাবিক প্রবনতাই হল সে যা বিশ্বাস করতে চায় তার স্বপক্ষে তথ্য প্রমান খূঁজে। বিশেষ করে যেসব ইস্যুতে কোনভাবে ধর্ম জড়িত থাকে সেখানে তথ্য প্রমান যুক্তি এসবের তেমন স্থান থাকে না। আর সাথে রাজনৈতিক কালার থাকলে কথাই নেই।
বাংলা ব্লগের একজন স্বনাম ধন্য ইসলাম বিশারদ কাদের মোল্লার নিরপরাধের পেছনে যুক্তি এনেছেন মৃত্যুর পর কাদের মোল্লার মুখ বিকৃত হয়নি, এটাই ওনার কাছে একটি যুক্তিপূর্ন প্রামান্য এভিডেন্স। বলাই বাহুল্য এই জাতীয় অকাট্য যুক্তির বিরুদ্ধে বলার কিছু থাকে না। ওনাদের বলেও লাভ নেই যে ফাঁসীর আসামীদের মুখ বেশী বিকৃত হলে জেলখানায় কফিনজাত করার সময় যতটা পারা যায় ঠিক করা হয়। সমকালে ফাঁসীর যা বর্ননা পড়েছি তাতে কাদের মোল্লারও জিভ বেরিয়ে গেছিল পড়েছি।
এই মোল্লা সেই মোল্লা নয় সেটা প্রমানে ওনারা কেন আসল কাদের মোল্লা হাজির করেন না কে জানে। জাতিসঙ্ঘ, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, আরো বহু দেশের সরকারে ধ্বর্না দিতে পারলেও আসল কাদের মোল্লা না হলেও তার আত্মীয় স্বজন হাজির করে ডিএনএ টেষ্টের চ্যালেঞ্জ ওনাদের ধুরন্ধর উকিল কেন দেননি কে জানে।
নিয়াজীর সাথের ছবিটার তথ্যসূত্র কি? আগে একবার পড়েছিলাম যে সেই লোক কামরুজ্জামান।
@আদিল মাহমুদ, সব ঠিক আছে, তাল গাছটি আমার । এখানে খোদ কসাই কাদের এলেও, আর তা প্রমাণ হলেও আপনারা তাকে সলিমুদ্দিন বানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন । যেই লাউ সেই কদু ।
@আবদুল্লাহ রেজা,
কথা না কাজী দেখান না ভাই।
কসাই সাহেবকে হাজির করেই দেখেন না আমরা কি বলি? কসাই সাহেবকে আজকের বিজ্ঞানের যুগে সশরীরেও হাজির করার দরকার নাই। আপনার পছন্দ হতে পারে, এই লিঙ্কে একজন দেরীতে হলেও ইন্টারেষ্টিং পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন ডিএনএ বিষয়ক।
https://www.amarblog.com/faruk55kw/posts/175875
যে পয়েন্ট একজন সাধারন ব্লগার চিন্তা করতে পারেন তা নিশ্চয়ই ব্যারিষ্টার রাজ্জাকের মত্ন ঘাগু উকিলের মাথায় আসেনি তা হতে পারে না। উনি এই চ্যালেঞ্জ শুনানীর সময় কেন করেননি? বাংলাদেশ খুবই ছোট দেশ, এখানে কাউকে ট্র্যাক করা কোন ব্যাপার নয়। কসাই কাদের কাদের মোল্লা না হয়ে থাকলে, এমনকি মারা গেলেও তার পরিবারের কাউকে না কাউকে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। জাতিসঙ্ঘ, মার্কিন সহ নানান দেশের সরকারের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করার আগে এই চ্যালেঞ্জ কেন দেওয়া হল না তা নিশ্চয়ই আপনারা বলতে পারবেন।
আমার ছোট উপদেশ, আমি নিজে কেউ শুধু জামাএর শীর্ষ নেতা, এমনকি ৭১ সালে রাজাকার ছিল এই কারনে ফাঁসীর যোগ্য মনে করি না। ভুল লোকের সাজা হোক কোনদিন চাই না। সাঈদী দিল্যা রাজাকার না বলে ব্যাপক ভাবে প্রচার হয়েছে। আপনারা প্রসিকিউশনকে দিল্যা রাজাকারের ব্যাপারে ডিএনএ টেষ্টের চ্যালেঞ্জ জানান।
সময়পযোগী অসাধারন লেখা। লেখকের জন্য শুভেচ্ছা (F) । তবে সব কিছু পরিপুর্নতা পাবে গো আজম আর নিজামীকে ঝুলতে দেখলে।
অনেক ধন্যবাদ আরিফ রহমান। আপনার লেখাটি কাজে লাগবে।
যারা কাদের মোল্লার পক্ষে কথা বলছেন তাদের প্রতি একটাই প্রশ্ন, উনি কী এমন সহযোগিতা পাকিস্তানকে করেছিল একাত্তরে যে পাকিরা দলবেধে কাঁদতেছে, সে কী কান্না! হ্যা, উনি একাত্তরে কী করেছিল তা সহজেই আঁচ করা সম্ভব পাকিস্তানিদের প্রতিক্রিয়া দেখে।
সকলকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
গোলাম মওলা রনি ও জামায়েতের কতিপয় নেতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কাদের মোল্লার পরিচিতি নিয়ে বিতর্কটি আইসিটি খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবেই পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে এবং নিশ্চিত হয়েছে যে আসামী কাদের মোল্লাই তৎকালীন কসাই কাদের মোল্লা বলে মিরপুরে পরিচিত একই ব্যক্তি। আসামী পক্ষের উকিলেরা আপীল বিভাগে আপীলের মূল শুনানীর সময় অথবা রিভিউয়ের সময় এই বিষয়টিকে আর আনয়ণ করেনি। যদি কাদের মোল্লার পরিচিতি নিয়ে কোন বিভ্রান্তি থাকতো তবে বিচারের প্রতিটি পর্যায়েই সেটাই হতো সবচেয়ে শক্তিশালী ডিফেন্স।
যে দু’জন বিচারপতির বিরুদ্ধে শুরুতেই আবদুল কাদের মোল্লা ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অনাস্থা জানিয়েছিলেন তারাই রায় লিখেছেন। বাকি দু’জন শুধু একজনের লেখা রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেন।
মিরপুরের হযরত আলী লস্করের পরিবারের হত্যাকাণ্ড এবং সেই পরিবারের মহিলাদের ধর্ষণের জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে মূলত ফাঁসি হয়েছে। সেই অভিযোগের মূল সাক্ষী ছিল একজন। হযরত আলী লস্করের কন্যা মোমেনা বেগম। ঘটনা সম্পর্কে মোমেনা বেগমের তিনটি পৃথক বক্তব্য রয়েছে। একটি হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহে, একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সংগ্রহে এবং একটি বক্তব্য হলো ট্রাইব্যুনালের কাছে।
প্রথমে দেখা যাক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহে মিরপুরের জল্লাদ খানায় সংরক্ষিত বক্তব্যে মোমেনা বেগম কী বলেছিলেন। তখন কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। কোনো থানায় একটি জিডিও নেই। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে বক্তব্য প্রদানের আগে মোমেনা বেগমকে কেউ ভয়-ভীতি দেখিয়েছিলেন এমন অভিযোগ করার সুযাগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। তখন বর্তমান সরকারের পূর্বসূরি জরুরি আইনের সরকার ক্ষমতায়। জরুরি আইনের সরকারের তত্ত্বাবধানেই সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠিত হয় যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে। তখন তারা খুবই সোচ্চার ছিলেন। সুতরাং মোমেনা বেগম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বিঘ্নে, নিঃসংকোচে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলার সুযোগ নেই বৈরী সরকার থাকায় সঠিক বক্তব্য তখন দিতে পারেননি।
সেই বক্তব্যে মোমেনা বেগম জানিয়েছেন ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার দু’দিন পর তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের অন্যরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বাড়িতে না থাকায় তার প্রাণে বাঁচারও সুযোগ হয়। কয়েক দিন পর ঘটনা জানতে পেরে খোঁজ নিতে এসে দেখেন কেউ নেই। কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান।
এবার দেখা যাক তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে কী বলেছেন। হযরত আলী লস্করের পরিবারকে হত্যার অভিযোগে আবদুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে মামলা হয় বর্তমান সরকারের আমলে। এই মামলা তদন্ত করেন বর্তমান সরকারের নিয়োজিত তদন্তকারী কর্মকর্তা। তখন আবদুল কাদের মোল্লা কারাগারে। সুতরাং তখনও মোমেনা বেগম নির্বিঘ্নেই তার পরিবার হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলার সুযোগ পেয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মোমেনা বেগমের বক্তব্য হচ্ছে—তার বাবা-মাসহ পরিবারকে হত্যা করেছে বিহারিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছেও হযরত আলী লস্করের মেয়ে আবদুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
তৃতীয় বক্তব্যটি হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের কাছে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় বোরকার নেকাবে মুখ আবৃত মোমেনা বেগমকে হাজির করা হয়। তার সাক্ষ্য নেয়া হয় ক্যামেরা ট্রায়ালে। অর্থাত্ প্রসিকিউশন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী ও বিচারক ছাড়া অন্য কেউ সেই কামরায় উপস্থিত ছিলেন না। ক্যামেরা ট্রায়ালের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে প্রদত্ত্ব বক্তব্য বাইরে প্রকাশেরও কোনো সুযোগ নেই। পরবর্তীতে রায় প্রকাশের সময় দেখা যায় মোমেনা বেগম তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আবদুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং নিজেও ধর্ষণের শিকার বলে দাবি করেন ট্রাইব্যুনালে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিয়ন্ত্রিত মিরপুরের জল্লাদখানায় সংরক্ষিত বক্তব্যটির অনুলিপিও আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। তখন নথিভুক্ত করে বলা হয় রায় প্রদানের সময় এ বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে ঘটনা একটি। সাক্ষ্য মাত্র একজন। একই সাক্ষীর বক্তব্য ৩ জায়গায় ৩ রকমের। কোনটা সত্য? মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যাদের অবিচল আস্থা, তারাই গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তাদের কাছে মোমেনা বেগমের প্রদত্ব বক্তব্যটিতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়ার কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। তেমনি তদন্তকারী কর্মকর্তাও সরকারি নিয়ন্ত্রণে। সাক্ষীদের ট্রেনিংয়ের জন্য তদন্ত সংস্থার নিয়ন্ত্রণে সেফহোম ছিল। সেখানে সাক্ষীদের এনে দিনের পর দিন রেখে কী বলতে হবে—সেটার ট্রেনিং দেয়া হতো। পুলিশ হেফাজতে সরকারি খরচে থাকা-খাওয়া। ঢাকার গোলাপবাগের সেই সেফহোমের কাহিনী দালিলিক প্রমাণসহ পত্রিকায় প্রকাশ করেছি আমি নিজে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। তারপরও কি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলতে মোমেনা বেগমের মনে ভয় ছিল!
ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ব মোমেনা বেগমের বক্তব্যটি সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারলে একই মোমেনা বেগমের বাকি দুটি বক্তব্য কি তাহলে অসত্য ছিল? যদি অসত্য হয়ে থাকে, তবে সেটা কেন এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকার দরকার ছিল? এই ব্যাখ্যা থাকলে আমাদের মতো অনভিজ্ঞ, নির্বোধ মানুষগুলো হয়তো জানতে পারতাম মোমেনা বেগম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্যটি দিয়েছিলেন—সেটা সুনির্দিষ্ট একটি কারণে সত্যতা হারিয়েছে। সত্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে মোমেনা বেগমের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ব বক্তব্যটি।
পত্রিকায় দেখা গেছে, রিভিউ আবেদনের বিষয়ে সুপারসনিক গতিতে শুনানি চলাকালে আবদুল কাদের মোল্লার আইনজীবী বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তার জবাবে দুজন বিচারপতি শুধু বললেন, আমরা বিশ্বাস করেছি বলেই ফাঁসি দিয়েছি। যে দুজন এ কথা বলেছেন, তাদের প্রতিই আবদুল কাদের মোল্লা ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে অনাস্থা দিয়েছিলেন। কেন শুধু একটি বক্তব্য বিশ্বাস করলেন এবং বাকি দুটি বক্তব্য বিশ্বাস করলেন না—সেটার কোনো বিস্তারিত আমরা দেখতে পেলাম না।
এদিকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আবদুল কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানানো হয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়া মোমেনা বেগম এবং হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা এক নন। বোরকা ও নেকাবে মুখ আবৃত ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়া মোমেনাকে নিয়ে উত্থাপিত এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই। সরকার, প্রসিকিউশন সবাই নীরব।
আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে সুপারসনিক গতিতে। এক্ষেত্রে জেল কোডের কোনো কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। জেল কোড অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য ৭ দিন সময় থাকে। সে সময়টি পর্যন্তও দেয়া হয়নি আবদুল কাদের মোল্লাকে। জেল কোডের আরেকটি বিধান হলো মৃত্যু পরোয়ানা জারির ২১ দিন আগে নয় এবং ২৮ দিন পর নয়—এমন সময়ের মধ্যে দণ্ড কার্যকর হবে। আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সেটাও মানা হয়নি।
বাংলাদেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় দায়রা আদালতে মৃত্যুদণ্ড হলে হাইকোর্ট বিভাগে পর্যালোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া দণ্ড কার্যকরের কোনো সুযোগ নেই। হাইকোর্ট বিভাগে দণ্ড বহাল থাকলে আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ থাকে। আপিল বিভাগে বহাল থাকলে রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়েরের সুযোগ পাওয়া যায়। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। এতগুলো স্তর অতিক্রমের উদ্দেশ্য হলো চূড়ান্ত দণ্ড কার্যকরের আগে বার বার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সন্দেহের ঊর্ধ্বে ওঠা। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড হয়েছে আপিল বিভাগে। আর কোনো উচ্চতর জায়গা নেই সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা প্রতিকার চাওয়ার। শেষ পর্যন্ত রিভিউ করারও সুযোগ হয়নি।
আইনে প্রাপ্য সুযোগ থেকে আবদুল কাদের মোল্লা বঞ্চিত হলেও মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হননি। ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ উত্সর্গকারী আবদুল কাদের মোল্লাকে রাতের আঁধারে সরকারি নিয়ন্ত্রণে দাফন করা হলেও তার গ্রামের মানুষ ঠিকই দিনের বেলায় জুমার নামাজের পর গায়েবানা জানাজার মাধ্যমে তার মাগফিরাতের ফরিয়াদ জানিয়েছেন আল্লাহর দরবারে। শুধু তার গ্রাম নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আবদুল কাদের মোল্লার জন্য। নিজ দেশের মানচিত্রের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বাইরেও আবদুল কাদের মোল্লার জন্য বিশ্বের দেশে দেশে হাজারো মুসলমান গায়েবানা জানাজা আদায় করেছেন। সরকার বঞ্চিত করার চেষ্টা করলেও দুনিয়াজুড়ে মুসলমানের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা নিয়ে আবদুল কাদের মোল্লা আখেরাতের পথযাত্রী হয়েছেন। এটাই মোমেনের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্য।
@shafi,
“…যে দু’জন বিচারপতির বিরুদ্ধে শুরুতেই আবদুল কাদের মোল্লা ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অনাস্থা জানিয়েছিলেন তারাই রায় লিখেছেন।…”
বাহ, বিচারক ইচ্ছামত পরিবর্তন হবে, মামা বাড়ির আবদার তো।
“…বলার সুযোগ নেই বৈরী সরকার থাকায় সঠিক বক্তব্য তখন দিতে পারেননি।…”
সে সময় কি কাদের, কিংবা তার সাঙ্গো-পাঙ্গো জেলে ছিলেন ? যদি তা না হয়, তাহলে অবশ্যই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না।
এখন ট্রাইব্যুনাল চলাকালিন সময়ে পূর্ণ নিরাপত্তায় সাক্ষী খুব হয়… আবার বড় বড় কথা বলে।
“…এদিকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আবদুল কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানানো হয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়া মোমেনা বেগম এবং হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা এক নন। …”
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কেন, আগে কি করলেন ?? আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালেরই বা কি করার আছে ?
“…জেল কোড অনুযায়ী …………………………………………। ৭ দিন সময় থাকে। সে সময়টি পর্যন্তও দেয়া হয়নি আবদুল কাদের মোল্লাকে। জেল কোডের আরেকটি বিধান হলো মৃত্যু পরোয়ানা জারির ২১ দিন আগে নয় এবং ২৮ দিন পর নয়—এমন সময়ের মধ্যে দণ্ড কার্যকর হবে। আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সেটাও মানা হয়নি। …………………………………………………………………………………………………………………………………আর কোনো উচ্চতর জায়গা নেই সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা প্রতিকার চাওয়ার। শেষ পর্যন্ত রিভিউ করারও সুযোগ হয়নি।…”
সেই পুরান কাসুন্দি… ইস্পেশাল ট্রাইব্যুনাল এইটা… এখানের সব আইন কানুন স্পেশাল।
দুনিয়ার কোন কোর্টে পেপার কাটিং প্রমাণ হয় না কিন্তু স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল হয়… মাথা দিয়ে কিছু ঢুকলো
@shafi, আপনার বিশ্লেষণ খুবই চমৎকার হয়েছে। আমাদের জ্ঞানপাপীরা যদি তা বুঝতো তবে কতইনা ভালো হতো।আমাদেরও একটাই প্রশ্ন, যে একমাত্র সাক্ষীর ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো, সেই একমাত্র সাক্ষীর ৩ জায়গায় দেয়া ৩ ধরণের বিপরীত বক্তব্যের কোনটি সত্য? মোমেনা বেগম ঘটনার সময় শ্বশুরবাড়ী ছিলেন সেটা সত্য? বিহারীদের সহায়তায় পাকিস্থানীরা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেটা সত্য? নাকি তিনি ঘটনার সময় খাটের নীচে লুকিয়ে থেকে পুরো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখেছেন এবং নিজেও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সেটা সত্য?
@তানভীর,
একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম পুরো মামলা জুড়ে জামাতের আইনজীবীরা এটাই প্রমান করার চেষ্টা করে গেছেন যে
“১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর থেকে যুদ্ধকালে আব্দুল কাদের মোল্লা ঢাকাতেই ছিলেন না।”
তবে মিরপুরে কসাই কাদের নামে একজন কাদের মোল্লা ছিলেন। তিনি পেশায় কসাই ছিলেন এবং মানুষ হত্যায়ও পারদর্শী ছিলেন এটাও তারা স্বীকার করে
ভালো কথা
কিন্তু মজাটা হইল যেই অভিযোগে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, যাতে একাত্তরের ২৬ মার্চ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা এবং এক মেয়েকে ধর্ষণের বর্ণনা ছিল।
হযরত আলীর মেয়ে ধর্ষিত মোমেনার জবানবন্দির ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয় তিনি নাকি ভুয়া।
সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সম্মেলনে কাদেরার বউ জানান “মোমেনা বেগম আদালতে সাক্ষী দিতেই আসেননি। ক্যামেরা ট্রায়ালের নামে গোপন বিচারে ভুয়া একজন মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে আদালতে বক্তব্য দেয়ানো হয়েছে।”
মজাটা হইল, শালারা কার জন্য লড়তাসে… কসাই কাদের নাকি মোল্লা কাদের ???
মোল্লা কাদের সেই সময় ঢাকায় ছিলেন না মানলাম।
এখন কি তোরা এটাও বলতে চাস কসাই কাদেরও সেই সময় ঢাকায় ছিলো না ???
ভালোই হইল, কসাই কাদের বিনা পয়সায় ভালো উকিল পাইলো…
@তানভীর,
এটা একটা বানোয়াট কথা। বাঁশের কেল্লাতে ছড়ানো কথা। মোমেনা বেগম সাক্ষ্য দিয়েছে একবারই এবং তিনি নিজেই বলছেন যে, আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটি কাদের মোল্লা। তিনি কাদের মল্লার দিকে চিৎকার করে বলেওছিলেন, ‘আমার বাবাকে কোথায় পাবো?’ এই একটাই সাক্ষী মোমেনা বেগমের।
সাক্ষী নিয়ে বরং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিলেন কাদের মোল্লার পক্ষের আইনজীবিরাই। কাদের মোল্লার এক ভিক্টিম পল্লবের ভাইয়ের স্ত্রী মোসাম্মৎ সায়েরাকে তারা হাত করতে চেষ্টা করে, তাকে দিয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে লেজে গোবরে করে ফেলেছেন তিনি। ট্রাইবুনালের রায়ের প্যারা ১৮২-১৮৯ দেখুন।
আপনি কি আদালতের রায় পড়েছেন? শুধু মোমেনা বেগম নয়, অনেকের সাক্ষ্য থেকেই জানা গেছে এই কাদের মোল্লাই আক্তার গুন্ডা, নেহাল, হাক্কা গুন্ডা যারা মীরপুরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন একাত্তরে – তাদের সহচর ছিলেন। এদের অনেকেই সরাসরি কাদের মোল্লাকে নিজ চোখে শনাক্ত করেছিল। আপনারা আছেন কোন জগতে?
কাউকে জ্ঞানপাপী বলার আগে নিজের জ্ঞানের বাটখারাটা কত ভারী তা না হয় আগে যাচাই করে নিলেন, কেমন? আপনার শফি সাহেবকেও একটু পরেই উত্তর দিচ্ছি, অফিসের কাজ শেষে। দেখা যাক কত ধানে কত চাল, আর কত গমে কত আটা।
@অভিজিৎ,
আর কাদের যখন নিজেই বলে,
তখন কি বোঝা যায় ?? লোকটা কসাই তো ছিলই তার সাথে ছিল প্রচণ্ড মিথ্যাবাদীও, ৪২ বছরেও স্বভাব এতটুকু পরিবর্তন হয় নাই। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোরআন হাতে মিথ্যাচার করে গেছে…
@তানভীর,
বাঁশেরকেল্লায় বেশি বেশি ঘোরাঘুরি করলে যা হয় আর কি, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তাই বুঝা যায় না !! এবার শুনেন :
যখন কোন একজন মানুষ নৃশংস ঘটনার শিকার হয়, তখন সে আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার কারনে ঐ নৃশংস ঘটনা জনসমক্ষে সৰ্ম্পূনরূপে প্রকাশ করতে প্রস্তুত থাকে না, অৰ্থাৎ ভয় পায়। কিন্তু, ট্রাইবুনালে সত্য-কথনে শপথবদ্ধ থাকা অবস্থায় সেই ব্যক্তি ঐ নৃশংস ঘটনার যে বিবরন দিবে তা সৰ্ম্পূনভাবে নিৰ্ভরযোগ্য। এছাড়া অন্য জায়গায় তার বাকি সব Statements(বিবরন সমূহ) নিৰ্ভরযোগ্য না।
মোমেনা বেগম কি বলেছেন এবার তা শুনেন:
David Bergman এর যে লেখা থেকে আপনার এই ভ্রান্ত ধারনা তৈরি হয়েছে সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়েন : “এখানে” ।
@shafi, :lotpot:
@shafi,
এমন দাবির স্বপক্ষে কি কাদের মোল্লার পরিবার কোন প্রমাণ হাজির করতে পেরেছে?
@দারুচিনি দ্বীপ,
প্রমাণ হাজির করে লাভ কি ? ট্রাইব্যুনালে যখন বিচার চলছিলো তখন ওনারা কোথায় ছিলেন । ট্রাইব্যুনাল থেকে যখন আপিল বিভাগে গেল তখন ওনারা কোথায় ছিলেন ??
আসল কথা হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল যখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলো কাদের কে তখন তার পরিবার ও আইনজীবীরা ভেবেছিলো
কিন্তু আপিলের রায় তো ওদের মাথায় বাঁশ, উপায় না পেয়ে কোর্ট ছেড়ে সংবাদ সম্মেলন করে এখন মিথ্যাচার কোরতে হচ্ছে
@আরিফ রহমান,
লাভ লস নারে ভাই, যে খচ্চরগুলো এখনো কাদের মোল্লা কে নির্দোষ মনে করে তাদের জন্য একটা ট্রিক ছিল ওটা।
@shafi,
আপনার মন্তব্যটি পড়লাম। খানিকটা অবাকও হলাম, আবার একটা পর্যায়ে ধরেই নিলাম আসলে একটা সুনির্দিষ্ট চিন্তার বলয় থেকে বের না হতে চাইলে যা হয়, আপনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটি সঠিক কন্সেপ্ট বা ব্যাপার নিয়েও যেখানে প্রশ্ন করা যায় সেখানে আইনী এই ব্যাপারে এই জাতীয় প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে, এভাবেও আমি ব্যাপারটিকে দেখছি। ওভারঅল, আপনার প্রশ্ন করাকে আমি স্বাগত জানাই এবং আপনার এই প্রশ্নের মাধ্যমে সাক্ষী মোমেনা কিংবা কাদের মোল্লার কিছু বিচার সংক্রান্ত ব্যাপার সবার জানার স্বার্থেই আমি আলোচনা করতে চাই। আসুন এক এক করে আপনার মন্তব্যের জবাব দেই।
বিচারপতি ইস্যুঃ
আপনি শুরুতেই যে বিচারপতিদের নিয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার ন্যায় বিচার পাবার আশংকা ব্যাক্ত করেছেন দুইজন বিচারপতির দিকে ইঙ্গিত করে সেটা আসলে হাস্যকর। কেননা, জামাত আজ পর্যন্ত এই ট্রাইবুনালের কোন বিচারপতিকে নিয়ে তাদের শংকার কথা জানায়নি? যেখানে এই ট্রাইবুনালটাই তারা পলিটিকাল হস্তক্ষেপে হচ্ছে বলে, বার বার বলবার চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে বিচারপতি তো সেই অভিযোগের প্রাথমিক পর্যায়ের এলিমেন্ট। এটা বলা বাহুল্য।
আপনাকে এই বিষয়ে একটি মজার তথ্য দেই। জামাত একটা সময় যখন এই ট্রাইবুনালকে নিয়ে পুরো পৃথিবীতে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছিলো তখন তারা বলছিলো যে এই ট্রাইবুনালে সব বিচারপতি দলীয় নিয়োগ পাওয়া, তারা আগে থেকেই মাইন্ড সেট আপ কয়রে এসেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি…কিন্তু গত বছর যখন বিচারপতি এ টি এম আফজাল তাঁর ব্যাক্তিগত অসুস্থতার কারনে ট্রাইবুনাল থেকে সরে দাঁড়ালেন তখন জামাতের আইনজীবিরা প্রচন্ড উচ্চকিত হয়ে উঠলেন এই বলে যে, বিচারপতি এ টি এম আফজাল খুব নিরপেক্ষ বিচারপতি ছিলেন। অথচ, এতদিন তারা সব বিচারপতিকেই বায়াসড কিংবা সরকারী হুকুম তামিল করছে, এসব বলেই অভিহিত করছিলেন। সুতরাং জামাতের এসবের দাবীর আসলে সঠিক কোনো লিগাল স্ট্যান্ড নেই, যৌক্তিকতা নেই।
আপনি খুব সম্ভবত বিচারপতিদের ব্যাপারে শংকার কথা বলার ব্যাপারটিতে রেফার করছেন স্কাইপি কনভারসেশনের ঘটনাটি। যদিও এই ব্যাপারটি একটি বিচারাধীন ব্যাপার এবং এটি এখনও প্রমাণিত বা রিজলভড কোনো ব্যাপার নয়, তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি এই ব্যাপারে খুব বেশী কথা বলতে পারিনা। কিন্তু আপনি যদি সেই কনভারসেশনে উল্লেখিত মাননীয় বিচারপতি সিনহা কিংবা বিচারপতি মানিকের [কনভারসেশনে তাঁর নাম ছিলো না] কথা ইঙ্গিত করেন [ধরে নিচ্ছি তাদের কথাই বলছেন কেননা বিভিন্ন জামাতী পেইজে এদের নামে বিষাদ্গার দেখেছি] তবে বলতে হয় আপনি আসলে কিছু জামাতী গৎবাঁধা বুলি ছাড়া আর কিছুই বলছেন না। স্বাধীনতার পক্ষের কোনো ব্যাক্তিকে কিংবা স্বাধীনতার পক্ষে স্ট্রংলি কাজ করেছেন বা এই রকমের ইতিহাস রয়েছে এমন কিছু মানুষদের দেখলেই জামাতীদের শরীর জ্বলে। ধরা যাক, আজকে বিচারপতি সিনহা কিংবা মানিক সাহেবকে না রেখে বিচারপতি ফজলে এলাহী কিংবা নাজমুন নাহারকে সেখানে রাখা হোতো, কেউ কি গ্যারান্টি দিতে পারে যে জামাত সোনামুখ কয়রে ভালো ভালো করে রব উঠাতো? কখনই না।
এই ট্রাইবুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা জামাতের একটা স্ট্র্যাটেজি। আমি এই হিসেবে আগেই উদাহরণ দিয়েছি বিচারপতি আফজালের কথা উল্লেখ করে। কিন্তু এখানে সিগনিফিকেন্ট লিগাল কোশ্চেন হচ্ছে, যেই ইস্যুতে বিচারপতি সিনহার ব্যাপারে জামাত প্রশ্ন তুলছে সেই ইস্যু হচ্ছে আরেকজন বিচারপতির একটা কনভারসেশন অন্য আরেকজন ব্যাক্তির সাথে। এখন একজন মানুষের কনভারসেশনের কথার উপর ভিত্তি করে [যেটি আবার আদালতে বিচারাধীন] একজন আপীলেট ডিভিশনের বিচারপতিকে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিবে? এটা তো জামাতের মুল্লুক নয়, এটা তো আপনাদের ইচ্ছাধীন বিচারালয়ও নয়।
জাস্টিস জ্যাকসন যেমন ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিচার শুরুর প্রাক্কালে বলেছিলেন যে,
“অভিযুক্ত অপরাধীদের হাতেই নিশ্চয় আমরা বিচার করবার ভার দিতে পারিনা, এমন ভার দিলে কি হয় তা আমরা ১ম বিশ্ব যুদ্ধেই দেখেছি”
আবার অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এ এল গুড হার্ট এই একই প্রসঙ্গে বলেছেন-
“কোনো দেশে গুপ্তচর বৃত্তির অপরাধের বিচার তো আমরা আসলে সেই গুপ্তচরের দেশকে দিতে পারিনা। গুপ্তচরের বিচার করবে যেই দেশে সে গুপ্তচর বৃত্তি করেছে সে দেশে এবং বিচার করবেও সেই দেশের আদালত। এই ক্ষেত্রে বিচার নিরপেক্ষ হয়নি, এমন দাবী তুলবার সুযোগ নেই”
এই প্রসঙ্গে লর্ড রীট বলেছেন, “ একজন চোর নিশ্চই অভিযোগ করতে পারেন না যে কেন তার বিচার সৎ লোক করছে” এমন দাবী শুধু আপনি আজ করেন নি। নুরেম্বার্গ ট্রায়ালে উঠেছিলো, ইয়াশামিতা ট্রায়ালে উঠেছিলো। কিন্তু সেসব দাবী আসলে ধোপে টেকে না।
সুতরাং যে দু’জন বিচারপতির বিরুদ্ধে শুরুতেই আবদুল কাদের মোল্লা ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অনাস্থা জানিয়েছিলেন সেটি হাস্যকর দাবী। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের প্র্যাকটিসে এই দাবী অসাড়।
সাক্ষী মোমেনা ইস্যুঃ
সাক্ষী মোমেনা ইস্যু আসলে কোনঠাসা অপরাধীদের একটা নোংরা প্রোপাগান্ডা। জামাত যতই ইসলামের কথা বলুক না কেন, কাজে কর্মে তারা বরাবরই গোয়েবলস নামের এই [মুসলিম নন] ব্যাক্তির কর্মকান্ডই মূলত অনুসরণ করেছেন। জামাত এবং তাদের মিডিয়া সব সময় একটা বার্নিং ইস্যু থেকে চট করে কয়েকটা বাজারী কথা ছড়িয়ে দেয়, মানুষের মুখে মুখে সেগুলো ফিরতে থাকে এবং এন্ড অফ দা ডে সেটি নিয়ে তারা বাজার গরম কয়রে তোলে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুগুলো টেকে না কিন্তু তারা মানুষের ভেতর একটা সন্দেহের বীজ দিতে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সে রকম ইস্যুর ভেতর রয়েছে মেশিন ম্যানের চন্দ্র ভ্রমণ, এই সাকা সেই সাকা না র্যাদার সাকা ছিলো পাকিস্তান, এই দেইল্যা সেই দেইল্যা না, এই কাদের সেই কাদের না এটা অন্য কাদের ইত্যাদি ইত্যাদি। এইতো সেদিন এন টিভির এক লাইব টকশোতে গেলাম। এক ব্যাক্তি ফোন কয়রে বলল, এই নিঝুমকে তো আমরা দুইবার জুতাপেটা করেছি। হাসতে হাসতে মরে যাবার মত অবস্থা হোলো সবার। আসলে মনের গহীনের দুষ্টু কল্পনা গুলোকে একটা পর্যায়ে মানসিক বিকার গ্রস্থেরা বিশ্বাস করতে শুরু করে আর তখন সেটি আসলে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। কল্পনা করা হয়ত মন্দ না, কিন্তু সেই কল্পনাকে বাস্তব চরিত্র দিয়ে রূপদান করা শুধু অন্যায়-ই নয় বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আপনি মোমেনার সাক্ষ্যের এই বিষয় কোনোদিন সাহস করে আনতে পারতেন না যদি আপনি এই কাদের মোল্লার মামলার দুইটি রায় মন দিয়ে পড়তেন। একটি রায়, আই মিন প্রথমটি ট্রাইবুনাল-২ এর ১৩২ পৃষ্ঠার রায় আর ২য়টি উক্ত রায় আপীলে যাবার পর আপীলেট ডিভিশন থেকে ৭৯০ পাতার দীর্ঘ রায়। ভার্ডিক্ট না পড়ে কিংবা বিচারপতিরা একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বা আসল ফ্যাক্ট টি কি, এসব না পড়ে তর্ক করতে আসা মূর্খতা বলে আমি মনে করি।
মোমেনার ইস্যুটি খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। মোমেনা মূলত তার জীবনে একবারই সাক্ষ্য দিয়েছেন তার পিতা-মাতা আর ভাই-বোন হত্যা মামলায়। আর সারা জীবন যদি কোন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তবে সেটি একটি প্রোপার বিচার ব্যাবস্থায় আইন কিংবা কানুন মানা সাক্ষ্য হয়েছে, এই বিবেচনায় ধর্তব্য, আদারোয়াইজ, এই ধরনের কথার কোনো দাম পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আদালতে নেই।
আপনি মোমেনার যেই জবানবন্দীর কথা বলেছেন যেটি তিনি মিরপুরের জল্লাদ খানার যে যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে আপনি কিংবা অভিযুক্তের আইনজীবি দাবী করছেন সেটি আদালত সম্পূর্ণ ভাবে অসাড় হিসেবে অভিহিত করেছেন। যখনই আপনি এই জাতীয় অভিযোগ করবেন তখন আপনার ঘাড়েই দায় বর্তায় আপনার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করবার। কাদেরের আইনজীবি একটা কাগজ নিয়ে এসেছে ছবি ফরম্যাটে। যার কোথাো কর্তৃপক্ষের সাক্ষর নেই, সাক্ষ্য দাতার সাক্ষর নেই, এটি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সেটি বলতে পারেনি, এই বিচারের আইনের ধারা ৯, সাব সেকশন ৫ এর নিয়ম ফলো করা হয়নি, এটা সৌর্ন কোনো সাক্ষ্য নয়। [এই অংশের সত্যতা নিরূপনে আমি রেফার করছি ট্রাইবুনালের মামলার রায়, পৃষ্ঠা ১১৯, প্যারা ৩৯১-৩৯২]
উপরের যে আইনী বাধ্যবাধকতা মূলক ল্যাকিংস গুলো রয়েছে, সেটি ব্যাতিরিকে এখন যদি আপনি দাবী তোলেন যে এই ধরনের সাক্ষ্য গ্রহন করতে তবে এন্ড অফ দা ডে আমি বলব, আপনারাই আসলে বাধ্য করছেন বা প্রেশার ক্রিয়েট করছেন যে এই কোর্ট ক্যাঙ্গারু কোর্ট হয়ে যাক, শুধু মাত্র আপনাদের স্বার্থের সময় আর বাকী সময় আইনের এই থ্রেশ হোল্ড না মানলেও চলবে। আজকে যদি সেইম ব্যাপারটা প্রসিকিউশনের কেউ করতে চাইত এবং বিচারক একই স্ট্যান্ড নিত, তবে কি আপনি বলতেন না যে আইন রক্ষিত হয়েছে? তবে কেন নিজেদের সুবিধা হয়, এমন মুহুর্ত গুলোতেই প্রোপাগান্ডা বা মিথ্যে ছড়ান?
আমি যদি ধরেও নেই মোমেনা বেগম যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে এই সাক্ষ্য দিয়েছে সেখানেও কথা থাকে। আমি এই জবানবন্দী পড়েছি। যদিও সঠিক বাক্য হবে এটি মোমেনার বক্তব্য এর প্রেক্ষিতে যাদুঘর কর্তৃপক্ষের অনুলিখন, [যদি বক্তব্য দিয়েছেন ধরে নেই] যেমন, উক্ত সময়ে বা উক্ত এলাকায় ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন ভিক্টিমের বক্তব্য কি ছিলো। এখানে মোমেনার উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলছেন সেটা এমন নয় যে সেটি প্রথম পুরুষ ব্যাকরণে বলা হচ্ছে যেমন, “আমি মোমেনা এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে…”
আমি মোমেনার এই বক্তব্য দৈনিক সংগ্রামে পড়েছি। পড়েই বোঝা যায় যে এখানে কত রকমের দূর্বলতা আছে, এই দূর্বলতা বুঝবার জন্য আমাকে আপীলেট ডিভিশানের বিচারপতি কিংবা মহকুমার হাকিম হবারও প্রয়োজন পড়ে না আসলে। একজন সাধারণ ব্যাক্তিই বুঝবেন এটি দেখার সাথে সাথে। এই বক্তব্যে কাদের মোল্লার নাম বলা দূরে থাকুক, বিহারী আক্তার গুন্ডা, হাক্কা কিংবা নেহাল গুন্ডার নামও নেই যেই নামগুলো এই আলী লস্কর হত্যা মামলায় বার বার এসেছে কাদেরের সহযোগী হিসেবে।
আপনি যেমন প্রশ্ন তুলছেন,
এই বক্তব্য একেবারেই ফালতু যুক্তি। যাদুঘর কর্তৃপক্ষ বক্তব্য টিকেই এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যেখানে ঘটনার সময়কালীন বর্ণনাকে মুখ্য কয়রে তোলা হয়েছে, অপরাধীদের পরিচয়টিকে নয়। সেটি কেন যাদুঘর কর্তৃপক্ষ করেছেন কিংবা কাদের মোল্লা বাদ দিন, কেন আকতার গুন্ডা, নেহাল বা হাক্কার নামও সেখানে আসেনি সেটি যাদুঘর কর্তৃপক্ষ জবাব দেবে। মোমেনার জবাব দেবার স্থান বা সুযোগ এখানে একেবারেই নেই। আমি আগেই বলেছি, মোমেনা আদৌ এই বক্তব্য দিয়েছেন কিনা, কিংবা তার বক্তব্যের কতটুকু যাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিয়ে লিখেছেন সেটার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই প্রমাণ আইন মেনে হাজির করতে সম্পূর্ণ ভাবে অভিযুক্তের আইনজীবিরা পরাস্ত। এই না পারা কিংবা এই পরাজিত হবার খায়েশ যদি এখন সাফি সাহেব আপনাকে দিয়ে কিংবা বাঁশের কেল্লাকে দিয়ে কেউ মেটায় তবে এক্ষেত্রে আমার কিছুই করবার নেই কিংবা বলবার নেই। ট্রাইবুনাল এই ক্ষেত্রে বলেছে-
ট্রাইবুনালের রায়ের ১১৯ নাম্বার পৃষ্ঠায় আদালত এও বলেন যে, প্রসিকিউশন সাক্ষী যদি দুই রকম স্টেটমেন্ট দিয়ে থাকেও তবে সেই ক্ষেত্রে সাক্ষীর মেন্স রিয়া প্রমাণ করতে হবে, শুধু সাক্ষ্যের ইঙ্কন্সিস্টেন্সি প্রমাণ করতে পারলেই হবে না।
এই একই যুক্তি কিন্তু গ্রহন করেছে আপীলেট ডিভিশানের চার বিচারপতি, শধু মাত্র বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া ছাড়া। তাও ওয়াহাব মিয়া মতামত দিয়েছেন যে ট্রাইবুনাল আরো একটু সময় দিয়ে জল্লাদখানার কর্তা ব্যাক্তিদেরও আবেদন অনুযায়ী সমন জারি করিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারত। কিন্তু তিনি এও বলেছেন যে, প্রসিজিউরাল কোনো ফ্লস তিনি পান নি একেবারেই। এই বিষয় নিয়েও যখন আসামী পক্ষ রিভিউ এর দিন প্যাঁচ খেলতে চেষ্টা করেন, তখন বিচারপতি ওয়াহাব কি বলেছেন শুনে নিন-
আসামী পক্ষের আইনজীবি আব্দুর রাজ্জাক রিভিউ শুনানীতে বলেন, “মোমেনার সাক্ষ্যে (যে সাক্ষ্যে আপিল বিভাগ ফাঁসির রায় দেয়) অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি একেক জায়গায় একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন।… বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকলে সাক্ষী বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে সেই সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া যায় না।”
বিচারপতি এসকে সিনহা এ সময় বলেন, “সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা আছে বলেই আমরা গ্রহণ করে শাস্তি দিয়েছি।”
এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আপিলের রায়ে ত্রুটি রয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ওই সাক্ষীকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেননি বলে তিনি তার রায়ে সাক্ষীর অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন।”
এ পর্যায়ে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় হয়েছে। যাতে চারজন একমত হয়েছেন। সেখানে আমারটা বলা আমার জন্য বিব্রতকর। সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতামতই প্রাধান্য পাবে। আমার মতের কথা বলা হলে আমি বিব্রতবোধ করব।”
এরপর ব্যারিস্টার রাজ্জাক বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ‘সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার’ বিষয়ে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ তুলে ধরেন।
আপনি এই বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আপনি বলেছেন-
আপনি আসলে বার বার নিজেকে ইচ্ছে করেই নির্বোধ প্রমাণ করবার মিশনে নেমেছেন কিনা আমি জানিনা। আপনার কি ধারনা এই রিভিউ এর মত স্বল্প পরিসরে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে বিশ্লেষন হবে যেখানে ৭৯০ পৃষ্ঠার রায় এই বিচারপতিরাই লিখেছেন মাত্র সপ্তাহ খানিক আগে? আপীলেট ডিভিশানে যখন আপীলের জন্য মামলা যায় সেখানেই কোর লিগাল পয়েন্ট ছাড়া আর অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই আর সে যায়গায় রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই একই কথা আবার বলবে বলে আপনি প্রত্যাশা করছেন। আপনি ভাই পারেনও। বিচারপতিরা সাক্ষী মোমেনাকে নিয়ে যা বলবার সেটি তাদের ৭৯০ পৃষ্ঠার রায়েই বলেছে। রাজ্জাক রিভিউ তে ঐ ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য কিংবা যুক্তি তো দিতে পারেন নি বরং তিনি আগের ডিসিশানকেই পুনঃর্বিবেচনা করতে বলেছেন। তাহলে রিভিউ করতে পারবে কি পারবে না এই ব্যাপারে সাধারণ আবেদনের শুনানীতে কেন বিস্তারিত আলোচনা হবে?
আসুন দেখি আপীলেট ডিভিশান কি বলছে এই সাক্ষ্য নিয়ে। কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত মোমেনার সাক্ষ্য গ্রহন করেছে?
আসামী পক্ষ সাক্ষীর ক্রস এক্সামের সময় প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে। এটাও এখন ট্রাইবুনালের দোষ। আসামী পক্ষের আইনজীবিরা প্রশ্ন করবে না সময় মত কিন্তু পরে গিয়ে বলে, আমরা কিছু প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি। আমাদের আবারো প্রশ্ন করবার সুযোগ দেয়া হোক। যখন এই কথা তারা বলেছে তখন অলরেডী আরো অনেক প্রসিকিউশনের সাক্ষীর ক্রস এক্সাম করা শেষ। ট্রাইবুনালটা যেন কাদের মোল্লার আর তার আইনজীবিদের মামার বাড়ীর আবদারের একটা পীঠস্থান। এই বিষয়ে আদালত বলে-
আবার জল্লাদ খানার এই জবানবন্দীর কথা আসামী পক্ষ ২০১২ সালের ১৭-ই অক্টোবর জানতে পারলেও তারা এই ব্যাপারে আবেদন কয়রে ৮-ই জানুয়ারী ২০১৩, আদালত বলেন-
একটা কথা বুঝতে হবে যে, এটাই এই মামলায় স্বাভাবিক যে কাদের মোল্লার মত এতবড় একটা খুনী এলিবাই [ঘটনার সময় অভিযুক্তের অনুপস্থিতি] ডিফেন্স দিবে। সে তো বলবেই যে ঘটনার সময় সেই ছিলোই না ঘটনাস্থলে। এই কাদের মোল্লার সবচাইতে বড় ইয়ার দোস্তো আক্তার গুন্ডা ছিলো কাদের মোল্লার মত এমন এক ভয়াবহ খুনী। কাদের মোল্লা, আক্তার গুন্ডা এরা মিলেই মূলত ১৯৭১ সালে মিরপুরে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৯৭২ সালে দালাল আইনে এই আক্তার গুন্ডার বিচার হয় এবং বিচারে তার ফাঁসীও হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রায় থেকেই দেখতে পেলাম এই আক্তার গুন্ডাও আজ থেকে ৪০ বছর আগে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ডিফেন্ড করতে গিয়ে সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলো। সেই এলিবাই ডিফেন্স, আজ যেটি কাদের মোল্লা করেছে।
কাদের মোল্লার মামলার রায়টি আপনারা পড়ে দেখলে দেখবেন সাক্ষীরা অসংখ্যবার কাদের মোল্লার সাথে সাথে আক্তার গুন্ডা, নেহাল, হাক্কা গুন্ডার কথাও বলেছে। তারা সবাই সরাসরি কাদের মোল্লাকে নিজ চোখে শনাক্ত করে, দেখে আদালতকে নিশ্চিত করেছে যে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যাক্তিটিই সেই কুখ্যাত কাদের মোল্লা। লক্ষ্য করে দেখুন, ৪১ বছর আগে আক্তার গুন্ডাও তার বিচার চলাকালে বলেছিলো যে, সেইসময় সে পাকিস্তানে বেড়াতে গিয়েছিলো। হত্যাকান্ডের কথা কিছু সে জানেই না। আবার ৪১ বছর পর আসামী কাদের মোল্লাও বলেছিলো যে, ঘটনার সময় সে ফরিদপুরে ছিলো এবং সে এই হত্যাকান্ডের, গণহত্যার কিছুই জানে না। অবস্থা দৃষ্টিতে আসলে মনে হয়, এই গণহত্যা, এই নৃশংসতা আসলে ভূত এসে করে দিয়ে গিয়েছে। ঐ সিনেমাটির মত, “নো ওয়ান কিল্ড, জেসিকা”
কাদের মোল্লা নাকি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিলো। কি ভয়াবহ তথ্য। অথচ এই ব্যাপারে তার হয়ে যেসব গাঁট কাটাল এসেছিলো সাক্ষী দিতে তারা বলতেই পারেনি কোনো তথ্য। একজন আবার বলেছে যে কাদের মোল্লা নাকি ফরিদপুরে এক বছর ধরে ব্যাবসা করেছে। অথচ কাদের মোল্লা নিজেও তা দাবী করেনি। কি ভয়াবহ!!!
অথচ এই মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা কাদের মোল্লাই দাবী করে যে, মুক্তিযোদ্ধারা নাকি টাকা, অর্থ আর সম্পত্তির লোভে যুদ্ধে গিয়েছিলো কিংবা সে আরো বলে, বাংলাদেশ হওয়াতে নাকি সাংবাদিকদের মাতব্বরি বেড়ে গেছে। তাহলে আমার প্রশ্ন থাকলো এই কাদের মোল্লার কাছেই যে, কাদের মোল্লা যে নিজেকে দাবী করেছে সে মুক্তিযুদ্ধে গেছে, তবে সে কিসের লোভে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে? আজ তাহলে পাকিস্তানের মন্ত্রী, আমলারা দাবী করছে যে সে, পাকিস্তানের প্রতি আমৃত্যু লয়েল ছিলো? এটা কোন প্রজাতীর মুক্তিযোদ্ধা?
আবার, এতই স্বতী-স্বাধ্বী আমাদের কাদের মোল্লা যে তাকেও সাক্ষী জালিয়াতি করতে হয়েছিলো। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত প্রথম অভিযোগ মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা মামলায় এই কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল পল্লবের ভাইয়ের স্ত্রী মোসাম্মৎ সাহেরাকে তার বাবার [কাদের মোল্লা] পক্ষে সাক্ষী দেবার জন্য রাজী করায়।[ডিফেন্স সাক্ষী নাম্বার-৪] আরো ইন্টারেস্টিং তথ্য হচ্ছে, ডিফেন্সের এই সাক্ষী মোসাম্মৎ সাহেরা প্রথমে ছিলো প্রসিকিউশনের সাক্ষী, অর্থ্যাৎ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষী। কিন্তু এই সাহেরাই আবার পরে কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষী দেয়। আদালতে মোসাম্মৎ সাহেরা হাতে নাতে ধরা খেয়ে যায় মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে। [ ট্রাইবুনালের রায়ের প্যারা ১৮২-১৮৯ দ্রষ্টব্য]
একটা মানুষ কতবড় অমানবিক চিন্তা করা যায়? নিজের স্বামীর ভাইয়ের হত্যাকারীর সাথে হাত মিলায় শুধু টাকার জন্য? আর এদিকে কাদের মোল্লার প্যাঁচটাও কতটা ভয়াবহ আর অকল্পনীয়। চিন্তা করে দেখুন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য প্রসিকিউশনের সাক্ষীকে তারা টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলে অথচ জেলে নাকি ডাল আর উস্তা ভাজি খেতে পায় না। সে জন্য আবার গোলাম রনিকে চিরকুট লিখে। কত কোটি টাকার ষড়যন্ত্র এটা? চিন্তা করে কুল কিনারা পাবেন না। এটাই অবশ্য এই অপরাধীদের এরকম প্রথম চাল নয়। এর আগে তারা সাঈদীর মামলায় প্রসিকিউশনের খুব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে টাকার বিনিময়ে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য রাজী করায়।
লক্ষ্য করে দেখুন একটা ব্যাপার। রাষ্ট্র পক্ষের যেসব সাক্ষী পরবর্তীতে টাকা খেয়ে আসামীদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছে তারা দুইবার দুই রকম কথা বলেছে। ইনভেস্টিগেশন অফিসারদের কাছে তারা প্রথমে দিয়েছে আসামীদের বিরুদ্ধে জবানবন্দী আর পরে আসামীদের পক্ষে বলতে গিয়ে দিয়েছে তাদের পক্ষে সাক্ষ্য। তাহলে একই লোক দুই রকমের কথা বলছে। অথচ প্রসিকিউশনের সাক্ষী মোমেনা বেগম, যিনি আদালতে কাদের মোল্লাকে দেখে হাত উঠিয়ে বলেছে যে এই লোকই খুন করেছে তার বাবাকে, মাকে, এই লোককেই সাক্ষী দেখেছিলো সেদিন। এই লোকই তার দুই বছরের ভাইকে আছাড় দিয়ে হত্যা করেছে, তিন বছরের বোনকে ধর্ষন করেছে। ইনফ্যাক্ট আদালতে দাঁড়িয়ে মোমেনা চিৎকার করে কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “আমার বাবাকে ফিরিয়ে দে”
সাফি সাহেব আবার বলেছেন, যে মোমেনা নাকি ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তাকে ভিন্ন সাক্ষ্য দিয়েছে। আপনার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ রকমের ভুল ও মিথ্যা তথ্য। আপনাকে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তার যে ডায়েরী (যেখানে ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তা তদন্তের সময় নানান তথ্য টুকে রাখেন) রেফার করে আসামী পক্ষের আইনজীবি তার বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সাক্ষ্য আইনে আমলের যোগ্য নয়। কেননা, আইন অনুযায়ী ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তার এই টুকে নেয়া টাইপ তথ্য বা বক্তব্য আদালত নিতে পারেনা। সাক্ষী নিজেও এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বলে আদালতে খনই বলেন নি। সুতরাং ইনভেস্টিগেশন অফিসারকে কাদের মোল্লার ব্যাপারে অভিযোগ করেন নি কিংবা কাদের মোল্লা অভিযুক্ত নয়, এই জাতীয় কথা মোমেনা বলেন নি বলেই আমরা আদালতের রায়ে দেখতে পাই।
আপনি আবার বলেছেন,
এটা হাস্যকর দাবী। অনেকটা সাঈদীকে চান্দে দেখা যাবার মত দাবী। বাঁশের কেল্লায় একটা ছবি দেখানো হচ্ছে এমন যে, একদিকে মোমেনা বেগমের ছবি আবার অন্যদিকে প্রসিকিউটর মুক্তা আপার হাতে ধরা কালো বোরকায় পরা একজন ভদ্রমহিলার হাত ধরা। আমি যদি ধরেও নেই যে এই সাক্ষী মোমেনা, তাতে কয়রে কি প্রমাণিত হয়? এতে কয়রে কি প্রমাণিত হয় যে এই সাক্ষীই মোমেনা নয়? এই ধরনের কোনো দাবী আপীলেট ডিভিশানে আসামী পক্ষের আইনজীবি আব্দুর রাজ্জাক করেন নি, খন্দকার মাহবুব করেন নি। কেন করেন নি? আর আসামী পক্ষ যদি দাবী করেই থাকে যে এই মোমেনা সেই মোমেনা নয়, তবে সেই ফ্যাক্ট প্রমাণ করবার দায়িত্ব আসামী পক্ষের আইনজীবিদের। এই দায় প্রসিকিউশনের কি করে হতে পারে? আর মোমেনা তাঁর পরিচয় কিংবা চেহারা শুধু মাত্র দেখাবেন সুনির্দিষ্ট কয়েকজনকে, গোপনে। এটাই ক্যামেরা ট্রায়ালে যাবার তাঁর কারন। কেননা প্রথমত এই প্রভিশন আইনে রয়েছে প্লাস নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারও তাঁর রয়েছে। শুধু এই মামলায় মোমেনা বেগম নয়, অনেক সাক্ষীই ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর এই ধরনের সাক্ষ্যের ব্যাপার পৃথিবীর প্রত্যেক্টি দেশে এই জাতীয় ট্রায়ালের ক্ষেত্রে প্রচলিত রয়েছে।
বাঁশের কেল্লা যা করেছে কিংবা আপনারা মোমেনার নেকাব খুলে তাঁকে দেখতে চাওয়ার যে ম্যাৎকার করছেন সেখানে একধরনের পৈশাচিকতা রয়েছে। যেই মানুষটি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছে, যেই ব্যাক্তি গত ৪২ টি বছর ট্রমাটাইজড ছিলো, কাতর ছিলো, আপনারা একটা খুনীকে বাঁচাবার জন্য তাঁর নেয়া নিরাপত্তাকেও উপহাস করছেন। আগেও জামায়াত জল্লাদের দল ছিলো। স্বাধীনতার এত বছর পর আপনারা আজও বদলাননি। একটা খুনীকে বাঁচাবার জন্য আপনাদের কূট কৌশল আর গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার এতই প্রকট যে, গোয়েবল এসেও এখানে মূর্ছা যাবে।
আপনি আবার বলেছেন,
আপনি একটা দূর্দান্ত মিথ্যেবাদীর মত মিথ্যে তথ্য দিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস এক্ট-১৯৭৩ এর ২০ ধারার সাব ধারা ৩ অনুযায়ী এই রায় এক্সিকিউট করবে সরকার। এখানে কারাবিধি মানবার কোনো সুযোগ নেই। আপনি এই কথা এড়িয়ে গিয়ে কারাবিধির বুলি কপচালেন। এই আইন এক্সিকিউট সরকার করবে তার ইচ্ছে অনুযায়ী। এখানে কারাবিধি অনুযায়ী টাইম ফ্রেম ধরে মানবার বাধ্যবাধকতা কোথায়। আমাকে কি দেখাতে পারবেন?
আপনি বলেছেন-
প্রথমত, এই বিচার দায়রা আদলতে হয়নি। হয়েছে স্পেশাল আইনে। যে আইনের একটি নিজস্ব রুলস এন্ড রেগুলেশনও রয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি স্বাতন্ত্র আইন এবং এই বিচারের রায় হাইকোর্টে না, আপীলের জন্য সরাসরি আপীলেট ডিভিশানে যাবে। আইনে তাই লেখা রয়েছে। আর রিভিঊ এর কথা যা বলেছেন সেটিও আপনি ভুল বলছেন। এই বিষয়ে বিশিষ্ট আইনবিদ ও সাংবাদিক একরামুল হক শামীমের এই বিষয়ক একটি লেখা এখানে কোট করি-
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, রিভিউ’র অধিকার কীভাবে এসেছে। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে রিভিউর কথা বলা আছে।
সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী – ‘সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’
এই অনুচ্ছেদটির দিকে লক্ষ্য করলে এটি স্পষ্ট হবে যে রিভিউ ‘পরম অধিকার’ (absolute right) নয়। ২টি সুনিদিষ্ট
শর্ত সাপেক্ষে এই অধিকার পাওয়া যাবে।
১.সংসদের যে কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে
২.আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোনো বিধি সাপেক্ষে
কারও রিভিউর অধিকার রয়েছে এটি বলার আগে অবশ্যই এই দুইটি শর্ত পূরণ হচ্ছে কিনা তা বিচার করতে হবে। দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, বেশ কয়েকজন আইনজ্ঞ এই শর্তের ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে রিভিউকে ‘পরম সাংবিধানিক অধিকার’ হিসেবে দেখিয়েছেন। এর মানে যে কোনো পরিস্থিতিতেই রিভিউর অধিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু ১০৫ অনুচ্ছেদের ২টি শর্ত ভিন্ন কথা বলে।
১০৫ অনুচ্ছেদে শর্ত দুইটির ব্যাখ্যা করা যাক।
প্রথম শর্ত : সংসদের যে কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে
সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদের প্রথম শর্তই হলো সংসদের যে কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রিভিউ করা যাবে। জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই পাশ হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের বিধান এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে। এই আইনের ২১ ধারায় আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। রিভিউ’র ব্যাপারে এই আইনে কোনো বিধানের উল্লে
@নিঝুম মজুমদার,
অসধারন নিঝুম’দা, অসাধারণ…
মূল লেখায় কিছু অংশ যোগ করা দরকার
@shafi,
আপনাকে জবাব দিব বলেছিলাম, কিন্তু নিঝুম কাজটা এতো সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন যে, আমার পক্ষ থেকে আর কিছুই বলার নেই। আপনি নিঝুমের পোস্টটা এখান থেকে পুরোটা পড়ে নেন, এবং বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বিদায় হন।
ঠিক, আপনাদের মত মানুষের এত ভালবাসা তিনি পেয়েছেন যে, কসাই কাদেরের ভাই জানিয়েছেন, কাদিরা নাকি বেহেস্তের সবুজ পাখি হয়ে গেছেন। আপনিও সেই পাখির লেজ ধরে ঝুলে পড়তে পারেন। স্বপ্নে কাদিরাকে দেখতে পাবেন, আমাদেরও নসিহত করবেন!
বাই দ্য ওয়ে, সাইদী সাহেবেরও ময়না পাখি, টিয়া পাখির প্রতি আকর্ষণ ছিল, কাদিরাও নাকি এখন সবুজ পাখি। আপনাদের এত পাখিদের কলকাকলি পছন্দ কেন – জাস্ট কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্ট টু নো!।
@অভিজিৎ,
অনেক ভালো লিখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু পেলাম এখানে। কিউবার স্বাধীনতার পর চে-গুয়েভারা নিজ হাতে সেদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যা করেছিল। 1971 সালেও এদেশে তাই করা প্রয়োজন ছিল।
আমিও আসলে জানতে চাই এই যে ছবির সানগ্লাস পরা ব্যাক্তিটি যে কাদের মোল্লা তা কি কেউ সনাক্ত করেছে? এটা কিভাবে সিওর হওয়া গেলো? এই ছবির ব্যাপারে কোন ছাগুকে কিছু বলতে শুনিনা তো! আশাকরি লেখক আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন দয়া করে।
ধন্যবাদ।
লেখককে ধন্যবাদ। তবে একটা কথা বুঝি যে যারা এই কাদের সেই কাদের নয় বলে রোল তুলেছেন তারা আসলে না বুঝে এইসব করছেন না। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এই কাজ করছেন। কাজেই তাদের সামনে যতই যুক্তি তর্ক প্রমাণ উপস্থাপন করা হোক না কেন তারা ছাগলের মত ম্যা ম্যা করতে থাকবেই।
@আমি কোন অভ্যাগত নই, একেবারে সত্য কথা । যারা এ জিকির তুলেছে যে, কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা নয়, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এই কাজ করছেন। কাজেই তাদের সামনে যতই যুক্তি তর্ক প্রমাণ উপস্থাপন করা হোক না কেন তারা ছাগলের মত ম্যা ম্যা করতে থাকবেই।
কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের এক ব্যক্তি না কিংবা দেলোয়ার হোসেন আর দেলু শিকদার এক ব্যক্তি না একথা এই যুদ্ধাপরাধীরা ট্রাইবুনালের শুরু থেকেই দাবী করে এসেছে; অথচ এর স্বপক্ষে তারা কোন প্রমাণই দেখাতে পারে নি। কসাই কাদের বা দেলু রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের পর হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম তারা মায়াবলে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল, কিন্তু তাদের নিকট বা দূর সম্পর্কের আত্নীয়-স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধব কেউ না কেউ তো থাকবে। এদের কেউ এসে প্রমাণ-স্বাপেক্ষে কাদের মোল্লা বা দেলোয়ার হোসেন কে চেনে না বললেই তো মামলা খারিজ হয়ে যায়। আমি একজন সাধারণ পাব্লিক এই কথাটা বুঝতে পারছি আর যুদ্ধাপরাধীদের ঘোড়েল আইনজীবিরা তা ধরতে পারছে না……এক কথায় অবিশ্বাস্য!
লেখক, দয়া করে বলবেন কি নিয়াজীর পেছনের ব্যক্তিটি যে মোল্লা তা কিভাবে প্রমাণিত হয়েছে?
@মনজুর মুরশেদ,
ঐ ছবিতে শুধু কাদের মোল্লাই না আরও আছে আশরাফুজ্জামান।
আশরাফুজ্জামানের ৩৫০ নম্বর নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। সেখানে দুটো পৃষ্টায় ২০জন বুদ্ধিজীবির নাম পাওয়া যায় যাদের মধ্যে ৮ জনকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন মুনীর চৌধুরী, ড. আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রশিদুল হাসান, ড. ফয়জুল মহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডাক্তার গোলাম মুর্তজা। এদের প্রত্যেককে আশরাফুজ্জামান নিজে গুলি করে হত্যা করেছিল বলে জবানবন্দী দেয় মফিজুদ্দিন। ডায়েরির অন্যান্য পাতায় দালাল বুদ্বিজীবিদের নামের পাশাপাশি আল-বদরের হাই কমান্ডের নামের তালিকা ছিলো। এতে মঈনউদ্দিন ছাড়াও ছিল কেন্দ্রীয় কমান্ড সদস্য শওকত ইমরান ও ঢাকা শহরপ্রধান শামসুল হকের নাম
সুত্র মুক্তিযুদ্ধ কোষ
@আরিফ রহমান,
আশরাফুজ্জামান সম্পর্কে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। বোঝাই যাচ্ছে অনেক বড় পাপী; পুলিশ রিমাণ্ডে নিতে পারলে অনেক অজানা তথ্যই বের হয়ে আসতো। আশা করি স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটার আগেই যুক্তরাষ্ট্র এর কাছ থেকে দরকারী তথ্য বের করে নেবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোনভাবে একে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তবে অবস্থা দেখে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
আমার প্রশ্ন, আপনার দেয়া ছবিতে সানগ্লাস পরা ব্যক্তি যে মোল্লা তা কিভাবে জানা গেল? কেউ কি সনাক্ত করেছে?
@মনজুর মুরশেদ, .
মুনতাসির মামুন তার “মুক্তিযুদ্ধ কোষে” এই ছবি সহ প্রকাশ করেছে…
উনিই সনাক্ত করেছেন
@আরিফ রহমান,
ধন্যবাদ।
শেষে আরেকটা প্রশ্নের উত্তরও যোগ করতে পারেন। গোলাম মওলা রনি সাহেবের যে ফেসবুক স্ট্যাটাসটা নিয়ে এত হাউকাউ, এখন তো বেরিয়ে এসেছে, সেই চিরকূটের সিগনেচার আর কাদের মোল্লার পরিবারের কাছে লেখা চিঠির সিগনেচার ভিন্ন –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2013/12/signature_different.jpg[/img]
এটাও যোগ করে দিতে পারেন লেখায়।
আমার ভালো লাগতো এই লেখাটার শিরোনাম যদি এমন হত:
“কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের একই ব্যাক্তি; বীরাঙ্গনা মোমেনা বেগম আমায় ক্ষমা করবেন…”
এবং, শুরুটা যদি এমন হত:
খামোখা বিভ্রান্তিতে ফেসবুক ব্লগ তোলপাড়। লেখার শুরুতেই একটা কথা বলতে চাই, বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতে প্রমান হয়েছে যে কাদের মোল্লা অপরাধী, দন্ড: ফাঁসি। কাদের মোল্লা এবং তার আইনজীবীদের মতে কাদের মোল্লা ও কসাই কাদের আলাদা ব্যাক্তি এবং বিহারী কসাই কাদের খুনের দায়ে মোল্লা কাদেরের ফাঁসি। ……. …… .
@কাজী রহমান, @আরিফ রহমান, @ অভিজিৎ
কাজী রহমানের সাথে ভীষণভাবে সহমত ।
আর আরিফ রহমান আর অভিজিৎ রায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটা ছেলে মানুষী আবদার করব, কাদের মোল্লার কফিনে রাখা ছবিটা সরিয়ে ফেলতে, যা অনেক মানুষকে ৪২ বছর আগের অপরাধের ভারকে লাঘব করে দেয়ার ইন্ধন যোগায় বলে আমার ধারণা।
কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের যে একই ব্যক্তি তার তথ্যপ্রমানগুলো একসাথে উপস্থাপনের জন্য লেখককে ধন্যবাদ। (Y)
@তারিক,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
যারা বলেন কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের এক নন, তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন –
কসাই কাদেরটা তাইলে গেল কই?
আমি মনে করি, কাদের আর কসাই একই লোক সেটা আদালতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে আর শাস্তিও দেয়া হয়েছে, আমার নতুন করে কিছু প্রমাণের নেই। বার্ডেন অব প্রুফটা তাদের কাঁধেই যারা মনে করেন দুই কাদের ভিন্ন ব্যক্তি। মোমেনার মত চাক্ষুষ সাক্ষীরাই যথেষ্ট যাদের পরিবার কাদের মোল্লার হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন, এবং চিনতেন তার বন্ধু এবং সহপাঠীরাও, যেমন ড. মোজাম্মেল এইচ খানের মত ব্যক্তিরা।
অবশ্য বিপরীতপক্ষ বরাবরই বাঁশের কেল্লা আর গোলাম মওলা রণির মত লোকজনের কথাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, কি আর করা।
পরিশ্রমসাধ্য লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। এবং মুক্তমনায় স্বাগতম।
@অভিজিৎ,
দাদা, সাড়ে তিন বছর ধরে ব্লগিং করছি; এডিটিং যে এত গুরুত্বপূর্ণ বুঝি নাই।
এইটা আর আমার লেখা নাই, এটা আপনার লেখা হয়ে গেছে…।
বিজয়ের মুহূর্তে এই উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
জয় বাংলা
@আরিফ রহমান,
আরে না রে ভাই, আপনি যে কত বড় কাজ করেছেন, তা আপনি নিজেও জানেন না। আমি কেবল বাক্য টাক্যগুলো এদিক ওদিক ঠিক করে ঠিক করে দিতে চেষ্টা করেছি। এটা না করলেও প্রবন্ধের কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হত না। ধন্যবাদ, আবারো।
মুক্তমনায় আপনার আরো অনেক লেখা নিয়মিতভাবে আশা করছি।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ দাদা
@অভিজিৎ,
সহমত। (Y)