(১)
’৯৬ সালের ডিসেম্বর মাস। সুদীর্ঘ ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ আবারো নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে। স্বাভাবিকভাবেই সে বছর বিজয়ের মাসের উদ্দীপনা ছিল ব্যাপক। মাসাধিককাল ব্যাপী নানান অনুষ্ঠান চলেছিল শাহবাগ থেকে শুরু করে শহীদ মিনার পর্যন্ত নানান পয়েন্টে। কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কোথাও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি স্মৃতিচারন, এ জাতীয় নানান কর্মসূচী চলছে। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা পরে সময় পেলেই প্রান ভরে উপভোগ করতাম এসব অনুষ্ঠান।
বিজয় দিবসের কাছাকাছি কোন এক সন্ধ্যায় দুই বন্ধু ঢুঁ মারছিলাম। সে সন্ধ্যায় আর্ট কলেজের সামনে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কয়েকটি পয়েন্টে বিভক্ত হয়ে বর্ননা করছিলেন তাদের কিছু দূঃসাহসিক অভিজ্ঞতা। নাট্যাভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের কথা মনে পড়ে, উনি বর্ননা করেছিলেন ’৭১ সালের তাদের দলের রোমহর্ষক ডিআইটি ভবন অভিযান। আরেকটি পয়েন্টে লক্ষ্য করলাম একজন খুব কম বয়সী ছোটখাট গড়নের চটূল গোছের ব্যাক্তি হাসি হাসি মুখে কি যেন বলে যাচ্ছেন। কৌতূহলী হয়ে গেলাম সেখানে, কিছুটা বিস্ময়ের সাথে জানতে পারলাম যে সেই কম বয়সী ভদ্রলোকের নাম জালাল, উনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা, কম বয়সের কারন মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিতান্তই কিশোর, মাত্র ১৩ বছর বয়সে অনেকের মত তিনিও বাসা থেকে পালিয়ে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পেছনে আছে পূর্নাংগ সমর সজ্জায় হাতে এলএমজি হাতে সে সময়কার সেই ১৩ বছরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জালালের ছবি।
ভদ্রলোক বর্ননা করছিলেন পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবার গল্প, ভারতে ট্রেনিং এর অভিজ্ঞতা, সেখানকার নকশালীদের সাথে কিছু সঙ্ঘর্ষ, এরপর ঢাকায় তাদের দলের কিছু অভিযান। একটি গল্পের হুবহু মনে দাগ কেটে রয়ে গেছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথমেই ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবার প্রথম দু’দিনের মাঝেই ভারতীয় বিমান হামলায় পাক বিমান বাহিনী সম্পূর্ন গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়। সে সময় ঢাকার অধিবাসীরা রাতে আকাশে ডগ ফাইট দেখার সৌভাগ্যও অর্জন করেন। বিমান বাহিনী কার্যত অকেজো হয়ে গেলেও পাক সেনাবাহিনী ভূমি থেকেই এন্টি-এয়ারক্রাফট চালিয়ে যাচ্ছিল। তার দু একটা মাঝে মাঝে ভারতীয় বিমান আঘাত হানতেও সমর্থ হচ্ছিল। তেমনই একটি ভারতীয় বিমানে গোলার আঘাতে আগুন ধরে যায়, ভারতীয় পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার নেহরা (যতটা মনে পড়ে নাম ছিল নেহরা) কোন উপায় না দেখে এঞ্জিন বন্ধ করে সফল ভাবে বেইল আউট করে প্যারাসুট খুলে আকাশে ভেসে পড়লেন। কিন্তু বেইল আউট সফল হলে কি হবে, যে এলাকায় তিনি পড়তে যাচ্ছেন তা তখনো সম্পূর্ন ভাবে শত্রু পাক বাহিনী অধিকৃত।
ভারতীয় পাইলটের বেইল আউট দৃশ্য ভূমি থেকে প্রত্যক্ষ করেছিল পাক বাহিনী। যুদ্ধবন্দী হিসেবে একজন ফাইটার পাইলট খুবই দামী। তাদের সেই পাইলটকে যেভাবেই হোক চাই। রওনা হয়ে গেল পাহ বাহিনী। এদিকে বেইল আউট করা ভারতীয় পাইলটকে লক্ষ্য করেছিল মুক্তিযোদ্ধা জালালদের ক্ষুদে গেরিলা দলটিও, স্থানটি ছিল সাভারের কোন একটি গ্রাম। ভাগ্যক্রমে নেহরা প্রত্যন্ত গন্ডগ্রামে ল্যান্ড করার পর পর পাক বাহিনী পৌঁছার আগেই মুক্তিযোদ্ধার দলটি তাকে উদ্ধার করে নিতে সমর্থ হয়। কিন্তু এরপর দেখা দিল অন্য বিপদ। পাক বাহিনী যেভাবেই হোক সেই ভারতীয় পাইলটকে ছিনিয়ে নেবেই। মুক্তিযোদ্ধার ক্ষুদে দলটি গেরিলা কায়দায় লড়ে, সামনা সামনি পাক বাহিনীর ট্রেইন্ড বাহিনীর সাথে লড়ার সামর্থ্য নেই। শুরু হয়ে গেল ইঁদুর বেড়ালের মত লুকোচুরি খেলা।
পাক বাহিনী হন্যে হয়ে হানা দিচ্ছে গ্রামকে গ্রাম, মুক্তিযোদ্ধারাও পণ করেছে ভারতীয় পাইলটকে কিছুতেই পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেবে না। এভাবেই চলল ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত। এরপর সেই ভারতীয় পাইলটকে সসম্মানে তুলে দেওয়া হল ভারতীয় বাহিনীর হাতে। ভারতীয় সেই পাইলট নেহরা ’৯৬ সালেও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ছিলেন, তিনি তখন এয়ার ভাইস মার্শাল। ২৫ বছর পর অনেক বড় অফিসার হলেও যুদ্ধের ময়দানে প্রান রক্ষাকারী সেই গেরিলা বন্ধুদের তিনি ভোলেননি। নিয়মিত শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, কার্ড পাঠাতেন।
জালাল ভাই পকেট থেকে সেই বিধ্বস্ত ভারতীয় বিমানের চাবিটি বার করে আমাদের দেখালেন। দলের কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে তিনিই আবদার ধরে সেটি আদায় করেছিলেন, সযত্নে রক্ষা করেছেন দীর্ঘ ২৫টি বছর।
ছোটখাট গড়নের ভদ্রলোকের কথা বলার ষ্টাইল ছিল খুবই সরল সাধারন, বয়সের কারনেই হয়ত সারাক্ষন মুখে একটি চটূল হাঁসি লেগেই রয়েছে, সামান্য একটু খূড়িয়ে হাঁটেন। সে সময় হিসেব অনুযায়ী বয়স ৩৮ হলেও ২৫ বলে অনায়াসে চালানো যাবে। ’৯৬ সালে উনি মোহাম্মদপুরে শেয়ারে একটি মটর গ্যারাজ চালান। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলে তেমন কোন অতিরিক্ত চাওয়া পাওয়া নেই। হাসিমুখেই সব বলছিলেন। এক পর্যায়ে হঠাতই সে হাঁসি অনেকটাই ম্লান হয়ে এলো। অপ্রাপ্তির কথা বলতেই বলে ফেললেন; কোন চাওয়া পাওয়া নেই শুধু যখন দেখি ’৭১ সালের রাজাকাররা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বেড়ায়, আজ গনভবনে দাওয়াত পায়……এরপর আবারো চলে গেলেন ’৭১ এ।
১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হবার পর ভয়াবহ রাজাকার মাওলানা মান্নান (ততকালীন মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা, শহীদ বুদ্ধিজীবি D: আলিম চৌধূরী হত্যার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত, পরবর্তিকালে এরশাদের মন্ত্রী, দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা) পালানোর সময় ওনাদের দলের হাতেই ধরা পড়ে। মান্নানের নির্দেশে ধরে নিয়ে যাওয়া বহু মানুষ তখনো নিরুদ্দেশ, তার মাঝে কিছু মহিলাও আছে। ধরা পড়া মান্নান রাজাকারের পেট থেকে কথা আদায়ের উদ্দেশ্যে শুরু হল কিছু শারীরিক নির্যাতন, তার পায়ে বেয়োনেট কেটে হলুদ মরিচ ঢালা হয়েছিল, সেই হলুদ মরিচ জালাল ভাই নিজে সংগ্রহ করেছিলেন স্থানীয় আজিমপুর কলোনীর এক বাসা থেকে। এরা স্বাধীন দেশে মন্ত্রী হয়……বলে কিছুটা আবগ্লাপুত জালাল ভাই এরপর থেমে গেছিলেন।
(২)
আজ জালাল ভাই কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানি না। আশা করি ভালই আছেন। আশা করি যুদ্ধপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় তার দূঃখবোধ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। বিজয়ের দিনে জালাল ভাই কি ভাবছেন? জালাল ভাইরা ’৭১ দূরে থাক, ’৯৬ সালেও নিশ্চয়ই ভাবতে পারেননি সেই যুদ্ধপরাধী বিচার নিয়ে কি তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবে বাংলার মাটিতেই; তার লেজুড় ধরে নানান রাজনৈতিক জটিলতায় দেশ পতিত হবে এক রকম গৃহযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে।
দেশে বর্তমানে যা চলছে তাতে গভীর হতাশায় নিপতিত হওয়া ছাড়া তেমন কিছু দেখি না, গনতন্ত্র রক্ষার নামে চলছে গনতন্ত্রের জানাযা পাঠ, দাফনের অবস্থা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশ মোটামুটিভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত, দুই পক্ষই চরমপন্থী অবস্থানে। আমার মনে হয় না পরিস্থিতির ভয়াবহতা সেভাবে কোন পক্ষই অনুধাবন করতে পারছে বলে। কার দায় কতটা সে নিয়ে অনন্তকাল তর্ক করা যায়, তাতে সমস্যা সমাধানের পথ খুলছে না কিংবা খুলবে না।
আশা ছিল আওয়ামী লীগ এক দলীয় নির্বাচনের ফাঁদে পড়বে না, সে আশায় আপাতত জলাঞ্জলি। যুদ্ধপরাধী বিচারের কার্যক্রমে উদ্দীপ্ত এবং আওয়ামী সমর্থকরা এখনো যুদ্ধপরাধী বিচারের বাইরে আর তেমন কিছু ভাবছেন না বলে এক দলীয় নির্বাচনের বিপদটা টের পাচ্ছেন না। আর আওয়ামী লীগের ভেতরের ভাবনা কি তা বোঝার সাধ্য আমার নেই। তারা কি সত্য সত্যই সূস্থ মস্তিষ্কে আশা করেন যে যদু মধু জাতের কাউকে ধমকে কিংবা লোভ দেখিয়ে এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আরেক মেয়াদ তারা সরকারে থাকতে পারবেন?
দেশের অতীত ইতিহাস তেমন বলে না। দেশে এ জাতীয় এক দলীয় নির্বাচন করে সরকার গঠন করা কোন দলই বেশীদিন টেকেনি। আওয়ামী লীগও যতই পোড় খাওয়া, রুট লেভেলের এবং জনপ্রিয় দল হোক তারাও টিকবে না তা বলে দিতে পারি। সে পতনের ধাক্কা সামাল দূরের কথা, মাত্রা পরিমাপের ক্ষমতাও এই দলের আছে মনে হয় না। জানি, এর মাঝে নানান তর্ক আসবে, জামাত বান্ধব বিএনপির নানান কার্যক্রম, আলোচনার ব্যাপারে আন্তরিকতা……কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে এক দলীয় নির্বাচন ঘটে যাওয়া মানে রাজনৈতিক হিসেবে বিএনপিরই জয়লাভ। এক দলীয় সরকার অবৈধ বলে বিদেশীরা রায় না দিলেও সে সরকারকে সহজভাবে নেবে না, সরকার পরিচালনায় তার প্রভাব পড়বে। দেশের ভেতর চলতে থাকবে অব্যাহত গতিতে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, তার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলের ওপর পাল্টা হামলা, গ্রেফতার নির্যাতন…চক্রবৃদ্ধি হারে এই চক্র চলতে থাকা। ব্যাবসা বানিজ্য হতে থাকবে স্থবির। বাংলাদেশে থাকি না, কিন্তু বাংগালী মানসিকতা আমি যতটা বুঝি তাতে বলতে পারি যে দায় যার যতটুকুই থাকুক চুড়ান্তভাবে সরকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওপরেই লোকে বীতশ্রদ্ধ হতে থাকবে। এ ছাড়া সে নির্বাচনে যেন লোকে ভোট দিতে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে আরো চরম সন্ত্রাস সে কথা বাদই থাকল। যত যাইই ইস্যু থাক, যেভাবেই হোক বিএনপিকে নির্বাচনে রাজী করাতে না পারাটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের ব্যার্থতাই আমি বলব। বিএনপির ইতিহাস থেকে শুরু করে যুদ্ধপরাধীদের সরাসরি সহায়তা করা নিয়ে বহু সমালোচনা করা যাবে কিন্তু তাতে লাভ তেমন হবে না।
এখানে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কার কতটা দায় সে আলোচনায় যাচ্ছি না, সত্য বলতে এ প্রশ্নের পরিষ্কার জবাব আমার কাছে নেই। শুধু জানি যে এবারকার পরিস্থিতি খুব একটা অচিন্ত্যনীয় কিছু ছিল না, গনতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে বলে এরশাদ সরকার পতনের পর আমরা উদ্বেলিত হলেও আদৌ আমাদের মাঝে গনতান্ত্রিক চেতনা কতটা আছে সেই প্রশ্ন আমরা কোনদিন ভাবিনি। এ ধরনের কথাবার্তা আপাতত অতি আঁতেলীয় শোনালেও এ প্রশ্ন ভাবা হয় না বলেই আমাদের গনতন্ত্রের অবস্থা হয়েছে সেই তৈলাক্ত বাঁশ এবং বানরের গল্পের মত।
গনতন্ত্রে উত্তরনের পর বোঝা গেল যে দলীয় সরকাররে অধীনে নির্বাচন করার যোগ্যতা আমাদের নেই, আবিষ্কৃত হল কেয়ার টেকার সরকার। সকলে ধন্য ধন্য। এরপর আবিষ্কৃত হল যে এই কেয়ার টেকার ব্যাবস্থাও আসলে যতটা পোক্ত ভাবা গেছিল ততটা পোক্ত নয়, বাংগালী বুদ্ধি খাটিয়ে এই আপতঃ নিরীহ নিষ্কলুষ ব্যাবস্থার মাধ্যমেও জাল জোচ্চুরির বন্দোবস্ত সফল ভাবে করা যায় তা গতবারের বিএনপি জোট সরকার দেখিয়ে দিয়েছিল। এর পথ ধরে গনতন্ত্র রুদ্ধ থাকল ২ বছর, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কেয়ার টেকার বদলে সর্বদলীয় ফর্মূলা দিল, যা বিএনপি মহল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার এভিল ইন্টেনশন হিসেবে দেখলেন। এটা ঠিক যে কেয়ার টেকারেরও দূর্বলতা দেখা গেছে, সর্বদলীয় সরকার ধারনা হয়ত খুব একটা মন্দ নয়। কিন্তু এই মৌলিক পরিবর্তনটা প্রধান বিরোধী দলের সম্মতিতে করা গেলে সবচেয়ে ভাল হত, আমাদের ব্যাবস্থায় সে হবার নয়। তার ফলাফল আজকের অবস্থা। এর জের কোথায় এবং কতদিন থাকে সে প্রশ্নের জবাব ভবিষ্যতই দিতে পারবে। সেই পরিবর্তন হঠাত এ বছর নির্বাচনের আগে হয়েছে এমন নয়, আজকের অচলাবস্থা যে হতে যাচ্ছে সেটা নিশ্চিত ছিল বহু আগ থেকেই, তবুও দেশের সুশীল সমাজের তেমন টনক নড়েনি।
কেয়ার টেকার পরিবর্তনের জন্য অনেক আপতঃ নিরপেক্ষ ব্যাক্তিবর্গ সুশীল প্রকারন্তে আওয়ামী লীগকেই বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী করছেন। অভিযোগ একেবারে ফেলনা নয়। যত যাইই বলি আজ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে এবং সরকারী দল হিসেবে বিএনপি কেয়ার টেকার বদলাতে চাইলে আওয়ামী লীগও নিশ্চয়ই সহজভাবে নিত না, বিএনপি জামাতের মত চরম সহিংস কায়দায় হয়ত না হলেও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তক্ত্বাবধয়ক ব্যাবস্থা কায়েম করার দাবীতে প্রথম আন্দোলন করেছিল তারাই। এতে কি খুব বেশী দ্বি-মতের অবকাশ আছে? অন্যদিকে কেয়ার টেকার ব্যাবস্থা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি যে বিএনপিরই অবদান তাইই বা ভুলি কেমন করে? কাজেই এই ব্যাবস্থা পরিবর্তনের দায় তারাই বা কতটুকু এড়াতে পারে? আরো কথা হল বিএনপির জন্য যদি কেয়ার টেকার পছন্দনীয় হতে পারে তবে আওয়ামী লীগের নির্দলীয় ব্যাবস্থা চাওয়াতে ঠিক কিভাবে আপত্তি করা যায়? এখানেই আমি থমকে যাই। এই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। নিঃসন্দেহে দুয়ের মাঝামাঝি কোন এক সমাধানে আসতে হবে, তা কিভাবে? সংসদ নির্বাচনের আগে কেয়ার টেকার/নির্দলীয় প্রশ্নে রেফারেণ্ডামের বন্দোবস্ত করতে হবে? তাতে নাহয় এবারকার মত কোন জবাব পাওয়া যাবে, ভবিষ্যতে কি হবে? এ চক্র চলবেই? নির্বাচনের আগে কোন পদ্ধুতিতে ভোট হবে তার জন্য সেমি ফাইনাল খেলার মত রেফারাণ্ডাম? রাজনীতি পছন্দ করি না, সব দলই খারাপ এসব কথা বলে নিজেকে বাইরে রাখার উপায় আর তেমন নেই। রাজনীতি পছন্দ করেন আর না করেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই আপনার দৈনন্দিন জীবনের সূখ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ন্ত্রন করে। রাজনৈতিক সচেতনতা নাগরিক মাত্রেরই দরকার, নাঁক সিঁটকে দূরে থাকার উপায় নেই।
হতাশার আরো বড় কারন হল এহেন সমস্যা যে অন্যান্যবারের মত এবারকার প্যাঁচও খুলে গেলেই ভবিষ্যতে আর হবে না এমন নয়। ভবিষ্যতেও হবে, ট্র্যাক রেকর্ড বলে ভবিষ্যতে অবস্থা আরো খারাপ হবে। বড় দুই দলের মাঝে অমিমাংসিত রাজনৈতিক বিষয় এত বেশী রয়েছে যে অন্য আর দশটি গনতান্ত্রিক দেশের মত আমাদের দেশে সূস্থ রাজনীতির আশা করা বাতূলতা মাত্র। তারানকো সাহেব, নিনিয়ান সাহেবরা (’৯৪ সালে তক্ত্বাবধয়ক আন্দোলনের সময় মধ্যস্ততার উদ্দেশ্যে অষ্ট্রেলিয়া থেকে এসেছিলেন) কোনদিনই দুই দলের মাঝে সমঝোতা আনতে পারেননি। সমাধান বার করতে হবে দেশের নাগরিকদেরই। দুদিন পর পর বিদেশীরা দুনিয়ার অপর প্রান্ত থেকে আসবে কয়েক মাইল দুরে থাকা ভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকে বসাতে এমন কিছু নিশ্চয়ই জাতি হিসেবে খুব গৌরবের কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল দলীয় পরিচয়ে দায় যার যতটুকুই হোক না কেন ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের দলীয় পরিচয় নেই। এবারকার গুরুতর সমস্যা কোন ভাবে সমাধা হলে এমন ধরনের পরিস্থিতি যেন ভবিষ্যতে আর সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য নাগরিকদেরই চিন্তা করতে হবে।
এবারকার অচলাবস্থা কিভাবে মেটে তার কিনারা পাচ্ছি না, তাও ধরে নিচ্ছি অন্যান্যবারের মতই কিছু একটা হয়ে যাবে। হতাশার আরো কারন ভোট গ্রহন সম্পর্কিত জটিলতা মিটে গিয়ে নুতন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও সহজে শান্তি শৃংখলা ফিরে আসবে এমন সম্ভাবনা অতি নগন্য। যে অবিশ্বাস, তিক্ততা, হানাহানি শুরু হয়েছে তার জের এত সহজে স্তিমিত হবে না। যে দেশে জন্ম গ্রহন করেছিলাম, বড় হয়েছিলাম সে দেশ মাঝে মাঝে ভয় পেতাম পাকিস্তানে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে, এখন পাকিস্তানকেও টপকে এক্কেবারে সিরিয়ায় পরিনত হচ্ছে তেমন দূঃস্বপ্নও আজকাল দেখতে হয়। সকলের সূস্থ বিবেক জাগ্রত হোক এমন সরল আশাবাদ ব্যাক্ত করা ছাড়া বলার কিছু দেখছি না। তাও স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই কোনদিন সকালে পত্রিকার পেজ খুলে দেখবো দুই দলের নির্বাচন ব্যাবস্থা নিয়ে ঐক্যমত, যুদ্ধপরাধী জামাত শিবিরের সাথে অতীতে সম্পর্ক রাখার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যাবহার নিষিদ্ধকরনের ব্যাপারে ঐক্যমত……আশা করতে তো দোষ নেই।
মুক্তমনায় কেন পাঁচতারার অপশন থাকে না, জানি না। মডু ভাইবোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কি বলব, আদিল ভাই, দুটো অংশই অনবদ্য! হয়ত আপনি মানুষটিই অনবদ্য বলেই এভাবে লিখতে পারেন!
ভারতীয় পাইলট নেহরার উদ্ধ্বারকাহিনি যেমন নাটুকে, তেমন রোমাঞ্চকর! ছবিটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। পাক বাহিনী গ্রামে গ্রামে হানা দিচ্ছে মূল্যবান রত্ন ছিনিয়ে নেয়ার জন্য, অন্যদিকে মুক্তিকামী, দুর্জয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সমানে ডজ দিয়ে যাচ্ছে! উহ!
আচ্ছা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই রোমাঞ্চকর অধ্যায়গুলো নিয়ে সিনেমা হয় না কেন? কেনই বা থাকে না পাঠ্যপুস্তকে! আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীরত্ব-গাঁথাগুলো স্কুল-পড়ুয়া ছেলেগুলোকে কি ভীষণ উদ্দীপিত করত, ভেবে দেখুন! আমাদের প্রতিটি কিশোর-তরুণেরই তো অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কথা ছিল, এমন গৌরব-দীপ্ত ইতিহাস কয়টি জাতির আছে?
@কাজি মামুন,
আমাদের ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি মনে হয় এই জাতীয় সিনেমা তৈরীর জন্য কারিগরী এবং আর্থিক দিক দিয়ে উপযোগী নয়। প্লেনে গোলা লাগা থেকে শুরু করে প্যারাস্যুট খুলে ঝাঁপিয়ে পড়া, মাটিতে ল্যান্ড করা এসবই অতি হাইটেকের কাজ।
সহজ সরল ভাষায় লেখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সত্যিই বাংলাদেশ একটা ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে দিয়ে পার করছে। কিন্তু আমারে কি বলতে পারেন যদি সামনের বার বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে ২১ আগস্টের মত কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না?? সংখ্যা লঘুদের উপর অমানবিক আচরণ করবে না?? বর্তমানে জামাতি ইসলামের যা আচরণ, তাতে কি মনে হয় সামনের বার ক্ষমতায় এসে দেশের মধ্যে জঙ্গিবাদী আচরণ করবে না??
তাছাড়া কাঁদের মোল্লার ফাঁসি হয়ে গেছে, এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার সুযোগ আছে?? আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এই যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিবে না তারই বা নিশ্চয়তা কি??
ধন্যবাদ।
@(নির্জলা নিলজ্জ),
– আমি তো বিএনপির সাথে জড়িত কেউ নই। নিশ্চয়তাসহ কিভাবে বলি? ব্যাক্তিগত ধারনা, ঘটবে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের যায়গা তরুন নেতৃত্বের হাতে চলে যাবার পর থেকেই দলটির মাঝে ফ্যাসীবাদী মনোভাবের চরম প্রকাশ নানান ভাবে দেখা গেছিল। ২১শে আগষ্ট ব্যাতিক্রমী কিছু ছিল না।
– এটা মোটামুটি নিশ্চয়তা সহকারে বলতে পারি, এ জন্য বিএনপির সাথে জড়িত হবার দরকার নেই। করবে। বিএনপি নীতিগতভাবে উগ্র ধর্মীয় মূল্যবোধকে উতসাহ দেয়। যে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক নেতারা নেতারা নৌকায় ভোট দিলে হাতে শাখা সিঁদূর পরতে হবে, পানিকে জল বলতে হবে, মসজিদে ঊলূধ্বনি শোনা যাবে জাতীয় প্রচারনা সরাসরি চালায় সে দলের রুট লেভেলের লোকজন সংখ্যালঘুদের সাথে কেমন আচরন করবে এবং দল সংখ্যালঘু উতপীড়ন কিভাবে মূল্যায়ন করবে তার জন্য খুব বেশী আলোচনা লাগে না। উগ্র ধর্মীয় মূল্যবোধে ভোগা ছাড়াও ভোটের বাজারে নৌকার ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত সংখ্যালঘুদের তারা চাইবেই যে করে হোক দেশ থেকে খেদাতে। বর্তমানে রাজনীতিতে আবারো ধর্মীয় জজবা ওঠার কারনে কাজটি ২০০১ সালের থেকেও সহজ। লীগ সরকারের আমলেই যেভাবে অব্যাহত গতিতে কাজটি চলছে আর তারা ক্ষমতা আসলে কি হবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
– জামাত অতি ধুরন্ধর। তারা নিজেরা সরাসরি জংগীবাদে জড়িত হবে না, আমেরিকাকে খেপানোর কোন ঝূঁকিতে তারা যাবে না। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখনো বিএনপি এবং আরো পেছনে আমেরিকার সম্মতি প্রয়োজন। কাজটি করাবে বাংলা ভাই আনসারুল্লা এ জাতীয় ভূঁইফোড় কিছু সংগঠন দিয়ে। এখনো এ কাজ টেষ্ট লেভেলে আছে এবং আরো কিছু কাল সে পর্যায়ে থাকবে।
– এটা কি জিজ্ঞাসা করা লাগে? যুদ্ধপরাধী বিচার বন্ধের উপায় এখন নেই। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিচার বন্ধ সরাসরি প্রথমেই করবে না, কিন্তু যতভাবে সম্ভব সরকারী প্রভাব লাগিয়ে বিচার বাধাগ্রস্ত করবে, আগের রায় রিভিউ ফিভিউ করার নামে বাতিল করাবে। সাথে সাথে চলবে বিচার কার্যে জড়িতদের আইনী বে-আইনী দুই উপায়েই নিপীড়ন চালানো। অফিশিয়াল বক্তব্য হবে আমরা বিচার চালাচ্ছি, তবে মান উন্নয়ন করছি। পালটা একশন হিসেবে আওয়ামী শিবিরের বহু লোকের নামেও একই ধরনের মামলা দায়ের করা হবে হেফাজতি ম্যাসাকার জাতীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।
@আদিল মাহমুদ,
তাহলে বলেন- এঁত অনিশ্চয়তার মধ্যে বর্তমান সরকার কিভাবে দেশের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন করবে??
@(নির্জলা নিলজ্জ),
আপনার বলা পয়েন্টগুলি ২০০৮ সালের নির্বাচনকালীন বিএনপির জন্যও খাটে, তখনো নির্বাচন হয়েছিল। নাকি? কেবল তখন নির্বাচনের আগেই পরিষ্কার ছিল যে বিএনপি-জামাতের ভরাডুবি হতে যাচ্ছে, তাই এ সমস্ত পয়েন্ট গুরুত্ব পায়নি।
এত কিছুর পরেও তো দেশের এক বড় সংখ্যক লোকে বিএনপি-জামাতকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। নাকি মনে করেন বিএনপি জামাতের ভোটের সংখ্যা ২/৩% এর বেশী হবে না? গনতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে বিএনপি যদি প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয় যে ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীহ নির্মূল করে ফেলা হবে, যুদ্ধপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হবে এবং তারপরেও লোকের ভোট পায় তাহলে আমি আপনি কি ভাবে আপত্তি করতে পারি? বিএনপি এখনো তেমন ঘোষনা দেয়নি কিন্তু এটা তো নিশ্চিত সত্য যে জামাতের সাথে জোট করায় তাদের ভোট ব্যাংকের কোন ক্ষতি হয় না? কয়জনকে শুনেছেন জামাতের সাথে গাঁটছাড়া বাধায় গোস্ম্যা করে বিএনপি ত্যাগ করেছে? এর থেকে কি এটাই বলা যায় না যে বিএনপির ভোট ব্যাংকের কাছে যুদ্ধপরাধী ইস্যুর তেমন গুরুত্ব নেই? এখন এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে কি করা যাবে?
আজকের সংকট একদিনে হঠাত; কিংবা শুধু নির্বাচন বা যুদ্ধপরাধী ইস্যু নিয়েই হয়নি। এই সংকট হয়েছে মূলতঃ গনতান্ত্রিক মানসিকতার অভাবে। এ জন্যই লেখায় নীচের কথাটা বলেছিলাম
যে সমাজে তথ্য যুক্তি পূর্ন বিশ্লেষন থেকে নবী রসূলের মত ব্যাক্তি পূজা কিংবা বিদ্বেষ, আবেগের বশতঃ কল্পত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার, ধর্মের নামে বোধবুদ্ধি শুন্য হয়ে দ্বি-চারী আচরন করা, অপর দলের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ বশতঃ ধ্বংস করার কালচার স্বীকৃত হয় সে সমাজ এখনো গনতন্ত্রের উপযোগী হয়নি। একটি উদাহরন শুধু দেই।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথাই ভাবুন। কিছু উদাহরন আগে দিয়েছিলাম বিএনপি নেতাদের সাম্প্রদায়িক বক্তব্য কোট করে। নেতাদের গাল দেওয়ার আগে এটা কি ভাবা উচিত নয় যে এই ধরনের কথাবার্তা এরা কি করে প্রকাশ্যে বলে? সত্যটা হল এই কারনেই বলে যে এই ধরনের কথা শুনে খুশী হবার মত লোকের অভাব দেশে নেই।
@আদিল মাহমুদ,
জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য অনুতপ্ত বা ক্ষমার স্বপ্ন দেখাটা একটু বেশি বেহিসাবী হয়ে গেলো না। বিএনপি জানে দেশে দুটি পরিষ্কার ধারা বিদ্যমান। রাজাকারদের যারা ঘৃণা করে, শেখ মুজিবকে যারা “বঙ্গবন্ধু” বলে সম্বধন করে, ৭ মার্চের ভাষণ শুনে যারা শিহরিত হয়, পাকিস্তানকে যারা ঘৃণা করে, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য যারা ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের গান ও শ্লোগানগুলো যারা শুনে উদ্বেলিত হয় এখনো- তাদের ভোট বিএনপি কোনদিন পাবে না! তাই এদের বিপরীত যারা তাদের ভোট ধরার চেষ্টা করাই ভাল। এই বাস্তবতায় জামাতের সঙ্গে বন্ধুত্বর জন্য বিএনপিসহ সমমনারা কখনো দুঃখিত হবে না।
আর ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরেন কেউ একমত হবে না। এখানে আসিফ নজরুলের মত ক্লিন সেভড, স্যুটেড-বুটেড সুশীলরা ধর্মীয় রাজনীতির পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন এই বলে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে ধর্মীয় রাজনীতি করছে কেউ মানা করছে না।
সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যে সমস্যা তা বাইরে থেকে কেউ এসে কিছু করে দেবার মত না। দেখুন জাতিসংঘের মহাসচীব কাদের মোল্লার ফাঁসিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর দ্বারা জাতিসংঘ অর্ধেক মানুষের কাছে ভিলেন হয়ে গেছে। হাসিনা খালেদার মধ্যে যে দ্বন্ড তা আদর্শিক, নেহাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। খালেদা জিয়ার ১৫ আগষ্ট ঘটা করে জন্মদিন পালনকে যারা হালকা করে দেখেন তারা না বুঝে দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসার জন্য বৃথাই সময় নষ্ট করছেন।
আদিল ভাই, এখনো মুক্তমনায় আসি আপনাদের মত কিছু ব্লগারের লেখা পড়ার জন্য। চিন্তাজাগনিয়া, গভীর বিশ্লেষণী লেখা। বরাবর আপনার লেখা যেমন হয়ে থাকে।
@সুষুপ্ত পাঠক,
– আমার মতে খুব বেহিসেবী নয়। আর কাজটা যে কেবল একা বিএনপিকেই করতে হবে এমনও নয় এটাও কিন্তু মানতে হবে। বিএনপির তূলনায় অনুপাত ৯৫-৫ হলেও আওয়ামী লীগও জামাতের সাথে মাখামাখি করেছে। যুদ্ধপরাধী বিচার ইস্যুতে বিরোধীতাকারীরা প্রায়ই ‘৯৬ সালে জামাতের সাথে আওয়ামী লীগের সম্মিলিত আন্দোলন, ৯১ সালে গোলাম আজমের কাছে আওয়ামী রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর দোয়া প্রার্থনা এসব উদাহরন হাজির করে। কাজগুলি নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্যও অনৈতিক ছিল। ভুল স্বীকার না করলে সামনে এগুনো যাবে কি করে?
দুই দলকেই দেশ বাঁচাতে হলে এ বিষয়ে একমত হতে হবে। এখন আর আগের অবস্থা নেই যে এক সাথে যুদ্ধপরাধীরা রাজনীতি করবে এবং সেটা অগ্রাহ্য করা হতে থাকবে। যুদ্ধপরাধীরা রাজনীতিতে থাকলে এই শান্তি আর কোনদিন আসবে না। এটা বিশেষভাবে বিএনপির দায়িত্ব অনুধাবন করা।
৭
– এতে একমত নই। যে বৈশিষ্ট্যগুলি বললেন সেগুলি হল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী কারো সাধারন বৈশিষ্ট্য। আপনার কথামত বিএনপিতে ভোট দেওয়া কেউ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হতে পারে না, অন্য কথায় তারা সকলে রাজাকার কিসিমের। এতটা সরলীকরন ঠিক নয়। খুব সোজা উদাহরন দেই, নারায়নগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির শামীম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। উনি নির্বাচন করলে ওনার বিপরীতে বিএনপি একজন মোটামুটি নিরীহ লোক দাঁড়া করালে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সকলে শামীম ওসমানকে ভোট দেবে? রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারন দুবৃত্তপনা আওয়ামী লীগকেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী অনেকের কাছে অপ্রিয় করেছে, ফলশ্রুতিতে তাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে কথাবার্তা কেবল রাজনৈতিক ষ্টান্টবাজি এই ধারনার ভিত্তি পেয়েছে। শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারির মত জিনিস দাঁড়া করিয়ে গোহারা হেরে তারপর দেশের মানুষ সকলে রাজাকার হয়ে গেছে গালাগাল করাটা অন্যায় হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী লোকজন কি কারনে যেন এই গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট একেবারেই আমলে আনতে চান না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে রাজাকার বদরদের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা পাবার পেছনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের নেগেটিভ ইমেজও বেশ কিছুটা দায়ী।
– এটা বর্তমানে কিছুটা সাইড ট্র্যাক ইস্যু। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ইউরোপ আমেরিকায় ক্ষতিকর নয়, আমাদের অঞ্চলে অনেক বেশী ক্ষতিকর। সমস্যা হচ্ছে এই সত্য আমরা স্বীকার করতে চাই না, ধর্মীয় যে মূল্যবোধ আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয় সেই মূল্যবোধই আমাদের এই ধরনের হিপোক্রেটিক অবস্থান নিতে শেখায়। এর থেকে সহজ পরিত্রান নেই। এই আগুনও অনেক বড় হয়ে অনেক কিছু পোড়াবে। তবে এটা শুধু লোকাল ইস্যু নয়, গ্লোবাল। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে কথা আছে। এখানেও কথা আছে যে এটা জোর জবরদস্তির ব্যাপার নয়। নিজে থেকেই বুঝতে হবে ধর্মীয় রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতা। এ জন্য দরকার যারা ধর্মীয় রাজনীতির ধারক বাহক, সমর্থক, তাদের বেশী বেশী করে তাদের চিন্তাভাবনা, সমাজ ভাবনা, রাষ্ট্র পরিচালনার চিন্তা মিডিয়ায় প্রচার করা। আমার ধারনা এটা করা গেলেও ধর্মীয় রাজনীতির কাল্পনিক ইউটোপিয়া সম্পর্কে অনেকের মোহমুক্তি ঘটবে। আল্লামা শফি, বাবুনগরী এ জাতীয় আলেমে দ্বিনদের বেশী করে মিডিয়ায় আনা একান্তই জরুরী।
-কথাটা খুবই সত্য। হুমায়ুন স্যার মনে করতেন আমাদের দুই নেত্রী এক টেবিলে বসলেই দেশের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এত সরল হলে কাজই হত। নির্বাচন নিয়ে কোন রকম সমাধা হলেও এই জাতীয় অমিমাংসিত বিষয় এত বেশী আছে যে স্থায়ী কোন সমাধান (মানে আর ১০টা গনতান্ত্রিক দেশের মত অবস্থা) আসার কোন সম্ভাবনা নেই। এর জন্য আমি দায়ী করি বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে নয়,জনতাকে, বিশেষ করে শিক্ষিত সুশীল শ্রেনীকে। খালেদা ম্যাডামের নিজের জন্ম তারিখ ভাঁড়িয়ে ঢাউশ কেক কাটার মত চরম নোংরামীর প্রতিবাদ করার মত নৈতিক জোর বিএনপির ভেতর থেকে কেউ দেখাতে পারেননি।
রুট কজ সেখানেই। এজন্যই বলেছিলাম যে
@আদিল মাহমুদ, আওয়ামী লীগের অতীতের সব পাপ ক্ষমা করে দিবে ইতিহাস শুধু তার এই বিচারে উদ্যোগটা নেবার জন্য। কাদের মোল্লার ফাঁসিটা ভাবছিলাম আটকেই যাবে….জাতিসংঘ, মার্কিন পরাষ্টমন্ত্রীর ফোন, জামাতের তত্ত্ববধায়ক ছাড়াই নির্বাচনে বিএনপিকে আনার অফার, হাসিনাকে পাঁচ বছর নির্ভিগ্নে ক্ষমতায় থাকার পরোক্ষ নিশ্চয়তা-এত সব লোভনীয় অফার স্রেফ কাদের মোল্লাকে বাঁচিয়ে রাখা’ নষ্ট রাজনীতিকে উসকে দিতে কিছু না। হাসিনা যাই ভেবে থাকুক, ফাঁসি কার্যকর করে ছেড়েছে। হাসিনাকে তার জন্য কেডিট দেয়া যায় তো?
এটা সংখ্যাগরিষ্টের ব্যাপারে চরম সত্য কথা। বিএনপির এই যে বিশাল ভোট, এই ভোটাররা প্রথম থেকেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে হেয়, অবজ্ঞা, শাহবাগ আন্দোলনকে হেফাজতী ভাষায় সমালোচনা করেছে। আমি অতান্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বিএনপি ভোটার যারা তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হয় উদাসিন নয় তো বিরূপতা রয়েছে। আমি আমার জীবনে একজন বিএনপি ভোটারকে পাইনি যে ৭ মার্চ ভাষণ শুনে আবেগপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের গানগুলো তাদের কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় গান। আমি এর জন্য তাদের প্রতি কোন বিদ্বেষ প্রসন করি না। তারা আসলে এমনটাই জেনে বা বুঝে আসছে। যাই হোক এটা নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমি ফাঁসী নিয়ে তেমন উদ্বেলিত নই, সুবিচার নিয়ে উদ্বেলিত। এটা অবশ্যই আওয়ামী লীগের জন্য একটা মনুমেন্টাল এচিভমেন্ট। এটা অস্বীকারের কোন উপায় নেই। তবে শুধু এ কারনে যদি আশা করেন যে সকলের আওয়ামী লীগে ভোট দেওয়া উচিত সেটাও ভুল।
বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠি নিয়ে যা বললেন তা অনেকটাই সত্য। এটা মূল্যবোধ জনিত পার্থক্যের কারন। বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠীর মাঝে ধর্মীয় প্রভাবের বড় ভূমিকা আছে, বিএনপির বাংলাদেশে কনজার্ভেটিভ গ্রুপ রিপ্রেজেন্ট করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন লাইক আওয়ামী লীগ, এই দলের অনুভূতি মিশ্র। এক বড় অংশ আছে যাদের সাথে মূলত জামাতি মুক্তিযুদ্ধের কনসেপশনের তেমন তফাত নেই। শুধু জামাতিদের নৃশংস ভূমিকার কারনে এরা জামাতের বদলে বিএনপি সমর্থক। এই দল হঠাত করে জন্ম নেয়নি। ‘৭০ সালের নির্বাচনী ফল দেখলেও বোঝা যায় এদের সংখ্যা তখনো খুব নগন্য ছিল না।
আরেক দল আছে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক, তবে এ নিয়ে খুব বেশী নাড়াচাড়ায় আগ্রহী নয়, এর কারন সম্ভবত ধর্মের প্রভাব কিংবা ভারত ঠেকাও নীতির কারনে এরাও পাকিস্তানের সাথে রিকনসিলিয়েশনে আগ্রহী। এরা মুক্তিযুদ্ধ নীতিগতভাবে সমর্থন করলেও বংগবন্ধু এবং আওয়ামী অবদান স্বীকার করার ব্যাপারে প্রবলভাবে এলার্জিক। এই জেনারেশন সম্ভবত আমাদের জেনারেশন যারা ‘৭৫ পরবর্তি ইতিহাস বিকৃতির সময়ে স্কুল কলেজে ছিল। এদের অনেকে সম্ভবত এখন মুক্তিযুদ্ধ ভারত ইসরাইলের ষড়যন্ত্র জাতীয় তত্ত্ব শুনলে স্বস্থি বোধ করে।
আরেক ছোট দল আছে যারা জেনুইন মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক, কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তি আওয়ামী লীগের নানান অপকর্মের কারনে চরমভাবে লীগ বিরোধী হয়ে গেছে। সাথে ভারতীয় জুজু কাজ করে।
বিএনপির বুদ্ধিজীবি বলে যারা পরিচিত তাদেরও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তেমন আগ্রহ আছে এমন প্রতীয়মান হয় না। তাদের মূল অবদান ইতিহাস বিকৃত করা এবং বিকৃতকারীদের হয়ে গলাবাজি করা, আওয়ামী লীগ সব কৃতিত্ব ফ্যাসীবাদী কায়দায় হাউজ্যাক করেছে এ জাতীয় ম্যাতকার করা। বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবি, ব্লগার কাউকেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন থটফুল গবেষনাকর্ম করতে দেখি না। যদিও তারা হরহামেশা মুক্তিযুদ্ধ একটি দল বাপের সম্পত্তি বানিয়েছে বলে চেঁচিয়ে যায়। সোজা কথায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের দরদ কতটা তা বোঝার তেমন রাস্তা আমি দেখি না। হ্যাঁ, জিয়া রাজাকার পূণঃবাসন শুরু করলেও তার আমলে সরকারী উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মোটামুটি নিরপেক্ষ ভাবে হয়েছিল।
এটা বুঝতে হবে যে ৭ই মার্চের ভাষন শিহরিত না হয়েও বোনাফাইড মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়। কিন্তু এটাও ঠিক যে জয়বাংলা শ্লোগান আওয়ামী লীগের, মুক্তিযুদ্ধের গানগুলি আওয়ামী লীগের এ ধরনের সংকীর্নতা মোটামুটি সব ধরনের বিএনপি সমর্থকের আছে। অনেকে বিশ্বাস করতে চান না, অনেকে বিশ্বাস করলেও স্বীকার করতে চান না, এটা হল ধর্মীয় মূল্যবোধজনিত মতপার্থক্য।
@আদিল মাহমুদ,
তাহলে তো বলতে হয় – বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, তাহলে ইসলামিক রাষ্ট্র বানালেই পারে?? যেহেতু, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ নিজের অজান্তেই গণতন্ত্র বিরুধী কথাতেই বাহ বাহ দেয়।
কোথায় যেন শুনেছিলাম- ভঙ্গুর গণতন্ত্রই, এক নায়ক তন্ত্রের জন্ম দেয়। আমার কাছে মনে এই নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন।
@(নির্জলা নিলজ্জ),
একটি বড়সড় ভুল করছেন বলেই মনে হচ্ছ আমার কাছে। বি এন পি মোটেই ইসলামী দল নয়। জামাতও ইসলামী দল না, শুধু ইসলামের নাম ভাড়িয়ে খাচ্ছে। দয়া করে আবার প্রমান পত্র দেয়া শুরু করবেন না যে কেন ইসলাম খারাপ, আর আসলে ইসলাম কি জিনিস, এই সব এইসব, কারন এখানে মোটেই সেই আলোচনা হচ্ছে না।
জামাত ইসলামী দল না এটা বললাম এর একটাই মাত্র কারন আর তা হল, যদি কোনদিন জামাত একক ভাবেও ক্ষমতায় আসে ( বলা যায় না জামাতকে ভোট দিয়ে যে এইদেশে শরিয়াহর স্বপ্ন দেখবে না মানুষ যে আশা করতে আর ভরসা পাই না, দেশের মানুষ ধর্ম পালন করুক বা না করুক, শরিয়াহর খুব ভক্ত, কারন এরা শরিয়াহ কি জিনিস সেটা বুঝতে পারেনি), তবে নিশ্চিত থাকেন যে, জামাত অন্তত কোনদিনই শরিয়াহ কায়েম করবে না। এত টা বোকা জামাতকে মনে করবেন না। শরিয়ার জিনিস যেটা বর্তমান কালে অচল, সেটা জামাত করতে যাবে না। এরা যুদ্ধাপরাধী দল এটা ঠিক আছে, তবে শরিয়ার রাস্তায় এরা হেঁটে নিজেদের শর্বনাশ করবে না। বাঙ্গালী মুখে যতই ধর্ম ধর্ম করে চেঁচাক না কেন, সত্যি যদি শরিয়াহ কায়েম হয়, তবে মনে হয় না এটা সহ্য করতে পারবে, কারন আমরা যতটা আবেগপ্রবন জাতি, তারচেয়েও বেশী ভীতু ( হ্যাঁ থিকই বলছি), শরিয়াহ একবার খেলে ২য়বার সে রাস্তায় হাটবে না ( ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়) , এটা জামাত ভাল করেই জানে। তাই জামাত ওপথে হাঁটবে না, শুধুই ধর্মের নাম ভাঁড়াচ্ছে শুধুই ব্যবসা করা বা ভোট প্রাপ্তির আশায়। কারন্টা মনে হয় এই যে, বাংলাদেশীরা ধর্ম নিয়ে যতই চিল্লাফাল্লা করুক, ধর্মীর কঠিন দিকগুলির ( পড়ুন অমানবিক) চাপ সহ্য করার মত যথেষ্ট পরিমান শক্তি এদের নাই( শারীরিক বা মানসিক কোনটাই নেই), আর এটা জামাত ভালই জানে। শরিয়াহ আনতে হলে হেফাজতকে ক্ষমতায় তুলতে হবে, আর এরশাদ কাক্কু যতই হেফাজতের দোয়া নিয়ে আসেন না কেন,এতে হেফাজতের তেমন লাভ নেই জেনেই হয়ত তেতুল হুজুর এরশাদ কে নিরাশ করেছেন এই বলে যে, হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল নয়। আসলে আমরা না বুঝলেও হুজুর (তেতুল শাফী) ভালই বোঝেন যে বাংলাদেশে তিনি রাজনীতি করে হালে পানি পাবেন না।
@দারুচিনি দ্বীপ,
“জামাত ইসলামী দল নয়” এর কারণ হিসেবে “তারা ক্ষমতায় এলে শরীয়া কায়েম করবে না” জাতীয় ব্যক্তিগত মতামতের উপর কি নির্ভর করে? জামাত কেন ইসলামী দল না সেটা ব্যাখ্যা করুন। প্রকৃত ইসলামী দল কেমন হবে বলুন? জামাতকে অনেক আলেম-ওলামার দল সহি ইসলামী দল বলে স্বীকার করে না। এটা অনেকটা সেরকমই হয়ে গেলো।
বাঙালি বলছেন কেন, আফগানীরা যখন তালেবান পতন হয় তখন পুরুষরা লাইন দিয়েছিল সেলুনে দাড়ি কাটার জন্য। সিনেমা হলে উপচে পড়েছিল দর্শক। নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর নারীরা আন্দোলন করেছিল তাদের প্রতি শরীয়ার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে। এটা কখনই মানুষ মেনে নিবে না কারণ মানুষের সহজাতকে এটা অস্বীকার করে।
কোন অর্থে বললেন বুঝতে পারছি না। ইংরেজ আমলে ভারতবর্ষের যে দুটো জাতি তাদের বীরত্ব ও তেজের জন্য চক্ষুশূল হয়েছিল ইংরেজের কাছে বাঙালি ও পাঞ্জাবী হলো সে দুটি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাষার দাবীতে মিছিল। ৭১ একটা সুশিক্ষিত সৈন্যবাহিনী বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাওয়া দুঃসাহস না থাকলে সম্ভব না ভাই।
না, বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত যতটা ইসলামীকরণ করা হয়েছে তা কোন হেফাজতী সংগঠন করেনি। আপনার কথিত অইসলামী দল বিএনপি সংবিধানে বিসমিল্লাহ, জাতীয় পার্টি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ও আওয়ামী আমলে ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে। হেফাজতীরা কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না এটা একটা সত্য নানা কারণে, এ জন্য বাংলাদেশে শরীয়া শাসন বা সেই জাতীয় কিছুর সম্ভবনা নেই বলে অনেকে (যেমন আপনি) মনে করেন, এটা আসলে এতটা নিশ্চিত হওয়ার মত ব্যাপার না। বাংলাদেশ পুরোপুরি শরীয়তা শাসন সম্ভব না হলেও ওই জাতীয় কিছুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না অদূর ভবিষ্যতে।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আসলে আমি বলতে চেয়েছি যে জামাত সুবিধাবাদী দল। এরা শরিয়াহ কায়েম করতে চায় বলে মনে হয় না, শুধু দেশের কিছু মানুষ যারা না বুঝেই শরিয়াহ চায়,জামাত শরিয়াহর কথা বলে এদের ধোঁকা দিয়ে রাখে বলেই আমার ধারন, তবে আমার ধারনা ভুল হতেই পারে। আসলে যে টাইপ দল শরিয়াহ নামক জিনিসটি চায় এদের কাছে একটা নীতি লাগে, আর এই নীতি জামাতের আছে বলে মনে হয় না। না হলে বি এন পির সাথে জোট করবে কেন, নারী নেতৃত্ব হারাম ঘোষণার কিছুদিন পরেই? এখন হারাম কি হালাল হয়ে গেল? এটাকেই আমি নিতিহীনতা বলেছি। এদের বড়ভাই তালেবান রা কিন্তু এমন নীতি হীন নয়। আরও অনেক কিছু এই জামাতী দের মাঝে খুজে পাওয়া যায়। সোজা কথায় দ্বিচারিতা। আর তাই এইসব জিনিস্কে দিয়ে কিছু আশা করা যায় না। যেমন হিটলার যতই খারাপ হোক সে একটা নীতি নিয়ে চলত। জামাতের মনে হয়না সেটা আছে। আসলেই এই দল্টা হল ভেড়ার ছদ্মবেশে নেকড়ে, এরা গোপন শত্রু বলেই আমার বিশ্বাস।
হেফাজতের সাথে জামাতের পার্থক্য দেখেছেন? আমি বলতে চেয়েছি যে আজকাল ইসলামী দলগুলো একটা নীতি নিয়ে অগ্রসর হবে, যেটা জামাতের নেই। তারা ক্ষমতায় আসার জন্য তথাকথিত হারাম কাজটিই করে যাচ্ছে। আপনি ইসলাম ভালো করে স্টাডি করলে দেখবেন যে, ( আমি নিজেও খুব ভাল করে করিনি, সবে মাত্র শুরু করেছি) এইযে প্রচলিত গনতন্ত্র এটা ইসলামে হারাম। এই হারাম কাজটি কিন্তু জামাত করে চলেছে, জনতার ভোটের অধিকার রক্ষায় এদের মায়াকান্না দেখেছেন?
ইসলামী মৌলবাদ কায়েম করতে হলে একটা আদর্শবাদ বা নীতি লাগবে ( হতে পারে এমন কোন নীতি যা সমাজে মঙ্গল বয়ে আনবে না), যেটা জামাতের মত দ্বিচারী দলের কাছে আশা করা যায় না।
আমি বরং তুরস্কের একেপি পার্টি কেই মডারেট ইসলামী দল বলব, এরা দেখেছেন কিভাবে নিজেদের চেয়ে আদর্শবাদ কে বড় করে দেখে কামালের সেক্যুলার তুরস্ক কে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে? তাকসিম স্কয়ারের বিপ্লব কে কিভাবে মোকাবেলা করেছে? এরা কিন্তু সূচ হয়ে ক্ষমতায় ঢুকেছে, আর দেখবেন ফাল হয়ে বেরুবে। আমি কি পরিষ্কার করতে পেরেছি নিজের অবস্থান? আমিভাল করে অনেক সময় নিজেকে ব্যখা করতে পারি না, আমার এই সিমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিচ্ছি। ইরানে খোমেনীর নেত্রেত্ব যে ইসলামী বিপ্লব হয়েছে, এইটা কি আপনি নিজের স্বার্থে পশ্চিমাদের পদলেহী জামাত কে দিয়ে হবে বলে মনে করেন? এরা শুধুই বন্ধুর বেশ নিয়ে মানুষকে ইসলামী তরিকায় মগজ ধোলাই করবে, আর নিজেরা লাভবান হবে, যেমন ভন্ড পীরেরা অনেক মুরীদ বানিয়ে সেই মুরিদের দক্ষিণা খেয়ে রাজার হালে থাকে। আসলে জামাত গভীর জলের মাছ, এরা মানুষকে জম্বি বানিয়ে নিজেরাই আবার ওষুধ তৈরী করে বাজারে ছাড়বে।
তালেবানরা কি নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছিল? সঠিক মনে নেই।
ইতিহাস বাদ দেন, ইতিহাসের ওই স্তরে আমরা আর নেই, আমরা এখন যত না বাঙ্গালী, তারচেয়ে বেশি লীগ বা বি এন পি। কাজেই এইবার বুঝে নেন। সারাসময় দেশপ্রেমের তুবড়ি ছোটাই, আর ভোট এলে গনতান্ত্রিক অধিকার (!) আদায় সোচ্চার হয়ে পড়ি। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় না যে দেশের মানুষ এক যোগের এইসব হরতাল বা অবরোধ কে প্রতিহত করতে পারে? কেন করবে না? কারন এদের ঐক্য নষ্ট হয়ে গেছে, আর এটা করেছে জামাত আর তাদের বি টীম বি এন পি। দেখেছেন, আজামত কিন্তু এখানে অনেক বড় সফলতা পেয়েছে। আমারদের ঐক্য নষ্ট করেছে, আমাদের মেরুদণ্ডহীন বানিয়ে দিচ্ছে। অপেক্ষা করেন আর দেখেন যে এরা রাজনীতি করতে থাকলে আর কি কি হয়।
নারী নেতৃত্ব ইসলামে হারাম তাই না? এই মধ্যযুগীয় ধারনাকে লালন কি কেউ করে চলেছে? না এটা না করলে কাউকে আমি ইস্লামিস্ট বলি না, বরং এই সব সুবিধাবাদীরা ইস্লামিস্টদের চেয়েও খারাপ। খালেদা জিয়াকে দেখে কি মনে হয় যে তিনি ইসলামী মানুষ? নাহ তা না, উনার নিকাব কই তাহলে? ইসলাম সহ সব ধর্মের যে বিকৃতি, এগুলো সারিয়ে তোলার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু বি এন পি জামাত এগুলো মানুষের মধ্যে আরো বাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। জনগন করছে কামড়া কামড়ি আর আমাদের ইসলামী নেত্রী প্রতিদিন পার্লারে যাছে। একে আমি ধর্ম ব্যবসা বলি।
@সুষুপ্ত পাঠক,
😀 দেখলেনতো ভাই, আপনি নিজেও স্বীকার করলেন যে পুরোপুরি সম্ভব না। কেন সম্ভব নয়, এমনকি মানুষ চাইলেও? কারন এতে করে এই বেজন্মা জামাতের নিজের লোকজনই ভুগবে। কাজেই জনগনের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা জিইয়ে রেখে সুবিধাই লুটবে জামাত। নিজেদের স্বার্থেই এরা ইসলামী বিপ্লবের ধার দিয়ে যাবে না বলেই আমার ধারনা। কারন আজকাল ইসলামী বিপ্লব করে সুবিধা পাওয়া যায় না, আর এমন কাজ কেন জামাত করবে যাতে নিজেদের ভাগে কম পড়বে?
ইস্লামিস্ট আর মুসলিম এক না ( যদিও জামাত চায় যে সব মুসলিম ইস্লামিস্ট হোক আর শরিয়াহ স্বপ্নে বিভোর হয়ে জামাতের ঝুলানো ইসলামী শরিয়ার মুলার দিকে দৌড়াক।), যেমন আমি মুসলিম হলেও ইস্লামিস্ট না। কারন ইস্লামিস্টরা ক্ষমতায় এলে আমাকেই মারবে সবার আগে।
আর বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আর এই দুটার পার্থক্য ভুলে গেছে। আমি আগে বলেছি, এখনও বলছি যে ৩০ পারা কোরান দিয়ে দেশ চালানোর যুগ আর নেই। কিন্তু ইস্লামিস্টরা হল জম্বি, এরা এটা বুঝে না, জামাত কিন্তু ভালই বুঝে এটা কিন্তু ভাব ধরে যে বুঝে না, কিন্তু এরা আমাদের কেই ইস্লামিস্ট জম্বি বানাতে চায়।
আপনি কি World War Z মুভি টা দেখেছেন? অথবা warm bodies? দুটোর কাহিনী তুলনা করুন, অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে, বিশেষ করে পরেরটা। 😉
@সুষুপ্ত পাঠক,
ঠিক বলেছেন ভাই, এইসব আলেম ওলামারাই সংস্কারের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে আছে সেই তথাকথিত সহি ইসলামী দল। এরা কিন্তু চিন্তাশুন্য রোবটের মত হয়ে গেছে। শাফী এমন কিনা জানি না, তবে এদের চেয়ে উন্নত কিছু কি? যদি তাই হয় তবে তেতুল তত্ব দেবে কেন? মনে রাখবেন এইসব আলেম রাই হল আসল ইস্লামিস্ট। আর এরা যদি ক্ষমতায় যায় কোনদিন, তবে এরা দেখবেন কি কান্ড করে ছাড়ে। অবশ্য আদিল ভাইয়ের মত ( উনি এক মন্তব্যে এটা বলেছিলেন; অবশ্যই ক্ষোভ নিয়ে, আর আমিও ক্ষোভ নিয়েই বলছি) আমিও চাই যে এরা একবার ক্ষমতায় যাক, যেয়ে শরিয়াহ কি জিনিস এটা মানুষ কে বুঝাক। ঠ্যাঙ্গানী না খেলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই শরিয়াহ প্রীতি যাবে না। আর তাই আমি হেফাজতের উদাহরন দিয়েছি। ব্যাটা তেঁতুল তত্ব দেবার আগে বুঝেনি যে বাঙ্গালী না বুঝেই শরিয়াহ প্রেম করে। না হলে যদি শরিয়াহ বুঝে পভালবাসত তবে আপনার কি মনে হয় না যে তেতুল তত্বকে সাদরে গ্রহন করত? 😉
@দারুচিনি দ্বীপ,
আদিল ভাই আমাকে বলেছিল –
এত কিছুর পরেও তো দেশের এক বড় সংখ্যক লোকে বিএনপি-জামাতকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। নাকি মনে করেন বিএনপি জামাতের ভোটের সংখ্যা ২/৩% এর বেশী হবে না।
তাই আমি আদিল ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলেছিলাম, দেশের অধিকাংশ জনগণ যেহেতু ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, তাহলে ইসলামিক রাষ্ট্র বানালেই পারে !!! আমি আমার স্বল্প জ্ঞানে যেটুকু বুঝি বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য ফিট না, তাই বাংলাদেশের জনগণের, যেটাই চাওয়া পাওয়া থাকুক না কেন, সেটা হতে দেওয়া যাবে না।
সম্ভবত ভাসানী বলেছিলেন- নীল নদের পানি যেমন নীল না, ঠিক জামাতী ইসলামও ইসলাম না। যাই হউক- আসলে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনেক সমর্থক আছে যারা বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, এরা কিন্তু নিজের অজান্তেই জামাতী ইসলামের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে, এইটা হচ্ছে বড় সমস্যা। জামাতী ক্ষমতায় আসুক আর না-ই আসুক। এতে কোন এক সময় দেখা যাবে- বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ পাকিস্থান প্রেমী হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ।
@(নির্জলা নিলজ্জ),
– গনতন্ত্রে বিশ্বাসী হতে হলে তো তাই মেনে নিতে হবে। উপায় কি? এটা গনৎন্ত্রের দূর্বলতা। গনতান্ত্রিকভাবেই অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হতে পারে। হিটলার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় বসেছিল। এটা ঠেকাতে হলে ইতোমধ্যেই গড়ে ওঠা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে গায়ের জোরে চাপা দেওয়া কার্যকর উপায় নয়। কিওরের উপায় নেই, এখানে প্রিভেনশন হল উপায়।
-গনতন্ত্র নিজেই নিজেকে হত্যা করতে পারে।
– সত্য কথা। আমি এখন খুব সিরিয়াসলিই বিশ্বাস করি যে আমরা গনতন্ত্রের যোগ্য এখনো হইনি। আমাদের জন্য একজন এফিশিয়েন্ট একজন স্বৈরাচার দরকার। আমার লেখায় কথটা তেমন এক্সপান্ড করিনি, যত সমস্যার মূলে হল আমরা নিজেই নিজেদের চিনি না। এরশাদ পতনের পর আসলে গনতন্ত্র মুক্তি পায়নি, মুক্তি পাবার প্রশ্নই আসে না কারন গনতন্ত্র আদৌ কোনদিন ছিল না। এরশাদ পতনের পর পেয়েছিলাম গনতান্ত্রিক উপায়ে স্বৈরাচার নির্বাচন করার অধিকার। সে স্বাধীনতাও খর্ব হতে নিজেদেরই গুনে বেশীদিন লাগেনি।
– আপনার সাথে রাজনৈতিক বিশ্বাসে পার্থক্য আছে, যেমন বিএনপির একজন সাধারন সমর্থকও তো সেভাবে ভাবতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মন্তব্যের প্রতিটা লাইনের সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কাঁদের মোল্লার ফাঁসি দেওয়ায় পাকিস্তানের সাংসদরা যে ধরনের বক্তব্য দিল , তাতে জামাত-বিএনপির উদ্দেশ্য পরিষ্কার বুঝা গেছে, তাই বিএনপি’র সমর্থকদের চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব দেওয়া এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আদিল ভাই,
আপনার এই লেখার মূলবক্তব্যে কয়েকটা প্রশ্ন আছে।
বৰ্তমানে দুই জোটের যে দলগুলো আছে এই প্রেক্ষিতে আপনার কি মনেহয় রাজনৈতিক সমঝোতা আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাশাপাশি চলতে পারে?
বিএনপি কি জামাতকে ছাড়ার ঘোষনা দিতে পারে? যদি না পারে আর এদের সাথে আওয়ামীলীগের সমঝোতা হয় তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সুষ্ঠভাবে শেষ হবে?
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। (FF)
@তারিক,
না।
যুদ্ধপরাধীদের ব্যাপারে ছাড় দিয়ে নেগোসিয়েশনের পরিস্থিতি আর নেই। এটা বিএনপিকে বুঝতে হবে। বিএনপি জামাত সংসর্গ ঘোষনা দিয়ে ত্যাগ করলে আমি তক্ত্বাবধয়কেও ফিরতে রাজী আছি। সত্য বলতে বিএনপি আরো আগেই এই কাজটি করলে আমি এখনো মিন মিন করে আওয়ামী লীগের হয়ে যা কিছু বলছি তার কিছুই বলতাম না।
আওয়ামী লীগকে যেমন বুঝতে হবে তক্ত্বাবধয়ক প্রশ্নে গোয়ার্তূমি যেমন সাধারন জনতা ভালভাবে নিচ্ছে না তেমনি বিএনপিকেও বুঝতে হবে যুদ্ধপরাধীদের সাথে করে তারা যেভাবেই ক্ষমতায় যাক সেটাও জনতা সহজভাবে নেবে না। এখন আর ২০০১ সালের অবস্থা নেই।
@আদিল মাহমুদ, আপনার কমেন্টের কোন জায়গায় দ্বিমত করার কিছু পাইলাম না ! 🙁
আওয়ামী লীগের এই আমলে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল যেহেতু তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত এত বড় কাজ হাতে নিয়েছিল। অতীত ইতিহাস থেকে বুঝা যায় যে সব দলের অংশগ্রহন ব্যতিত আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলেও খুব বেশী দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, বরং জনতা ক্ষেপে যাওয়ার প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে।
আমার ধারনা আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাৰ্য সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার পরেই ক্ষমতা ছাড়তে চায়! 😕
@তারিক,
আওয়ামী লীগ আসলে একটি মৌলিক ভুল করেছে সেটা হল তক্তাবধয়ক বদল এবং যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মত দুটি বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ একই টার্মে করতে চেয়েছে। এই দুই ইস্যুর মাঝে এখন জট পাকিয়ে গেছে, যদিও দুটি ইস্যু আসলে সম্পর্কহীন।
এক দলীয় প্রহসন মার্কা নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার কতদিন কিভাবে টেকে তা দেখার বিষয়। যুদ্ধপরাধীদের সবার বিচার পুরো সম্পন্ন করতে কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত।
@আদিল মাহমুদ,
এটাই বলতে চেয়েছিলাম, হয়ত বুঝাতে পারি নাই।
আর এই জট পাকানোর মূল কারিগর হল বিএনপি। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য যখন ট্রাইবুনাল গঠন করা হয় তখনই বিএনপি’র উচিৎ ছিল জামাতের সাথে সকল সৰ্ম্পক ছিন্ন করা; কারন ৭১ জামাতের ভূমিকা সৰ্ম্পকে নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের দল দাবী করা বিএনপি’র অবগত না থাকার কোন কারন নাই। কিন্তু, তারা সেটা না করে জামাতকে সাথে নিয়ে জল ঘোলা করা শুরু করে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনালকে বিৰ্তকিত করার চেষ্ঠা, যুদ্ধপরাধীদের রাজবন্দী ঘোষনা, হেফাজতকে দিয়ে সরকার পতনের চেষ্ঠা আর সৰ্বশেষে নিৰ্বাচনকে সামনে রেখে যুদ্ধপরাধীদের বাচাঁনোকে টাৰ্গেট করে একের পর এক হরতাল-অবরোধ দিয়ে জামাতকে দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। রাজাকারের বন্ধু জেনারেল জিয়ার আৰ্দশকে সত্যিকারভাবে বুকে নিয়েই বিএনপি রাজনৈতিক চাল চেলে যাচ্ছে।
@তারিক,
দেখেন ভাই, আসেন আমরা ভাল কিছু আলোচনা করি, অযথাই বিশেষণে বিশেষায়িত করলে কিন্তু ভাল আলোচনার পরিবেশটা থাকবে না, যেহেতু অনেক লোক খুবই কড়া জাতীয়তা বাদী সমর্থক।কাজেই তাঁরা মনে হয় না আলাপ করতে আগ্রহী হবেন জিয়াকে রাজাকারের বন্ধু বললে 🙁 । কাজেই মনে রাগ মনে পুষে রেখে আসেন না আমরা এমন কিছু আলোচনা করি যাতে সবাই আগ্রহী হন। যদিও বুঝি যে আলচনা করে লাভ নেই, কপালে খারাবী আছে বাংলাদেশের আর এটার হাত থেকে নিস্তারের রাস্তা মনে হয় আর নেই ।
@দারুচিনি দ্বীপ,
খুবই সত্য কথা।
একের পর এক ব্যাবসা বানিজ্য যখন বন্ধ হবে, অনেকের চাকরি চলে যাবে, যাদের আছে তাদেরও বেতন বন্ধ হবে তখন জিয়া কত বড় রাজাকার আর আওয়ামী লীগে আরো বড় রাজাকার আছে এই ধরনের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় কোন ফায়দা হবে না।
@দারুচিনি দ্বীপ,
ভাই খুব সুন্দর বক্তব্য আর আমি আন্তরিকভাবে দুঃক্ষিত জেনারেলকে ঐ “রাজাকারের বন্ধু” বিশেষণে বিশেষায়িত করার জন্য।
একই উপলব্ধি আমারও। আমরা এখন যেই সংৰ্ঘষটা দেখছি সেটা শুধুমাত্র আগামী নিৰ্বাচনকে কেন্দ্র করে, তা ভাবলে বিরাট ভুল হবে। কারন এই সংৰ্ঘষটা মূলত আৰ্দশের। এই সংৰ্ঘষ/ক্ষোভটা বাংলাদেশের দুইপন্থী মানুষ বহুদিন ধরে নিজের মনে পোষন করে আসছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। 🙁
@তারিক,
অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার উপলব্ধির জন্য।
ঠিক বলেছেন, আসলে কোনদল যদি সরাসরি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ( যুদ্ধাপরাধী দলের সমর্থনে বক্তব্য দেয়া আর সরাসরি পক্ষ নেয়াকে একই মনে করি আমি), তবে প্রশ্ন তো উঠবেই। এতে মানুষ যদি কিছুটা সচেতন হত, তাহলেই মনে হয় আমরা ভাল জিনিস্টাই পেতাম।
কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষ দেখেও না দেখার ভান করে, কাজেই এই জাতির আমি অদূর ভবিষ্যতে ভাল কিছু দেখি না। 🙁
@তারিক,
আওয়ামী লীগ যেমন বর্তমানে কেয়ার টেকার নিয়ে গোয়ার্তূমী করে বড় ধরনের রাজনৈতিক ভুল করেছে তেমনি বিএনপিও আমার মতে ভুল করেছিল শাহবাগ আন্দোলনের চরম সময়ে জামাতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষনা না দিয়ে। আমার মনে হয় বিএনপি সে সময় কাজটি করতে পারলে আজ আওয়ামী সরকারের কেয়ার টেকার নিয়ে গোয়ার্তুমি করার মত কোন নৈতিক জোর থাকত না। এটা বোঝা যায় যে কেয়ার টেকার ব্যাবস্থার পক্ষে এখনো নানান জরীপে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত দেখা গেলেও এই ইস্যুতে আন্দোলন গনআন্দোলনে পরিন্ত হতে পারেনি। আমার ধারনা গনআন্দোলনে পরিনত না হবার মূল কারন যুদ্ধপরাধী ইস্যু। দেশের এক অংশ মানুষ চায় যুদ্ধপরাধীদের বিচার, তারা সরকার ব্যাবস্থা কেয়ার করে না।
তবে এটা মানতে হবে যে বিএনপিকে জামাতি অবস্থান ধরে রাখায় দারুন ভাবে সহায়তা করেছে হেফাজতি ঝড়। জামাতের প্রসংশা না করে পারি না। সে সময়কার পত্রিকা দেখলে বোঝা যায় যে বিএনপি প্রথম দিকে শাহবাগ আন্দোলন সরকারের চাল ফাল এসব বললেও এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে এক সময় শাহবাহগেও সমর্থন দেওয়া শুরু করেছিল। রাজীব হত্যা এবং হেফাজতি ঝড় না উঠলে তাদের জামাত সংসর্গ ত্যাগ করা ছাড়া উপায় থাকতো বলে মনে হয় না। (এতে আরেকটা জিনিস প্রমান হয় যে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা পাবলিকের আছে) তাতে রাজনীতি অনেকটা সূস্থ ধারায় চলে আসতে পারতো। আমাদের মত বহু লোকে তখন কেয়ার টেকার ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের পক্ষে সরাসরি মত দিতে পারতো। যুদ্ধপরাধী ইস্যু নিয়ে বিএনপির অনমনীয় অবস্থান আমাদেরও বাধ্য করছে যে কোন ভাবেই হোক লীগই আবার সরকার গঠন করুক এই ভয়াবহ রকমের অন্যায় অনৈতিক অবস্থান আঁকড়ে ধরতে। এর পরিনতি কোন দিকেই শুভ নয়। লীগ যে কোন ভাবে সরকার গঠন করে যুদ্ধপরাধী সবাইকে ঝুলিয়ে আমাদের ব্যাপক তৃপ্তি দিলেও এই প্রক্রিয়ার ভয়াবহ কুফল টের পেতে সময় লাগবে না। সত্যি কথা বলতে বর্তমান সময়ের মত এত অসূস্থ সময় দেশে এমনকি ‘৭১ সালেও ছিল না।
এখন পানি গড়িয়ে গেছে বহুদুর। আমি অনেক আগ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাজের চেয়ে আবেগী কথাবার্তা এবং জামাতকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ভয়াবহ প্রবনতা। কেবল জামাতের ৫% এর বেশী ভোট নেই তাই তারা চুনোপুটি কিছুই করার ক্ষমতা নেই এই আত্মশ্লাঘায় ভোগার ভয়াবহ পরিনতি এখন দেখা যাচ্ছে, যারা এখনো দেখতে পাচ্ছেন না কাদের মোল্লার ফাঁসীর উল্লাস এখনো শেষ করতে পারেননি তাদেরও মনে হয় না খুব বেশী সময় লাগবে বলে।
@আদিল মাহমুদ,
চমৎকার বিশ্লেষন। সহমত।
আজকের এই সংবাদটা আশাকরি পড়েছেন : ‘এবার নয়, সমঝোতা হলে পরের নির্বাচনে’।
@তারিক,
হ্যা, পড়েছি।
কথা তো সত্য। এখন সমঝোতা হোক আর যাইই হোক, নির্বাচনে নুতন কারো দাঁড়ানোর উপায় নেই, অন্যদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষা করতে নির্বাচন হতেই হবে……মিলিত ফল আওয়ামী লীগের মত এক অঈতিহ্যবাহী দলের কপালে চিরকালের মত একদলীয় নির্বাচন করার কলংক লেগে গেল। এরশাদ বিষয়ক যেসব নোংরামী হয়েছে তার বোঝাও এই দলকে বইতে হবে সামনের বহু বছর, শুধু ছেনি মোল্লার ফাঁসীর আনন্দ সেই কলংক ভবিষ্যতে ঢাকতে যথেষ্ট হবে না।
এই একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে এবং ১৫৪ সিটে বিনা ভোটে পাশ করিয়ে আওয়ামী লীগ যে কতবড়ো একটা কলংক নিজের কপালে একে ফেললো, এটা বোধহয় আওয়ামী সমর্থকেরা অনুধাবনই করতে পারছে না। অন্য একটি ব্লগে আমার একটি ছোট লেখা,
আওয়ামী লীগের rite of passage
আমি অনেক আগে থেকেই একটা জিনিষ ভেবে আশ্চর্য হতাম যে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি এবং মেইনস্ট্রীম দল হয়েও আওয়ামী লীগ কেনো মনমানসিকতায় ছোট, উগ্রপন্থী দলগুলির মতো মৌলবাদী? কেনো এরা ভাবতে পারে না তাদের চিন্তা-চেতনার বাইরেও অন্য চিন্তা-চেতনা আছে যেগুলি দুনিয়া সকল দেশের মানদন্ডেই রেসপেক্টেবল এবং কনভেনশনাল? কেনো এরা নিজেদের ক্ষমতায় এনটাইটেলড মনে করে? কেনো প্রতিপক্ষের এতো বিপুল জনসমর্থনকে বার বার চোখে দেখেও এবং নির্বাচনে একের পর এক অভাবিত পরাজয়ের পরেও এই দলটি ছোট ছেলেদের মতো প্রতিপক্ষকে তুচ্ছজ্ঞান করে?
এই সবের নিশ্চই অনেক জটিল এবং পারস্পরিকভাবে সম্পৃক্ত কারন আছে তবে আমার কাছে একটা সোজা, সাদাসিধে কারন মনে হয় যে, আওয়ামী লীগের একটি rite of passage হয় নি, যে কারনে এরা এখনও রাজনৈতিক বিবর্তনের একটি দশায় আটকে গেছে, পরের দশায় উত্তীর্ণ হয় নি।
Rite of passage অর্থ হলো একজন মানুষের জীবনের একটি দশা থেকে আরেকটিতে উত্তীর্ন হওয়ার জন্যে সামাজিকভাবে যেসব ritual event বা আচার-অনুষ্ঠান করা হয় সেসবকে বলা হয়। যেমন ইহুদী কিশোরদের বার মিৎজভা, প্রথম সন্তানসম্ভবা নারীর বেবী শাওয়ার, এরকম সর্বত্র প্রচলিত rite of passage। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশীয় গনতন্ত্রের যে rite of passage টি মিস করে গেছে সেটি হলো গনআন্দোলনের মুখে পতন। আওয়ামী লীগের এখন পর্যন্ত তীব্র গনআন্দোলন ও গন অসন্তোষ এর সামনে পিছু হটে ক্ষমতা ছাড়ার rite of passage এর অভিজ্ঞতা হয় নি।
ক্ষমতায় থাকার সময়ে জন্ম ও সংগঠনের কারনে বিএনপি’র কখনোই নিজের গনভিত্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা ছিলো না। ১৯৯১ এর বিজয়ের পরে বিএনপি যাও নিজেকে কিছুটা কতো বড়ো ‘হনু’ ভাবতে শুরু করেছিলো, সেই ভাবনা ১৯৯৬ এ তীব্র জনবিরোধিতা ও নির্বাচনে পরাজয়ে ঘাম দিয়ে ছুটে গিয়েছিলো। ২০০৬-০৭ এ ফের বিরোধিতা এবং সামরিক-তত্বাবধায়কের নির্যাতন ফের বিএনপি’র জন্যে আরেকটি rite of passage হয়েছে। জাতীয় পার্টির কথা এখানে গোণারই দরকার নেই, কথা হচ্ছে মেইনস্ট্রীম পার্টি নিয়ে।
আওয়ামী লীগ, ১৯৯৬,২০০১ এর পরাজয়, ১/১১ এর সরকারের ট্রীটমেন্ট এসবে অনেক শক পেলেও একটি rite of passage এখনো তাদের অভিজ্ঞতায় যোগ হয় নি। এটি তাদের স্পেশাল কোন কৃতিত্ব নয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার দ্বারা জনগন ও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো অপরাধ করেছিলো শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাকশাল পত্তনের মাধ্যমে। এই বাকশাল করার জন্যে শেখ মুজিবের পরিষ্কার প্রাপ্য ছিলো একটি গনবিদ্রোহে উৎখাত হওয়া এবং নিকোলাই চসেষ্কুর মতো ডিক্টেটরদের পরিনতি। কিন্তু কিছু unduly entitled সামরিক অফিসারদের হটকারীতা এবং অভাবিত নিষ্ঠুরতার কারনে ১৯৭৫ হয়ে গেলো আওয়ামী লীগের আরেকটি founding saga এর অংশ। গনরোষ ও গনবিদ্রোহের রূপ তাদের দেখা হলো না সে যাত্রা। ২০০১ এ আওয়ামী লীগ আগে থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অনেক চেষ্টা করলেও সরাসরি তত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে আঘাত করে নি। এই কৃতিত্ব তাদের দিতেই হবে। কিন্তু এর আরেকটি মাইনর ফল দাড়ায় যে আওয়ামী লীগের rite of passage ফের পিছিয়ে গেলো।
আজকের এই সময়ে আর কোন দ্বিধা নেই। অবশেষে আওয়ামী লীগের rite of passage এর সময় এসেছে। নেগোশিয়েট করে এই ritual অনুষ্ঠান এযাত্রা না হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিলো, সেটিও শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন জনতার মুখোমুখী। আশাকরি এই rite of passage এর পরে আওয়ামী লীগ এডাল্ট হয়ে একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলে পরিনত হবে।
@সফিক ভাই,
বিনীত ভাবে একটা কথা বলতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন। আমি নিজেও মন্দের ভাল হিসাবে ( আমার মনে হয়েছে যে লীগ মন্দের ভাল, আপনার যে হতেই হবে তেমন দাবী কিন্তু আমি করছি না) লীগের সমর্থক, এবং ব্যাপারটা আমারো ভাল লাগছে না যে ইলেকশনের আগেই ১৫৪ আসন পেয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে তত্বাবধায়ক না দিলে যদি বি এন পি নির্বাচনে না আসে তবে লীগ আর কি বা করতে পারে? হাইকোর্ট বাকি রায় দিয়েছে তত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে? সেক্ষেত্রে সরকারের কি করনীয় ( দয়া করে বলবে না যে কোর্ট কে সরকার প্রভাবিত করেছে, কারন আমি নিজেও মনে করি যে এটা বাংলাদেশে খুবই সম্ভব , কিন্তু আলচনা এটা নিয়ে হলে কোন সিদ্ধান্তে আমরা কেউ আসতে পারব বলে মনে হয় না)
বলতে পারেন? তত্বাবধায়ক দেবে না জানা কথা, ক্ষমতাও ছাড়বে না, বি এন পি মনে হয় না ইলেকশনেও আসবে, সেক্ষেত্রে কি অবরোধ চলতেই থাকবে বলে আপনি মনে করেন? কতদিন? আগামী বছর কি সারাবছর জুড়েই এটা চলবে? আপনি আলচনা করতে সম্মত হলে আমরা এ নিয়ে দুটা কথা বলতে পারি, সম্মত না হলে অযথাই খোঁচাখুঁচির দরকার নাই প্লিজ। ধন্যবাদ।
@দারুচিনি দ্বীপ, তত্বাবধায়ক বাতিলের পিছনে কার কতটা দোষ এটা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। এখন এই সময়ে কি করা দরকার এনিয়ে আমার মূল চিন্তাগুলো সংক্ষিপ্ত পয়েন্ট এর আকারে বলছি।
প্রথমত, এই সময়ে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমেও বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসা দেশের জন্যে ভালো হবে না। তীব্র তিক্ততায় পরিনতি খুবই খারাপ হতে পারে। আমাদের দরকার ছয় থেকে নয় মাসের একটি কুলিং ওফ পিরিয়ড যেটার শেষে একটি নির্বাচন হবে।
দ্বিতীয়ত, এই জন্যেই এখন শেখ হাসিনার সরকারকে সরে যেতে হবে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্যে। এই সরকার আওয়ামী-বিএনপি এমপি ও একজন বাইরের কেউকে প্রধানমন্ত্রী করে (রেহমান সোবহান, ফজলে আবেদ এদের মতো কোন সুশীল) কিংবা সরাসরি চিরাচরিত আর্মী ক্যু করেও হতে পারে। দ্বিতীয়তটির চেয়ে প্রথমটি পছন্দনীয়।
অন্তবর্তী সরকারের সবচেয়ে বড়ো দ্বায়িত্ব হবে একটি জরূরী কনসটিটিউশনাল কনভেনশন ডেকে দেশের সংবিধানে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা যেনো এর পরে আর কোনো রাজনৈতিক দল ৪০-৫০% ভোট পেয়ে দেশের একছত্র দন্ডমুন্ডের অধিপতি না হতে পারে। প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনকে লোহা দিয়ে বেধে ফেলতে হবে। ইলেকশন কমিশনের স্বাধীনতা (অর্থ-ক্ষমতা-নিয়োগ এই সবই) পাকা করতে হবে। কোনো নির্বাচিত পার্লামেন্ট নিজেদের ক্ষমতা খর্বকারী এই ধরনের পদক্ষেপ নেবে না। এই কাজটি অরাজনৈতিক সরকারকেই করতে হবে।
তৃতীয়ত, এই সংশোধিত সংবিধানকে একটি জাতীয় রেফারেন্ডামের মাধ্যমে র্যাটিফাইড করতে হবে। জনগনের চেয়ে বড়ো আইনী সিদ্ধ শক্তি আর কেউ নেই। পৃথিবীর অনেক সংবিধানই রেফারেন্ডামের মাধ্যমে আইনে পরিনত হয়েছে। সঠিকভাবে গৃহীত জনভোটকে চ্যালেন্জ করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
চতুর্থত:, এই নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন দেয়া হবে। এবং নতুন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে।
@সফিক ভাই,
এই কথাটা আমার খুব মনে ধরেছে। যেমন গতবারেও জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে অবস্থাকে অনেকটাই বাগে আনা গেছিল, তবে দেখেন বিশেষ লাভ কিন্তু কিছুই হয়নি, তার প্রমান এইবারের ঝামেলা আরো বড় আকারে দেখা দিয়েছে। তবে অবস্থা এরকম চলতে থাকলে মনে হয় আর্মির ক্যু ই হয়ে যাবে, অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার কাছে। আর জনতাও মনে হয় কোন যৌক্তিকতা বিচার না করে সাময়িক স্বস্তির আশায় এটাই মেনে নেবে ( যদিও আমি নিশ্চিত নই) , তবে আমার নিজের মনে হয় যে এই অস্থির অবস্থায় কিছুটা স্বস্তি আনা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে,সেটা যেভাবেই আসুক।
আসলে আমাদের দেশে এই যে ব্রুট মেজোরিটি সিস্টেমটা এটাই সব নষ্টের কারন বলে আমার মনে হয়। ব্রুট মেজোরিটির ক্ষমতা কি সব দেশেই আছে? ( সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়) সঠিক জানা নেই আমার। ইলেকশন কমিশনের ক্ষমতা অবশ্যই পাকা করা খুব জরুরী,কিন্তু দেশে যেমন তিক্ততা, সন্দেহ আর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, শেষে ইলেকশন কমিশন নিয়েও প্রশ্ন উঠে যেতে পারে না কি ( যেমন ধরেন যে একবার লীগ বলল যে এর মধ্যে বি এন পির লোকরা ঘাপটি মেরে আছে, পরের বার নি এন পি বলল এর বিপরীত কথা; তত্বাবধায়ক নিয়ে যেমন্টা ফাঁক থেকে যায় আর কি) যে ইলেকশন কমিশন আসলেই নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারছে কিনা, বা দলীয় প্রভাব মুক্ত আছে কিনা? দেখেন আমাদের দেশ আজ এমন একটা অবস্থায় এসেছে যেখানে সব যায়গাতে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায়। শিক্ষক নেয়া হচ্ছে,প্রশ্ন করা হয় যে কত জন আওয়ামী পন্থী, বা কতজন বি এন পি পন্থি, চিকিৎসক দের ক্ষেত্রেও একই কথা। অর্থাৎ দেখেন এমন কোন যায়গা বাদ নেই যেখানে দলের গন্ধ ছড়ায় না। সেখানে ৬- ৯ মাসে কি আসলেই কোন কিছু কুল ডাউন হতে পারে? যদি কুল ডাউন হয় সেটা নিঃসন্দেহে দেশ এবং জনতার জন্য সুখবর। কারন যদি গনতন্ত্রের নামে ভোট চুরি হয় ( যে কোন দল এটা করতে পারে), সেখানে এই গনতন্ত্রের অর্থ থাকে না।
জোট বদ্ধ রাজনীতি বন্ধ করাও সম্ভব না মনে হয়, সেখানে কিভাবে ৫০% ভোট ঠেকানো সম্ভব, যদি জনতা সত্যি একতরফা কাউকে ভোট দিয়ে বসে( হলই বা ঝোঁকের মাথায়!)?
আরেকটা কথা ছিল সফিক ভাই , এই দেশের জন্য কি সংসদীয় গনতন্ত্রের চেয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারটাই অপেক্ষাকৃত ভাল হত? আর বাংলাদেশ থেকে সংসদীয় গনতন্ত্রের সিস্টেম কি বদলে ফেলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব? মানে এইরকম কোন অপশন কি রাখা হয়েছে? ব্যাপারটা আমার ঠিক জানা নাই , আপনার জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। আর তাছাড়াও আপনার একটা মতামত সততার সাথেই আমি জানতে চাচ্ছি, আর তা হল আসলেই কি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার চেয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্মের কোন বেনিফিট আছে কিনা ( যেমন ধরেন যে হাসিনা বা খালেদার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কেমন সেটা হয়ত যাচাই করার সুযোগ তাহলে পাওয়া যেত?) ? আর বাংলাদেশের মত দেশ যেখানে গনতন্ত্রের চর্চা করাটা আজো কালচারে পরিনত হয়ে উঠতে পারেনি, সেখানে গনতন্ত্রের কোন ফর্মটা সুবিধাজনক বেশি হতে পারে?
খুবই সঠিক কথা, কিন্তু
এতাই একটা বড় প্রশ্ন। সত্যি কি সঠিকভাবে জনভোট গ্রহনের সুযোগ আছে এই দেশে অথবা অদুর ভবিষ্যতে তৈরি হবে? যেখানে দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে আজ হয়ত দেশের চেয়ে দল বড়, না হলে ভারতে যে আম আদমি নামের ৩য় শক্তির উত্থান হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে এটা সম্ভব হচ্ছে না কেন? মনে হয় একটা শক্তিশালী ৩য় পক্ষ কিন্তু গণতান্ত্রিক শক্তি খুব দরকার আমাদের। এরশাদকে মোটেই তেমন কেউ বলে আমার মনে হয় না, এর সর্বোচ্চ আসন প্রাপ্তি মনে হয় ৩৬টা ( যতদুর মনে পড়ে)। দেশের মানুষ হয়ত বিকল্প পাচ্ছে না বলেই এই দুই দলের চক্র বুহ্য থেকে বেরুতে পারছে না, আর তাই এই দুই দল মানুষের ঘাড়ে কাঁঠাল ভাংছে।
সম্পুর্ন একমত এই কথাটার সাথে, যদি সত্যি এমন কোন সংবিধান আমরা আনতে সক্ষম হই। ৯১ সালে প্রথমবার যে স্বৈরাচার পতনের মাধ্যমে সংসদীয় গনতন্ত্র চালু হল, কাজেই এখনও যে এমন কোন বিপ্লবের মাধ্যমে এমন কিছু করা যাবে না তা নয়, তবে এই স্বপ্নটাই বাস্তবে রূপ নেয় কিনা সেটাই ভাবার বিষয়। মনে হয় এমন কিছু করতে পারলেই দেশের এই ক্রমবর্ধ্মান উত্তেজনার অবসান হতে পারে, তবে কাজটা খুবই দুরহ!
@সফিক,
গ্রহনযোগ্য সমাধান। এতে কোন সন্দেহ নেই যে কুল অফ পিরিয়ড দরকার। বর্তমানে যে তিক্ততা সহিংস পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হলেও সহিংসতা বন্ধ হবে না, এমনকি নির্বাচনও আদৌ হয় কিনা সন্দেহ।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার রেফারেন্ডামের আগেই সংবিধানে কোন পরিবর্তন আনতে পারে কিনা তার আইনগত দিক দেখতে হবে।
স্বাধীনতা শুধু ইসির নয়, বিচার বিভাগেরও দরকার। শুধু কথার কথা কাগুজে স্বাধীনতা নয়।
গুরুত্বপূর্ন একটি দিক মনে হয় বাদ পড়ে গেছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় কোন রকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না এটা মেনে নিতে হবে। ব্যাপারে অন্তর্বর্তি সরকার সমঝোতায় আসার একটি ষ্টেপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এটাকে এড়িয়ে অন্তর্বর্তি সরকার করা যাবে না, ফলাফল হবে যেই লাউ সেই কদূই। বিরোধী দলেরও নেতা কর্মীদের নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অন্য কোন রকম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানীমূলক মামলা থাকলে সেগুলি তুলে নিতে হবে।
চুড়ান্তভাবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জনগনের সচেতনা, যুক্তি নির্ভরতা, ফেয়ারনেস… না বাড়াতে পারলে শুধু বিশুদ্ধ জনতার ভোটও আবারো সহসা অর্থহীনহয়ে দাঁড়াবে। বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকার যদি ভোট গ্রহন করার মত সততা না দেখাতে পারে যেটা আমরা সকলে মেনে নেই তাহলে বুঝতে হবে যে আমাদের গনতন্ত্র গনতন্ত্র ভাব দেখানো সেই খলিফা হারুনুর রশিদের দরিদ্র মাতা যেভাবে ক্ষুধার্থ সন্তানদের হাঁড়িতে শুধু পানি সিদ্ধ দিয়ে ঘুম পাড়ানোর মত। কোন সরকার স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারবে না অথচ স্বচ্ছ উপায়ে দেশ চালাতে পারে এটা কোনদিন সম্ভব?
ক্যাঁচাল করতে চাইলে তক্ত্বাবধয়ক নিয়েই করা যায়। কে প্রধান উপদেষ্টা হবে, পরিষদে আর কে বা কারা থাকবে এসব কি সব দলের কাছে অবশ্যই গ্রহনযোগ্য এমন করার কোন গাইড লাইন থাকতে পারে?
আদিল সাহেব,
কিছুদিন যাবৎ দেখতেই পারছেন যে , বর্তমান সরকার মার্কিন স্টেইট ডিপার্টমেন্ট ও বিলেতী ফরেন অফিসের মত লবীর থোরাই কেয়ার করে। আমার ধারণা যে, এ সরকার জামাতকে এদেশে রাজনীতি করতে দেবে না অথবা জামাতের সমর্থনে কাউকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না। জামাতকে এ সরকার বেশ গুরুত্বের সাথেই নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সাম্প্রতিক মিসরে জামাতের আদর্শিক ও আন্তর্জাতিক ভ্রাতা ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে যে রকম ক্রাকডাউন শুরু হয়েছে , সে রকম একটা রক্তাক্ত ক্রাকডাউন বাংলাদেশে শুরু হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলা যায় । কিছু কেরাণী সুশীল এবং ওয়ানাবি (wannabe) সুশীল যে রকম আশা করেন যে, স্টেইট ডিপার্টমেন্ট ও বিলেতী ফরেন অফিসের ধমকে সরকারের ডায়ারিয়া শুরু হয়ে যাবে , সে রকম কিছু তো দেখা যাচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে তিনি ফোনে অর্ডার নেন না।
ঘটনা কি ? বর্তমান সরকারের এই রকম আত্ম বিশ্বাসের উৎস সম্পর্কে আম জনতা কি ধারণা পোষণ করে বলে আপনি ধারণা করছেন ?
@সংশপ্তক,
প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটা হেব্বি হইছে … এই না হইলে শেখের বেটী ! (Y)
@সংশপ্তক,
বলা সহজ, করা কঠিন। মার্কিন বা কোন বিদেশী সরকার সরাসরি বলবে না যে তোমাদের সরকার অবৈধ, কিংবা তোমরা অমূক রাজাকারকে ছেড়ে দাও………চাপ আসবে অন্যান্য নানান দিক দিয়ে যা অর্থনৈতিক ভাবে সামাল দেওয়া বাংলাদেশের মত দেশের পক্ষে স্বল্প সময়েও সম্ভব নয়। অনেকে একে যুদ্ধপরাধী ছেড়ে দেবার চাপ হিসেবে বিবেচনা করলেও মূল চাপ সেখানে নয়, মূল চাপ আছে সব দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন করায়। এটা নিশ্চিত করা গেলে যুদ্ধপরাধী বিষয়ক চাপ কোন ব্যাপার নয়, সে চাপ সিরিয়াস কোন ইস্যু নয়।
– এটা নিশ্চিত শুভ কিছু বয়ে আনবে না। সব দলের অংশ গ্রহনে নির্বাচন ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ স্বল্প সময়ে কিছু মানসিক তৃপ্তি ছাড়া তেমন কিছু দেবে না। জামাত শিবিরের নেটওয়ার্ক এত ব্যাপক এবং সিম্প্যাথাইজার এত বেশী যে এদের পশ্চীম বংগের নকশাল দমন করার মত কায়দায় সাইজ করার চিন্তা করা বাতূলতা। আর রক্তাক্ত ক্র্যাকডাউন শুরু হলে সাধারন পাবলিকেও যে শিকার হবে না এমন নয়।
@আদিল মাহমুদ ভাই, একটা রক্তাক্ত ক্রাকডাউন বাংলাদেশে শুরু হলে আমাদের কি হবে বলতে পারেন? আওয়ামী লীগ পন করেছে যে তত্বাবধায়ক দেবে না, বি এন পি পন করেছে যে তত্বাবধায়ক না দিলে নির্বাচনে যাবে না এবং অবরোধ দিতেই থাকবে।
আচ্ছা বলতে পারেন ভাই, এই অবরোধের শেষ কোথায়? ৬ মাস, ১ বছর নাকি আরো বেশি? সত্যি কি গৃহযুদ্ধ লাগতে যাচ্ছে? লাগলে এর ফলাফল কি হতে পারে? ব্যাপক ভয়ে আছি সত্যি সত্যি।
@দারুচিনি দ্বীপ,
ব্যাপক ভয়ে আমি নিজেই আছি, আপনাকে কি বলে মিছে সান্তনা দেব? দেশের যারা আছেন তারা মনে হয় না খুব সিরিয়াসলি চিন্তিত। সকলে মনে হয় মনে করছেন যে এ জাতীয় ক্যাঁচাল ডালভাত, প্রতিবারই সরকার বদলের সময় হয়, আবার ঠিকও হয়ে যায়। বিরাট ভুল।
আমি একটাই পথ দেখি, দলমত নির্বিশেষে সকলে এল প্ল্যাটফর্মে এসে দুই দলকেই চাপ দেওয়া সমাধানে আসার জন্য। মুশকিল হল আমাদের মূল্যবোধে পার্থক্য এর বেশী যে এটাও অনেকটা আকাশ কুসূম কল্পনা। আমরা এমন এক দেশের নাগরিক যে দেশের এক বড় সংখ্যক নাগরিক মনে করে দেশের স্বাধীনতা বিরোধীতাকারি দলের তাদের ততকালীন গলাকাটা নেতাদের নের্তৃত্বেই রাজনীতি করার ক্ষমতাসীন হবার পূর্ন অধিকার থাকা উচিত। আমাদের অনেক ইউনিকনেসের মধ্যে এটাও একটি। এই দেশে এতদিন যে গৃহযুদ্ধ বাধেনি এইই তো বেশী।
@আদিল মাহমুদ,
এটা যে জাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থতা এতে কোনই সন্দেহ নেই।কিন্তু বোঝাবেন কাকে?
একেই বলে যে, হায় সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ। সত্যি আদিল ভাই, সবাই যেভাবে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে, ভাবতে কষ্ট হয়। আমরা মনে হয় বলদের চেয়েও বেশি কিছু, কারন আমরা ঠেকেও শিখতে চাই না।
@সংশপ্তক,
একমত।
@গীতা দাস,
বিদেশীদের চাপ নিয়ে জনমনে কিছু বাড়াবাড়ি ধারনা আছে।
@সংশপ্তক,
আপনার কথাশুনে তো ভাই ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল। আচ্ছা সত্যি এর শেষ কোথায় কিছু বলতে পারেন আপনি ভাই? কি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে? এমন কিছু হলে কি শুধু দলীয় লোকরাই মরবে নাকি সাধারন জনতার উপরেও গুলি চালাবে আর্মী? এটা সত্যি কথা যে বি এন পি ক্ষমতায় আসলে রাজাকারদের ছেড়ে দেবে এই সম্ভাবনাই প্রায় ৯৯% ! এদিকে একদলীয় নির্বাচনও গনতন্ত্রের কথা বলে না।
তাহলে এর পরিনতি কি? আচ্ছা বি এন পি যদি এতই জনদরদী হয় ( তাদের ভাষায়), সেক্ষেত্রে গনভবন ঘেরাও না করে এই হরতাল আর অবরোধ দিয়ে আমাদের মত সাধারন মানুষের কি উপকার করছে আমার জানা নেই। শুধু এটুকুই জানি যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসছে। সরকারো কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের কি উচিত না, হয় তত্বাবধায়ক দেয়া, অথবা এটিকে যদি আদালত অবৈধ করে, তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় আন্দোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া? কোনটাই দেখছি না, খালি অবরোধ আর খুনাখুনি।
@দারুচিনি দ্বীপ,
এই মুহূর্তে দেশ বড় রকমের নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে যা জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করা যে কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। সন্ত্রাসবাদের সাথে আপোষ করা কিংবা দরকষাকষি করার অর্থ সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা এবং রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদের কাছে জিম্মি করা।
বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র যন্ত্র বর্তমান যার ক্ষমতার ব্যাপ্তি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সঠিক ধারণা যেমন নেই , তেমনিই শুধুমাত্র সংবাদপত্র পড়ে বা শোনা কথায় একটি সন্ত্রাসী দলকে মহাপরাক্রমশালী ভাবারও কোন কারণ নেই। এই মুহূর্তে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সমগ্র বাংলাদেশের উপর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখাই অগ্রাধিকার পাবে , নির্বাচন করা নয়। এটা মনে রাখতে হবে যে , রাষ্ট্র যন্ত্র মানেই রাজনৈতিক সরকার নয়। রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশ মাত্র।
কোন রাজনৈতিক অথবা সন্ত্রাসী শক্তিই রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হতে পারে না , বাংলাদেশে তো নয়ই। কিছুদিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যে সব এলাকায় সহিংসতা ঘটবে , সে সব এলাকার সন্ত্রাসী দলের দায়িত্বশীল নেতাদের ( সভাপতি , সম্পাদক ইত্যাদি) ক্রসফায়ারে পড়তে হবে বা পটল তুলতে হবে। এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এর সুফল দেখা যাচ্ছে। যারা বিদেশে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ সহ নানাবিধ সহায়তা করছে , তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংরক্ষণ করা আছে। তারা দেশে ফেরা মাত্র যথাযথ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। এটা জোর দিয়ে বলা যায় যে , রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে বসে বলপ্রয়োগ করে অথবা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো দিবাস্বপ্ন মাত্র যা হাতে নাতেই দেখতে পারবেন।
@সংশপ্তক,
– আমি তেমন আশংকা করি না। সরকারের পতন সেভাবে ঘটবে বলে মনে করি না। ঘটবে ‘৯৬ সালের বিএনপি সরকারের পতন জাতীয় কিছু কায়দায়।
@আদিল মাহমুদ,
সরকারের পতন হবেনা । এর কারণ অন্য জায়গায় আলোচনা করবো , এখানে নয়। :))
@সংশপ্তক,
সেতো বটেই ভাই, তাই বলছিলাম কি যে যদি সরকার এখন মিলিটারী নামিয়ে এইসব সন্ত্রাবাদীদের ধোলাই করে ( যেখানে পুলিশ পারছে না, উল্টা মার খাচ্ছে!) সেটাই কি ভাল হত না? বিজিবিও নামিয়েছে, সেখানে আর্মী নয় কেন? আমি দেখেছি যে কেন জানি মানুষ মিলিটারির চেহারা দেখলেই ভয় পায়!
তাহলে তো খুবই ভাল হয়, তবে এই অবরোধের অবসান চাই। দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে এই জীবন। আগেরবার ছাত্র ছিলাম, অবরোধের সময় তাই আনন্দ লাগত। এবার অবস্থা ঠিক উলটো 🙁
আর দেখেছেন ভাই, রক্তের দোষ যায় না? কাদের কে নিয়ে পাকিস্তান দেখি খুবই চিন্তিত, দরদ উথলে উঠছে ওদের।
সাথে যুক্তরাষ্ট্রও আছে বলেই ধারনা। যুক্তরাজ্য তো ফাঁসীর বিরুদ্ধে কত কিছুই না বলল তার পাকি বংশোদ্ভূত ব্যারোনেস কে দিয়ে। ভাব দেখে মনে হয় যে বাংলাদেশ যেন তার ( ব্রিটেনের) করদ রাজ্যই আছে :-s
@দারুচিনি দ্বীপ,
মশা মারতে কামান দাগানো মোটেও বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয় এবং সেটা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য । আর্মি ছাড়াই সন্ত্রাসীদের ঠিকমত ধোলাই দেয়ার অনেক পন্হা আছে। এছাড়া রাব ও বিজিবি তে বিপুল সংখ্যক আর্মি পারসোনেল প্রেষণে কাজ করছে। এরাই যথেষ্ট। তবে হ্যা , সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করলে আর্মি নামানোয় কোন সমস্যা নেই।
:)) যুক্তরাষ্ট্র যার ‘বন্ধু’ তার শত্রুর প্রয়োজন হয় না । এরকমই এ্কজন ‘মার্কিন বন্ধু’ সিরিয়ার জেনারেল সালিম ইদ্রিস এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন – একবার তুরস্কে , একবার কাতারে। আপনাদের সওদাগরের কপালে কি লেখা আছে কে জানে? সাবেক পাকিস্তানী স্বৈরশাসক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ফিল্ড মার্শাল আইউব খান বলেছিলেন : “It may be dangerous to be America’s enemy, but to be America’s friend is fatal.” (@)
@সংশপ্তক ভাই,
ভারী অস্ত্র মানে কি, ট্যাঙ্ক বা রকেট লঞ্চার নাকি? জামাত শিবিরের কাছে তাহলে এইসব আছে, তাদের বড় ভাই তালেবানদের মত? তবে ট্যাঙ্ক মনে হয় নেই কি বলেন কারন ট্যাঙ্ক তো লুকিয়ে রাখা অসম্ভব :-s সেক্ষেত্রে রকেট লঞ্চার!!
এইগুলা হয়ত সৌদি তেলের তাকায় কেনা হয় কি বলেন! পাকিস্তান যেখানে নিজেই ভিক্ষোপজীবী ( আমেরিকার ভিক্ষা নিয়ে সামরিক শক্তি বাড়ায়), সেখানে ওরা আর জামাত কে কি দেবে। তবে সৌদি যে দিতে পারে গোপনে এ বিষয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
সত্যি তো! লাখ কথার এক কথা, এইটা তো আগে মাথায় আসে নাই 😀
@দারুচিনি দ্বীপ,
সৌদি আরব হচ্ছে সকল ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের প্রাণ ভোমরা । ওদের কিছু বলা হয় না কারণ , সেখানে আবার আমরা দাসবৃত্তির জন্য আদম পাঠানোর জন্য মুখিয়ে থাকি। দাসবৃত্তির পয়সাকে তুলে ধরা হয় বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে। এই বাংলাদেশেরই গার্মেন্টসে বেশী নয় , শুধু ন্যায্য বেতন দেয়া হলে সৌদিতে এসব আদমদের যেতে হত না। তবে , সেক্ষেত্রে সৌদিদের আবর্জনা পরিষ্কার কে করত ? :-s
@সংশপ্তক ভাই,
অতি খাঁটি কথা। পাশাপাশি আরেকটা কারনও মনে হয় আছে। ধর্মের প্রতি বর্তমানে আমাদের ফিলিংস এতই বেশি, যে আমরা সৌদির ঘামেও মেশকাতে অম্বরের সুবাস পাই। আর তাই সৌদিকে কিছু বলে কে আর মুরতাদ হতে যাবে?যদিও আজকাল অনেকেই বলে যে সৌদি নাকি সঠিক ধর্ম বোঝে না, আমার মনে হয় যে এইসব লোক নিজেরাও বোঝেনা যে আত্মপ্রতারনা করছে তারা।
সেটা ঠিক আর তাই
বাধ্য হয়ে নিজেরাই।
অফটপিকঃ – যেভাবেই হোক অন্যদেশ গুলি এগিয়ে যাবে। আর তেল শেষ হলে অন্য আরবরা কি করবে আমার জানা নেই, তবে সৌদির আছে হজ ব্যবসা।
সৌদি তেল পাবার আগে মনে হয় না সন্ত্রাস এত ছিল। আসলে মুসলিমদের দারিদ্র নয়, প্রাচুর্যই সন্ত্রাসের কারন। এখানে একটা কথা আছে, তেলের খনি বাংলাদেশ পেলে মনে হয় না আমরা সৌদিদের মত বখে যেতাম।
বরং ওরা তেল পেয়েছে আর আমাদের (উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের সুফি ভাবধারার) উদার ধর্মীয় মতবাদ কে সরিয়ে আরবীয় বর্বর ওয়াহাবি মতবাদ পাকাপাকি ভাবে আসন গেড়ে বসেছে।
@দারুচিনি দ্বীপ,
এই বিষয়ে আমি যা জানি তা হল: বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে আরব দেশের ১৮টি ইসলামি ব্যাঙ্ক বিপুল বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক মদত দেওয়া ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাঙ্কের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ(IBBL) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাঙ্ককে (SIBL)। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দু’টি ব্যাঙ্কে। সৌদি আরবের “আল রাঝি” ব্যাঙ্কও বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএল-এর ৩৭ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে আল রাঝি-র হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ(জেএমবি)-র মাথা শায়ক আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই-ও এক সময়ে পুঁজির জন্য এই ব্যাঙ্কটির উপর নির্ভরশীল ছিল। ইসলামি ব্যাঙ্কগুলো বাংলাদেশের জামাতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে বিভিন্নভাবে ঋণ প্রদান করছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কাৰ্যক্রম পরিচালনা এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এবং বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কই প্রথম কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের সন্দেহজনক কাজকর্ম লক্ষ করে। সন্দেহভাজন গ্রাহকদের লেনদেন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে তারা বেশ কিছু ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেয়। আইন ভেঙে জঙ্গি সংগঠনকে টাকা দেওয়ার জন্য এই আইবিবিএল-কে তিন-তিন বার জরিমানা করা হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় লক্ষ করেছে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইসলামি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লাজনাত আল-বির আল-ইসলাম’, যারা “আল কায়েদা”এর অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত। :guli:
লিংক: “এখানে”।
@তারিক,
ধন্যবাদ তারিক ভাই, অনেক কিছু জানলাম। তাহলে ইসলামী ব্যাঙ্ক আসলে এদের ব্যাঙ্ক? যদিও এরা সবকিছু অস্বীকার করে থাকে!
মুক্তিযোদ্ধা জালাল ভাইয়ের ঘটনাটা সত্যই রোমাঞ্চকর। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
আর হ্যা,
একদম সঠিক কথা। আজকে দেখলাম সাইফুল মিয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে –
:))
@অভিজিৎ,
সব দলের সাধারনত একটা গেইম প্ল্যান থাকে। আওয়ামী লীগ ঠিক কি পথে এগুচ্ছে আমি অনেক ভেবেও পাচ্ছি না, একমাত্র মৌলবাদী ধরনের কাল্পনিক ভারতীয় সেনাবাহিনী এসে বাঁচাবে এমন কিছু ছাড়া। কার্যকারন যাইই থাক, এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন কখনো পাবলিক সহজভাবে নেয় না।
এক দলীয় নির্বাচন করে এ দেশে সর্বোচ্চ দেশ শাসনের রেকর্ড মনে হয় এরশাদের, ২ বছরের।এখনকার আওয়ামী সরকার ২ মাসও টেকে কিনা ঘোরতর সন্দেহ আছে। আওয়ামী পতনের সাথে সাথে যে আওয়ামীপন্থী, মুক্তচিন্তার সমর্থক (অন্য কথায় নাস্তিক, মুরতাদ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়……) গোত্রের ওপর কি নেমে আসবে তা চিন্তা করতেই ভয় লাগে। ২০০১ সালে পরিস্থিতি এমন মারমূখী ছিল না, তাতেই যা নেমেছিল……আর এবার তো প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করবে পূর্ন মাত্রায়।
শতভাগ একমত! সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই কথাটি, ‘সমাধান বার করতে হবে দেশের নাগরিকদেরই’ ! আসলেই তারানকো আর সুজাতাদি’দের ফর্মূলা মেনে এই সমস্যার সমাধান করা কঠিন। পত্র-পত্রিকায় যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের জ্ঞানী সুশীল সমাজ এই সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন বটে, কিন্তু দলমতের উর্দ্ধে উঠে কি ধরনের সমাধানের কথা বিবেচনা করা উচিত তা নিয়ে তেমন কিছু বলছেন না। এর একটা কারণ হতে পারে যে এদের সিংহভাগই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ছায়া-অনুসারী ।
@মনজুর মুরশেদ,
শুনেছি ভারতের সুশীল সমাজ আমাদের মত দলকানা নয়।
আমাদের মৌলিক সমস্যাগুলি সরল থেকে জটিল এরপর সমাধান অযোগ্য জটিলতর হয়েছে শিক্ষিত সুশীল সমাজের নিস্পৃহতা, দলকানা মনোবৃত্তির কারনে। এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তেমন কোন সমাজ চিন্তা আছে বলে কোনদিন সেভাবে মনে হয়নি।
দেশের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য বিএনপি-জামাতের নেতা-কৰ্মীরা ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে আর দেশের জনগনও বিএনপি-জামাতের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চাতক পাখির মত মুখিয়ে আছে। ধুর ! এই শেখের বেটি কিছুই বুঝে না। কি দরকার ছিল ঐসব বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার(যুদ্ধাপরাধী) এর বিচার-টিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করার ? শেখের বেটির কাছে আবেদন দ্রুত বিএনপি-জামাতের সাথে সমঝোতা করুন আর কসাই মোল্লাকে ঝুলাইয়া এমনেই অনেক বড় অপরাধ করেছেন বাকি রাজবন্দীদের স্বসম্মানে মুক্তির ব্যবস্থা করুন।
গনতন্ত্র মুক্তি পাক। 😉 :))
@মাটিবাবা,
আপনার নিক টা বেশ ইন্টারেষ্টিং, কেমন চেনা চেনা লাগে।
রাতের আকাশে ফাইটারের ফাইট তেমন কিছু দেখিনি। রাতে ডগফাইট বেইল-আউট কিচ্ছু দেখা সম্ভব ছিলো না। মিত্র পক্ষের ফাইটার , বিজয়্ঘুড়ি যা দেখেছি; সব দেখেছি দিনের বেলাতেই।
বিজয়ের মাসে পাইকারী হতাশার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। কিছু আশার কথাও শোনান 🙂
@কাজী রহমান,
আশার কথা কি শোনাবো বলেন? নিজেই আশাবাদী কথাবার্তার খোঁজ করে যাচ্ছি।
আমার তখন জন্ম হয়নি, ডগ ফাইটের গল্প সবই পরিবারের কাছে শোনা। শুনেছি তখন সন্ধ্যার পর থেকেই কড়া ব্ল্যাক আউটের নির্দেশ থাকতো। বাসার সব বাতি নিভিয়ে ফেলতে হত, জানালার কাঁচ মোটা কালো কাগজে ঢেকে রাখতে হত। কারো বাসায় বাতি জ্বলতে দেখা গেলে গুলি করা হত। বিমান আক্রমনের সাইরেন শুনলে সকলকে বাড়ির করিডোরে আশ্রয় নিতে হত আমাদের বাসায় এক ডগ ফাইটের এক স্যুভেনীরও আছে। এক সন্ধ্যায় একটি এন্টি-এয়ারক্র্যাফটের গোলার সামনের অংশ আকাশ থেকে আমাদের বাসার গ্রীল ভেদ করে বাসায় ঢুকে পড়ে। ইঞ্চি তিনেক লম্বা আর ২ ইঞ্চি মত ডায়া, তারই ওজন হবে কেজি খানেক।
@আদিল মাহমুদ,
ডিসেম্বরের ৩ আর ৪ তারিখের দিকে রাতের আতঙ্ক ছিল, কিন্তু তখন থেকেই দিনভর বিজয় উল্লাস লেগে গিয়েছিল। সবার মাঝেই খবর, আশা আর আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছিল। দিনভর ছাদে ছাদে আর বড় মাঠ্গুলিতে উদ্বাহু উল্লাস নৃত্য হয়েছে। কেউ কেউ মারা গিয়েছে উল্লাস করতে গিয়ে। সে সময়টাতে পাকি আর তাদের দোসররা তাদের বুঝে গিয়েছিলো তাদের দিন শেষ। বিজয় উল্লাস শুরু হয়েছিলো ডিসেম্বরের ৪/৫ থেকেই। কিন্তু এসবের ভেতর দিয়েই আলবদর রাজাকাররা চালায় বুদ্ধিজীবী হত্যার মত নৃসংশতা। কিছু পাকি তাদের নিজের বাড়িতেই আটকে পড়ে। সেখান থেকেই পুরো পরিবার তাদের ঘরে রাখা অস্ত্র মজুত থেকে উল্লাস করা মানুষদের ওপর গুলি ছুড়েছে শেষদিকে। নারিন্দার এমন একটা ঘটনার সময় সেখানে ছিলাম আমি।
ফাইটারগুলো ডগফাইট, বোমা ফেলা ছাড়াও কটকট ফড়ফড় নানান শব্দ করে ছুঁড়তো বিশেষ মেশিনগানের গুলি। ১৪ই ডিসেম্বর সেইরকম গুলি খাওয়া দুজনের কথা বলেছি আমি বিজয়্ঘুড়ি লেখাটায়। আপনারদের নিদর্শনটি ওগুলোর একটা, এন্টি এয়ারক্রাফটের গুলির ডগা মনে হচ্ছে। ১৬ তারিখের পর পর এগুলো, গুলির খোল, বিভিন্ন রকম তাজা বুলেট, বেয়নেট ইত্যাদি খুবই সহজলভ্য ছিল। সিগেরেটের খালি প্যাকেট বা রঙিন মার্বেলের মতই মহামূল্যবান সংগ্রহ সম্পদ ছিলো সেসব দুরন্ত্ব কিশোরদের।
@কাজী রহমান,
এলিফ্যান্ট রোডে তখন কিছু বড় ব্যাবসায়ী ছিল পশ্চীমা। শুনেছি এদের বাসা থেকে মাঝে মাঝে শেষ দিকে পাবলিকের ওপর গুলি করা হত, কোন এক বড় ব্যাবসায়ী পালিয়ে যাবার সময় পাগলের মত গুলি করতে করতে বেরিয়েছিল।
এলিফ্যান্ট রোডের কিছু বড় দোকানে উর্দূভাষী কিছু মালিক ৯০ দশকের গোড়ার দিকেও দেখেছি।
আমাদের বাসায় ঢোকা এন্টি-এয়ারক্র্যাফটের গোলাটি শুনেছিলাম রুমের দুই দেওয়ালে বাড়ি খেয়েছিল বার দুয়েক, এরপর আধা ঘন্টা খানেক ধরা যায়নি এতই গরম ছিল।
আদিল, খুবই দারুন। পুরো লেখায় একটি লাইনের সাথে দ্বিমত করার সুযোগ পেলাম না। নিজেকে কেমন একটু ব্যর্থ-ব্যর্থ লাগছে।
@সফিক ভাই,
আর আমরা সুযোগ পেলাম না, আপনার মন্তব্যটির সাথে দ্বিমত করার!! সুযোগ কিন্তু কম খুঁজিনি!
তবে সুযোগের অভাবে আমরা কিন্তু কষ্ট পাইনি, বরং কেমন ‘আনন্দ’ ‘আনন্দ’ লাগছে!