আমার বাড়ীতে যাইওরে বন্ধু খালে হাঁটু পানি
ভিজা চুলে মুছ্যা দিবাম তোমার পা দুখানি
‘আহা কি মধুর! কি সুন্দর! থামিও না বালক গাও।’
– এই আবেগমথিত আহবান আর কারো নয়, প্রায় সোয়াশ বছর আগে ময়মনসিংহের কেন্দুয়ায় জন্ম নেয়া জনৈক চন্দ্রকুমার দে’র। চন্দ্রকুমারের আশংকা, বালকটি হয়ত পরের লাইনগুলি বলতে পারবে না, থিয়েটার যে সবকিছু গ্রাস করে নিচ্ছে! চন্দ্রকুমারের কণ্ঠে আর্তি ঝরে পড়ে:
দশ বৎসর আগে যাহা ছিল- তাহাও আর নাই। যা আছে, তাও বুঝি থাকিবে না।
চন্দ্রকুমারের যুগে তবু আংশিক/আধলা গান শোনা যেত। কিন্তু আজ? আপনি যদি লোকসংগীত-প্রেমী হন আর গান শোনার আশায় আজই ময়মনসিংহের মাঠ-ঘাট চষে ফিরেন, কোন বালকের মুখে এমনকি প্রথম লাইন দু’টিও শুনতে পাবেন? এখন গান গাওয়া তো রীতিমত অন্যায়, বেআইনি, বেশরীয়তি। তবু যদি সৌভাগ্যবশত কোন গান শুনেই ফেলেন, খুব বেশী আহ্লাদিত হতে পারবেন না, এটা নিশ্চিত, কারণ আপনার কর্ণ ভেদ করে ঢুকে যেতে পারে হাল আমলের জনপ্রিয় কোন হিন্দি গানের তীক্ষ্ণ ফলা।
এক সময় গ্রাম-বাংলার ঘাটে-মাঠে-হাটে কান পাতলেই শোন যেত সুর। কৃষক ছেলের কণ্ঠে থাকত পালাগান:
জলভর সুন্দরী কন্যা জলে দিছ ঢেউ
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।/
লজ্জা নাই নির্লজ্জ ঠাকুর লজ্জা নাইরে তর
গলায় কলসী বান্ধ্যা জলে ডুইবা মর
কোথায় পাব কলসী কন্যা, কোথায় পাব দড়ি
তুমি হও গয়িন গঙ্গা, আমি ডুব্যা মরি। (ময়মনসিংহ গীতিকা, মহুয়া)
বা,
তারা হইল নিমি ঝিমিরে রাত্র নিশিকালে
ঝম্প দিয়া পড়ে কন্যা সেই না নদীর জলে (ধোপার পাট)
বা,
আমার বাড়ী যাইওরে বন্ধু অমনি বরাবর
নল খাগরার বেড়া আছে দক্ষিণ দুয়ারিয়া ঘর
আমার বাড়ী যাইওরে বন্ধু বইতে দিব মোড়া
জল পানি করিতে দিবাম সাইল ধানের চিড়া
কিন্তু কি মূল্য আছে এই পালার? কি দরকার ছেলেটির এমনতরো গান গাওয়ার? এর চেয়ে বরং মায়ের সুবোধ ছেলের মত সাংসারিক কাজগুলি করলেই হয় না? তা হয়ত হয়, কিন্তু তাতে পৃথিবীটা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে যে! বিশাল জলাধার পরিণত হয় বদ্ধ ডোবায়। প্রানভরে নিঃশ্বাস নেয়ার আর কোন জায়গাই থাকে না! ভাগ্যিস, কেউ কেউ মা-বাবার সুবোধ ছেলে হয়ে থাকতে চায় না, বরং অন্তরের আহবানে সাড়া দিয়ে বাঁশি হাতে ছুটি বেড়ায় বনে-জলে, দিক-দিগন্তে, আর তার ফলেই আমরা পেয়ে যাই অমর সব সংগীত, যাতে চন্দ্রকুমারের কথায়:
পিতামাতার সাংসারিক আনন্দ না বাড়ুক, পথের দু’একজন পথিক সে বাঁশী শুনিয়া ভয় সন্তাপ এড়াইতে চায়। বনের পশু পক্ষী সে গান শুনিয়া মুগ্ধ হয়। অকেজো উন্মাদ ছেলে সংসারের কাজে না লাগুক, বিশ্বকে এমনি এক অপার্থিব পরমার্থ শান্তি দান করিয়া যায়।
কিন্তু কে এই চন্দ্রকুমার? পল্লীর গাথাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কেন তার এই হৃদয় নিংড়ানো আকুতি?
বাংলা ১৩৪৬ সনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীনেশচন্দ্র সেনকে এক পত্রে লেখেন:
বাংলা প্রাচীন মঙ্গলকাব্য প্রভৃতি কাব্যগুলি ধনীদের ফরমাসে ও খরচে খনন করা পুষ্করিণী; কিন্তু ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ বাংলা পল্লী হৃদয়ের গভীর স্তর থেকে থেকে স্বতঃউচ্ছসিত উৎস, অকৃত্রিম বেদনার স্বচ্ছধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্মবিস্মৃত রসসৃষ্টি আর হয় নি। এই আবিষ্কৃতির জন্য আপনি ধন্য।
এদিকে বাংলা ১৩৩৬ সনে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত ‘সারস্বত সাহিত্য সম্মিলনে’ চন্দ্রকুমার দে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন, যার উপসংহারে তিনি বলেন:
আমি ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক। আমি হীন নহি-উপেক্ষিত নহি-ইহার চাইতে গর্ব গৌরব করিবার জিনিস আমার কিছুই নাই। আমার ময়মনসিংহ আজ সমগ্র জগতের মধ্যে তাহার সন্মানের আসন বাছিয়া লইয়াছে।
হ্যাঁ, চন্দ্রকুমার আর কেউ নন, জগৎবিখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক’। বিনয়ী চন্দ্রকুমার যদিও নিজেকে উপেক্ষিত ভাবেননি, বাঙালি পাঠককুলে তার মত উপেক্ষিত নায়ক কিন্তু আর একজনও আসেনি। বিশ্বকবি যেভাবে জানেন, ঠিক তেমনিভাবেই বাঙালি পাঠককুলের কাছে ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ মানেই দীনেশচন্দ্র। এখানে চন্দ্রকুমারের কোন স্থানই নেই, অনেক অনেক আগেই তার অর্ধচন্দ্র সম্পন্ন হয়েছে!
চন্দ্রকুমার দে কতটা উপেক্ষিত, তার একটি প্রমাণ হল, উনবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু তারিখটি নিয়ে এখন পর্যন্ত সাহিত্য বোদ্ধারা নিঃসন্দেহ হতে পারেননি। যখন চন্দ্রের ব্রাকেটে লেখা হয় (১৮৮১-১৯৪৫), তখন তা অনেক সংশয় ও কিন্তুর সঙ্গে আপোষ করেই লেখা হয়। এই উপেক্ষিত চন্দ্রের জীবনটাও ছিল দুঃখে ভরা। খুব অল্প বয়সেই চন্দ্র মাতৃহারা হন। কৈশোরে গ্রামের জমিদার তার পিতার সহায় সম্পত্তি চোখের সামনে কেড়ে নিলে পিতা রামকুমার অচিরেই শোকে দুঃখে পৃথিবীর মায়া কাটান। এরপর পেট বাঁচাতে চন্দ্র নিজ গ্রামের মুদি দোকানে ১ টাকা বেতনের চাকুরী নেয়। কিন্তু ভাবুক ও সাংসারিক বিষয়াদি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ চন্দ্রকে কিছুদিনের মধ্যেই ঐ দোকান থেকে অর্ধচন্দ্র পেতে হয়। এরপর হতভাগা চন্দ্রকুমার কলেরায় আক্রান্ত হন। পরিত্রাণের আশায় হাতুড়ে চিকিৎসকের ঔষধ গিলেছিলেন। এতে সুস্থ তো হলেনই না, উপরন্তু মানসিক বৈকল্য দেখা দিল, যা প্রায় দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই চরম দুর্দিনে এক গ্রাম্য জমিদার তাকে মাসিক ২ টাকা বেতনে তহশীল আদায়ের চাকুরী দেন। এই চাকুরীটিই চন্দ্রের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তহসীল আদায় করতে চন্দ্রকে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরতে হত। ঐ সময়ই তিনি কৃষকদের কণ্ঠে শুনতে পান অপূর্ব সব পল্লী গাথা ও উপাখ্যান। গানগুলো চন্দ্রকে এতই মোহিত করে যে, শুনে শুনেই তা খাতায় লিখে রাখতেন। এক সময় চন্দ্রকুমার এই পল্লী গাঁথাগুলোর সৌন্দর্যের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রবল তাগিদ অনুভব করেন। আর সেই কারণেই বিখ্যাত সৌরভ পত্রিকায় এগুলোর উপর লেখা পাঠাতে আরম্ভ করেন।
অল্প শিক্ষিত চন্দ্রকুমার এমনকি ‘আমি’ বানানটি ঠিকমত লিখতে পারতেন না। ভুল করে লিখতেন ‘আমী’। ‘কৃত্তিবাস’কে লিখতেন ‘কীর্তিবাস’। কিন্তু চন্দ্রকুমারের বিরল সাহিত্য-মনন , প্রতিভা ও লেখক সত্তা ‘সৌরভ’ সম্পাদক কেদারনাথের দৃষ্টি এড়ায়নি। এমনকি চন্দ্রকুমার নামক মুক্তোটি বেশিদিন দীনেশচন্দ্রেরও অনাবিস্কৃত থাকেনি। মনীষী ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্রকুমারকে মাসিক ৭০ টাকা বেতনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পালাগান সংগ্রহের জন্য নিয়োগ দান করেন।
এরপর শুরু হয়ে যায় চন্দ্রকুমারের গ্রাম-বাংলার আনাচ -কানাচ থেকে হারানো মানিক খুঁজে বের করার অমানুষিক সংগ্রাম। কেমন ছিল এই সংগ্রাম? চন্দ্রের ভাষায়:
এই সংসার চিন্তা বিব্রত পথিক দুঃখ দারিদ্র্যের বোঝা ঘাড়ে ফেলিয়া যখন পাগলা বন হরিণের মত বাঁশীসুরে উধাও হইয়া ছুটিয়াছিল, পাড়াগায়ের এক হাটু কাঁদা ভাঙ্গিয়া মেঘে ভিজিয়া রৌদ্রে পুড়িয়া কৃষকের গোয়াল ঘরের সাঁঝালের ধারে বসিয়া এই কৃষক গীতি সংগ্রহ করিয়াছে, তখন তাহাকে লোকে ক্ষ্যাপা বলিয়া উপহাস করিতে ছাড়ে নাই।
অপরিসীম ভালবাসা না থাকলে, আত্মত্যাগ না থাকলে কারো পক্ষে সম্ভব এমন সাধকের রূপ পরিগ্রহ করা? একবার চন্দ্রকুমার কবি রামকান্ত রায়ের প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন কবির লিখিত ‘মনসা ভাসান’ সংগ্রহের জন্য। রামকান্তের বংশধরের কাছে বইটির কথা বলতেই সে চন্দ্রকে ভুল বুঝে, মনে করে যে, ছল-চাতুরী করে চন্দ্রকুমার তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান একটি জিনিস হাতিয়ে নেয়ার মতলব করছে। অথচ ঐ বংশধরের গৃহে কীট ছাড়া আর কারো কাছেই বইটির ন্যূনতম কোন মর্যাদা বা মূল্য ছিল না। তবু যখন রামকান্তের বংশধর বইটি দিতে রাজী হচ্ছিল না, চন্দ্র অনেকটা মরিয়া হয়েই চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চুরিবিদ্যায় সম্পূর্ণই অনভিজ্ঞ চন্দ্র শেষ পর্যন্ত সফল না হওয়াতে কীটের উদরেই বইটির চূড়ান্ত সমাধি ঘটে। এভাবে যে কত অমূল্য সাহিত্য-সম্পদ কীটের গর্ভে বিলীন হয়েছে, তার কোন হিসেব আছে আমাদের কাছে? না, থাকা সম্ভব? কিন্তু চন্দ্রকুমারের মত কেউ কেউ ছিলেন বলেই অন্তত কিছু মনি-মুক্তো আমরা বের করে আনতে পেরেছি। কিন্তু কি সন্মান দিয়েছি সেই বিরল মুক্তো সংগ্রাহককে?
চন্দ্রকুমারের স্ব-গ্রামবাসী ভূপেন্দ্র মজুমদার আক্ষেপ করে লিখেছেন:
চন্দ্রকুমার সম্বন্ধে ডঃ দীনেশ সেন তাঁর ময়মনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় যে-পরিচয় দিয়েছেন, তাতে তার আসল পরিচয়টাই অজ্ঞাত রয়ে গেছে। …যার একক কীর্তি সমস্ত বঙ্গ সাহিত্যে এক উচ্চ স্থানের দাবী করছে- তাকে আমরা কতখানি মূল্য দিয়েছি?
হ্যাঁ, দীনেশচন্দ্র সেন তার জগদ্বিখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’য় তথ্যদাতা হিসেবে চন্দ্রকুমারের পরিচয় সন্নিবেশ করেছেন, তাকে বিনে পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, অনাথ ও চিররুগ্ন চন্দ্রকুমার যখন স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন দীনেশচন্দ্র তাকে চাকুরী-থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চন্দ্র সংগ্রাহকই রয়ে গেছেন, হতে পারেননি নায়ক। চন্দ্রকুমার বিনয়ের আতিশয্যে বলেন:
দীনেশচন্দ্র আমার সংগৃহীত ভাঙ্গা ইটে আজ বঙ্গ ভাষার বিচিত্র তাজমহল গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, আমি তাহার মজুর মাত্র। তিনি এ বিরাট যজ্ঞভূমির অধিনায়ক হোতা। আমি শুধু সমিধ কাস্ট বহন করিয়াছি মাত্র।
আসলেই ময়মনসিংহ গীতিকা এক তাজমহল, যার রসে বুঁদ হয়ে থাকেন রোমান রোঁলা, জুলে ব্লক, সিলভান লেভি, গ্রীয়ারসন প্রভৃতি জগৎ প্রসিদ্ধ পণ্ডিতগণ। কিন্তু এই তাজমহল গড়ার নায়করূপে যুগে যুগে স্বরিত-পূজিত হন দীনেশচন্দ্র সেনই, দীনেশচন্দ্রের আলোয় জ্বল জ্বল করে বিশ্বসভায় দ্যুতি ছড়িয়ে যায় ময়মনসিংহ গীতিকা, অনেকটা সম্রাট সাজাহানের তাজমহলের মত করেই। এদিকে আড়ালে-আবডালে, লোকচক্ষুর একেবারে অন্তরালে থেকে যান তাজমহলের আসল কারিগর হতভাগা চন্দ্রকুমারেরা।
কিন্তু এভাবে নকল চন্দ্রের আলোয় বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না বাংলার লোকজ তাজমহল, সঠিক আলো-হাওয়া আর পরিচর্যার অভাবে তার ধসে পড়ার দিন হয় আবার সমাগত। যে আসল চন্দ্রের আলো আমাদের লোকজ তাজমহলটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছিল বড্ড প্রয়োজনীয়, তাকে যে আমরাই নিভে যেতে দিয়েছি, হারিয়ে যেতে দিয়েছি বিস্মৃতির অতলে !
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ
১. চন্দ্রকুমার দে, অগ্রন্থিত রচনা
– বাংলা একাডেমি, ঢাকা
২. চন্দ্রকান্তি এক কবি চন্দ্রাবতী
– ফরিদ আহমেদ
@কাজি মামুন,
মুক্তমনায় এ রকম নোট খুব বেশী লেখা হয়নি। আমাদের নিজস্ব শেকড়টুকু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
@বিপ্লব ভাই,
সম্ভবত এই অধমের কোন পোস্টে আপনার প্রথম মন্তব্য।
আপনার উৎসাহ ভাল লেখার জন্য প্রত্যয় যোগাবে।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, বিপ্লব ভাই।
ইতিহাসের পাতায় চন্দ্রকুমারের ভূমিকা সম্পর্কে এতো বিস্তারিত আইডিয়া ছিল না।আপনার লেখা পড়ে জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
@আমি কোন অভ্যাগত নই,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য! আপনার জন্য (C)
একঃ
দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ-গীতিকার দীর্ঘ একটা ভূমিকা লিখেছেন। এই ভূমিকার প্রথম লাইনটাই এরকমঃ
এরপর তিনি গাথা সংগ্রহে চন্দ্রকুমার দের ভুমিকা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, তাঁর কাজের উচ্চ মূল্যায়ন করেছে, উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন লোকগাথার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা এবং সেগুলো সংগ্রহের অসীম ত্যাগ তিতিক্ষা এবং পরিশ্রমের। তিনি লিখেছেনঃ
দুইঃ
মৈমনসিংহ-গীতিকার কথা মোটামুটি প্রায় সব শিক্ষিত বাঙালিই জানে, চন্দ্রকুমার দের কথাও কেউ কেউ জানে। কিন্তু মোমেনশাহী গীতিকার কথা খুব কম লোকেই জানে। এই গাথাগুলো প্রকাশ করেছে বাঙলা একাডেমী ১৯৬০ সালে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত মৈমনসিংহ-গীতিকার সাথে পার্থক্য করার জন্য এর নামকরণ করা হয় মোমেনশাহী গীতিকা। এর প্রথম পর্বে যে সমস্ত পালাগান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার একটিও মৈমনসিংহ-গীতিকায় নেই। এই গীতিকার সবগুলো পালাগানই সংগ্রহ করেছেন মোহাম্মদ সাইদুর নামের এক ভদ্রলোক। তিনি বাঙলা একাডেমীর একজন বেতনভুক্ত পালাগান সংগ্রাহক ছিলেন। কিশোরগঞ্জে বাড়ি তাঁর। এই নব্য চন্দ্রকুমারকেও কেউ চিনে না।
তিনঃ
অসাধারণ লেখা হয়েছে মামুন। এক সময়কার অনভিজ্ঞ মামুন যে দিনে দিনে পরিণত হচ্ছে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। এরকম আরো লেখা চাই তোমার কাছ থেকে। (Y)
চারঃ
বাংলা একাডেমী প্রকাশিত চন্দ্রকুমার দে, অগ্রন্থিত রচনা বইটা পড়ার অপরিমেয় আগ্রহ অনুভব করছি। বইটার একটা কপি কোনোভাবে কি আমাকে মেইল করা যায় মামুন। বই এর অভাবে কিছু না পড়ে পড়ে এই প্রবাসে যে পরম একটা মূর্খ হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন। 🙁
@ফরিদ ভাই,
আপনি ভাল করেই জানেন, এই লেখার মূল অনুপ্রেরণা আপনি। আপনি না বললে, এই বিষয় নিয়ে লেখার চিন্তা আমার মস্তিষ্কে কস্মিনকালেও আসত না।
চন্দ্রকুমার নামটি আপনার লেখা থেকেই জানি। কেন জানি না, ঐ লেখাটি পড়ে চন্দ্রকুমারের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধা জন্মে যায়। আপনার লেখাটির নায়িকা ছিল চন্দ্রাবতী, কিন্তু সেই চন্দ্রাবতীর সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার আমার কাছে বনে যায় আপনার লেখাটির নায়ক!
আমি ফি বছরই বাংলা একাডেমীর স্টল থেকে পুস্তক ক্রয় করে থাকি। ৫০% কমিশন আমার অনেকটা গুঁতো মেরেই ঢুকিয়ে দেয় বাংলা একাডেমীর স্টলটিতে। কিন্তু এবারই ‘চন্দ্রকুমার দে, অগ্রস্থিত রচনা’ এর দুটি আলাদা খন্ড চোখে পড়ে যায়। আগে কখনই পড়েনি। বেশ মোটা খণ্ড দুটোর দাম কত জানেন, ফরিদ ভাই? মাত্র একশ টাকা। আমি তাৎক্ষনিকভাবে কিনে নেই, পাছে স্টক ফুরিয়ে যায়! কিন্তু আশ্চর্য হল, পরে আরও অনেকবার গেছি বাংলা একাডেমীর ৫০% স্টলটিতে। কিন্তু চন্দ্রকুমারের বই তখনও ছিল থরে থরে সাজানো। এত সস্তায় এত অমূল্য বই দুটি সংগ্রহের কেউ আগ্রহ দেখায়নি! আর আজ আপনি সাত সমুদ্র ওপার হতে এই বইটির জন্য আগ্রহ বোধ করছেন।
আমি নিশ্চিত, চন্দ্রকুমারের অগ্রস্থিত রচনাগুলো বাংলা একাডেমীর স্টলে এখনও পড়ে আছে, তবে আগের মত সুন্দর অবস্থায় নেই, আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে কীটের পেটে।
একটা কথা, ফরিদ ভাই, হয়ত এই লেখার শিরোনাম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, কিন্তু দীনেশচন্দ্রকে আক্রমণ করা বা খলনায়ক বানানো এই পোস্টের লক্ষ্য ছিল না। এই পোস্টে একজন ভুলে যাওয়া নায়ককে স্মরণ করা হয়েছে মাত্র। আশা করি, আপনি ভুল বুঝবেন না, ফরিদ ভাই।
এখন পর্যন্ত আমি যতটুকুই লিখছি, তা আপনাদের কারণেই সম্ভবপর হয়েছে। সামনে লোকসাহিত্য নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে আছে।
মোমেনশাহী গীতিকার সাথে পরিচয় করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ, ফরিদ ভাই। সামনের বইমেলায় হয়ত আমার চোখে ও অন্তরালে মন খুঁজতে থাকবে মোহাম্মদ সাইদুর নামে আরেকজন হতভাগা নায়ককে।
@কাজি মামুন,
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোমেনশাহী গীতিকার সম্পাদক ছিলেন বদিউজজামান। তিনি একটা বিশাল ভূমিকা লিখেছিলেন। সেই ভূমিকার এক অংশে মোহাম্মদ সাইদুর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তিনি। সেখান থেকে অংশ বিশেষ তুলে দিলাম।
মোমেনশাহী গীতিকার সংগ্রাহক
মোমেনশাহী গীতিকার পালাগানগুলো লৌকিক জনমানসের নিকট থেকে সংগ্রহ করেছেন বাংলা একাডেমীর নিয়োজিত লোকসাহিত্য সংগ্রাহক জনাব মোহাম্মদ সাইদুর। জনাব সাইদুর বংশ পরম্পরায় মোমেনশাহীর অধিবাসী, Season Bird বা অভ্যস্ত পাখীর মতো মোমেনশাহীর হাওর, অরণ্য, গড়, সেখানকার সকল শ্রেণির অধিবাসী ইত্যাদি তাঁর সুশৃঙ্খল অভ্যাসের আয়তনে এসে গেছে। মোমেনশাহী জেলা তাঁর কাছে এত পরিচিত যে এখানকার বিশেষ করে পূর্ব মোমেনশাহীর যে কোনো স্থানের পথ-ঘাট ইত্যাদির কথা তিনি প্রায় অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে বলে দিতে পারেন। লোক সাহিত্য এখন তাঁর নেশা ও পেশা। লোকসাহিত্য সম্পর্কে তাঁর ধারণাও বেশ স্বচ্ছ। কেবল মোমেনশাহী নয়, পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য জেলার লোকসাহিত্য, লোক গায়েন, লোক আচার অনুষ্ঠান, জনশ্রুতি বা কিংবদন্তীমূলক স্থান ইত্যাদি সম্বন্ধেও তিনি মূল্যবান অনুসন্ধান দিতে পারেন।
সাইদুরের বাড়ী মোমেনশাহী জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার বিন্নগাঁও গ্রামে। ১৯৪০ সালের ২৯ শে জানুয়ারী বিন্নগাঁও গ্রামের একটি গৃহস্থ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। কিশোরগঞ্জ আজিমউদ্দীন হাই স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেছেন।
লোক সাহিত্যের প্রতি সাইদুরের বেশ একটি নেশা ছিল। সেজন্য স্কুলের বাংলা ক্লাসে মোমেনশাহী, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের লোকসাহিত্য, মহুয়া, মদিনা, চন্দ্রাবতীর কথা জেনে সে সম্পর্কে তাঁর বিশেষ কৌতুহল জাগে। ফলতঃ স্কুল পরিত্যাগ করে সাইদুর মোমেনশাহী, সিলেট, কুষ্টিয়া, রংপুর ইত্যাদি জেলার জনপদে, পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতে থাকেন মহুয়া, দেওয়ানা মদিনা, মলুয়া, দেওয়ান ঈশা খাঁ মসনদ আলী পালাগানে উল্লেখিত স্থানের অনুসন্ধান করেন। সাইদুর কেবল স্কুলই পালান নি, ঘরও পালিয়েছিলেন দীর্ঘকাল। এভাবে বিচিত্র মানুষের সঙ্গে মিশেছেন এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের জনৈক অধ্যাপকের অনুপ্রেরণায় সাইদুর প্রথম লোকসাহিত্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। অনেক পীর-ফকিরের আস্তানায় তাঁকে যেতে হয়েছে, অনেক মানুষের সঙ্গে তাঁর প্রায় আত্মীয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে ।এভাবে কিছু কিছু লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে কখনো কখনো তিনি ঢাকায় এসেছেন এবং বিভিন্ন মনীষীদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
গুরুজনদের প্রচেষ্টায় এই সময়ের মধ্যে তাঁকে একবার এক কেমিক্যাল কোম্পানীতে চাকরি নিতে হয়েছিল। কিন্তু এ চাকরি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় নি। কেমিক্যাল কোম্পানীর এ চাকরি ছেড়ে সাইদুর আবার লোকসাহিত্য জগতে ফিরে এসেছেন। এরপর বাংলা একাডেমীতে লোকসাহিত্য সংগ্রহ পাঠাতে শুরু করেন। একদা অত্যন্ত আশাতীতভাবে বাংলা একাডেমী থেকে লোকসাহিত্যের পারিশ্রমিক স্বরূপ কিছু টাকার মনিঅর্ডার পান। লোকসাহিত্য সংগ্রহের জন্য কষ্ট, অবমাননা ও লাঞ্ছনা ছাড়া আবার টাকাও পাওয়া যায় এটা তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা। তখন থেকে নিয়মিতভাবে লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে তিনি বাংলা একাডেমিতে পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর, ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমীতে বেতনভোগী লোকসাহিত্য সংগ্রাহক পদের জন্য ইন্টারভিউ দেন এবং অগাস্ট মাসে একাডেমীতে উক্তপদে যোগদান করেন।
@ফরিদ ভাই,
কি বলে যে ধন্যবাদ দেব আপনাকে! একের পর এক অসাধারণ সব মন্তব্যে ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন পোস্টটিকে। ক্ষেত্র-বিশেষে মূল পোস্টকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে! মোমেনশাহীর পরিচিতিমূলক কথাগুলো এই পোস্টকে অসাধারণ করে তুলেছে। আশা করি, আমার মত আরও অনেকে মোমেনশাহীর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
খুবই স্বাভাবিক! যার হৃদয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্রের বিপুল জলরাশি, সে কি করে কাজ করবে কেমিক্যাল কোম্পানিতে?
এরাই সত্যিকারের মানুষ! সত্যিকারের হীরের সন্ধান এরাই পেয়েছে জীবনে। তাই অবর্ণনীয় কষ্ট করে যেতে পারেন, অবলীলায়। যা খ্যাতির মোহে থাকা আমাদের মত স্বার্থপর মানুষদের বোধগম্যতারও বাইরে।
চন্দ্রকুমার এর উপর অসাধারণ এই ছোট্ট লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা ভাষার এক অমূল্য সম্পদ। সত্যি বলতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এবং রস হৃদয়ঙ্গম করতে আমাদের এখনো বাকি রয়েছে। আর সেই সমৃদ্ধির অন্যতম কারিগর চন্দ্রকুমারকে প্রনাম।
@রুদ্রাভ,
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভীষনভাবে একমত। যারাই বাংলার লোকসাহিত্য পড়তে শুরু করবে, তারাই উপলব্ধি করবে বিষয়টা। এ এমনই রস, দিনমান ভুলে যার মধ্যে আকন্ঠ ডুবে থাকা যায়!
যারা এই রস আস্বাদন থেকে যারা এখনো বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন, তারা নিশ্চিত হতভাগাদের দলে। সুতরাং, সময় নস্ট না করে আসুন, নেমে যাই ব্রহ্মপুত্রের তীরে, ভাসি তার বিপুল তরঙ্গে, ছন্দে-আনন্দে।
-চন্দ্রকুমার
চমৎকার উপস্থাপনা।
ভালো কাজ হয়েছে (C)
@কাজী রহমান ভাই,
চন্দ্রের অসাধারণ উক্তিটুকু কোট করার জন্য ধন্যবাদ। চন্দ্রকে খুব করে চিনতে সাহায্য করে এই অমৃতসম কোটগুলি। মূল বইটিতে যার রয়েছে ছড়াছড়ি।
উৎসাহদানের জন্য আপনাকে (B) (D) (^) (C)
@কাজি মামুন,
হা হা হা এইবার কেই কিছু বলবার আগেই ঠান্ডা গরম টক মিষ্টি সবই লোপাট করে দিলাম। ঝাল নেই যে? :))
@রহমান ভাই,
একটা ইমো বাদ পড়ে গিয়েছিল। আর তা হল, (F)
গ্রহণ করে আমায় কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করুন।
ভক্ত যখন দেয়, হৃদয় উজাড় করিয়াই দেয়, তা কি জানেন না?
গভীর ছায়ায় ঢেকে থাকা মৈমনসিংহ গীতিকা’র আসল সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে’র কথা সবার জানা উচিৎ।
ধন্যবাদ কাজী মামুন ভাইকে।
@রণদীপমদা,
অশেষ ধন্যবাদ।
মুক্তমনায় আপনাকে আরো বেশী দেখতে চাই।
@কাজি মামুন,
লোকসাহিত্য সুরক্ষার পাশাপাশি যে তার সংগ্রাহককেও সুরক্ষা করা উচিত তা মামুন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
ধন্যবাদ মামুন।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ, দিদি! (F)
আপনাকে বেশ কয়দিন দেখছি না, দিদি। কাজকর্ম সেরে শিগগির ফিরে আসুন, দিদি।
ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা সাহিত্যর অমূল্য সম্পদ। ভারতে লাইব্রেরীতে এক্সেস ছিল। এখন অনলাইনে কোথাও পাওয়া যাবে?
@বিপ্লবদা,
আমার জানা নেই। দেখি খুঁজে পেলে আপনাকে জানাব।
আর লেখাটার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনার কি মত? আপনি কি চন্দ্রকুমার দে সম্পর্কে জানতেন?
এই লোকটি বাংলার হারানো মানিক উদ্ধারের জন্য যে অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন, তার কোন তুলনা নেই। এ লোকটির ভূমিকা এক্ষেত্রে একজন সাধুরই মত, পার্থক্য হল, সাধুরা স্রষ্টার তালাশে সাধনা করেন, আর ইনি সাধনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের গুপ্তধন তালাশে। চন্দ্রকুমার বোধ করি, একজন ধর্মসাধুর চেয়ে কম হটেননি।
জগদ্বিখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র আবিষ্কারের মূল নায়ক এই চন্দ্রকুমার। অথচ আমরা সবাই শুধু দীনেশচন্দ্রের নামটিই জানি।
@কাজি মামুন,
‘ময়মনসিংহ গীতিকা এর ওপর কোলকাতায় একটি নাটক আমি দেখেছিলাম। চন্দ্রকুমার দে সম্পর্কে কিছু জানা নেই। দীনেশচন্দ্রের নামটাই জানতাম।
‘ময়মনসিংহ গীতিকার গান গুলি খুব কম পাঠক জানে। সেগুলি আরো তুলে আনলে ভাল হত।
সবার মত আমিও এতটুকুই জানতাম চন্দ্রকুমার সংগ্রাহক, কিন্তু এর চিত্ররূপ টি যে কত খানি ত্যাগ, পরিশ্রম আর ভালবাসার তা আপনার পোষ্ট পরে কিছুটা বুঝলাম। চন্দ্রকুমারের জন্য খারাপ লাগছে। তবে এটাই নির্মম সত্য যে অর্থের কাছে আমরা বার বার নত হই। অর্থ দাতাই প্রশংসিত হন। তবে অর্থ দাতা অবশ্যই প্রশংসার প্রাপ্য কিন্তু সেই সাথে যদি চন্দ্রকুমার দের মর্যাদা ঠিক মত দেয়া হয় তবেই সেটা পরিপূর্ণ হয়।
সর্বোপরি চমৎকার পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ (Y) (Y)
@আম্মানসূরা,
ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্য।
আর একটা ছোট্র ভুল সংশোধন।
দীনেশচন্দ্র শুধু অর্থদাতা নন, আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকও বটে। যেমনটা চন্দ্রকুমার বলেছেন, দীনেশচন্দ্রের সমর্থন ও উদ্যোগ না থাকলে ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ হয়ত কখনই পৃথিবী জয় করতে পারত না। তাই দীনেশচন্দ্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং অবিস্মরণীয়। কিন্তু এই পোস্টের আক্ষেপটি হচ্ছে, সবাই দীনেশচন্দ্রের নাম জানলেও চন্দ্রকুমারের নাম কেউ জানে না। এর পেছনে দীনেশচন্দ্রের নিস্পৃহভাব কতটুকু দায়ী, তা তর্কিত বিষয়। মোটা দাগে বললে, দীনেশচন্দ্র নন, বরং আমাদের ‘বড়কে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি’ আর ‘ছোটদের আস্তা-কুড়ে নিক্ষিপ্ত’ করার জাতীয় মানসিকতাই চন্দ্রকুমারের নামটি বিস্মৃতির অতল গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ।