[ব্যাক্তিগত ব্যাস্ততার কারনে বেশী সময় দিতে পারি না। লেখা বড় হয়ে যায়, কমাতে পারি না, কন্টিনিউটি নষ্ট করতে আমি রাজী নই। এদিকে এক সাথে একাধিক পর্বও নামানো যায় না, ব্লগের নীতি বিরোধী, তাই ব্লগের নীতিমালাকে কিঞ্চিত কলা দেখিয়ে একটু চালাকি করতে হল। বিশাল লেখা যার দরকার মনে হবে পড়বে, বড় মনে হল নয়, সরল সমাধান। আবার কবে সময় নিয়ে বসতে পারি ঠিক নেই।]
শাহবাগ আন্দোলন কেন্দ্রিক পরবর্তি নানান নাটকীয় ঘটনায় বর্তমান গতিধারা আবারো দেশে দুই ভিন্ন মূল্যবোধের বিভাজন প্রকটভাবে দেখিয়েছে যা আমরা ইচ্ছেকৃতভাবে ভুলে থাকতে চাইলেও বারে বারেই তাড়া করে ফেরে। এ বিভাজন স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি বনাম বিরোধী শক্তি এমনকি আস্তিক নাস্তিক জাতীয় সরল সমীকরনও নয়। এই বিভাজন প্রথমত যুদ্ধপরাধী বিচার কেন্দ্র করে শুরু হলেও চুড়ান্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ধর্মীয় ব্যাবস্থার সমর্থক এই দুই মেরুতে; যুদ্ধপরাধী ইস্যু চলে গেছে অনেকটা সাইড লাইনে। ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার সমর্থক দলে আছেন যারা ধর্মকে সব কিছুর ওপর দেখতে চান বা বা দেখেন বলে দাবী করেন, এ দলের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হল ইসলামের পক্ষ/বিপক্ষ এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্মীয় পরিচয়। ধর্মনিরপেক্ষ দল ধর্মকে ব্যাক্তিগত গন্ডিতে রাখার পক্ষপাতি, এই দলে আস্তিক নাস্তিক…হিন্দু, মুসলমান…সব ধর্মের সদস্য অবস্থান করলেও ধর্মীয় পরিচয়ের তেমন গুরুত্ব এখানে পায় না, যদিও ব্যাক্তি জীবনে এই দলের অনেকেই সনাতন চোখে ধার্মিক বলতে যা বোঝায় তাই। ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর পর আন্দোলন নানান জটিলতায় বর্তমানে যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে এই দুই ধারার পরিষ্কার বিভাজন দেখা গেছে প্রকট ভাবে।
মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার সমর্থকদের একটি বড় অভিযোগ হল মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হয়, শাহবাগের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে। দূঃখজনক সত্য হল সাধারন ভাবে দেশের সব ধর্মানুসারীই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকলেও ধর্ম নিয়ে অতিমাত্রায় সচেতন কিছু লোকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকেই ইসলাম ধর্মকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করে আসছে (পরে কিছু উদাহরন আসছে), উল্টোটা নয়। এই কুপ্রবনতা মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে আজকের গনজাগরন মঞ্চ পর্যন্তই লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধকে কোনদিন ইসলামের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও কোন ঘোর নাস্তিকও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোষনা দেয়নি। বরং ততকালীন সরকার প্রধানরাও আল্লাহর বানী উদ্ধৃত করে নানান নির্দেশনা পাঠ করতেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যাত্রা শুরু করেছিল কোরানের বানী উদ্ধৃত করে, সেখান থেকে নিয়মিত অধ্যাপক আলী আহসানের ইসলামী অনুষ্ঠানও প্রচার হত। সে সময় নানান ধর্মবিশ্বাসী/অবিশ্বাসী কারোই এসবে সমস্যা হয়নি। তেমনি আজকের গনজাগরন মঞ্চ থেকেও কেউ কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি। তারপরেও ’৭১ সালে যেমন ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছিল তেমনি আজকের দিনেও ইসলামকে আরো সফল ভাবে গণজাগরন মঞ্চের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দল সংখ্যানুপাতে লঘু হলেও এই দলে অন্তর্ভুক্ত ছিল সামগ্রিকভাবে দেশের প্রায় সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, সাথে আলেম সমাজ, ডানপন্থী বুদ্ধিজীবিগণ, মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক এই শ্রেনীর লোকেরা। বলে রাখা ভাল যে এরা সকলেই ঘাতক দালাল রাজাকার এমন নয় – তবে সামগ্রিকভাবে এরাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি এবং তাদের সেই অবস্থান ছিল ধর্মীয় কারনেই, সেই অবস্থান কতটা ইসলাম সম্মত তার আলোচনা বাদ রেখেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একই ধরনের প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি বিষয়ক আলোচনা করতে গেলে তাই ধর্মীয় প্রভাবের আলোচনা কম বেশী এসে পড়েই এবং সেটার দায় অবশ্যই উল্লেখিত শ্রেনীর লোকদের, আলোচকদের নয়। যেমন আল বদরদের ট্রেনিং এর অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক দরসে কোরান ছিল, কোরান ছুঁয়ে টুপি দাঁড়িওয়ালা মাদ্রাসার ছাত্ররা শান্তি কমিটিতে যোগদানের শপথ নিচ্ছে, পাক জান্তার সাথে হাসিমুখে খোশালাপ করছে এসব কথা বা ছবি তো ইতিহাসের দলিল থেকে মুছে ফেলা যায় না। এর সাথে টুপি দাঁড়ির অপমান বা ধর্মবিদ্বেষের সম্পর্ক নেই।
ধর্ম সব সময়ই আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে খুব গুরুত্বপূর্ন ছিল, ’৭১ সালেও ছিল। আজকের দিনে সেই গুরুত্ব নানান আভ্যন্তরীন এবং কিছুটা আন্তর্জাতিক প্রভাবে আরো গুরুত্বপূর্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম কেন্দ্র করে মূল্যবোধ জনিত মতপার্থক্যও সমানুপাতিকভাবে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান আমলে ভিন দেশী শোষন এবং আক্রান্ত বাংগালী জাতীয়তাবোধ ছিল সর্বসাধারনের ঐক্যবদ্ধ মূল্যবোধের অন্যতম ভিত্তি, ধর্মের সাথে বাংগালী জাতীয়তাবোধ কিংবা সংস্কৃতির বিরোধ সন্ধান করার প্রবনতা ছিল মূলত পাকিস্তানী সরকার এবং তাদের এদেশীয় কিছু দালাল এবং উগ্র ধর্মীয় চেতনার মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মাঝেই সীমাবদ্ধ। জনসাধারনের মাঝে সেসব প্রচারনা একেবারেই সুবিধে করতে পারেনি। উগ্র সাম্প্রদায়িক জযবা তুলে আরবী হরফে বাংলা প্রচলনের চেষ্টা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা হয়েছে; বাংগালী পালটা জবাব হিসেবে ’৬৭ সাল থেকে আড়ম্বরের সাথে রবীন্দ্র সংগীত সহযোগে পহেলা বৈশাখ পালন শুরু করেছে। পাকিস্তানী জান্তা ও উগ্রবাদীরা এসব সাংস্কৃতিক আক্রমন ইসলামের নামে চালালেও বাংগালী কোনদিন বলেনি যে ইসলাম হঠাতে তারা রবীন্দ্রনাথ ভক্ত হয়েছে বা পহেলা বৈশাখ পালন শুরু করেছে। সোজা কথায় বাংগালী পাকিস্তান আমলেও ছিল ধর্মপ্রিয়, তবে সংস্কৃতির ব্যাপারে ছিল উদার, যা ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বাস্তব প্রতিফলন।
পাকিস্তানী আমলের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির ধর্মের নামে ভয়াবহ নৃশংসতা স্বচক্ষে অবলোকনের পর ’৭২ সালের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। সে সময় আওয়ামী সরকারের ব্যাপক সমালোচনা নানান ইস্যুতে হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মানে কারনে দেশ থেকে ইসলাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র এমন কুটিল সন্দেহ তেমন কারো মাথায় আসেনি। তেমন সন্দেহ জেগেছে পরবর্তিকালে। বংগবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ’৭২ সালেও মুসলমানই ছিলেন, অন্য কোন ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিক ছিলেন এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের সাথে নানান কারনে ওনার তিক্ততা হলেও বংগবন্ধুর প্রতি তার ভক্তি শ্রদ্ধায় এখনো কোন ঘাটতি দেখা যায়নি, ওনার নিজের কথাতেই বংগবন্ধু এখনো ওনার রাজনৈতিক পিতা। সেই কাদের সিদ্দিকী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবীতে বুঝেছেন যে এর মানে হল দেশে মুসলমানদের রাজনীতি করার অধিকার বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি অতি নগন্য ব্লগার, কাদের সিদ্দিকীর ধারে কাছে যাবার সাধ্য আমার নেই, নইলে সুযোগ পেলে ওনাকে জিজ্ঞাসা করতাম যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মত ভয়াবহ ইসলাম বিদ্বেষী অপকর্ম যেই বংগবন্ধু করে গেছিলেন তাকে কিভাবে উনি এখনো পিতাভ্রমে শ্রদ্ধা করেন? বংগবন্ধু তাজউদ্দিন গংদের তো ইতিহাসে ভয়াবহ ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত (বস্তুত এক শ্রেনীর লোকে তাইই করে)। কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে নানান কথা প্রচলিত আছে, তাই বলে ওনার এই ধর্মীয় রাজনৈতিক দর্শনকে বিরাট ব্যাতিক্রম মনে করার কোন কারন নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী ইসলাম বিদ্বেষ হলে ’৭২ সালের সংবিধানের সাথে যারা জড়িত তারা কেন ইসলাম বিদ্বেষী নন এই কথা কেউ আমাকে বোঝাতে পারেন?
এটাই হল মূল্যবোধ জনিত বিভাজনের প্রকাশ, একই ব্যাক্তির মূল্যবোধ কিভাবে সময়ের সাথে বদলে যেতে পারে তার উদাহরন কাদে সিদ্দীকি। যেহেতু শাহবাগ আন্দোলন শুরু করেছিল ধরমনিরপেক্ষ ধারার লোকেরা তাই শাহবাগ আন্দোলন অনেকের কাছে এ কারনেই শুরু থেকেই ‘রাম বাম’দের ষড়যন্ত্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে, আর অনেকে যারা রাম বাম তত্ত্বে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন তাদের সংশয় কাটাতে নিহত ব্লগার রাজীবের নানান ধর্মবিদ্বেষী লেখালেখি টনিকের মত কাজ করেছে। মুল্যবোধজনিত বিভাজনের কারনেই দেশের এক অংশের মানুষের কাছে যুদ্ধপরাধীদের বিচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, আরেক অংশের কাছে ধর্মবিরোধীদের (ধর্মপ্রিয়/ধর্মবিরোধী যদিও অত্যন্ত ধোঁয়াটে বিষয়) শায়েস্তা করা অধিক গুরুত্বপূর্ন। এটা মোটামুটি প্রমান হয়েছে যে দেশের এক বড় সংখ্যক নাগরিকের কাছে কে রাজাকার কে মুক্তিযোদ্ধা তার চাইতে তার চাইতে কে আস্তিক কে নাস্তিক সে প্রশ্ন বেশী গুরুত্বপূর্ন।
ধর্মীয় মূল্যবোধ জনিত এই বিভাজন (ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ধর্মভিত্তিক) দৃশ্যত ’৭৫ পরবর্তি সময় থেকে প্রতীয়মান হলেও মনে হয় না সেটা সম্পূর্ন সঠিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান তার এক গবেষনাপত্রে উল্লেখ করেছিলেন যে ধর্মনিরপেক্ষতা এই দেশের সামাজিক সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয়। যদিও তার গবেষনাপত্রে উল্লেখিত ইংরেজী secularism ও ’৭২ সালের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা এক নয়। ’৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি পরবর্তিকালে বাদ দেওয়ার অজুহাত হিসেবে নানান অপব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই ধর্মহীনতা এভাবে অপপ্রচার চালিয়ে সহজেই ধর্মপ্রান জনসাধারনের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, আজো সে কাজ যত্নের সাথে করা হয়ে আসছে। সে কাজটি যে কতটা সফল ভাবে করা হয়েছে তার প্রমান শাহবাগ আন্দোলনের ছন্দপতন।
ততকালীন সরকার সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ যেন ভুল বশতঃ ধর্মহীনতা করা না হয় সে জন্য সে সময়ই পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছিল। এই ধর্মনিরপেক্ষতা ইংরেজীতে secularism লেখা হলেও উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে এর অর্থ ধর্মহীনতা নয়, বরং বলা যায় এর অর্থ সকল ধর্মের সমাধিকার। বংগবন্ধুর নিজ ভাষায়; “Secularism does not mean the absence of religion. Hindus will observe their religion; Muslims will observe their own; Christians and Buddhists will observe their religions. No one will be allowed to interfere in others’ religions. The people of Bengal do not want any interference in religious matters. Religion cannot be used for political ends…”[১]. বলাই বাহুল্য যে কোন সূস্থ বিবেচনা বোধ সম্পন্ন মানুষের এই ব্যাখ্যার পর ’৭২ এর সংবিধান ধর্মহীন ব্যাবস্থা কায়েমের ষড়যন্ত্র এমন ভাবনা মনে আসার কথা নয়। সে সময় গণমানসে এই চিন্তা কারো সেভাবে এসেছিল বলে জানা যায় না। পরিষ্কারভাবেই ’৭২ সালের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ধারা কোন ধর্মের মর্যাদাই বিন্দুমাত্র হেয় করেনি, রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ধর্মকেই অস্বীকার করেনি, বরং ধর্ম দেশের সংস্কৃতিতে আবহমান কাল থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই মূল্যবোধের স্বীকৃতি দিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থায়, রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশের তিক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই সে সময় ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহন করা হয়েছিল; কোন ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে নয় এটা স্ফটিক স্বচ্ছ।
বলাই বাহুল্য যে পাক আমলের সাথে দেশের আইন ব্যাবস্থার মৌলিক কোন তফাত ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহনের ফলে ঘটেনি। পাক আমলেও দেশে ইসলামী ব্যাবস্থা বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু ছিল না, পাক জান্তারা তীব্র সাম্প্রদায়িক মানসিকতার হলেও পারিবারিক আইন ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালিত হত ধর্মনিরপেক্ষ ধারার নীতিতেই, শরিয়া আইনে নয়। স্বাধীন বাংলা ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সরকারী ভাবে স্বীকৃতি দেবার পরেও একইভাবে পরিচালিত হত। ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিচালিত পারিবারিক আইন বদল করার নীতি সরকার চিন্তা করেনি। বরং ’৬১ সালে আইয়ুব খান মুসলমান পারিবারিক আইনের যেমন সংস্কার করেছিলেন সেটা ছিল বেশ বিপ্লবাত্মক। তেমন সংস্কার আজকের শায়খ, মাশায়েখ, আলেম ওলামা সর্বোপরি তোহিদী জনতাপূর্ন বাংলাদেশে চিন্তা করা অসম্ভবের মত।
আধুনিক কালের অধিকাংশ রাষ্ট্রই মূলত এ নীতিতেই পরিচালিত হয়। এতে কারো ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন করা হয় না, সবাই নিজ নিজ ধর্মাধিকার পালন করেও শান্তিপূর্ন সহাবস্থান করতে পারে। যেসব দেশ ধর্মীয় ব্যাবস্থায় চলে বা চলার দাবী করে সেসব দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থান কেমন তা খুব বিতর্কের বিষয় নয়। তুলনামূলক বিচারে মুসলমানদের মধ্যেই এখনো ধর্মের প্রভাব সবচেয়ে বেশী। ধর্মনিরপেক্ষ আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়ায় মুসলমানদের ধর্মাধিকার ক্ষুন্ন হলে নিশ্চয়ই সে সব দেশে মুসলমানদের ইমিগ্রেট করার প্রবনতা দেখা তো যেতই না, উল্টো দেখা যেত সেসব দেশ থেকে দলে দলে মুসলমানদের দেশত্যাগ করে ধর্মভিত্তিক দেশগুলির দিকে গমনের হিড়িক। তেমন কোন প্রবনতা কি দেখা যায়? বাস্তব কি বলে? ধর্ম বা ধর্মীয় পরিচয় কেন ব্যাক্তিগত গন্ডির বাইরে টেনে আনতে হবে আমি সম্ভবত জ্ঞানের অভাবেই বুঝি না। আদালতের জজ সাহেব কি বাদী ফরিয়াদীর ধর্ম হিসেব করে রায় দেন, একজন ডাক্তার কি তার রোগীর ধর্ম চিন্তা করে, নাকি একজন শিক্ষক তার নিজ ধর্মের ছাত্রদের বেশী নম্বর দেবেন?
এই ব্যাবস্থায় একমাত্র আপত্তি থাকলে থাকবে তাদের যারা নিজ ধর্মকে বাকি সব ধর্মের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখতে চান তাদের। ’৭৫ এর আগেই সেই আলামত দেখা গেছিল। যেমন সে সময় রেডিও টিভিতে অনুষ্ঠান শুরু করার সময় কোরানের সাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠের নীতি এবং হিন্দু ধর্মীয় উতসবের প্রচারনার বিরুদ্ধে অনেকেই সরব হয়েছিলেন [১]। ততকালীন সরকার নিজেও সব ধর্মের প্রতি সমদৃষ্টির নীতি বজায় রাখতে পারেনি, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের প্রতি সরকারী পর্যায়ে পক্ষপাতিত্ব দেখানোর শুরু তখন থেকেই। কাজেই অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের তত্ত্ব খুব ভুল বলা যায় না। দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের জন্মের সময়কাল থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় ধারার বিভ্রান্তি ছিল, যা উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে হয়ত সেভাবে প্রকাশিত হতে পারেনি। ’৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর সরকারী মদদে কেবল দিনে দিনে এই দুই ধারার পার্থক্য বেড়েছে, বর্তমানে এসে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে চরম মাত্রায়।
পাকিস্তান আমল থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মীসহ ধর্মনিরপেক্ষ ধারার লোকেরাই মূলতঃ সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ধর্মীয় চেতনায় উদ্ধুদ্ধ ডানপন্থী বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবি মহল এবং ধর্মীয় বা আলেম সমাজের ভূমিকা ছিল দূঃখজনক ভাবে অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক। স্বাধীন বাংলাদেশেও দূঃখজনকভাবে ওনাদের ভূমিকার তেমন পরিবর্তন হয়নি। প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদ এবং রাজাকারবাদ অনেকটাই সমার্থক। ’৭৫ পরবর্তি স্বৈরাচারী আমলে মৌলবাদকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইন্ধন দেবার অপসংস্কৃতি চালু হয়, এর পথ ধরে এই চক্র হয়ে ওঠে কালে ক্রমে প্রবল পরাক্রমশালী। ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি শুনলেও এই চক্রের ঘটে চরম গাত্রদাহ। জনতাও মোটামুটি ধর্মের প্রতি দূর্বলতাবশতঃ সেসব আষ্ফালন নীরবে হজম করে এই চক্রকে করে তুলেছে মোটামুটি অপ্রতিরোধ্য – মৌলবাদ বিকাশের মূল কারন এখানেই। যা কিছু সামান্য প্রতিবাদ আসে সেই ধর্মনিরপেক্ষ অংশের তরফ থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বড় আলেম এবং ডানপন্থী বুদ্ধিজীবিদের কিছু উক্তির উদাহরন দেই, বলাই বাহুল্য যে ওনারা ‘অজামাতি’। শেষের কথাটা কিছুটা শ্লেষের সাথেই বলতে হচ্ছে এ কারনে যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি বলতে মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরাই অনেকে ইচ্ছে করে ভুল বিশ্লেষন করেন, জামাতি ভিন্ন আর কেউ সে আমলে কিংবা আজকের দিনেও স্বাধীনতা বিরোধী নেই এভাবে সমস্যাটিকে হালকা করে দেখান। এসব উদাহরনে বোঝা যাবে আসলে কারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ইসলামকে দাঁড়া করায়।
‘৯৪ সালে সরকারী বেতনভোগী বায়তুল মোকারম মসজিদের খতিব মরহুম ওবায়দুল হক সাহেব বলে বসলেন, “পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একদল লোক গাদ্দারি করে পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল। এখন আবার গাদ্দারি শুরু করেছে”। এই শীর্ষ আলেমের মতে মুক্তিযোদ্ধারা হল গাদ্দার বা বিশ্বাসঘাতক, সেই গাদ্দারির চালিকা শক্তি হল পশ্চীমের শিক্ষা। এই ইস্যু নিয়ে সেসময় দেশে তেমন কোন আলোড়ন হয়নি, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির এই ধরনের কিছু ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিই কেবল প্রতিবাদ করেছিলেন, আর কিছু আওয়ামী নেতা যারা আবার পরবর্তি সরকারে এসে বিলকুল সব ভুলে গেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি আম জনতা মোটামুটি নীরবেই হজম করে গেছে। ভদ্রলোক দাপটের সাথেই আমৃত্যু স্বপদে বহাল ছিলেন, পুরো জাতির সবচেয়ে গর্বের অর্জন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় চরম অপমানকর বক্তব্য জাতির কাছে খুব বড় মনে হয়নি। ঊল্টো পরবর্তিকালে তার নিকট হাতজোড় করে প্রথম আলো সম্পাদকের মাফ চাওয়া মৌলবাদের কাছে মুক্তচিন্তার পরাজয়ের প্রতীক হিসেবেই চিরকাল রয়ে যাবে। একই সভায় চরমোনাই পীরের ঘোষনা; “যারা মৌলবাদী নয় তারা মুসলমানের জারজ সন্তান……এ সংবিধান মানা যায় না”।
দেশের এবং উপমহাদেশের একজন অন্যতম বিশিষ্ট আলেম মরহুম আল্লামা আজিজুল হক (বুখারি হাদীস শরিফ বাংলায় প্রথম অনুবাদ করেন, সুগভীর ইসলামী পান্ডিত্যের কারনে শায়খুল হাদীস হিসেবে এক নামে পরিচিত) সাহেবের অকপট মূল্যায়ন, “৭১ এ আমাগো অবস্থান ছিল নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। আমরা কখনোই চাই নাই পাকিস্তান ভাইঙ্গা বাংলাদেশ স্বাধীন হোক”। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকার জন্য অনুশোচনা হয় কিনা এ প্রশ্নে ওনার সাফ জবাব ছিল, “না। আমরা তো ইসলামের পক্ষেই ছিলাম। আমরা তখনো যা করেছি সেটাকে ঠিক মনে করেছি। এখনো যা করছি এটাই ঠিক”। স্বাধীন বাংলায় এই ভদ্রলোকেরও সীমিত আকারে হলেও ভোট তৈরী হয়েছিল ’৭৫ পরবর্তি রাজনীতির ধারায়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের নের্তৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকেও এই ভদ্রলোকের দলের সাথে ২০০৬ সালে জোট বাধতে দেখা গেছিল, নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না।
বর্তমান সময়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করেও ‘অজামাতি’ আরো বহু আলেম মাওলানা বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন যেগুলি কোট করতে গেলে বিশাল কাহিনী হবে। তার চাইতে দেখা যাক আলেম সমাজের বাইরের ধর্মীয় চেতনায় উদ্ধুদ্ধ ডানপন্থী বুদ্ধিজীবিগণের স্বাধীনতা পরবর্তি কিছু উক্তি।
’৯১ কি ’৯২ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধূরী – “পৃথিবীর কোথাও মুসলমানদের পরাজয়ের চিহ্ন নাই। ছিল শুধু এই দেশে। সেই চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়া এখানে শিশু পার্ক তৈরীর নির্দেশ দিয়েছিলেন”। উনি আরো অভিমত ব্যাক্ত করেন যে “এটাই বিএনপির মূল অন্তর্নিহিত শক্তি। এ জন্যই বিএনপি তিনবার নির্বাচিত হতে পেরেছিল”। এককালের তুখোড় বামধারার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা; পরবর্তিকালে ডানপন্থী বনে যাওয়া মরহুম অধ্যাপক আফতাব আহমেদ ‘২০০০ সালে, “জাতীয় সংগীত কি ঐশ্বীবানী যে পালটানো যাবে না……হিন্দু রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সংগীত”।
একটি ভিডিও দেখেছি যেখানে এককালের মুক্তিযোদ্ধা আফতাব আহমেদ মাওলানা সাঈদীর সাথে এক মঞ্চে ওঠার মত সৌভাগ্য অর্জন করায় সজোরে আল্লাহু আকবর রব ছেড়ে শুকরিয়া আদায় করছেন। সেখানে আরেক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি তাঁর এককালের কমরেড কবি আল মাহমুদ এককালের র্যাডিকেল সমাজতন্ত্রী মতবাদ ছেড়ে আজ তারা ইসলামী আন্দোলনে শরিক হতে পারায় অসীম অলৌলিক মোজেজার সন্ধান পেয়ে বিস্ময়ে অভিভূত হচ্ছেন। এই ধরনের মানসিকতার ব্যাক্তিরাই মুক্তিযুদ্ধকে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারনার কাজে ব্যাবহারের অভিযোগ তোলেন।
আরেক এককালের বিশিষ্ট বামনেতা, বর্তমানে ঘোর ডানপন্থী বনে যাওয়া জামাতি নয়া দিগন্তের কলামিষ্ট সাদেক খান (রাশেদ খান মেনন, এনায়েত উল্লাহর বড় ভাই) ’০৭ সালে; “একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারাও যুদ্ধপরাধ করেছে, বিচার করতে হলে দুই পক্ষেরই করতে হবে”। আরো বহু উক্তি আছে এ জাতীয় ডানপন্থী ব্যাক্তিত্বদের। বিএনপি জামাতের সাথে সরাসরি জড়িতদের কথা কোট করছি না (যেমন অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের ভাষা সৈনিক গোলাম আজমের মুক্তি দাবী)। বর্তমানে ইসলামী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ সম্প্রতি আলোচনার শীর্ষে থাকা এককালের বাম সৈনিক ফরহাদ মাজহারও অতীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ত্রাসীদের সাথে তূলনা করে সাড়া ফেলেছিলেন। এ সমস্ত বুদ্ধিজীবিরা হাজার হলেও উচ্চশিক্ষিত, তাই মাঝে মাঝে তারা মনের কথা, জেহাদী জোশ গোপন করে কিছুটা ঘুরিয়ে বলেন, নইলে আমিনী হুজুর বা শায়খুল হাদীসের সাথে তাদের চেতনাগত তফাত তেমন নেই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির খুব বড় ব্যার্থতা এই দলের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষন ছাড়া কেবল ছাগু, রাজাকার রাজাকারই থাকে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা থাকে না জাতীয় লঘু সিদ্ধান্ত টেনে বিষয় হালকা করা। এরা সকলে টাকা খেয়েছে, জামাতি প্রতিষ্ঠানে চাকরির লোভে এ জাতীয় কথাবার্তা বলে ভাবা আত্মপ্রতারনের সামিল।
এটাও মনে রাখতে হবে যে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধীতা মানে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা নয়, ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার সমর্থনকারী অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। কাদের সিদ্দীকীর কথা আগে বলেছি, ওনার বর্তমান অনেক কথাবার্তার নানান রকমের ব্যাখ্যা হলেও ওনার বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিথ্যা হয়ে যায় না। কাদের সিদ্দিকীর বহু আগে একই ধারার আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মেজর জলিল; উনিও পরবর্তি জীবনে ইসলামী আদর্শে গভীরভাবে অনুরক্ত হয়ে ইসলামী আন্দোলন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীনতা বিরোধী হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত মজলিশ দলের সাথে ঐক্য গড়েছিলেন। একই রকমের উদাহরন আরো বেশ ক’জনার আছে। ’৭৫ এর পর এ ধারার বিকাশ ঘটেছে বেশ ভালভাবে, তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ন হল যে শায়খুল হাদীস, আমিনী হুজুরদের ভোট ব্যাংক মূলতঃ আঞ্চলিক মাদ্রাসা ভিত্তিক হলেও তাদের সমর্থক গোষ্ঠির মধ্যে আছে শহুরে উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীরও বড় অংশ যারা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থাকে ঘৃনা করেন, ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেন। এই শ্রেনীর অনেকেই জামাতকে ঘৃনা করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই শক্তি; তবে প্রান্তিক বিচারে ধর্মনিরপেক্ষ ধারার চাইতে এই ধারার সাহচার্য অধিক পছন্দীয় মনে করেন যেহেতু এই ধারার ব্যাক্তিবর্গ ধর্মভিত্তিক সমাজ গড়ার আশাবাদ দেখায়। রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা এখানে গৌণ, ইসলামী আন্দোলনের সৈনিক কিনা সেটাই বড় –মেরুকরন এভাবেই ঘটেছে। এ কারনেই আলেম/বুদ্ধিজীবিদের রাজাকারি কথাবার্তা, মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি অপমান এই শ্রেনীর কাছে গৌন। মূল্যবোধগত বিভাজনের এটাই বৈশিষ্ট্য, জনমানসে এভাবে গড়ে উঠেছে এক দ্বৈতসত্তার। ছোট উদাহরন হতে পারে একই ব্যাক্তি জামাত শিবিরের নিষিদ্ধকরন/বিচার অন্তর থেকেই চান, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্পূর্ন জামাতি দৃষ্টিভংগী সম্পন্ন লোক যিনি মুক্তিযুদ্ধকে প্রকাশ্যে অপমান করেন তাকেই আবার বড় আলেম হিসেবে অশেষ সম্মান করেন (ব্লগ জগতে্র দেখা উদাহরন, বাস্তবেও ভুরি ভূরি আছে)। বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের প্রভাব দিনে দিনে বাড়ার মূল কারন এখানেই।
এই দলের সমর্থক সংখ্যা কেমন হবে? আমার পরিষ্কার ধারনা না থাকলেও চোখ বন্ধ করেই বলতে পারি বেশ বড় সংখ্যকই হবে। হেজাফতে ইসলাম এই দলের অকুন্ঠ সমর্থনের কারনেই তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ/বিপক্ষ শক্তির সহাবস্থান সম্ভব হয়ে মেরুকরন ঘটেছে। মুল্যবোধ জনিত বিভাজনের কারনেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ভেতরেই এক ধারার নুতন প্রজন্মের কাছে জাহানারা ইমাম, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, জাফর ইকবালরা নমস্য; আরেক ধারার নুতন প্রজন্মের কাছে জাকির নায়েক, আল্লামা শাফি, কাদের সিদ্দিকী, মেজর জলিলরা নায়ক। এই দুই ধারার ভেতর মেলবন্ধন কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব না হলে ভবিষ্যত পরিনতি খুব ভাল কিছু দেখি না।
প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের বিকাশ এবং রাজাকারবাদের বিকাশের মেকানিজম মোটামুটি একই, দুয়ের মাঝে বড় ধরনের আদর্শিক মেলবন্ধন আছে। প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের চরম প্রকাশ্য রূপই হল রাজাকারবাদ। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, এমনকি কোন রকম রিলিজিয়াস সুপ্রীমিটিরও (যা পরোক্ষভাবে হলেও সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়) বিরোধী; তাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের সঙ্ঘাত অনিবার্য; অন্য কথায় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদে বিশ্বাসীরা মুখে যাইই বলুক আদর্শিক ভাবে রাজাকারবাদের সাথেই বেশী এলাইন্ড। যে লোক আড়ালেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে মালাউন গাল দিয়ে আত্মতৃপ্তি পায়, মহিলা বিদ্যালয় বন্ধ করার ফতোয়া দেয় তার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হওয়া কতটা সম্ভব? সাম্প্রদায়িকতামুক্ত রাজাকার কয়জন থাকতে পারে, কিংবা রাজাকারি মন ওয়ালা অসাম্প্রদায়িক চরিত্র?
দেশে এখনো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সমর্থকই অনেক বেশী, তাই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলে তেমন বিপদে পড়তে না হলেও স্বপক্ষে জনবল তৈরী করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা মেটাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে ধর্ম ব্যাবহার করে মৌলবাদী চিন্তা চেতনার প্রচারনা। রাজাকারি দর্শন যদি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিরুদ্ধ কথাবার্তা না বলে ধর্ম ব্যাবহার করেই হাসিল করা যায় তবে তার চাইতে উত্তম আর কি হতে পারে? এরই প্রমান দেশের ইসলাম ভিত্তিক নানান সংগঠন সময়ে সময়ে রেখে এসেছে টেষ্ট কেস হিসেবে, জাতীয় রাজনীতি কিংবা সংসদে এরা নগন্য হলেও বলা যায় প্রতি ক্ষেত্রেই তাদেরই জয় হয়েছে। এর মূল কারন এইসব দলের নেতারা সমাজে বিশিষ্ট আলেম হিসেবে পরিচিত। যার ধর্মকর্ম নিয়ে তেমন কোন চিন্তাভাবনা নেই, হয়ত জুমার নামাজেও মসজিদে যায় না সেও এই দলের প্রতি এক ধরনের গোষ্ঠিগত আনুগত্য বোধ করে। সামান্য কিছু যা ওজর আপত্তি ওঠে সেই চিহ্নিত কিছু ধর্মনিরপেক্ষ (মতান্তরে ‘রাম বাম’ ঘেঁষা) বুদ্ধিজীবি মহল থেকে যাদের সহজেই নাস্তিক মুরতাদ ফতোয়া কিংবা সময়ে সময়ে হত্যা তালিকাও প্রস্তুত করে সাইজ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারনের ভাবনা যাইই হোক এটাই মোটামুটি বাস্তব চিত্র। এই দল মাঝে মাঝে অনেকটাই দেশের প্রচলিত আইন আদালতেরও ঊর্ধ্বে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রধানমন্ত্রীকেও সতর্ক করে দিতে পারেন, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদেকেও ২ লাইনের নিতান্ত এলেবেলে কথার কারনে নাকানি চোবানি খাওয়াতে পারেন, কিন্তু সরাসরি আদালত/বিচারকদের হুমকি দেওয়া ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া যায় না।
বর্তমানে হেফাজতের নারী নীতি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এমন দাবী নুতন কিছু নয়, কিংবা আমাদের দেশেই ইউনিক নয়। নারীর ক্ষমতায়ন, এমনকি নারীশিক্ষা, আয় উপার্জনের পথ বন্ধ করার জন্য বহু আগ থেকেই দেশের নানান অঞ্চলে ইসলামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক দল নানান কায়দায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বহু তান্ডব করেছে, আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ মোটামুটি নীরবে সেসব অবলোকন করেছে। কারন এ তান্ডবগুলি ঘটানো হয়েছে ইসলামের নামে এবং ইসলামের ধারক বাহক রক্ষক দাবীদারদের দ্বারা। কাজেই স্বাধীন বিচার বুদ্ধি বিবেকের ঘরে তালা। পশ্চীমের খৃষ্টান ইহুদীদের মদদপুষ্ট এনজিও সমূহ নারী শিক্ষা/স্বনির্ভরতার নামে ইসলাম ধ্বংস করে যাচ্ছে এমন প্রচারনা চালালে কিভাবে আর জোর প্রতিবাদ করা যায়? প্রচারনাকারীদের প্রতিই উলটা সহানুভুতি জাগে। এসব নিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদেরই ইসলাম বিদ্বেষী, নাস্তিক মুরতাদ এমন সব নানানবিধ উপাধি দিতে হয়। তাণ্ডবের মাত্রা কোনভাবেই অগ্রাহ্য করা না গেলে এসব ইসলাম সম্মত নয়, ইসলামে নারী শিক্ষা স্বনির্ভরতা বিরোধী কিছু নেই বলে দায় সারার সহজ রাস্তা তো খোলাই আছে।
মধ্য ’৯০ এর আগেই দেশের বহু যায়গায় মহিলা বিদ্যালয় ফতোয়া দিয়ে স্থানীয় মোল্লা আলেমগন বন্ধ করে দিয়েছেন, কোথাও আগুন লাগানো হয়েছে, কর্মজীবি মহিলাদের ওপর হয়েছে শারীরিক হামলা, মহিলাদের লাগানো হাজার হাজার গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে (খোদাই নিয়ামত গাছপালার ওপর এদের সর্বদাই এত ঘৃনা কেন কে জানে), কমের ওপর হয়েছে সামাজিক ভাবে একঘরে করা। এনজিও সমূহের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে নানান কায়দায় মৌখিক হুমকি থেকে হামলা। এসবের দীর্ঘ বর্ননা দিয়ে লেখা বড় করছি না। শুধু ’৯৪ সালে এনজিও সমূহের বিরুদ্ধে ১,৭৫০টি ফতোয়া দেওয়া হয় (হিসেবের বাইরে আরো কত আছে কে বলতে পারে)। [এসবের কিছু বিস্তারিত বিবরন অধ্যাপক আলী রিয়াজের GOD Willing: The Politics of Islamism in Bangladesh বইতে কম্পাইল করা আছে]
এর চরম রূপ দেখা যায় ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় আমিনী হুজুরের নেতৃত্বে, সেখানে ’৯৮ সালে মাসের পর মাস প্রশিকার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়, আমিনী হুজুর তার স্যাংগাতদের উদ্দেশ্যে প্রশিকা প্রধান কাজী ফারুককে দেখা মাত্র হত্যার উদাত্ত আহবান জানান। এরপর ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় কেন্দ্র করে ২০০১ সালে আমিনীর দলবল ঘটায় চরম সন্ত্রাস যাতে ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় ৭জন নিহত হয়, ঢাকায় এক পুলিশকে মসজিদের ভেতর “ধর ধর নাস্তিক ধর” শ্লোগান সহযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের উপস্থিতিতে। সেই হতভাগ্য বাদশাহ মিয়া নিয়মিত সে মসজিদেই নামাজ আদায় করতেন, তার স্ত্রী সে সময় বলেছিলেন যে যারা মসজিদে মানুষ হত্যা করে তারা মুসলমান নয়, তারা পশু। আমিনী হুজুরের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যাবস্থা সেসময় নেওয়া যায়নি, তিনি তার এলাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে এনজিও নিষিদ্ধ করতে পারেন, মানুষ খুন করার আহবান জানালেও তার সাথে আপোষের টেবিলে ততকালীন আইনমন্ত্রীকে বসতে হয়েছিল, কারন ওনারা ধর্মীয় নেতা, ওনাদের খেপালে লোকে ভোট দেবে নাকি? উলটো উনি পরবর্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে নানান ইস্যুতে হুমকি ধামকি দিয়ে গেছেন, আদালতের রায় ওনার মন মত না হলে দেশময় আগুন জ্বালাবার দৃপ্ত শপথ নিয়েছেন।
এরপর ২০০৭ সালেও এই দল দেখিয়েছে তাদের শক্তি প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক নির্দোষ রম্য কার্টুন কেন্দ্র করে, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জারজ উপাধি দানকারী বায়তুল মোকারম মসজিদের খতিবের কাছে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে দেশে আরেকবার ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে পিছিয়ে দিয়েছেন বহু যোজন। এর পরের বছরও প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী চক্র আবারো তাদের শক্তি প্রদর্শন করে বিজয়ের হাসি হেসেছে। সেবার ইস্যু ছিল ততকালীন জিয়া আন্তর্জাতি বিমান বন্দরে বলাকার মূর্তি নির্মান। তখন রাত বিরেতে দেখা গেছে একদল মাদ্রাসা ছাত্র ঢাকা শহরেরও বিভিন্ন যায়গায় মূর্তি ভাংগার চেষ্টা করছে। তাদের দাবী মূর্তি ইসলাম বিরোধী, তাদের দাবীর মুখে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে সরে আসতে হয়েছিল। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েও বর্তমানে সফল ভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মরনে মা ও সন্তানের ভাষ্কর্য নির্মান বন্ধ করা হয়েছে, এই নিষিদ্ধকারী লোকজন যে শুধু গ্রাম্য মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক তা নয়, উচ্চ শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকগনও আছেন যারা মনে করেন এই মূর্তি নির্মান তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে। ওপরে বর্নিত যাবতীয় কার্যকলাপ কেবলমাত্র কিছু ‘জামাতি’র কর্মকান্ড হিসেবে চালানো মূল সমস্যা এড়িয়ে যাবারই নামান্তর। আমিনী হুজুর, মাওলানা ওবায়দুল হক, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, বর্তমানে বিখ্যাত হয়ে ওঠা আল্লামা শাফি ওনারা সকলেই আদর্শগত ভাবে জামাত বিরোধী। এতে কতটা উপকার হচ্ছে? মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি কোন এক অদ্ভূত কারনে সাম্প্রদায়িকতা রাজাকারবাদ এসবের জন্য জামাত শিবির ছাড়া আর কিছু বোঝেন না।
হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে লেখার স্থান এখানে তেমন নেই, প্রচলিত ধারনানুযায়ী তারা যে ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর পর মৃত রাজীব ও ব্লগে অন্যান্য নানান ধর্মকেন্দ্রিক লেখা দেখে আচমকা বেজায় গোস্ম্যা করে মাঠে নেমেছে এই ধারনা যে বিরাট ভুল তা আগের একটি লেখায় বলেছি। তারা শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীতা রাজীব হত্যার আগ থেকেই করে এসেছে ইসলাম বিরোধী ছূতোয়, সোজা কথায় ইসলামকে দাঁড় করিয়েছিল শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে। আল্লামা শাফি যুদ্ধপরাধীদের বিচার কিভাবে মূল্যায়ন করেন তা ওনার নিজের কথাতেই শুনুন, “যারা দীন-ঈমানের হেফাজতের কথা বলছে, তাদের নির্দয়, নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে এদেশের আলেম সমাজ মানবে না।।“ সোজা কথায় ওনার মতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার মানে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যা আলেম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ওনার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, যা কাজেও তিনি দেখিয়েছেন। (এই বানী যেদিন তিনি দেন রাজীব তখনো জীবিত, ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার ইস্যু মিডিয়ায় আসে আরো ৪/৫ দিন পর)। এর সাথে ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার তত্ত্বের কোন সম্পর্ক আছে? এই তত্ত্বের সাথে জামাত শিবিরের প্রচারনার তফাত কোথায়?
তবে রাজীব হত্যার পর বিভিন্ন ডানপন্থী মিডিয়ায় প্রকাশিত সত্য/অসত্য নানান ধর্মবিরোধী উক্তির ভূমিকা অবশ্যই আছে। এসব উক্তি উগ্ররূপে এবং একই সাথে গ্রহনযোগ্য রূপে হেফাজতকে মাঠে নামার চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে। আরো বড় কথা সমাজের উচ্চশিক্ষিত অংশ যারা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে আমিনী হুজুর, শায়খুল হাদীস কিংবা আল্লামা শাফিদের সমর্থন করতে চান কিন্তু সংকোচ বশতঃ হয়ত সবসময় সেটা সম্ভব হয় না তাদের প্রকাশ্যে হেফাজতকে সমর্থন দানের দারুন সুযোগ করে দিয়েছে। এর কারন এই দলের আলেম মোল্লাগন ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রতিপক্ষ, এদের মাধ্যমেই সম্ভব হবে ধর্মনিরপেক্ষ ধারাকে হটিয়ে ধর্মভিত্তিক সমাজ কায়েম। এদের সমর্থন না করে কি পারা যায়? যুদ্ধপরাধীদের বিচার বিরোধী উক্তিকারী আল্লামা শাফিকে সমর্থন দেওয়ার মাঝে কিছুটা চক্ষুলজ্জার ব্যাপার অবশ্যই আসে, কিন্তু নবী রসূলের অবমাননাকারীদের শাস্তি দাবীদারদের সমর্থন করাতে তো কোন সমস্যা নেই। তারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার সরাসরি বিরোধীতা করলেও সেটা হয় গৌণ, ‘সরলমনা’ আলেমের কথা। আমি নিশ্চিত যে ওপরের রেফারেন্স দেখার পরেও এই দলের বোধকরি শতকরা ৯০% লোকেও বিশ্বাস করবেন না (বলা ভাল যে বিশ্বাস করতে চাইবেন না) যে হেফাজত শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীতা ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগারদের কারনেই হঠাত শুরু করেনি, তারা নীতিগতভাবেই যুদ্ধপরাধীদের বিচার বিরোধী, মুখে যাইই বলুন।
(২)
‘আলেমে দ্বিন’ আল্লামা শাফি সাহেবের নানান যায়গায় পরিচয় দেখি দেশের এক নম্বর আলেম। এক নম্বর কিনা জানি না, উনি যে অন্তত অন্যতম শীর্ষ আলেম তাতে কোন সন্দেহ নেই, তার প্রমান বর্তমানের ঘটনাবলীর আগেও প্রধানমন্ত্রী তার সাথে অতীতে একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন। আওয়ামী সমর্থক ধারার মুক্তিযুদ্ধের তীব্র সমর্থক অনেককেও দেখি ওনার গুনে গদগদ হতে, যদিও তাদের বক্তব্য বেচারা সরলমনা জ্ঞানী আলেম সাহেবকে তার অজান্তেই জামাত শিবির ব্যাবহার করছে। এমনকি উনি বা ওনার দলবল ক্ষমতায় আসতে পারেন এমন সম্ভাবনাও শোনা যাচ্ছিল, সত্য বলতে আশেপাশে ওনাদের বিপুল সমর্থন লক্ষ্য করে তেমন সম্ভাবনা খুব একটা সুদুর পরাহত বলেও মনে হয়নি। তাই দেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যত কান্ডারির ভিশন কেমন জানতে কিছুটা কৌতূহল বশতঃ যুদ্ধপরাধী/জামাত শিবির ইস্যু বাদ দিয়ে ভদ্রলোকের পুরনো কিছু ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করেছি।
উনি মহিলাদের ঘরের বাইরে বেরুতে দেওয়ারই ঘোর বিরোধী [সূত্র-২, ৩২ মিনিট থেকে)। মহিলারা কেন মার্কেটিং এ যাবে, তাদের স্বামী ভাইরা যা দরকার এনে দেবে……তারা কেন কাজ করতে যাবে যেখানে স্বামী বাবাজিই কাজ করে খাওয়াতে পারে। ওনার মতে মহিলাদের পড়াশুনা ততটুকুই হওয়া উচিত (ক্লাস ৪/৫) যতটুকু তাদের স্বামীর সম্পদ হিসেব কিতেবের কাজে লাগবে। মহিলাদের এর চেয়ে বেশী পড়াশুনা শেখালে তারা নিজের পছন্দমত বিবাহ করে বসবে! তেতুল খেতে দেখলে যেমন জিভে পানি আসবেই, ওনার ভাষায় মহিলারা তেতুলের থেকেও খারাপ, মহিলাদের দেখলেই পুরুষের দিলে পানি আসবে (সূত্র-২, ৩৮ মিঃ) মহিলাদের সাথে সহশিক্ষায় পড়াশুনা হওয়া সম্ভব নয়, অনেক কিছু করতে পুরুষের ইচ্ছে জাগবেই… ইত্যাদী। এর কারনও অবশ্য আছে, ওনার মতে মহিলারা ‘বাইশ তাল’ জানে (সূত্র-৩,৩২মিঃ)। কারন ওনার কাছে নারী কর্তৃক নির্যাতিত পুরুষের ফরিয়াদ পূর্ন চিঠি আসে, “হুজুর, আমার ক্লাশফ্রেন্ড মহিলার থেকে বাইচতে পারি নাই, কুকাজ কইরতে হয়েছে, আমি একটু আইসতে চাই, আমাকে তওবা করাইবেন”। ভদ্রলোকের মতে নাসারা ইহুদীদের ভাষায় পড়াশুনা অর্থহীন; বার এট ল্য বা পিএইচডি ডিগ্রী (পিএইচডি শব্দটা উনি বেশ শ্লেষের সংগে উচ্চারন করেন) কোনই কাজে আসবে না (সূত্র-৩, ২৩ মিঃ থেকে)। একের পর এক এ জাতীয় নানান রকমের তথাকথিত ডিগ্রী অর্জন ওনার ভাষায় ‘যত পাশ তত নাশ’। আসল পড়াশুনা হয় মাদ্রাসায় যেখানে আলেম বানানো হয়, কারন সেই আলেম সাহেব নামাজ পড়ান। উনি নাস্তিকদের বেকুব পাগল সাব্যস্ত করছেন (সূত্র-৩, ১৩ মিঃ থেকে) (গুরুত্বপূর্ন কথা উনি আবার ৩/৪ বার করে বলেন – যেমন নাস্তিকেরা পাগল পাগল পাগল)। নাস্তিকদের দেশে কোন ঠাই নেই ঘোষনা করছেন, উল্লসিত ভক্তকূলকে নির্দেশনা দিচ্ছেন নাস্তিকদের আল্লাহর দেশ থেকে তাড়াইয়া দিতে, দুনিয়ার চন্দ্র, সূর্য, আগুন, পানি নাস্তিকদের জন্য বন্ধ করে দিতে। এ জাতীয় নির্দেশ প্রচার কতটা আইন সম্মত তা করার অধিকার নিশ্চয়ই আমার নেই। ওনার সূত্রে জানতে পেরেছি দেশে এখন স্কুল কলেজে হিন্দু মহিলারা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয় (সূত্র-৩, ১৮ মিঃ)। উনি ইসলামের ইতিহাসের প্রসিদ্ধ নানান ইমামের রেফারেন্স দিয়ে ইচ্ছেকৃত ভাবে এক ওয়াক্ত নামাজ কাজাকারির শাস্তি মৃত্যুদন্ড (সূত্র-৩, ২০ মিঃ), আরেক ইমামের মতে জেল এসব শিক্ষা দিচ্ছেন, গুনমুগ্ধ ভক্তকূলও মূল্যবান জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। এই ভদ্রলোকের নেতৃত্বে ইসলামের মহাজাগরন ঘটছে বলে অনেকে অত্যন্ত উল্লসিত। জাগরনের সংজ্ঞা অবশ্যই আপেক্ষিক, সন্দেহ নেই।
আমি জানি না আমি আমার লেখায় মূল চিন্তার কারনটি কোথায় তা কতটা সঠিকভাবে বর্ননা করতে পারছি। আমিনী হুজুর, শায়খুল হাদীস, আল্লামা শাফি জাতীয় চিন্তাধারার ধর্মীয় নেতা বোধকরি সব সমাজেই কয়েকজন করে থাকে, এরা এদের মত থাকলে, মসজিদ গীর্জা মন্দিরে ধর্মচর্চার নামে এ ধরনের বয়ান ব্যাক্তিগত পর্যায়ে দিলে দিতে পারেন, এমন কিছু ব্যাপার নয়, কতজনেই কত রকমের কথা বলে। সমস্যার কারনটি সেখানেই যেখানে এ জাতীয় চিন্তাধারা এরা শিক্ষাকারে ছড়াতে পারেন, এদের বিপুল সংখ্যক সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠে, যাদের মাঝে সমাজের উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গও থাকেন। প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদের পক্ষে সাধারনের মাঝে যখন সমর্থন বাড়ে তখন চিন্তিত হতেই হয়। মূল কারন এ ধরনের সমর্থকরা মনেপ্রানে চান দেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা বাতিল করে ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম হবে (সম্ভবত খিলাফত, খিলাফতের পতন ওনাদের মতে বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের যাবতীয় সমস্যার কারন), যেখানে আল্লামা শাফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই জাতীয় আলেমগন সরাসরি সরকারে না বসলেও অন্তত এডভাইজার হিসেবে থাকবেন।
প্রকৃতপক্ষে এই মূল্যবোধ বিভাজন জনিত সমস্যা আমাদের দেশেরই ইউনিক নয়, বলতে গেলে গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ আছে এমন সব দেশের মুসলমান সমাজেই কম বেশী আছে, এমনকি পশ্চীমা বিশ্বেও আছে। দিনে দিনে এই সমস্যা আরো বাড়বে বই কমবে না, খুব সহজবোধ্য কারনে। এই ভিডিওতে দেখুন তিউনেশিয়ার একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার চিত্রশিল্পীদের উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হত্যার হুমকি (আমাদের দেশে যেমন ভাষ্কর্যের বিরুদ্ধে আষ্ফালন, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্যের বিরুদ্ধে ডবল হুমকি)। সেখানেও শীর্ষ ইমাম সাহেব কোরানের দোহাই পেড়ে তার ভাষায় ধর্মত্যাগীদের হত্যার ফতোয়া বীরদর্পে জাষ্টিফাই করেন, সেই মোল্লার পক্ষেও ঈমান্দার বান্দাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাওয়া বোঝায় যে উগ্রবাদী বলা হোক (কারো ভাষায় হয়তবা ভুল ইসলাম প্রচারকারী) আর যাইই হোক এই জাতীয় আলেম মোল্লাগনের সাপোর্ট বেজ সেখানেও ভালই আছে। যুগের সাথে সকলে ধর্মের যাবতীয় বিধি বিধান মানা থেকে কিছু না কিছু মাত্রায় সরে আসবেই, তারা সরাসরি ঘোষনা দিয়ে নাস্তিক মুরতাদ হলে তো কথাই নেই, আর তেমন ঘোষনা না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করলেও রেহাই নেই। ধর্ম যাদের কাছে অতি প্রিয় তারা এই জাতীয় প্রান্তিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাবে কট্টরবাদী মোল্লাচক্রের পেছনেই। বাংলাদেশও ব্যাতিক্রম কিছু নয়, হয়ত প্রকাশ ভংগিতে এখনো কিছুটা তফাত থাকতে পারে। অতীতে কবি শামসুর রহমানের ওপর হামলা হয়েছে, হুমায়ুন আজাদ মরে বেঁচেছেন, সময়ে সময়ে নিরন্তর ফতোয়া (হত্যার ফতোয়াও আছে) আসে এবং আসবে জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক এমএম আকাশ, সুলতানা কামাল এই জাতীয় বুদ্ধিজীবিদের নামে, কারন তারা ধর্মনিরপেক্ষ ধারার। মুনতাসীর মামুন কোরান হাদীসের প্রসংশা করলেও লাভ নেই, কারন উনি রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতি বা রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থায় ধর্ম জড়ানো সমর্থন করেন না, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লেখেন। দেশের কয়টি মসজিদ মাদ্রাসা থেকে এ জাতীয় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা হয় কেউ জানাতে পারবেন কি? ইসলাম তো এসব উগ্রবাদ মোটেই সমর্থন করে না আমরা জানি।
হেফাজতের উত্থানে দেশের অনেকে বেজায় খুশী। হেফাজতের সমর্থন যারা করেন তাদের হেফাজতের ১৩ দফা দাবীদাওয়ার ব্যাপারে তেমন আপত্তি করতে দেখা যায় না। কারন আল্লামা শাফির নের্তৃত্বে হেফাজতের উথানের সাথে তারা ইসলামের পূণঃজাগরনের সন্ধান পাচ্ছেন। লক্ষনীয় যে আল্লামা শাফির বক্তব্য যা আগে কোট করেছি সেসব পয়েন্ট ধরেই অনেকে ইসলাম সমালোচনা করে (যেমন ইসলাম নারী স্বাধীনতা পরিপন্থী)। এর বিপরীতে যারা ইসলাম ডিফেন্ড করেন তারা প্রমান করেন যে ইসলামে নারী বিদ্বেষী কিছুই নেই, যেমন মেয়েদের কাজ করার পূর্ন অধিকার আছে, পড়াশুনার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা নেই। ইসলামে যা নেই বলে ওনারা সর্বদা দাবী করেন সেসব শিক্ষা মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলে বিতরন করে আসলেও সেসবের বিরুদ্ধে কোন কথাই ওনারা কোনদিন বলেন না। এই অদ্ভূত আয়রনি সব সময়ই আমাকে ভাবায় নানান ইস্যুতে। ধর্ম যেসব সাইটে গুরুত্ব পায় সেসব সাইটে কোন লেখক আল্লামা শাফি, চরমোনাইর পীরের এই জাতীয় নানান ওয়াজের সমালোচনা করে কয়টি লেখা আজ পর্যন্ত দিয়েছেন? তাদের কেউ কি আল্লামা শাফির ইসলামী জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করার সতসাহস দেখাবেন? এই দ্বৈত মানসিকতার প্রকাশ নানান ক্ষেত্রেই দেখা যায়। যেমন শিবিরের কিশোরকন্ঠ মোহাম্মদ কদু কৌতূক ছাপালে তাতে তৌহিদী জনতার ধর্মানুভূতির কোন সমস্যা হয় না কারন জামাত শিবির রাজাকার বদর যাইই হোক তারা হল ধর্ম রক্ষক দলের, প্রথম আলো বিড়াল মোহাম্মদ ছাপালে বিরাট অপরাধ হয় কারন প্রথম আলো ধর্মনিরপেক্ষ ধারার বলে পরিচিত, এই পাজীদের দূরস্ত করার সুযোগ তো ছাড়া যায় না।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের মত ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি কবে করেছে কে জানে, তাদের ওপর যুদ্ধপরাধী বিচার সমর্থনকারী হেফাজতের বেজায় রাগ। শাহরিয়ার কবিরের ওপরও শান্তিপূর্ন হেফাজতের এত ক্ষোভ কেন যে তাকে শারীরিক ভাবে হামলা করতে হয়? মুনতাসীর মামুন নাস্তিক মুরতাদ তো দূরের কথা, ওনার নানান লেখায় মাঝে মাঝে দেখি কোরান হাদীসের নানান বানীর গুনগান। ওনার ওপরেও হেফাজতের এত ক্ষোভ কেন? জাফর ইকবাল স্যার কোনদিন কবে ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা বলেছেন? এরা সকলে কেন হেফাজতের টার্গেট (এনাদের সহ আরো বেশ ক’জনার নামে গত ২০শে ফেব্রুয়ারী হেফাজত কিছু পত্রিকার প্রথম পাতায় আধা পৃষ্ঠাব্যাপী নানানবিধ অভিযোগ করেছে যার মূল কথা ওনারা ইসলাম বিদ্বেষী)? মূল কারন শুধু যুদ্ধপরাধীদের বিচার নয়, এই দলের সদস্যরা ধর্মনিরপেক্ষ ধারার বুদ্ধীজীবি বলে পরিচিত। সে কারনেই হেফাজতের সমর্থক যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী তারাও এসব ফতোয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। কারন ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসী হওয়া মানেই তো এক অপরাধের সামিল। এসব বুদ্ধিজীবির প্রতি তাই তাদের তেমন সহানুভূতি নেই। একেবারে গলায় কোপ পড়লে তখন বড়জোর ‘আমরা তীব্র নিন্দা জানাই- ইসলাম কোনভাবেই এসব সমর্থন করে না’ জাতীয় দুয়েক কথা বলে দেবেন। অতীতেও জামাত শিবিরের লোকজন জাফর ইকবালের নামে বিভিন্ন সময়ে ব্লগ ব্লগে অপ্রপ্রচার চালালেও ধর্মপ্রিয় লোকজনকে দেখেছি এক ধরনের নীরবতা পালন করতে। এই ধরনের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ভাইদের কলম থেকে রাজীবকে নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থকদের লেখার মিথ্যাচারের চুলচেরা বিশ্লেষনাত্মক প্রমান পাওয়া যায়, কিন্তু আমার দেশের সাম্প্রদায়ি উষ্কানি, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে একটি অক্ষরও সরে না, জাফর ইকবালদের নাস্তিক মুরতাদ বলা হলেও (যা ধর্মমতেই অন্যায়) কোনদিন তার প্রতিবাদে একটি লেখাও বার হয় না। জাহানারা ইমামসহ অনেককে যখন অতীতে এই চক্র নাস্তিক মুরতাদ ঘোষনা করেছিল তখনো তৌহিদী জনতার তেমন কোন সাড়া শব্দ লক্ষ্য করা যায়নি। ব্লগ তো বাস্তব জীবনেরই ক্ষুদ্র স্যাম্পল। এদেশে উগ্র মৌলবাদ, রাজাকারবাদের প্রসার দিনে দিনে আরো বাড়বে এতে আর অবাক হবার কি আছে।
আমিনী হুজুর বা হেফাজতে ইসলামের অন্যতম মূল শক্তি হল মাদ্রাসার সরলপ্রান কোমলমতি ছাত্র যাদের সত্য বলতে এক রকমের লাইভ জোম্বি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ধর্মপ্রান মানুষ সোয়াব অর্জনের আশায় অসংখ্য মাদ্রাসা খুলে যাচ্ছেন, দান সদকা করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ভ্রাতারাও হাত খুলে সাহায্য করেছেন, তার সুফলও দেখা যাচ্ছে। হুজুররা শুধু বলার অপেক্ষা ইসলাম বিপন্ন, ব্যাস বিপুল সংখ্যক তৌহিদী জনতা অদ্ভূত কিছু দাবী দাওয়া কায়েমের নামে নেমে আসবে রাস্তায়। এক পর্যায়ে তান্ডব থামাতে সরকারকেও কঠোর ব্যাবস্থা নিতে হবে, তাতে শহীদও হয়ে যাবে কয়েকজন; যেমন অতীতে ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় হয়েছে, এবার হেফাজতের আন্দোলনে দেশের নানান যায়গায়ও হয়েছে, অন্যান্য দেশেও হয়েছে, হচ্ছে। আমাদের দেশের পুলিশ রাস্তায় সব সময়ই অতি কঠোর, ন্যূনতম মানবতারও ধার অনেক সময় ধারে না। ফলে বাড়বে এদের প্রতি আরো সহানুভূতি। মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ এখানে নেই, ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি। কওমী মাদ্রাসাগুলিতে কিছু হিসেব অনুসারে ২৫-৩৫ লাখ ছাত্রছাত্রীও পড়াশুনা করে। কিছু সূত্র দেখায় যে কওমী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলি সনাতনভাবেই সরকারী অনুদান দিতে চাইলেও গ্রহন করে না, কারন তাহলে সরকারী নিয়ন্ত্রনে চলে আসতে হবে; অন্য কথায় সিলেবাস আধুনিক করতে হবে যাতে ছাত্রদের জোম্বি বানানোর প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে পড়বে। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর পাঠক্রমের ওপর সরকাররের কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না এটা খুবই বিপদজনক। এই হারে দিনে দিনে মাদ্রাসার সংখ্যা আরো বাড়বে, তেমন শক্তিশালী হবে এই প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী দলগুলির পেশীশক্তি, পরিনতি খুবই অনিবার্য। ওনারা গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসতে পারলে কোন আপত্তি নেই, গনতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্মান জানাতেই হবে। তার চাইতে বড় আশংকার বিষয় আছে দিনে দিনে দুই ধারার মাঝে সঙ্ঘাত বাড়বে যা সহিংসতায় রূপ নেওয়া খুবই স্বাভাবিক।
আল্লামা শাফির উদাহরন এবং ওপরের কথাগুলি বলার বলার কারন কয়েকটি। প্রথমত এই মাননীয় বিশিষ্ট আলেম যাকে অনেকে দেশের শীর্ষ আলেম বলে চেনেন তিনি দেশের অন্যতম সেরা বলে পরিচিত এক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। স্বাভাবিকভাবেই মনে করার কারন আছে সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি ধরনের বিদ্যাবুদ্ধির চর্চা হয়, হাজার হাজার ছাত্র সেখানকে কি ধরনের শিক্ষা পায়? এসব শিক্ষার হালকা প্রকাশ বিচ্ছিন্নভাবে হলেও দেখা গেছে হেফাজতের ঢাকা অভিযানের সময় রাস্তাঘাটে ‘বেপর্দা’ মহিলা ঘটিত কিছু ঘটনায়, শুধু ‘মাথায় কাপড় দেন’ জাতীয় হুমকি/চোখ রাংগানীই নয়, এক সাংবাদিকের ওপর নজির বিহীন ভাবে দল বেঁধে হামলা হয়েছে শুধু মহিলা হবার অপরাধে। দিনের পর দিন নারী বিদ্বেষী ওয়াজ শুনিয়ে ঘটনা ঘটার পর দূঃখ প্রকাশে খুব বেশী অর্থবহ হয় না। দ্বিতীয়তঃ হেফাজতের উত্থানে যারা ইসলামের পূনঃজাগরন ঘটেছে ভেবে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন তারা কি আদৌ জানেন বা চিন্তা করেন কিসের উত্থান আসলে ঘটতে যাচ্ছে? নাকি তারা ভালই জানেন এবং এ ধরনের ব্যাক্তিবর্গের প্রভাবে দেশ চলবে সেটাই চান? সেটা চাইলে আমার বলার কিছু নেই, যার যেমন মত। আল্লামা শাফি একাই এই জাতীয় কথাবার্তা বলেন মনে করার কোন কারন নেই। আল্লামা শাফির ডেপুটি আরেক আলেমে দ্বীন মাওলানা বাবুনগরীরও কৌতূহলপোদ্দীপক লেকচার আছে। আরেকজন বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা কাম ইসলমাপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতা চরমোনাই পীর মুফতি ফজলুল করিম সাহেব হেফাজতের সম্মেলনে পাশ্চাত্য ধারার কুফরি সংবিধান পালটে কোরান হাদীসিয় আইন কানুন প্রতিষ্ঠা প্রত্যেকের জন্য ‘ফর্যে আইন’ জেহাদ বলে ঘোষনা করছেন (সূত্র-৪, ২৬ মিঃ)। দেশের প্রচলিত সংবিধান ওনার মতে বেঈমানদের বিজয়ের চিহ্ন, সেটার অপসারন না হওয়া পর্যন্ত জেহাদ চালাতে হবে। আমার ছোট প্রশ্ন হল সেই জেহাদে যারা সংবিধান রক্ষা করতে চাইবে তাদের ব্যাপারে কি বন্দোবস্ত?
তৃতীয় আরেকটি কারন হল অভিযোগ আছে যে ধর্মনিরপেক্ষ ধারার লোকজনে ধর্ম, মাদ্রাসার ছাত্র, আলেম সমাজের ব্যাক্তিবর্গদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, হাসি ঠাট্টা করে। অভিযোগ একেবারে মিথ্যা নয় স্বীকার করতে হয়। তবে তার কারন বোঝা কি খুব কঠিন? এ জাতীয় অদ্ভূত, যুগের সাথে অচল, সরাসরি সংবিধানের প্রতি হুমকি, কখনো বা হাস্যকর তত্ত্বের প্রচারনা চালালে শুধু ধর্মীয় চরিত্র কিংবা ধর্মের নামে চালানো হচ্ছে বলে কেউ প্রতিক্রিয়া দেখাবে না আশা করা যায়? এভাবে ধর্মকে বাস্তব জীবনের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক পর্যায়ে নিয়ে যায় আসলে কারা? ধর্মের পেছনে কি লোকে শখ করে লাগে? আল্লামা শাফি বয়োবৃদ্ধ মানুষ, ওনাকে দেখলে ভক্তি শ্রদ্ধা হয় শুধু বয়সের কারনেই। উনি এসব কথাবার্তা নিজের মত ব্যাক্তিগত গন্ডিতে বলে বেড়ালে তার পিছে নষ্ট করার মত সময় আমার নেই, যে বিদ্যাবুদ্ধির চর্চা সারা জীবন করেছেন তাতে এ জাতীয় মূল্যবোধের জন্ম হওয়াই স্বাভাবিক। আশা করা যায় ওনাদের জেনারেশন শেষ হলে এ জাতীয় তত্ত্বের চর্চা বন্ধ হবে। ওনারা তো সেটা যাতে না হয় সেজন্য বদ্ধপরিকর; আপত্তির কারন এখানেই। রীতিমত বিশাল বিশাল বিদ্যালয় খুলে, ওয়াজ মাহফিলের নামে এসব শিক্ষা বিলিয়ে চলেছেন, ভক্তরা অসীম জ্ঞানের সন্ধান লাভ করে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। জীবনে যে কয়টা ওয়াজ মাহফিল শোনার সৌভাগ্য হয়েছে সেগুলিতে এসব প্রসংগে একই ধরনের কথাবার্তাই কম বেশী শুনেছি। মওদুদীবাদি আল্লামা সাঈদী, কওমী ধারার আল্লামা শাফি, চরের পীর… ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই জিনিস; আধুনিক শিক্ষার বিরোধীতা কারন সেটা কুফুরি পশ্চীমি ধারার, সামাজিক বিষুদ্ধতা রক্ষার্থের নামে নারী বিদ্বেষ, ইসলাম কায়েমের নামে জেহাদের প্রনোদনা… কেবল হয়ত ভাষা ভিন্ন। আরো বিস্ময়কর অনেকে এ জাতীয় মূল্যবোধের ব্যাক্তিবর্গের হাত ধরে দেশে ইসলামী জাগরনের স্বপ্ন দেখছেন। প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের পক্ষে এ রকম ব্যাপক জন সমর্থনের ফল হল দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মিডিয়ায় মোমবাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ করার দাবী কেন মানা যায় না তা সিরিয়াস মুখে ব্যাখ্যা করতে হয়। দেশের ইন্টেলেক্ট লেভেল সম্পর্কে কেমন ধারনা করা যায়?
এই মূল্যবোধ বিভাজনের সমস্যা কোথায়? সমস্যা ছোট থেকে শুরু করে অনেক ব্যাপক হতে পারে। প্রত্যক মানুষই স্বতন্ত্র, মতের অমিল তাই খুবই স্বাভাবিক, ভিন্ন মত উতসাহিত করা ছাড়া কোন সমাজ আগায় না। মতের অমিল মূল্যবোধের ওপরও অবশ্যই প্রভাব ফেলে, কিন্তু তাই বলে কোন সমাজে মূল্যবোধে বড় ধরনের মৌলিক পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক নয়। এর পথ ধরে জন্ম নেবে চিরস্থায়ী দ্বন্দ্বের যার আবর্ত থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভবের মত। দু’জন ধার্মিক আমেরিকানের মাঝে রিপাললিকান পার্টি ডেমোক্র্যাট পার্টি নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি নিয়েও তীব্র মতভেদ হতে পারে, কিন্তু গান শোনা যাবে কিনা, নারী শিক্ষার প্রয়োযন আছে কিনা, মূর্তি স্থাপন করা যাবে কিনা বা দেশের সংবিধান পালটে ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে সংবিধান কায়েম করা হবে কিনা এসব বিষয় নিয়ে মতভেদ হবার চিন্তা অচিন্তনীয়। মূল্যবোধের এই ন্যূনতম ইউনিফর্মিটি তাদের সমাজেও কোনদিন আসত না ধর্মকে জীবন যাপন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায় রূপে ব্যাবহারের দর্শন থেকে মুক্ত হতে না পারলে। কেঊ নিজে কোন কারনে ইংরেজী শিক্ষা খারাপ, গান শোনা হারাম, পর্দা করা উচিত মনে করে এসব নিয়ম পালন করলে সমস্যা নেই, সেটা ব্যাক্তি স্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে। মূল্যবোধের এই মাত্রায় তফাত সহনীয়। মুশকিল হয় সে যদি প্রচার করা শুরু করে এসব যারা পালন করে না তারা মহাপাপী এবং যাবতীয় সর্বনাশের কারন, তাদের এসব ব্যাক্তি স্বাধীনতা হরন করতে হবে তবে সেটা রূপ নেয় সঙ্ঘাতের দিকে।
সমস্যার ছোট উদাহরন হতে পারে আমাদের দেশে এক ধরনের লোকে পহেলা বৈশাখ পালন করে, আরেক ধরনের লোকে মনে করেন সেটা পালন করা তাদের ধর্ম বিরুদ্ধ, শুধু তাতেও থেমে থাকলে হত। তারা সেটাকে ভিত্তি করে নানান সাম্প্রদায়িক প্রচারনা চালান, বৈশাখ মাসের আগ থেকেই শুরু হয় ধর্মীয় সাইটগুলিতে নানান ফতোয়া। অন্য ধারার লোকে সেসবের জবাব দেবে না? সঙ্ঘাত এক পর্যায়ে হবেই, ঠেকানো যাবে না। এ জাতীয় নানান ঘটনার সূত্র ধরে মেরুকরন চলবে। বৃহত্তর চিত্রে সরকার নির্বাচনের জন্য মূল বিবেচ্যগুলি চলে যাবে আড়ালে; যেমন সামনের নির্বাচনে দুটি বিষয় ভোটারদের প্রবল ভাবে প্রভাবিত করবে। একদলের কাছে রাজাকারদের বিচারকারী আওয়ামী লীগই হবে একমাত্র গ্রহনযোগ্য দল, এই দলের গত ৫ বছরের নানান ব্যার্থতা/দূর্নীতি এসবের কোন প্রভাব থাকবে না। আরেক দলের কাছে প্রধান হবে আওয়ামী লীগের ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম কিংবা ইসলামপন্থীদের ওপর অত্যাচার নীপিড়ন যার ফলে তারা আওয়ামী বিরোধী শিবিরের দিকে ঝুঁকবে, তাদের অতীত রেকর্ড যতই কলংকিত হোক কিংবা যুদ্ধপরাধীদের সাথে গলাগলি করুক এসব কিছুই আসবে যাবে না। কোন দলেরই অবস্থান স্বাভাবিক নয় বলাই বাহুল্য।
আমেরিকায় সম্প্রতি অস্ত্র নিয়ন্ত্রন আইন নিয়ে বিতর্কে এক অদ্ভূত জিনিস দেখা গেছে। প্রায় ৯০% লোকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রন আইন চাইলেও দেখা গেছে বিপক্ষ শক্তি মাইনরিটি হয়েও জিতে যাচ্ছে। এর সরল ব্যাখ্যা হল যে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মত প্রকাশ করাই দাবী আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়, সেই দাবী আদায়ের জন্য তারা কতটা সক্রিয় সেটাও বড় ফ্যাক্টর। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিশ্চয়ই যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায়, কিন্তু দৃঢ়ভাবে চেয়েছে কী? বিচার সমর্থক এক বড় অংশই ‘কিন্তু’ ‘বাট’ পরিমন্ডল থেকে বেরুতে পারেনি। এই কিন্তু বাটের মূলে আছে বড় মাত্রায় সেই ধর্মীয় চেতনার প্রভাব। আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছুটা লেখালেখির চেষ্টা করলেও যুদ্ধপরাধী ইস্যু সযত্নে এড়িয়ে যেতে চেয়েছি, কারন দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আমি যা বুঝি তাতে কোনদিন মনে হয়নি এ প্রচেষ্টা তেমন সফল হবে বলে। আমাদের দেশের লোকে যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাইলেও বড় এক অংশ চুড়ান্তভাবে সেটা গ্রহন করতে পারবে না, বিশেষ করে রিলিজিয়াস ইনস্টিটিউট বলতে যা বোঝায় তাদের সিংহভাগ কোনদিন এই বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করতে পারবে না, এক সময় এরা মাঠে নামবেই (যেমন ‘অজামাতি’ আল্লামা শাফির মূল্যায়ন আগেই দিয়েছি)। এই মহলকে অখুশী করা যে কোন রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ। সাথে থাকবে আন্তর্জাতিক চাপ, এখন পর্যন্ত ২/৩ টি মুসলমান প্রধান দেশে থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে। সময়ের সাথে আরো বাড়বে। ’৭১ এর ইতিহাস হুবহু একই রকমের কথাই বলে। যত যাইই বলা হোক, এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ব্রাদারহুড এসবের ভূমিকা।
বলা ভাল যে আমি যুদ্ধপরাধীদের বিচার বলতে শুধু ৮/১০ জন লোকের বিচার বুঝি না। শুধু ৮/১০ জনকে জেল ফাঁসী দিলে হয়ত বিচারের প্রতিহিংসার অংশ চরিতার্থ হবে কিন্তু ভবিষ্যতে এই ধারা প্রতিরোধের তেমন কিছু হবে না। আধুনিক কালের বিচারের মূল লক্ষ্য প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চাইতে এ জাতীয় অপরাধ যেন ভবিষ্যতে না হয় সেটা নিশ্চিত করা। যুদ্ধপরাধী বিচার ইস্যুতে কেন আমি আশাবাদী নই তা দুটি উদাহরন দিলে হয়ত বোঝা যেতে পারে।
এক সময় ইনকিলাব ছিল দেশের শীর্ষ সার্কুলেটেড পত্রিকা যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিল কুখ্যাত রাজাকার মালানা মান্নান। আমাদের ছাত্রজীবনে অনেককে দেখেছি ইনকিলাব ছাড়া অন্য পত্রিকা না পড়তে, মূল কারন সে পত্রিকায় নানান ইসলামী বিষয় লেখা হত। ইসলাম বিষয়ক লেখালেখির প্রতি মায়ার কাছে মান্নান মাওলানার রাজাকারি ব্যাকগ্রাউন্ড পরাজিত, ফলে সে হয়ে গেছিল সমাজের এক বিশিষ্ট ব্যাক্তি। এই মান্নান মাওলানা মারা যাবার পর ছুটে গেছিলেন একাধিক পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ব্লগের এক ঘটনা বলি। একজন শ্রদ্ধ্বেয় বড় ভাই যাকে আমরা সকলে ছাগু ফাইটার হিসেবে চিনি, এক ব্লগে একজন জামাতি সমর্থকের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তুমুল তর্ক করছেন। সেখানে আরেকজন তাদের উভয়কেই পরামর্শ দিচ্ছেন ইসলামের রজ্জু ধরে মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে। এই তৃতীয় ভদ্রলোক জামাতি হলে বলার কিছু ছিল না, তিনি জামাতি নন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী একজন সাধারন ব্যাক্তি আর কাছে ধর্ম খুব গুরুত্বপূর্ন। (সংগত কারনেই তাদের নাম বা লিংক দিচ্ছি না, তবে তারা কেউ চাইলে অবশ্যই দেব)। ওপরের ঘটনাগুলি অনেকে ব্যাতিক্রম বলতে পারেন, আমি পারি না। হয়ত আমিই দূর্ভাগ্যক্রমে সারা জীবন আশে পাশে এই ধরনের ঘটনা অজস্র দেখেছি। জামাতি কয়েকজনকে সাজা দিয়ে (আদৌ যদি দেওয়া যায়) স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার লোকজনের সাথে ভ্রার্তৃত্ববোধের বন্ধন কাটাতে না পারলে লাভটা হল কোথায়? স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা সমাজে থেকেই যাবে এবং তার পরিষ্ফুটন এভাবেই অপ্রতিরোধ্যে ভাবেই ঘটবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের হাতেই। মুক্তিযোদ্ধাদের গাদ্দার বলে গালি দেওয়া মাওলানা ওবায়দুল হকও একই কারনেই বড় আলেম হিসেবেই দাপটের সাথে দিন কাটিয়ে গেছেন। এদের সামাজিক ভাবে বর্জন না করতে পারলে কয়েকজনকে শুধু জেল ফাঁসী দিয়ে কি হবে?
মূল্যবোধ বিভাজনের এই প্রক্রিয়াতেই স্বাভাবিকভাবে আমরা যাদের প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী বলি তাদের সমর্থনের পাল্লা বাড়বে, যার প্রমান এবারের হেফাজতের উত্থানে বিপুল সমর্থনে প্রমান পাওয়া গেছে। কারন যতই এসব মৌলবাদীদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই জাতীয় দাবী করা হোক এই মৌলবাদী দলেই আলেম মোল্লাগনের অবস্থান। ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার স্বপ্ন যারা দেখেন তাদের পক্ষে এদের পক্ষে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক। যুদ্ধপরাধী ইস্যুতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সুবিধে পাবে জামাত। যুদ্ধপরাধী আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তি পেলে তো কথাই নেই, কিংবা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিদেয় হোক, এরপর এই দলের যুদ্ধপরাধীদের দল অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার। স্বাধীনতার ১০ বছর পর যেই নেতার জন্ম তাকে নিশ্চয়ই রাজাকার বদর বলা যাবে না। হেফাজতের ব্যাপক জনসমর্থন দেখা গেলেও একই সাথে রাজনৈতিকভাবে তাদের দূর্বলতাও অত্যন্ত প্রকটভাবে দেখা গেছে। অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলির অবস্থা আরো করুন। দেশে ইসলামী বিপ্লব জাতীয় কিছু করার চিন্তা করতে হলে জামাত ছাড়া আর তেমন বিকল্প নেই। যুদ্ধপরাধীদের মিলন মেলা জামাতের বর্তমানে (৫-৬)% ভোট ব্যাংক থেকে থাকলে যুদ্ধপরাধী মুক্ত জামাতের ভোট ব্যাংক নিঃসন্দেহে আরো অনেক বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যেই যুদ্ধপরাধীদের বিচার চান এমন লোকজনকেই বলতে শুনি যুদ্ধপরাধীমুক্ত জামাতে তাদের কোন অসুবিধে নেই। জামাত এক সময় নানান জাতীয় দিবসে অনেকটাই নীরব থাকতো, গত ১০/১২ বছর তারা নানান জাতীয় দিবস পালন করে, এমনকি বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবসও পালন করে। মূল কারন তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নয় সেটা প্রমান করে গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা। ইসলামী আদর্শ কায়েম করার ব্যাপারে দায়বদ্ধ, যুদ্ধপরাধীমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক জামাত শিবির যাদের দলের বেশীরভাগ সদস্যের জন্ম ’৭১ এর পর তাদের জনপ্রিয়তা দেশে বাড়বেই এতে সন্দেহ করার তেমন কারন নেই। ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার সমর্থকরা এক সময় হয়ত এই দলের অধীনেই ঐক্যবদ্ধ হবে। গনতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হলে এটা মেনে নিতেই হবে।
দেশে বড় দুই রাজনৈতিক দলই মোটাদাগে ব্যার্থ, নানান অভিযোগে অভিযুক্ত। মানুষ এক সময়ে বিকল্প খুঁজবেই। মুসলমান প্রধান যেসব দেশে রাজতন্ত্র নেই সেসব দেশেই মোটামুটি দেখা যায় একই চিত্র। দূর্নীতি, কুশাসন, নাগরিকদের এক সময় বিরক্ত হয়ে আন্দোলনের পথে বিকল্প অনুসন্ধান এবং সেই বিকল্প হল ধর্মীয় ব্যাবস্থা কিংবা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসা। কাজেই সামনের ৫/১০ বছরে না হলেও আরেকটু ধৈর্য্য ধরলে জামাতের ভবিষ্যত আমি উজ্জ্বলই দেখি। বিএনপির সাথে লেগে থেকে ক্ষমতার ভাগীদায় তারা আবারো হবে, সেটা সামনের বার না হলে হয়ত তার পরের বার, এরপর তারা এগিয়ে যাবে আরো অনেক দূর, এরপর বিএনপির ওপরও আর নির্ভর করার দরকার হবে না। শুধু জামাত নিষিদ্ধ করা সাময়িক স্বস্থি ছাড়া তেমন কোন ফল দেবে না, জামাত নিষিদ্ধ করলেই তাদের ভোট ব্যাংক এবং সহানুভূতিশীলরা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে না। শতকরা হিসেবে কম মনে হলেও যে বিপুল পরিমান সমর্থক/অর্থ বিত্ত তাদের আছে তাতে আরেকটি দল নুতন নামে খোলা কোন ব্যাপারই নয়। শতকরা হিসেবও বা কম কিভাবে বলি? জামাতের নিজের ভোট ব্যাংক (৫-৬)% এর বাইরেও তাদের নীরব ও সরব বহু সমর্থক আছে তাদের কেউ কেন জানি গণনায় নেয় না। এটা খুব বড় ধরনের ভুল, যার মাশুল কতটা বড় হতে পারে এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেছে, প্রতিপক্ষের শক্তিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ফল ভাল হয় না। বিশেষ করে বিএনপির ভোট ব্যাংকের সম্ভবত অর্ধেকই জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল। বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি জামাতের পক্ষে, যুদ্ধপরাধীদের পক্ষে ওকালতি করা হয়েছে, হচ্ছে। তাতে কি বিএনপির সাধারন সমর্থক থেকে শুরু করে নেতা কর্মী, বুদ্ধিজীবি মহল থেকে তেমন কোন প্রতিবাদ এসেছে? ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ মৌলবাদী শায়খুল হাদীসের দলের সাথে নির্বাচনী জোট বাধার পর দলের সাধারন সমর্থক থেকে শুরু করে গাফফার চৌধূরীর মত দলকানা বুদ্ধিজীবি পর্যন্ত গর্জে উঠেছিলেন। বিএনপির ক্ষেত্রে হয় আরো উলটো, দলীয় বুদ্ধিজীবিরা জামাতের সাথে জোট বাধায় উল্লসিত হন। মূল কারন শুধু আওয়ামী ঠেকাও নয়, কারন নীতিগতভাবে এই দল জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল। দলের মুক্তিযোদ্ধা অংশের বর্তমান মনোভাব অনেকটা কাদের সিদ্দীকি, মেজর জলিল বা হামিদুজ্জামান, কিংবা আফতাব আহমেদের মত। ধর্মীয় মূল্যবোধের মেরুকরনের ঢেউ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও আসবে না হতে পারে না। এ সত্য আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিও হজম করতে চায় না, সম্ভবত আত্মসম্মানে লাগে। সামান্য কিছু লোকে টাকা পয়সা খেয়ে জামাত সমর্থক হয়েছে এবং বাকবাকি সকলে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক এভাবে চিন্তা করার মাঝে আত্মপ্রসাদ আছে। তাই প্রথম আলোর জরিপে জামাত নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে জনমতের পরিমান দেখলে বিস্মিত হতে হয়।
প্রকৃত পক্ষে দেশে মৌলবাদের প্রতি যে রকম সমর্থন আছে তাতে এখন এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করাও এমন কিছু ফল দেবে না, এবং সেটা গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে বিরোধপূর্নও বটে। যদিও মজার ব্যাপার হল দেশে ইসলামপন্থী দলগুলি মিলিয়ে ৮% এর বেশী ভোট পায় না, কিন্তু তাও এদের নিষিদ্ধ ঘোষনার দাবীতে লোকে গর্জে ওঠে, আমাদের গনতান্ত্রিক চেতনা খুবই প্রসংসনীয়। বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করার সাথে জন্ম দেবে নুতন নুতন জটিলতার। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে ঠিক কি বোঝায় তা কিভাবে নির্ধারন করা যাবে? ’৭৫ এর পর ধর্মের ব্যাবহার জনমানসে যে প্রবল গতিতে হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগকেও অনেক সময় ধর্মভিত্তিক দল মনে হতে পারে। তারাও কোরান হাদীসের নামে নানান ওয়াদা করে। ’৯১ এর নির্বাচনে দেখা গেছিল সেক্যুলার আওয়ামী লীগও ‘নৌকার মালিক তুই আল্লাহ” শ্লোগান নিয়ে “ধানের শীষে বিসমিল্লাহ” আর “ভোট দিলে পাল্লায় খুশী হবে আল্লায়” শ্লোগানের মোকাবেলায় নেমেছিল। রাজনৈতিক দল ভোট পেতে যা দরকার তাইই করবে, তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ইসলমাপন্থী দলগুলির সুবিধে হল প্রচলিত অর্থে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ছাড়াও তারা অনায়াসে রাজনীতি করতে পারে নানান ধর্মীয় মোড়কে; যেমন জামাত ’৭১ এর পর নিষিদ্ধ হলেও তাদের কিছু নেতা নানান ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে দল সঙ্ঘবদ্ধ করার কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিল। অতি সম্প্রতি দেখা গেছে অরাজনৈতিক ভাবে একই কায়দায় নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরও ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের দলের সদস্য হচ্ছে মূলতঃ সমাজের উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীর সদস্যরাই। মৌলবাদ আগে যেমন ধারনা করা হত কেবল গন্ডগ্রামের মাদ্রাসা মক্তব্যে সীমাবদ্ধ সে ধারনা বদলে যাচ্ছে দ্রুত। চেতনাগত পরিবর্তন আনা না গেলে নিষিদ্ধ করাকরির ফল শূন্য।
অনেকে দাবী করেন যে ইসলামে রাজনীতির কোন ব্যাপার নেই, বা ইসলাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কথাটা যারা বলেন তারা হয় ইসলামের অতি বেসিকও জানেন না আর নয়ত ইচ্ছেকৃতভাবে কোন কারনে সত্য গোপন করেন। মুসলমানদের জন্য ইসলাম কেবল বর্তমান কালে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মত স্রেফ ধর্মই নয়, ইসলাম পূর্নাংগ জীবন ব্যাবস্থা, যেটা কায়েম করা অতি জরুরী। জীবনের প্রতি পদই ইসলাম মেনে চালাতে হবে; সে আইন আদালত, নারী নীতি, শিক্ষা নীতি, পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি যাইই বলেন। সেটা ইসলামী হুকুমত কায়েম করা ব্যাতিত কিভাবে সম্ভব? কাজেই ইসলাম পূর্নভাবে মানার দাবী করলে রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা থেকে ইসলামকে পৃথক করার অবকাশ নেই। চরমোনাই পীরের রাজনৈতিক তত্ত্ব আগে বলেছি (সেক্যুলার সংবিধান বাতিল করে কোরান হাদীসিয় সংবিধান কায়েমের জেহাদ)। উনি দাবী করতেই পারেন এমন তত্ত্ব প্রচারনা ওনার ধর্মীয় অধিকার, ইসলামে পূর্ন বিশ্বাসী কারো পক্ষে তার বিপক্ষে ঠিক কি যুক্তি দেওয়া সম্ভব? ওনার দাবীর বিরোধীতা প্রকারান্তে ইসলাম অস্বীকার। ধর্মনিরপেক্ষ ধারার মুসলমানদের এ কারনে ধর্মভিত্তিক ধারার লোকজনের রোষের মুখে পড়তে হয় যার প্রমান ব্লগে বাস্তব জীবনে ভুরি ভুরি দেখা যায়, আওয়ামী কর্মী/সমর্থকরা এই তোপে পড়ার শীর্ষে। ইসলামে পূর্ন বিশ্বাসী দাবীদার কারো পক্ষে বলা সম্ভব যে তিনি কোরান সুন্নাহ ভিত্তিক সংবিধান মানেন না? সম্ভব নয়। সম্ভব নয় বলেই ’৬৯ সালে বাংগালী জাতীয়তাবোধের চরম উত্থানের সময়ও বংগবন্ধুকে বলতে হয়েছিল যে তিনি নির্বাচিত হলে কোরান সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করবেন না। একই ওয়াদা আজকের দিনেও সব রাজনৈতিক দলকেই কবুল করে ক্ষমতায় আসতে হয়।
এখানে একটি শব্দের কৌশল লক্ষ্য করার মত। ধার্মিক মনকে শান্ত করার জন্য বলতে হয় যে আমরা কোরান সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করব না; ‘কোরান সুন্নাহ অনুযায়ী আইন করব’ এমন ওয়াদা কিন্তু কেউই করে না, কারন অত্যন্ত পরিষ্কার। দুটি কথা কিন্তু এক নয়। দুই কুল রক্ষার এরকম কৌশল খুব বেশীদিন কাজে দেবে না। হেফাজতের উত্থান অনেকেই হঠাতই ঘটেছে বললেও এদের উত্থান আসলে আগেই ঘটেছিল, তাদের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মূল অভিযোগ ছিল যে তেমন ওয়াদা করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলেও একের পর এক কোরান সুনাহ বিরোধী আইন করে চলেছে।
আগেই বলেছি যে মূল্যবোধের এ বিরোধ শুধু আমাদের দেশেই ইউনিক নয়। পাকিস্তানের কথা বাদই থাক। আফগানিস্তানে মৌলবাদের জন্য আমেরিকা দায়ী এমন দাবী অনেকে করে আসলেও সেখানেও এই ধরনের সমস্যার সহিংস প্রকাশ আগেও দেখা গেছে। মৌলবাদীরা সনাতন ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবর্তন কোথাও সহজভাবে নেয়নি, নেবেও না। সেখানে ’৫৩ সালে দাউদ খান প্রধানমন্ত্রী হবার পর ’৩১ সালের শরিয়া ভিত্তিক ব্যাবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেন। ধর্মনিরপেক্ষ ধাঁচের শিক্ষা নীতি, নারী নীতি (মহিলাদের কাজ করার অধিকার) গ্রহন করেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয় সনাতন ধারার সমর্থক বা মৌলবাদীরা, ’৫৯ সালে কান্দাহারে এরা ব্যাপক দাংগা বাধায়, হামলা করে সিনেমা হলে, মেয়েদের বিদ্যালয়ে। আলজিরিয়ায় তো ঘটেছিল ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। মিশরেও প্রেসিডেন্ট নাসেরের আমলে ইসলামী আন্দোলনের সৈনিক মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সরকারের ব্যাপক সঙ্ঘর্ষ ঘটে, তাদের আধ্ম্যাতিক নেতা সাঈদ কুতুবকে ফাঁসী দেওয়া হয়। তিউনেশিয়ার একটি উদাহরন আগেই দিয়েছি, সেখানেও মহিলা বিদ্যালয় পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। মনে রাখা ভাল যে আমি প্রতি ক্ষেত্রেই ইসলামিষ্টরাই দায়ী কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ শাসকরা সকলে অতি সজ্জন এমন কিছু প্রমানের চেষ্টা করছি না। শুধু বলার চেষ্টা করছি মূল্যবোধ বিভাজনের ফলাফল কেমন হতে পারে। চুড়ান্ত বিচারে কোন ব্যাবস্থা ভাল খারাপ সেটা শুধু ব্যাবস্থার ধরনের নির্ভর করে না, বেশীর নির্ভর করে কারা কিভাবে সেটা চালাচ্ছে তার ওপর।
মিশরেও এক সময়ের নিষিদ্ধ বিতাড়িত মুসলিম ব্রাদারহুড এখন গনতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে, ইরানেও এক সময়ের বহিষ্কৃত ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বেই ইসলামী বিপ্লব হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই সে দায় মূলতঃ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ধারার শাসকদেরই, যাদের অপশাসনে লোকে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে বিকল্প সন্ধান করেছে। ইসলামী ব্যাবস্থাতেই সব সমাধান আছে আজন্ম লালিত এই বিশ্বাস তাদের তেমন অবস্থায় ইসলাম ভিত্তিক ব্যাবস্থার দিকে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহী করেছে। বাংলাদেশেও বড় রাজনৈতিক দলগুলির অব্যাহত অপশাসনে লোকে বিরক্ত হয়ে এক সময় বিকল্পের সন্ধান করবেই। সেটা জামাত হবে কিনা এই মুহুর্তে বলা না গেলেও সম্ভাবনা ভালই আছে, এই মুহুর্তে হয়ত বেশ অবাস্তব শোনাচ্ছে।
ইসলামপন্থী কোন দল ক্ষমতায় আসলেই মহা সর্বনাশ হয়ে যাবে এমন কিছু আমি বলছি না। ইসলামপন্থী দলগুলির মধ্যেও মাত্রাগত বিভেদ আছে। যেমন তুরষ্কের ক্ষমতায় থাকা দল মিশরের ব্রাদারহূড থেকে অনেক আধুনিক। বাংলাদেশের ইসলামের নামে রাজনীতি করা দলগুলির মধ্যে মাঝে মনে হয় না এই লেভেলের কোন দল আছে বলে। সে যাইই হোক, গনতান্ত্রিকভাবে যেইই নির্বাচিত হোক মেনে নিতে হবে। আশংকা শুধু মূল্যবোধের বিভাজন যেন অন্যান্য কিছু দেশের মত সঙ্ঘাতের পথে না যায়। বাংলাদেশের মানুষকেই ঠিক করতে হবে কোন ধরনের মূল্যবোধের ব্যাক্তিবর্গদের তারা এসেট এবং কাদের লায়াবিলিটি মনে করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার, পরিষ্কার করে নির্ধারন করতে হবে ঠিক কোন ধরনের ব্যাবস্থা তারা চায়? ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় ব্যাবস্থার সমান্তরাল সহাবস্থান দিনে দিনে বিপদ জনক দিকে মোড় নিচ্ছে।
ধার্মিক গোষ্ঠির ভেতরেও বিভাজন আছে যা আমাদের দেশে এতদিন অনেকটা অশ্রুত হলেও এবার সেটাও প্রকাশ হয়েছে (হেফাজত বনাম আহলে সুন্নত), সেটাও আরেক বিপদের কথা, আপাতত এখন বাদ থাক। সাথে আলোচনা করতে হবে আওয়ামী বিএনপি বড় দুই দলের ওপর মৌলবাদের প্রভাব, কিংবা বড় দুই দলের মৌলবাদের প্রতি প্রতিক্রিয়া।
সূত্রঃ
১।Religion, Politics and Security: The Case of Bangladesh – AMENA A. MOHSIN
২।ALLAMA SHAH AHAMMED SHUFI DB Top class Ahalem of Bangladesh (LATEST 2011 TAFSEER MAHFIL)-01
৩। Allama Shah Ahmad Shafi Hefajote Islam Sommelon 2011
৪।Mufti Faizul Karim – Hefajote Islam Sommelon 2011
[এ ছাড়াও আরো বেস কিছু তথ্যসূত্র আছে, সময়াভাবে সব দেওয়া এখনই সম্ভব হচ্ছে না। কারো কোনটার প্রয়োযন হলে উল্লখ করলে দেওয়া হবে।]
এরশাদ যেদিন তার কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমরা ফিরে এসো আমার কাছে…।, সেদিনই আমরা মনে হয়েছে তার দিন শেষ। গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকায় মঞ্জুর হত্যা নিয়ে যত সংবাদ ছাপা হচ্ছে, যত নিবন্ধ লেখা হচ্ছে তা দেখে আমার সন্দেহ আরও গাঢ় হচ্ছে। এই ব্যাটার শাস্তি হলে আওয়ামী লীগ জোট আমার মনে আরও কিছুটা বাড়তি জায়গা পাবে। দেশ থেকে সামান্য কিছু বদ রাজনীতি দূর হবে।
বাংলাদেশেই সম্ভব…
এরশাদের মতো বিশ্ব বেহায়ার সামনেও হিরো হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোট সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট তা বাধাগ্রস্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নিরবাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়ী হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার পথ হারাবে এটা সহজেই অনুমান করা যায়।
বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে এরশাদ এখনও নির্ধারক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম। এখন সেই ক্ষমতা সে যুদ্ধাপরাধীদের দোসরদের ক্ষমতায় নেওয়ার জন্যও ব্যবহার করতে পারে অথবা চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোটকে সমর্থন অব্যাহত রাখতে পারে।
আসলে কে জানত যে সময় বিশ্ববেহায়ার সামনে এরকম একটা সুজোগ নিয়ে হাজির হবে?
@আলসে কুড়ে,
আমার জন্ম ‘৭১ এর পর; তবে এরশাদ পতনের সময় আমি মোটামুটি প্রাপ্তবয়ষ্ক ছিলাম। তখন জনমনে এরশাদ এবং তার দলের ইমেজ ছিল জামাতের থেকেও আক্ষরিক অর্থেই খারাপ। জাতীয় পার্টি মানে তখন চরমভাবে গনধিকৃত, কারো আত্মীয় স্বজন জাপা করলে সে বেচারাও চোরের মত থাকে এমন ছিল অবস্থা। সে সময় সব দল মিলিত ভাবে ঘোষনা দিয়েছিল যে এই দলের কাউকে কোন দল গ্রহন করবে না। সেই ঘোষনা মিলিয়ে যেতে খুব বেশী সময় নেয়নি।
রাজাকার আল বদর, স্বৈরাচার দূর্নীতিবাজ সকলেরই পূণঃবাসন এই বাংলায় খুব ভালভাবেই সম্ভব, ভবিষ্যতেও এমনই হবে। অবশ্য যে দেশের লোকে এদের জন্য ভোট ব্যাংক নামক দাসখত লিখে দেয় সে দেশে এমনই হবে। জামাতকেও বড় দলগুলি তোষন করে তার কারণ সেখানেই, ভোটের রাজনীতিতে এরা নিজেরা কোন পাত্তা না পেলেও গুরুত্বপূর্ন, বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
যুদ্ধপরাধীদের বিচার আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় কোনদিন সম্ভব আমার মনে হয়নি, এখনো মনে হয় না। ফাঁসী জেল এসব নিয়ে আমার তেমন উতসাহ নেই, কারণ চুড়ান্ত ভাবে এদের কারোরই সাজা হবে বলে মনে হয় না। সে হিশেবে বিচার না হলেই মনে হয় ভাল হত। বিচার আদালতে না গড়ালে অন্তত এদের রাজাকার বলে গাল দেওয়া যেত, ভবিষ্যতে সেটাও আর সম্ভব হবে না। এরা হয়ে যাবে আদালত সার্টিফাইড সাচ্চা দেশপ্রেমিক যাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমান হয়নি, ষড়যন্ত্রের স্বীকার……উল্টো এরাই তখন বেহুদা হয়রানি গালিগালাজের জন্য মামলা দেবে।
@আদিল মাহমুদ,
অনেকদিন মুক্তমনায় ঢুকি না। নিজের ই-মেইলটাও খোলা হয়নি। তাই আপনি মন্তব্য করেছেন সেটাও চোখে পড়েনি। আজ হঠাত অন্য একটা কাজে ই-মেইলটা খোলার পর দেখলাম কয়েকটি উত্তর পেয়েছি তার মধ্যে আপনার উত্তরটিও আছে। ভালো লাগছে যে আমার কথার উত্তর দিয়েছেন।
কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে এ বিষয়ে আপনার মতামত আমার জানা হয়নি। যদি কোথাও মত প্রকাশ করে থাকেন সে বিষয়ে খোঁজ রাখিনি বলে দুঃখিত।
কাদের মোল্লার ফাঁসির আগে এবং পরে ঘটনা প্রবাহ দেখে আমার মনে হয়েছে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিটা কত দুর্বল। আন্তর্জাতিকভাবেও এই পক্ষ কোণঠাসা। আওয়ামী লীগ-এর মধ্যে চোর-বাটপারের অভাব নেই। তাদের জোট ক্ষমতায় আছে কৌশলে (বিরোধী জোটে যুক্তি মেনে)। এমনি ভোটের ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চ অপ্রকাশ্যে কিছু করলেও প্রকাশ্যে এখনও আওয়ামী জোটের পক্ষে অবস্থান নেয়নি– পাকিস্তান দূতাবাস (কী বলব আক্রমণ নাকি হামলা করার জন্য) ঘেরাও করার জন্য পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তথা প্রকারন্তরে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। দেখলাম তো জাতীয় পার্টি থেকে কত কষ্টে একটা অংশকে সরকারে রাখা হল। এভাবে এ সরকার কতদিন টিকে থাকতে পারবে?
বিশ্ব মোড়লদের মধ্যস্থতায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রথম আলোর জরিপ এবং ঐ জরিপ উদ্ধৃত করে প্রথম আলোর সাংবাদিক মিজানুর রহমান, সুজনের বদিউল আলম খানের পর্যবেক্ষণকে যথার্থ প্রমাণ করে যদি ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে তাতে লাভ কী? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আন্য শক্তি কোথায়?
আমি হতভাগা বসে বসে পত্রিকায় দেখি কাদের মোল্লার ফাঁসির পর সারাদেশে ৩৬টি হিন্দু বাড়ি হামলা করা হয়েছে।
@আলসে কুড়ে,
সেই ছয় মাস আগের আলোচিত এরশাদ যে কত দামী বস্তু তা কেমন নিদারুন ভাবে ফলে গেছে।
কাদের মোল্লা নিয়ে মেলা কথা হয়েছে, কি আর বলব। বিচারের মাধ্যমে দন্ড দেওয়া হয়েছে তাতেই আমি খুশী। ফাঁসী নিয়ে আমি উদ্বেলিত নই। জানাই কথা জামাত শিবির এ নিয়ে মেলা ত্যাঁনা প্যাঁচাবে, দেশে বিদেশে বহু টাকা খরচ করবে প্রচারনায়। এত পুরনো দিনের মামলা যে যথাযথ ভাবে প্রচার করতে গেলে নানান ফাঁক বার করে সংশয় বিস্তার করা যেতেই পারে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও দূর্বল এটা তারা নিজেরাও বোঝে না। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেও যেভাবে মার খাচ্ছে তাতে ক্ষমতায় বাইরে গেলে কি হবে আন্দাজ করতেও ভয় লাগে। দিনে দিনে জামাতি অজামাতি আধ্ম্যাতিক সব কিসিমের রাজাকার জাতীয় লোক এক হয়েছে আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি নিজেদের মাঝে নানান চেতনায় বিভক্ত হচ্ছেন। এখন ফেসবুকে তাদের নিজেদের ভেতর গালাগাল নোংরামী অনেক সময় বাঁশের কেল্লাকেও হার মানায়।
সরকার নিজেও জানে যে ১০ সংসদের মেয়াদ হবে সংক্ষিপ্ত। তারা নিজেরাই দেখি এখন বিরোধী দলকে বলছে একাদশের জন্য প্রস্তুত হতে। মুশকিল হল তারা বুঝতে পারছে না যে এভাবে এক দলীয় নির্বাচন দিয়ে স্বল্পকালীন সরকার গঠন করে আবার নুতন সাধারন নির্বাচন দেওয়া রাজনৈতিক পরাজয়।
সামনে যা দেখি তাতে শুধুই আতংকিত হতে হয়।
১। ৬ষ্ঠ শতকে মধ্যপ্রাচ্যে যে আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে ইসলাম ধর্মের উত্পত্তি হয়েছিল সে আর্থ-সামাজিক অবস্থা পৃথির আর কোথাও নেই। তাই কোথাও আর সেই ইসলামকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ইরানে যে ইসলাম আছে তার সঙ্গে সৌদি আরবের ইসলামের বিস্তর ফারাক। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিনি স্কার্ট পড়া মেদের উপস্থিতি দেখা যায়। মাওলানা শফি কিংবা কাদের সিদ্দিকী কোন রাষ্ট্রকে সহি ইসলামী রাষ্ট্র বলবেন?
২।’ ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা কাদের সিদ্দিকী হেফাজতের আন্দোলনের সাথে যতটা গাটছাড়া বেধেছে একবার ক্ষমতায় গেলে তারা হেফাজতের দাবী কতটা বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে।
৩।’ বড় দলগুলোর আদর্শ কী? ক্ষমতাবাজি, দলবাজি, ভোগ বিলাসে মত্ত হওয়া ছাড়া তারা আর কী করে? কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তারা পরিচলিত হয়?
৪।’ দেশে কোনো সুশৃঙ্খল আদর্শনিষ্ঠ রাজনৈতিক গোষ্ঠির উপস্থিতি নেই যে কারণে এসব অপরাজনীতি যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে।
৫।’ সেকুলারিজমের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা এখনও পর্যন্ত দৃঢ় কোনো মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারেননি। তাই একরকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সেকুলারিজমের অগ্রযাত্রা। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট যদি আবার ক্ষমতায় আসে তো মন্দের ভালো। বিএনপি নেতৃত্বাধীণ জোট ক্ষমতায় এলে ধর্মের নামে অনাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। হয়তো দেশ ইরাক আফগানিস্তানের মতো কোনো স্তরে পৌছাবে।
@আলসে কুড়ে,
ধন্যবাদ ভাল পয়েন্ট তুলে ধরার জন্য। আপনার কথাগুলির পয়েন্ট ধরে কিছু যোগ করিঃ
১। ইসলাম ভিত্তিক সমাজ ততকালীন আরবের ক্ষুদ্র গন্ডিতে যেভাবে চলেছিল সেভাবে এ আমলে সব দেশে চালানো সম্ভব নয়। অঞ্চল ভেদে নানান কারনে মানুষের মূল্যবোধের তফাত আছে; আধুনিক শিক্ষা, আঞ্চলিক ফ্যাক্টর এ ধরনের নানান কারনে। ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম বা ইসলাম কতটা আছে তা পুরোটাই আপেক্ষিক। আমেরিকা ইউরোপসহ তামাম দুনিয়াতেই আপেক্ষিক অর্থে ইসলাম আছে কারন সব দেশের আইনেই ইসলামের বহু মৌলিক নির্দেশ মানা হয়। আবার আরব দেশেও সে অর্থে ইসলাম নেই কারন ইসলামের কিছু আইন সেখানেও মানা হয় না। সহি ইসলাম আসলে কি আমার মনে হয় ইসলামী শাসন যারা কায়েম করতে চান তারাও সঠিক জানেন না।
২। রাজনৈতিক দলগুলির হেফাজতকে অকুন্ঠ সমর্থন দান অবশ্য পুরোটাই মোটা দাগে ভন্ডামি। হেফাজতের ঘাঁড়ে বন্দুক রেখে গুলি করার চেষ্টা, সরকার কোনভাবে হেফাজতি ঝড়ে পড়ে গেলে তো তারাই ক্ষমতায় বসবে। হেফাজতি মোল্লাদের দুয়েকটি মিষ্টি কথা বলে আবার মাদ্রাসায় ফেরত পাঠানো কোন ব্যাপারই নয়। বিএনপির অবস্থান খুবই মজার। তারা পরিষ্কার বলেছে যে হেফাজতের সব দাবীর সাথে তারাও একমত নয়, তাও সমর্থন করে গিয়েছে।
৩,৪। রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন মৌলবাদী শক্তির বিকাশে অবশ্যই বড় ভূমিকা রেখেছে।
৫। খুব ভাল পয়েন্ট। আমার লেখায় এ অংশে জোর দিতে পারিনি। সেক্যুলার শক্তির লং মার্চ ডাকা কিংবা রাস্তাঘাটে তান্ডব ঘটানো, দেশে জ্বালানোর হুমকি দেওয়া, জাতীয় পতাকা পাড়ানো এ জাতীয় কর্মকান্ড করার মত তাগদ নেই, মানসিকতাও নেই। যদিও দেশের ইন্টেলেক্টুয়াল জগতে তারাই মেজরিটি। তাদের দৌড় পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, নইলে কবিতা পাঠের আসর, আলোচনা সভা, বড়জোর শহীদ মিনারের সামনে মানব বন্ধন। হেফাজতি ঝড় যখন চরমে ছিল তখন সেক্যুলার শক্তি বলতে গেলে পুরোপুরি নীরব ছিল যা মৌলবাদীদের আরো আষ্কারা দিয়েছে, সরকারকেও করেছিল বিভ্রান্ত এবং ডিফেন্সিভ।
আবারো ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশাল পটভূমিতে আপনি ভেবেছেন, সে জন্য আপনাকে সাধুবাদ। আপনার কৈফিয়ত সত্তেও বলি, অনলাইনে এতো দীর্ঘ লেখা পাঠ সত্যিই খুব ক্লান্তিকর, চোখ ও মনের ওপরে খুব চাপ পড়ে। এরচেয়ে লেখাটি দুটি বা তিনটি পর্বে পড়তেই বোধহয় ভালো লাগতো। প্রতিটি পর্বের বিতর্ক থেকে এর পরের পর্বগুলো সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকতো। 🙂
যা হোক। এখন লেখা ও মন্তব্য প্রসঙ্গে আসি। বিনয়ের সঙ্গে জানাই, আমার কাছে, আপনার কয়েকটি ভাবনাকে অস্পষ্ট, এমনকি কোথাও কোথাও স্ববিরোধী মনে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, নোটের বেশকিছু অংশে চিন্তার গুরুতর গলদও রয়েছে।
আপনি বলছেন:
এবং
আমার বক্তব্য:
০১. ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক মূলবোধ ভাবার কারণ কি? স্পষ্টতই প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক গণতন্ত্রের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিবোধ আছে। স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের ধারণাতেই আসলে বিশ্বাসী নয়। তাদের দলগুলোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে চায় রাষ্ট্রের সর্বত্র গণতান্ত্রিক শাসন ও রীতিনীতির বদলে ইসলামী আইন-কানুন প্রতিষ্ঠা। এ কথা ইসলামভিত্তিক দলগুলোর ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে সরাসরি বলাই আছে।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী যেমন বলছে, “রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া ইসলামী আইন চালু হতে পারে না বলেই জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করে। সমাজ সেবা ও সামাজিক সংশোধনের জোর তাকিদ ইসলাম দিয়েছে বলেই জামায়াত সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কারে মনোযোগ দেয়। এ অর্থেই জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন।” [লিংক]
তো, “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ” এই জেহাদী “ধর্মভিত্তিক দল”গুলোকে হজম করবে কেনো? যা তার অস্তিত্বের জন্যই হুমকি?
০২. এদেশের মানুষের মৌলবাদের প্রতি বিশাল সমর্থন আছে, আপনার এমন সরলীকরণের নেপথ্যে খুব জোরালো কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি। এদেশে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার বাড়ছে, এ কারণেই দেশে মৌলবাদের হাত ধরে জঙ্গীবাদের বিস্তার সহজ– এ কথা ঠিক, তবে তার মানে এই নয় যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ক্রমেই মৌলবাদী হয়ে পড়ছেন। আপনি সম্ভবত এদেশের ধর্মভিরু মানুষের সঙ্গে মৌলবাদকে গুলিয়ে ফেলছেন। লক্ষ্য করে দেখবেন, মাদ্রাসা শিক্ষার বিপরীতে বিজ্ঞানভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার বিস্তার সে না বাড়লেও সাধারণ শিক্ষাতেই মানুষ অসাম্প্রাদায়ীক। এদেশের আনাচে-কানাচে এমন কোনো স্কুল-কলেজ পাবেন না, যেখানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না বা সেখানে শহীদ মিনার নেই বা একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি পালন করা হয় না।
এই পরস্পর বিরোধী শিক্ষিতজনের বাইরে কোটি কোটি যে নিরক্ষর সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তাদেরও মৌলবাদের প্রতি জোর সমর্থন রয়েছে বা এটি ক্রমেই বাড়ছে তা নয়। হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই এদেশের সাধারণ মানুষ মৌলবাদকে পছন্দ করে না, যার রাজনৈতিক আচরণগত বহিঃপ্রকাশ সাম্প্রাদায়িকতা, ধর্মকে জীবনের অংশ মনে করলেও ধর্মই জীবন এটি মনে করার মতো মোল্লাতন্ত্রে এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষ দীক্ষিত নয়। তাদের ভাবমানসও সে রকম ভাবে গড়ে ওঠেনি। বরং অধিকাংশ মানুষই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ করেন না। আপনি নিজেই আবার স্বীকার করে বলছেন, “ইসলামপন্থী দলগুলি মিলিয়ে ৮% এর বেশী ভোট পায় না”। তাহলে? আপনার অবস্থানটি আসলে কোথায়?
০৩. “বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করার সাথে জন্ম দেবে নুতন নুতন জটিলতার।” আপনার একথা খানিকটা মেনে নিয়েই বলছি, বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করলে সরাসরি হয়তো জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। জামায়াত-বিএনপি-হেফাজতের সিরিজ হরতাল ও মতিঝিল তাণ্ডবের চেয়েও আরো নারকীয় তাণ্ডব চলবে দেশজুড়ে। দেশে হয়তো গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তাই বলে “ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ” করার দাবি বাতিল করতে হবে নাকি?
এ অবস্থায় “ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ” করার দাবি থেকে সরে আসার স্বপক্ষে আপনার যুক্তি-তর্কের অবস্থানটি মাথা কেটে বাদ দেওয়ার মতোই মনে হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক এবং শিক্ষাগত ব্যবস্থার উন্নতি করেই “ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ” করতে পারলে খুবই ভালো হয়। সে ক্ষেত্রে অবিজ্ঞান, কুসংস্কার, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে চিরতরে কবর দেওয়া সম্ভব। দেশীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচনায় কাজটি কঠিন, তবে একেবারে অসম্ভব নয়। সমাজ বদলের প্রেক্ষাপটে দাবিটির বাস্তবায়ন খুবই সম্ভব।
আপনার নোটে “ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ” র বিষয়টি আসলেও শাহবাগ গণজাগরণের অন্যতম একটি দাবি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিটি নিয়ে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। এরপর কিছু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকলে বিতর্কটি এগিয়ে নিতে সুবিধা হতো। যা হোক, প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি, জঙ্গী রাজনৈতিক দল, “ধর্মভিত্তিক” তো বটেই, হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করার বছর ছয়েক পরে এক সময়ের সুসংগঠিত এই দলটির সে অর্থে কোন অস্তিত্বই নেই। অন্যান্য “ধর্মভিত্তিক দল”এ ভীড়ে তাদের কোনো কোনো মাধ্যম ও নীচের সারির নেতা কাজ করার চেষ্টা করলেও দলটির পুরো নেট ওয়ার্ক একদম ভেঙে গেছে।
নির্বাচনে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার আ’লীগ বা বিএনপির জন্য কোনো নতুন বিষয় নয়। দক্ষিণপন্থী বা পাতিবামেরা রাজনৈতিক চাতুরির অংশ হিসেবে ধর্মকে সময় সময় যথেচ্ছ ব্যবহার করে। কিন্তু তাই বলে আ’লীগ বা বিএনপি বা পাতিবামদের আপনি যেভাবে “ধর্মভিত্তিক দল” হিসেবে ট্যাগ লাগাতে চাইছেন, তা নিছক হাস্যকর। যদিও খুব গভীরে তলিয়ে দেখলে মৌলবাদের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ট সখ্যতা আছে। ক্ষমতা গঠনের প্রশ্নে বিশেষ করে বিএনপি এখন উদার গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে গিয়ে পুরোপুরি জামায়াত-হেফাজতেই মিশে যেতে বসেছে। কিন্তু তাই বলে হেফাজতি ১৩ দফার বিষয়ে গণভোট নেওয়া হলে তাতে বিএনপির ভোটাররা খুব অল্পই “হ্যাঁ” ভোট দেবেন বলে আমার ধারণা।
০৪. আপনি একবার বলছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ধারণা “গণতন্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ”, আবার নিজেই বলছেন, “ধর্মকে জীবন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র ও নিখুত মাধ্যম চিন্তা পুরোপুরি ত্যাগ করতে না পারলে কোন পথ নেই।”
তো, আপনার কাছে জানতে চাই, “”ধর্মকে জীবন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র ও নিখুত মাধ্যম” করা দাবি করে? এই চিন্তাকে বাদ দিতে চান, ভালো কথা। কিন্তু যারা এই চিন্তার ধারক ও বাহক সে সব “ধর্মভিত্তিক দল”কে আপনার কথিত “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে” টিকিয়ে রেখে আদৌ কি এ কাজ সম্ভব?
দেখুন, জামায়াতে ইসলামীর পরিচিতি: “রাসূল (সা.) আল্লাহ্র দ্বীনকে কায়েম করেই এ দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আইন, শাসন, বিচার, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তিনি আল্লাহ্র বিধানকে চালু করে প্রমাণ করেছে যে, ইসলামই দুনিয়ার জীবনে শান্ত্মির একমাত্র উপায়।” [লিংক]
০৫. আপনার ক্রটিপূর্ণ কথার জের ধরেই বলছি, সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে হবে, অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ গড়তে হবে, এমন কাগুজে কথায় সমাধান হবে না। এটি বাস্তবে করে দেখাতে হবে। আসলে দেশ সত্যিকার অর্থে ১৯৭১ এর অসাম্প্রাদায়ীক, বৈষম্যহীন, ধর্মনিরপেক্ষ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার চেতনায় চালিত হবে কি না, সে রাষ্ট্রীয় নীতি ঠিক করতে হবে। এই মহান রাষ্ট্রীয় নীতি ঠিক করবে যে সব প্রকৃত দেশপ্রেমিক দল, তারা এখন দৃশ্যতই অনুপস্থিত। কিন্তু তাই বলে হতাশ হওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেতনার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। “মাথা পরিস্কার” করার কর্মসূচিটি নিছক সহজ কথা নয়। মুক্তমনা যেমনটি বলছে, যুক্তি আনে চেতনা, চেতনা আনে সমাজ পরিবর্তন। আর সমাজ পরিবর্তনটিই আসল কাজ। সত্যিকার অর্থে এটিও ১৯৭১ এ শুরু মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত সংগ্রাম। শাহবাগ গণজাগরণ এই আলোরই দিশারী মাত্র।
__
ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
@ ভ্রাতা বিপ্লব রহমান,
চমতকার বক্তব্য রাখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনার কথাগুলি অনায়াসে নুতন পোষ্টাকারে দিতে পারেন। তাতে আলোচনার সুবিধে হত। আমি আমার লেখা এমনিতেই মেগা সাইজ হয়েছে বলে অনেক কিছু ভেংগে ব্যাখ্যা করতে পারিনি। আপনার কথার সুত্র ধরে সেটা করা যায়। মনে হয় বেশ চমতকার আলোচনা হত।
আপনার পয়েন্টগুলি আমার মত ব্যাখ্যা করে পরে জবাব দিচ্ছি, আমার বোঝা সঠিক এমন নাও হতে পারে। সামাজিক সমস্যাগুলি শুধু একজন লোকে সঠিক ধরতে পারবে এবং সমাধান দিয়ে দিতে পারবে এমন আশা তো কোনদিন করা যায় না 🙂 । আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল উষ্কে দেওয়া, অনেকের মত জানা যেমন আপনি দিয়েছেন।
আমি ঠিক বুঝি না লোকে মৌলিক বিষয়কে কেন গুরুত্ব দেয় না……আবারো ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,পৃথিবীর কোনো গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার নিষিদ্ধ নেই। না ভারত, না আমেরিকা, না ব্রিটেন, না ফ্রান্স, না অন্য যে কোন উন্নত গনতন্ত্রে। সুতরাং মতামত নিষিদ্ধের রাজনীতি নিয়ে কথা তোলা যেতেই পারে। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাটুকু কতটা গনতান্ত্রিক কিংবা বিবেচনাপ্রসূত ছিলো এটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
@সফিক,
একমত। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলতে পারিনি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো উগ্র সাম্প্রদায়িকতাকে ধারণ করে। এর জের ধরে এরা হয় জঙ্গীবাদী জেহাদের রাজনীতিকে আস্কারা দেয়, নয়তো সরাসরি নিজেরাই জঙ্গীবাদী জেহাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই প্রেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলা। মত প্রকাশকে দমন নয়, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়ীক রাজনীতি দমনই এর লক্ষ্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
জংগী জেহাদী দল নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মনে হয় না কোন মহলই আপত্তি করবে বলে। যেমন হিতা নিষিদ্ধ করা নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি।
তবে এই ছূতো ধরে গনহারে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই নিষিদ্ধ করা বুমেরাং হিসেবে ফিরে আসবে।
যদিও বাংলাদেশে যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে তাদের কথাবার্তা, রাজনৈতিক দর্শন অনেক সময়ই সরাসরি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, যেমন লেখায় চরমোনাই পীরের রাজনৈতিক দর্শনের উদাহরন দিয়েছি। মুশকিল হল চরমোনাই পীরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহীতার অভিযোগ করলে আমরা আবার ইসলাম বিদ্বেষী হিশেবে মামলা হামলার স্বীকার হব। এ বড় অদ্ভূত চক্র, ওনারা দেশের সংবিধান মানবেন না, ছুড়ে ফেলে দেবেন, সেটা ধ্বংস করতে জেহাদের ডাক দেবেন, কিন্তু তার প্রতিবাদ করা যাবে না যেহেতু কর্মগুলি করা হচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারনের ধর্মবিশ্বাসের খাতিরে। প্রতিবাদ করলে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের সমূহ সম্ভাবনা আছে। এই রকম অদ্ভূত রসিকতা আর কোন সমাজে চলে কে জানে। এই রকম সমান্তরাল ব্যাবস্থা একই সাথে পোষনের পরিনতি মারাত্মক হতে বাধ্য। আপনি একই কম্পিউটরে এন্টি-ভাইরাস এবং ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করলে সমূহ সম্ভাবনা আছে ভাইরাস মেশিন খেয়ে নেবে।
@বিপ্লব রহমান,
এবার আমার কথা বলি আপনার তোলা পয়েন্টগুলির স্বাপেক্ষে।
১। আমি কিন্তু গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রসংগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কথা বলেছিলাম। ইসলাম ভিত্তিক নয়। দুয়ের মাঝে তফাত আছে, যদিও আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক মানেই অবধারিতভাবে ইসলাম। সফিক যেমন বলেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গনতন্ত্রের উর্বর সব ক্ষেত্রেই আছে। যে কোন মতই গ্রহনযোগ্য যতক্ষন না সেটা অন্য মতকে বলপূর্বক অস্বীকার করা শুরু না করে। ধর্মভিত্তিক দলগুলি এই অতি সাধারন নিয়ম মেনে চললে সমস্যা নেই। আপনার কথা ঠিক, ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম বলতে যা বোঝানো হয় তার মৌলিক সমস্যা হল নানান প্রাচীনপন্থী আইন কানুন নয়, সেসব আইন কানুন সমালোচনাকারীদের ব্যাপারে অতি কঠোর দৃষ্টিভংগী পোষন যা মৌলিক গনতান্ত্রিক বোধের ভেতর পড়ে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যেমন গনতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করলে মেনে নিতে হবে তেমনি কেউ ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি করলে তাকেও স্বৈরাচারী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে একই কারনে। জনতার মাঝে গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে থাকলে স্বৈরাচারী দল আপনা থেকেই ঝরে যাবে। জনতার মাঝে সেই মূল্যবোধ না থাকলে দমন পীড়ন নিষিদ্ধ করাকরি এসবে লাভ তো নেইই, উলটো ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী।
২। মৌলবাদের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে আমার এমন ধারনার কারন বহুবিধ। যদিও ট্রু সেন্সে বলতে হয় আসলে বেড়েছে লোকের দ্বি-চারী আচরনের ক্রমবর্ধমান প্রবনতা যা মৌলবাদকে আস্থা জোগাচ্ছে- যে মৌলবাদী নয়, সেও ধর্মের জোশে মৌলবাদীদের সমর্থন জানাচ্ছে। এবার হেফজতের উত্থানে কি শুধু কওমী মাদ্রাসার সাথে জড়িত বাদে আর কেউ তেমন সমর্থন দেয়নি বলে আপনি মনে করেন? পেশাগত কারনে তো আপনার আরো ভাল জানার কথা। স্থানীয় পর্যায়ে এমনকি আওয়ামী নেতারাও হেফাজতিদের দানা পানি খাইয়েছে যারা তাদের দলীয় সরকার পতনের হুমকি দিচ্ছে। সাধারন সমর্থকরা নবী রসূলের অপমানের প্রতিবাদ কারন হিসেবে উল্লেখ করলেও হেফাজতের উত্থানকে ইসলাম কায়েমের পথে এক ধাপ বিজয় হিসেবে ধরে নিয়েছে। দ্বি-চারী আচরনের উদাহারন আল্লামা শাফির ওয়াজ উল্লেখ করে উদাহরন দিয়েছিলাম। ওয়াজের যেসব অংশ কোট করেছি আপনি হেফাজতের শহুরে সমর্থকদের জিজ্ঞাসা করেন ইসলাম এসব বলে কিনা, ততক্ষনাত জবাব আসবে ইসলামে এসব কিছুই নেই, এসব ধর্মব্যাবসায়ী অশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের বানানো ইসলাম। অন্যদিকে তাদের নিজেদের কথানুযায়ী সেই গোত্রের মোল্লার নেতৃত্বেই দেশে ইসলামী গনজাগরন ঘটেছে বলে তারা উল্লসিত হচ্ছে। এই দলের সদস্য সংখ্যা কত? আমি বলতে পারি না, তবে নিঃসন্দেহে মেজরিটি হয়ত না হলেও খুব বড় এক অংশ।
অতীতের বিভিন্ন সময় মৌলবাদের বিজয়ের বড় কিছু ঘটনা আমি উল্লেখ করেছি। ধর্মনিরপেক্ষ জনতায় ভর্তি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেও কিভাবে মৌলবাদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয় তাও আমরা দেখেছি (ফতোয়া নিষিদ্ধ রুল বাতিল করন)। রাজনীতি, হেন তেন নানান কথা বলা গেলেও দেশের এক বড় সংখ্যক লোকের এসবে সায় না থাকলে এসব সম্ভব হত না।
শহীদ মিনার বিজয় দিবসে উপস্থিতি দেখে সামগ্রিক অবস্থা মূল্যায়ন ভুল পদ্ধুতি হতে পারে। এদের সেক্যুলার ধরা হলে আমি এই জাতীয় গানা বাজনায় শরিক হওয়া অনেক নারী পুরুষ চিনি যারা ব্লগারদের ধরে ভয়াবহ সব প্রকাশ্য শাস্তি প্রেক্রাইব করেছে, হেফাজতের সাফল্য কামনা করেছে, যদিও ব্যাক্তিগত গন্ডিতে। এ দেশ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার বিলুপ্তির প্রস্তাব দেন দেখবেন এসব প্রগতিশীলদের বেশীরভাগই আপনার দিকে তেড়ে আসছে। মুজিব আমলে কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারের রিপোর্টে এমন অবাক হবার মত জরীপই দেখা গেছিল। যারা মাদ্রাসা শিক্ষার ধারেকাছেও নেই তারাও খেপে গেছিল। আমাদের মুশকিল হল আমরা সব আমাদের চোখেই দেখার চেষ্টা করি তাতে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাই। আমরা কেবল কারা উপস্থিত হয়েছে, লাখো জনতার ভীড় দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি দেশের ৯৫% লোকেই এই ধারার। এসব যারা সমর্থন করে না তাদের সম্মেলন করার ব্যাবস্থা করলে দেখবেন সেখানেও লাখো জনতার উপস্থিতি ঠিকই ঘটেছে।
হিজবুত তাহরির আপাতত থ্রেট নয় ঠিকই, তবে তাতে উল্লসিত হবার কিছু নেই। তারা দেখিয়েছে যে এ জাতীয় দলের প্রতি সমাজের উচ্চশিক্ষিত অংশের ভাল সমর্থন আসতে পারে। মৌলবাদ যে সুধু অজপাড়া গাঁর মাদ্রাসার প্রোডাক্ট এমন ধারনা এরা সফল ভাবে ভুল প্রমান করেছে। এই জাতীয় দল ভবিষ্যতে আবারো আসবে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। এরা সংখ্যায় নগন্য হলেও থ্রেট হতেই পারত, সেনাবাহিনীতে তারা ক্যু ঘটানোরও চেষ্টা করেছে।
৩। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাথে গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্কের কথা আগেই বলেছি। আচ্ছা, ভাই এবার বলেন তো শাহবাগ আন্দোলন যখন সবচেয়ে যৌবনে ছিল তখন গণজাগরন মঞ্চ থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবী পেশ করার পর জনপ্রতিক্রিয়া কেমন দেখা গেছিল? জাগরন মঞ্চের নেতারা কি এই দাবী থেকে সরে এসে কেবল জামাত শিবির নিষিদ্ধকরনে পেছাতে বাধ্য হয়নি? সরল কারন তো এটাই যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরনের বিপক্ষে বিপুল প্রতিক্রিয়া? আর সেই জামাত নিষিদ্ধকরনের দাবীরও কি অবস্থা তা আর নাই বা জিজ্ঞাসা করলাম। এ নিয়ে আর আলোকপাতের কিছু নেই।
হেফাজতের দাবী দাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির ভন্ডামি মার্কা অবস্থান নীচে আলোচনা করেছি। রাজনৈতিক দলগুলি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এতে আমি যত না তাদের দোষ দেই তার চাইতে বেশী দোষ দেই সেই নিরীহ প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক আম জনতাকে যারা ব্যাবহৃত হতে পছন্দ করে তাদের। রাজনীতিকরা সব দেশেই চায় ভোট পেতে, জনতা যা শুনলে ভোট দেবে তারা তেমনই বলে, আচরনে দেখায়। জনতার এক উল্লেখযোগ্য অংশ নৌকা মার্কায় ভোট দিলে হাতে শাখা সিদূর পরতে হবে বা মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে এমন কথা শুনলে রাগ করলে সেই রাজনীতিক কোনদিন নির্বাচনী সভায় এমন কথা বলতে সাহস পেত? ধান্ধাবাজ রাজনীতিকদের ঘাড়ে দায় চাপানো ইজি এস্কেপ রুট। এর জ্বলন্ত এক প্রমান হতে পারে শাহবাগ আন্দোলনের চরম উত্তাল দিনে রাজাকার বান্ধব জামাতের ভাই বিএনপিরও তাদের প্রতি কিছু সময় সমর্থন জানানো। কারন উপায় ছিল না, আম জনতা যা চায় রাজনীতিকদের সেদিকে না গিয়ে উপায় নেই। রাজীবের মৃত্যু কেন্দ্র করে জনতা দুভাগ হয়ে যাবার পরেই তারা আবার দ্রুত পিঠটান দেয়।
৪।
– ব্যাখ্যা খুব সোজা। আগেই মনে হয় মোটামুটি বলেছি। ধর্মকে প্রচলিত মূল্যবোধের প্রতিপক্ষ হিশেবে টানলে সঙ্ঘাত বাধতে বাধ্য্য। সেটা না করে কেবল ধর্মের ভএল কিছু দিক রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি জাতীয় রাজনীতি করায় সমস্যা হবার কথা নয়। ইসলাম বা অন্য যে কোন ধর্মই পূর্নভাবে মেনে জীবন চালানোর দাবী অবাস্তব। ধর্ম মেনে জীবন চালানোর দাবী যারা করে তারাও কিছু না কিছু মাত্রায় আপোষ ঠিকই করে, কেবল মুখে সেটা স্বীকার করে না এই যা। ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি যারা করে তারা যদি এই আপোষ মানসিকভাবে মানতে না পারে তবে ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন অনিবার্য। ছোট উদাহরন হতে পয়ারে দেশের প্রচলিত আইন এবং ফতোয়ার একই সাথে চলা।
এখানে সবচেয়ে সমস্যার কথা হল ইসলামে পূর্ন বিশ্বাসী হলে আপনাকে রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা ইসলাম অনুযায়ী চালাবার বিকল্প নেই। এটা ধর্মনিরপেক্ষ ধারার মুসলমানেরাও যতই আধুনিক হোক ঠিকই জানে, এবং জানে বলেই এক পর্যায়ে তারাও ধর্ম বা মৌলবাদের কাছে ইমোশনালি জিন্মি হয়ে পড়তে পারে।
৫। আপনার মতে সেটা কিভাবে সম্ভব বিস্তারিত জানতে পারলে ভাল লাগতো। এক সময় ধারনা ছিল আধুনিক শিক্ষার অভাবই মৌলবাদ বিকাশের বড় কারন। এখন আমার মনে হয় না শুধু আধুনিক শিক্ষার প্রসারই সমাধান। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ডানপন্থী বুদ্ধিজীবিদের কিছু নমুনা তো দিয়েছি। আম জনতার মাঝেও এই ধারা ব্যাপক পরিমানেই আছে। পুরো বিশ্বেই দেখা যায় জঙ্গী মৌলবাদীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ আধুনিক শিক্ষা তো বটেই, আবার নানান কারিগরী বিদ্যায় শিক্ষিত।
আশা করি আমার বিরোধপূর্ন অংশগুলির ব্যাপারে কিছুটা হলেও আলোকপাত করতে পেরেছি। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ ভ্রাতা।
@আদিল মাহমুদ,
১. বাজারে যে জিনিসের চাহিদা আছে তার যোগানও থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এ দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চাহিদা আছে তাই ধর্মভিত্তিক দলও আছে। উপরের তলা থেকে নিচের তলা অর্থাত বিশতলা থেকে গাছতলা সবস্তরেই আত্মপ্রবঞ্চক, স্ববিরোধী রাজনীতির চাহিদা আছে আর এদের জন্য আওয়ামীলীগ-বিএনপি আছে, যারা এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
২. ধর্মভিত্তিক দল যারা করে তারা কী পায়? সবচেয়ে বড় দল জামায়াত– গত সরকারে তাদের ২জন মন্ত্রী হয়েছে অথচ বিএনপির ডজন ডজন মন্ত্রী ছিল। এটা সবারই জানা বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের সমর্থকদের মৌলিক পার্থক্য আছে। জামায়াতের সদস্যরা বিশেষ করে সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে আদর্শের যতটা ডিমান্ড আছে বিএনপির সমর্থকরা সেভাবে আদর্শের ধার ধারে না। এই আদর্শ ইসলাম ছাড়া আর কিছু না যদিও দুটি দলই ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করে। আচ্ছা জামায়াতের অন্তর্দলীয় কোন্দলে কত জন মারা গেছে? কদিন পর পর তারা মারামারি করে? আর দেখুন বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের ভেতরে বাইরে সর্বোচ্চ নেতাদের উপস্থিতিতে দলীয় কর্মীরা মারামারি করে কেমন সুন্দর দলীয় পদ অর্জন করে। আদর্শনিষ্ঠতার সঙ্গে দলীয় আনুগত্য এবং শৃঙ্খলার একটি সরল যোগাযোগ আছে। আওয়ামীলীগের সমস্যাগুলো বিএনপির সমস্যার কাছাকাছি।
৩. আপনি নিচে লিখেছেন
এটা আমরা বুঝি হেফাজত বোঝে না? তাহলে তারা লাফাচ্ছে কী আশায়? অন্ধ অনুসারীদের উজ্জীবিত রাখতে, নিজেদের ধর্ম ব্যবসা/মাদ্রাসা শিক্ষা টিকিয়ে রাখতে…।
৪. নিচে আপনি এটাও স্বীকার করেছেন
হিজবুত তাহরিরের নেতাদের অতবোকা মনে করি না। তারাও বোঝে। বুঝলেও ক্ষমতার ভাগ চায়। মনে করেছে একটু রেডিক্যাল হলে জন সমর্থন একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তা কিন্তু হয়নি। জেএমবি’রও একই অবস্থা হয়েছে।
৫. পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, ষোলই ডিসেম্বর যারা লাখে লাখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কোনো পঁচা বাম, সতেজ ডান বা উর্ধ্ব-অধ’র সমর্থক নয়, তারা মূলত বিএনপি-আওয়ামীলীগের সমর্থক। এরা ধর্মমানে, ধর্মানুগত তবে হেফাজত বা অন্য ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মতো এদের জীবনে ধর্ম ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মাদ্রাসা শিক্ষা না থাকলে, ধর্মীয় মজমা না বসলে শাফী, বাবু নগরী, চরমোনাই পীর কী করে খাবেন?
৬. গণজাগরণ মঞ্চে যারা এসেছিলেন তারা কেউ হেফাজতের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন? দু’একজন বিচ্ছন্নভাবে যোগদিলেও দিতে পারে কিন্তু গণহারে কেউ যায় নাই। তারা কি সবাই ধর্ম মুক্ত? মোটেও না। এরা ঐ আওয়ামীলীগ-বিএনপির সমর্থকদের একটা অংশ, যারা ধর্মানুগত তবে এদের জীবনে ধর্ম ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর একটা অংশ আপনার আমার মতো কেউ কেউ(এদের নিয়ে ‘কেন বার বার নাস্তিকেরাই আক্রান্ত হয়’ শিরোনামের একটা লেখায় আলোচনা হয়েছে)।
৭. কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ তো আর স্বমহিমায় বহমান নেই। যে মানুষটি আছরের নামাজ পড়ে শাহবাগে আসত– তার মধ্যে স্ববিরোধ ছিল কোনো সন্দেহ নেই। ইসলাম সঠিকভাবে মানলে শাহবাগের আন্দোলনে অংশ নেওয়া সহজ নয়। একইভাবে পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা সহজ নয়। তবে শাহবাগে যারা অংশগ্রহণ করত সেখানে তার দেশাত্ববোধই প্রকাশ পেত। শাহবাগে যে তীব্র জাতীয়তাবোধের উন্মেষ দেখা গেছে সে কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে? ক’জন হেফাজত সমর্থক ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়? ক’টা মাদ্রাসায় শহীদ মিনার আছে? পহেলা বৈশাখে ক’জন মাদ্রাসা ছাত্রের মন নেচে ওঠে? গণজাগরণ মঞ্চ এসব মানুষদের মধ্যে বিভাজন রেখাটি স্পষ্ট করেছিল।
৮. পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, ষোলই ডিসেম্বর যারা লাখে লাখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, যারা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে সেক্যুলারিজমের সম্ভাবনা আছে। একটা ধার করা গল্প বলি, সূত্র মনে নেই–
জনগণের ভিতর সম্ভাবনা ছিল সেই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়েই ৭১-এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। আমর প্রশ্ন জনগণের ভিতরে যে সেক্যুলারিজমের সম্ভাবনা আছে তাকে কে বা কারা বাস্তবে রূপান্তরিত করবে? এখানেই আপনার শিরোনামটি স্বার্থক মনে হয়–
@আলসে কুড়ে,
ধন্যবাদ আবারো আপনার ইনপুটের জন্য।
১। আসলেই তাই, রাজনীতিও অর্থনীতির ডিমান্ড সাপ্লাই নীতি মনে চলে। এ দেশের লোকে সব কিছুতেই ধর্মের ছাপ দেখতে চায়, তাই পরিনতি বুঝে না বুঝে যাইই হোক রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও ধার্মিক ভাব পছন্দ করে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ব্যাপারে জনতা পুরোপুরি বিভ্রান্ত বলেই আমার মনে হয়। একদিকে তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা শুনলে খেপে ওঠে, নানান রাম বাম ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায় আবার অন্যদিকে এত জরুরী মনে করা সেই ধর্মভিত্তিক দলগুলিকে নির্বাচনে ভোট দেয় না। আমার পর্যবেক্ষনে আপনি যা বলেছেন তাই সত্য মনে হয়,
– রাজনীতিবিদরা ধর্ম নিয়ে প্রবঞ্চনা করে জেনেশুনে, আর জনগন করে ধর্মীয় জোশে।
২।
– খুব ভাল পয়েন্ট। বর্তমানে জামাত বিদ্বেষ যে পর্যায়ে আছে তাতে নুতন প্রজন্মের কাছে এসব আলোচনার পরিনতি তেমন শুভ হয় না। এসবের ইন্টারপ্রেটেশন হল আপনি জামাতের প্রসংশা করছেন, অর্থাৎ আপনি ছাগু। কাছাকাছি অভিজ্ঞতা আমারই হয়েছে। জামাতের একটাই মূল্যায়ন করতে হবে তা হবে টাকা পয়সা ক্ষমতার লোভে অল্প কিছু লোকে জামাত শিবির করে। জামাতের কোন পাতি থেকে শুরু করে বড় নেতা আজ পর্যন্ত দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিয়েছে বলেও শুনিনি। প্রতিপক্ষের ক্ষমতাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার ফল কোনদিনই ভাল হয় না।
৩।
– এর প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে হলে বেস পেছন থেকে শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রবতর্ক তাই রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক কোন ইসলামী সংগঠনই নীতিগতভাবে সাধারনত আওয়ামী বিদ্বেষী। বিএনপি ধর্মভিত্তিক দল না হলেও সংবিধানের ইসলামী করন, মধ্যপ্রাচ্য পাকিস্তানের সাথে ভাল সম্পর্ক, নেতাদের সারাক্ষন ধর্ম ধর্ম ভাব এমন নানান কারনে বিএনপি এসব সংগঠনের কাছে বেটার চয়েস। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এ দেশে বড় ধরনের মৌলবাদী তান্ডব ঘটে না। আমি নিশ্চিত জানি যে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে হেফাজত ১৩ দফা তো দূরের কথা, তাদের মাদ্রাসার চৌহদ্দির বাইরেও আর বেরুবে না।
এবারের হেফাজতের আন্দোলনের ব্যাপারে যতটা বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে এর ভেতর বিএনপি/জামাতের এজেন্ডা ইনফিল্ট্রেশন হয়েছে ভালই, শীর্ষ সব নেতা না হলেও কেউ কেউ কিছু জাগতিক স্বার্থের বিনিময়ে এ কাজে সহায়তনা করেছে, আর বাকিরা এসব কিছুর ধার না ধেরে ইসলাম বিপন্ন এই জিগিরেই মত্ত হয়েছে। লেনদেনের প্রসংগ বাদ দিলেও এরা সকলেই আওয়ামী বিদ্বেষী, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা মানেই ধর্মনিরপেক্ষ নানান নীতির আশংকা মানেই ইসলাম বিদ্বেষ। হেফাজতকে অনেক্যা ভূইফোঁড় বলে মনে করলেও এদের অস্তিত্ব আরো বছর দুয়েক আগ থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল বর্তমান সরকারের নারী নীতি, শিক্ষা নীতি কেন্দ্র করে। আর সাধারন কর্মী, মাদ্রাসার ছাত্র এদের তো কথাই নেই। হুজুররা কবে ডাক দেবে ইসলাম বিপন্ন, ব্যাস জেহাদী জোশে মাঠে নেমে যাবে। মাথার ভেতর অষ্টপ্রহর শিক্ষা দেওয়া হয় ইসলাম তার জন্মলগ্ন থেকেই বিধর্মীদের নানান ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিধর্মী ষড়যন্ত্র না পাওয়া গেলে নাস্তিক মুরতাদ (মানে ধর্মনিরপেক্ষ ধারা) জাতীয় লোকজন তো আছেই।
৪।
– আমার ব্যাক্তিগত ধারনা; হুজি, জেএমবি, হিজবুত তাহরির এদের টেষ্ট কেস হিশেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এরা আরো নুতন মোড়কে আগামী দিনগুলিতে আবারো আসতে থাকবে। এদের জনসমর্থন না থাকলেও খুশী হবার খুব কারন নেই। সন্ত্রাস ঘটাতে খুব বেশী জনসমর্থনের প্রয়োযন পড়ে না। আর বিশেষ করে বিএনপি-জামাত আবারো সরকার গঠন করলে কপালে শনি আছে।
৫.
– ‘ধর্ম মানে’ কথাটার মানে এক একজনার কাছে এক এক রকম হতে পারে। নিঃসন্দেহে এরাই আম জনতার অংশ, বেশীরভাগই হয়ত অন্তত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও জুম্মার নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, অর্থাৎ ধর্মীয় রিচ্যূয়ালগুলি পালন করে – আমরা একেই ধর্ম মানা বলি। হেফাজতি বা জামাতি লোকদের কাছে এই ধর্ম মানা যথেষ্ট নয়। কারন এদের মতে পহেলা বৈশাখ পালন, একুশে ফেব্রুয়ারীতে ফুল দেওয়া বেদাতী শিরকী কুফরি জাতীয় কাজকারবার। এটাই হল ধর্ম কেন্দ্র করে ধার্মিকদের ভেতরেরই মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব।
৬।
– গুরুত্বপূর্ন কথা। এক পর্যায়ে দুই ভিন্ন মূল্যবোধের প্রতীক হিশেবে শাহবাগ এবং মতিঝিল দাঁড়িয়ে গেছিল। গনজাগরন মঞ্চে ধার্মিক দলের যারা এসেছিলেন তারা হেফাজতের আন্দোলনে হয়ত সক্রিয়ভাবে যোগ সেভাবে দেয়নি, তবে হেফাজতীদের প্রতি এক ধরনের ধর্মীয় মমতার কারনে সহানুভূতি বোধ করেছে। হেফাজতিদের প্রতি কঠোর হতে এদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। হেফাজতি ঝড় শুরু হবার পর কিন্তু শাহবাগের গনজোয়ার যা দেখা গেছিল তাতে বলতে গেলে একেবারেই ভাঁটা পড়ে গেছিল।
৭।
– নামাজ পড়ে শাহবাগে আসায় আমি কোন স্ববিরোধীতা দেখি না। নামাজ রোজা করে শহীদ মিনারে তথাকথিত বেদাতি কাজ কারবার করতে পারলে শাহবাগে আসতে সমস্যা কোথায়? নামাজ রোজা পূর্জা অর্চনা এসব হল রিচ্যূয়াল। হ্যা, এটা ঠিক যে ইসলাম পূর্নভাবে মানলে এসব বেদাতি কাজকারবারে শরিক হওয়া সম্ভব নয়। সেভাবে চিন্তা করলে আধুনিক যুগে আমরা যা যা করি তার অনেক কিছুই ইসলাম বিরোধী; বেপর্দা নারীদের সাথে সহশিক্ষা নিষিদ্ধ কাজেই দেশের সব সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। এসব কারনেই হেফাজতি গোছের গোষ্ঠীর লোকজন বলতে গেলে সামগ্রিকভাবে আধুনিক সভ্যতাকেই ইসলাম বিদ্বেষী মনে করে যার বহু প্রমান তাদের নানান ওয়াজে নানান ভাবে ভেসে উঠে; যেমন আধুনিক শিক্ষা হল যত পাশ তত নাশ, দেশের সংবিধান হল বেঈমানদের বিজয়……
৮।
– সম্ভাবনা কিন্তু অংকুরেই বিনষ্ট কিভাবে হতে পারে তাও এবার দেখা গেছে। শাহবাগের মোমেন্টাম কিন্তু ধরে রাখা যায়নি। আমি তো বলব মৌলবাদীদেরই আবারোজয় হয়েছে, মতিঝিল থেকে পিটিয়ে বার করে আপাতত ঠান্ডা করা খুব বড় বিজয় বলব না। মৌলবাদীদের সবচেয়ে বড় বিজয় এখানেই যে তারা এতদিন তান্ডব করেছে স্থানীয় পর্যায়ে (যেমন আমিনী হুজুরের ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায়)। েবার তারা খোদ রাজধানী শহরে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মত শক্তি দেখিয়েছে যা অভূতপূর্ব, এবং তাতে জনসমর্থনও দেখা গেছে ভালই।
– গন্তব্য কোথায় আমিও জানি না। তবে নিশ্চিতভাবে এটা শান্তিপূর্ন সহাবস্থান থেকে দিনে দিনে সরে যাচ্ছে। সেখানেই আশংকা। এবারো কিন্তু শাহবাগ এবং মতিঝিল দুই ষ্পষ্ট ধারার মধ্যে সরাসরি গোলযোগের আশংকা ছিল। বড় ধরনের গোলমাল হয়নি খুব সম্ভবত হেফাজতিদের শত উষ্কানির মুখেও শাহবাগের নেতাদের আপোষহীন শান্তিপূর্ন অবস্থানের কারনে। বিপদ আপাতত কাটলেও ভবিষ্যতে কতদিন নিরাপদে কাটবে? সকলে এখনো যুদ্ধপরাধী বিচারের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে মত্ত আছে। আরো অনেক বড় বিপদ ঘাঁড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
শফিক ও আলসে কুঁড়ে’র আলাপচারিতার পর আসলে খুব বেশী বলার নেই। তাই অতি সংক্ষেপে–
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ বলতে আসলে জেহাদী-জঙ্গীবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে নিষিদ্ধকরণ বোঝাতে চেয়েছি। প্রথম দফায় আমারই বোঝার ভুল ছিলো। তাই বোঝানোরও ভুল হয়েছে। তবে স্বৈরতন্ত্র সব সময়ই গ্রহণযোগ্যতার অভাবে গাছপাকা ফলের মতো আপনি থেকে ঝরে পড়ে না। কখনো কখনো একে ধাক্কা দিয়েই ফেলতে হয়। শুধু বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধকরণই জেহাদী-জঙ্গীবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুরোপুরি অবসান কখনোই সম্ভব নয় [একথা আগেও বলেছি], দরকার সমাজের ভাবমানসের পরিবর্তন; এরসঙ্গে বিশ্ব রাজনীতির যোগসাজসও আছে। তবে সব ধরণের ফৌজদারী অপরাধের [এমনকি ধর্মভিত্তিক দলগুলোরও] কঠোর দমনের পক্ষে আশাকরি আমাদের সকলেই সায় মিলবে।
মৌলবাদের প্রতি সমর্থন অবশ্যই বাড়ছে। কিন্তু এর বিপরীত স্বতঃস্ফূর্ত ধারাটি নিছক ফেলনা নয়। এর সংখ্যাটি তো বটেই এমনকি গুনগত মানটুকুও বিচার করার দাবি জানাই। শাহবাগের চেতনা এই অর্থে অমর, অজেয়। মাদ্রাসা শিক্ষা রাতারাতি তুলে দেওয়ার কথাও হচ্ছে না। নিছক “আধুনিক শিক্ষা” বা “কারিগরি শিক্ষা”র চেয়ে বোধকরি আসমানী কিতাবি শিক্ষার জ্ঞানটুকু সংস্কার জরুরি, এর সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক-ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা যোগ করার প্রশ্নও আছে। মাদ্রাসা থেকে জেহাদী-জঙ্গীবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ উপড়ে ফেলাও জরুরি। শিক্ষা বিষয়ক গবেষকরা বিষয়টি হয়তো খোলসা করতে পারবেন।
[img]http://unmochon.net/sites/default/files/styles/large/public/308075_488425471181549_1029244980_n.jpg[/img]
ধর্মান্ধতার বিচারে জামাত-হেফাজত-বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী মুসলিম লীগের পার্থক্য খুব সামান্যই বলে মনে করি। এরা প্রত্যেকেই রাজনীতিতে প্রয়োজন মতো ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহার করে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যও। তৃণমূল পর্যায়ে এদের প্রত্যেকের উগ্র জাতীয়তাবাদী, তথা সাম্প্রদায়ীক রাজনীতির আসল চেহারাটি কখনো কখনো নগ্নভাবে প্রকাশ্য হযে পড়ে, রামুতে যেমনটি দেখা গেছে [ছবি দ্রষ্টব্য]। এ কথাটি আরেকটি পৃথক নোটে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি [পড়ুন: ভূতেরাই এখন শর্ষের চাষ করছে!]
এই সব বিষঝাঁড় উপড়ে ফেলতে দরকার চেতনার আমূল পরিবর্তন, সমাজের খোলনলচে শুধু নয়, পুরোপুরি সমাজ ব্যবস্থাটিরই পরিবর্তন। কাজটি কঠিন ও সময় সাপেক্ষ; কিন্তু অসম্ভব নয় [আগেই এ বিষয়ে বলা হয়েছে।]
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
জংগী বিষয়ক কথা ওপরে বলেছি।
– আসলেই তাই। দুটো ব্যাপারই অত্যন্ত কঠিন। অনেক অনেক চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে। বিশ্ব রাজনীতি তো নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা আমাদের হাতের বাইরে। সমাজের ভাবমানসের পরিবর্তন হল একটি বিপ্লবের সমতূল্য।
শাহবাগের চেতনা নিয়ে খুব উদ্বেলিত হবার কিছু আছে আমার কোনদিন মনে হয়নি। এটা তো পরিষ্কার যে শাহবাগে যোগ দেওয়া অনেকে আবার হেফাজতের দাবী দাওয়ার প্রতিও সমর্থন জানায়।
রামুর ঘটনার সেই ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের ছবি এটাই প্রমান করে আজকের বাংলায় মৌলবাদ কতটা ছড়িয়েছে বা জনপ্রিয় হয়েছে। এক সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা হত সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়া, এখন দেখা যাচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও তারাও সাম্প্রদায়িক গোলযোগ বাধাতে ভূমিকা রাখছে। যেই হেফাজত তাদের দলীয় সরকারকে হুমকির মুখে ফেলছে তাদেরও স্থানীয়ভাবে অনেক আওয়ামী নেতা দানাপানি খাইয়েছে, কারণ অবশ্য পরকালের নেকির আশা না যতটা তার চাইতে বেশী এলাকায় নিজেদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে ইসলাম সেবক সাজা। মোটিভ যাইই হোক, লাভবান হয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
আদিল, সময়ের তীব্র অভাবে সময় করে বসে, চিন্তা ভাবনা করে কমেন্ট করা হচ্ছে না। আশাকরি ধাপে ধাপে একেকটা চিন্তা নিয়ে লিখবো।
প্রথমেই একেবারে শেষ চিন্তা শুরু করি।
বাংলাদেশে ইসলামী শাসনের সম্ভাবনা কতটুকু? আমার মনে হয় না এদেশে ইরান অথবা আফগানিস্তান স্টাইলের শাসন শীঘ্রই আসার সম্ভাবনা আছে। এর মূল কারন অর্থনীতি, সম্পদ বিহীন, লোকসংখ্যায় নূজ্ব্য, নারীশ্রমের উপরে বিপুল নির্ভরতা, এসব কারনেই কোন ইসলামী সরকারও ইরান-আফগানিস্তান স্টাইলে শাসন, কাজীর বিচার, হাত কাটাকাটি এসব চালাতে পারবে না। এটা হেফাজত, হিজবুত রা ছাড়া সবাই বুঝে, এমনকি জামাতরাও। জামাতি প্রতিষ্ঠান গুলোতে দেখুন অর্থনীতি ব্যবসার প্রয়োজনে নারী-পুরুষের সহাবস্তান।
এছাড়া আরেকটা ব্যপার হলো যে যেসব দেশে গনতন্ত্র কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে সেখানে ইসলামী বিপ্লবের সম্ভাবনা কম। মানুষ একবার গনতান্ত্রিক অধিকারের স্বাদ পেলে তা সহজে ছেড়ে দিতে পারে না। বাংলাদেশে ৭১ এর পরে যে রকমেরই সরকার থাক, মোটামুটি মানের কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা এসবের উপরে সিস্টেমেটিক নিষেধাজ্ঞা বেশীদিন ছিলো না। যে যাই বলুক না কেনো, বিশুদ্ধ ইসলামী শাসন যে চরম অগনতান্ত্রিক, তা এমনকি অনেক অশিক্ষিত লোকেরাও বুঝে। বাংলাদেশে হয়তো কখনোই ইরানী স্টাইলে পূর্ন ইসলামী শাসন আসবে না। জগাখিচুরী মার্কা একটা একটা কিছু হবে, সেক্ষেত্রে কিন্তু জনগনের পক্ষে ইসলামী শাসনের স্বরূপ বুঝতে পারাও সহজ হবে না।
মিসর, তিউনিসিয়ার মতো জগাখিচুরী মার্কা ইসলামী শাসন কায়েম হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই দিনে দিনে বাড়ছে। এর জন্যে অবশ্যই দায়ী আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। আওয়ামী লীগের মূল অপরাধ দেশে গনতান্ত্রিক ক্ষমতা বদলের পথ সংকুচিত করে সেকুলার রাজনীতিকে সংকটে ফেলা। আর বিএনপি’র নেতৃত্ব আর সংগঠনের চরমতম দূর্বলতা তো এখন অবশ্যাম্ভীভাবেই তাকে জামাত-হেফাজতের কোলে ঠেলে দিচ্ছে। বিএনপি জামাতে বিলীন হবে, নাকি জামাত বিএনপিতে বিলীন হবে, নাকি দুই পার্টি মিলে কোন বিশেষ এরেন্জমেন্টে পৌছবে এটাই এখন দেখার বিষয়।
একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হলো যে বাংলাদেশে আসলেই সেকুলার মূল্যবোধের পক্ষে বড়ো জনসমর্থন আছে কি না সেটাও এনালিসিস করা দরকার। সংখ্যালঘুরা অবশ্যই সেকুলারিজমের পক্ষে এবং শহরান্চলে সংষ্কৃতিমনা শিক্ষিতদের একটা অংশ সেকুলারিজম চায় কিন্তু এর বাইরে সেকুলারিজমের নীতির পক্ষে কতজন আছে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। এমনকি আওয়ামী লীগের ভেতরে এক বিপুল অংশ আওয়ামী লীগ পুনরায় আওয়ামী মুসলিম লীগে পরিনত হওয়াকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করবে। এরা অনেকেই চায় এদেশে ইসলামী মূল্যবোধের শাসন আসুক এবং সেটা আসুক আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
আওয়ামী লীগের এখনকার তত্ববধায়ক বিষয়ে অযৌক্তিক অবস্থান প্রকারান্তে মূল্যবোধের দ্বন্দ্বে আধুনিকতাকে অনেক পিছিয়ে দিচ্ছে। এখনই দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামীরা সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেমেছে। এই সিটি নির্বাচনের ভোটের প্যাটার্ন দেশের জনমতের সম্ভাব্য গতিপথকে অনেকটাই পরিষ্কার করবে।
@সফিক,
আমিও মনে করি না যে বাংলাদেশে ইরান আফগান টাইপের ইসলামী বিপ্লব সম্ভব। ইরান, আফগানের সাথে আমাদের মৌলিক তফাত আছে। ও দুটো দেশই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থার আগে ইসলামী ব্যাবস্থাতেই ছিল। আমাদের দেশ ব্রিটিশ আমল থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থাতে আছে। ও দুটো উদাহরন (সাথে মিশর) দিয়েছি এটা বোঝাতে যে শুধুমাত্র দমন পীড়ন করে মূল্যবোধগত পরিবর্তন করা যায় না, যাদের দমন পীড়ন করা হয়েছে তারাই এমনকি আবার ক্ষমতায়ও আসতে পারে।
আমাদের দেশে ইসলামী বিপ্লব গোছের কিছু হবে না, হলে হবে পাকিস্তানের মত জগা খিচূরী কিছু। পাকিস্তানে সময়ে সময়ে শরিয়া আইনের কিছু প্রয়োগের চেষ্টা হয়েছে, ভয়াবহ ফল দেখে আবার বদলও করতে হয়েছে। ধর্ম নিয়ে লোকের অনুভূতি যে হারে বাড়ছে তাতে নিঃসন্দেহে লাভবান হচ্ছে এবং হবে বিভিন্ন মৌলবাদী গ্রুপগুলি। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হল ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার দাবী যারা করেন তারা নিজেরাও আসলে জানেন না তারা ঠিক কি চান। এই দলের কারো স্বপ্ন খিলাফত কায়েম করা (পশ্চীমি গনতন্ত্র বাতিল), কারো মতে আবার গনতন্ত্র ঠিক আছে…এই দলের মূল দাবী আসলে তাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব আড়ম্বরের সাথে সকল ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা। এই দলের সদস্যরা দেশের নামের সাথে ইসলামিক রিপাবলিক লাগিয়ে দিলে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন, ভাবখানা তাতেই ইসলাম বা শরিয়া কায়েম হয়ে গেল। এরা নিজেরাও আসলে কোরান হাদীসের সব আইন যে এই যুগে কায়েম করা যায় না বুঝে, কিন্তু দেখতে চায় যে আইনের আগে ইসলামী শব্দটা লাগানো হয়েছে।
– আমি ঠিক এ কারনেই চাই যে লোকের অবসেশনটা কাটুক। কাটানোর একমাত্র উপায় সে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। ওপর সুষম পাঠক আমার হতাশার কারন জিজ্ঞাসা করেছিল। হতাশা এখানেই যে ধর্মকে জীবন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র এবং নিখূত উপায় এই ধারনা ধার্মিকরা তো বটেই, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ ধারার ধার্মিকরাও সরাসরি স্বীকার করতে পারে না। জেনে শুনে এত লোকে আত্মপ্রতারনা বা অভিনয় করতে থাকলে তার ফল দেখা দিতে বাধ্য।
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থাই আসলে বেশীরভাগ লোকে চায়, কিন্তু সেটা সরাসরি বলতে পারবে না। লীগের তো কথাই নেই, বিএনপিও ধর্মভিত্তিক দল নয়, ধর্মনিরপেক্ষ দলই, তফাত শুধু এরা ধর্মকে জন্ম থেকেই চমতকার ভাবে ব্যাবহার করছে এবং জনতাও আনন্দের সাথে ব্যাবহৃত হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলির মোট ভোট হয় ৮ শতাংশের মত। তারপরেও লোকে এমন একটা ভাব করে যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ছাড়া পরিত্রানের উপায় নেই। এই রোগ কি মারাত্মকারে বেড়েছে তা এবার শাগবাগ আন্দোলনে দেখা গেছে। লোকের অবসেশনের সবচেয়ে বড় সুবিধে পাবে মৌলবাদীরা। এটা মোটামুটি দেখা গেছে যে দেশের এক বড় সংখ্যক লোকের কাছে এখন ধর্মীয় পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ন। ধর্মীয় বিজয়ের স্বার্থে এরা আল্লামা শাফি জাতীয় ব্যাক্তিত্বকেও ক্ষমতায় বসাতে আপত্তি করবে না।
দেশের ইসলামী শক্তি বলতে যা বোঝায় এরা ট্র্যাডিশনালিই আওয়ামী বিরোধী। মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব বহু আগ থেকেই ছিল, পাকিস্তান আমলে সাময়িক চাপা পড়েছিল বাংগালী জাতীয়তাবোধের উত্থানে, ধর্মনিরপেক্ষতার জয়জয়কার স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাড় থেকে পাকিস্তানীরা নামার পরেই দুরীভূত হওয়া শুরু করে। যে কারনে ‘৭৫ এর পর জিয়ার নিজের পক্ষে জনসমর্থন পেতে কোন সমস্যা হয়নি (যদিও সেটা তার জনসমর্থনের একমাত্র কারন নয়), কারন ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থার সমর্থকরা আওয়ামী লীগের সেক্যুলার ব্যাবস্থা কখনোই মনেপ্রানে মেনে নিতে পারেনি। বংগবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর অনেকেই উল্লসিত হয়েছিল এবার ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম হল বলে, এমনকি বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসেও বহু ফোন এসেছিল ইসলামী শাসন কায়েম হয়েছে কিনা জানার জন্য। খুনীচক্রও তাদের ভাষনে এমন ইংগিত দিয়েছিল, খোন্দকার মোশতাকও এমন আবহ সৃষ্টি করেছিল। কড়া ধর্মপ্রানদের ভেতর পরিসংখ্যান নিলে নিঃসন্দেহে আওয়ামী সমর্থকের সংখ্যা কম পাওয়া যাবে। কাজেই হেফাজতি/অন্যান্য ইসলামী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। তবে হেফাজতিরা অন্যান্যবার হয়ত প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামতো না, এবার নামবে। প্রার্থী না দিলেও এন্টি আওয়ামী প্রচারনা চালাবে।
@সফিক,
আপনার সাথে অনেকটাই একমত। কিন্তু ক্ষমতায় আসাই সবকিছু নয়। বাংলাদেশে মৌলবাদিদের ক্ষমতা কিন্তু কম নয়, এটি সবসময়ই সেক্যুলারিজমের দিকে যেতে আমাদের বাধা দিচ্ছে। এছাড়া তাদের ক্ষমতা ও লোকবল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এগুলো আশংকার বিষয়।
@সৈকত চৌধুরী,
অবশ্যই তাই। আপাত চোখে মৌলবাদীরা ক্ষমতায় নাই এসব মনে হলেও তাদের বিজয় বহু ক্ষেত্রেই অতীতে হয়েছে যার কিছু উদাহরন লেখায় দিয়েছি। তাদের প্রতি জনসমর্থন যেভাবে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে এরা আরো অনেক কিছুই করতে পারে, ক্ষমতায় আসা না আসায় এমন কিছু আসবে যাবে না।
@সৈকত চৌধুরী,
এই বিভিন্ন কারণ নিয়ে একটা লেখা সাজাও তো সৈকত। বহুদিন হয় তুমি আর অনন্ত কিছুই লিখো নাই। ব্লগটা যে আধমরা হয়ে যাচ্ছে একটু ঘা মেরে জাগাও। অবশ্য সিলোটি ছিলখটা মাতাত রাইখ্যা- হাছা খতায় মাই বেজার, গরম ভাতে বিলাই বেজার।
ডানে বামে শাফি-মাজহার, একটু খেয়াল কইরা।
শুনো এক ঘটনা বলি- আমার ব্যবসার সকল কর্মচারী বেজায় ধার্মিক। বি এন পি, জমিয়তি, তাবলিগি, খেলাফতি সবাই মিলে এক মোহনায় এসে হেফাজত নাম ধারণ করেছে। দু-একজন কাজের ফাঁকে ফাঁকে নামাজও পড়ে। যদি তারা টের পায় আমি ব্যবসায় উপস্থিত নই তাহলে মাশাল্লাহ তারা ইসলামী মহাসম্মেলন বসিয়ে ছাড়বে। ৬ তারিখের ঘটনা। টের পায় নাই আমি ভিতরে আছি, ওয়াজ শুরু হয়েছে-
আল্লাহর কসম দেখিও কী ঘটে যদি সরকার ওলি আউলিয়াদের উপর কোন প্রকার অত্যাচার করে বা তাদের বাধা দেয়। আল্লাহ পাক কাফিরদের বিরোদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেছেন এ রকম নজির আল্লায় দেখাইছে বদরের যুদ্ধে, মক্কা বিজয়ের সময়ে। যদি সরকার আর্মি ছাড়ে, আল্লাহর কুদরতে দেখবেন আর্মিরা কানা হয়ে যাবে, কিংবা দুই লাখ মাদ্রাসার ছাত্রকে আর্মিদের চোখে বিশ লাখ লাগতে পারে, তারা ভয় পেয়ে যাবে পালাইতে না দিশ পাইবে। আলেমদেরকে বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে কিছু করতে হবেনা আল্লায় আর্মি ফেরেস্তা পাঠাইয়া সাহায্য করবো। নমরুদের মশার কথা মনে আছে, আব্রাহার আবাবিল পাখির কথা মনে আছে? মক্কা বিজয়ের সময় মিসওয়াকের শক্তির কথা মনে আছে? মুসলমানদের মিসওয়াক করা দেখে কাফিররা মনে করেছিল এরা তো মানুষ খাওয়ার জন্যে দাতে শান দিচ্ছে। ডরাইয়া কাফিররা আর যুদ্ধ করে নাই। হেফাজতের লাখ লাখ মাদ্রাসা ছাত্র ওলি আউলিয়ারা আসছেন এক হাতে তাসবিহ আরেক হাতে মিসওয়াক। যদি আওয়ামী লীগ তাদের সাথে বেয়াদবি করে তাহলে এই সরকার নাস্তে নাবুদ হয়ে যাবে।
আরো কিছুক্ষণ ওয়াজ শুনতে পারতাম, একজন কাষ্টমার আসায় ওয়াজ থামাতে হলো। আমি নিজে ইচ্ছে করে এদের সাথে কোন ইস্যু নিয়ে আলাপ করিনা, কারণ তারা তো চায়ই কাজে ফাঁকি দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে বসে বিজনিসের বারোটা বাজায়ে সোয়াব কামাতে। শেষে একদিন খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম একই ওয়াজ আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব করে আসছেন বিগত কয়েক দিন যাবত। ৭ তারিখ আমার বেয়াড়া এক ওয়ার্কার ওয়াজি কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করে- ‘ঢাকায় কি মশার আকাল পড়েছিল’? অপজিশন পার্টির জবাব- ‘নুহ আলাইসাল্লামের প্লাবনের অপেক্ষা করো, আসছে আল্লাহর গজব আসবে’। প্রশ্নকারী আবার প্রশ্ন করে- ‘সেই প্লাবনে তুমি বাঁচবে তো’? ওয়াজীর সাফ উত্তর, ইনশাল্লাহ।
মাঝে মাঝে একা একা হাসি, মাঝে মাঝে রাগ হয় কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্যে। কিন্তু তাদের ছাড়া আমার চলেওনা। দোষটা এদের নয়, অন্য কারো। তুমি সেই মিথ্যেবাদী, চরম ভন্ড প্রতারকদের নিয়ে লিখো।
@আকাশ মালিক,
এমন ওয়াজ মুখস্ত করলেন কিভাবে?
গজব অবশ্যই আসবে।
মশা পাখি তো আর এই কামান বন্দুক লেসার গানের যুগে পাথর ঠোঁটে যুদ্ধে আসবে না। সামনের ইলেকশনে লীগ হারলেই সেটা হবে গায়েবী গজব। আর যদি জেতে তাতেও সমস্যা নেই, দুনিয়ায় জালেমরা জয়ী হবে মোমিনরা কষ্ট পাবে এটা কিতাবেই বলা আছে, পরকালে আসল ফল পাওয়া যাবে।
ধার্মিক বনে যাওয়া সবচেয়ে সেইফ, কোনভাবেই পরাজয় নাই।
@আদিল মাহমুদ,
অতি সাম্প্রতিক একটি তপ্ত মাঠের উত্তপ্ত তর্কযুদ্ধ ফেরত লেখকের লেখাটায় আরেকটু গভীর অথচ সুষ্পষ্ট ঝরঝরে, আরেকটু তিক্ত অথচ বাস্তব, একটু শার্প অথচ অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য, কিছুটা বিদ্রোহী প্রতিবাদের ছাপ, একটি প্রলয়ের আফটারশক আশা করেছিলাম। লেখাটায় বাংলাদেশের জন্মকে (নাকি মুক্তিযুদ্ধকে) যারা দুই কুত্তার কামড়া কামড়ি বলেছিলেন, আজকের বাংলাদেশের এই অবস্থানে আসতে তাদের কনট্রিবিউশনটা কী তা অনুল্লেখিত রয়ে গেছে। আর অবাদ তথ্য-প্রযুক্তির অবদান বা ভুমিকা কী কোন প্রভাব ফেলেছে সেটাও দেখার বিষয় ছিল।
ব্যস্ত আছি পরে আলোচনায় যোগ দিবো।
@আকাশ মালিক,
আপনের প্রত্যাশা বুঝতে গিয়ে তো আমার খাবি খাওয়ার দশা…এই রকম সমালোচক আর দুইটা থাকলে আমার ব্লোগার হওয়ার আশা এই জীবনে বহু আগেই ত্যাগ করতে হত।
দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি বিষয়ক বক্তব্য ছিল বামপন্থী নেতা আবদুল হকের (এই নুহুর্তে পুরো নিশ্চিত নই অবশ্য)। আমি আসলে আমার লেখা কারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ছিল বা আজকে আছে সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনি। এ লেখার ব্যাপ্তি আরো ভেতরে বলে মনে করি। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ নির্ধারনে মূল ভূমিকা রেখেছিল ধর্মীয় দর্শনের আলোকের জাতীয়তাবোধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক চেতনা……বাম কিছু ফ্র্যাকশন এই দলে ছিল তবে তাদের ভূমিকা খুবই সীমিত। তাদের মূল কারন ছিল চীনের ধামাধরা। বর্তমানে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিতে এদের কোন অস্তিত্ব নেই, একচেটিয়া অবস্থান হল ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ওয়ালাদের। তাই কুত্তা বিশেষজ্ঞরা আমার কাছে গুরুত্ব পায়নি।
আমার লেখায় আমি জোর দিতে চেয়েছি কিছু বিষয় যা সহজে আলোচনায় আসে নাঃ
– ধর্মকে ভিত্তি করে আমাদের জাতীয় চেতনা/মূল্যবোধের বিভেদ, এর কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা বর্তমান।
– ধর্মভিত্তিক চেতনার জোশে কিভাবে দ্রুত মৌলবাদীরা জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠছে (যেমন হেফাজতের ব্যাপক গনসমর্থন)।
– অন্যান্য মুসলমান দেশের সাথে তূলনা করে এই বিভাজন অদূর ভবিষ্যতে কি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে তার কিছু সম্ভাবনা আলোচনা।
অবাধ তথ্য প্রযুক্তির কাহিনী আলোচনা করা আসলেই দরকার। সত্য বলতে এ বিষয়ে লিখতে গেলে সকলেরই গালি খেতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয় যে বাকস্বাধীনতা পাবার মত পরিপক্কতা আমাদের এখনো হয়নি।
প্রাচীনকাল হতেই ধর্ম একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার তবে সবচাইতে বড় irony হল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা সবচাইতে বেশি ধর্মের দোহাই দিয়েছে তাদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের বিধিবিধান মোটেও ঠিকভাবে মানেনি!!!!!
@সংবাদিকা,
ধর্মের প্রয়োযনীয়তা কিংবা ব্যাবহার বহুবিধ হতে পারে; মানসিক শান্তি, পরকালের পাথেয়, উন্নত জীবন দর্শন……রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোন জাগতিক স্বার্থে ব্যাবহারও একটি ব্যাবহার। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার আমাদের দেশে খুবই সাধারন, যদিও এর মাত্রা বর্তমান সময়ের মত এত নগ্ন এবং প্রকট হয়নি। আমার এ লেখার বিষয় অবশ্য সেটি নয়।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ, সোজাসাপ্টা কথা বললে, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা কখনই নিরাপদ নয়। মুসলমানরা এসব বুঝেও না মানেও না। (তবে তারা যখন কোন দেশে সংখ্যালঘু তখন ধমনিরপেক্ষতাকে সাপর্ট করে! এরও অবশ্য কারণ আছে, জিহাদের সময় সব চলে, চুরি-ডাকাতি-মিথ্যা কথা, সে হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা তো মামুলি বিষয়) কাজেই বাংলাদেশে যে সঙ্কট আপনি দেখিয়েছেন তা বাস্তব এবং এর কোন স্থায়ী সমাধান নেই।
আমি অনেক হিন্দু কট্টর, বিধর্মী বিদ্বেষি দেখেছি, ভয়ংকরভাবে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরে আছে তারা। ধর্মীয় আচার-আচরণে চরমভাবাপন্ন, সাম্প্রদায়িক বিষ অন্তরে লালন করেন। কিন্তু তাদের মনের কোথাও অবচেতনেও তার ধর্মীয় বিশ্বাস তথা তার ধর্মরাষ্ট্র তথা রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বা ইচ্ছা কাজ করেনি। বাংলাদেশের কোন খ্রিস্টানের সঙ্গে বা বৌদ্ধের সঙ্গে আমার চলার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ রাষ্ট্রের (খ্রিস্টান রাষ্ট্র বা বৌদ্ধ রাষ্ট্র অর্থে নয়) চেহারা দেখে বুঝতে পারি তারা আদৌ ধর্ম রাষ্ট্রর কথা ভাবে না। তাদের দেশ চলে ধর্মনিরপেক্ষ আইনে। কিন্তু এমন একটা দেশ দেখান যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অথচ তারা শরিয়া আইন চালু বা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা দাবী করেছ না বা প্রতিষ্ঠা করেনি। এর কারণ কি?
ইসলাম কেবল ধর্ম নয় রাজনৈতিক মতবাদ। প্রত্যেক মুসলমান শুধু ব্যক্তিগত ধর্ম পালন করবে না তাকে ঈশ্বরের আইন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যও লড়ে যেতে হবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গা কোথায়?
ভারতে বিজেপি বা শিবসেনা উগ্র হিন্দুত্ব প্রচার করে। একজন বাল থ্যাকার বা বোম্বাইকে মুম্বাই করা নিঃসন্দহে হিন্দুত্বের চিহ্ন কিন্তু তা কখনই ভারতের জন্য বাংলাদেশের মত পরিস্থিতি তৈরি করেনি। ধর্ম নিপরপেক্ষ সংবিধান বদলে হিন্দু বেদ বা অন্য কোন হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার মত আমজনতার দাবী কখনই উঠেনি। বাংলাদেশে যেটা আমজনতার দাবী হয়ে উঠছে ক্রমশ।
আদিল, আপনার লেখায় আমি কোন সমাধান দেখিনি। আমার ভুল হতে পারে। আমার মনে হয়েছে আপনি এক ধরণের আত্মসমর্পণ করেছেন পরিস্থিতির কাছে:
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হবে আর আমরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকবো? আর মেনে নিব? তুরষ্কের মত কোন ইসলামী দল হলেই অত ভাবনা নেই। তাহলে বাংলাদেশ করার কি প্রয়োজন ছিল? পাকিস্তানই তো ভাল ছিল। বাংলাদেশ থাকবে অথচ তার আদর্শ থাকবে না। জনগণ কি সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়?
@সুষুপ্ত পাঠক,
ধন্যবাদ আপনার চমতকার মূল্যবান বক্তব্যর জন্য।
– অভিযোগ অনেকটাই সত্য। সমস্যা অনেক অনেক জটিল; শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত করতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামি দূর করতে হবে এ ধরনের কিছু কাগুজে কথা পাতার পর পাতা লিখে যাওয়া যেতে পারে তাতে এত জটিল সমস্যার সুরাহা হবে না। সমাধান ঠিক কোথায় আমার জানা নেই, বরং বলা ভাল সমাধান খুবই সহজ, কিন্তু তা এতই সহজ যে কারোউ মনঃপূত হবে না। ধর্মকে জীবন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র ও নিখুত মাধ্যম চিন্তা পুরোপুরি ত্যাগ করতে না পারলে কোন পথ নেই। সেটা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ ধারার মধ্যে যারা নিজেদের মুসলমান আইডেন্টিটি সম্পর্কে চেতন, মৌলবাদ বিরোধী তারা ধর্ম ও রাষ্ট্রকে পৃথক রাখার পক্ষপাতি হলেও ধর্ম যে জীবন নিয়ন্ত্রনের একমাত্র ও নিখুত মাধ্যম নয় সেটা কিন্তু সরাসরি বলতে পারেন না। কারন সেটা সরাসরি বলার মানে হল ইসলাম পূর্নভাবে মানা যায় না সেটা স্বীকার করে নেওয়া। সেটা স্বীকার করলে কি আর নিজেকে মুসলমান দাবী করা যাবে? তাই একটা পর্যায়ে তাদেরও মৌলবাদের কাছে নতি স্বীকার করতেই হয়। কাজেই মৌলবাদ কম বেশী সব মহল থেকেই স্বীকৃতি পায় এবং পাচ্ছে। আশাবাদী হবার অবকাশ তেমন আর কোথায় থাকে?
ধর্মনিরপেক্ষ ধারার ধার্মিক লোকেরা মৌলবাদী গোঁড়ামী ঠেকানোর উপায় হিসেবে ধর্মীয় সূত্রগুলির নিজেদের পছন্দ মত নরম ব্যাখ্যা ব্যাবহার করে বোঝাতে চান যে মৌলবাদীদের ধর্ম শিক্ষা সঠিক নয়। অন্যদিকে আবার তারা সেক্যুলার সংবিধান পালটে ধর্মভিত্তিক সংবিধান করার প্রস্তাবনা মানেন না। ব্যাপারটা পরস্পর বিরোধী না? আসল ধর্মে কোন সমস্যা না থেকে থাকলে তারা ধর্মভিত্তিক সংবিধান কায়েম করা আবার মানেন না কেন? তারা আসল ধর্ম সম্পর্কে এতটা নিশ্চিত হলে মৌলবাদীরা কিভাবে বছরের পর বছর ধর্মীয় জগত দখল করে থাকে? আফটার অল রাষ্ট্র ক্ষমতায় স্বাধীনতার পর থেকে মৌলবাদীরা নয়, ধর্মনিরপেক্ষ ধারার লোকেই ছিল বেশী। তারা ধর্ম সংস্কার করতে পারেন না কেন? ধর্মনিরপেক্ষ ধারার লোকদের মুসলমানত্ব নিয়ে এ জন্য ধর্মীয় ব্যাবস্থার সমর্থকরা প্রায়শই নানান ভাবে সংশয় প্রকাশ করেন। যাদের মধ্যে ধর্মভাব অতি প্রবল তাদের মাঝে আওয়ামী বিদ্বেষ হবার সম্ভাবনা বেশী। বড় দুই দলের ভোট ব্যাংক গঠনে ধর্মীয় মূল্যবোধের বড় ভূমিকা আছে।
অন্যদিকে ধর্মীয় ব্যাবস্থাও কি দাবীকৃত সকল সমাধান আনতে পারবে? সেটাও সম্ভব নয়। ধর্মীয় ব্যাবস্থা এই যূগে কখনোই ধর্মগ্রন্থ নাজিল হবার মত সময়কালের মত সম্ভব নয়, তাই ধর্মীয় ব্যাবস্থা কায়েম করা হলেও সমস্যা যাবে না, কিছু না কিছু মাত্রায় ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মূল্যবোধের শরনাপন্ন হতেই হবে। কট্টরপন্থীরা সেটাও মানবে না। তুরষ্কে বর্তমানে ধর্ম সংস্কারের বিশাল প্রজেক্টে যা হচ্ছে তা কি বাংলাদেশের শাফি হুজুর বা সাঈদী হুজুররা মানবেন? তারা হাদীস বাদ দিচ্ছে নিজেদের বুঝ অনুযায়ী, কোরানেরও নুতন যুগোপযোগী ব্যাখ্যা বার করছে। মৌলবাদী বলতে আমরা যাদের বুঝি তারা কি এসব সহজে মানবে? তুরষ্কে এই দ্বন্দ্ব কতটা এবং কিভাবে প্রকাশিত হয় তা দেখার বিষয় তবে পাকিস্তান বাংলাদেশের মত দেশে নিশ্চয়ই তেমন সংস্কার খুব একটা শান্তিপূর্ন হবে না। তাই মুসলমান সমাজগুলিতে একের পর এক ট্রানজিশন চলবে, ষ্টেবিলিটি বলতে যা বোঝায় তা আসবে না।
আমার হতাশা (বলা ভাল বাস্তবতার প্রতিফলন, সেটা কারো কাছে হতাশার আবার কারো কাছে হয়ত আশাবাদ) যে যুক্তিসংগত তা কিন্তু আপনার কথাতেও ফুটে উঠেছে লক্ষ্য করুন। কারন বাস্তবতা সেটাই, আশাবাদের নামে অবাস্তব স্বপ্ন দেখানো উচিত নয়।
আপনি শুরু করেছিলেন,
– আমি আর আশাবাদী কতটা হই বলেন 🙂 ?
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
তার কি কোন প্রয়োজন আছে? আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে, বা তারও আগে, সেই পাকিস্তান আমলে মানুষ তো বিশ্বাসে এইরকমই ছিল। মূল সমস্যা কিন্তু আমজনতায় নয়। আমজনতা নামাযি-রোজাদার হবে, মসজিদ মন্দিরে যাবে, ব্যস এই পযর্ন্ত । ধর্ম কি বলেছে সেটা তারা জানতে পারে মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে। মুসলমানের কারেন্ট ঈমানী দায়িত্ব কোনটা এটা ইমাম সাবরা ঠিক করে দেন। আমার ছোটবেলায় মসজিদে ইমাম সাব শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় যে ভাষণ দিতো সেখানে জিহাদী টাইপের কিছু থাকতো না। নবীর গুণগান করত, মসজিদে দান করলে পরকালে কিভাবে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যাবে এইরকম সব কথাবার্তা। আমি বলতে চাইছি আজকের মত ইমাম সাবরা মানুষকে বিষিয়ে তুলতো না জিহাদী জোসে। এর ব্যতিক্রম নেই তা বলছি না। কিন্তু আজকের মত পরিস্থিতি ছিল না হয়ত স্বীকার করবেন। তখন পর্যন্ত হুজুররা কিছু নিয়ে রাস্তায় মিছিল বের করলে লোকে কৌতুক বোধ করতো। মোট কথা আমি বলতে চাচ্ছি, এই মোল্লা শ্রেণী আমজনতাকে দিক নিদের্শনা দেয়। তাদেরকে পহেলা বৈশাখ আর একুশে ফ্রেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে হিন্দুয়ানী ফতোয়া গেলায়। আমজনতার ধর্মীয় বিশ্বাস আমি মনে করি না রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপদের কথা।
আদিল, আমি আপনার লেখাটার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। শুধু খারাপ লাগছিল আপনি পুরো ব্যাপারটা (যা আমরা আশংকা করছি হতে পারে) মেনে নিচ্ছেন বিনা প্রতিরোধে। আমার মন্তব্যের প্রতি উত্তরে জানালেন, এর কোন সমাধান নেই। যেটুকু আছে তা-ও আদৌ সম্ভব নয় প্রয়োগ করার। এই চরম কথা বলার সময় কেবল মৃত্যুমুখে পতিত কোন কিছু সম্পর্কেই বলা যায়। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ মৃত্যুমুখে পতিত হয়নি, সে আক্রান্ত হয়ছে মাত্র। আমি আশা ছাড়িনি। অবাস্তব, বোকার মত আশা আমি করিও না। আশা ছাড়া যায় না কারণ আশা ছাড়লে পরাজয় মেনে নিতে হয়। আমি পরাজয় মেনে নিতে রাজি নই। পরাজয় মেনে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে অগণিত প্রগতিশীল মানুষ, প্রতিষ্ঠান, আন্দোলন, সব -সব বৃথা। এমন কি এই মুক্তমনা সাইটটিও…।
আমার আগের মন্তব্যে লিখেছিলাম, স্থায়ী সমাধান নেই। এর মানে এই নয় আমি কোন আশার সম্ভবনা দেখি না। তবে সব দেশে-শুনে আমিও কম-বেশি হতাশ আপনার মত। কিন্তু স্থায়ী সমাধান নেই মানে কোন ঔষধ নেই তা তো না। মৌলবাদীদের মতিঝিল থেকে যেভাবে তাড়ানো হয়েছে ওরা নিজেরাও বোধহয় কল্পনা করতে পারেনি। এটা একটা বিড়াট আঘাত বলবো আমি সমস্ত মৌলবাদী আন্দোলনের জন্য। আপনি কি মনে করেন, হেফাজত আর আগের মত একচ্ছত্র হামবড়া দেখাতে পারবে? তাদের ১৩ দফার বিপরীতে নারী স্পীকার নিয়োগ আমি মনে করি সরকার একটা ম্যাসেজ দিয়েছে। এগুলো নিয়েও বিতর্ক করার সুযোগ আছে আমি জানি। কিন্তু আমি মনে করি সরকার এখন যদি হেফাজতের এই অবস্থায় এমন কিছু কার্যক্রম নিতে পারে যা মৌলবাদ আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাহলে গত কয়েক মাস যে স্বপ্নের ফানুস দেখছিল তারা, চুপসে গিয়ে বাস্তবে ফিরে আসবে। ওরা হয়ত বুঝবে, আর যাই হোক, বাংলাদেশ তো আর মধ্যপাচ্য না!
হ্যাঁ, এখনও বলি এটা কোন স্থায়ী সমাধান দিবে না। কেন, তা আমি প্রথম মন্তব্যে বলেছি। কারণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মৌলবাদ হয়ত শুধু নিয়ন্ত্রণ করা যায়, পুরোপুরি দমন করা যায় না। এটাই কি তাহলে সমাধান?
@সুষুপ্ত পাঠক,
আবারো ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। ভাল ভাল কিছু কথা বলেছেন যাতে চিন্তার খোরাক আছে।
ইসলামই একমাত্র, পূর্নাংগ ও নিখুত জীবন ব্যাবস্থা এমন বিশ্বাস ইসলামে চিরকালই আছে। পাকিস্তান, ব্রিটিশ, মোগল আমলেও ছিল। আজকের দিনেও আছে। সেটা থাকলেও দাবীটা যে আসলে পরম সত্য নয় সেটা মুসলমানরা জানে না এমন নয়। তারপরেও এই দাবী তারা মেনে নেয় সব আমলেই, সোজা কথায় মুখে সরাসরি স্বীকার না করলেও জীবনের প্রয়োযনেই এর সাথে কম্প্রোমাইজ করে ঠিকই।। এটার সাথে অনেকটা আমরা যেমন দাবী করতে ভালবাসি সকল দেশের চাইতে সেরা আমার বাংলাদেশ এমন সাহিত্যিক দাবীর মিল আছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই আধুনিক দর্শন, শিক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হবার পর থেকে পূর্নাংগ জীবন বিধান কায়েমের দাবী পুরোটাই কাগুজে অবস্থায় ছিল। এমনকি ধর্মীয় জাতীয়তার ভিত্তিতে পাকিস্তান কায়েম করা হলেও সে পাকিস্তান ইসলামী শরিয়া নয়, ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ভিত্তিতেই শুরু হয়েছিল। জিন্নাহর ভিউও ছিল পুরোপুরি সেক্যুলার। সে সময় এমনকি পাকিস্তানেও মওদুদী বাদে উল্লেখযোগ্য তেমন কেউ এর প্রতিবাদ করেনি। আজ পাকিস্তান হল এক জগাখিচূড়ী ব্যাবস্থার শিকার, মৌলবাদী সমস্যায় দেশের অস্তিত্বই বলতে গেলে হুমকির মুখে। বাংলাদেশেও তাই, ‘৭২ সালে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশে আজ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা অনেকটা অপরাধের মত প্রতীয়মান হচ্ছে।
আপনার কথা ঠিক, পাকিস্তান আমলেও আজকের মতই মোল্লারা আল্লামা শাফির মত হাস্যকর ওয়াজ মাহফিল করত, অধিকাংশ লোকে সেসব শুনলে স্নেহপূর্ন হাসি দিত, সিরিয়াসলি নিত না। আজকের দিনের অবস্থা কিন্তু তেমন নয়, লোকে এসব সিরিয়াসলিই নেয়। হেফাজতের মত দাবী দাওয়া নিয়ে ‘৭২ সালে সরকার উতখাতের চিন্তা করাও এ দেশে অকল্পনীয় ছিল, আজকে কিন্তু ততটা অসম্ভব নয়। মূল কারন সাধারন লোকের চিন্তা চেতনা যে কোন কারনেই হোক পরিবর্তিত হয়েছে। তিক্ত সত্য হল আমরা যাকে মৌলবাদ বলি সাধারন জনমানসে ধর্মের সেসব অংশের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। এর কারন কি? কারন বহুবিধ। মনে রাখা ভাল যে পাকিস্তান আমল বা বাংলাদেশের শুরুর দিকে মৌলবাদী তান্ডব অনুপস্থিত থাকলেও মৌলবাদ ছিল না এমন নয়। রাজাকাররা ছিল সে আমলের মৌলবাদী গ্রুপ,তাদের সাথে ছিল সে সময়কার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত লোকজন। তফাত শুধু একটাই, তাদের জনসমর্থন তেমন ছিল না। আজকের দিনে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হলে দেখা যেত মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারে বিভাজন মোটামুটি আধাআধি না হলেও তেমন বড় নয়। পাক ঔপনিবেশিক শাসনের কারনে বাংগালী জাতীয়তাবাদের আবেশে সে আমলে মৌলবাদ সাধারন জনমনে প্রভাব ফেলেনি, বীজ ছিল ঠিকই, সুপ্ত অবস্থায়। স্বাধীন বাংলাদেশে বিপদ কেটে যাবার পরে সেই বীজ থেকে অংকুরোদ্গম শুরু হওয়ায় দেরী হয়নি। বাংগালী জাতীয়তাবাদের সাথে ইসলামী জাতীয়তাবাদের মিশ্রনে পরিচয় সংকট শুরু হয়েছে। এর বড় প্রমান কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা পরবর্তি আচরনেও প্রকাশ পায়। ইসলাম কায়েম করার স্বপ্ন তখন থেকেই শুরু হয়। স্বভাবতই এ লক্ষ্য পূরনে মৌলবাদী/রাজাকারদের সাথে হাত মেলানো ছাড়া উপায় নেই কারন ধর্মের ধারক বাহক বলতে গেলে তারাই। মেজর জলিলের স্বাধীনতা পরবর্তি রাজনৈতিক দর্শন পাঠ করলে একটি উদাহরন পাওয়া যায় কিভাবে মানুষের চিন্তাচেতনা বদলে যেতে পারে। এর সাথে আফগান ফিলিস্তিন সমস্যা মেলানোর অবকাশ নাই।
জেহাদী জোশ প্রসংগটা কিছুটা ভিন্ন, এটা মৌলবাদের একটি চরম প্রকাশ, তবে মৌলবাদের একমাত্র সমস্যা নয়।
হেফাজতের সমাবেশ ঘেরাও শক্তি প্রয়োগে বানচাল করে হয়ত সাময়িক ভাবে বিপদ এড়ানো গেছে, তবে রাজনৈতিকভাবে এর মূল্য কতটা দিয়ে হয় সেটা বুঝতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। মেঠো আন্দোলন করার মত অবস্থায় তারা আর নেই। হেফাজতিদের ভোট কোনদিনই নৌকা মার্কায় পড়ত না, তবে এখন তারা ভোটের রাজনীতিতে সরাসরি এন্টি হিসেবে কাজ করবে এবং আঞ্চলিকভাবে বেশ কিছু যায়গায় তাদের প্রভাব আছে।
হেফাজতের আন্দোলনে কিন্তু জনতার মাঝে বড় ধরনের সমর্থন দেখা গেছে যা অবধারিতভাবে প্রমান করে যে মৌলবাদের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। এই জনসমর্থন কি শুধু দমন পীড়ন চালিয়ে দূর করা যাবে?
@আদিল মাহমুদ,
দমন-পীড়ন চালিয়ে পৃথিবীতে কিছু হয় না। আমি সেটা মৌলবাদীদের বিপক্ষেও করতে বলি না। আমি বলেছিলাম তাদের নিয়ন্ত্রণের কথা। সেটা নানা পন্থায় হতে পারে…।
সেই অবস্থাটায় ফিরিয় নেয়া যায় কিনা আমি সেই কথা ভাবছি। … আমার ইচ্ছা করছে এই নিয়ে একটা লেখা লিখি। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে পুরোপুরি লেখার জন্য সময় দেয়ায় মত অবসর পাচ্ছি না। হয়ত লিখবো সামনে।
আদিল, সুপাঠ্য লেখাটির জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। কষ্ট করে আমার মন্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞা স্বীকার করছি। অনেক শুভ কামনা।
@সুষুপ্ত পাঠক,
– এটা নিয়ে খুব গভীর চিন্তাভাবনা দরকার। খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয়। মৌলবাদীদের শুধু দমন পীড়নে উলটো তাদের প্রতি সহানুভূতি বাড়ার সম্ভাবনাই বেশী।
– লোকে যখন জেনে শুনে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড অবলম্বন করে তখন সেটা থেকে মুক্তি খুবই কঠিন।
আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার মন্তব্যগুলি গুরুত্বপূর্ন কিছু দিক ফোকাস করেছে।
অনেক অপেক্ষার পর লেখাটি পেলাম এবং এক টানে পড়লাম। সাবলিল হওয়ায় মোটেও খুব বড় মনে হয় নি বরং আমি এর দ্বিগুণ পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলাম।
মসজিদ-গীর্জা-মন্দিরে দেয়া বক্তব্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকে কিভাবে? 🙂
তাহলে দুটোর মধ্যে যেকোনো একটির দিকে চলে গেলেই সংঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে? সংঘাত থেকে রক্ষা পাওয়াটাই কী সব? না, আপনি সেটা মীন করতে চাওয়ার কথা নয়, কিন্তু শেষের দুই প্যারায় হাল্কা টুইস্ট লেগে গেছে।
(‘বিরোধীতা; বানানটি ‘বিরোধিতা’ হবে, ইত প্রত্যয় যোগ হলে ই-কার হয়ে যায়। আরো কিছু বানান। )
আর হ্যা, লেখাটির আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু নতুন আইডিয়ার সন্ধান মিলল।
@সৈকত চৌধুরী,
– কথা সত্য। যে কোন পাবলিক প্লেসে বক্তব্য দিলে তাকে আর ব্যাক্তিগত বলা যায় না। কথা হল সেটাকেও ব্যাক্তিগত বলে চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে যখন সেটাকে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না তখন। এখানকার পাদ্রী ফাদাররা অনেক সেন্সিবল হলেও তাদেরও কেঊ কেঊ মাঝে মধ্যে হাস্যকর/উগ্র কথাবার্তা বলে। সেসব কেউ শিক্ষনীয় ধর্মের সবক হিসেবে নেয় না,হাসি ঠাট্টা করে বা সরাসরি তীব্র নিন্দা করে। এই জাতের পাদ্রী পুরুতরা এসব কিছু কথা বলবেই লোকে ধরে নেয়।
– খুবই গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট, বলতে গেলে এই সমস্যার মূল নিহিত আছে এ যায়গায়। মুসলমান সমাজ গুলিতে সনাতন ধর্মীয় বিধি বিধানের সাথে বদলে যাওয়া মূল্যবোধের সঙ্ঘর্ষ হচ্ছে সমস্যার মূল। যারা ধর্মীয় বিধি বিধান রক্ষা করতে চাইছে তাদের বলা হচ্ছে মৌলবাদী। তারা ধর্মের বিরুদ্ধে থ্রেট হিসেবয়ে দেখে যারা ধর্মীয় বিধান মানতে চাইছে না, এমনকি বিধি বিধান আংশিক আকারে বাদ দিচ্ছে তাদের। তাই মৌলবাদীরা হয়ে উঠছে সহিংস। সঙ্ঘাত এড়ানোর উপায় খুব বেশী নেই। মানসিকভাবে বাস্তব জগতের পরিবর্তনের ধারা গ্রহন করতে না পেরে তাকে অস্বীকার করতে থাকলে সঙ্ঘর্ষ চলতেই থাকবে। বেশীরভাগ মুসলমান সমাজেই দুই ধারার সঙ্ঘাত চলছেই।
এখানে ডবল সমস্যা হল ধর্মনিরপেক্ষ ধারার লোকদের ভেতরেও বেশীরভাগ ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমানই। তাদের পক্ষেও অনেক সময় সরাসরি ধর্মীয় বিধি বিধান অস্বীকার করা সম্ভব নয় না। নানান রকমের অভিনয় কিংবা চাতূরীর আশ্রয় নিতে হয় দুই কূল রক্ষা করে চলতে। এই নীতি জন্ম দেয় অনেক ক্ষেত্রে প্যারালাল ব্যাবস্থা। যেমন ফতোয়া। ইসলাম অনুযায়ী মোল্লা আলেমরা মনে করেন ফতোয়া তাদের ধর্মীয় অধিকার, তারা তাদের মত ধর্ম সূত্র ঘেটে নানান কারনে লোকজনে বেত মারার,এক ঘরে করার এ রকম নানান শাস্তির বিধান দেবেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় আইন বলে ফতোয়া আইনের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক, রাষ্ট্রীয় আদালত ছাড়া কাউকে কারো কোন রকম সাজা দেবার অধিকার নেই। ফতোয়া হাইকোর্টে নিষিদ্ধ করেও রায় টেকানো যায়নি, অর্থাৎ মৌলবাদের জয় এখানেও হয়েছে। মূল কারন চুড়ান্তভাবে সমাজ এখনো মানসিকভাবে মৌলবাদের কাছেই জিন্মী। জিন্মি বলেই সংবিধানের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া যায় না। কারন তখন অন্য পক্ষে শুনতে হবে এমন ঘোষনা তাদের ধর্মীয় অধিকার। জজ সাহেবকেই শুনতে হবে আপনি কোরান হাদিস মানেন না? জজ সাহেব কিভাবে বলবেন যে তিনি কোরান হাদিস ভিত্তিক সংবিধানের দাবী মানেন না? এই দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তির কোন সহজ উপায় নেই। মুক্তির সোজা উপায় ছিল সরাসরি ধর্মকে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা থেকে আলাদা রাখা, তার তো কোন আশা নেই।
যে কোন এক পক্ষ জয়ী হয়ে সঙ্ঘাত এড়ানো এক দিক দিয়ে মংগল, অন্তত সহিংসতা এড়ানো যাবে। বেশীরভাগ মানুষের ধর্ম একমাত্র পূর্নাংগ/পারফেক্ট জীবন বিধান দাবী সম্পর্কে যে অবসেশন আছে তা আমরা লেখালেখি করে দূর করতে পারবো না। একমাত্র দূর হতে পারে তেমন ব্যাবস্থার ভেতর নিজেরা প্রবেশ করলে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকে যদি আরব ইরানের মত কোরান সূন্নাহ ভিত্তিক শরিয়া আইন চায় তবে আমি তাতে বাধ সাধার কে?
বড় লেখা।
উনার কাছে গেলেও এর উত্তর পাবেন না, আদিল ভাই।
এইটা উনি জেনে-বুঝেই করেন বা তাকে দিয়ে করায় লগ্নীকারকেরা!
বঙ্গবন্ধুর নাম দিয়ে রাজাকারগিরি করা অনেক ভাল, কারণ এতে করে, রাজাকাররাও মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ঢুকে যেতে পারে, তাই না?
মানতে পারছি না। ইতিহাস কি তাই বলে?
একটা প্রশ্নঃ মেনন কি আসলেই এনায়েতুল্লা বা সাদেক সাহেবের ভাই? জানতাম মেননের বোন বিএনপির বড় নেত্রী। এখন ওনারাও যদি মেননের ভাই হয়, তাহলে বলতে হয়, মেননের রাজনীতিক ধারা পারিবারিক ধারার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান! সেক্ষেত্রে মেননের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বেই কেবল!
@কাজি মামুন,
– আমি ঠিক এভাবে চিন্তা করি না। লগ্নিকারক বা টাকা পয়সার লেনদেন এসব পরিষ্কার নয়, প্রমানেরও উপায় নেই। এটা পরিষ্কার যে ‘৭২ সালের কাদের সিদ্দীকি আর আজকের কাদের সিদ্দীকির মূল্যবোধের তফাত অনেক বড়, আমার মতে মূল কারন সেখানেই। তদোপরি এই ধারায় উনি একা নন। তার মত আরো মুক্তিযোদ্ধারাও আছেন। কিছু উদাহরন দিয়েছি।
তবে আমি ওনার সম্ভাব্য জবাব কিছুটা আঁচ করতে পারি। সে জবাব হতে পারে সে সময় বংগবন্ধুর আশেপাশে থাকা নাস্তিক বামপন্থীরা তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছিল। শাগবাগের মতই সবই রাম বামদের ষড়যন্ত্র।
– এ নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়। ইরানের লোকে ধর্মনিরপেক্ষ শাহের কুশাসনে এতই ত্যাক্ত ছিল যে বামধারার রাজনৈতিক কর্মীরাও সে ইসলামী বিপ্লবের পক্ষে কাজ করেছিল, আমরা সে বিপ্লবকে মৌলবাদী উত্থান বলতে পারি তবে সে দেশের জনগন সে বিপ্লবকে যাইই বলা হোক স্বাগত জানিয়েছিল। আমি আসলে বলতে চাইনি যে ধর্মনিরপেক্ষ শাসক খারাপ হলে তবেই মৌলবাদের উতপত্তি হয় বা তেমন গ্রুপ ক্ষমতা দখল করতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই মৌলবাদ শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
– হ্যা, আসলেই তাই। ওনাদের বোন বিএনপি নেত্রী সেটাও ঠিক। আরেক দূলাভাই ছিলেন প্রাক্তন বিএনপি নেতা, রাষ্ট্রপতি ও ‘৭১ সালে শান্তি কমিটির নেতা আবদুর রহমান বিশ্বাস।