প্রত্যয়দীপ্ত ডারউইন দিবস এবং ভালবাসা দিবস
এক ধরণের বিদ্রোহ ভালবাসা, এক ধরনের বিদ্রোহ হল দাবী
১
আজ ডারউইন দিবস। আর সামনেই আসছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বা ভালবাসা দিবস।
ইচ্ছে ছিল এবারের ডারউইন দিবসটা খুব বড় করে করার। সেই মোতাবেক এগুচ্ছিলোও কাজ। পারভেজ আলম একদিন আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বললেন, ডারউইন দিবসের প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আমি বললাম তথাস্তু।
সেমিনার করা, কাকে কাকে বক্তৃতায় ডাকা যায়, দৈনিক পত্রিকাগুলোতে লেখা পাঠানো যায় কিনা, মুক্তমনায় পেইজ করা যায় কিনা – এ নিয়ে অনেক কথা হল। সৈকতও বলল, এবারের ডারউইন দিবস উদযাপনের ডাক দিতে হবে।
এইতো এক সপ্তাহ আগের কথা।
তারপর?
তারপর পদ্মা, মেঘনা যমুনার উপর দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল, বহু তরঙ্গস্রোত।
কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণার পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠলো রাজপথ। ফেসবুক হয়ে উঠল ম্যাসেজে ম্যাসেজে সয়লাব। ব্লগার এবং অন লাইন এক্টিভিস্টদের আহবানে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ নামলো শাহবাগে। তারপর যতদিন গেছে গুণোত্তর হারে বেড়েছে মানুষের সংখ্যা। মুক্তমনায় সাইফুল দিয়েছিলেন ডাক।
শাফায়েতের মত ঘরকুনো ছেলেও লাগাতারভাবে পড়ে রয়েছে শাহবাগে (দেখুন এখানে কিংবা এখানে)। লীনা, টেকি সাফি, শফিউল জয়, কে নাই সেখানে? মুক্তমনার সদস্যদের অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন শাহবাগে।
এ ভাবেই হল আমাদের ডারউইন দিবসের উদযাপন। শ্রেষ্ঠ উদযাপন বলা যায় আমাদের।
২
শাহবাগের ঘটনা থেকে আমরা কিছু জিনিস শিখলাম। নেতৃত্ব তৈরি করে তারপর বিপ্লব হয় না। বিপ্লব থেকেই বেরিয়ে আসে সুযোগ্য নেতৃত্ব। ইমরান এইচ সরকার, আজাদ মাস্টার, মারুফ রসূল, পারভেজ, পিয়াল, আরিফ জেবতিক, মাহবুব – যাদের আমি কেবল ফেসবুক বন্ধু হিসেবেই জানতাম, তারাই আজ তৈরি করেছে নেতৃত্বের পথ। তাদের প্রত্যয়দীপ্ত মুখের দিকেই আজ সাড়া বাংলাদেশ তাকিয়ে। তাদের কেউ শাহবাগে ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন, কেউ আজ সংসদে স্মারকলিপি দিচ্ছেন, কেউবা দিচ্ছেন পত্রিকায় সাক্ষাৎকার। অনেককেই দেয়া হচ্ছে প্রতি রাতেই একাত্তরটিভি, একুশে টিভিসহ নানা চ্যানেল থেকে সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব।
অনেকেই আবার সময়াভাবে ফিরেও দিচ্ছেন। এ এক নতুন বাংলাদেশ। কোন রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর মুখের দিকে না তাকিয়ে নিজেরাই গড়ে তুলেছে দুর্বার আন্দোলন, বদলে দিচ্ছে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। এই মারুফ রসূল নামের ছেলেটির কথাই ধরুন। শনিবারের চিঠি নামে ব্লগ করে মুক্তমনা সহ অন্য অনেক ব্লগেই। তিনি তুলোধোনা করে দিলেন শওকত মাহমুদকে (ভিডিওটি অবশ্যই দ্রষ্টব্য):
https://www.facebook.com/photo.php?v=482029038512083
তারপর ধরুন অমি রহমান পিয়াল। সুযোগ্য জবাব দিলেন তাদের, যারা বলেন ‘শাহবাগের ঘটনা নাকি সাজানো নাটক’। বললেন, এটা যদি সাজানো নাটক হয়, তবে এরকম একটা নাটক অন্য কেউ করে দেখান না – যেখানে সব পেশার, সব ধরণের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ ঘটেছে। এমনকি মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যেও পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়েছে (এই ভিডিওটিও দেখা চাই)
https://www.facebook.com/photo.php?v=4975772085927
যাক, শুনলাম – দিগন্ত টিভির নেটওয়ার্ক নাকি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। বড় বড় অনেক সংস্থা দিগন্ত টিভি এড দিবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জামাতী পত্রিকা দৈনিক আমার দেশে পত্রিকার সার্কুলেশন ১০ হাজারে নেমে গেছে। কাদের এবং কামারুজ্জামানের প্রেসক্লাব সদস্যপদ বাতির দাবী উঠছে। বাগেরহাটে ইসলামী ব্যাংক থেকে দুইজন টাকা তুলে নিয়েছেন, কারণ রাজাকারের ব্যাঙ্ক-এ তারা টাকা রাখবেন না। কে ভাবতে পেরেছিল এটা কখনো সম্ভব এই দেশে?
ভারতের কীর্তিমান গায়ক, আমার প্রিয় শিল্পী সুমন দু দুটি গান লিখে ফেলেছেন শাহবাগের প্রত্যয়কে গিটার বন্দী করে। প্রথম গানটি ছিল ‘গনদাবী’। গতকাল লিখলেন আরেকটি গান – ‘শাহবাগে রাতভোর’-
‘শাহবাগে রাতভোর
স্মৃতিতে একাত্তর
নব ইতিহাসে সাক্ষী
রইল প্রজন্ম চত্বর।স্লোগানে স্লোগানে কাঁপে
লাখো নবীনের বুক
ছেলেমেয়েদের মুখেই
আমার বাংলাদেশের মুখ।হাত ধরে ছেলেমেয়ে
মুক্তির গান গেয়ে
জেগে আছি আজ প্রহরীর মতো
আসল বিচার চেয়ে।শহীদজননী দেখছেন
জাগরণ প্রস্তুতি
সুফিয়া কামাল কাছেই আছেন
বিদ্রোহী নাতিপুতি।’
৩
আজ যখন পেছন ফিরে ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসগুলোর দিকে তাকালাম, তখন অবাক হয়ে দেখলাম এগুলোর মধ্যেই তো ধারণ করা আছে শাহবাগের পুনর্জাগরণের ইতিহাস।
ফেব্রুয়ারির ছয় তারিখে লিখেছিলাম –
‘লাখো শহীদ ডাক পাঠালো সব সাথীদের খবর দে
শাহবাগ ঘেরাও করে সব রাজাকার কবর দে!’হ্যাঁ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক গোলাম আজমের ফাঁসির রায় উচ্চারণের সময় আমিও সোহরার্দী উদ্যানে ছিলাম, লাখো মানুষের ভীরে…
নব্বইয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের দিন কারফিউ ভেঙে যে প্রথম মিছিলটি বেরিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, সেখানে আমিও ছিলাম। …
দুর্ভাগ্য আমার, প্রিয় দেশের অর্ধ-গোলার্ধ দূরে থেকে আমি এই অমর মহাকাব্যের সাথী হতে পারলাম না। ব্লগার এবং ফেসবুক এক্টিভিস্টদের প্রণোদনায় যে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার ঢল নামলো শাহবাগে, আর তারপর তা ক্রমশ: এখন ছড়িয়ে পড়ছে সিলেট, চট্টগ্রাম সহ সাড়া দেশে তা এক কথায় অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব। এই দৃশ্য আমরা এতদিন কেবল মিশর কিংবা তিউনেশিয়ার বেলাতেই দেখতাম, আজ অবাক পৃথিবী তাকিয়ে দেখল এই বিক্ষুব্ধ বাংলাকে।
আজ আবারো উচ্চারণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে –
“একাত্তরে আমি অনেক ছোট, মৃত্যু বুঝি, যুদ্ধ বুঝি না
আজ আমি অনেক বড়, যুদ্ধ বুঝি, মৃত্যু বুঝি না”!
সাথে সংযুক্ত করেছিলাম এই ছবিটি, যেটা এখন শাহবাগের গণজাগরণের ‘সিম্বলে’ পরিণত হয়েছে –
এই ছবিটিকে কভার পেজের মর্যাদা না দিলে কি তখন চলে?
আগুন দেখেছি আমি কত জানলায়
শাহবাগ এলাকাটা ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার খুব প্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বড় হবার সুবাদে এলাকাটা আমার চষে ফেলা ছিল অনেক আগেই। আর তার মধ্যে আবার বইয়ের দোকান। ছোটবেলায় বইয়ের দোকান বলতে বুঝতাম নিউমার্কেট আর শাহবাগ। কিন্তু নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানগুলো একসময় জৌলুষ হারালো, আমার পছন্দের বই পাওয়া যেত না ওখানে প্রায়ই। ধীরে ধীরে আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানগুলো হয়ে উঠল আমার আরাধ্য উপাসনালয়!
বহুবছর পর গতবছর দেশে গিয়েও বইমেলার পর সবচেয়ে বেশিবার গিয়েছিলাম শাহবাগেই। আগের সেই মার্কামারা ভাবটা নেই, বইয়ের দোকানের অনেকগুলোই উঠে গিয়ে কাপড়ের দোকানে পরিণত হয়েছে, তারপরেও ওটা আজিজ বলে না কথা! বন্যা আর আমি দুজন মিলে যেবার দেশে গিয়েছিলাম সেবারও – আমরা সেই উত্তরা থেকে পাড়ি জমাতাম আজিজে, প্রতিদিনই। সকাল পেরিয়ে বিকেল হয়ে যেত রাস্তার জ্যাম ফ্যাম পেরিয়ে। কাউকে বললে বুঝতে পারতো না, কি পাই আমরা শাহবাগে গিয়ে।
নোনা স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল, ঘুপচি ঘুপচি ঘর, আর রাস্তার ধারে নর্দমা, আর উসকোখুসকো অপরিচ্ছন্ন ভ্যাগাবণ্ড টাইপের লোকজনের আড্ডা – মনোমুগ্ধকর স্থান হিসেবে কারো মনে উঠে আসবে না নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমাদের কাছে সেই এলাকাটাই ছিল পরম পূজনীয়, সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি। দেশে গেলে বসুন্ধরা সুপারমার্কেট আমার যাওয়া পরে না, কিন্তু আজিজে ঢু মারা হয় ঠিকই। ভাবতেই ভাল লাগছে ঢাকাশহরের সবচেয়ে প্রিয় স্থানটি থেকে বিদ্রোহের বারুদ জ্বলেছে, আর এখন তো তা অগ্নিস্ফুলিঙ্গে রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সাড়া দেশে।
আরো আনন্দের ব্যাপার, কোন রাজনৈতিক দল এর নেতৃত্ব দেয়নি, দিয়েছে -আমরা যারা লেখালিখি করি তাদের মধ্যে থেকে উঠে আসা ব্লগার এবং ফেসবুক এক্টিভিস্টরা। যারা এতদিন ভার্চুয়াল লেখালিখি আর ইন্টারনেটে চেঁচিয়ে কিছু হবে না বলে কথার তুবড়ি ফোটাতেন, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে আজ দেখিয়ে দেয়া হয়েছে – ‘আমরাও পারি’।
আমরাই পারি!
দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কমরেডদের স্যালুট! শাহবাগে ৮ই ফেব্রুয়ারির জনতার সমাবেশ সফল করে তুলুন।
‘মানুষ জেগেছে দাবী গরাদ ভাঙার
ভাঙে যেন জানলার সকল গরাদ’
এ স্ট্যাটাসটি ছিল ৮ তারিখের মহাসমাবেশ শুরু হবার আগের দিন। সুতরাং সেখানে ছিল মহাসমাবেশ সফল করার আহবান –
তারপর এলো সেই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের দিন। সেদিন যে কি হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। কমপক্ষে দু আড়াই লাখ লোক সমবেত হয়েছিল প্রজন্ম চত্বরে। ও হ্যা, বলতে ভুলে গেছি, আমার স্কুলের একসময়কার প্রধান শিক্ষিকা ডক্টর আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর প্রস্তাবনায় সবাই শাহবাগের মোরকে প্রজন্ম চত্বর বলে অভিহিত করতে শুরু করে দিয়েছে। বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, লেখক এবং তারুণ্যের প্রাণ জাফর ইকবাল সমাবেশে সমাবেশের তরুণদের ‘এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সম্বোধন করে বললেন, ‘আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আজ আমি তোমাদের কাছে এসেছি ক্ষমা চাইতে। আমি পত্রিকায় লিখেছিলাম, নতুন জেনারেশন শুধু ফেসবুকে লাইক দেয়, ব্লগ লিখে, রাস্তায় নামে না। তোমরা আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছ…’
আমার এক সুহৃৎ বললেন আপনার কভারে পেজের ছবিটাতে এখন আর মানুষের মহাসমুদ্র ঠিকমতো ফুটে উঠছে না। বদলাতেই হল কভার পেজের ছবিটা –
এই শাহবাগ আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে তিন চার দিন ধরে অবিরাম স্লোগান দিয়ে পত্রিকার শিরোনামে উঠে এসেছেন লাকী আক্তার।স্লোগান দিতে গিয়ে দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।কিন্তু অসুস্থতা তাকে আটকাতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সেই রাতেই গণজাগরণ মঞ্চে ফিরে এসে স্লোগান ধরে লাকী বলেন, ‘আন্দোলন চলবে। আমি সুস্থ আছি।’শুধু লাকী নন, গত ছয় সাত দিন ধরে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর স্লোগানে মাতিয়ে রেখেছেন অন্তত ১০ নারী। এদের মধ্যে উম্মে হাবিবা বেনজীর, প্রীতিলতা, তানজিদা তুবা, সামিয়া রহমান, আফসানা কলি, অনিতা বাড়ৈ সহ অনেকেই আছেন। তারা কেউ একাত্তরের যুদ্ধ সামনাসামনি দেখেননি। তবে সবাই ধারণ করেন একাত্তরের আগুন। জামাত শিবির এবং অনলাইন ছাগুচক্র রীতিমত প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল যে শাহবাগে মেয়েরা গেলেই নাকি ধর্ষিতা হচ্ছে। শাহবাগ নাকি গাঁজাখোর আর বেশ্যাদের আস্তানা। এই সব সস্তা বুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করে শাহবাগে প্রতিদিনই হাজির থাকছেন অসংখ্য নারী। তারা অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন অন্যদেরও।
শাহবাগের জনসমুদ্রকে ধারণ করে আর লাকী আক্তারের মত সাহসী মেয়েদের প্রতি অভিবাদন জানিয়ে মুক্তমনার জন্য একটা ব্যানার করার চেষ্টা করেছিলাম শুক্রবার দিন আমার অক্ষম হাতে ~
তবে গতকাল শনিবার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলেছিলাম –
ছোটবেলায় স্কুলে যখন জ্যামিতি পড়তাম, তখন প্রতিটি উপপাদ্যের নীচেই একটা সম্পূরক প্রতিপাদ্য এসে পড়ত। করোলারি কনক্লুশন যাকে বলে। আমার মতে শাহবাগের এই অভূতপূর্ব বিক্ষুব্ধ গণআন্দোলনও তৈরি করেছে বহু ধরণের সম্পূরক দাবীর ক্ষেত্র। শাহবাগের আন্দোলন কেবল একটি বা দুইটি রাজাকারের ফাঁসি চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, এটা একটা মহাজাগরণ – সামগ্রিক পশ্চাৎপদ কাঠামো পরিবর্তনের আন্দোলন এটি। রাজাকারদের ফাঁসির পাশাপাশি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এই দুইটি ব্যাপার –
১) ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতির অপসারণ।
২) আগামী নির্বাচনে যেন জামাত শিবির সহ এই উগ্র ধর্মবাদী দলগুলো অংশ নিতে না পারে।
এ নিয়ে কাজ শুরু করার আহ্বাণ জানাচ্ছি এখনই। ভবিষ্যতের মহাসমাবেশগুলোতে ‘রাজাকারদের ফাঁসি চাই’ ব্যানারের পাশাপাশি আমাদের সম্পূরক প্রাণের দাবীগুলোও উচ্চারিত হোক। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন বিষবৃক্ষের চারা যেন আবারো মহীরুহ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদ-এর উচ্ছেদ করে একসময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল, আর তারপর এরশাদের জামানায় একটা ধর্মকে দেয়া হয়েছিল ‘রাষ্ট্রধর্ম’-এর খেতাব, এই সার্কাসের অবসান নিয়ে কাজ করা জরুরী।
কেউ কি পারবেন এরপর শাহবাগে এ ধরণের ব্যানার নিয়ে এগুতে?
বক্তব্যগুলো উচ্চকিত হওয়া দরকার। এবং এখনই।
সেই সাথে জুড়ে দিয়েছিলাম নিলীমের পাঠানো ব্যানারের উপর নিজের অক্ষম হাতে বসানো বর্ণমালা, যা ছবিগুলোকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে –
ব্লগার নাস্তিকের ধর্মকথা অবশ্য দ্বিতীয় ব্যানারটি নিয়ে কিছুটা ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এর কারণ আছে অবশ্য। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে অবধারিতভাবেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলেরই অস্তিত্ব থাকছে না, ফলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোন বিষয়ই হয়তো থাকবে না। তার মতে আমাদের শ্লোগানগুলো হতে পারে এরকমের –
১। কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই (যে দাবীটি এর মধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে)
২। বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। (২ নম্বর দাবিতে- জামাত, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট টাইপের সংগঠন নিষিদ্ধ হবে ঠিকই; কিন্তু আওয়ামীলীগ, বিএনপি’র মত রাজনৈতিক দল গুলো যখন ধর্মকে ব্যবহার করে- ভোটের আগে তসবি হিজাব পরে ছবি প্রচার করা, ধানের শীষে- নৌকায় আল্লারে ঢুকানো, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে বক্তব্য দেয়া এবং ঢালাও প্রচার করা, বক্তব্যে/ লিফলেটে ধর্মীয় সুড়সুড়িমূলক বক্তব্য দেয়া… ইত্যাদি- বন্ধ করার জন্য এই শ্লোগানের বিকল্প নাই।)
৪। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহকে অপসারণ করার শ্লোগান এবং উদ্যোগ।
এই দাবীগুলোই হোক আমাদের এবারের ডারউইন দিবসের প্রত্যয় দীপ্ত শপথ।
ভাল লাগল দেখে যে কিছু তরুণ এ নিয়ে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন –
আমি জানি আমার কাজ বা ব্যানারগুলোতে শাহবাগের কোন চিত্রই ধরা পড়ছে না, পড়বে না। আমার অক্ষম হাতে এর সার্বিক চিত্রও তুলে ধরা সম্ভব নয়। সেখানে কি হচ্ছে তা এই স্ট্যাটাস্টাই যথেষ্ট –
প্রজন্ম চত্বরে বাংলাদেশ
——————–
-যে বয়সে ঘরে বসে কার্টুন দেখার কথা সেই পিচ্চি তার শরীর এর মধ্যে “রাজাকারের ফাঁসি চাই” লিখে “তুই রাজাকার” বলে স্লোগান দিচ্ছে…
-এক মা তার ছেলেকে ফোন করে বলতেছে,”এক মুহূর্ত দেরি করবি না,তর বড় আপুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি শাহবাগ চলে আয়”
-এক পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হুইল চেয়ারে করে আসছে,মাথায় পতাকা বাঁধা,চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে আর বলতেছে,”রাজাকারের ফাঁসি চাই”
-যে রিকশা চালক, রিকশা চালায় পেট চালানোর জন্য,সে আজ আমার ছোট ভাইকে বিনামূল্যে শাহবাগে নিয়ে গেছে…
-এক বড় আপুকে দেখলাম কলসিতে পানি ভরে সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছে…
-এক বাবা তার তিন মাসের বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে।এত ছোট বাচ্চাকে কেন নিয়ে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,”আমি চাই আমার বাচ্চার রক্তে স্বাধীনতার চেতনা ঢুকুক,তার রক্তে থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালবাসা আর রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা”
এই হচ্ছে বাঙালির দেশ প্রেম … যাদের শরীরে বাঙালির রক্ত বইছে শুধু তাদের পক্ষেই সম্ভব দেশের জন্য এই টান অনুভব করা … কোনও রাজাকারের পক্ষে এই দেশ প্রেম বোঝা সম্ভব না …
শাহবাগে অসংখ্য ব্যানারের ভীরে দুটো পোস্টার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একজন একটা পোস্টার লিখে এনেছিলেন –
ঐকিক নিয়ম :
৩৪৪ টি খুনের শাস্তি = ১৪ বছর
১টি খুনের শাস্তি = (১৪ x ১২) / ৩৪৪
= ২ মাস
“আমি কাদের মোল্লাকে খুন করে ২ মাস কারাগারে থাকতে চাই”
যদিও ভদ্রলোকের অংকে একটু ভুল আছে। দুই মাস তাকে কারাগারে থাকতে হবে না, থাকতে হবে ১৫ দিনের মত, তারপরেও এই স্পিরিট দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। একজন আবার পরদিন নিয়ে এসেছিলেন ঐকিক নিয়মটা শুদ্ধ করে –
আরেকটা পোস্টার খুবই মজার । এটার বর্ণনার প্রয়োজন নেই। পিকচার টক্স ফর ইটসেলফ –
৪
আমরা জানি, এবারের ডারউইন দিবস এবং ভ্যালেণ্টাইন্স ডে অন্যান্য বারের মতো নয়। এ বছরের ভালবাসা দিবস আক্ষরিক অর্থেই যেন অনন্য। শাহবাগ চত্বরে কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম। ডারউইন দিবসে তারা ৩ মিনিট নীরবতা পালন করবেন, সেটা স্কুল, কলেজ, ক্যাম্পাস, বাসা, অফিস যেখানেই তারা থাকুন না কেন –
আর এবারের ভালবাসা দিবসেও বিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত তরুণ তরুণীদের বুকে বোধ হয় একটু বেশিই অনুভূত হবে ভালবাসার আগুন। প্রতিভাত হবে তাদের চোখের চাহনি, শরীরী ভাষা আর গোলাপ বিনিময়ে। তাদের নীল খামে হয়তো থাকবে লিপস্টিকের হাল্কা দাগ, হাত থাকবে প্রত্যয়ের আবেগে বজ্রমুষ্ঠি। মুঠোফোনের বার্তা, ই-মেইল কিংবা ফেসবুক ভরে উঠবে প্রেম-কথার কিশলয়ে। কে জানে, তারা হয়তো সুমনের গানের মতো করেই গাইবে –
‘এক ধরণের বিদ্রোহ ভালবাসা
এক ধরনের বিদ্রোহ হল দাবী
উগ্র প্রেমের ছুরিতে দিচ্ছি শান
দখল করব জীবনের মৃগনাভি’
পাঠকদের সবাইকে ডারউইন দিবসের এবং ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
আজকের শাহবাগ
[img]https://fbcdn-sphotos-a-a.akamaihd.net/hphotos-ak-prn1/21726_558951587458054_828133584_n.jpg[/img]
@সৈকত চৌধুরী,
হ্যা, সকালেই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ছবিটা দেখে আলোকেরই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও!
আইন সংশোধনের পরেও এদের কারোরই বিচারে ফাসি হবেনা। কারণ, যে আইনের ফাকে এদের শাশ্তি মৃত্যু দন্ড/যাবজ্জীবন কারা দন্ড রয়েছে, সংশোষিত আইনে সেখানে কোনই পরিবর্তন আসতেছেনা।
অতএব বিচারক পুনরায় মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বেছে নিবে,তাতে অসুবিধা কোথায়?
আর জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেও তাতে তাদের কর্ম কান্ড চালাতে মোটেই অসুবিধা নাই। তারা অন্য নামে বহিপ্রকাশ ঘটাবে।
ইতিমধ্যে তারাতো “ওলামা মাশায়েখ” নামের ব্যানারে রাস্তায় নামা আরম্ভ করে দিয়েছে।
যেটা প্রয়োজন তা হল,
এটা না করা হলে এক আবদুল কাদেরকে ফাসী দিলেও এই কারখানায় হাজার হাজার আবদুল কাদের তৈরী হতে থাকবে।
কখনো দেখি এইটা উপরে নিচে ঐটা
আবার কখনো দেখি ঐটা উপরে নিচে এইটা।
ব্যপার কি? অভিজিৎ দার পোস্ট আবার আবির ভাই এর পোস্ট। দুইটা উপর নিচ করছে কেন?
@ডাইনোসর,
কখনো ডারউইন ডে, কখনো ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে মনে হয় একেক সময় একেকটা স্টিকি ছিল। দুইখানই তুইল্লা দিলাম। নতুন লেখা আসছে … স্টিকি মিকি বাদ।
@অভিজিৎ,
যাক। আমি ভেবেছিলাম আপনি মডারেটর প্যানেল থেকে সরে এসেছিলেন। আপনার সাথে বহোত দ্বিমত। কিন্তু একজন সহনশীল মুক্তমান মডারেটর হিসেবে আপনি অতুলনীয়। 🙂
আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
ভালবাসা কারে কয় নামে একটা বই লিখেছিলাম গত বছর। কিন্তু ভালবাসা দিবসের দিনে বইটা মেলায় আসে নি। বইটা বেরুতে বেরুতে মেলা প্রায় শেষ। কিন্তু তারপরেও বইটা নিয়ে পাঠকদের চাহিদা ছিল। কেউ চাইলে এই দিনে এই বইটার খোঁজ করতে পারেন। কিছু তথ্য আছে এখানে।
সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যায়গা করে নিলো এই ঘটনাটি। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আগামী প্রজন্মকে জানানো যাবে এই সব ঘটনা। মাস্টার্স-ডক্টরেটের থিসিসের বিষয়ও হতে পারে অনায়াসে।
সকল প্রকার চরমপন্থা মুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশায়।
শোলাকিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের ইমাম আল্লামা ফরিদুদ্দিন যেখানে শাহবাগের আন্দোলনের সংগে একাত্বতা ঘোষনা করে জামাত শিবির কে জার্মানীর নাৎসী বাহিনী আখ্যা দিয়ে দেশের আলেম সমাজকে জামাৎ শিবির হতে সতর্ক থাকতেও বলেছেন- সেখানে জামাত-শিবির কে দেশের শান্তি ও স্বার্থ রক্ষার খাতিরে সরকারের এক্ষনি অবৈধ সংগঠন হিসাবে ঘোষনা করার ব্যবস্থা নিতে তো কোনই অসুবিধা থাকার কথা নয়।
ধর্ম যার যার গৃহে ও উপাসানালয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার লয়ে বিরাজ করুক। কেহই বাধা দিবেনা। রাজপথে বা রাজনীতিতে বা সংগঠনের মধ্যে কখনোই নয়।
🙂
শাহবাগ এখন আমাদের সবার হৃদয়ে। জয় বাংলা।
শাহবাগের কিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য অন্য একজনের বর্ণনা হতে কপি পেস্ট করে নীচে তুলে ধরলাম।
আমরা এতদিন বন্দু/বান্দবিদের ভালবাসা জানিয়ে এসেছি ।এবারেই প্রথম দেশকে ভালবাসা জানিয়ে ভালবাসা দিবস পালন করবো ।ভাবতেই পুলকিত হচ্ছি ।আশা করবো দেশের প্রতি আমাদের এই ভালবাসা চিরকাল বেচে থাক ।ধন্য হউক বিশ্বকবি “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ।” (F)
জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পক্ষ ত্যাগ করেছে :))। উৎসাহী পাঠকরা নীচের লিঙ্কে গিয়ে দেখতে পারেন।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2013/02/shangram.png[/img]
এখানে।
@অভিজিৎ,
১০০% সহমত।
ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
এটা একটা মস্তবড় সুযোগ জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করার। সরকারের এসুযোগের সদ্ব্যবহার একান্ত কাম্য। এটা করতে পারলে পরবর্তী ধাপ ধর্ম-রাজনীতিও নিষিদ্ধ করন আরো সহজতর হইবে।
ধন্যবাদ আপডেইট করার জন্য।
অভিজিৎদা,
কাদের মোল্লাকে কসাই ডাকাতে কসাই সমাজ যে ক্ষুদ্ধ, তা জানেন? তারা বলছেন, আমরা কসাই হতে পারি, কিন্তু মানুষ খুন করি না। এইভাবে কাদের মোল্লাদের জায়গা হয় না কোথাও। কেউ কেউ তাদের এই দেশের মাটির তলে কবর দিতেও রাজি না। তারা বলছেন, পাকি ভাবধারা আবাদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাদের ডেড-বডিটি পাকিস্তান উপহার পেতেই পারে।
আশ্চর্য হলেও সত্য, কিছু লোকের তারপরও ঘুম ভাংছে না। এত ঘৃণা কুড়োনোর পরও আমাদের দেশেরই এক দল লোক এখনো ঐ নরপশুগুলোর জন্য রাস্তায় রক্ত ঝরায়! কি বিচিত্র!
@কাজি মামুন,
কথাটা তো ঠিকই! 🙂
আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে লালন করা হয়। এই বিষয়ে কাজ করার সময় সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারন এই ধরনের পদক্ষেপ অনেকটা রাষ্ট্রীয় ভাবেই বন্ধ করে মানুষের সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি করার চেষ্টা হবে। সাধারন মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যপারটা ভাল মত বুঝেনা এবং তাদেরকে বুঝতে দেয়াও হয়না। আমাদের দেশে ছোট বাচ্চা দের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয় সরকারি ও সামাজিক ভাবে। গুটি কয়েক মোল্লা একটা ভাস্কর্য ভেংগে দিয়ে যায় নিশ্চিন্তে কোন বাধা ছাড়ায়। শুধু মুর্খ না, শিক্ষিত মুর্খও এক্ষেত্রে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করবে সেই সাথে সুবিধাবাদিরাও। এক্ষেত্রে এরকম নাজুক একটা বিষয়ে কাজ করার আগে ভালো পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।।
(Y) অভিজিৎ দাদা লিখাটা দারুন হয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে শিখলাম আবারও।
“একাত্তরে আমি অনেক ছোট, মৃত্যু বুঝি, যুদ্ধ বুঝি না
আজ আমি অনেক বড়, যুদ্ধ বুঝি, মৃত্যু বুঝি না”!
ওখান হতে অনুপ্রেরণা নিয়ে গতকাল আমাদের শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম কেবল একটা শ্লোগান দেওয়ার জন্য, প্রান খুলে চিৎকার দিলাম “তুই রাজাকার, তুই রাজাকার” বলে।
সহমত।
আমি বাংলাদেশের এই গনআন্দোলন দেখে আবেগে আপ্লুত। মনে হচ্ছে মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য যে লড়াই চালাছি তা ধীরে ধীরে থিওরী থেকে প্রেক্টিকেল রূপ আসছে। এই আন্দোলন সমস্ত বিশ্বে একদিন ছড়িয়ে পড়বে। মুক্তচিন্তা জয়ী হবে। আমি নিশ্চিত।
এদিকে ভাটির্কান পোপ পদ ত্যাগ করছেন। তিনি বলেছেন ধর্মের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন উঠছে তার উত্তর তার কাছে নেই। সব জায়গায় মুক্তমনাদের জয় জয়কার।
@সুমিত দেবনাথ,
একথা উদারমনা পোপেরা উপলদ্ধি করতে পারেন ও স্বীকার ও করতে পারেন। কিন্তু ইসলাম ধর্মগুরুরা কখনোই জীবন থাকতে ঈমান নষ্ট করবেননা। তাদের ঈমানটাই তো সবচেয়ে বড় সম্পদ।
ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়ে পশ্চিম দিগন্তে অস্তগিয়ে রাত্রিকালে আরশের নীচে বিশ্রাম নিতে থাকে। পৃথিবী স্থির থাকে।
বিজ্ঞানে চোখে আঙ্গুল দিয়ে এ ভূল তথ্যটা ধরিয়ে দিলেও মুসলমানেরা কখনোই তাদের পবিত্র মহাগ্রন্থের বানীকে বিজ্ঞানের কথামত অবিশ্বাষ করে পরকালে চিরকাল নরকবাসী হতে চায়না।
আমার বক্তব্য হল তারা ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে যত খুসী ধর্ম পালন করুক কেহই বাধা দিবেনা।
ধর্মকে রাজপথে বা রাজনীতি তে না আনুক।
আর এখন জনগন অনেক সতর্ক হয়ে গিয়েছে। ধর্মকে রাজনৈতিক ব্যবসায়ে আনলে জনগনতো ছাড়বেনা।
ফাসীতো দিবেই।
এভাবেই ২০১৩ এর ডারউইন দিবস পালন হচ্ছে। ভাল লাগলো একনজরে পুরো শাহবাগকে (প্রজন্ম চত্বর কে ) দেখে।
ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিটা সামনে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ। আমি এটা নিয়ে ঘাঁটছিলাম, বিশেষ করে এর বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে। আপনি এই ব্যাপারে চিন্তায় যদি অগ্রসর হয়ে থাকেন, তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। বা অন্য যে কেউ।
আমি এনলাইটেনমেন্টের সেকুলারিজম যেটা বুঝি, সেটা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করে। এর অর্থ হলো রাষ্ট্র তার কোনো আইনে বা কর্মকাণ্ডে ধর্মকে বিবেচনায় আনতে পারবে না। এটা বোধগম্য।
আপনার প্রস্তাবিত ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণটাকে একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে পারবেন?
আমি কী কাঠামোর উত্তর চাচ্ছি সে ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করছি –
– এক হতে পারে উপরে যেটা বললাম কেবল ততোটুকুই। অর্থাৎ ব্যক্তি বা দল সরকারের বাইরে থেকে যে যা খুশি বলতে পারবে, কিন্তু সরকারে থাকা অবস্থায় ধর্মকে বিবেচনায় এনে কোনো রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে না। যেমন, কোনো টুপি দাঁড়ি পড়া বা কোনো হিজাব পড়া প্রধানমন্ত্রী সম্ভব, কিন্তু তিনি রাষ্ট্রের কোনো আইনে বা পদক্ষেপে ধর্মকে বিবেচনায় আনতে পারবেন না। ধর্মকে প্রাধান্য দেয় এমন আইন করতে পারবেন না। যেমন, “সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহকে অপসারণ”। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় বক্তব্য কিন্তু আবার থাকতে পারে ফ্রিডম অব স্পিচের আওতায়। নির্বাচনে অংশও নিতে পারে, সমাজতন্ত্রী দলগুলো গণতন্ত্রে যেমনটা নেয়। কিন্তু জিতে গেলে ধর্মীয় আইন করতে পারবে না সংবিধানের বাধ্যবাধকতার জন্যে, সমাজতন্ত্রীরা সরকার গঠন করলেও যেমন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে পারে না।
– দুই হতে পারে, রাষ্ট্র ধর্মের সেপারেশান তো আছেই প্লাস – রাজনৈতিক দলের সংবিধানে ধর্মীয় আগ্রাসনমূলক বক্তব্য থাকতে পারবে না। তবে সেটা আলাদা করে শুধু ধর্মের ব্যাপারে কেনো? দেশের সংবিধানের সাথে সংঘর্ষমূলক যেকোনো বক্তব্যই সেখানে থাকতে পারা তাহলে উচিত নয়। সেক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রী দলগুলোর সংবিধানও পর্যালোচনার মধ্যে পড়বে। তবে এটার ফাঁক বের করা সহজ। শুনেছি জামাতে ইসলামী তাদের দলের সংবিধান সংশোধন করেছে। ফলে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো সহজেই তাদের দলের সংবিধান পরিবর্তন করে এই ঝামেলা থেকে বেঁচে বের হতে পারে।
– তিন হতে পারে, এক ও দুই এ যা বলা তা তো আছেই প্লাস – কোনো রাজনৈতিক দল ধর্মীয় চিহ্ন বহন করতে পারবে না। যেমন দলের নামে ইসলামের চিহ্ন থাকা যাবে না। রাজনৈতিক সভা মিছিলে ইসলামী বা ধর্মীয় স্লোগান বা পোস্টার বা বক্তব্য ব্যবহার করা যাবে না। এটা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হতে পারে। ফ্রিডম অব স্পিচের সাথেও কনফ্লিক্ট করতে পারে। একজন ব্যক্তি কখন ব্যক্তি আর কখন রাজনৈতিক দলের সদস্য এই সবের নজরদারি করা কঠিন ব্যাপার হবে।
উপরের তিনটির কোনটা আপনার প্রস্তাব। বা নিজের আলাদা প্রস্তাব থাকলে সেটাও জানাতে পারেন। এ ছাড়া – আপনার যদি জানা থাকে – পশ্চিমের আধুনিক গণতন্ত্রে ও এনলাইটেনমেন্টে উপরের তিনটার কোনটা বাস্তবায়ন করা হয় বলে আপনি মনে করেন? যেমন অনেক দেশেই রাষ্ট্র ধর্মের সেপারেশন আছে, কিন্তু ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা বা (রাষ্ট্রের বাইরে) রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করাটা কোন কোন দেশে আছে এই সংক্রান্ত তথ্যসূত্র দিলে কাজে আসতো। অনেক বেশি চেয়ে ফেলেছি মনে হয়। তবে জানালে সত্যিই উপকৃত হতাম। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাকে একটু সময় দিতে হবে।
তবে আমি মনে করি বাহাত্তরের সংবিধানই এ ব্যাপারে আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে। সেখানে রাষ্ট্রিয় মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র উল্লেখ ছিল, ছিল ১২ নং অনুচ্ছেদে ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ লোপ’ করার অনুচ্ছেদও। পচাত্তর পরবর্তী সরকার ধর্ম নিরপেক্ষতার উপরে কাঁচি চালিয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আর মুলনীতি হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল– ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা আর বিশ্বাস’কে। সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদের উচ্ছেদের ফলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
অবশ্য আমাদের উপমহাদেশে সেক্যুলারিজম বা ‘ধর্মনিরিপেক্ষতা’ ব্যাপারটিকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে ‘সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা’ হিসেবে দেখা হয়, সেটা আসলে ঠিক নয়। সেক্যুলারিজম’ শব্দটির অর্থ –‘সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা’ নয়, বরং এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে একটি মতবাদ, যা মনে করে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক রাখা উচিৎ। আমি এ নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম অনেক আগে, দেখতে পারেন এখানে।
লেখাটিতে আমেরিকার কিছু উদাহরণ নিয়েও আলোচনা করেছিলাম। আরো আসবে সামনে। একটু সময় লাগবে …
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ উত্তরের জন্যে। সত্যি বলতে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবটা স্পষ্ট হলো না। সেক্যুলারিজম বলতে শুধু বাহাত্তরে নয়, এখনও বাংলাভাষীরা বিভ্রান্তই বলা চলে। এই প্রস্তাব করার সাথে প্রস্তাবটা স্পষ্ট করারও সময় এসেছে বলে মনে করি।
প্রশ্নগুলো সংক্ষেপে –
১) রাষ্ট্র ও ধর্ম সেপারেট করলে আলাদা করে সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের ধর্ম-ভিত্তিক কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন আছে কিনা?
২) যুক্তরাষ্ট্র বা কোনো আধুনিক গণতন্ত্রসম্পন্ন রাষ্ট্রে – যেখানে এনলাইটেনমেন্টের সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে – কোথাও রাষ্ট্র ও ধর্ম সেপারেট করার পর আলাদা করে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিনা?
আপনার সময় হলে পরে এটা সুরাহা করার চেষ্টা করবো আমরা।
@রূপম (ধ্রুব),ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকার খর্ব করা কোনো উন্নত গনতন্ত্রেই নেই। আমেরিকাতে তো নেইই (সেখানে এমনকি নাৎসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এরকম দলও প্রকাশ্যে আছে)। এমনকি রাষ্ট্রীয় সেক্যুলারিজমের সবচেয়ে বড়ো ধ্বজাধারী ফ্রান্সেও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টি আছে।
আসলে অগনতান্ত্রিক মতবাদ কে রাজনীতি না করতে দেয়া কতটা গনতান্ত্রিক এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এমনকি যারা সরাসরি সংবিধানকে অস্বীকার করে কিংবা পরিবর্তন করতে চায়, তাদেরকেও রাজনীতির অধিকার বন্চিত করা কোনো উন্নত গনতন্ত্রে নেই। আপনি ঠিকই বলেছেন যে যেসব অভিযোগে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যায় সেই অভিযোগে কমুউনিস্ট-সমাজতান্ত্রিক দলগুলোও নিষিদ্ধ করা যায়।
তবে এই আলোচনার সময়-স্থান সম্ভবত এখন নয়। জৈষ্ঠ মাসের ওয়াজ মাঘ মাসে দিলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
@সফিক,
ধন্যবাদ কনফার্ম করার জন্য। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের উদাহরণ খুঁজে না পেয়ে আমারও তেমনটাই সন্দেহ হচ্ছিল।
মুক্তমনা ওয়েবসাইটেও কি যুক্তি আলোচনা সময় বুঝে করতে হয় নাকি? 😛
আমি মনে করি না যুক্তি আলোচনা কোনো মৌসুমী ব্যাপার। এটা সব সময়ের চর্চার বিষয়। বিশেষ করে আবেগের উপর সওয়ার হওয়া সময়গুলোতে এর প্রয়োজন আরও বেশি। এবং আপনার আমার মতো মুক্তমনায় আরও অজস্র সদস্যই আছেন যারা এই চর্চার প্রতি নিষ্ঠ ও তা ঘটতে দেয়াকে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে অন্যায্য আবেগসর্বস্ব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে প্রতিহত করতে সক্ষম।
দাবি যখন করা হবে, আলোচনা ঠিক সেই মুহূর্তেই করতে হবে।
@অভিজিৎ ভাই,
আমাদের এই এতোগুলো সংবিধান! চিন্তা করলেই মাথা গুলিয়ে যাবার জোগাড়। কোনটাতে কি আছে বা কি পরিবর্তন এসেছে তা-ই ঠিকমতো জানি না।
সব সংবিধানগুলোর একটা করে পি ডি এফ কপি কি মুক্তমনায় রাখা সম্ভব না?
ধন্যবাদ।
জনাব অভিজিৎ রায়,
অসম্ভব সুন্দর উপহার! এখনো ভিডিও গুলো দেখিনি! কিন্তু কি যে আপ্লুত হয়েছি, অন্তর থেকে কিভাবে যে উদ্বেলিত হচ্ছি ভাষা দিয়ে আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো না। এ আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন! স্বপ্ন চলছে বাস্তবে এগিয়ে, আমি বিজয়ের আপেক্ষায় আছি। যা আপনি উল্লেখ করেছেন। এই মুহূর্তেই শাহবাগে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে! খুব অনুশোচনায় ভুগছি, মুক্তিযুদ্ধ মিস্ করেছি খুব ছোট ছিলাম বলে, আর এখন দূরে বলে! জন্মটাই বৃথা হয়ে গেলো! শহীদ জননী যেদিন গোলাম আজমের রায় ঘোষনা করেন সেদিন আপনার মতো আমিও ছিলাম সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, আমিও ছিলাম মিছিলে যেটি নব্বইয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের দিন কারফিউ ভেঙে প্রথম বেরিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিজি হসপিটালের ছাদ থেকে ডাক্তার বীরেন্দ্র ভট্টাচার্য সহ দিনকে দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছি, বন্ধু সহযোদ্ধাদের জানিয়েছি! অথচ আজ এই ঐতিহাসিক ক্ষনে আমি প্রজন্ম চত্ত্বরে নেই!
মুক্তমনাবৃন্দ এবং দেশ প্রেমিক বাংলাদেশের সকল নাগরিক বৃন্দ,
জনাব অভিজিৎ রায়ের আহ্বানের পাশাপাশি,
দেশে বিদেশে যে যেখানে আছেন সম্ভব হলে (সময়ের হেরফের যদিও আছে) নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঐ নির্দ্দিষ্ট সময়ে ৩ মিনিটের স্তব্ধতা পালন করুন। বিশেষ করে বিদেশে যাঁরা আছেন তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ। এ হোক আমাদের ঐতিহাসিক সম্মিলন আর নতুন দিনের যাত্রার সূচনাক্ষন। জাতীয় ঐক্য। বাংলা রেনেসাঁ!
ওরে তরুণ, ওরে আমার বাছা
আধ মরাদের ঘা মেরে তাই বাঁচা।
@কেশব অধিকারী, বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি একা তিন মিনিট দাড়িয়ে ছিলাম ।আমি সাউথ আফ্রিকাতে থাকি ।
:guli:
এ ভাবেই হল আমাদের ডারউইন দিবসের উদযাপন। শ্রেষ্ঠ উদযাপন বলা যায় আমাদের।
:guli:
এই ব্লগটাও ক্ষুদ্র শাহবাগ চত্ত্বর।