যেমন নীরবে ছিলেন তেমন নীরবেই চলে গেলেন বাংলাদেশের অন্যতম শুদ্ধ ও পরিশ্রমী লেখক আবদুশ শাকুর (১৯৪১-২০১৩)।
আবদুশ শাকুর তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ক্ষীয়মাণ(১৯৬১) দিয়েই তাঁর গল্প-বলার নিজস্ব একটি স্বর উন্মোচন করেন যা তাঁর পূর্ববর্তী গল্পকারদের সাথে কোনও মতেই মেলে না। তখন তাঁর বয়স কতো আর- এই বিশ কি বাইশ! ঐ বয়সেই তিনি গল্প লিখে হৈচৈ ফেলে দিলেন। গল্প-পাঠক মাত্রেই জানলো আবদুশ শাকুরের নাম। সবাই যে তার গল্প পড়া মাত্রই হজম করে উঠতে পারলো তা কিন্তু নয়। আবদুশ শাকুরের ভারিক্কি গদ্য, উইট; হিউমার ও পাথোস এর সংমিশ্রণ সকলের বোধে ধরলও না। আবদুশ শাকুর যখন একদিকে ক্লাসিক গদ্যে গল্প লিখে যেতে থাকলেন তখন অন্য দিকে হালকা প্রচলিত গদ্যের কদর বাড়তে থাকলো, কাজেই আবদুশ শাকুর-এর কপালে আর সস্তা জনপ্রিয়তার তিলক জুটলো না। তিনি রয়ে গেলেন একটি শ্রেণির পাঠক হয়ে যে শ্রেণি আবদুশ শাকুর ঐভাবে লেখেন বলেই পড়েন। তাদের সংখ্যা আর কত! তাঁকে নিয়ে সেই ভাবে আলোচনা হয়নি, তাঁর বই নিয়ে লেখা হয়নি কোথাও। এ নিয়ে যে তাঁর ক্ষোভ ছিল না তা কিন্তু নয়। অভিমান করে তিনি প্রায়ই তাঁর ক্ষোভের কথা জানান দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে আমিও বহুবার শুনেছি সে ক্ষোভের কথা। তাই বলে তিনি মোটেও খ্যাতির পেছনে ছোটেন নি। তিনি জানতেন, বেশ ভাল করেই জানতেন, কি করলে বাঙ্গালি গুণীর কদর বুঝবে, জানতেন বলেই তা কৌশলে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। আমরা সৌখিন ও সৌন্দর্য সচেতন নয় যেনেও তিনি গোলাপ ও সংগীত নিয়ে কাজ করার সাহস দেখিয়েছেন। একটু আপোষ করলেই হয়ত সাধারণ পাঠকদের কাছে তিনি পৌঁছে যেতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেন নি। অনেকেই তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এই বলে যে, তিনি লেখকদের লেখক হয়েই বাংলা সাহিত্যে বেঁচে থাকবেন।
যারা তাঁর লেখা ছেপেছেন তারা জানেন তাঁর সিরীয়াসনেসের কথা। তাঁর বইয়ের সিংহভাগই ট্রেসিং পর্যন্ত বের হতো তাঁর বাসা থেকে। প্রুফ দেখার ভার তিনি প্রকাশকদের হাতে কখনই ছাড়তেন না। তাঁর নিজস্ব একটা বানান-রীতি ছিল। একটা বানান ভুল হলে তিনি মহাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতেন।
বোদ্ধা পাঠক মাত্রেই তাঁর সংগীত-চিন্তা, রবীন্দ্র-ভাবনা, ভাষা-সাহিত্য ও অন্যান্য চিন্তামূলক গদ্যের কদর বুঝতে পেরেছেন। তাঁর মননশীল সাহিত্য অনেক ক্ষেত্রে তাঁর সৃজনশীল সাহিত্যের জায়গাটাকে ছাপিয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি নিজে কথাসাহিত্যিক পরিচয়ে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। মাঝে মাঝে আক্ষেপ করতেন এই বলে যে, নানান বিষয়ে হাত দেওয়াতে বোধ হয় তিনি আসল জায়গায় আঘাত করতে পারেন নি। ২০১১ সালে আমার গল্পগ্রন্থের ভূমিকা লেখা-কালীন সময়ে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন- নানান দিকে না যেতে। যেখানেই যান সবাই তাঁকে বলেন- আপনি লাল গোলাপের ঐ আবদুশ শাকুর না? অথচ তিনি কাজটি করেছিলেন সখের বশে। ঐ সখই শেষ পর্যন্ত কাল হল। পাঠক আমলে আনলেন না তাঁর অতি কষ্টের ফসলের কথা। চমৎকার গল্প লিখেছেন তিনি, উপন্যাস লিখেছেন নতুন ধারার। নাটক লিখেছেন- সেগুলো টেলিভিশনে প্রচারিতও হয়েছে, লিখেছেন রম্যরচনাও। পরশুরাম, সুকুমার রায়, শিবরাম চক্রবর্তী, সৈয়দ মুজতবা, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়- এঁদের পরেই বাংলা সাহিত্যে রম্যরচনার জায়গাটা বলা যায় তিনি এক হাতে সামলে এসেছেন।
তাঁর সম্পাদনার হাতও ছিল বলিষ্ঠ। তিনি সম্পাদনা করেছেন মূল্যবান কিছু গ্রন্থ। কর্মজীবনে ছিলেন সচিব। আবার সংসার জীবনে ছিলেন সফল পিতা। সামাজিক জীবনে সাহিত্যিক। ব্যক্তি জীবনে অসম্ভব ভালো মনের একজন মানুষ। লেখালেখি ও কাজের পাশাপাশি নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতেন। কলকাতা থেকে গানের এলবামও বেরিয়েছে। মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। গাইতেন নজরুল ও আধুনিকও। আবার ছবিও আঁকতেন।
তিনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন, জানতেন উর্দু ও ফার্সিও। বিদেশে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জনের সময় ইংরেজিতে লেকচার দিয়ে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। তুখোড় বক্তাও ছিলেন যে! এতকিছুর পরও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর দরদ ও গভীর মমত্ববোধ আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সেই মহান আত্মার শান্তি কামনা করি।
আবদুশ শাকুর-এর সাহিত্যকর্ম
রচিত গ্রন্থাবলীddd
ক্রমিক নং শিরোনাম প্রকাশক গ্রন্থ পরিচয়
1. মহামহিম রবীন্দ্রনাথ/ বাংলা একাডেমী/ রবীন্দ্র-গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ
2. সঙ্গীত সংবিৎ / শিল্পকলা একাডেমী ////সংগীত-গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ
3. গল্পসমগ্র (ছোটগল্প সংগ্রহ)/ মাওলা ব্রাদার্স (সাল: ২০০২)/ অমিয়ভূষণ পুরস্কার প্রাপ্ত
4. রম্যসমগ্র /ঐ (২০০৩)/ রম্যরচনা
5. সংলাপ / ঐ (২০০৮)/ উপন্যাস
6. আক্কেলগুড়ুম / ঐ (২০০২) / কিশোরগল্পগ্রন্থ
7. বাঙালির মুক্তির গান / ঐ (২০০৭)/ দেশাত্মবোধক গান
8. গোলাপসংগ্রহ / ঐ (২০০৪) / প্রথমআলো বর্ষসেরা
9. সংগীত সংগীত / ঐ (২০০৫) / সংগীতবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ
10. মহান শ্রোতা / ঐ (২০০৬) / শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ
11. আঘাত / ঐ (২০০৬) / ছোটগল্প সংকলন
12. ভাষা ও সাহিত্য / ঐ (২০০৮) / প্রবন্ধ সংকলন
13. সমাজ ও সমাজবিজ্ঞান / ঐ (২০০৮) / প্রবন্ধ সংকলন
14. পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ / ঐ (২০০৯) / প্রবন্ধ সংকলন
15. সংগীতবিচিত্রা / ঐ (২০০৯) / সংগীত বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ
16. নির্বাচিত প্রবন্ধ / ঐ (২০১০) / প্রবন্ধ সংকলন
17. নির্বাচিত রম্যরচনা / ঐ (২০১০) / রম্যরচনা সংকলন
18. ভালোবাসা / ঐ (২০১১) / উপন্যাস
19. টোটকা ও ঝামেলা / ঐ (২০১১) / নাটক [প্রহসন]
20. ক্ষীয়মাণ / ঐ (১৯৬১) / ছোটগল্প সংকলন
21. কাঁটাতে গোলাপও থাকে / (১ম খন্ড) ঐতিহ্য (২০০৮) / জীবনস্মৃতি
22. কাঁটাতে গোলাপও থাকে / (২য় পর্ব) ঐতিহ্য (২০১১) / জীবনস্মৃতি
23. কাঁটাতে গোলাপও থাকে / (৩য় পর্ব) ঐতিহ্য (২০১২) / জীবনস্মৃতি
24. আবদুশ শাকুরের বয়ান / রোদেলা সাক্ষাৎকার
25. আবদুশ শাকুর রচনাবলী [১ম খণ্ড] / ঐতিহ্য (২০০৮) / সামগ্রিক রচনা সংকলন
26. ভেজাল বাঙালি / ঐতিহ্য (২০০৯) / রম্যরচনা সংকলন
27. রসিক বাঙালি / ঐতিহ্য (২০০৯) / প্রবন্ধ সংকলন
28. উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ / ঐতিহ্য (২০১০) / উপন্যাস
29. নির্বাচিত কড়চা / ঐতিহ্য (২০১০) / রম্যরচনা সংকলন
30. নির্বাচিত গল্প / রোদেলা প্রকাশনী (২০১০) / গল্প সংকলন
31. আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ / রোদেলা (২০১১) / প্রবন্ধ সংকলন
32. ক্রাইসিস / আহমদ পাবলিশিং (২০১০) / উপন্যাস
33. শারীর / অন্বেষা (২০১১) / গল্প সংকলন
34. সাংগীতিক সাক্ষরতা / শুদ্ধস্বর (২০১২) / সংগীত বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ
35. রবীন্দ্রনাথ : স্বদেশভাবনা / মূর্ধন্য (২০১২) / রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক গবেষণা
সম্পাদিত গ্রন্থাবলী
36. সেরা রম্যরচনা : আবদুশ শাকুর / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯৬) / রম্যরচনা সংকলন
37. শ্রেষ্ঠ গল্প : আবদুশ শাকুর / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৬) / গল্প সংকলন
38. বাংলাসাহিত্যের নির্বাচিত রমণীয় রচনা (প্রথম খণ্ড) / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৩) / রম্যরচনা সংকলন
39. বাংলাসাহিত্যের নির্বাচিত রমণীয় রচনা (দ্বিতীয় খণ্ড) / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৩) / রম্যরচনা সংকলন
40. বাংলাসাহিত্যের নির্বাচিত রম্যরচনা ও গল্প (প্রথম খণ্ড) / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯০) / রম্যরচনা সংকলন
41. বাংলাসাহিত্যের নির্বাচিত রম্যরচনা ও গল্প (দ্বিতীয় খণ্ড) / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯০) / রম্যরচনা সংকলন
42. পরশুরামের সেরা হাসির গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৮৯) / রসরচনা সংকলন
43. আসহাব উদ্দীন আহমদ: সেরা রম্যরচনা / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯৮) / রম্যরচনা সংকলন
44. অমিয়নাথ সান্যাল : স্মৃতির অতলে / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৫) / রাগসংগীত বিষয়ক প্রবন্ধ
45. ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় : সেরা রম্যগল্প // বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৪) / রম্যরচনা গ্রন্থ
46. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় : সেরা রম্যরচনা / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৬) / রম্যরচনা সংকলন
47. সৈয়দ মুজতবা আলী : সেরা রম্যরচনা / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৬) / রম্যরচনা সংকলন
48. সৈয়দ মুজতবা আলী : শ্রেষ্ঠ গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৬) / গল্প সংকলন
49. সৈয়দ মুজতবা আলী : শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৬) / প্রবন্ধ সংকলন
50. মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৭) / আত্মজীবনী গ্রন্থ
51. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : আত্মপরিচয় / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৮) / প্রবন্ধ গ্রন্থ
52. পরশুরামের শ্রেষ্ঠ গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৭) / সরস গল্প
53. শিবরাম চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৯) / সরস গল্প সংকলন
৫৪. শিবরাম চক্রবর্তীর মজার গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৯) / সরস গল্প সংকলন
৫৫. বাংলাসাহিত্যের সেরা রম্যরচনা / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০১০) / রম্যরচনা সংকলন
৫৬. হাস্যশিল্পী সুকুমার রায় / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৯) / সরস রচনা সংকলন
৫৭. নারায়ণ গঙ্গোপধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প / বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০১১) / গল্প সংকলন
পুরস্কার
১. বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ঢাকা, ১৯৭৯ ছোটগল্প লেখার জন্য
২. অমিয়ভূষণ পুরস্কার (পশ্চিম বঙ্গ) ২০০৩ ‘গল্পসমগ্র’ গ্রন্থের জন্য
৩. প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার (মননশীল) ২০০৪ গবেষণামূলক ‘গোলাপসংগ্রহ’ গ্রন্থের জন্য
৪. অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮) সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য
৫. শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমী (২০১১) সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য
৩. বিশেষ তথ্য :
বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, আরবি ইত্যাদি ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে বিশেষ পরিচিতি।
৪. সাহিত্যে আবদুশ শাকুরের কৃতি :
ক. দেশে এবং বিদেশে প্রাপ্ত গুরম্নত্বপূর্ণ পুরস্কার ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ স্থান নির্দেশ করে। তাঁর পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠার ‘গল্পসমগ্র’ গ্রন্থটি কৃতি হিসেবে বাংলা কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হবার দাবি রাখে। কলকাতার ‘ধ্রুবতারা প্রকাশন’ বের করে ‘আবদুশ শাকুরের নির্বাচিত গল্প’।
খ. রম্যরচনার ক্ষেত্রে তিনি দেশের অগ্রগণ্য লেখক হিসেবে বরিত বলেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাঁদের বাংলাভাষার চিরায়ত গ্রন্থমালা সিরিজের আওতায় ‘আবদুশ শাকুর/ সেরা রম্যরচনা’ গ্রন্থটি প্রকাশ করে। তাঁর ‘সেরা রম্য রচনা’ নামে একটি সংকলন হালে কলকাতার দীপ প্রকাশনও বের করেছে। সেখানকার ‘প্রতিভাস’ বের করেছে তাঁর রম্য সংকলন ‘ভেজাল বাঙালি’ ও প্রবন্ধ সংকলন ‘রসিক বাঙালি’।
গ. তাঁর গোলাপ-বিষয়ক গবেষণামূলক রচনাসমূহ বিশেষত ‘গোলাপসংগ্রহ’ গ্রন্থটি স্বক্ষেত্রে বাংলাভাষায় একক। শুধু পুষ্পরানী সম্পর্কেই নয়, পুস্তকটিতে রয়েছে- মৌসুমি, বর্ষজীবী, দ্বিবর্ষজীবী, চিরজীবী পুষ্পাদি বিষয়ক বিবিধ আলোচনাসহ বাংলাদেশের জাতীয় ফুল ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের উপর সারগর্ভ পর্যালোচনাও। গ্রন্থটির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ ‘গোলাপনামা’ নামে প্রকাশ করে কলকাতার বিখ্যাত প্রকাশক ‘প্রতিভাস’।
ঘ. গবেষণামূলক সঙ্গীতলেখক হিসেবে সাহিত্য ও সংগীত সমাজে তিনি অগ্রগণ্যদের অন্যতম। শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের স্বর, সুর, কথা, হিন্দুস্তানিসঙ্গীত বনাম কর্ণাটকসঙ্গীত, ধ্বনিমুদ্রণ প্রযুক্তি, ধ্বনিসংস্কৃতি বনাম লিপিসংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে গভীরচারী আলোচনার জন্য তাঁর ‘সংগীত সংবিৎ’ ও ‘সংগীত সংগীত’ গ্রন্থ দু’টি বিশেষজ্ঞমহলে সমাদৃত। দেড়শতাধিক বছরের দেশাত্মবোধক গানের ওপর গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘বাঙালির মুক্তির গান’ স্বক্ষেত্রে এদেশে প্রথম বলে স্বীকৃত। ২০১২ সালের কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে ‘প্রতিভাস’ প্রকাশ করে তাঁর সংগীত বিষয়ক মৌলিক গবেষণা-গ্রন্থ ‘স্বর সুর শব্দ ও সংগীত’।
ঙ. রবীন্দ্র-গবেষণায় দীর্ঘকাল যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন আবদুশ শাকুর- যেমন বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ‘মহামহিম রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ’, মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশিত ‘পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রনাথ : স্বদেশভাবনা’ ইত্যাদি। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ‘মহামহিম রবীন্দ্রনাথ’ (১৯৯৭) গ্রন্থটির বিপুলভাবে পরিবর্ধিত সংস্করণ একই নামে কলকাতার ‘প্রতিভাস’ প্রকাশ করে ২০১১ সালে। চলতি বছরের শুরুতে কলকাতার ‘একুশ শতক’ বের করেছে ‘রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু জানি’। অতি সম্প্রতি ‘রবীন্দ্রনাথও মানুষই ছিলেন’ বের করেছে কলকাতার দীপ প্রকাশন। তবে এ বিষয়ে তাঁর এ যাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশমান ‘রবীন্দ্রজীবন’- যার প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড ইতোমধ্যেই বেরিয়ে গিয়েছে এবং তৃতীয় খণ্ডের কাজও অনেকখানিই এগিয়েছে।
চ. তাঁর উপন্যাসগুলি ভাষা ও উপজীব্যের দিক দিয়ে অভিনব বলেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ : ‘ক্রাইসিস’, ‘সংলাপ’ ও ‘উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ’।
ছ. মুখের ভাষার মতো তাঁর গদ্যও বুদ্ধিদীপ্ত, কাব্যময়, রঙ্গিন ও ক্ষুরধার। গদ্যশরীর যতখানি নিখাদ আর শাণিত হতে পারে, তাঁর ভাষা প্রায় তারই উপমা। আজ আমাদের চারপাশে অযত্ন আর অবহেলায় লেখা শিথিল গদ্য ভাষার যে ‘‘অলীক কুনাট্যরঙ্গ’’ মাথা উঁচিয়ে উঠেছে- আবদুশ শাকুরের গদ্য চিরায়ত গদ্যের পক্ষ থেকে তার শক্তিমান প্রতিবাদ। জ্ঞান, মেধা এবং মননের সমবায় তাঁর বৈদগ্ধ্যকে এমন এক পরিশীলিত শ্রী এবং উপভোগ্যতা দিয়েছে যার কাছাকাছি জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে কেবল চিরায়ত বাংলাসাহিত্যের ভেতরেই।
ওয়েবসাইট ঠিকানা : http://www.abdush-shakoor.com
http://www.abdush-shakoor.com
তার সব গুলো বই এর তালিকা করে দেয়ায় ধন্যবাদ।
গোলাপ সংগ্রহটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।
ছোট থেকেই আবদুশ শাকুর নামটি আমার কাছে পরিচিত, যেহেতু আরো অনেক বাঙালি পরিবারের মত আমাদের বাড়িতেও ছিল উনার বই। এই মুহুর্তে মনে পড়ছে ‘একাত্তরের কড়চা’র কথা।
আবদুশ শাকুর একজন প্রতিষ্ঠিত রম্য লেখক এবং আমাদের সকলেরই শ্রদ্ধেয়। কিন্তু ‘এক হাতে সামলে এসেছেন’ কথাটিকে বড্ড আবেগতাড়িত মনে হয়েছে, মোজাফফর ভাই!
পরিশেষে, আব্দুশ শাকুরের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা!
@কাজি মামুন, আবেগতাড়িত তো বটেই। আমার জানার ভুলও হতে পারে। ধন্যবাদ মামুন ভাই।
@মোজাফফর হোসেন,
২০১১ এর বই মেলায় তোমার সাথে কথা বলে আবদুশ শাকুরের কিছু বই কিনেছিলাম। তাঁর ‘এ্পিটাফ’ গল্পটি মনে দাগ কেটেছিল। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। যারা বাংলাদেশের সাহিত্য পড়ে না তাদেরকে আবদুশ শাকুর পড়ার অনুরোধ করছি।
@গীতা দাস, ldldদিদি তার উপন্যাস পড়েও দেখতে পারেন। মন্দ লাগবে না। তিনি তার লেখার মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন।
পত্রিকার পাতায় তাঁর কিছু কিছু লেখা পড়েছি, ভাল লাগতো। তাঁর লেখা বই সময় বা সুযোগের অভাবে পড়া হয়নি, মনে হচ্ছে এতদিন না পড়ে ভুল করেছি, এখন পড়তে হবে। আপনার লেখাটি পড়ার আগে তার সমন্ধে এত বেশী জানতাম না। তিনি যে এত বেশী লিখেছেন এটাও অবাক হয়েছি।
ধন্যবাদ তাকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
@হেলাল, পড়ে দেখতে পারেন। ভাল লাগবে..
বাংলা সাহিত্য জগতে আবদুশ শাকুর এক নীরব দিকপাল। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি………
আবদুশ শাকুর (১৯৪১-২০১৩)!