শিরোনামটি একজন লেখকের বই থেকে নেয়া। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। বাংলাদেশের সব ক’টা জানালা খুলে দেয়া হয়েছে মায়ের শ্রেষ্ট সন্তানদের জন্যে যারা এই দেশটাকে ভালবেসে জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলার শ্রেষ্ট সন্তানদের একজনের নাম শেখ মুজিব। আজকের এই দিনে লক্ষ-কোটি মানুষের কণ্ঠে, বাংলার আকাশে বাতাসে যার নামটি ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই নাম শেখ মুজিব। এই দিনে মুজিবের দেহ বন্দী ছিল পাকিস্তানের কারাগারে কিন্তু ব্যক্তি মুজিব উপস্থিত ছিলেন বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে প্রাণে, মানসে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে লক্ষ-কোটি মুক্তিসেনার সম্মিলিত সত্ত্বা একটি মোহনায় মিলিত হয়ে যে একটি সত্ত্বা হয়েছিল তিনি শেখ মুজিব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা মুজিব ছাড়া সম্ভব নয়, বায়ান্নতেও মুজিব একাত্তরেও মুজিব। এ ইতিহাসের পাতায় পাতায় মুজিব। হরেক প্রকার প্রাণীর উপস্থিতিতে বিচরণে বনের সৌন্দর্য, কিন্তু বনের রাজা একজনই হয়। মাটির গর্তবাসী মুশিকছানারা যখন সিংহের নিন্দা করে তখন হাসি পায়, ক্ষোভ হয়।
এই লেখাটি সম্পূর্ণই সেই লেখকের বই থেকে কপি পেষ্ট করা। পারতাম তার উক্তিগুলো খন্ডভাবে আলোচনা করে একটি লেখা সাজাতে, কিন্তু তা হয়তো মুজিব নিন্দুকদের চোখে হতো পক্ষপাতদুষ্ট বা এক পেশে। বিজয় উৎসবের এই দিনে এক সিংহের মুখ থেকে আরেক সিংহের বর্ণনা ও তার সম্মন্ধে জানার গুরুত্ব বিবেচনা করে লেখাটি মুক্তমনার পাঠকদের জন্যে উপস্থাপন করা হলো।
====================================================
এখানে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী খুবই কম; বুদ্ধিজীবী নামে যারা আছে, তারা মোটামুটি অশিক্ষিত, তবে সেটা কোনো অপরাধ নয়, প্রকৃত শিক্ষা দরিদ্র দেশে অর্জন করতে না পারাই স্বাভাবিক, তবে এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য চরিত্রহীনতা, এরা মুর্খ শক্তিমানদের মুঠো থেকে ক্ষুদকুড়োঁ ভিক্ষে পেতে চায়, তাই এরা পেছনের সারির কর্মী হয়ে ওঠে বিভিন্ন দলের; এবং দলের মুখের দিকে তাকিয়ে যে-কোনো শ্লোগান দেয়; বাঁধাবুলি আবৃত্তি করে।
তাদের সাধ শক্তিমানদের কাছ থেকে কিছু পাওয়া। স্বাধীনতার এক বা দু-দশক পরে মার্কিন ক্ষমতাধিকারীরা যদি বলতো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনে ওয়াশিংটন ও তাঁর সঙ্গীদের কোনো ভূমিকা নেই, তাহলে যা হতো, তাই হয়েছে আজকের বাঙলাদেশে। মার্কিনরা বাঙালি মুসলমানদের মতো বিকৃত ছিলো না, নষ্ট ছিলো না, এখনো নেই; তারা তাদের মহানদের গৌরব দিয়ে এসেছে, তাঁদের রচিত সংবিধান প্রাণপণে রক্ষা করে এসেছিল; কিন্তু আমরা তুচ্ছ বিকৃত বাঙালি মুসলমান স্বাধীনতার প্রধান পুরুষদের খুন করেছি, অবজ্ঞা করেছি, তাঁদের নাম পর্যন্ত মুছে ফেলে গৌরব বোধ করেছি। এটাই স্বাভাবিক আমাদের জন্যে- আমাদের রক্তেই দোষ রয়েছে। মার্কিন প্রধান বিচারালয়ের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে স্বাধীনতার স্রষ্টাদের প্রণীত সংবিধান সমস্ত বিপন্নতার মুখেও রক্ষা করা, কিন্তু আমাদের প্রধান বিচারালয় সেটিকে বিভিন্ন দুর্বৃত্তের পায়ের নিচে দলিত হতে দেখে কখনোই দুঃখ পায় না। যে-জাতি সত্যকে মেনে নেয় না, সত্যকে লালন করে না, তার মতো ঘৃণ্য ও ভবিষ্যৎহীন আর কেউ হতে পারে না।
আমি কখনো শ্লোগান দিই নি, কারো স্তব করি নি, কারো দিকে মাথা নত করি নি, করবোও না কখনো; কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে কখনো দ্বিধা করি নি। আমার বন্ধুরা অনেক মহাপুরুষের জয়গান গেয়ে কবিতা লিখেছেন, আজো লিখছেন, বক্তৃতায় অনেকের স্তবে মুখর হয়েছেন, আমি লিখি নি, মুখর হই নি; কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধা করি নি, এবং যে-কোনো আরাধ্য ব্যক্তি ও বিশ্বাসের সমালোচনা করতে দ্বিধা করি নি। কেননা কারো কাছে আমি কিছু চাই নি। আমি কারো দলে নেই।
১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টি আমার মনে পড়ে, যদিও স্মৃতি এরই মাঝে রহস্যময় হয়ে উঠেছে। তখন আমি ছিলাম ২৪, এর মাঝে এতো বছর কেটে গেছে, এতো কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার স্মৃতি কি সবুজ পাতার মতো থাকতে পারে? ১৯৭০- এর নভেম্বর ডিসেম্বরে কি আমি স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? কেউ চেয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানে? মুজিব চেয়েছিলেন? অন্য কেউ চেয়েছিলো? তখন স্বাধীনতার কথা ভাবতে ভয় লাগত না? তখন আমরা শুনতাম স্বায়ত্বশাসনের কথা। তখন কে ছিলো সবচেয়ে পরিচিত, বিখ্যাত, কেন্দ্র? বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ? তাঁরা তো কালাতিক্রমী, তাঁদের কেউ উৎখাত করতে পারে না। ওটি শৈল্পিক কাব্যিক ব্যাপার ছিলো না, ছিলো রাজনীতিক; ওই রাজনীতিক আকাশে একটিই নক্ষত্র ছিলো, তাঁর নাম সূর্য ছিলো না, ছিলো শেখ মুজিব। এককালের এক উত্তেজিত ছাত্রনেতা পরে হয়ে উঠেছিলেন মহানেতা। আমি কখনো তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলি নি। দেবতাদের পুজো করার জন্যে ভক্তরা ১৯৯ টা নাম তৈরি করে। আমার কোনো দেবতা নেই। ওটা রাজনৈতিক শ্লোগান, ভক্তরা যেমন দেবতাদের বিভিন্ন নামে ভূষিত করে, এটাও তেমন একটি অভিধা; ভক্তরা বিভিন্ন অভিধায় তাদের দেবতাকে পুজো করে দেবতার কিছু মহিমা নিজের ভেতরে সঞ্চারিত করে ধন্য ও শক্তিমান হওয়ার জন্যে। আমার কবিতায় দু-একবার তাঁর নাম এসেছে, তাও মুজিব, সঙ্গে কোনো অভিধা নেই।
তবে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন রাজনীতির প্রধান পুরুষ, এবং ঐতিহাসিক বিচারেও তাঁর সঙ্গে তুলনীয় আর কোনো বাঙালি রাজনীতিবিদ নেই। সোহরোয়ার্দি? ফজলুল হক? ভাসানি? তাঁর পাশে অগ্রজরা মাঝারি, অনুজরা তুচ্ছ ও হাস্যকর। তিনি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি করেন নি, তিনি যুগান্তর ঘটানোর রাজনীতি করেছেন। তিনি শুধু রাজনীতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন নি, তিনি যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন রাজনীতিক ধারার, যেমন কবিতায় যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ বা ত্রিশের কবিরা।
তাঁকে ঘিরেই আলোড়িত ও বিস্ফোরিত হয়ে চলেছিলো বাঙলাদেশের, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের, রাজনীতি; অর্থাৎ তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন আমাদের রাজনীতিক মণ্ডলটিকে; এবং তাঁর পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর সমকালীন ও প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। আমি রাজনীতিবিদদের ভক্ত নই, কখনো তাঁদের স্তব করি নি; তবে তাঁদের ভূমিকা ও মূল্য কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি। শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উঁচুতে ছিলো তাঁর মাথাটি- সহজেই চোখে পড়তো তাঁর উচ্চতা, এবং আমাদের বামন রাজনীতিবিদদের মধ্যেও তিনি ছিলেন মহাকায়।
অনেক সময় আমার মনে হয় বাঙালিদের মধ্যে তাঁরাই মহৎ, যাঁরা পেরিয়ে যান বাঙালিত্বের ক্ষুদ্র সীমা, যেমন পেরিয়ে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ ও আরো অনেকে। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে এই সীমা পেরোতে পেরেছেন খুবই কম। মহান বাঙালিরা বাঙালি থেকেও সীমা পেরিয়ে গিয়েছিলেন বাঙালিত্বের, রাজনীতির ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানের মধ্যে এই সীমা পেরোতে পেরেছিলেন একমাত্র মুজিব। তাঁর স্তবকারীরা যে তাঁকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে স্তব করে, সেটা স্তবমাত্র, এ-স্তব তাঁকে নষ্ট করেছিলো, তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ অনেক বাঙালি আছেন আরো অনেকে; কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে তিনি অদ্বিতীয়।
রাজা ও রাজনীতিবিদদের অতিশায়িত করে দেখার একটা মত্ততা রয়েছে মানুষের মধ্যে, এমন কি কবি ও শিল্পীদের মধ্যে, কেননা সাধারণেরা ক্ষমতাকে অত্যন্ত মূল্য দেয়, তারা দেখে সবার ওপরে ক্ষমতাই সত্য, আর কবি-শিল্পীদের একটি প্রথাগত কাজই হচ্ছে রামায়ণ-ইলিয়ড লেখা, গির্জার দেয়ালে মেডোনার ছবি আঁকা, স্তব করা, সাধারণের বিশ্বাসকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা। কিন্তু আমি যেহেতু ক্ষমতাকে খুবই কম মূল্য দেই, আসলে কোনো মূল্যই দেই না, আমি জানি ইতিহাস অনেক সময় তুচ্ছ ইঁদুরকে সিংহরূপে প্রসব করে, আমার চোখের সামনেই তো কতো তুচ্ছকে দেখলাম মহৎ হয়ে যেতে; তাই সভ্যতার অন্যান্য এলাকার শ্রেষ্ঠদের থেকে তাঁদের আমি অনেক গৌণ, তুচ্ছ মনে করি। কিন্তু মানুষকে সাধারণত বাস করতে হয় তুচ্ছদের অধীনে।
ইতিহাসের অনেক বীরই ইতিহাসের পরিহাস- কৌতুক, যেমন বলেছেন কার্ল মার্ক্স পরিস্থিতির বুদবুদ, তারা ভালো জেলে বা কর্মকার বা চর্মকারও হতে পারতো না। রবীন্দ্রনাথের পাশে গান্ধী বা মুজিব খুবই গৌণ, অন্যদের কথা ছেড়েই দিলাম- তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতির এলাকায়; এবং আমাদের রাজনীতিক জীবনে মুজিব অতুলনীয়। কচ্ছপ বেঁচে থাকে কয়েকশো বছর, সিংহ বাঁচে কয়েক বছর; কিন্তু কচ্ছপ হচ্ছে কচ্ছপ আর সিংহ হচ্ছে সিংহ।
জনগণ সাধারণত, প্রাত্যহিক জীবনে, খড়কুটো বা নিস্তরঙ্গ জলরাশি বা ঘুমিয়ে থাকা অগ্নিগিরির মতো; জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাদের মনে হয় তুচ্ছ ও বিবর্ণ ও অসহায়, তারা তাদের জীবন নিয়ে থাকে বিপর্যস্ত বা ছোটোখাটো সুখে সুখী। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে তারা অত্যন্ত মলিন, আপাতদৃষ্টিতে ভাঙাচোরা, তাদের মধ্যে কোনো প্রচণ্ড শক্তি লুকিয়ে আছে, তা টেরই পাওয়া যায় না। কখনো কখনো কোনো নেতা আসেন, যিনি ওই খড়কুটোকে করে তোলেন দাবানল, জলরাশিকে তীব্র প্লাবন, এবং ঘুমন্ত অগ্নিগিরিকে জাগিয়ে তোলেন, চারিদিকে লাভাস্রোত বইতে থাকে। এ-কাজটি করেছিলেন মুজিব।
জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার-মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, তা ছিলো অশুভ দাবানল, প্লাবন, অগ্নিগিরি, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। জনতাজাগানো নেতারা জনগণকে সৃষ্টি করতে পারে, আবার নষ্ট করতে পারে। তারা জনগণকে উন্মাদ মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। ১৯৭১-এর মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ অগ্নিগিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।
জনগণকে যখন জাগানো হয়, তখন তাদের সামনে একটি বা কয়েকটি মহান লক্ষ্য তুলে ধরতে হয়, তখন আমাদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলো স্বাধীনতা; স্বায়ত্তশাসনকে তখন আর আমাদের কাছে মূল্যবান মনে হয় নি। এ-ধরণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কতকগুলো রূপক প্রতীকও দরকার হয়, যেগুলো জনগণের ঘুমন্ত চেতনালোককে আলোড়িত করে, সবাইকে একই আবেগে উদ্বেলিত করে, ওই রূপক প্রতীকগুলোকে তখন মনে হয় পবিত্র, ঐন্দ্রজালিক, ওগুলো তখন যৌথ চেতনা ও প্রেরণার মতো কাজ করে। আধুনিক জীবনে তৈরি হয় প্রাচীন পুরাণ।
একনায়কেরা সাধারণত জাগিয়ে তোলে তাদের প্রাচীন কিংবদন্তি, মানুষের মনকে ঘোলাটে করে তোলে, মানুষকে এলোমেলো করে তোলে, তাদের ভেতর জাগিয়ে তোলে আদিম উন্মত্ততা; যেমন করেছিলো হিটলার আর্যপুরাণ, নীলরক্তের পুরাণ জাগিয়ে, যেমন করতে চেষ্টা করেছিলো পাকিস্তানি একনায়কেরা ইসলামি পুরাণ জাগিয়ে তুলে। শেক্সপিয়র বলেছিলেন, জনতার অনেক মাথা, কিন্তু ভেতরে কোনো ঘিলু নেই; এটাকে ব্যবহার করে একনায়কেরা, তাদের মাতিয়ে তোলে।
তিনটি রুপকপ্রতীক পেয়েছিলাম আমরা একাত্তরের মার্চে। একটি জাতীয় সঙ্গীত-‘আমার সোনার বাঙলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, যেটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্যসৌন্দর্যমণ্ডিত জাতীয় সঙ্গীত, যাতে কোনো উগ্রতা নেই, আছে শুধু প্রকৃতিপ্রেম; দ্বিতীয়টি এক অপূর্ব জাতীয় পতাকা, যাতে ছিলো সবুজের মাঝে সূর্যের মধ্যে বাঙলাদেশের মানচিত্র, তৃতীয়টি হৃদয় কাঁপানো স্বদেশ জাগানো শ্লোগানঃ ‘জয় বাঙলা’। এ-তিনটি রূপকপ্রতীক দিয়ে মার্চ ও তার পরের মাসগুলো আলোড়িত ও মুখরিত ছিলো; এগুলো ছিলো পুরোপুরি পাকিস্তানি চেতনার বিপরীত, এবং আবেগ ও শৈল্পিকভাবে অনেক উৎকৃষ্ট।
‘পাকসারজমিন সাদবাদ’-এর পাশে ‘আমার সোনার বাঙলা’, আমি তোমায় ভালোবাসি’, চানতারার পাশে সূর্যের ভেতরে বাঙলাদেশের মানচিত্র ছিলো চেতনাগত ভাবে ভিন্ন ও শৈল্পিক; আর ‘জয় বাঙলা’ শ্লোগানটি ছিলো বাঙালির হৃদয়ের উল্লাসের মতো।
‘নারায়ে তাকবির’, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-এর মতো মধ্যযুগীয়তার পাশে ‘জয় বাঙলা’ ছিলো সঙ্গীতের মতো। এর আগে বাঙালি কখনো এতো তীব্র, সংহত, ও তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোগান দেয় নি, যাতে একটি পদেই প্রকাশ পেয়েছে রাজনীতি, সংস্কৃতি, দেশ, ভাষার সৌন্দর্য ও জাতীয় আবেগ। এসবই ছিলো, তবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের সন্ধ্যায়ও আমি, আরো অনেকের মতো, বুঝি নি আমরা স্বাধীনতার দিকে যাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি। শেখ মুজিবও কি বুঝেছিলেন?
বাসনা জেগে উঠেছিলো স্বাধীনতার জন্যে, কিন্তু কীভাবে তার বাস্তবায়িত হবে, তা জানি না; হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে (এখন নাম শেরাটন) দিনের পর দিন যে-গোপন আলোচনা চলছিলো, তা বাইরে এসে পৌঁছাত না, আমরা পথে পথে ‘জয় বাঙলা’ শ্লোগান দিয়ে, ‘আমার সোনার বাঙলা’ গেয়ে লাঠি নিয়ে মিছিল করে, স্বপ্ন দেখে চলছিলাম, আর চক্রান্তকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতারিত হয়ে চলছিলেন মুজিব।
স্বাধীনতা লাভের পথ অবশ্য একটি নয়, অনেক; নানা পথে নানা রূপে স্বাধীনতা এসেছে নানা জাতির জীবনে, এবং আমরা সম্ভবত স্বাধীনতা অর্জনের ব্যাপারে সবচেয়ে ভাগ্যবান- সবচেয়ে কম সময়ে এ-অসাধারণ জিনিশটি আমরা পেয়েছি, যদিও আমরাও প্রচুর রক্ত দিয়েছি। পরিস্থিতি প্রসন্ন না হলে- তখন যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকতো, ইন্দিরা গান্ধী না থাকতেন- আমাদের আরো অনেক রক্ত দিতে হতো, হয়তো আরো মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হতো।
পাকিস্তানি ধূর্ত রাজনীতিক ও বর্বর চেঙ্গিশ সেনাপতিরা এমন গোষ্ঠী ছিলো না, যাদের সঙ্গে আলোচনা করে, যুক্তিতর্ক করে, আমরা স্বাধীনতা পেতে পারতাম; তারা বেছে নিয়েছিলো তাদের প্রিয় সরল একমাত্র চেনা পথ, রাইফেলের পথ, এতে তারা ঐতিহাসিকভাবেই দক্ষ- অন্তত তাই তারা মনে করতো; তারা মনে করেছিলো কামান চীনা রাইফেল বোমা বেয়নেট বোমারু বিমান দিয়ে সহজেই আমাদের পর্যদুস্ত করতে পারবে, পাকিস্তান টিকে থাকবে রোজহাশর পর্যন্ত। তাদের বিশ্বাস ছিলো রাইফেল বেয়নেটে, তারা বুঝতে পারে নি অনেক সময় রাইফেল বেয়নেট কোনো কাজে আসে না; তাদের আস্থা ছিলো তাদের প্রভু চীন ও আমেরিকা তাদের ত্রাতা হিশেবে দেখা দেবে। তারা নিশ্চিত ছিলো একরাতের প্রচণ্ড আক্রমণে সব নীরব হয়ে যাবে পূর্ব রণাঙ্গনে, শুধু লাশ পড়ে থাকবে পথে পথে, ওই লাশের ওপর দিয়ে চলবে তাদের ট্যাংক, তার ওপর উড়বে চানতারা, পতপত করবে পাকিস্তান।
মুজিবকে পাকিস্তান বন্দী করেছিলো, খুনও করতে পারতো, তাদের জন্যে এটাই স্বাভাবিক ছিলো; তবে তাদের মতো মগজহীনেরাও হয়তো বুঝতে পেরেছিলো যে বন্দী মুজিবের থেকে নিহত বা শহিদ ( শহিদ শব্দটি আমার পছন্দ নয়, এর বাঙলা কি হতে পারে নিহত-অমর?) মুজিব হবেন অনেক বেশি জীবন্ত ও শক্তিশালী। তারা বুঝেছিলো বন্দী মুজিবকে হয়তো দমন বা প্রতারণা করা যাবে, কিন্তু শহিদ মুজিবকে দমন বা প্রতারণা করা যাবে না; তখন তিনি হয়ে উঠবেন অপরাজিত, অজেয়, অদম্য।
মুজিবকে কখনো আমি কাছে থেকে দেখি নি, বাসনাও কখনো হয় নি, আমি বীরপুজারী নই,- বেশ দূর থেকে কয়েকবার তাঁকে দেখেছি, তাঁর স্তবও কখনো করি নি; রাজনীতিক মহাপুরুষদের প্রতি আমি বিশেষ আকর্ষণ/শ্রদ্ধা বোধ করি না। মুজিব যে বন্দী হয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়টি ভরে কারারুদ্ধ ছিলেন পাকিস্তানে, একে তাঁর শত্রুরা দীর্ঘকাল ধরে নিন্দা করে আসছে; তারা খুব অশ্লীলভাবে ব্যাপারটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যাখ্যা করে সুখ পায়। মুশিকছানারা নিন্দা করে সিংহের।
আমাদের শোচনীয় দেশে সব ধরণের ব্যাখ্যাই সম্ভব, মিথ্যে এখানে খুবই শক্তিমান, অনেকটা আমাদের মায়ের বুলি, এবং নির্লজ্জভাবে তা প্রচার করা যায়। মুজিব যদি ধরা না দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতেন, কোনো ভাঙা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, তাহলে কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্র, আরো সফল হতো? তাহলে কি তিনি মুজিব হতেন? তাহলে তো তিনি হতেন মেজর জিয়া। মুজিব পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, তিনি মুজিব হতেন না, হতেন সামান্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, এবং আমরা একটি বিশাল রাজনীতিক ভাবপ্রতিমাকে হারাতাম, মুক্তিযুদ্ধে আমরা এতো অনুপ্রেরণা বোধ করতাম না। যোদ্ধা মুজিবের থেকে বন্দী মুজিব ছিলেন অনেক শক্তিশালী ও প্রেরণাদায়ক, তিনি তখন হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক, ঘোষকের অনেক ওপরে যাঁর স্থান।
মুক্তিযুদ্ধের সময়টি ভরে তিনিই ছিলেন নিয়ন্ত্রক ও প্রেরণা, তিনিই ছিলেন, এক অর্থে, মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের কারাগারে তিনই হয়তো মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতেনও না, পাকিস্তানিরা তাঁকে তা জানতে দেয় নি, মুক্তিযুদ্ধের রূপ কী তা হয়তো তিনই কল্পনাও করতে পারেন নি, কিন্তু সমগ্র বাঙালির রূপ ধরে তিনিই করে চলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাই ছিলো মুজিবের দ্বিতীয় স্বত্তা। মুজিবের বন্দীত্ব মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার থেকে অনেক বড়ো ঘটনা। ঘোষণা করে ঘোষক হওয়া যায়, মুজিব হওয়া যায় না।
২৫-এ মার্চের পর সব বাঙালিরই, নিজেদের জীবন নিয়ে নিরন্তর ভয়ের মধ্যেও, পরস্পরের কাছে সবচেয়ে বড়ো ও আবেগকাতর প্রশ্নটি ছিলো, ‘মুজিব কোথায়? তিনি কি বেঁচে আছেন?’ তাদের মনে হতো মুজিব বেঁচে থাকলে তারাও বেঁচে থাকবে, মুক্তির বাসনা বেঁচে থাকবে। ২৮-এ মার্চে যখন প্রথম উদ্বেলিত উত্তেজিত কম্পিত স্বরে মেজর জিয়ার ঘোষণাপাঠ শুনলাম, তখনই জেনে আলোড়িত হলাম যে মুজিব বেঁচে আছেন; এটা এক মহাস্বস্তি ও প্রেরণা নিয়ে এসেছিলো; তখন বুঝতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
২৬-এ মার্চের দুপুরে আকাশবাণী বাঙলা ও ইংরেজীতে বারবার ঘোষণা করছিলো, ‘পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, সিভিল ওয়ার হ্যাজ ব্রোকেন আউট ইন ইস্ট পাকিস্তান’, তাতে ভয় পেয়েছিলাম, কেননা গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না, এবং ভয়াবহ ধারণা ছিলো, কিন্তু ২৮-এ মার্চে তা পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধে।
ওই ঘোষণায় বাঙলা ও ইংরেজীতে, কম্পিত ও আবেগস্পন্দিত কণ্ঠে স্পষ্ট করে বলা হয়, যদিও খুবই অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো, যে মুজিব জীবিত আছেন, তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুজিবের পক্ষে ঘোষণা পাঠ করছেন একজন মেজর, যাঁর নাম মেজর জিয়া। কে মেজর জিয়া? তাঁর নাম তো কখনো শুনি নি।
একটি ঘোষণাপাঠের ফলে, তাঁর কাঁপাকাঁপা কণ্ঠের আবেগ, মুহূর্তেই তিনি এক নতুন নায়ক হিশেবে দেখা দেন। অনেক সময় হঠাৎ কেউ কেউ অসাধারণ হয়ে ওঠেন, এজন্যে লাগে সুযোগ ও আকস্মিকতা। কেউ হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হয়ে উঠতে পারেন না, কিন্তু কেউ কেউ হঠাৎ মেজর জিয়া হয়ে উঠে সারা দেশকে আলোড়িত করতে পারেন। এটা হঠাৎ আকাশে মহাগোলমাল থেকে উদ্ভুত নক্ষত্রের মতো। কিংবদন্তি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই, আকস্মিকভাবে, ঐতিহাসিক সুযোগে; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হওয়ার জন্য লাগে দীর্ঘ সাধনা।
ওই কাঁপাকাঁপা, অনভ্যস্ত, স্খলিত বাঙলা ও ইংরেজি ঘোষণাটির আগে আমরা কি কেউ জানতাম কে মেজর জিয়া? তাঁর কণ্ঠস্বর ও ঘোষণা আমাদের সঞ্জীবিত করেছিলো, কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিলো আমাদের? কোনো ধারণা ছিলো না, কিন্তু মুহুর্তেই ধারণা হয়ে যায়, আমরা কল্পনায় একজন অদম্য তরুণ মেজর ও যোদ্ধাকে দেখতে পাই। তিনি যদি বলতেন, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান বলছি’, তাহলেও তিনি এতোটা দাগ কাটতে পারতেন না, আমরা হয়তো একজন ক্লান্ত বুড়ো মেজরের কথা ভাবতাম, যে পদোন্নতি পায় নি, দেহে শিথিল হয়ে গেছে, কেননা ওইটিই বাঙালিদের জন্য স্বাভাবিক ছিলো পাকিস্তানে; মেজর ও জিয়া, এ-দুটি শব্দের সমাবেশ খুবই উদ্দীপক ছিলো। তবে এটি ছিলো এক ঐতিহাসিক আকস্মিকতা ও সুযোগ, যাতে একজন সাধারণ মেজর অসাধারণ যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন, সারা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি অপরিহার্য ছিলেন না, কালুরঘাটের বেতারযন্ত্রীরা যদি অন্য কোনো মেজরকে পেতেন, তাকে দিয়ে ঘোষণা করাতেন, তাহলে তিনিই হয়ে উঠতেন কিংবদন্তি।
কালুরঘাটের বেতারযন্ত্রীরা একজন মেজরকে খুঁজছিলেন কেনো? তাঁদের মনে নিশ্চয়ই অনেক ভাবনা ছিলো; তাঁদের হয়তো ধারণা হয়েছিলো একজন মেজরকে দিয়ে ঘোষণা করালে সেটা বৈদ্যুতিকভাবে কাজ করবে। করেছিলও তাই। মেজর জিয়া হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আকস্মিক কিংবদন্তি। এটা আর কারো ভাগ্যে জোটে নি। এর পর মেজর জিয়া কোন যুদ্ধাঞ্চলের প্রধান ছিলেন, কতোটা যুদ্ধ করেছিলেন, আদৌ করেছিলেন কি না, কতোটা দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, তা আর মূল্যবান নয়; তাঁর থেকে হয়তো অনেকেই বেশী যুদ্ধ করেছিলেন, অনেক বেশী দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, অনেকেই তো বরণ করেছিলেন মৃত্যু; কিন্তু তাঁদের পক্ষে মেজর জিয়ার মতো কিংবদন্তি হয়ে ওঠা সম্ভব ছিলো না; তাঁরা কেউ কালুরঘাট থেকে ঘোষণার ঐতিহাসিক আকস্মিক সুযোগটি পান নি। কালুরঘাট সৃষ্টি করেছিলো মেজর জিয়াকেঃ একটি কিংবদন্তিকে।
কিংবদন্তির মূল্য রাজনীতিতে, ধর্মে সাধারণের কাছে অত্যন্ত বেশি, কেননা তা ইন্দ্রজাল ও অলৌকিকতার মতো। সাধারণ মানুষ সত্য দিয়ে যতোটা আলোড়িত উদ্বেলিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আলোড়িত হয় কিংবদন্তি ও ইন্দ্রজাল দিয়ে। মেজর জিয়া পরে মেজর জেনারেল হয়ে ছিলেন, তবে মেজর জেনারেল জিয়ার থেকে মেজর জিয়া অনেক বড়ো; মেজর জিয়া কিংবদন্তি, আর মেজর জেনারেল জিয়া সামরিক বাহিনীর একজন উচ্চ সেনাপতি মাত্র। তিনি যে পরে এতো কিছু হয়েছেন, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতি, একটি রাজবংশই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তার মূলে রয়েছে কালুরঘাট; এবং প্রাণ দিয়ে তিনি কিংবদন্তিটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ট্র্যাজিক নায়কেরা স্মরণীয় হয়ে থাকেন ট্র্যাজিক পতনের জন্যেই। মেজর জিয়া এরশাদের মতো বিদূষক ছিলেন না; তাহলে তিনি এখনো বিদূষকের মতো বেঁচে থেকে কৌতুক যোগাতেন। তিনি ছিলেন ট্র্যাজিক নায়ক, যদিও ক্ষুদ্র মাপের, গ্রিক নয় বাঙালির আকারের, একটি রঙ্গমঞ্চে যিনি হঠাৎ আবির্ভূত হয়েছিলেন; তাঁর উত্থান ও পতন ট্র্যাজিক নায়কের মতোই, যদিও তাঁকে অনেকেই নায়ক মনে নাও করতে পারে। মনে করতে পারে তিনি ছিলেন ছোটোখাটো নায়কের মুখোশপরা, ছদ্মবেশী, মুখোশের ভেতরে ছিলেন ভিন্ন রকম, যা সবাই দেখতে পায় নি।
সারা ১৯৭১-এ যতো কিছু ঘটেছে, বিশ্বে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যতো সংবাদ পৌঁছেছে, যতো প্রচার হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যতো সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, যতো পাকিস্তানি জন্তু বধ করেছে, যতো বাঙালি নিহত হয়েছে, যতো নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, আর আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি, তার সবটাই মুজিবের নামে। অন্য কোনো নামে এটা ঘটতে পারতো না; অন্য কোনো নাম থেকে এ-প্রেরনা উৎসারিত হতো না।
বাঙলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে পৌঁছে দিয়েছিলেন মুজিব, বন্দী থেকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধকে, তিনিই সৃষ্টি করে চলছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। মুজিবকে আমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করতে পারি, কয়েক দশক ধরে তো কোটি কোটি বামন প্রাণভরে তাঁর সমালোচনা করছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙলাদেশের মহাস্থপতি। মুজিব ছাড়া হাজার হাজার জিয়া বা অন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলেও মুক্তিযুদ্ধ ঘটতো না, তখন সেটা হতো হাস্যকর হঠকারিতা ও পরিণতিতে শোকাবহ; মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসতো না, এবং বিশ্ব আমাদের পক্ষ নিতো না, সাড়া দিতো না। এটা ঘটেছিলো মুজিবের জন্যই। মুজিব বাঙলাদেশের স্থপতি, মহাস্থপতি; তিনি সৃষ্টি করে চলছিলেন বাঙলাদেশকে। তাঁকে ছাড়া বাঙলাদেশের কথা ভাবাই যায় না।
——————————————————————————————-
– হুমায়ুন আজাদ, ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’।
ব্লগেচালের একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর দিক হল… সবাই সত্য কথা বলে ফেলে… সরাসরি…… কোন ইউফেমাইজের ধার না ধেরে…… এজন্য অনেক নিপাট সত্য যেগুলো বিভিন্ন চিপায়-কোণায় লুকানো থাকে কিংবা লুকিয়ে থাকে এবং না খুজলে পাওয়া যায়না, তা প্রকাশ হয়ে পরে…… কোন মাথা না খাটিয়েই জানা যায়। এমন অনেক ঐতিহাসিক তথ্যই এখানে চলে এসছে যা সাধারণত বই-পুস্তকে পাওয়া যায়না কিংবা ছাপানো হয়না।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা নিয়ে অনেকের সন্দেহ দেখে মজাই পাই, ভাবখানা যেমন এ আর এমন কি? আমরাও পারতাম। একটা দেশের স্বাধীনতায় যে একজন যোগ্য নেতার কতখানি দরকার সেটা এদের *** মাথায় ঢুকবে না। উদাহরন হিসাবে পাকিস্তানের আরেক প্রদেশ বালুচিস্থানের কথাই ধরা যেতে পারে। তারেক ফাতাহর Chasing a Mirage বইয়ের কিছু অংশ তুলে দিলাম। যোগ্য নেতার অভাবে স্বাধিনতা খুইয়ে কিভাবে পাকিস্থানের অধিনতা মেনে নিতে হয়েছে তা দুঃখজনক। আর সেখানে আমরা উল্টো স্বাধীনতা পেয়েছি।
@হোরাস,বাংলাদেশ যদি বেলুচিস্তানের মতো পাকিস্তনের ভেতরের contiguous প্রদেশ হতো তবে দশজন মুজিবও বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারতো না ৭০-৮০ দশকের ভেতরে। আপনি একটা উদাহরন দেখান যে ২ টি ভিন্ন সংষ্কৃতির, ভিন্ন ইতিহাসের প্রায় সমসংখ্যক জনসংখ্যার দুটি জাতি দুই হাজার মাইল পার্থক্যে থেকে এক দেশ হিসেবে টিকে গেছে।
একই ভাষার একই ধর্মের আরবরা একদেশে থাকতে পারেনি সেখানে বাংগালী-পাকিস্তানী ২০০০ মাইল দূরে থেকে দেশের অখন্ডতা রাখবে এটা আপনাদের উর্বর কল্পনাতেই আসে।
Contuguous territory এর মধ্যে থেকে বহু বাঘা বাঘা নেতা নিজের জাতিকে স্বাধীন করতে পারে নি, মুজিবের কথা বলাই বাহুল্য। মুজিবের জন্ম না হলেও পাকিস্তান ভাংতো, ১৯৭১ না হলে ১৯৮১তে না হলে ১৯৯১ এ। এরকম রামগরুড়ের ছানা বিংশ শতাব্দীতে টেকা অসম্ভব ছিলো।
@সফিক, যাক অন্তত এটা জেনে খুশী হলাম যে কম করে হলেও ২০ বছর আগে স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে একটা কথা জানতে ইচ্ছা করছে সেটা হল কোন সে নেতা যে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিত? ধরে নিন ৭১-এ পাকিস্তানের জেলে শেখ মুজিবকে ফাঁসী হয়েছে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। তাজুদ্দিন সহ বড় সব নেতাকে রাস্ট্রদ্রোহের অপরাধে ফাঁসী দিয়েছে। এখন আপনার মতে কে হতে পারত সেই নেতা যে আমাদের ৯১ কিংবা ২০০১ স্বাধীনতা এনে দিত? আর এই কয় বছরে গোলাম আজম গং কি পরিমান শক্তিশালী হত সেটা না হয় হিসাবের বাইরে রাখলাম।
@হোরাস, সেই নেতা হতো নেত্রকোনা জেলার নান্দাইলের ইউনুস। একজন তথাকথিত মুক্তমনা হিসেবে আপনার মহামানব পূজা একই সাথে ইন্টারেস্টিং এবং প্যাথেটিক।
@সফিক, হা হা .. মুক্তমনা দাবীকারীরা উত্তর না দিয়ে যখন ব্যক্তিগত আক্রমনে যায় সেইটা আরও বেশী প্যাথেটিক। আনবিলিভেব্লি প্যাথেটিক।
@হোরাস,উত্তর দিয়েছি কিন্তু সেটা আপনার মাথার উপর দিয়ে গেছে। আমি বলতে চেয়েছি সময়ের দাবী অনুযায়ী যে কোনো খান থেকে নেতা বের হয়ে আসতো, আপনার কথা মতো ঐ কয়জনের জন্যে মানুষ হা পিত্যেশ করে থাকতো না। এরশাদ কখনো ভাবে নি হাসিনা-খালেদার মতো একেবারে বৈশিষ্ট্যহীন দুই মহিলা দেশের মূল দুই রাজনৈতিক ধারার প্রধান হয়ে তার পতন ডেকে আনবে। হাসিনা-খালেদা যদি নেতা হতে পারে তবে নেতার অভাব কেমন করে হয়?
আপনি বাংলাদেশের মানুষকে কি পরিমানে অবজ্ঞা করেন যে ভাবতে পারেন এই বিংশ শতাব্দীতে এই ভূমির লোকেরা পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দাসত্ব মেনে নিতো যুগের পর যুগ? পন্চাশ আর ষাটের দশকের শুরুর দিকেও অনেক আন্তজাতিক বিশ্লেষক মত প্রকাশ করেছিলেন যে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তান এক সময়ে ভেংগে যাবে। তখনো শেখ মুজিব কোনো নেতা হয়ে ওঠেন নি। তারা এই বিশ্লেষন করেছিলেন এই কারনে নয় যে তারা জানতেন যে পূর্ব পাকিস্তানে এক সুপারম্যানের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে যিনি কারাতের এক চপে পাকিস্তান টুকড়া করে ফেলবেন। তারা এই কারনেই বলেছিলেন যে আধুনিক ন্যাশনাল স্টেট হিসেবে পূর্ব-পশ্চিম পকিস্তানের ভায়াবিলিটি ছিলো না।
@সফিক, ৭১ এ স্বাধীনতা না আসলে আপনার জিয়া, এরশাদ, হাসিনা, খালেদা, কারোই আর ইহ জীবনে নেতা হওয়া হত না। এই দেশের নেতা হত মোনায়েম খা, সাকা চৌধুরী, গোলাম আযম আর নিজামীরা এবং তাদের বংশধররা। এদেশটা হত একটা বিশাল বড় আর্মি ক্যান্টনমেন্ট। একবার স্বাধীনতার আন্দোলন ভেস্তে গেলে পশ্চিমারা আমাদের লাইফ হেল করে দিত। তাই আপনি যত সহজে কল্পনার ফানুষ ওড়াচ্ছেন সব কিছু এত সহজ হত না বলাই বাহুল্য।
তারপরও ধরে নিলাম ২০ হোক, ৩০ হোক বছর পরে স্বাধীনতা আমরা পেতাম। এই যে ২০-৩০ বছর আগে স্বাধীনতা পেয়েছি তার জন্যই আমাদের শেখ মুজিবকে কৃতিত্ব দিতে হবে। সেটা না দেয়া হলে নিজেদের অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কিছু প্রমান করা হবে না। মুজিবের সমালোচনার অনেক যায়গা আছে কিন্তু স্বাধীনতার ব্যাপারে তার অবদান অনস্বীকার্য।
@সফিক,
সেই নেতা গোলাম আজমও হতে পারতো। মুজিব না থাকলে সেও একটা চান্স নিতো, কারণ জামাতীরা দাবী করে গোলাম নাকি বায়ান্নের ভাষা সৈনিক। উপরে হুমায়ুন আজাদ কী বলেছেন পড়েছেন?
@সফিক,
সময়ের দাবি অনুযায়ী মুজিব এসেছে ,তাকে তার কৃতিত্ব দিতে অসুবিধা কোথায় ?
@হোরাস,
“কোন সে নেতা” এই রকম কাল্পনিক প্রশ্নের তো ভাল কাল্পনিক উত্তরই দিয়েছেন সফিক। আপনি ধরেই নিয়েছেন আর কোন নেতা হত না। এটাই মুক্তমনের পরিপন্থী। ব্যক্তিপূজার ফুটপ্রিন্ট। আচ্ছা জামাতিকে জামাতী বললে কি ব্যক্তি আক্রমন হবে। জামাতী তো জামাতি হিসেবে গৌরবই বোধ করে। ব্যক্তি পূজা (না নৈবেদ্য সাজিয়ে, ধূপ জালিয়ে নম নম করে নয়, অতি ভক্তির অর্থে) করলে কেউ সেটা বললে কি অপমানিত বোধ করা উচিত। আর এইরকম ব্যক্তিপূজা (আর কেউ হতে পারত না) তো মুক্তমনের পরিপন্থী, তাহলে ব্যক্তি আক্রমণটা কোন জায়গায় হল। এটা জানলে ব্যক্তি আক্রমণের সংজ্ঞাটা আরো পরিস্কার হত।
মুজিবের যে গুণের জন্য তিনি বাং;লাদেশের বড় নেতা হয়েছিলেন সেই গুণ বাঙ্গালীদের মধ্যে খুব বিরল না। ডেমাগজী প্রথমে (যেটা হুমায়ুন আজাদও উল্লেখ অরেছেন মুজিবের ব্যাপারে)। বাঙ্গাল ভাষায় বজ্রকন্ঠে জনতার উদ্দেশ্যে হারাং ডেলিভার করা। তার সাথে ইসলামী জোশ (আমি মুসলমান, আমি একবার মরি, মরতে ভয় পাই না ইত্যাদি)। আর নেতা হবার অদম্য বাসনা তো বটেই। এর কোনটি বাংআলীদের মধ্য নেই বলে আপনার মনে হয়। এটা না হলে ওটা হত এধরনের কথা হাইপোথেটিক্যাল।বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রের, আবেগের সাথে মুজিব সাম্নজস্যপূর্ণ হয়তাএই তিনি এক সার্থেক নেতা। ঠিক সময়ে এসেছিলেন তিনি। এটাই বলা ঠিক হবে যুক্তির মধ্য, আবেগ বাদ দিয়ে।
@কালযাত্রী,
আপনি একটু বেশী কম বলে ফেলেছেন। আমি তো আমার আশে পাশে চারিপাশেই হাজার হাজার এরকম মানুষ দেখি।
আর সারাক্ষন মুখে ব্যক্তি পূজা ব্যক্তি পূজা করে আপনারা যেভাবে হুমায়ুন আজাদকে ব্যবহার করা শুরু করেছেন তাতে না আমি আবার হুমায়ুন আজাদের ব্যক্তি পূজা শুরু করে দেই আপনাদের সাথে সাথে।
বাই দ্য ওয়ে আপনি কি কারও মাল্টিনিক? উত্তর দিতে না চাইলে দেবার দরকার নাই। এমনি মনে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম। নির্দোষ প্রশ্নশিসাবে ভুলে যেতে পারেন।
@কালযাত্রী,
বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র আর আবেগের একটু নমুনা বর্ণনা করেন।
ঐ সময়ে আর কোন নেতা জীবিত ছিলেন না? তারা কেউ আসতে পারলেন না কেন? উত্তর কিন্তু উপরে হুমায়ুন আজাদের লেখায়ই আছে। কারণটা কী তা আপনি আমি আমরা সকলেই জানি। এই সব কুটতর্ক বাদ দিয়ে আসুন বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদানকে স্বীকার করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। স্বাধীনতা পরবর্তি মুজিবকে নিয়ে, মুজিব শাসনামল নিয়ে আপনার যত অভিযোগ আছে, ঠিক যেমন হুমায়ুন আজাদ করেছেন বা অন্যান্যরা করেছেন, তা দিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট লিখে ফেলুন।
ইচ্ছে করলে আপনারা কারো প্রতি ব্যক্তি আক্রমন না করে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন, তবে এই পোষ্টে একান্ত জরুরী না হলে আমি আর মন্তব্য না করে অন্যদিকে মন দিবো। যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে লেখাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইলো।
@সফিক,
এবার ঠিক হয়েছে। বুঝা গেল সুস্থ আলোচনার জন্যে অশ্লীল আক্রমন, গালাগালি জরুরী নয়।
এটা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা।
একমত।
এটা মানুষের নিজ নিজ আবেগ, অভিরুচি পর্যবেক্ষনের ব্যাপার। সবাই এক রকম হবে তা আশা করা যায় না।
আর ৭৫ না ঘটলে হয়তো ‘বিষাদ সিন্ধু’র কথাও উঠতো না।
এর উত্তরে আদিল মাহমুদ যা বলেছেন, এর চেয়ে বেশী বলার তেমন কিছু নেই। ইংল্যান্ড আর আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের মানুষ ও রাজনীতিবিদদের তুলনা করার সময় হয়তো এখনও আসেনি। আর পশ্চিমারাও যে সব সময় একেবারে ধোয়া তুলশী ছিলেন তাও ঠিক নয়। টাকা দিয়ে এখনও লর্ড উপাধী খরিদ করা যায়। স্যার, লর্ড নানান অভিধা উপাধী এদেরই আবিষ্কার। এ সব শ্রেণী বৈষ্যম্যের কুফল। আজও এই বৈষম্য, এই মানুষপুজা পৃথিবীর সর্বত্র বহাল তবিয়তেই আছে।
@আকাশ মালিক,
একটা আদর্শকে উদ্দেশ্য হিসেবে মেনে নিলে সে আদর্শ বাস্তবায়নে সময় লাগলেও আদর্শকে এখনই প্রচার করা যাবে এটা তো ঠিক হতে পারেনা। গণতন্ত্রের কথাও তো এরকম বলা যায় (অনেকে বলেন) যে এটা আমাদের দেশের জন্য এখনো সময়ানুগ না। তাহলে কি গণতন্ত্রকে সমর্থন করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। মুহম্মদের কর্মকান্ডকেও অনেকে সমর্থন করে এই বলে যে সেই সময়কে এখনকার মানদন্ডে বা মূল্যবোধের দ্বারা বিচার করা ঠিক হবে না। আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের মানুষ ও রাজনীতিবিদদের তুলনা করার কথা তো ওঠেনি এখানে। প্রশ্ন উঠেছে মুক্তচিন্তার সাথে যেটা সঙ্গতিপূর্ণ মুক্ত-মনারা (বা মুক্তমনার দাবীদার) সেটা অনুসরণ করছে কিনা, বা যেটা অসঙ্গতিপূর্ণ সেটা পরিহার করছে কি না। না করলে মুক্তমনা ফোরামের দরকার কি। মুক্তমনা হবার সময় আসেনি বলে এই ফোরাম প্রতিষ্ঠাও মুলতবী করা ঠিক হবে তাহলে। মুক্ত-মনের চিন্তা কে পশ্চিমা ধারণা না বলে এগিয়ে থাকা আদর্শ বা চিন্তাই (সফিকের ভাষায়) বলা ঠিক হবে। মুক্ত-চিন্তার সাথে অন্ধ ব্যক্তিপূজা বা ভক্তি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেটাই বলা হচ্ছে এখানে। অন্ধ ব্যক্তিপূজা বা ভক্তি গুনকে অত্যধিক বাড়িয়ে দিতে আর দোষকে লঘু করতে প্ররোচিত করে। আর অন্ধ বিদ্বেষ দোষকে অত্যধিক বাড়িয়ে গুনকে লঘু করতে প্ররোচিত করে। দুটোই দোষের, কিন্তু প্রথমটা অনেক বেশি বিপজ্জনক। আর দুটোর জন্ম্যই নৈর্ব্যক্তিক মানদন্ড ব্যবহার করতে হবে, সেটা সবচেয়ে বড় কথা।
অনেক সময় ব্যয় ( নাকি অপব্যয়) হল এ লেখাটিতে ঢুকে। এতো বাদানুবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্ত-মনা এডমিনকে অনুরোধ করছি মন্তব্যের অপশনটি বন্ধ করে দিতে।এজন্য কেউ দুঃখ পেলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যদিও মুক্তযুদ্ধ নিয়ে নিবেদিত প্রাণ ফরিদ আহমদকে জামাত গালি দিয়ে ভুল করে থাকলে আকাশ মালিক ভাইয়ের ক্ষমা চাইতে কোথায় সমস্যা তা আমার বোধগম্য নয়।
@গীতা দি,
আপত্তি জানালাম।
এই থ্রেডে আকাশ মালিকের চলতি নোটের সমালোচনা করতে গিয়ে ফরিদ আহমেদ মুক্তমনার নীতিমালা ও দেশ্চার লঙ্ঘন করে একের পর এক অশালীন/কাদার্য ভাষা ব্যবহার করে তীব্র ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন। এর প্রতিবাদ করায় তিনি এখন নিজের কৃতকর্মটিকে বৈধতা দিতে গিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে অন্য একটি ব্লগে আমি কি না কি করেছি, সে বিষয়ে একটি কুৎসিত কাল্পনিক গল্প ফেঁদে বসেছেন।
জবাবে আমি তাকে তার বক্তব্যের সমর্খনে প্রমান দেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি। অন্যথায় ফরিদ আহমেদকে এ বিষয়ে মুক্তমনায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার বক্তব্যটুকু প্রত্যাহার করতে হবে।
বিষয়টির সুরাহা এই থ্রেডেই হওয়া ভালো।
এর আগে মন্তব্য করার অপশন বন্ধ করা উচিত হবে না। নইলে আমাকে বাধ্য হয়ে আলাদা থ্রেড খুলতে হবে– সেটি অন্য ব্লগারদের জন্য বিরক্তিকর ঠেকতে পারে, মুক্তমনার সুনামও এতে বাড়বে না বৈকি।
@গীতা দাস,
কেন দিদি? আপনার যদি স্বাধীনতাযুদ্ধ পূর্ববর্তি মুজিব অথবা স্বাধীনতা পরবর্তি মুজিব নিয়ে কিছু বলার থাকে আমাদেরকে জানান। এখানে ৭১ পূর্ববর্তি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যদিও ৭১ পরবর্তি বিষয়াদিও আলোচনায় চলে এসেছে, তাতে কোন অসুবিধে নেই। আল্লাচালাইনা, বিপ্লব রহমান, আদিল মাহমু্দ, ইরতিশাদ সাহেবের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, মন্তব্য থেকে আমরা বঞ্ছিত হবো কেন? ভাসানী সম্মন্ধে আদিল মাহমুদ যা বলেছেন তা তো আমার জানা ছিলনা, কিংবা বিপ্লব রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর ভুমিকা নিয়ে যে তথ্য দিলেন তা কম কিসে? আলোচনার পথ খোলা থাকুক।
@আকাশ মালিক,
লেখা নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা,সমালোচনা চলতেই পারে। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসব হওয়া উচিত নয়। আর এসব পড়া আমার কাছে সময়ের অপব্যয় আকাশ মালিক ভাই।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা , আপনারা যে যেখানেই থাকুন না কেন আসুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করি । চীনের মহান নেতা দেং শিয়াও পিংয়ের মহান উক্তিটি স্মরণ আছে – বিড়ালের রং সাদা না কালো এটার চেয়েও বড় কথা বিড়াল ইদুর ধরে কিনা ? ভেবে দেখেছেন যে, আপনারা সবাই বাংলার মানচিত্র বুকে ধারণ করা সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারছেন , যূর জোরে কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলগাছ হতে পারছেন ? আদম বলেন আর পি এইচ ডি ডিগ্রীধারী বলেন সবাই সময় হলে এক কাতারে ইমিগ্রেশনে দাড়িয়ে যেতে পারছেন ? এটাই তো সাম্যবাদ ! ভেবে দেখেছেন রোহিঙ্গা , ফিলিস্তিনীদের নিজেদের পারপোর্ট নেই ? পাকিস্তান আমলে পাসপোর্ট দেয়ার সময় বিশেষ জায়গায় এক ইঞ্চি বেশী চামড়া আছে কি সেটাও পরখ করার কথা শোনা যায় – সত্যি মিথ্যা যাই হোক।
দেশ কে স্বাধীন করলো তাতে কি এসে যায় ? দেশ যে স্বাধীন সেটাই তো আসল কথা । মুখে বলা সহজ যে , যার যার প্রাপ্য তাকে দেয়া হোক কিন্তু বাস্তব এস সহজ নয় । বেশী ঘাটাঘাটি করলে তো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্হা ‘র’ কেই সবার আগে স্বাধীনতা পদক দিতে হয় ! সেই উদারতা কি আপনারা দেখাতে পারবেন ? র এর যে কত এজেন্ট বাংলার স্বাধীনতার জন্য প্রান উৎসর্গ করেছেন তার সঠিক সংখ্যা কেউ দিতে পারবে না ।
আমাদের বরং শোকরানা আদায় করা উচিৎ যে শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে ভারতীয়রা অন্য কোন বাঙালীর কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ঝুঁকি নিত না যেহেতু এদেশে মীর জাফর আর মীর মদন দুটোরই অবস্থান সমানে সমান। এদেশটা ভারতের করদ রাজ্যে পরিনত হত সিকিমের মত। সামরিক শাসন জাড়ির জন্য জেনারেল জ্যাকব তো তৈরীই ছিলেন। বাংলার মাটি থেকে সকল বিদেশী সৈন্য বিদায় করার কৃতিত্বটা শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবকেই দিতে হয়। পরিশেষে সব কথার এক কথা – জন্ম হোক যথা তথা , কর্ম হোক ভাল। (FF)
@সংশপ্তক,
আমি তো আর যুদ্ধের ময়দানে নাই, আমি একজন যোদ্ধার দাওয়াত কবুল করে বসে আছি। আকাশ মালিক দাওয়াত দিলে তার দাওয়াতও কবুল করব, বিবাদী যোদ্ধারা মন্দ হতে পারে কিন্তু খাবার দাবার তো আর কোন দোষ করে নাই। আল্লাহ যার যার রিযিক নির্ধারন করে দিয়েছেন, যুদ্ধ নির্ধারন করেন নাই, এনারা সকলে তার হাতের পুতুল…
@আদিল মাহমুদ,
”প্রকৃত যোদ্ধা সেই যে যুদ্ধটাকেই অপ্রয়োজনীয় বানিয়ে দেয় । নিশ্চয়ই খাবারের বাগিচা যুদ্ধের ময়দান হইতে উত্তম।” – এইমাত্র আপনার কাছে পাঠানো জীব্রাইলের স্কাইপ মেসেজটা ইন্টারসেপ্ট করে জানলাম । :))
@সংশপ্তক,
আমার মত ধার্মিক সকলে হলে যে জগতটা কত সুন্দর হত এবার আশা করি বুঝতে পেরেছেন, তাও ঈমান আনবেন না?
“ধমাধম সমাগত হয়েছে, নরাধমরা সব গর্তে লুকিয়েছে”।
@আদিল মাহমুদ,
ধমাধমের ফ্রাঞ্চাইজ বাজারে খুলে ফেলুন , রোলেক্স আর গুচ্চি ‘ধামাই মাম’ ছেড়ে আপনার এনডোর্সমেন্ট চাওয়া শুরু করবে। প্রসাধন কোম্পানীর কথা জানিনা , আপনার তো আবার লাইফবয় না ৫৭০ সাবানে বিশেষ দূর্বলতা আছে।
@সংশপ্তক,
আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে গেল পুরোপুরি। মাঝে মাঝে ভেবে এ কোন দেশে বাস করছি। স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী- সবখানেই সাম্প্রদায়িক চিন্তা, বদ্ধমনাদের ছড়াছড়ি। একদল যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের সচিত্র প্রমান চায়, আরেকদল বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারার ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও বলে বিশ্বজিৎয়ের গায়ে কোন কোপ লাগেনি। নজরুল এমন পরিস্থিতিতেই বোধহয় লিখেছিলেনঃ
(Y)
(Y)
@ মুক্তমনা এডমিন,
এই লেখাটা পুরোপুরি কপিপেস্ট, মৌলিক কোনো লেখা নয়। এই ধরণের লেখা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট সহায়ক। পাঠক অনেক সময় ভেবে থাকেন যে, যার নাম দেখাচ্ছে তিনি-ই হয়তো এর লেখক। এই লেখাতে সেই একই ভুল করেছেন কেশব অধিকারী। তিনি ভেবে নিয়েছেন যে, এই লেখাটার লেখক হচ্ছেন আকাশ মালিক, ফলে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে তিনি যুক্তি খণ্ডন করে গেছেন এখানে। এই ধরণের অমৌলিক লেখাকে মুক্তমনা নিরুৎসাহিত করে বলেই আমার বিশ্বাস। আশা করছি যে, মুক্তমনা এডমিন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনাদের মানে এই মুক্তমনার যারা একসময় এডমিনের দায়িত্ত্বে ছিলেন, এখনো আছেন, যারা সিনিয়র ব্লগার, মাঝে মাঝে যে আপনাদের কি হয়! আসুন না এসব ছেড়ে বরং আমাদের ঘাটতি গুলো পুষিয়ে নেই।
@কেশব অধিকারী,
একদল লোক আমাকে জামাত প্রমাণ করার কাজটা অন্তর্জালের বিভিন্ন ফোরামে খুব ভালোভাবে করেছে। আপনারা নির্বিরোধী লোক দেখে বিষয়টা সম্পর্কে জানেন না। মুক্তমনার বাইরের লোকদের নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই, কিন্তু মুক্তমনার কেউ যখন সেই প্রচারে সামিল হয়, তখন মেনে নেওয়াটা কষ্টকর। আপনার কি মনে হয় না যে, আই ডিজার্ভ এ্যা ফরমাল এপোলজি ফ্রম আকাশ মালিক? যদি সত্যি আমি জামাত না হই, তাঁর ক্ষমা চাইতে বাধাটা কোথায়? আপনারা দাবি করবেন, আপনারা মুক্তমনা, অথচ সভ্য সমাজের এই সামান্য সৌজন্যতাটা প্রদর্শন করবেন না, এটা কেমন কথা?
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যিই দুঃখিত ফরিদ ভাই। আমি গত ২ দিন আমার বর্তমান কাজের জায়গায় ছিলাম না। তাই আপনার সাথে আর কথা বলা হয়নি। আপনার উত্তরে সবিনয়ে দুঃখবোধের সাথেই বলি, যদিও মনে হচ্ছে পূর্বাবস্থা থেকে সবাই ফিরে এসে এখন বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করছেন, তবুও খিটিমিটি লেগেই যাচ্ছে যেনো! আমি শুধু এইটুকু বলবো, যদি নিজের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো আমরা বলি তাহলে দেখবো এসব কথার অনেক গুলোতেই যেনো আমাদের নিজেকে মানায় না।এটি শুধু আমার বা আপনার ক্ষেত্রে নয় এই ব্লগের সবার জন্যেই প্রযোজ্য।
যাই হোক নীচের এই বিষয়টা কি একটু আলোচনা করবেন আপনারা?
[http://www.bangabandhu.com.bd/2010/12/12/bangabandhu-after-the-liberation-a-turbulent-political-career/]
আমি যদি বলি সরল মনের সদ্য স্বাধীন দেশের নেতা বঙ্গবন্ধু সবাইকে নিয়েই দেশটাকে গড়তে মনোনিবেশ করেছিলেন, করেছিলেন কোন পরিকল্পনা। কিন্তু সেটা হতে পারেনি বাঙ্গালীর বিশ্বাস ঘাতকতা, স্বার্থপরতা এবং চরম দেশপ্রেমহীনতার জন্যে! আজও আমরা একই রকম অকৃতজ্ঞ, বিশ্বাসঘাতক, স্বার্থপর এবং দেশপ্রেম বিবর্জিত এক দঙ্গল অচেতন, অর্ধসচেতন এবং নিষ্কর্মা নাগরিকই আছি।
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যাঁ ফরিদ ভাই, আর একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। সকাল থেকে কার্যতঃ এখানে ঢুকতে পারছিলাম না, এখন দিব্যি কাজ করছে! দেখুন, কে কি করবে বা বলবে সেটা তো তারই ব্যপার। বিশেষ করে আমরা যখন এইটুকু দাবী করি যে আমরা মুক্ত-মনা। আর নিশ্চয়ই এখানে যারা আমরা কথা বলি কেউ অসচেতন বা অপ্রাপ্তবয়স্ক নই। কাজেই নিজের দায়িত্ত্ববোধ থেকেই কাজ করা ভালো বলে আমি মনে করি। কে আপনাকে কি বললো, আর অন্যরা আকাশ মালিক ভাইকে বা আর কাউকে কি বললো, সেটা নিয়ে মনে হয় মুক্ত-মনারা তেমন মাথা ঘামায় না। কারন এই খুলিঘরে (বৈঠকখানা, দিনাজপুরের পাড়াগাঁয়ের ভাষা) আমরা আমাদের চিনি আমাদের সবার কথা, লেখা কিংবা আলোচনা থেকে। আমি জানি যে বন্ধুত্ত্ব বেশী হলে মাঝে মাঝে খুনসুটিও হয়। এটা যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ভাববো, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানেনা মাঝে মাঝে খুনসুটির মধ্যদিয়ে সাময়িক দূরেও সরিয়ে দেয় (রসায়নের আয়োনাইজেশনের মতো আর কি! :)) ) ভালো থাকুন।
হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” এই বইটাকে বলাৎকার করে ছাড়লেন আকাশ মালিক। তবে নিজে শিশ্নবিহীন খোঁজা, তাই হুমায়ুন আজাদের বৃহৎ শিশ্নটাকে ধার করে এই ধূর্ত ব্যক্তিটি হুমায়ুন আজাদ এবং তাঁর অসাধারন বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থটার গুহ্যদ্বার রক্তাক্ত করে ছাড়্লেন।
তার মুজিব প্রেমকে সুউচ্চে রাখতে গিয়ে মুক্তমনার মুক্তচিন্তারও বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। আদিল মাহমুদ খুব সঠিকভাবেই বলেছেন যে, আপনি নবী রাসুলদের দোষ খুঁজে পান, কিন্তু মুজিবের দোষ খুঁজে পান না। মুজিবের দোষ খুঁজে না পাওয়াতেও দোষের কিছু ছিল না, কিন্তু এই ভণ্ড লোকটা যেভাবে হুমায়ুন আজাদের লেখার বিশেষ অংশগুলোকে পরিকল্পিতভাবে তুলে এনে তাকে মুজিব স্তাবক বানিয়ে ফেললো, তা রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বাংলাদেশে মেরুদণ্ডওয়ালা লোক খুব বেশি নেই যারা সততার সাথে তারা যা ভাবেন সেটাকে প্রকাশ করতে পারেন। এর ব্যতিক্রম ছিলেন হুমায়ুন আজাদ। তার মতের সাথে মিল হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, কিন্তু এই ব্যক্তিটি নিঃসংকোচে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতেন, কাউকে পরোয়া করতেন না, কাউকে কুর্নিশ করতেন না, কাউকে ব্যক্তিপুজো করতেন না। স্তব করতেন না কারো, যার যেটা প্রাপ্য তাঁকে সেটাই দিতেন তিনি।
আজ সেই হুমায়ুন আজাদকে দিয়ে মুজিব স্তব করিয়ে ছাড়লেন আকাশ মালিক।
আদনানের সাথে মুজিব নিয়ে তর্কবিতর্কের পরে তাঁকে একহাত দেখে নেবার বাসনায় চতুরতার সাথে হুমায়ুন আজাদের বই থেকে বক্তব্য ফিল্টার করেছেন আকাশ মালিক। যার কারণে আদনানকে হাহাকার করে বলতে হয়েছে যে, আপনি ভারসাম্য নষ্ট করছেন, দুষ্টকরণ করছেন হুমায়ুন আজাদের, তাঁর মুখে জুতার বাড়ি মারছেন। আসলেই আকাশ মালিক জুতার বাড়ি মেরেছেন হুমায়ুন আজাদের মুখে, সেই সাথে মুক্তমনার সবার মুখেও।
হুমায়ুন আজাদের বই কি মুজিব বন্দনার বই? না। তাহলে আকাশ মালিক কেন তাকে মুজিব বন্দনাকারী বানালেন? কে দেবে এই জবাব? আকাশ মালিক যে অংশটুকু তুলে এনেছেন আজাদের বই থেকে তার মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা পরে গেলেই পাঠকের সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে যাবে মুজিব সম্পর্কে আজাদের মূল্যায়ন। আসলে এই বই মুজিব বন্দনারও না, মুজিব নিন্দারও না। আজাদ তাঁর স্বভাবসূলভ ধারালো ভাষায়, গভীর মননশীলতা দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন স্বাধীনতাপূর্ব এবং স্বাধীনতা পরের রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের। স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতাপূর্ব মুজিব আজাদের চোখে উচ্চস্থানে থেকেছেন, হয়েছেন আকাশছোঁয়া বিশালাকায় ব্যক্তিত্ব, আর স্বাধীনতার পরেই সেই ব্যক্তি আজাদের চোখে হয়ে উঠেছেন বামনাকার। আর আকাশ মালিক সেই দৈত্যাকৃতি অংশটাই ফটোশপ এডিটিং এর মাধ্যমে তুলে এনে সুচতুরভাবে আড়াল করেছেন বামনাকৃতির অংশটাকে। আদনানের ভাষায় মুজিবকে চাঙে তোলাটাই দেখেছেন আকাশ মালিক, ওখান থেকে আছাড় মারার দৃশ্যটা দেখেন নি। আকাশ মালিক নিজে যদি মুজিব বন্দনায় মেতে উঠতো আমার কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু তিনি এক্ষেত্রে বন্ধুক রেখেছেন হুমায়ুন আজাদের উপরে। এই লেখা পড়ে অনেকেরই হয়তো ধারণা জন্মে যেতে পারে যে, হুমায়ুন আজাদ বিরাট মুজিব ভক্ত ছিলেন। অথচ তা না। তিনি কারোরই অন্ধ ভক্ত ছিলেন না। মেরুদণ্ডওয়ালা শিশ্নময় পুরুষ ছিলেন তিনি।
আকাশ মালিক যেসব বক্তব্য এনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন তার মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা পরে গেলেই আমরা ভিন্ন ধরণের চিত্র পাই। আকাশ মালিক আমাদের জানতে দেন না যে, হুমায়ুন আজাদ তাঁকে বাংলাদেশের প্রকৃত একনায়ক – মহাএকনায়ক হিসাবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন যে, তার পরে যে সামরিক স্বৈরাচারীরা এসেছে, তাঁরা তাঁর পাশে তুচ্ছ, আমের আঁটির ভেঁপুবাজানো বালকমাত্র। আসুন দেখি হুমায়ুন আজাদ কীভাবে শেখ মুজিবকে মূল্যায়ন করেছেন।
হুমায়ুন আজাদের এই ভারসাম্যময় মুজিব বন্দনা এবং মুজিব নিন্দার জায়গায় আকাশ মালিক কেনো একতরফা অবস্থান নিলেন? আকাশ মালিকের সমস্যাটা কোথায় তাহলে? তিনি কি বইটা পুরোপুরি পড়েছেন, নাকি তাঁর মতের মনের মিল যেটুকুতে পেয়েছেন সেটুকুকেই চেরি পিক করেছেন? নাকি আমপারা জামপারা আর কোরানের মত তৃতীয় শ্রেণীর একটা বই দিনরাত পড়তে পড়তে এবং পড়াতে পড়াতে হঠাৎ করে হুমায়ুন আজাদ গুরুপাক হয়ে গেছে? আকাশ মালিকের সব জ্ঞান গুগল সার্চ থেকে সঞ্চারিত। খুব একটা বই তিনি পড়েন বলে মনে হয় না। গুগল মামা না থাকলে যে মূর্খ একটা মাওলানা হয়েই তিনি জীবন শেষ করতেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কোনো সন্দেহই নেই।। গুগলের বদান্যতায় আর মুক্তমনার সৌজন্যে এখন তিনি কারো কারো কাছে বেশ জ্ঞানী লোক বলে পরিচিত। এই বইটা কোনোক্রমে হয়তো তাঁর হাতে এসে গেছে। স্ক্যান করে তুলে দেবার উচ্ছ্বাস থেকেই সেই অনুমান করা যায়। সে কারণেই কি তার এই বালসূলভ আচরণ, বালকসূলভ পাঠপ্রতিক্রিয়া?
মুক্তমনার সাথে দীর্ঘ সম্পৃক্ততার কারণে এখন জানি যে, আকাশ মালিক হচ্ছেন সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ। কিন্তু তিনি গভীর ভান করে থাকেন। তার পুরো জীবনটা প্রতিক্রিয়াশীলতার আস্তরণে ঢাকা। সারাদিন ধর্মকর্ম করেন তিনি, অথচ গভীর রাতে প্রগতিশীলতার ভেক ধরেন, ধর্মবিদ্বেষ প্রচার করেন। এও এক ধরণের রোগ। প্রগতিশীল সাজার রোগ। সারাদিন মিস্টার হাইড হয়ে থেকে রাতের বেলা ডক্টর জেকিল হবার সাধ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, এই ভানটা সবসময় করা যায় না, ছায়ার সাথে তাল মিলিয়ে ছায়ার অভিনয় যেমন সব সময় করা সম্ভব নয়, ঠিক সেরকমই প্রগতিশীলতার ভান করা সারাক্ষণ সম্ভব না। কোনো না কোনো সময়ে মুখোশটা নড়ে যায়, বের হয়ে পড়ে টুপি দাঁড়িধারী আসল চেহারাটা।
কে জানে তাঁরা রাজনৈতিক জীবনটাও হয়তো সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনের মতই ভানে ভরপুর। হয়তো জামাত শিবির বা পিঙ্কি ম্যাডামের রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁপিয়ে বেড়ান তিনি, কিন্তু প্রগতিশীল আসরে ওগুলোর তেমন কোনো মূল্য নেই বলে, গভীর রাতে মুজিবকোটের কোটিং নেওয়া লাগে তাঁর।
@ মুক্তমনা অ্যাডমিন,
জানিয়ে রাখি, হুমায়ুন আজাদের বইটি পড়া হয়নি। আকাশ মালিকের মুজিব বন্দনা/ভক্তিবাদটি চরম মৌলবাদের দর্শনজাত। কিন্তু–
ফরিদ আহমেদের মন্তব্যের বেশকিছু অংশ চরম আপত্তিকর, অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, ব্যক্তি বিদ্বেষমূলক ও আক্রমনাত্নক। এটি মুক্তমনার নীতিমালা বা দেশ্চার, কোনটির সঙ্গেই যায় না। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। (N)
@বিপ্লব রহমান,
আপনার প্রতিবাদকে সাধুবাদ জানাই।
এইবার বলেন কাউকে বিনা প্রমাণে জামাত বলা এবং সেই বিষয়ে প্রচারণা চালানোটা কতখানি আপত্তিকর, অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, ব্যক্তিবিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক? কতখানি মুক্তমনার নীতিমালা বা দেশ্চার এর সাথে যায়? দুঃখজনক হচ্ছে যে, আকাশ মালিক যখন আমাকে জামাতি বলেছিল, আপনার এই প্রতিবাদী এবং বিপ্লবী রূপটা দেখি নাই আমি তখন।
@ফরিদ আহমেদ,
এবার সহ-ব্লগারের নামকে ইঙ্গিত করে তীর্যক মন্তব্যে খোঁচানোর চেষ্টা? অসুবিধা নেই।
[“তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?” ]
আকাশ মালিক কোথায় আপনাকে “জামাতী” বলে গাল দিয়েছিল, সেই থ্রেডটি সম্ভবত দেখা হয়নি; দেখে থাকলে অবশ্যই একইভাবে প্রতিবাদ করা হতো। এটি আমি না করে থাকলে অবশ্যই অন্য সহ্-ব্লগাররাই করতেন। আবার এমনও হতে পারে হয়তো সংশ্লিষ্ট থ্রেডটি আমার হয়তো পুরো অনুসরণ করা হয়নি। তবু ধরে নিচ্ছি, এটি আমারই ব্যক্তিগত ঘাটতি।
কিন্তু তাই বলে মুক্তমনার নীতিমালা ও দেশ্চার বিরুদ্ধ নিন্দনীয় মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের কোনও সুযোগ নেই। উপরন্তু এ নিয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা আরো হাস্যকর। 🙂
ফরিদ আহমেদ,
বিনয় করে বলি, আপনি বিজ্ঞজন; এক সময় মুক্তমনার অ্যাডমিন ছিলেন, হয়তো এখনো তাই-ই আছেন। আপনার কাছ থেকে এমন বেচাল মন্তব্য বেশ দুঃখজনক।
লক্ষ্য করেছি, অযাচিতভাবে সহ ব্লগারদের সুক্ষ বা স্থুলভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মানসিকতা আপনার ভেতরে কাজ করে। …হুমায়ুন আহমেদ প্রসঙ্গে আফরোজা আলমের একটি মন্তব্যকে আপনার নোটে উদ্ধৃত করে তাকে আপনি যথেচ্ছ হেনস্থা করেছিলেন। পরে সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে অবশ্য আপনি ওই নোটটি সংশোধন করে দেন। কিন্তু এর পর সঙ্গত কারণেই আফরোজা আলমকে আর মুক্তমনায় লিখতে দেখা যায়নি।
একটি গুরুতর কথা বলে আপাতত উঠছি।
মহা সমূদ্রে লাইট হাউস টলে গেলে জাহাজির সমূহ ভ্রান্তির সম্ভাবনা– বিষয়টি শঙ্কারও।
(Y)
@বিপ্লব রহমান,
এইটাই কি আপনার বটমলাইন? যাই বলুন, বাতিঘর টলিয়ে ফেললেও বন্দর কিন্তু হারাবার নয়। চোখ মেলে রাখলেই হোল।
@কাজী রহমান,
আপনার কবিতাটি সুন্দর।
আপনার বোঝার জন্য বলি, ওপরে আমার মন্তব্যগুলোতে কোন টপলাইন বা বটম লাইন নেই। এরমধ্যে দুটি মন্তব্য হচ্ছে সহ ব্লগার ফরিদ আহমেদের নীতিমালা ও মুক্তমনার দেশ্চার বিরুদ্ধ বক্তব্যের প্রতিবাদ। আমার মন্তব্যে কোথাও আকাশ মালিকের চলতি ভক্তিমূলক নোটটিকে সমর্থন করা হয়নি।
ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
আচ্ছা বেশ। এবার বুঝে গেলাম।
কবিতার কমপ্লিমেন্টটির জন্য ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
আপনাকে আমি কোনো তীর্যক মন্তব্য করে খোঁচাই নি। আমি কাউকে খোঁচালে খুব তীব্রভাবেই খোঁচাই আর সেটা স্বীকার করি। আমার কার্যক্রমকে লুকাই না আমি। আপনার নামটা ঘটনাক্রমে বিপ্লব হয়ে গেছে।
আপনি যে প্রতিবাদ করেছেন, এতে সত্যি সত্য খুশি আমি। আমি সাহসী লোক পছন্দ করি। আমি সততার সাথেই বলেছি যে, আকাশ মালিক আমাকে জামাতি বলার পরে আপনার এই ধরণের কোনো প্রতিবাদ এবং বিপ্লবী আচরণ চোখে পড়ে নাই। এখন জানলাম যে দেখেন নি আপনি। ঠিক আছে। আমার আচরণ যদি মুক্তমনার নীতিমাল এবং দেশ্চারের বিরুদ্ধে হয়, মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্রও আপত্তি নেই। তবে আকাশ মালিকের বিরুদ্ধেও তাঁদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এবং সেটা আমার আগেই। শুধু আমি একা না, এখানে আরো কেউ কেউও একমত হয়েছেন যে, কাউকে জামাতি বলাটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম গালি।
আমি বিজ্ঞজন নই, আর মুক্তমনার এডমিনও নই এখন। খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমার মন্তব্যে আপনি দুঃখ পেয়েছেন বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি ভদ্রের সাথে অতি ভদ্র, অভদ্রের সাথে তার চেয়েও অভদ্র, এই নীতি মেনে চলি। যতদিন পর্যন্ত আকাশ মালিক মুক্তমনায় প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা না করবেন, ততদিন পর্যন্ত তার প্রতি আমার এরকম বেচাল মন্তব্য চলতেই থাকবে।
আপনি নিজেও বিজ্ঞজন। আপনার নিজেরও অনেক বেচাল মন্তব্য আছে। সেই তালিকা এখানে তুলে দিতে পারতাম। শুধু অমিত হিল এবং অডং চাকমাকে দেওয়া আপনার মন্তব্যগুলো ঘাটলেই হতো আমার। কিন্তু, দিচ্ছি না। আপনার সাথে বাদানুবাদে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা আমার নেই। মুক্তমনায় এখন আকাশ মালিক ছাড়া আর কারো সাথেই বাদানুবাদে জড়াতে চাই না আমি। ব্লগিং থেকে অনেকটা অবসরেই চলে গেছি আমি।
উঁহু, ভুল লক্ষ্য করেছেন। আমি কী পরিমাণ শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতা সহব্লগার প্রতি পোষণ করি, সেটা যদি আপনার চোখ এড়িয়ে যায়, তাহলে বলতে হবে যে, আপনি একজন একদেশদর্শী লোক। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে অনেক ছাগু এবং অসৎ ব্যক্তিকেই ডলে দিয়েছি আমি। এ বিষয়ে আমার কোনো কার্পণ্য নেই। সেই ডলা দেওয়ার পিছনেও কোনো না কোনো ইতিহাস আছে। আফরোজার ইতিহাস আর এখানে টানছি না। এ নিয়ে বহু লেবু কচলানো হয়েছে। কাউকে বিনা কারণে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছি, অথচ তার জন্য আমি ক্ষমা চাই নি, এমন ইতিহাসও বিরলই হবার সম্ভাবনা। ভুল করেছি, অথচ ক্ষমা চাই নি, এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আমার ক্ষেত্রে কম। আকাশ মালিকের জায়গায় আমি থাকলে, বহু আগেই সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিতাম আমি। এইটুকু সৎ সাহস বুকে নিয়েই চলি আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
[“তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?” ]
কুৎসিত/অশালীন ব্যক্তিগত আক্রমণ/কদার্য ভাষা ব্যবহার করে আবার এর স্বপক্ষে আপনার সাফাইয়ের পুনঃ পুনঃ চেষ্টা প্রচণ্ড বিরক্তিকর। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে আলাপচারিতায় যাওয়াই ভুল হয়েছে। তাই মাফও চাই, দোয়াও চাই।
শুধু জানবেন, এখন থেকে আপনার প্রতি শ্রদ্ধার লেশটুকু আর রইলো না। শুভেচ্ছা। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাটুকু অপরিবর্তিতই রইলো। ঠাট্টা করছি না। সত্যি সত্যি। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্যেও।
@বিপ্লব রহমান,
আরেকটা কথা। এটার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন রয়েছে আমার। যদিও আপনি আর আমার সাথে আর আলাপচারিতায় আসবেন না। তবুও আমার আপনাকে জানাবার প্রয়োজন রয়েছে এটা।
আমার যে ভাষাটাকে আপনি অশালীন/কদর্য বলে আখ্যায়িত করছেন, সেই ভাষাটা আমি খুব সচেতনভাবে ধার করেছি হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকে। এটা আমার ভাষা নয়। সচেতন পাঠক একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন সেটা।
অন্তর্জাল খুব মজার জায়গা। কে যে কখন কী ভূমিকা পালন করে বলা মুশকিল। আপনাকে সচলায়তন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে একজন নারী ব্লগারকে টেলিফোনে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগে। ওদের মড-লগ বুকে খুব সুন্দর করে এটা লেখা রয়েছে।
@ফরিদ আহমেদ,
ভেবেছিলাম আপনার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াবো না। কিন্তু আপনি না জেনে অহেতুক ত্যানা পেঁচাচ্ছেন। নিজের কুৎসিত-কদার্য চেহারাটি এই মিথ্যাচার করে আরেকবার উন্মোচন করলেন। আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি আপনার বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমান দিন, নইলে মুক্তমনায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে ওপরের ওই বক্তব্যটুকু প্রত্যাহার করুন।
যদিও আপনার এইসব ত্যানা পেঁচানো/কুৎসা রটনাতেই সহব্লগারের প্রতি করা আপনার অশালীন ব্যক্তিগত আক্রমণ/কদার্য ভাষা ব্যবহারের বৈধতা দেয় না। আপনার মহান উক্তিসমূহ থেকে চুম্বক অংশের পাঠ আরেক দফা:
তীব্র ধীক্কার!! (N)
@বিপ্লব রহমান,
কুল ডাউন ম্যান। আপনার ধিক্কারের ঠেলায়তো আমার অক্কা পাবার দশা। আগেও বলেছি, আবারো বলছি, আপনার সাথে বাদানুবাদের কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। শুধু আপনি একা নন, কারো সাথেই বাদানুবাদে জড়ানোর বিন্দুমাত্র খায়েশ আমার নেই। ব্লগিং থেকে স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমার প্রায় পাকা। এই মুহুর্তে আমার সব হিসাব নিকাশ আকাশ মালিকের সাথে, অন্য কারো সাথে নয়।
আমি ভুল তথ্য দিলে দুঃখ প্রকাশ করা বলেন, ক্ষমা প্রার্থনা করা বলেন, কিংবা আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করা বলেন, এর যে কোনো কিছু করার ব্যাপারেই সবসময় প্রস্তুত আমি। এই একটা বিষয়ে আমার কোনো ইগো নেই। এটাকে আমি একজন সভ্য মানুষের স্বাভাবিক সৌজন্যতা হিসাবেই বিবেচনা করি। যাঁরা দীর্ঘদিন মুক্তমনার সাথে জড়িত আছেন, তাঁরা বিষয়টা জানেন। কাজেই, অস্থির হয়েন না। আমি ভুল হলে, নিশ্চিত থাকেন, আপনি যা যা চাইছেন তার সবকিছুই করবো আমি।
সচলায়তনের মডারেটর হিমুর এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন। এখানে লেখা আছে,
@ফরিদ আহমেদ,
কিন্তু কেন? আপনার অনেক গুনমুগ্ধ পাঠক রয়েছেন, তাদের কথা ভেবে হলেও এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাই।
@ফরিদ আহমেদ,
মুক্তমনার নীতিমালা ও দেশ্চার ভেঙে সহব্লগারকে কুৎসিত/কদার্য ভাষায় ব্যক্তি আক্রমণ করে আপনি প্রথমে বলেছেন:
এর প্রতিবাদ করায় এখন নিজের কীর্তিটুকু আড়াল করতে গিয়ে ত্যানা পেঁচিয়ে বলছেন:
ওই মিথ্যাচারটিকে চ্যালেজ্ঞ করায় এখন আবার নিজের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে এক পোস্টের লিংক ফেঁদে বলছেন:
ফরিদ আহমেদ,
এই সব বিষ্ঠা ঘাঁটাঘাঁটিতেই সহ ব্লগারদের প্রতি আপনার একের পর এক অসংযত আচরণ বৈধতা পায় না। তো মান্যবর মুক্তমনা, বরাহ হিমু অ্যান্ড কোং আপনার কাছে সহি আসমানী কিতাব, না এক হিমুই সচলের মড লগ? হলদে হিমুর একপেশে কুৎসা রটনামূলক একটি ব্লগ পোস্টের এক বাক্যেই কেমন প্রমান হয়ে গেল যে, সদস্যা ব্লগারকে বিপ্লব রহমানের টেলিফোনে উত্তক্ত করার কল্পিত কিচ্ছা কাহিনী এবং আপনার কথিত সচল থেকে তার বহিস্কারের হাওয়াই তত্ব, তাই না?
শাবাশ আপনার যুক্তিবোধ!! 😛
ত্যানা যখন পেচাঁতেই বসেছেন তখন বলি, আপনার কথিত সচলের মড লগ কিন্তু বলছে উল্টো কথা। সেখানে বিপ্লব রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো নেইই, বরং দেখা যাচ্ছে, বরাহ হিমু অ্যান্ড কোং নিজেই সহ ব্লগারদের ব্যক্তিগত আক্রমনের দায়ে শাস্তির আওতায় পড়েছেন।
আফসোস, কুলদা রায় যখন অগ্রসর লেখক অভিজিৎ রায় এবং আপনার বিরুদ্ধে ব্লগ থেকে ব্লগে যথেচ্ছ করে বেড়াচ্ছিলেন, তখন মুক্তনাতে তো বটেই এমনকি সচলায়তন থেকে শুরু করে অন্য ব্লগেও আমি এর প্রতিবাদ করেছি। নমুনা-০১, ০২, ০৩। নামে-বেনামে পাল্টা ব্যক্তি আক্রমণও তোয়াক্কা করিনি।
আরো আফসোস, মুক্তমনায় যতই নমস্য (অব.) হোন না কেন, বাংলা ব্লগে আপনি এখনো দুগ্ধ পোষ্যই রয়ে গেলেন। নইলে পছন্দের বরাহ হিমু অ্যান্ড কোং-এর এই ফান্ডা আপনার নজর এড়াবে কেন?
[লিংক]
:hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee:
বটম লাইনে: ০১. ফরিদ আহমেদের একের পর এক মুক্তমনার নীতিমালা ও দেশ্চার ভঙ্গ করার বিষয়টি বৈধতা পায়নি, ০২. অপ্রসঙ্গভাবে তার কথিত মতে, অন্য ব্লগে “একজন নারী ব্লগারকে টেলিফোনে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ” বিষয়টি নেহাতই মিথ্যাচার, ০৩. কোনো ব্লগ থেকে কখনোই বিপ্লব রহমানকে বহিস্কার করা হয়নি, ০৪. বরং ফরিদ আহমেদ উদ্ধৃত বরাহ হিমু অ্যান্ড কোং এর কারণেই অতিষ্ট হয়ে পুরনো সদস্যরা প্রায় সকলেই স্বেচ্ছায় সচলায়তন ছেড়ে অন্য ব্লগে চলে গেছেন, ০৫. ফরিদ আহমেদ চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়ে চালবাজীতে ওস্তাদ।
অতএব সাধু সাবধান। (Y)
@ফরিদ আহমেদ,
একজন পাঠক হিসেবে আপনার কাছে দাবী করছি, স্বেচ্ছা-অবসরের সিদ্ধান্ত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আপনার লেখাগুলো পড়ার জন্য পাঠকেরা মুখিয়ে থাকে।
@ফরিদ ভাই,
প্লিজ, কিছু ভুঁইফোঁড় , (তথাকথিত মুক্ত মনা ) লোকের জন্য এইসব সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না। প্রকৃত মুক্ত মনাদের ভিতরে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্খ্যা অনেক বেশি।
@ফরিদ আহমেদ,
আমার সে বইটি ভালই পড়া আছে একাধিকবার, আমার লাইনে লাইনে মনে আছে হুমায়ুন আজাদের স্বাধীন বাংলাদেশের বংগবন্ধু শাসনামালের মূল্যায়ন।
আকাশ মালিক এ লেখায় নিরপেক্ষ ভাবে সব মূল্যায়ন তুলেননি এটা খুবই সত্য কথা। আকাশ মালিকের অন্ধ বংগবন্ধু প্রেম আমিও একাধিকবার এই ব্লগে এবং অন্য ব্লগেও দেখেছি। উনি নিরপেক্ষভাবে বংগবন্ধুর ত্রুটি বিচ্যূতি আলোচনা করবেন তেমন আশা আমি করি না। তবে এটাও মনে রাখা উচিত যে এটা লেখা হয়েছে আদনানের এক তরফা বংগবন্ধু বিদ্বেষ (যাতে তিনি ব্লগের নিয়ম নীতি পায়ে মাড়িয়ে গালি দিয়েছেন) যা হুমায়ুন আজাদের এই বই রেফার করে করে এসেছেন। আদনানও কি একই অভিযোগে, আরো গুরুতর অভিযোগে পড়েন না? হুমায়ুন আজাদের বইতে ভাল মন্দ দুই দিকই আছে যদিও চুড়ান্তভাবে বংগবন্ধুর শাসনামল সম্পর্কে আজাদের হতাশাই প্রাধান্য পেয়েছে। আদনানের আরো রেফারেন্স যা উনি কথায় কথায় ব্যাবহার করেন সেগুলি হল ওনার নিজের পরিবারের কাছে কি কি শুনেছেন দেখেছেন। এই জাতীয় রেফারেন্স মুক্তমনার একজন দীর্ঘদিনের সদস্য হিসেবে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
এই লেখা আসলে ক্লাসিক বাংলাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস চর্চা সংস্কৃতির এক মডেল ভার্ষন, এক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ায় পালটা মৌলবাদী প্রতিক্রিয়া।
পরিশেষে বলতে হয় যে আপনার মন্তব্যে ব্যাক্তিগত অভিযোগের বাহুল্য অনেকটাই মন্তব্যের গুরুত্ব কমিয়েছে, খুলে দিচ্ছে নুতন বিতর্ক, গ্রুপিং এসবের দুয়ার।
– আশা করি আপনি যা বলছেন তা প্রমান করতে পারবেন। সেটা ধরে নিয়েও বলতে হয় যে এসব এখানে না বললে উপযুক্ত প্রমান সমেত আলাদা পোষ্টাকারে দিলেই পারতেন। কেউ ভন্ড, দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করে আসছে এসব সত্য হলে আমাদের সকলেরই জানার অধিকার আছে। সারাদিন ধর্মকর্ম করে রাতের বেলা ধর্ম বিদ্বেষ করার মোটিভ সম্পর্কে আমিও খুব কৌতূহলী।
@আদিল মাহমুদ,
আমার একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া আছে মুক্তমনায় আকাশ মালিকের প্রতি। তিনি সেটা নেন নি। নিতে বলেন সাহস থাকলে। এত বড় যুক্তিবাদী পণ্ডিতের কীসের এত ভয় বলেন? কথা দিচ্ছি, ভুল প্রমাণিত হলে মুক্তমনার প্রথম পাতায় ক্ষমা প্রার্থণা করে পোস্ট দেবো আমি। যে কোনো শাস্তি মাথায় পেতে নেবো। আর আমি যে, জামাত না, এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে প্রথম পাতায় পোস্ট দেবার সাহস তাঁর আছে কিনা জিজ্ঞেস কইরেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি জামাতি (এমনকি অভিজিতও জামাতি বলে এক মহান বিখ্যাত ব্লগার ঘোষনা দিয়েছিলেন) শুনে আমার তথ্য প্রমান চ্যালেঞ্জ করার আগে অট্টহাসি পেয়েছিল সেটা ভালই জানেন।
আকাশ মালিককে মনে হয় চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন আপনি জামাতি প্রমান করার। আমি ঠিক নিশ্চিত জানি না। তিনি সেটা পারেননি, পারার কথাও না।
কিন্তু এতে তো তার সম্পর্কে আপনার অভিযোগও প্রমান হচ্ছে না ফরিদ ভাই। অভিযোগ করলে তা প্রমানের দায় অভিযোগকারিরই থাকে। এই ইস্যু আর বাড়তে না দিয়ে ব্লগের স্বার্থেই দ্রুত শেষ করা উচিত।
@আদিল মাহমুদ,
তাই যদি হয় তাহলে আর আমাকে এসব বলা কেন যে, আমি অভিযোগ করছি। আমি আমার অভিযোগ করে যাই নিয়ত, এতেতো আর প্রমাণ হচ্ছে না যে, আকাশ মালিক একজন হুজুর। 🙂
ভাই, এটা ইন্টারনেট, ইমেইল, জিটক, স্কাইপ এর যুগ। আকাশ মালিকের পরিচয় আমি প্রকাশ্যে ফাঁস করতে বলি নাই। মুক্তমনার সিলেক্টেড কিছু লোকের কাছে করলেই চলবে তাঁর। আমিও এতে জড়িত হবো না। এতে করে তাঁর নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে বলেতো মনে হয় না। মাত্র একদিনেই তিনি আমার মুখ বন্ধ করে দিতে পারেন। আমি কথা দিয়ে যে কথা রাখি, এটা আমার শত্রুরাও জানে। কিন্তু, সেই কাজটা কী তিনি করবেন? এই ফোরামে তিনি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন। কেউ ই জানে না তিনি কে। এটা কি ঠিক কাজ হলো? কে জানে হয়তো গোলাম আযমই আকাশ মালিক নামে ব্লগিং করে যাচ্ছে গত দশ বছর ধরে। :))
@ফরিদ আহমেদ,
নাহ, আমি এইবার ক্ষ্যামা দেই। কেউ কারো নামে কোন অভিযোগ করলে সেটা প্রমানের দায় তারই ওপরে বর্তায়, এটাই রীতি। আসামী প্রমান করতে হয় না যে সে নিরপরাধী, বাদি পক্ষেরই প্রমানের দায় থাকে। অভিযোগ খোলা ফোরামে করা হলে সেটা খোলা ফোরামেই হওয়া উচিত, সিলেক্টেড কিছু লোকের কথা আসা উচিত নয়।
আপনি আমাকেও আজ একই রকমের চ্যালেঞ্জ দিলে (দিনে ধর্ম ফেরি করি আর রাতে ধর্মবিদ্বেষী জ্ঞান দেখাই) আমিও যেহেতু নিজের আসল নাম ফাঁস করতে চাই না সেহেতু আপনার চ্যালেঞ্জ নেব না, কোন সূস্থ মাথার লোকে শুধু সে থেকেই ধরে নেবে না যে আপনার অভিযোগ সত্য হয়ে গেল। ছদ্মনাম কে কেন নেয় তার বহুবিধ কারন থাকতে পারে। আপনি বা এখানকার অন্য কেউ ব্যাক্তিগত পরিচয়ের খাতিরে আমার আসল পরিচয় জানে সেটা ব্যাতিক্রম।
ক্ষ্যামা দেওয়াই ভাল, মুক্তমনা ধীরে ধীরে প্রমান ছাড়া অভিযোগ পালটা অভিযোগ, গ্রুপিং, ব্লগ ছেড়ে যাওয়ার আবেগময় ঘোষনা, আবার হয়ত অনেকের অনুরোধে ফিরে আসার ঘোষনা এইসবের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এটাই আমার আপনাদের দুজনার খুনসুটিতে নাক গলানোর কারন।
@আদিল মাহমুদ,
আমি ঠিক সেই কাজটাই করছি। আকাশ মালিকের কাছ থেকে প্রমাণ চাচ্ছি। আপনারা কেন বিষয়টা বুঝতে পারছেন না, জানি না।
আমারও তাই মনে হচ্ছে।
@ফরিদ আহমেদ,
– সেটা তো আমি মেনেই নিয়েছি, আপনি ছদ্মবেশী জামাতি এমন অভিযোগ উনি বা প্রথম উত্থাপনকারী কেউই প্রমান করতে পারেনি। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে, যে কোন কারনেই হোক।
তাই বলে আপনার মত একজন বিচক্ষন অভিজ্ঞ ব্লগারও একই কাজ করবেন? আপনি যদি মালিকের বিরুদ্ধে শুধু এই যুক্তিতেই প্রমান ছাড়া অভিযোগ করেন তো কিছু বলার নেই।
নিরপেক্ষ চোখে আপনারা কোন পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ প্রমান করতে পারেননি, অন্তত এখন পর্যন্ত। ছেলেমানূষের মত অন্য লেখায় ইগোর লড়াই তুলে ব্লগের মান নামাচ্ছেন। এটা আমার সরল অভিব্যাক্তি, লেখা বাদ দিয়ে আলোচনা যাচ্ছে ব্যাক্তিগত আক্রমনের দিকে। আপনার মত লোকের থেকে ব্লগের বহু কিছু প্রত্যাশা আছে, জানি আপনি ব্যাক্তিগত কাজে খুব ব্যাস্ত। ব্যাস্ততার সময়ে যদি ভাল লেখা বাদ দিয়ে এইসব খুনসুটিতে সময় কাটান তো আমরা যাই কই।
@আদিল মাহমুদ,
প্রমাণ ছাড়া তুলেছি কে বললো? রীতিমত ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কের মত কোমরে হাত রেখে চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ দিছি। তাও দেখি বিরাট যুক্তিবাদী পণ্ডিত গর্ত থেকে বের হয় না। কী আর করা।
আমি আসলে অন্যের লেখায় যাওয়া ছেড়েই দিয়েছি প্রায়। এখন থেকে আর হয়তো যাবোই না। আপনাদের ব্লগের মান অক্ষুণ্ণ থাকুক।
ইগোর লড়াই সমসময় কিন্তু খারাপ না । যার ইগো নেই তার ওই জিনিসটাই নেই (সরি, হুমায়ুন আজাদের ভাষা ধার করে বলতে পারতাম শব্দটা, কিন্তু আমি বললে লোকে অশ্লীল বলবে, তাই বললাম না।) :))
ব্যস্ততার কিছু নেই। লেখাতো একটা দিলামই, আরেকটা দিতে দেরি আছে। আজ অখণ্ড অবসর। উপভোগ করছি নির্ভীক যুক্তিবাদীদের সাথে তর্ক-বিতর্কের সময়টাকে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
লেখাই দ্যান,
আপনের সাথে যুক্তিতর্ক বাদ দিয়ে সরাসরি রেষ্টলিং এর শখ দিনে দিনে বাড়ছে, একদিন সমওয়াই করে গোছ মেরে চলে আসব।
@আদিল মাহমুদ,
দেবো। রাজকুমারী গুলবদনকে কোলের কাছে টেনে এনেছি আবার। বেচারির প্রতি বেশি অবহেলা করা হয়েছে আমার। 🙂
হাহাহা। আপনার সাথে বিতর্ক করার মজাই আলাদা। শত্রুর মনও ভালো করে দেবার বিচিত্র ক্ষমতা আছে আপনার।
বাই দ্য ওয়ে, আমি কিন্তু এখন আপনার বাসার খুব কাছেই থাকি। মিসিসাগা থেকে স্কারবোরোতে মুভ করেছি আমি। চলে আসেন একদিন, ডুয়েল লড়া যাবে, চা-কফি খাওয়া যাবে। লোকেতো আমার চ্যালেঞ্জ নিতে চায় না, এখন দেখি চা-কফি খাবার আমন্ত্রণটা নেয় কিনা। :))
@আদিল মাহমুদ,
দাওয়াত মন্দ না, কফির ভিতরে আবার না শরীরের অপ্রয়োযনীয় বর্জ্য তরল মিশাল দ্যান এই আশংকা যদিও বাদ দিতে পারতেছি না, তবুও ঝুঁকি নেওয়াই যায়। দেশ থেকে আসি, আছি আর মোটে দুই দিন।
স্কারবোরোর কোনদিকে থাকেন? আমি উত্তরে, প্রায় মার্কহামের বর্ডারে।
শোনেন আপনাকে মারলে আমি সামনাসামনি সমান সুযোগ দিয়েই মারবো। একিলিস যেমন মেরেছিল হেক্টরকে, ঠিক সেরকম করে। ওই সব বর্জ্য-ফর্জ্য বিষ মেশানোর মত দুই নাম্বারি কাজ আমি করি না। সো, ডোন্ট বি আফ্রেইড। 🙂
আমিও প্রায় উত্তরেই থাকি, কেনেডি আর ফোর ও ওয়ানের কাছে।
@আদিল মাহমুদ,
উনি আসলে শেখমুজিবের প্রেমিক না, পুজারী।অনেকটা মুসলিমরা যেমন মুহাম্মদের পুজারী তেমন। যদিও তিনি ( আকাশ মালিক) এতই মুসলিম বিদ্বেষী যে মুহাম্মদের লুঙ্গি খোলার দিকেই তার নজরটা বড্ড বেশি,( মুহাম্মদ কি লুঙ্গি পরতেন? মনে হয় না। আকাশ মালিক আর আরেকজন ব্লগার ( নাম বললাম না, আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন) সেটা ভাল জানবেন) এবং এতোটাই বেশি যে এটা মাঝে মাঝে অসুস্থতার পর্যায়ে চলে যায়। এ ছাড়া বেশিভাগ সময়েই তারা কোন কাজ খুঁজে পান না। আচ্ছা মানুষের কি হাতে এতই সময় আছে পরচর্চা করার?
যাক সেটা তিনি করতেই পারেন, তবে নিজের আদর্শ মানবকে নিয়ে তা এত মাতামাতি আর অতি সংবেদনশীলতা তাঁকে আরেক জাতীয় মৌলবাদীতেই পরিনত করেছে।
আকাশ মালিকের প্রতি কোন বিদ্বেষ থেকে বলছি না ( কারন তার বেশির ভাগ লেখাই আমি পড়িনা), শুধুই
নিজের একটি মতামত দেব, আর তা হল যে, তিনি আসলে নিরপেক্ষ ভাবে কোন কিছুই করতে পারেন না, এবং নিজের মতাদর্শ কে পাঞ্চ করে অন্যকে গেলানোর একটা বাজে প্রবনতা আমি তার মধ্যে পেয়েছি।( তবে কাজটা তিনি সোজাসুজি করেন না, করেন অনেক ধুর্ততার আশ্রয় নিয়ে, আর এতেই কিছু লোক তাকে রীতিমত পুজা করে এখানে।) খুবই বাজে আর বিরক্তিকর, সন্দেহ নেই।কাজেই আমি আকাশ মালিক কে আধুনিক মুহাম্মদ বলেই আখ্যায়িত করলাম।
বি.দ্র. অপ্রাসঙ্গিক ভাবে মুহাম্মাদ কে টেনে আনায় ক্ষমা চাচ্ছি সবার কাছে, তবে এই উদাহরন ছাড়া নিজের মনোভাব কিছুইতেই প্রকাশ করতে পারছিলাম না, সঠিক ভাবে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার লেখা, শাণিত মন্তব্য, নির্ভীক সত্যকথন, দেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের প্রতি আপনার ভালবাসা এবং সর্বোপরি আপনার দেশপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করে। তবুও বলি বর্তমান মন্তব্যটিতে মাত্রাদোষ ঘটেছে। আপনি আকাশমালিককে সঙ্গত কারনেই একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছিলেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেন নি। হয়তো তার কোন বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে যা আমরা বুঝতে পারছি না। একজন মানুষের ব্যক্তিগত দুর্বলতায় বারবার আঘাত করা কি বীরের কাজ? আসুন মুক্তমনার বাইরে যা ঘটে তা বাইরে রেখেই এই অনন্য বাংলা ব্লগটির স্বার্থে বিষয়টি আমরা এখানেই চাপা দিয়ে দেই। সবচেয়ে ভাল হয় আকাশমালিক যদি তার ‘জামাতী’ মন্তব্য প্রসঙ্গে দুচার কথা বলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
@মনজুর মুরশেদ,
আসলেই কি মুরশেদ ভাই , মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। ফরিদ ভাইও একজন মানুষ। আপনি কিছু পোষ্টে দেখবেন যে আকাশ মালিক যেভাবে অশালীন ভাষায়, প্রমানহীন ভাবে যে ঢালাওভাবে ফরিদ ভাইকে জামাতী বলে গালিগালাজ করেছেন, আর প্রমান চাইতে গেলেই পাঁকাল মাছের মত পিছলে গেছেন, আমার মনে হয় যে সেই অত্যাচার ফরিদ ভাই ছাড়া অন্য কেউ সহ্য করত না। বিশেষ করে প্রমাণহীন ভাবে আমাকে ওই সব বাজে ভাষায় গালি গালাজ করলে, (সোজা কথায় জামাতি শব্দটা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের কাছে বিশ্বাস ঘাতকের প্রতিশব্দ) আমি অনেক আগেই শোধ নিতাম আকাশ মালিকের ছাল চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে।
ফরিদ ভাইয়ের মতন সহনশীল মানুষ আমি না। আমি মার খেয়ে মার হজম করার মত ভদ্রতা কোনদিনই দেখাতে পারব না।
সুন্দর আলোচনাযোগ্য পোস্ট। বিশেষভাবে আলোকিত করলো আদিল মাহমুদ এবং ইরতিশাদ দুজনের মন্তব্য। আমি হুমায়ুন আজাদের বইটি পড়েছি, এই বিষয়ে আমার অবস্থান হুমায়ুন আজাদের বইটিরই মতো। আমি আকাশ মালিকের বইটির একটা অংশকে লিখে আত্তীকল সাজানোর মধ্যে কোন সমস্যা দেখি না, এইটা হুমায়ুন আজাদ কখনই অস্বীকার করেননি যে-শেখ মুজিব ছিলো একজন গ্রেইট ন্যাশনাল লিডার। একটি জাগরণে অর্গানাইজার লাগে। মানুষ সবসময়ই কিছু না কিছু নিষ্পেষণের ভেতর দিয়ে যায়, এখনও আমরা বাঙ্গালীরা যাচ্ছি। কিন্তু এই নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে রেসিস্টেন্সে জনগনকে একতাবদ্ধ করার মতো সাংগঠনিক প্রভাব সকলের থাকে না, মুজিবের ছিলো, এবং ছিলো বলে আমরা ভাগ্যবানই। আবার স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় বসে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত প্যারামিলিটারি বানানো, পত্রিকা টত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া, রাজনৈতিক অপোজিশনকে নিষিদ্ধকরণ এগুলো বলাই বাহুল্য বিগোট্রি। আমরা যেই সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে এই বিগোট্রি ছিলো খুবই কমন একটি রাজনৈতিক থিম, বিশ্বজুড়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাই এটা করেছেন এবং বলাই বাহুল্য সদুদ্দেশ্যে এইসব করেন নি কেউ-ই। এই বিগোট্রির সমালোচনাই মানুষ করবে। আবার ৭১ এ আকাশচুম্বী পপুলারিটি নিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই সেই পপুলারিটি সম্পুর্ণরুপে হারানো এইটাও নিঃসন্দেহে ব্যার্থতা, এই ব্যার্থতাটা আমাদের দেশটাকে পিছিয়ে দিয়েছিলো।
ব্যাপারটা কে ব্যালেন্সড দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখাটাই দরকার। আমি দেখতে পারিনা কোন ঐতিহাসিক কারণে নয় বরং সাম্প্রতীকতার কারণে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওমিলীগের অগ্রহনযোগ্য বিগোট্রির বিপরীতে যখন একজন মহান মহানায়কের ইমেইজকে দাড় করিয়ে বলা হয় ‘এই ভদ্রলোক পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট’, স্বগতোক্তির মতোই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ‘আমার চুল’!! ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে শেখ মুজিবের সাংগঠনিক সক্ষমতার প্রতি প্রসংসা এবং কৃতজ্ঞতাবোধই অনুভব করা উচিত। তার এই সক্ষমতা আমাদের অশেষ উপকার সাধন করেছে।
@আল্লাচালাইনা,
ভাল বলেছেন।
আমার কাছে মুজিব জননেরা হিশেবে যতটা সফল প্রশাসক হিশেবে ততটাই ব্যার্থ, সংক্ষেপে এটাই আমার মূল্যায়ন। তার ব্যার্থতাগুলিকে দুটি ভাগে ফেলা যায়; প্রথম অংশ হল অনিবার্য কিছু পয়েন্ট যা সদ্য স্বাধীন দেশের নেতা হিশেবে তাকে সামাল দিতে হয়েছে যার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা তার ছিল না, একই সাথে চলেছে চিহ্নিত কিছু চক্রের নানান চক্রান্ত, বিপ্লবের নামে অরাজকতার পাঁয়তারা। জনগন হয়ত এসব বুঝলেও বুঝতে পারত, তবে তার শাসনামলের সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় যা জনতা সহজভাবে নিতে পারেনি তা হল স্বজনপ্রীতি পরিবার প্রীতির মত ব্যাপারগুলি। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে গেছেন জনবিচ্ছিন্ন, আশেপাশের চাটুকাররা বুঝিয়েছে সবই ঠিক আছে, যা কিছু সমালোচনা শোনা যায় সে সবই ষড়যন্ত্রকারী রাজাকার সিআইএর কাজ। ফল হয়েছে তিনি হয়ে গেছেন আরো বেপরোয়া, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছেন বাকশালের নামে, যার ফলে মৃত্যু ছাড়া স্বাভাবিকভাবে বিদায় নেবার পথ তিনি নিজেই রাখেননি।
বংগবন্ধুর সমালোচকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন ভাল। বংগবন্ধুর সমালোচক বেশীরভাগই আসলে গঠন মূলক সমালোচনার মত মহত উদ্দেশ্যে করে না। বেশীরভাগ সমালোচক হল হয় রাজাকারি মানসিকতার লোক, আর নয়ত জিয়াকে আরো বড় নেতা বানিয়ে হালুয়া রুটি লোটার নিজ প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত রাখার মতলবে।
@আদিল মাহমুদ,
খুবই সত্যি কথা। আসলে এই ফোরামে অপার্চুনিস্টিক ছাগ্লা মানসিকতা দ্বারা তাড়িত হয়ে সমালোচক বনে যাওয়া লোকেরা কোনঠাঁসাই হবে আশা রাখি। আপনি বোধহয় ফেইসবুকে নেই। থাকলে সেইখানে নানাধরণের মানুষের নানাধরণের হালচাল দেখতে পেতেন। সাম্প্রতীককালে আমার একটা অনুধাবন হচ্ছে- বাঙ্গালী ধর্মের মতো রাজনৈতিক অবস্থানও পারিবারিক ঔরসে লাভ করে এবং এই অবস্থানকে সর্বশক্তি দিয়ে ডিফেন্ড করে চলে। অনেকে হয়তো ধর্মীয় ইনডক্ট্রিনেশনকে ছাপিয়ে উঠে সক্ষম হয় নিজের জন্য গড়ে তুলতে একটি স্বাধীন এবং সুবিবেচিত ধর্মীয় অবস্থান, কিন্তু রাজনৈতিক ইন্ডক্ট্রিনেশনকে ছাপিয়ে উঠতে পারে খুব কমই! এখন আওমিলীগ ক্ষমতায় আছে বলে বলাই বাহুল্য এই নেতিবাচক প্রবনতাটা আওমিলীগ সমর্থকদেরই উন্মোচিত হবে বেশী। চিন্তাজগতের অন্যান্য ফ্যাসেটে সুবিবেচক এমন বহু মানুষও বিন্দুমাত্র রিজনের ধার না ধেরে ডিফেন্ড করে চলছে আওমিলীগের সকল প্রকার ব্যার্থতাকে, আরবং আওমি কমান্ড যা যা বলে সেই সবকিছুকে। সাগর-রুনি হত্যাকান্ড হলে বলছে এইখানে সরকারের কোন হাত নেই, যদিও এই ঘটনার মুখোমুখী হয়ে বাংলাদেশের হোম মিনিস্ট্রির সমালোচনাই করা উচিত। একটা বাচ্চা ছেলেকে মিসডায়াগ্নোস করে সরকারী মিলিশিয়া চিরতরে পঙ্গঅ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঠেকে বসলেও বলছে এইটা যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালের চক্রান্ত। শত শত আর্মি অফিসার নিহত হলে বলছে এইটা জামাতের চক্রান্ত–হাও দ্যা এফ… ডু ইউ নো দ্যাট? গার্মেন্টস এ আগুনে শত শত মানুষ পুড়ে মরলে বলছে এইটা নাশকতা, অথচ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সবার আগে বলা উচিত যে সরকারের উচিত মালিকপক্ষকে বাধ্য করা একটি গ্রহনযোগ্য ফায়ার সেইফটি প্রটোকল এবং ইমার্জেন্সি এক্সিট স্থাপন করতে। একটি নিরীহ নিন্মমধ্যবৃত্ত কর্মচারীকে রাস্তায় ক্যামেরার সামনে কুপিয়ে মেরে ফেললে বলছে এইটা যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি মনে করি য়াপনাদের শুধু ধর্মীয় ইনডক্ট্রিনেশনই নয়, পলিটীকাল ইন্ডক্ট্রিনেশন বিরোধী অবস্থানও নেওয়া উচিত (আপনাকে সেটা আমি নিতে দেখেছিও)। এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা অনেক অনেক ক্ষতি করছে যেই ক্ষতি কিনা মোল্লাদের দ্বারা সাধিত ক্ষতির তুলনায় অনেক অনেক বেশী!
@আল্লাচালাইনা, ও হ্যা আরেকটা ব্যাপার 😀 একটা কিশোরীকে ইস্লামিস্টরা গুলি করে খুলী উড়িয়ে দিলে বলছে এইটা সরকারী ষড়যন্ত্র কেননা মেয়েটা পাকিস্তানী, এবং ‘কিভাবে তুমি এইটা জানো’ এই প্রশ্ন আপনার তাকে করার অধিকার আপনার নাই এই কথাও বলছে, আই মিন…… :O
@আল্লাচালাইনা,
আমাদের দেশে অন্ধ ব্যাক্তি পূজো, দল প্রীতি এমনিতেই মজ্জাগত। তার ওপর এটা আরো মাল্টি-ভিটামিন পেয়েছে একদিকে ভারত বিরোধীতা এবং ইসলাম কায়েম আর আরেক দিকে যুদ্ধপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে লীগ সরকার ক্ষমতায়, তাই যুদ্ধপরাধীদের বিচার ইস্যুটাই চোখে লাগছে। আমি আসলেই ফেসবুকে খুব কম যাই। মাঝে মাঝে দেখি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা আমার ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়র বন্ধুবান্ধব “দেশের ভবিষ্যত” তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার দাবীতে লাইক মারছে। এসব কিভাবে সম্ভব? আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এই দৈন্যতা ঘূঁচাবে এমন সাধ্য আছে কার?
যুদ্ধপরাধীদের বিচার করছে এই আশায় আওয়ামী সরকারের যাবতীয় অপকর্মে বেইল দেওয়ার মারাত্মক পরিনতি সম্পর্কে বলার চেষ্টা মাঝে মাঝেই করেছি। কোন লাভ হয় না। উলটো জামাতিদের পিটিয়ে পিষে শেষ করে দেওয়ার দৃপ্ত শপথ নেওয়া হয়। অবশেষে বিশ্বজিতের ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমার ধারনা জামাতি জুজুর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মূল্য সাধারন জনমনে “বাঘ আইল” গল্পের মতই ক্রিয়া করবে। এই ঘটনার মাধ্যমে যে জামাত শিবির চক্র কত বিরাট এক রাজনৈতিক সুবিধে পেল এটা বোঝার মত মানসিকতা হয়নি। আমি এক যুগের ওপরেও দেশের বাইরে থাকলেও দেশের লোকের মাইন্ডসেট মোটামুটি জানি। আমার কোনদিন মনে হয়নি সামগ্রিকভাবে দেশের জনতা সেভাবে যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে খুব সিরিয়াস কিছু ভাবে বলে, জাফর ইকবাল স্যাররা যেভাবে মনে করেন যে দেশের ৯০% লোকের প্রধান চিন্তা যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা এমন ধারনা বাস্তব সম্মত নয়। নুতন প্রজন্মের কিছু ছেলেমেয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র কিংবা জামাতিদের অপপ্রচার রোধে প্রসংশনীয় কাজ করছে জানি, কিন্তু এই প্রসংশনীয় কাজের অর্থবহ ফলাফল যুদ্ধপরাধীদের বিচারে যাবতীয় আওয়ামী অপকর্মে নৈতিক সমর্থন দেওয়া, সব কিছুতে ষড়যন্ত্র খোঁজার মারাত্মক প্রবনতার কারনে সাধারন জনমনে তেমন প্রতিক্রিয়া ফেলবে আমার মনে হয় না। যুদ্ধপরাধীদের ইস্যু গত নির্বাচনে নুতন ভোটারদের মাঝে শক্ত ভূমিকা রেখেছে বলে বার বার রাখবে এমন আশা করা ঠিক না।
– খুবই সত্য কথা। এই অভিজ্ঞতা আমার ব্লগ জগতে বিচরন করে কিছুটা হয়েছে। আগে ধারনা ছিল যে পারিবারিক বা অন্য কোন কারনে ঔরসজাত অন্ধভক্তির জগতে ধর্মের কাছে রাজনীতি পাত্তা পায় না। এখন অবাক হয়ে দেখছি যে উল্টোটাও অনেকের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। নিজে ইসলামে বিশ্বাসী বলে, নবীজির নামে বদনাম শুনলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না, কিন্তু বংগবন্ধুর নামে বদনাম সহ্য করতে পারে না এমন লোকজন দেখি। এখানেও মনে হয় ছাগাতংক ফোবিয়ার মতই কাজ করে।
ধন্যবাদ আকাশ মালিক,
উপড়ের বাদানুবাদটাই আগে পড়েছি, লেখাটা পড়েছি পরে। কিন্তু আমি হুমায়ুন আজাদকে যতোটুকু উপলব্ধি করেছি, মানে হুমায়ুন আজাদের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যতোটুকু বুঝেছি আপনার লেখায়ও তেমনিই বুঝেছি। তাই লেখাটা পড়ার পরে উপরোক্ত বাদানুবাদের তাৎপর্য পুরোটাই হারিয়েছে আমার কাছে। যাইহোক আমি আপনার লেখার কয়েকটা অংশ নিয়ে একটু কথা বলতে চাই, বিশেষত নিজেকে বা নিজস্ব বোধের ক্ষেত্রে বাগারম্বর বা ক্ষয় আছে কিনা যাচাই করতে। আমার কথা গুলো পড়ার সময় আপনাকে ধরে নিতে হবে যে আপনার উক্তির আগে পড়ের সব টুকু আমি পড়েছি।
এই কথাটার মধ্যে একটা গৌরবের ভাব আছে আছে অহমিকা। আপনি যদি সচেতন ভাবে তাকে বঙ্গবন্ধু না বলেন তাহলে আমার কিছু বলার আছে। এর একটা যৌক্তিক ব্যাক্ষ্যা আমি খুঁজে ফিরি। আমি বিরোধী বা রাজনৈতিক কারনে কিন্তু কথা গুলো বলছিনা। আমি নিজেও তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের কোন অনুসারী নই। আমি মনে করি এই না বলাটা এক ধরনের অপরাধ। কেনো? আপনার এই প্রবন্ধেই তার উত্তর আছে। আপনার প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া আর যাদের নাম উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাদের প্রত্যেকের নামের অভিধা আছে, এমনকি একেবারেই শুরুর নামটা যেটা বিদ্যাসাগর দিয়ে করেছেন এটাও কিন্তু প্রকৃত নাম নয় অভিধা। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে অভিধা ব্যবহার করলে দেবতার পুজো করা হবে আর অন্যদের বেলায় হবেনা বা ব্যবহার করা যাবে, কেনো? অথচ আপনি নিজেই বলছেন,
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি তাঁর জায়গায় অনন্য! খুব মজার একটা স্ববিরোধিতা নয়কি? যতোদূর জানি তাঁকে এই উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ (যতদূর মনে পড়ে)। আমার ছেটবেলায় আমি যখন বাবার হাত ধরে মিছিল করেছি, তখনো আমার হাতে যে মায়ের বানানো পতাকাটা যুদ্ধের পরে স্বাধীন দেশে ফিরে এসে পেয়েছিলাম তাতে সেই (আপনার বলা) স্লোগান সূঁচ-সুতোয় করা দেখেছিলাম, ” জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। এর থেকে এটাই প্রমান হয় যে ‘বঙ্গবন্ধু’ অভিধাটি কোন ছাত্রনেতা কর্তৃক ঘোষিত হলেও, তা তৎকালে বাঙালী কর্তৃক গৃহীত হয়েছিলো। আমি বা আমরা কে, সেই অভিধাটিকে বাতিল করে দেবার? তাঁর সমপর্যায়ের না হয়ে আমরা কি সেই অধিকার সংরক্ষন করি?
এই লাইনক’টা দিয়ে আপনি কি বুঝাতে চেয়েছিলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আপনিকি তাঁর বিশালাকায় দৈহিক আকারের কথা আলোচনা করেছেন? বোধকরি এই ব্যক্ত্বিত্ত্বের ক্ষেত্রে এই বর্ণনা প্রবন্ধের মানটিকে ক্ষুন্ন করেছে।
এখানেও আমার দ্বিমত আছে। প্রথমতঃ বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তাঁকে এই অভিধায় কেউ ভূষিত করেনি। বি বি সি-র একটি জরীপ থেকে এটি বেরিয়ে এসেছে। এটিকে আপনি স্তব করা বলতে কি পারেন? দ্বিতীয়তঃ একঅর্থে একথা ঠিক যে অভিধাটি যথার্থ, কেননা তুলনা করা আসলে ঠিক নয় যদি ক্ষেত্র আর কাজের ধারা এক নাহয়। বিশ্বকবি তাঁর অঙ্গনে বিশ্বনন্দিত তো বঙ্গবন্ধু তাঁর অঙ্গনে। কবি বাংলাভাষাকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন, বাঙ্গালীকে করেছিলেন পরিচিত। আর বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকরে এই বিশ্বের বুকে বাঙ্গালীর সতন্ত্র আবাসভূমির ব্যবস্থা করেছিলেন। কোনটি বেশী গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে মনে হয়? আমার কাছে দুটোই, তবে আজ যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব না থাকতো, তবে বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালী জাতির যে আত্মগৌরব, আন্তর্জাতিক যে সব স্বীকৃতি, আর যা আজো প্রতিষ্ঠা হয়নি কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করি, তা কি সম্ভব হতো? কাজেই উপরোক্ত অভিধায় তাঁকে নষ্ট করা হয়েছিলো একদম বাজে কথা।
কি বলেন! তাই নাকি? তার মানে দাঁড়াচ্ছে মহাত্মা গান্ধী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ একতুড়িতেই তা করে ফেলতেন? এঁদের অবদান কি এভাবে তুল্য? ইংরেজী ভাষায় Best শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ নেই। আছে ‘সেরা’। এই সেরা একজন নাও হতে পারে। কিন্তু Best অনেকের মধ্যে একজনকেই বুঝায়। ‘সান্তনা’ অর্থে ইংরেজীতে One of the best ব্যবহার করা হয়, যার যথার্থ বাংলা করলে দাঁড়ায় ভালোদের মধ্যে একজন। সম্ভবতঃ এইকারণেই বিবিসি উক্ত জরীপে The best Bengalee খুঁজেনি, খুঁজেছে একটা টাইম ফ্রেমের মধ্যে “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী”। একজনকেই এখানে বেছে বের করা উদ্যেশ্য। সেই ক্ষেত্রে অবদান আর জনপ্রিয়তা মিলিয়ে ব্ঙ্গবন্ধু এসেছেন। এই প্রাপ্তিটিকে বাঁকাচোখে দেখবার কোন সুযোগ আছেকি? আর এই ক্ষেত্রে এই ৩ জন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ত্বের কেউ কি কিছুমাত্র অন্যজনের কাছে গৌন হতে পারেন?
সবচেয়ে বড়কথা বঙ্গবন্ধু ১০ই জানুয়ারী দেশে ফিরেই মাটিকে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, ” হে বিশ্বকবি দেখে যাও তোমার সাতকোটি বাঙালী এবার মানুষ হয়েছে!” এই রাজনীতিকের কবিত্ত্বকে কি আপনি উড়িয়ে দিতে পারেন?
উপড়ের এই কথাটি বলেই পরক্ষনে আবার সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে আপনি এবং স্বয়ং বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাইবার ব্যপারে নিশ্চিত ছিলেন না! এতো স্ববিরোধী হলে কিকরে চলবে? আমি তখন বালক আমি বুঝতাম না। কিন্তু আমার বাবাকে দেখে মনে হতো তিনি ঠিকই বুঝতেন দেশ স্বাধীন হতে চলেছে। আর তাই মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ স্থানীয় ভাবে গাদা বন্দুক সংগ্রহ করতে দেখেছিলাম তাঁকে আর তাঁর বন্ধুদের। সম্ভবতঃ এপ্রিলের ১৪ তারিখে একটি বিশাল নৌকা যোগে আমাদের পাঁচটি পরিবারকে পাঠিয়ে দিলেন ভারতে শুধু বাবা-কাকারা রয়ে গেলেন! উদ্দ্যেশ্য স্পষ্ট। এমনকি আমি এখন নিশ্চিত যে বঙ্গবন্ধুও দেশ স্বাধীনের ব্যপারে শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন। নইলে গ্রেফতারের আগে পূর্বকৃত ওয়ারলেস বার্তাটি তিনি লোক মারফৎ পাঠালেন কি করে? আপনি কি মনে করেন যে উক্তবার্তাটি গ্রেফতারের আগে ১ মিনিটে চটি কাগজে লিখে কারো পকেটে উনি গুঁজে দিয়ে গিয়েছিলেন? আর সেই ধীশক্তির একজন মানুষকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এঁদের পাশে তুলনা করছেন? বঙ্গবন্ধুকে তাঁর যে কীর্তি দিয়ে সাজালেন, আপনার কি মনে হয়না যে তিনি কি হতে যাচ্ছে তা বুঝে-জেনেই সমস্ত পরিকল্পনার ছক কষেছিলেন, এবং সেই ছক ধরেই তিনি এগিয়েছিলেন? আমার কি মনে হয় জানেন? অকৃতজ্ঞ অসভ্য বাঙালী বলেই আমরা আমাদের ইতিহাসের বীর সেনানীদের নিজ হাতে হত্যাকরে অন্ধকারে নিজেদের শেকড় হাতরে বেড়াচ্ছি। আজ সেই যুদ্ধদিনের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন, বীর মনসুর আলীরা বেঁচে থাকলে আমাদের অযাচিত জল্পনা কল্পনার প্রয়োজন হতোনা।
আপনার স্বাধীনতার বাসনা জেগে উঠলো, আর আপনার নেতা স্বাধীনতার ব্যপারে চিন্তাই করেননি! এই কথাগুলো নিজের সাথে নিজের প্রতারণা বলে কেনো যেনো মনে হয়।
আমার বোধের ভেতরে গলদ কিনা জানিনা। আপনার আলোচনায় হয়তো পরিষ্কার হবে। তবে যার যা প্রাপ্য, তা সযতনে এড়িয়ে যাবার অর্থ নিজের সাথে প্রতারণা করা। এটি আমার কথা নয়, আমার গুরুজনদের কথা। আমি বিশ্বাস করি।
@কেশব অধিকারী,
আপনি হয়তো পড়তে অথবা বুঝতে ভুল করেছেন। লেখাটা আরেকবার পড়ুন।
ভেবেছিলাম এই বিতর্কে অংশ নেব না। তবে কাজি মামুনের এই কথাটা পড়ে মনে হলো তার এবং অন্যান্য পাঠকেরা যারা হুমায়ূন আজাদের এই বইটা পুরোটা পড়েন নি তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলা দরকার।
প্রথমেই বলে নিই, বই-এর যে অংশটা (পৃ ২২-৩১) এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে তাতে রয়েছে শেখ মুজিবের প্রভাব এবং ভুমিকা সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদের মূল্যায়ন। ব্যাক্তিগতভাবে এই উদ্ধৃত অংশটার প্রতিটা অক্ষরের সাথে আমি একমত। যদিও আজাদের এই বইটার অন্যান্য বেশ কিছু অংশের সাথে, তাঁর মতামত এবং মূল্যায়নের সাথে আমি একমত নই।
উদ্ধৃত অংশটাতে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটা নিয়ে আজাদের মূল্যবোধ আমার মূল্যবোধের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিবের নামের আগে বঙ্গবন্ধু বলি না। যারা বলেন বা বলতে চান তা তার ব্যাক্তিগত রুচির ব্যাপার বলেই মনে করি। গোলটা বাধে তখন যখন কেউ, সাধারনত মুজিব পুজোরীরা, এটা চাপিয়ে দিতে চায়। যেমন, আব্দুল গাফফার চৌধুরী একবার নির্মল সেনকে মুজিবের নামের সাথে ‘বঙ্গবন্ধু’ না বলায় তার সমালোচনা করেছিলেন, অভব্য ভাষায়।
আকাশ মালিকও গত বছর আমার ‘আমার চোখে একাত্তর’ এর মন্তব্যে (মন্তব্য ১২) বঙ্গবন্ধু শব্দটাকে বোল্ড করে দিয়ে আমাকে বোধহয় একটা ম্যাসেজ দেয়ার প্রয়াস নিয়েছিলেন। ম্যাসেজটা কি আমি বোঝার চেষ্টা করি নি, এবং তাই এ নিয়ে প্রশ্নও তুলি নি। তবে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছিল। তখন বলি নি, আজকে প্রাসঙ্গিক মনে হওয়াতে বললাম।
এবার আসল কথায় আসি। হুমায়ুন আজাদের বইটার নাম ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ (খেয়াল করুন, আজাদ ‘বাঙলাদেশ’ শব্দে ‘ঙ’ ব্যবহার করেছেন ‘ং’ নয়। এজন্যেও তাঁকে সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে।) বইটার নাম শুনে কি মনে হয়? আজাদ খুব গর্বিত তার দেশ আর দেশের মানুষ আর তার নেতাদের নিয়ে?
শেখ মুজিব সম্পর্কে অনেক চাঁছাছোলা কথা লিখেছেন আজাদ। উদ্ধৃত অংশটা আসলে পরবর্তী অংশটার ভুমিকা (pream ble)। যারা বইটা পুরোটা পড়েন নি, তাদের এটা জানা দরকার। ভীষনভাবে আশাহত ছিলেন আজাদ, শেখ মুজিব আর তাঁর সমর্থকদের কার্যকলাপে। তাই লিখেছেন,
“ মুজিবের দূর্ভাগ্য তিনি বাঙলাদেশের স্থপতি হ’লেও ওয়াশিংটন বা গান্ধি বা জিন্নার মর্যাদা তিনি পান নি। এর জন্যে দায়ী তাঁর সুবিধাবাদী পুজোরীরা ঈর্ষাকাতররা; পুজোরীরা মুজিবকে বিধাতা ক’রে তুলতে গিয়ে তাঁকে সামান্য মানুষে পরিণত করে, ঈর্ষাকাতররা তাঁকে হাস্যকর উপদেবতায় পরিণত করার চেষ্টা করতে থাকে।
তাঁর স্তাবকের, পুজোরীর, সংখ্যা হয়ে উঠেছিলো নক্ষত্রপুঞ্জের সমান।
পুজোরীরা তাঁকে ‘জাতির জনক’ উপাধি দেয়ার জন্য মেতে ওঠে।
‘জাতির জনক’ ধারণাটিই অনেকের কাছে ছিলো আপত্তিকর; ‘পিতা’, ‘জনক’ ধারণাগুলো তখন আগের মতো আকর্ষণীয় ছিলো না। পিতা? জনক? খুবই সামন্তবাদী ধারণা – কবিরা যখন লিখছিলেন, ‘পিতৃহত্যার নান্দীপাঠে ফাল্গুন ফুরোয়’, তখন ‘জাতির পিতা’ হওয়ার বাসনা খুব উল্লাসের ব্যাপার ছিলো না।
স্থপতি বা স্রষ্টা? বেশ, কিন্তু পিতা – খুব সুখকর নয়”। ( পৃষ্টা ৪৮)।
অনেক দুঃখ নিয়ে লিখেছেন, আকাশ মালিকের উদ্ধৃত অংশে চিত্রিত সেই
“মহানেতার মহাকায় ক্রমশ খর্ব হয়ে যেতে থাকে”। ( পৃষ্টা ৫২)।
আরো গভীর আশাহতের বেদনা আর ক্ষোভ নিয়ে লিখেছেন,
“বাকশাল তৈরি করে মুজিব ধ্বংস করেন তাঁর সমস্ত অর্জন, ও নিজেকে; এবং বাঙলাদেশকে পথভ্রষ্ট করেন। আমরা যে-বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম, তা সৃষ্টি করার কথা ছিলো তাঁরই, কিন্তু তিনি তা করেন নি। তার ফলেই উদ্ভূত হয়েছে সামরিক স্বৈরশারকেরা, যারা বাঙলাদেশকে পথভ্রষ্ট করতে করতে শোচনীয় পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে”। ( পৃষ্টা ৬৯)।
পরিশেষে বলি্, “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?”(আগামী প্রকাশনী, ২০০৪) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বই। মুক্তমনাদের যারা দেশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করেন যারা, তাদের জন্য এই বইটা অবশ্যপাঠ্য।
@ইরতিশাদ ভাই,
কোন অংশগুলোর সাথে একমত নন? কি কারণে একমত নন? জানতে খুবই আগ্রহ বোধ করছি।
আজ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে একটি বইয়ের স্টলে এই বইটি চোখে পড়েছিল। এখন খুব আফসোস হচ্ছে। আপনার মন্তব্য আগে পড়ার সুযোগ পেলে বই না কিনে ফিরতাম না।
@কাজি মামুন,
এই বইটার কথা আমিও সবসময় বলি। এটা ইতিহাসের কোন রেফারেন্স হিশেবে ব্যাবহার করা যায় না অবশ্যই। কিন্তু যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের (খালেদার ২০০১ সালের সরকার পর্যন্ত) সবচেয়ে নির্মোহ সমালোচনা মনে হয় সরল ভাষায় এই বইতেই একমাত্র পাওয়া যাবে। সমালোচনা বলছি এ কারনে যে এ বইটি লেখা হয়েছে এক রাশ হতাশা থেকেই, তাই প্রাপ্তির কথা তেমন নেই।
এটা রাজনীতি সম্পর্কে যারই সামান্য উতসাহ আছে, তারই অবশ্য পাঠ্য।
@কাজি মামুন,
এখানে নয়। অন্য কোথায়ও, অন্য কোনখানে। আগে বইটা পড়ুন।
@ইরতিশাদ,
একমত। এরকম আরেকটা ঘটনার উল্লেখ করতে হয়। ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যাবে Archer K. Blood এর “The Cruel Birth of Bangladesh ” এর ৩৫৬ পৃষ্ঠায়। Blood ১৯৯৬ এ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। রেস্কোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সচিব তাঁর ভাষণে মুজিবের নামের আগে “বংগবন্ধু” না উল্লেখ করায় হাজার হাজার দর্শকের সামনে তাকে বাধ্য করা হয় ক্ষমা চাইতে এর জন্য। মুহম্মদের নামের আগে সঃ বা PBUH না করাটা যেমন ইসলামিস্টদের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ তেমন আর কি।
আরেকটি অনুরূপ ঘটনা হলে প্রাক্তন তথ্য সচিব ফজলুল করিম মুজিবকে নিয়ে একটা স্যাটায়ার লেখাতে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় ২০০৯ সালে। আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা বা জা ইচ্ছে বলা যায় (তিনি দাসদের সাথে অবৈধ সেক্স করেছিলেন এমন কথাও)। কিন্তু তার জন্য কাউকে চাকুরী হারাতে হয় না বা ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় না।
@ইরতিশাদ,
আপনাকে সাধুবাদ শেখ মুজিবের বিপরীত পাঠের জন্য। ভক্তিবাদে আর যাই হোক, ইতিহাসের নির্মোহ পাঠ চলে না। তবে মুজিব-ভক্তদের ধোলাই করা মগজে এই নিরেট সত্যের ঢেউ খেলানো মুশকিল; সমূহস্তুতি ও ভাব-বুদ্বুদই সেখানে শেষ কথা। দেবত্ব আরোপের জন্য এরা পারে না, এ হেন কর্ম নেই। হোক তা বাকশাল, অথবা নকশাল। এটিও এক ধরণের মৌলবাদ, চিন্তার গ্লুকোমা।
__________
০১. ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে ১৯৭১ এর মহান জনযুদ্ধটি মুক্তিযুদ্ধই ছিলো, এটি ছিলো ছাত্র-শিক্ষক-জনতা-সাধারণ মানুষ সকলের মুক্তির সংগ্রাম, মোটেও কেবলমাত্র স্বাধীনতার সংগ্রাম বা একখণ্ড দেশপ্রাপ্তির লড়াই তো নয়ই [এ কারণেই আদিবাসীরাও বাঙালির পাশাপাশি এতে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেন, স্বাধীন দেশে সব রকমের মুক্তির স্বপ্ন দেখেন তারাও, যদিও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তাদের সে স্বপ্ন নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, ‘তোরা সব বাঙালি হইয়া যা’ ], শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষের স্পিরিটটুকু ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়, বাঙালি ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন প্রায় কিংবদন্তীতুল্য নেতা, বঙ্গবন্ধু [এতে নিজস্বপন্থায় বিপ্লবকাঙ্খায় সরাসরি অংশ নিয়ে অবদান রাখে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন দল ও উপদল, এমকি সিরাজ সিকদার, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তাদের সকলকেই মুজিব-জিয়া স্বৈর শাসনে নির্মমভাবে খুন হতে দেখা যায়, উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রপাগান্ডায় তারা থাকেন উপেক্ষিত এবং ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’], সাতের দশকে অগ্নিগর্ভ পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ এক পর্যায়ে সমর্থক হয়ে পড়ে [স্বাধীনতার পর সেই মোহ চূর্ণ হয় অচিরেই, বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত আর বঙ্গের বন্ধু থাকেননি, নায়ক থেকে খলনায়কে তার উত্তোরণ ঘটে দ্রুত, সহযোগি ভক্তকূল তাকে সামনে রেখে সব রকম দেশবিরোধীতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও লুঠপাটে মত্ত হয়], যদিও মুক্তিযুদ্ধের নিয়ামক এই শক্তিটি এর আগে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় জোর ভূমিকা রেখেছে।
সে সময় একমাত্র বাংলা এবং পাঞ্জাব প্রদেশেই মুসলিম লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জোরেই মুসলিম লীগ পাকিস্তানের সম্বাবনা ভারতবর্ষের বাদবাকি মুসলমানদের দেখাতে সাহস করে। তখন শেখ মুজিবও সেই আন্দোলনেরই বলিষ্ঠকর্মি ছিলেন [এবং মওলানা ভাষানী]। শেখ মুজিব তখন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কর্মি ছিলেন। সোহরাওয়ার্দীদের বিরুদ্ধে ছিলেন আবুল হাশিমের মতো প্রগতিশীল তরুণ নেতা। বাংলার অখণ্ডতা ঠেকাতে আবুল হাশিম-শরত বোস প্রমুখের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৪৭-এর পর আবুল হাশিম রাজনীতিই ছেড়ে দেন। কিন্তু শেখ মুজিব টিকে থাকেন। হাশিমপন্থীরা গোপনে কমিউনিস্টদের সমর্থন দিতে থাকে আওয়ামী লীগের ভেতর। তার বাইরে স্বতন্ত্র ছাত্র-যুব সংগঠনও করতেন তারা, সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যও ছিলোন।
০২. পাক উপনিবেশটি ক্রমেই পূর্ব বাংলার হাতে-পায়ে শেকল হয়ে এঁটে বসে। পাকিস্তানে প্রথমত আঘাত হানেন তারাই, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে, এর আগে হাজং বিদ্রোহের সশস্ত্র লড়াইয়ে। ১৯৫২-র পরপরই কমিউনিষ্টরা স্পষ্ট বুঝেছিলেন পাক শাসনে মুক্তি নেই, নইলে কৃষক-শ্রমিক স্বরাজও সম্ভব নয়, বাংলাকে স্বাধীন না করলে রাষ্ট্র বিপ্লবও সম্ভব নয়। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসর কর্মি — ভাষা মতিন, অলি আহাদদের পরের কার্যক্রম দেখলে সেটা মনে হয়।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন করে বাঙালিদের সব দল এক হয়ে মুসলিম লীগকে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দেশ স্বাধীনের শর্ত তৈরী করে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নযাত্রা শুরু এরই আগেই হয়। তখন স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দুটি স্পষ্ট ধারা সমান্তরাল চলতে শুরু করে। একদিকে কমিউনিষ্ট প্রভাবিত ছাত্ররা সশস্ত্র গণযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাকে স্বাধীন করতে চান, আরেকদিকে জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থায় সাংবিধানিক পথে পূর্ণ স্বাত্তশাসনের মাধ্যমে অখণ্ড পাকিস্তানের জায়গায় ফেডারেল পাকিস্তানের স্বপ্ন। শেষোক্ত এই ধারাটিই ২১ দফার প্রবক্তা।
কিন্তু পাক সরকার ২১ দফা মানতে প্রবলভাবে অস্বীকার করে, মাওলানা ভাসানী ১৯৫৬-তে ঘোষণা করেন, এ রকম হলে বাঙালিরা আলাদা রাস্তা ধরবে, এক সঙ্গে থাকবে না। সোহরাওয়ার্দীর প্রধান অনুসারী শেখ মুজিব তার নেতার পথেই থাকেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্র্দী মত দেন, ৯৮ ভাগ স্বাধীনতা তো দেওয়াই হয়েছে।
০৩. আইয়ুব শাহী কমিউনিস্ট কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে তাদের একটি বড় অংশ মওলানা ভাষানীর সমর্থক হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। কাগমারি সম্মেলনে দলে দলে বিপ্লবী কমিউস্টরা যোগ দেন [‘পাকিস্তান, ওয়ালাইকুম আস সালামালাইকুম’]। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ভাগ হয়। মুসলিম কাম মার্কিন কাম পাকিস্তানপন্থীদের নেতা থাকেন সোহরাওয়ার্দী ও মুজিব। ভাষানী ন্যাপ গঠন করে পৃথক হন।
আওয়ামী লীগের ভেতরের কমিউনিস্টপন্থীরা তখন মস্কো-চীন দুই গ্রুপে ভাগ হয়। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় এর আগেই কমিউনিস্টদের অপর অংশটি আওয়ামী লীগে ঢুকেছিলো। মস্কোওয়ালারা চলে যায় মুজিবের সঙ্গে আর চীনারা ভাষানীর সঙ্গে।
১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়াদী গ্রেফতার হলে ৩১ জানুয়ারি ৪ টি ছাত্র সংগঠন মধুর ক্যান্টিনে যৌথভাবে বসে। সভা থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। সকল আন্দোলন কর্মসূচিকে সংগঠিতভাবে রূপ দেওয়ার জন্য ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফোরাম নামে সাধারণ ছাত্রদের একটি মোর্চা গঠন করে। এরই মধ্যে একদল জঙ্গি ছাত্র বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স নামে একটি বাহিনী তৈরি করে। ছাত্ররা তখনই বুঝেছিলো, তাদের লড়তে হবে আইয়ুব শাহীর সেনাদের সঙ্গেই। স্বাধীনতার দুই পথের পার্থক্য তখন আরো স্পষ্ট হয়।
০৪. উপমহাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতিতে ১৯৬৫-৬৬ সালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একমাত্র বাঙালিরাই বীরের মতো লড়ে পাকিস্তানের সন্মান অক্ষুন্ন রাখে। কিন্তু তারা দেখতে পায়, যুদ্ধে পূর্ব বাংলা অরক্ষিত ছিলো। সেটি বাঙালির বৈষম্যকে প্রকট করে। প্রণীত হয় ছয় দফা। যার প্রণোদনা এসেছিলো বামপন্থি শিক্ষক নাজমুল করিমের বই থেকে।
লক্ষনীয়, যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সে দ্বিজাতিত্ত্বওয়ালারাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলো, পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণ সমান নয়। এ থেকে আওয়ামী লীগ বামপন্থীদের প্রেরণায় তৈরি করলো বাঙালিদের আরেক দ্বিজাতিত্ত্ব, পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ এক জাতি নন! সে সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবসহ ৩৪জন সশস্ত্র অভুত্থানের পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হন, তারা তা অস্বীকার করেন। পূর্ব বাংলা ক্ষুব্ধ থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল মুজিব জেলে ছিলেন।
অন্যদিকে, ১৯৬৬ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক বিপ্লববের ঢেউ সারা বিশ্বে আছড়ে পড়ে। গেরিলা যুদ্ধের মহানায়ক মাওসেতুং প্রদর্শিত সশস্ত্র বিপ্লবের ঢেউ আলোড়ণ তোলে ভারত ও পূর্ব বাংলায় [ ‘মোর গাঁয়েরও সীমানায়/পাহাড়ের ওপারে/নিথীশ রাত্রির প্রতিধ্বনী শুনি/নতুন দিনের যেনো/পদধ্বনী শুনি’, ভূপেন হাজারিকা]। ভিয়েতনাম ও কিউবার সশস্ত্র গেরিলা বিপ্লবী সংগ্রামও কমিউনিস্টদের উজ্জীবীত করে [‘তোমার নাম, আমার নাম/ভিয়েতনাম! ভিয়েতনাম!’]
আরো পরে ভারতের নকশাল বাড়ি আন্দোলনের নেতা চারু মজুদারের ‘শ্রেণী শত্রু খতমের লাইন’ও এপারের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে প্রভাবিত করে [‘৭০ দশককে মুক্তির দশকে পরিনত করুন’]। এরই পথ ধরে পরে বিপ্লবকাঙ্খি চীনপন্থী কমিউনিস্টরা নিজ নিজ নেতা ও তত্ত্বের সমর্থনে সশস্ত্র হতে শুরু করেন [এবং সিরাজ সিকদার]।
[দ্রষ্টব্য: সিরাজ সিকদার: অন্য আলোয় দেখা http://www.unmochon.net/node/639 ]
এদিকে আগরতলা ষড়যন্ত্রের ক্ষোভের পথ ধরে আসে ১৯৬৯ এর গণঅভুত্থান। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার যুথবদ্ধ যে জঙ্গি আন্দোলন সে সময় হয়, তা-ই রচনা করে ১৯৭১ এর জনযুদ্ধের পটভূমি।
০৫. আরো লক্ষ্যনীয়, ১৯৫২ সালের পর তখনও শেখ মুজিব সংগ্রামের কেন্দ্রে ছিলেন না, প্রধান নেতাও ছিলেন না। ভাষানী, তোয়াহা এবং ছাত্রনেতারাই আন্দোলন চালিয়ে যান। তারা সেনা নিবাস ঘেরাও করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করেন। কিন্তু শেখ মুজিব আবারো তার অতি চেনা নির্বাচনের পথেই হাঁটলেন। তখন তার জন্য সেটিই ছিলো স্বাভাবিক ও সহজ। কারণ তিনি বিপ্লবী ছিলেন না, ভাষানী মতের তো নয়ই। ১৯৭০ এর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ন্যাপ-ভাষানী এবং প্রায় সকল কমিউনিস্ট পার্টি বর্জন করে। ভাষানীর শ্লোগান ছিলো: ভোটের আগে ভাতা চাই। কমিউনিস্ট শ্লোগান ছিলো: ভোটের বাক্সে লাথি মারো, সমাজতন্ত্র কায়েম করো। বামপন্থীদের একটা বড় অংশ এবং ছাত্ররা মিলে তখনই স্বাধীন পূর্ব বাংলার কর্মসূচি ঘোষণা করে [এবং সিরাজ শিকদার]। তারা বাহিনী গঠনের কাজে মন দেন; মুজিবের প্রস্তুতি ছিলো নির্বাচন কেন্দ্রীক।
ভাসানী ও চীনাপন্থীরাও নির্বাচন বাদ দিয়ে জনযুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের জমিন তৈরিতে ব্যস্ত হন। সে সময়, ভাষানী বা মুজিব, কে কার থেকে বেশী জনপ্রিয় তা বোঝা ছিলো মুশকিল। তবে তখন শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে কমিউনিষ্টদের সাংগঠনিকভিত্তি ছিলো দৃঢ়। কোনো জোর প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটে শেখ মুজিব নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন।
নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই উপকূলীয় অঞ্চলে বিরাট ঘূর্ণিঝড়ে কয় লাখ মানুষ মারা যায়। ভাসানী সেখানে ত্রাণ দিয়ে এসে পত্রিকায় বিবৃতি দিলেন, ‘ওরা কেউ আসেনি’ [পাক সরকার]। নির্বাচনোত্তর ক্ষমতা মুজিবের কাছে হস্তান্তর করতে পাক-সরকার কালক্ষেপন করতে থাকে। আসলে তারা সময় নিচ্ছিলো সামরিক প্রস্তুতির। ভেতরে ভেতরে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ভাষানীর জনসমর্থনও বাড়তে থাকে [‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো’]।
০৬. ১৯৭১ এর ৩ জানুয়ারি, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি আবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে গণআবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয়। এদিন সেখানে আইনসভার সকল পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যদের সভা ডাকেন শেখ মুজিব। তিনি তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান, তারা আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবিনামার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন।
১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারি- মার্চের ঘটনাবলি স্বাক্ষ্য দেয়, ফেডারেল পাকিস্তানের সম্ভাবনা বাস্তবে আর সম্ভব নয়। কিন্তু তখনো পাকিস্তানের মধ্যে ছয় দফার বাস্তবায়নের কাঁঠালের আমস্বত্তটি মুজিবের কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনাতেই অনঢ় ছিলেন। কারণ কারণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি ছিলো তার অগাধ আস্থা, নির্বাচনী রায় এবং জনগণের সমর্থনে এরচেয়ে বেশী তার কাছে আশা করাও বাতুলতা [মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন]।
তবে বাস্তবতার কঠিন জমিনে শিগগিরই তিনি নেমে আসেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, জাতীয় পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে ৩ মার্চ, ঢাকায়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভুট্টো ঘোষণা দেন, ছয় দফা জনিত সৃষ্টি জটিলতার অবসান না হলে তার দল জাতীয় পরিষদের সভায় যোগ দেবে না। ২১ ফেব্রুয়ারি মুজিব কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আবারও ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন আদায়ে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এ পর্যায়ে পাক চক্রান্ত আরো প্রকাশ্য হয়। ইয়াহিয়া মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে জেনারেলদের বৈঠক করে নিজস্ব কায়দার সঙ্কট সমাধান করতে উদ্যোগ নেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, অধিকার আদায় ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় পুর্ব পাকিস্তান দরকার হলে লড়াই করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সকল সদস্যের কাছে ঢাকা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু পরের দিন ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন।
এ হেন খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। লাখ লাখ ছাত্র-জনতা ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলস্থলে জড়ো হন। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে দাবি তোলেন, শেখ মুজিব যেনো এখনই জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। তারা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করে।
এদিকে, ছাত্রনেতারা সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। এর নেতা ছিলেন নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আসম আব্দুর রব এবং রুহুল কুদ্দুস মাখন [খলিফা চতুষ্টয়]। তারা স্বাধীনতার সংগ্রামে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৭১ সালের মার্চে এই প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রধান ধারা হয়ে ওঠে [অবশ্যই মুজিবও তার ‘নিয়মতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন’ দাবি থেকে ক্রমেই সরে আসেন, তবে এই মোহভঙ্গ হতে একটি গণহত্যার প্রয়োজন পড়ে এবং আত্নসমর্পন]। এই দাবির শক্তি ও জনসমর্থন সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিকপন্থী তো ছিলোই না, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধই ছিলো এর একমাত্র লক্ষ্য। ২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ছিলো স্বতষ্ফূর্ত হরতাল। ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকে অগনিত মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমবেত হন। সেখানে ছাত্র-জনতা জাতীয় স্বাধীনতার ধ্বনী তোলে এবং স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা দৃঢ় সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের ভিপি, ছাত্রলীগ নেতা আসম আব্দুর রব বিপুল করতালি ও গগনবিদারী জয়োধ্বনী ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন [পতাকার নকশাবিদ শিবনারায়ন দাস]।
০৭. এ ভাবেই জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন ইত্যাদির পরও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ শেষ হয়ে যায়। দেশ এগিয়ে চলে ইতিহাসের নির্ধারিত পথে– রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামে। পরের ঘটনাবলীও তাই অনিবার্যভাবে সেই সংঘাতের দিকেই ধাবিত হয়। শেষে ২৫ মার্চ রাতে জাতি মুখোমুখি হয় সামরিক জান্তার ভয়াল আক্রমনের [ওই সন্ধ্যাতেও মুজিব গোল টেবিল বৈঠক চালিয়ে গেছেন, সমঝোতার পথ]।
স্পষ্টতই তিনি ভুল পথে হেঁটেছিলেন, ওই সান্ধ্য-বৈঠক সে প্রমানই বহন করেন। মুজিব ব্যাখ্যা মতে, তিনি ভারতের কাছে যেতে চাননি [কিন্তু যেতে কী হয়নি, যেতে কী হতো না?] এবং তিনি লোকক্ষয় এড়াতে বৈঠক অব্যহত রেখেছিলেন [ কিন্তু গণহত্যা কী এড়ানো গেছে? বরং পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে লোকক্ষয় আরো কত হতো, প্রতিরোধ লড়াইটি হতো অনেক জোরদার]।
৭ মার্চ মুজিব গণসমূদ্রে উচ্চারণ করেছিলেন সেই অস্মরণীয় কাব্য ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। কিন্তু লক্ষ্যনীয়, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো/ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ো’ ছাড়া যুদ্ধের জন্য মুজিব অনুসারীদের তখনো কোনো প্রস্তুতিই ছিলো না।
নির্মোহ বিচারে ৭ মার্চের ভাষণের কাব্যময় আবেগকে মুজিব নিজেই ধারণ করেননি [মার্চের আগে তো নয়ই]। ‘যার যা কিছূ আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’ হুংকারের পর দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তিনি জনতার হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়েছেন! স্বাধীনতা সংগ্রামের এমন নেতার এ হেন নজির বিশ্বজোড়া মেলা দায়ই বটে। বিশ্বের আর কোনো নেতা যুদ্ধ ঘোষণা করে আত্মসমর্পণের জন্য ঘরে বসে থেকেছেন? নাকি তখনো তিনি পাক- প্রধামন্ত্রীত্বের খোয়াবে বিভোর ছিলেন? গুঢ় বাস্তবতা এই যে, মুজিব তখনো মার্কিনের বন্ধু ছিলেন, তাদের কাছেই সমাধান চাইছিলেন [দ্র. সম্প্রতি প্রকাশিত সিআইএ-এর নথি]। মুজিব সারা জীবন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, আলোচনা ও নির্বাচন করে এসে জনযুদ্ধের দাবি মেটাতে না পেরে কারাবরণ করেন। তার অনুসারী আওয়ামী নেতারা জাতিকে অরক্ষিত রেখে যে যেভাবে পারেন ভারতে চলে গেলেন।
মুক্তিকামী জাতি দেশেই থেকে সমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সন্তানদের পাঠিয়েছে রণাঙ্গনে। গণহত্যার পর গণহত্যা, ধর্ষনের পর ধর্ষন, জ্বলে-পুড়ে খাঁক হতে হতে পুরো জাতি তার জাতীয় নেতাকে ছাড়াই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে [যদিও লক্ষন রণনীতিতে মুক্তিযুদ্ধটি এবং স্বাধীনতার সংগ্রামটি হয়েছে শেখ মুজিবের নামেই, এর নেতৃত্বে থাকে আওয়ামীলীগ।]
[দ্রষ্টব্য: শেখ মুজিব- আহমেদ শরীফের ডায়েরী থেকে- http://www.amarblog.com/raselpervez/posts/76302%5D
০৮, [পুনর্বার, অতএব সংক্ষেপে] আমরা যারা প্রজন্ম ৭১, তারা অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই-পত্র পড়ে, চলচ্চিত্র দেখে, স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শুনে, জহির রায়হান, তারেক মাসুদ, জাহানারা ইমাম, অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস তো বটেই..[এমন কি ড. আহমদ শরীফ এবং সিরাজ সিকদার]…ইত্যাদিতে মুক্তিযুদ্ধের সব ঘটনা প্রবাহ বুঝতে চেষ্টা করি।
অনুধাবন করার চেষ্টা করি, বাঙালির গৌরবের শ্রেষ্ঠ ইতিহাসের ঘটনাটিকে অনুধাবনের জন্য এবং যুদ্ধোত্তোর বাংলাদেশ। …এই পঠন-পাঠনটিও অব্যহত থাকে এবং বিতর্ক তো বটেই।
তবে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে [ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব তো বটেই] বোধহয় নির্মোহভাবেই দেখা ভালো। এখানে আবেগতাড়িত হয়ে ভাব-বুদ্বুদে মজে গিয়ে দেবোত্ব আরোপ করার যৌক্তিকতা দেখি না। মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত এই পাঠটিকেই বরং বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া কর্তৃব্যজ্ঞান করি; কারণ শেষ পর্যন্ত এটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধই ছিলো, নিছক স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিলো না। এখানেই মুক্তি সংগ্রামের জনযুদ্ধটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে; যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও নানা মাত্রায় [চেতনা ও বিনির্মানে] অব্যহত রাখার দাবি রাখে।
এর সূচনা সাতের দশকে বাম ভাবাদর্শে সশস্ত্র পন্থায় হয়েছিলো, ১৯৭১ এ স্বাধীনতা একটি চূড়ান্তপর্ব মাত্র, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধটি শেষ হয়ে যায়নি, এটি অব্যহতভাবে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম ও চেতনাটিকে অব্যহত রাখা জরুরি; যদিও শেখ মুজিব এবং আওয়ামী অনুসারীরা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এটিকে বরাবরই স্বাধীনতার সংগ্রামেই আটকে রাখতে চেয়েছে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামটিকে তারা শেষ পর্যন্ত [এবং কি নিষ্ঠুরভাবে পরের সব কয়েকটি অধ্যায়ে] জিইয়ে রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। বাকশালী একনায়কতন্ত্র/ফ্যাসিজমের বিষবৃক্ষ মুজিব দর্শনের ঔরসজাত এই সীমাবদ্ধতারই ফল। অবশ্য আটার কলের কাছে আখের রস চেয়ে লাভ কী?
দেখতে পাই, মুক্তিযুদ্ধকে নিজস্বপন্থায় সে সময় যেসব কমিউনিস্ট পার্টি এগিয়ে নিতে চেয়েছিল [অধিকাংশই দক্ষিনপন্থা এবং চরমপন্থার ঝোঁকের কারণে শেষ পর্যন্ত হঠকারিতার চোরাবালিতে আটকে যায়, নকশালী কায়দায় আত্নঘাতিতায় নিক্ষিপ্ত হয়], পুরো সাতের দশক ধরে মওলানা ভাসানী তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়/সমর্থন দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন, অতি গুঢ় বাস্তবতা অনুভব করেই [‘আবার পাইপগান/এতো বেশী গরম হয়ে আসে যে/ক্রমশ এর ব্যবহার কমে আসছে’: সুবিমল মিশ্র]।
তাই আমাদের দেখার চোখটি যেনো সাদাকালো হয়, পরিশেষে এ আহ্বান জানাই। বিতর্ক চলুক। (Y)
@ইরতিশাদ,
অমর একুশের গানটির রচয়িতা হিসেবে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর জন্য অনেক শ্রদ্ধা জমা হয়ে ছিল। পরবর্তীতে যখন তার লেখা পড়তে শুরু করলাম, তাকে একজন ‘দলকানা’ কলাম লেখক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নি। আসলে তার মতো বুদ্ধিজীবিরা দল ও নেতাকে ছাপিয়ে দেশ ও দশের মঙ্গল দর্শনে অক্ষম। ধন্যবাদ আপনার ভারসাম্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য। আপনার মত লেখকদের কাছ থেকেই নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশীরা ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ আশা করে, ফসিলায়িত বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে নয়।
সফল নেতা ব্যার্থ নেতা দুনিয়ায় বহু শত আছে, আরো অনেকে আসবে। এর মাঝে অভিনবত্বের কিছু নেই।
কিন্তু বাংগালী জাতির মত এক শত আদর্শে বিভক্ত জাতিকে এক সুতোয় নাচিয়ে এক অসম সমীকরন মিথ্যা প্রমান করে স্বাধীনতা আনতে পারার মত নেতা হাজার বছরে খুব বেশী আসে না। বংগবন্ধুর বিশেষত্ব এখানেই। ‘৭২ পরবর্তি বংগবন্ধু সরকারের বহু সমালোচনাই করা যায়, তারপরেও সত্য হল এই লোকের আবির্ভাব ছাড়া বাংলার স্বাধীনতা অত তাড়াতাড়ি আসত না, অপেক্ষা করতে হত আরো বহুদিন। নেতা হয়ত আরো আসলেও পারত; তেমনি চলেও যেতে হত বেলুচিস্তানের বুগতি বা তামিল নেতা প্রভাকরনের মত।
যারা এটা বুঝেও না বোঝার ভান করেন, বংগবন্ধুর একটি মাত্র অবদান দেখানোর চ্যালেঞ্জ দেন তাদের সাথে বাক্যালাপ সময়ের অপচয় মাত্র। বংগবন্ধুর বহু সমালোচনা আমি খোলা মনে করতে পারি, কারন আমি বংগবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি, পূজো করি না। সমালোচনার দরকার আছে কারন বংগবন্ধু অনেক বড়, দেশ তার চাইতেও বড়। তবে স্বাধীনতা এনে দেবার কারনে বংগবন্ধুর পাদুকা মাথায় করে ঢাকা শহর প্রদক্ষিনের সুযোগ পেলেও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।
@আদিল মাহমুদ,
আর আমি মুক্তমনাকে ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি এই কারণে যে, মুক্তমনা এই স্পিরিটটি ভীষণভাবে ধারণ করে না শুধু, লালনও করে। মুক্তমনাতেই দেখেছি গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, মাদার তেরেসা, বিবেকানন্দ, বুদ্ধসহ আরো অনেক ব্যক্তিকে নিয়ে কি নির্মোহ আলোচনা হয়েছে। চেতনার রুদ্ধ কপাট খুলে বেরুতে হলে, আমাদের সমস্ত গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাতেই হবে।
বিজয়ের দিবসের শুভেচ্ছা, আদিল ভাই। (FF) (FF) (FF)
@কাজি মামুন,
কোন একজন নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে হাজার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেখানে তার কোন ভুল হবে না (ইচ্ছেকৃত/অনিচ্ছেকৃত) এমন সম্ভাবনা যুক্তির চোখে শূন্য। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যখন হবে তখন সমালোচনার কথাও চলে আসবে।
এজন্যই মুক্তমনার আকর্ষন আলাদা; নবী রসূল জাতীয় ধর্মগুরু, কিংবদংন্তির নেতা, কবি সাহিত্যিক কেউই এখানে পুজো পায় না, শ্রদ্ধা পেতে পারে তবে সাথে যা সমালোচনা পাবার সেটাও পায়, অন্তত যুক্তিপূর্ন উপায়ে শ্রদ্ধা সমালোচনা দুটোরই পথ খোলা রাখে।
আপনাকেও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
@আদিল মাহমুদ,
(Y) (Y)
@আদিল মাহমুদ,
এগুলো ভাবাবেগ তাড়িত কথা। “মহান” “সর্বকালের শ্রেষ্ঠ”, “কখনো আসেনি/আসবেনা” এধরনের আবেগী কথা যুক্তিবাদী মানসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। যে কোন মানদন্ডের বিচারে কাউকে উচুতে বা নীচুতে আপেক্ষিক স্থান দেয়া যায় (Ranking) । মাইকেল হার্ট পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী (মানুষকে প্রভাবিত করার) মানদন্ডে ১০০ জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মুহম্মদকে এক নম্বরে আর হিটলারকে ৩৯ নম্বরে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মুহম্মদকে সর্বশ্রেষ্ঠ বা সবচেয়ে মহান মানুষ বলেন নি। হিটলারকেও ৩৯তম মহান ব্যক্তি বলেন নি। মুজিব অবশ্যই এক প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু এটা বোঝা উচিত যে যে কোন দেশ বা সমাজের কোন নেতার প্রভাব বা প্রতিপত্তি সেই সমাজের plebian দের চরিত্রেরই প্রতিফলন। মুজিবের বাংলাদেশে প্রভাবশালী নেতা হয়েছিলেন কারণ বাংলাদেশের plebian মুজিবের মত Demogogue, Haranguer (বাংলা করতে পারছি না) এর দ্বারাই চালিত হতে চায়। Demogogue, Haranguer খারাপ কিছু নয়, এটা একটা ধর্ম বা গুণ। এটার দ্বারা আবেগপ্রবণ জনতাকে সহজেই চালিত করা যায়। বাংলাদেশ ও মুজিব এর ক্ষেত্রে এই দ্বৈতের মিলন ঘটেছিল। গান্ধীর মত নেতা ভারতের জন মানসের কারণেই মহৎ । গান্ধী বাংলাদেশে মহান নেতা হতে পারতেন না। আবার মুজিবও ভারতের জন্য মহান নেতা হতে পারতেন না। তার সাথে এক ঐতিহাসিক সুযোগও দরকার। যেটা দিয়েছিল ভুট্টো, আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে গ্রহণ করে তার নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করায়। আওয়ামী লীগকে ভুট্টো মেনে নিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সেই ঐতিহাসিক সু্যোগ আসত না। ১৯৭১ এর মার্চ এর ঘটনাবলী স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জনগণের মনে স্বাধীনতার ইচ্ছা সৃষ্টি করেছিল। সেটা মুজিবের অনন্য কোন কৃতিত্ব ছিল না। ঐ সময়ে মুজিবই বরং ঢেউয়ের ধাক্কায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন, নিজের তাড়নায় শুধু নয়। এর পূর্বে যখন মুজিব স্বাধীনতার কথা তখনও চিন্তা করেননি সেই সময়ে অলী আহাদের বাংলা ন্যাশনাল লীগ ৭ই মার্চে স্বাধীনতার সরকারী ঘোষণার দাবী করেছিল মুজিবের কাছে, যেটা মুজিব করেননি, করলে ৭ই মার্চেই ঝাপিয়ে পড়ত পাক সেনারা। কজেই মুজিব স্বাধীনতা “এনে দিয়েছিলেন” এটা একটা খুবই সাধারণীকৃত এবং আবেগী কথা। স্বাধীনতা অনেক গুলি ফ্যাক্টরের সম্মিলনের (conflation) পরিণতি।
বাংলাদেশের জন্য মুজিবের অবদানের প্রশ্ন যখন তোলা হয় তখন আবশ্যই তা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশকে বুঝতে হবে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ ছিল না, পূর্ব পাকিস্তান ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবের অবদান আর স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিবের অবদান দুটি ভিন্ন ব্যাপার । পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালীদের অধিকারের আদায়ে মুজিবের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মুজিব অনন্য ছিলেন না। অনেকের নাম করা যায়। মুজিবের আগে এবং মুজিবের সাথে অনেকে জেলও খেটেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে মুজিবের চেয়ে ভাষানীই বরং সোচ্চার এবং স্পষ্ট ছিলেন বরাবর। কিন্তু উপরে বর্ণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই সবাইকে ছাড়িয়ে মুজিবই লাইমলাইটে চলে আসেন, বিশেষ করে ষাটের দশকে। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের তালিকাটা প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদনান কুরুচিপূর্ণভাবে মুজিবের নাম উল্লেখ করার কারণে মুজিবের অবদান বলতে যে উনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে অবদানের কথা বুঝিয়েছেন বলে পরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আমলে নিচ্ছে না কেউ এখন। মুজিব তাঁর দলকে বাচাতেই পুরো সময় ও শ্রম ব্যয় করেছিলেন। তার অফিস কক্ষে ও বাসায় সারাদিন দলের লোকজন ও তাদের সমস্যা বিবাদ মেটাতে ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনাতেই যেত। দেশ মানে তো তাঁর কাছে আওয়ামী লীগ ও তিনি নিজে। তাই “বাংলাদেশের” না বলে বলতেন “আমার”, “আমাদের”। যাইহোক দেশের নেতা যেই হোন না কেন কিছু কিছু রুটিন কাজ সিস্টেমিক কারণেই নিজের গতিতে ঘটে সব সরকারের আমলেই। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা vision এর কারণে নয়। অবশ্য জুয়া নিষিদ্ধ করা, OIC তে যোগ দেয়া ইত্যাদি, এগুলি ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা vision এর কারণে করা।
@কালযাত্রী,
কোন সময় কি সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটা বুঝতে পারাই একজন বিচক্ষন নেতার কৃতিত্ব। ভাষানী, অলি আহাদের মত যাদের নাম মুজিবের প্যারালাল হিশেবে অনেকে আনতে চান তাদের বোঝা দরকার যে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হিশেবে মুজিবের সাথে বুগতি বা প্রভাকরনের পার্থক্য কোথায়। মুজিবের বিচক্ষনতার কারনেই স্বাধীন বাংলার আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়নি। হূট করে মাঠেঘাটে আমি স্বাধীনতা ঘোষনা করলাম ঘোষনা দিলেই স্বাধীনতা আসে না।
ভাষানীর রাজনৈতিক জীবন বেশ কনফ্লিক্টিং। মুজিবের যায়গায় উনি স্বাধীনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলে কি হতে পারত সেটা হাইপোথিটিক্যাল হলেও আন্দাজ করা এমন কঠিন নয়। ওনার রাজনৈতিক আদর্শ ছিল রোলার কোষ্টারের মত। কখনো লাকুক দ্বিনুকুম বলে পাকিস্তানীদের বিদায় জানান, আবার কখনো অখন্ড পাকিস্তান রক্ষায় উদ্বিগ্ন হন। উনি আইয়ুব প্রেমে এক সময় মগ্ন ছিলেন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এড়িয়ে গেছেন চীনের প্রতি কমিটমেন্টের কারনে, ‘৭০ এর গন জাগরনের সময় ওনার হঠাত গ্রামে গ্রামে চোর ডাকার ঠ্যাঙ্গানো বড় কাজ বলে মনে হয়, নির্বাচন মনে হয় তুচ্ছ প্রহসন মাত্র। মুজিব সিআইএর দালাল তার লিখিত দলিল তার কাছে আছে দাবী করেও কোন কিছু দেখাতে ব্যার্থ হন। তার মতে ছয় দফা ছিল সিআইএর চাল। তার এসব নাটকীয় ক্যারিকেচারে বিরক্ত হয়ে ‘৭১ এর প্রথমেই তার দল থেকে আবদুল হক, তোয়াহা, হাজী দানেশসহ বহু নেতা চলে যান। ৮২৯ জন নেতা তার নিন্দা করে বিবৃতি দেন।
৭০ এর নির্বাচন বর্জন করে উনি তখন বাম ধারা থেকে হঠাত ইসলামী আদর্শে মজে ওঠেন। স্বাধীন বাংলার প্রকৃত রূপকার বলে অনেকে আজকে যাকে দাবী করেন সেই ভাসানী ‘৭১ এর ১৪ই ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব খর্ব হলে ভূট্টো মুজিব কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়ে হাঁসির খোরাক জোটান। ‘৭০ এর ডিসেম্বরে নির্বাচন বর্জন করে উনি টিভিতে ঘোষনা দেন, Even if there are thousands of difference among us; all should love Pakistan….The name of this country is Pakistan, there is no such country any where in the world.
এরপর যখন দেখেন যে মুজিব নিরংস্কুশ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবার পথ হচ্ছে তখন আবারো তিনি বাংগালী জাতীয়তাবোধের ধারায় ফিরে আসেন। ১৭ই মার্চ বংগবন্ধুর জন্মদিনে তিনি ঘোষনা দেন, ” শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন…এ ধরনের ঘোষনা সম্পর্কে জনগনের মধ্যে কোনরুপ মতানৈক্য থাকতে পারে না”। বংগবন্ধুর সাথে মিলে তিনি তুমুল আন্দোলন শুরু করবেন এমন ঘোষনাও দেন, মুজিবকে তিনি পূর্ন বিশ্বাস করেন এমন আশ্বাসও দেন (সিআইএর সেই দলিলের কথা বেমালুম ভুলে যান)। আর আজ সেই ভাসানীকে দাঁড় করানো হয় মুজিবের বিপরীতে, ননসেন্সের সীমা থাকা উচিত না?
অলি আহাদ বা তার জাতীয় লীগ সেসময় কোন গুরুত্বপূর্ন দল ছিল না। সেই অলি আহাদও ৭ই মার্চের পর মুজিবের নির্দেশমতই আন্দোলন চালিয়ে যাবার অংগীকার ব্যাক্ত করেন। এখন তিনিও বংগবন্ধুর চাইতে বড় নেতা, স্বাধীনতায় বেশী অবদান রাখা ব্যাক্তিত্ব।
– এটা আপনার মূল্যায়ন। আমার মূল্যায়ন ৭ই মার্চের ঘোষনা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হত না। এটা জিয়া, শওকত আলীর মত বিএনপি পন্থী বীর মুক্তিযোদ্ধারাও স্বীকার করে গেছেন। স্বাধীনতার পর জন্ম হওয়া আমি কোথাকার আঁতেল তাদের আবেগ অনুভূতি, দেখা বাস্তবতা অস্বীকার করি? মুক্তিযুদ্ধের সময় আর কোন নেতার নামে মুক্তিযোদ্ধারা শ্লোগান দিয়েছিল, গান বেধেছিল? তাদের দূর্ভাগ্য আপনাদের মত তাত্ত্বিকদের পাল্লায় পড়ে মুজিব ছাড়াও আরো বড় বড় নেতাদের সন্ধান তারা পাননি।
স্বতস্ফূরতভাবে জনতা মুক্তিযুদ্ধের মত এমন বড় কোন অসম সমীকরনে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। তেমন স্বতস্ফূর্তভাবে বড় কিছু হয় না। এরশাদ দীর্ঘ ৮ বছর কোন রকম জনসমর্থন ছাড়াই দেশ শাসন করেছে, জনতা ছিল সম্পূর্ন তার বিরোধী, কিভাবে পেরেছিল? জনতা তো স্বতস্ফূর্তভাবে তার বিরোধীই ছিল। পেরেছিল কেবলমাত্র নেতৃত্বের অভাবে। নেতৃত্ব যখন দৃঢ়ভাবে ঐক্য গড়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলল তখনই সে পালাতে বাধ্য হল। তেমন না হলে সে মৃত্যু পর্যনতি স্বতস্ফূর্তভাবেই শাসন করে যেত, স্বতস্ফূর্ত জনতাও স্বতস্ফুর্তভাবেই তাকে গালি দিয়েও তার শাসনই মেনে নিত।
আপনার আদনান চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন বংগবন্ধুর একটি কোন অবদান তাকে দেখাতে, বংগবন্ধুর ‘৭১ পরবর্তি কাজের সমালোনায় তিনি সীমাবদ্ধ থাকেননি সেটা আপনি দেখেননি? আপনার আদনান ‘৭২ পরবর্তি কাজ কারবার টানলে আমি সময় নষ্ট করতাম না।
বংগবন্ধুর ‘৭২ পরবর্তি অনেক বিতর্কিত কাজ কারবার নিয়ে অনেক সমালোচনাই করা যায় তাই বলে অবদান শূন্য এমন মূল্যায়ন হল বিদ্বেষীর মূল্যায়ন। একটা যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত দেশকে শূন্য থেকে টেনে তোলা কারো পক্ষেই সহজ কাজ ছিল না। অবদানের কথা বলা যায়, তবে লাভ হবে না, আপনারা বলবেন যে এতে মুজিবের কোন কৃতিত্ব নেই, তার অধীনস্ত সরকারী অফিসারদের অবদানই বেশী…
উনি যেসব বিষয়ে জেনুইন সমালোচনা কামান সেসব আসলে বাংগালী চরিত্রের ট্রেডমার্ক বলা যায়, যেমন স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি এসব।
একটা অফটপিক কথা, আপনাকে এখানে তেমন দেখি না, মুজিব বিষয়ে কোন রকম সমালোচনা হলেই দেখি উতসাহের সাথে চলে আসেন, ব্যাপারটা কি? জবাব নাও দিতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
ব্লগার ‘কালযাত্রীর’ সাথে হয়তো শেখ সাহেবের এক গুরুত্বপূর্ন এবং বিশেষ ‘ঐতিহাসিক সম্পর্ক’ আছে যা আপনি জানেন না । সেটা জানলে এই প্রশ্নটাই হয়তো করতেন না।
@কালযাত্রী,
প্রচন্ড হতাশ। আপনার লেখার টোন বলে দিচ্ছে, আপনি নতুন প্রজন্মের কেউ হবেন। আর এজন্যই হতাশা আরও বেশি।
এতো মস্ত বড় কথা। এ ধরনের কথা বলার আগে পাঠকদের সুবিধার্থে ‘ভারতীয় জন মানসে’র সামান্য ব্যাখ্যা করে নেয়া উচিত ছিল না কি? বা, ভারতীয় জনমানসের সাথে বাংলাদেশের জনমানসের পার্থক্য? দেখুন, আমি বিশ্লেষক নই, তবু আমার সাদা চোখে মনে হয়, ভারত ও বাংলাদেশের জনমানসের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। আমরা শুধু একই ধরনের ভৌগলিক অবস্থান বা সংস্কৃতি শেয়ার করি না, আমাদের রয়েছে যৌথ ইতিহাসও। আপনি জানেন হয়ত, মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় যখন পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন, তখন যে সমাবেশটিতে ভাষন রাখেন, লোকসমাগমের দিক থেকে তা ভারতের সবচেয়ে বড় একটি সমাবেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
আপনি বঙ্গানুবাদ দিলেন না কেন বুঝতে পারলাম না। সবাই যে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হবে, এমন তো নয়। তাছাড়া, আপনি শংকায় ভুগবেন, তাও তো অনুমান করতে পারছি না।
একটি ডিকশনারিতে লিখেছেঃ Demogogue এমন একজন রাজনৈতিক নেতা যিনি ক্ষমতা লাভ করেন ” by appealing to people’s emotions, instincts, and prejudices in a way that is considered manipulative and dangerous”। প্রশ্ন হল, মুজিবের ভিতর কি ম্যানিপুলেশন বা ডেঞ্জার দেখতে পেলেন, তা পাঠককে জানানো উচিত ছিল না কি?
তাছাড়া, ডিকশনারি অনুযায়ী Haranguer বলতে এমন ব্যাক্তিতে বোঝায় যে জোরপূর্বক কাউকে কোন কাজ করতে প্ররোচিত করে। তো আপনি মুজিবের ভিতর এমন কি প্ররোচনামূলক কাজ দেখেছেন, দয়া করা জানাবেন প্লিজ? খালি দুটো শব্দ দিয়ে দায়িত্ব সারলে আমাদের মত আমজনতা কি করে বুঝবে, বলুন তো ?
তাহলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা ঐতিহাসিক সুযোগ? বিজয় দিবসের দিনে এও শুনতে হল আমাদের? সত্যি বলতে কি, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে! মুজিবকে এক হাত নিতে গিয়ে কখন যে বাংলাদেশকেই ফেলে দিয়েছেন, খেয়াল করেননি হয়ত! অবশ্য এ কাজ স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি বহু বছর ধরেই করছে।
তো মুজিব শুধু স্বাধীনতার চিন্তা করলেন যখন আমাদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে পাকিস্তান ২৫শে মার্চের ক্র্যাক ডাউন করল? সামান্য ইতিহাস চর্চা আপনার জন্য ফরয হয়ে গেছে মনে হয়। তা করলে বুঝতেন, কেন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল, কেন ছয় দফাকে বাঙ্গালির মুক্তির সনদ বলা হয়।
ও আছা, এবার আপনার পক্ষটি স্পষ্ট হল। আর সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত নির্মোহ দৃষ্টিটিও ঝুলে পড়ল ষোল আনা। তো এই অধিক সোচ্চার কার্যের কিছু নমুনা দিন না। আমজনতা উপকৃত হবে।
আপনি তো স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবেই তাকে শূন্যের খাতায় ফেলে দিয়েছেন, তাই রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবদানও যে কোন মার্ক পাবে না, তা আশানুরূপ ছিল।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আপনার মোলায়েম ভাষার হিম শীতল মন্তব্যটিকেই বরং বেশি বিপদজনক মনে হয়েছে। যাক, আর কিছু না বলি।
মুজিব ৭ই মার্চের ভাষনে বলেছিলেন, ‘আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না।’ তো আপনার কি মনে হয়, উনি খুব স্বার্থপর ছিলেন, তাই না? আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না, শুধু এইটুকু যোগ করব, মুজিব ঐ সময় ঐভাবে কথা বলতে পারতেন। কারণ সারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মত জনসমর্থন তিনি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন। মুজিবের হাজারো দোষ-ত্রুটি আছে, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বা স্বাধীনতার আগেও, কিন্তু তবু পুরো বাংলাদেশকে তার বুকে ধারণ করেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ সময়টিতে, আর এই সত্যটুকু মেনে নেয়া যায় নির্মোহতার শর্ত মেনেই।
@কাজি মামুন,
” মুজিবকে এক হাত নিতে গিয়ে কখন যে বাংলাদেশকেই ফেলে দিয়েছেন, খেয়াল করেননি হয়ত!” . প্রতিদিন যখন বারবার বিভিন্ন খানে বলা হয় মুজিব বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তখন এই দেশের প্রতি কি তীব্রতম ভয়াবহ অপমান করা হয় সেটি কি কখনো বুঝেছেন? এই কথার বিরুদ্ধে কখনো প্রতিবাদ করেছেন। মুজিব না এলে এই দেশের লোকেরা পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মতো পৃথিবীর উদ্ভটতম রাষ্ট্রের মধ্যেই থেকে যেতো, এই চিন্তা বাংলাদেশের মানুষকে কতটা ক্ষুদ্র করে এই উপলদ্ধি কি কখনো আপনার হয়েছে? আপনার সেই সব প্রতিবাদের অনুলিপি আশা করছি।
‘তুমি না এলে এই দুনিয়ায়—
আধারে ডুবে যেতো সবই– ।
@সফিক,
না, প্রতিবাদ করিনি। কারণ এ কথায় আমি কোন অন্যায় দেখি না। আপনি দেখছি, কথার যে বিভিন্ন অর্থ হয়, তাও জানেন না। বাচ্চাদের মত কথার আক্ষরিক অর্থ নিয়ে আমি অন্তত কনফিউজড হই না। তবে অনেক স্বাধীনতা বিরোধী যে ইচ্ছা করেই বাচ্চা সাজে আর কথার আক্ষরিক অর্থ নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত থাকে- এ তো কোন নতুন ব্যাপার নয়। তাদের আসল উদ্দেশ্য হল, জাতিকে কনফিউজ করা।
একটা উদাহরণ দেই, যখন বাংলাদেশ সাকিবের দুর্দান্ত ইনিংসে বা বোলিং স্প্লেলে জয় পায়, তখন সবাই বলে, সাকিব বাংলাদেশকে জিতিয়েছে। অথচ দলে অন্য আরো প্লেয়ার ছিল, যারাও ছোট-বড় ইনিংস খেলেছে, যাদের সাপোর্ট ছাড়া সাকিবের পক্ষে অত বড় ইনিংস বা সার্থক স্পেল খেলা সম্ভব হত না। কিন্তু তবু বাংলাদেশের জনগণ এভাবেই বলে। সত্য বলতে কি, সারা দুনিয়ার জনতাই এমনি করেই বলে। গান্ধিকে নিয়ে বলে, ওয়াশিংটনকে নিয়ে বলে, এমনকি পাকিস্তানিরা কায়েদে আজমকে নিয়ে বলে। আর জনগণ যখন এমনি বলে, তখন কিন্তু তারা কখনোই মনে এই ইতরামি স্থান দেয় না যে, সাকিব, মুজিব, গান্ধী, ওয়াশিংটন – একাই সব করেছে। এমনটা যারা ভাবে, হয় তারা মানসিক অপুষ্টির শিকার অথবা কোন মতলব আছে বুঝতে হবে।
আর শেখ মুজিব যে সাকিব-মার্কা মারাত্মক ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ময়দানে, তা তো মুজিব সমালোচক হুমায়ুন আজাদের উপরের উদ্ধৃতিতেই স্পষ্ট। আমার মত আম-কাঠাল জনতা এখানে মত নাই বা রাখলাম।
@কাজি মামুন,গান্ধী -ওয়াশিংটন ভারত-আমেরিকার স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এই কথা কোথায় পেয়েছেন দেখান। ওয়াশিংটন একাই আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং গনতন্ত্র সুসংহত করতে যতটা অবদান রেখেছেন তা দশজন মুজিবের পক্ষেও সম্ভব হতো না। তারপরেও আপনি আমাকে দেখান যে কোথায় ইতিহাসবিদরা উচ্ছাসে ভেসে বলছেন যে ওয়াশিংটন আমেরিকার স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন? বাইরের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য তম জ্ঞান থাকলে জানতেন যে মহামানবকে নিয়ে অতিউচ্ছাস বাংলা-পাকিস্তানের মতো দেশের লোকদেরই বৈশিষ্ট্য।
আপনি দয়া করে আপনার ইতিহাস জ্ঞানের প্রমান দিন এটা দেখিয়ে যে কোনখানে ওয়াশিংটন, লিংকনের মতো দিকপাল নেতার আলোচনায় ইতিহাসবিদরা আবেগে ভেসে গেছে।
@সফিক,
আমাদের সংস্কৃতির সাথে পশ্চীমা সংস্কৃতির তফাত কিন্তু মনে রাখতে হবে। আমরা ব্যাক্তি বন্দনা বা পূজোয় যেভাবে অভ্যস্ত ওরা সেভাবে অভ্যস্ত নয়। আমরা ছোটবেলা থেকে স্কুলে শিখে আসি আমাদের দেশের মত সবুজ নাকি আর কোথায়ও নাই, সকল দেশের চাইতে সেরা দেশটি আমাদের ইত্যাদী। সামান্য বড় হলে সে সেরা দেশ ছাড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ি, বিদেশ পাড়ি দিয়েও স্বভাব যায় না, বিদেশে পড়ে থাকি শুধু টাকা পয়সার কারনে, মন পড়ে থাকে আমার দরিদ্র বাংলা মায়ের কোলে এসব বলে দূঃখ বিলাসে অপরিসীম সুখ পাই। এসব আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ।
বংগবন্ধুকে নিয়ে অতি উচ্ছাস, বংগবন্ধু বা জাতির জনক না বললে গালিগালাজ বা ছাগু ডাকা এসব অতিমাত্রা্র সংবেদনশীলতা শুধু অভব্যই নয়, রীতিমত হাস্যকরও লাগে। আর্চার ব্লাডের সাথে যা করা হয়েছিল তাতে জাতি হিশেবেই আমাদের অবস্থান নামিয়েছে। তবে এখানেও কিছুটা বলতে হয় যে এই অতিমাত্রার সংবেদনশীলতার দায় অন্ধ বংগবন্ধু বিদ্বেষীদের ওপরেও বেশ কিছুটা পড়ে। তারা যেভাবে ‘৭৫ এর পর এক তরফা বংগবন্ধুর কেবল মন্দ দিকগুলি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেছে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে তার পালটা প্রতিক্রিয়ায় এইসব অতিমাত্রায় সংবেদনশীলতা এসে গেছে, যদিও আমরা জাতি হিসেবেই এমন স্বভাবের।
ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আমেরিকান মুক্তিযুদ্ধ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নেতার ভূমিকা কিন্তু এক করে দেখাও ঠিক না। সামান্য ভেতরে গেলে কিন্তু দেখা যায় যে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বংগবন্ধুকে এক ধরনের প্রেরনার উতস হিশেবে সে সময় দেখে উদ্দীপনা পেয়েছে। সেটা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা সবার জন্যই খাটে। আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধে কিন্তু ব্যাক্তি জর্জ ওয়াশিংটনের এরকম প্রভাবের ভূমিকা ছিল না।
আমেরিকায় বয়া ভারতে জর্জ ওয়াশিংটনের বয়া গান্ধীর কোন অবদান নাই এমন ইতিহাস সরকারী প্রচারনায় বছরের পর বছর চালু থাকলে সেখানেও পরিস্থিতি এতটা সহজন স্বাচ্ছন্দ্য নাও হতে পারত। ভারতে কিন্তু গান্ধীকে নিয়েও অনেকের নবী রসূলের মত ন্যাকামি করার স্বভাব আছে।
এই অন্ধবিদ্বেষ এবং অন্ধপ্রেমের আবর্তে পড়ে সূস্থ সমালোচনার সামগ্রিক পরিবেশই বলতে গেলে দেশে নেই। বংগবন্ধুর মত এত বড় মাপের নেতার নিরপেক্ষ জীবনালেখখ্য থেকে নেওয়ার ছিল অনেক শিক্ষা যা থেকে জাতির অনেক উপকার হতে পারত। দূঃখজনকভাবে এর কিছুই নিকট ভবিষ্যতেও হবার নয়। সূস্থ ইতিহাস চর্চার মত যোগ্য জাতি আমরা নই।
@আদিল মাহমুদ,আমি জানি আপনিও জানেন যে আমাদের সংষ্কৃতি-পশ্চিমা সংষ্কৃতি এসব সব বাজে কথা, সোজা ভাষায় পিছিয়ে থাকা সংষ্কৃতি আর এগিয়ে থাকা সংষ্কৃতি। আজকে আমেরিকা- ইউরোপে যে সংষ্কৃতি চলছে ৩০-৫০ বছর পরে আমাদের দেশেও সেই একই সংষ্কৃতিই চলবে। গনতন্ত্র, বিজ্ঞান, শিল্পকারখানার মতো মুক্তচিন্তাও আমাদের শিখতে হবে পশ্চিম থেকেই।
৩০-৪০ বছর পশ্চিমে থাকার পরও যখন আকাশ মালিকের মতো লেখকেরা নুন্যতম মুক্তচিন্তা আয়ত্ব করতে শেখেন না তখন তার বিপরীতে একটু অশ্লীল আক্রমন করতেই হয়। কোনো লেখার শিরোনামই যখন হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের অপর নাম শেখ মুজিব’, তখন সেই লোকের প্রকৃত দেশপ্রেম কতটুকু সেটা প্রশ্নকরা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই একটি শিরোনাম দেশের জন্যে কতো অপমানের এটা বোঝার ক্ষমতা কি তাদের আছে?
@সফিক,
:)) , সর্বদা সত্য কথা বলতে হয় না। তবে এই এগিয়ে থাকা পিছিয়ে থাকার ব্যাপারটা বাদ দিলেও কিন্তু তফাতটা এড়ানো যায় না, তফাতটা দিনের আলোর মতই সত্য। আমাদের অঞ্চলে এই অন্ধ ব্যাক্তি পূজোর কালচার ঠিক কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হল সেটা ভাল গবেষনার বিষয় হতে পারে। আমার ধারনা দীর্ঘকালের রাজতন্ত্র ও ধর্মকেন্দ্রিক সংস্কৃতির উপজাত এটা। রাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র দুটোই যুক্তিবাদী হতে, অন্ধ ব্যাক্তি পূজো করতে বাধ্য করে। এর সুদুর প্রসারী ফল থেকে যেতে বাধ্য। ভারতের দিকে তাকালেও এমনই মনে হয়।
আমার মনে হয় না মাত্র ৩০-৫০ বছরেও এই সংস্কৃতির নাটকীয় কোন পরিবর্তন হবে।
শুধু বিদেশে ৫০ বছর থাকা দিয়েই কি মুক্তচিন্তা শেখা যায়? নিজেকে নিজের পরিচিত ক্ষুদ্র গন্ডির মাঝে আবদ্ধ করার প্রবনতা থেকে থাকলে ৫০ বছর থাকায় কি এসে যায়? এমনকি পশ্চীমে জন্ম, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেও ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তন হলে লোকের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আসতে পারে।
@সফিক,
করেন, প্রাণ ভরে অশ্লীল আক্রমন করেন। য়ামার মুখ হয়তো বন্ধ করে দিতে পারবেন, কিন্তু সত্যি কি কোনদিন শেখ মুজিবকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারবেন? তাই যতদিন বেঁচে আছি, বছর ঘুরে যতবার ৭মার্চ, ২৫ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আসবে ততদিন মুজিবকে নিয়ে সাধ্যমত দু-চারটা কথা বলার চেষ্টা করবো, তাতে আপনি যতই বিরক্ত হোন, আমার কিছু করার নেই।
এটাই কি আপনাকে অনুপ্রাণীত করলো আমাকে অশ্লীল আক্রমন করার জন্যে? লেখার প্রথম লাইনেই বলেছিলাম শিরোনামটি নেয়া হয়েছে একজন লেখকের লেখা থেকে।
আমি কি ভুল বুঝলাম? এর পর বলা হয়েছে-
কথাগুলো আমার নয়, হুমায়ুন আজাদের।
@আকাশ মালিক,তাহলে আমি বলবো হুমায়ুন আজাদও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের অতিআবেগ আর অতিকথনের বৃত্তের বাইরে বের হতে পারেন নি। কবিতার উপমা আর বিশ্লেষনী লেখার পার্থক্য করতে সক্ষম হননি।
শুনুন আকাশ মালিক ভাই। আমি ৮৫-৮৬ সাল থেকে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই দেশের রাজনৈতিক লেখা নিয়মিত ফলো করে আসছি। আমি কখনো ফিল করি নি যে শেখ মুজিব কে নিয়ে আবেগপূর্ন প্রশংসামূলক লেখার কোনো অভাব হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভালো-খারাপ অনেক লেখাই বেড়িয়েছে এমনকি এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময়েও। তার পক্ষেও প্রচুর লেখা বেড়িয়েছে। আপনার মতো অজস্র লেখা বেড়িয়েছে মহামানব মুজিবকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তো সকাল বিকাল কোরান হাদিস তেলাওয়াতের মতো মুজিববাণী প্রচার শুরু হয়। সত্যি কথা বলুন তো এই ২৫ বছরে দেশের মানুষের মাঝে মুজিবের অবস্থার কি পরিবর্তন হয়েছে? মুজিব এখনো আওয়ামী লীগেরই রয়ে গেছে। আগামী বার যদি আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে তখন ক্ষমতায় আসা মাত্র সারা দেশে মুজিবকে অপমানের বন্যা বয়ে যাবে। আপনার কি মনে হয় এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে দেশের মানুষ ফেটে পড়বে?
যত উপরে তুলবেন তত নীচে নামানোর লোকের অভাব কখনো হবে না। এখনো কি সময় হয় নি অতিআবেগের অতিশয়োক্তি বাদ দিয়ে পরিমিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি এবং সবচেয়ে বড়ো নেতার কর্ম ও জীবন নিয়ে আলোচনা করার। মুজিবকে নিয়ে প্রতিটি লেখাই একএকটি ‘বিষাদ সিন্ধু’ হতে হবে এই চিন্তা করলে মুজিবের স্মৃতির কোনো ভালো কিছু হবে না।
আপনি তো ইংল্যান্ডে বহু বছর ধরে আছেন। সেখানকার পত্রপত্রিকায় ইংল্যান্ডের ইতিহাসের দিকপালদের নিয়ে যখন লেখা হয় তখন কি লেখা হয় সেগুলো কি কখনো পড়েছেন? কখনো কি দেখেছেন যে এমন কি চার্চিলের সবচেয়ে কড়া ভক্ত লেখকও চার্চিলকে নিয়ে লিখতে যেয়ে বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন?
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক বলেছেন আদিল ভাই। আপনার মূল কথার সাথে কিন্তু আমার কোন সংঘর্ষ নেই। কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে বহুধা বিভক্ত হওয়াতে যেটা হয়েছে, সেটা হলো একধরনের ব্যক্তিক, সামষ্টিক কিংবা সামাজিক পরিচয় হীনতায় ভুগতে থাকি। সেখান থেকে জন্ম হয় এক ধরনের ego-র। সেই থেকেই আমরা যেনো অশ্রদ্ধা করতে শিখি নিজেদের কেই।
@আদিল মাহমুদ,
এখানেই আমাদের পরাজয় ভাইরে। ব্যক্তিই আমাদের কাছে বড়, দেশ না। আজকাল যেভাবে সব যায়গাতে মুজিব পুজা হচ্ছে, দেখবেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে উলটোটা হবে।অতিতেও তাই হয়েছে।
আমি বরং মুজিব পুজারীদের কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে পারি,
আর তা হল বাংলাদেশের নাম বদলিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ অথবা মুজিব ভুমি রাখা হোক।
@কাজি মামুন, ” তবে অনেক স্বাধীনতা বিরোধী যে ইচ্ছা করেই বাচ্চা সাজে আর কথার আক্ষরিক অর্থ নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত থাকে-”
“তাহলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা ঐতিহাসিক সুযোগ? বিজয় দিবসের দিনে এও শুনতে হল আমাদের? সত্যি বলতে কি, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে!”
আপনারা নিজেরা অন্যের কথার আক্ষরিক বিশ্লেষনে হাজার হাজার পাতা খরচ করবেন আর আপনাদের কথা আক্ষরিক বিশ্লেষন দঃরলে সেটা হবে ইতরামি, এই সব গান গাওয়া দিন ফুরিয়ে গেছে।
@কালযাত্রী,
বাংলা করতে পারেন নাই অসুবিধে নেই। দেখি অন্যভাবে বুঝা যায় কি না। প্রথমেই
Plebian বানানটা বোধ হয় Plebeian হবে। অর্থ পেলাম; baseborn, lowborn, mean, ignoble, featureless, inane, mean, low, vulgar, underbred, ignoble, lower classes হীনজাত, বৈশিষ্ট্যহীন, ইতর।
Demagogue;
A troublesome kind of leader. Demagogues were a new kind of leader who emerged from the lower classes. Demagogues relentlessly advocated action, usually violent immediately and without deliberation. Demagogues appealed directly to the emotions of the poor and uninformed, pursuing power, telling lies to stir up hysteria, exploiting crises to intensify popular support for their calls to immediate action and increased authority, and accusing moderate opponents of weakness or disloyalty to the nation
Haranguer;
A lecture (by someone) at length in an aggressive and critical manner
উদাহরণ-
they were subjected to a ten-minute harangue by two border guards
he harangued the public on their ignorance
আচ্ছা আপনার ঐ তিনটি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে যা বুঝাতে চেয়েছেন তা এক কথায় বলতে গেলে বাক্যটা কী হবে? অর্থাৎ এ দেশের নীচ জাতের Plebeian চরিত্রের মূর্খ মানুষগুলো ও তাদের ভন্ড নেতার পরিচয় একবাক্যে কী ভাবে প্রকাশ করা যায়?
@আকাশ মালিক,
plebean, plebian দুটোই চলে,
“অর্থ পেলাম; baseborn, lowborn, mean, ignoble, featureless, inane, mean, low, vulgar, underbred, ignoble, lower classes”
কোথায় পেলেন এই অর্থসমূহ। plebean(বা plebs) and patricians বলতে যথাক্রমে রোমের সাধারণ জনতা (কৃতদাস বাদে) আর অভিজাত/উচু শ্রেনীকে বোঝাত। merriam-webster দেখে নিন। আমি সাধারণ জনতা (mass, populace) বলতেই বুঝিয়েছি। আমাদের সমাজে যাদের lower classes বলা হয় যদিও। কিন্তু আমি মনে করি না নীচুটা খারাপ অর্থে ব্যবহার করা হয় বা করা উচিত।
A lecture (by someone) at length in an aggressive and critical manner
তার মানে এই নয় যে “শ্রোতাদের” প্রতি aggressive বা critical।
আবারও merriam-webster দেখে নিন ঃ
“a ranting speech or writing”
উদাহরণঃ He delivered a long harangue about the evils of popular culture.
অনেক শব্দেরই প্রয়োগ খুব সীমিত পরিসরে হয় না। সব অর্থই একটা সংজ্ঞায় ধারণ করা যায় না। এই শব্দগুলি সেই রকমের।
@আদিল মাহমুদ,
(Y) খুব সুন্দর বলেছেন।
আদিল ভাই, একটু বেশি আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছেন মনে হয়। কেন জানি মনে হচ্ছে এই লাইনটা আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের স্টাইলের সাথে একটু বেমানান 🙂
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি যে আকাশ মালিক ভাই হুমায়ুন আজাদের মুখে একের পর এক জুতো মারছেন। দেখে শরীর কেঁপে উঠলো।
আকাশ মালিক ভায়ের বোধশক্তি এতো নিচু কিভাবে হতে পারে? “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” পড়লেন অথচ বইটির কিছুই তিনি বুঝলেন না? এ কিভাবে সম্ভব?
পাঠকদেরকে অত্যান্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আকাশ মালিক ভাই হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটির ভারসাম্যতা নষ্ট করেছেন। হুমায়ুন আজাদের সার্বিক বক্তব্য বিকৃত করেছেন।
আপনারা যারা হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে আকাশ মালিক ভাই হুমায়ুন আজাদের লেখাকে বিকৃত করে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে দিলো।
আজ ২০১২-এর ১৬-ই ডিসেম্বরে শুরু হলো হুমায়ুন আজাদের নষ্টকরণ।
ধন্যবাদ।
@আদনান আদনান,
তাই কি ?হুমায়ুন আজাদ এই বইয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ করতে চেয়েছিলেন ।এই অংশটুকুর টোন পুরো লেখার চেয়ে কি আলাদা ?হ্যা মুজিবের আরো অনেক সমালোচনা আছে এই বইয়ে ,কিন্তু তা এই অংশটুকুকে খন্ডন করে না ।
@আদনান আদনান,
এটা হুমায়ুন আজাদের কথা। আর এটাও তার কথা-
হুমায়ুন আজাদের এই কথাগুলোর আপনি একটু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করুন আমিরা দেখি বুঝতে পারি কি না।
@আকাশ মালিক,
তা পৃথিবীর যেখানেই হোক, যা একবার লেখা বা বলা হয়ে গেছে তা নিয়ে আমার নতুন করে কিছু লিখতে একদমই ভালো লাগেনা। কিন্তু আপনাকে দু’টি কথা না বললেই নয়।
হায়রে ভাই! শুধু বই পড়লেই কি আর বই-এর মর্ম বোঝা যায়? হুমায়ুন আজাদ “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম”-এ বোঝাতে চেয়েছেন যে মুজিবের সাথে বাঙালীর সম্পর্ক আবেগের। আর স্বাধীনতার আগের ও পরের মুজিবের মধ্যে পার্থক্য ব্যাপক – আগে তিনি আমাদের সামনে ছিলেন এক দেবতা, আর পরে এক মহাএকনায়ক ও মহাশয়তান। “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইতে মুজিবকে নিয়ে যেটুকু হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, তাতে মুজিবের পতন কতো উচুর থেকে তা হুমায়ুন আজাদ দেখিয়েছেন। আপনি যে অংশটুকু তুলে ধরেছেনে, তা মুজিবকে শুধু চাঁঙেই তুলে রাখে, তার পতন আর পাঠকের দেখা হয়না। আর সেজন্যই সকালে লিখেছিলাম, “পাঠকদেরকে অত্যান্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আকাশ মালিক ভাই হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটির ভারসাম্যতা নষ্ট করেছেন। হুমায়ুন আজাদের সার্বিক বক্তব্য বিকৃত করেছেন।“
মালিক ভাই, বই পড়া সহজ, কিন্তু বোঝার জন্য চিন্তা লাগে! কিন্তু অন্ধবিশ্বাস আর পূজা মগজ নষ্ট করে দেয়।
ধন্যবাদ।
@আদনান আদনান,
আজকের এই পবিত্র মহান বিজয়ের দিনে, আসুন আমাদের মহান নেতা, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙলাদেশের মহাস্থপতি শেখ মুজিবকে হুমায়ুন আজাদের ভাষায় শ্রদ্ধার সাথে স্ম্বরণ করি-
@আকাশ মালিক,
আজ ছুটির একটা দিন। A. S. Byatt এর Little Black Book of Stories পড়ছিলাম। কিন্তু আপনার জন্য মন দিয়ে আর পড়া হলো না।
যাহোক, আপনি একজন বালকসুলভ পাঠক। তা না হলে আপনি এতো বড় ভুল করতে পারতেন না। আপনি খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে গেছেন অনেক কিছু “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটির থেকে।
স্বাধীনতার আগের মুজিবকে নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। যা হুমায়ুন আজাদ পাঠকে বুঝাতে চেয়েছেন তাঁর বইতে।
“১৯৭০-এর নভেম্বর ডিসেম্বরে কি আমি স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? কেউ চেয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানে? মুজিব চেয়েছিলেন?” (পৃ ২৩)
“একাত্তরের পঁচিশে মার্চের সন্ধ্যায়ও আমি, আরো অনেকের মতো, বুঝিনি আমরা স্বাধীনতার দিকে যাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি। শেখ মুজিবও কি বুঝেছিলেন?” (পৃ ২৬)
স্বাধীনতার পরে, চতুর্থ সংশধনী আনার পরেঃ
“মুজিবই ছিলেন বাঙলাদেশে প্রকৃত একনায়ক-মহাএকনায়ক;” (পৃ ৫৭)
“২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫-এ দেশকে সমাজতান্ত্রিক করার জন্য গঠিত হয় বাকশাল। অন্য সব দল লোপ পায়, একটি মাত্র দল জেগে ওঠে; এটি শুধু রাজনীতিক দল থাকে না, এটি অন্তর্ভুক্ত হয় সংবিধানে।” (পৃ ৬৬)
“তিনি কি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্রে? তিনি কি ভাবতে পারতেন তিনি বেঁচে আছেন, অথচ অন্য কেউ ও অন্য কোনো দল শাস্ন করছে দেশ?” (পৃ ৬৯)
“বাকশাল তৈরি ক’রে মুজিব ধ্বংস করেন তাঁর সমস্ত অর্জন, ও নিজেকে, এবং বাঙলাদেশকে পথভ্রষ্ট করেন।”(পৃ ৬৯)
@আদনান আদনান,
মুজিবকে নিয়ে আপনার একপেশে মন্তব্যগুলো দেখছি কদিন ধরে। মুজিব, আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নেতিবাচক বা ভিন্ন স্রোতের মন্তব্য করে সহজেই ঝড় তোলা যায় বা হিরো সাজাও সম্ভব হয়, কিন্তু সে শুধু ক্ষনিকের জন্যই। এদের মূল্যায়ন করতে হলে শুধু এক চিলতে হুমায়ুন আজাদ নিয়ে বসলে হবে না, আরো অনেক পড়াশুনা করতে হবে।
হুমায়ুন আজাদ বহুমাত্রিক লেখক। যেমন রবীন্দ্রনাথ, তেমনি মুজিবকেও নিয়েও উনার ইতি-নেতি দু’রকম আলোচনাই আছে। আজাদকে বুঝতে হলে, আজাদের নির্মোহ লেখাগুলো আরও নির্মোহ দৃষ্টিতে পড়া দরকার। আজাদ মুজিবের ভুরি ভুরি সমালোচনা করেও নীচের সামারিটি কিন্তু ঠিকই টেনেছেনঃ
বিজয়ের শুভেচ্ছা, (FF) (FF) (FF)
@আদনান আদনান, আপনার দ্রুত আরোগ্যলাভ কামনা করছি।
@আদনান আদনান,
(Y)
@আদনান আদনান,
শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বাংলাদেশীরা সাধারণত তিন ধরনের মনোভাব পোষন করেন। প্রথম দল শেখ মুজিবকে দেবতা মনে করেন, দ্বিতীয় দলের কাছে শেখ মুজিব প্রায় কিছুই না আর তৃতীয় দল মধ্যপন্থী। আমার অবস্থান অনেকটাই শেষের দলে।
আমার চোখে শেখ মুজিব আমাদের ইতিহাসে একজন বিরল জননেতা যিনি স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে জনগনের খুব কাছে যেতে পেরেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এই ক্যারিশম্যাটিক নেতার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিল। তিনি ছিলেন তাদের অবিসম্বাদিত নেতা, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রান পুরুষ।
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবার সর্বোচ্চ কৃতিত্ব শেখ মুজিবের, একথা মানতে আমার কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর আগমুহুর্তে তাঁর কর্মকান্ড আমার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন শেখ মুজিব সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষনা না দিয়ে পাকিস্তানি হাতে ধরা দিলেন এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমি এখনো পাই নি। অনেকেই এর স্বপক্ষে বিভিন্ন কারন দেখিয়েছেন, কিন্তু আমার কাছে তাঁর এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। একজন কুশলী খেলোয়াড় যেন মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে, তার যাদুকরী পায়ের ছোঁয়ায় বিপক্ষদলের দুর্ভেদ্য রক্ষনভাগকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফাঁকা গোল পোষ্টের সামনে পৌঁছে গেছেন; গোলে শট নিলেই ইতিহাসের সৃষ্টি হয়, কিন্তু তিনি দ্বিধাগ্রস্থ, সময় যেন এখানেই জমে গেল।
নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান উজ্জ্বলতম নক্ষত্র একথা অস্বীকারের কোন কারন নেই। তবে ভুলে গেলে চলবে না অতি বড় মাপের আরেকজন অসাধারন মানুষের নাম–তাজউদ্দীন আহমেদ, যিনি আমাদের যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের হাল ধরেছিলেন। আমার মতে ‘জাতির পিতা’- আর ‘স্বাধীনতার ঘোষক’-র প্রচার বাহুল্যে আমরা এই ক্ষনজন্মা মানুষটির অবদান ঠিকভাবে তুলে ধরিনি। দুঃখজনকভাবে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ সাহেবের সাথে তাঁর মতপার্থক্য ঘটে, তিনি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং পচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বন্দী অবস্থায় নিহত হন।
শেখ মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত কিনা বা স্বাধীন হতে আরো কত সময় লাগতো এ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে কিন্তু আমি তা খুব দরকারী মনে করি না। এধরনের বিতর্ক অনেকটাই আরোপিত এবং আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ মুজিবের অবদানকে খাটো করার প্রয়াস বলেই মনে করি। তবে মুজিবকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তার স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা-পরবর্তী কর্মকান্ডের তুলনামূলক আলোচনার প্রয়োজন আছে, যেমনটি ডঃ আজাদ করেছেন নির্মোহভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের শাসন প্রশ্ন জাগায়, শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদই কি তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল?
@আকাশ মালিক ভাই,
গত কয়েকদিন ধরে আদনান ভাইয়ের একপেশে মুজিব সমালোচনায় ভীষন অস্বস্তি বোধ করছিলাম, অস্বস্তির সবচেয়ে বড় কারণটি বোধহয় ছিল, হুমায়ুন আজাদকে উদ্ধৃত করেই আদনান ভাই তার সমালোচনার ধারাল তীর ছুঁড়েছিলেন। কিন্তু আমার খালি মনে হত, হুমায়ুন আজাদ কখনই এতটা একপেশে মত দিতে পারেন না। নিশ্চয়ই মুজিব সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক কথাও আছে আজাদের। নইলে তার আলোচনা নির্মোহ হবে কিভাবে বা তিনি এত বড় লেখক কি করে? আমি আজাদের পজিটিভ মূল্যায়ন নিয়ে শ্রদ্ধেয় ব্লগার রণদীপমদার কাছে লিংকও চেয়েছিলাম। উনি পিয়াল ভাইয়ের পাতায় খোঁজ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু সেখানে আর যেত হল না। আপনার কাছেই প্রত্যাশিত জবাবটি পেয়ে গেলাম।
অনেক ধন্যবাদ, মালিক ভাই। বিজয়ের শুভেচ্ছা। (FF) (FF) (FF)
@কাজি মামুন,
এই বইটার কথা তিনি অনেকবার উল্লেখ করেছেন। বইটাকে তিনি শেখ মুজিবকে অপমান, নিন্দা, গালাগালি, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার আসমানি কিতাব হিশেবে ধরে নিয়েছেন। একজন লেখক বইটি অন-লাইনে খুঁজছিলেন। ইচ্ছে ছিল যারা বইটি পড়ার সুযোগ পান নি তাদের জন্যে সমস্ত বই স্ক্যান করে দিব। কিন্তু হাই-রেজুলেশনে দিলে পুরো স্ক্রিন খেয়ে ফেলে আর লো-রেজুলেশনে দিলে লেখা ছোট হয়, পড়াই যায় না।
আজ মনে পড়ে হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি তার লেখা একটি বই শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করেছিলেন। সে কথা আজ নয় অন্যদিন বলা যাবে।
আপনাকেও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা- [img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/image_1258_313975.jpg[/img]
-কবি অন্নদাশঙ্কর রায়
@আকাশ মালিক,
মৌলির বইটি পড়েছি। কিন্তু এখানে মৌলিকে টেনে আনার কি কারন? মৌলির তো তার নিজের মতো করে কিছু বলার থাকতেই পারে!
আরে না ভাই আসমানি কিতাব টিতাব না। শুধু এই বইটির সাথেই আমার পরিবারের প্রবীনদের ১৯৬০-১৯৭৫-এর অভিজ্ঞতা মিলে যায় ১০০%। তারপরও আশ্চর্য হলো আমার পরিবারের প্রায় সবাই আওয়ামিলীগ করে। ছোটবেলার থেকেই দেখে আসছি তারা কতো ভণ্ড! তাদের মধ্যে বাপ দাদা নানা চাচা মামারাও পড়ে। কি আর বলবো! আরো তাদেরকে বলতে শুনেছি মুজিব ছিলো অত্যান্ত অভদ্র একজন মানুষ, যে তুই-তোকারি করে তার প্রবীনদের সাথে কথা বলতো, সবাইকে সে তার চাকর হিসাবে দেখতো। এই সব আরকি!
@আদনান আদনান,
তার মানে, বইটিও খারাপ? আপনার কথিত ব্যক্তিবর্গের ভন্ডামির সাথে মিলে যায়? আপনার পরিচিতজনরা যেমন আওয়ামি লিগ করা সত্বেও মুজিবকে গালাগাল করত, হুমায়ুন আজাদও তেমনি আওয়ামি সমর্থক হওয়া সত্বেও মুজিবের নিন্দায় মেতে থাকতেন? আপনার এমনটাই মনে হল? এই হল, আপনার “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটি সম্পর্কে নতুন গজিয়ে উঠা মূল্যায়ন???
আদনান ভাই, বিষয়টি বুঝতে পারছি না। যদি ক্লিয়ার করেন, আমার মত অধমগণ বড় উপকৃত হয়।
@আকাশ মালিক ভাই,
এই পরের লাইনগুলোও আমার কাছে অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।
তবে আমার সুন্দর মন্তব্যটি কালিমালিপ্ত হয়েছে নীচের লাইনটির কারণেঃ
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত আলোচনাটির সাথে এর সম্পর্ক কি? মৌলি শেখ হাসিনাকে বই উৎসর্গ করলে এটা প্রমানিত হয়ে যায়, আজাদ বঙ্গবন্ধুকে ইতিবাচক মূল্যায়নও করেছেন? উৎসর্গ না করলে, এটা আর প্রমান করা যেত না। সত্য বলতে কি, মৌলির প্রসঙ্গটা আপনার আলোচনাকে খেলো করে দিয়েছে। আদনান ভাই অন্তত এ ব্যাপারে ঠিক বলেছেন।
@আকাশ মালিক,
সেইটা হয়তো বইটি নয়, তবে বইটির উপর ভিত্তি করে হুমায়ুন আজাদকে একজন মুজিব সমর্থক বা মুজিব সমালোচক এই দুই ডাইপোলের যেকোন একটিতে ফেলতে হলে সম্ভবত মুজিব সমালোচকেই ফেলতে হবে 🙂
@আল্লাচালাইনা,
ব্যস এই টুকুই। কিন্তু যারা এটুকুও স্বীকার করতে চায়না তাদেরকে নিমকহারামই বলবো। লেখাতেই উল্লেখ করেছি এটা সম্পূর্ণই একজন লেখকের লেখা থেকে কপি পেষ্ট আর লেখকের নাম দিয়েছি নিচে। হুমায়ুন আজাদের এই বই যে বহু আগেই অনেকবার পড়া হয়েছে তা আমার অন্যান্য লেখায় মন্তব্যে বলেছি। শুনেছি আজকাল কম্যুনিষ্টরাও নাকি হুমায়ুন আজাদকে তাদের সমর্থক বলেন। আহমদ ছফার সমালোচনাও পড়েছি। নিন্দা না বন্দনা তা দেখানোর উদ্দেশ্য নয়, বিজয় দিবসে হুমায়ুন আজাদের বইয়ের এই অংশটুকুর সংশ্লিষ্টতা তাৎপর্য আলোচনা করাই মূল লক্ষ্য। এটা তার সমগ্র বই নিয়ে আলোচনা নয়।
বুদ্ধিজীবীরা দেশের মেরুদন্ড, দিক নির্দেশক, রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র-পরিচালকের নির্মোহ নিরপেক্ষ সমালোচনাই তো একজন বুদ্ধিজীবির কাছ থেকে কাম্য। হুমায়ুন আজাদ সেই কাজটাই করেছেন। দূর্ভাগ্য আমাদের, হুমায়ুন আজাদ যদি এই বইটি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় লিখতেন, হয়তো আমরা তাকে আজও জীবিত দেখতাম।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর সব চেয়ে বড় ভুল হয়েছিল বাঙ্গালীকে চিনতে না পারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বলেছিলেন- কবিগুরু তুমি বলেছিলে, ‘রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি’ দেখে যান আমরা মানুষ হয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু কথায় কথায় বলতেন, আই নো মাই কান্ট্রি আই নো মাই পিউপল, দে লাভ মি’। বিরোধী দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতেন, নিজের সিকিউরিটির ব্যাপারে বলতেন ‘আমার কিচ্ছু হবেনা কেউ আমার উপর গুলি চালাবেনা’। তার এই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে নিজের জীবন দিয়ে।
লেখাটি পড়া ও মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং বাংলাদেশের সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী – এই তিন জন, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব এবং ১ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উর রহমানের একনিষ্ঠ অন্ধ পূজারিদের জন্য কি রকম অস্বস্তির কারণ এটা তাদের বিভিন্ন লেখা দেখলেই বোঝা যায়। যেন শেষোক্ত দুজনের আলোচনায় উপরোক্ত তিনজনের আলোচনা ট্যাবু……