এক। প্রজন্ম ‘৭১ এর সাইদুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় সাংবাদিকতার শুরুতে সেই ১৯৯২ – ৯৩ সালের দিকে। তখনও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে বর্তমান শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধটি গড়ে ওঠেনি। তবে সে সময় প্রজন্ম ‘৭১ নিজ উদ্যোগে একটি ছোট্ট স্মৃতিসৌধ গড়ে সেখানেই প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আসছিলো। সরকারের কাছে এ নিয়ে তারা অনেক ধর্ণা দিয়েও সরকার পক্ষকে উদ্যোগি করতে পারেননি।
সে সময় ‘সাপ্তাহিক খবরের কাগজ’ এ অরক্ষিত রায়ের বাজার বধ্যভূমির ওপর একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করার জন্য আমি শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারগুলোর সঙ্গে একে একে দেখা করে সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করি।
দুই। সে সময় সাইদুর রহমানের সঙ্গে আমার কথা হয় তার কর্মস্থল মতিঝিলের একটি ব্যাংকের সদর দপ্তরে। তিনি বলছিলেন ‘৭১ সালের কথা।
তখন তিনি পাঁচ-ছয় বছরের শিশু। সৈয়দপুরে যৌথ পরিবারের আদরে আনন্দময় শৈশব জীবন কাটছে তার। ‘৭১ এর উত্থাল দিনগুলোতে বিহারী রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত তাদের বাড়ি আক্রমণ করে বসে।
বাড়ির বড়রা শিশু সাইদুর আর তার পিঠেপিঠি দুই বোনকে একটি বড়ো ঘরে খাটের নীচে হাঁড়িকুড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখেন।
তারপরেই ঘটে যায় তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি!
রাজাকাররা ওই ঘরে সাইদুরের মা-বাবা, অন্যান্য ভাই-বোন, আত্নীয় – স্বজন সবাইকে ধরে এনে কসাইয়ের মতো জান্তব উল্লাসে রাম দা দিয়ে একে একে কুপিয়ে হত্যা করে!
আর এ সবই ঘটে যায় শিশুটির চোখের সামনে। জীবনের ভয়ে ছোট্ট সাইদুর টুঁ শব্দটি করার সাহসও পায়নি।
তিন। এর পর বহুবছর ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে। বেশ কিছুদিন শিশুটি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগেছে। এখনো স্বজনের আর্তনাদ তাকে আর ১০টা মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেয় না।…
ব্যাংকার সাইদুর রহমান যখন তাঁর এই দুঃসহ স্মৃতিকথা আমাকে বলছিলেন, তখন বার বার গভীর বেদনায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো তার মুখ, ভেঙেচুরে যাচ্ছিলো তার কন্ঠস্বর!
কথা বলতে বলতে তিনি বলপয়েন্ট দিয়ে নিউজপ্রিন্টের একটি প্যাডের পাতায় কাটাকুটি করে কি যেনো একটি কথা বারবার লিখছিলেন।
সাক্ষাৎকার শেষে তার অনুমতি নিয়ে আমি নিউজপ্রিন্টের ওই কাগজটি চেয়ে নেই। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি, অনেক কাটাকুটির ভেতর ঝকঝকে হরফে তিনি একটি কথাই বারবার লিখেছেন:
তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?
তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?
তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?
শেষ পর্যন্ত খবরের কাগজের ওই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের ভেতর স্ক্যান করে সাইদুর রহমানের হাতে লেখা নিউজপ্রিন্টের টুকরো অংশটিও তুলে দেওয়া হয়। লেখাটির শিরোনামও দেই:
তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?
প্রতিবেদনটিতে সরকারি উদ্যোগে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ গড়ার জন্য শহীদ পরিবারগুলোর আকুতি তুলে ধরা হয়। পরে প্রজন্ম ‘৭১ এই লেখার শিরোনাম নিয়ে একটি পোস্টারও প্রকাশ করে।
চার। এরপর বিএনপি সরকার বদ্ধভূমিতে স্মৃতিসৌধ স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করলেও এর নথি আর উর্ধ্ব দিকে ধাবিত হয় না। সাইদুর রহমানসহ প্রজন্ম ‘৭১ এর সদস্যরা সরকারি উচ্চ মহলে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন। তবু কিছুতেই কিছু হয় না। একটি একটি করে বছর গড়ায়।
প্রজন্ম ‘৭১ এর নিজেদের গড়া ছোট্ট স্মৃতি সৌধটি প্রতি বছর ভেঙে পড়ে। প্রতি বছর পিলার আকৃতির ওই সৌধটি ১৪ ডিসেম্বরের আগে আবার গড়া হয়। আবারও দিন যায়।
শেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্মৃতি সৌধর সরকারি প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে। তৈরি হয় বর্তমান সৌধটি।
পাঁচ। সাপ্তাহিক খবরের কাগজের ওই প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লেখার পর বহুবছর সাইদুর রহমানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।…
২০০০ সালের দিকে একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) কারওয়ান বাজারের ভবনে কি একটা কাজে বিখ্যাত সাংবাদিক সায়মন ড্রিং এর কাছে গিয়েছি। লিফটের ভেতর এক অচেনা ব্যক্তি আমার নাম ধরে ডাকেন। লোকটিকে আমার খুব চেনা চেনা মনে হলেও আমি তাকে পুরোপুরি চিনে উঠতে পারি না। তখন তিনি নিজের নাম বলতেই হঠাৎ এক নিমিষে আমার মনে পড়ে যায় সব।
সাইদ ভাই তখন ইটিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে খণ্ডকালীন কাজে যোগ দিয়েছেন। ইটিভি বন্ধ হওয়ার পর তিনি চ্যানেল আই এ সংবাদ পাঠ করতে থাকেন।
এখনো প্রায় রাতে চ্যানেল আই সংবাদ দেখতে বসলে আমি তাকে খবর পড়তে দেখি। মাঝে চ্যানেল আই টক-শোতে কয়েকবার অংশ নিয়েছি। প্রতিবার কাজ শেষে সাইদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছি।
নতুন করে শুরু হওয়া ইটিভির একটি অনুষ্ঠানে কিছুদিন আগে আবারো দেখি তাকে। সেদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে একটি টক-শোতে সরাসরি প্লাজমা টিভিতে স্টুডিওতে হাজির সাইদুর রহমান।
তিনি খুব স্পষ্ট গলায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে বললেন:
যতদিন এই বিচার না হবে, ততদিন অন্তত আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতেই থাকবো। … এমন কি মৃত্যূর সময় শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে যদি একটি মাত্র মুহূর্ত পাই, তখনও এ দেশের মানুষের কাছে বলবো, আমি এর বিচার চাই!…
___
ছবি:স্মৃতি সৌধ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, রণদীপম বসু।
____
*এই লেখাটি এর আগে অন্যব্লগে প্রকাশিত।
(Y)
@ভক্ত,
আপনাকে ধন্যবাদ। আগামীতেও সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ।
আপডেট:
এই লেখাটি অনলাইনপত্র গুরুচন্ডালি ডটকম-এ “১৯৭১ :: মুক্তিযুদ্ধের কথা ” শীর্ষক সংকলনে সংযুক্ত করা হয়েছে। (Y)
হাল না-ছাড়ার ধরণটা এক একজনের এক এক রকমের । আপনার লেখা পড়ে, না-জানার ভান্ডারে জমা হলো আরো কিছু। জানার এ ধারা, আমাদের এগিয়ে চলার ধারাকে নিয়ে যাবে,সেই স্বপ্নপুরীতে, যেখানে পৌঁছার জন্য আমরা আমাদের রক্ত দিয়েছি, এখনো দিয়ে যাচ্ছি।
যুদ্ধরত আপনাকে অভিনন্দন।
@স্বপন দা,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ডাকে গড়ে তোলা আন্দোলনে একদিন আমিও গলা তুলেছি:
আপনার মন্তব্য পড়ে কেনো যেনো সেই কথাটি মনে পড়ে গেলো। (Y)
+
@সংবাদিকা,
(Y)
যুদ্ধাপরাধের বিচার যেহেতু এখন একটা ক্রান্তি সময়ে উপস্থিত হয়েছে সেকারনে এখন সময় এসেছে আবেগময় কথাবার্তার সাথে প্র্যাক্টিক্যাল কথাও বলার। এখনো বাংলাদেশে আওয়ামী বিরোধী সাধারন জনগনের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক লোক আছে যারা জামাতকে ঘৃনা করে, একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। কিন্তু এই অনুভূতি এতটা প্রখর নয় যে এই অজুহাতে আওয়ামী লীগের যেনতেন উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখাকে সমর্থন দিয়ে যাবে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিৎ হতে পারতো যদি কেবল মাত্র বিএনপি’র সমর্থকদের মধ্যে এটা প্রতিষ্ঠিত করা যেতো যে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কাজের মূল প্রেরণা হলো বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা।
পলিটিক্যাল পার্টির প্রধান ধর্ম অনুযায়ীই বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায়। আর ‘তত্বাবধায়ক সরকারের’ নামে দেড় যুগ নিজে ও জাতির মুখে ফেনা তোলা আওয়ামী লীগ যেহেতু বিএনপি’র ক্ষমতায় আসার নিয়মতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করে দিতে চায় সেহেতু বিএনপি আওয়ামী প্রদর্শিত পথেই হরতাল-ভাংচুড়ের পথে এগুচ্ছে। বিএনপি’র এই ক্ষমতায় আসার চেষ্টা আর যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোকে এক করে দেখলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি’র ৯০% নেতাকর্মী don’t give a fuck যে গোআজম-নিজামী-দেলোয়ার ফাসিতে ঝুলবে না কি না। তারা ক্ষমতায় আসতে চায় ঠিক যে কারনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়। বাংলাদেশে এখন ক্ষমতায় থাকা মানে আলাউদ্দীনের চেরাগ পাওয়া আর ক্ষমতার বাইরে থাকা মানে দুর্ভিক্ষকালীন সোমালিয়া।
ক্ষমতার জন্যে আওয়ামী লীগ বিজয়ের মাসে গন্ডায় গন্ডায় হরতাল করলে সেটা হয় স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখার আন্দোলন আর ডিসেম্বরে বিএনপি হরতাল দিলে সেটা হয় স্বাধীনতাবিরোধী হরতাল, এই কথায় অন্ধ আওয়ামী লীগাররা মনে প্রবোধ পেতে পারে সাধারন ভোটারদের কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না।
@আমি আপনার সঙ্গে একমত ।
@সফিক,
আওয়ামী রাজনীতির শেষ ট্রাম কার্ড এখন এই একটিই– যুদ্ধাপরাধীর বিচার। দেখা যাক, তারা শেষ পর্যন্ত চালে জয়ী হতে পারে কি না। (Y)
অনেক দিন পর মুক্তমনা খুলেই এত সুন্দর ও চমৎকার লেখাটি পড়ে ভাল লাগল ।সাইদুর ভাইয়ের শিশুকালের ট্রাজেটি আমাকে খুব কাঁদাল ।বিপ্লব ভাই এই লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
@নিগ্রো,
সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
নাহ, আমাদের যা বলার ছিলো, বাংলাদেশ তা বলতেছে না। সাইদুর রহমানের মত ভুক্তভোগীরাও মৃদুকন্ঠে বলে বিচার চাই .. কন্ঠ ছেড়ে জোর গলায় দাবী জানাতে পারেনা .. বিচার করতে হবে, বিচার করুন নইলে ..।
@হোরাস,
এই দাবিটি এখন সারা বাংলার প্রাণের দাবি। সরকার বদল হলে ঘাতকরা সকলেই জেলা থেকে ছাড়া পেয়ে দাঁত কেলিয়ে ঘুরে বেড়াবে; কয়েক জন বিগ শট বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো আয়েশে কাটাবে। এমন আশংকা করা অমূলক নয়। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধী বিচারের হাল শেষ পর্যন্ত কি করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা, বিপ্লব।
বিজয় দিবস এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সামনে রেখে নিলীম একটি চমৎকার ব্যানার করেছেন আমাদের জন্য –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/12/juddhaporadhir_bichar_nilim.png[/img]
বক্তব্যতেই সবকিছু স্পষ্ট। তাকেও ধন্যবাদ।
@অভি দা,
বাহ! কি চমৎকার ব্যানার! আপনার মাধ্যমে নিলীম’কে অনেক সাধুবাদ জানাই। (F)
এই সুযোগে বলি, মুক্তমনায় বিশেষ দিনগুলোতে নান্দনিক ব্যানার আরো বেশী করে আশা করি। চলুক। (Y)
@অভিজিৎ,
আপনি কি মনে করেন বাঙলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব? অনেক মুক্তিযোদ্ধাও কিন্তু রাজাকারদের জ্যান্ত চাঁমড়া ছিলেছে। কাজেই আমি মনে করি যে আমাদের সরকার যেভাবে বিচারের কাজটা করতে চেষ্টা করছে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহনযোগ্য হবেনা। আমার মনে হয় প্রথমে রাজাকারদেরই বিচারটা হওয়া ভালো। আর আপনি তো একজন যুক্তিবাদী মানুষ। আপনি যা দেখছেন তাতে করে আপনার কি মনে হচ্ছে যে বাঙলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার হচ্ছে তা মানবতার দিক থেকে সব ঠিকঠাক হচ্ছে?
আমার ভয় হচ্ছে যে রাজাকারদের বিচারের সুযোগটা হয়তো আমরা নষ্ট করছি।
ধন্যবাদ।
শিশু সাঈদ ভাই যে সেই পৈশাচিক ঘটনা দেখার পরেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন এটা অনেক বড় সৌভাগ্য বলতে হবে।
কসাইদের সাথে রাজাকার বদরদের নৃশংসতার তূলনা কেমন করে দিলেন বুঝতে পারলাম না। কসাইরা সমাজের আর দশজনের মতই এক শ্রেনীর প্রফেশনাল, তারা জান্তব উল্লাসে কুপিয়ে পশুও হত্যা করে না। জীবিকার কারনে তারা পশু হত্যা করে, তার মাঝে কোপানো বা উল্লাসের তেমন ব্যাপার নেই। এ ধরনের আবেগময় উপমায় মনে হয় কসাই শ্রেনীটাকে অযাচিত অপমান করা হয়।
তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কী তা বাংলাদেশ? – পোষ্টারটির ইতিহাস জেনে বাধিত হলাম। তবে আমি টাইম লাইন কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম। কারন আমার পরিষ্কার মনে আছে যে এই পোষ্টারটি আমি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু করি তখন বাজারে এসে সাড়া জাগিয়েছিল ‘৯১ সালে, ‘৯২ তে নয়। সে সময় রাজাকার বদরদের দল ১৮ আসন পাওয়া জামাতের সাথে বিএনপির সুখ মিলনে সরকার গঠিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এক বড় সড় চাপড় লাগিয়েছে। চরম হতাশার মাঝে এই পোষ্টার বের হয়। প্রথম ইংরেজী ভার্ষন বের হয়, এরপর বাংলা। আমি মেডিকেল ক্যাম্পাসেই ১০ টাকা দিয়ে ইংরজীটা কিনেছিলাম।
এসব ভাল মনে থাকার আরেক কারন আমি তখন মেডিকেলের ছাত্রদলের সাথে সংযুক্ত, আমাদের প্রজন্মের বেশীরভাগ ছেলের মতই আমারও তখন ভারতের দালাল আওয়ামী ঠেকানোর স্বার্থে জামাতিদের আওয়ামী চক্র থেকে বেশী গ্রহনযোগ্য মনে হয়। সে সময় মেডিকেলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চলছিল, কমন রূম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রদলের সাইফুল্লাহ ভাই। অত্যন্ত ভদ্র, মিষ্টভাষী সাইফুল্লাহ ভাই ক্যান্টিনে আমার কেনা পোষ্টারটির শিরোনাম দেখে ভ্রু কুঁচকে মন্তব্য করেছিলেন যে কথাটা কি ঠিক হল? আমি সেদিন কিছু বলিনি। এসবই ‘৯১ সালের ঘটনা।
@আদিল মাহমুদ,
এটি খুবই বিস্ময়কর যে, সাইদুর রহমান ভাইয়ের অনেক সহকর্মীই জানেন না তার আত্নত্যাগের কথা। অনেকে বিভিন্ন আড্ডায় আমার কাছ থেকে তা জেনে খুব অবাক হয়েছে। আসলে আমার মনে হয়, প্রজন্ম-৭১ এর পরের প্রজন্মগুলোর মধ্যে ঠিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গেঁথে যায়নি। ক্যারিয়ার, ফেবু চ্যাটিং, গার্ল ফ্রেন্ড, ভিডিও গেম ইত্যাদির বাইরে তাদের অন্য জগৎ প্রায় নেইই!
হয়তো এ জন্য আমরা যারা পূর্বসূরি, তারাই এ জন্য অনেকখানিই দায়ী। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়!
পোস্টারের ইতিহাস অবশ্য লেখার ফোকাস পয়েন্ট নয়। তবু বলি, হয়তো আপনার কথাই ঠিক। হয়তো সাইদুর রহমান ওই পোস্টার থেকেই ডুডল করেছিলেন, সেখান থেকে আমি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি, আবার ১৯৯২ এ একই শ্লোগানে পোস্টারটি প্রজন্ম ৭১ ছেপে প্রকাশ করে।
আপনার বিনীত পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
তরুন প্রজন্মকে আর কি গাল দেব? আমি নিজে যখন তরুন প্রজন্ম তখন রাজনৈতিক দর্শন ছিল লীগ অপেক্ষা শিবির উত্তম। মুক্তিযুদ্ধের গল শ্রদ্ধাভরে পড়েছি, আবার মেডিকেলে ছাত্রী সংস্থার নিনজা আপা বক্তব্য দেবার সময় লীগের ছেলেপিলে বেজায় হট্টগোল শুরু করলে শিবিরকেও কথা বলার অধিকার দিতে হবে ছূতা ধরে তারও প্রতিবাদ করেছি। আমরা জাতি হিসেবে আসলে খচ্চর শ্রেনী বলেই মনে হয়, মানে সংকর প্রজাতির।
আপনি প্রফেশনাল লেখক মানুষ, দয়া করে এখন থেকে আর কসাইদের অপমান করবেন না, সতীর্থদেরও বলে দেবেন।
@আদিল মাহমুদ, আপনি কি আসল মাটিবাবা? মেডিকেল, ছাত্রদল… আপনার আইডি হ্যাক হইছে নাকি?
@হোরাস,
আমিই সেই, অল ইন ওয়ান।
হে অতীত তুমি ভূবনে ভূবনে,
কাজ করে যাও গোপনে গোপনে
আমার এই ইতিহাস জানেন না? আমার ব্লগে পোলাপাইন ভালই জানে। আমি প্রথম ভর্তি হইছিলাম ঢামেক এ। ‘৯৪/৯৫ পর্যন্ত ঘোর বিএনপি সাপোর্টার ছিলাম। স্কুল লাইফে ম্যাডাম জিয়া বললে ট্রাকের নীচেও ঝাপ দিতে পারতাম, পোলাপাইন শুনলে আমার চরিত্র নিয়া সন্দেহ করে।
@আদিল মাহমুদ, ছাত্রদল শুনে খুব বেশী অবাক হইনি তবে বেশী অবাক হয়েছি মেডিকেল শুনে। যাই হোক ডাক্তার হন নাই ভালই হইছে তাইলে হয়ত আর মাটিবাবা হওয়া হত না। 🙂
@আদিল মাহমুদ,
আল্লায় বাঁচাইছে খালেদা এমন আদেশ করেন নি, করলে আমরা আপনার লেখাগুলো মিস করতাম।
@আকাশ মালিক,
ঠিক, ধমকিও একইভাবে মিস করতেন।
@আদিল মাহমুদ,
[img]http://www.amarblog.com/uploads_user/3000/8871/untitled.bmp[/img]
হ্যাকিং? 😛
@আদিল মাহমুদ,
ধীরে বলেন ধীরে, মাটিবাবার বদনাম হবে। তবে এখানে আর না, অন্যদিন অন্যত্র।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/adil.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
তাকে যা বলছিলাম ঠিকই বলছিলাম, তার চেহারা সুরত নাম যথেষ্টই ভয় দেখানো ছিল।
এমন সিরিয়াস পোষ্টে খুব বেশী হালকা কথাবার্তার মনে হয় আর দরকার নাই।
@আদিল মাহমুদ,
এ ক ম ত। প্রসঙ্গের বাইরে আলাপচারিতা না গড়ানোই ভালো। আলোচনাটিকে লাইনবন্দী করায় আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂
ইনিয়ে-বিনিয়ে ‘যদি’ ‘কিন্তু’ এইসব বিভ্রান্তিকর শব্দ ছাড়া যারা স্পষ্ট করে গলা ছেড়ে জোরালোভাবে একাত্তরের এতো এতো মেধাবী বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার চাইতে পারে না, তাদের মুখেই বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার চাওয়া বিশ্বজিৎ ও তার পরিবারের সাথে এমনকি জাতির সাথেও নির্মম কৌতুক করা নয় কি !?!
মায়াকান্না মুখর এই জঘণ্য কৌতুককারীদেরকে কী বলে ?
ধন্যবাদ বিপ্লব দা, ‘তোমাদের যা বলার ছিলো, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?’-এই শ্লোগানটার জন্মেতিহাস জানলাম।
@রণদা,
শুধু ছবি ব্যবহারের অনুমতি প্রদান নয়, লেখাটি পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতাবোধ আরো বাড়লো। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
স্বাধীনতার পক্ষের, দেশের বুদ্ধিজীবী সকল প্রগতিশীল শক্তির মধ্যে যদি একতা আসে তাহলে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো হবেই, একদিন আমাদের যা বলার ছিল সবই বলা হবে সবই বলবে বাংলাদেশ।
@আকাশ মালিক,
মাস্তান, সুশীল, প্রগতিশীল শব্দগুলো ইতিমধ্য কথ্য বাংলায় তার মূল অর্থের মর্জাদা হারিয়েছে। লিখিত বাংলায় আসতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি” শব্দগুচ্ছটির সুচিন্তিত ব্যবহার এখন সময়ের দাবী। অযথা রাজনৈতিক কারণে যেন শব্দক্ষয় না হয় সেদিকে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
@সংবাদিকা,
সঠিক কথা।অন্তত মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত স্বপক্ষের শক্তির ও স্বঘোষিত ধর্ম নিরপেক্ষ দলটির যেমন কান্ড কারখানা দেখলাম( বৌদ্ধদের উপর হামলা) , তাতেই দলটির বর্তমান রুপ আমার চেনা হয়ে গেছে। আর সব থেকে মজার ব্যাপার হল যে , রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রেখেও নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দাবী করার মত নির্লজ্জতা মনে হয় না অপর দলটি দেখাতে পেরেছে কোনদিন। মনে হয় না এরশাদ সাহেব এতখানি নির্লজ্জ। রাষ্ট্র ধর্ম থাকা উচিত কি উচিত না, সেটি নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, এমন কি ধর্মনিরপেক্ষ আর ধর্মহীন এক নাকি আলাদা,এটা নিয়েও বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায়, তবে একই সাথে একটি ধর্ম কে রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে বহাল রেখে, দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ অথবা সেই বিশেষ দলটি ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, এই দাবীর মত উদ্ভট আর অযৌক্তিক দাবী আর কিছুই হতে পারে না।
@রণদীপম বসু,
জামায়াত এর সাফল্যর পেছেনে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা না যতটুকু তার থেকে অপর প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা বেশি ফ্যাক্টর। দু দলই এই মহাহিপোক্রেট ধর্ম ব্যবহারকারী দলকে ব্যবহার করতে যেয়ে এদের অনেক উপরে তুলে দিয়েছে। এখানে ১৯৮০-৯০ এর ইতিহাস আলোচনা করার দরকার নেই। সবাই কমবেশি জানে। আর মুক্তিযুদ্ধ যদি কোন নির্দিষ্ট দল নিজ কৃতিত্ব দাবী করে (সবচাইতে হাস্যকর; এটা তাদের মুখেই বেশি শোনা যায় যারা সম্মুখ সমরে কিংবা এর পরিকল্পনায় আদও ছিলনা)। দুই দলেই এমন কিছু আছে যাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা নিয়মিত গোবরের সরবত পান করেন।
অপ্রিয় হলেও সত্য, আওয়ামীলীগে যত মুক্তিযোদ্ধা আছে বিএনপি তেও তার থেকে কম নেই বরঞ্চ কোন কোন কন্সটিটিউনসি তে অনেক বেশি আছে।
যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার অবশ্যই হতে হবে এবং এটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভাবে হতে হবে।
@সংবাদিকা,
এ ক ম ত।
এই আগ্রাসী দিক ধরা পড়ে সম্প্রতি রাঙামাটি ও রামুতে। তাই একটি লেখায় এই যুথবদ্ধা বর্ণনা করেছি:
(Y)
@সংবাদিকা,
দুঃখিত,রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত জাতীয় শব্দ চয়ণ ট্রাইবুনালের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন ও প্রশ্ন করার সামিল বলে আমার মনে হয়।
@গীতা দি,
কথাটি পুরনো, কিন্তু সব সময়ই সমান কার্যকর। সেটি হচ্ছে:
“আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।”
এটি হলেই বোধহয় সবচেয়ে ভাল হয়; সব ধরণের প্রভাব মুক্ত।
আপনার বিনীত পাঠ ও উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা। (Y)
@গীতা দাস, আমার মনে হয় উনি,দলীয় প্রভাবমুক্ত বোঝাতে চেয়েছেন।
@রণদীপম বসু,
আমি বুঝলামনা যুদ্ধের সময় যুদ্ধ অপরাধ গণহত্যার সাথে সাথে স্বাধীন দেশে শান্তিকালীন সময়ে (যুদ্ধহীন) সংঘটিত একটি নিপাট ক্রাইম কে টেনে আনার কি দরকার?????
@রণদা,
ফেবুতে আলাপচারিতার সূত্রে আপনার কথা মেনে চলতি নোটে গুরুতর বানান সংশোধনী করেছি। অনেক ধন্যবাদ। চলুক। 🙂