ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১
কিছু ধর্ম অন্তঃপ্রান দাবীদারদের ধর্মীয় সূত্র নিয়ে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতির কিছু উদাহরন এই পর্বের মূল আলোচনা। শুধু স্কুলের ধর্মশিক্ষার বইতেই সাম্প্রদায়িকতা সীমিত নেই, এর প্রবল প্রকোপ ইসলামী জগতের অতি জনপ্রিয় হাই-প্রোফাইল আলেম ওলামাদের লিখিত নানান কিতাবেও সগৌরবে, অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থে ও মদদে প্রচারিত হচ্ছে। এ পর্বে কিছুটা বিরক্তিকর হলেও তাই সামান্য তত্ত্বীয় আলোচনায় যেতে হবে, উপায় নেই, নইলে সমস্যার মূল পরিষ্কার হবে না। আরেক দল কিছু আধুনিক ডিজিটাল আলেমদের রেফার করে চেঁচানো শুরু করবেন কোনই সমস্যা নেই, ইসলাম বিদ্বেষীরাই ইসলামের নামে মিথ্যা প্রচারনা করে আসছে। তত্ত্বীয় আলোচনা ছাড়া ওনাদের প্রিয় আলেম, ঈমাম, সহি ইসলামী সূত্র যে সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে ওনাদেরই মদদে সাড়ম্বড়ে অবস্থান করছে তা পরিষ্কার হবে না।
মোকসুদুল মোমেনিন নামের কিতাব একখানা ইসলামী দৃষ্টিতে পারিবারিক সম্পর্কিত কিতাব অত্যন্ত জনপ্রিয়, আজকের দিনে জাকির নায়েক জাতের ডিজিটাল আলেমদের কাছে জনপ্রিয়তায় পেরে না উঠলেও এক সময় এর জনপ্রিয়তা উচশিক্ষিত মহলেও এতই ব্যাপক ছিল যে শ্রেনী নির্বিশেষে যেকোন বিয়ে শাদীতে অবধারিতভাবে নবদম্পতির পাথেয় হিসেবে কয়েক কপি উপহার পড়ত। এই কিতাবে ইসলামী জীবন বিধানের নামে আছে বেশ কিছু হাস্যকর, চরম নারী অবমাননাকারি বিধিবিধান; অথচ এই বই এর ৫০ এর ওপর সংস্করন বেরিয়েছে। এটা রেফার করে কেউ ধর্মীয় বিধানের সমালোচনা করলে অবধারিতভাবে শুনতে হবে যে এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, লেখক ‘দেওবন্দি’ / বিতর্কিত এমন নানান অজুহাত। এসব মেনে নিলেও বলতে হয় যে সেক্ষেত্রে লাখ লাখ লোককে ভুল ইসলাম শেখানো বই বহাল তবিয়তে অর্ধশতাব্দীরও ওপর কি ভাবে চলে আসছে? ভুল ইসলাম শেখানো এই কিতাব এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে, নিষিদ্ধ করার দাবী কয়জন আলেম আজ পর্যন্ত করেছেন? বিকৃত ইসলাম নিয়ে সোচ্চার ব্লগের ইসলামী পন্ডিতরাই বা কি কারনে মোকসুদুল মোমেনিন, নিয়ামুল কোরান জাতের বই নিয়ে নীরব থাকেন? ব্লগের ইসলাম বিদ্বেষীদের লেখা পড়ে কয়জনে ভুল ইসলাম শেখে আর মোকসুদুল মোমেনিন/নিয়ামুল কোরান পড়ে কয় লাখ লোকে ভুল ইসলাম শেখে?
মোকসুদুল মোমেনিন জাতের দূরবর্তি সূত্র বাদ দিয়ে কিছু মূল সূত্রের দিকে যাই, ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের উদাহরন ইসলামী দৃষ্টিভংগীতে বিধর্মী বিশ্বাস/বিধর্মীদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ রাখব, তাও অতি সংক্ষিপ্তাকারে, সংশ্লিষ্ট সব আয়াত আলোচনা সম্ভব নয়। আগের পর্বের আলোচিত বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদের আহবান জানানো আয়াতের আগে একই সূরাতে আরো আয়াত আছে যা পড়লে বিধর্মীদের ব্যাপারে কোরানিক বিধি আরো পরিষ্কার হয়। সরকারের শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস প্রনয়নকারীগন নিশ্চয়ই শুধু এক আয়াত ভর করে পরবর্তি প্রজন্মকে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও যুদ্ধ জেহাদের আহবান জানাননি। আয়াতঃ ৯-২৯; যারা আল্লাহতেও ঈমান আনে না ও শেষ [বিচারের] দিনেও বিশ্বাস করে না, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ [ঘোষণা] করা হয়েছে, তা নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে না, [যদিও তারা কিতাবধারী জাতি তবুও] তারা সত্য দ্বীনকে স্বীকার করে না; তাদের সাথে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা স্ব-ইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জিজিয়া [কর] দেয় এবং নিজেদের পরাভূত মনে করে । [১] (ইউসুফ আলীর তাফসিরও এখানে আছে)। অত্যন্ত পরিষ্কার আয়াত, ব্যাখ্যার তেমন দরকার পড়ার কথা না। তবে গত লেখায় উল্লেখ করেছি যে কোরান বোঝার কিছু বিশেষ পদ্ধুতি আছে যেগুলি অনুসরন না করলে ইসলামবিদদের মতে কোরানের বেশ কিছু আয়াতের প্রকৃত মানে সম্পর্কে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। সে কারনে গভীর ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন আলেম স্কলারদের শরনাপন্ন হতে হয়। এই পদ্ধুতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরাও একটু দেখি ইসলামী জগতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট আলেম ঈমামগন কি বলেন।
জিজিয়ার ব্যাপারে জাকির নায়েকের ব্যাখ্যা দিয়ে শুরু করা যাক। এ জাতীয় আধুনিক যুগের ব্যাখ্যাকারীগণ যারা ইসলাম বিদ্বেষী কিংবা সংশয়ে ভোগা মুসমানদের বিভ্রান্তি কাটাতে বিখ্যাত তারা অন্তত এটা বোঝেন যে মূল অর্থ সরাসরি বললে কিংবা সনাতন ধারার ব্যাখ্যাকারকদের (যেসব সূত্র পরম সম্মানের সাথে শত শত বছর ধরে ইসলামী জ্ঞানচর্চার জগতে ব্যাবহৃত হচ্ছে) রেফার করলে ইসলাম বিধর্মীদের ব্যাপারে অনুদার ও সাম্প্রদায়িক এমন অভিযোগ অস্বীকার করার কোন উপায় থাকে না তাই তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সুগার কোটিং এর মাধ্যমে যথাসাধ্য মোলায়েম করার জন্য। সুগার কোটিং এর উপায় হল আয়াতের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে, সব বিধর্মীদের জন্য ঢালাওভাবে প্রযোজ্য নয়, সাথে সাথে আরেকটি অপেক্ষাকৃত উদার আয়াত কোট করে বা নবীজির উদাহরতার কাহিনী বলে দিয়ে ব্যালেন্স করে ফেলা, অন্য ধর্মগ্রন্থেরও আপত্তিকর বিষয় সমূহ কোট করা (পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া যে আমাদেরটা আপত্তির তো কি হয়েছে, অন্যদেরটা আরো আপত্তিকর) ইত্যাদী। বিস্ময়কর ভাবে উদারতার উদাহরন হিসেবে পেশকৃত ‘লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন’ জাতীয় আয়াত সমূহের ক্ষেত্রে কেউ আবার এসব জটিল প্যাঁচানো পদ্ধুতির তালাশ করেন না। তখন আর কন্টেক্সট বোঝার দরকার পড়ে না, কেবলমাত্র সে সময়কার বিশেষ কয়েকজন কাফেরের উদ্দেশ্যেই এই উদার বানী সীমাবদ্ধ সকল কাফেরের জন্য নয় এমন উকিলী যুক্তি অবতারনার দরকার পড়ে না।
ইউসুফ আলী যুগের হিসেবে অনেক আধুনিক, তার ব্যাখ্যাও অপেক্ষাকৃত উদার। ওনার মত ব্যাখ্যাই এখনকার ইসলাম সেবক ভাইরা এ আয়াতের ক্ষেত্রে দেন। যেমন জিজিয়া কর হল মুসলমান রাজ্যে বসবাসকারি অমুসলমানদের নিরাপত্তার অর্থমূল্য, এমনকি এর বিনিময়ে অমুসলমানদের দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়……মুসলমানদের যাকাতের বিপরীতে এটা অমুসলমানদের জন্য ধার্যকৃত কর, জিজিয়ার পরিমান অতি সামান্য, অনেক বিধর্মী আবার মানবিকতার কারনে জিযিয়ার আওতামুক্ত……ইত্যাদী। যাক, এসব যুক্তির সারবত্তা বিশ্লেষন আমার এ আলোচনার অংশ নয়। জাকির নায়েক জিযিয়া করের সংশ্লিষ্ট আয়াত ৯-২৯ আদৌ কোটই করেননি, কারন সম্ভবত এতে সকল অমুসলমানের প্রতি যুদ্ধ করে পরাজিত করার উদাত্ত আহবান আছে যা বেশ অস্বস্থিকর, এটা কোট করাটা নিরাপদ নয়। তাই সংশ্লিষ্ট আয়াত এড়িয়ে অন্য সুরার অপেক্ষাকৃত নমনীয় আয়াত (৬০-৮) টেনে এনেছেন করেছেন সুগার কোটিং নীতিতে, আজব না? জিযিয়ার কথা ৯-২৯ এ আছে নাকি ৬০-৮ এ আছে? ভাবখানা এমন যে জিযিয়ার মাঝে ট্যাক্স ছাড়া আর কিছুই বিবেচ্য নেই। জামাল ওয়াদি ইমাম শাফি রেফার করে কি বুঝিয়েছেন উনিই বোঝেন, কিন্তু সেই ইমাম শাফির বিস্তারিত জিযিয়া/জেহাদের তত্ত্ব বর্ননা করেননি (পরে করছি), কেন করেননি পরিষ্কার হবে। আরো মজার কথা বলেছেন যে জিযিয়া নিতেই হবে এমন কথা নেই। কাউকে মানুষ মারার ফ্রী লাইসেন্স দিয়ে যদি ডিফেন্ড করেন যে হত্যা করতেই হবে এমন তো বলা হয় নাই তো কেমন শোনায়? মূলধারার স্বীকৃত তাফসিরে দেখা যাবে আসল গুরুত্বটা কোথায়, আপাত নিরীহ ট্যাক্সের টাকার হিসাবে নাকি অন্য কিছুতে। জিযিয়ার এত গুনাবলী থাকা সত্ত্বেও ওনারা কেন মুসলমান দেশগুলিতে এটি কায়েমের আহবান জানান না কে জানে। ওনারা যেভাবে জিযিয়ার গুনাবলী বয়ান করেন তো মনে হয় বিধর্মীদেরও উচিত জিযিয়ার আওতায় স্বেচ্ছায় ঢুকে যাওয়া।
প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কিত কোন কথা আয়াতে আদৌ নেই, আয়াতে আছে জিযিয়া না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করা, পরাজিত করে বশ্যতা স্বীকার করানো। অথচ ওনারা আয়াতের সরাসরি বিষয় গুরুত্ব দেন না, গুরুত্ব দেন যা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বাইরের সূত্র থেকে আমদানী করা যায় তা। জিযিয়ার আসল তাতপর্য যে বিধর্মীদের পরাভূত করে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানানো এটা ওনারা পাঁকাল মাছের মতই এড়াতে পারেন। যাকাত আর জিযিয়া কিভাবে সমতূল্য হয় কে জানে। যাকাত না দিলে কাউকে যুদ্ধ করে হত্যা করার হুমকি কিংবা রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে না বলে ঘোষনা দেওয়ার কথা কোরানে আছে বলে আমি আজতক শুনিনি, জাকির নায়েকরা হয়ত শুনেছেন।
জাকির নায়েক কোরানের তাফসিরকারক নন, ওনার লেকচার মাদ্রাসা বা ইসলামী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় কিনা জানি না। ইউসুফ আলীর তাফসির তুলনামূলক ভাবে অনেক আধুনিক ও সংক্ষিপ্তও। তাফসীর জগতে অন্যদের তূলনায় তেমন একটা জনপ্রিয়ও মনে হয় না। এবার একই আয়াতের অন্য দুয়েকটি আরো বিস্তারিত ও জনপ্রিয় তাফসির দেখি।
জালালাইন , ইবনে কাথির ইসলামী জ্ঞানের জগতে বহু শত বছর ধরে বিপুল জনপ্রিয় তাফসির লেখক যাদের তাফসির ইসলামী একাডেমিক লাইনে পাঠ্য। জালালাইন সাহেবের ব্যাখ্যা বেশ সংক্ষিপ্ত; তাদের পরাজিত করে ইসলাম অনুগত বানিয়ে জিজিয়া কর আদায় করতে হবে, মামলা শেষ। ইবনে কাথির সাহেব আরো বিস্তারিত বলেছেন । উনি এই আয়াতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে অনুপম কনক্লুশনে পৌঁছেছেন; “Therefore, Muslims are not allowed to honor the people of Dhimmah or elevate them above Muslims, for they are miserable, disgraced and humiliated” (ধিম্মি বলতে ইসলামী শাসনাধীনে থাকা বিধর্মীদের বোঝায়)। লক্ষ্য করুন, এখানেও কিন্তু এই ব্যাখ্যাকে ততকালীন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি যেভাবে এসব আয়াত আধুনিক এপোলজিষ্টরা প্রচার করতে চান, ইউনিভার্সেল সুরেই বলা হয়েছে। এরপর কাথির সাহেব সহি হাদীস থেকে এই শিক্ষার ব্যাবহারিক প্রয়োগের উদাহরন কোট করেছেন, “Do not initiate the Salam to the Jews and Christians, and if you meet any of them in a road, force them to its narrowest alley……” কি চমতকারই না মানবতার শিক্ষা আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেমগন ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে চিরকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন পাথেয় হিসেবে শিখিয়ে যাচ্ছেন ভাবলেই মনে অনাবিল শান্তি বয়ে যায়, ধর্মশিক্ষা বই এর প্রনেতাগনের তত্ত্বীয় বিদ্যায় মনে হয় সংশয়ের কিছু নেই, ওনারা যথেষ্ট জেনে বুঝেই স্কুলের বাচ্চাদের জন্য বই লিখেছেন বলেই মনে হয়।
এবার আধুনিক যুগের একটি অতি জনপ্রিয় কোরান তাফসির, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি শাফি উসমানি (রাঃ) সাহেবের মারেফুল কোরান খোলা যাক। এই তাফসির আরো বিস্তারিত এবং বোধকরি আরো জনপ্রিয়। বেশ কিছু বাংলা ইসলামী সাইটেও এই তাফসিরের বাংলা অনুবাদ বিনে মাগনায় পাওয়া যায়, বোধকরি বিশাল জ্ঞান ভান্ডার বলেই। সৌদী সরকারের বদান্যতায় সবুজ রঙ্গা এই তাফসিরসহ কোরানের বাংলা/ইংরেজী কপি বাংলাদেশসহ বিনামূল্যে পৃথিবীর বহু দেশে বিলি করা হয়েছে, আমার কাছেও এক কপি আছে। বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডার বহু মসজিদে সেই সবুজ তাফসিরখানি সযত্নে রক্ষিত আছে আমিই দেখেছি। সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই অমূল্য ইসলামি জ্ঞানের বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করিয়েছে, ভূল থাকলে নিশ্চয়ই নানান দেশের সরকারী পর্যায় থেকে এটা প্রচারনার এত ঘনঘটা দেখা যেত না, নিদেন পক্ষে অন্তত সংশোধনী আসত। সৌদী সরকার বা বাংলাদেশ সরকার কেন পয়সা খরচ করে ভুল ইসলাম শেখাতে যাবে? সেটা কোন কারনে সম্ভব হলেও দেশ বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে কেনই বা ভুল তাফসির পরম যত্নে রাখা হবে, ইসলামী ওয়েব সাইটগুলিতেই বা কেন এর জোর প্রচারনা থাকবে? কাজেই এর অথেন্টিসিটিতে সংশয়ের যৌক্তিক কারন আমি দেখি না।
এই তাফসিরকারক বেশ সাবলিল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন কেন ইহুদী/খৃষ্টানরা আহলে কিতাবধারি হলেও তাদের সাথে মুশরিক গোছের কাফেরদের মতই যুদ্ধ করতে হবে, যাতে কারো মাঝে একশ্বেরবাদীদের সাথেও যুদ্ধবাজীর ব্যাপারে আর সংকোচ না থাকে। ওনার ব্যাখ্যার ইন্টারেষ্টিং অংশঃ
মারেফুল কোরান, ভ্লল্যুম-৪ (পৃষ্ঠা-৪০৩) ।
ওনার মূল্যবান ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কুফর ও শিরক হল মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ। শুধুমাত্র ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে কেউ মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধী এমন ধারনা নিঃসন্দেহে সমসাময়িক বিশ্বের আইনী জগতে যুগান্তকারী অবদান আনতে পারে। অসীম দয়াবান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের মারফত সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ক্রিমিনালদের শাস্তি রদ করে দিচ্ছেন। তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে ইসলামী বিশ্বাস ছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী (এমনকি একশ্বেরবাদী খৃষ্টান/ইহুদীও মাফ পাচ্ছে না) হওয়া এমনই ভয়াবহ অপরাধ যার যথাযথ শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যা লোকজনকে গাঁটের পয়সা খরচ করে শেখাচ্ছে। তালেবানদের আর গালি দেই কোন মুখে, তারা তো অন্তত ভন্ড নয়। তালেবানদের সম্পর্কে বহু কথা শুনলেও তারাও এমন কোন ফতোয়া দিয়েছে বলে এখনো শুনিনি। আরব দেশের সরকার সহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে বিশ্বময় জিহাদী কনসেপ্ট রফতানীর অভিযোগ আছে, আমাদের সরকার মনে হয় আপাতত নিজ দেশেই এ কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তবে হ্যা, কাফেরদের বিরুদ্ধে যেন জুলুম করা না হয় তাও লক্ষ্য রাখতে হবে সেটা বুজুর্গ আলেম সাহেব সতর্ক করেছেন। নবীজির রেফারেন্সে উনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কেউ অমুসলিম নাগরিকের ওপর জুলুম চালালে নবীজি নিজে হাশরের ময়দানে সেই জালেমের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন (মারেফুল কোরান, ভ্লল্যুম-৪ (পৃষ্ঠা-৪০৪) )
বিজ্ঞ আলেম আবারো সবশেষে সতর্ক করেছেন যে জিজিয়া করকে যেন কোনভাবেই বিনিময় মূল্য হিসেবে দেখা না হয়, কারন এটা হল কাফেরদের মৃত্যুদন্ড মওকুফের বিনিময় মূল্য। কাউকে গায়ের জোরে পরাভূত করে তার জানের হুমকি দিয়ে, ‘তাবেদার প্রজা’ বানিয়ে অর্থ আদায় (মূল্য যাইই হোক) কিভাবে জুলুম ছাড়া আর অন্য কোন শব্দে অভিহিত করা যেতে পারে তা অনেক ভেবেও আমি পাইনি, হৃদয়ে সীল গালা না পড়লে নিশ্চয়ই বুঝে যেতাম। ধর্মজগতের যুক্তিবোধ বুঝতে গিয়ে অনেক সময়ই এমন খাবি খেতে হয়।
আরেক সাড়া জাগানো আধুনিক তাফসিরকারক মাওলানা মওদূদীর তাফসিরেও (তাফহিম-আল-কোরান) একই রকম কথাই আছে। এই ভদ্রলোক প্রধানত রাজনৈতিক কারনে বেশ বিতর্কিত, অনেক আলেম ওলামাও ওনাকে মানেন না। এমনকি আমাদের দেশেও বর্তমানে নিষিদ্ধ হলেও অনেক দেশের কোটি কোটি মুসলমানের চোখে উনি এখনো বিরাট বুজুর্গ আলেম। আরব সরকার ওনার ইসলামী জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে ওনাকে বিশেষ পুরষ্কারও দিয়েছে। মওদুদীর ব্যাখ্যাও ইবনে কাথির, মারেফুল কোরানের মতই, বরং আরেক ডিগ্রী বাড়া। জিজিয়া করের ব্যাপারটা যেভাবেই চিন্তা করা হোক সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উদাহরন হিসেবে অনেক মুসলমান কিছুটা হলেও লজ্জিত বোধ করে জাকির মিয়াদের কায়দায় আসল কথা চেপে যায় বলে উনি তাদের কড়া ভাষায় ধমকে দিয়েছেন। দেবারই কথা, কোরান আল্লাহর অভ্রান্ত বানী হিসেবে আসলেই বিশ্বাস করলে তা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা কিংবা পালনে ধানাই পানাই কিসের? তাদের তো মুনাফেক বলাই সংগত বলে আমিও মনে করি। যাক মওদূদী বাদ থাক, জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা এনাকে নিয়ে বেশী টানা হ্যাঁচড়া করলে আবার আমার ভেতর ছাগ গন্ধ পাওয়া যাবে, মূল পয়েন্টই মাঠে মারা যাবে। যদিও এনাকে হেলাফেলারও উপায় দেখি না, কারন শুধু জামাত শিবিরের সূত্রে নয়, খোদ ইসলাম রক্ষক ভাইদের সাইটে এনার অথেন্টিসিটির সার্টিফিকেট আছে।
ইমাম গাজ্জালী ইসলামী জগতে অতি সম্মানিত আলেম, অতি উচ্চমানের দার্শনিকও বটেন, ওনার পরিচয় দেবারও দরকার পড়ে না, নামেই ওনার পরিচয়। ‘কিমিয়ায় সাদাত’ বা ‘সৌভাগ্যের পরশমনি’ নামের ভদ্রলোকের এক অতি জনপ্রিয় বই আছে যা সমগ্র বিশ্বেই মুসলমান সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেখান থেকে বিধর্মীদের সম্পর্কে ওনার উচ্চমানের দর্শন একটু পাঠ করিঃ (পৃষ্ঠা-১১৯)
“আল্লাহর উদ্দেশ্যে শত্রুতার পরিচয় – “যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাহার আজ্ঞানুবর্তি বান্দাগনকে ভালবাসিবে সে স্বতঃ (মনে হয় সতত হবে) কাফির, জালেম, গুনাহগার, ও ফাসিকদিগকে শত্রু মনে করিবে”। আমরা এই অমূল্য দর্শন পেলাম যে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা বান্দাদের ভালবাসার পূর্বশর্ত হল কাফেরদের শত্রু বিবেচনা করা। আধুনিক কালের কিছু ফতোয়াতেও আমি একই কথাই পেয়েছি। এরপর উনি যত্নের সাথে আল্লাহর সেসব শত্রুদের বৈজ্ঞানিক শ্রেনীবিন্যাস করেছেন। আল্লাহর শত্রু হিসেবে প্রথম শ্রেনী প্রাপ্ত হল সেসব কাফের যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিগ্রহ করে, এতে তেমন আপত্তির কিছু অবশ্য নেই, যুদ্ধ করলে তাকে ঘৃনা করা যেতেই পারেই। এরপর দ্বিতীয় শ্রেনীর শত্রুর বর্ননা;
ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপার আছে এটা ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যা প্রচারনা মেনে নিলে সিদ্ধান্ত টানতে হয় যে সরলমনা জাকির নায়েক মনে হয় জানেন না যে কিছু ইসলাম বিদ্বেষী তার পিস টিভি চ্যানেলে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে চলেছে, যেমনটা ইসলাম বিদ্বেষীরা অন্তত গত ১৬ বছর যাবত বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ধর্মশিক্ষা বই বিনা বাধায় প্রকাশ করে চলেছে, বিধর্মীরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য ঘৃন্য অপরাধী বলেও ঈমানী কিতাবে সাড়ম্বড়ে প্রচারিত হচ্ছে। ওনার সুবিখ্যাত পিস টিভির দুজন খ্যাতিমান নিয়মিত বক্তার কথা বিধর্মী বিষয়ে শোনা যাক।
সুন্নী সফেদ চেহারার আবদুর রহমান গ্রিন সাহেব জন্মগতভাবে একজন ব্রিটিশ মুসলিম কনভার্ট, IERA নামক এক ইসলামী দাওয়াহ সংস্থা প্রতিষ্ঠাকারী, জাকির নায়েকের পিস টিভি ছাড়াও লন্ডন ভিত্তিক ইসলাম চ্যানেলেরও একজন নিয়মিত বক্তা, লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদের সাথে সম্পর্কিত। টিভি ছাড়াও বিশ্বের বহু যায়গায় তিনি ইসলাম বিষয়ে বক্তৃতা দেন, বিতর্কে সামিল হন। বিধর্মী বিষয়ক ইসলামিক বিধিবিধান সম্পর্কে ওনার বক্তব্য বেশ বিস্তারিত এবং পরিষ্কার, ইবনে কাথির, মারেফুল কোরান, ইমাম গাজ্জালীর সাথে তেমন কোন তফাত নেই। “The prophet warned us be careful who you take as your friend because you will take your deen from your friend. You will take your religion, you will take your way of life from your friend. And this is one of the reasons why Allah (SWT) he has warned us in his book do not take the disbelievers as your awliya, do not take the Jews and the Christians or the mushrikeen as your awliya, do not prefer them to the believers, do not prefer their company to the company of the believers. Do not take them as your, and what is the word awliya? What does it mean? It has a meaning of friendship, close friendship. It has the meaning of your adviser, your protector.” For example, open Bukhari you will find the hadith that if you find the Jew or a Christian walking down the street, push them to the side. It is well known from what Umar ibn al-Khattab and the khulafa ar rashidin used to implement, that the Jew and Christian was not allowed to ride on a horse when the Muslim is riding on a horse. They would have to walk. Allah he said in the Quran about the jizya that you, that fight the people of the book, Allah (SWT) said, it’s in the Quran, fight the people of the book and those who do not believe that what Allah has made lawful as lawful and what Allah has made unlawful as lawful, until they pay the jizya and feel themselves subdued. The purpose of the jizya is to make the Jew and the Christian know that they are inferior and subjugated to Islam,. মারেফুল কোরানের তাফসিরকারকের মতই এই ভদ্রলোকেরও রসবোধের প্রসংশা করতেই হয়। In the Muslim state, although the Jew and Christian is free to practice their religion, this is allowed, but they can not display their cross and even in the time of Umar they were not allowed to re-construct or construct new churches. All of this is to create an atmosphere where the, it is encouraging the people to come to iman and Islam, not to remain upon kufr and misguidance. Yes there is, we do not force people, we do not say ‘You must become Muslim or we kill you.’ That’s not correct. But it is from Islam to create an environment where people are pressurised and encouraged to be upon the path of haq and we do not encourage people to be on the way of…কাউকে হাতজোড় করিয়ে জানের বিনিময়ে অর্থ আদায় করে, রাস্তার এক পাশ থেকে আরেক পাশে ঠেলে দিয়ে, ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করে, ধর্ম পালনের অধিকার সংকুচিত করে, তারপর জুলুম করতে কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে কিংবা ধর্ম গ্রহনে কোন রকম জোর জবরদস্তি নেই দাবী করা জাতীয় উতকট রসিকতা মনে হয় কেবল প্রথাগত ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী হলেই করা যায়। ভদ্রলোক অবশ্যই শান্তিকামী ব্যাক্তি, মুম্বাইতে পিস কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়েছেন। ভদ্রলোকের পরের ভিডিওগুলি দেখলে শান্তির বানী আরো পরিষ্কার হতে পারে। কারো ইয়াহুদী নাছারার ইউটিউবে সংশয় থাকলে হালাল টিউবে ভদ্রলোকের শান্তির বানী আরো পূর্নাংগভাবে উপভোগ করতে পারেন।
মালয়েশিয়ার আরেক বিশিষ্ট আলেম হুসেইন ইয়ে (সম্ভাব্য ইসলাম বিদ্বেষী) জাকির নায়েকের পিস টিভি চ্যানেলেই কেন ইহুদী এবং খৃষ্টানরা চির অভিশপ্ত এবং ভ্রান্ত পথের যাত্রী তা হাসিমুখে ব্যাখ্যা করছেন, অসংখ্যা গুনগ্রাহী ঈমান্দার শ্রোতা মুগ্ধ চিত্তে তা উপভোগও করছেন। কোরান হাদীস মানলে ওনার কথা কিভাবে অস্বীকার করা যায়? আর অস্বীকার না করলে কিভাবে এসব বিধর্মীর সাথে সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক সম্ভব? জেনে শুনে চির অভিশপ্ত/পথভ্রষ্ট লোকদের সাথে সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে কে চাইবে?
ইমাম শাফি ইসলামী জগতে অতি সম্মানিত একজন আলেম যার রেফারেন্স দিয়ে জাকির নায়েকের সহযাত্রী জামাল বাদাওয়ি জিযিয়া কত মহান তা বয়ান করেছেন। ইসলাম প্রিয় ভাইদের স্বপ্নের মানব মুক্তির খোদাই সংবিধান শরিয়া আইনের (যা তারা কাফের নাছারাদের জাহেলী দেশেও চালু করতে চান) যে চারটি ভাগ আছে তার মধ্যে ওনার মতানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত শাখা ২ নম্বরে, উইকির হিসেবে সুন্নী মুসলমানদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শাফি মতবাদ অনুসারী। শতকরা যতভাগই হোক, উনি সবার কাছেই একজন অতি সম্মানিত শীর্ষ আলেম। ওনার মতামত ভিত্তিক শরিয়া অনুযায়ী ( [২] সেকশন book ‘O’ ৯-৮ – ৯-১১) জিহাদ মানে হল যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ শুধুমাত্র রক্ষনাত্মক কারনেই নয়, বিধর্মীদের আক্রমন করে তাদের দেশ দখল করা জায়েয (এমনকি কর্তব্য) বলে উনি হাদিস কোরান ঘেঁটে প্রমান করেছেন। ওনার মতে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফাদের দায়িত্ব খৃষ্টান, ইহুদী, ও জরোবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা । কেবল আগে তাদের ইসলামে দাওয়াত দিতে হবে, যদি তারা সে দাওয়াত গ্রহন না করে তবেই এই ৯-২৯ আয়াত প্রয়োগ করে তারা যে পর্যন্ত না পরাজয় স্বীকার করে যুদ্ধ করে যেতে হবে, এর মাঝে অন্যায়ের তো কিছু নেই, তারা একমাত্র সত্য ধর্মের দাওয়াত গ্রহন না করলে তাদের হেদায়েতের আর উপায় কি? তবে যাদের আসমানী কিতাব নাই তাদের কপালে জিযিয়া দিয়েও রেহাই পাবার অপশন উনি রাখেননি, তাদের মুসলমান বনে যাওয়া কিংবা দাসত্ব গ্রহন ছাড়া গতি নেই। ওনার পুরো কিতাবে আছে অমুসলমানদের সাথে দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় অজস্র মূল্যবান নির্দেশাবলী (সোজা বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানানো) যার সব না হলেও বেশ কিছু পালিত হতে আমিও নিত্য দেখি। শরিয়া আইনের বৃহত্তম শাখা হানাফি আইন বিধর্মীদের প্রতি এতটা কট্টর নয় বলে শুনেছি (যেমন হানাফি আইন কিতাবহীনদেরও জিযিয়া দিয়ে রেহাই পাবার অপশন দেয়), যদিও শাফি আইনের মত পূর্নাংগ কোন মূল হানাফি আইন শাস্ত্রের বই ওয়েবে পাইনি। শরিয়া আইনের সব শাখাতেই মুসলমান অমুসলামানের বিভেদ অত্যন্ত প্রকট, বিশেষ করে অমুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার চরম ভাবে সীমিত। শরিয়া আইনে চলা দাবী করা দেশগুলিতে এসব বিভেদ মূলক আইন নানান মাত্রায় এ আমলেও পালিত হয়। যেমন আরব দেশের আদালতে একজন মুসলমানের বিরুদ্ধে একজন অমুসলমানের স্বাক্ষ্য গ্রহন নাও করা হতে পারে। সেখানে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম প্রচার তো দূরের কথা, কারো কাছে ক্রুশ, বাইবেল, কিংবা এ জাতীয় ভিন্ন ধর্মগ্রন্থ কিংবা সংস্কৃতির চিহ্ন পাওয়া গেলে ফৌজদারী আইনে তার জেল, জরিমানা বেত্রাঘাত এসব সাজা হয়। সত্য অস্বীকারকারী অমুসলমানরা সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব বলে ধর্মানুভূতি কিছুটা কম থাকায় রক্ষা, নইলে তারাও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার নিত্য শোরগোল করে গেলে দুনিয়া আর বসবাসের যোগ্য থাকত না, আমাদেরো তাদের দেশে প্রবাস জীবন হয়ে উঠত দোজখেরই মত।
পাকিস্তানে ’৫৩ সালে আহমেদিয়াদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়াবহ রক্তক্ষয়ি দাংগার পর সরকার বিচারপতি মুনীরের পরিচালনায় একট তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশন ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কিত তদন্ত করতে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাদের সাক্ষাতকার নিয়ে রিপোর্ট দেয়। সে রিপোর্টে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থানকারি বিধর্মীদের অধিকারের ব্যাপারে তাদের মত সামারাইজ করা হয়েছে; “According to the leading ulama, the position of non-Muslims in the Islamic State of Pakistan will be that of zimmies, and they will not be full citizens of Pakistan, because they will not have the same rights as Muslims. They will have no voice in the making of the law, no right to administer the law, and no right to hold public offices.”
বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম ওলামাদেরও নি:সংকোচে মতামত নিলে এর চেয়ে ভিন্ন কিছু পাওয়া যাবার সম্ভাবনা কতটা? এসব আলেম স্কলারদের নিজের কোলে ঝোল টানার প্রবনতা দেখলেও চমতকৃত হতেই হবে। এনাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ভারতীয়রা একইভাবে সে দেশের মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে ধর্মীয় অধিকার সংকুচিত করলে কেমন হবে? ওনারা সেটা কোনভাবেই মানবেন না, সেক্ষেত্রে ভারত দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে কেউ কেউ সাফ মতামত দিয়েছেন। ইসলাম প্রচারে শক্তির প্রয়োগ (আক্রমনাত্মক জেহাদ) এনারাও সহি মনে করেন। নিজের কোলে ঝোল টানার নির্লজ্জ প্রবনতা আধুনিক ডিজিটাল আলেম/ব্লগীয় আলেমদের মাঝেও দেখা যায়। তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করেন যে বিধর্মী দেশে তাদের পূর্নমাত্রায় ধর্মীয় অধিকার থাকবে, কিন্তু নিজেদের দেশের বিধর্মীদের সে অধিকার থাকবে না। জাকির মিয়া ‘ব্রাক্ষ্মন্যবাদী’ ভারতে বসে ভারতসহ দুনিয়াময় ইসলাম প্রচার করেন, কিন্তু আরব দেশের বিধর্মীদের ধর্মীয় অধিকার চরম ভাবে সংকুচিত করা কোরানের বানী রেফার করে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। নিঃসন্দেহে জাকির মিয়ার মত মানসিকতার লোকে ঝাড়ে বংশে কোনদিন ভারতে কিংবা আমেরিকায় সংখ্যাগুরু হলে আরব দেশের মতই আইন বানিয়ে বিধর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানাবার স্বপ্ন দেখেন ভাবাটা নিশ্চয়ই ভুল হবে না।
গত লেখাতেই বলেছিলাম যে আমার মূল উদ্দেশ্য ইসলাম বা কোরান বিধর্মীদের সম্পর্কে কি ধারনা প্রচার করে সেটা প্রমান নয়। এখানের রেফারেন্সগুলি দিচ্ছি তার কিছু কারন ইসলামের নামে ভ্রান্ত শিক্ষা (ভ্রান্ত বলার কারন ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইদের দাবীর প্রতি সম্মান রেখে) কিভাবে বিনা বাধায় প্রচার করা হচ্ছে যুগ যুগ, শত শত বছর ধরে স্বীকৃত আলেম স্কলারদের রেফারেন্স সমেত তা পরিষ্কার করতে। বিশেষ করে যে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের কথা বার বার উল্লেখ করছি সেটার ধরন না বুঝলে সমস্যাটির স্বরুপ পরিষ্কার হবে না। আশা করি মোটা দাগের ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। আধুনিক কালের ধূর্ত ডিজিটাল আলেমগণ অনেক রেখে ঢেকে আপত্তিকর বিষয়গুলি চেপে রেখে, আরেক সুরা থেকে অপেক্ষাকৃত নমনীয় আয়াত কোট করে, অমুসলমানের প্রতি ভাল ব্যাবহারের কিছু ক্লাসিক উদাহরন মধুর ভংগীতে বয়ান করে বিদ্বেষী/সংশয়বাদীদের মোক্ষম জবাব দিয়ে দেন, উপস্থিত ঈমান্দার ভাইদের সব সংশয় কেটে যায়, বিপুল হাততালিতে হলঘর ফেটে পড়ে। এসব আলেমগনের ব্যাখায় ঘুনাক্ষরেও মূল ধারার স্বীকৃত তাফসিরকারক, প্রবাদ প্রতীম ইমামদের সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা থাকে না। পরিষ্কার বোঝা যায় যে ওনারা মূল ধারার ব্যাখ্যা এড়াতে চান। জাকির নায়েক, ইউসুফ এষ্টেট, জামাল বাদাওয়ি এনারা কোনদিন ৯-২৯ আয়াতের ইবনে কাথিরের তাফসির কিংবা মারেফুল কোরানের ব্যাখ্যা জনসমক্ষে বলবেন? বিধর্মীদের ব্যাপারে ঈমাম শাফি কিংবা গাজ্জালীর মাসালা তারা কোনদিন ভুলেও উল্লেখ করবেন? নিজের পিস টিভির বক্তা আবদুর রহিম গ্রীনের বক্তব্যের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই এমন কথা জাকির নায়েক কোনদিন বলেছেন? নাকি এসব বড় বড় আলেম স্কলারদের কথা অনুসরন না করতে তারা কোনদিন কাউকে পরামর্শ দিয়েছেন, সংশোধনীর দাবী তুলেছেন? ইসলামী জগতে এসব ভুল শিক্ষার প্রভাব তারা জানেন না?
সত্য বলতে জাকির গংদের ষ্ট্র্যাটেজির প্রতি আমার পূর্ন সমর্থন রয়েছে। ধর্মের প্রতি মানুষের যে পরিমান অন্ধভক্তি হাজার হাজার বছরে সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে সহজ মুক্ত নেই, তাই ধর্মের ক্ষতিকর দিকগুলি এড়াতে এমন ষ্ট্র্যাটেজির বিকল্প নেই, এতে ধর্মও বজায় থাকল আবার ক্ষতিকর তত্ত্বগুলিও হয়ত বিদায় হতে পারে। অন্য সব ধর্ম এভাবেই টিকে আছে। হিন্দু কিংবা খৃষ্ট ধর্মের অমানবিক কিংবা হেটফুল নানান নিয়ম কানুন নিশ্চয়ই এ যুগের পুরুত পাদ্রীরা প্রচার করতে চান না, জিজ্ঞাসা করা হলে তারাও নানান ভাবে ধানাই পানাই করে অপ্রীতিকর বিষয়গুলি এড়াবেন। জাকির নায়েকরা কিংবা ব্লগের আলেমরা ইমাম গাজ্জালী, ইমাম শাফি, মারেফুল কোরান, কিংবা ইবনে কাথির, আলোচিত সেই ধর্মশিক্ষার বইসহ আরো অসংখ্য আলেমের দেওয়া ফতোয়া ভুল বলে সংশোধনীর দাবী তুললে এ লেখাই লেখার দরকার বোধ করতাম না। সমসাময়িক নামী দামী ইসলাম প্রচারক থেকে শুরু করে ব্লগের ইসলাম ডিফেন্ডারদের ইউনিক বৈশিষ্ট্য হল ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতি পালন করা। এনাদের একদিকে প্রশ্ন করা হলে ইসলামে কোন রকম সাম্প্রদায়িকতা, বিধর্মী বিদ্বেষ এসব নেই বলে দাবী করবেন, কখোনাবা উলটা সংশয়বাদীদের গালাগাল করবেন, আবার অন্যদিকে নিজেদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার সিলেবাসের ভেতর সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াবেন, ধর্মচর্চার নামে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার পাঠ সরকারী উদ্যোগে প্রচার করবেন, কাফের নাছারার সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ বলে বিশিষ্ট আলেমরা ফতোয়া দেবেন যার এক জ্বলন্ত প্রমান মূল আলোচনার বিষয়বস্তু নবম দশম শ্রেনীর সরকার প্রনীত ধর্মগ্রন্থ। ধর্ম প্রচারের স্বার্থে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড জায়েয আছে এটা মেনে না নিলে বলতে হয় যে এর মাঝে বড় ধরনের নৈতিক অসৎতার ব্যাপার আছে। ওনারা যা বলতে চান তা সরাসরি বললে নৈতিক অসৎতার প্রশ্ন তুলতাম না। বিশেষ করে নিজেদের প্রিয় সুপার হাই-প্রোফাইল আলেম ঈমামগনের মারাত্মক সব তত্ত্ব, মাসালা থাকার পরে যাবতীয় দায় ইসলাম বিদ্বেষীদের ঘাঁড়ে ফেলা বড় ধরনের ভন্ডামি।
ব্লগ জীবনেও এ জাতীয় ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড খেলার হাস্যকর ছেলেমানুষী মহড়া নিজেই দেখেছি। বছর দেড়েক আগে কোন এক কুক্ষনে অন্য এক ব্লগে কি প্রসংগে যেন বলে ফেলি যে কোরানের ৫-৫১ আয়াত অনুসারে মুসলমানদের খৃষ্টান/ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে মানা করা হয়েছে। এরপর একজন বড় ভাই আমার ভ্রান্ত ধারনা নিরসনে পোষ্ট দিলেন। তাতে মূল বক্তব্য এই যে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম বা মুসলমানদের ‘হেট মংগার’ প্রমানে উঠে পড়ে লেগে ৫-৫১ আয়াতের অপব্যাবহার করছে (আমিও এই দলের কিনা তা অবশ্য সরাসরি বলেননি)। ওনার মতে আলোচিত আয়াত সকল সময় কিংবা দুনিয়ার সকল খৃষ্টান/ইহুদীর জন্য প্রযোজ্য নয়, কেবল মাত্র আয়াতের প্রেক্ষাপটের মন্দ ধরনের ইহুদী/খৃষ্টানদের কথাই বলা হয়েছে। ওনার মতে বন্ধুত্ব শব্দটাও ভুল অনুবাদ, সেটা আসলে অভিভাবক (এটা শাব্দিকভাবে সঠিক তথ্য)। হতেও পারে, আমি আসলেই হয়ত ভুল বুঝেছিলাম, ওনার দাবী মত এই আয়াত কেবলমাত্র আলোচিত সেই বিশেষ গোত্রের জন্যই প্রযোজ্য হতেই পারে, কোরান আল্লাহ সকলের বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন দাবী করলেও আদতে তা বোঝা তো এত সরল নয় তা আমরা সকলেই জানি। আয়াতের বাংলা অনুবাদ রেফারেন্স দিতে উনি অধ্যাপক ইউসুফ আলীর চমতকার বাংলা অনুবাদ [১] পেশ করলেন যাতে সংক্ষিপ্ত তাফসিরও আছে। আল্লাহর কি কুদরত; ওনার নিজের পেশকৃত রেফারেন্স দেখা যায় ওনার দাবীর উলটা কথাই বলে, আমার বোঝাই সমর্থন করে (ইহুদী/খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব চিরকালের জন্যই নিষিদ্ধ)। ইউসুফ আলীর মত বিদগ্ধ আলেমরা আয়াতের মানে ভুল করেন (এমন আরো বহু অনুবাদকারী তাফসিরকারক আছেন) আওলিয়ার আসল মানে জানেন না, কিভাবে আমার বুঝে আসে না, আর সে ভুলের গুরুত্ব যে কতটা সে না হয় বাদই থাকে। আপনাকে আমি বন্ধু মানি, কিন্তু অভিভাবক কিংবা নিরাপত্তাদানকারী মানি না- এমন কথার কতটা অর্থবহ মানে হয়? আসলে বন্ধু, অভিভাবক, নিরাপত্তাদানকারী যাইই বলা হোক সবই মূলত একই ভাব প্রকাশ করে (বিধর্মীদের আপন ভাবা যাবে না) বলে প্রখ্যাত অনুবাদকারীরা একালের উকিলী দক্ষতা সম্পন্ন আলেমদের মত বন্ধু ভুল অনুবাদ এই ধারনা পয়দা করার চিন্তা করেননি। বিধর্মীদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহন নিষিদ্ধ করায় সাম্প্রদায়িকতা নেই কিন্তু বন্ধু হিসেবে গ্রহনে সাম্প্রদায়িকতা থাকত এটা কোন যুক্তিবোধে পড়ে কে জানে। ওয়েবেও বহু ইসলাম ডিফেন্ডার ৫-৫১ আয়াতে বন্ধু নয় অভিভাবক হবে এই ভুল বার করে পরম তৃপ্তি পাচ্ছেন, কেন কে জানে। এই আয়াতের মূল বিতর্কিত অংশ যে সম্প্রদায় ভাগ করে নির্দেশনা (সেটা বন্ধুত্ব, মিত্রতা ব্যাবসা, অভিভাবকত্ব যাইই হোক) সেটা ওনাদের ঈমানী মস্তিষ্কে এখনো প্রবেশ করেনি।
আমার মত এক কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষীর নাকাল হওয়ার লাইভ দৃশ্য উপভোগ করতে জুটে যান আরো অনেক ঈমান্দার ভাই, তাদের মধ্যে বাংলা ব্লগ জগতের লিজেন্ডারি দুয়েকজনও ছিলেন। আল্লাহর আরেক কুদরতই হবে, তারা অনেকেই ইসলাম বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্যে নানান মূল্যবান বানী, পোষ্ট দাতার সমর্থনে আরো কিছু আয়াত, হাদীস, আধুনিক ডিজিটাল আলেমদের ব্যাখ্যা ইত্যাদী পেশ করলেও পোষ্ট দাতার রেফার করা তাফসির যে সরাসরি পোষ্ট দাতার দাবী খন্ডন করে আমার বোঝাই সমর্থন করে এ প্রশ্ন ভুলেও তোলেননি, তাফসির ভুল সেটাও আবার বলেন না। এক পর্যায়ে যা হবার তাই হল, অবান্তর সব কথাবার্তা, মনকষাকষি। যাক, বিজয় হার আমার কথা নয়। আমার প্রশ্ন হল যে ওনারা সহি বলে শত শত বছর ধরে প্রচারিত বিভিন্ন ইসলামী সূত্র যেসব ওনাদের দাবীমতে ভুল সেসব সম্পর্কে এমন রহস্যজনক নীরবতা কেন পালন করেন? এসব ‘ভুল’ সূত্র পড়ে ভুল ধারনা প্রচারে কোন সমস্যা নেই এটা সূস্থ মাথায় কেউ চিন্তা করতে পারে?
ওনাদেরই প্রিয় সদালাপে ওনারেই প্রিয় আরেক ভাই চমতকার বাংলায় বেশ কিছুদিন ধরে একজন বিখ্যাত বয়ানকারীর কোরান তাফসির উর্দু থেকে বাংলায় সিরিজাকারে বয়ান করেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হল যে সেই আয়াতের এবং একই অর্থ বোঝায় কোরানের তেমন আরো কিছু আয়াতের বয়ান সেখানে আমার বোঝা মতই ব্যাখ্যা করলেও (মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব সাধারন ভাবেই নিষিদ্ধ) সেখানে পোষ্ট দাতা ভাই, কিংবা অন্যান্য ঈমান্দার ভাই যারা আমাকে ঘায়েল করে অশেষ তৃপ্তি পেয়েছিলেন কেউই বিন্দুমাত্র আপত্তি করেন না, উল্টো প্রসংশাই করেন। কেউই সে সব পোষ্টে বয়ানের ভুল ধরে বলেন না যে এসব আয়াত কেবলমাত্র মন্দ ধরনের বিধর্মীদের জন্যই প্রযোজ্য, কেবলমাত্র সেই প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রযোজ্য… কোরানের অন্য নমনীয় আয়াত আমদানী করে প্রমান করেন না যে ভাল ধরনের বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্বে কোন সমস্যা নেই। নিজেরা ভুল শিখলে শিখি না, অপরকেও ভুল শেখাই, কেবল ইসলাম বিদ্বেষীরা সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুললে তবেই না তাদের উদ্দেশ্যে ঝাঁপ দেব? বিধর্মীদের সাথে সাধারনভাবে সম্পর্ক নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ৫টি আয়াতের (৩-২৮, ৩-১১৮, ৪-৮৯, ৪-১৪৪, ৫-৫১) আলোচনাতেই আজ পর্যন্ত কেউই পোষ্টদাতার ভুল ধারনা/অপপ্রচার ভঞ্জনে এগিয়ে আসেননি। তবে সেই বয়ানের একই কথা কপি পেষ্ট করে আমি মুক্তমনায় পোষ্ট দেই তাহলে মৌচাকে ঢিল পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে, ইসলাম বিদ্বেষীরা কিভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের জাতি বিদ্বেষী প্রমানে লিপ্ত আছে সেই ষড়যন্ত্রের জাল খুলে যাবে।
এটা আল্লাহ পাকেরই আরেক কুদরত ছাড়া আর কি বলা যায় জানি না। তফাত শুধু ৫-৫১ এর ব্যাখ্যা সেই পোষ্টদাতার বয়ান অনুযায়ী শুধু বন্ধু নয়, অভিভাবক। যদিও সেই পোষ্টের মূল বয়ানুল কোরানের ইংরেজী টেক্সটে বন্ধু/অভিভাবক এক সাথেই আছে দেখেছি। বয়ানের মূল বক্তা প্রতিটা মুসলমান দেশের উদ্দেশ্যে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন কোরানের নির্দেশ মানছে না বলে, করারই কথা। নবীজির মার্তৃভূমি সৌদী আরবের নিরাপত্তাদানকারী হল কাফের আমেরিকা, বয়ানকারীর জন্মভূমি পাকিস্তানেরও গডফাদার আমেরিকা ও চীন, এরকম বহু উদাহরন আছে। ব্যাক্তি জীবনেও বিভিন্ন মুসলমান দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান ইউরোপ আমেরিকার বিধর্মী দেশগুলিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ধন্য হয় (আশ্রয় গ্রহনকারি দেশকে বন্ধু নাকি অভিভাবক বলা যেতে পারে এ নিয়ে জোর বিতর্ক চলতে পারে) তাদের অনেকেও বোধকরি কোরানের এসব আয়াত যে সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য তাতে কোনরকম সংশয় প্রকাশ করবেন না। রাজনৈতিক আশ্রয় ছাড়াও কত হাজার মুসলমান স্রেফ উন্নত জীবনের লোভে পশ্চীমা বিধর্মী দেশগুলিকে ‘অভিভাবক’/’নিরাপত্তাদানকারী’ মেনে নাগরিকত্ব গ্রহন করে এসব বয়ান শুনে সাবাশি দেন তার হিসেবই বা কে রাখে। বাংগালীরা ’৭১ সালে মুশরিক ভারতকে বন্ধু/নিরাপত্তাদানকারী/অভিভাবক মেনে যে কি ভয়াবহ অপরাধ করেছিল ভাবতেই ভয় হয়, তাও আবার উম্মার একতা ভেংগে স্বজাতি মুসলমান পাকি ভাইদের বিরুদ্ধে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক/ছাত্র গণহারে কেন পাক সমর্থক ছিল বুঝতে তেমন কষ্ট হবার কথা না, এ নিয়ে অবশ্য পরে লেখব। ভাগ্য ভাল যে বেশীরভাগ লোকে ধর্ম সম্পর্কে তেমন জানে না। কে জানে, এখন হয়ত শোনা যাবে যে আলোচিত আয়াত কেবলমাত্র আরব দেশের খৃষ্টান/ইহুদীদের জন্য, আমেরিকান খৃষ্টান/ইহুদীদের জন্য প্রযোজ্য নয়… ‘ব্রাক্ষন্যবাদী ভারতীয়দের’ অভিভাবক মানতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এটা আদিলের আবিষ্কার কোরানের কোথাও নাই, কোরানের আয়াত আরব দেশের খৃষ্টান/ইহুদীদের ব্যাপারে…মোমিন বান্দারাও সহজেই বুঝে যাবেন যে তাদের নিজের মাঝেও কোন রকম দ্বি-চারিতা নেই, একই সাথে কোরানের সকল বানীও সকল সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। হয়ত ওনারা সকলে দ্বীনের সেবায় হিযরত করেছেন কে জানে।
আগেই বলেছি যে কোরান আসলেই কি বলে সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে কোরানে বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা নিয়ে কিছু আপতঃ পরস্পর বিপরীত আয়াত সহাবস্থান করে বলে এ নিয়ে মুসলমানদের ভেতরেই বিভ্রান্তি আছে, যেমন আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েই আছে। বিধর্মীদের সাথে সাধারনভাবে বন্ধুত্ব সরাসরি নিষেধ করে আল্লাহ ৩-২৮, ৩-১১৮, ৪-৮৯, ৪-১৪৪, ৫-৫১, ৯-২৩ (এ আয়াতে নিজের বাবা ভাইও কাফের হলে তাদের বন্ধু/রক্ষাকর্তা হিসেবে গ্রহন না করার নির্দেশ আছে) আয়াত নাজিল করেন। আবার কিছু আয়াত যেমন ৬০-৮/৯, ৫-৫৭/৫৮ অনুসারে যারা মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর নয়, তারা ছাড়া বাকি বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়নি। দুই ধরনের ভাবের মধ্যে সঙ্ঘাত আছে। এক ধরনের ভাবে জেনারেলাইজড বিধর্মী, আরেক ধরনের ভাবে মন্দ ধরনের সিলেকটেড বিধর্মী। এর সমাধান আমার বিষয় নয়, যদিও পরে নাজিল হওয়া আয়াত আগে নাজিল হওয়া আয়াত বাতিল করে দেয় জাতীয় সূত্র দিয়ে হয়ত কিছুটা আলোকপাত করা যায়। সুরা তওবা (যাতে ৯-২৯ আয়াত আছে) নাজিল হয়েছে এ সব সূরার পরে, সে সুরার আয়াত অনুযায়ী বন্ধুত্ব করা সম্ভব বলে তো মনে হয় না। বিশেষ করে কাউকে যুদ্ধে পরাজিত করে জানের বিনিময়ে অর্থ আদায় করে তার সাথে বন্ধুত্ব? দুই ভিন্ন ধরনের ভাবের কারনে সংশয়ে ভোগা মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে ভাল আলোকপাত করেছে মারেফুল কোরান (পৃষ্ঠা-৩৮)। সেখানে পরিষ্কার করা হয়েছে “আন্তরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা কোন কাফিরের সাথে কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়। তবে অনুগ্রহ, সহানুভূতি, ও উপকার সাধন যুদ্ধরত কাফির ছাড়া সবার বেলায়ই জায়েয”। সেলফ এক্সপ্লেনেটরি ব্যাখ্যা, বিধর্মীদের সাথে সৌজন্যমূলক/ভাল ব্যাবহার করা যাবে, তবে আন্তরিক বন্ধুত্ব কোন অবস্থাতেই করা যাবে না। এখানেই শেষ নয়, সেই সৌজন্যমূলক ব্যাবহার আবার নেহায়েত ভদ্রতার খাতিরে যে তাও নয়, সেটাও হতে হবে উদ্দেশ্যপূর্ন। “এমনিভাবে বাহ্যিক সচ্চরিত্রতা ও সৌহার্দ্যমূলক ব্যাবহার সবার সাথেই জায়েয রয়েছে; তবে এর উদ্দেশ্য অতিথির আতিথেয়তা অথবা অমুসলমানকে ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা অথবা তাদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা হতে হবে।“ আশা করা যায় মোমিন মুসলমানগন বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যায় কিনা এ নিয়ে আর সংশয়ে ভুগবেন না। আমাদের সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান আমাদের সাম্প্রদায়িকতা শেখায় এর মাঝে কতটা ভুল আছে? জাকির নায়েকও কিছুটা কায়দা করে এ জাতীয় কথাই এ সম্পর্কে বলেন। গ্রাম্য মোল্লার কথা নয়, বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে ওয়েবেই বহু ফতোয়া আছে মারেফুল কোরানের মতই, সহি বাংলা ইসলামী সাইট সমূহেও আছে, এর কিছু সাইটে বাঘা বাঘা ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইরা অংশগ্রহন করেন, অপরকে এসব সাইট সহি বলে রেফার করেন। ঠান্ডা মাথায় এসব ধর্মীয় বিধান নামের আবর্জনা পাঠ করাও মানসিক শাস্তির মত, একটি উদাহরন শুধু স্যাম্পল হিসেবে দেখা যেতে পারে।
পরের পর্বে কিছুটা আলোচনা করব অন্যান্যে কিছু দেশেও একই প্রবনতার সামান্য কিছু উদাহরন দেখিয়ে, আর যুগ যুগ ধরে এসব সাম্প্রদায়িকতা চর্চা সংস্কৃতির কুফল কেমন হতে পারে সেটা আলোচনায়। এত এত বিদগ্ধ আলেম ঈমামগন বিভিন্ন টাইম লাইনে কিভাবে একই ধরনের ভুল করতে পারেন? একই রকম ভুল কিভাবে মধ্যযুগের ইবনে কাথির থেকে শুরু করে একালের আবদুর রহিম গ্রীনের হতে পারে? সকলে স্কুল বালকদের মত একই চোথা মেরেছেন যা ভুল? তাহলে আর তাদের বিশিষ্ট আলেম বলে সম্মান করার মানে কি? তারা ভুল করেছেন মেনে নেওয়া যেতেই পারে, সেক্ষেত্রে মিলিয়ন ডলার মূল প্রশ্ন থেকেই যায়; কিভাবে এমন মারাত্মক ভুল শিক্ষা যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বময় ইসলামী ধর্মশিক্ষার সূত্র হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে? আমি শুধু সামান্য কিছু সূত্র যেগুলি বহুল প্রচলিত তারই সামান্য কিছু এনেছি। আরো যে কত অসংখ্য এ জাতীয় সূত্র আছে কে হিসেব করতে পারে। এসব সূত্র সরাসরি চিরতরে অস্বীকার করতে না পারলে ইসলাম সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে না এই অভিযোগ কিভাবে অস্বীকার করা যায়?
[চলবে]
সূত্রঃ
১। মাওলানা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর ইংরেজী তাফসীর অনুসরনে অনুবাদ -অনুবাদে, অধ্যাপিকা হোসনে আরা খান।
জিযিয়া করের হার – ০.০৫% গড়ে !(ক্যালকুলেশন সহ!!!)
কমেন্ট না করে থাকতে পরলাম না …
জিজিয়া কর সম্পর্কে আপনাদের আজ জানাতে চাই , আসলে জিজিয়া করের হার কত ? জিজিয়া করের হার সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।বলা হয়েছে , জিযিয়া কর আদায় কর।যেহেতু কুরআনে উল্লেখ নেই , সেহেতু হাদিসে দেখতে হবে।আমরা মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনে দেখতে পাই – তিনি অমুসলিম সবল অধীনস্থদের উপর কি পরিমাণ হারে জিযিয়া আদায় করেছেন ( একটি অমুসলিম দেশের শুধুমাত্র সামরিকক্ষেত্রে সবল পুরুষদের উপর এই কর নেয়া হত , এছাড়া অন্য কোণ নাগরিকদের উপর এই কর নেয়া কঠোরভাবে নিষেধ।)।এই হারটি হল – বাৎসরিক মাত্র ১ দীনার ।সে হিসেবে , এটি মাসিক প্রায় বর্তমান ডলার হিসেবে ৫ ডলার পড়ত।নিচে বিস্তারিত ক্যালকুলেশন তুলে ধরা হল।যা মাথাপিছু আয়ের গড়ে ০.০৫% পর্যন্ত পড়তো।সে হিসেবে , সম্পত্তির উপর আর আর কম।
মুহাম্মদ সাঃ ইয়ামানের অমুসলিম নাগরিকদের উপরে সর্বমোট বাৎসরিক ১ দিনার আদায়ের নির্দেশ দেন অথবা সমমূল্যের এক ধরনের কাপড় জিযিয়া কর হিসেবে ধার্য করতে বলেন।
সুনান আবু দাউদ :: কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব ২০ : হাদিস নং ৩০৩৮
“আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ নুফায়লী (র.)…মু’আয (রা) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মু’আয (রা)-কে ইয়ামনে প্রেরণ করেন, তখন তাঁকে এরূপ নির্দেশ দেন যে, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট হতে এক দীনার অথবা এক দীনার মূল্যের মু’আফিরী নামক কাপড়, যা ইয়ামনে উৎপন্ন হয় (তা জিযিয়া হিসাবে গ্রহণ করবে)।”
একই কথা আছে – জিহাদের বিবরণ অধ্যায় ১১ বুলুগূল মারাম ১৩২২[1]
বর্তমানে দীনার বলে কিছু নেই।এটি সেসময়ের একটি অর্থব্যবস্থা।তাহলে , আমরা জানবো কিভাবে এক দীনারের মূল্য কেমন ? এখানে সামান্য অর্থনীতির জ্ঞান প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ক্রয়ক্ষমতার সমতা তত্ত্বের (Purchasing power parity theory) মাধ্যমে।এক্ষেত্রে দুই ধরনের মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বিশ্লেষণ করে – মুদ্রার মান নির্ধারণ করা হয়।এটা অধ্যাপক গুস্টাভ ক্যাসলের আবিষ্কৃত একটি পদ্ধতি।এই পদ্ধতিতে সেসময়ের যেকোনো একটি পণ্যমূল্যকে – সেসময়ের কত পরিমাণ অর্থে পাওয়া যেত , আর এখন কত টাকায় পাওয়া যায় – এদের মধ্যে বিশ্লেষণ করেই – বর্তমান সময়ের সাথে , সেসময়ের অর্থের তুলনা করা সম্ভব।
কিছু হাদিসে আমরা – মুহাম্মদ সাঃ এর সময়কার কিছু জিনিসের মূল্য দীনারে উল্লেখ করতে দেখি।এরকমই একটি হাদিস সুনানে নাসাঈ শরিফের অধ্যায় ৪৫ , ৪৮০৫ নং হাদিসের একটি অংশে আমরা দেখি – উটের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সুনানে নাসাঈ শরীফ :: কাসামহ্ অধ্যায় : অধ্যায় ৪৫ :: হাদিস ৪৮০৫
“রাসূলুল্লাহ্(স) –এর সময়ে উটের মূল্য চারশত দীনার হতে আটশত পর্যন্ত পৌঁছাতো।”
সুনানু নাসাঈ শরীফ :: কাসামহ্ অধ্যায়
অধ্যায় ৪৫ :: হাদিস ৪৮০৫
“আহমদ ইবন সুলায়মান (র) – – – – আমর ইবন শুআয়ব (রা) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(স) বলেছেন : যাকে ভুলে হত্যা করা হয়, তার দিয়াত একশত উটনী যাদের ত্রিশটি এক বছর বয়সের হতে হবে, আর ত্রিশটি দুই বছর বয়সের হতে হবে, আর ত্রিশটি চার বছর বয়সের হতে হবে আর দশটি উট হবে দুই বছর বয়সের নর বাচ্চা । বর্ণনাকারী বলেন : রাসূলুল্লাহ্(স) নগরবাসীর ক্ষেত্রে এর মূল্য নির্ধারণ করতেন—চারশত দীনার অথবা সমমূল্যের রৌপ্য । আর তিনি উটের মালিকদের বৃদ্ধি পেত; আর যখন সস্তা হতো, তখন এর দাম ও কম হতো । রাসূলুল্লাহ্(স) –এর সময়ে ঐ সকল উটের মূল্য চারশত দীনার হতে আটশত পর্যন্ত পৌঁছাতো।”
একশত উটনীর মূল্য – ৮০০ দীনার হলে
একটির গড় মূল্য – ৮ দীনার।
এই হাদিসটি থেকে দেখি – একটি উটের গড় মূল্য ৮ দীনার হলে।সে সময়ে উট অত্যন্ত সহজলভ্য ছিল আরব দেশে। :-s :-s
তাহলে বর্তমান বাজারে উটের মূল্য কত।ইন্টারনেটে দেখে নিলাম।বিভিন্ন সাইটের মতে – একটি উটের মূল্য
১ ) http://www.kgbanswers.co.uk/how-much-money-in-pounds-is-a-camel-in-saudi-arabia-worth/1967215 – এদের মতে ৫০০ ডলার।
৪ ) http://www.theguardian.com/travel/2007/apr/22/escape.shoppingtrips.unitedarabemirates – এদের মতে ৩০০ ইউরো থেকে শুরু যা ৪১২ ইউএস ডলার।
যাই হোক , সর্বমোট বর্তমান মূল্য আমরা গড়ে ৫০০ ডলার করে ধরি (এছাড়া – ১ বছরের কিংবা ২ বছরের উটনী এতো দামেরও হয়না , লিঙ্কগুলোতে কুরবানির উটের দাম ধরা হয়েছে।যেটা অনেক বেশি , সে হিসেবে বাস্তবিকভাবে – ৫০০ ডলারের কম হয় , তবুও এস্টিমেট রক্ষণশীল করলাম – যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে)।
আর , ভালো গৃহপালিত উট মুহাম্মদ সাঃ এর সময়ে ৮ দীনার প্রায়।
তাহলে – সে সময়ের ৮ দীনার এর উট বর্তমানে ৫০০ ডলার হলে ,
এক দীনারের বর্তমান মূল্য হবে = ৫০০/৮ = ৬২.৫ ডলার।
এটা বাৎসরিক জিজিয়া । তাহলে মাসিক জিজিয়া হবে – ৫.২০ ডলার।
– তাহলে মাসিক জিযিয়া হবে – ৪০৬.২৫ টাকা।
http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_GDP_%28nominal%29_per_capita
মাথাপিছু আয়ে শীর্ষে থাকা কিছু দেশের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় – মাথাপিছু আয় নারী পুরুষ সবার উপরে হয় দেখে – এখানে – যেহেতু জিজিয়া কর শুধু কর্মক্ষম পুরুষের উপর হয় তাই – অর্ধাংশ ধরা হল।যেহেতু , নারী ৫০% ও পুরুষ ৫০%।
লুক্সেমবার্গ – ১১০৪২৩ ডলার , তাহলে জিজিয়ার হার হবে – ৬২.৫/১১০৪২৩*১০০ = ০.০৫% যার অর্ধাংশ ০.০২%
নরওয়ে – ১০০৩১৮ ডলার , তাহলে জিজিয়ার হার হবে – ৬২.৫/১০০৩১৮*১০০ = ০.০৬% যার অর্ধাংশ ০.০৩%
কাতার – ১০০২৬০ ডলার , তাহলে জিজিয়ার হার হবে – ৬২.৫/১০০২৬০*১০০ = ০.০৬% যার অর্ধাংশ ০.০৩%
( ইসলামে যাকাত ২.৫% – অতএব ইসলাম লস প্রজেক্ট , ০.০৩% টাকার কথা চিন্তা করে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে , ২.৫% টাকার ভয়ে ইসলাম ছেড়ে দিতো সবাই ! আর এটাতো আয় , সম্পদের কথা নাহয় নাইই বললাম।)
সুইজারল্যান্ড – ৮১৩২৩ ডলার , তাহলে জিজিয়ার হার হবে – ৬২.৫/৮১৩২৩*১০০ = ০.০৭% যার অর্ধাংশ ০.০৩ %
আমেরিকা – ৫৩১০১ ডলার , তাহলে জিজিয়ার হার হবে – ৬২.৫/৫৩১০১*১০০ = ০.১২% , যার অর্ধাংশ ০.০৬%
——–
এইবার দেখুন , জিজিয়ার হার গড়ে ০.৫% – তাও শুধুমাত্র এটা আয়ের উপর ভিত্তি করে করলাম , সম্পদের উপর ভিত্তি করে করা হয়নি।বাস্তবিকভাবে – এই মাসিক ৫ ডলার – একজন কর্মক্ষম ব্যক্তির কাছে কিছুই না।
রিয়াযুস স্বা-লিহীন :: বই ৯ :: হাদিস ১২১০
হযরত আবু বকর (রা) বলেনঃ আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার সাথে লড়াই করবো। কারণ যাকাত হচ্ছে সম্পদের হক। আল্লাহর কসম, তারা যদি আমাকে উটের একটি বাচ্চা দিতেও অস্বীকার করে যা তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট দিত, তবে আমি তাদের এ অস্বীকৃতির জন্য তাদের সাথে লড়াই করবো।
নামাজ আদায় করা যেমন অবশ্য কর্তব্য , যাকাত আদায় করাও অবশ্য কর্তব্য।যাকাত আদায় না করলে – তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে।আর এটি মোট সম্পত্তির – ২.৫%।
সহিহ আত্ তিরমিজি :: অধ্যায় ৭ :: হাদিস ৬২০
আলী (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সাল্লেল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া ও গোলামের সদকা (যাকাত) আমি ক্ষমা করেছি, কিন্তু প্রতি চল্লিশ দিরহাম রূপার ক্ষেত্রে এক দিরহাম সদকা (যাকাত) আদায় কর। কিন্তু একশত নব্বই দিরহামে কোন সাদকা নেই। যখন তা দু’ই শত দিরহামে পৌঁছবে তখন তাতে পাঁচ দিরহাম সাদকা দিতে হবে। -সহীহ্, ইবনে মা-জাহ (১৭৯০)
এভাবেই – সম্পত্তির ২.৫% শতাংশ দিয়ে দেয়া বাধ্যতামূলক। উন্নত বিশ্বের প্রতিটা মানুষ যখন যাকাত দিতে যাবে – তখনই দারিদ্রের অবস্থান হবে জাদুঘরে।
এভাবেই , নির্ধারণ করা সম্ভব জিজিয়া।একটি অমুসলিম দেশে জিজিয়া নির্ধারণ করা হয় – কয়েকটি ভিত্তিতে।
প্রথমে সবাইকে ইসলামের আহবান জানানো হয় , তারা গ্রহণ করলে ভালো।
না হলে – বলা হয় জিজিয়া কর দিতে – যাতে এই ভূমির প্রতিরক্ষা ব্যয় নির্বাহ করা যায় , যা খুবই সামান্য।
এটা দিতে অস্বীকৃতি জানালে – যুদ্ধ হয়।
মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায় ১৭ হাদিস ৬২২ – এ উল্লেখ আছে ,
“মালিক (রঃ) বললেন : প্রচলিত সুন্নত হইল, অমুসলিম আহলে কিতাব নারী ও শিশুদের উপর জিয্য়া ধার্য হইবে না। যুবকদের নিকট হইতেই কেবল জিযিয়া আদায় করা হইবে। কারণ, স্বীয় অঞ্চলে বসবাস করার এবং শত্রু হইতে রক্ষা করার ভিত্তিতেই তাহাদের উপর জিয্য়া ধার্য করা হইয়াছিল।বাসিন্দাদের পশুপাল, ফল এবং কৃষিক্ষেত্রে কোনরূপ যাকাত ধার্য করা যাইবে না। এমনিভাবে অমুসলিম নাগরিকদিগকে তাহাদের পৈতৃক ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকিতে দেওয়া হইবে এবং তাহাদের ধর্মীয় বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা যাইবে না।”
১ ) শুধুমাত্র অমুসলিম যুবকদের উপর এই কর ধার্য হবে (এখানে যুবক বলতে শুধু মাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে নিজ ভূমির প্রতিরক্ষা করার সামর্থ্যবানদের কথা বলা হয়েছে।এটা ২০-৩০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ধরা হয় )।অমুসলিম যুবকদের যুদ্ধে যাবার কোন প্রয়োজন নেই।কারণ , তাদের উপর জিযিয়া কর নিয়ে নেয়া হচ্ছে।মাসিক ৫ ডলারের বিনিময়ে তারা তাদের প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা পাচ্ছে।এছাড়া , এদের উপর আর কোন কর আরোপ করা নিষিদ্ধ। ( স্বাধীন দেশ আমেরিকায় – শুধুমাত্র ২০০ ধরনের কর রয়েছে । মোবাইলে ১০০ টাকার কথা বললেই আমাদের দেশে ১৫ টাকা কর দিতে হয়।প্রায় সকল কিছুতে ১০০ টাকায় ১৫ টাকা মূসক দিতে হয়!আয়ের উপর কর থেকে এক কেজি মিষ্টিতেও কর! ৩৩ ডলারের কিছু কিনলেই ৫ ডলার মূল্য সংযোজন কর!)
২ ) অমুসলিম যুবক ছাড়া আর কারো উপর ধার্য করা যাবে না। নারী , শিশু, বৃদ্ধ , প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য সবাই এর আয়তামুক্ত থাকবে।এদের উপর জিজিয়া ধার্য করা যাবে না।
৩ ) অমুসলিম ভূমি যদি অন্য কোন শত্রু সামরিক শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়।তাহলে – মুসলিমদের সেই অমুসলিম ভূমি উদ্ধারের জন্যে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহীহ বুখারি (ইফা) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) | হাদিস নাম্বার: ৩৪৩৫
“আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর জিম্মিদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবিলম্বে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া (কর) যেন চাপানো না হয়।”
৪ ) জিজিয়া কর হচ্ছে বাৎসরিক প্রায় ৫ ডলার সমমূল্যের।এটা স্বর্ণমূল্যে নির্ধারণ করা চলেনা , কারণ – এখানে – এক ধরনের কাপড়ের উল্লেখ করা হয়েছে – যা সমমূল্যের পণ্যের কথা বলা হচ্ছে।একটি দিনারে ৪.২৫ গ্রাম ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ থাকে।সেক্ষেত্রে বর্তমান বাজার মূল্য ১ দিনারে হবে – ১৭৭ ইউএস ডলার।তাহলে মাসিক জিজিয়া হবে – ১৪ ডলার।আর তাই , এটা অবাস্তব ইকুয়েশন। আর এর কোন এর কোন ভিত্তি নেই কারণ , সর্বদা দীনার থাকবে না , এখন যেমন নেই। তাই , সেই সময়ের কোন একটি কাপড়ের মূল্য অর্থাৎ বিনিময় মূল্যের কথা বলা হয়েছে। যেটা , ৬২.০৫ ডলারের মূল্যমানের সমান।আর উট সে সময়ে অনেক সস্তা – যেমন উসমান রাঃ ৩০০০ উট দান করেন ইসলামের ( সহীহ আত্ তিরমিজি :: সদগুনাবলী অনুচ্ছেদ অধ্যায় ৪৯ :: হাদিস ৩৭০০)।
এছাড়া উমর রাঃ এর খিলাফতের সময় উসমান রাঃ আরবের গরীব মানুষদের জন্যে ১০০০ উট দান করেন।দিয়াত হিসেবেও ১০০ উটনী দিতে হয়।
৫ ) মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায় ১৭ হাদিস ৬২২ এ উল্লেখ আছে – “আহলে কিতাব এবং অগ্নি- উপাসক (অর্থাৎ, অমুসলিম যিম্মী) বাসিন্দাদের পশুপাল, ফল এবং কৃষিক্ষেত্রে কোনরূপ যাকাত ধার্য করা যাইবে না।” অর্থাৎ এরা কোন যাকাত দিবে না।বিনিময়ে মুসলিমরা ২.৫% যাকাত দেবে।যে যাকাত নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধও দিতে হবে বাধ্যতামূলক। ইসলামী সমাজে যাকাত না দিলে – কঠোর শাস্তি রয়েছে।
৬ )মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায় ১৭ হাদিস ৬২২ এ উল্লেখ আছে – অমুসলিম যিম্মী নাগরিকদিগকে তাহাদের পৈতৃক ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকিতে দেওয়া হইবে এবং তাহাদের ধর্মীয় বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা যাইবে না।
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৩ :: হাদিস ৩৯১
কাইস ইবন হাফস (র)……………আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে ( যাদের উপরে জিজিয়া নেয়া হবে) হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
৭ )মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায় ১৭ হাদিস ৬২২ এ উল্লেখ আছে – সুতরাং যতদিন তাহারা সন্ধিকৃত এলাকায় বসবাস করিবে, তাহাদের উপর জিযিয়া ব্যতীত আর কিছুই ধার্য হইবে না।
৮ ) এখানে কেউ কেউ সুরা তাওবার আয়াত এনে – বলা হয় – এখানে অমুসলিমদের জোরপূর্বক হত্যার কথা বলা হয়েছে।আসলে – সেই আয়াতগুলি সেই সময়ে আরবের সন্ধিরত মুশরিকরা যখন সন্ধি-শর্ত ভঙ্গ করে – তখন তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ যুদ্ধের ডাক দেন , সেটা শুধু সে সময়ের মুশরিকদের উপরেই প্রযোজ্য।যেমন – কিছু আয়াতে বলা হয়েছে – নবীর দরজায় করাঘাত ব্যতীত ঢুকো না।সেইসব আয়াত এখন অকার্যকর।কারণ , সেগুলো শুধু সে সময়ের।আপনি সূরা তাওবার শুরু থেকে পড়ে দেখলেই বুঝবেন।যেমন সূরা তাওবার প্রথম দুটি আয়াত হচ্ছে –
“সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।অতঃপর তোমরা পরিভ্রমণ কর এ দেশে চার মাসকাল। আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদিগকে লাঞ্ছিত করে থাকেন।”( ৯:১-২)
এটা ছিল শুধু সেই সময়ের জন্যেই।
একই সুরার একটা আয়াত নিয়ে তারা প্রোপাগান্ডা চালায় –
“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।”সুরা তাওবা – ২৯ নং আয়াত।
অথচ , এটা ছিল শুধু সে সময়ের জন্যে – কারণ এর আগের আয়াতই হচ্ছে – ২৮ নং আয়াত
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে?আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
এখানে শুধু সে সময়ের কথাই বলা হচ্ছে।সে সময়ের সন্ধিচুক্তি ভঙ্গকারীদের কথাই বলা হচ্ছে।এছাড়া যদি এই আয়াতকে কেন্দ্রকরে – যুদ্ধ মনোভাব পোষণ করতে চান – তাহলে , তাদের চিন্তাধারা সফল হবে না , কারণ এই কথা কুরআন বলে না , কুরআন বলে –
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (২:২৫৬)
(৬০/৮)ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।
(৬০:৯) আল্লাহ্ কেবল তাদের সন্বন্ধে তোমাদের নিষেধ করছেন যারা ধর্মের কারণে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে ও তোমাদের বাড়িঘর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তোমাদের বহিষ্কারের ব্যাপারে, — যে তোমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতবে। আর যে কেউ তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতবে তারাই তো তবে স্বয়ং অন্যায়কারী।
(১৬:৮২) – অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া মাত্র।
বানী পৌঁছে দিয়ে শক্তি-প্রয়োগ চলে না।আমাদের এর বেশি কাজ নেই , শক্তি প্রয়োগ পরের কথা।তবে কেউ আক্রমণ করলে – প্রতিহত করা ইসলামে দায়িত্ব।
(১৬:১২৫) তোমার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান কর প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও ভাল উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে আলোচনা কর উত্তম পন্থায়।
হ্যাঁ , এটাই আমাদের ধরন। ধর্মপ্রচারের ধরন।
মুহাম্মদ সাঃ এর অর্থনৈতিক জীবনঃ :clap :clap :clap :clap :clap (H)
উত্তরাধিকার অধ্যায় :: সহিহ বুখারী :: খন্ড ৮ :: অধ্যায় ৮০ :: হাদিস ৭২১
ইসমাইল (র) ….. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার রেখে যাওয়া সম্পত্তির দীনার বণ্টনযোগ্য নয়। আমার সহধর্মিণীগণের এবং আমার কর্মচারীবৃন্দের খরচ ব্যতীত যতটুকু থাকবে তা হবে সাদাকাতুল্য।
অবশ্য মুহাম্মদ সাঃ এর কাছে বলতে গেলে প্রায় কিছুই ছিল না –
১ / সহিহ মুসলিম :: বই ৪২ :: হাদিস ৭০৮৯
আমর নাকিদ (রাঃ)……আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ (সা)-এর পরিবার মাস-মাস এমনভাবে কাটাতাম যে, আমরা আগুনও জ্বালাতাম না । আমরা শুধু খুরমা ও পানি খেয়েই কাটিয়ে দিতাম ।
২ / সহিহ মুসলিম :: বই ৪২ :: হাদিস ৭০৯৩
আবু তাহির (অন্য সনদে) হারুন ইবন সাঈদ (র)……নবী (সা) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) মরে গেছেন অথচ দুবেলা তিনি রুটি ও যায়তূন দ্বারা কখনো পরিতৃপ্ত হননি ।
৩ / সহিহ মুসলিম :: বই ৪২ :: হাদিস ৭০৯৭
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আবু হুরায়রার প্রাণ । এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা) তার পরিবার-পরিজনকে পরিতৃপ্ত করতে পারেননি । এ অবস্থায়ই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন ।
৪ / সহিহ মুসলিম :: বই ৪২ :: হাদিস ৭১০১
উমর (রাঃ) বলেছেন, মানুষ কি পরিমাণ দুনিয়া কামাই করেছে । অথচ রাসুল (সা) কে আমি দেখেছি যে, তিনি ক্ষুধার তাড়নায় সারা দিন অস্থির থাকতেন । পেট ভরার মত নিম্নমানের একটি খেজুরও তিনি পেতেন না।
৫ / শামায়েল মোহাম্মদীয়া – পরিচ্ছেদ ২৪ : হাদিস ১৪২
আনাস বিন মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত – রাসূল আঃ এর সামনে খেজুর রাখা হল।আমি দেখলাম তিনি সেগুলো খাওয়া শুরু করলেন।তীব্র ক্ষুধার তাড়নায় তিনি কিছু একটার সাথে হেলান দিয়ে বসেছিলেন।ক্ষুধার কারণে তিনি সোজা হয়েও বসে থাকতে পারছিলেন না।
এই হচ্ছে – মুসলিম জাহানের সম্রাটের জীবন , অর্থনৈতিক জীবন।যেখানে ৫ মৌলিক চাহিদার ১ম মৌলিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন , ৪ মৌলিক চাহিদা এবং বিলাস-তো পরের কথা।এই হচ্ছে – জিজিয়া কর।
এই জিজিয়া কর সমগ্র কাল ধরে থাকবে না –
সহিহ মুসলিম :: খন্ড ১ :: হাদিস ২৮৯ এ উল্লেখ আছে –
কুতায়বা ইবন সাঈদ (রাঃ)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন:আল্লাহর কসম! ইবন মারইয়াম (আঃ) ( ঈসা আঃ ) অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক রূপে অবতীর্ণ হবেন এবং ক্রশ চূর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিযিয়া রহিত করবেন ।
n হ্যাঁ , জিযিয়া রহিত যাবে।কারণ , তখন আর অমুসলিম থাকবে না।বর্তমান , ওয়ার্ল্ড
http://en.wikipedia.org/wiki/Growth_of_religion – উইকি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে – যে ইসলামই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া ধর্ম।
কনভার্টিং এর ভিত্তিতেও – ইসলামই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া ধর্ম।
উইকিতে লিখা রয়েছে –
১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত , বার্ষিক ২.২% হারে বেড়েছে মুসলিম।হিসেবে দেখা যাচ্ছে – ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ২৬.৪% মানুষই মুসলিম হয়ে যাবে ( প্রায় ৮ বিলিয়নে)।
এটি খ্রিস্টান ধর্মের ৬১০ বছর পরে জন্ম নিয়েও ( এটি ইসলামিক মতে ঠিক নয় , আচ্ছা অমুসলিমদের মতেই ধরলাম ) – ১০০ বছরেই খ্রিস্টান ধর্মকে ওভারটেক করতে চলেছে।
গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ২০০৩ এর ১৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত –
“Although the religion began in Arabia, by 2002 80% of all believers in Islam lived outside the Arab world. In the period 1990–2000, approximately 12.5 million more people converted to Islam than to Christianity”
Guinness World Records 2003. Guinness World Records. 2003. p. 142.
যার অর্থ – “যদিও ধর্মটি আরব দেশে জন্ম নিলেও , ২০০২ সালে এর ৮০% বিশ্বাসীই আরব বিশ্বের বাইরে বাস করে।১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ,যে পরিমাণ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে কনভার্ট হয়েছে , তার চেয়ে প্রায় ১২.৫ মিলিওন বেশী মানুষ ইসলামে কনভার্ট করেছে”
এই কথাটি তাই – উইকিতে সদর্পে বিচরণ করছে –
Islam is the world’s fastest-growing religion by number of conversions each year !
World Religion Database এর মতে ইসলামের বৃদ্ধির রেট সবচেয়ে বেশী – ১.৯৭% থেকে ১.৮৬%।যেটা পৃথিবীর সব ধর্মের চেয়ে বেশী।
ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন ডেটাবেজের মতে – ১৯১০ সালে মুসলিম ছিল ২২ কোটি , সেটা ২০১০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে – ১৫৫ কোটিতে। এই হচ্ছে বাস্তবতা , শত অপপ্রচার কিছুই দমাতে পারেনি মুসলিমদের।এই পোষ্টে গুরুত্বপূর্ণ জিজিয়ার হার বলা হয়েছে – যেটা অত্যন্ত কম।যদি জিজিয়ার ভয়ে কেউ মুসলিম হয় , তার জন্যে অপেক্ষা করছে – ২.৫% হারে যাকাত , সদকা , ফিতরা ইত্যাদি।আসলে , যেসব মানুষ মনে করেন – ধর্ম পরিবর্তন হয় অর্থের ভয়ে।তাদেরকে বলব – এখনো মানুষ হন , কারণ – আপনি হতে পারেননাই।
সবাইকে ধন্যবাদ –
আমার লিখিত পূর্বের দুইটি বই পড়তে পারেন এখানে – ১ – কোরআন , পৃথিবী ও বিজ্ঞান – সংঘাত নাকি সমন্বয় ? – http://www.oneallah.org/downloads/TheQuranEarthAndScience.zip
২ – পরধর্মে মুহাম্মদ সাঃ , প্যারাডক্সের সমাধান। – http://www.oneallah.org/downloads/PorodhormeMuhammodsa.zip
সত্য বলতে জাকির গংদের ষ্ট্র্যাটেজির প্রতি আমার পূর্ন সমর্থন রয়েছে। ধর্মের প্রতি মানুষের যে পরিমান অন্ধভক্তি হাজার হাজার বছরে সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে সহজ মুক্ত নেই, তাই ধর্মের ক্ষতিকর দিকগুলি এড়াতে এমন ষ্ট্র্যাটেজির বিকল্প নেই, এতে ধর্মও বজায় থাকল আবার ক্ষতিকর তত্ত্বগুলিও হয়ত বিদায় হতে পারে। অন্য সব ধর্ম এভাবেই টিকে আছে।কি বলতে চান আপনি ? সুগার কোটেড ধর্ম ? :guli:
@িশল্পভবন,
সুগার বলেন আর হানি বলেন, বাস্তবিক অর্থে সব ধর্মই এখনো এভাবেই টিকে আছে।
কোন ধর্মের পন্ডিৎরা কোনদিন সরাসরি স্বীকার করবে যে; হ্যা ভাই, আমাদের ধর্মে আসলেই বেশ কিছু অমানবিক হাস্যকর নিয়ম কানুন আছে? আবার উল্টোদিকে ধর্মগ্রন্থ থেকে মুছেও ফেলতে পারবে না। কাজেই দুই কুল রক্ষা করে কোনভাবে ধানাই পানাই করে জবাব দেবে।
এই পদ্ধুতি না অবলম্বন না করলে হয় সভ্যতা মধ্যযুগে স্থবির থাকতো আর নয়ত সব ধর্মগ্রন্থের স্থান হত যাদুঘরে।
ব্লগের ইসলাম বিদ্বেষীদের লেখা পড়ে কয়জনে ভুল ইসলাম শেখে আর মোকসুদুল মোমেনিন/নিয়ামুল কোরান পড়ে কয় লাখ লোকে ভুল ইসলাম শেখে?ইসলাম বিদ্বেষী’ শব্দটি আপত্তিকর। মনে হয় ধর্ম ঠিক জায়গাতেই আছে। বিদ্বেষী’শব্দটি পজেটিভ অথের্ নেগেটিভ প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়। ধর্মের যেৌক্তকতা তুলে ধরা আর বিদ্বেষী হঅয়া এক নয়।
যাকাত না দিলে কাউকে যুদ্ধ করে হত্যা করার হুমকি কিংবা রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে না বলে ঘোষনা দেওয়ার কথা কোরানে আছে বলে আমি আজতক শুনিনি, জাকির নায়েকরা হয়ত শুনেছেন। যদি ইসলাম ধর্মে পরজন্ম থাকতো তবে জাকির নায়েকর মত অনেকেই বলতেন কোরান নাজেলের সময় নবীজির সাথেই ছিলেন। কেন যে জাকের নায়েকের কথা তুলে তাকে জাতে তুলছেন ! তাকে ব্ল্যাক আউট করা উ চিত।
জাকির নায়েক কোরানের তাফসিরকারক নন, ওনার লেকচার মাদ্রাসা বা ইসলামী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় কিনা জানি না। ইউসুফ আলীর তাফসির তুলনামূলক ভাবে অনেক আধুনিক ও সংক্ষিপ্তও। তাফসীর জগতে অন্যদের তূলনায় তেমন একটা জনপ্রিয়ও মনে হয় না। এবার একই আয়াতের অন্য দুয়েকটি আরো বিস্তারিত ও জনপ্রিয় তাফসির দেখি। তাফসির প্রচার শুরু করলেন নাকি ?
মরা জানতে পারলাম যে ইসলামী বিশ্বাস ছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী (এমনকি একশ্বেরবাদী খৃষ্টান/ইহুদীও মাফ পাচ্ছে না) হওয়া এমনই ভয়াবহ অপরাধ যার যথাযথ শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যা লোকজনকে গাঁটের পয়সা খরচ করে শেখাচ্ছে। তাহলে সরকারী প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ম ব্যবসা চলছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার থেকে সরকার প্রতি মাসে ১২ লাখ টাকা দান হিসেবে পায়।
@িশল্পভবন,
বিদ্বেষী নেগেটিভ অর্থেই ব্যাবহার করা হয়। এর মানে অযৌক্তিক, এক তরফা, কিংবা মিথ্যা সমালোচনা। ধর্মজগতে যে কোন সমালোচনা সে যতই যৌক্তিক কিংবা সত্য হোক সবই বিদ্বেষমূলক। এ নিয়ে বলে লাভ নেই।
জাকির নায়েকের কথা এ জন্য বলি যে সে আধুনিক কালের ধর্ম ডিফেন্ডারগনের একজন রোল মডেল। একে ফলো করলে অনেকের মন্সতত্ব, বিদ্যা বোঝা যায়।
তাফসির প্রচার শুরু করিনি, দেখাতে চেয়েছি যে কিভাবে একই আয়াতের অর্থ ব্যাক্তি বিশেষের ব্যাখায় ভিন্ন ভাবে ফুটে ওঠে। কারো ঘটে সামান্য কিছু থাকলে এসব আয়াত যার ব্যাখ্যা এক একজনার কাছে এক এক রকমের হয় সেসব ভর করে জীবন চালাতে আসবে না। ধর্মীয় সূত্রগুলির সামান্য ভেতরে গেলেই দেখা জায় এগুলির ভীত কত হালকা, আল্লাহর বানী বিশ্বাস করে সোয়াবের আশায় পাঠ করে যাওয়া এক কথা, তাতে দোষ নেই। তাই বলে এসব ভর করে পূর্নাংগ জীবন বিধান হিশেবে চালিয়ে দেওয়া কিভাবে সম্ভব? এক আলেমের ব্যাখ্যা দেয় এক এক রকম।
– আমি হিসেবটা ঠিক জানি না। যতদুর জানি সরকার ইসলামী ফাউন্ডেশন গাঁটের পয়সা খরচ করে চালায়, এসব ঈমানী বই পুস্তক ছাপাতেও নিশ্চয়ই পয়সা দেয়। আমাদের দেশে বই এর বাজার খুব বড় কিংবা লাভজনক নয়। গোলাপশাহ মাজারের কথা জানতাম না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি এত কিছু লিখলাম সব নাই হয়ে গেল।
@আদিল মাহমুদ,
এই পর্বটিও ১ম টির মত অসাধারণ লাগলো।আপনাকে অভিনন্দন (F)। আমি এই সিরিজটির মাধ্যমেই মুক্ত মনাতে আপনার লেখা পড়ছি প্রথম বারের মত।এর আগে আপনার লেখা চোখে পড়েনি। (এর আগে আমি অবশ্য খুবই কম আসতাম এখানে, আর কিছু লেখকের অল্প কিছু লেখা পড়েছি।তাদের ভিতর অভিজিৎ দার বিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু লেখা আর “নাস্তিকের ধর্ম কথা” নামে এক ব্লগারের লেখা গুলি খুব ভাল লাগত।)
একটু গুনগান করে নেই আগে 😉 , আপনার লেখার যে জিনিসটি আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে তা হল, সহজ সুন্দর ভাষায় চোখা কথা লিখে , সব ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমন এড়িয়ে,মানুষের ইগোতে আঘাত না দিয়ে,এত সুন্দর ভাবে সব কিছু উপস্থাপন করতে পারেন যা সত্যিই অসাধারন ( সততার সাথেই বলছি) (Y) । মাত্র ২টি পর্ব পড়েই বুঝেছি আমি।কাজেই আপনার বাকি লেখাগুলো ধীরে ধীরে কিন্তু অবশ্যই পড়ব। না হলে দারুন কিছু মিস হয় যাবে 🙂 ।
এটিই হল সবচেয়ে বড় সঙ্কট।মুসলিমরা ভাবে যে যেহেতু ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম কাজেই ধর্ম প্রচার করা শুধুমাত্র তাদেরই অধিকার।
হয়ত উদার পন্থী মুসলিমরা, অমুসলিমদেরকে দেশে থাকতে দিবে জিজিয়া ছাড়াই, তবু সোজাসাপ্টা অথবা আকারে ইঙ্গিতে হলেও বুঝানোর চেষ্টা করবে যে মুসলিম না হলে অপবিত্র মৃত্যুই বরণ করতে হবে।
অন্যদিকে যদি অমুসলিম রা নিজেদের ধর্ম প্রচার করতে আসে তাহলে, ইসলাম থেকে মানুষ কে সরিয়ে কাফির বানানো হচ্ছে, এই মনোভাব নিয়ে তাদেরকে যেকোনো ভাবে লাঞ্ছিত করতে পছন্দ করে।
এর আরেকটি বড় কারন সম্ভবত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা। ইসলাম ধর্মের ভয়াবহ ধরনের অসংলগ্ন দিক গুলি অবচেতন মনে হলেও মনে হয় মুসলিমদের ভয় পাইয়ে দেয়, আর সে জন্যেই তারা অন্যকে ধর্ম প্রচার করতে দেখলে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে।
আমার প্রশ্ন হল যদি কারো ধর্ম বিশ্বাস খুব দৃঢ়ই হবে, তবে এত ধর্ম গেল, ধর্মের জাত মেরে দিল এমন করবে কেন?সোজা কথায় কাউকে ঘায়েল করার সহজ বুদ্ধি হল তার দুর্বল পয়েন্টে আঘাত করা। কাজেই মুসলিমদের ধর্মানুভুতি অত্যন্ত তুচ্ছ ব্যাপারে আহত হয়, কারণ সম্ভবত এদের ধর্ম বিশ্বাস খুব ঠুনকো।অনেক মুসলিমই হয়ত তাদের ধর্মের এই অসংলগ্ন আর পরস্পরবিরোধী দিক গুলো বুঝতে পারে তবু, ছোট বেলা থেকে যে মগজ ধোলাইয়ের শিকারটা তারা হয়, যেটার শুরু হয় প্রথমে মক্তবে আরবি অক্ষর চেনা শুরু করার ভিতর দিয়ে।
তারপরেই পরবর্তী প্রক্রিয়া গুলো চলতে থাকে।মোটামুটি এরা এভাবেই প্রোগ্রামড হয়ে যায়, আর তারপর যুক্তি তাদের কে হয়ত অনেক কিছুর বিরুদ্ধেই ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, কিন্তু ছোট বেলা থেকেই ব্রেন ওয়াশ হবার ফলে সেই যে অবচেতন মনের ভয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আর এ থেকেই insecurity র জন্ম হয় তাদের ভিতরে যে অমুসলিমরা ধর্ম প্রচার করে তাদের ধর্মচ্যুত করে দিয়ে তাদের দোজখের দিকে নিয়ে যাবে।
আর এভাবেই যাকির নায়েকের মত ভন্ডরা তাদের পকেট ভারী করতে থাকে অবশ্যই ধর্মকে পুঁজি করে। কারণ ধর্মই যদি মানুষের মধ্যে না থাকে তবে তারা ধর্ম শিক্ষা কাদের দেবে? তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে তো। আর মুসলিম দেশে ধর্ম প্রচার করতে দিলে যদি বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে তবে নায়েকের পেটে টান পড়বে। কিন্তু এই জিনিসগুলো মুসলিমরা অনুধাবন তো করতে পারছেই না বরং দিন দিন আরো ধর্মান্ধতার চোরা বালিতে সেধিয়ে যাচ্ছে।
আর এভাবেই সাধারন মুসলিমদেরকে অনেক সুবিধা বাদী অমুসলিমরা ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছে, না হলে ইউটিউবের সেই ভিডিও টির মত একেবারেই লোয়ার ক্লাস ভিডিও টির পরে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা সেটাই প্রমান করে।
টপিক থেকে সরে গিয়ে একটা প্রশ্ন করতে হচ্ছে।এমনতো না যে ওই ভিডিওটি কোন অখ্যাত ইসলাম ধর্ম ব্যবসায়ী বানিয়ে অন্যের নাম দিয়ে ছেড়েছে? এতে মুসলিমরা খেপে উঠবে আর একটা গার্বেজ বানাবার বদৌলতে সেও কাঁচা টাকা হাতে পাবে? আপনার কি এমনটা কখনও মনে হয়েছে?এমন সম্ভাবনার কথা কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না কি বলেন?
অভিযোগ ছিল এক ইহুদী নাকি এটা বানিয়েছে কিন্তু ইহুদীরা এমন কাঁচা কাজ করবে কেন?
যাহোক আপনার লেখার বাকিটুকু পুরোটাই অনেক মন পড়লাম। নিজের বাড়তি কোন কথা আর যোগ করার নেই শুধুই মন্ত্র মুগ্ধের মত পড়ে গেলাম।এবার ৩য় পর্বের পালা।ওটা যতদ্রুত পারি পড়ে নেব।
@অর্ফিউস,
প্রসংসা শুনতে সর্বদাই ভাল লাগে (F) ।
– খুবই সত্য কথা। ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদের কারনেই তারা এমন ভাবনায় অন্যায়ের কিছু দেখে না। তারা যেভাবে ধর্মীয় শিক্ষা পায় তাতে এটাই উচিত বলে মনে করে। এ কারনে অন্য ধর্মাবলম্বিদের কনভার্শন এত গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিজেদের সমাজে অন্য ধর্মের প্রচারনাকেও দেশ ভেদে নানান মাত্রায় চাপা দেওয়া হয়।
– ঠিক। বর্তমান বিশ্বের ৮০/৯০ ভাগ মুসলমানই মনে হয় না কোরান হাদীসে যাইই থাক, আর জাকির মিয়ারা যতই মিঠা কথা বলুক জিযিয়া নামের বৈষম্যমূলক আইন চালু করতে চাইবে। কোরান হাদীশের ওপরেও মানুষের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি কাজ করে। মুশকিল হল এতেই সমস্যা সমাধান হয় না। আপনি কোরানে পূর্ন বিশ্বাসী হলে কোন মুসলমান মোল্লা আলেম যদি এই আইন কায়েম করতে চায় তবে আপনি তাকে বাধা দেবেন কিভাবে? সে উলটা আপনাকেই কোরান না মানার দায়ে কাফের বলে বসবে। কাজেই কোরানের প্রতিটা আয়াত সব যুগের অবশ্য পালনীয় এই ভূত মাথা থেকে না নামলে উদ্ধার নেই।
– এর কয়েকটি কারন আছে। প্রথমই, সব ধর্মই আজকের দিনে হুমকির মুখে। মুসলমানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়লেও, হিজাব টুপি দাড়ির আধিক্য বাড়তে থাকলেও তাদের সমাজেও ধর্মের রীতিনীতি দিনে দিনেই কমে যাচ্ছে।
আর ধর্মীয় নানান মৌলিক সূত্রে এমন ধারনা দেওয়া হয় যে বিধর্মীরা সদা সর্বত্র তাদের ধর্মনাশের জন্য ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। এসবের মিলিত ফল হল ধর্ম গেল ধর্ম গেল আতংকে ভোগা। এই আতংকের আগুন থেকে নিজেরাও রেহাই পায় না। এক বড় আলেমের ব্যাখ্যা আরেক আলেমের পছন্দ না হলেও তাকেই কাফের, বিধর্মীদের এজেন্ট এসব বলীলায় বলে বসে। বেচারা জাকির নায়েকই অন্যান্য কিছু মোল্লার কাছে কত গালি খেয়েছে দেখেন না। ইমাম গাজ্জালীর মত বড় আলেমরাও পার পান নাই।
শুনেছি জাকির মিয়ার ইনকাম বেশ ভাল, এ নিয়ে আমার এখনো তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
ইউটিউবের মত সেই নিম্ন মানের ভিডিও বোঝা যায় কোন আসল বর্নবাদী ইসলাম বিদ্বেষীরই কাজ, উদ্দেশ্য গঠন মূলক ধর্ম সমালোচনা মূলক কিছু নয়। সম্পূর্ন বদ উদ্দেশ্য। মুসলমানদের এমন প্রতিক্রিয়া হবে জানা কথা, তাদের উষ্কে মজা দেখা, আর জগতকে আবারো দেখানো; দেখো মুসলমানরা কত বড় বর্বর। এসব কোনমতেই সমর্থন করা যায় না। এটা সহজে চালানোও যায়নি, ডেকে ডেকে দেখাতে হয়েছে।
@অর্ফিউস,
এ ধরনের লেখায় আগ্রহী হলে অন্য ব্লগে প্রকাশিত আমার আরেকটি সিরিজ দেখতে পারেন, যদিও সেটা আর শেষ করা হয়নি।
ছাগু ছাগু ডাক পাড়ি-৫
@আদিল মাহমুদ, অবশ্যই দেখব, কিন্তু এইটা কেমন কথা বললেন যে শেষ করেননি?শেষ না করলে তো আমার কলিজা ফেটে যাবে এইটা জানতে যে এর পরের পর্বে কি লিখতেন। তো দয়া করে শেষ করার চেষ্টা করবেন, ওখানে না হলেও মুক্ত মনা তে। এতা একটা অনুরোধ রইল আপনার কাছে 🙂
@আদিল মাহমুদ, জাকির নায়েকের বক্তব্য ইয়ুটিউব ছাড়া অন্য কোন লিঙ্ক দিতে পারেন কি?ইউটিউব বাংলাদেশে ব্লক করা। আমি চেষ্টা করেও ওপেন করতে পারি না। লেখাটা পড়া শুরু করতেই এটা পেলাম।
@অর্ফিউস,
এই লোক সম্পর্কে মুশকিল হল ভিডিওর বাইরে তার কথাবার্তা টেক্সট আকারে তেমন একটা পাওয়া যায় না। একটু সার্চ দিয়ে দেখলাম, এই ভিডিও অন্য কোথাও এখনো পেলাম না।
ভিডিওর টপিক ছিল, Why do non-muslims have to pay Jizyah tax under Islamic Sharia Law? হালাল টিউবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন, আমি পাইনি অবশ্য।
@আদিল মাহমুদ, আমিও পাইনি হালাল টিউবে সার্চ করে।অবশ্য তার মনে হয় না দরকার আছে কারণ নায়েক কি বলবে তা জানা আছে। এই লোকের প্রলাপ আমি অল্প হলেও শুনেছি।শুনে বেশ মজা পেয়েছি।বিনোদনের জন্য জাকির নায়েক একেবারে রাইট চয়েস। 🙂
@অর্ফিউস,
এই লোক হল মেষের আবরনে হিংস্র নেকড়ে। সব সময় ভালমানুষীর মুখোশ ধরে রাখতে পারে না, আসল চেহারা বের হয়েই পড়ে। আমাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এটাকে নিয়েই এক সিরিজ লিখি। তবে তেমন দরকার আর দেখি না, ৪/৫ বছর আগেও তার নামে দেখতাম ইসলামী জগত সয়লাব, এখন আর তাকে রেফারেন্স হিসেবে বড় দরের ইসলামী যোদ্ধারা ব্যাবহার করেন না, সংগত কারনেই করেন না, যদিও তার ভক্ত হতে তো বাধা নেই 😀 । ওনাকেও রীতি অনুসারে কাফের মোনাফেক এমন বহু কিছুই জ্ঞানী আলেম মোল্লাগনই অভিহিত করেছেন। কাফিরনায়েক ডট কম নামে এক ওয়েব সাইটই ছিল।
দারুণ লেখা, পরের পর্বের অপেক্ষায়-
@তারেক অণু,
অনেক ধন্যবাদ।
বাই দ্য ওয়ে, আমার স্ত্রী অনেকদিন ধরে সচলে আপনার ভ্রমন কাহিনীর ভক্ত। এখানেও ছাড়ুন না কিছু।
@আদিল মাহমুদ,
ইদানিং মুক্তমনায় নিয়মিত বসা হয় না। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারনে। খুবই গুরুত্বপূর্ন বিশয়ের উপর লিখেছেন।
দু’ পর্বই পড়লাম। অসাধারন!
(F) (F) (Y)
@গোলাপ,
ধন্যবাদ পড়ার জন্য, আপনাকে অনেকদিন দেখি না।
এসব নিয়ে মনে হয় আপনারও ভাল ধারনা আছে, যোগ করে দিতে পারেন কিছু।
@আদিল মাহমুদ,
হায় আল্লাহ, বলেন কী? গা হাত পা টিপে দেয়ার আগে কুসুম জলে গতর মোবারক ধুয়ে, আঁচল দিয়ে পা মোবারক মুছে দিতে হবে না?
এর আগেও একটা কাজ বাকী রয়ে গেল যে? স্বামী সফর শেষে বাড়ি ফেরার সংবাদ পেলে নারীকে তার গুপ্তাঙ্গ শেইভ করে রাখতে হয়, যাতে স্বামীর মনোরঞ্জনে কোন প্রকার ত্রুটি না হয়। মাশাল্লাহ। সঙ্গমকালে কাপড় কোন দিক থেকে কীভাবে উঠাতে হয় তাও মকসুদুল মুমিনিনে লিখা আছে। সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, মরুভুমির আল্লাহ কতো পবিত্র, কতো দয়ালু।
@আকাশ মালিক,
পূর্নাংগ জীবন বিধান হলে কি কিছু বাকি রাখা যায় নাকি? আবার নিজেদের যুক্তিবাদী দাবী করেন।
ঐ ঈমানী কিতাবের মাষ্টার কপি উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আশরাফ আলী (রাঃ) কর্তৃক রচিত বেহেশতি জেওহর যা ঈমান্দারগনের মাঝে বিপুল ভাবে জনপ্রিয়। এটা এতই জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ন বিবেচনা করেই একে ঈমানী সাইটে লাল চিহ্নিত করে রাখা হয়, রেড হট আর কি।
স্ত্রীর হাত পা টিপিয়া দেবার মাসালা এইখানের ৫৭ পাতায় পাবেন। সাথে জুতা খড়ম আগাইয়া দিবার নির্দেশনাও দেখতে পাচ্ছি।
বিজ্ঞা আলেম সাহেব স্বামীর হক অধ্যায়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজির রেফারেন্সে। তার মধ্যে একটিঃ (৫৩ নং পাতা)
কারো মন খারাপ হলে এ জাতীয় বেশ কিছু ঈমানী পুস্তক আছে সেগুলি মাঝে মাঝে ঘাটাঘাটি করতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/untitled33.jpg[/img]
মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ না? নাফিসকে নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় হলো, কই মুফতিরা সবাই নীরব, কেউ কিছু বললোনা যে। একদিন সময় পেলে একটি সত্য কাহিনি লিখবো আমার ইউথ ক্লাবের মুসলমান ইয়ং পিউপল (যুবকদের) যারা ইংল্যান্ডে জন্ম নিয়ে বড় হয়েছে তাদের মন-মানসিকতা নিয়ে। তাদের মুখ থেকে কোরান হাদিসের সঠিক সুরা আয়াত কোট করে অমুসলিমদের ঘৃণা ও তাদের বিরোদ্ধে জিহাদের ওয়াজ শুনলে আপনার নিজের চোখ কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। মা-বাবারা খুশী, আমার মেয়ে স্কুলে হিজাব পরে, ইংল্যান্ডে জন্ম নিয়েও ছেলে ৫ওয়াক্ত নামাজী। সারা রাত ইন্টারনেটে আহমেদ দিদার, জাকির নায়েকের অপবিজ্ঞান আর ইমরান হোসেনের জিহাদী ওয়াজ শুনে। তারাই আমাকে এদের ঠিকানা দেয় যদিও তাদেরকে আমি আগে থেকি চিনি। ইমরান হোসেনের শান্ত-স্পষ্ট লজ্যিকেল বক্তৃতা শুনে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। নজুন প্রজন্মের ব্রেইন ওয়াশ কী ভাবে হয় এই মানুষটার সবগুলো ভাষন সেমিনার দেখলে বুঝতে পারবেন। সুরা মায়েদার সেই বিতর্কিত আয়াতের তর্জমা বিশ্লেষণ শুনলে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চাইবে কোন মুসলিম?
httpv://www.youtube.com/watch?v=c8sPNHC9lt4
অনেক তো নিন্দা জ্ঞাপন করলেন হাদিসের বইয়ের, সে জন্য নিশ্চয়ই আপনার উপর গযব নাজিল হবে। তবে হাদিসের কিতাবের কিছু উপকারী দিকও আছে। আমাদের বাসায় এরকম একখানা কিতাব ছিল, নাম- “বেহেসতি জেওর স্ত্রী শিক্ষা”। তো খুব বাল্যকালেই এই মূল্যবান কিতাব পাঠ করিবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, তার বদৌলতে অতি অল্প বয়সেই আমি হায়েজ-নেফাস নামক বিদঘুটে একটি বিষয়ে গভীর জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়েছিলাম 🙂 ।
@চলনামৃত,
হাদিসের নিন্দা আবার কই করলাম রে ভাই? তারপর আমিও সেই ছবি বানানেওয়ালার মতন জেলে যাই আর কি! হাদিস ধরে টানাটানি করলে আমার এক মাস লাগবে সব বিদ্যা বয়ান করতে। কোরানের দুয়েক আয়াত বয়ানেই কত লম্বা হল।
বেহেশতি জেওহরেরই তো অপর নাম মোকসুদুল মোমেনিন, কি পরম যত্নে বলতে গেলে প্রতিটা মুসলমান বাড়িতে এককালে এই অমূল্য গ্রন্থ শোভা পেতঃ)। আমাদের বাসাতেও ছিল। এখনো বহু বাড়িতে আছে। স্ত্রী শিক্ষার এক অংশ মনে আছে, স্ত্রীকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে স্বামী সফর শেষে বাড়ি ফিরিয়া আসিলে গা হাত পা টিপিয়া দিবেন। এই অমূল্য গ্রন্থের লেখক বিশিষ্ট আলেম হিসেবে অতি সমাদৃত।
বলাই বাহুল্য আজকাল লোকের ঈমান কমে গেছে, বিশেষ করে মহিলারা তো পুরাই গন কেস। এসব নির্দেশনা পালন করলে জীবন কতই না শান্তিময় হত।
(Y)
আপনি কি শুধু ইসলাম বিদ্বেষী নাকি সব ধর্ম বিদ্বেষী । যদি সব ধর্ম বিদ্বেষী হন তাহলে অন্যান্ন ধর্মে কে কি বলেছে সে সম্পর্কেও লিখেন । তা না হলে শুধু ইসলামের কোথায় কি ভুল আছে সেটা দেখার দরকার ?
@আরিফ,
খুবই ভাল প্রশ্ন, যদিও বলতে হয় যে আপনি লেখার মূল উদ্দেশ্যই হয় বোঝেননি নয়ত আমিই বোঝাতে পারিনি।
এটা আমি কেন ইসলাম পছন্দ করি না কিংবা ইসলাম কেন সবচেয়ে খারাপ ধর্ম এমন কোন লেখা নয়।
এটা ইসলামের পূর্নাংগ সমালোচনা, এমনকি কোন নির্দিষ্ট বিধিবিধানের সমালোচনাও নয়। এতে চেষ্টা করেছি ধর্ম শিক্ষার নামে কিভাবে গনমানুষের, বিশেষ করে কচিমন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলুষিত করা হয় সেটা। আমার প্রথম পর্ব কী পড়েছেন? মাধ্যমিক শিক্ষার সিলেবাসে সেখানে ধর্মশিক্ষার আলোকে যা শেখানো হয়েছে বলে আমি আপত্তি করেছি সে সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
প্রাসংগিক হিসেবে সামান্য তত্ত্বীয় ধর্মালোচনা এ পর্বে করতেই হয়েছে নইলে কেন এবং কিভাবে ধর্মের ফেরিওয়ালারা একই সাথে যা অস্বীকার করে তা আবার বহাল তবিয়তে প্রচার প্রসার করে সেটা ব্যাখ্যা করতে। সোর্স হিসেবে আমি কোন ইসলাম বিদ্বেষীর বক্তব্য কিংবা ওয়েব সাইট রেফার করেনি, করেছি শত শত বছর ধরে ইসলামী জগতে যারা বিপুল ভাবে সমাদৃত সেসব আলেম স্কলারদের বক্তব্য। এসব বক্তব্য ওয়ালা বই পুস্তক এ আমলে কেউ প্রচার করে না, পরিত্যাগ করেছে কিংবা অন্তত আপত্তিকর অংশগুলি বাদ দেবার চেষ্টা করছে তেমন ভাল আলামত দেখা গেলে এসবও রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করতাম না। ভুল স্বীকার করে সেটা সংশোধনের সত উদ্যোগ নিলে সে নিয়ে ঘোট পাকানোর মানে আমি দেখি না। সেটা যতদিন না দেখব, যতদিন ধর্মশিক্ষার নামে ইচ্ছেকৃতভাবে ঘৃনাবাদের চাষাবাদ করা হবে ততদিন লিখে যেতে হবে। উপায় কি?
ইসলামের কোথায় কি ভুল আছে তা আমার আলোচনার এখানে দরকার নেই। শুধু ইসলাম কেন্দ্রিক একটি বিশেষ সমস্যাই হাইলাইট করার চেষ্টা করেছি আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন। ইসলাম কোন বোধ বুদ্ধি সম্পন্ন প্রানী নয় যে তার দোষ গুন থাকে। একে কে কিভাবে ব্যাবহার করে তার ওপরই নির্ভর করে এর দোষ গুন।
অন্যান্য ধর্ম ব্যাবহার করে কেউ যদি আমাদের দেশে এভাবে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ায়, বিশেষ করে সরকারী মদদে কাজটি করা হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা নীরবে হজম করে তবে অবশ্যই একইভাবে তার বিরুদ্ধেও লিখব এতে নিঃসন্দেহ থাকতে পারেন। আপাতত আমি আমার নিজ জন্মভূমি এবং যে আরেকটি যেদেশের নাগরিক সে দুটি দেশ নিয়েই চিন্তিত। যাকে আমি নিজের এবং পরিচিত লোকজনের জন্য থ্রেট বলে এখনো মনে করার যুক্তিসংগত কারন পাইনি সে নিয়ে কেন আমি বেহুদা সময় নষ্ট করব?
আপনি মূল লেখায় কি সমস্যা পেলেন কিংবা একমত নন সেসব আলোচনা করলে ভাল হত না কি? আমি ধরেন বর্তমান আওয়ামী সরকারের সমালোচনা করলে যে যে পয়েন্টে আলোচনা করা হচ্ছে সেগুলির যথার্থতা বাদ দিয়ে বিএনপি সরকারও কত খারাপ ছিল এ আলোচনা আমি কেন করিনি জিজ্ঞাসা করা কি সংগত?
ধন্যবাদ আপনাকে।
@আদিল মাহমুদ,
ভাই আদিল মাহমুদ আমি জানিনা আপনার এ ধরেনর লেখার মূল উদ্দেশ্য কি?
আপনার প্রথম পর্ব আমি পড়িনি । কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার সিলেবাসে খুবই অল্প পরিমান ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হল, সেখানে শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য পড়ানো হয় । ধর্ম মানার ব্যাপারে সামান্য উপদেশ ও দেওয়া হয় না । আর তাই সবাই ধর্ম শিখলেও খুব কম লোকই তা মানে । আপনি সেখানকার আপত্তিকর বিষয়গুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করে থাকলে সেখানকার অআপত্তিকর বিষয়গুলি মানার জন্য কিভাবে চেষ্টা করা যায় সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেছেন কি?
আপনি তো উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি শাফি উসমানি (রাঃ) এবং ইবনে কাথির (রাঃ) এর লেখার সমালোচনা করেছেন, উক্ত আলেমগন ইসলামের জন্য ও সাধারান মুসলমানদের জন্য যতটুকু উপকার করেছেন আপনি কি তার একশত ভাগের একভাগও করতে পেরেছেন ? আপনি বলেছেন আপনার লেখাতে আপনি ধর্ম শিক্ষার নামে কিভাবে গনমানুষের, বিশেষ করে কচিমন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলুষিত করা হয় সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন । আপনার নাম দেখে মনে হচ্ছে আপনি মুসলমান । মুসলমান হিসেবে আপনি কি কচিমনে ইসলামের মূল শিক্ষাগুলি প্রচার ও প্রসার করার কোন চেষ্টা করেছেন ? আপনি অন্য কোন দেশের নাগরিক তা আমি জানিনা। সে দেশে (যদি মুসলমান সংখালঘু হয়) ও বিশ্বের অন্যান্ন দেশে যেখানে ইসলাম ও মুসলমান সংখালঘু সেখানে কচিমন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলুষিত করা তো দূরের কথা, শুধু মুসলমানদের উপর যে পরিমান অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয় তার বিরুদ্ধে আপনি কি করেছেন?
আপনার কি এমন কোনো ব্লগ বা কোনো ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি ইসলামের প্রচার ও প্রসার এর জন্য লিখেছেন ? যদি তা না হয় তা হলে, শুধু ইসলাম বা ইসলামের বরেন্য আলেমগনের সময়ালোচনা করা তো এই পৃথীবি থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টারই সামিল ।
@আরিফ,
ভাই তো দেখি অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছেন। চেষ্টা করি জবাব দিতে।
আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য খুব সহজ, বিশ্বাস না করলে তো কিছু করার নেই। সেটা হল ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক ঘৃনাবাদের চাষাবাদ বন্ধ হোক।
মাধ্যমিকে ধর্মশিক্ষা এখন ঐচ্ছিক ও নয়, আবশ্যিক। সে আবশ্যিক শিক্ষার ভেতর সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দেওয়া কোনভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।
– ঠিক বুঝতে পারলাম না এর দ্বারা কি বুঝিয়েছেন। ধর্মশিক্ষা আবশ্যিক হিসেবে ছেলেপিলে এসব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সর্বকালের জীবন পদ্ধুতির শিক্ষা নামে, আল্লাহ খোদা নবী রসূলের ভয় দেখিয়ে। এরপর ধর্ম মানার ব্যাপারে সামান্য উপদেশও কিভাবে দেওয়া হচ্ছে না তা বুঝতে পারলাম না।
– আবারো বুঝলাম না প্রশ্নটা কি। অআপত্তিকর মনে হয় না কোন প্রচলিত বাংলা শব্দ। অনাপত্তিকর বলতে চেয়েছেন কি? আমি প্রথম পর্বে নিজেই বলেছি যে ধর্মশিক্ষার সে বইতে ভাল ভাল শিক্ষনীয় কিছু বিষয়ও আছে যা প্রসংশনীয়। স্কুলের সিলেবাসের তাই দায়িত্ব হওয়া উচিত, সুশিক্ষা দেওয়া। সেটা বাস্তব ক্ষেত্রে কিভাবে মানানো যেতে পারে তা স্কুলের সিলেবাসের আওতার ভেতর ঠিক সেভাবে পড়ে না।
– এখানে মোটা দাগে সহমত। এটা খুব ইন্টারেষ্টিং পয়েন্ট। এ নিয়ে সামনের পর্বে কিছুটা আলোচনা থাকবে। ধর্ম চুড়ান্তভাবে কে কোন লেভেলে মানে আর মানে না সেটা আসলে অনেকটা ব্যাক্তিগত চয়েসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, এটা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থান, ব্যাক্তিগত শিক্ষাদীক্ষা বহু কিছুর মিলিত ফলের ওপর। যেমন ধরেন মুসলমানদের কথা, তারা ১০০% প্রথমে মত দেবে যে তারা এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য মানে না। পরের ধাপে হবে নবী মোহাম্মদকে শেষ নবী হিসেবে তারা অনুসরন করে, মুশকিল হল এখান থেকেই কিন্তু মুসলমানদের মধ্যেই বিচ্যুতির শুরু, নবী মোহাম্মদ শেষ নবী নাকি তার সমতূল্য অন্য কোন নবী থাকতে পারে সে নিয়ে মুসলমানদেরই কিছু সেক্ট আছে। এরপর ধরেন মুসলমানদের কোরানের সব বানীই সব যুগের জন্য প্রযোজ্য এটা মনে প্রানে বিশ্বাস এবং কাজে দেখানো বাধ্যতামূলক। বাস্তবে কি তেমন দেখা যায়? ব্যাক্তিগত ও সামষ্টিক সব পর্যায়েই দুনিয়ায় কেউ নেই যে হাদীস কোরানে বর্নিত সব বিধিবিধান বা আদর্শ মানে। খোদ মুসলমান দেশগুলিতেই বহু সেক্যুলার আইন ব্যাবস্থা সহি ইসলামী বিধান বাতিল করে অবস্থান করছে। মুসলমান ভাইরা মুখে যাইই দাবী করুন যুগের বিবর্তনের কাছে ঠিকই নতি স্বীকার করেই হাদীস কোরান বিচ্যুতি মেনে নিচ্ছেন। পরকালের শাস্তির ভয়ে কেবল হাদীস কোরানের সাথে কোন আপস নেই বলে মাঝে মাঝে হুংকার ছাড়েন। এসব অসংগতি দেখালে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন, কারন নিজেদের দূর্বলতা নিজেরা জানেন ঠিকই।
তবে এ থেকে প্রশ্ন আসবে যে ধর্ম যদি মানুষ গুরুত্ব নাইই দেয় তবে আমিই বা কেন এ নিয়ে চিন্তিত হচ্ছি? – এর জবাব হল গুরুত্ব না দিলেও, যেমন ধর্মশিক্ষার বইতে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও জেহাদের আহবান বেশীরভাগ ছেলেমেয়েই মনে রাখবে না ঠিকই। তারা সে বই পড়ে নিরীহ বিধর্মী যারা কারো সাতে পাঁচে নেই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজীর চিন্তা করবে না, তবে মনের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজটুকু ঠিকই গেঁড়ে যাবে। পরবর্তি জীবনে সেটার বহিঃপ্রকাশ নানান ভাবে ঘটবে। ধর্মগ্রন্থে বিবি পেটানোর তরিকা পড়ে ও বিশ্বাস করেও কিন্তু বহু মুসলমান বিবি পেটানোর অধিকার ফলায় না, তবে চরম পুরুষতান্ত্রিক ব্যাবস্থা ঠিকই তারা কায়েম করে রাখে।
– আমার এই চেষ্টা সম্পর্কে আপনার মতামত কি? এটা প্রথমেই জানতে পারলে ভাল হয়। এর ওপর আপনার অনেক প্রশ্ন ও আমার জবাব আপনার কাছে কতটা গ্রহনযোগ্য হবে সেটা নির্ভর করে। আপনার ভাষায় মনে হয় যে আপনি কিছুটা দ্বিধাভক্ত। একদিকে আমার চেষ্টায় তেমন প্রভাবিত হননি, যে কারনে শুধু বলছেন যে আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি। অপরদিকে এমন কিছু প্রশ্ন করছেন যার অন্তর্নিহিত অর্থ দাঁড়ায় এমন যে ওনারা কিছু আপত্তিকর কথা বললে বলেছেন সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়; কারন তাদের থেকে প্রাপ্তি অনেক বেশী……এরপর অপ্রাসংগিকভাবে আমার ধর্ম পরিচয়, দুনিয়াময় মুসলমানরা কিভাবে নিগৃত হচ্ছে…
আমি প্রথম পর্বেই বলেছি যে কেউ যদি মনে করেন যে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার প্রচার প্রসার তার ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে পড়ে তার সাথে আমার কোন বিতর্ক নেই। আপনি যদি মনে করেন যে আমেরিকা ইরাকে দখল করছে, ইসরায়েল প্যালেষ্টাইনের জমি দখন করেছে, মায়ানমারে বৌদ্ধরা মুসলমান রোহিংগা পেটাচ্ছে তাই আপনি আমাদের ধর্মশিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার প্রচারে কোন সমস্যা দেখেন না তাহলে আপনার সাথে আমার কড়া দ্বি-মত থাকলেও বিতর্ক করার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে আপনার প্রথম প্যারায় বলা কথাগুলি সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। সেক্ষেত্রে আশা করি ইসলাম ধর্ম সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয় এই বক্তব্যে আপনি বা সমমনা কেউ আর উত্তেজিত হবেন না।
আপনার সম্মানিত আলেমগনের সমাজসেবার ফলাফল আমি হয়ত স্বল্প জ্ঞানের জন্যই তেমন কিছু জানি না, আমি কিন্তু জগতের দেশ বিদেশের বহু মুসলমান চিনি যারা আপনার এসব আলেমগনের নাম জানা ছাড়াও দুনিয়ায় অত্যন্ত সুন্দর সূস্থ পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করে গেছেন, এখনো করছেন, ভবিষ্যতেও করে যাবেন। আপনার এসব আলেমদের লেখা পড়া তো দূরের কথা, এমনকি তাদের অনেকে নিজ মার্তভাষায় সম্পূর্ন কোরান জীবনে পড়ে দেখেননি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ঢাকা শহরের যে কোন বড় রাস্তার মোড়ে র্যান্ডম সার্ভে করে দেখতে পারেন তাদের মধ্যে শতকরা কতভাগ লোকে কোরান সম্পূর্ন বাংলা ভাষায় পড়েছে। এ নিয়ে কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও আমার দৃঢ়বিশ্বাস ফলাফল পাবেন খুবই নগন্য সংখ্যক। কাজেই আপনার উসমানি, ইবনে কাথির ওনাদের গুরুত্ব সম্পর্কে আমি ঠিক আপনার মত করে নিশ্চিত নই। আর যারা অমুসলমান তাদের মধ্যে ওনাদের ভূমিকার কথা বলার দরকার পড়ে না নিশ্চয়ই।
তারপরেও যদি আপনি বা আর কেউ মনে করেন যে আপনারা ইবনে কাথির, শাফি উসমানী জাতীয় আলেমদের থেকে অসীম উপকার পাচ্ছেন, এনাদের উপকার ছাড়া জীবন অচল তবে আমি তাও মানতে রাজী। শুধু এক শর্তে, সেটা হলে অন্তত এনাদের রচনাবলী থেকে আপত্তিকর বিষয়গুলি কেটে বাদ দিয়ে দিন। এতে নিশ্চয়ই আপত্তি থাকার কথা নয়। আর যদি মনে করেন যে বিধর্মীরা মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধী, তাদের পদানত করে দাবিয়ে রাখা আপনার ধর্মীয় অধিকার তাহলে আগেই বলেনি, আপনার সাথে কোন বিরোধ নেই। লাকুক দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন। সেক্ষেত্রে কেবল একটি অনুরোধ, সে মনোভাব সরাসরি প্রচার করুন, যারা এসব অস্বীকার করে ইউটিউব ওয়েব, নানান বিতর্কের টেবিল কাঁপিয়ে দিচ্ছেন তাদের সরাসরি বলে দিন যে তারা ভুল।
– আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যে আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে যে দেশেই মুসলমান সংখ্যালঘু সে দেশেই মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন করা হয় :)) ? আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে আমি যে দেশের নাগরিক (কানাডা) অন্তত সে দেশে তেমন কোন আলামত আমি এখনো দেখিনি। তেমন আলামত কোনদিন দেখা গেলে অবশ্যই প্রতিবাদ করব। আচ্ছা ভাই, আমেরিকা তো ইসলামের এক কিংবা দুই নম্বর শত্রু বলে তার বদনাম আছে। সে আমেরিকা থেকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া কতজন মুসলমান ভাইকে দেখেছেন নিজ মুসলমান প্রধান জন্মভূমিতে ফেরত এসেছে? এত বড় ইসলামের শত্রু দেশে এত মুসলমান কিভাবে জান বাজি রেখে বসবাস করে?
আমি ধার্মিক নই, সাধারন মানুষ। তাই নিরীহ মানুষ অত্যাচারিত হলে সাধারন ভাবেই প্রতিবাদের চেষ্টা করি। সে ইরাক আফগানিস্তানের মুসলমান হোক, পাকিস্তান বাংলাদেশের হিন্দু হোক কি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা হোক। আমার বাংলা ব্লগের লেখা বুশ ওবামা পড়বে না বলে সে নিয়ে তেমন লেখার কিছু দেখি না, আর সে নিয়ে লেখার মত লেখকের কোন অভাব নেই, এসব বিষয়ে লেখার মত আমার আপনার থেকে অনেক ভাল ভাল লেখক সেসব দেশেই গন্ডায় গন্ডায় আছেন। মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান আমি পুরো সমর্থন করতে পারিনি, তারা মুসলমান নাকি নাস্তিক এতে আমার কিছু যায় আসে না, এমনি তাদের অনেকে জামাতি হয় তাতেও আমি কেয়ার করি না। এ নিয়ে তেমন কিছু লিখিনি কারন বহু লেখা তখন ব্লগে এসেছিল, তবে কিছু কিছু মন্তব্য আছে আপনি চাইলে বার করে দেখাতে পারি।
আমি কোন প্রথাগত ধর্মের পূর্ন বিশ্বাস করি না, সব ধর্মেরই কিছু না কিছু (হতে পারে কম বেশী) দূর্বলতা আছে। তাই আমি তার কোনটাই প্রচার প্রসারের চেষ্টা করি না। বলা ভাল যে আমি উলটো বিশ্বাস করি যে বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ধর্মের ভালর থেকে খারাপ দিকই বেশী আছে।
আপনি মনে হয় বিশ্বাস করেন যে প্যালেষ্টাইনে মুসলমান নিগৃত হচ্ছে তাই নরওয়ে সুইডেনের একজন বিধর্মীর সাথে শত্রুতা বাংলাদেশের একজন মুসলমানের জন্য জায়েয? (ভুল হলে সংশোধন করবেন)।
মুসলমানদের হাতে যে নিত্য নানান দেশে অন্যান্য বিধর্মীরা অত্যাচারের শিকার হচ্ছে সে সম্পর্কে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য সূত্র দিতে পারতাম, আপনার মত জানতে চাইতাম। এসব সম্পর্কে আপনার মতামত কি? ধরেন পাকিস্তানের মুসলমানদের হাতে কোন হিন্দু নির্যাতিত হল, এর ফল হিসেবে কি ভারতের উচিত তাদের স্কুলের পাঠ্যসূচীতে মুসলমানগন হিন্দুদের জাত শত্রু, তাদের বিরুদ্ধে জেহাদে সামিল হওয়া সব হিন্দুর দায়িত্ব এসব শিক্ষা দেওয়া শুরু করা? এটা কোন সূস্থ বিবেক বুদ্ধির কাজ হতে পারে বলে মনে করেন?
মুসলমানদের হাতে মুসলমানরা যে মারা যায়, ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয় সে সম্পর্কে আপনি কি বলেন? বাস্তবতার বিচারে বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের মুসলমান পাকিস্তান নাকি ইহুদী ইসরায়েল কার প্রতি বেশী বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাথে থাকুন, এর কিছু কথা একটু বিস্তারিতভাবে সামনের পর্বে আসছে।
ধন্যবাদ।
একবার এক ব্লগমোল্লার পোস্টে কথা হচ্ছিল। ব্লগমোল্লার বক্তব্য এক নাস্তিক (উনার দৃষ্টিতে) সূরা ৮৮ আয়াত ২২ এ শাসক ব্যবহার করেছে যা নাকি উদ্দেশ্য প্রনোদিত। উনি আবার নিজেই পোস্টে মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এর অনুবাদ দিছে
জিজ্ঞেস করলাম মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এর বাংলা অনুবাদ সবচাইতে জনপ্রিয়। ঊনার অনুবাদ ভুল কিনা? কিন্না মোল্লা সাহেব বড়ই পিছলা। কিছুতেই বলবে না মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ভুল অনুবাদ করেছে আবার দাবীও ছাড়বে না যে এখানে শাসক ব্যবহার ভুল কারন তাইলে মুহাম্মাদ বেকায়দায় পড়ে যায়। এই আধুনিক মোল্লাগুলা গাছেরও খাবে আবার তলারটাও কুড়াবে। আর একই আয়াত কেউ সমালোচনার জন্য ব্যবহার করলে তখন সেটা হবে উদ্দেশ্য মূলক। এক ঢিলে তিন পাখী, বাহ কি মজা!!!
@হোরাস,
ওনাদের মজা আর বেহেশতের টিকেট কাটার ঠ্যালায় যে দুনিয়াময় হাজার মানুষের জীবনে গজব নামে সেইটা কি আর বোঝানো যায়।
এরা বড় বড় মোল্লা আলেমের আজগুবি, অমানবিক যতই এখান পিছলাবে এর কারন হল মানসিকভাবে এদের ভীতি হল এসব সুপার হাই-প্রোফাইল আলেমের ভুল স্বীকার করা মানে ধর্মের দূর্বলতা স্বীকার করা। মুখে যতই বলুক আমরা আল্লাহ নবী ছাড়া আর কাউকে গুরুত্ব দেই না তাও কোনদিন মুখ ফুটে এসব বড় বড় মোল্লার ভুল স্বীকার করে কারেকশনের চেষ্টা করবে না। আফটার অল এদের কাছেই তো ইসলাম শিক্ষা নিতে হয়, এদের ভুল ধরা শুরু করলে সর্বনাশের আর বাকি থাকে নাকি। এছাড়া নিজেরাও জানে যে বেশী ভুল ধরা শুরু করলে আবার আসল সত্যের সেনানীরা জানের ওপরও হামলা করতে পারে, সে ভয়ও ভালই আছে মুখে যতই আমাদের কোন ভাগ নাই, এক উম্মাহর সদস্য বলে চেঁচাক।
সম্পূর্ণ লেখাটা পড়লাম। আদিল ভাইয়ের যেকোনো লেখারই আমার কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
চালিয়ে যান। (Y)
@সৈকত চৌধুরী,
বলেন কি! এই আবর্জনা পুরো পড়া তো রীতিমত শাস্তির মত!
আদিল মাহমুদ,
আমি এ সরকার আমলের ধর্মীয় বইগুলো দেখি নাই। কিন্তু যে ব্যপার গুলো উল্লেখ করেছেন রীতিমতো ভয়াবহ! আমি অনেকদিন আগে আমাদের স্যেকুলার শিক্ষানীতি কি রকম হওয়া উচিৎ বা আপাততঃ আশাকরি, সে বিষয়ে লিখেছিলাম। আমি মনে করি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষার আসলে কোন দরকার নেই। এইযে লক্ষ লক্ষ কচি ছেলে-মেয়েরা আসলে কি শিখছে? ছোটবেলাতেই তো এদের চিন্তা শক্তিটাকে একেবারেই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। তার উপড়ে এ বিষয়টা নাকি আবার বাধ্যতামূলক! একটু বড় হয়ে এসব দেখলে তবুও এর ভালো দিক গুলো অন্ততঃ বিবেচনা করতে পারতো। আমি আপনার সংশয়ের সাথে সম্পূর্ন একমত, সাথে সাথে আমাদের ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তিত। আদৌকি আমরা এই বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?
@কেশব অধিকারী,
আমাদের সময়ে ধর্মশিক্ষা আবশ্যিক ছিল না, ছিল ঐচ্ছিক। নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাটে যারা কিছু নম্বর পেতে চাইতো এবং কিছু তীব্র ধার্মিক পরিবারের ছেলেমেয়ে ছাড়া আর কেউই উচ্চতর গনিত, বানিজ্যিক গনিত, কিংবা কারিগরী অংকন ফেলে শখ করে ধর্মশিক্ষা বেছে নিত না। আর নিত যাদের এসব বিষয় নেবার মত ন্যূনতম গনিতের নম্বর থাকত না তারাই। সোজা কথায় এটা ছিল অগতির গতির মত।
এ কালে এটা করা হল বাধ্যতামূলক। যুক্তি হল ছেলেমেয়ে নৈতিকতা শিখবে। বাস্তবতা কি তাই বলে? দেশের আর্থিক উন্নতির সূচক ঊর্ধ্বমূখী হলেও নৈতিকতার সামগ্রিক মান কমেছে বই বাড়েনি। উলটো বোনাস হিসেবে এসব সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্প ভরে কচি মন বাল্যকাল থেকেই কলুষিত করার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে।
মানুষ ভুল করে তাতে বড় সমস্যা নেই যদি সেটা স্বীকার করে শুধরে নেয়। যখন জেনেশুনে ভুল আঁকড়ে থাকে ও নানান ছূতায় জাষ্টিফাই করার চেষ্টা করে তখন হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
দূঃখের সাথে বলতে হয় যে আমাদের দেশে দরকার তালেবানী শাসন। তাতে যদি লোকের স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি ফিরে আসে।
আদিল মাহমুদ ভাই,
আপনার প্রথম পর্বটা আমি কিছুতেই খুলতে পারছিনা আমার এখানে। ক্লিক করলে এই ভাষ্যটি দেখায়, “You are not allowed to edit this item.” সমস্যা যে কোথায় বুঝতে পারছি না। কম্পিউটারে বকলম হলে যা হয় আর কি!
@কেশব অধিকারী,
দোষটা মনে হওয়াই আমারই, আমি লিঙ্ক করার সময় মনে হয় এডিটের লিঙ্ক ভরে দিয়েছিলাম তাই আমি ছাড়া আর কেউই সেটা খুলতে পারার কথা নয় :)) । আমিও আরেক বড় বককলম।
ঠিক করে দিচ্ছি, আপাতত এটা দিয়ে চালানঃ
http://blog.mukto-mona.com/?p=29920
ডিজিটাল আলেমদের বেআব্রু করে তাদের সুবিধাবাদী চরিত্র উন্মোচন করে দিলেন তো!
@কাঠ মোল্লা,
ডিজিটাল আলেমরাই তো বিদ্বেষীদের মুখোশ খোলার ব্যাপারে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন, আমি তো কোন ছার। এখানে উল্লেখিত জামাল বাদাওয়ি সাহেবের এ ব্যাপারে কিছু গবেষনা মূলক নিবন্ধন আছে বেশ ইন্টারেষ্টি :)) ।
@আদিল মাহমুদ
আমি সংসপ্তক এর সাথে একমত পোষণ করছি । বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্হায় বর্তমানে যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচলিত আছে , সেটাকে বন্ধ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বাঙালি জাতি হিসাবে যথেষ্ট সহনশীল হলেও, এই একটা বিষয়ে বাঙালিদের সহ্য ক্ষমতা নেই বললেই চলে । হুজুগে বাঙালি কি আর সাধে বলা হয়? একটা বিষয় একটু চিন্তা করে দেখুন, আমাদের বিদ্যালয়গুলিতে অন্য সবগুলি বিষয় একসাথে পড়ানো হয়। কিন্তু যখনই ধর্মশিক্ষার ক্লাস শুরু হয় তখন হিন্দু, মুসলিম, বোদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই আলাদা হয়ে যায় । আর পড়ানোর বিষয় কি? ওই ঘুরে ফিরে নিজেদের ধর্মের জয়গান, নিজেদের ধর্মই সেরা । বাকি সবাই হয়তো কাফের নয়তো পথভ্রষ্ট ।এই কথাগুলা আমাদের কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ভুলপথে পরিচালিত করে। যেহেতু ঐসব শিশুদের বোধশক্তি এতটা প্রবল থাকে না, তাই তারা অকপটে শিক্ষকদের দেয়া তথ্যগুলিকেই শিরোধার্য ভেবে নেয়। অথচ চিন্তা করুন দুটি শিশু একসাথে একই ক্লাসে পড়ে, একই সাথে খেলে কিন্তু একটা জায়গায় এসে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে যায় । একজনের কাছে আল্লাহ সর্বশক্তিমান তো অন্যজনের কাছে ভগবান। এই বাচ্চাগুলিকে ধার্মিক বানাতে গিয়ে এক একটা অকালকুষ্মান্ড ধর্মের ধজ্জা বাহক বানানো হচ্ছে। যার আউটপুট তো এখন স্পষ্টত দৃশ্যমান ।
আর যদি কেউ এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়েও আসে, তাহলে নামের শেষে কিংবা আগে নাস্তিক নামে একটি নতুন টাইটেল ঝুলিয়ে দেয়া হয় । আর নাস্তিকদের হত্যা করা তো বেহেস্তে যাবার বিজনেস ক্লাস টিকিট । হুমায়ুন আজাদ স্যারের ব্যাপারটাই দেখুন না । কি সগৌরবে তাকে কুপিয়ে মারা হল । হ্যা, হয়তো একদিন এই সব থাকবে না । আর থাকলেও অন্ধের মত কেউ তা লালন করবে না। শুধু আফসোস, আপনি আমি এটা দেখে যেতে পারব না ।
@দিগ্বিজয়ী,
ভাল কথা বলেছেন। প্রথমেই খেয়াল করুন, স্কুলের পাঠ্যসূচী থেকে ধর্ম উঠলেই কিন্তু সমস্যার পুরো সমাধান হচ্ছে না। ধর্মের নামে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা বয়ষ্কদের জন্য প্রচলিত নানান অথেন্টিক সূত্র বলে পরিচিত বই পুস্তক, নামী দামী আলেমদের বয়ানে নানান ভাবে নিয়মিত আসছে, এমনকি সরকার নিজে এসব পেট্রোনাইজ করছে।
গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার সমস্যা এটা না, চিন্তা করে দেখুন সামরিক স্বৈরশাসন যখন দেশে জারি ছিল তখন থেকেই ধর্মশিক্ষা স্কুলের সিলেবাসে শুরু হয়েছে। যদিও এর ভিত্তি আসলে মুক্তিযুদ্ধের অল্প কদিন পর থেকেই শুরু হয়। সত্য কথা বলতে আমার মনে পড়ে না যে আমাদের স্কুলের পাঠ্যসূচীতে সরাসরি অপর ধর্মের মানুষকে জেনারেলি হেয় করে কোন শিক্ষা ছিল বলে, মক্কার কাফেরদের শয়তানীর কিছু বর্ননা অবশ্যই ছিল তবে সাধারন ভাবে খৃষ্টান, মুশরিক, ইহুদীরা সদা সর্বত্র ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে নবীজি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, এসব তখন শিক্ষা স্বৈরশাসকদের আমলেও সিলেবাসে আসেনি। এসেছে আমাদের নির্বাচিত গনতান্ত্রিক শাসনামলে। কাল যদি গনতন্ত্র আবারো হত্যা করে আরেক সামরিক শাসক আসে এবং সে ব্যাক্তি জীবনে সেক্যুলার মানসিকতার হয় তবুও সে সিলেবাস থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ এবার দূঃসাহস করবে না, সে হয়ত খালেদা হাসিনাকে জেলে পুরতে পারে কিন্তু ধর্মীয় ইনষ্টিটিউটের ওপর হাত দেবে না। মহাপরাক্রমশালী গতবারের হাইব্রিড সেনা/কেয়ারটেকার সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিটিয়েছিল, ধরে নিয়ে টর্চার করেছিল মিছিল করার দায়ে, কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠির মিছিলে হাত দিতে সাহস করেনি।
গনতান্ত্রিক হোক, আর স্বৈরতান্ত্রিক হোক, কেউই চাইবে না সাধারন মানুষকে খেপিয়ে দিতে। গনতান্ত্রিক স্বৈরাচার সকলেই জানে পাবলিকের উইক পয়েন্ট এখানে। কাজেই সমস্যা গনতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রে নয়, অনেকে যেমন বলার চেষ্টা করেন যে সেনা আমলেই জামাত শিবির জাতের দলগুলিকে গর্ত থেকে বার করে মৌলবাদ/সাম্প্রদায়িকতা এসব জন্ম দেওয়া হয়েছে। এটা আংশিক সত্য হলেও মূল এখানে নয়। সাধারন জনগনের মাঝ থেকে যতদিন না ধর্ম বিষয়ে অতি আবেগ, উন্নাসিকতা না যাবে ততদিন যে সরকারই আসুক ধর্মকে তোয়াজ করে চলবে। অনেকে বলার চেষ্টা করেন ‘ধর্মকে ব্যাবহার করা হচ্ছে রাজনীতির স্বার্থে, ক্ষমতায়নের স্বার্থে”। ক্ষমতায় যেতে কে না চায়? পশ্চীমে কেন রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মকে ব্যাবহার করে না ক্ষমতায় যাবার কাজে? জবাব এক যায়গাতেই, সে কালচারের লোকের কাছে ধর্মের নামে আবেগপ্রবন কথাবার্তা, অমূকের মুরিদ হয়ে যাওয়া এসবের গুরুত্ব নেই।
সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার কিছু প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ কুফল সামনের বার আলোচনা করব, আপনি যা বলেছেন অনেকটা তেমনই। মারেফুল কোরানে যেমন আছে বিধর্মীরা মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধী সেটা পড়ে বেশীরভাগ মুসলমানে নিশ্চয়ই বিধর্মীদের কল্লা নিতে দৌড়োবে না, কিন্তু তাদের ঘৃনা করার বীজ মনে ঠিকই বপিত হবে।
লেখা খুব ভালো লেগেছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। আপনার লেখা আর মতের বাইরে আর কিছুই যোগ করার নেই তাই কথা বাড়াতেও পারছি না। কিন্তু জানেন কি, এইখানে এধরনের লেখায় কেমন যেনো অপূর্ন লাগে। বিরুদ্ধমত করার কেউ তো নেই। আপনি যে পোস্টটির লিংক দিয়েছেন অন্যব্লগে, সেখানে আলোচনা অনেক প্রানবন্ত লেগেছে। আসলে মতের বিরুদ্ধে কেউ থাকলে সেখানেই কথা বাড়িয়ে ভালো লাগে। কতক্ষন আর একমত হয়ে কথা চালানো যায়। যদিও লিংকের পোস্ট টিতেও অবান্তর মন্তব্যকারী আর গালিবাজদের বিচরন কম নেই।
@সফিক,
ধন্যবাদ।
আমিও একমত যে এখানে লেখা বিপক্ষ মতের অভাবে অপূর্ন থেকে যায়। খোলা মঞ্চে এসব নিয়ে বিতর্কের সুযোগ এখানে পাওয়া যায় না।
এ কারনেই আমি এক সময়ে এখানে এসব লেখালেখিতে অনাগ্রহী হয়ে সে যায়গাতেই বেশী বিচরন করতাম। সেখানে এক সময় মোটামুটি সব বিশ্বাস/অবিশ্বাসের লোকজনের সহাবস্থান ছিল (খুব শান্তিপূর্ন বলা যায় না যদিও)। আলোচনাও অনেক সময় প্রানবন্তই হত, তবে খোলা জানালার যা সমস্যা, বেশ কিছু উটকো ঝামেলাও জুটে যেত।
@আদিল মাহমুদ,
একমত নই। যে তথ্য-সুত্র ও ইউটিউব লিংকগুলো দিয়েছেন এসব সত্যানুসন্ধানী মানুষের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্যে সহায়ক রেফারেন্স হয়ে থাকবে। বিপক্ষ মতের বা বিশ্বাসের মানুষেরা তা দেখছে, পড়ছে কিন্তু তাদের মত-ধারণা, বিশ্বাস পাল্টাবেনা, কোন না কোনভাবে তাকে জিততেই হবে। বিশ্বাসের কাছে যুক্তি-তথ্য প্রমাণ সবকিছু অর্থহীন। এই লেখা পড়ে একজন মানুষও যদি ভাবতে শিখে, জগতের সকল মানুষকে মানুষ পরিচয়েই দেখা উচিৎ, ধর্মের পরিচয়ে নয়, এটাই তো আপনার লেখার স্বার্থকতা।
@আকাশ মালিক,
আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি অথেন্টিক সূত্রের রেফারেন্স দিতে। আধা পরিচিত বা নাম পরিচয়হীন আলেম, ইসলামী সাইটের লাখো সূত্র আছে যেসব দিতে পারলেও ইচ্ছে করেই দেইনি, কারন প্রথমেই কথা আসবে ওমূকে ইসলাম জানে না…..ইসলাম জানতে হলে আসল আলেম ওলামাদের কাছে যেতে হবে……সেই ‘আসল’ আলেম কারা তা নিশ্চিত না জানলেও চেষ্টা করেছি যাদের ইসলামী জগতে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করা হয়, একাডেমিক সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাদের ব্যাখ্যা হাজির করতে।
তারাও আসল ইসলাম না জানেন না কেউ মনে করতেই পারেন, তাদের প্রতি একান্ত অনুরোধ সেক্ষেত্রে সেটা প্রচার করুন, ‘ভুল’ শিক্ষার কবল থেকে সমাজকে রেহাই দেন।
– কে ইসলাম গ্রহন করল কি বর্জন করল নাকি নাস্তিক হল এসবে আমার কিছু যায় আসে না। এসব লেখালেখির একমাত্র উদ্দেশ্য ধর্মের ভিত্তিতে যেন মানুষ মানুষে ভেদাভেদ না হয়, ঘৃনাবাদের চাষ বন্ধ হয়।
– বিপক্ষ মত ঠিক কাদের বলা যায় জানি না। আমার লেখা পড়ে যাদের গায়ে বিছুটির জ্বলুনী পড়বে তারা তো প্রকাশ্যে স্বীকার করেন না যে ইসলামী শিক্ষার মাঝে সাম্প্রদায়িক কোন ব্যাপার আছে। এমন ভাব করেন যে ব্যাপারটা এইই প্রথম আমার মতন ইসলাম বিদ্বেষীর কাছেই শুনলেন, এর আগে জিন্দেগীতেও কোন আলেম ওলামা বা সহি ইসলামী শিক্ষার বইতে এমন কিছু দেখেননি :)) ।
কেউ জেনে শুনে ভন্ডামি করে গেলে তার প্রথাগত ধর্ম কি জানি না, তবে সে ধর্মের মনুষ্য প্রদত্ত নাম হল ভন্ডামি, প্রতারনা যদি নাও হয়। আর ভন্ডামির সেন্স নেই এমন কিছু মানুষও এ গোত্রে আছে, তাদের ধর্মের সাধারন নাম হল কাল্ট।
@আদিল মাহমুদ,
এটাই। অবাক হই, দুঃখ লাগে যখন দেখি একদল শিক্ষিত মানুষ চোখ-কান বন্ধ করে, উট-পাখির মতো বালিতে মাথাগুঁজে জীবনভর নাস্তিকদের বিষোদাগার করেই চলেছে, একবার মাথা তুলে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেনা তার চার পাশে কী ঘটে চলেছে। পাহাড়ে, সমতলে, রামুতে, সাতক্ষীরায় সারা বিশ্বজুড়ে অমুসলিমরাতো মরছেই, মুসলমানরাও রেহাই পাচ্ছেনা মুসলমানের হাত থেকে। এ সব ধর্মগ্রন্থের শিক্ষা, শরিয়তের বিধান। বাংলাদেশ, ইরান, আরব, সোমালিয়ায় জগতজুড়ে কতশত শেলী, হেনা, শেফালী, শাফিলিয়া, নুরজাহানরা ধর্মের বলিদান হলো, দুনিয়ার বিবেকবান মানুষেরা প্রতিবাদ করলো, শরিয়তিদের হৃদয় মোটেই টলেনা। তারা এ সব অন্যায় অবিচার দেখেনা, প্রতিবাদ করেনা তারা আসে আমাদেরকে ইসলাম শেখাতে। যে নিষ্ঠুর অমানবিক প্রথা, শাসন বিধানের প্রতিবাদ ধর্মবাদীদের করার কথা সেটা আমরা করায় আমাদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী মুসলিম বিদ্বেষী আখ্যায়িত করা হয়।
আরেকদল শিক্ষিত ভন্ডের উপদ্রব বেড়েছে, এরা সব ঘটনায় সব জায়গাতেই আমেরিকা-ইসরাইল আর পুঁজিবাদের হাত খুঁজে পায়। এরা লাশের গন্ধ শুঁকে বলতে পারে এখানে খুনি আমেরিকা এসেছিল। একটা ব্লগে দেখলাম একজন রামুর ঘটনার সমাধান দিতে গিয়ে বললো- আগে আমেরিকা সামলান, না হলে এ সব কোনদিন বন্ধ হবেনা।
আমরা রাষ্ট্রকে বানিয়েছি মুসলমান। ফলাফল, উটের পিঠে সওয়ার হয়েছি আমরা উলটো পথের যাত্রী।
@আকাশ মালিক,
সেসব শিক্ষিতের ব্যাখ্যা তো সদা সর্বত্র তৈরীই আছে। ধর্মের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নাই, এসব দুষ্কৃতকারীদের কাজ, ধর্ম ব্যাবহার করে এসব করেছে…কেউ ধর্ম ব্যাবহার করলে তার দায় কেন ধর্ম নিতে যাবে…
ইসলামে কোথাও নিরীহ বিধর্মীদের হামলা করতে বলা হয় নাই……সুরা মুমতাহিনা আয়াত ৮…নবীজি বিধর্মীদের সাথে জুলুম করা হলে পরকালে সেসব জুলুমবাজদের দেখে নেবেন…এরপরে আর কিভাবে বলা যাবে ধর্মের সাথে সাম্প্রদায়িক হামলার সম্পর্ক আছে?? তাছাড়া ওনারাও তো প্রতিবাদ করেন 🙂 ।
ইবনে কাথির, ইমাম গাজ্জালী, মারেফুল কোরানের তাফসিরকারি উসমানি সাহেব, ইমাম শাফি এনারা সকলে নিঃসন্দেহে আমেরিকা-ইসরাইলের সাম্রাজ্যবাদ অগ্রীম গায়েবী সূত্রে জেনে গেছিলেন।
আরে,
দেলোয়ার ছায়ীদি কোরান হাদিছ ফেকাহের ভূল অর্থ করেন, জামাতীদের গনতন্ত্রের মাধ্যমে পার্লামেন্ট দখল করা ইছলামের মুল নীতি বিরুদ্ধ, মওদুদী বলেছেন গনতন্ত পাশ্চাত্য হতে উৎপত্তি-এজন্য উহা হারাম। এখানে দেখুন
এরপরেও জামাতীরা কি করে ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই করতে পারে,তা আমার বোধগম্য নয়।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
জামাতিরা আসলে এখানে আমার টার্গেট নয়। জামাতী হিসেবে নয়, মওদুদীকে রেফার করেছি আলেম হিসেবে। অনেক কারনে বিতর্কিত হলেও সে এখনো অনেক ইসলাম ভক্ত লোকের চোখে বিরাট আলেম।
ধর্মজগতের সারকথা সত পথে থাকো, সত্য কথা বল, পরের অনিষ্ট করো না এর বাইরে সামান্য ভেতরে যেতে গেলেই পদে পদে সেলফ কন্ট্রাডিকশন ধরা পড়বে। ধার্মিক মন নানান ভাবে এসব কন্ট্রাডিকশনের ব্যাখ্যা দাঁড়া করায়, কেউ সিম্পলী ধোঁকা দিতে, কেউ পরকালের আশায়।
অথচ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ঠিক পর পরই জিনাহ সাহেব (বাংলায় জিন্নাহ) বলেছিলেন ঠিক এর বিপরীত। এটা সুবিদিত যে , শিয়া গনহত্যায় নেতৃত্বদানকারী এবং জামাত-এ- ইসলামী পাকিস্তানের প্রতিষ্টাতা মউলানা মউদুদী ভারতে বৃটিশ রাজ থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির বিরোধীতা সবসময় করলেও পরে ঠিকই এর সুফল হাইজ্যাক করে নেয়। সামরিক শাসকদের হাতে পরবর্তীকালে পাকিস্তানের যে কি দশা হবে তা বোধ হয় জিনাহ সাহেব কল্পনাও করতে পারেন নি। নিচে তার বক্তব্য থেকে সেটা বোঝা যায় :
@সংশপ্তক,
মওদুদী পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল কারন জিন্নাহর পাকিস্তান ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি হলেও শরিয়া ভিত্তিক ছিল না বলে, জিন্নাহর মডেল ছিল সেক্যুলার ভিত্তিক। মওদুদী জিন্নাহকে অনেক গালিগালাজও করেছিল তখন। মওদুদীর মতে এমন সেক্যুলার পাকিস্তান হল ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করা।
মওদুদীর ইসলাম সম্পর্কে মতবাদ হল একে মিষ্টি কথায় নয়, তলোয়ারের জোরেই কায়েম করতে হবে। তার মতে ইসলামে চুড়ান্ত সফলতা এভাবেই ইসলামের স্বর্নযুগে এসেছিল। এনাকে অনেকেই কাঠমোল্লা, ধর্মব্যাবসায়ী (নবীজির নামে নাকি ইনি বিশ্রী কথা বলেছেন) এসব বললেও এখনো বহু দেশে ওনার প্রচ্ছন্ন প্রভাব আছে ইসলাম প্রিয় লোকজনের মাঝে। মিশরের সদ্য ক্ষমতায় যাওয়া ব্রাদারহুড, এমনকি আয়াতুল্লা খোমেনীর ওপরও এনার তাত্ত্বিক প্রভাব আছে।
জিন্নাহ সাহেব আসলেই বছর পাঁচেক বেঁচে থাকলে হয়তবা আজ পাকিস্তানের ইতিহাস ও বর্তমান অন্যররকম হলেও হলে পারত, ইন্টারেষ্টিং হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন। যদিও আমি সিরিয়াসলি তেমন মনে করি না। শুধুমাত্র এক নেতা এক জাতির ভাগ্য ড্রামাটিক্যালি বদলে দিতে পারে এমন বিশ্বাস করি না। নেতাকে হজম করার মত শক্তি লাগে।
@আদিল মাহমুদ,
বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্হায় বর্তমানে যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচলিত আছে , সেটাকে কি বন্ধ করা আদৌ সম্ভব ? আমার তো মনে হয় না। আজ যদি নিরপেক্ষ গনভোটও দেয়া হয় , দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার পক্ষেই ভোট দেবে। ডানপন্হী , বামপন্হী যেটাই বলুন তারা কেউই এটার বিপক্ষে নয়। যারা বিপক্ষে আছেন তারা আবার নির্বাচনে জেতা তো দূরের কথা নির্বাচনী জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। তাহলে উপায় কি? আমরা কি এমন অবস্হা মেনে নিয়ে সারা জীবন ব্লগে রাজা উজির মেরে যাব ? গনতন্ত্র তো দেখা যায় সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর নয় , বিশেষ করে বাংলাদেশে তো নয়ই।
@সংশপ্তক,
আসলে ধর্মশিক্ষা এখনই বন্ধ করতে হবে এমন দাবী আমি করি না। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ধর্মীয় বিষবাষ্প ছড়ানো বাদ দিয়েও হয়তবা ধর্মশিক্ষা দেওয়া যেত। ইসলামে ভাল শিক্ষা দেবার মতও উপকরন আছে। সিলেবাস যারা প্রনয়ন করেন তাদের মস্তিষ্কে এটা এখনো ঢোকেনি যে যুগ বদল হচ্ছে। সংশয়বাদী মনে এক সময় না এক সময় এসব হেটফুল টিচিং নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই, তখন ধর্ম সম্পর্কেই আস্থা টলে যাবে। এসব বিব্রতকর বিষয় ধর্মে থাকলেও সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে তাদের উচিত এড়িয়ে যাওয়া।
ধর্মীয় উন্মাদনা মুক্ত বাংলাদেশে গড়ার মোক্ষম সুযোগ ছিল জন্মের পরপরই, দূঃখের বিষয় হল যাদের থেকে আশা ছিল সবচেয়ে বেশী তারা গাছে তুলে মই কেড়ে নিয়েছেন। এরপর শুধুই নিম্ন গমনের পালা। এখন অবস্থা এমন যে ধর্মের ঢাক ঢোল না পেটালে নির্বাচনে জয়ের আশা নেই। জন্ম হয়েছে এক ভিশাস সাইকেলের। গনতন্ত্রের মুশকিল হল একটা সাইজেবল লোক গনতন্ত্রের প্রকৃত সুফল ভোগ করার যোগ্য না হলে সেখানে এটা হীতের চেয়ে অহিতকর ফলই বয়ে আনে বেশী। আমার ব্যাক্তিগত ধারনায় বাংলাদেশে স্বাধীনতাই এসেছে অনেকটা প্রি-ম্যাচিউর অবস্থায়।
হতাশ হবার তেমন কিছু নেই। সরকার, রাজনৈতিক দল ছাড়াও কিছু হয়ত করা যায়, যদিও রাতারাতি বা নাটকীয় কিছু আশা করা ঠিক হবে না। লেখালেখির মাধ্যমে দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়বে। সংশয়বাদী মনে প্রশ্ন জাগবেই। যে জঞ্জাল হাজার হাজার বছর ধরে জমেছে সে জঞ্জাল কি আর দুয়েক বছরে যাবে?
@আদিল মাহমুদ,
রাতারাতি ধর্মশিক্ষা বন্ধ করার প্রস্তাব করার মত অর্বাচীন আমি নই। আমি জানি যে, এটা বাংলাদেশে বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতই অনেকটা। আমি যেটা বলতে চাইভি সেটা হল যে , এ ব্যপারে সুপরিকল্পিতভাবে এগুতে হবে। সল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা স্হির করতে হবে। যেসব ব্যবস্হা আপাতঃ চোখে পড়ে না কিন্তু সূদুর প্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম সেসব নিয়ে এগুতে হবে। কথায় আছে , Fight fire with fire !
কিন্তু এসব করতে হবে সরকারকেই । সরকারের যেসব রিসোর্স আছৈ সেসব ব্যক্তি গোষ্টীর পক্ষে জোগার করা কখনও সম্ভব নয়। বিদ্যাসাগরকেও বৃটিশ প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে সমাজ সংস্কার করতে হয়েছে। বৃটিশরা নারাজী থাকলে সেসব যুগান্তকারী সংস্কার সম্ভব হত না কারন উল্টোটাই বরং জনপ্রিয় ছিল। একবার ভাবুন বৃটিশরা যখন এদেশের ক্ষমতা হাতে নেয় , সেসময় রাজভাষা ফারসী ছিল , ধর্মের প্রভাব ছিল অনেক গভীর। সেখান থেকে শুরু করে ভারতবর্ষ ছাড়ার সময় হার্ডিঞ্জ সেতু, একটা ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্হা এবং ইংরেজী ভাষা রেখে যায় যা আমরা এখনও ভেজে ভেজে খাচ্ছি। এর কারন বৃটিশরা রাতারাতি কিছু করে না কিংবা করতে চায় না। প্রাকৃতিক নির্বাচনে এভাবেই সূদর প্রসারী পরিকল্পনা প্রসূত সংস্কার টিকে যায় এবং দুই দিনের বিপ্লব তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে। মোল্লারা এস চালাক হলে তারাই আজ পৃথিবী শাসন করত, হাজার বছরের পুরান পান চিবানোর বদলে।
আমাদের একটা ‘স্হিতিশীল’ এবং প্রকৃত ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্হা দরকার যা কম পক্ষে ৭০ বছর ক্ষমতায় থাকবে। সামাজিক মিউটেশনগুলো কৃত্রিমভাবে এসময়ে ঘটাতে হবে যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে টিকে যাবে। এসব টিকে যাওয়া মিউটেশনগুলো বাড়তে বাড়তে এক সময় সমস্ত সমাজটাকে নিজের করে ফেলবে। অদ্ভুত শোনাচ্ছে ? এরকম উদাহরন অনেক আছে। আমাদের ফারসীর বদলে ইংরেজী শিখতে চাওয়ার পেছনে এই সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মিউটেশনই দায়ী। আপাতত এটুকই। 🙂
@সংশপ্তক,
আসলে এ সমস্যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে এতই ইন্টিগ্রেটেড যে এ থেক্লে মুক্তি পাবার উপায় সম্পর্কে আমারও পরিষ্কার ধারনা নেই।
আমি যতটা বুঝি যে প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে ধর্মের অবসেশনের জগত থেকে লোককে বাস্তবের জগতে আনা। সে জন্য দেখাতে হবে ধর্ম সম্পর্কে যেসব গল্প কাহিনী, বাগাড়ম্বর যুগ যুগ ধরে শিখিয়ে আসা হচ্ছে সেসব দাবী কতটা ফাঁপা। আমাদের দেশের জনগনের ভেতর ধর্ম সম্পর্কে অবেশন মৌলবাদী থেকে শুরু করে সাধারন মুসলমান যে সমগ্র কোরানের ১০%ও নিজ ভাষায় কোনদিন পড়েনি তার মধ্যেও আছে। এর থেকে মুক্তি না পেলে সরকার বদল কোন কাজে আসবে না। সরকার জনগন যা চাবে এ ক্ষেত্রে তাইই দেবে। গণমানসে এ জন্য মানসিক আঘাতও দিতে হবে, চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে হবে যে সে যা বিশ্বাস করে বলে দাবী করে তা আসলে নিজেও মানে না। যেমন, আপনি যেমন বললেন তাকে বাস্তব জীবনে আসলেই কিসের গুরুত্ব বেশী, কিসের গুরুত্ব নেই বা কম সেটা বোঝাতে হবে। মিথ্যা অবসেশনের জগত থেকে মুক্তির উপায় সেটাই। সুদুরপ্রসারী প্রভাব এভাবেই ফেলা সম্ভব। বাংলাদেশ বা মুসলমান সমাজের কন্টেক্সট এ মূল চ্যালেঞ্জ হল ধর্মীয় বিধিবিধানের নামে ধর্মগ্রন্থজাত সব বিধিবিধান, দর্শন যে সব যুগে চলে না, অনেক কিছুই বাতিল এবং অমানবিক সেটা চোখে আংগুল দিয়ে দেখানো, মানুষকে ইসলামচ্যূত করা লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় কোনভাবেই। ধর্মের ক্ষতিকর দিকের বীজ আছে এ যায়গাতেই, এ অবসেশন কেটে গিয়ে ধর্মের আসল স্থান যা হওয়া উচিত অর্থাৎ আত্মিক শান্তির জন্য সে স্থানে পাঠানোর মাঝেই সমস্যার মূল সমাধান।
এতেই যে রাতারাতি কাজ হবে এমন নয়, যে অন্ধবিশ্বাস হাজার হাজার বছর ধরে ডালপাতা মেলে বড় হয়েছে তার থেকে মুক্তি এত সহজ নয়। আমি নিজেও নিজ ধর্ম, ধর্মীয় মহাপুরুষদের অবেশন থেকে মুক্তি পেতে অনেক সময় নিয়েছি, প্রথম প্রথম ধার্মিক মনকে নানান ক্লাসিক উপায়ে বুঝ দিয়েছি। এভাবেই এগুনো যাবে।
দারুন লেখা, অনেক কসরত করেছেন মনে হচ্ছে। কিন্তু ভাই এত বড় না লিখে এটাকে দুই খন্ডে বিভক্ত করা যেতে পারত।
আসলেই মহা বিপদে পড়ে গেছে ওরা । আমি একজনের কাছে ইবনে কাথিরের তাফসির দিয়ে এই জিজিয়া কর ও অমুসলিমদের সাথে যে বন্ধুত্ব করা যাবে না , তাদের সাথে কেয়ামত পর্যন্ত যুদ্ধ করে তাদেরকে হত্যা খুন করে ফেলতে হবে এটা বলাতে সাথে সাথেই মন্তব্য করল- এটা হলো কাথিরের নিজের বক্তব্য কোরানের না। ভাবখানা যেন কাথির নিজের মনগড়া কেচ্ছা বলে গেছেন। এখন তো হর হামেশাই শুনি- ইমাম বোখারি বা মুসলিম এরা নাকি ইহুদি আর তারা ইসলামের বহু সর্বনাশ করে গেছে। তাহলে বুঝুন ঠেলা !
@ভবঘুরে,
বড় হচ্ছে বুঝতে পারি, কিন্তু ভাংগলে মুশকিল হল কন্টিনিউটি হারাবে। প্রথম পাতা থেকে এক লেখা সরে না যাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় পার্ট দিতে পারি না। এমনিতেই ছোট করতে হয়েছে। দূশ্চিন্তার কারন নেই, যাদের পড়ার দরকার তারা ঠিকই কষ্ট করে পড়ে নেবে, দাঁড়ি কমার ভুল ধরবে।
এক ইবনে কাথির হলে তো কথা ছিল না, আইনষ্টাইনের মত বড় বৈজ্ঞানিক যদি ভুল করতে পারে তো একজন বড় আলেমের ভুল কেন হতে পারে না? কথা হল একই রকমের ভুল বিভিন্ন যুগের, বিভিন্ন দেশের আলেম ওলামারা কিভাবে করতে পারে? তারচেয়েও বড় কথা সেসব ভুল জেনেশুনে প্রচার প্রসার কিভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? কোন না কোন ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই থাকতে বাধ্য।
আমার নিজেরও ধারনা আছে যে সহসা না হলেও এক সময় কোরান ওনলি মতবাদ জনপ্রিয়তা পাবে।