বাংলাদেশে ধর্মান্ধরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-পাহাড়ী-আহমাদিয়া-নিরীহ মূলধারার মুসলমানদের উপর একের পর এক আঘাত করে যাচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-পাহাড়ী-আহমাদিয়াদের বসতি-উপসনালয়ে বিভিন্ন সময় হামলা করা হয়েছে। সাধারণ মূলধারার মুসলমানদের ফতোয়ার বেড়াজালে আটকিয়ে নানাভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে। পরিণামে অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আর যারা তা পারেননি, অপেক্ষা করছেন ধুঁকে ধুঁকে মরার।
অধিকাংশ বাংলাদেশী এসব ঘটনার পিছনে নানান ধরনের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করেন। কেউ বলেন, জামাত-শিবির-বিএনপির হাত আছে এসব ঘটনায়, সরকারের দুর্নাম করতে চায়, সরকারের পতন ঘটাতে চায়। কেউ বলেন, এগুলো হিজবুতিদের কাজ, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব করছে। কেউ বলেন, এগুলো সংখ্যালঘু/দুর্বলদের হটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের জমি-সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। কেউ আবার এগুলোর মাঝে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পান; ‘র’, ‘মোসাদ’, ‘সিআইএ’, ‘আইএসআই’।
তবে যে যাই বলুক না কেন, নিপীড়িতদের কাছে আপনার-আমার এইসব ষড়যন্ত্র আলোচনা ‘মা মাছের সন্তানশোক’ ছাড়া আর কিছু নয়।
আর একটি দল আছে, যাদের বক্তব্য শুনে আতংকিত হতে হয়। এ দলের মানুষেরা সরাসরি বলে বেড়ায়, ‘আমার ধর্মকে অবমাননা করেছে! এত বড় সাহস! খুব ভাল কাজ হয়েছে। আরো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দাও।’ এরা আসলে আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের ধর্মান্ধ অংশ, যাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা বাংলাদেশীরা। একজন মানুষের পরিচয় যদি বর্তমান সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে করতে হয়, তাহলে, তা ভয়াবহ ভবিষ্যতের সংকেত দেয়।
হঠাৎ করেই কি এই ধর্মান্ধ শ্রেণীর উদ্ভব?
সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় আমরা দেখেছি হিন্দু-মুসলমান-শিখ ধর্মান্ধদের মানুষ হত্যার উদ্যম উৎসব। একাত্তরে আমরা দেখেছি এই ধর্মান্ধ দলের তাণ্ডব, ত্রিশ লক্ষ মানুষের লাশ আর দু’লক্ষ নারীর আর্ত-চিৎকার।
জামাত-শিবির-কওমী মাদ্রাসা-হিজবুত তাহরীর-বিভিন্ন তরিকা হতে বেরিয়ে আসছে মুসলমান ধর্মান্ধদের দল। এদের তাণ্ডব আমরা দেখেছি বাহাত্তর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। উদীচী হত্যাকাণ্ড, রমনার বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ, সারাদেশে জেএমবির ত্রাস, নিরীহ মূলধারার মুসলমানদের নানান ভূঁয়া ফতোয়ার মাধ্যমে অত্যাচার করার মাঝে বার বার দেখেছি ক্রমবর্ধমান এই ধর্মান্ধ শ্রেণীকে।
মধ্যবিত্ত সমাজের একটা অংশ ধর্মান্ধদের সাথে জুড়ে গেছে। শিবির-হিজবুত তাহরীর এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমি অবাক হই, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষারত বুদ্ধিমান একজন শিক্ষার্থীকে কী এমন বলে/কী দেখায় যে, এই শিক্ষার্থীগুলো ধর্মান্ধদের দলভুক্ত হয়?
মধ্যবিত্তের একটি অংশের ধর্মান্ধদের দলে সামিল হওয়াটা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনীসংকেত।
সরকারও হার মেনে নেয় ধর্মান্ধদের কাছে। ইউটিউব বন্ধ করে এইসব কাঠমোল্লাদের প্রশ্রয় দেয়ার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বুঝতে পেরেও ক্ষমতার লোভে কিছু করতে আগ্রহী হচ্ছে না সরকার। কিন্তু একদিন নিজেদের এই ভুলের মাশুল দিবে সরকার।
রামুর ঘটনায় অবাক হই। ধর্মান্ধদের তাণ্ডবনৃত্য শুরু হয় রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আর প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় ভোর রাত চারটায়। ধর্মান্ধদের ক্ষমতার জাল আর সরকারের নপুংশকের মত নিস্ক্রিয়তা দেখে হতভম্ব হয়ে রই। একদিন এই জালেই আটকে পড়ে বড় ঝামেলা পোহাতে হবে সরকারকে।
ফেসবুকে কুরআন অবমাননার একটি আপত্তিকর ছবিকে ঘিরে রামু থেকে শুরু হয় ধর্মান্ধদের বৌদ্ধ নিপীড়ন। অবাক হতে হয়। বাংলাদেশে আইন-আদালত আছে। অনুভূতিতে আঘাত পেলে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া যায়। ব্লগ-ফেসবুক-পত্রিকা-গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু ধর্মান্ধ এই শ্রেণীটি সভ্য উপায়ে এসবের প্রতিবাদ করে না। ওরা প্রতিবাদ বলতে বুঝে জ্বালাও-পোড়াও-নরহত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ। নৃশংসতার মাঝে কোনো প্রাপ্তি থাকে না-এই সরল সত্যটুকু ওদের মাথায় ঢুকে না।
ধর্মান্ধরা আসলে বাংলাদেশে কাউকে থাকতে দিবে না। এরা একটু একটু করে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে আমাদের বাংলাদেশকে।
ধর্মান্ধরা কোনো ধর্মের-জাতির-সম্প্রদায়ের অংশ হতে পারে না। এরা সমগ্র মানবতার শত্রু। ‘মুসলমান ধর্মান্ধ’দের জন্য আজ সারাবিশ্বে সাধারণ মুসলমানদের অপমানিত হতে হয়।
সহিংসতার কোনো জাত-পাত থাকে না। ধর্মান্ধদের সহিংস কাজগুলো যে কোনোভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। না হলে, অনাগত দিনগুলোতে আমি-আপনি সবাই একে একে এদের দ্বারা আক্রান্ত হব।
আজ যদি আমরা এদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, তাহলে, আগামী দিনগুলোতে আমাদের হাহাকার শোনার জন্য, আমাদের বাঁচানোর জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
(পূর্বে লেখাটি একটি পত্রিকায় কলাম হিসেবে প্রকাশিত হয়)
সমসাময়িক যুগোপযোগী লেখা। ভাল লাগল। (Y)
@চিত্তরন্জন দাস,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ধর্মান্ধতা নিপাত যাক।
শেকড়ের গভীর ভীত আর তার শাখা প্রশাকায় কিন্তু রামু ও রাঙ্গামাটির অনেক মিল । আমারা রাঙ্গামাটির ঘটনাকে রামু ঘটনার মহড়া বলতে পারি । পরেরটা নিশ্চয় আরও ভয়ংকর হবে ।যদি এখনও এর শেকড় ধরে টান দেওয়া না যায় ।
@তন্দ্রা চাকমা,
এই বিষয়টি সবচেয়ে ভয়ের এবং চিন্তার।
ধর্মান্ধতার প্রতিকার না হলে সব শেষ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।
০১. দৃশ্যত:ই রাঙামাটির সঙ্গে রামু’র সহিংসতার প্রেক্ষাপট ও ধরণ ভিন্ন। আবার দর্শনগত দিক তলিয়ে দেখলে এর মূল ইন্ধনদাতা রাজনৈতিক শক্তি/আস্কারাটির রসুনের গোঁড়া অভিন্ন। মোটাদাগে, পাহাড় ও সমতলে ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর প্রশাসনিক আস্কারায় সেনা-সেটেলার-মোল্লারা এ ধরণের সহিংস আক্রমণের সাহস পাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির বিচার নেই, ভোটের মোকাম ঝলমলে রাখতেই একে জিইয়ে রাখা হয়েছে, বিএনপি/আওয়ামী লীগ/জামাত যুথবন্দী এ প্রশ্নে [“লা ইলাহা ইল্লা, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ”]।
এই আগ্রাসী উগ্র জাতীয়তবাদ/মৌলবাদ আস্কারার ভিঁতটি অনেক গভীরে। এই দর্শন বলেই সবক’টি বড় রাজনৈতিক দল [এবং তাদের গঠিত সরকারসমূহ] ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পীড়ন করে, কখনো “বৈষম্যহীন” বা “অসাম্প্রদায়িক” গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি [“ভাবমূর্তি” কথাটি এদের খুবই প্রিয়] ঠিক রাখতে তারা আবার নির্যাতীতর মাথায় হাত্ও বুলায়; বৌদ্ধ পুরোহিতদের চিবর দান করে বা মন্দিরে ছদকা দেয় বা দূগোৎসবে হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেয় টিভিতে-খবরের কাগজে বা “এ সরকারের সময়েই শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে [ইনশাল্লাহ]” জাতীয় বোলচাল দিতে থাকে অহরাত্র ।…
০২. ১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে ঐতিহাসিক মুজিবীয় [“তোরা সব বাঙালি হইয়া যা”] উক্তিটি স্মরণ করা যাক। এটি উগ্র জাতীয়তাবাদী দর্শনকে ধারণ করে, যার শেকড় ফ্যাসিবাদ তথা মৌলবাদে গাঁথা [মুক্তি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুজিবের দুঃশাসন এবং পরবর্তী শাসকগোষ্ঠিগুলো এখনো এই দর্শনটিকেই ধারণ করে]। এর নীট ফলাফলে পাহাড় ও সমতলে ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে গত চার দশক ধরে রক্ত ঝরছেই, আগুন জ্বলছেই।…
মুজিবীয় উক্তিটি একই সঙ্গে অস্বীকার করে ১৯৭১ এর অসাম্প্রদায়ীক- বৈষম্যহীন দেশগড়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; যে চেতনায় ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘু – সংখ্যাগুরু, আদিবাসী ও বাঙালি স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, বাংলা নামক ভূখন্ডের সবচেয়ে গৌরব গাঁথা মুক্তিযুদ্ধটিকেই। একারণে সে সময়ই কিংবদন্তী পাহাড়ি নেতা এমএ নলারমা বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান রচনার কালে সেখান থেকে আদিবাসী/উপজাতিদের বাদ দিয়ে শুধু “বাঙালি” জাতীয়তাবাদী ঝান্ডা ওড়ানোর প্রতিবাদ করেন [ঘটনার পরিবর্তন না হওয়ায় ভিন্ন মাত্রায় প্রতিবাদটি চলছেই]।
০৩. এ প্রেক্ষাপটে এমএন লারমা [পরে সন্তু লারমা] পাহাড়ে আড়াই দশক শান্তিবাহীর গেরিলা যুদ্ধ চালানোর পরে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি হয়। তবে দৃশ্যত শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্তসমূহ [যেমন, ভূমির বিরোধ নিস্পত্তি, পার্বত্য জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদকে শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন] বাস্তাবায়িত না হওয়ার সুযোগে এবং ইতিহাসের লীলায় সেখানে সেনা – অভিবাসিত বাঙালি [সেটেলার] রাজ্য শান্তিচুক্তি-পূর্ব অবস্থার মতোই চলতে থাকে। সংখ্যাগুরুর ভোটের হিসেব ঠিক রাখতে সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ আস্কারায় পাহাড়ে সেনা-সেটেলার পাকিপনা জেঁকে বসে; সেখানে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রের ভেতর আরেক সেনা-সেটেলার-সম অধিকারের [আসলে সংখ্যাগুরু জাতীয়তবাদ ও মৌলবাদে সেনা-বিএনপি/জামাত/এমন কি আ’লীগেরও] তালেবানী রাষ্ট্র।…
০৪. এ অবস্থায় উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধমীয় মৌলবাদী চেতনার জরুরি অস্ত্রপচার ছাড়া ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘুর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আদৌ সম্ভব নয়; এটিই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা [“আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম”]। একে অস্বীকার করার অর্থ হবে “চোখ বুজে চড়ুই ধরার” মতোই একটি নিস্ফল চেষ্টা মাত্র, যা প্রকৃত সত্যকে অনেকাংশেই আড়াল করে, দীর্ঘ বিভ্রান্তিতে আচ্ছন্ন করে আম-জনতাকে। ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় লেখককে সাধুবাদ জানাই। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
ধর্মান্ধতা ও সকল প্রকার উগ্রতা নিপাত যাক।
ধন্যবাদ,সুন্দর লেখার জন্য তবে আপনার লিখার উপর কোন মন্তব্য করতে চাইনা।কারণ আপনার কথাগুলো হয়তো নিরবে মেনে নেয়ার নাম ই ধর্মনিরপেক্ষতা।
@শাহারীয়ার ওয়াহেদ,
ধর্মনিরপেক্ষতার কোন বিকল্পতা তো নাই।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
(Y)
ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
@তিতাস বর্মণ,
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
ধর্মান্ধতা নিপাত যাক।
আজ এক টকশোতে দেখলাম এক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, সরকারী দলের ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা। অর্থাৎ সরকারী দলের ইমেজ হৃাস-বৃদ্ধি বা বিরোধী দলের ইন্ধন বা পলিটিকাল গেইন- এসব নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নকারী উপস্থাপক আর দেশের অনেক মানুষের উর্বর মস্তিষ্ক। কতগুলো মানুষ যে সংখ্যাধিক্যের জোরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিপীড়িত হয়েছে, চোখের সামনে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে প্রিয় মন্দির, শুধু একটি ধর্মে বিশ্বাসের অপরাধে রাতের অন্ধকারে ঘরে ঢুকে পড়েছে দুষ্কৃতিকারী, লুটপাট করা হয়েছে সম্পদ ও ইজ্জত- এসব বিষয় তাদের হৃদয়ে নাড়া দিতে সক্ষম হচ্ছে না। মানুষ হয়ে মানুষের নিপীড়ন তাদের স্পর্শ করে না, তাদের ইন্দ্রিয় শশব্যস্ত থাকে শুধু সরকার বা বিরোধী দলের ইমেজ হৃাস-বৃদ্ধি নিয়ে। আমরা কবে সত্যিকারের মানুষ হব?
সময়োপযোগী লেখাটার জন্য ধন্যবাদ, রাজা ভাই। (Y)
@কাজি মামুন,
চমতকার কথা বলেছেন-
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার সাথে একমত। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়টি হচ্ছে, ধর্মান্ধ শ্রেণীর উত্থান। যারই ইন্ধন থাকুক কিংবা, যতই ইন্ধন থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের এই গর্হিত কাজে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য অশনীসংকেত বই আর কিছু নয়।
@দীপঙ্কর বড়ুয়া,
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
(Y)
দারুন লেখেছেন।
সরকারের উচিত দোষীদের খুব দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।
@অগ্নিপুরুষ,
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
(Y)
ধন্যবাদ, আপনার এই সময়োপযোগী অসাধারন মতামতের জন্য। আপনি আপনার লেখায় বার বার সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা বলেছেন। হ্যাঁ, এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা অংশ আজ সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে পিছন থেকে ইন্ধন দিচ্ছে, সেটার কথা বিস্তারিত ভাবে বললে হয়তো বিষয়টা আরও পরিস্কার হত। আমি আমার ফেসবুকে সমাজের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। যেহেতু আমি মুক্তমনায় এখনো লেখার যোগ্যতা অর্জন করি নি, তাই আমার এই পোস্টটি আপনার এখানে শেয়ার করলাম। আশা করি আপনার ভালো লাগবে।
*** “চলুন আজ একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলি। ছোটবেলা থেকেই আমরা বুদ্ধিজীবীদের জীবনীগুলি আমাদের পাঠ্য বইয়ে পড়ে আসছি। আর তখন থেকেই আমাদের মনে একটা ধারণার জন্ম হয়েছে যে, বুদ্ধিজীবী মাত্রই মহাপুরুষ পর্যায়ের মানুষ। আমরা এখনো বুদ্ধিজীবিদের কথা উঠলেই মুনির চৌধুরী, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহদের উধাহরন দেই। যারা বরাবরই সমাজের উন্নয়নে নিস্বার্থভাবে কাজ করেছিলেন।
এখন আসুন আমরা বুদ্ধিজীবির সংজ্ঞা কি তা জেনে নেই।
বুদ্ধিজীবী: বুদ্ধি দিয়ে যারা জীবিকা অর্জন করেন, সাধারণত তাদেরকেই বুদ্ধিজীবী বলা হয়ে থাকে। তবে তাদেরকে অবশ্যই প্রচুর শিক্ষিত এবং জ্ঞানী হতে হয়।
এখন চলুন বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে আর একটু বিস্তারিত আলোচনা করি। সংজ্ঞা অনুসারে আমাদের সমাজে প্রচুর পরিমানে বুদ্ধিজীবী আছেন। জ্ঞানে বিজ্ঞানে যাদের অগাধ দখল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত বুদ্ধিজীবী থাকা সত্বেও আমরা কেন এত পিছিয়ে আছি? আমাদের এই দুরাবস্থার জন্য আমরা প্রায়ই দাবি করি, একাত্তরের ডিসেম্বরে ঘটে যাওয়া বুদ্ধিজীবিদের পৈচাশিক ভাবে হত্যা করা কে। আমরা এখনো প্রায়ই বলি আজ যদি মুনির চৌধুরী, শহীদুল্লাহরা বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়ত আমরা আরো ২০ বছর এগিয়ে থাকতাম। বাদ দিন, যারা চলে গেছেন তাদের কথা না হয় না ই বললাম। কিন্তু যারা বেঁচে আছেন তারা কেন সমাজকে বদলাতে পারছেন না? তাদের চোখের সামনেই আজ কুসংস্কার আর গোড়ামির জয়জয়কার হচ্ছে। আর মজার বিষয় হচ্ছে অনেক বুদ্ধিজীবিরাই প্রত্যক্ষ কিনবা পরোক্ষভাবে তাতে ইন্ধন যুগিয়ে আসছেন। সত্যিই সেলুকাস!!! বড় বিচিত্র এই দেশ!!! সমাজের মাথারাই যদি এইরকম ভাবে সমাজের মাথা থেকে সব মগজ বের করে তাতে শুধু গোবর ভরতে থাকেন তাহলে সমাজের ভবিষ্যত আজ সত্যিই হুমকির মুখে। এইসব বুদ্ধিজীবিরা কিন্তু অশিক্ষিত গোড়াদের থেকেও ভয়ঙ্কর। অশিক্ষিত মূর্খরা না বুঝে কাজ করে। কিন্তু যে বুঝেও না বুঝে না, তাকে কিভাবে আপনি বুঝবেন? ওরা প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানপাপী। শুধু শিক্ষা কোন জাতিকে কখনো এগিয়ে নিতে পারে না। সাথে কিছু কমন সেন্সও থাকতে হয়। বুদ্ধিজীবিরা যে শুধু সমাজের সম্পদ তা কিন্তু না, মাঝে মাঝে তারা সমাজের ক্যান্সার হয়ে দেখা দেয়। আর তখনই কিন্তু বিপ্লবের প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে উঠে। কারণ কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে ওদের কে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করার।”
উপরোক্ত লেখাতে আমি শুধু এটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, যাদের হাতে সমাজকে ছেড়ে দিয়ে আপনি, আমি, আমরা সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি, তারাই কিন্তু কোন না কোন ভাবে এই সব ধর্মান্ধ আর গোঁড়াদের ইন্ধন যুগিয়ে আসছে। তাই প্রথমে ওদেরকে শিকড় সহ উপড়ে ফেলতে হবে।
@দিগ্বিজয়ী,
মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাথে ‘তাই প্রথমে ওদেরকে শিকড় সহ উপড়ে ফেলতে হবে।’ – এই অংশে একমত।
এজন্যই বলেছিলাম-
আজ যদি আমরা এদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, তাহলে, আগামী দিনগুলোতে আমাদের হাহাকার শোনার জন্য, আমাদের বাঁচানোর জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।