রামু, উখিয়া, পটিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধপল্লীগুলোতে গত কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া জঘন্যতম নির্মমতা কিসের আলামত? এসব ঘটনা কী নির্দেশ করে? ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন কি-না? এসব প্রশ্ন অনেকের মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে তবে সমস্যার মূল কারণ সনাক্তের জায়গায় কেহই যেতে চাচ্ছে না, তবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান স্যার কিছু সত্য কথা বলেছেন। ঊগ্রতা যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে কম থাকে তাহলে আমার মনেহয় তা বৌদ্ধদের মধ্যেই রয়েছে, অন্তত বাংলাদেশের বাস্তবতায়। চর্যাপদ থেকে শুরু করে আমাদের সংস্কৃতির অনেক কিছুই বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আসা। কিন্তু আমাদেরকে কি দেখতে হচ্ছে? যাদের মূল সুরই হচ্ছে ‘জগতের সকল প্রাণী সুখি হউক’। অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট সেই সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় সব আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। রাত বারোটা থেকে সকাল পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলছিল সেই আগুন, আর আক্রমণকারীরা তা মজাকরে উপভোগ করছিল। ওদের অপরাধ? সোজা উত্তর: ওরা সংখ্যালঘু। বলা হচ্ছে, ওদের কেহ না-কি ফেসবুকে মুসলমানদের নবীকে ব্যঙ্গ করেছে। নবীকে ব্যঙ্গ করার অপরাধে বা অন্য সম্প্রদায়ের কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে তার কি আইন অনুযায়ী বিচার করা যেত না? আসলে ওসব অজুহাত। ‘মেষ তুমি পানি ঘোলা করেছ। না হুজুর, শ্রোততো আপনার দিক থেকেই আসছে। তাহলে তোমার বাবা ঘোলা করেছিল, নাহলে তোমার দাদা।’

রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। একটি বিষয় খেয়াল করলেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। অবস্থা বুঝতে পেরে রাত আটটার দিকে ওই সম্প্রদায়ের লোকেরা কিন্তু দলবদ্ধভাবে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছিল। তারপরেও প্রশাসন ছিল নিরব। তাণ্ডব শুরু হলো রাত সাড়ে এগারোটার দিক থেকে। আটটা থেকে এগারোটা, সময় কিন্তু তিনটি ঘন্টা। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যোগাযোগ হচ্ছে এক সেকেন্ড। কিন্তু বৌদ্ধদের প্রার্থনা রোদিত হল অরণ্যে। সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্নভাবে ঘটানো এসব নির্মমতার জন্য দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্র। মানে ’বাংলাদেশ’ নিজেই। সাংবিধানিকভাবেই এদেশটি এখন সাম্প্রদায়িক। ৩৩ বছর আগে আমার ষষ্ঠ শ্রেনীর ৮৩ জন সহপাঠির মধ্যে ২৭ জন হিন্দু ছিল। কিন্তু এখন আমার টু-তে পড়া মেয়ের কাছে জানলাম ওর ক্লাসের ৬৭ জন বাচ্চার মধ্যে মাত্র ৫ জন হিন্দু। চরম দুঃখ-কষ্ট আমি দেখেছি বটে কিন্তু সাত পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে চলে যাওয়ার বেদনা উপলদ্ধিতে আনার ক্ষমতা আমার অন্ততঃ নেই, যা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র? ভারতে মুলমানেরা সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ভারতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃীস্টান, নাস্তিক সবাই সমান। তাই ভারত থেকে কোনো মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে এমন কথা কোনোদিন শুনিনি। অথচ বাংলাদেশ থেকে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জন হিন্দু পালিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। অধ্যাপক আবুল বারাকাত একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫৮৩ জন হিন্দু দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে এবং ভারতে তারা রাষ্ট্রহীন নাগরিক হয়ে বাস করছে।
খালেক বেহেশ্তে অথবা দোজখে এবং সমরেশ স্বর্গে অথবা নরকে যেতে পারে, পশ্চিমা কোনো দেশে জন্ম না হয়ে এদেশে জন্ম হওয়ার কারণে এধরনের কথাই আমরা শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু বাংলাদেশ বেহেশ্তে যাবে এবং ভারত কিংবা নেপাল দোজখে যাবে, এখন আমাদের একথা মানতে হবে এবং বিশ্বাসও করতে হবে। মানতে হবে এই কারণে যে, আমাদের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ নতুন করে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ জুড়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্য রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’-কে নিদিষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ এখন থেকে পাকাপোক্ত মুসলমান। তাই রামুতে বৌদ্ধরা নির্যাতিত-নিগৃহিত হবে তা খুবই স্বাভাবিক। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে কোন্রাষ্ট্র কোন্ ধর্মাবলম্বী তার তালিকা প্রকাশের জন্য আমাদের জাতীয় সংসদকে অনুরোধ করছি। তাছাড়া বাংলাদেশ কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কিভাবে রোজা করবে, আবার হজ্জ্বই বা করবে কিভাবে এসমস্ত বিষয়গুলি পরিস্কার করে জনগণকে জানানোর জন্য মাননীয় সংসদ নেত্রীকে অনুরোধ করছি। জন্মের সময় কোনো মানবশিশু যেমন কোনো ধর্মর্ভূক্ত হয়ে জন্মায় না, ঠিক তেমনি জন্মের সময় বাংলাদেশও নিদিষ্ট কোনো ধর্মভূক্ত ছিল না, কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা নিয়েই স্বাধীন হয়েছিল। এদেশটার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। টকটকে লাল ইতিহাস। ধর্মের নামে ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। মদ্যপ এবং বিশ্বলম্পট ইয়াহিয়া খানকে ইসলামের ধারক এবং বাহক আখ্যা দিয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে আমাদের মা-বোনদের ‘গণিমতের মাল’ ঘোষণা দিয়ে পাক-আর্মির হাতে তুলে দেওয়ার কথা আমরা সবাই জানি। কাজেই রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা। কোনো বিশেষ ধর্মের লোককে রাষ্ট্র অধিক সুযোগ না দিয়ে সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিবে, এই ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির প্রধান ধর্ম। ‘গণতন্ত্র’ হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হয় না। প্রশ্নই আসে না। সংজ্ঞা অনুযায়ীই গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক সব ধরনের নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখার একটি ব্যবস্থার নাম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সাথে রাষ্ট্র সমান আচরণ করবে, এইরূপ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্খায় সাত কোটি মানুষ সেদিন সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল, যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ঠিকই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যথাযথ মর্যাদা দান করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্থান দিয়ে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আবুল ফজল স্যার (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের জন্য গর্বের, কারণ তা যে চারটি মূল স্তম্ভের উপর অবস্থিত তার অন্যতম একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা।” বলা যেতে পারে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করাটা ছিল একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা ধর্মনিরপেক্ষতাকেও খুন করার চেষ্টা করলো। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকার বেসামরিক রূপ ধারণ করে রাজাকারদের মন্ত্রী বানালো। ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেই মানুষ কেবল নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, কারণ রাষ্ট্র সেখানে কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব করে না। কিন্তু তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিকৃত অর্থ হাজির করলো এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-কে মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে যুক্ত করলো। উহা ছিল বাঙ্গালী জাতির জন্য প্রগতির পথে এক মহাবিপর্জয়। ধর্মনিরপেক্ষতা জ্ঞান হারালো। ঠিক একই কায়দায় আর একটি অবৈধ সরকার ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা দিল। ধর্মনিরপেক্ষতা এবার ইনসেনটিভ কেয়ারে ঢুকলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে যে সরকার বাংলাদেশকে মুসলমান বানিয়েছিল সেই সরকারের মন্ত্রীপরিষদও ছিল রাজাকারে ভর্তি। মজার ব্যাপার হল সে সময় কেহই সরকারের কাছে রাষ্ট্রধর্মের জন্য কোনো দাবী করেছিল না। তাছাড়া যে সংসদ রাষ্ট্রধর্মের ওই বিল পাশ করেছিল তা মোটেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার আমি সে সময় একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী ছিলাম, আমার দিব্যি মনে আছে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ তারিখে সকাল সাড়ে আটটায় ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালটবাক্স নিয়ে চলে এসেছিল। সেদিন দশ-পনেরো মিনিটেই না-কি সব ভোটার ভোট দিয়ে ফেলেছিল। তখন ভোট ডাকাতির সরকার ধর্মকে যেভাবে ব্যবহার করেছিল এখন নির্বাচিত সরকারও সেই একই কাজটিই করলো। সুতরাং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের একটি ছোট্ট অধ্যয়ই হচ্ছে আজকের রামু।

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কিন্তু নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগে সকল রাজাই নিজেকে
ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবী করতো। রেনেঁসার মাধ্যমে ইউরোপের দেশসমূহ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে ফেলেছে বটে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুন্নত বিশ্বের স্বৈরশাসকদের কেহই ধর্মকে ব্যবহার করতে কোনো দ্বিধা করছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেগুলো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তাদের কোনোটা ধর্মভিত্তিক আবার কোনোটা ধর্মাশ্রয়ী। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শাসকশ্রেণী যখন জনগণের আস্থা হারায় তখনই ধর্মের আশ্রয় নেয়। কর্ণেল গাদ্দাফি যেহেতু মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না, তাই সে বিদ্রোহীদের দমন করাকে ধর্মযুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। লিবিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে বলেই জানতাম, কিন্তু সেই লিবিয়াও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিল। কিন্তু বাংলাদেশ? ১৯৮৮ সালে সরকার যখন রাষ্ট্রধর্মের বিল পাশ করতেছিল তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত অবৈধ সংসদের সংবিধান সংশোধনের কোনো অধিকার নেই।’ রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এখন মনেহচ্ছে এসবের সবই শেখ হাসিনার অভিনয় ছিল। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে তিনি চুপে চুপে সমর্থন করেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ১৯৮৮ সালের ১২ জুন তারিখে অষ্টম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সারাদেশে শেখ হাসিনার ডাকে হরতাল পালিত হয়েছিল। তারপর গত দুই দশক ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কত জনসভায় কত নেতা যে গত ২৫/৩০ বছরে সেক্যুলার রাষ্ট্র পূনঃ প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছেন তা কেহ গুনে শেষ করতে পারবে না। এসবের সবই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর কৌশল ছিল কি না জানি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খায় জনগণ ঠিকই ম্যান্ডেট দিয়েছে। ২৬২ আসন। কিন্তু হায় ! এসবের সবই কি ভুল? বঙ্গবন্ধু ভুল? স্বাধীনতার চেতনা ভুল? আজ স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেই রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে। মজার ব্যাপার হলো সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ব্যক্তিগত ধর্ম হিন্দু। ভেবেছিলাম সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ এর পাশে ছোট করে ‘রাম রাম’ লেখার প্রস্তাব হয়তো তিনি দিবেন, কিন্তু নিজে হাতে তাঁর নিজের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানভূক্ত করে সুন্দরভাবে দ্বিধর্মের অধিকারী হলেন। বিলে স্বাক্ষর করতে দু’জন সমাজতন্ত্রী সংসদ সদস্য ইনু এবং মেনন সাহেবের অভিনয় দেখে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিয়ের সময় কনের ‘কবুল’ বলার কথা মনে হয়েছিল। অবশ্য কেহ কেহ মনে করেন ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রধর্মকে এবারের মতো রেখে দিলেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে ধর্মব্যবসায়ীরা কোনো সময়ই শেখ হাসিনাকে স্থির থাকতে দেয় নাই। দিবেও না। কোটালিপাড়া, একুশে আগষ্ট কি কেহ ভুলেছে? রাষ্ট্রধর্ম করে কি তিনি ওদের খুশি করতে পারবেন? তা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিহাস তা বলে না, কারণ ধর্মব্যবসায়ীরা আসলে কেউটে সাপ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের ধর্মাশ্রয়ী মনোভাবের কারণেই রাষ্ট্রধর্মকে যত্ন-আত্তি করে রেখে দিয়েছে। আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক একটি দেশ। আর সাম্প্রদায়িক কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে। কাজেই রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়, বরং তা সবচেয়ে স্বাভাবিক।

লেখকঃ মিলন আহমেদ, কলেজশিক্ষক এবং নারীবাদীকলামিস্ট, ঈশ্বরদী, বাংলাদেশ।
সেলফোনঃ ০১৭১২-৪৩০৬৮১
ই-মেইলঃ [email protected]