পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন এ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাস একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষের এবং বিপক্ষের সবাই তাকে নিজেদের একজন ভাবতে ভালবাসে। আইনস্টাইনের জগদ্বিখ্যাত উক্তি “ঈশ্বর পাশা খেলতে পছন্দ করে না” ধর্মীয় এপলোজেটিকদের একটি অত্যন্ত প্রিয় উক্তি। তিনি আদতেই কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন কিনা এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতির সাথে সাথে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত ধর্মীয় তত্বগুলির ক্রমশ: দূরত্ব বাড়তে থাকায় এপলোজেটিকদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এটা দেখাতে পারলে তারা পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায়, বিশেষ করে আইনস্টাইনের মত বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলে তো কথাই নেই।
এমাসের ৮ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ই-বে ডট কম নামক ওয়েব সাইটে মৃত্যুর এক বছর আগে জার্মান ভাষায় আইনস্টাইনের নিজের হাতে লেখা অপ্রকাশিত একটি চিঠি নিলাম করা হবে । এই ব্যক্তিগত চিঠিটি সর্ব মহলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে কারণ এই চিঠিতে আধুনিক বিজ্ঞানের এই মহারথী ঈশ্বর এবং ধর্ম সম্পর্কে তাঁর একান্ত নিজস্ব কিছু ধ্যান-ধারণা ব্যক্ত করেছেন। ইহুদী ধর্মাবলম্বী দার্শনিক এরিখ গুটকিন্ড তাঁকে নিজের লেখা একটি বই পাঠিয়েছিলেন পড়বার জন্য। বইটির নাম ছিল “চুজ লাইফ: দ্য বাইবেল কল টু রিভোল্ট”। এই বইটি পড়ার পর আইনস্টাইন ১৯৫৪ সালে ৩ জানুয়ারি জার্মান ভাষায় এরিখ গুটকিন্ডের কাছে লেখা এই চিঠিতে ঈশ্বর এবং ধর্ম সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেন। এ চিঠি সম্পর্কে যারা আগে থেকেই অবগত আছেন তাদের কাছে চিঠিটি ‘গড লেটার’ নামে পরিচিত। ঈশ্বর সম্পর্কে তার ধারণার পাশাপাশি এটি আরেকটি কারণে বেশ গুরুত্ব, তা হল ইহুদী জাতিগোষ্ঠীকে তিনি অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর থেকে আলাদা কিছু মনে করেন না। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তাঁর বিরুদ্ধে জায়নবাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের যে অভিযোগ আছে তা ভ্রান্ত।
ইবে তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে নিলামে চিঠিটির প্রাথমিক মূল্য ধরা হয়েছে ৩ মিলিয়ন ডলার। চিঠিটির বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইবে’তে প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য সেই উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর বঙ্গানুবাদ আমি এখানে তুলে দিলাম। মূল চিটিতে যাওয়ার আগে আরেকটি কথা বলে নেই। রিচার্ড ডকিন্স তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই নিলাম এবং চিটির সংবাদ প্রকাশ করেছেন এবং সাথে চিঠি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য ডকিন্সের সেই মতামতটিও এখানে তুলে দিলাম।
এ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে নিজেদের একজন ভাবার কারণে ধর্মীয় এপোলজিস্টদেরকে পুরোপুরি দোষ দেয়া যাবে না। উনি কিছুটা দায়িত্বহীন ভাবেই “ঈশ্বর” কে কাব্যিক রূপক হিসাবে উদ্ধৃত করতে পছন্দ করতেন। তবে আইনস্টাইনের প্রতি পক্ষপাতহীন হয়ে বলতে হয় যে আজকের দিনের এই অসৎ উদ্দেশ্যে উদ্ধৃতি-ব্যবহার করা সম্পর্কে অনুমান করা তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তাই তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে লেখা এই চিঠিটা দেখে ভাল লাগছে যা চিরদিনের জন্য আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন এই কল্পকথাকে নিস্তার দেবে। অন্যান্য আরও সূত্রের সাথে এই চিঠিও শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত করে যে, পৃথিবীর যে কোন বাস্তব বোধের প্রেক্ষিতেই, আইনস্টাইন ছিলেন একজন নাস্তিক। যখন ২০০৮ সালে লন্ডনে চিঠিটা নিলামে ওঠে, আমি রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশনকে উপহার হিসাবে দেয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিটা কেনার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলাম। যে দামে চিঠিটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল তার খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ আমি প্রস্তাব করতে সমর্থ হয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিক্রি দামটাও ছিল বর্তমানে ধার্য সর্বনিম্ন দাম ৩ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেকই কম। আমি আশা করব যে যিনিই এই নিলাম জিতুক না কেন তিনি এটি ইংরেজির সাথে সাথে অন্যান্য ভাষায় সম্পূর্ণ অনুবাদ সহকারে খুব স্পষ্টতার সাথে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন।
— রিচার্ড ডকিন্স
‘ঈশ্বর চিঠির” কিছু অনুচ্ছেদ:
… আপনার বইয়ের শেষ দিনগুলির বেশিরভাগ অংশই আমি পড়েছি এবং আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বইটি আমাকে পাঠাবার জন্য। এ ব্যাপারে আমি যে জিনিষটি বিশেষভাবে অনুধাবন করেছি সেটি হল মানব সম্প্রদায় এবং জীবনের প্রতি বাস্তবভিত্তিক মনোভাবের দিক থেকে আমাদের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে।
… “ঈশ্বর” শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই না। বাইবেল হল কিছু গৌরবান্বিত পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার যা অত্যন্ত শিশুতোষ। যে কোন নিগূঢ় অর্থই করা হোক না কেন তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। এই নিগূঢ় অর্থগুলি স্বভাব অনুযায়ীই নানা ধরণের হয়ে থাকে এবং প্রকৃত পাঠ্যাংশের সাথে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও প্রধানত: শিশুতোষ কুসংস্কারের অনুরূপ। আমি খুশি মনেই নিজেকে যাদের একজন বলে মনে করি এবং যাদের মানসের সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পৃক্ততা, সেই ইহুদী জনগোষ্ঠীরও অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা কোন বিশেষ গুণাবলী আছে বলে মনে করি না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব বেশী উন্নতও না। যদিও ক্ষমতার অভাবে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত আছে। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনা যাতে তাদের নির্বাচিত (ঈশ্বর কর্তৃক) বলে মনে হবে।
সাধারণ অর্থ আমার জন্যে এটা ভাবা কষ্টদায়ক যে আপনি নিজেকে বিশেষাধিকার প্রাপ্ত দাবী করেন এবং আত্ম-অহমিকার দুটো দেয়াল দ্বারা সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। বাইরের দেয়ালটি একজন মানুষ হিসাবে এবং ভেতরের দেয়ালটি একজন ইহুদী হিসাবে। মানুষ হিসাবে আপনি সাধারণভাবে স্বীকৃত কার্যকরণের প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দাবী করেন এবং ইহুদী হিসাবে একেশ্বরবাদের বিশেষ সুবিধা দাবী করেন। সম্ভবত: আমাদের বিস্ময়কর স্পিনোজা সর্বপ্রথম সব ধরণের ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে সীমিত কার্যকরণ আসলে কোন কার্যকরণই না। এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত ধর্মগুলির এনিমিস্টিক বিশ্লেষণ নীতিগত ভাবেই একচেটিয়া করণের কারণে বাতিল হয়ে যায় না। এই ধরণের দেয়ালের মাধ্যমে আমরা শুধু নির্দিষ্ট কিছু আত্ম প্রবঞ্চনাই লাভ করতে পারি। অন্যথায় এতে করে আমাদের নৈতিক প্রচেষ্টার আরও উন্নয়ন সাধিত হয় না।
এখন যেহেতু খোলাখুলি ভাবেই আমাদের মাঝে বিদ্যমান বুদ্ধিবৃত্তিক প্রত্যয়ের ব্যাপারে পার্থক্যগুলি বর্ণনা করেছি এতদসত্বেও আমার কাছে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে মানুষের আচরণের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয়গুলিতে আমরা যথেষ্ট কাছাকাছি। আমাদের যে জিনিষটা আলাদা করে, ফ্রয়েডের ভাষায় যাকে বলা যায় ‘বুদ্ধিবৃত্তিক অবলম্বন এবং যুক্তিসহকরণ’। সুতরাং আমি মনে করি যে আমরা পরস্পরকে খুব ভালভাবেই বুঝতে পারব যদি আমরা নিরেট (বাস্তব) জিনিষ নিয়ে আলোচনা করি।
সর্বোচ্চ শুভকামনা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ধন্যবাদ সহ
বিনীত
এ. আইনস্টাইন
সূত্র:
রিচার্ড ডকিন্স ডট নেট
ই-বে ডট কম
অসাধারণ একটি লেখা এবং চমকপ্রদ এই তথ্যটা তুলে আনায় অনেক ধন্যবাদ।
আইনস্টাইন জন্মগত এবং আদর্শিক ভাবেই উনবিংশ শতাব্দীর জার্মানভাষী সেকুলার ইহুদী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ছিলেন। আমি আগে একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে উনবিংশ শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের শিক্ষিত ইহুদীরা কেবল জ্ঞান-বিজ্ঞান আর ব্যবসা বানিজ্যেই বিশ্বে অনন্য ছিলো নয়, আন্তজাতিকতাবাদ আর বিশ্ব মানবতাবাদ এর জন্যেও তাদের অবদান ছিলো একক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্যতম বড়ো ট্র্যাজেডী হলো নাৎসীরা আইনস্টাইন-ফ্রয়েড-কাফকা ‘র মধ্যইউরোপকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হলোকস্ট এর কারনে আইনস্টাইন ইহুদীদের জন্যে আলাদা বাসস্থান এর প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে ওঠেন এবং নতুন রাষ্ট্র ইজরাইলের প্রতি সমর্থন দেন। কিন্তু তিনি কখনোই ইহুদীরা বিশেষ ট্রিটমেন্ট পাবে এই ধারনার প্রতি সহানুভুতিশীল ছিলেন না। ১৯৫২ সালে ইজরাইলের প্রথম রাস্ট্রপতি ভাইজম্যান মৃত্যুবরন করলে ইজরাইলে প্রস্তাব ওঠে আইনস্টাইনকে ইজরাইলের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন করার জন্যে। কারন ইজরাইলীরা জানত যে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত আর জনপ্রিয় ইহুদী (জাতিগত ভাবে বিশ্বাসগতভাবে নয়) আইনস্টাইন ইজরাইলের প্রেসিডেন্ট হলে পুরো বিশ্বেই ইজরাইলের পক্ষে বিপুল সহানুভুতি গড়ে উঠবে। আইনস্টাইন সেই প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেন। সেই সময়ে টাইমের সংবাদ ছিলো ,
ISRAEL: Einstein Declines
Monday, Dec. 01, 1952
Twenty-four hours after Chaim Weizman, Israel’s first President, was laid to rest, the enterprising editor of Israel’s evening Maariv, in a signed editorial, proposed as his successor “the greatest Jew alive: Einstein.”
The idea caught on: perhaps Israel might get a second president as big as the first. Quipped a government statistician: “He might even be able to work out the mathematics of our economy and make sense out of it.” To peppery Premier David Ben-Gurion, who loves learning and knows, moreover, the value of an imposing name, the idea sounded fine. While Israel’s President has only small powers at home, abroad he could be an important symbol of a struggling new state which needs both aid and sympathy. Characteristically, without bothering to consult either his cabinet or party, B-G cabled Israel’s ambassador to the U.S. to sound Einstein out.
Forgotten in the enthusiasm was the fact that Einstein, though sympathetic to Israel, had never been an ardent Zionist; he believed in a bi-nationalism that meant “friendly and fruitful coexistence with the Arabs.” He does not even know Hebrew, official language of the new state.
Able, chubby Envoy Abba Eban got on the phone to Albert Einstein in Princeton, N.J. Einstein, 73 years old, a naturalized U.S. citizen, listened, paused, and then gave his regretful no. The next day he wrote to Eban that he was deeply touched by the Israeli offer, but never undertook functions he could not fill to his satisfaction. He liked studying the physical world, he added, but, “I have neither the natural ability nor the experience to deal with human beings.”
Read more: http://www.time.com/time/magazine/article/0,9171,817454,00.html#ixzz28pZSAuxz
আইনস্টাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি,
Equations are more important to me, because politics is for the present, but an equation is something for eternity.
— Albert Einstein
Quoted in Carl Seelig (ed.), Helle Zeit, Dunkle Zeit: In Memoriam Albert Einstein (1956), 71.
@সফিক, আইনস্টাইনের এই চিঠিতেও সে বিষয়টির উল্লেখ আছে। তিনি আত্মিক এবং মানসিক দিক থেকে ইহুদীদের সাথে নৈকট্য অনুভব করলেও তারা যে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে এটা তিনি মনে করতেন না।
সমস্যাটা ওখানেই। ধর্ম বলতেই আমরা ইসলাম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু কে বুঝি। ধর্ম হচ্ছে একটি জীবন ব্যবস্থা। একটা নিয়ম। নাস্তিকেরা যে কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেনা, সেটাও তাদের ধর্ম। আসলে নিজের মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্ত ভিত্তিতে দাড় করানোর জন্য নিজের মতো করে একটা যুক্তি দাড় করিয়ে নেয়া হয়। খুন করলে শিরচ্ছেদ করা হয়। সেটা চোখে পড়ে। অথচ এই শাস্তির ভয়ে কতজন লোক খুন করা থেকে বিরত থাকবে সেটা কোরো বিবেচ্য বিষয় নয়।
এমন অনেক কথাই রয়েছে যেগুলো শুধু মাত্র সেই সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। যা পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োগ করতে হয়। যেমন এই আয়াত টির কথাই কথাই ধরা যাক, “যেখানেই অবিশ্বাসীদের পাওয়া যাক তাদের হত্যা করবে’
এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে, যখন কেউ আপনাকে খুন করার জন্য হন্য হয়ে খুজে বেড়াবে, তখন নিশ্চই আত্মরক্ষার বদলে মুখ দিয়ে সাম্যের কথা বের হবেনা। একই কথা বর্তমান আমেরিকার জন্যও প্রযোজ্য। কারন তারা আফগানিস্তান, তালেবান, কিংবা ইরাকে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। এখন, জিহাদ মানে সঙ্কল্প। নিজেদের রক্ষা করার জন্য সঙ্কল্প করলে যদি সন্ত্রিাসী হতে হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই। তবে ধর্মে বলা হয়েছে নিজের নফস্ এর সাথে জিহাদ হলো সবচেয়ে বড়।
দাস প্রথা চালু ছিলো বলেই, ইসলামে তাদের মুক্ত করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এমন অনেক নজির মহাপুরুষেরা রেখে গেছেন। এখন কথা হচ্ছে ধর্মের বাইরে থেকে কতজন মানুষ নিজের বাসার জন্য কাজের লোক রাখা বন্ধ করেছে? কিংবা তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করেছে? অথচ ধর্মে
বলা হয়েছে নিজে যা খাও তোমার দাস কেও তা খেতে দাও। নিজে যা পরিধান কর তোমার দাসকেও সেটা পড়তে দাও। তাহলে সাধারণ আর দাসের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়?
মানব সভ্যতার কথা বললেও একই কথা বলতে হয়। কারন, এ সম্পর্কে ধর্মের পক্ষেও হাজারো যুক্তি রয়েছে। প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো আর নাই বললাম। কারণ মানুষ ততটুকুই গ্রহন করে যতটুকু তার ইচ্ছা কিংবা তার চিন্তার চাহিদা পূরণ করে। এর বাইরে চিরন্তন কোনো সত্য থাকলেও সেটাকে পাশ কাটানোর জন্য হাজারো যুক্তি দাড় করানো হয়।
আসলে যখনই নিজেদের ইচ্ছা পূরণে বাধা আসে তখনই ধর্মের দোষ হয়। ধর্ম আর ধর্মের ব্যবহারকারীর পার্থক্য হয়তো আপনার কাছে এখনো পরিষ্কার না। তাই কিছু দুষ্টু ব্যবহারকারীর জন্য বারবার ধর্মকে গালি খেতে হচ্ছে।
@মুরসালীন, শেষলাইনে থেকে শুরু করি…//তাই কিছু দুষ্টু ব্যবহারকারীর জন্য বারবার ধর্মকে গালি খেতে হচ্ছে।//————–অতি ব্যবহ্রত কুযুক্তি। উত্তর, আপনার লেখা থেকেই দেয়া যায়…//কারণ মানুষ ততটুকুই গ্রহন করে যতটুকু তার ইচ্ছা কিংবা তার চিন্তার চাহিদা পূরণ করে। এর বাইরে চিরন্তন কোনো সত্য থাকলেও সেটাকে পাশ কাটানোর জন্য হাজারো যুক্তি দাড় করানো হয়। //
//তাহলে সাধারণ আর দাসের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়?//
পার্থক্য আপনি কিভাবে দেখবেন, কারণ মানুষ ততটুকুই গ্রহন করে যতটুকু তার ইচ্ছা কিংবা তার চিন্তার চাহিদা পূরণ করে। এর বাইরে চিরন্তন কোনো সত্য থাকলেও সেটাকে পাশ কাটানোর জন্য হাজারো যুক্তি দাড় করানো হয়।
আপনি পার্থক্য দেখতেন যদি দাসবৃত্তি নিজে গ্রহন করতেন। [এক্ষেত্রে আমি ৭ম খ্রিস্টাব্দের দাসের কথাই বলছি] মানুষ হিসাবে শুধু খাওয়া পরার সাম্যই যে সাম্য নয়, সেটা বোধহয় বুঝতে পারতেন।
এখন আসা যাক আপনার পুর্ববর্তি কথায়…//দাস প্রথা চালু ছিলো বলেই, ইসলামে তাদের মুক্ত করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।//
একজন র্ধম প্রচারক পুরো সমাজ পালটে ফেললেন, কিন্তু দাসপ্রথাকে শুধু নিরুৎসাহিত করলেন।
সত্য হলো, “নিরুৎসাহিত” কথাটি সেই র্ধম প্রচারকের ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে আপেক্ষিক। কারণ প্রভুত যুদ্ধে [লুটে] প্রাপ্ত বন্দীদের তিনি দাস হিসাবেই বিক্রি করতেন। ভাল দাম পাওয়ার জন্য আজ’ল পদ্ধতির প্রয়োগও, বোধহয় আপনার অজানা নয়?
//তবে ধর্মে বলা হয়েছে নিজের নফস্ এর সাথে জিহাদ হলো সবচেয়ে বড়।//—-সুত্র উল্লেখ করবেন কি? তাহলে আমিও আপনার মত বলতে পারতাম………//শুধু মাত্র সেই সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। যা পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োগ করতে হয়।//
প্রশ্ন, আপনার উল্লেখিত আয়াতটি কেন বিশেষ সময়ের জন্য প্রযোজ্য? বা কেনই তা শুধু আত্নরক্ষার্থে ব্যবহ্রত হবে? উক্ত গ্রন্থে কি কি ইঙ্গিত দেয়া আছে যা থেকে আপনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন? নাকি ….// নিজের মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্ত ভিত্তিতে দাড় করানোর জন্য নিজের মতো করে একটা যুক্তি দাড় করিয়ে নেয়া হয়।//
সবশেষে, ধর্মের ব্যখ্যা। এখানে আমরা প্রচলিত অর্থ মেনে তর্ক করলেই ভালো। ভাষাগত তর্কের জায়গা বোধহয় এটা নয়। সেই হিসাবে নাস্তিকতা কোনভাবেই ধর্ম নয়।
@মুরসালীন,
ধর্ম বলতে যা, তাই তো বুঝতে হবে। নতুন নতুন সংজ্ঞা হাজির করতে তো হবে না ভাই। ধর্ম যদি কেবল একটি এবস্ট্র্যাক্ট জীবন ব্যবস্থাই হত, স্পেসিফিক নিয়ম কানুন না থাকত, তাহলে আজ হিন্দুরা দলবেঁধে নামজ পড়ত, আর আপনি কালিবাড়ি গিয়ে মূর্তিপূজা শুরু করতেন; তাই করেন নাকি?
আর নাস্তিকতাকে আপনার কথামত ধর্ম হিসেবে অভিহিত করলে তো আরো বড় বিপদ। তাহলে সিগারেট গাঞ্জা না খাওয়াকেও ‘নেশা করা’ বলতে হয়, কিংবা টিভির অফ বাটনকেও ‘চ্যানেল চেঞ্জ’ করা বলন লাগে বলা কিংবা টাককেও বলতে হয় চুলের রঙ। কি বলেন? এইখানে দেখন।
ভাল করে একটু ধর্মগ্রন্থগুলা পড়েন। বেদ, বাইবেল, কোরান হাদিসের কোথাও দাসপ্রথা উচ্ছেদের কথা লেখা নাই, বরং অধিকারভুক্ত দাসীদের সাথে যৌনসঙ্গমের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মহানবী নিজেও দাস দাসী পরিবেষ্টিত ছিলেন, হ্যা এর মধ্যে কাউকে কাউকে মুক্ত করেছেন কখনো সখনো, কিন্তু বিভিন্ন যুদ্ধজয়ের পর নিজেও যৌনদাসীও উপভোগ করেছেন, তাদের নিয়ে ভাগ বাটোয়ারায় অংশ নিয়েছেন। এ ধরণের নজিরও আছে কিন্তু। আর হিন্দু ধর্মে তো এই ধরণের বেহায়াপনার দৃষ্টান্ত অজস্র। মহাভারতে বহু দাসী চরিত্রই মুনি ঋষিদের লালসার শিকার। কিছু উদাহরণ দেই। মৎসপুরানে লেখা আছে ব্রক্ষ্মা নাকি একদিন তার নিজের মেয়ে শতরূপাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেন নি। হিন্দুদের আদি মানব মনুর জন্ম হয় ব্রহ্মা আর শতরূপার মিলন থেকেই। শুধু ব্রক্ষ্মা ই নয়, নিজ মেয়ের সাথে মিলনের কান্ড ঘটিয়েছে দেবতা প্রজাপতিও। উষা ছিলেন প্রজাপতি কন্যা। প্রজাপতি উষার রূপে কামাসক্ত হন, এবং মিলিত হতে চান। তখন উষা মৃগীরূপ ধারণ করেন। প্রজাপতি মৃগরূপ ধারণ করে তার সাথে মিলিত হন (মৈত্রায়ন সংহিতা ৪/২/২২)।
হিন্দুরা ভগবান ডেকে যাকে পুজো করেন – সেই ভগবান ব্যাপারটাই অশ্লীল। ‘ভগবান’ বলতে ঈশ্বরকে বোঝানো হলেও এটি আসলে হচ্ছে দেবরাজ ইন্দ্রের একটি কুখ্যাত উপাধি। তিনি তার গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করায় গুরুর অভিশাপে তার সর্বাঙ্গে একহাজার ‘ভগ’ (স্ত্রী যোনি) উৎপন্ন হয় এবং তাতে ইন্দ্রের নাম ‘ভগবান’ (ভগযুক্ত) হয়। ‘ভগবান শব্দটি তাই ইন্দ্রের ব্যভিচারের একটি স্মারকলিপি, নিন্দনীয় বিশেষণ।
হিন্দু ধর্মের শ্রদ্ধেয় চরিত্রগুলো – ইন্দ্র থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন ব্যভিচারী। জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দা ও শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসীকে প্রতারিত করে বিষ্ণু তাদের সাথে মিলিত হয়ছেন। সপ্তর্ষির সাত স্ত্রীকে দেখে অগ্নি একসময় কামার্ত হয়ে পড়েন। আসলে ওই বিকৃত কল্পনাগুলো করেছিল বৈদিক যুগের পুরুষেরা। তারা নিজেরা ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নিক এবং অজাচারী; তাই তাদের কল্পনায় তৈরী দেব-দেবীগুলোও ছিল তাদের মতই চরিত্রের। এজন্যই সমস্ত হিন্দু ধর্মের বই পুস্তক গুলোতে শুধু অযাচিত কাম আর মৈথুনের ছড়াছড়ি। পান থেকে চুন খসলে সে সময়কার মুনি ঋষিরা রাগে কাঁপতে কাঁপতে শাপ দিতেন। বিয়ে করতেন। তারপরও রাজাদের আমন্ত্রণে হাজির হতেন রানিদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করতে। সুন্দরী অপ্সরা আর বারবনিতা দেখলে এতই উত্তেজিত হয়ে যেতেন যে রেতঃপাত হয়ে যেতো। আর সেখান থেকেই নাকি সন্তান জন্মাতো (উদাহরণ – অগস্ত, বশিষ্ট, দ্রোন… ) । এ নিয়ে আমি লিখেছিলাম এখানে। বাইবেলেও অযাচার এবং দাসদাসী উপভোগের অনেক দৃষ্টান্ত আছে (দেখুন এখানে)। এখন কি ধর্মগুলোকে নীতি-নৈতিকতার জলজ্যান্ত উৎস মন হচ্ছে আপনার?
ঠিক। কে যেন পালকপুত্রের স্ত্রীকে পাওয়ার ইচ্ছাপূরনের জন্য আল্লাহকে দিয়ে আয়াত নাজিল করাইছিল? কে যেন হাফসার দাসী মারিয়ার সাথে যৌনসম্পর্ক করার তালে মিথ্যা কথা বলে হাফসাকে ওমরের বাড়ি পাঠাইছিল (এখানে রেফারেন্স)? এক নাস্তিক ব্যাটা না?
ঠিক। এই যে এখানে, এখানে, এখানে, আর এখানে একজন দুষ্ট ব্যবহারকারী পাবেন, যিনি কোরান মানেন নাই।
আমার কাছে একটা ব্যাপারই অবাক লাগে। সেটা হলো নাস্তিকেরা অনেক কথাই বলেন। কিন্তু এমন একটা ভালো কথা বলতে পারেন না, যেটা কোনো ধর্ম গ্রন্থে উল্লেখ করা নেই। এমন একটা নৈতিকতার বুলি ছাড়তে পারেন না, যেটা একেবারেই নতুন। মুখে যদি বলা হয় আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা, আমি ইশ্বরের আওতার বাইরে, তাহলে সেটা ভুল বলা হবে। কারন মানুষ এখনো ধর্মগ্রন্থের ওই লেখা গুলোর গন্ডি পার হতে পারেনি…
@মুরসালীন,
বোঝা যাচ্ছে, আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে কোন ভাল ধারনা নেই। আজকে যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো রাজত্ব করছে তা মাত্র কয়েক হাজার বছরের পুরোন। আর মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস লক্ষ বছরের। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো আসার আগে মানুষ নীতি নৈতিকতার চর্চা করেনি তা তো নয়। ভালবাসা প্রেম এবং সহিষ্ণুতার বিভিন্ন উদাহরণ যে ধর্মগ্রন্থ এবং তার প্রচারকদের সাথে লেবেল হিসেবে লাগিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো কোনটাই ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের জন্য মৌলিক নয়। যেমন, যীশুখ্রীষ্টের অনেক আগেই লেভিটিকাস (১৯:১৮) বলে গেছেন, ‘নিজেকে যেমন ভালবাস, তেমনি ভালবাসবে তোমার প্রতিবেশীদের।’ বাইবেল এবং কোরানে যে সহনশীলতার কথা বলা আছে, সেগুলোর অনেক আগেই (খ্রীষ্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে) কনফুসিয়াস একইরকমভাবে বলেছিলেন – ‘অন্যের প্রতি সেরকম ব্যবহার কোর না, যা তুমি নিজে পেতে চাও না’। আইসোক্রেটস খ্রীষ্টের জন্মের ৩৭৫ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘অন্যের যে কাজে তুমি রাগান্নিত বোধ কর, তেমন কিছু তুমি অন্যদের প্রতি কোর না’। এমনকি শত্রুদের ভালবাসতে বলার কথা বহু সভ্যতার মহাপুরুষই বলে গেছেন কিন্তু যীশু বা মুহম্মদ প্রমুখ ধর্ম্প্রচারকেরা ইহজগতে অনেক আগেই। কাজেই নৈতিকতার যে উপকরণগুলোকে ধর্মানুসারীরা তাদের স্ব স্ব ধর্মের ‘পৈত্রিক সম্পত্তি’ বলে ভাবছেন, সেগুলো কোনটাই কিন্তু আসলে ধর্ম থেকে উদ্ভুত হয়নি, বরং বিকশিত হয়েছে সমাজবিবর্তনের অবশ্যাম্ভাবী ফল হিসেবে। সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে মানুষ কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে ‘নৈতিক গুনাবলী’ হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে; কারণ ও ভাবে গ্রহণ না করলে সমাজব্যবস্থা অচীরেই ধ্বসে পড়ত।
খুব সাদা চোখে দেখলেও, একটি সমাজে চুরি করা যে অন্যায়, এটি বুঝবার জন্য করার জন্য কোন স্বর্গীয় ওহি নাজিল হওয়ার দরকার পরে না। কারণ যে সমাজে চুরি করাকে না ঠেকিয়ে মহিমান্নিত করা হবে, সে সমাজের অস্তিত্ব লোপ পাবে অচীরেই। ঠিক একই ভাবে আমরা বুঝি, সত্যি কথা বলার বদলে যদি মিথ্যা বলাকে উৎসাহিত করা হয়, তবে মানুষে মানুষে যোগাযোগ রক্ষা করাই দূরূহ হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারগুলো উপলব্ধির জন্য কোন ধর্মশিক্ষা লাগে না। আবার এমনও দেখা গেছে যে, শতাব্দীপ্রাচীন কোন চলমান ব্যবস্থার পরিবর্তন মানুষ নিজে থেকেই করেছে পরিবর্তিত মূল্যবধের কষ্ঠিপাথরে মানবতাকে যাচাই করে, এবং অনেকক্ষেত্রেই ধর্ম কি বলছে না বলছে তার তোয়াক্কা না করেই। দাসত্বপ্রথার উচ্ছেদ এমনি একটি ঘটনা। বলা বাহুল্য, কোন ধর্মগ্রন্থেই দাসত্ব উচ্ছেদের আহবান জানানো হয় নি। বাইবেলের নতুন কিংবা পুরাতন নিয়ম, কিংবা কোরান, অথবা বেদ, উপনিষদ, মনুসংহিতা- কোথাওই দাসত্ব প্রথাকে নির্মুল করার কথা বলা হয়নি, বরং সংরক্ষিত করার কথাই বলা হয়েছে প্রকারন্তরে। কিন্তু মানুষ সমাজিক প্রয়োজনেই একটা সময় দাসত্ব উচ্ছেদ করেছে, যেমনিভাবে হিন্দু সমাজ করেছে সতীদাহ নির্মুল বা খ্রীষ্ট সমাজ করেছে ডাইনী পোড়ানো বন্ধ। সতীত্ব সম্পর্কে প্রাচীন ধারণা, কিংবা সমকামিতা বা গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে সারা পৃথিবী জুড়ে এ কয় দশকে। এ পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গীর অনেকগুলোই ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
হ্যা নাস্তিকেরা ‘যেখানেই অবিশ্বাসীদের পাওয়া যাক তাদের হত্যা করতে’ , গর্দানে আঘাত করতে, তাদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করতে, জিহাদ করতে, সতীদাহ করে বিধবাদের পুড়িয়ে মারতে, নীচু জাতিদের ছোঁয়া লাগলেই গঙ্গাস্নান করতে, বেগানা নারীদের পাথর ছুঁরে হত্যা করতে আপনি বলতে দেখবেন না। কিন্তু এগুলোর সমর্থনে অনেক আয়াত শ্লোক ধর্মগ্রন্থে পাবেন।
যদিও আইন্সটাইনের নাস্তিকতায় আস্তিকতায় কিছুই আসে যায় না, তারপরেও এই জনপ্রিয় কিংবদন্তীর অবসান হওয়া ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতার জন্যই দরকার। হোরাসকে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
হোরাসকে ধন্যবাদ এই মহামূল্যবান পোস্টের জন্য। অভিজিৎদাকেও ধন্যবাদ মূল্যবান এবং তথ্যবহুল মন্তব্যের জন্য। আশা করছি, এই চিঠি আইনস্টাইনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সকল বিতর্কের অবসান ঘটবে এবং ধর্মান্ধদের উপর একটা বড় আঘাত আনবে।
হোরাস, এ বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে, একটি ব্যাপার একটু পরিস্কার করি। ই-বেতে চিঠিটির অকশনের ব্যাপারটি নতুন খবর হলেও চিঠির ব্যাপারটি কিন্তু পুরাতন। এরিখ গুটকিন্ড কে লেখা অপ্রকাশিত এ চিঠিটির খবর সকল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালেই। দেখুন গার্ডিয়ানের ২০০৮ সালের নিউজ –
Childish superstition: Einstein’s letter makes view of religion relatively clear
মুক্তমনা সদস্য দিগন্ত সরকার তখনই এ নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন, যেটি আমাদের ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’ ই-বুকে অন্তর্ভুক্ত হয়, যেটি ২০১২ সালে ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান‘ নামে চারদিক প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
[img]http://d1cdd9ctvqfjk5.cloudfront.net/av/img_19971.gif[/img]
দিগন্তের লেখাটি আছে এখানে। তিনি আইনস্টাইনের একটি লেখা অনুবাদ করলেও নীচে অনুবাদকের নোট হিসেবে চিঠিটির উল্লেখ করেন, পাশাপাশি অন্তর্ভুক্ত করেন আইনস্টাইনের বিবিধ রচনা থেকে আইনস্টাইনের বিখ্যাত কিছু উক্তিও, যেগুলো আপনার আজকের এ লেখাটার সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক এবং চিন্তার খোড়াক যোগানোর মত। দিগন্তের লেখাটা থেকে প্রয়োজনীয় অংশ উদ্ধৃত হল –
লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কমেন্টের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন জন্য। চিঠিটি সম্পর্কে আমি আগে কখনো শুনিনি। আমার ধারণা বেশির ভাগ পাঠকই এটা জানতেন না। এর কারণ বোধহয় ২০০৮ সালে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারির সংখ্যা স্বল্পতা।
ধন্যবাদ হোরাস। এর পরেও যদি ধর্মান্ধদের আইনস্টাইন নিয়ে টানাটানি কমে…
@সৈকত চৌধুরী, এরপরও যদি না কমে তাহলে … 🙂
আইনষ্টাইন ঈশ্বর সম্পর্কে কি সার্টিফিকেট দেন এটা আসলে আস্তিক নাস্তিক কারো জন্যই গুরুত্বপূর্ন হবার কথা না। আরেক বাঘা কোন বিজ্ঞানী অন্যরকম সার্টিফিকেট দিলেই কি ঈশ্বর নেই বা আছে প্রমান হয়ে যাবে?
তবে এর গুরুত্ব এ কারনে যে আইনষ্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে দুই পক্ষেরই টানা হ্যাঁচড়া দেখেছি। দুই পক্ষেরই দলিল পত্রও দেখা যায়। এটার সুরাহা হওয়াটা তাই জরুরী।
আইনষ্টাইনের নাকি একটি উক্তি আছে এমন যে ঈশ্বরকে না বিশ্বাস করলে বিজ্ঞান জানা যায় না বা তেমন কিছু… এ সম্পর্কে কিছু জানেন নাকি?
এমনও হতে পারে যে (অনেকেরই যেমন হয়) ভদ্রলোকের ঈশ্বরবিশ্বাসও হয়ত সময়ের সাথে ফ্লাকচুয়েট করেছিল, কে জানে। ধর্মবিশ্বাসীদের দাবীর সূত্রগুলি দেখেও আমার মনে হয়নি যে উনি প্রথাগত কোন ধর্মে বিশ্বাস করতেন বলে, ঈশ্বর বিশ্বাসের কথা বাদ দিলেও।
@আদিল মাহমুদ, আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাসে কারো কিছুই আসা যাওয়ার কথা ছিল না এই কথাটা পোস্টে আমিও বলেছি।
“Science without religion is lame, religion without science is blind. এটার কথা বলছেন? রিচার্ড ডকিন্সের কথা পুনরাবৃত্তি করতে হয় … ঊনি “ঈশ্বর” কে কাব্যিক রূপক হিসাবে উদ্ধৃত করতে পছন্দ করতেন। আমি যতদূর জানি ওনার জীবনিতে লিখেছিলেন ১২ বছর বয়সেই উনি ধর্ম সম্পর্কে অবিশ্বাসী হয়ে উঠতে শুরু করেন।
@হোরাস,
হ্যা, এইটাই দেখছিলাম কয়েক যায়গায়।
মারা গেলেও রেহাই নাই…
বেশ অবাক করা ব্যাপার যে, একটা চিঠির দাম ৩ মিলিয়ন ডলার! তবে এর অবস্তুগত মূল্য তার চেয়ে ঢের বেশি, চিঠিটার চুম্বক অংশ পড়ে তাইতো মনে হল।
কি অসম্ভব সুন্দর পর্যবেক্ষন! আইনস্টাইন ছোট থেকেই আমার প্রিয় মানুষ, এই চিঠি সেই শ্রদ্ধার পারদ আরো উচুতে তুলে দিল।
এ জায়গাগুলোতে এসে ঠেকলাম। সীমিত কার্যকরণ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? আর কোন একচেটিয়াকরণের কথা বলা হচ্ছে এখানে? একটু পরিষ্কার করবেন?
অসম্ভব কাজের একটা অনুবাদ, হোরাস ভাই! আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল!
@কাজি মামুন, এটা যেহেতু এরিখ গুটকিন্ডকে (তার লেখা বইয়ের সমালোচনায়) লেখা ব্যক্তিগত একটা চিঠি তাই চিঠিটার অনেক কিছুই বইটা সম্পর্কে জানা না থাকলে হয়ত বোঝা কঠিন হবে। আর পুরো চিঠিটাও প্রকাশ করা হয়নি। এটা স্বীকার করে নিয়েই আমি আপনার সীমিত কার্যকরনের উত্তরটা দেয়ার চেষ্টা করতে পারি। ধর্মগুলো দাবী করে এ বিশ্বের সব কিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের জন্য। যাকে ‘ফাইনাল কজ’ বলা হয়। স্পিনোজা এই ‘ফাইনাল কজ’ কে ভুল প্রমান করেছিলেন।
আর একচেটিয়া করণ বলতে বোঝাতে চেয়েছেন (সম্ভবতঃ) যে ঈশ্বর অবশ্যই একজন এবং তাকে হতে হবে আব্রাহামিক ঈশ্বর।
বেশ অবাক করা ব্যাপার যে, একটা চিঠির দাম ৩ মিলিয়ন ডলার! তবে এর অবস্তুগত মূল্য তার চেয়ে ঢের বেশি, চিঠিটার চুম্বক অংশ পড়ে তাইতো মনে হল।
অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও প্রধানত: শিশুতোষ কুসংস্কারের অনুরূপ। আমি খুশি মনেই নিজেকে যাদের একজন বলে মনে করি এবং যাদের মানসের সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পৃক্ততা, সেই ইহুদী জনগোষ্ঠীরও অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা কোন বিশেষ গুণাবলী আছে বলে মনে করি না। /যদিও ক্ষমতার অভাবে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত আছে। /এছাড়া আমি তাদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনা যাতে তাদের নির্বাচিত (ঈশ্বর কর্তৃক) বলে মনে হবে।/সাধারণ অর্থ আমার জন্যে এটা ভাবা কষ্টদায়ক যে আপনি নিজেকে বিশেষাধিকার প্রাপ্ত দাবী করেন এবং আত্ম-অহমিকার দুটো দেয়াল দ্বারা সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। বাইরের দেয়ালটি একজন মানুষ হিসাবে এবং ভেতরের দেয়ালটি একজন ইহুদী হিসাবে।
কি অসম্ভব সুন্দর পর্যবেক্ষন! আইনস্টাইন ছোট থেকেই আমার প্রিয় মানুষ, এই চিঠি সেই শ্রদ্ধার পারদ আরো উচুতে তুলে দিল।
সম্ভবত: আমাদের বিস্ময়কর স্পিনোজা সর্বপ্রথম সব ধরণের ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে সীমিত কার্যকরণ আসলে কোন কার্যকরণই না। এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত ধর্মগুলির এনিমিস্টিক বিশ্লেষণ নীতিগত ভাবেই একচেটিয়া করণের কারণে বাতিল হয়ে যায় না।
এ জায়গাগুলোতে এসে ঠেকলাম। সীমিত কার্যকরণ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? আর কোন একচেটিয়াকরণের কথা বলা হচ্ছে এখানে? একটু পরিষ্কার করবেন?
অসম্ভব কাজের একটা অনুবাদ, হোরাস ভাই! আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল!
লেখাটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা, আপ্নাকেও ধন্যবাদ।
ধর্মান্ধদের উঁচু নাক ভোঁতা হওয়ার তথ্য। লেখক কে ধন্যবাদ।
@রাজেশ তালুকদার, হা হা … 🙂
@রাজেশ তালুকদার,
নাক উঁচা জোকার লায়কদের মন্তব্যের ভবিষ্যৎবানী- ”আইনস্টাইনের ঈশ্বর অবিশ্বাসে ইসলাম মিথ্যা হয়ে যায় নি।”
এখন তারা পায়ের নিচে মাটি পাবার জন্য অন্য কোন বিজ্ঞানী খুজা শুরু করবে । আর কত দিন চলবে এইসব ভন্ডামি!!
অত্যন্ত চমত্কার আপনার উদ্যোগ।এর জন্য আপনার সাধুবাদ প্রাপ্য।তবে ,চিঠির অংশবিশেষ পড়ে কেমন জানি অতৃপ্তি লাগছে।ইস! পুরোটা যদি পড়তে পারতাম!
@অনিরুদ্ধ, আমিও আপনার মত অপেক্ষায় আছি।
আইনস্টাইনের ঈশ্বর সংক্রান্ত বিভ্রান্তি কাটাতে খুব ই কাজে দিবে।পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
এখানে ক্যান্সার ব্যাপারটা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আশা করছি।
@নিয়নের আলো, আমার মনে হয় উনি বলতে চেয়েছেন জোর করে অন্যদের উপর নিজেদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতার কথা।
অত্যন্ত সময়োপযোগীএ লেখাটি উপস্থাপনের জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি অনেকের বিভ্রান্তি ঘুচবে ও উপকৃত হবেন।
@আব্দুল হক, আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার এবং মন্তব্য রেখে যাবার জন্য।
@আব্দুল হক,
ভাইজান আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলামনা। নিঃসন্দেহে এটি একটি সময়োপযোগী লেখা কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসের ভাইরাস একবার যার ভিতর ঢুকে যায় তাকে তাকে ভাইরাস্মুক্ত করে কার সাধ্য??? :-Y । যদি দেখা যেত এই চিঠিতে আইনস্টাইন সাহেব গুড় এক স্রষ্টাকে বিশ্বাস করছেন তাহলে কাল্কেই আমরা পিস টিভিতে জাকির নায়েক সাহেবকে এটা নিয়ে একচেটিয়া বক্তব্য দিতে দেখতাম আর তা দেখে ওনার ভক্তবৃন্দ খুশিতে গদ গদ হয়ে ফেসবুক টুইটরে শেয়ার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। আফসোস তাদের সে ইচ্ছা জলে গেল।তবে যারা মুক্ত আলোর সন্ধান করে তারা উপকৃত হবে সন্দেহ নেই।ভালো থাকবেন। (F)