রামু, উখিয়া, পটিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধপল্লীগুলোতে গত কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া জঘন্যতম নির্মমতা কিসের আলামত? এসব ঘটনা কী নির্দেশ করে? ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন কি-না? এসব প্রশ্ন অনেকের মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে তবে সমস্যার মূল কারণ সনাক্তের জায়গায় কেহই যেতে চাচ্ছে না, তবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান স্যার কিছু সত্য কথা বলেছেন। ঊগ্রতা যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে কম থাকে তাহলে আমার মনেহয় তা বৌদ্ধদের মধ্যেই রয়েছে, অন্তত বাংলাদেশের বাস্তবতায়। চর্যাপদ থেকে শুরু করে আমাদের সংস্কৃতির অনেক কিছুই বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আসা। কিন্তু আমাদেরকে কি দেখতে হচ্ছে? যাদের মূল সুরই হচ্ছে ‘জগতের সকল প্রাণী সুখি হউক’। অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট সেই সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় সব আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। রাত বারোটা থেকে সকাল পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলছিল সেই আগুন, আর আক্রমণকারীরা তা মজাকরে উপভোগ করছিল। ওদের অপরাধ? সোজা উত্তর: ওরা সংখ্যালঘু। বলা হচ্ছে, ওদের কেহ না-কি ফেসবুকে মুসলমানদের নবীকে ব্যঙ্গ করেছে। নবীকে ব্যঙ্গ করার অপরাধে বা অন্য সম্প্রদায়ের কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে তার কি আইন অনুযায়ী বিচার করা যেত না? আসলে ওসব অজুহাত। ‘মেষ তুমি পানি ঘোলা করেছ। না হুজুর, শ্রোততো আপনার দিক থেকেই আসছে। তাহলে তোমার বাবা ঘোলা করেছিল, নাহলে তোমার দাদা।’
রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। একটি বিষয় খেয়াল করলেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। অবস্থা বুঝতে পেরে রাত আটটার দিকে ওই সম্প্রদায়ের লোকেরা কিন্তু দলবদ্ধভাবে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছিল। তারপরেও প্রশাসন ছিল নিরব। তাণ্ডব শুরু হলো রাত সাড়ে এগারোটার দিক থেকে। আটটা থেকে এগারোটা, সময় কিন্তু তিনটি ঘন্টা। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যোগাযোগ হচ্ছে এক সেকেন্ড। কিন্তু বৌদ্ধদের প্রার্থনা রোদিত হল অরণ্যে। সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্নভাবে ঘটানো এসব নির্মমতার জন্য দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্র। মানে ’বাংলাদেশ’ নিজেই। সাংবিধানিকভাবেই এদেশটি এখন সাম্প্রদায়িক। ৩৩ বছর আগে আমার ষষ্ঠ শ্রেনীর ৮৩ জন সহপাঠির মধ্যে ২৭ জন হিন্দু ছিল। কিন্তু এখন আমার টু-তে পড়া মেয়ের কাছে জানলাম ওর ক্লাসের ৬৭ জন বাচ্চার মধ্যে মাত্র ৫ জন হিন্দু। চরম দুঃখ-কষ্ট আমি দেখেছি বটে কিন্তু সাত পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে চলে যাওয়ার বেদনা উপলদ্ধিতে আনার ক্ষমতা আমার অন্ততঃ নেই, যা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র? ভারতে মুলমানেরা সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ভারতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃীস্টান, নাস্তিক সবাই সমান। তাই ভারত থেকে কোনো মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে এমন কথা কোনোদিন শুনিনি। অথচ বাংলাদেশ থেকে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জন হিন্দু পালিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। অধ্যাপক আবুল বারাকাত একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫৮৩ জন হিন্দু দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে এবং ভারতে তারা রাষ্ট্রহীন নাগরিক হয়ে বাস করছে।
খালেক বেহেশ্তে অথবা দোজখে এবং সমরেশ স্বর্গে অথবা নরকে যেতে পারে, পশ্চিমা কোনো দেশে জন্ম না হয়ে এদেশে জন্ম হওয়ার কারণে এধরনের কথাই আমরা শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু বাংলাদেশ বেহেশ্তে যাবে এবং ভারত কিংবা নেপাল দোজখে যাবে, এখন আমাদের একথা মানতে হবে এবং বিশ্বাসও করতে হবে। মানতে হবে এই কারণে যে, আমাদের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ নতুন করে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ জুড়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্য রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’-কে নিদিষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ এখন থেকে পাকাপোক্ত মুসলমান। তাই রামুতে বৌদ্ধরা নির্যাতিত-নিগৃহিত হবে তা খুবই স্বাভাবিক। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে কোন্রাষ্ট্র কোন্ ধর্মাবলম্বী তার তালিকা প্রকাশের জন্য আমাদের জাতীয় সংসদকে অনুরোধ করছি। তাছাড়া বাংলাদেশ কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কিভাবে রোজা করবে, আবার হজ্জ্বই বা করবে কিভাবে এসমস্ত বিষয়গুলি পরিস্কার করে জনগণকে জানানোর জন্য মাননীয় সংসদ নেত্রীকে অনুরোধ করছি। জন্মের সময় কোনো মানবশিশু যেমন কোনো ধর্মর্ভূক্ত হয়ে জন্মায় না, ঠিক তেমনি জন্মের সময় বাংলাদেশও নিদিষ্ট কোনো ধর্মভূক্ত ছিল না, কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা নিয়েই স্বাধীন হয়েছিল। এদেশটার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। টকটকে লাল ইতিহাস। ধর্মের নামে ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। মদ্যপ এবং বিশ্বলম্পট ইয়াহিয়া খানকে ইসলামের ধারক এবং বাহক আখ্যা দিয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে আমাদের মা-বোনদের ‘গণিমতের মাল’ ঘোষণা দিয়ে পাক-আর্মির হাতে তুলে দেওয়ার কথা আমরা সবাই জানি। কাজেই রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা। কোনো বিশেষ ধর্মের লোককে রাষ্ট্র অধিক সুযোগ না দিয়ে সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিবে, এই ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির প্রধান ধর্ম। ‘গণতন্ত্র’ হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হয় না। প্রশ্নই আসে না। সংজ্ঞা অনুযায়ীই গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক সব ধরনের নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখার একটি ব্যবস্থার নাম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সাথে রাষ্ট্র সমান আচরণ করবে, এইরূপ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্খায় সাত কোটি মানুষ সেদিন সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল, যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ঠিকই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যথাযথ মর্যাদা দান করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্থান দিয়ে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আবুল ফজল স্যার (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের জন্য গর্বের, কারণ তা যে চারটি মূল স্তম্ভের উপর অবস্থিত তার অন্যতম একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা।” বলা যেতে পারে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করাটা ছিল একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা ধর্মনিরপেক্ষতাকেও খুন করার চেষ্টা করলো। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকার বেসামরিক রূপ ধারণ করে রাজাকারদের মন্ত্রী বানালো। ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেই মানুষ কেবল নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, কারণ রাষ্ট্র সেখানে কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব করে না। কিন্তু তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিকৃত অর্থ হাজির করলো এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-কে মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে যুক্ত করলো। উহা ছিল বাঙ্গালী জাতির জন্য প্রগতির পথে এক মহাবিপর্জয়। ধর্মনিরপেক্ষতা জ্ঞান হারালো। ঠিক একই কায়দায় আর একটি অবৈধ সরকার ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা দিল। ধর্মনিরপেক্ষতা এবার ইনসেনটিভ কেয়ারে ঢুকলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে যে সরকার বাংলাদেশকে মুসলমান বানিয়েছিল সেই সরকারের মন্ত্রীপরিষদও ছিল রাজাকারে ভর্তি। মজার ব্যাপার হল সে সময় কেহই সরকারের কাছে রাষ্ট্রধর্মের জন্য কোনো দাবী করেছিল না। তাছাড়া যে সংসদ রাষ্ট্রধর্মের ওই বিল পাশ করেছিল তা মোটেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার আমি সে সময় একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী ছিলাম, আমার দিব্যি মনে আছে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ তারিখে সকাল সাড়ে আটটায় ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালটবাক্স নিয়ে চলে এসেছিল। সেদিন দশ-পনেরো মিনিটেই না-কি সব ভোটার ভোট দিয়ে ফেলেছিল। তখন ভোট ডাকাতির সরকার ধর্মকে যেভাবে ব্যবহার করেছিল এখন নির্বাচিত সরকারও সেই একই কাজটিই করলো। সুতরাং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের একটি ছোট্ট অধ্যয়ই হচ্ছে আজকের রামু।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কিন্তু নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগে সকল রাজাই নিজেকে
ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবী করতো। রেনেঁসার মাধ্যমে ইউরোপের দেশসমূহ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে ফেলেছে বটে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুন্নত বিশ্বের স্বৈরশাসকদের কেহই ধর্মকে ব্যবহার করতে কোনো দ্বিধা করছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেগুলো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তাদের কোনোটা ধর্মভিত্তিক আবার কোনোটা ধর্মাশ্রয়ী। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শাসকশ্রেণী যখন জনগণের আস্থা হারায় তখনই ধর্মের আশ্রয় নেয়। কর্ণেল গাদ্দাফি যেহেতু মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না, তাই সে বিদ্রোহীদের দমন করাকে ধর্মযুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। লিবিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে বলেই জানতাম, কিন্তু সেই লিবিয়াও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিল। কিন্তু বাংলাদেশ? ১৯৮৮ সালে সরকার যখন রাষ্ট্রধর্মের বিল পাশ করতেছিল তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত অবৈধ সংসদের সংবিধান সংশোধনের কোনো অধিকার নেই।’ রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এখন মনেহচ্ছে এসবের সবই শেখ হাসিনার অভিনয় ছিল। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে তিনি চুপে চুপে সমর্থন করেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ১৯৮৮ সালের ১২ জুন তারিখে অষ্টম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সারাদেশে শেখ হাসিনার ডাকে হরতাল পালিত হয়েছিল। তারপর গত দুই দশক ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কত জনসভায় কত নেতা যে গত ২৫/৩০ বছরে সেক্যুলার রাষ্ট্র পূনঃ প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছেন তা কেহ গুনে শেষ করতে পারবে না। এসবের সবই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর কৌশল ছিল কি না জানি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খায় জনগণ ঠিকই ম্যান্ডেট দিয়েছে। ২৬২ আসন। কিন্তু হায় ! এসবের সবই কি ভুল? বঙ্গবন্ধু ভুল? স্বাধীনতার চেতনা ভুল? আজ স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেই রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে। মজার ব্যাপার হলো সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ব্যক্তিগত ধর্ম হিন্দু। ভেবেছিলাম সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ এর পাশে ছোট করে ‘রাম রাম’ লেখার প্রস্তাব হয়তো তিনি দিবেন, কিন্তু নিজে হাতে তাঁর নিজের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানভূক্ত করে সুন্দরভাবে দ্বিধর্মের অধিকারী হলেন। বিলে স্বাক্ষর করতে দু’জন সমাজতন্ত্রী সংসদ সদস্য ইনু এবং মেনন সাহেবের অভিনয় দেখে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিয়ের সময় কনের ‘কবুল’ বলার কথা মনে হয়েছিল। অবশ্য কেহ কেহ মনে করেন ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রধর্মকে এবারের মতো রেখে দিলেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে ধর্মব্যবসায়ীরা কোনো সময়ই শেখ হাসিনাকে স্থির থাকতে দেয় নাই। দিবেও না। কোটালিপাড়া, একুশে আগষ্ট কি কেহ ভুলেছে? রাষ্ট্রধর্ম করে কি তিনি ওদের খুশি করতে পারবেন? তা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিহাস তা বলে না, কারণ ধর্মব্যবসায়ীরা আসলে কেউটে সাপ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের ধর্মাশ্রয়ী মনোভাবের কারণেই রাষ্ট্রধর্মকে যত্ন-আত্তি করে রেখে দিয়েছে। আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক একটি দেশ। আর সাম্প্রদায়িক কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে। কাজেই রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়, বরং তা সবচেয়ে স্বাভাবিক।
লেখকঃ মিলন আহমেদ, কলেজশিক্ষক এবং নারীবাদীকলামিস্ট, ঈশ্বরদী, বাংলাদেশ।
সেলফোনঃ ০১৭১২-৪৩০৬৮১
ই-মেইলঃ [email protected]
কখনো কখনো নিজে খারাপ কিছু না করেও নিজেকে দোষী মনে হয়, কখনোবা ভাল কিছু করতে না পারায় নিজেকে দোষী মনে হয়। এই ঘটনাতে নিজেকে উভয় দোষে দোষী মনে হচ্ছে।
ধর্ম আর কুকর্মের মধ্যে পার্থক্য কি জানি না কিন্তু যে মূল্যবান প্রত্ন সম্পদ নষ্ট হল তাঁর কোন ক্ষতি পূরণ নেই।
দেশের অবস্থা দিনে দিনে কেবল খারাপই হচ্ছে। একটা সময় এটা আফগানিস্তান বা পাকিস্তান হয়েই ছাড়বে মনে হচ্ছে। 🙁
@অভিজিৎ,
দেশের কথা বাদই দেন, ইউরোপ, আমেরিকার কানাডার কপালেও মনে হয় না খুব একটা শান্তি ভবিষ্যতে আছে বলে, এখন অপেক্ষা কেবল ঝাড়ে বংশে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে থাকা।
বুঝতে পারছিনা কি বলব !! শুধু মনে হচ্ছে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এই দেশ ছেড়ে চলে যাবার ।
এই দেশ আমার মা, তাকে ছেড়ে যাব কি করে !! খুব কষ্ট পাচ্ছি এমন টা ভেবে ।
লিখাটির জন্য ধন্যবাদ । (F) (F) (F) (F)
পৃথিবীর প্রায় সবগুলি ধর্মই শান্তি ও মানবতার কথা বলে|সব ধর্মেই সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হারাম|প্রতিটি ধর্ম অন্য ধর্মমতকে শ্রদ্ধার চোখে দেখার আদেশ দেয়|এসত্বেও য়ারা অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত হানে তারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস করে|এসব ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী|
আমি আসলে আগেই বলেছিলাম আওয়ামীলীগ কোন ধর্মনিরপেক্ষ কোন দল নয়।বরং এটি অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মবেশে কট্টর সাম্প্রদায়িক দল। তবে আমার আরেকটি বিষয় মনে হচ্ছে সেটি হচ্ছে বি এন পি ,আওয়ামীলীগ এই দলগুলো আসলে সুবিধাবাদী। এদের রাজনীতি হচ্ছে ভোট কেন্দ্রিক। যদিও উভয় দল নিজেদের নিদ্রিস্ট আদর্শের অনুসারী বলে প্রচার করে। বাস্তবে এরা ক্ষমতার লাভের জন্য কখনো ধার্মিক সাজে, কখনো অসাম্প্রদায়িক সাজে, কখনো আবার কম্যুনিস্ট সাজে, কখনো আবার পুঁজিবাদী সাজে। এরা ক্ষমতা লাভের জন্য সংখ্যালঘুদের কাছে কখনো দরদী সাজে আবার উদ্দেশ্য হাসিলের পর সংখ্যালঘুদের লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। বাংলাদেশ কে এরা ভেবেছে তাদের স্কুলের ক্লাসরুম । এদেশের সংবিধান কে এরা ক্লাসরুমের ব্ল্যাক বোর্ড ভাবে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন তারা ব্ল্যাক বোর্ড এর লেখা কে ডাস্টার দিয়ে মুছে নিজেদের ইচ্ছামত লেখা লিখে ফেলে ভোট ব্যাংক বৃদ্ধির জন্য, অবৈধ কাজ কে বৈধতার সাইনবোর্ড দেবার জন্য।
অনেকে এই ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের ডি সি, এস পি , ও সি, দারোগা সবাই তো দলবাজ। এরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য ব্যতীত কখনো কোন নিয়োগ, প্রমোশন, ভাল জায়গায় পদায়ন কর্তব্য অবহেলা, দুর্নীতি ইত্যাদি করতে পারে না । এবং যাদের দায়িত্তে অবহেলার জন্য এই ঘটনা ঘটল তদন্তে এরা দোষী প্রমানিত হলেও কিছুকাল পর দেখা যাবে তাদের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রমোশন দিয়ে
@মাসুদ রানা,
কথায় আছে যে দেশের জনগন যেমন তারা তেমনই নেতা পায়। ভোট ব্যাংক রাজনৈতিক দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জিনিস।
আওয়ামী লীগ যতদিন জনগনের মাঝে মোটামুটি অসাম্প্রদায়িক ধারা জীবিত ছিল ততদিন অসাম্প্রদায়িক দল ছিল, জনগনের মাঝে সাম্প্রদায়িক ধারার পূঃণজাগরন দেখা দিতে তারাও সাম্প্রদায়িকতা ভর করা শুরু করেছে। উপায় নেই, নইলে ভোট পাবে কোথা থেকে? বিএনপি যদি ইসলামী মুল্যবোধে দেশ চালানোর কথা বলে আর আওয়ামী লীগ যদি সব ধর্মের সমান অধিকার শ্লোগান দেয় তবে ভোটের বাজারে কে সুবিধে পাবে?
এখনো তারা দাবী করবে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে, তবে সে অসাম্প্রদায়িকতার লাইন হল কিভাবে অপর ধর্মের লোকজনকে নিজ ধর্মের রূপান্তরিত করা যায় সেটা সরকারী পর্যায়ে গবেষনার উদ্যোগ নেওয়া।
বটম লাইন হল, জনগনের মাঝে প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনা না জাগলে কোন দলের ওপরই ভরসা করা যাবে না।
@আদিল মাহমুদ,
দুটো কথা। অধিকাংশ সাধারণ জনগণ কখনো সঠিক অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না। কারণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা মানেই ধর্মনিরপেক্ষতায় না বিশ্বাস করা। পাকিস্তান আমলেও বাঙ্গালী সাধারণ জনগণ পাকিস্তানকে ঘৃণা করত কারণ তাদের ধারণায় পাকিস্তান এক পশ্চিমা ঘেঁষা অনৈস্লামিক দেশ (পাকিস্তান তার ইতিহাসের দীর্ঘতম সময়েই মার্কিন প্রেমিক ছিল আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সঙ্গে কোন বন্ধুত্বের চেষ্টাই করেনি)। ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা বামপন্থী ছাত্র নেতাদের মধ্যে জোরালোভাবে বিরাজ করছিল ১৯৬৯-৭০ এর সময়ে, ঐ সময়ে কার্ল মার্ক, এঙ্গেলসের আফিম খেয়ে বাম ধারার চিন্তার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। বামপন্থী তরুনেরাই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা প্রথম তোলে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনই (দুএক জন ছাড়া বিশেষ করে অলি আহাদ) কখনো ধর্মনিরপেক্ষতাকে পার্টির মূল আদর্শ হিসেবে দেখেনি। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার জোয়ার খুব অল্প সময়ের জন্যই এসেছিল। বিজয়ের ঠিক অব্যবহিত পরের দিনগুলিতে, শেখ মুজিব দেশে ফেরার আগে। ঐ সময়ে রেডিও টিভিতে কুরান তেলাওয়াত উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।আস সালামুয়ালাইকুমের এর বদলে শুপ্রভাত বলা হত। এর কৃতিত্ব তাজুদ্দীন সরকারের। শেখ মুজিব ফিরে এসে আবার কুরান তেলাওয়াত, সালামুয়ালাইকুম ইত্যাদি শুরু করেন। এর আগে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনগনকে মন করিয়ে দিলেন তিনি একজন মুসলমান, আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ, যদিও মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যার শিকারের সংখ্যা হিন্দুদেরই বেশি ছিল। কথায় আছে “Hit the nail when its hot” তখন শক্তভাব লেগে থাকলে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থায়ীভাবে গনমানসে গেঁথে দেয়া যেত। যদিও প্রথম দিকে এক অস্বস্তি বোধ হয়েছিল অনেকের। কিন্তু জামাত তথা ধর্মীয় দলগুলিরা ঐসময়ে এতটাই ধিকৃত ছিল যে এই সব কড়া ধর্মনিরপেক্ষ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল নামানোর সাহস হত না কারও। শেখ মুজিব যদি এই প্রথম কদিনের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে জিয়ে রাখতেন ও সেটাকে স্থাঈ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের চেহারা অন্যরকম হত । কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত চেতনা বা বোধ তাঁর ছিল না। তিনি মুসলীম (দ্বিতীয় বৃহত্তম) রাষ্ট্রই (ইসলামী নয়) চেয়েছিলেম।
@কালযাত্রী,
একমত।
বাংগালীর অসাম্প্রদায়িক ইমেজ নিয়ে মোটামুটি ভাল ইমেজ থাকলেও (ভারতের দিকেও পশ্চীম বাংলার অসাম্প্রদায়িক হিসেবে মোটামুটি সুনাম আছে) অন্তত আমাদের দিকে সেটার ভিত্তি কখোনই তেমন শক্ত ছিল বলে আমার মনে হয়নি, ব্যাক্তি অভিজ্ঞতাতেও মনে হয়েছে যে শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে অধিকাংশ মানুষই কম বেশী সাম্প্রদায়িক। অধিকাংশ লোকেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা সমর্থন করবে না তবে নিজ ধর্মের লোকের সাথে যেভাবে সহজভাবে মিশতে পারবে তা অন্য সম্প্রদায়ের লোকের সাথে পারে না। ধর্ম বা ধর্মীয় সংস্কৃতিজাত বাধার দেওয়াল সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া আসবেই। পাকিস্তানী শাসনামলে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জোশে সাময়িকভাবে বাংগালী জাতীয়তাবাদের জিগিরে সাম্প্রদায়িকতা দূর হয়েছিল। পাকিস্তানীরা দূর হবার পর তাই ইসলামী সংস্কৃতিজাত মুসলমান জাতিসত্ত্বা বাংগালী জাতিসত্ত্বার সাথে সফল ভাবে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ৬৯-৭১ সালে মনে হয় না কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া কোন বাংগালীকে তার পরিচয় কি জিজ্ঞাসা করলে সে হিন্দু মুসলমান এসব জবাব দিত, সে বিনা দ্বিধায় জবাব দিত বাংগালী। এখন মনে হয় এক বড় সংখ্যক মানুষ জবাব দেবে, গর্বিত মুসলমান।
তাজউদ্দিন ব্যাতিক্রম হলেও বংগবন্ধুও এই ধারার তেমন ব্যাতিক্রম ছিলেন না যেটার কথা ওপরে ৪ নং কমেন্টে বলেছি। আমিও মনে করি যে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা গড়ে তোলার সুবর্ন সুযোগ ছিল যুদ্ধের পর পর, যেটা হারানো শুর হয় বংগবন্ধুর হাত ধরেই। যদিও একই সাথে মনে করি যে এটা ঘটতই, তার কারন আপনিই বলেছেন; ইসলাম ধর্মে পূর্ন বিশ্বাস করে ধর্মনিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়।
তবে সামান্য দ্বি-মত আছে বংগবন্ধুর দেশভাগের সময়কার সাম্প্রদায়িক কিছু উদাহরনে আপনার বিশ্লেষনে যা আগের এক কমেন্টে করেছিলেন সময়াভাবে জবাব দিতে পারিনি।
কে কতটা সাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক এটা কিছুটা আপেক্ষিক। ‘৪৭ দেশভাগের সময়কালে পুরো উপমহাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ই কম বেশী সাম্প্রদায়িকতায় ভুগেছে, তারাই মূলত নিজেদের অবহেলিত মনে করে স্বাধীন মুসলমান রাষ্ট্র দাবী করেছে। বংগবন্ধু এ ধারার বাইরে এটা মনে করা ভুল হবে। তবে এটাও ঠিক যে বংগবন্ধুরাই আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দেন ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজ আনার জন্য।
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি আসলেই সম্ভব কিনা এ নিয়ে একটি লেখা অর্ধসমাপ্ত আছে, বিষয়টি বেশ ইন্টারেষ্টিং। ধর্মপ্রান লোকেও অধিকাংশই মত দেন যে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করা যাবে না (মূল কারন ‘৭১র ভিত্তিতে জামাত শিবির ঘৃনা)। এটা কতটা সম্ভব, সম্ভব না হলে তার কারন কি তা জানা দরকার।
৭১ এর অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশী আশাবাদী হবার আমি অন্তত কিছু দেখি না। আসলে ‘৬০ দশক থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক সময় ছিল না, পাক জান্তার বিরুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সাম্প্রদায়িক চেতনা সাময়িক ভাবে বিদায় নিয়েছিল বলা যায়, অন্তত আমার কাছে তাই। যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কমন শত্রু দূর হয়েছে, ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববোধের ভূত আবারো মাথা চাড়া দিতে বেশী দেরী হয়নি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বংগবন্ধুই স্বাধীন বাংলায় এ ধারা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নেন। তিনি নিজে গর্বিত মুসলমান বলে কাজে অকাজে পরিচয় দিতেন, কাজেও দেখানো শুরু করছিলেন। সেক্যুলার (সে সময় এর ব্যাখ্যা ছিল সব ধর্মের সমঅধিকার) বাংলাদেশ সংবিধানে সৃষ্টি করে তিনিই আবার ইসলাম ধর্ম প্রচারে মন দিচ্ছিলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে তেলানো (এটা অবশ্য বাস্তবতার কারনে হতে পারে), ভূট্টোর সাথে মোলাকাত করা…পাকিস্তান আমলেরও তিনগুন ফান্ড মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে বরাদ্দ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুখে কুঠারাঘাত তিনিই শুরু করেন। পরের সেনা শাসকরা অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবার মোক্ষম সুযোগ হেলায় হারায়নি। ফলাফল যা হবার তাই।
আশিস বড়ুয়াকে গতবাধা কিছু কথা বলতে পারতাম, যেমন কিছু দুষ্কৃতকারীর জন্য অধিকাংশ বাংগালীকে ভুল বুঝবেন না। আসলেই এখনো বিশ্বাস করি যে দেশের ৯০% মুসলমান এসব দাংগা হাংগামা সমর্থন করে না। বাস্তব হল তাতে তেমন লাভ আসলে হবে না। তারা সমর্থন না করলেও নানান ছূতা বেছূতায় এসব চলবেই। তারা সমর্থন না করলেও যা করলে এসব হয়ত দূর করা যেত সেসব কথায় গুরুত্ব দেবে না। কাজেই সান্তনামূলক বাক্য আওড়ানো আসলে তাদের ক্ষতি করার মতই হবে।
অনেক ধন্যবাদ, মি. মিলন আহমেদ আপনার সুচিন্তিত বিশ্লেষণের জন্য। একজন শিক্ষিত ও বিবেকবান লোক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধগণ তথাগত বুদ্ধের অনুসারী হিসেবে শান্তিপ্রিয় এবং পারস্পরিক মৈত্রী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে।
প্রকৃতপক্ষে, আমরা একটু পিছনে তাকালে দেখি, যে বাংলাদেশ আজ তথাকথিত আধুনিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, খ্রিস্টের জন্মেরও ৪০০ বছর আগে সে রাষ্ট্রটিতে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সম্রাট অশোকের আমল থেকে শুরু করে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত, অর্থাৎ দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম সামাজিক সাম্যতা, মৈত্রী, করুনা/দয়া ও ক্ষমায় বিশ্বাসি ছিল বিধায় বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হয় এবং এই ধর্মের অনুসারীগণ শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ, সাহিত্যকলায় পটু, সাম্যতাভিত্তিক সামাজিক অর্থনীতি বাস্তবায়নে ব্যাতুভাবে সাফল্যতা অর্জন করে। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আমন্ত্রিত হয়ে থাকতেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই এর সত্যতা পাওয়া যায়। তবে ব্রাম্মন্যবাদিরাও এক শতাব্দীর বেশী রাজত্ব করতে পারেনি।
পরবর্তীতে পঞ্চদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে আরবিয় ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের আক্রমণে বৌদ্ধবিহার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং তারা এতদঞ্চলের নিরীহ, শান্তিপ্রিয় জনগণকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহনে বাধ্য করে। ইসলাম যদিও মুখে শান্তির কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে করে বিপরীত আচরণ। একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, ইসলামের জন্ম কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাতের মাধ্যমে। এই বাংলার অতীত ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি, সেই ব্রিটিশ আমল বলুন বা পাকিস্তানি আমলই বলুন না, এরকম সুসংঘটিত, ন্যাক্কারজনক, লজ্জাস্কর ও কাপুরুষ সুলভ আক্রমণ কক্ষনো কি ঘটেছে? – না, ঘটেনি। কিন্তু আজ ঘটেছে এবং এটাই বাস্তব। বাঙালীরাই করেছে বাঙালীর বিরুদ্ধে, বাঙালী মসুল্মানেরাই করেছে বাঙালী বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মতাদর্শের (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাতে-ইস্লামি, জাসদ, বাসদ, ইত্যাদি) অনুসারী হলেও এক্ষেত্রে তারা মননশীলতায় এক। একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হলেও এখানে ধর্মীয় পরিচয়ই বড় – একজন মুসলিম, অন্যজন অমুসলিম। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার হলেও তাদের জানামতে বা অজানায় তার প্রশাসন কার্যত ধর্মান্ধ, উগ্র ও নীতিহীন, কুশিক্ষিত আধিকারিকের প্রচ্ছন্ন সহায়তা ছাড়া এধরনের hour long fanatic rampage চলতে পারে না। এযেনো সুগভীর ও সুচিন্তিত ভাবে এবং সুপরিকল্পিত উপায়ে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করনের (Ethnic Cleansing) প্রক্রিয়া। কথায় আছে, কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে আগে তার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ইত্যাদি শেষ করে দাও। ‘৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানী ও এদেশে তাদের পাচাটা রাজাকার-আল্বদর কুকুরগুলো বুদ্ধিজীবী নিধনের মাধ্যমে এদেশের সম্রিদ্ধ্ব ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চা শেষ করার নৃশংস খেলায় মেতে উঠেছিলো, আজ বাঙালী মুসলিমরা ঠিক সেভাবেই নৃশংস হায়েনার মতো আচরণ করছে। বাঙালী মুসলিমদের জন্য এর চে’ লজ্জার বিষয় আর কি থাকতে পারে? এখানেই তো আপনাদের পরাজয়। ছি ছি! আপনারা একবার যেখানে লজ্জার মাথা খেয়ে নিরীহ, দুর্বল প্রতিবেশীকে নির্লজ্জ আক্রমণ করতে পেরেছেন, তাদের ঘরবাড়ি, প্রার্থনা স্থল তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করেছেন, ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি করবেন না, এ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি? জানি আপনি মিলন আহমদ, আপনিও পারবেন না, কারন আপনি বা আপনার মতো সুমানসিকতা ও সুকুমার বৃত্তি সম্পন্ন লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অর্থাৎ আপনি সংখ্যাগুরু হয়েও সঙ্খ্যালঘু।
However, we all know that –
Racism has been a motivating factor in social discrimination, racial segregation, and violence which can create hatred, pogroms, massacres and ethnic cleansings. An individual can be xenophobic racist, socially racist and or even a state can behave as racist. And in the recent years, there’s a rising increase of intolerance and racial discrimination against religious minorities. It’ll never ever bring peace, social justice and humanism, rather anarchy and destruction. This has to be STOPPED!
@আশিস বড়ুয়া,
ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিস্পেষনে পাহাড় ও সমতলে ভিন্ন ভিন্ন রূপে এই পাকিপনা চলছেই। আগেই যেমন বলা হয়েছে, ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর প্রশাসনিক আস্কারায় সেনা-সেটেলার-মোল্লারা এ ধরণের সহিংস আক্রমণের সাহস পাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির বিচার নেই, ভোটের মোকাম ঝলমলে রাখতেই একে জিইয়ে রাখা হয়েছে, বিএনপি/আওয়ামী লীগ/জামাত যুথবন্দী এ প্রশ্নে [“লা ইলাহা ইল্লা, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ”]। এই আগ্রাসী জাতীয়তবাদা/মৌলবাদ আস্কারার ভিঁতটি অনেক গভীরে, দর্শনটির উৎস সামন্তবাদে, বহিঃপ্রকাশ ফ্যাসিবাদে। ….
(Y)
@ মিলন আহমেদ,
অসাম্প্রদায়ীক ও মানবিক চেতনা থেকে রামুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে লেখায় প্রথমেই আপনাকে সাধুবাদ। মুক্তমনায় স্বাগতম।
তবে চলতি লেখার বিশ্লেষনে গুরুতর গলদ রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। লেখাটি খানিকটা একপেশে, [বঙ্গবন্ধু কন্যা]-মোহের ভাব-বুদ্বুদে ঠাসা। আপনার বিবৃতি মতে:
দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না, নাকি এটি [সত্যিকার অর্থে] অসাম্প্রাদায়ীক/ধর্মনিরপেক্ষ/বৈষম্যহীন দর্শনে পরিচালিত হবে, তা মোটেই এককভাবে ব্যক্তি শেখ হাসিনা/সুরঞ্জিত/ইনু/মেনন প্রমুখর একক চিন্তা বা শুভবুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি নির্ধারিত হয় কোন রাজনৈতিক দর্শনে রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হচ্ছে, তার ওপর। শ্রেণীগত দর্শনিক দিক বিচারে আ’লীগ/বিএনপি/জামাত/মিল্লাত বাম কোং আসলে একই। তাই জাতিগত/ধর্মীয় সংখ্যগুরুতার প্রশ্নে [এবং “মুসলিম ব্রাদার হুড”] ভাষাগত/ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর আগ্রাসী মনোভাব রক্ষার প্রশ্নে তাদের দাঁত ও নখর এবং আস্ফালনের দিক-দর্শন ও আচরণটি হবে একই।
প্রাসঙ্গিক [রাঙামাটি, রামু, পটিয়া, টেকনাফ… এরপর?] লেখাটিতে যেমন বলা হয়েছে:
[লিংক]
নীচের ছবিটিতে পুরো বিষয়টি একদম পরিস্কার। স্থানীয় সূত্রে ছবিটি পাওয়া, ফেবু’র কয়েকটি গ্রুপেও ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
[img]https://fbcdn-sphotos-b-a.akamaihd.net/hphotos-ak-snc7/308075_488425471181549_1029244980_n.jpg[/img]
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
এক শত ভাগ সহ মত। (Y)
(F) (F) (F) (F) (F) (Y)