‘Some man of yore/ A nomenclature thought of and observed/ And forms sufficient Found.’
– Aratus
আমরা নিশ্চয়ই আমাদের বন্ধুদের যার যার জন্মদিনকে একেকটি স্টার সাইন হিসেবে জানি! জন্মদিন জানলেই অবশ্যই কে কোন্ রাশির সেটা জানা যায়। তারপর কারও জন্মদিনে পত্রিকা খুলে রাশিচক্রের পাতাটা একটু দেখে নেই, ওইদিনটি তার কেমন যাবে। কিংবা কোনো একদিন যেকোনো জাতকের দিন কেমন যাবে সেটাও পত্রিকা থেকেই জানা যায়। বছর শেষে বিভিন্ন পত্রিকা হাউজ থেকে নতুন বছর কোন জাতকের কেমন যাবে এমন চটকদার খবর নিয়ে পত্রিকাও বের হয়। আমার জন্মদিন ২০ আগস্ট, পত্রিকা থেকে নিশ্চয়ই আমার রাশি কোনটি সেটা বের করা যায়। দিনটি কার কেমন যাবে সেটা রাশিচক্রের পাতা দেখে মেলানো – এ যেন এক মজার খেলা। দিনশেষে অনেকেরই হয়তো ঠিকঠিক মিলে যায় জ্যোতিষী যেমন বলেছিল। আমরা অনেকেই আমাদের মতো করে জানি রাশিচক্রের মানেটা কী। কেউ যখন জন্মায়, তার জন্মদিনে সূর্য যে নক্ষত্রমণ্ডলীতে থাকে সেটাই তার রাশি বা জোডিয়াকাল সাইন। ওই নক্ষত্রের প্রভাবে আপনার-আমার ভাগ্য কিংবা দৈনিক ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রিত হয় – এমনটিই জ্যোতিষীরা বলে থাকেন। কিন্তু এই রাশিচক্রের আইডিয়াটা কীভাবে এল? তাছাড়া এই যে বিভিন্ন নক্ষত্র নিয়ে বিভিন্ন ছবি কল্পনা করা হয়, ওরায়ন বা গ্রেট বেয়ার কিংবা সিংহরাশির এই যে ছবি কল্পনা করা হয় সেটাই-বা কারা বানাল? কবে বানাল? আজ সেই গল্পই বলব।
যারা খানিকটা হলেও অ্যাস্ট্রেনমি নিয়ে কৌতূহলী, যারা একটু-আধটু আকাশ দেখে থাকে, তারা নিশ্চয়ই জানে যে আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র নিয়ে নানারকম মণ্ডলীর কল্পনা করা হয়েছে। ইংরেজিতে এদের কনস্টেলেশন্স বলে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের জানিয়েছেন, এসব নক্ষত্রমণ্ডলীর সঙ্গে আসলে মানুষের জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ সর্ব-আকর্ষী মহাকর্ষ বলের অধীনে নক্ষত্রমণ্ডলীর নক্ষত্রেরা বাধা থাকে না। পৃথিবীর আকাশ থেকে এসব নক্ষত্রকে ঠিক ওই রকম কাছাকাছি দেখা যায় বলেই তাদের নিয়ে ছবি কল্পনা করা হয়েছে। লক্ষ বছরের বিবর্তন মানবমস্তিষ্ককে এমনভাবে গড়েছে যে যেকোনো কিছুতে একটা প্যাটার্ন সে খুঁজে নেয়, যাতে মনে রাখতে বা নজর কাড়তে সুবিধে হয়। এভাবেই প্রাচীন মানুষের হাতে নক্ষত্রমণ্ডলীর বিভিন্ন আকৃতির সৃষ্টি। যা হোক, বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ মিলিয়ে রাতের আকাশে মোট ৮৮টি নক্ষত্রমণ্ডলীকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনমিকাল ইউনিয়ন (www.iau.org) স্বীকৃতি দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই ৮৮টির মধ্যে ৪৮টিরই নিখুঁত বিবরণ আছে ক্লডিয়াস টলেমির (৯০-১৬৮ খ্রিষ্টাব্দ) বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আলমাজেস্ট’-এ। খ্রিষ্টীয় ১৫০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে লিখিত এই মহাগ্রন্থে সেকালের এবং তার আগের অনেক পুরনো জ্ঞান ও চর্চাকে টলেমি লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন। এ জন্য ‘আলমাজেস্ট’ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসের খুব দরকারি একটি বই। এটা আরেকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ – রাতের আকাশে গ্রহদের বিচরণ ও চন্দ্র-সূর্যের গতির ব্যাখ্যায় পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের সুন্দর গাণিতিক বর্ণনা টলেমি এই গ্রন্থেই লিখেছিলেন। এই ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদ পরবর্তী ১৫০০ বছর পৃথিবীর মানুষকে মোটামুটি গোঁড়া ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
এই আলমাজেস্টে ৪৮টি তারকামণ্ডলীর বর্ণনা পাওয়ায় বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, তাহলে বোধহয় প্রাচীন গ্রিসেই এগুলির কল্পনা শুরু হয়। কাজেই যদি কেউ বলে প্রাচীন তিব্বতে বা অমুক প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা তারকামণ্ডলীর ধারণা দিয়েছিল, তাহলে অন্তত এটুকু বলা যাবে যে টলেমির বইয়ে ৪৮টি তারকামণ্ডলীর হদিস পাওয়া যায় এবং প্রাচীন গ্রিসের মানুষেরা ওইসব তারকামণ্ডলীর অবস্থান, ছবি এবং কোন ঋতুতে কোনটি আকাশের কোথায় থাকে তা মোটামুটি জানত। কাহিনি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। টলেমিরও আগে প্রাচীন গ্রিসে এক মহাজ্ঞানী জ্যোতির্বিজ্ঞানী বাস করতেন। তার নাম হিপার্কাস (খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০-১২০); কথিত আছে, হিপার্কাসের হাতে তৈরি একটি স্টার ক্যাটালগ ছিল, কিন্তু এখন তা হারিয়ে গেছে। হিপার্কাসই প্রথম আকাশের নক্ষত্রদের যে উজ্জ্বলতায় দেখা যায় তার প্রেক্ষিতে উজ্জ্বলতার শ্রেণিবিভাগ করেছিলেন। এখন যেমন আমরা বলি ‘ফার্স্ট ম্যাগনিচিউড স্টার’ বা তৃতীয় শ্রেণির উজ্জ্বল নক্ষত্র – এই শ্রেণিবিভাগটি হিপার্কাসের করা। তাছাড়া হিপার্কাস পৃথিবীর অয়নচলনও আবিষ্কার করেছিলেন। এই হিপার্কাসের হাতে সে সময়ে একটি কবিতার বই এসে পড়ে। এখনকার বিজ্ঞানীদের মতো নন তখনকার বিজ্ঞানীরা – তাদের হাতে অঢেল সময় ছিল কবিতা ও ইতিহাস বিষয়ে চর্চা করার। ওই কবিতার বইয়ে হিপার্কাস তারকামণ্ডলীর চমৎকার মনোহারি কাব্যিক বর্ণনা খুঁজে পেলেন। মোহিত করা মাধুর্য ভাষায় সেখানে লেখা ছিল কোন তারা কখন ওঠে, তখন অন্য কোন তারা অস্ত যায়, গ্রীষ্মের শুরুতে কোন তারা দেখা যায়, কোন তারা কোনদিকে থাকলে সমুদ্রে ঝড়ের সম্ভাবনা, কিংবা কোন তারা কীভাবে দেখে দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায় ইত্যাদি।
হিপার্কাস মনোযোগ দিয়ে এই কবিতা পড়ে বুঝতে পারলেন যে একটা কিছু গোলমাল আছে। ওই কবিতায় যখন যেখানে নক্ষত্রের উদয় হওয়ার কথা, তখন সেখানে উদয় বা অস্ত হয় না। হিপার্কাস বুঝলেন যে, ওই কবিতায় যে রাতের আকাশের কথা বলা হয়েছে সে আকাশ হিপার্কাসের সময়ের আকাশ নয়। হিপার্কাসের সামনে দুটো সম্ভাবনা ছিল – এই কবিতার বইটাকে সম্পূর্ণ গাঁজাখুরি ধরে নেওয়া, কিংবা বুঝে নেওয়া যে কবি যে আকাশ দেখছেন সেটা অনেক অনেক কাল আগের আকাশ। এখন ওই কবিতার লেখক ছিলেন আরাতুস (খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫-২৫০); কবি আরাতুস আবার রাজার আদেশে আরেকটি বই দেখে এই কবিতা গ্রন্থটি লিখেছিলেন। সেই প্রাচীন বইটির কোনো হদিস নেই, কিন্তু আরাতুস ওই বইয়ের লেখকের নাম জানিয়েছেন ইউডক্সাস। ইতিহাসবিদেরা জানিয়েছেন ইউডক্সাস নামে পুরাকালে সত্যিই এক জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যার সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-৩৫০; ইউডক্সাস প্রাচীন মিশর ভ্রমণ করে অনেক জ্ঞান লাভ করেন। এই লব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি একটি তারার তালিকা বানিয়ে থাকতে পারেন। খুব সম্ভবত তিনি একটি ‘আকাশ-গোলক’ (সেলেশিয়াল স্ফিয়ার) বানিয়েছিলেন, যেখানে রাতের আকাশের একটি ম্যাপ ছিল। এমনটি ভাবার কারণ হল, কিংবদন্তিতে ‘ইউডক্সাসের স্ফিয়ার’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। এ সম্পর্কে আমার আগের একটি পোস্ট দেখুন এখানে। এমন হতে পারে, মিশর ভ্রমণের সময়ে খুব প্রাচীন কোনো আকাশ-বর্ণনার ঐতিহ্যের সঙ্গে ইউডক্সাসের পরিচয় ঘটে থাকতে পারে। ইউডক্সাস থেকে হিপার্কাসের সময়ের পার্থক্য প্রায় দুশো বছরের মতো। এই দুশো বছরে রাতের আকাশ অতো বদলে যাওয়ার কথা নয়। এই নিয়ে হিপার্কাস চিন্তিত ছিলেন এবং আকাশ বদলানোর এই বিষয়টি ধর্তব্যে এনে তিনি অয়নচলন বা প্রেসেশনের ব্যাপারটা আবিষ্কার করেছিলেন। পৃথিবী যেহেতু আদর্শ গোলক নয়, তাই যে অক্ষের চারদিকে এটি লাড্ডুর মতো অনবরত ঘোরে, সেই অক্ষরেখাটি নিজেও ঘোরে। একবার পুরো ঘুরে আসতে প্রায় ২৬,০০০ বছর সময় লাগে। এই ঘূর্ণনের ফলে ধ্রুবতারা বদলে যায়, তারাদের অবস্থানও বদলায়। একে বাংলায় ‘অয়নচলন’ বলে।
আধুনিক বিজ্ঞানীরা ইউডক্সাসের গোলকের কথা আরাতুসের কবিতার মাধ্যমে জেনেছেন এবং হিপার্কাসের দুশ্চিন্তার বিষয়টিও তাঁরা জানেন। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন যে, টলেমির তারাতালিকা মূলত ওই সুপ্রাচীন ইউডক্সাসের ক্যাটালগেরই উত্তরসূরী। কিন্তু প্রশ্ন হল, দু-তিনশো বছরে রাতের আকাশ আমূল বদলে যেতে পারে না। তাহলে ইউডক্সাস কোন কালের আকাশ দেখেছিলেন? আদৌ দেখেছিলেন, নাকি কপি-পেস্ট করেছিলেন? এ এক মজার বৈজ্ঞানিক ডিটেকটিভ কাহিনি। বিজ্ঞানীরা একটি রাতের আকাশের ম্যাপে প্রাচীনকালের জানা সব নক্ষত্রমণ্ডলীর ছবি বসিয়ে একটা মজার বিষয় দেখতে পেলেন। দক্ষিণ আকাশের যেদিকে দক্ষিণ আকাশ-মেরু থাকে, ওই মেরুর চারদিকে ছোট একটা অঞ্চলের নক্ষত্রকে উত্তর গোলার্ধের মানুষজন কখনও দেখতে পাবে না। এই অঞ্চলের আকৃতি এবং অবস্থান নির্ভর করে দর্শকের অবস্থান (অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ) এবং তার পর্যবেক্ষণের সময়কালের উপর। কারণ, পৃথিবীর অয়নচলনের ফলে ওই আকাশ-মেরু ও তারাহীন অঞ্চলের (যে অঞ্চলের তারা দেখা যায় না, জোন অব অ্যাভয়েডেন্স) ব্যাপ্তি-পরিসর-অবস্থান বদলে যায়। এই বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝতে হলে একটু কষ্ট করে গোলক বা সেলেশিয়াল স্ফিয়ার সম্পর্কে পড়াশোনা করে নিতে হবে (চাইলে তাম্রলিপি প্রকাশনীর ‘সবার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা’ বইটি দেখতে পারেন)।
বিজ্ঞানীরা দেখলেন, যে অঞ্চলে প্রাচীন কোনো মণ্ডলীই নেই সেই তারাহীন অঞ্চলটির ব্যাপ্তি থেকে বোঝা যায় ওই অঞ্চলটি ৩৪-ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৩৬-ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মানুষের কাছে সর্বদা অদৃশ্য থাকবে। ওই অঞ্চলে দক্ষিণ আকাশমেরু অবস্থান করে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ অব্দে। অর্থাৎ খ্রিষ্টের জন্মের দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ৩৪-ডিগ্রি-থেকে-৩৬-ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে বসবাসকারী মানুষ এই প্রাচীন ছবিগুলো কল্পনা করেছিল এবং তারামণ্ডলীগুলোর আকৃতি, তাদের উদয়-অস্ত ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেছিল। কিন্তুকেন করেছিল? হতে পারে, কোনো ধর্মীয় কাজে এইসব নক্ষত্র ও তাদের মধ্যে বিভিন্ন মূর্তির কল্পনার দরকার ছিল। কিংবা হতে পারে কৃষি কাজে ঋতু পরিবর্তনের বিষয়টি জরুরি বিধায় আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলীকে পর্যবেক্ষণ করতে হতো। কিংবা হয়তো সমুদ্রে অনেক অভিযান চালানোর প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনার কাজে এসব বর্ণনার প্রয়োজন হয়েছিল। এইসব কারণে প্রাচীন মানুষেরা তাদের সময়কার সমাজ-সংস্কৃতির প্রয়োজনীয় প্রতীক ও ছবি থেকে আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্রমালার ছবি কল্পনা করে নিয়েছে। তারপর মুখেমুখে তারা এই ঐতিহ্য বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু তারা কারা ছিল? নিজেই এটা বের করতে পারবেন। পৃথিবীর একটি ম্যাপ নিয়ে দেখেন ৩৬-ডিগ্রি উত্তর-অক্ষাংশের কাছে কোন দেশ আছে তাদের একটা তালিকা করেন। তারপর ইতিহাস বই থেকে জেনে নিন খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-২০০০ বছরে কোথায় কোথায় সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। ফলে তালিকা থেকে অনেক অঞ্চল বাদ যাবে, থাকবে মাত্র দুটি অঞ্চল, যারা ওই সময়ে ওই অক্ষাংশে সিভিলাইজেশনের পত্তন করেছিল। একটি হল সুমের-ব্যাবিলনীয় অঞ্চল, অন্যটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন যে, সুপ্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা নিয়মিত আকাশ পর্যবেক্ষণ করত, পোড়ামাটির ট্যাবলেটে, ফিউনিফর্ম লিপিতে তা লিপিবদ্ধ করত। এমনকি বিভিন্ন প্রাচীরের গায়ে ও সিলমোহরে এমন সব ছবি দেখা যায় যাদের সঙ্গে রাশিচক্রের অনেক মণ্ডলীরই মিল আছে। কাজেই প্রাচীন এলামাইট ও সুমেরীয়দের হাতে গড়ে ওঠা রাশিচক্র ও তারামণ্ডলীর ছবি কল্পনা-ই সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে একটি ছোট ধাঁধা আছে। ইউডক্সাসের বর্ণনায় এমন কিছু তারামণ্ডলীর পরিচয় পাওয়া যায়, যাদের সঙ্গে সমুদ্রের সম্পর্ক খুব পষ্ট (যেমন হাইড্রামণ্ডলী) ব্যাবিলনীয়দের সামুদ্রিক অভিযাত্রার তেমন পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালের দিকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ক্রিট দ্বীপভিত্তিক মিনোয়ান সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এদের ব্যবসা-বাণিজ্য, সাম্রাজ্যবিস্তার সবই ছিল সমুদ্রনির্ভর। ফলে তাদের হাতে ব্যাবিলনীয় সিস্টেমটা খানিকটা বদলে নতুন কিছু দিক-নির্দেশনামূলক নক্ষত্রমণ্ডলীর বিবরণ যোগ হয়ে তারপর মিশরীয়দের হাত ঘুরে ইউডক্সাসের গোলকের মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিসের হাতে পড়ে। এখানে আসার পর নানা গ্রিক উপাখ্যান এসে ভর করে নক্ষত্রমণ্ডলীর বর্ণনায়। আর সে জন্যই মনে হয় যেন গ্রিকরাই নক্ষত্রমণ্ডলীর প্রকৃত নির্মাতা। আসলে তারা এর বিকাশ ঘটিয়েছিল মাত্র, এর আবিষ্কার ঘটেছিল আরও অনেক আগের মানুষের হাতে।
রাশিচক্রের ১২টি মণ্ডলীর উদ্ভব ঘটেছিল আরও আগে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে ব্যাবিলনের একটি ছবিতে সম্পূর্ণ রাশিচক্রের ছবি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, ওই সময়ে কালদিয়দের হাতে জ্যোতিষশাস্ত্র বিকশিত হয়। ফলে তাদের সময়ে যখন ২১ মার্চ তারিখে সূর্য মেষরাশিতে অবস্থান করত, এখন কিন্তুসেটি মীনরাশিতে। পত্রিকার রাশিচক্রে কোনো জ্যোতিষীই একথা বলেন না। কারণ, তারা সেই প্রাচীন ফসিলায়িত রাশিচক্রের কুসংস্কারেই আটকা পড়ে আছে। এখন নিশ্চয়ই জানলেন এর প্রকৃত ইতিহাস ! সুপ্রাচীন সুমেরীয়দের হাতে প্রথম তারামণ্ডলীর কল্পনা শুরু, তারপর ব্যাবিলনীয়দের হাতে এদের বিকাশ, এরপর মিনোয়ানদের হাতে এদের পরিপূর্ণতা এবং গ্রিকদের হাতে এর চূড়ান্ত পরিণতি লাভ।
আর আপনার-আমার কাছে এসে পৌঁছেছে এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের এন্ড-প্রোডাক্ট।
জোশ পোস্ট! চালায় যান 🙂
আপনার পোস্টগুলো চমৎকার ধরণের জ্ঞানগর্ভ হয়ে থাকে। এটিও বরাবরের মতই দারুণ।
জ্যাকব বর্নোভস্কীর “দ্যা এ্যাসেন্ট অব ম্যান” সিরিজটি দেখছি কিছুদিন ধরে। মোক্ষম সময়ে আপনার পোস্টটি পড়লাম!
কিছুদিন আগে পড়েছিলাম প্রাচীন মিশরীয়রা আসলে ১২টি নয় বরং ১৩টি যোডিয়াক কনস্টেলেশন সম্পর্কে জানতো। ক্লডিয়াস টলেমির ক্যাটালগে ১৩ নং কন্সটেলেশনের নাম ছিলো ওফিউকাস। তবে এর সাথে সর্পের সংশ্রব থাকায় মিশরীয়রা (তাদের ধর্মবিশ্বাসের প্রভাবে সম্ভবতঃ) তা বাদ দিয়ে দেয় – ১২ যোডিয়াক সাইনের প্রচলন করে।