জৈন ধর্ম- ভারতীয় নাস্তিক দর্শনে অহিংসার সন্ধানে
বিপ্লব পাল
নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে ধর্ম শব্দটা উচ্চারন করলে, যেকোন যুক্তিবাদি বা পর্যবেক্ষকের বা সাধারন লোকের কাছে যে চিত্রটা উঠে আসে-তা হচ্ছে প্রতিটা ধর্মেই ধর্মগ্রন্থ, ধর্মপ্রতিষ্ঠাতা, আচার বা রিচ্যুয়াল এবং পার্থনাগৃহের সন্ধান পাওয়া যাবে। জৈন ধর্মকে ওপর থেকে দেখলে, অন্য পাঁচটি ধর্ম থেকে আলাদা করা মুশকিল-বিশেষত যেহেতু জৈনরা খাদ্য, উপবাস এবং আচার আচরনের ওপর অনেক কঠিন বিধি নিষেধ আরোপ করে। কিন্ত জৈন গ্রন্থে ও ইতিহাসে ঢুকে যে জৈন দর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়, তাতে এমন এক ধর্মর ঠিকানা আছে, যার উৎপত্তি, মূল দর্শন এবং লক্ষ্য অন্য ধর্ম থেকে বিশেষ ভাবে আলাদা, আদি এবং অকৃত্রিম।
ঈশ্বরের অবিশ্বাসী বা নাস্তিকতা থেকে প্রাচীন ভারতে যে কটি ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে, তার মধ্যে জৈন ধর্মেই এথেইজিমের ( নাস্তিকতা শব্দটা এখানে ব্যাবহার করা যাবে না কারন এথেইজম শব্দটি নাস্তিকতার সুপারসেট বা অনেক ব্যাপৃত অর্থে ব্যাবহৃত) চূড়ান্ত বিকাশ বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত। জৈন ধর্মই আমার জানা একমাত্র ধর্ম, যা এথেইজিম বা নাস্তিকতার প্রথম প্রতিপাদ্য মেনে চলে। এই প্রথম প্রতিপাদ্য হচ্ছে পরম সত্যের ( এবসল্যুটিজম) অস্ত্বিত্ব নেই এবং সেই জন্যেই বহুত্ববাদই ( জৈন পরিভাষায় বহুকান্তবাদি) একমাত্র গ্রহনীয়। জৈন দর্শনের শুরুই হচ্ছে সেই পরম সত্যের অনস্তিত্ব থেকে এবং বলা হচ্ছে বাস্তববে সব সত্যই আপেক্ষিক এবং একই বাস্তবতাকে নানান আপাত সত্যদিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। বস্তুত পোষ্ট মর্ডানিজমের এই মূল সূত্রগুলি জৈন ধর্মে তথা ভারতে বহুকাল থেকেই ছিল। পাশ্চাত্য দর্শন বিংশ শতাব্দিতে যে উপলদ্ধি এবং সিদ্ধান্তে এসেছে, আদিম ভারতের নাস্তিক্য দর্শনে তার প্রায় সবটাই পাওয়া যাবে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে ঈশ্বরভিত্তিক ধর্মের অত্যাচারে ভারতীরয় নাস্তিক্য দর্শনের অনেকটাই লোপাট-তবুও যেটুকু টিকে আছে, তার অধিকাংশই পাওয়া যাবে জৈন ধর্মের মধ্যে।
পৃথিবীতে জৈন ধর্ম বাদ দিয়ে সব ধর্মই ঈশ্বর, আল্লা, কৃষ্ণ বা কোন না কোন ( যেমন বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর না থাকলেও দুঃখ এবং দুর্দশার চার পরম সত্য আছে) পরম সত্যর ওপর দাঁড়িয়ে যা সেই ধর্মগুলির সেন্ট্রাল ক্যানন বা কেন্দ্রীয় আইনের কাজ করে। এর কারন হচ্ছে, সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে-সব ধর্মর জন্ম হয়েছে কোন না কোন ঐতিহাসিক সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজনে যার সেলফ অর্গানাইজেশন বা বিপ্লবের সংগঠনের জন্যে এই ধরনের পরম সত্যর ধারনা লোকেদের মধ্যে ঢোকাতে হত। এই স্থানেই জৈন ধর্ম আলাদা। কোন ধর্ম ঠিক ঠাক বুঝতে গেলে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে সেই ধর্মের উৎপত্তিকে বোঝা-সমসাময়িক ইতিহাসকে বোঝা। এটা বুঝলে বোঝা যাবে জৈন ধর্ম কেন আলাদা।
কেন আলাদা, সেটা ভারতের ইতিহাস থেকে বোঝা সম্ভব। আমাদের ইতিহাসে পড়ানো হত জৈন ধর্ম ভারতে ব্রাহ্মন্যবাদের প্রতিবাদে সংগঠিত সানাজিক বিপ্লব যা মহাভীর দ্বারা স্থাপিত। আমিও জৈনধর্ম নিয়ে ওপর ওপর জেনে এটাই মনে করতাম। এটা সম্পূর্ন ভুল। জৈন ধর্মের ইতিহাস সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং, অজ্ঞাত এবং অন্য ধর্ম থেকে সম্পূর্ন আলাদা। জৈনধর্মে ২৪ জন তীর্থঙ্কর বা গুরুর সন্ধান আছে বটে-কিন্ত বুদ্ধ বা মহম্মদ এর ন্যায় এরা কেওই ধর্মএর প্রতিষ্ঠাতা নন। এরা ছিলেন ধর্মের সংকলক এবং আদর্শ অনুসারী যাদের আচরন দেখে জৈনরা নিজেদের দর্শন ঠিক করে। ২৩ তম তীর্থঙ্কর বা পর্শভা প্রথম ঐতিহাসিক জৈন ধর্মগুরু যার সময়কাল ৮শ খৃষ্টপূর্বাব্দ। কিন্ত হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোর খনন কার্য্য থেকে যে আদি ভারতীয় ধর্ম উঠে আসে, তা সম্পূর্ন অষ্ঠাঙ্গিক যোগ নির্ভর ছিল। ঐতিহাসিক হেনরি মিলার এবং জন মার্শাল মহেঞ্জোদারোর যোগী মূর্তিগুলির ওপর গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে এগুলি জৈন ধর্মের কায়সর্গর ( একটি বিশেষ যোগভংগী যা জৈনরা অনুসরণ করে) পূর্বসূরী। একাধিক ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তে এসেছন এই ব্যাপারে। মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ধর্ম জৈন ধর্মের আদিরূপ। এবং হরপ্পা মহেঞ্জাদারোর ধর্মই আজ অব্দি টিকে গেছে জৈন ধর্মের মধ্যে দিয়ে।
এবং জৈনরাও সেটাই বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্ম সম্পূর্ন “ন্যাচারিলিস্টিক ধর্ম” যা মানব বিবর্তনের পথে প্রথম ধর্ম বা মানুষের আদি ধর্ম। ঐতিহাসিক এবং সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই ধারনার যথেষ্ট ভিত্তি আছে। এর কারন জৈন ধর্মের মূল নীতিগুলি কোন বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িত না যা অন্য সব ধর্মের জন্যেই সত্য। যেমন ভাগবত গীতার জন্ম মহাভারতের যুদ্ধ-কোরানের জন্মে মহম্মদের ইতিহাসের সাথে সম্পূর্ন ভাবে যুক্ত। জৈন দর্শন কি সে ব্যাপারে পরে আসছি-তার আগে এটা বোঝা যাক যে কি ভাবে হোমো ইরেক্টাস থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাবের সাথে সাথে “সামাজিক রিচ্যুয়াল বা আচার আচরনের জন্ম হয়েছে ( রিচ্যুয়াল অবশ্য হোমিনিড দের অন্যান্য স্পেসিসদের মধ্যেও ছিল যারা হোমোস্যাপিয়েন্সের সমসাময়িক ভাবে পৃথিবীতে কিছুদিন ছিল)। হোমো স্যাপিয়েন্সদের গত ২০০,০০০ বছরের ইতিহাস বিতর্কিত এবং অষ্পষ্ট। তবে যেসব ব্যাপারে একমত হওয়া যেতে পারি আমরাঃ
[১] হোমো স্যাপিয়েন্সদয়ের আবির্ভাবের সাথে সাথে সামাজিক তথা গোষ্ঠি আচরন সুস্পষ্ট রূপ নেয় ৭০,০০০ বছর আগে থেকে।
[২] হোমো স্যাপিয়েন্সরা পৃথিবীর যেখানেই গেছে, ১০,০০০ বছরের মধ্যে সেই স্থানে বন এবং ৯০% প্রানীকূল ধ্বংশ করেছে-কারন এরা ছিল সব থেকে কৌশলী শিকারি
[৩] এদের মধ্যে আদিতে আচারের অস্তিত্ব ছিল-কিন্ত কোন গুহাচিত্রেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ এদের আদি আচারন-যা ধর্মের মতন একটা গোষ্ঠি মানতে বাধ্যছিল-তা একধরনের নাস্তিক ধর্ম হতে বাধ্য। কারন হোমো স্যাপিয়েন্স দের গুহাচিত্রে পশুপাখী ব্যাতিত আর কোন ঈশ্বর জাতীয় এবস্ট্রাকশ্ নের অস্তিত্ব নেই। সুতরাং ভারতে তথা গোটা পৃথিবীতেই ঈশ্বর ভিত্তিক ধর্মের পূর্বসূরী ছিল নাস্তিকতা বা ঈশ্বর বর্জিত সম্পূর্ন একধরনের দর্শন নির্ভর ধর্ম যা প্রকৃতি, প্রানী এবং পরিবেশের সার্বিক মঙ্গলকামনা থেকে উদ্ভুত। কারন এমনটা না করলে সেকালে সীমিত খাদ্য এবং প্রানীকূলের ধ্বংশ, মানব সভ্যতার অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করত। বিবর্তনের প্রয়োজনে মানব সভ্যতায় জৈন ধর্মের মতন নাস্তিক অথচ অহিংস এবং ত্যাগী ( বা ব্রতবদ্ধ-অর্থাৎ মানব ও প্রাণীকূলের স্বার্থ রক্ষায় আমি এই এই কাজ করব না) ধর্মের উৎপত্তি ঈশ্বর ভিত্তিক ধর্মের অনেক আগে আসার কথা। এবং জৈন ধর্মের মধ্যে আমরা সেটাই দেখি।
আমার উপোরোক্ত ধারনা আরো বদ্ধমূল এই জন্যে যে গোটা জৈন ধর্মে ঈশ্বর কি, তিনি আছেন কি নেই এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে নেই কোন স্রষ্ট্রার ধারনাও। যেখানে বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধ বারংবার ঈশ্বর আছেন কি নেই-এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন এবং তার উত্তর ছিল ঈশ্বর অপ্রাঙ্গিক হাইপোথিসিস। কিন্ত জৈন ধর্ম নিয়ে পড়লেই বোঝা যায় এই ধর্মের উৎপত্তি প্রাক-ঈশ্বর যুগে -যখন, বিবর্তনের পথে ঈশ্বর মানবসভ্যতায় অজ্ঞাত। এবং মানব সভ্যতাকে বাঁচানোর জন্যে, সভ্য মানুষের প্রতিষ্ঠার জন্যে এদের ধাপগুলি অসম্ভব যৌত্বিক । তা বিশ্বাসের ওপর না বরং দার্শনিক যুক্তি ও তৎকালীন জ্ঞান বিজ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধর্মের প্রধান উপপাদ্য- মানুষের প্রকৃতি-অর্থাৎ মানুষকে, নিজেকে জানা এবং নিজের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ককে জানা। এবং এই মহাবিশ্বে ও বাস্তবতায় আমাদের অবস্থান থেকে, সবার মঙ্গল কামনায় কিছু আচার আচরনের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করা।
অনেকেরই ধারনা ঈশ্বর তথা ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস নৈতিকতার মূল উৎস। নাস্তিকতা মানে নৈতিকতা উচ্ছন্নে যাবে। এই ধারনা ভাঙার সব থেকে ভাল উপায় জৈন ধর্ম অধ্যয়ন-এটি সম্পূর্ন ঈশ্বর এবং পরম সত্য বর্জিত দর্শন । এই দুইকে বর্জন করেই ( কারন তখনও বিবর্তনের পথে আজকের ঈশ্বর এবং ধর্মগুলি আসে নি) জৈন ধর্মে অত্যন্ত যুক্তিবাদি একটি নৈতিক দর্শনের সৃষ্টি হয়েছে যা মানবিকতা, সততা এবং প্রেমে অন্য ধর্মগুলির অনেক ওপরেই থাকবে। এবং যদি ধর্মে অমানবিকতা, অত্যাচারের ইতিহাস দেখা যায়, তাহলে একমাত্র জৈন ধর্মই সেই দাবি করতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস কখনোই হিংসায় রাঙা হয় নি। কোন রক্তপাত ঘটে নি। নৈতিকতার ঐতিহাসিক, বাস্তব এবং তাত্বিক মানদন্ডে এই নাস্তিক পরম সত্য বর্জিত ধর্ম তুলনাহীন। অন্য ধর্মের ইতিহাস যেখানে ক্ষমতা এবং ধর্মীয় আধিপত্যবাদের রঙে রাঙা-জৈন ধর্মের ইতিহাস ত্যাগের উদাহরণে সমুজ্জ্বল। যারা ঈশ্বর ভিত্তিক ধর্মকে নৈতিকতার উৎস বলে মনে করেন, তাদের ভুল ভাঙার প্রকৃষ্ট উপায় জৈন ধর্ম।
এবার আমি সংক্ষেপে জৈন ধর্মের মূল জীবন দর্শন আমার নিজের উপলদ্ধি থেকেই ব্যাখ্যা করব।
জৈন ধর্মের চারটি স্তম্ভ। অর্থাৎ জৈন ধর্মের অনুসারীরা এই চারটি মূল জীবন দর্শনকে জৈন আচরনের ভিত্তি বলে জানেনঃ
অহিংসাঃ জৈন ধর্মের মূল নীতি অহিংসা। কাওকে কোন ভাবে দৈহিক বা মানসিক ভাবে আঘাত করা যাবে না। এবং তা পশুপাখী উদ্ভিদ সবার ওপরই । নিজে বাঁচার জন্যে অন্যের মৃত্যু, অন্য প্রাণের মৃত্যু-এই ধর্মে স্বীকৃত না। হিন্দু এবং ইসলামের সাথে এখানেই জৈন ধর্মের বিরাট পার্থক্য। অনেকে প্রশ্ন করবেন, তাহলে আত্মরক্ষার জন্যে হিংসা কেন স্বীকৃত না? এর মূলকারন জৈন ধর্মে মানুষকে প্রকৃতি থেকে আলাদা করে দেখা হয় না। সে প্রকৃতির অংশ। তার মৃত্যু-জীবনের পরম নিয়তি, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া এবং সেই পরম নিয়তিকে দুদিন দূরে পাঠানোর জন্যে হিংসার কোন জাস্টিফিকেশন নেই। বরং অহিংসার জন্যে নিজের প্রাণত্যাগ সমাজের পক্ষে অনেক বেশী মঙ্গলকর।
এই নীতির অবাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। কিন্ত বাস্তবত এটাই যে হিন্দু, খ্রীষ্ঠান বা মুসলমানরা মানব সভ্যতাকে এই ধর্ম যুদ্ধ, ক্রসেড বা জিহাদে নামে এক সম্পূর্ন অমানবিক এবং অস্থিতিশীল রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন। আজকের সভ্যতা অনেকটাই বৃটিশ ইউলেটেইয়ান দার্শনিকগণের অবদান কারন আমাদের সভ্য আইনগুলি সেখান থেকেই এসেছে যা ধর্মীয় আইন থেকে মানুষকে অনেকটাই মুক্ত করেছে। ইউলেটেরিয়ান আইনগুলির সাথে জৈন ধর্মের অনেক মিল আছে।
সততাঃ
জৈন ধর্মের দ্বিতীয় পিলার সততা। জৈন মতে একজন পুত্র যেমন মাকে বিশ্বাস করতে পারে, মানুষের সততা সেই পর্যায়ের হওয়া উচিৎ যাতে তোমাকে সবাই মায়ের মতন বিশ্বাস করবে। আর যদি সততার জন্যে হিংসার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকে, জৈন নীতি অনুযায়ী নির্বাক থাকায় শ্রেয়।
লোক ঠকানো যাবে নাঃ
জৈন ধর্মের নির্দেশ ঃ
১। -কারুর আর্থিক বা অন্য দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা, চুরির সমান
২. কেও স্বেচ্ছায় দিলেই-তবেই তা গ্রহণ করবে। বলপূর্বক বা ছলপূর্বক কিছু নেওয়া নিশিদ্ধ। এখানে হিন্দু বা ইসলামের সাথে বিরাট পার্থক্য। এই দুই ধর্মেই ধর্মের জন্যে বল বা ছল প্রয়োগ স্বীকৃত।
৩। , লাভ করা যাবে না।
৪. চুরি করা বস্তু বা যে লাভ অনৈতিক কাজ থেকে আগত, তা গ্রহণযোগ্য না।
ভারতে পার্শীদের ছারা জৈনরাই সব থেকে বড় ব্যাবসায়ী। এর মূল কারন এই নীতিগুলির জন্যে জৈন ব্যাবসায়ীরা সব থেকে বেশী বিশ্বাসযোগ্য। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা, সফল সৎ ব্যাবসায়ী হওয়ার প্রথম ধাপ।
ব্রহ্মচর্য্য
জৈন ধর্মে স্ত্রী ছারা আর কারুর সাথে সহবাস স্বীকৃত না। তবে জৈন ধর্মের মূলনীতি এক্ষেত্রে হচ্ছে, যা কিছু নেশার বস্তু, যা কিছু আসক্তির জন্ম দেয়, তার সব কিছুই পরিত্যাগ করতে হবে। আসক্তি থেকে মুক্তি, তা মদ্যপান থেকে ভাল খাবার অনেক কিছুই হতে পারে –তা পরম কাম্য। ফলে এই ধর্মে মদ্যপান, নেশাভাং সম্পূর্ন নিশিদ্ধ।
অপরিগ্রহঃ
বিষয় সম্পত্তি, অর্থ, গৃহ, গাড়ী-বাড়ি, পোশাক-ইত্যাদির ওপর আমিত্ব কমাতে হবে। আমার সম্পত্তি, আমার বাড়ি, আমার লেখা, আমার কৃতিত্ব-ইত্যাদি বিজাতীয় বন্ধন এবং আসক্তি ভ্রুম-এই ধরনের ভুল ধারনা মানুষের অহঙ্কার বাড়ায় এবং বিপথে পরিচালিত করে। আজ যে সম্পত্তি আছে, কাল নাও থাকতে পারে। সুতরাং এই সব কিছুর ওপর থেকে নিজের স্বামীত্ব বা অধিকারিত্বসুলভ মনোভাব থেকে মুক্তি পেতে হবে। সম্পত্তি থাকা অন্যায় না-কিন্ত সম্পত্তির ওপর আসক্তি একধরনের মানসিক ভ্রুম।
এবার আসব জৈন ধর্মে পুনঃজন্ম এবং আত্মার অস্তিত্ব প্রসঙ্গে। এগুলি জৈন ধর্মের ভিত্তি কারন আদর্শ জৈন আচরনের মূল লক্ষ্য মোক্ষ। যাতে আর আবার জন্মাতে না হয়। এবং যেহেতু যুক্তিবাদি সমাজে এগুলি গ্রহণযোগ্য জ্ঞান না সেহেতু ঐতিহাসিক, সামাজিক দৃষ্টিতে আমরা জানব বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে এই পুনঃজন্ম এবং আত্মা নামক দার্শনিক বস্তুটির উৎপত্তিস্থল কি?
হোমো স্যাপিয়েন্স দের আদিম গুহাচিত্র ও ফসিল থেকে এটা পরিস্কার, যে মৃত্যুর জন্যে বা মৃতকে সমাধিস্থ করার জন্যে আচার আচরনের মূলভিত্তি এই মানব বিশ্বাস যে মৃত্যুর পর জীবন আছে। মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস-মানব সভ্যতায় ঈশ্বরের জন্মের আগে এসেছে। স্বর্গের সাথে যেহেতু ঈশ্বরের ধারনা সংপৃক্ত,এটা অনুমান করা শক্ত না, যে ঈশ্বরের ধারনার জন্মের আগে, হোমো স্যাপিয়েন্সরা যেসব রিচুয়াল করত, তার উদ্দেশ্য ছিল পরের জন্ম বা পুঃনজন্ম। স্বর্গলাভ না। কারন ঈশ্বরের ধারনা যেহেতু তাদের মধ্যে ছিল না-স্বর্গের ধারনাও থাকতে পারে না। সুতরাং প্রাক-ঈশ্বর পর্বে ধর্ম ও রিচ্যুয়ালের ভিত্তিই ছিল পুঃনজন্মে বিশ্বাস। জৈন ধর্মের মতন প্রাক ঐশ্বরিক ধর্ম -তাই পুনঃজন্মের ধারনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এবং বৌদ্ধ ধর্ম মূলত জৈন ধর্ম থেকেই এই ধারনাটি গ্রহণ করে।
কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে হোমো স্যাপিয়েন্স দের আচরনে কেনই বা মৃত্যুর পর বাঁচার বিশ্বাসের জন্ম নিল? মনে রাখতে হবে বিবর্তনের পথে, মানব সভ্যতায় সব বিশ্বাসের আগমন হয়েছে মানুষের বেঁচে থাকার সারভাইভাল স্ট্রাটেজিকে উন্নত করতে। জীবনের উদ্দেশ্য যেহেতু বিজ্ঞান বা যুক্তিবাদ দিয়ে বার করা সম্ভব না এবং এটি একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন- সেহেতু এটা অনুমান করা যায় যে শুধু একজন্মে বিশ্বাস মানুষের মনে হতাশার এবং উদ্দেশ্যহীনতার জন্ম দিতে সক্ষম। যা থেকে মানুষ উদ্দেশ্যহীনতায় ভুগে ভোগবাদি আসক্তিতে ডুবে যেতে পারত যা তৎকালীন সমাজের সারভাইভালের জন্যে কাম্য ছিল না। যা আধুনিক সমাজের স্থিতিশীলতার জন্যেও কাম্য না। সুতরাং জৈন ধর্ম থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, এই ধরনের বিশ্বাস হোমোস্যাপিয়েন্সদয়ের মধ্যে আরো স্থিতিশীল সমাজের জন্ম দিচ্ছিল-তাই এই পুনঃজন্মে বিশ্বাসটিকে কেন্দ্রকরেই প্রথম সামাজিক নৈতিকতা এবং ধর্মীয় আচার আচরনের জন্ম হয়।
সেকালে যেখানে ধর্মের উদ্দেশ্যই ছিল মানব সমাজে শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা, এটা বোঝা শক্ত না, ঈশ্বরপূর্ব যুগে, যখন ঈশ্বরের রক্তচক্ষু এবং পাপের জন্ম হয় নি, পুনঃজন্মের আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নৈতিকতার ভিত স্থাপন করা ছিল একমাত্র পথ। সেটাই জৈন ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্ম করে থাকে।
এবার আত্মার প্রশ্নে আশা যাক। পুনঃজন্ম মানেই একটা আত্মার ধারনাকে স্বীকার করে নিতে হয়, যা বার বার জন্মাচ্ছে। এটাও আসছে সেই আগের কারনটা থেকেই। এগুলি অবিচ্ছেদ্দ্য ধারনা।
জৈন ধর্ম নিয়ে, আরো বেশী কিছু লিখতে পারলে, ভাল লাগত। কিন্ত যেটুকু নিজের দৃষ্টিতে বুঝেছি, সেটুকুই লিখলাম। এই জন্যেই লিখলাম, যে জৈন ধর্মকে বোঝার মাধ্যমে প্রাক-ঐশ্বরিক ধর্মকে বোঝা সম্ভব। ধর্মের বিবর্তন বোঝা সম্ভব। ঈশ্বরের জন্মের আগে যে ধর্মর অস্তিত্ব ছিল সেটা বোঝা যায়। এবং সে নাস্তিক ধর্মদর্শন যে ঈশ্বরভিত্তিক ধর্মর থেকে উন্নত ছিল, সেটাও আমরা দেখছি। জৈন ধর্ম মানব সভ্যতার সম্ভবত আদি্মতম এবং আধুনিকতম ধর্ম যার দর্শন সম্পূর্ন ভাবেই ঈশ্বর বর্জিত, শাশ্বত ও চির আধুনিক।
এবার সংক্ষিপ্ত কথা দিয়েই আপনার মতকে খন্ডন করি, জৈন মত অনুযায়ী আপনাদের দাবি মানুষ দুদিন আগেও মরতে পারে দুদিন পরেও, তার জন্য হিংসা না করে এখন মরলেই হয়।
এভাবে দেখতে গেলে আপনারা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে অমানবিক বলছেন। তার মানে তো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধটাও করা উচিৎ হয়নি। যখন অন্যায় অবিচারে মানুষ বাঁচার ঠাাই পাইনি। চোখের সামনে মা বোনকে ধর্ষন করা হতো। তখন যুদ্ধ না করে,গান্ধি নীতির মতো যেটা হচ্ছে সেটা হতে দেওয়াটাই কি উচিৎ?
আর দ্বিতীয় কথা হলো, মহাভারতের যুদ্ধ তো শুনেছেন কিন্তু কেন হয়েছে এটা শুনেছেন? মহাভারতে পান্ডবরা বহুবার শুধু প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে যুদ্ধ করার ইচ্ছে পোষন করছিলো, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ প্রত্যোকবার তাদের বুঝিয়েছিলো যে, প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নিজের স্বার্থে যুদ্ধ নয়, পুরো ভারতবর্ষের জনগন যাতে ন্যায়সঙ্গত রাজ্যে বাস করতে পারে, ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে দূর্যোধনের মতো নারীদের হেয়কারী, না হয়, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করতে বলেছিলেন। আর আপনি হয়তো হিন্দু ধর্ম নিয়ে সামান্যও ধারণা নেয়,।নাহলে আপনি বলতেন না এটা নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রাদায়িক মত। কারণ, যে গীতা, মহাভারত, বেদ, উপনিষদ হিন্দুরা জ্ঞান হিসেবে মানে সেখানে নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রাদায় বা হিন্দু শব্দের চিন্হও নেই। আমাদেরকে হিন্দু বলে আমরা চিন্হিত করিনি, এই চিন্হিত করেছিলো বহির্শত্রুরা ভারতে প্রবেশের সময়। তারাই আমাদের সংস্কৃতিকে আলাদা করে নাম দেয় হিন্দু। আর সনাতন ধর্মেও বেদে আছে ঈশ্বর অর্থাৎ পরমসত্য যা যোগ বা ধ্যানে অনুভব করা যায়। ব্রাহ্মন্যবাদ বিকৃত মতবাদ৷ কিন্তু বৈদান্তিক দর্শন মূলত যোগ ও ধ্যানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। যা প্রাচীন ঋষিদের আবিষ্কার। আর সনাতন ধর্মে ব্রহ্মচর্য, অপরিগ্রহ৷ পরদ্রব্যকে মাঠির ঢেলা মেনে চলা। অহিংসা পরম ধর্ম ধর্মহিংসা তদৈব চ বলা হয়। মানে, অহিংসা পরম ধর্ম ঠিক, তবে ন্যায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয়ও নিতে হয়।
আর কোনো প্রাণীকেই হিংসা না করে হত্যা না করে জৈনরা জীবনে চলতো, এটা কতটা যৌক্তিক থিওরি? বৃক্ষেও প্রাণ আছে। তাহলে তারা ঠিক কি খেয়ে চলত? জল খেয়ে? আর হাতে হাত ঘষলেই তো লাখো লাখো জীবানু মারা যায়। যদি মানুষ অহিংসা করবেনা মেনে, নিজের হাতও না ধুয়ে চলে, হাতে জীবানু নিয়ে তাহলে তো করোনার মতো জীবনুগুলো তাকেই হত্যা করবে? এর অর্থ হলো, নিজের প্রাণ দিবো তবুও জীবানু রক্ষা করে মহান হতে হবে?, হাস্যকর। তাহলে তো আজকের এই আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার দরকার নেই ভাই। না খেয়ে বসে থাকুন, শুধু শুধু নিজের জন্য একটা বৃক্ষের প্রাণ নিবেন কেন?
মজার ব্যাপার হলো মানুষের আদি ধর্মীয় চিন্তন নিসন্দেহে প্রকৃতিবাদী ও দেবমূলক। সে চিন্তা সরল ও ভাষাগত বিবেচনায় ধোয়াঁশা পূর্ণ। প্রাচীন সভ্যতার সামঞ্জস্য, অন্যান্য ধর্মে ও ইতিহাসে প্রাপ্ত প্রমাণ ও সামাজিক অবস্থার নিরিখে ভাবলে হিন্দু ধর্মের আদিরূপই প্রাচীন ধর্ম বলে জ্ঞান হয়। আর মহেঞ্জোদারোর মূর্তি যে জৈন চিন্তার নাকি পশুপতি/ রুদ্রের তা প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিতর্কের বিষয়। এর উপর দাঁড়িয়ে জৈন চিন্তাকে ভারতের ধর্ম চিন্তার আদিরুপ ভাবা হাস্যকর ঠেকে।
লেখা ও মন্তব্যগুলো থেকে অনেক কিছুই শিক্ষনীয় আছে, সন্দেহ নাই। শুরুতে বিপ্লব দা–তানভীর হানিফের তর্ক-বিতর্ক ভালোই লাগছিলো, কিন্তু শেষে এর পরিনতি লেবুর দশায় তিতকুটে স্বাদের হওয়ায় বেশ খানিকটা বিরক্ত হয়েছি।
যা হোক। বিপ্লবদা’র কাছে আমার ছোট্ট দুটি প্রশ্ন:
এবং
কিন্তু গৌতম বুদ্ধ আদৌ কী ঈশ্বরের অস্তিত্ব তথা স্বর্গ-নরকের কথা বলেছেন [লক্ষ্যনীয়, দুঃখ এবং দুর্দশার চার পরম সত্য– কিন্তু ঈশ্বর ধারণাটির সমর্থক নয়] ? নাকি এ বিষয়ে তিনি বরাবরই নিরব থেকেছেন?
জৈন — প্রায় অজানা একটি ধর্মচিন্তার নানান দিকে আলোকপাত করায় আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
ধর্মপাদ লক্ষ্যনীয় ভাবেই ঈশ্বর এবং স্বর্গ নিয়ে নীরব। মনে রাখতে হবে ঈশ্বর এবং স্বর্গ এই দুটী ভিন্ন নয়-অভিন্ন মিথ। যে ধর্মে ঈশ্বর নেই, সেই ধর্মে স্বর্গও নেই। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে সেই স্থলে আসে পুনঃজন্ম।
কিন্ত বুদ্ধে জীবনীতে ঈশ্বর সংক্রান্ত যেসব উত্তর পাওয়া যায় তার মূল নির্যাস হচ্ছে একটি অতিরিক্ত হাইপোথিসি বা মিথ আমাদের জীবনের জন্যে অপ্রয়োজনীয়।
@বিপ্লব পাল,
ঈশ্বর শব্দের মানে কি? ভগবান মানে কি? তীর্থ এবং সতীর্থ ব্যাখ্যা কি? অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না। প্রশ্নগুলো করছি; কলিম খানের ক্রিয়া ভিত্তিক শব্দার্থের জগতে চোখ রাখতে গিয়ে।
সময় পেলে চোখ বুলাতে পারেন। একমত না হয়েও আমি তাঁদের লেখার মুগ্ধ পাঠক।
@স্বপন মাঝি,
কলিম খান লিঙ্গুইস্টিকে আটকিয়ে। কি লাভ? ঈশ্বরের অর্থ অধিকাংশ ধর্মেই যিনি জগৎ সংসারের স্রষ্ট্রআ। সেই সংজ্ঞাতেই চলুক।
@বিপ্লব পাল
আপনার কথা অনুযায়ী ধরতে গেলে, বেদেও তো স্বর্গ নরক নেই, পূনর্জন্মের কথা আছে। দ্বিতীয়ত, বৈদিক দর্শনে স্বর্গ দ্বারা দেহতন্ত্রের আনন্দ ও ঊর্ধ্বগতিকে নির্দেশ করেছে। আর বেদে স্পষ্ট পূণর্জন্মের কথাই আছে। মোক্ষের কথা তো বাদই দিলাম। আর দ্বিতীয় কথা হলো, বৈদিক সিদ্ধান্তে ঈশ্বরকে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক আধার হিসেবেই দেখা হয়েছে কোনো, ধরতে গেলে সৃষ্টি বা এই প্রকৃতিই নিজের ঈশ্বর এটাই বৈদিক দর্শনের মূলকথা। কারণ, এখানে বলা হয় সর্বম্ খলিদ্বং ব্রহ্ম। সবকিছুই ব্রহ্ম, সমগ্র সৃষ্টিকেই ঈশ্বরতুল্য দেখার কথা আছে। আর এটা সামাজিকভাবেও প্রাসঙ্গিক। আর যদি স্বর্গ নরকের কথা ঠেনে পুরানের কথা বলেন৷ তাহলে বৈদিক সিদ্ধান্তেই এর সমাধান আছে, বেদ ও স্মৃতির মধ্যে বিরোধ হলে বেদই গ্রহণযোগ্য। মানে বেদের কথা পুরাণাদি স্মৃতিরও আগে। কারণ, পুরাণগুলো কাহিনির আধারে বাস্তব শিক্ষার একটি প্রসেস,কিন্তু বেদ আর উপনিষদ হলো ধ্যানে অর্জিত জ্ঞান যা জীবনের মূল দর্শন ও বিজ্ঞান।
@বিপ্লব, লেখাটা বেশ ভাল লেগেছে। আপনার সাথে আলাপ করার ইচ্ছা রইল। ফেবুতে আছেন নাকি?
@ধ্রুবজ্যোতি পাঠক,
আছি। আমার ঠিকানাঃ
http://www.facebook.com/biplab.pal
জৈন ধর্ম নিয়ে চমৎকার আলোচনার সূত্রপাত। মূল লেখার সাথে মন্তব্য পড়ে বেশি লাভবান হলাম।
অহিংসা, সততা,ব্রহ্মচর্্যপ আর অপরিগ্রহ এ চারটি কর্ম বেশির ভাগ লোকের মাথায়, মগজে,হৃদয়ে ও কার্যকলাপে থাকলে পৃথিবী আরও সুন্দরতর হত। তবে বৌদ্ধ ধর্মের দুঃখ এবং দুর্দশার চার পরম সত্যও পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে সহযোগী।
বিভিন্ন ধর্ম সামাজিক যে অরাজকতা থেকে মানব জাতিকে মুক্তি দিতে আবির্ভাব সে সব ধর্মই এখন মানব জাতিকে অরাজকতায় ফেলছে।
যাহোক, লেখকের সাথে আলোচক তানভীর হানিফ ও অভিজিৎ রায়কেও ধন্যবাদ।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ। সমস্যা হচ্ছে বস্তুবাদিরা অপরিগ্রহ, ব্রহ্মচর্য, অহিংসাকে ভাববাদি বলে উড়িয়ে দেয়। এবং শেষে তাদের জীবনেও পড়ে থাকে শুন্য। কমিনিউস্টরা এর বড় উদাহরণ-মুক্তমনারা যদি কমিনিউস্টদের পথে হাঁটে, তারাও সেই দিকেই যাবে।
অথচ জৈনরা ভারতে এবং ভারতের বাইরে সব থেকে বেশী ধনী এবং শিক্ষিত কমিউনিটি। ভারতের মোটে 0.5% জৈন ভারতে যত চ্যারিটি কাজ হয় তার ৪০% এর টাকা দেয়। আমি বহু উচ্চশিক্ষিত শিল্পপতি বা ব্যাবসায়ী জৈনকে চিনি যার অতি সাধারন মানুষের মতন জীবন জাপন করে-বাচন এবং জীবনে অসম্ভব অহিংস।
আমি বলছি না মুসলমান বা হিন্দুদের মধ্যে এমন মহানুভব লোক নেই। অবশ্যই আছে। আমি বেশ কিছু অসাধারন মুসলমানের ও সান্নিধ্যে এসেছি যারা ধার্মিক এবং লোক হিসাবে অনেক উচ্চেই থাকবে। কিন্ত তারা এইসব ধর্মে ব্যাতিক্রম-যেখানে এমন মহানুভব লোকেরা জৈন ধর্মে নিয়ম।
আসলে জানেন, ইসলামিক সমাজে বড় হওয়ায় ধর্ম মানেই এবসল্যুউটিজম এর ভূত আপনার মাথা থেকে যায় নি :))
জ্বি না ভাই। আপনাকেতো তালগাছটি দিয়েই দিয়েচি। এতক্ষণে আমি কেন–আর কারও মাথায় ভুত-প্রেত
যাকিছুই থাকনা কেন–নিশ্চিৎ নেমে গেচে।
যার ইচ্ছা হবে করবে, যার ইচ্ছা হবে করবে না।
জ্বি হ্যাঁ। এই ফরমুলা খাটালে জৈন-নাৎসীর অনস্তিত্বও পরম সত্য হবেনা।
@বিপ্লব পাল,
যুক্তিবিদ্যাকে কোন পর্যায়ে নামাতে হয়, সেটা নিজে বুঝছেন কি?
জ্বি ভাই। ঘাট হয়েচে। এখন বুঝতে পারছি।জৈন ধর্মে ডেসপারেশান থেকে আত্মহত্যা করা নিষেধ।
যন্ত্রণা থেকে মুক্তি বা সমাজের বোঝা কমানোর জন্য এই স্বেচ্ছামৃত্যু নয়। আপনাকে আরও
একটি তালগাছ। 🙂
জৈন ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা গেল। হিংসার পৃথিবীতে যারা অহিংসা এবং শান্তির পূজারী তারা অভিনন্দনযোগ্য।এমন অনেক হিন্দু আছে যারা বর্নভেদে বিশ্বাসী নন। অনেক মুসলমান আছেন যারা অহিংসা মতবাদে দিক্ষীত।যেমন ছিলেন সীমান্তগান্ধী।এমন জৈন থাকতেই পারে যারা হিংসার আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু এসব তো হল ব্যতিক্রম। এসব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমগুলো হাইলাইট করলে তো কোন সূত্র বের করা সম্ভব নয়।তাই বিপ্লব পাল ঢালাও মন্তব্য করে কোন বড় ধরনের ভুল করে ফেলেছেন বলে তো মনে হয় না।
চড়ুই পাখীও পাখী আবার ঈগল পাখীও পাখী। দুটোই আকাশে উড়ে। তবুও তাদের মধ্যে এক ধরনের পার্থক্য আছে। সব ধর্মকে এক দাড়িপাল্লায় মাপা ঠিক নয় বলে আমার মনে হয়।
@অশোক,
এমন জৈন থাকতেই পারে যারা হিংসার আশ্রয় নিয়ে থাকে।
অসম্ভব। এখনও ভাই এটা বুঝতে পারলেন না? 😉
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ, আপনার আলোচনা ভাল লেগেছে। এই নিন তাল গাছ
[img]http://www.sunpalmtrees.com/gallery/california_fan_palm_graphic.jpg[/img]
আমি কিছু সাধারণ মন্তব্য করতে চাই বিপ্লবের মূল লেখা আর লেখার প্রতিমন্তব্য সমূহের আলোকে, সারমর্ম আকারে।
যারা যুক্তিবাদী তাদের কাছে এটা খুব সহজ যে নৈতিকতার জন্য কোন ধর্মীয় অনুশাসন বা মতবাদের প্রয়োজন হয় না। যুক্তিবাদীদের কোন ধর্মের আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সবাই যুক্তিবাদী না। অনেকে ধর্মীয় (সেটা কথিত দৈব অণুপ্রাণিত (Revealed) হোক বা দার্শনিক অণুপ্রাণিত হোক) বাণীর দ্বারাই কেবল নৈতিকতা বা অহিংসায় বিশ্বাস আনতে পারে বা প্রভাবিত হয় সেই লক্ষ্যে । এটাই বাস্তবতা। এখন যদি অ-যুক্তিবাদী কাউকে ধর্ম মানতেই হয় তাহলে যুক্তিবাদীর দৃষ্টিতে কোন ধর্ম সব থেকে বেশি প্রেফারেব্ল, সেই অ-যুক্তিবাদী অনুসারীকে অহিংস বা সহনশীল করার ব্যাপারে? এখানেই বিপ্লবের ব্লগের কিছুটা উপযোগিতা দেখছি আমি। জৈন ধর্মই প্রকাশ্যত সবচেয়ে সুস্পষ্ট ভাবে অহিংসা ও সহনশীলতা প্রচার করে।
প্রশ্ন উঠেছে অহিংসা আক্ষরিকভাবে অনুসরণ করলে তাহলে আত্মরক্ষার উপায় কি? আমার মতে আত্মরক্ষার জন্য যা কিছু করা সেটা একটা জেনেটিক ইন্সটিঙ্কট্ হিসেবে আসে। কোন চিন্তা ভাবনা করে নয় বা ধর্মীয় আদেশ বা আয়াতের কারণে নয়। ক্ষুধার্থ মৃত্যপথযাত্রী কোন মানুষ অন্য মানুষের মাংস বা মলমূত্রও খেতে পারে শেষ উপায় হিসেবে। তাই বলে কি কোন ধর্মে এই আয়াতের প্রয়োজন আছে যে “তোমরা ক্ষুধায় মারা যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছুলে বাচার জন্য প্রয়োজনে অন্য মানুষের মাংস বা মলমূত্র পেলে খাবে”?। তাই কোন ধর্মের মূল ঘোষিত বাণীতে সেটা বলার প্রয়োজন নেই। কারণ সেটা এমনিতেই আসবে। আমার মনে হয় আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ (ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠী লেভেলে) উহ্য থাকে অহিংস প্রচারকারী ধর্মের মধ্যে। বরং আগক্রমণাত্মক অহিংসা ও সহনশীলতা টাই জেনেটিক ইন্সটিঙ্কট্ হিসেবে যতটা না আসে তার চেয়ে বেশি কালচারাল কন্ডিশনিং কারণে বেশী হয়। ধর্মের বাণী/অনুশাসন একরকম কালচারাল কন্ডিশনিং বলা যায়। তাই অহিংসা ও সহনশীলতা প্রচার করা ধর্মের জন্য খুবই তাৎপর্য্যপূর্ণ এবং একটা ইতিবাচক দিক। অহিংসা ও সহনশীলতা প্রচার করে কোন ধর্ম ১০০% অহিংসা ও সহনশীলতা দূর করতে পারে না। কিন্তু একটা শক্তিশালী ডিটারেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে এবং অহিংসা ও সহনশীলতা কমিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। এই ক্রিয়াটা অনশ্যই একটা পারিসাঙ্ঘ্যিক লেভেলে হবে। কিছু অনুসারী তারপরও সহিংসতায় বা সহনশীলতায় লিপ্ত হতে পারে।
আরেকটা প্রশ্ন উঠেছে জৈন ধর্ম অহিংস হলে সহিংস জৈন রাজা কিভাবে থাকতে পারে। এটা ক্ষরবেলার ব্যাপারে বলা হয়। অশোক প্রথম জীবনে জৈন ছিলেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না, তিনি কলিঙ্গের হত্যাযজ্ঞ দেখে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়ে অহিংসায় বিশাসী হয়েছিলেন। জৈন হলে অহিংসায় বিশ্বাসী হবার জন্য বৌদ্ধ ধর্ম প্রয়ওজন কি, জৈন ধর্মই সেই একই বাণি প্রচার করছে। তাছাড়া তাঁর পিতাও জৈণ ছিলেন না। মুশকিল হল যে বিপ্লব একটা সুইপিং স্টেটমেন্ট করেছে যে “একমাত্র জৈন ধর্মই সেই দাবি করতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস কখনোই হিংসায় রাঙা হয় নি”। একটা ব্যতিক্রমই এই বাক্যকে নাকচ করে দেয়। ক্ষরবেলা কি জৈন ছিলেন? জৈন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু প্র্যাক্টিসিং জৈন অবশ্যই নয়। প্র্যাক্টিসিং জৈন হতে হলে যে চারটা স্তম্ভ মেনে চলতে হবে (বা পাঁচটা) তাতে রাজা আর জৈণ হওয়া একইসাথে সম্ভব নয়। যাই হোক ক্ষরবেলা জৈন বলে বিবেচিত হলেও তাতে জৈন ধর্মের অহিংসতা অপ্রমাণ করে না। কারণ জৈন ধর্মের ঘোষণাই হল অহিংসা। এখানে ধর্ম কে ব্যক্তিবিশেষের কর্মকে আলাদা করে দেখা উচিত। ব্যক্তিবিশেষের কাজ যদি সেই ব্যক্তির ঘোষিত ধর্মের ঘোষিত নীতির পরিপন্থী হয় তাহলে সে তার ধর্মের বিরুদ্ধে গেছে বলে বিবেচিত হবে। তবে বিপ্লবের স্টেটমেন্টের আরেকটা সমস্যা হলে এই ধরণের স্টেটমেন্টের একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থাকে যে যেহেতু “কখনও হয়নি/ঘটেনি” তাই “কখনও হবেনা/ঘটবেনা”। যদি আবার কোনদিন কোন জৈন (সাধারণ ব্যক্তি ও হপ্তে পারে) সহিংসতায় লিপ্ত হয় তাহলে কি জৈন সহিংস ধর্ম হয়ে যাবে?
আরেকটা ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেটা হলে পরম সত্য নিয়ে। পরম সত্য (মানে সত্যের একটাই রূপ বা ভার্শান আছে এই অর্থে) কথাটায় কোন যৌক্তিক সমস্যা নেই। কিন্তু পরম সত্য নেই বলে ঘোষণা দেয়ায় একটা যৌক্তিক সমস্যা আছে (আছে বলে ঘোষণা দেয়াটা আরো অযৌক্তিক আর অবৈজ্ঞানিক) যেটা আমি আরেক মন্তব্যে তুলে ধরেছি। তবে জৈন ধর্ম যেটা বলে যে অনেকান্তবাদ বা বহুত্ববাদ যার মানে করা যায় যে বাস্তবতার শুধু একটাই সত্য রূপ আছে এটা বলা যায় না। এটা বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন মহাকর্ষের বাস্তবতার ব্যখ্যা দুভাবে করা যায়, এক হলে আইন্সটাইনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আরেকটা হল ব্রান্স্-ডিকি (Brans-Dicke Theory) তত্ত্বেরর দ্বারা। স্ট্রিং তত্ত্বেরও পাঁচটা রকমফের আছে যার প্রত্যকটাই একই বাস্তবতা ধারণ করে। কোয়ান্টাম মেক্যানিক্স নয় ভাবে ফর্মিউলেট করা যায়, তাদের প্রত্যেকটাই একই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। জৈনরা মৌলিক কিছু বলছেনা, কারণ তারা তো বিজ্ঞানের আলোকে এগুলি বলে নি। তবে এটা অবশ্যই প্রাচীন কোন ধর্মের জন্য একটা অনন্য ঘোষণা। এটাতে সহনশীলতা নিহিত আছে, সেখানেই এর মূল্য।
@অপার্থিব,
যুক্তিবাদি দের জন্যে আমি জৈন ধর্মে কোন অসুবিধাই দেখি না-কারন এই ধর্মে কোন এবসল্যুটিজম নেই। অর্থাৎ জৈন ধর্মই আমার জানা মতে একমাত্র ধর্ম যারা দাবী রাখে তাদের ধর্মের প্রতিটা স্তম্ভ ভুল হলেও হতে পারে। সুতরাং কেও যদি জন্মান্তরবাদ বা আত্মার মতন মিথগুলিতে বিশ্বাস নাও করে, অহিংস নীতি ধারন করে-সেও জৈন। এই টিভি বিতর্কে এক জৈন বিজ্ঞানীর সাথে আমেরিকান এথিস্টদের বিতর্কে তাও পরিস্কার হবেঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=viz946zJVdo
@অপার্থিব,
আসলে আমার জৈন ধর্মের অহিংস হওয়া নিয়ে কোন আপত্তি ছিলনা কখনও। আপনি আমার একেবারে প্রথম দিকের মন্তব্যগুলো দেখলেও সেটি বুঝতে পারবেন (@যাযাবর, আপনার সাথে একমত। তবে আমার এত কথা বলবার কারণটি পষ্ট হবে যদি আপনি উনার নীচের বক্তব্যটি পড়েন। তিনি খ্রীষ্টান ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মের কথাও কিন্ত বলেননি। জৈন ধর্মাবলম্বীদের তিনি সিংগল আউট করেছেন। সে বিষয়টি খেয়াল করুন।) “একমাত্র জৈন ধর্মই সেই দাবি করতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস কখনোই হিংসায় রাঙা হয় নি”। এই বাক্যটি নিয়ে আমার আপত্তি–কারণ এটি কোন বিশেষ ধর্মের কন্টেন্ট নিয়ে নয় বরং এর পালনকারীদের ইতিহাস নিয়ে একটি চূড়ান্ত অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত নির্দেশ করে। আর ক্ষড়বেল প্র্যাক্টিসিং জৈন ছিলনা যুক্তিটিও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি কারণ এই উক্তিটি কোটবদ্ধ দাবীকে কোনভাবেই ভ্যালিডিটি দেয়না। এই যুক্তি দেখিয়ে অনেকেই হালের মুসলিম সুইসাইড বোম্বার বা মধ্যযুগীয় খ্রীষ্টান ইনকুইজিটারদের পক্ষে সাফাই গায়। যীশু বা গৌতম বুদ্ধওতো অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন। তাহলে আমি যদি বলি :“একমাত্র খ্রীষ্টান ধর্মই সেই দাবি করতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস কখনোই হিংসায় রাঙা হয় নি”। অথবা খ্রীষ্টান ধর্ম নিয়ে কোন আপত্তি থাকলে না হয় বললাম:”“একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মই সেই দাবি করতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস কখনোই হিংসায় রাঙা হয় নি”। এই দাবীগুলি কি সব এক সাথে সঠিক হতে পারে?
@তানভীর হানিফ, 😀 আমি একটা জিনিষ বুঝতে অপারগ, আচ্ছা বুঝলাম যে জৈন ধর্ম হ্যাব্বি ভালু, কিন্তু this is a selling point why??? ভালু হোক আর যাই হোক ইভেঞ্চুয়ালি তো এইটা একটা ডগমাটিক, এভিডেন্সবিহীন দর্শন এবং ফ্যান্টাসি বৈ কিছু নয়, নাকি?
@আল্লাচালাইনা,
ভাই, কঠিন একটা প্রশ্ন করলেন। জৈন ধর্ম মানব সভ্যতার সম্ভবত আদি্মতম এবং আধুনিকতম ধর্ম যার দর্শন সম্পূর্ন ভাবেই ঈশ্বর বর্জিত, শাশ্বত ও চির আধুনিক। এই অমৃত বাণীর মধ্যেই হয়ত আপনার উত্তর লুকিয়ে আছে। তবে আমি যতটুকু বুঝি সেটি হল এটি ঈশ্বরের বদলে শত শতগুণ উন্নত এবং আধুনিক দেব-দেবী আর ব্যক্তিপুজার সূচনা করেছিল।পুনর্জন্ম, মূর্তিপূজা, ফুল পুজা, চন্দন পূজা, দীপ পূজা, ধূপ পূজা, গুরু পূজা আর বাম্যচজ্জ–এগুলো তো শাশ্বত এবং চির আধুনিক একটি দর্শনের পরিচয়বাহী। এটি আপনি কেন বুঝতে পারছেন না ভাই? জৈন ধর্ম ছাড়া কি আর গান্ধীজী, স্যাম হ্যারিস, ডকিন্সের জন্ম হত? মানবসমাজের বিবর্তন, রেসিপ্রোকাল আলট্রুইজম এইসব জৈন ধর্ম ছাড়া বুঝবেন কি করে? কার্ল পপারতো জৈন গুরুর কাছ থেকেই সাইন্টিফিক ফলসিফিয়েবিলিটির আইডিয়াটা মেরে দিয়েচেন। এটা কি জানেন না ভাইটি? এখন জৈনদের একটা সার্ভাইভাল স্ট্র্যাটেজি বলি এবং এটিকে কিন্ত কোনভাবেই হিংসা বলা যাবেনা: ১০০% বিশুদ্ধ এবং খাঁটি অহিংস পদ্ধতিতে না খাইয়া সুইসাইড করা। খুবই শাশ্বত এবং চির আধুনিক মনে হচ্চে–কি বলেন?
😉
@তানভীর হানিফ, বেশ মজাদার একটা কথা বলেছেন। আমি জানিনা আপনি কানিষ্কা ব্লাস্টের কথা শুনেছেন কিনা। ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের ১০ কিলোমিটার উপরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং৭৪৭ বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়। ‘প্লেনে বোমা’ এই ঘটনাটা শুনেই হয়তো যে কেউ বলে বসবে যে- নিঃসন্দেহে এটা মুসল্মানদের কাজ। হাওএভার, কাউন্টারইন্টুইটিভলি, এই বোমাটা কিন্তু মুসলিম সন্ত্রাসীরা ফাটায়নি, ফাটিয়েছে বরং শিখ সন্ত্রাসীরা। ও ইয়েস শিখ, সাধারণত মনে করা হয় বিনয়ে চোখ যাদের কিনা সর্বদা থাকবে মাটির দিকে এই আশঙ্কায় যে- না জানি তারা পা দিয়ে মাড়িয়ে হত্যা করে বসে কোন পতঙ্গ। অথচ এদেরই কিন্তু প্লেনে বোমা ফুটাতে মোর অর লেস কোন সমস্যাই হয়নি। এভিডেন্সবিহীন ডগমার মুখমন্ডলে কেনো ঝাঁটা ব্যতীত অন্য কোন কিছুর বাড়ি দেওয়া অনুচিত এই প্রশ্নের উত্তর লুক্কায়িত এই প্রপঞ্চটির মাঝখানে। বাস্তবতার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, এভিডেন্সবিহীন যে কোন ডগমা-ই, যতো সেক্সি সেক্সি কথাই বলুক না কেনো, প্রত্যেকে অভ্যন্তরে লালিত করে যে কোন মুহুর্তে সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত হবার পটেনশিয়াল। এইটা সত্য যে কোন রাজনৈতিক দর্শনের বেলাতেই, হোক সেটার নাম জৈন, হিন্দু, ইসলাম, কমিউনিজম, নাতসীজম কিংবা হোয়াটএভার।।
@আল্লাচালাইনা,
ভাই কি যে বলেন? জৈন ধর্ম ডগমা হল কি করে? আপনি কি এই বাণীটি পড়েন নি?:
জৈন ধর্ম পরম সত্য বিশ্বাস করে না- পরম বাস্তবতাতেও বিশ্বাস করে না। তারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। সেখানে ডগমার স্থানটা কোথায়? কিছুতে বিশ্বাস করলেই তা ডগমা হবে, এটাকে কি করে এক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন? আর পরম সত্য নাই এটি জপ করেতো সুবিধামতন হিংস্র হতেও খুব একটা সমস্যা নাই আর না খাইয়া সুইসাইড করতেও সমস্যা নাই। আরে ভাই, ঝাঁটা-টাটা বইলেন না–আপনার অস্তিত্বও ফলসিফাই হয়া যাইতে পারে 🙂
@তানভীর হানিফ, পরম সত্য আছে নাকি নাই সেইটা জানিনা, তবে আমার কম্পিউটারটি বাস্তবতার কিছু বিদঘুটে বিদঘুটে নিয়মকানুন, সুত্রসমাহার মেনে চলে। এই নিয়মকানুন গুলা যে সত্যি এইটা আমার মনে হয় যখন কম্পিউটারটির সুইচ টিপ দিলে আমি দেখি যে এটি চলছে, ফলশ্রুতিতে এটি দিয়ে মুক্তমনা ব্রাউস করা যাচ্ছে। ১০০ বার কম্পিউটারের সুইচ টিপলে যদি দেখা যেতো যে ৯৯ বার চলছে আর একবার ফেল মারছে, তাহলে নাহয় বলা যেতো যে খুব সম্ভবত কুলম্বের সুত্র ১০০% সঠিক নয়। জীবনের কোন উদ্দেশ্য নাই, কোন পরম বাস্তবতা নাই, শ্বেতাঙ্গ এবং পুরুষরা হ্যাব্বি খারাপ হয়, কালো চামড়া এবং এথনিক মাইনরিটির লোকেরা অনেক ভালু ইত্যাদি হাবিজাবি কথা আপনি তাদের মুখেই শুনবেন যাদের কিনা নানা ধরণের জিনিষপত্র বিক্রি করার রয়েছে আপনার কাছে। তাদের বিক্রি করতে চাওয়া পন্য হয়তোবা হোমিওপ্যাথি, ইসলাম ধর্ম, পোস্টমডার্নিজম বা জৈনধর্ম বা হোয়াটএভার। জীবনের উদ্দেশ্য নাই, পরম বাস্তবতা নাই ইত্যাদি মার্কা উক্তিগুলা ছাড়ার সুবিধা হচ্ছে এই উক্তিগুলো ১০০% গুরুত্বহীন এবং অবান্তর বিধায় এগুলো কোন এভিডেন্স দ্বারা সাস্টেইনড হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অপরপক্ষে আপনি যদি বলেন যে ২+২ খুব সম্ভবত সমান সমান ৫, একটা ক্লাস থ্রির বাচ্চাও তখন আপনার মুখের উপর বলতে পারবে যে- ভেরি ওয়েল চলো একটা খাতা কলম নিয়ে অঙ্কটা করে দেখি যে ২+২=৫ হয় নাকি। এভিডেন্সবিহীন একটি প্রপোজিশনকে সর্বাগ্রে সত্য জ্ঞান করে যদি আপনি ছোটানো শুরু করেন আপনার দার্শনিকতার ঘোড়া, সেই ঘোড়াটি যে কখনই কোন গন্তব্যে পৌছুতে যাচ্ছে না এই ব্যাপারটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
@আল্লাচালাইনা,
আমার অফিসে এক ভদ্রলোক কাজ করে। তার বউ যৌন, সরি জৈন। মোল্লাদের যেমন বিভিন্ন কাজের পেছনে হাদিস আছে, জৈনদেরও তাই মনে হয়। চরক পুজা, গুরু পুজা হেন পুজা তেন পুজা এইগুলা তো আছেই, তার উপরে আবার খাদ্যগ্রগণেও হাজার নিয়ম। সোমবারে খালি বিচি জাতীয় খাবার খেতে হবে, বুধ বারে কেবল শেকর বাকর জাতীয় – এইরকমের।
ভদ্রলোক নিজে ধর্ম কর্মে বেশি বিশ্বাস করে না। বউরে না কইয়া অফিসে মাছ মাংস ডিম পেটে চালান কইরা বাড়িতে গিয়া ভাল স্বামী সাইজা থাকে। কী আর করা জৈন মেয়ের পাল্লায় পড়ছে।
নেটে দেখলাম জৈন মেয়েরা ভং চং আচার অনুষ্ঠানে খুবই কড়া। একচুল এইদিক থেকে ঐদিক করতে চায় না। জীবনটা কেরোসিন করনের ইচ্ছা হইলে আপনে জৈন মেয়ের সাথে প্রেম করতে ট্রাই দিবার পারেন। অভিজ্ঞতা সুখের হবার কথা না। এইখানে একজনের অভিজ্ঞতা আছে।
@অভিজিৎ,
নাহ এইটা একটু বেশী রিস্ক হয়া যায়। যৌন মেয়ে বিচি জাতীয় খাবার ভক্ষণ করে সারা সোমবার পার করবে, যেচে পড়ে এতো বড়ো বিপদে আমি অবশ্যই জড়াতে যাচ্ছি না 😀 😀 😀
@অভিজিৎ,
জৈনরা গোঁড়া-অহিংস থাকার ব্যাপারে। তাই খাদ্যের ব্যাপারেও। তাদের যদি প্রানী হত্যা এবং উদ্ভিদ হত্যায় আপত্তি থাকে, সেটা অবাস্তব চেষ্টা হতে পারে-কিন্ত সমাজের জন্যে অমঙ্গল কিছু না। বরং সমাজের জন্যে দুর্ভাগ্য ত তারাই যারা প্রানী হত্যাকে ধর্মের অঙ্গ করেছে।
@বিপ্লব পাল,
উপবাসের মাধ্যমে আত্মহত্যাকে ধর্মের অঙ্গ করলে সেটা সমাজের জন্য খুব মঙ্গলজনক হয়।
@তানভীর হানিফ,
যখন সমাজকে কিছু দেওয়ার থাকে না, একজন সমাজের রিসোর্স কেন ভোগ করবে? বৃদ্ধ বয়সে সমাজের এক্সট্রা রিসোর্স টেনে জাতি বা রাষ্ট্রকে কেন পঙ্গু করা? কেনই বা অজস্র রোগ ভোগ নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকা? আমেরিকাতে একটা বুড়োকে বাঁচাতে রাষ্ট্র ফতুর হচ্ছে-আর বাচ্চাদের শিক্ষা বাজেট শুকিয়ে যাচ্ছে। কেন এই অপচয়কে আর শারীরিক কষ্টকে দীর্ঘায়িত করা? সারভাইভাল স্ট্রাটেজির জন্যে এটিত বেশ ভাল প্রথা।
আমার কোন ধর্মেই রুচি নেই। কিন্ত জৈন ধর্মের এই উপবাসের মাধ্যমে আত্মহত্যার বিষয়টি শেষ বয়সে ভেবে দেখতে পারি। আমি এই প্রথার পক্ষে শুধু ভোট না-শেষ বয়সে একটা সম্ভবতার জন্যে তুলেও রাখলাম 🙁
@বিপ্লব পাল,
খুবই ভালো লাগলো শুনে। আশা করি নিজেদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা অনুরূপ ডিসিশান নিলেও আমরা সেটি হোল হার্টেডলি এ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারব। এই রিচুয়াল সুইসাইডে বয়সের কোন রেসট্রিকশন আছে বলে জানা নাই। আর এর পেছনে যে যৌন– সরি জৈন যুক্তি কাজ করে সেটিকে আর বোগাস শিট বলে মনে হচ্চে না একেবারেই। কাজেই তরুণ পাঠকেরা এখনই এটি বিবেচনা করতে পারেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মানসিক আর শারিরিক প্রতিবন্ধিগণ সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য অনর্থক বোঝাস্বরূপ। নাৎসিদের অনুসৃত নীতি এখন আর খুব খারাপ লাগচে না। কি বলেন? জৈন ধর্মকেও আর থার্ড ক্লাস রাবিশ বলে মনে হচ্চে না। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এবং “আরও” একটি তালগাছ উপহার দিলুম। 🙂
@তানভীর হানিফ,
আসলে জানেন, ইসলামিক সমাজে বড় হওয়ায় ধর্ম মানেই এবসল্যুউটিজম এর ভূত আপনার মাথা থেকে যায় নি :)) জৈনধর্মে কোন কিছুই ধর্মীয় আইন না।
যার ইচ্ছা হবে করবে, যার ইচ্ছা হবে করবে না। বৃদ্ধ বয়সে কেও যদি বলে আমি জরার জ্বালা সহ্য করব না -তাহলে আপনি বা আমি বলার কে যে না তাকে জরার জ্বালা সহ্য করতেই হবে?
বৃদ্ধদের স্বেচ্ছামৃত্যুর সাথে নাজিজমের বাধ্যতামূলক রাষ্টীয় হত্যাকে তুলনা করতে যুক্তিবিদ্যাকে কোন পর্যায়ে নামাতে হয়, সেটা নিজে বুঝছেন কি?
@তানভীর হানিফ,
বিপ্লব-দা এই দাবী করেননি। বিপ্লব-দা বলেছেন, রেসিপ্রোকাল আলট্রুইজম যা জৈন ধর্মের অহিংস দর্শনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা প্রকৃতিতে আগেই ছিল, যেহেতু বিবর্তনের ইতিহাসে এর উপযোগিতা ছিল। মানে, বিপ্লব-দার কথাতেই নিহিত আছে যে, রেসিপ্রোকাল আলট্রুইজম প্রকৃতি থেকেও শেখা যায় চাইলে, জৈন ধর্ম স্টাডি না করেও।
আর একটা কথা, লেখাটি পড়ে কখনোই মনে হয়নি, বিপ্লবদা এই ধর্মটাকে প্রমোট করছেন। উনি শুধু মানব ইতিহাসের পরম সত্য বর্জিত একটি অসাধারণ আদিম ধর্ম বিষয়ে আলোকপাত করেছেন, উদ্দেশ্য বোধহয় আমাদের ধর্ম বিষয়ক ধ্যান-ধারনা-জ্ঞানকে পরিশীলিত করা। আমরা মাটি খুঁড়ে আদিম রাজাদের স্মৃতিচিহ্ন অনুসন্ধান করি কেন? নিশ্চয়ই তাদের বিশ্বাস ও ধর্মকে প্রমোট করতে নয়? বরং আমাদের ইতিহাসকে জানতে এবং সেই জ্ঞানের আলোকে ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ ও বিনির্মাণ করতে, তাই নয়কি? অপার্থিব ভাই খুব সুন্দর করে লিখেছেন বিপ্লবদার লেখাটার উপযোগীতা নিয়ে, যদিও কিছু নেগেটিভ পয়েন্টও তুলে ধরেছেন, যা নিয়ে আমারও দ্বিমত নেই।
তবে আপনার মন্তব্যগুলোও অসাধারণ! প্রকৃতপক্ষে, আপনার মন্তব্য বিপ্লবদার লেখার আসল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করেছে মনে হয়, মানে ধর্ম বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আর একটা কথা না বললেই নয়, ঈদের ছুটিতে আপনাদের বিতর্ক প্রাণ ভরে উপভোগ করেছি! এরকম যুক্তি-পাল্টা যুক্তির শানিত তর্কযুদ্ধ কার না ভাল লাগে? 🙂
@আল্লাচালাইনা,
জৈন ধর্ম ই একমাত্র দাবী করে যে তাদের ধর্মের সব প্রিন্সিপাল, নীতি ভুল হতে পারে। কারন তারা বাস্তবতার প্রকাশে বহু সত্যে বিশ্বাসী। এখানে ডগমা কোথায়?
আমি ত জানতাম না জেনেবুঝে জেনারাইলেজশন সদালাপে হয়-যেখানে সব নাস্তিক কমিনিউস্ট, আর সব কমিনিউস্ট নাস্তিক হয়। এই ধরনের আপদ মুক্তমনাতে ঢুললে, মুক্তমনা সদালাপ হতে বেশী দেরী হবে না :-s
@আল্লাচালাইনা,
কোন ধর্মের এভিডেন্স জিনিস টা কি?
@তানভীর হানিফ,
আমি এই বক্তব্যেই স্থির থাকছি। কারন ধর্মগ্রন্থ= সমান ধর্ম হলে, ধর্মকে ভাববাদি দৃষ্ঠিতে সমাজবিজ্ঞানের বাইরে থেকে দেখতে হয়। সেটা কোন যুক্তিনিষ্ঠ কাজের কাজ না।
জৈন ধর্ম অহিংস কি না, সেটা বুঝতে আমি জৈনদের দেখব। ইসলাম অহিংস কিনা সেটা বুঝতে আমি ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলমানদের দেখব। হিন্দুদের দেখে বুঝব, হিন্দু ধর্ম অহিংস কি না। কারন সকল ধর্মেই অহিংসাকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাতে কাজের কিছু হয় নি। একমাত্র জৈন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে হিংসার লেশ পাওয়া মুশকিল। এর কারন এই যে এই ধর্মে শুধু অহিংসা না পরম সত্যের ও অনুপস্থিতি আছে। এর ফলটা এই যে আমি যদি কোন হিন্দুকে বলি কৃষ্ণ প্লেবয়, সে ভীষন রেগে যাবে- কোন মুসলমানকে যদি বলি মহম্মদ প্লেবয় সে আমার গলা কেটে দিতে পারে-আর কোন জৈনকে যদি বলি মহাভীর ভন্ড-সে মোটেও রাগবে না। জৈন ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী তার প্রথম কাজ হবে, আমাকে আরো বেশী শ্রদ্ধা করে, বা ভালোবেসে, আঘাত না করে, সে তার কথাগুলি রাখবে। এবং তারপরে যদি আমি রাজী নাও হয় তার কথায়, তবু জৈন ধর্মের অনুসারী হিসাবে সে আমাকে কটূ কথা বলবে না-তার কাজ হবে শত্রুর প্রতিও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রাখা। এই পার্থক্য না বুঝতে পারলে, সেই সদালাপের মতন সব নাস্তিক কমিনিউস্ট গোচ্ছের অর্ধ শিক্ষিত আলোচনা চলবে। আমার মনে হয় না সেটা কোন যুক্তিবাদি ফোরামের বিশেষ গৃহশোভার কারন হবে :rotfl:
খুবই ভালো লাগলো। এভাবে যে ধর্মেই মানুষ থাকুক না কেন অহিংসার প্রসার হোক। শান্তি ফিরে আসুক।
@ অভিজিত
তাহলে অভিজিত রায়ের মতে গান্ধীর অহিংসা নীতি জৈন দের থেকে আলাদা? বেশ। আগে এই উত্তরটা খোলসা করা দরকার। মহত্মা গান্ধীর মা জৈন পরিবারের ছিলেন এবং গান্ধী ছোট বেলা থেকেই জৈন দর্শনে শিক্ষা লাভ করেছেন। যদিও তার অহিংসা নীতির ওপর বৌদ্ধ, খ্রিষ্ঠান অনেকেরই প্রভাব আছে, উনার নিজের জীবনীতেই উনি দেখিয়েছেন, কিভাবে জৈন ধর্মের অহিংস নীতির বা অহিংস প্রতিবাদের ভাষাকে উনি আধুনিক যুগের উপোযোগি করে তোলেন।
এবার দেখা যাক উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে কে চাপাচ্ছে। প্রসঙ্গ হচ্ছে গান্ধীর অহিংস নীতি-আর অভিজিত প্রথমে দেখাচ্ছে গান্ধীর অর্থনীতি
বা গান্ধীর রক্ষনশীলতা বা সতীত্ব নিয়ে পরীক্ষাঃ
আলোচনা হচ্ছে গান্ধীর অহিংস নীতি নিয়ে-সেখানে তার সেক্স এক্সপেরিমেন্ট বা অর্থনীতি টেনে লাভ কি? সেগুলো নিয়ে আমি কিছু কি লিখেছি কোন দিন? আউট অব কনটেক্সট আলোচনা করে ত লাভ নেই!
তাও গান্ধীকে আমি এই জন্যেই সমর্থন করি উনি জীবন নিয়ে পরীক্ষা করার সাহস দেখিয়েছেন। উনার অনেক পরীক্ষাই ব্যার্থ। কিন্ত অহিংস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সফল। এটা সেই ভেঞ্ছার ক্যাপিটালিস্টদের মতন ব্যাপার। ১০ টা কোম্পানিতে টাকা লাগালাম। ৯ টা ব্যার্থ হল। একটাতে টাকা উসুল। গান্ধীর জীবন ও তাই। সারা জীবনই নিজের ওপর পরীক্ষা করেছেন, একটাতেই সফল হয়েছে-সেটা হচ্ছে সত্যাগ্রহ। বাকী সব কিছু ব্যার্থ। কিন্ত সেই ব্যার্থতা দিয়ে ত গান্ধীকে আমরা পাব না। আমরা তাকে পাব তার সফল পরীক্ষা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে। এবং সেটাই এই বিতর্কের বিষয় বস্তু। উনি যেটা করেছেন, বায়োলজিতে সেটাকে রেসিপ্রোক্যাল আলট্রুইজম বলে-অর্থাৎ উদারতা দেখিয়ে, উদারতা আদায় করার প্রথা। এবং জীব জগতে এমন উদাহরন প্রচুর আছে। এই লিংকে প্রচুর পাবে পশু পাখিদের মধ্যে রেসিপ্রোকাল আলট্রুইজমের উদাহরনঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Reciprocal_altruism
সুতরাং জীব জগতে যেমন হিংসা আছে গান্ধীবাদ ও আছে। এটাই সত্য।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কোন দিকে যাবে? হিংসার দিকে না পরোপোকারের মাধ্যমে শত্রুকে জেতার দিকে? মানুষের হাতে এখন যা অস্ত্র-যদি তা হিংসার দিকে যায়, মানুষের সারভাইভালই অনিশ্চিত। নিউক্লিয়ার বোমা নিয়ে হিংসা কি বিবর্তনের কোন সারভাইভালের আলামত?
আমরা যদি ইতিহাসে হিংসার দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে হিংসার মূল কারন মানুষের ওপর আদর্শ, ধর্ম, জাতি ইত্যাদিকে স্থাপন করা।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে জীব জগতেও গান্ধীবাদ বা রেসিপ্রোক্যাল আলট্রউইজমে একটা মূল কারন হচ্ছে যখন হিংসা থেকে নিজের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। নেকরেদের মধ্যে এটা দেখা যায়। মানব সমাজে এখন সেই দশা । জাতি জাতিতে সামান্য হিংসাও আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে। তখন এই রেসিপ্রোকাল আলট্রিউজমের থেকে বেটার সারভাইভাল স্ট্রাটেজি আর কি আছে? থাকলে লেখ লেখানে। আমি ও দেখি তোমার যুক্তির দৌড় কত।
@বিপ্লব পাল,
হাঃ হাঃ – এইবার লাইনে আসছ। আমি তোমার জৈন ধর্মের মাহাত্ম্য নিয়েই ত ছিলাম তুমি তো আমাকে কনটেক্সটে ফেলে গান্ধীজম থেকে শুরু করে প্রানী জগতে পর্যন্ত গান্ধীজম ঢেলে দিলে।
আউট অব কনটেক্সট আলোচনা করে ত লাভ নেই! সেটাই।
লিঙ্কে গিয়ে উদাহরণ খোঁজার দরকার নাই। উদাহরণ আমি জানি। কিন্তু তুমি যেটা বুঝতে পারছ না সেটা হল, টিট ফর ট্যাট কিংবা রেসিপ্রোকাল অল্ট্রিউজম কোনটাই ‘গান্ধীজমের’ কারণে উদ্ভুত হয়নি, পুরোটাই টিকে থাকার স্বার্থপর লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে। যেমন, শিকারী মাছদের থেকে বাঁচার জন্য ক্লাউন মাছদের সাথে এনিমোনের সহবিবর্তন, হামিং বার্ডের সাথে অর্নিথোপথিলাস ফুলের সহবিবর্তন, এংরাকোয়িড অর্কিডের সাথে আফ্রিকান মথের সহবিবর্তন সেগুলো কিন্তু সবই প্রকারন্তরে ‘স্বার্থপর সহযোগিতার’ই উদাহরণ। আসলে এ ব্যাপারগুলো প্রকৃতিতে এতোই স্পষ্ট যে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স তার ‘আনউইভিং দ্য রেইনবো’বইয়ের নবম অধ্যায়ের শিরোনামই দিয়েছেন – স্বার্থপর সহযোগী (The selfish cooperator)। তিনি পুরো ব্যাপারটিকে দেখেছেন অনেকটা এভাবে –
সেজন্যই সেলফিশ জিন বইটা পড়তে বলেছি আগা গোড়া। পড়ে আস, তারপর তর্ক করা যাবে।
@অভিজিৎ,
আমি কখনো কি লিখলাম, রেসিপ্রোকাল আলট্রিইজম স্বার্থহীন?
আমার লাইনগুলো আবার তুলে দিচ্ছিঃ
আমি সারা বিতর্ক জুরে লিখে যাচ্ছি, এই অহিংসাও একটা সারভাইভাল স্ট্রাটেজি এবং তার মানেই তার সাথে স্বার্থপরতা যুক্ত-সেটা আগের লাইনে আরো খুব পরিস্কার করে লিখলাম।
তাহলে দেখা যাচ্ছে তুমি ছায়ার সাথে যুদ্ধ করছ। ছায়াকে কায়া ভেবে তরবারি নাচিয়ে কি নকল বুঁদির কেল্লা রক্ষা করছ, সেটাও পরিস্কার না।
এখানে বিতর্কের মোশন হচ্ছে- জৈনদের অহিংসা নীতি যা প্রানী জগতে রেসিপ্রোকাল আলট্রুইজম নামে খ্যাত-তা আমাদের সমাজে কতটা দরকার। সেই খানে বিতর্কের ফোকাসটা রাখ।
স্যাম হ্যারিসের এই ভিডিওটা আমি অভিজিত আর হানিফের জন্য উৎসর্গ করলাম। এখানে খুব স্পষ্ট ভাবেই স্যাম হ্যারিস ব্যাখ্যা করেছেন জৈন ধর্ম এবং বৌদ্ধদের সাথে কেন হিন্দু বা মুসলমানদের তুলনা চলে না অহিংসার ক্ষেত্রে। আমিও ঠিক-এই একই বক্তব্য রাখছি। মুসলমান বা হিন্দুদের হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে জৈনদের তুলনা করতে গেলে ইতিহাসে চূড়ান্ত রকমের অজ্ঞ হতে হবে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=PNndF8RP7Lw
@বিপ্লব পাল,
উৎসর্গ তো করলা, কিন্তু মূলেই গড় বড়। স্যাম হ্যারিসের অনেক কিছু যৌক্তিক, কিন্তু তুমি বোধ হয় জান না – স্যাম হারিসের ইস্টার্ণ মিস্টিসিজম, বুদ্ধিজম আর ‘অল রিলিজিয়ন সাক্স এক্সেপ্ট জৈনিজম’ জাতীয় আবাল্পনা মূলধারার যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানীদেরও যথেষ্ট বিরক্তি আর ভ্রু-কুঞ্চনের কারণ ঘটিয়েছে। তার প্যারাসাইকোলজি নিয়ে দোনোমনো মনোভাব, নিক্লিয়ার ওয়ারফেয়ারের স্টান্ড ইত্যাদিও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভিক্টর স্টেঙ্গরের ‘নিউ এথিজম’ বইয়ে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আছে। নেটেও অনেক জৈন মুক্তমনা স্যাম হ্যারিসের স্ট্যাণ্ডের বিরোধিতা করেছে (The Problems with Jainism দ্রঃ)। মূল কথা হল, স্যাম হ্যারিস কিছু বললেই সেটা গিলে ফেলতে হবে তা তো নয়। ব্রেন বলে একটা ব্যাপার আছে না! 🙂
@অভিজিৎ,
স্যাম হারিস ভিডিওতে যে যুক্তি জৈন ধর্মের অহিংসার পক্ষে রেখেছেন, সেটা না খন্ডিয়ে, স্যাম হারিসের আরো পাঁচটা জিনিস নিয়ে লিখে গেলে। তাতে কি স্যাম হ্যারিসের যুক্তি কিছু দুর্বল হল?
ইন কনটেক্সট না হলে, ব্যাপারটা যা করলে হল সেটা হচ্ছে এই, অন্যন্য আর যেকোন লোক এর মতন স্যাম হারিস জ্ঞান এবং বিষ্ঠা দুই ত্যাগ করেন। আমি তার জ্ঞানটা তুলে দিলাম, আর তুমি সেই বক্তব্যের ভুল না ধরে লোকটা কোথায় মল মূত্র ত্যাগ বেড়ায় তার ঠিকুজি দিয়ে গেলে :-Y তাতে কি কিছু প্রমানিত হল 😀
@বিপ্লব পাল,
হাঃ হাঃ … বিতর্ক এখন জৈন ধর্ম, গান্ধিজমের সিঁড়ি চৌকাঠ পেরিয়ে স্যাম হ্যারিসে গিয়ে ঠেকেছে। আমার মনে হয় না জৈন ধর্ম সম্বন্ধে জানার জন্য স্যাম হ্যারিসের কাছে দৌঁড়ানোর দরকার আছে। তুমি নিজেই স্যাম হ্যারিসের চেয়ে জৈন ধর্ম সম্বন্ধে ভাল জান।
নাস্তিক স্যাম হ্যারিস স্টানফোর্ডে ইংরেজী পড়ার সময় ইস্টার্ন মিস্টিসিজম নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে মাথা আউলিয়ে সেই যে ড্রপ আউট হইয়েছিলেন, তার রেশ মাঝে মধ্যেই রেরিয়ে আসে বুদ্ধিজম, জৈনজম, প্যরাসাইকোলজি নিয়ে নানা প্রলাপে 🙂 ।
স্যাম হ্যারিসকে আমার অনেক কিছুতেই শক্তিশালী মনে হলেও ইস্টার্ন মিস্টিজম প্রিচ করার ক্ষেত্রে তাকে খুব সাধারই মনে হয়েছে আমার, এমনকি ‘এণ্ড অফ ফেইথ’ পুরোটা পড়ার পরেও। সিরিয়াসলি, এই ভারতীয় সংস্কৃতিতে বড় হবার পরেও যদি হিন্দু ধর্ম, বুদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম জানার জন্য আমাদের স্যাম হ্যারিস লাগে তাহলে দুঃখের।
এনিওয়ে, কাল জব্বর বিতর্ক হইল। আইজ একটু অফিসের কাম কাজ করি। তোমারে উত্তর দিতে থাকলে আর কিছুই করা হয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগিতায় হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় যে অভিধান রচনা করেন, সেখানে ‘ঈশ্বর’ অর্থ খুব আহামরি কিছু নয়।
ভগ অর্থ উৎপাদনের ( এর অর্থও কিন্তু সুখকর নয়) উপায়, আর ভগবান উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিক,কেমন করে, বিশ্বাধিপতি হয়ে ওঠে ব্যাখ্যা করেছেন কলিম খান। ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থ ধরে এগিয়ে গেলে ভারতবর্ষের ( বর্ষ কেন?)ইতিহাস জানা যায়।
জগতের মালিক হিসাবে সনাতন সমাজে কেন ঈশ্বর এবং ভগবান নেহায়েত এ জগতেই বিরাজ করতো তা পাবেন কলিম খানের ‘দিশা থেকে বিদিশায়’অর্থাৎ তখনো মহা বিশ্বের মালিকের আর্বিভাব হয়নি, কেন হয়নি, পরে কেন হলো, তারও ব্যাখ্যা আছে।
কলিম খান ও হীরা চক্রবর্তীর যৌথ লেখা ‘ অবিকল্পসন্ধান’ এবং ‘প্রাচ্যের সম্পদঃ রবীন্দ্রনাথ’ এ সম্পর্কে প্রচুর তথ্য রয়েছে।
জানালা খুলে দেবার আগে এখানে চোখ বুলাতে পারেন।
http://banglasemantics.net/
তথ্য সরবাহ করায়, যদি কিছু মনে করে থাকেন, তো ক্ষমার্হ।
ভাল কথা, মন্তব্য করার সময়ই হয় না, তবুও এখানে, অপমানের আশংকা থাকার পরও মন্তব্য করলাম।
কেন?
আশা করি অনুমান করে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,
বিপ্লবদার লেখা আমার বিশেষ পছন্দ। কিন্তু উনি মন্তব্যকারীদের যেভাবে আক্রমন করেন, সেটা যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। যেমন, আরো জেনেশুনে, আরো ইতিহাস পড়ে, অথবা, পড়াশুনা করে মন্তব্য করার উপদেশ দেন। এইখানেও তার ব্যাতিক্রম নেই। ডঃ হানিফকেও এইসব শুনতে হয়েছে। উনাকে ধন্যবাদ, গা না করে মন্তব্য চালিয়ে যাবার জন্য।
বিপ্লবদা এইসব না করে ঊত্তর না দিলেও পারেন। একদম কিছু না জেনেই মন্তব্য করে, পাঠকদের এমন ভাবা উচিত নয়। আর সবাইতো সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
আমি এই প্রবন্ধ মূলত লিখেছিলাম প্রাক ঐশ্বরিক যুগে ধর্মকে বুঝতে। মানব সমাজে ধর্মীয় আচরনে প্রথমেই ঈশ্বর আসে নি। প্রথমে এসেছে জন্মন্তরবাদ। এর পরে সূর্য সহ প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে খুশী করার জন্যে আচরন, অনুষ্ঠান-যা পূজার পূর্ব রূপ। তখনো এদের কেও ঈশ্বর হিসাবে আসে নি। তারপর এইসব আচরন অনুষ্ঠান পূজার মাধ্যমে আস্তে আস্তে এরা প্যাগান ঈশ্বরের রূপ নিয়েছে। এই পুরো ব্যাপারটার ইতিহাস বেশ ধোঁয়ালো এবং এটা বুঝলে ধর্ম বোঝা অনেক সহজ হবে। সমস্যা হচ্ছে খৃষ্টপূর্ব ৫০০০ বছরের আগের ইতিহাসের খুব অল্পই আমরা জেনেছি। আমি নিশ্চিত আদিম এই ধর্মগুলি ছিল -নাস্তিক, জন্মান্তরবাদ এবং প্রকৃতিপ্রেমী। এগুলি আদি জৈন ধর্মর মতন বা এর ভ্যারিয়ান্ট। আমার মনে হচ্ছে এই প্রবন্ধ লেখার আগে, প্রাক ঈশ্বরপূর্ব ধর্মীয় যুগ নিয়েই শুধু আলাদা প্রবন্ধ লিখলে সবার জন্যে ভাল হবে।
এ লেখাটির একটা দুর্বলতা হল এটা যতটা না বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আইডিওলজিকাল প্রেক্ষাপট থেকে। জৈনধর্মের অহিংসাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে এগুলে জৈন ধর্মের মধ্যকার নানা কুসংস্কার, রিচুয়াল প্রভৃতিকেও মাথায় করে রাখতে বলতে পারে কেউ (বলা বাহুল্য- সব ধর্মেই কুসংস্কার কিন্তু কম বেশি আছে। এসব ধর্মচর্চা যখন শুরু হয়েছিল বিজ্ঞান খুব বেশি লাইমলাইটে না থাকায় বিশ্বাস নির্ভর আবর্জনা ঢুকে পড়েছিল অবলীলায়)। এটা একটা সমস্যা।
আর অহিংসা, পরার্থতার মতো হিংসা, ঈর্ষা, লোভ লালসা এমনকি সংঘাতের মত উপাদানগুলো মানব সমাজে বিবর্তনের পথ ধরেই উদ্ভূত, তাই সেগুলো জৈব-বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যার দাবী রাখে, কোন প্রাচীন জৈন গুরু কি বলে গেছেন কিংবা প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে কী লেখা আছে তার নিরিখে নয়। কারো জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী গোপনে অন্য কারো সাথে পরকীয়া শুরু করলে বা তার আলামত পাওয়া গেলে যে কোন কারো মনই ঈর্ষাক্রান্ত হয়ে উঠে – সব সমাজেই। মানব সমাজের মেটিং স্ট্র্যাটিজি তো আর ধর্মগুরুদের কথায় তৈরি হয়নি, এটা বহুদিনের জীবনচর্চার ফল। জীবনে যদি ঈর্ষা লোভ লালসার দরকার না হত, তাহলে সেটা মানবমনের উপাদান হিসেবে থাকতো না। এটাই বাস্তবতা। কাজেই জৈব-বৈজ্ঞানিকভাবে এর অনুসন্ধান কিংবা বিচার না করে কোন ধর্মগুরুর কিংবা আদিম কোন ধর্মের ব্যাখ্যা নিয়ে কোলাহল করে খুব একটা লাভ নেই। এমনি জৈন ধর্মেও যে সংঘাত খুঁজলে পাওয়া যাবে তা তানভীর হানিফ কিছু উদাহরণ উপরেই দিয়েছেন। হোমো-স্যাপিয়েন্স প্রজাতিতে যদি যুদ্ধ হিংসা থেকে থাকে এবং আলামত যদি আদিম গুহাচিত্র থেকে পাওয়া যায়, জৈনরাও তো হোমোস্যাপিয়েন্সই, এরা তো আর মঙ্গল-গ্রহের এলিয়েন নয়। হয়তো এদের মধ্যে যুদ্ধ হিংসা কিছু কম থাকতে পারে, কিন্তু বিবর্তনীয় কালচারাল ইউনিভার্সালকে অতিক্রম করে লোভ, লালসা হিংসা লড়াইবিহীন জৈন-সমাজ কখনোই সম্ভব নয়, সেটা তাদের ছিলোও না। এর বাইরে ‘পরম সত্য’ নিয়ে অপার্থিব যা বলেছেন সেটাও উল্লেখ্য।
@অভিজিৎ,
উদাহরন দিলে ভাল হয়- বিশ্বাস নির্ভর যে জিনিসটি জৈন ধর্মে আছে, সেটির ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি। সুতরাং রাম শ্যাম যদু মধু এক। স্তালিন নাস্তিক হত্যাকারি, তাই অভিজিত্ রায় ও যেহেতু নাস্তিক তাই হত্যাকারি-এই ধরনের জেনারালাইজেশনের মূল্য নেই। স্পেসিফিক পয়েন্টে না গেলে উপোরোক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন।
বাস্তবতা এটাও বিবর্তনের প্রয়োজনেই মানুষের মধ্যে সমাজ বদ্ধ হওয়ার আইন গুলো এসেছে। কারন সেই আইন গুলো করলে, সারভাইভাল স্ট্রাটেজি উন্নত হত। যুথবদ্ধতার আইনগুলি, বিবর্তনের বাইরে না।
হানিফ দিয়েছে? কোথায়? টানল ত অশোকের উদাহরন আর সেত জৈন ছিল না। না কেও উদাহরন দেয় নি এখনো। দিলে ওয়েলকাম-আমিও শিখতে চাই। উদাহরন না দেওয়া পর্যন্ত এই ধরনের কথা গ্রহণযোগ্য না। এসব সেই সদালাপের কমিনিউস্টরা জল্লাদ তাই সব নাস্তিক জল্লাদ টাইপের যুক্তি।
সেরকম ও জৈনরা ও দাবি করে না। তারা ত এটাই বলে ঈর্ষা হিংসা আছে বলেই, এগুলো কমাতে হবে সমাজের মঙ্গলের জন্যে। সুতরাং জৈন ধর্মে যা বলে নি, সেটা সেই কমিনিউস্টরা খারাপ তাই জৈন ধর্ম ও খারাপ এই টাইপের যুক্তি দিলে মুশকিল হবে।
আমি স্পেসিফিক উদাহরন ছারা জেনারালাইজড বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে রাজী না।
@বিপ্লব পাল,
উদাহরণ তুমি নিজেই ডিফেন্ড করতে গিয়ে দিয়েছ। পুনর্জন্ম, মূর্তিপূজা, ফুল পুজা, চন্দন পূজা, দীপ পূজা, ধূপ পূজা, গুরু পূজা থেকে হাজারো বিশ্বাস অপবিশ্বাসের ছড়াছড়ি ইত্যাদি…
এগুলো সব বৈজ্ঞানিক নাকি?
তাইলে আর কিসের উদাহরণ আমি দিবো? উদাহরণ আছে, ‘তোমার মনমতো’ ব্যাখ্যাও আছে। মুশকিল হল সে ব্যাখ্যাগুলোতে সবাই একমত হবে কীনা তা নিয়ে।
হ্যা সেজন্য ঘটা করে জৈনধর্মের দারস্থ কেন হতে হবে সেটা আমি এখনো বুঝলাম না। আমাদের শিক্ষা দীক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি, আইন কানুন …সবই এগিয়েছে। আবার ঘটা করে পেছনের দিকে চাকা চালিয়ে জৈনগুরুর দ্বারস্থ হওয়া কেন?
@অভিজিৎ,
জৈন ধর্মের সাথে অন্যান্য ধর্মের তুলনা করার ক্ষেত্রে বেশ ‘বস্তুনিষ্টতার’ সমস্যা আছে। এটা অনেকটা কাচকলার সাথে চেরীর তুলনার মত। জৈন ধর্ম অন্যান্য মূলধারার ধর্মগুলি ( এমনকি বৌদ্ধধর্ম) থেকে অনেকটাই ভিন্ন। একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
আমাদের প্রথমেই এ ক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব স্বতসিদ্ধ ধরে নিতে হবে এবং সেটা হচ্ছে ধর্মের সাথে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সম্পর্ক । রাজনৈতিক প্রয়োজনে ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করা এবং এর বিনিময়ে ধর্মীয় আইন ব্যবহার করা এবং এর আইন সমূহকে প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সংশোধন করাটা ধর্মের বিবর্তনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর বাইরে একটা ধর্মের ক্রমশঃ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। প্রাচীন গ্রীক-রোমান এবং মিশরীয় ফেরোদের ধর্মের কথা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ইসলাম, খ্রীষ্টীয় এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের বিপরীতে জৈন ধর্মের উপর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা হাজার বছর থেকে অনুপস্থিত , সর্বশেষ জৈন রাজ্য কালিঙ্গার পতন হয় অশোকের হাতে । এরপর জৈন ধর্মের নিয়মের উপর ‘হিংসাত্মক কাঁচি’ চালানোতে কোন রাজাই এগিয়ে আসেন নি এবং তার প্রয়োজনও পড়েনি।
একারণে পৃথিবীর কোথাও জৈন ধর্ম একক রাষ্ট্রধর্ম নয় এবং জৈন ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। ইহুদি ধর্মের অবস্থাও অনেকটা এরকম ছিল ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত। ইহুদিদের নির্যাতিত এবং অহিংস জনগোষ্টী বলে যে ইমেজ ছিল, ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পরে সেটা অনেকটাই বদলে গেছে। এখন জৈনদের নিজেদের রাষ্ট্র হলে কি হবে সেটা নিয়ে অনুকল্প করা যাবে কিন্তু বস্তুনিষ্ট আলোচনা হবে না। জৈন ধর্মের অনুসারীরা এখন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে পৃথিবীতে বসবাস করছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কি হবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।
@অভিজিৎ,
মিথ সমাজ বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ন অংশ। কিভাবে কখন কেন মিথগুলি বিবর্তনের পথে সমাজে এল-সেগুলি জানা প্রয়োজন। কোন সামাজিক দাবী ছারা ত মিথগুলো আসে নি বা বাঁচতেও পারত না। আমি সেই দৃষ্টিতেই লিখেছি। এগুলো ডিফেন্সিভ কেন হবে-সমাজে কোন মিথ যখন টিকে যায়-তার কারন থাকে। ঈশ্বর ও এমন একটা মিথ যা টিকে গেছে। এগুলো কেন টিকে আছে, সেগুলো জানতে হবে ত। সেটা ডিফেন্ড করা না।
আমি জৈন ধর্ম প্রচারের জন্যে এই প্রবন্ধ লিখেছি! কি অদ্ভুত! একটি ধর্মকে আমি ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টআ করছি!
এবং ধর্মের ইতিহাসে জৈন ধর্ম ইউনিক। কারন এখানে কোথাও ঈশ্বর কথাটিই আসে নি। পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় এই ধর্ম নিওলিথিক সমাজের সেই সময়ের রচনা যখনো ঈশ্বরের ধারনা সমাজে আসে নি বা ওই মিথটি আসে নি। ঈশ্বরের অনুপস্থিতিতে সর্বাধিক শক্তিশালী মিথ ছিল জন্মান্তরবাদ। যা হিন্দু এবং বৌদ্ধ -এই দুই ধর্মেই পরে আসে। এবং জৈন ধর্ম থেকেই আসে। ঈশ্বর নামক মিথটি ছারা কিভাবে একটি ধর্মের ডিজাইন হতে পারে তার সব থেকে বড় উদাহরন বৌদ্ধ এবং জৈনরা। এর মধ্যে জৈনরা প্রাচীন এবং এ ধর্ম কোন গুরুর প্রচলিত না-তা ক্রমশ বিবর্তিত হয়েছে সামাজিক প্রয়োজন থেকে। সামাজিক প্রয়োজন থেকে মিথের জন্ম আর মিথ থেকে কিভাবে ধর্মের জন্ম হয় সেটা বোঝার আছে অনেক ক্রোশ। এটা না বুঝলে কেওই কোন ধর্মকে ঠিক ঠাক বুঝে উঠতে পারবে না।
৩০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে যে সব বিখ্যাত রাজাদের সন্ধান ভারতে পাওয়া যাচ্ছে তাদের কেওই প্রায় হিন্দু না-সবাই জৈন বা সেই সময় জৈনদের মতন আরো অনেক শ্রমনিক নাস্তিক ধর্মের অনুসারী ছিলেন। এটা বোঝা দরকার আগে।
@বিপ্লব পাল, জৈন ধর্মকে ইউনিকলি ইশ্বরবিহীন বলার কোনো কারন নেই। কনফুসিয়াস প্রবর্তিত কনফুসিয়ানিজম, যা ২৫০০ বছর ধরে শত শত কোটি চাইনিজদের সমাজ ও ব্যাক্তিজীবনের মূল দর্শন হিসেবে অধীষ্ঠিত আছে, সেখানে ইশ্বরের কোনো অবস্থান নেই। Confucianism as an ideology is humanistic and non-theistic, and does not involve a belief in the supernatural or in a personal god (http://en.wikipedia.org/wiki/Confucianism)। কনফুসিয়ানিজম অনেক শতক ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে।
ক্লাসিকাল যুগের গ্রীক,ভারত, চীন সভ্যতার সকল দার্শনিকদের মধ্যে কনফুসিয়াস আমার কাছে সবসময়েই ব্যাতিক্রমী মনে হয়েছে। কনফুসিয়াস সোজা সাপ্টা বলেছিলেন যে মরার পরে কি হবে না হবে এসব নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই, এই পৃথিবীতে harmonious সমাজ ও ব্যাক্তি জীবন গঠন কেমন করে সম্ভব এটাই তার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য।
@সফিক,
কনফুসিয়াস কোন ধর্ম প্রবর্তন করে যান নি-উনি রেখে গেছেন দর্শন। আমি নিজেই গত ক মাস ধরে কনফুসিয়াসের অনেক জীবনী পড়েছিলাম এবং আমি একমত উনার দর্শন ব্যাতিক্রমী কিন্ত ধর্ম না। উনাকে নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছা অনেক, সময়ের অভাবে লিখতে পারছি না। তবে লিখতে হবেই-কারন উনার থেকে ভাল রাজনৈতিক দর্শন আর কেও দিয়ে যায় নি।
কিন্ত সব দর্শনই ধর্ম না। ধর্ম হতে গেলে, গুরু, উপাসনা, উপাসনা গৃহ, ধর্মীয় আচার ইত্যাদি অনেকগুলি উপসঙ্গ দরকার হয়-যার জন্যে জৈন দর্শন ধর্ম, কনফুসিয়াসের দর্শনকে ধর্মের মধ্যে ফেলা যাবে না। ধর্মীয় দর্শনের মূল দিক হচ্ছে সেলফ অর্গানাইজেশন বা গোষ্ঠি বদ্ধ জীবন এবং আচরনের নিদান।
আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই সময় পৃথিবীতে চারটি লোক ছিল সমসাময়িক- কনফুসিয়াস, বুদ্ধ, মহাবীর, এরিস্টটল। এটিকে দর্শনের স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে।
@বিপ্লব পাল, খ্রী: পূ: ৫৫০ -৪৫০ মানুষের চিন্তার ইতিহাসে একটা ইউনিক সময়। অবশ্য সে সময়ে অ্যারিস্টটল ছিলেন না, তার শিক্ষক প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিস ছিলেন।
সম্প্রতি প্রয়াত বিখ্যাত আমেরিকান লেখক গোর ভিদাল (Gore Vidal) এর একটা বিখ্যাত উপন্যাস আছে Creation নামে। উপন্যাসের ধারাবিবরনকারী স্পিতামা নামের একজন পারসিক অভিজাত ,যিনি পারস্যসম্রাট দারিয়ুসের প্রতিনিধি এবং সেই সাথে পারসীক ধর্মের প্রবর্তক জরথ্রুষ্টেরও একজন বংশধর। স্পিতামা সেই সময়ে ভারত,চীনে অনেক সময় থাকেন এবং শেষ জীবন কাটান গ্রীসে। তিনি মহাবীর, বুদ্ধ, কনফুসিয়াস এবং সক্রেটিস সবার সংষ্পর্শেই আসেন। বইটি আমার খুবই প্রিয়। সুখপাঠ্য এই বইটিকে অনেকে বলেছেন কলেজ লেভেলের introduction to comparative religion কোর্সের সমতুল্য।
কনফুসিয়ানিজমকে প্রচলিত ধর্মের মতো না বলা গেলেও এটি যে কোটি কোটি মানুষের কাছে ধর্মের কাজটিই করে গেছে তা অস্বীকার করা যায় না। ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজনীয়তার উপরে কনফুসিয়াস জোর দিয়েছিলেন।
@বিপ্লব পাল,
অবশ্যই। কিন্তু তোমার লেখায় এ ধরণের মিথের বিবর্তনীয় অনুসন্ধানটুকুই অনুপস্থিত মনে হয়েছে। তারচেয়ে ‘জৈনধর্মে হিংসা নেই’, ‘তারা কখনোই যুদ্ধ করেনি’ – এধরনের ‘আদর্শবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গিই বেশি মনে হয়েছে।
@অভিজিৎ,
জৈন ধর্মের শুরু খৃষ্টের জন্মে ৫০০০ বছর আগে-এবং সেই সময়ের কোন লিখিত ইতিহাস নেই-খুব বেশী কবর বা খননকার্য্য করে সেই সময়টা নিয়ে আমরা এখনো বিশেষ কিছু জানি না। সুতরাং জন্মান্তরবাদের মিথ নিয়ে বর্তমান পৃথিবী অল্পই জানে-এবং সেটাও অনুমান নির্ভর। ওইটুকু আমার লেখাতে দিয়েছি।
এটা নিয়ে হানিফের সাথে তর্ক চলছে। চলুক। পাঠক নিজে পড়েই বুঝবেন হানিফের ভুলগুলি। আমি খুশী যে হানিফ এই প্রশ্নগুলো তুলেছে-এদে আদিম ভারতের ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে সুবিধাই হবে।
@অভিজিৎ,
আপনি আমার মনের কথাগুলো বলে দিয়েছেন। উনার লেখাটির সমস্যা হল এটিতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব। কোন গোষ্ঠীকে নিয়ে বস্তনিষ্ঠ রচনায় গোষ্ঠীটির দোষ-গুণ উভয়েরই স্পষ্টভাবে আলোচনার প্রয়োজণ আছে। সেটি কি এ লেখাতে এসেছে? লেখক বলেছেন: “জৈন ধর্মের মূল নীতি অহিংসা। কাওকে কোন ভাবে দৈহিক বা মানসিক ভাবে আঘাত করা যাবে না। এবং তা পশুপাখী উদ্ভিদ সবার ওপরই । নিজে বাঁচার জন্যে অন্যের মৃত্যু, অন্য প্রাণের মৃত্যু-এই ধর্মে স্বীকৃত না। হিন্দু এবং ইসলামের সাথে এখানেই জৈন ধর্মের বিরাট পার্থক্য। অনেকে প্রশ্ন করবেন, তাহলে আত্মরক্ষার জন্যে হিংসা কেন স্বীকৃত না? এর মূলকারন জৈন ধর্মে মানুষকে প্রকৃতি থেকে আলাদা করে দেখা হয় না। সে প্রকৃতির অংশ।”
ভালো কথা। বুঝলাম অশোক বা তার গ্র্যান্ডপা জৈন ছিলেন না বা জৈন থাকা অবস্থাতে রক্তপাত ঘটাননি। কিন্ত আসলেই কি যেকোন অবস্থাতেই এতে অহিংসা স্বীকৃত? জৈনরাতো একসময় ক্ষমতায় ছিল। রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে যে রক্তপাত, রাজ্যজয়, লুটপাট, এ্যাসাসিনেশন জড়িত থাকে এবং সেক্ষেত্রে যে কোন হোমো-স্যাপিয়েন্স গোষ্ঠীই ব্যতিক্রম নয়–সেটি কি লেখক মানতে রাজি হবেন? যদি না হন তাহলে কি তাকে বায়াসড বলা যাবে? ঠিক যেমন ইসলামী মোল্লা বা খ্রীষ্টান পাদ্রী বা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সামনে অপ্রীতিকর সত্য নিয়ে আসলে তাদের সেরকম প্রতিক্রিয়া হয়?
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে বধ করবার অনুমতি দিয়েছে জৈন ধর্ম (^ Jindal pp. 89–90; Laidlaw pp. 154–155; Jaini, Padmanabh S.: Ahimsa and “Just War” in Jainism, in: Ahimsa, Anekanta and Jainism, ed. Tara Sethia, New Delhi 2004, p. 52-60; Tähtinen p. 31.)। এটা কি প্রমাণ করে না্ যে “নিজে বাঁচার জন্যে অন্যের মৃত্যু, অন্য প্রাণের মৃত্যু-এই ধর্মে স্বীকৃত না।”–কথাটি মনগড়া? “জৈন ধর্মের মূল নীতি অহিংসা। কাওকে কোন ভাবে দৈহিক বা মানসিক ভাবে আঘাত করা যাবে না। এবং তা পশুপাখী উদ্ভিদ সবার ওপরই ।” তাহলে কি জৈনরা লবন খেয়ে জীবন ধারণ করে? আত্মহত্যা বিষয়ে এই ধর্ম কি বলে বা অনুসারীগণ কি করে? এই বিষয়গুলোর বস্তনিষ্ঠ আলোচনা লেখাটিকে সমৃদ্ধ করত।
কলিঙ্গ ছিল একটি জৈন রাষ্ট্র (একমাত্র নয়)। অশোকের বিরূদ্ধে কি তারা ঢাল-তলোওয়ারের বদলে টুথ-ব্রাশ নিয়ে যুদ্ধ করেছিল? চরম হিংস্র জৈন রাজা ক্ষড়বেল উত্তরপথ রাজ্য আক্রমণ করে টুথব্রাশের মাধ্যমে রক্তপাত-হীণ এক যুদ্ধের মাধ্যমে জৈন দেবদেবীর (মূলত: তীর্থঙ্করদের) মুর্তি লুট করে নিজ রাজ্যে নিয়ে আসেন। জৈন তীর্থঙ্করেরাই কি খুব অহিংস ব্যক্তিত্ব ছিলেন? প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেব নিজেইতো অস্ত্রবিদ্যার (টু্থব্রাশের মাধ্যমে) ট্রেইনার ছিলেন। ২২ তম তীর্থঙ্কর নেমিনাথতো আবার যাদবকুলের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধই করেছেন। সেটিও কি টুথব্রাশ নিয়ে? এর পরে হয়ত জৈন ধর্মে রক্তপাতের একশত কাহিনী নিয়ে পোস্ট দিতে হবে। যীশুওতো বলেছিলেন এক গালে চড় মারলে আরেক গাল ফিরিয়ে দাও। সেই যীশুর শিষ্যরা ক্ষমতায় এসে এবং একটি পুরা অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদে পরিণত হবার পর কি কি করেছে তা ইতিহাস পড়ে আমরা জানতে পারি। জৈনরাতো তাদের সমপর্যায়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতায় আসতে পারেনি। পারলে কি করত সেটিও চিন্তার বিষয়।
@তানভীর হানিফ,
তনভীর
আপনি যে রেফারেন্সটা দিলেন সেটার সাথে লে জৈন বলে একটি শব্দ আছে। সেটি আপনার দেখা উচিত ছিল।
[১] জৈন ধর্ম মূলত সন্নাসীদের জন্যে-সেই জন্যে গৃহী বা রাজাদের জন্যে জৈন ধর্মে লে জৈন বলে একটি কথা স্বীকৃত হয়- যে সমাজে বা গৃহী থাকার সময় জৈন ধর্মের একটি প্রাক্টিকাল ভার্সন তারা মেনে চলবেন, যেখানে আত্মরক্ষাত্রে যুদ্ধ স্বীকৃত। এমন কি অনিচ্ছাকৃত প্রানী হত্যাও স্বীকৃত।
[২] কিন্ত সাধারনত জৈন ধর্মের অনুসারী রাজা বা গৃহীরা আসল জৈন ধর্ম পালন শুরু করতেন গৃহী জীবনের পর সন্নাস নিয়ে যেখানে তারা জৈন ধর্মের মূল নীতিগুলি আরো ভালোভাবে মানার সুযীগ পেতেন।
[৩] অহিংসার ক্ষেত্রে জৈনদের অনেক নীতি আছে। এই আর্টিকেলেই সব পাবেন
http://en.wikipedia.org/wiki/Ahimsa
মোদ্দা কথা খাবারের ক্ষেত্রে উনারা প্রানের শ্রেনী বিভাগ করেন, এবং সেই ভাবেই জীবন জাপন করতে চান, যাতে প্রানী হত্যা কম হয়। এক্ষেত্রে আপনি একটা জিনিস বুঝতে ভুল করছেন সেটা হচ্ছে জৈন ধর্মে ইসলাম বা আব্রাহমিক ধর্মের মতন এবসল্যুটিজম নেই। ফলে এটা করতেই হবে এমন কোন পরম জিনিস জৈন ধর্ম দাবী করে না-জৈন ধর্ম অহিংস মনের জন্যে শ্রেষ্ঠ চেষ্টা করতে বলে ।
ধর্মে এবসোলিউটিজম থাকা আর না থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
এখানে আপনি ইতিহাস ভীষন ভাবে বিকৃত করেছেন এবং পৌরানিক গল্পের সাথে ইতিহাস মিশে গেছে
[১] প্রথমত রাজা ক্ষরভেলা জৈন ধর্মের ট্রাডিশন থেকে এলেও , অতিরিক্ত হিংসার সাথে জড়িত ছিলেন বলে, নিজেকে জৈন বলে দাবি করেন নি। বা নিজেকে জৈন বলার উপযুক্ত বলে দাবী করেন নি। তার নিজের ভাষায় উনি সব ধর্মের উপাষক।
সূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Kharavela
“ सव पासंड पूजको सवदेवायतन संकार कारको ” (Prakrit Language, Devanagari script)
Translation: The worshiper of all religious orders, the restorer of shrines of all gods.
আর সেই সময়ে ওভাবে কেও স্ট্রিকলি জৈন, হিন্দু এসব ছিল না। প্রতিটা রাজা, মহারাজাই দেখা যাবে মোটামুটি মূল নীতিগগুলির উপর ভিত্তি করে নিজের মতন করে ধর্ম বানিয়েছেন। ইতিহাসে গৌতম বুদ্ধই প্রথম তার নীতিগুলিকে ধর্মের রূপ দেন।
[২] প্রতিটি তীর্থঙ্করই প্রথম জীবনে যোদ্ধা ছিলেন কারন তারা ক্ষত্রিয় ফামিলি থেকে। কিন্ত জৈন ধর্ম গ্রহন করার পর তারা যুদ্ধ ছেরে সন্নাস নেন। আশা করি আপনার সন্দেহ দূর হয়েছে।
[৩] নেমিনাথ, কৃষ্ণের যাদব কুল বা মহাভারত বা হিন্দু মাইথোলজির চরিত্র-তাকে ঐতিহাসিক ভেবে স্বীকৃতি দেওয়া ঠিক না।
আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন ইতিহাস বিকৃতির অংশগুলি।
@বিপ্লব পাল,
সেটাতো আপনি আগেও বলতে পারতেন যে জৈন ধর্ম রাজাদের জন্য এক (ডিফেন্ড করতে গিয়ে বলেছেন অশোক জৈন না–সে আজিভিকা ইত্যাদি ইত্যাদি, –“জৈন রাজাই” একটি অক্সিমরন এমনটা আগে বললেই হত), গৃহীদের জন্য অন্য ভার্শন ইত্যাদি ইত্যাদি। বলেননি যখন তখন মনে হচ্ছে এটি হাতে নাতে প্রমাণ দেবার ফসল। আপনার যুক্তি তাহলে উদাহরণস্বরূপ বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না কেন? লে জৈনের বিষয়টা যা বললেন সেটি জৈন ধর্মের জন্য ইউনিক কিছুনা। বৌদ্ধ ধর্মেও গৃহী আর সন্যাসীদের জন্য নিয়মকানুন ভিন্ন। মঙ্কদের আর গৃহী বা রাজপুরুষদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সেট অব লজ ছিল/ আছে। কাজেই লে জৈন বললেই জৈন ধর্ম বা জৈন ধর্মাবলম্বীরা সব কিছুর দায় এড়াতে পারবেনা। জৈন ধর্মের এ্যাপোলোজেটিক বা প্রচারকদের প্রতিক্রিয়া এমনটি হলে অবশ্য আমি খুব বেশী অবাক হতুম না। একটা ধর্মকে যখন বিচার করবেন তখন এর মিথগুলোকেও বিচার অবশ্যই করতে হবে। এখানে ইতিহাসবিকৃতির কিছু নাই। এখন আবার বলছেন ক্ষড়বেল নিজেকে জৈন বলে দাবী করেননি (এটি একটি আবছা যুক্তি-আমি দাবী করিনি এমন জিনিসের সংখ্যা অসীম–কে কি করেনি সেটির ভিত্তিতে কোন কনক্রিট সিদ্ধান্ত নেওয়াটা একটা লজিক্যাল ফ্যালাসি–ওসামা যদি মুখ দিয়ে–“আমি মুসলমান” উচ্চারণ কখনও নাও করত তাহলেও তার বিষয়ে আমরা আজকে ভিন্নতর সিদ্ধান্তে আসতুম না। দেখবার বিষয় সে কি পালন করেছে, কোন ধর্মীয় ট্র্যাডিশন থেকে এসেছে, কখনও এক্সপ্লিসিটলি সেই ট্র্যাডিশন থেকে ব্রেক আপ করেছে কিনা ইত্যাদি)। ক্ষড়বেল সর্বধর্মের উপাষক (অনেকান্তবাদ) বলে যে দাবী করেছেন সেটি জৈনমাত্রই করতে পারে–এতে বরং আরও প্রমাণিত হয় যে তিনি জৈন ছিলেন। ইন ফ্যাক্ট, ইতিহাসের কথা যখন বলছেন তখন ঐতিহাসিকেরা তাকে জৈন নাকি পার্শী বলেছেন–সেটি আমাদের দেখবার বিষয়। আমার কনক্রিট প্রশ্ন: আপনার মতে কোন জৈন রাজার (যে জৈন ধর্মাবলম্বী) যে যু্দ্ধ, রাজ্যজয় বা সাম্রাজ্যবিস্তার করেছে অস্তিত্ব ছিল কি না এবং আপনার উত্তর না হলে কেন সেটিকে ইতিহাসের বিকৃতিকরণ বলা হবেনা? খেয়াল করবেন, অনেক মুসলমান বলে যে ওসামা, জারওয়ায়ি মুসলমান না ইত্যাদি ইত্যাদি ব্লাহ ব্লাহ–এর স্বপক্ষেও অনেক লেম এক্সকিউজ খুঁজে বের করা হয়। শুধু ইতিহাস খুঁজতে গেলে অনেক ধর্ম সম্পর্কে কিছুই বলা যাবেনা–এমনকি মোজেস, আব্রাহাম, জরথুষ্ত্র বা যীশুর রেফারেন্সে (এবং জৈন তীর্থঙ্করদের পর্যন্ত) কথা বলাই দুষ্কর হয়ে পড়বে–সেটি মানেন? আর, জৈন ধর্ম গ্রহণ করবার আগেই সমস্ত তীর্থঙ্কররা যুদ্ধ-ফুদ্ধ করেছেন পরে করেননি–এটি কি আসলেই সঠিক?
@তানভীর হানিফ,
হবে না কারন খৃষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে বাইবেলে হিংসার ছড়াছরি। বৌদ্ধ ধর্মের কেসটা ভাবা যেতে পারে। কারন বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম পরম অহিংসার ধর্ম। শত্রুর হিংসাকে সহ্য করে শত্রুর হৃদয় জয় করাটাই জৈন ধর্মের মূল যা এখন গান্ধীবাদ বলে চলে। এখন গান্ধীবাদিরাও স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় কিছু না কিছু সামান্য হিংসাত্মক কাজ করেছে। তার জন্যে কেও কোনদিন গান্ধীবাদকে হিংসাত্মক হিন্দু বা মুসলমানদের সাথে এক করেছে বলে জানা নেই। কমিনিউস্টরা নাস্তিক, তাই নাস্তিক মানেই কমিনিউস্টদের মতন নৃশংস এটা যুক্তি হতে পারে।
জৈন ধর্মের দুটি মিথ জন্মান্তরবাদ এবং আত্মা। দুটি মিথের উৎপত্তি নিয়ে আমি যেটুকু জানি লিখেছি।
জৈনরা এব্যাপারে আলাদা অবশই এই জন্যে দাবী করতে পারেন যে জৈন ট্রাডিশনে গৃহী এবং রাজারা সংসার ধর্ম পালন করার পর, ধর্মান্বেশনে সংসার ত্যাগ করে সন্নাসী হতে জৈন ধর্মকে আরো সিরিয়াসলি নিতেন। এই জিনিসটা বৌদ্ধদের মধ্যে, হিন্দুদের কিছুটা আছে-কিন্ত্ জৈনদের ক্ষেত্রে ইউনিক বলেই মনে করি।
এখানে আপনার সমস্যা হচ্ছে দুটো
[১] জৈন ধর্মে এবসল্যুটিজমে অনুপস্থিতিতে ধর্মে ইহা করিতে হইবে-এর অর্থ ইসলামে ইহা করিতে হইবের সমান না। এবসল্যুটিজমের অনুপস্থিতি বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছেন আপনি।
[২] গৃহী জৈন ধর্ম করে মোক্ষ লাভ করা যায় এমনটা জৈনরা বলে না-তারা মোক্ষর জন্যে জৈন ধর্মের মৌলিক রূপেই বিশ্বাস করে-যার জন্যে জৈনদের মধ্যে পরবর্তীকালে অনেকেই সন্নাস নেন। এর মধ্যে এপোলেজিটেকের কিছু নেই।
ওসামা নিজেকে ইসলামের সেবক বলে মনে করে-মুসলমানদের অধিকাংশই তাই মনে করে। রাজা ক্ষরবেলের ক্ষেত্রে এই দুটোর কোনটাই সত্য না। তাহলে কোন যুক্তিবাদে এই কথা বলা?
অনেকান্তবাদ মানে সব ধর্ম মেনে নেওয়া-এটা সরলী করন। জৈনরা হিন্দুদের যুদ্ধবাজ দেবদেবীদের পূজো মানে নি। বহুত্ববাদ মানে একই বাস্তবতার নানান সত্যরূপ স্বীকার করা।
[১] ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের আগে কোন রাজা কোন ধর্মের অনুগামী ছিল-তার আইডেন্টি কি ধর্ম ছিল-এই প্রশ্ন অতীব দুর্বল। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে জৈন ধর্মর মতন তখন আরো অনেক নাস্তিক শ্রমনিক ধর্ম ছিল এবং জৈন ধর্মের ইতিহাসে এটাই দেখা যায়, রাজারা সন্নাস নেওয়ার পর জৈন হয়েছেন। অর্থাৎ তৎকালে জৈন হতে গেলে সন্নাসী বা যোগী হওয়া আবশ্যক ছিল। যার চরমতার বিরুদ্ধে গিয়ে বৌদ্ধরা প্রথম “মধ্যম পথ” এর ধারনা আনে।
মধ্যযুগে বা আব্রাহামিক ধর্মে “আইডেন্টি” টা সবার প্রথমে। যে মুসলিম রাজা সে ইসলাম ধর্ম পালন করে। জৈন ধর্মের অহিংসা কোন রাজার পক্ষেই পালন করা সম্ভব ছিল না-ফলে রাজারা রাজ্য ত্যাগ করার পরেই জৈন ধর্মের স্বরণে আসত।
সুতরাং আবার ওই সব নাস্তিকরা হচ্ছে কমিনিউস্ট বদ লোক-এই টাইপে ছেঁদো জেনারালিজড যুক্তি চলবে না। আপনাকে ইতিহাসের ভেতরে ঢুকতে হবে এবং স্পেসিফিক পয়েন্টে দেখাবে হবে।
মহাভীরের জীবনী-
http://en.wikipedia.org/wiki/Mahavira
উনি ক্ষত্রিয়কুলে জন্মালেও যুদ্ধ কোনদিন করেন নি। ৩০ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন।
পরশভার জীবনীঃhttp://en.wikipedia.org/wiki/Parshva
ইতিহাসে এরা কোন হিংসা করেছেন বলে উল্লেখ নেই। বাকী তীর্থঙ্কর দের কেওই ঐতিহাসিক নন।
@বিপ্লব পাল,
হবে না কারন খৃষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে বাইবেলে হিংসার ছড়াছরি। বৌদ্ধ ধর্মের কেসটা ভাবা যেতে পারে। কারন বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম পরম অহিংসার ধর্ম। শত্রুর হিংসাকে সহ্য করে শত্রুর হৃদয় জয় করাটাই জৈন ধর্মের মূল যা এখন গান্ধীবাদ বলে চলে। এখন গান্ধীবাদিরাও স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় কিছু না কিছু সামান্য হিংসাত্মক কাজ করেছে। তার জন্যে কেও কোনদিন গান্ধীবাদকে হিংসাত্মক হিন্দু বা মুসলমানদের সাথে এক করেছে বলে জানা নেই।
খ্রীষ্টানরা তো এজন্য বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, নতুন নিয়ম ভাগ করে নিয়েছে। যীশুতো পুরাতন নিয়মের বদলে বা দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখের নিয়মকে বদলে এক গালের চটকানার বদলে আরেক গাল পেতে দিতে বলেছে। খ্রীষ্টান এ্যাপোলোজেটিকদের এই যুক্তি যেমন ধোপে টেকে না–আপনার যুক্তিও আমার বিগত তথ্যসূত্রের প্রেক্ষিতে একেবারেই ধোপে টেকে না।
কমিনিউস্টরা নাস্তিক, তাই নাস্তিক মানেই কমিনিউস্টদের মতন নৃশংস এটা যুক্তি হতে পারে।
যুক্তি আমি বুঝি। জেনারালাইজেশনতো আমি করিনি। আপনি করেছেন। অভিজিৎ ভাই আপনার যে মন্তব্যটি কোট করেছেন (“আমার জ্ঞাত ইতিহাসে জানা নেই জৈন ধর্মের বা কোন জৈন হিংসার সাথে যুক্ত ছিলেন” ) সেটিতেই তা খুবই স্পষ্ট।একটু বুঝিয়ে বলি। আপনি জৈনদের জেনারেলি সাধু বলেছেন। আপনি যদি শুধু জৈন ধর্মের বাণী নিয়ে থাকতেন তাহলে এ নিয়ে বিশেষ তর্ক করবার প্রয়োজণ ছিল না। জৈনদের গোষ্ঠী হিসেবে যে জেনারালাইজেশান করেছেন সেটির বিরূদ্ধেই বলেছি। সেটি কেন অবৈজ্ঞানিক (এবং ভং চং) সেটি বুঝতে হলে অপার্থিব ভাইকে করা উনার মন্তব্যটি পড়ে দেখুন।
বাকী তীর্থঙ্কর দের কেওই ঐতিহাসিক নন।
তাহলে জৈন ধর্মের ঐতিহাসিক ভিত্তি, বিবর্তণ, প্রাক-ঈশ্বর যুগ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলাই অবান্তর।
মধ্যযুগে বা আব্রাহামিক ধর্মে “আইডেন্টি” টা সবার প্রথমে। যে মুসলিম রাজা সে ইসলাম ধর্ম পালন করে। জৈন ধর্মের অহিংসা কোন রাজার পক্ষেই পালন করা সম্ভব ছিল না-ফলে রাজারা রাজ্য ত্যাগ করার পরেই জৈন ধর্মের স্বরণে আসত।
তাই নাকি? তাহলেতো আপনাকে ইহুদী জাতির ইতিহাস ভালো করে পড়তে হবে। তারা নিজেদের জুডাইজমের অনুসারী জু হিসেবে কবে থেকে আইডেন্টিফাই করা শুরু করে? খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রেও প্রশ্নটা কাছাকাছিই হবে। মদ্যপানকারী এবং কোরানকে তীরবিদ্ধ করেছে যে খলিফা সে কোন ধর্ম পালন করত? রাজা ক্ষড়বেল কি রাজ্য ত্যাগ করে জৈন ধর্মের স্বরণে এসেছিলেন? নাকি তিনি স্বয়ং জৈন ধর্মপ্রচারক ছিলেন? আমি ইতিহাসের ভেতরে ঢুকেই স্পেসিফিক পয়েন্ট দেখিয়েছি। এখন আপনিও দেখাবেন আশা করি।
সুতরাং আবার ওই সব নাস্তিকরা হচ্ছে কমিনিউস্ট বদ লোক-এই টাইপে ছেঁদো জেনারালিজড যুক্তি চলবে না।
শুরু থেকেই আপনার যুক্তির ছিদ্রগুলো স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে (ফলসিফিয়েবিলিটির ভুল ব্যাখ্যা–যেটি অপার্থিব ভাই সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপনার লেখাটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীণতা- যেটি অভিজিৎ ভাই তুলে ধরেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি)। সেটি আমিসহ অন্যান্যরাও দেখিয়েছেন। এখন, আপনি মুক্তমন নিয়ে একটু ভেবে ভুলগুলো সংশোধন করে নেবেন এইটুকুই আশা করতে পারি।
ওসামা নিজেকে ইসলামের সেবক বলে মনে করে-মুসলমানদের অধিকাংশই তাই মনে করে। রাজা ক্ষরবেলের ক্ষেত্রে এই দুটোর কোনটাই সত্য না। তাহলে কোন যুক্তিবাদে এই কথা বলা?
ওসামা কি মনে করে না করে সেটি কে তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখতে গিয়েছে আর অধিকাংশ মুসলমান কি মনে করে (এর ওপর একটি বিশ্বব্যাপি পোল হয়েছিল–এটি নিশ্চয় আপনি অবগত আছেন) তার উপর ওসামার আইডেন্টিটি কিভাবে নির্ভর করে? ওসামার কার্যকলাপ দিয়েই সে বিচার্য।
এবসল্যুটিজমের অনুপস্থিতি বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছেন আপনি।
এখন বুঝতে পারছি। এর অর্থ চরম সুবিধাবাদ। 🙂
@তানভীর হানিফ,
এখনো পর্যন্ত আপনি একটিও তথ্য দিতে পারেন নি, যাতে জৈনদের হিংসাত্মক স্বভাবের একটিও উদাহরণ পাওয়া যায়। আপনার প্রতিটা উদাহরনই যে ঐতিহাসিক ভুল বা আপনার ইতিহাস বোঝার ভুল সেটা আমি স্পষ্ট ভাবেই দেখিয়েছি। তারপরেও যদি একটিও ঠিক উদাহরন না দেওয়ার পর আপনি সেটিকে সঠিক বলে দাবী করেন-পাঠক এর অন্তিম বিচারক। এখনো পর্যন্ত আমি আপনার কাছ থেকে ভারতীয় ইতিহাসে অজ্ঞতা এবং পৌরানিক কাহিনীর সাথে ইতিহাস মিশিয়ে ফেলা ছারা কিছুই পেলাম না। এবং সেই বিচার আমি পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
জৈনদের প্রথম বাইশজন তীর্থঙ্করদের কথার ঐতিহাসিক ভিত্তি এখনো নেই। সুতরাং যেখানে যুক্তিবাদি আলোচনা হচ্ছে সেখানে মিথোলজি টেনে কি হবে? জৈন ধর্মের প্রচীনতার জন্যে আমি ঐতিহাসিকদের প্রসঙ্গ টেনেছি যারা মনে করেন, মহেঞ্জোদারো সভ্যতার যোগীধর্ম জৈন ধর্মের প্রাচীনরূপ। জৈনদের প্রাচীনতার জন্যে আমি পুরানের বা গল্পের না-ঐতিহাসিকদের থেকে লিখেছি। সেটা আমার প্রবন্ধে পরিস্কার।
জৈন ধর্মে পরম সত্যের অনুপস্থিতির বিরোধিতা আপনি করেছেন। বিরোধিতা যখন করছেন, তার বিরুদ্ধে একটা প্রমান ত দেবেন?
তার জন্যে আপনার কাছে ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালে স্বীকৃত একটি বৈজ্ঞানিক সূত্র চাইলাম। দিতে পারলাম না! আপনি অপার্থিবের স্বরণে গেলেন। অপার্থিব এটাকে ঈশ্বরের অস্থিত্বের ফালাসিতে নিয়ে গেল। সেটাই যদি আপনি মানেন যে বিজ্ঞান ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্থিত্ব নিয়ে কোন পজিশন নিতে সক্ষম না-তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্ত একটু ভেবে দেখলে তাতে এটাও সিদ্ধ হয়, বিজ্ঞানের পাল্লা অনস্থিত্ব্র দিকেই বেশী-কারন অস্তিত্বের কোন প্রমান নেই। এই জন্যেই রিচার্ড ডকিন্স ১-১০ এর স্কেলে, ঈশ্বরের অনস্থিত্বের পক্ষে ৯ রেখেছেন। মনে রাখবেন ওটা ৫ না। ৫ হলে, মুক্তমনা সাইটটা তুলে দিতে হত 😕
এখানেও ব্যাপারটা তাই। পরম সত্যের অনস্থিত্ব বিজ্ঞান প্রমান করে নি বটে-কিন্ত বিজ্ঞানের কোন সূত্রই পরম সূত্র না। তাই ১-১০ স্কেলে, বিজ্ঞানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি ৯ এর ওপরেই থাকবে। এটা যেকোন বিজ্ঞানীই মানবে। সুতরাং এক্ষেত্রে জৈন ধর্মের অবস্থান বিজ্ঞানের দর্শনের কাছাকাছি বলে আমি যেটা লিখেছিলাম, সেটাতে ভুল কোথায়? ভুল ত আপনাদের বিজ্ঞানের সূত্র এবং সত্যের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে! এটাত আপনার মন্তব্যই প্রমাণ করবে!
আর অভিজিতের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছি না এই জন্যে, যে তাতে স্পেসিফিক কিছু বক্তব্য নেই। থাকলে ভেবে দেখব বা উত্তর দেব। ও আগে যুক্তি দিক, তারপরে সেটা দেখা যাবে 😛
@তানভীর হানিফ,
আমি অপার্থিবের উত্তরে কিছু বলেছি। মার্গারেট মীড-এর স্যামোয়া আর ফিলিপাইনের শান্ত টেসাডেদের নিয়ে গবেষণার উল্লেখ করেছি সেখনে।
ম্যাট রীডলী তার ‘এজাইল জিন’ বইয়ে মীডের গবেষণা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যেরকম বলেছিলেন অনেকটা সেরকমই বলতে হচ্ছে – ‘লোভ হিংসা যুদ্ধবিহীন মানব সমাজ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা অনেকটা এমন কুকুর খুঁজে পাওয়ার মতোই – যে কুকুর ঘেউ ঘেউ না করে মিউ মিউ করে’। 🙂
@অভিজিৎ,
আবার জৈন ধর্মটা বুঝতে ভুল করলে। জৈন ধর্ম বলছে মানুষের মধ্যে হিংসা এবং কাম আছে। তাই এটাই বলছে মানব কল্যানে প্রতিজ্ঞা করতে হবে এই লিপ্সা এবং হিংসা কমাতে। জৈন ধর্মে এবসল্যুটিজম নেই। তাই এটা বুঝতে তোমার এবং হানিফের একই সমস্যা হচ্ছে।
প্রতিজ্ঞা করে হিংসা না কমানো গেলে গান্ধীবাদের ভিত্তিই থাকত না। গান্ধীবাদ ত জৈন ধর্মের রাজনৈতিক রূপ। আজ সেই রাজনৈতিক শক্তি গোটা পৃথিবী জুরে এত জনপ্রিয় কেন? সুতরাং জৈন ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে, আজ গান্ধীও অপ্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর ইতিহাসকি তাই বলছে?
বিপ্লবদা ও ডঃ হানিফের মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্যে কনফিউশন শুধু বাড়ছিল, আপনার উপরের কথাগুলো সে কনফিউশন অনেকটাই দূর করেছে। বিজ্ঞান যেমন পরম সত্য আছে – তা বলতে পারে না, তেমনি পরম সত্য যে নেই, তাও বলতে পারে না। আগ্রহভরে অপেক্ষা করছি, বিপ্লবদা নতুন কোন যুক্তি উপস্থাপন করেন কিনা। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হচ্ছে যে, আপনার আলোচনা বিতর্কটিকে সিলড করেছে বোধহয়।
@কাজি মামুন,
ঠিকই বলেছেন। পরম সত্য নাই–এ কথাটি অবৈজ্ঞানিক। আর সেজন্য জৈন ধর্মের মূল বক্তব্য সেটি হলে জৈন ধর্মও অবৈজ্ঞানিক।
@তানভীর হানিফ,
জৈন ধর্মে পুনঃজন্মের বিশ্বাস আছে, সুতরাং জৈনধর্ম বৈজ্ঞানিক সম্মত-এই দাবী করা হচ্ছে না। সেই অবকাশ নেই। এটিও বিশ্বাস নির্ভর ধর্ম। সেকথা অনেকবার লিখলাম।
কিন্ত প্রাক ঈশ্বর যুগে সত্য পরম না আপাত-তাই বহুত্ববাদেই বাস্তবতা বা সত্যের প্রকাশ-এটার মধ্যে কোন ভুল নেই। কারন পরম সত্যের অস্তিত্ব কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রেই নেই।
“সত্য” শব্দটি দর্শনে নানান সংজ্ঞা বহন করে। কেন কোন সত্য অনুসারে কথা বলছে, সেটাও দেখা প্রয়োজন। কেও যদি প্রাক্টিক্যাল সত্যে বা প্রাগমাটিক সত্যে যায়, তাহলে অনেক কিছু ত্রুটি নিয়েও একতি সুত্র সত্য। আর যদি আমরা বাস্তবতা এবং তার প্রকাশের মধ্যে যে গ্যাপ আছে, তাকে ধরি[ যেটি এখানে প্রযোজ্য ] , তাহলে সেরকম কোন ১০০% ঠিক সত্য নেই।
@বিপ্লব পাল,
একটি অপ্রাসঙ্গীক কথা .. আমি পুনর্জন্ম সম্পর্কে আপনার একটি লেখা প্রার্থনা করছি .. আমি জানি না আমি কি জাকির নায়েকের অবতার হয়ে উঠেছি কিনা, কিন্তু ছোটবেলা থেকে ঈশ্বরের উপর গবেষণা না করলেও আমি পুনর্জম্ন সম্পর্কে ভেবেছি .. আমার কাছে একে সন্তানলাভ-ই মনে হয়েছে .. আমার এ কথায় আপনি আমার প্রতি হিন্ষান্বিত হবেন না .. ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে যেমন অর্থহীন বিষয়ে আকর্ষণবোধ করি না, সেইরকম আমার বাবার বা আমার পরিবারের কারোরই এত আকর্ষণ দেখিনি .. একিইভাবে আমি আদিম মানবের কিছু কিছু তত্বকে নানা আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করি, আমি তাদের আমার মতই যুক্তিবাদী ভাবি .. কিছু কিছু ব্যাপারে মানুষের চিন্তাভাবনাকে শিশুসুলভ মনে হয় .. আপনার একটা লেখা পেলে ঐখানে আমি পুনর্জন্ম নিয়ে আমার মত লিখব ..
@পরমার্থ,
পুনঃজন্ম ধারনার উদ্ভব আত্মার ধারনা থেকে। মোটামুটি ভাবে ক্রনলজি হচ্ছে এই
মানুষের এই একটাই কি জীবন-এত ক্ষণস্থায়ী?
বা মানুষের স্বাস্তত সংজ্ঞা কি-তার মন বা দেহ ত ক্রমাগত পরিবরিত হচ্ছে- তাহলে কি আইডেন্টিটি আছে মানুষের যা অপরিবর্তনীয়?
এর উত্তরে আদিম সমাজে প্রথম আসে আত্মার ধারনা যা হয়ত ৩০-৪০,০০০ বছর আগেই এসেছিল। এবং আত্মা আসলেই পুনঃজন্ম এসেই যায়। আর এই ধারনাগুলিই জৈন ধর্মে মোক্ষ ইত্যাদির ধারনার জন্ম দিয়েছিল।
এখন মানুষের ইনডেস্ট্রাকটেবল আই ডি আমরা জানি-সেটা হচ্ছে ডি এন এ। যা জীবিত কালে খুব কম পরিবর্তিত হয় এবং সেই অস্তিত্ব আমাদের সন্তানে পরিবাহিত হয়। ফলে সেই আদিম প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার জন্যে আত্মার ধারনার ও দরকার নেই-নেই আত্মা না থাকলে পুনঃজন্মের মতন মিথে বিশ্বাস ও অপ্রয়োজনীয়।
বিপ্লব পাল আর ড: হানিফের মন্তব্য প্রতিমন্তব্য Didactic না হয়ে Polemic রূপ নিচ্ছে। এটা অনভিপ্রেত। আমার মনে হয় সমস্যাটা সেম্যান্টিক। পরম সত্য আর ফলসিফাইয়েবিলিটির ব্যখ্যা বা ধারণা নিয়ে এই সেম্যান্টিক সমস্যা হচ্ছে। ড: হানিফ ঠিকই বলেছেন যে “পরম সত্য বলে কিছু নেই” এটা পপারের ফলসিফাইয়েবিলিটির সঠিক অনুবাদ (Interpretation) নয়। পপারের ফলসিফাইয়েবিলিটি বলে যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে ফলসিফাইয়েব্ল হতে হবে, যদি তা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বএর মর্যাদা পেতে চায়। এবং ফলসিফাইড না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বটা টেন্টেটিভ ট্রুথ (Tentative Truth) হিসেবে মর্যাদা পাবে। “পরম সত্য বলে কিছু থাকতে পারে না” এটা বৈজ্ঞানিক কোন কথা নয়। প্রথমত পরম সত্য বলে কিছু থাকেও তা আছে কি নেই তা বিজ্ঞান বা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। আছে বল্লেও যেমন ভুল, নেই বল্লেও সেরকম ভুল। এটা অনেকটা ইশ্বর আছে বলে ঘোষণা দেয়াটা যেমন অর্থহীন তেমনি ইশ্বর নেই বলে ঘোষণা দেয়াটাও একইভাবে অর্থহীন। তবে “পরম সত্য বলে কিছু থাকতে পারে না” বলার দ্বারা জৈন ধর্ম যদি অন্য ডগমা ভিত্তিক ধর্মের, যারা পরম সত্য আছে বলে ঘোষণা দেয় তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয়াটা বোঝায়, তাহলে সেটা একটা ইতিবাচক দিক, সেটা প্রশংসার দাবীদার। বিপ্লব সেটা বোঝাতে চাইলে ঠিক আছে। যেমন ইশ্বর নেই বলে ঘোষণা না দিয়েও কেউ আস্তিকদের ইশ্বর আছে এরকম দাম্ভিক দাবীর বিপরীতে কেউ যদি বলে যে আছে এরকম কোন প্রমান তাঁরা পায়নি বা সেরকম দাবী করার কোন যৌক্তিকতা নেই, সেটাও ঠিক আছে।
@অপার্থিব,
পরম সত্যের অনুপস্থিত্বর চেয়ে জৈন ধর্মের মূল ভিত্তি হিসাবে বহুত্ববাদ এবং এন্টি এবসল্যুউটিজমকেই ধরা উচিত। পরম সত্যের অনুপস্থিতি, বহুত্ববাদের জন্যে একটা শর্ত।
তবে হ্যা এই দিকে আলোচনাটা নিয়ে যাওয়া ঠিক না। কারন ধর্মে ডগমার মূল কারন, প্রতিটা ধর্মে পরম সত্যের সহিংস উপস্থিতি। সেটা জৈন ধর্মে নেই। এই ভাবেই অনুস্থাপন করলেই, আমরা একমত হতে পারি।
বিজ্ঞানীরা কখনও বলেন না যে তারা আপনার, আমার বা আমাদের গঠনকারী উপকরণসমূহের অস্তিত্বকেই ফলসিফাই করে দেবেন। বাস্তবতা বলতে যদি আপনি ভৌতবস্তুর অস্তিত্বকে বোঝান তাহলে বৈজ্ঞানিকেরা সেটিকে ফলসিফাই করবার চেষ্টা করে বিষয়টি এমন নয়। এর অস্তিত্বকে মেনে নিয়ে একে ব্যাখ্যা করা হল বিজ্ঞানের কাজ। বিজ্ঞান যা করে তা হল এই ব্যাখ্যা বা তত্ত্বকে পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা। একটি তত্ত্ব ফলসিফিয়েবল মানে এই নয় যে সেটি সত্য হতে পারবে না–এর অর্থ হল এর সত্য-মিথ্যা হবার বিষয়টি যাচাই করে দেখা যাবে–একে মিথ্যা বা বাতিল প্রমাণ করাও সম্ভব। পরম সত্য নাই–এই উক্তিটি কোন বৈজ্ঞানিক উক্তির ভেতরেই পরে না–কারণ পরম সত্য আসলে ওয়েল ডিফাইন্ড কিছু নয় এবং এই উক্তিটি ফলসিফিয়েবলও নয়। একে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে মিথ্যা প্রমাণ করবেন–সেটি য়দি আপনি বলতে পারেন–তাহলে খুশী হব।
এবং বোঝাটা কখনোই সম্পূর্ন হতে পারে না-সম্পূর্ন সত্য হতে পারে না-এটা বিজ্ঞানের দর্শনের প্রথম প্রতিপাদ্য যা কার্ল পপারের বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত্তি প্রস্তর।
তাই নাকি? এটা কার্ল পপারের নামক দার্শনিকের বিজ্ঞানের দর্শন হলেও হতে পারে (তবে, এ সম্পর্কে আমার সন্দেহ আছে–উপযুক্ত তথ্যসূত্র এখানেও অতীব প্রয়োজণ)–প্র্যাকটিসিং বিজ্ঞানীরা এই উক্তিটির সাথে সহমত পোষণ করেছেন বা এ বিষয়ে কোন ঐক্যমতে পৌঁছেছেন কিনা–কিনা সে বিষয়ে জানবার আগ্রহ রইল।
জৈনরা ঠিক এটাই মানে যে বাস্তবতাকে পরম সত্যে ধরা যায় না-যা বিজ্ঞানের দর্শনের ও প্রথম উপপাদ্য। জৈনরা এই ব্যাপারে ভুল হলে বিজ্ঞানের দর্শন ও ভুল। কারন এই দুই এর উপপাদ্য এক।
একেবারেই আপনার অনুমাননির্ভর কথা। আপনার অনুমানটি ভুল।
@তানভীর হানিফ,
বিজ্ঞানের যত জার্নাল আছে, সবাই স্যার পপারের ফলসিফিকেশনকেই বিজ্ঞানের দর্শন বলে মেনে চলে-অর্থাৎ হাইপোথেসিস টেস্টিং এর ক্ষেত্রে নাল হাইপোথিসিসের গুরুত্বই সর্বাধিক এবং মোটামুটি শেষ কথা।
আপনার সমস্যা হচ্ছে-বিষয় গুলি না জেনে তর্ক করে চলেছেন। আপনি আগে বিজ্ঞানের দর্শনে কার্ল পপারের গুরুত্ব জেনে নিন-এই মুক্তমনাতে একাধিক প্রবন্ধ এসেছে উনার ওপরে। বিজ্ঞানে গবেষণা করলেই বিজ্ঞানের দর্শন জানা যায় না-এটি দর্শনের একটি উর্বর ক্ষেত্র, যেটি না জানলে, এই ধরনের উক্তি স্বাভাবিক।
[১] http://plato.stanford.edu/entries/popper/
[২]http://www.friesian.com/popper.htm
কেন বিজ্ঞানের সত্য পরম হতে পারে না এবং বিজ্ঞানের দর্শনে পপারের ফলসিফিকেশন সুপ্রীম সেটাও আপনার জানা দরকার। আমি সংক্ষেপে ব্যখ্যা করছি
[১] সূত্র মানেই সেই সূত্রের একটা সার্বজনীন উপস্থিতি থাকবে-অর্থাৎ অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক সূত্রই বিশাল স্থান এবং কালে সিদ্ধ।
[২] কিন্ত যে পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে আমরা সূত্রটির সত্যতা যাচাই করছি, তা ক্ষুদ্র স্থান এবংকালে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ পরীক্ষার পদ্ধতিতে স্যাম্পলিং সর্বদা জড়িত
[৩] সুতরাং সব বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের মধ্যে “ইনডাকশন” জড়িত। অর্থাৎ আমি স্যাম্পলের ওপর এর পরীক্ষা করে অনুমান করছি, যে সূত্রটি বৃহৎ স্থান ও কালে ব্যাপ্ত। যেমন ধরা যাক, যেকোন নতুন ড্রাগের কার্য কারিতার জন্যে ১০০০ বা ২০০০ লোকের ওপর টেস্ট করে, ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ড্রাগটা কাজ করবে। কিন্ত সেটা ত অনুমান-বিজ্ঞানে এই সমস্যাকে হিউমস ইনডাকশন সমস্যা বলে। যা অষ্টদশ শতাব্দির শেষে আবিস্কার হয়েছিল। এই সমস্যার বহুদিন সমাধান ছিল না।
[৪] এই সমস্যার এখনো পর্যন্ত সব থেকে বড় সমাধান দিয়েছেন স্যার কার্ল পপার। যার ওপর ভিত্তি করে নাল হাইপোথিসিস টেস্টিং প্রতিষ্ঠিত। উনার সমাধান হল, বিজ্ঞান যেটা করছে-সেটা আসলে সত্যের ত্রুটি কমানোর চেষ্টা করছে-সুতরাং সেই ত্রুটিকে ফলসিফাই করার চেষ্টাতেই সূত্রর সার্বজনীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
হিগস বোসনের আবিস্কারের ক্ষেত্রে [ বা ওই ধরনের পার্টিকলের আবিস্কার] অনেকদিন ধরে রেজাল্টগুলিকে ফলসিফাই করে ৫ ৯ ক্রুটিমুক্ততাই পৌছানোর পর ঘোষনা দেওয়া হয়। এর মূল দার্শনিক ভিত্তি নাল হাইপোথিসিস এবং যার ভিত্তি পপারের ফলসিফিকেশন। বিজ্ঞানের দর্শনে পপারের মতামত বিবর্তিক হলেও সব জার্নালেই নাল হাইপোথিসিস টেস্টিং এর কদর বেশী। এটা বিজ্ঞানী মাত্রই জানা উচিত।
@বিপ্লব পাল,
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ফলসিফিয়েবল হতে হবে।ফলসিফিয়েবিলিটি কি সেটিও বলেছি। আমার মন্তব্য আপনি দয়া করে আবার পড়ে দেখুন। ফলসিফিয়েবিলিটি বলতে আসলে কি বুঝানো হয় সেটি আপনি বুঝতে পারেননি। আমি পপারের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছি তা কিন্ত নয়। আপনি পপারের ফলসিফিয়েবিলিটির দর্শনের যে মানে(এবং বোঝাটা কখনোই সম্পূর্ন হতে পারে না-সম্পূর্ন সত্য হতে পারে না-এটা বিজ্ঞানের দর্শনের প্রথম প্রতিপাদ্য যা কার্ল পপারের বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত্তি প্রস্তর) করেছেন-আমার আপত্তি সেখানে।ফলসিফিয়েবিলিটি যে কোন তত্ত্বের সত্যতা বা অসত্যতা সম্পর্কে কিছু বলে না সেটি মানেন? ফলসিফিয়েবল মানে যাচাইযোগ্যতা সে বিষয়ে কি আপনার কোন দ্বিমত আছে? যদি দ্বিমত থাকে তাহলে একটু বুঝিয়ে বলবেন কি– বোঝা সম্পূর্ণ হওয়ার সাথে যাচাইযোগ্যতার সম্পর্কটা ঠিক কি? এ ব্যাপারে পপার ঠিক কি বলেছেন? রেফারেন্স মানে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য। পপারের বক্তব্য এ বিষয়ে কি? সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স দিচ্ছি: “The criterion of the scientific status of a theory is its falsifiability, or refutability, or testability.” এর অর্থ এই নয় যে তত্ত্বটি ভুল বা ভুল প্রমাণ করা হবে। এর অর্থ তত্ত্বটির একটি যোগ্যতা আছে। যোগ্যতাটি হল যে পরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটিকে ভুল প্রমাণ করা সম্ভব। ফলসিফিয়েবিলিটি কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রকৃত সত্যতা সম্পর্কে কিছুই বলেনা। ফলসিফিয়েবল আর ফলসিফাইডের তফাৎটিও বুঝতে হবে। একটি হাইপোথেসিস বৈজ্ঞানিক হবার জন্য একে ফলসিফাইড বা ভুল প্রমাণিত হতে হবে (অর্থাৎ নাল হাইপোথেসিসটিই সত্য প্রমাণিত হবে) বিষয়টি এরকম নয়–এটিকে ফলসিফিয়েবল বা testable বা যাচাইযোগ্য হতে হবে।কাজেই ভুল প্রমাণিত হওয়াটা যদি শর্ত না হয় তাহলে এর সত্যতা সম্পর্কে ফলসিফিয়েবিলিটির ভিত্তিতে কোন আগাম সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব এই ধারণাটি অজ্ঞতাপ্রসূত।
@তানভীর হানিফ,
যদি আপনার বক্তব্য সত্য হয়, নাল হাইপোথিসের ক্ষেত্রে ০% ত্রুটি বা ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল গ্রহণযোগ্য। ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল আছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক সত্য আপনি জানেন?
১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল ব্যাবহার করা হয় এই অর্থে যে চলকটি শুন্য থেকে সব মান ধারন করতে পারে বা সমস্ত প্রবাবিলিটি স্পেস কভার করছে। সেই ধরনের সত্য পরম হলেও ইউজলেস বা জাস্ট একটা স্টেটমেন্ট। কোন কার্যকরী বৈজ্ঞানিক সূত্রই ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালে থাকতে পারে না। তেমন কিছু থাকলে এখানে লিখুন।
টেস্টেবিলিটি মানেই কিছুটা ফলস হবে এমন না-এটা সত্য। কিন্ত তার মানে এটাও সত্য কোন নাল হাইপোথিসিসও ০% নাল হতে পারে না-কারন এই সৃষ্টি সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রবাবিলিটি মেনেই চলে। আর সেই জন্যেই কোন বৈজ্ঞানিক সত্য সম্পূর্ন বা পরম হতে পারে না।
@বিপ্লব পাল,
“যদি আপনার বক্তব্য সত্য হয়, নাল হাইপোথিসের ক্ষেত্রে ০% ত্রুটি বা ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল গ্রহণযোগ্য।”
আপনি এই সিদ্ধান্তে কিভাবে পৌঁছলেন? আমিতো বলেছি যে ফলসিবিয়েলিটির ভি্ত্তিতে এরকম কোন সিদ্ধান্তেই আসা সম্ভব নয়–অর্থাৎ কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ইনহেরেন্ট সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।পরম সত্য আছে এটি যদি হাইপোথেসিস হয় তাহলে পরম সত্য নাই হবে নাল হাইপোথেসিস। “পরম” সত্য নাই–এরকম বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হলে কি নাল হাইপোথিসের ক্ষেত্রে ০% ত্রুটি বা ১০০% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল গ্রহণযোগ্য হবে?
@তানভীর হানিফ,
তাহলে নাল হাইপোথিসিস টেস্টিং এ কি করা হয়? আর কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল কথাটা সেই বা কেন?
আমি খুব সহজ সরল প্রশ্ন করেছি। আপনার বক্তব্য বিজ্ঞানের সত্য পরম। তাহলে কোন না কোন বৈজ্ঞানিক সুত্র থাকবে যার কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল ১০০%- সেটা দেখান। না দেখাতে পারলে জৈন ধর্মের প্রাথমিক অনুমান যে বাস্তবতাকে একটি সত্যে ধরা যায় না, সেটাকে মানতে হবে।
এর উত্তর এবং এই ফালাসির উত্তর পপার সাহেবই দিয়েগেছেন যে ফলসিফিকেশন ও ফলসিফিকেশনের মধ্যে আসে।
[১] পরম সত্য নাই এটিও পরম সত্য হতে পারে না। এই কথাটি ঠিক। কিন্ত এই কথাটি পরম সত্য নাই, তাকে নালিফাই করে না। কারন আমরা এটাই দেখছি, বিজ্ঞানের কোন সূত্রই পরম না। তবে এটা ঠিক -ভবিষয়তে পরম সত্য আবিস্কা হতেই পারে-সেদিন বিজ্ঞান অন্য ভাবে লেখা হবে। আপাতত যা নেই, তা নেই।
[২] কিন্ত পরম সত্য আছে মানে তাকে ফলসিফাই বা টেস্টিফাই করার স্কোপ নেই। অথচ পরীক্ষা লদ্ধ যে জ্ঞান তাতে ত পরম সত্যের অস্তিত্ব নেই।
তাহলে ১ আর ২ এর মধ্যে কোন অবস্থান গ্রহনযোগ্য?
@বিপ্লব পাল,
আপনার বক্তব্য বিজ্ঞানের সত্য পরম।
জ্বি না। আমার বক্তব্য না এটি। এটি আপনার কথা। আমার বক্তব্য অপার্থিব ভাই বুঝেছেন। আপনার সুবিধার জন্য আবার কোট করলুম: (১) ফলসিফিয়েবিলিটি কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রকৃত সত্যতা সম্পর্কে কিছুই বলেনা। (২) আমিতো বলেছি যে ফলসিবিয়েলিটির ভি্ত্তিতে এরকম কোন সিদ্ধান্তেই আসা সম্ভব নয়–অর্থাৎ কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ইনহেরেন্ট সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।
আপনি বলেছেন:
পরম সত্য নাই এটিও পরম সত্য হতে পারে না। এই কথাটি ঠিক। কিন্ত এই কথাটি পরম সত্য নাই, তাকে নালিফাই করে না। কারন আমরা এটাই দেখছি, বিজ্ঞানের কোন সূত্রই পরম না।
অপার্থিব ভাইকে অনুরোধ করছি–এই বক্তব্যে কোন ফ্যালাসি থাকলে সেটি ব্যাখ্যা করতে।তাতে আলোচনা আরও প্রাঞ্জল হবে। বিজ্ঞানের দর্শন সম্পর্কে আমার চাইতে উনি ভালো জানেন।
বাই দ্য ওয়ে। থিওরি অব এভরিথিং সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
@তানভীর হানিফ,
হে হে আমাকে রিং এর ভিতর ঠেলে দিয়ে নিজে নিরাপদ দূরত্ব থেকে দর্শক হয়ে উপভোগ করবেন। ;-( কি আর করা রিং এ ঠেলে দিয়েছেন এখন লড়তেই হবে।
পরম সত্য নাই বাক্যটা “Liar’s Paradox” এর কথা মনে করিয়ে দেয়। এটা বললে “পরম সত্য নাই” বাক্যটাও পরম সত্য নয় বলতে হয়। তার মানে পরম সত্য নাই কথাটা মিথ্যা হতে পারে। তাহলে পরম সত্য নাই কথাটা একই সঙ্গে সত্য ও মিথ্যা হতে পারে। এটা বদ্ধ ভাষার সীমাবদ্ধতা।
সাঙ্গেতিকভাবেঃ
পরম সত্য নাই -> পরম সত্য নয় -> [পরম সত্য নাই -> পরম সত্য নয়] -> পরম সত্য নয় ->
[[পরম সত্য নাই -> পরম সত্য নয়] -> পরম সত্য নয়] -> পরম সত্য নয় ->………অসীম শৃংখল
তবে বিপ্লব যেটা বোঝাতে চাইছে যে জৈনরা বলে যে পরম সত্য থাকলেও তাকতে পারে, কিন্তু আছে বলে আপ্তবাক্য হিসেবে আওড়ানো যায়না, যেটা ডগমাভিত্তিক ধর্ম করে, জৈনরা নয়। এটা নিজের মুখে বিপ্লব বল্লে লেঠা চুকে যেত। আমরা সবাই একমত হয়ে এগিয়ে যেতাম। বিপ্লব আরো বলতে চাইছে যে আনুষ্ঠানিক ধর্মের মধ্য একমাত্র জৈন ধর্মই এই পরম সত্য নেই কে তাদের ধর্মের একটা ফর্মাল স্টেটমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করেছে। সেটা হয়ত ঠিক। মুশকিল হচ্ছে যে বিপ্লব এটাকে একটা ঐতিহাসিক আলোচনার বিষয় হিসেবে নিয়েছে। অনেকে যেমন অভিজিৎ ধরে নিয়েছে বিপ্লব এটাকে জৈন ধর্মের প্রচার করছে বা জৈন ধর্মের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করছে। কিন্তু সেটা নয়। নাস্তিক ধর্মের ভেতরেও উনিশ বিষ আছে। জৈন ধর্মের কিছু অনন্য বৈষিষ্ট্য থাকতেই পারে, সেটা বিপ্লব তার আলোচনার বিষয় করেছে। সব ধর্ম/দর্শনেরই কিছু অনন্যতা থাকে। যে কোনটা নিয়ে কেউ না কেউ লিখতে পারে। একটার কোন অন্যন্যতা নিয়ে আলোচনা করলে আটোম্যাটিকালি অন্য ধর্মে/দর্শনের অন্যা কোন অনন্যতাকে অস্বীকার করা হয় না।
@অপার্থিব,
না, তা কিন্তু নয়। আমি বিপ্লবের লেখাটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন করেছি। বিপ্লবের লেখাটার একটা আণ্ডারটোন ছিল যে, সমগ্র মানব প্রজাতিতে যুদ্ধ বিগ্রহ হিংসা থাকলেও (প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই এর নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছে বিপ্লব), জৈন ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে নেই বা ছিল না। লেখাটার শিরোনামেই ‘অহিংসার সন্ধান’ ব্যাপারটা স্পষ্ট। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বিপ্লব বলার চেষ্টা করেছে “আমার জ্ঞাত ইতিহাসে জানা নেই জৈন ধর্মের বা কোন জৈন হিংসার সাথে যুক্ত ছিলেন” (ইনভার্টেড কমার মধ্যেকার অংশটা বিপ্লবেরই বক্তব্য)। তানভীর হানিফ বেশকিছু উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছেন (জৈন রাজা ক্ষড়বেল, জৈন তীর্থঙ্কর, কলিঙ্গ জৈনরাষ্ট্রের উদাহরণ ইত্যাদি) ব্যাপারটা সত্য নয়। এখন তর্ক শুরু হয়েছে রাজা ক্ষড়বেল প্রকৃত জৈন কিনা তা নিয়ে (লাদেন প্রকৃত মুসলমান কিনা সেটা নিয়েও কিন্তু অনেকে তর্ক করেন)। এইগুলো তর্কের কোন সত্যিকার উপসংহার নেই, এগুলো বস্তুনিষ্ঠ নয়, বরং ব্যক্তিনিষ্ঠ। আসলে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লোভ, হিংসা, যুদ্ধ সব সমাজেই ছিল। কোথাও কম বা কোথাও বেশি। লোভ, হিংসা, যুদ্ধ-বিহীন সমাজ বিবর্তনীয় যাত্রাপথ তথা কালচারাল ইউনিভার্সালের সাপেক্ষে ‘কাঁঠালের আমসত্ত্বের’ মতই।
এই কাঁঠালের আমসত্ত্ব খোঁজার চেষ্টা যে অতীতে হয়নি তা নয়, বহু হয়েছে। ‘নৃতত্ত্বের রাণী’ মার্গারেট মীড যুদ্ধ এবং হিংসাবিহীন স্যামোয়া জাতির সংস্কৃতি খুঁজতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ডেরেক ফ্রিম্যানসহ অন্যান্য গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, মীডের অনুকল্পগুলো স্রেফ ‘উইশফুল থিংকিং’ ছাড়া আর কিছু ছিলো না। গবেষকেরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, মীডের গবেষণা ছিলো একেবারেই সরল এবং মীড স্যামোয়ান মেয়েদের দ্বারা নিদারূণভাবে প্রতারিত হয়েছিলেন। ফ্রিম্যানের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এলো, স্যামোয়ান্ জাতির মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, ঘৃণা, হত্যা লুণ্ঠন- আর দশটা জাতির মতই প্রবলভাবে বিদ্যমান, সরলমনা মীড সেগুলো দেখতেই পাননি। ডেরেক ফ্রিম্যানের অনুমান এবং অভিযোগের একেবারে সরাসরি সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় মীডের গবেষণা প্রকাশের ষাট বছর পর। ১৯৮৮ সালের মে মাসে ফাপুয়া (Fa’apua’a), যখন তার বয়স ৮৬ বছর অফিশিয়ালি স্যামোয়ান সরকারের কাছে স্বীকার করে নেন যে, তিনি আর তার বন্ধু ফোফোয়া স্যামোয়ান নারীদের যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে যে তথ্য মীডকে ১৯২৬ সালে দিয়েছিলেন তার সবটুকুই ছিলো বানোয়াট। এ কম্পলিট হোক্স।
শুধু একটি নয়, এই ধরণের হোক্সের নিদর্শন আমরা অনেকই পেয়েছি। এ ধরনের আরেকটা হোক্স প্রমোট করতে গিয়ে লেজে গোবরে করেছিলেন এলিজাল্ডে জুনিয়র – ফিলিপাইনের এক জঙ্গলে টেসাডে (Tasaday)দের নিয়ে গবেষনায়। তিনি দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন ফিলিপাইনের এই আদিম ট্রাইব নাকি এমনই শান্তিপ্রিয় যে তাদের ভাষাতে সহিংসতা, আগ্রাসন কিংবা সংঘর্ষসূচক কোন শব্দই নেই। তাদের সংস্কৃতি একেবারে শান্তিতে শান্তিময়। এই মহা ব্যতিক্রমী শান্তিপূর্ণ মানবপ্রজাতি নিয়ে ১৯৭৫ সালে একটি বইও বের হয়েছিল ‘শান্ত টেসাডে’ নামে। কিন্তু থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে সময় লাগেনি। আশির দশকের শেষদিকে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসলো যে ম্যানুয়েল এলিজাল্ডের আগেকার কাজকর্ম আসলে ছিলো পুরোটাই সাজানো । আশে পাশের গ্রাম থেকে জিন্স আর টিশার্ট পরা সুশিক্ষিত ছেলেপিলেদের ছাল বাকল পরিয়ে ‘শান্ত টেসাডে’ সাজানো হয়েছিল। টেসাডের শান্তিময় ধরণের কোন ট্রাইবই আসলে ফিলিপাইনে নেই, ছিলোও না কখনোই। সত্তুরের দশকে ফিলিপাইনের একনায়ক ক্ষমতাশীন মার্কোস সরকারের পরিকল্পনায় ম্যানুয়েল এলিজাল্ডের কুকর্মে ইন্ধন যোগানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিলো ‘শান্ত টেসাডে’কে পুঁজি করে বহির্বিশ্বে ফিলিপাইনের ইমেজ বাড়ানো।
স্যামোয়া আর টেসাডের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলোই আমাদের বলে দেয় যুদ্ধবিহীন জৈনজাতিও একটা হোক্স হবার সম্ভাবনাই বেশি। এগুলো আমার কাছে ভং চংই মনে হয়।
@অভিজিৎ,
গান্ধীবাদ হচ্ছে জৈন ধর্মের রাজনৈতিক রূপ। বা জৈনদের মত করে হিংসাকে ডিল করা।
তাহলে অভিজিতের কথা অনুযায়ী গান্ধীবাদের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই-সেটা ভং চং।
অর্থাৎ বিংশ শতাব্দির সব থেকে জনপ্রিয় প্রতিবাদি আন্দোলন সম্পূর্ন ফালতু 😕
এরপর বিশেষ কিছু বলার থাকে না। পাঠকই অভিজিতের বিচার করবেন। কারন কোন যুক্তিতে গান্ধীবাদি প্রতিবাদি আন্দোলন ভং চং, তার উত্তর এই পৃথিবীতে সম্ভবত অভিজিতের কাছেই আছে :guru:
আলট্রিউজিম একটি বিশেষ সারভাইভাল স্ট্রেটেজি-এবং বায়োলজিতে এই নিয়ে প্রচুর স্টাডিও হয়েছে। রেসিপ্রীক্যাল আলট্রিউজমের সাথে গান্ধীবাদের সম্পর্ক নিয়ে মুক্তমনাতেই লিখেছিলাম বছর দুয়েক আগে
http://mukto-mona.com/wordpress/?p=613
@বিপ্লব পাল,
নাইস ট্রাই। বিতর্ক হচ্ছিল জৈন ধর্ম নিয়ে এক লাফে দেখছি গান্ধীবাদে চলে গেলে। হাঃ হাঃ। আচ্ছা ভাল। শাখামৃগের মত এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে বেড়ালে কী আর করা! ‘গান্ধীবাদের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি’ খোঁজার আমার দরকার নাই। গান্ধীবাদের লড়াই আমার কাছে ছিল আদর্শিক, বৈজ্ঞানিক কিছু না। তার অনেক ভাল দিকের বাইরে মূল আদর্শ ছিল গোঁড়া হিন্দুত্ব, সতীত্ব প্রমোট, চড়কা কেটে ইংরেজ তাড়ানোর মত মত ভং চংই। ওয়েল, তুমি গান্ধীবাদ আদর্শিক কারণে সাপোর্ট কর ভাল কথা, সবকিছুর মধ্যে গান্ধীবাদ টেনে এনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খোঁজার চেষ্টাটা বরং বাদ দাও। গান্ধীবাদের অনেক কিছুই যে অবৈজ্ঞানিক ছিল তা রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বুঝে গিয়েছিলেন। তুমি নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত কাল্ট অব চরকা প্রবন্ধটির কথা জান (না পড়া থাকলে সিরিয়ালি ওটা পড়ে নাও)। শিল্প, বিজ্ঞান বাদ দিয়ে আদিম হাতুড়ে পদ্ধতি প্রমোট করে গান্ধীর তাঁত বুনে বিপ্লব করার হাস্যকর চেষ্টা দেখে কবিগুরু এক সময় লিখেছিলেন –
আর তুমি খোঁজ গান্ধীবাদে মধ্যে ‘বৈজ্ঞানিক ভিত্তি’, ভাল। 🙂
গান্ধীবাদের সতীত্ব প্রমোট করাটাই বা কতটুকু বৈজ্ঞানিক ছিল? এমনকি সর্ষের মধ্যেও যে ভুত ছিল সেটা কিন্তু বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে, তোমাদের পত্র পত্রিকাতেই বেরুচ্ছে –
Thrill of the chaste: The truth about Gandhi’s sex life
খুব বৈজ্ঞানিক মনে হচ্ছে এখন?
এমনকি যে অহিংসা নীতির জন্য যে গান্ধীকে মাথায় করে রাখা হয়, সেটাও বহু ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। হ্যা জনপ্রিয় ইতিহাসে অহিংসার নায়ক হিসেবে অভিহিত করা হলেও গান্ধী যে বহু জায়গাতেই আসলে সাধারণ মানুষের মতই ‘ভায়োলেন্ট’ ছিলেন তার অনেক উদাহরণই আছে। আমার সেগুলো নথিবদ্ধ করে আলোচনা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই। সুনীতি কুমার ঘোষের ‘ইন্ডিয়া এণ্ড রাজ’ বইয়ে এর অনেক উল্লেখ আছে। তুমি একটু পড়ে নিও।
আর সবচেয়ে হাস্যকর হচ্ছে তোমার প্রানীজগতের বিবর্তনের সাথে গান্ধীবাদকে জুড়ে দিয়ে ‘বিজ্ঞান’ বানানোর চেষ্টা। এগুলো বাদ দিলে হয় না? ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। এর আগেও এটা নিয়ে আমি আমার অভিমত দিয়েছিলাম, এখনো দিচ্ছি। তুমি যদি মনে কর প্রকৃতি গান্ধীবাদ অনুসরণ করে চলছে তাহলে তুমি আসলে বিবর্তনের কিছুই বোঝনি। আন্তঃপ্রতিযোগিতা আর অন্তঃপ্রতিযোগিতার কারণে প্রকৃতি যে কতটা নিষ্ঠুর সেগুলো হোরাসের এই পোস্টটা দেখলেই বুঝবে।
কিছু উদাহরণ দেই।
মায়ের গর্ভে থাকা অবস্হাতেই শিশু হাঙরেরা একজন আরেকজনকে আক্রমণ করে হত্যা করে এবং তাদের খেয়ে ফেলে যা তাদের পুষ্টি জোগায়। তোমার এটা গান্ধীবাদের অহিংসা চর্চা মনে হচ্ছে? ব্লু ফুটেড বুবিজ -এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাচ্চাটি তার অন্য ছোট ভাই-বোনদের ঠোকর দিতে দিতে মেরে ফেলে অথবা বাসা থেকে বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে ছোট বাচ্চাটি খাদ্যের অভাবে কিংবা অন্য প্রাণীদের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়। চমৎকার গান্ধীজম না? সবচেয়ে জানা এবং দেখা উদাহরণটাই দেই। একে তো কোকিল অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে, তার উপর কোকিল শিশু ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথেই সে যে কাজটি করে তা হলো কাকের অন্য ডিমগুলোকে বাসা থেকে ফেলে দেয়া, এমনকি অন্য ডিম থেকে জন্ম নেয়া বাচ্চাকেও। দেখা গেছে এই কাজটি করতে কেউ তাকে শিখায় না, এটা জেনেটিকভাবেই অঙ্কুরিত – মানে সহজাত প্রবৃত্তির বশেই সে করে থাকে। এই কাজটা সে করে ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথেই, প্রায় অন্ধ অবস্হাতেই। কি বুঝলে? গান্ধীজম? তাতেও যদি তোমার না পোষায়, সবচেয়ে ভাল উদাহরণটা দেই তোমাকে। ইকনিউমেন (Ichneumon) প্রজাতির এই প্যারাসিটোয়েড বোলতারা একটি শুঁয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং সেটার দেহে ডিম পাড়ে। অর্থাৎ, শিকারকে সরাসরি হত্যা না করে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে। এই ডিম ফুটে যে শূককীট (larva) বের হয়, তা শিকারের দেহের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। স্ত্রী বোলতাগুলো তার শিকারের প্রত্যেকটি স্নায়ুগ্রন্থি সতর্কতার সাথে নষ্ট করে দেয় যাতে তাদের শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃতির এই ঢালাও নিষ্ঠুরতা দেখে এক সময় বিচলিত হয়েছিলেন ডারউইনও। তিনি প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর বীভৎসতা দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন; তিনি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন –
কী চমৎকার গান্ধীজম না? হ্যা, তুমি হয়তো উল্টো উদাহরণও প্রকৃতি থেকে দিতে পার, যেমন ক্লাউন মাছ আর এনিমোনের সহবিবর্তন, আমাদের দেহে বাস করা উপকারী ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি। কিন্তু এই পরার্থতা গান্ধিজমের কারণে ঘটে নাই, বরং ঘটেছে একেবারেই উল্টো – অর্থাৎ ‘স্বার্থপর’ কারণে। বিবর্তন তত্ত্বই বলে – প্রতিযগিতামূলক জীবন সংগ্রাম থেকেই তৈরি হয় বিভিন্ন ধরণের পারষ্পরিক সহযোগিতা, মিথোজীবীতা কিংবা সহ-বিবর্তন। এটা টিকে থাকার প্রয়োজনেই সৃষ্ট। ক্লাইন মাছ আর এনিমোনে সহবিবর্তন ঘটায় ক্লাউন মাছগুলো যেমন বড় শিকারী মাছগুলো থেকে আত্মগোপন করতে পারে, তেমনি আবার এনিমোনগুলো উপকৃত হয় তার দেহের শ্যাওলা ক্লাউন মাছেরা খেয়ে ফেলে বলে। উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার উদাহরণও তাই। আমাদের দেহে বাস করার ফলে আমরা যেমন এদের দিয়ে উপকৃত হচ্ছি, তেমনি সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোও উপযূক্ত পোষক দেহ পেয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছে। দুজনের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে বলেই এদের সহবিবর্তন হচ্ছে, ‘অহিংসা নীতির’ গান্ধিজমের প্রয়োজনে নয়। প্লিজ দয়া করে একগাদা ফালতু পেপারের রেফারেন্স দিয়ে দিও না (এ ধরণের ক্ষেত্রে তুমি তাই কর), বরং বায়োলজিস্টদের দেয়া বেসিক কন্সেপ্টটা পরিস্কার কর। এক্ষেত্রে ডকিন্সের ‘সেলফিশ জিন’ বইটা আগাগোড়া পড়তে পার, তাইলেই বুঝবে গান্ধিজমের জন্য নয় – স্বার্থপররতা থেকে কীভাবে পরার্থতার উদ্ভব ঘটে প্রকৃতিতে। বিজ্ঞানী উইলিয়াম হ্যামিলটন বা জর্জ উইলিয়ামস-এর কাজ এ ব্যাপারে মাইলফলক, কোন বিরিঞ্চিবাবার ‘গান্ধীজমের থিওরি’ নয়। বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস বলেছেন –
ডারউইন নিজেও ধারণা করেছিলেন যে, তার বিবর্তন তত্ত্ব সত্যি হলে, প্রকৃতিতে এমন কোন জীব পাওয়া যাবে না যে শুধু নিঃস্বার্থভাবে অন্য প্রজাতির সেবা করার জন্য বেঁচে থাকে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মেই সে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য। ডারউইন তার ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ বইতে তার পাঠকদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এ ধরণের একটা প্রজাতি খুঁজে বের করার জন্য, এবং আজ পর্যন্ত কেউ সে চ্যালেঞ্জের উত্তর দিতে পারেনি। তোমার ‘গান্ধীজমকেন্দ্রিক বিবর্তনবাদ’ সত্য হলে এমন প্রজাতি বহু আগেই পাওয়া যেত। গান্ধীবাদ দিয়ে বিবর্তন ব্যাখ্যা করার আগে – এটা নিয়ে আরো একটু ভাব, কেমন?
শেষ কথা বলি – তোমার ফেভারিট ‘গান্ধীজমের বিজ্ঞান’ প্রমোট না করে বিবর্তন যে রকম সেটা সেভাবেই থাকতে দিলে হয় না? তোমার গান্ধীজম ভাল লাগে বলে বিবর্তনকেও সেই পথে কাজ করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করতে গেলে ন্যাচারালিস্টিক ফ্যালাসি এবং মরালিস্টিক ফ্যালাসিতে আক্রান্ত না হওয়াই বরং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 🙂
সমস্যা শুধু ধর্মকে নিয়ে নয় বা ঈশ্বরকে নিয়েও নয়–অন্যকিছুও এদের স্হান সহজেই দখল করতে পারে। এভিডেন্সবিহীণ গাঁজাখুড়ি বিশ্বাস আপাত:দৃষ্টিতে নির্বিষ মনে হলেও এর মধ্যে এক্সপ্লয়টেশান এবং হিংস্রতার পোটেনশিয়াল লুকিয়ে থাকা অস্বাভাবিক নয়। এটিকেই বলেছি ডগমা। ডগমা সহজেই সিদ্ধান্ত নেয় আর “পরম” শব্দটি এর কাছে অতীব প্রিয়। জীবন এবং জগতের উদ্দেশ্যের প্রশ্নটাই অবান্তর। প্রচলিত ঈশ্বরবাদী ধর্মগুলো ছাড়াও এই ডগমা হতে পারে মার্ক্সবাদ, হতে পারে নাৎসিবাদ, হতে পারে ভারতীয় অসনাতন ধর্মাবলী। কতকগুলো ভিত্তিহীণ বিশ্বাস দিয়ে ইনডকট্রিনেট করে মানুষকে নৈতিকতা শেখানোর বিষয়টা কতটুকু কার্যকরী সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে(আর আসলেও ঠিক সেটিই হয়েছিল কিনা–ঘটনা অন্যকিছু সে প্রশ্নও আসতে পারে)। এইসকল বিশ্বাসের অভাব যদি প্রাচীণ মানবসমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে তাহলেতো এগুলোর প্রয়োজণ বর্তমানেও থেকে যায়। বর্তমানেওতো কতকগুলো ভিত্তিহীণ বিশ্বাসের অভাবে মানুষ উদ্দেশ্যহীণতা আর ভোগবাদে ডুবে উচ্ছন্নে যেতে পারে। এদিক থেকে তৎকালীন আর বর্তমান মানুষের মধ্যে মৌলিক তফাৎটা ঠিক কি?
@তানভীর হানিফ,
জেনারেল প্রশ্ন করে লাভ নেই। আপনি বরং স্পেসিফিক বা নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিন
[১] জৈন ধর্মের ইতিহাসে শোষন, রক্ত , হিংস্রতার উদাহরন দিলে ভাল হয়। কারন আমার জানা নেই। গান্ধীর দর্শনের ভিত্তি জৈন ধর্ম।
[২] জৈন ধর্ম পরম সত্য বিশ্বাস করে না- পরম বাস্তবতাতেও বিশ্বাস করে না। তারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। সেখানে ডগমার স্থানটা কোথায়? কিছুতে বিশ্বাস করলেই তা ডগমা হবে, এটাকে কি করে এক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন?
@বিপ্লব পাল,
জৈন ধর্মের ইতিহাসে শোষন, রক্ত , হিংস্রতার উদাহরন দিলে ভাল হয়। কারন আমার জানা নেই। গান্ধীর দর্শনের ভিত্তি জৈন ধর্ম।
অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। জৈন রাজা, মিলিটারি কমান্ডার বা সৈন্যের কথা কি ইতিহাসে নাই?
রাজা অশোক কি ছিলেন? কলিঙ্গ যুদ্ধের নৃশংসতা কি তাঁর নেতৃত্বেই হয়নি? পরে তো তিনি বৌদ্ধ
ধর্ম গ্রহণ করে অহিংসাবাদী হন। এর আগের যেই চন্ডাশোক সে কোন ধর্মের অনুসারী ছিল? জৈন ধর্মে নরকের উপস্হিতি কি এর অহিংস রূপের পরিচায়ক?
আমি প্রবন্ধে লিখেছি যে এথেইজম নাস্তিকতা না। কিন্ত এথেইজম মানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি -সেটা জৈন ধর্মের উপপাদ্য। সুতরাং জৈন ধর্মকে এথেইজম বলা অসঙ্গত।
এ্যাথেইজম প্রচলিত অর্থে অবশ্যই নাস্তিকতা।তবে ভারতীয় দর্শনের পরিভাষা হিসেবে নাস্তিক্যবাদ বা নাস্তিকতা আর ইংরাজী এ্যাথেইজম এক বস্তু নয়।
একটি বিষয় আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি একবার বললেন “এথেইজম মানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি -সেটা জৈন ধর্মের উপপাদ্য।” এরপর বললেন “সুতরাং জৈন ধর্মকে এথেইজম বলা অসঙ্গত।” পরস্পরবিরোধী হয়ে গেলনা? হয়ত আমার বুঝার কিছু ভুলও হতে পারে।
পরম সত্য বলে কিছু নাই–এটিও একটি পরম স্টেটমেন্ট।পরম সত্য বলে কিছু নাই এই স্টেটমেন্টিকেও পরম সত্য বলে মেনে নেওয়া তাহলে একজন জৈনের পক্ষে অসম্ভব। জৈন ধর্মের চারটি “স্তম্ভ” বা পিলার বলে যদি কিছু থেকে থাকে আর সেগুলো যদি পরম সত্য না হয় তাহলে জৈন ধর্মতো নিজেই নিজেকে নালিফাই করে ফেলে। আর আপনি কি বলতে চান অহিংসা আর অহিংসালব্ধ মোক্ষকেও জৈনরা পরম সত্য বলে মানে না? তাহলে আর নিজেকে জৈন বলে লেবেল করবার দরকারটাই বা কি?
আর পরম সত্যের সংজ্ঞাটাই না কি? ঈশ্বর নাকি বাস্তব জগৎ? ঈশ্বরের কোন বৈজ্ঞানিক বা অন্যকোন সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না দেওয়া গেলেও চিরন্তন মহাবিশ্বের সম্ভাবনা কি বিজ্ঞান নাকচ করে দিয়েছে? অবজার্ভেবল ইউনিভার্স সত্য, আমাদের অস্তিত্বও সত্য–এতে পরম বিশেষণ লাগানোর দরকারটাই বা কি? প্রথমত: মহাবিস্ফোরণ হল স্থান-কাল, বস্তু-শক্তির সূচনা কিন্ত নট নেসেসারিলি সেটি পরম শুণ্যতা–বিজ্ঞান সেরকম কোন পরম সিদ্ধান্ত নিতে ইন প্রিন্সিপল বাধ্য কিন্ত নয়। আর সেটি যদি পরম শুণ্যতাও হয় তাহলে সেটিকেও পরম সত্যের সংজ্ঞা না মানবার হেতুই বা কি হতে পারে? আমরা অবশ্য এখন জানি যে মহাবিশ্ব কোন বিন্দুতে মিলিয়ে যাবেনা কখনও। এর সমস্ত কিছুই (এমন কি মহাবিশ্বের চিরন্তনতা অর্থে পরম সত্যের সম্ভাব্যতাও) একজন ডগমাবিহীণ নাস্তিক বা সন্দেহবাদীর পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব নয়–কিন্ত চার স্তম্ভের ডগমা কারও মাথায় ঢোকানো হলে সেটি হয়ত অসম্ভবও নয়।
@তানভীর হানিফ,
আমার জানা নেই। অশোক প্রথম জীবনে জৈন ছিলেন না-উনার পিতামহ জৈন ছিলেন। অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহনের আগে তন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। সুতরাং আপনি এখনো উদাহরন দিতে পারলেন না।
আমি প্রবন্ধে লিখেছি যে এথেইজম নাস্তিকতা না। কিন্ত এথেইজম মানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি
এখানে শব্দ বিপর্যয় হয়েছে-আমার লেখা উচিত ছিল জৈন ধর্মকে এথেইস্ট বলা সঙ্গত।
পরম সত্য বলে কিছু নাই–এটিও একটি পরম স্টেটমেন্ট।পরম সত্য বলে কিছু নাই এই স্টেটমেন্টিকেও পরম সত্য বলে মেনে নেওয়া তাহলে একজন জৈনের পক্ষে অসম্ভব। জৈন ধর্মের চারটি “স্তম্ভ” বা পিলার বলে যদি কিছু থেকে থাকে আর সেগুলো যদি পরম সত্য না হয় তাহলে জৈন ধর্মতো নিজেই নিজেকে নালিফাই করে ফেলে। আর আপনি কি বলতে চান অহিংসা আর অহিংসালব্ধ মোক্ষকেও জৈনরা পরম সত্য বলে মানে না? তাহলে আর নিজেকে জৈন বলে লেবেল করবার দরকারটাই বা কি?
জৈন ধর্মের এই চার স্তম্ভ যে ঐশ্বরিক, স্বর্গীয় এসব দাবীত জৈনরা করে না-উপায় ও নেই। কারন এ ধর্ম ঈশ্বরের জন্মের আগের! জৈনরা বলে আবাহমান কাল থেকে মানুষ এবং সমাজ এই নীতিগুলি পালন করে সুখে থাকে। আপনি প্রাক ঈশ্বরপূর্ব যুগটাকে না বুঝলে এ ধর্ম বুঝবেন না।
পরম সত্যের জন্যে আপনাকে প্রথম প্রশ্ন করতে হয়?
সত্য বা ট্রুথ কি বস্ত?
কারন তার মিমাংসা না হলে, সে সত্য চরম না পরম না আপাত সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে।
সত্য হচ্ছে বাস্তবতার দর্পন। আপনি বাস্তবতাকে বাক্যে বা ল্যাঙ্গুএজে ধরতে চাইছেন। যেমন মাইক্রো জগতের বাস্তবতা প্রকাশ পায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সে-তার মানে কিন্ত এই না যে বাস্তবতাটা বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করে ফেলেছেন-তারা বাস্তবতাকে বোঝার রাস্তা পেয়েছেন। এবং বোঝাটা কখনোই সম্পূর্ন হতে পারে না-সম্পূর্ন সত্য হতে পারে না-এটা বিজ্ঞানের দর্শনের প্রথম প্রতিপাদ্য যা কার্ল পপারের বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত্তি প্রস্তর। পরম বৈজ্ঞানিক সত্যের অস্তিত্ব থাকলে বিজ্ঞানের দর্শনটাই উঠে যাবে যে!
বিজ্ঞান হচ্ছে সেই ভাষা যে ভাষায় কথা বললে বাস্তবতাকে প্রকাশ করার সত্যে ভুল কম হয় বা মিথ্যে কম থাকে। এটাই পপারের ফলসিফিকেশন তত্ত্ব যার ওপর গোটা বৈজ্ঞানিক দুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। যার জন্যে সব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় হাইপোথিসিসকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়।
জৈনরা ঠিক এটাই মানে যে বাস্তবতাকে পরম সত্যে ধরা যায় না-যা বিজ্ঞানের দর্শনের ও প্রথম উপপাদ্য। জৈনরা এই ব্যাপারে ভুল হলে বিজ্ঞানের দর্শন ও ভুল। কারন এই দুই এর উপপাদ্য এক।
আমার জানা নেই। অশোক প্রথম জীবনে জৈন ছিলেন না-উনার পিতামহ জৈন ছিলেন। অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহনের আগে তন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। সুতরাং আপনি এখনো উদাহরন দিতে পারলেন না।
জৈন ধর্মে তন্ত্র সাধনার কথা কি আপনার জানা আছে? বৌদ্ধ ধর্মেও তন্ত্র আছে। তন্ত্র কি কোন স্বতন্ত্র ধর্ম নাকি? ডেভিড ওয়াইটের বইটি তাহলে পড়ে দেখতে পারেন। অশোকের পিতামহ এবং পিতা জৈন কিন্ত অশোক নন–এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? যাই হোক, অশোকের জৈন পিতামহ চন্দ্রগুপ্তের রক্তপাতের ইতিহাস পড়ে দেখতে পারেন।
কিন্ত এথেইজম মানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি
এ্যাথেইজমের সংজ্ঞা কি তাই? এর উপযুক্ত তথ্যসূত্র দিলে কৃতার্থ থাকব।
জৈন ধর্মের এই চার স্তম্ভ যে ঐশ্বরিক, স্বর্গীয় এসব দাবীত জৈনরা করে না-উপায় ও নেই। কারন এ ধর্ম ঈশ্বরের জন্মের আগের! জৈনরা বলে আবাহমান কাল থেকে মানুষ এবং সমাজ এই নীতিগুলি পালন করে সুখে থাকে। আপনি প্রাক ঈশ্বরপূর্ব যুগটাকে না বুঝলে এ ধর্ম বুঝবেন না।
তাহলে তারা যা বলে তা ভিত্তিহীণ। কারণ আবহমান কাল ধরে মানুষ কি করে সুখী থাকছে সেই “প্রত্যাদিষ্ট” জ্ঞানের দাবী করার ধৃষ্টতা তারা কিভাবে দেখায়? “মেয়ার এ্যাসারশান ইজ এ ফ্যালাসি–নট এ ফ্যাক্ট”।প্রাক ঈশ্বরপূর্ব যুগটি সম্পর্কে আসলেই জানতে চাই। কিন্ত সেজন্যও সলিড রেফারেন্সের অনুরোধ আপনাকে করতে হচ্ছে।
বাকী জবাব আগামীকাল দেব। অসংখ্য ধন্যবাদ।
@তানভীর হানিফ,
মিঃ হানিফ-আপনি একটু চেষ্টা করে ইতিহাসটা পড়লে আমাকে লিখতে হত না।
সম্রাট অশোকের পিতামহ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ২৯৮ খৃষ্টপূর্বাব্দে জৈনগুরু ভদ্রবাহুর সংস্পর্ষে এসে সাম্রাজ্য ত্যাগ করেন এবং সন্নাস নেন। তখন তার বয়স মাত্র ৪২।
জৈন ধর্ম গ্রহনের পর সংসার এবং রাজ্যত্যাগ ভারতের ইতিহাসে একাধিক রাজা করেছেন।
তার ছেলে বিম্বিসার পাটলিপুত্রের সিংহাসনে বসেন। বিম্বিসারের ধর্ম ছিল আজিভিকা-যা আরেকটি প্রাচীন ভারতীয় নাস্তিক ধর্ম যা বর্তমানে লুপ্ত।
আশোকের মামার দিকের ধর্ম ছিল ব্রাহ্মন্য যারা আজিভিকা ধর্মের অনুসারী ছিল। তার মাতাও এই ধর্মে ছিলেন। সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের আগে আজিভিকা ধর্মের তন্ত্রের অনুরাগী ছিলেন।
@তানভীর হানিফ,
বিপ্লবের আলোচ্য বিষয় জৈন ধর্ম। জৈন আইডেন্টিটির বাহক কোন ব্যক্তির কর্মকান্ড নয়। কার পিতৃ পরিচয় কি বা কোন জৈন কি করেছিল সেটা প্রাসংগিক কেন হবে। জৈন ধর্মে সহিংসতা আছে কি নেই সেটাই মুখ্য। অনেকে এও তো বলে যে স্ট্যলিন, মাও এরা নাস্তিক হয়েও তো কত নিরীহ লোক হত্যা করেছে, কাজেই নাস্তিকতাও অহিংস নয় ইত্যাদি। কোন বিশেষ ধর্ম বা দর্শনকে শুধু আইডেন্টিটি হিসেবে ধারণ করে কেউ কোন সহিংসতায় লিপ্ত হলে তার দায়িত্ব সেই ধর্মের বা দর্শনের নয়, যদি না সেই ধর্ম বা দর্শনেই সহিংস বার্তা বিধৃত থাকে। কুরাণে সুস্পষ্ট সহিংস বাণী আছে। অন্য কোন ধর্ম গ্রন্থে (যা অনুসরণ করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক) অন্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি সেরকম সুস্পষ্ট কোন আদেশ নেই। খ্রীষ্টানে ধর্মের মূল কথা হল যীশুর বাণী মেনে চলা। কারণ যীশু ইশ্বরের এক রূপ। কিন্ত যীশু অন্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহিংসতা বা অসহনশীলতা প্রচার করেননি।
@যাযাবর,
এখানেও জৈন ধর্ম বিশেষ ব্যতিক্রম। আমার জ্ঞাত ইতিহাসে জানা নেই জৈন ধর্মের বা কোন জৈন হিংসার সাথে যুক্ত ছিলেন। সাধারনত যেসব রাজারা জৈন ধর্ম নিতেন, তারা ধর্ম গ্রহনের পর রাজ্যপাট ত্যাগ করে সন্নাসী হয়েছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।
আমি কেন লিখলাম ধর্মের কারনে ইসলামে বা হিন্দু ধর্মে হিংসা সিদ্ধ-সেটাও বোঝা দরকার। এই দেশ ভাগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ-সব কিছু নৃশংসতার পেছনে ধর্মের হাত আছে। পশ্রয় আছে। সবাই ভাবছে আত্মরক্ষার জন্যে বা ধর্ম রক্ষার জন্যে যুদ্ধ করে চলেছে। ওসামা বিন লাদেন ও তাই ভেবে গেছে। মুসলমান হিন্দু সন্ত্রাসবাদিরা সবাই ধার্মিক লোক। এগুলো অস্বীকার করা যাবে না। কারন এই ধর্ম গুলি সহিংস। এবং হিংসার ব্যাপারে আমি হিন্দু ধর্মকে সবার ওপরে রাখব। এই জন্যেই যে আর কোন ধর্ম নেই যা যুদ্ধ ভূমি থেকে জন্ম নিয়েছে। হিন্দু ধর্ম একজন যোদ্ধার ধর্ম। ইসলামেও সহিংস আয়াত প্রচুর-যার সবটাই ধর্ম রক্ষা করার জন্যে হয়ত-কিন্ত বাস্তব ত এটাই যে জৈন ধর্মে হিংসা কোন ভাবেই আসে না। এমন কি জৈন ধর্ম রক্ষা করা বা প্রান রক্ষার জন্যেও জৈনরা হিংসা বা যুদ্ধের কথা বলে না। এটা পরম অহিংস ধর্ম। এই জন্যেই জৈন ধর্মের ইতিহাসে হিংসার নমুনা নেই-সামান্য কিছু থাকলেও আমার জানা নেই হয়ত।
@যাযাবর,
আপনার সাথে একমত। তবে আমার এত কথা বলবার কারণটি পষ্ট হবে যদি আপনি উনার নীচের বক্তব্যটি পড়েন। তিনি খ্রীষ্টান ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মের কথাও কিন্ত বলেননি। জৈন ধর্মাবলম্বীদের তিনি সিংগল আউট করেছেন। সে বিষয়টি খেয়াল করুন।
@তানভীর হানিফ,
আইন কি করে প্রণয়ন করে? আপনার যুক্তি মানলে পৃথিবীতে আইনের অস্তিত্বই থাকবে না।
ধরুন ডিভোর্স সংক্রান্ত আইন। কি ঠিক -কি বেঠিক আইন তা আইনসভা কি করে ঠিক করে? তারা সমাজের গরিষ্ঠ অংশের উপকারের কথা ভেবেই এটা করে এবং তা অভিজ্ঞতাবাদ থেকেই উদ্ভুত। জৈনদের পদ্ধতি এর বাইরে আলাদা কিছু না। এবং সেই জন্যেই আমি ইউলেযটেরিয়ান দর্শন বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মঙ্গলকামনার ওপর তৈরী নৈতিকতা এবং আইনের সাথে জৈন দর্শনের তুলনা করেছিলাম।
প্রাক ঈশ্বরপূর্ব সমাজ নিয়ে খুব বেশী কিছু আবিস্কার এখনো হয় নি। আমি মানুষের বিবর্তন নিয়ে অনেকগুলি ডকুমেন্টারি সম্প্রতি দেখেছি। মোটামুটি ভাবে নিওলিথিক কবর যেগুলি পাওয়া গেছে, তাদের নিয়ে যেটুকু জানা গেছে [ যার অনেকটাই অনুমান]-তার ওপর ভিত্তি করেই আমি লিখেছি। আপনি এই লিংকে মানুষের ঈশ্বরযুগের আদিতে মৃত্যু সংক্রান্ত রিচ্যুয়াল নিয়ে কিছু তথ্য পাবেন
@বিপ্লব পাল,
আইন কি করে প্রণয়ন করে? আপনার যুক্তি মানলে পৃথিবীতে আইনের অস্তিত্বই থাকবে না।
ধরুন ডিভোর্স সংক্রান্ত আইন। কি ঠিক -কি বেঠিক আইন তা আইনসভা কি করে ঠিক করে? তারা সমাজের গরিষ্ঠ অংশের উপকারের কথা ভেবেই এটা করে এবং তা অভিজ্ঞতাবাদ থেকেই উদ্ভুত। জৈনদের পদ্ধতি এর বাইরে আলাদা কিছু না। এবং সেই জন্যেই আমি ইউলেযটেরিয়ান দর্শন বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মঙ্গলকামনার ওপর তৈরী নৈতিকতা এবং আইনের সাথে জৈন দর্শনের তুলনা করেছিলাম।
জ্বি। আইনতো অনেকরকমই হয়। সবই কি অভিজ্ঞতাপ্রসূত এবং মানুষের সার্বিক কল্যানের ওপর ভিত্তি
করে প্রণিত? ডগমাভিত্তিক বা ধর্মীয় কালাকানুনকে তাহলে কি বলবেন? আর জৈনরা যেই ডগমাগুলো মেনে চলে সেগুলো সেই হিসেবে কোন আইনও নয়, কল্যাণকর কিছুও নয়। ব্রহ্মচর্য্যের চরম উদ্ভট নিয়মটির কথাই উদাহরণস্বরূপ বলা যায়। আপনি যে বলেছেন যেমন বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর না থাকলেও দুঃখ এবং দুর্দশার চার পরম সত্য আছে। আমিওতো বলতে পারি জৈনদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর না থাকলেও ব্রহ্মচর্য্যের উদ্ভট নিয়মটি সহ ছয় পরম সত্য আছে। বৌদ্ধরা “পরম” সত্য আছে বলেছে এবং জৈনরা “পরম” সত্য নাই বলেছে–এটিরও সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র আবশ্যক।
@তানভীর হানিফ,
দেখুন আমি আবার বলছি আপনি ইতিহাস পড়াশোনা করে লিখলে ভাল হয়। আইনের ইতিহাস পড়লে আপনি দেখবেন- বাংলাদেশের আইনের ইতিহাসই যদি দেখেন তাহলে দেখবেন
কিছু আইন ধর্মীয় শরিয়া আইন আর অধিকাংশই বৃটিশ আইন। বৃটিশ ধর্ম নিরেপেক্ষ আইনগুলির জন্ম বৃটিশ দার্শনিক মুভমেন্ট থেকে-যার নাম ইউলিটেরিয়ান দর্শন।
যেসব দেশগুলিতে ধর্মীয় প্রবণতা বেশী যেমন ধরুন বাংলাদেশ, সৌদি আরব বা অন্যান্য মুসলিম দেশগুলিতে বৃটিশ ধর্ম নিরেপেক্ষ আইনগুলির চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শরিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশী। সেটার কারন ওরা আল্লা প্রদত্ত আইন চাই বলে চিৎকার করে। সেই সব দেশের অধিকাংশ সংস্কারক যে আইন চেয়ে এসেছে, তার ভিত্তি ত সেই ইউলেটেরিয়ান দর্শন, যা জৈনদের আইনের ও ভিত্তি। সুতরাং এটা দাবি করা অসঙ্গত না জৈনদের এই আইনগুলির ভিত্তি ইউলেটেরিয়ান যা আধুনিক।
মজার ব্যাপার হচ্ছে শরিয়া আইনগুলিও কোরান থেকে আসে নি০এদের অধিকাংশই হচ্ছে ৩০০০-৫০০০ বছরের পুরানো আইন যা সিরিয়ান বা ঐ ধরনের নিওলিথিক সভ্যতায় প্রাচীন কাল থেকে ব্যাবহৃত হয়ে এসেছে এবং তা তাদের সময়ের প্রেক্ষিতে ছিল ইউলেটেরিয়ান।
ব্রহ্মচর্য্য বা যৌন জীবনে কি ভাল কি খারাপ-সেই প্রশ্ন আমার কাছে অবান্তর এবং অর্নিনেয়। সুতরাং কেও যদি লিব্যারাল বা রক্ষনশীল জীবন জাপন করে, কে ভাল, কে খারাপ-এই ধরনের কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। এই জনেই সম্ভব না-যে জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নটিই অর্নিনেয় এবং অমীমাংসীত। আর ওই প্রশ্নের সমাধান না হলে পরকীয়া ভাল কি মন্দ, সেই সিদ্ধান্তে আসা অসম্ভব।
জৈন ধর্ম নিয়ে উকি আর্টিকেলে অনেক রেফারেন্স পাবেনঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Jainism
পরম সত্যের অনুপস্থিতি এবং জৈন ধর্মের পোষ্ট মর্ডান বিশ্বদৃষ্টি , ওই আর্টিকেলে এই ভাবে লেখা আছেঃ
Jains hold the above five major vows at the center of their lives. These vows cannot be fully implemented without the acceptance of a philosophy of non-absolutism. Anēkāntavāda (“multiple points of view”) is a foundation of Jain philosophy. This philosophy allows the Jains to accept the truth in other philosophies from their perspective and thus inculcating a tolerance for other viewpoints. Jain scholars have devised methods to view both physical objects and abstract ideas from different perspectives systematically. This is the application of non-violence in the sphere of thought. It is a Jain philosophical standpoint just as there is the Advaitic standpoint of Sankara and the standpoint of the “middle way” of the Buddhists.[32] This search to view things from different angles leads to understanding and toleration of different and even conflicting views. When this happens prejudices subside and a tendency to accommodate increases. The doctrine of Anēkānta is therefore a unique experiment of non-violence at the root.[23]
দেখুন আমি আবার বলছি আপনি ইতিহাস পড়াশোনা করে লিখলে ভাল হয়। আইনের ইতিহাস পড়লে আপনি দেখবেন- বাংলাদেশের আইনের ইতিহাসই যদি দেখেন তাহলে দেখবেন
কিছু আইন ধর্মীয় শরিয়া আইন আর অধিকাংশই বৃটিশ আইন। বৃটিশ ধর্ম নিরেপেক্ষ আইনগুলির জন্ম বৃটিশ দার্শনিক মুভমেন্ট থেকে-যার নাম ইউলিটেরিয়ান দর্শন।
আপনি বলেছেন: আইন কি করে প্রণয়ন করে? আপনার যুক্তি মানলে পৃথিবীতে আইনের অস্তিত্বই থাকবে না। ধরুন ডিভোর্স সংক্রান্ত আইন। কি ঠিক -কি বেঠিক আইন তা আইনসভা কি করে ঠিক করে? তারা সমাজের গরিষ্ঠ অংশের উপকারের কথা ভেবেই এটা করে এবং তা অভিজ্ঞতাবাদ থেকেই উদ্ভুত।
এইখানে আপনি কোন স্পেসিফিক বক্তব্য দিয়েছেন এমনতো নয়। এর প্রেক্ষিতেই আমার মন্তব্য। কোন আইন ইউলেটিরিয়ান আর কোনটা অন্যকিছু সেটি বললে না হয় ইতিহাস পড়ে প্রশ্নের উত্তর দিতুম। ইউলেটিরিয়ান ব্রিটিশ আইনে যে রেসিজম, সেক্সিজম, ইম্পিয়ারিয়ালিজম, ভ্যান্ডালিজম ছিল–ইতিহাস থেকে তো সেটিও আপনার জানবার কথা।
পাথড় ছুড়ে হত্যা করা বা দুই মহিলার সাক্ষ্য এক পুরুষের সাক্ষ্যের সমান হওয়ার মতন আইন যে সময়ের প্রেক্ষিতে ইউলেটিরিয়ান হতে পারে সেটি জানতুম না। অবশ্য ব্রিটিশরা যদি লিঙ্গ বা জাতিভিত্তিক বৈষম্য করতে পারে বা এর সাম্রাজ্যের কলোনীসমূহের বাসিন্দাদের দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে ইউলিটেরিয়ান আইনের ধ্বজাধারী হতে পারে তাহলে উপরোক্ত আইনগুলোকে যে সময়ের প্রেক্ষিতে ইউলিটারিয়ান বলেছেন সেটি অবাক হবার মতন কিছু নয় আসলে।
@তানভীর হানিফ,
যে আইন অভিজ্ঞতাবাদের ভিত্তিতে এবং মানব বা আইন সভা প্রনদিত তা পরিবর্তন যোগ্য। বৃটিশ ভারতেই অনেক কালা আইন বৃটিশদের আমলেই বৃটিশ আইনসভা পরিবর্তন করেছে। কারন এই সব আইনের ভিত্তিতে ঈশ্বরকে আনা হয় নি। অভিজ্ঞতাকে আনা হয়েছে।
সুতরাং আপনি বুঝতে ভুল করছেন অভিজ্ঞতাবাদ প্রসূত আইন বনাম শরিয়া নামক আল্লা প্রণদিত আইনের পার্থক্য এবং ইম্পলিকেশন।
@তানভীর হানিফ,
পারে। পালিওলিথিক থেকে নিওলিথিক সমাজের উত্থানের সাথে সাথে মেয়েদের স্বাধীনতা এবং অধিকার খর্ব হতে শুরু করে। কৃষিভিত্তিক এই সমাজের দরকার ছিল বেশী সন্তান উৎপাদন কারন কারন তখন খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। বেশী সন্তান সমাজের ওর আর ল্যাবিলিটি না এসেট হতে শুরু করে। এবং সেই সময় সমাজের সার্বিক উপকার অধিক সন্তানেই ছিল-কারন বন কেটে চাষাবাদ করতে জনসংখ্যার বৃদ্ধি দরকার ছিল। ফল্র নারীকে প্রজননের যন্ত্র করার সব আইন তখন থেকে চালু হয়-যার অবশিষ্ট আপনারা শরিয়ার মধ্যে দেখছেন।
জৈন ধর্মের বা ঐ ধরনের ধর্মের আগমন ঈশ্বরের ও আগে। পরিবেশকে পূজো করা প্যাগানিজম। না , প্যাগান দর্শনের মধ্যে জৈন দর্শনকে ফেলা যাবে না।
সেটা জৈনরা দাবী করে। আমি করছি না। তারা বিবর্তনের দৃষ্টিতে সফল না। কিন্ত যারা সফল, সংখ্যার দিক দিয়ে-যেমন ইসলাম বা হিন্দুরা সংখ্যা বাড়াতে ত সফল। কিন্ত এই সংখ্যাবৃদ্ধিত পৃথিবীর ধ্বংসের কারনের দিকে যাচ্ছে।
।
পরম পরিণতি আর পরম সত্য এক জিনিস নাঞ
দুটোই একসাথে সত্য হতে অসুবিধা কোথায়। সব আইন অবাস্তব সেটাত লিখি নি। কিছু অবাস্তব, কিছু বাস্তব।
জৈন ধর্মে ধর্মের কারনেও যুদ্ধ বা ছলাকলা নিশিদ্ধ। হিন্দু বা ইসলামের জন্যে তা সত্য না। আমি সেই পার্থক্যই লিখেছই।
কে কি লিখেছে -সেত জানি না। শুধু এটা জানি, তাপগতিবিদ্যা সূত্রের ও জন্ম মৃত্যু আছে। বিন্দু হতে এই মহাবিশ্বের শুরু, বিন্দুতেই শেষ হবে। সুতরাং জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য থাকা অসম্ভব। সব উদ্দেশ্যই আপাত।
একদমই না। আমি তখনকার কথা লিখ ছি। কেন বিশ্বাস করত তারা। এটা অনুসন্ধান। কাও কে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা না।
উপযুক্ত তথ্যসূত্র আপনার লেখাকে সমৃ্দ্ধতর করত। চিরায়ত ভারতীয় দর্শনে আস্তিক এবং নাস্তিক শব্দদ্বয় যে অর্থে ব্যবহৃত হয় তা পাশ্চাত্য থেইস্ট এবং এ্যাথেইস্ট হতে ভিন্নতর। আমরা সংস্কৃত শব্দদ্বয় ব্যবহার করি ঐ শব্দদ্বয়ের বঙ্গানুবাদ হিসেবে। সাংখ্য ও মিমাংসাবাদী অনেক সনাতনপন্থী ঈশ্বরে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন, আবার নাস্তিক্যবাদী জৈনরাও অপ্রামাণ্য কর্মবাদ, জন্মান্তর, আত্মা, নির্বাণ এবং আধিভৌতিক বিষয়সমূহ বিশ্বাস করতে পারে। ধর্ম বলতে যদি অপ্রামাণ্য ডগমা বোঝানো হয় তাহলে জৈন ধর্মের সাথে সে হিসেবে অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য কি? ভারতে প্রকৃত নাস্তিক (প্রায়োগিক অর্থে নিরীশ্বরবাদী) ছিল সম্ভবত: চার্বাকপন্থীরা।
ভারতীয় দার্শনিক স্কুলকে মোটামুটিভাবে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে: আস্তিক্যবাদী ও নাস্তিক্যবাদী। হিন্দু ষড়দর্শনের সবকটিকেই আস্তিক্যবাদী অংশের অন্তর্ভূক্ত করা হয়ে থাকে। আর বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে বেদের অথারিটি মানা হয়না বিধায় তাদের বলা হয় নাস্তিক্যবাদী। যেটি আগেই বলেছি, ভারতীয় ধর্মীয়-দার্শনিক পরিভাষায় আস্তিক এবং নাস্তিকের অর্থ কিন্ত পাশ্চাত্য থেইস্ট (ঈশ্বরবাদী) বা এ্যাথেইস্টের (নিরীশ্বরবাদী) সমতুল্য নয়। আস্তিকতা বা নাস্তিকতা যথাক্রমে বেদের অথারিটি মানার বা না মানার সাথে সরাসরি যুক্ত। তবে বিশুদ্ধ নিরীশ্বরবাদী নাস্তিক মনে হয় একমাত্র চার্বাকপন্থীরা। তাদের বিশুদ্ধ চরমপন্থী বস্তুবাদ চারটিমাত্র লাইনে কি সুন্দরভাবেই না ফুটে উঠেছে:
“যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ,
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।
ভস্মিভূতস্য দেহস্য
পূণরাগমণৎ কুত:?”
অর্থাৎ, যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচ–দরকার হলে ঋণ করে ঘি খাও–কারণ ভস্মিভূত দেহ কখনও পূণরায় ধরাধামে ফিরে আসবে না। কাজেই চার্বাকপন্থীদের পাশ্চাত্য এ্যাথেইস্টদের ওরিয়েন্টাল ভার্সন বললে ভুল হবে না মনে হয়। তাই তারা ঠিক ভারতীয় মেইনস্ট্রিম দার্শনিক স্কুলের ভেতর পড়েনি বলা যায়।
পাশ্চাত্য রাশনালিস্টিক দর্শনের ভিত্তি গ্রীক বা হেলেনিস্টিক যুক্তিবাদ। সক্রেটিস, পিথাগোরাস, এ্যারিস্টোটল, প্লেটো, জেনো, হাইপাশিয়ার অবজেক্টিভ দৃষ্টিভঙ্গীয় ট্র্যাডিশনের উপর মোটামুটিভাবে এইটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতায় বিজ্ঞান ও বিশ্লেষণধর্মী শাস্ত্রের বিকাশে এই রাশনালিস্টিক ফিলোসফির বিশেষ অবদান আছে। ভারতীয় দর্শনে যুক্তিবাদের সাথে এমন একটি বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটেছে যা একটি ইউনিক ফেনোমেনা। এটি উদ্দেশ্যবাদী। জগতের প্রকৃত স্বরূপকে প্রশ্ন না করে এইটির অস্তিত্বকে, এর কার্য-কারণিক বিধিকে মেনে নিয়ে একে বিশ্লেষণের চেষ্টা হয়েছে। গীতায় এই কর্মবাদকে ব্যাখ্যা করে বন্ধনমুক্তি ও নির্বানের বা মোক্ষের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছে: ফলের আশা না করে নিস্পৃহ কর্মে ফলের দ্বারা কর্মী বন্ধনপ্রাপ্ত হয়না। যদিও আস্তিক্যবাদী ও নাস্তিক্যবাদীনির্বিশেষে সকল ভারতীয় দর্শনের মৌলিক উদ্দেশ্য একটিই–“মোক্ষ”।
গৌতম বুদ্ধকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি এড়িয়ে গেছেন। ঈশ্বর বৌদ্ধদর্শনে (আইরোনিকালি যা উপনিষদের দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত) গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। মজার ব্যাপার হল পরবর্তীকালে বুদ্ধই কিন্তু হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের দশ অবতারের এক অবতারে (নবম) পরিণত হয়েছেন। এর পটভূমি আরও বিচিত্র। অসুরেরা ঈশ্বরের সাধনা করলে ঈশ্বর (ব্রহ্মা) তাদের বর দিতে বাধ্য হত। আর এই বরের দ্বারা প্রাপ্ত শক্তি তারা দেবতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রয়োগ করত। দেবতাদের অনুরোধে তাই ঈশ্বর (বিষ্ণু) বুদ্ধ অবতার নেন। এই অবতার নিয়ে তিনি অসুরদের মাঝে নিরিশ্বরধর্ম প্রচার করে তাদের বিভ্রান্ত করেন। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের বিলুপ্তির পিছনে ঈশ্বরবাদী ব্রাহ্মণদের এই প্রচারণা বিশাল ভূমিকা রেখেছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শুধুমাত্র নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী এটিও ঠিক না। বৈষ্নব বা শাক্তদের দেখুন। হিন্দু প্যানথিয়নের অনেক দেব-দেবী বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মেও স্হান পেয়েছে। পার্থক্য হল তাদেরকে ঈশ্বরের অংশ বা ফাংশন হিসাবে বিশ্বাস করা হয় না। তারাও কার্মিক নিয়মের দ্বারা আবদ্ধ এবং নির্বাণপ্রাপ্তির জন্য তাদেরও সাধণা করতে হয়। বুদ্ধ হলেন এমন একজন যিনি অনেক জন্মের (জাতক পড়ুন) সাধণার পর যখন সফলতার সাথে নির্বাণপ্রাপ্তির দিকে আগাচ্ছিলেন তখন তিনি সহস্পতি ব্রহ্মার অনুরোধে কেবলমাত্র মানবজাতির প্রতি অনুকম্পাবশত সাময়িকভাবে এইটা পোস্টপন বা বাতিল করে (যেইটা না করলেও তিনি পারতেন) নির্বাণপ্রাপ্তির শিক্ষা বা বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। বৌদ্ধধর্মের মূল “বিশ্বাস”গুলো হল: কার্মিক কার্যকারণ, জন্মান্তরবাদ এবং নির্বাণ। বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মের উৎপত্তির একটা কারণ হিসাবে অনেকে তৎকালীন রাজা বা ক্ষত্রিয়দের সাথে পুরোহিত বা ব্রাহ্মণদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে ইঙ্গিত করে থাকেন। গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর উভয়ই ছিলেন ক্ষত্রিয়। এখানে একটি মজার এ্যানালজি লক্ষ্যণীয়।বিষ্ণুর পরশুরাম অবতারের আবির্ভাবও কিন্ত পুরোহিত আর শাসকশ্রেণীর দ্বণ্দ্বের সুষ্পষ্ট ইঙ্গিতবাহী। ব্রাহ্মণপুত্র পরশুরাম বা কুড়ুলে রাম প্রথাভঙ্গ করে বিদ্যাচর্চার পরিবর্তে অস্ত্রচালনায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। অত্যাচারী পিতৃ-মাতৃহন্তারক রাজা কার্তাবীর্জার্জুনকে কচুকাঁটা করেই এই স্বারস্বতপুত্র ক্ষান্ত হননি–একুশবার ধরণীকে ক্ষত্রিয়মুক্ত করে তাদের রক্তে কুরুক্ষেত্রে পিতার পিন্ডদান করেন তিনি।
@তানভীর হানিফ,
আমি প্রবন্ধে লিখেছি যে এথেইজম নাস্তিকতা না। কিন্ত এথেইজম মানে পরম সত্যের অনুপস্থিতি -সেটা জৈন ধর্মের উপপাদ্য। সুতরাং জৈন ধর্মকে এথেইজম বলা অসঙ্গত।
হ্যা। কিন্ত সেটাইত লেখাতে লিখলাম। জীবনের উদ্দেশ্য যেখানে সংজ্ঞায়িত না-এবং অবজেক্টিভ দর্শন জীবনের উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা করতে পারে না-সেখানে এটাই ত স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে, ভুলভাল বিশ্বাসের ওপর জীবনের উদ্দেশ্যে দাঁড় করাতে হবে কি না?
অবশ্যই না। কিন্ত সেটাই মজার। বস্তুবাদে বিশ্বাস করে, পাশ্চাত্য সভ্যতা ত একই সাথে আশীর্বাদ ও অভিশাপ। ১০০% আর্শীবাদ, ১০০% ঠিক-১০০% ভুল এসব কিছু হয় না। কারন এই একটাই জীবনের উদ্দেশ্যই সংজ্ঞায়িত না।
@তানভীর হানিফ,
জাতকের কোন গল্প জানতে চাই।
চিন্তার খোরাক যোগানো একটা লেখা, যেমনটা বরাবর পেয়ে থাকি আমরা আপনার কাছ থেকে।
প্রাচীন ভারতে ধরিত্রী পূজা প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়, যেখানে আদিম মানুষ ধরিত্রী দেবীকে তুষ্ট করতে চাইত ভূমিতে ফসল ফলিয়ে, এবং এ ধরনের ধর্ম মানুষের জন্য উত্তম, কেননা তা শুধু পরিবেশ-বান্ধবই নয়, পৃথিবীকে দেবী কল্পনা করে তার মঙ্গলার্থে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়াস রয়েছে এতে; আপনার বর্ণনা থেকে জৈন ধর্মের যে বর্ণনা পেলাম, তা থেকে তাকেও পরিবেশ ও পৃথিবী-বান্ধব মনে হচ্ছে।
আপনি জৈন ধর্মকে হোমো-সেপিয়েন্সদের বিবর্তনের ইতিহাসের আলোয় ব্যাখ্যা করছেন, আবার বিবর্তনের অবধারিত শর্তকেও জৈন ধর্মের জন্য লঙ্ঘনীয় বলে দাবী করছেন; ব্যাপারটি কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।
আপনি বলছেন যে, জৈন ধর্মে কোন পরম সত্য নেই, তাহলে পরম নিয়তি থাকে কি করে?
আপনি বলছেন, জৈন ধর্মের আইনগুলো অবাস্তব, আবার বলছেন এগুলো ইউলেটেরিয়ান আইনগুলোর সাথে সাযুজন্যপূর্ণ, যা সভ্য দুনিয়ার জন্য আইনের জন্ম দিয়েছে। ব্যাপারটি তো মাথায় ঢুকছে না, বিপ্লবদা!
ধর্মের জন্য বল বা ছল প্রযোজ্য মানছি, কিন্তু এই দুই ধর্মে কোন বস্তু হাতিয়ে নেয়ার জন্য বল বা ছল অনুমোদিত, তা কোথাও পাইনি। আপনি কিন্তু কিছু জোর করে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দুই ধর্মের প্রসঙ্গটা তুলেছেন।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে, এমন কিছু জৈন ব্যবসায়ির নাম।
কিছুদিন আগে এক ব্লগ বিতর্কে অভিজিৎদা কিন্তু বলেছেন, তাপ-গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সুত্র দিয়ে জীবনের উদ্দেশ্য ব্যাখা করা যায়। মনে পড়ছে, রূপম ভাই এবং অপার্থিব ভাইও অনেক যুক্তি দিয়েছিলেন।
এই কথাটি ঠিক বুঝলাম না। আধুনিক সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য আধুনিক মানুষকে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করতে হবে?