পূর্ববর্তী পর্ব – ক্যান্সার : ল্যাম্পপোষ্টের আলো ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূরে

রহিম সাহেবের শরীরটা একদমই ভালো যাচ্ছে না। বয়স তার প্রায় পঞ্চান্ন ছুঁই ছুঁই করছে বলে। বেশ কয়েক বছর ধরেই পেটের নীচের দিকে একটু একটু অস্বস্তি বোধ করছিলেন, মলের সাথে মাঝে মাঝে রক্তও যাচ্ছিল। বয়স হলে একটু আধটু এমন তো হবেই বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সে সব লক্ষণ। কিন্তু বছর দুয়েক থেকে খুব ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করেছেন, ঘনঘন ডায়রিয়াতেও ভুগছেন। ওজন কমছে বেশ দ্রুত গতিতে। গত কয়েকমাস ধরে আবার শ্বাস কষ্টও শুরু হয়েছে। বুকের কাছে কেমন যেন অদ্ভুত এক ভৌতিক ধরণের অনুভূতি হয়, হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় পাঁজরের হাড়ের মাঝখানে কিছু একটা যেন নড়ে উঠছে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর জোরাজুরিতে ডাক্তারের কাছে গেলেন। তিনি এ পরীক্ষা সে পরীক্ষার পর রহিম সাহেবকে সিটি স্ক্যান করতে পাঠালেন। টেস্টের ফলাফল এলে ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলট্রাসাউন্ড এবং বায়োপ্সি করতে বললেন। রিপোর্ট এলো। ডাক্তার সাহেবের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘান্বিত হল।  উনি জানালেন রহিম সাহেবের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হয়েছে, বড্ড বেশী অগ্রসর ধাপে এসে ধরা পড়েছে সেটা। শুধু কোলন নয় লিম্ফ নোড এবং ফুসফুসেও ক্যান্সার কোষগুলো ছড়িয়ে পড়েছে মেটাস্টাসিসের মাধ্যমে। তড়িঘড়ি করে চিকিৎসা শুরু হল। এই তো ক’দিন আগেই হুমায়ূন আহমেদের কোলন ক্যান্সার নিয়ে পত্র পত্রিকায় কতই না লেখালিখি হল। সাধারণভাবে একে কোলন ক্যান্সার বললেও বেশীর ভাগ বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ই কোলন এবং রেক্টামের ক্যন্সারকে এক সাথে করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হিসেবেই অভিহিত করা হয়। আমরাও এখানে একে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারই বলবো।

শুরু হল চিকিৎসা, প্রথমেই কোলনের ভেতরের নাদুসনুদুস টিউমারটা সার্জারি করে ফেলে দেওয়া হল। আর তারপর শুরু হল কিমোথেরাপি আর রেডিয়েশনের দুঃসহ কাহিনি। এ বয়সে শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড় সহ্য করার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল কিনা তা নিয়েই যেন সন্দিহান হয়ে পড়তে শুরু করলেন বেচারা রহিম সাহেব। তবুও, বউ ছেলে মেয়ের কথা ভেবে আশায় বুক বেঁধে, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে, মাসের পর মাস ধরে মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করতে থাকলেন। শরীরের সুস্থ কোষগুলোও রেহাই পেল না।  ক্যান্সার কোষগুলো তাদের পরম শত্রু হলে কী হবে, তাদের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিনের পর দিন ধরে কিমোর মত ভয়াবহ এক শত্রুর হামলা মোকাবেলা করতে হল দেহের সুস্থ কোষগুলোকেও। প্রায় বছর খানেক ধরে চিকিৎসার পর ডাক্তারেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে জানালেন যে উনি আপাতভাবে ক্যান্সার মুক্ত। তবে তারা এটাও পইপই করিয়ে মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না যে ক্যান্সার কখনো সাড়ে না, যে কোন সময় সে ফেরত আসতে পারে। বাঘে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা হলেও হতে পারে, ক্যান্সার একবার ধরলে সে ঘায়ের আর কোন শেষ নেই। তাই বাকি জীবন ধরে, ছয় মাস পরপর নিয়ম করে ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। এই যাত্রা তো বেঁচে বর্তে বাড়ি যাই, পরের কথা পরে হবে ভাবতে ভাবতে সন্তুষ্ট মনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন রহিম সাহেব।

আপাত বিজয় ঘোষণা করলে কি হবে, আমাদের একুশ শতকের চিকিৎসা ব্যবস্থা কিন্তু অগ্রসর ক্যান্সারের সামনে একান্তই অসহায়। এক্ষেত্রে, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার যেটা চোখ এড়িয়ে গেল তা হল কিমোথেরাপির করাল থাবাকে কাঁচকলা দেখিয়ে, সঠিক সময়ে সঠিক মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যান্সারের একটি কোষ কিন্তু নির্বিঘ্নে টিকে গেল। শুধু যে টিকে গেছে তাই নয়, বিবর্তনের নিয়ম মেনে সে অন্যান্য কোষগুলোর তুলনায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় অনেক বেশী দক্ষ হয়ে গেছে, তার বৃদ্ধি ক্ষমতাও গেছে সবাইকে ছাড়িয়ে। রহিম সাহেব ক্যান্সার ‘জয়’ করে বাড়ি ফেরার কয়েক মাসের মধ্যেই ‘দক্ষতর’ ক্যান্সার কোষটি দুর্বার গতিতে রাজ্য জয় করতে শুরু করে দিয়েছে। তার উপনিবেশ স্থাপনের স্পৃহা এবং ক্ষমতার কথা জানা থাকলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীও হয়তো লজ্জায় পাত্তাড়ি গুটিয়ে নিজের দেশে ফিরে যেত! মাস ছয়েকের মধ্যেই সে শুধু কোলোন নয়, যকৃত ফুসফুস এবং হাড়ের বিভিন্ন স্থানেও গাট্টি বোচকা নামিয়ে বাসা বেঁধে ফেললো। ধীরে ধীরে ফুসফুসের মেটাস্টাসিস এতটাই ছড়িয়ে পড়লো যে ক্যান্সারের কোষগুলো ফুসফুসের বেশ বড় অংশ ব্লক করে দিতে শুরু করে দিল। ফুসফুসের সুস্থ কোষগুলোও ধ্বংস হয়ে যেতে শুরু করলো। এমন অবস্থায় ফুসফুসের পক্ষে আর যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন শোষণ করাই যেন দায় হয়ে পড়লো।  যকৃত আমাদের শরীরের কেমিকেল ফ্যাক্টরি, শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কাজ। কোলন ক্যান্সারের কোষগুলো যকৃতের রিয়েল স্টেট দখল করে নেওয়ার ফলে শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্যতা রক্ষা করাও ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠলো।  এরই মধ্যে ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দিলে রহিম সাহেবকে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে ভর্তি করা হল।

নাহ, আর কিচ্ছু করার নেই, একুশ শতকের চিকিৎসাবিদ্যার হাতে এমন কোন ম্যাজিক জানা নেই যা দিয়ে রহিম সাহেবকে এখন বাঁচানো যেতে পারে। এই অবস্থায় পৃথিবীর সর্বোত্তম ডাক্তারের হাতেও একরাশ অসহায়ত্ব ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, ক্যান্সারের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়াই তার জন্য একমাত্র বাস্তবতা। ডাক্তার সাহেব তার অসহায়ত্বের অনুভূতিগুলোকে লুকিয়ে রেখে একজন দায়িত্ববান ডাক্তারের ভূমিকা পালন করলেন। দুঃসহ কষ্ট লাঘব করার জন্য রহিম সাহেবকে ওপিয়েটের নেশায় বুদ করিয়ে দিলেন। এক বছর ধরে জীবনের উপর দিয়ে মহাপ্রলয় সহ্য করে শেষ মুহূর্তে এসে শান্তিতেই বিদায় নিলেন রহিম সাহেব এই পৃথিবী থেকে।

রহিম সাহেবের চরিত্রটি কাল্পনিক হলেও তার ক্যান্সারের গল্পটি কিন্তু কাল্পনিক নয়। লাখ লাখ রোগী ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন প্রতিদিন। ২০০৮ সালে প্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ নতুন ক্যান্সার কেস ধরা পড়ে, প্রায় ৭৬ লক্ষ ক্যান্সার রোগী মৃত্যু বরণ করে সে বছর(২)। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, ৭৬ হাজার নয়, ৭৬ লক্ষ মানুষের কথাই বলছি। নম্বরের দিক থেকে হিসেব করলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বোধ হয় তিন নম্বর পড়বে, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি বলছে ২০১২ সালে শুধু আমেরিকাতেই প্রায় দেড় লাখ (১৪৩,৪৬০) পুরুষ এবং মহিলার কোলন ক্যান্সার ধরা পড়বে আর অর্ধ লক্ষেরও বেশী(৫১,৬৯০)রোগী এই রোগে মৃত্যুবরণ করবেন। একটু অগ্রসর ধাপে গিয়ে ধরা পড়লেই এ থেকে বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনাটা আনুপাতিক হারে কমতে থাকে। লেখক হুমা্যূন আহমেদও যে এই যুদ্ধে হেরে গেলেন তাতে কিন্তু আসলে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই। লাখ লাখ ক্যান্সার রোগীর জীবনে এটাই একমাত্র বাস্তবতা।

ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্রহ্মাস্ত্র এখনো হাতের মুঠোয় এসে পৌঁছায়নি, সেটা ঠিক, কিন্তু এর পিছনের আণবিক গল্পটার অনেকটাই কিন্তু আমাদের জানা হয়ে গেছে। রহিম সাহেব ঘুণাক্ষরেও টের না পেলে কী হবে আণবিক জীববিজ্ঞান কিন্তু ঠিকই জানে গত দুই দশক ধরে তার শরীরের ভেতর ক্যান্সারের কী তাণ্ডব নৃত্য চলছিল। সে এখন দিব্যি যে কোন ক্যান্সারের আণবিক মডেল দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে। এই আণবিক গবেষণার কথা জানা না থাকলে কী হবে এর হাবভাব দেখেই প্রাচীন গ্রিকেরা কিন্তু টিউমারের ভয়াবহতা সম্পর্কে টের পেয়ে গিয়েছিলেন। কথিত আছে, রক্তনালী দিয়ে পরিবেষ্টিত ভয়ঙ্করভাবে ফুলে ওঠা টিউমারগুলো দেখে পশ্চিমা চিকিৎসাবিদ্যার জনক গ্রীক চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিসও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মনে মনে বালুর মধ্যে মুখ গুজে পড়ে থাকা কাঁকড়ার কথা ভেবে শিহরিত হয়ে পড়েছিলেন। কাঁকড়া যেমন জান প্রাণ দিয়ে বালুর মধ্যে পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে তেমনি করেই যেন আমাদের দেহ কোষ আঁকড়ে ধরে থাকে এই টিউমারগুলো। আর তা থেকেই এসেছে ক্যান্সারের (গ্রীক শব্দ karkinos এর অর্থ কাঁকড়া বা কর্কট ) নাম। আজকে আমরা আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য নিবেদিত যে শাখাটিকে অঙ্কোলজি নামে জানি তারও উৎপত্তি হয়েছিল গ্রীক শব্দ থেকেই। ‘onkos’ এর অর্থ বোঝা বা বার্ডেন। ক্যান্সারকে সঠিভাবেই মানব শরীরের বোঝা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসাবিদেরা, সেই বোঝার ভার আজও আমরা নামাতে সক্ষম হইনি কাঁধ থেকে।

আধুনিক আণবিক জীববিজ্ঞানের কথা বলছিলাম। গত তিন দশকে আমাদের আণবিক জ্ঞান এতটাই এগিয়েছে যে আমরা রহিম সাহেবের ক্যান্সারের একটা মডেল অনায়াসেই এঁকে ফেলতে পারি। সে দিব্যি এখন যে কোন ক্যান্সারের আণবিক মডেল দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে।  ক্যান্সারের রোগীরা হয়তো বলবেন বিজ্ঞানের এত কিছু জেনে আমাদের কী কচুটা হল?  রোগটা যদি সময় মত ধরতেই না পারলে তাহলে বিজ্ঞানের এত দিগ্‌গজগিরি কি আমরা ধুয়ে খাবো? কথাটা কিন্তু ঠিক। এর মধ্যে যতটা রাগ আছে ততটাই আছে হতাশার হাতছানি। আর এই হতাশার চিত্রটা শুধু রোগীদের মধ্যেই নয়,ক্যান্সারের চিকিৎসকদের মধ্যেও প্রকট হয়ে উঠেছে বহুদিন ধরেই।এর চমৎকার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই ক্যান্সারের চিকিৎসক এবং গবেষক সিদ্ধার্থ মুখার্জি র লেখনীতে। ২০১০ সালে ‘এমপেরর অফ অল ম্যালাডিজ’ বইটির এক জায়গায় এই দম বন্ধ করা অবস্থা সম্পর্কে  মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত এক দশক ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা যেন চাপ দিয়ে বন্ধ করে রাখা বোতলের মত রূপ ধারণ করেছে – ক্যান্সার সম্পর্কে জীববিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান স্বচ্ছতা আমাদের প্রবল বেগে একদিকে ধাক্কা দিয়ে চলেছে আর এ থেকে কোন কার্যকরী চিকিৎসা বের করতে না পারার ব্যর্থতাগুলো ক্রমশ যেন উল্টোদিকে ধাক্কা দিয়ে আমাদের পিঠ  ঠেকিয়ে দিচ্ছে দেওয়ালের আরেক কোণায়’।

গত পর্বে ক্যান্সারের জেনেটিক্স বা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে ক্যান্সারের কোষ চক্র বনাম সুস্থ কোষ চক্র নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আণবিক জীববিজ্ঞান নিয়ে তেমন একটা নাড়াচাড়া করেন না এমন অনেক পাঠকের কাছে লেখাটা একটু কঠিনই ঠেকেছিল। কোষচক্র ব্যাপারটাই বেশ জটিল,সেখানে ক্যান্সারের কোষচক্র এবং জিনোমের ব্যাপার স্যাপার তো আরও জটিলতর। অনেকে হয়তো ভাবছেন আমাদের মত অদম্য এবং ‘মহা বুদ্ধিমান’ মানুষ প্রজাতি যেখানে মঙ্গলগ্রহে রোভার নামিয়ে হাউকাউ বাঁধিয়ে দিচ্ছে সেখানে নিজের দেহের ভিতরের সামান্য এক কোষের চক্র বুঝতে এমন আর কী! দুঃখটা তো সেখানেই, এই একুশ শতাব্দীতে বসেও আমরা এখনও আমাদের নিজের দেহকোষের ভিতরের ইতংবিতংগুলোর ষোল আনা হিসেব করে উঠতে পারিনি। এর চোদ্দ আনার হিসেবটাই এখনো পেয়েছি কিনা তা নিয়েই সন্দেহ আছে। তবে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এই চৌদ্দ আনার হিসেব কষতেই বিজ্ঞানীরা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন। গত দুই তিন দশকে আণবিক জীববিজ্ঞানের অকল্পনীয় অগ্রগতি আমাদের হাতে ক্যান্সারের জেনেটিক্স সম্পর্কে এত বিপুল পরিমাণ তথ্য তুলে দিয়েছে যে তাদেরকে কোন রকমের ছকে ফেলতেই যেন ঘেমে নেয়ে উঠছি। তবে এটুকু বলতে দ্বিধা নেই যে আমরা রহিম সাহেবকে বাঁচানোর ফর্মুলাটা এখনো বের করতে উঠতে না পারলেও তার রোগের পেছনের আণবিক গল্পটার মডেলটা কিন্তু বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছি।

গল্প তো আমরা সবাই বলি, মা গল্প বলে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য,  শিল্পী গল্প বলে তুলির ছোঁয়ায়, গীতিকারের গল্প ফুটে ওঠে গানের কলিতে, আর রোগীরা গল্প বলেন ডাক্তারের কাছে তার রোগটিকে ঠিকমত তুলে ধরার জন্য।  বিজ্ঞানও  রহিম সাহেবের মত অগুনতি রোগীদের গল্প শোনায়, সে কাহিনিগুলো থেকেই আমরা খুঁজে পাই জটিল সব রোগের কারণগুলো । অনেক সময়ই রোগের মূল কারণ আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার প্রতিরোধের কাহিনী, চিকিৎসাবিজ্ঞানের গল্পের সূচনা। আমরা প্রথম কবে গল্প বলতে শুরু করেছিলাম তা হয়তো কোনদিনও জানা যাবে না, গুহার আলো আঁধারিতে বসে যে আদি মানব প্রথম তার গল্পটি ফেঁদেছিলেন তার পরিচয় হয়ত কোনদিনও আমরা জানবো না, কিন্তু তাদের সবার গল্প ছাড়া যে মানব সভ্যতা তৈরি হতে পারতো না তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। আজ ক্যান্সারের গল্পগুলোও আমাদের সভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে।

আমরা আগের পর্বে দেখেছিলাম যে ক্যান্সারের উৎপত্তি শুধু জিনগতই নয়, ক্যান্সার আদ্যোপান্ত একটি বংশগতিয় বা জিনগত রোগ, এমনকি আরেক ধাপ এগিয়ে একে কোষচক্রের রোগ বললেও কিন্তু অত্যুক্তি করা হবে না। ক্যান্সার গবেষণার অন্যতম মহারথী বার্ট ভোগলস্টাইনের ভাষায়ই না হয় বলি, ক্যান্সার গবেষণায় ঘটে যাওয়া বিপ্লবের ফলাফল এক বাক্যে বলতে গেলে এটাই বলতে হয় যে ক্যান্সার একটি জিনগত অসুখ। কোষে মিউটেশন ঘটতে পারে বহু কারণে বহু পথে বহু ভাবে।  ভাইরাস, এক্স-রে, সূর্যের তেজস্ক্রিয়তা, সিগারেটের ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ বা অন্য বহু রকমের কার্সিনোজেন থেকে আমাদের দেহে মিউটেশন ঘটতে পারে, বা কোন একটা মিউটেশন আমরা উত্তরাধিকার সূত্রেও পেয়ে থাকতে পারি  অথবা ধরুন বাইরের কোন কারণ ছাড়াই কোষ বিভাজনে গড়বড় ঘটে দেহকোষে বিক্ষিপ্ত মিউটেশন ঘটে যেতে পারে। কিন্তু মিউটেশন যে কারণেই ঘটুক না কেন, একের পর এক অনেকগুলো নির্দিষ্ট মিউটেশন না ঘটা পর্যন্ত কিন্তু ক্যান্সার তার পূর্ণাঙ্গ মারদাঙ্গা রূপটি ধারণ করতে পারে না। তাই ডঃ ভোগলস্টাইন সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন যে এই মিউটেশনগুলোকে ক্যান্সারের কারণ মনে না করে বরং এদেরকে সহায়ক বা কন্ট্রিবিউটিং ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা উচিত (১)। বিবর্তনের ধারায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে এই ধরণের মিউটেশনগুলোকে ঠেকানোর জন্য একের পর এক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এদেরকে ফাঁকি দিয়ে মিউটেশনগুলো ঘটতে থাকে বহু বছরের ব্যবধানে।

আমরা অনেক সময় ক্যান্সারকে নিউমোনিয়া, পোলিও বা জন্ডিসের মত একটা অসুখ বলে ভুল করি, ‘ক্যান্সার’ নামটা শুনলেই ভাবি এ তো এক ভীষণ অসুখ! কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই কী তাই? হ্যাঁ, যেকোনো ক্যান্সারই যে ‘ভীষণ’ এবং ভয়াবহ সে নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। এ অংশটা ঠিকই আছে, তবে ক্যান্সার ‘একটি’ অসুখ নয়। দু’শোরও বেশী রকমের ক্যান্সার ধরা পড়েছে এখন পর্যন্ত, তাদের মধ্যে মিলটা বোধ হয় এতটুকুই যে তাদের সবার মধ্যেই বহু মিউটেশনের সমাহার দেখতে পাওয়া যায়।  তবে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের মধ্যে কিছু সাধারণ মিউটেশন থাকলেও বাকিদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলটাই বোধ হয় বেশী। তাদের গঠন ভিন্ন, উৎপত্তি ভিন্ন, লক্ষণগুলোও ভিন্ন। স্তন ক্যান্সারের সাথে লিউকেমিয়ার পার্থক্যটা অনেকটা আকাশ আর পাতালের মধ্যে পার্থক্যের মতই। এমনকি একই ধরণের ক্যান্সারের মধ্যেও পার্থক্যগুলো চোখে পড়ার মতই। যেমন ধরুন, আমার থাইরয়েড প্যাপিলারি ক্যান্সার আর জয়নব খালার থাইরয়েড প্যাপিলারি ক্যান্সারের মধ্যেও তেমন একটা মিল নাও থাকতে পারে।

আগের পর্বে মেটাস্টাসিস, জিনের এ্যাম্পলিফিকেশন বা ট্র্য্যান্সলোকেশনের মত বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের মনে যেসব প্রশ্ন উঠেছিল সেগুলোর উত্তরও হয়তো ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠবে। তবে গল্পটা শুরু করার আগে বোধ হয় কয়েকটা ব্যাপার পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। অঙ্কোজিন, টিউমার সাপ্রেসর জিন, এ্যপোপ্টেসিসের মত গাল ভারী নামগুলোও এ লেখাতেও বারবার ঘুরেফিরে চলে আসবে। এগুলোর সংজ্ঞা নিয়ে সংশয় থাকলে এবং পড়তে পড়তে তখনো পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্য অবশিষ্ট থাকলে, আগের পর্বের লেখাটি থেকে সেগুলো একটু কষ্ট করে দেখে নিতে সবিনয় অনুরোধ জানাবো। প্রত্যেক পর্বে এদের সংজ্ঞা দিতে গেলে ‘সীতা কার বাপেই’ আটকে থাকতে হবে, রাবণের শয়তানিগুলোর ফিরিস্তি আর দেওয়া হয়ে উঠবে না। এ প্রসঙ্গে, আরেকটা কথাও মনে করিয়ে দিতে চাই। অনেকেই মিউটেশন বলতে শুধু ডিএনএর বেস পেয়ারে ছোট ছোট পরিবর্তন বোঝেন, মিউটেশনের ঘটনা কিন্তু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের জিনোমে ধুমধারাক্কা সব পরিবর্তন ঘটতে থাকে।  ডিএনএর মধ্যে সন্নিবেশ কিংবা কর্তন (insertion, Deletion)  তো অহরহই ঘটে। এছাড়াও  জিনের এ্যাম্পলিফিকেশন (amplification) এবং  ট্র্যান্সলোকেশন (translocation) এর মত বড় বড় ঘটনাগুলোও ঘটতে থাকে। জিনের এ্যাম্পলিফিকেশন বা বিবর্ধন ফলে তার একাধিক প্রতিরূপ তৈরি হয়ে গিয়ে জিনের কার্যগুণ বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।  যেমন  ধরুন প্রোটো-অঙ্কোজিনে এরকম প্রতিবর্ধন ঘটার ফলে তার কাজের স্বাভাবিক সুস্থ গতি বেড়ে যেতে পারে, সে রোলার কোষ্টারের গতিতে কোষ

ছবি ১:  জিনের ট্র্যান্সলোকেশন এবং এ্যাম্পলিফিকেশনের উদাহরণ

বিভাজন শুরু করে দিতে পারে।   ট্র্যান্সলোকেশনের কথাই ধরুন, সেক্ষেত্রে দুটো ক্রোমোজোমের অংশবিশেষ ভেঙ্গে একজনের লেজ আরেকজনের মাথার সাথে জুড়ে গিয়ে কোষের ভেতরে এক লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যায়। এধরণের সব রীতিমত বড় বড় পরিবর্তনগুলো মিউটেশনের আওতাতেই পড়ে। জনন কোষে সাধারণত পয়েন্ট মিউটেশন বা বেস পেয়ারে ছোট ছোট মিউটেশন ঘটে কিন্তু ক্যান্সারের জিনোমের ক্ষেত্রে ছোট বড়র কোন বালাই নেই, সব ধরণের মিউটেশনই সেখানে জায়েজ। শুধু ডিএনএর মিউটেশনেই তো গল্প শেষ নয়, ক্যান্সারের জিনোমে ক্রোমোজোমের হাত পা খসে পড়া থেকে শুরু করে, জিনোমের মধ্যে চরম অস্থিতি-পূর্ণ সব অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার জিনোমের ভিতরে বহু ধরণের কোষের সমন্বয়ে এক জটিল ইকো সিস্টেম তৈরি হয়। এদের ভিতরে বাইরে অনবরত চলতে থাকে এপিজেনেটিক সব আদান প্রদান। এদের বিভিন্ন  সার্কিট, উপ-সার্কিটের মধ্যে গৃহযুদ্ধ, ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ, নতুন নতুন রক্তনালী তৈরির মত ভয়াবহ সব প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। ক্যান্সার রোগীর জিনোমের ভেতরে চলতে থাকা বিধ্বংসী নাচ যেন নটরাজের প্রলয় নৃত্যকেও হার মানায়। এই লেখাতে যখন টিউমারের ভিতরের বিভিন্ন মিউটেশনের কথা উল্লেখ করা হবে তখন এরকম সব ধরণের মিউটেশনের সম্ভাবনাই মাথায় রাখতে হবে। ক্যান্সার ছাড়া আসলে খুব কম অসুখই আছে যেখানে জন্মের পরে দেহকোষে ঘটা মিউটেশনগুলো রোগ সৃষ্টির পিছনে এভাবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম(১)। যে যাক, যথেষ্ট ভূমিকা এবং ডিসক্লেইমার তো হল, এবার চলুন রহিম সাহেবের ক্যান্সারের আণবিক মডেলটা তৈরির কাজে মন দেওয়া যাক।

রহিম সাহেবের শরীরে কোলন ক্যান্সারের নীরব সূচনা ঘটেছিল কয়েক দশক আগেই। এখন পর্যন্ত সব ধরণের ক্যান্সারের মধ্যে এই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার নিয়ে সবচেয়ে বেশী গবেষণা হয়েছে বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু শরীরের ঠিক কোন জায়গাতে কোলনের বসবাস? পাকস্থলীর পরে খাদ্য হজমের জন্য ২২-২৩ ফুট দীর্ঘ প্যাঁচানো প্যাঁচানো নালীগুলো হচ্ছে ক্ষুদ্রান্ত্র। আর তার পরেই ৫-৬ ফুট দীর্ঘ অপেক্ষাকৃত যে মোটা নালীগুলো রয়েছে তাদের বলে বৃহদান্ত্র। সিকাম এবং কোলনের বিভিন্ন অংশ মিলে তৈরি হয় এই বৃহদান্ত্র। আর এর শেষ প্রান্তে থাকে মলাশয় বা রেক্টাম এবং মলদ্বার।


ছবি ২: পরিপাকতন্ত্রের গঠন

এবার আসি কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের কথায়। এই ক্যান্সারের গবেষণার ক্ষেত্রে ডঃ বার্ট ভোগলস্টাইনের নাম সবিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আগের পর্বেও ওনার নাম উল্লেখ করেছিলাম,এ লেখাতেও ওনার নাম চলে আসবে বারবার। আসলে সত্যি কথা বলতে কী,ওনার নাম না নিয়ে ক্যান্সারের গবেষণা সম্পর্কে কোন লেখালিখি করা একধরণের অসম্ভবই হবে। উনি এক মজার মানুষ, ৭০ এর দশকে গণিতে ডিগ্রী নিয়ে ডাক্তারি পড়তে ঢোকেন বিখ্যাত জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে থেকে পাশ করে বাচ্চাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেন। ক্যান্সারের চিকিৎসার হাত পা বাঁধা অবস্থা তাকে অস্থির করে তোলে। ছোট ছোট শিশুদের ক্যান্সারে মারা যেতে দেখে তখন কতটা অসহায় বোধ করতেন সে কথা তিনি পরবর্তীতে বহু সাক্ষাৎকারেই উল্লেখ করেছেন। সে সময়েই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে ক্যান্সারের উপর গবেষণা শুরু করবেন। বিশৃঙ্খল এবং জটিল সেই কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের টিউমার নিয়ে গবেষণার শুরু তখন থেকেই। ক্যান্সারের বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা আলোর মুখ দেখছে তার  হাত ধরে। ক্যান্সার যে ধাপে ধাপে ঘটে সেটা তিনিই প্রথম দেখান। ক্যান্সারের বহু জিনই আবিষ্কৃত হয় তার ল্যাবে গত তিন দশকে।  ‘সিলেব্রিটি’ জিন TP53 এর সঠিক ভূমিকা  এবং কর্মকাণ্ডও আবিষ্কার করেন তিনি। এর আগে TP53 কে অঙ্কোজিন হিসেবে ভাবা হত, তিনিই প্রথম দেখান যে এ আসলে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টিউমার দমনকারী। ওনার মত বিজ্ঞানীদের নিবেদিত গবেষণার ফলেই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের আঁধার আজ  উপচে পড়ছে।

ক্যান্সারের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার জেনেটিক মডেলটা বোঝার জন্য চলুন রহিম সাহেবের কোলনের সেই ছোট্ট কোষটার উপর আমাদের মাইক্রোস্কোপটা বসাই। দু’দশক আগে সেই কোষটির ভেতরে APC জিনের এক বিক্ষিপ্ত মিউটেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই ভ্রমণকাহিনির (৩)। APC জিন হচ্ছে এক ধরণের টিউমার দমনকারী জিন, প্রায় ৫০-৮৫%  কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পেছনে প্রথম ভিলেন হিসেবে কাজ করার দুর্নাম আছে তার। এই মিউটেশনটি কোষ চক্রের ভেতরে বেশ কয়েক ধরণের ব্যাগরা লাগিয়ে দিতে পারে। সুস্থ কোষে  APC জিনের কাজ হচ্ছে ß-ক্যাটেনিন নামের এক ধরণের প্রোটিনের ওপর ছড়ি ঘোরানো। ß-ক্যাটেনিন সুযোগ পেলেই কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে নেমে পড়ে কোমর বেঁধে। সুস্থ কোষচক্রে এরা c-Myc এবং অন্যান্য বৃদ্ধি জিনদের  কোষ বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত করে।  এছাড়া তারা আবার আবরণী কোষের আঠাত্ব বাড়িয়ে দিয়ে কোষকে লেগে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধাও দিতে সক্ষম। এখন রহিম সাহেবের এই কোষটিতে APC জিনের মিউটেশনের ফলে কি ঘটেছিল? নীচের ছবিতে কোলনের কলার গঠনটি খেয়াল করুন।

ছবি ৩: সুস্থ কোলন টিস্যু বা কলার গঠন (৪)

কোলনের গায়ের উপরের স্তরটার নাম হচ্ছে এপিথলিয়াম বা আবরণী কলা। তার নীচে সাপের মত প্যাঁচানো প্যাঁচানো গঠনগুলোকে বলে ক্রিপ্ট।  সাধারণ অবস্থায় কোলনের ভেতরের বিভাজনরত নতুন নতুন কোষগুলো ক্রিপ্টের গোঁড়া থেকে এপিথেলিয়ামের উপরের স্তরের দিকে আগাতে থাকে। নতুন কোষগুলো অবিরাম গতিতে ৩ থেকে ৬ দিনের ব্যবধানে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আর পুরনো কোষগুলো কোষচক্রের প্রোটোকল মেনে নিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু বা আত্মহত্যার মাধ্যমে এপিথেলিয়ামের উপরিভাগ থেকে চিরবিদায় নিয়ে নেয়। পুরনো কোষগুলো মরে যায় আর নতুন কোষগুলো প্রতিদিন সেখানে জায়গা করে নেয়। এর ফলে নেট কোষের সংখ্যাটা সব সময় কম বেশী সমান থাকে। কোন কারণে এই ভারসাম্যটা নষ্ট হয়ে গেলেই ভ্যাড়াচ্যাড়া লেগে যায়।  রহিম সাহেবের সেই প্রথম কোষটিতে মিউটেশনের ফলে APC জিনটি ß-ক্যাটেনিনের উপর তার খবরদারি করার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলে। সেই সুযোগে ß-ক্যাটেনিন মনের সুখে কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে শুরু করে দেয়। শুধু তাই নয় আঠাত্বের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে এই বাড়তি কোষগুলো আবার এপিথেলিয়ামের গায়ে লেগেও থাকতে পারে খুব সহজেই। প্রতিদিন যত কোষ মরে তার চেয়েও অনেক বেশী জন্ম নেয়। জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে বাড়তি বহু কোষের ঢিবি গরে উঠতে থাকে, আর তার ফলেই রহিম সাহেবের কোলোনে জন্ম হয় একটি ছোট্ট টিউমার বা পলিপের। প্রথমে এই পলিপটি বিনাইনই ছিল, ধীরে ধীরে মিউটেশনের সংখ্যা বেড়ে এর মধ্যে অসুস্থ কোষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে সে অপেক্ষাকৃত ক্ষতিকর টিউমার বা  এ্যাডিনোমার রূপ নিতে থাকে। রহিম সাহেব ঘুণাক্ষরেও টের পাননা যে এক অনাহূত অতিথি দরজায় কড়া না নেড়েই সিঁধ কাটা চোরের মত নীরবে নিভৃতে ঢুকে গেছে তার শরীরের ভেতরে।

এভাবেই কয়েক বছর কেটে যায়, ছোট্ট এই টিউমারটি বেশ ছোটই আছে, সে সাইজে এখনো আধা সেন্টিমিটারের বেশী বাড়তে পারে নি। হঠাৎই একদিন টিউমারটির একটি কোষে K-Ras নামক জিনটির মধ্যে মিউটেশন ঘটে যায় এবং সে সাধারণ একটি বৃদ্ধি-জিন থেকে অঙ্কোজিনে পরিণত হয়ে যায়। এবার তো পোয়াবারো, APC জিনের লাঠিয়াল বাহিনী তো আগেই বিদায় হয়েছে,এখন অঙ্কোজিনের কাছ থেকে লাগামহীন বৃদ্ধির সবুজ সংকেত পেয়ে,কোষচক্রের চোখ রাঙ্গানীকে কলা দেখিয়ে,টিউমারটি দিব্যি হাত পা ছড়িয়ে জেঁকে বসে রহিম সাহেবের কোলনের ভেতরে। মাস যায়, বছর ঘুরে যায় আরেকটি বিক্ষিপ্ত মিউটেশনের ফলে আরেকটি অঙ্কোজিনের উদয় ঘটে। টিউমারটি ধীরে ধীরে এক সেন্টিমিটারের মত বড় হয়ে ওঠে প্রায় ৫০% কোলন ক্যান্সারের রোগীর মত, রহিম সাহেবের টিউমারের মধ্যেও আরও বেশ কিছু জেনেটিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে শুরু করে। ১৮ নম্বর ক্রোমোজোমের লম্বা হাতের অংশ বিশেষ (18q)এবার ভেঙ্গে পড়ে, ক্রোমোজোমের এই অংশের কয়েকটি জিনও হয়তো খসে পড়ে সেখান থেকে, DCC, SMAD জিনগুলোতে ঘটপট লেগে যায় (৩)। এতগুলো জেনেটিক পরিবর্তনের পরেও কিন্তু টিউমারটি তার স্থানীয় কোলন টিস্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তারা ক্ষমতাটা তখনো ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতই, পুরোপুরিভাবে মেটাস্টেটিক ক্যান্সারে পরিণত হয়ে অন্যান্য অঙ্গে বা কলায় ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অর্জন করে উঠতে পারেনি সে এখনো। পুরোপুরিভাবে না পারলেও কোষচক্রের অন্যান্য পাহারাদারেরা মাসল ফুলিয়ে তাকে এর চেয়ে বেশী বাড়তে বাঁধা দিইয়ে চলেছে। এমন অবস্থায়ও যদি রহিম সাহেবের ক্যান্সারটি ধরা পড়তো তাহলেও কিন্তু তিনি বেঁচে যেতেন। ওই টিউমারটি অপারেশন করে ফেলে দিলেই হয়তো তিনি ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যেতেন।

ছবি ৪: কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিভিন্ন স্টেজ বা ধাপ

এবার আমরা এই জেনেটিক নাটকের শেষ অঙ্কে এসে পৌঁছেছি। ক্যান্সারের এই কুরুক্ষেত্রে অর্জুন-বেশী p53 নামক জিনটি কিন্তু একাই একশ’। ‘গার্ডিয়ান অফ দ্য জিনোম’ নামে খ্যাত এই জিনটি যতক্ষণ পর্যন্ত অক্ষত আছে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যান্সার রোধের শেষ আশাটা হয়তো টিকে থাকে।  তার ক্ষমতা প্রবল, সে জিনোমের প্রহরীদের পালের গোদা। আগের পর্বে  কোষচক্র নিয়ে আলোচনার সময় যেমনটি দেখেছিলাম ঠিক সেভাবে বেশী উল্টোপাল্টা কাজকর্ম দেখলে সে কোষচক্রকে আটকে দেয়। প্রয়োজন বোধ করলে সে এ্যাপপ্টেসিসের মাধ্যমে মিউটেশনওয়ালা কোষগুলোকে ঘাড় ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যতই মরকুটে ধরণের হোক না কেন, p53 জিনটি অক্ষত থাকা পর্যন্ত বেশীর ভাগ সময়েই টিউমারগুলো তার স্থানীয় জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে বাধ্য হয়, সৈন্য সামন্ত নিয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বেরিয়ে পড়ার ক্ষমতাটা থাকে না সেভাবে তাদের।

ছবি ৫: কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের আণবিক ধাপগুলো

প্রায় ৭৫% কোলন ক্যান্সারেই p53 এর পতনের সাথে সাথেই পরাজয়টা নিশ্চিত হয়ে যায়।  অনেকটা সিনেমার ট্র্যাজিডির শেষ দৃশ্যে এসে নায়কের ধুপ করে মরে যাওয়ার মত। রহিম সাহেবেরও কপালটা মন্দ, প্রায় দুই দশক ধরে ক্যান্সারকে দমিয়ে রাখার পর শেষ রক্ষা আর হল না। টিউমারের একটি কোষে ঘটা আরও কয়েকটি মিউটেশন p53 জিনটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিল আর সেই সাথেই শুরু হল ক্যান্সারের সৈন্যদের সর্বনাশা অদম্য মার্চ। তাদের আর থামায় কে? তারা এখন অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। লাগামহীন এই ক্যান্সার কোষগুলো বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। একে তো জিনোমের অস্থিরতা উত্তরোত্তর বাড়ছিল, ওদিকে আবার কোষ বিভাজনের গতি যত বাড়তে থাকলো ততই বাড়তে থাকলো টিউমারের জিনোমে মিউটেশনের সংখ্যাও। এ সময়ে ৮৫% কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের রোগীর ক্রোমোজোমের মধ্যেও বেশ রকমের অস্থিতি দেখা দিতে শুরু করে। ক্রোমোজোমের অংশ বিশেষ অথবা মাঝে মাঝে পুরোটাই হাওয়া হয়ে যায়। রহিম সাহেবের ক্যান্সার কোষগুলোতেও ক্রোমোজোমের অস্থিতি চরমে পৌঁছুল। আরেক মিউটেশনের ফলে টিউমারে বাড়তি কোষগুলোকে পুষ্টি জোগানোর জন্য নতুন নতুন রক্তনালী তৈরি করার পথও (এ্যানজিওজেনেসিস) তৈরি হয়ে গেল। আরেক মিউটেশন স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিম্ফনোড থেকে লিম্ফনোডে এবং রক্তের প্রবাহে ভেসে চলার পথ পর্যন্ত সুগম করে দিল। এমনি করে নতুন নতুন সব অজানা রাজ্যে এসে হাজির হল হাজার হাজার ক্যান্সার কোষ। তাদের মধ্যে একজন মহা-উল্লাসে ফুসফুসে বাসা বেঁধে তার গায়ে আটকে থাকার চালাকিটাও রপ্ত করে ফেললো। ক্রমশ: অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকলেন রহিম সাহেব, তারও কিছুদিন পর যখন হাসপাতালে গেলেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড বেশী দেরী হয়ে গেছে ……

এবার আসি তার চিকিৎসার দ্বিতীয় পর্বে, প্রথমবার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর কিমো এবং রেডিয়েশনের পালা চুকিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরের ঘটনায়। আগেই বলেছিলাম যে একটি ক্যান্সার কোষ কিমোর ভয়াবহ থাবা এড়িয়ে টিকে গিয়েছিল রহিম সাহেবের শরীরের বেতরে। তার মধ্যে এমন কিছু মিউটেশন ছিল যা দিয়ে সে এত ঝড় ঝাপটার মধ্যেও, প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায়, দিব্যি টিকে থাকতে পেরেছিল, চিকিৎসার সময়টা চুপচাপ থাকলেও চিকিৎসা শেষ হওয়া মাত্রেই তাকে আর পায় কে। তার মধ্যে টিকে থাকার এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মিউটেশনগুলো তো ছিলই এবার সে মনের সুখে কোষ বিভাজন ঘটিয়ে সংখ্যায় বেড়ে চলতে শুরু করলো। এক অঙ্গ থেকে আরেক অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। কোলনের এই ক্যান্সার কোষটি ফুসফুস, যকৃত, হাড়ের বিভিন্ন জায়গায় এমনিভাবে ছেয়ে গেল যে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করলো। এ অবস্থায় মিউটেশনের সংখ্যাই শুধু নয় সামগ্রিকভাবে জিনোমের অস্থিতির পরিমাণটাও তুঙ্গে উঠেছিল। এ ধরণের কোষগুলো কীভাবে টিকে যায় সেটা আমরা এতদিন খুব ভালো করে বুঝতাম না। কিন্তু গত কয়েক বছরের গবেষণা থেকে এ নিয়ে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। ক্যান্সারের জিনোম নতুন করে কিছু উদ্ভাবন করে না, তারা আমাদের দেহে কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ধারায় তৈরি অভিনব প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যবহার করেই টিকে থাকার সব চালাকি খুঁজে বের করে ফেলে। এরকম বহু পদ্ধতির মধ্যে একটি হচ্ছে অটোফ্যাগি।  ইষ্ট থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণী পর্যন্ত সবার মধ্যে এ এক বড়ই মজার প্রক্রিয়ার বিবর্তন ঘটেছে। সাধারণ অবস্থায় বিভিন্ন ধরণের পীড়নের(stress) সময় বিশেষ করে যখন পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, তখন কোষগুলো টিকে থাকার জন্যে যেন মরিয়া হয়ে ওঠে,  বেপরোয়া ভাবে তারা নিজেই নিজের ভিতরের অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলোকে আলাদা করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় আর ওদিকে নিজেরা শুকনো কাঠি হয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সুদিনের অপেক্ষায়। গবেষকেরা। অনেকেই মনে করেন যে ক্যান্সার কোষগুলো কিমো বা রেডিয়েশনের ধাক্কা সামলানোর জন্য এ ধরণের প্রক্রিয়ারই আশ্রয় নেয় ক্যান্সার কোষগুলো। চিকিৎসার সময়য়ের পীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তারা হয়তো কোষের ভেতরের ‘মেদ’ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আণুবীক্ষণিক সাইজ হয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আমাদের এখনকার প্রযুক্তি তাদের অস্তিত্ব ধরতে পারে না। আর যেই না চিকিৎসা শেষ হয় ওমনি ওরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে প্রবল উদ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কাজে লেগে যায়। এরকমের বেশ কিছু বিবর্তনীয়ভাবে উদ্ভূত ‘নভেল’ প্রক্রিয়া আছে যাদের সম্পর্কে আমরা আগে তেমন কিছুই জানতাম না, এর পরের পর্বে এগুলো নিয়ে আলোচনার করার ইচ্ছে রইলো।

রহিম সাহেবের ক্যান্সার কিন্তু শুরু হয়েছিল তার দেহকোষে মিউটেশন থেকে। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে এই ক্যান্সারের জন্য প্রয়োজনীয় কোন মিউটেশন পাননি। কোন ব্যাক্তি যদি এই ক্যান্সারের প্রাথমিক কোন মিউটেশন উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন তখন তার শরীরের ঘটনাগুলো কিন্তু আবার রহিম সাহেবের মত করে ঘটেনা। তাদের মিউটেশনগুলো ভিন্ন গতিতে প্রবাহিত হয়। তারা সাধারণত ডিএনএর মেরামতকারী জিনে মিউটেশন নিয়ে জন্মান। তারপর ধীরে ধীরে অঙ্কোজিন এবং টিউমার দমনকারী জিনগুলোতে মিউটেশন জমে জমে ক্যান্সারের সূত্রপাত ঘটে। অনেকের ডিএনএর ভেতরে মিথাইল গ্রুপ যুক্ত হয়ে হাইপার-মিথাইলেশন ঘটেও ক্যান্সারের পথ সুগম হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, দু’শোর বেশী ক্যান্সার তো আছেই, একই ধরণের ক্যান্সারের মধ্যেও আবার বিভিন্ন ধরণের সাব-টাইপ আছে। আর সেই সাব-টাইপের ভেতরেও প্রত্যেক রোগীর টিউমারের গঠন এবং গতি আবার ভিন্ন।

হ্যাঁ, এমনি করে বছরের পর বছর ধরে শ’য়ে শ’য়ে মিউটেশনের পাহাড় গড়ে ওঠার ফলশ্রুতিতেই আমাদের শরীরে ক্যান্সারের সূত্রপাত ঘটে। একেক ক্যান্সারে একেক রকমের মিউটেশন এবং পরিবর্তন ঘটে, আবার একই ধরণের ক্যান্সারও ঘটতে পারে বিভিন্ন মত এবং পথ ধরে। নানা মুনির নানা মত সেখানে।  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভয়াবহতা বা বিশৃঙ্খলতাও যেন হার মানে এর কাছে। হাজার হাজার জিন,তাদের মধ্যে ততোধিক মিউটেশন, এদেরকে কি কোন ছকে মধ্যে ফেলা সম্ভব না? এই সীমাহীন বিশৃঙ্খলতার মধ্যে কি কোন প্যাটার্ন নেই? এত মত, এত পথের পেছনে কী কোন বেসিক সুর বা লয় নেই? একেক ক্যান্সারের একেক স্টেজের এবং একেক ধরণের জটিলতার উপর নির্ভর করে কত ধরণের ওষুধ আবিষ্কার করতে হবে? কত শত ধরণের ওষুধ লাগবে তাহলে?  আর ক্যান্সার কোষগুলো তো বিবর্তনের চালাকিগুলোও খুব সুচারুভাবেই রপ্ত করে ফেলতে সক্ষম। এক ওষুধ প্রয়োগ করতে না করতেই সে মিউটেশনের মাধ্যমে বদলে গিয়ে আরেক রূপ ধারণ করে ফেলে, টিকে থাকার প্রতিযোগীতায় তাদের দক্ষতা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকেনা।

অন্যান্য গবেষকদের সাথে ডঃ ভোগলস্টাইন আবারো এগিয়ে এলেন এই বিশৃঙ্খল অবস্থার পায়ে বেড়ি পড়াতে। বললেন একেকটা জিন বা একেকটা মিউটেশনের কথা চিন্তা না করে তাদের একটা সাধারণ নিয়মে ফেললে কেমন হয়? ধরুন,একদল জিন মিলে একেক ধরণের কোষীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।  আমরা জানি, জিনেরা প্রোটিন এনকোড করে বা সোজা ভাষায় বললে প্রোটিন বানানোর ফর্মুলা বাতলে দেয়। প্রোটিনগুলো প্রায়শই আণবিক সুইচ হিসেবে কাজ করে। কোষের ভেতরে তারা এক প্রোটিনকে সক্রিয় করে তোলে তো আরেক প্রোটিনকে যথাসময়ে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আর সেভাবেই বজায় থাকে কোষচক্রের জটিল সিম্ফনি। আণবিক সুইচগুলোকে ‘অন’ বা ‘অফ’ করে দেওয়ার কাজ করে তারা। একটা উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক। কোষচক্রের নির্দিষ্ট সময় মত প্রোটিন ক প্রোটিন খ কে অন করে, তার ফলে প্রোটিন গ অন হয় কিন্তু প্রোটিন ঘ সাহেব অফ হয়ে যায়। এর ফলে আবার প্রোটিন ঙ সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে যায়,এভাবে চলতে থাকে কোষের অবিরাম চক্রাকার কর্মকাণ্ড। একদিকে হয়তো কোষ বিভাজন শুরু হয়ে যায়, আরেকদিকে কোন কোষ হয়তো আত্মহত্যার অর্ডার পেয়ে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়। এইরকম থরে থরে বিন্যস্ত সংকেত ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিলেন সিগন্যালিং প্যাথওয়ে বা সংকেত-সরণি।   আমাদের এই কল্পিত  সড়কের নাম দেওয়া যেতে পারে ‘ক->খ->গ->ঘ->ঙ ‘সংকেত-সরণি’।  প্রোটো অঙ্কোজিন এবং টিউমার দমনকারী জিনেরা অনেক সময়েই এই ব্যবস্থার চক্রকেন্দ্রে অবস্থান করে। বিখ্যাত RAS->MEK->ERK সড়কের কথাই ধরা যাক। কোষচক্রে Ras তার সহযোগী Mek কে সক্রিয় করে আর Mek গিয়ে সক্রিয় করে তোলে তার বন্ধু Erk কে।

ছবি ৬: RAS->Raf->MEK->ERK পাথওয়ের সহজ একটি উদাহরণ

এরা সম্মিলিতভাবে কোষ বিভাজনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ক্যান্সার কোষে এরা একে অন্যকে স্থায়ীভাবে সক্রিয় করে দিয়ে কোষ বিভাজনকে সদা-সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু এরা শুধু এক ধরণের প্রোটিনকেই সক্রিয় করে না। রহিম সাহেবের কোষের প্রথম ভিলেন APC  জিনের কথা মনে আছে? APC জিন নিজে টিউমার দমনকারী জিন। কিন্তু তাতে মিউটেশনের ফলে APC প্যাথওয়ের মহাসড়কটি উন্মুক্ত হয়ে যায়, সে গিয়ে তার সড়কের এখতিয়ার ভুক্ত অঙ্কোপ্রোটিন c-Myc এবং অন্যান্য অঙ্কোপ্রোটিনদের সক্রিয় করে তোলে।

এখানেই কিন্তু নাটকের শেষ নয়,এখনই যদি ক্যান্সারের ব্যাপার স্যাপারগুলোকে জটিল বলে মনে হয় তাহলে বলতে হবে জটিলতার আর দেখেছেন কী, সেই দিল্লী এখনো তো বহুদূর। আর ঠিক একারণেই আমি লেখাটার শুরুতে ক্যান্সার জিনোমকে ‘জটিলতর’ বলে ‘গালি’ দিয়েছিলাম। এক সড়কের ভিতরের জিনগুলোই যে একে অপরকে প্রভাবিত করতে থাকে তাই নয়,কোষের ভেতরে এক সড়ক আবার আরেক সড়ককে ছেদ করে, তখন সেই মহাসড়কে ব্যবস্থার মধ্যেও মিউটেশনের তাণ্ডবলীলা শুরু হয়ে যায়। এ্যঞ্জিওজেনেসিসের প্রবক্তা বিখ্যাত সার্জেন-গবেষক জুডা ফোকম্যান এও দেখান যে Ras এর মত সংকেতীয় প্যাথওয়েগুলো ক্যান্সার জিনোমের ভেতরে রক্তনালী তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও ঘটিয়ে দিতে সক্ষম। আর এখনো তো আমরা কোষের ডিএনএর ভেতরের নাটকই দেখছি, ক্যান্সার জিনোমের ভেতরে যে বিভিন্ন ধরণের কোষের মিথষ্ক্রিয়া চলতে থাকে বা তাদের সামগ্রিক ইকো সিস্টেমের মধ্যে যে কালোহাতের আদান প্রদান চলতে থাকে সে পর্যন্ত তো এখনো পৌঁছুতেই পারিনি। এই বাকি কাহিনিগুলো না হয় পরের পর্বের জন্যই তোলা থাক। জটিলতার ধরণটা সম্পর্কে একটা ভাসাভাসা রকমের ধারণা দেওয়ার জন্য কোষচক্রের বিভিন্ন সংকেতীয় মহাসড়ক ব্যবস্থার একটা ছবি দিলাম। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এর জটিলতার ‘জটিলতর’ ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজটা না হয় আর নাই বা করলাম।

ছবি ৭: এখানে Ras/PI3K/mTOR সংকেত-সরণির মধ্যে যে বেশ কয়েকবার করে ইন্টারসেকশন ঘটে সেটার চিত্র দেখানো হয়েছে (৭)।

ক্যান্সারের ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করে। অনেকে হয়তো ভাবছেন, ক্যান্সারের মত একটা বিকৃতির মধ্যে মুগ্ধতা! সে আবার কীভাবে সম্ভব! পরম কোন শত্রুর মধ্যে অকল্পনীয় দক্ষতা দেখলে তাকে ঘৃণা করার পরও যেমন একধরণের ‘শ্রদ্ধাবোধ’ জেগে ওঠে সেরকমই কিছু একটা হবে বোধ হয়। কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ধারায় বহুকোষী জীবের মধ্যে যে অভিনব সব প্রক্রিয়াগুলোর উদ্ভব ঘটেছে তাদের প্রায় প্রত্যেকটিকে হাইজ্যাক করে নেওয়ার চালাকি রপ্ত করে ফেলেছে সে। আমাদের টিকে থাকার পেছনের অমোঘ শক্তিগুলোই যেন আমাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোষ বিভাজন বলুন, এ্যঞ্জিওজেনেসিস বলুন, বা এ্যাপপটেসিস, এ্যাপোফেগি, নেক্রোসিসের (এদের নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করবো) মত অদ্ভুতুড়ে কিন্তু অতীব কার্যকরী ব্যাপারগুলোর কথাই বলুন তাদের সবাইকেই হাত করে নিয়েছে এই ক্যান্সার। আর এ কারণেই তাকে দমন করা এত কঠিন! আপনি যে মুহূর্তে কিমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মত জেনেরিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার দমন করতে যাচ্ছেন সেই মুহূর্তেই আপনি যেন বুমেরাং নিক্ষেপ করছেন।  তারা শুধু ক্যান্সারকেই নয় আমাদের বেঁচে থাকার পেছনের মৌলিক যে প্রক্রিয়াগুলো কাজ করছে তাদের প্রত্যেকটার কান ধরে যেন টান দিচ্ছে।  ক্যান্সার দমন করতে গিয়ে তারা আমাদের সুস্থ কোষগুলোর অবস্থাও বেসামাল করে তুলছে। সুস্থ কোষগুলোর উপর হামলার এ কাহিনি তো মুদ্রার মাত্র একটা দিক! আরেকদিকে চিকিৎসা শুরুর সাথে সাথেই ক্যান্সার কোষগুলো বিবর্তনের নিয়ম মেনে অত্যন্ত সুচারুভাবে নতুন নতুন মিউটেশন ঘটিয়ে দিব্যি নিজেদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দিচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এও ভাবি, জৈবিক নিয়ম অনুযায়ীই তো আমাদের অমরত্ব লাভ সম্ভব নয়,এই ক্যান্সার হয়তো প্রকৃতির অনিবার্য ভাঙ্গা গড়ার অমোঘ পরিণতি। ক্যান্সার না থাকলে তো আর আমরা শেষ পর্যন্ত মরতাম না। এতদিন না হয় ক্যান্সার হয়ে মারা যাওয়ার অনেক আগেই অন্য রোগে শোকে মৃত্যুবরণ করতাম। বহু দশক ধরে একের পর এক মিউটেশন জমে জমে ক্যান্সার হওয়ার অনেক আগেই আমরা অক্কা পেতাম। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে আমরা যেহেতু বেশীরভাগ রোগকে জয় করতে শিখে গেছি এখন জীবনের এ পারে এসে ক্যান্সারের এরকম প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি। থাক এসব দার্শনিক কথা বার্তা। কখন যে আবার ঢেঁকির মত বিবর্তনের ধান ভানতে শুরু করে দিয়েছি তা খেয়ালই করিনি, নাহ ক্যান্সারের মূল প্রসঙ্গেই আবার ফেরত যাই।

বিজ্ঞানীরা একের পর এক ক্যান্সার তৈরিতে সক্ষম জিন এবং তাদের মিউটেশন আবিষ্কার করে চলেছেন। হিউম্যান জিনোম  প্রজেক্টের পর বিশ্বব্যাপী কয়েক ডজন বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃ্ত্বে শুরু হয়েছে ক্যান্সার জিনোম সিকোয়েন্সিং এর জন্য নিবেদিত ক্যান্সার জিনোম অ্যাটলাস প্রজেক্ট। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই প্রজেক্টগুলো, এই একটি প্রজেক্টটির পেছনেই খরচ পড়বে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।  ডঃ ফ্র্যান্সিস কলিন্স এর ব্যাপকতার ব্যাপারটা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছিলেন,ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এর পরিমাণ দিয়ে হিসেব করলে ৫০ টা কমন ক্যান্সারের জিনোমের কাজ শেষ করতে করতেই এই ক্যান্সার জিনোম প্রজেক্টের ব্যাপ্তি প্রায় ১০ হাজার হিউমান জিনোম প্রজেক্টের সমান হয়ে যাবে। তখন আমরা খুব ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলেও, বাস্তব এক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব (৫)। তবে ডঃ ভোগলস্টাইন এবং ডঃ ভাইনবার্গের মত ক্যান্সার গবেষণার দিক-নির্দেশকদের অনেকেই এই প্রজেক্টের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্যান্সারের চোদ্দগুষ্ঠির খবর জানার জন্য এই গবেষণাগুলোর প্রয়োজন ছিল সে নিয়ে তাদের দ্বিমত নেই, এই তাত্ত্বিক গবেষণার পেছনে অনেক তো পয়সা, সময় এবং এনার্জি ঢালা হল, তেলা মাথায় তেল দিয়ে আর কত? এগুলো থেকে যদি কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কারের পথ সুগম না হয় তাহলে আর লাভটা কী হল? এতদিন ক্যান্সার ব্ল্যাক বক্স হয়ে ছিল আমাদের কাছে,এখন আমরা এর অনেকটাই জানি, এখন সময় হয়েছে এর লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থাতে মনোনিবেশ করার।

এই তো ২০১০ সালেই ডঃ ভোগলস্টাইন এ প্রসঙ্গে কিছু চমৎকার তথ্য তুলে ধরেন। উনি বলেন আমরা এখন ক্যান্সার জিনোমের অনেক মৌলিক প্রশ্নেরই উত্তর জানি। সাধারণত টিউমারের ডিএনএর বেস এর মধ্যে কম বেশী ৩০-৮০টা মিউটেশন দেখা যায়। লিউকেমিয়ায় মিউটেশনের সংখ্যা অনেক কম, ১০ টার মত, কিন্তু ত্বক বা ফুসফুসের ক্যান্সারে সে সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১০০-২০০ তে। ওনার মতে এই সবগুলো মিউটেশনের মধ্যে একটা মৌলিক প্যাটার্ন দেখা যেতে শুরু করেছে, আরও অনন্তকাল ধরে আণবিক গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকলেই তো আর সে প্যাটার্ন বদলে যাবে না। ডঃ ভোগলস্টাইনের ল্যাবে গত দুই দশকে ক্যান্সারের যে বিপুল ডাটাবেস তৈরি হয়েছে তা থেকেও একটা প্যাটার্ন দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। ৩৫৩ ধরণের ক্যান্সারের সাব-টাইপের মধ্যে ১৩০,০৭২ টি মিউটেশন খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু ৩১৪২ টি জিনের মধ্যে পাওয়া এতগুলো মিউটেশনের সবগুলোই তো আর ক্যান্সার তৈরির পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। আমরা আগে দেখেছিলাম যে একটা টিউমারের মধ্যে দু’ধরণের মিউটেশন থাকে, ড্রাইভার মিউটেশন এবং প্যাসেঞ্জার মিউটেশন। ড্রাইভার মিউটেশনগুলোই শুধু সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হয়। নিষ্ক্রিয় প্যাসেঞ্জার মিউটেশনগুলোকে বাদ দেওয়ার পর সম্ভাবনাময় ড্রাইভার জিনগুলোর সংখ্যা নেমে আসে ৩১৯ এ, এর মধ্যে ২৮৬টি টিউমার দমনকারী জিন আর ৩৩ টি অঙ্কোজিন রয়েছে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, এদের প্রায় সবগুলোই ১২টি সংকেতীয় মহাসড়কের আওতায় পড়ে যাচ্ছে (৬)। ডঃ ভোগলস্টাইনের মতে এই প্যাটার্নটা হয়তো তেমন আর বদলাবে না। আরও হাজার হাজার নতুন টিউমার সিকোয়েন্স করলেও হয়তো আমরা এই মৌলিক ছকটাই দেখতে পাবো। এই আণবিক গবেষণাগুলোর দরকার ছিল এবং হয়তো আরও দরকার আছে, কিন্তু এখন সময় হয়েছে ইতোমধ্যেই অর্জিত এই বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডারকে প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার কাজে লাগানোর। মুখের ওপর হক কথা বলে দেওয়ার জন্য দুর্নাম আছে ডঃ ভোগলস্টাইনের। উনি ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন যে এখন থেকে  ওনার ল্যাবে একেবারে প্রাথমিক ধাপে ক্যান্সার ধরে ফেলার গবেষণা করা হবে। আণবিক গবেষণাগুলোর হাত ধরে এমন কিছু টেস্ট আবিষ্কার করতে চান যেগুলো দিয়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই ডাক্তাররা যেন রুটিন চেক আপের সময় তা ধরে ফেলতে পারেন। এই ধরণের কার্যকরী টেস্টগুলো আবিষ্কার করা এবং সেগুলোকে নিয়মিত চেক আপের অংশ বানানোটাই এখন তার গবেষণার লক্ষ্য।

ওদিকে ক্যান্সার গবেষণার আরেক মহারথী ডাঃ রবার্ট ভাইনবার্গ আবার আরেক ডিগ্রী বাড়া। উনি তো বলেই ফেললেন যে অনন্তকাল ধরে ক্যান্সারের জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে থাকলে কোন লাভ হবে না, নর্দমায় এভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে দেওয়ার কোন অর্থই হয় না। এই সেই ভাইনবার্গ যিনি প্রথম অঙ্কোজিন এবং প্রথম টিউমার দমনকারী জিন আবিষ্কার করে ক্যান্সারের গবেষণার পথ উন্মুক্ত দিয়েছিলেন। ওনারাও আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যান্সারের গবেষণার তথ্য-সুনামির হাল ধরার চেষ্টা করছেন। ওনারা চেষ্টা করছেন এই হাজার হাজার মিউটেশনকে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের আওতায় এনে একটা মৌলিক রূপরেখা  দেওয়ার। আর এই চিন্তা থেকেই ২০০০ সালে উনি ডঃ ডগ হ্যানাহানের সাথে ‘হলমার্ক অফ ক্যান্সার’ নামে পেপারটি লেখেন, সেখানে ক্যান্সারের এই আপাত বিশৃঙ্খলতাগুলোকে ছয়টি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের আওতায় আনার চেষ্টা করেন। এর পরে গত প্রায় ১০-১১ বছরে ক্যান্সার গবেষণায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়, একদিকে যেমন বহু অজানা ব্যাপার সম্পর্কে আমরা জানতে পারি অন্যদিকে পুরনো কিছু জানা বিষয়কেও ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এসে ভাইনবার্গ এবং হ্যানাহ্যান তাদের মূল লেখাটিকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজান, ‘হলমার্কস অফ ক্যান্সার: দ্যা নেক্সট জেনারেশন’ শিরোনামের পেপারটিতে। এই বিষয়গুলো নিয়ে গত দশকে বহু গবেষণা হয়েছে, তাদের এই পেপারটিতে এই গবেষণাগুলোর একটা চমৎকার সারমর্ম ফুটে উঠেছে। এর পরের পর্বে এই হলমার্কগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে রইলো।

তথ্যসূত্র:

১) kinzler, K.W and Vogelstein. Cancer Genes and Pathways they control, Nature Medicine, Volume 10, Number 8, Aug 2004.

২) http://www.who.int/cancer/en/

৩) kinzler, K.W and Vogelstein,B.2002. Genetic Basis of Human Cancer (2nd Edition), Mcgraw-Hill, New York

৪) Steven A. F (2012). Dynamics of Cancer, Inicidence, Inheritence and Evolution of Cancer. Prometheus books. 69-70.

৫) Mukharjee, S (2010) The Emperor of All Melodies, A Biography of Cancer. Scribner, NY.

৬)Jocelyn Kaiser, 23 April 2010, UpdatedL A skeptic Questinos Cancer Genome projects. News.Siencemag.com.

৬)Jocelyn Kaiser, 20 July 2012, Cancer Genetics with an Edge. Science, Vol337.

৭) Maria M. Mihaylova and Reuben J. Shaw, (Sept 2011 ), The AMPK signalling pathway coordinates cell growth, autophagy and metabolism, NATURE CELL BIOLOGY VOLUME 13 | NUMBER 9 |

৮) Hanahan D, Weinberg R, Hallmarks of Cancer: The Next Generation: Cell 144, March 4, 2011: DOI 10.1016/j.cell.2011.02.013