কেউ আমাকে একটু কষ্ট করে বোঝাবেন, জীবনের উদ্দেশ্য কি? সত্যি বলছি, এই ব্যাপারে বিশেষ অজ্ঞ আমি। বিশেষ সন্দিহান। ছোটবেলায় না হয় শুনেছিলাম – স্বর্গ-নরক আছে, স্বর্গে যেতে হলে তাই ভাল কাজ করতে হবে। ধর্মের কথা থাক। ধর্ম যখন ছেড়েছি, তখন না হয় স্বর্গ-নরকের কথাও বাদ দিলাম। কিন্তু ছোটবেলার আরেকটা শিক্ষার কথা এখনো ছাড়তে পারিনি। কেন পারিনি তাও জানিনা। কিছু জিনিসকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেতে কি? জানি না। তবে কথাটা মনে মনে মানি – “মানুষ বাঁচে কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়”। কিন্তু যখনই এ কথার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে যাই, বেয়াড়া মন তখন বলে, জীবনেরইতো কোন অর্থ নেই, আর দশটা প্রাণীর মতো আমিও একদিন মরে যাবো। বিজ্ঞান বলে, আমারতো নয়ই, বিশেষত্ব নেই কারো মাঝেই। এ অবস্থায় “কর্মের মধ্যে বাঁচা”-র মতো দার্শনিক অবস্থানের গুরুত্ব কোথায়? আমরা কি নিজেরা বেঁচে থাকার অর্থ বের করার জন্য শুধু-শুধুই কিছু অর্থহীন অর্থ দাঁড় করাচ্ছি না?
তবে একটা সত্য ক্ষণে-ক্ষণে উপলব্ধি করি, মহৎ কাজ করলে অন্যের সম্মান পাওয়া যায়, সম্মান পেতে ভাল লাগে। ভাল কাজ করলে অন্যের বাহবা পাওয়া যায়, বাহবা পেতে ভাল লাগে। আমি চাই অন্য কেউ আমার কাজের প্রশংসা করুক, প্রশংসা পেতে ভাল লাগে। ভাল লাগে অন্যরা আমার কাজের প্রতি সমর্থন জানালে; ভাল লাগে আমার প্রতি, আমার কাজের প্রতি অন্যদের আকর্ষণ দেখলে।
এই ভাল-লাগা-গুলোর মাঝে কেমন যেন একটা শো-অফ টেন্ডেন্সি আছে, তাই না? নিজে যা করি, তা অন্যদের দেখানোর ব্যাপার আছে, তাই না? এই “শো-অফ” জিনিসটাকে আবার বিশেষ অপছন্দ। তাই নিজেকে সেই শো-অফের তালিকায় দেখলে খারাপ লাগে। চোখের সামনে দেখতে পাই – প্রায় প্রতিটা মানুষ নিজেকে বিজ্ঞাপন বানিয়ে প্রচার করছে। এক শিক্ষককে যেকোন কথার শুরুতেই তাই বলতে শুনি – “When I was in Japan, …”। মেইলের শেষে তাই দেখতে পাই – “Sent from my iPhone”। কিংবা কারো সাথে গল্প করতে গেলেই শুনতে পাই – “আমার বেলায় কি হয়েছে জানো …”। মুক্তমনাতেও দেখতে পাই – “এ নিয়ে আমিও একটা লেখা লিখেছিলাম, এই যে লিংক …”। আমি নিশ্চিত এ ধরনের শো-অফকে অপছন্দ করেন সবাই, বিশেষ করে অন্যের বেলায় হলেতো অবশ্যই। সমস্যা কেবল নিজের বেলায় এ তত্ত্ব প্রয়োগের ব্যাপারে। সকলেই বলবেন, “আমিতো করিনা।” নিজেকে এ সমস্যার বাইরের কেউ বলে দাবি করছি না, তবে অন্যদের এ ধরনের আচরণ দেখে মনে মনে ঠিকই হাসি। 🙂 আর নিজের জন্য মনে মনে একটা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করি – “আমি আমার কাজ করে যাই, এতে যদি কেউ ভাল বলে তো বলুক, প্রশংসা করে তো করুক, সেদিকে মাথা না ঘামাই।”
কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে কী হয়, বলুন। না হয় নিজের কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করলাম না, কিন্তু আমিতো ঠিকই জানি, একটুখানি সম্মানের জন্য কীরকম মুখিয়ে থাকে মন! একটুখানি প্রশংসা কীরকম উৎসাহিত করতে পারে আমায়! আচ্ছা, এই কারণে কি আমাকে ভন্ড বলা যেতে পারে? সততার সাথে বলি – আমার মনে হয় আমাকে ভন্ড বলা যেতেই পারে। এরপর মন ফিরে যায় আগের জায়গায়, এবার দেয় ভিন্ন যুক্তি – কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকার মানে কি? পরবর্তীতে কেউ সম্মানের সাথে বলবে, ‘অমুকে’ তমুক কাজ করছিলো – এইতো? তাহলে আমি যদি সেইভাবে বাঁচতে চাই, আমি যদি আমার কাজের জন্য অন্যের কাছ থেকে প্রশংসা প্রত্যাশা করি, তাহলে আমাকে ভন্ড বলা হবে কেন? একটু পরেই যুক্তি-তর্ককে বিদায় করে দেয় মন। তার কাছে একটা প্রবোধ তৈরিই থাকে – “হলাম না হয় ভন্ড, এরকম ভন্ড সবাই, কেউ স্বীকার করে, কেউ করে না।”
আচ্ছা, ভন্ড হলেই বা ক্ষতি কি? জীবনের কি কোন অর্থ আছে? কোন উদ্দেশ্য আছে? মনের মধ্যে বাজতে থাকে “Shall We Dance?” সিনেমার “মানুষ কেন বিয়ে করে?” প্রশ্নটার উত্তর, যার মধ্যে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সত্য আছে কিনা তাই ভাবি –
Because we need a witness to our lives. There’s a billion of people on the planet. What does any one life really mean? But in a marriage, you are promising to care about everything – the good things, the bad things, the terrible things, the mundane things… all of it, all the time, every day. You’re saying “Your life will not go unnoticed, because I’ll notice it. Your life will not go unwitnessed, because I’ll be your witness.”
‘জীবনের উদ্দেশ্য কি?’ এটা ইন্টেলিজেন্ট মস্তিষ্ক থেকে প্রসূত একটি চির-চারিত প্রশ্ন। যে কোন জৈবিক স্বত্বার ধর্ম হল যে করে হোক বেঁচে থাকা, বংশ বিস্তার করা। এই ধর্মের পিছনে কোন উদ্দেশ্য নেই। উদ্দেশ্য বিধেয় নিয়ে তাদের কোন সচেতন বোধও নেই। এই বোধ আছে একমাত্র মানুষের। তাও আবার আদিম যুগ পার করে যখন থেকে মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুটা অবসর সময় লাভ করতে পেরেছে, তখন থেকে! আদিম সমাজে মানুষ সারাদিন মাইলের পর মাইল চষে বেড়িয়েছে খাবারের সন্ধানে, সারা জীবনই থেকেছে আধপেটা খেয়ে। অধিকাংশ সময়ই কেটেছে হিংস্র প্রাণীদের মোকাবেলায়। জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার মত অবসর ও মস্তিষ্কের বিকাশ তাদের ছিল না। (এখনো শ্রমজীবী মানুষদের এই অবসর নেই!) মস্তিষ্কের দুটি অংশ। একটি অংশ চারপাশের পরিবেশ থেকে বর্তমান মূহুর্তের তথ্য সংগ্রহ করছে। আর একটি অংশ সেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করছে এবং অতীত তথ্য থেকে মিলিয়ে দেখছে যে তাকে কি এখনি দৌড়ে পালিয়ে যেতে হবে, নাকি খাবারের জন্য দৌড়ে ধরতে হবে, নাকি প্রেম নিবেদন করতে হবে ইত্যাদি। তাকে প্রতিনিয়ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে হচ্ছে পরিবেশের অজানা সংকেতগুলো কি ভয়ের, নাকি আকর্ষণীয়? এই অজানা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মানুষ যখন প্রত্যক্ষ কারণ খুঁজে পায় না, তখনই সেটা সে পূরণ করে কাল্পনিক গল্প দিয়ে! অন্যরা সেটা বিশ্বাসও করে নেয় এই ভেবে যে কারণটা সে হয়তো প্রত্যক্ষ করতে পারছে না, কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তিটি নিশ্চয় পেরেছে, কারণ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই বয়স্ক লোকটির অভিজ্ঞতা অনেক বেশী। মানুষের ভাষার বিকাশ এই অপ্রত্যক্ষ বিষয়গুলো ধারনা করতে আরও সাহায্য করেছে। এই অপ্রত্যক্ষ তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়েই মানুষের মস্তিষ্ক যুক্তিবাদ শিখেছে, কার্যকারণ নিয়মগুলো শিখেছে, মানুষ হয়ে উঠেছে মানুষ! মানুষ দেখেছে তার সব কাজের পেছনেই একটা না একটা উদ্দেশ্য রয়েছে, যদিও সেগুলো নিছক বস্তুগত। যখন একদল মানুষকে জীবন ধারণের জন্য আর কোন কাজ করতে হয়না, তার সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে দেয় অন্য আর একদল লোক, তার থাকে অফুরন্ত সময়, তখন সে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়, কবিতা লেখে, গান গায়, কঠিন সাধনা করে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখে, ছবি এঁকে অন্যকে অবাক করে দেয়, পাথর খোঁদাই করে ভয়ংকর মূর্তি বানায়, কাল্পনিক গল্প রচনা করে এবং এগুলো দিয়ে অজানার ব্যাখ্যা দেয়। মানুষ যে মরণশীল এটা তারা মানতে পারে না। তারা আবিষ্কার করে অবিনশ্বর আত্মার! তারা এই সমস্ত আত্মার জগতকে অর্থযুক্ত করতে জীবনের উদ্দেশ্যের ধারনা প্রবর্তন করে এবং সৃষ্টি হয় ধর্মের। ধর্ম বলে মানুষকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে! কারো জীবনের উদ্দেশ্য রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করা। কারো জীবনের উদ্দেশ্য সারাজীবন মাছ মেরে অন্যদের খাওয়ানো। কারো জীবনের উদ্দেশ্য স্বামীর সেবা করা ইত্যাদি। এই উদ্দেশ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে অবশর-ভোগী মানুষদের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের জন্য খেটে খাওয়া মানুষদের খাটার যৌক্তিকতা তৈরির জন্য। যাহোক, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে গিয়ে মানুষ বিচিত্র-মুখি জবাব খুঁজে পেয়েছে এবং বিচিত্র-ভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে, হতাশ হচ্ছে না। এখানেই মানুষের চিন্তার সৌন্দর্য! মানুষ নিছক জৈবিক স্বত্বা হয়েও স্রষ্টার আসনে বসেছে!
জীবন আপাততঃ বাদ দেন, আপনার এই লেখার উদ্দেশ্য কি, কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, কী জবাব দেবেন? জীবনের যে উদ্দেশ্য নাই – হেইটা দেখানোর জন্য লেখা দিছি!
জীবনের কোন উদ্দেশ্য নাই, এইটা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে একটা লেখা লিখতে হলে, বুঝতে হবে, জীবনের উদ্দেশ্যের চেয়ে আপনার লেখার উদ্দেশ্যও কিন্তু খুব ব্যাপক কিছু নয়।
তবে চাইলে যে কেউ জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে আঁতলামি করতে পারে। আমারও একটু শখ হল, তাই করি। এই মুহুর্তে এটাই আমার উদ্দেশ্য বলতে পারেন।
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র মানতে গেলে জীবনের উদ্দেশ্য আর কিছুই নয় – নিবিষ্টচিত্তে এন্ট্রপি বাড়িয়ে চলা। আমাদের খাওয়া, দাওয়া, শয়ন, ভ্রমণ, মৈথুন, কিংবা রবিঠাকুরের কবিতা পাঠের আনন্দ – সব কিছুর পেছনেই থাকে মোটা দাগে কেবল একটি মাত্র উদ্দেশ্য – ফেইথফুলি এনট্রপি বাড়ানো – সেটা আমরা বুঝতে পারি আর নাই পারি! জন্মের পর থেকে সারা জীবন ধরে আমরা এনট্রপি বাড়িয়ে বাড়িয়ে প্রকৃতিতে তাপগতীয় অসাম্য তৈরি করি, আর শেষ মেষ পঞ্চত্ব প্রাপ্তির মাধ্যমে অন্যান্য জড় পদার্থের মত নিজেদের দেহকে তাপগতীয় স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসি। আপনি আমি ব্লগ লিখছি, আনন্দ করছি, গলা ফাটিয়ে আলোচনা করছি, ঝগড়া করছি এমনকি ব্লগ লিখে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করছি – এ সবই আসলে মোটা দাগে এন্ট্রপি বাড়ানোর খেলা। খেলতে থাকুন, আর ভাবতে থাকুন… :))
@অভিজিৎ,
হুমম… সেটাই! জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ কোন সদুত্তর দিতে পারে না। আর তাই এ নিয়ে কথা বলাই হয়ে যায় আঁতলামি। শেষ পর্যন্ত উত্তর আসে একটাই – “বাদ দাওতো এসব চিন্তা! নিজের কাজ করে যাও!”
আর নিতান্তই যদি জানার ইচ্ছে থাকে কেন এ লেখা লিখেছি, তাহলে বলতে হয় – না, হেইটা প্রমাণ করার জন্য না, বরং নিজের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব আছে এ বিষয়ে যা শেয়ার করতে চেয়েছি অন্যদের সাথে; এ ব্যাপারে অন্যদের ভাবনার সাথে আমার আপেক্ষিক অবস্থান কোথায় দেখতে চেয়েছি তা। শাখা নির্ভানার মতে এটা আমার লোকাল গোল, আর আপনার মতে হয়তো এটা এ সময়ের আঁতলামি! ও হ্যাঁ, এনট্রপি বাড়ানোর খেলার আঁতলামিটা বিনোদনীয়! 🙂
@অভিজিৎ,
কিন্তু সেখানেও ক্যাচাল আছে। 🙂
সূত্র – Entropy and life
@রূপম (ধ্রুব),
শ্রডিংগারের বইটা আমি পড়েছি। যে অংশটা ডিক্রিসেস বা কমছে বলা হচ্ছে সেটা আসলে লোকালি। লোকালি পকেট হিসেবে কোথাও কোথাও এন্ট্রপি কমলেও (যেমন আমাদের দেহের কিংবা কোষের বৃদ্ধি ইত্যাদি) অনেকটা রেফ্রিজারেটরে পানি বরফ হবার মতোই ‘কমছে’ বলে মনে হলেও সেটা আসলে আপাতঃ কমা (রেফ্রিজেটরে পানিকে বরফ করতে গেলে রেফ্রিজারেটরে লোকাল এন্ট্রপি কমে ঠিকই, কিন্তু সেই কাজটা করতে গেলে যে শক্তিটা খরচ করতে হয়, তাতে নীট এন্ট্রপির আসলে বৃদ্ধিই ঘটে কিন্তু)! তাই লোকালি এন্ট্রপি কমছে বা স্থির আছে মনে হলেও মহাবিশ্বের স্বাপেক্ষে সার্বিক এন্ট্রপি তো সময়ের সাথে সাথে বাড়ছেই। এটা থেকে মুক্তি নাই। আমি আপনি কেবল সেই ‘এন্ট্রপি বাড়া নাটকের’ পার্শ্বচরিত্র 🙂
@অভিজিৎ,
তাতো বটেই 🙂
@অভিজিৎদা,
এই বিষয়টি আগেও আপনার বিভিন্ন লেখায় পেয়েছি, কিন্তু অনেকটা প্রাসংগিক আলোচনা হিসেবে, আপনার এ সম্পর্কিত মূল আলোচনা (আমার ধারণা নিশ্চয়ই আছে) মিস করে গেছি! জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার এই কথাগুলো ভয়ানক কৌতূহল জাগায়, কিন্তু থার্মোডায়নামিক্স খুব কমই বুঝি, এন্ট্রপি শব্দটিও নতুন আমার কাছে! উইকি করলে হয়ত কিছু জানা সম্ভব, কিন্তু আপনার আলোচনাই পড়তে ইচ্ছে করছে! যদি সম্ভব হয়, অভিজিৎদা……..
@কাজি মামুন,
এই পোস্টে গতকাল থেকে আসিনি। আজ এসে দেখি অপার্থিব আর রূপমের মধ্যে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা। এ আলোচনা অনুসরণ করলেই হয়তো বুঝবেন আমি কী বলতে চেয়েছিলাম।
আপনার আগ্রহ বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে।
@অভিজিৎ দা,
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র দ্বারা যে জীবনের উদ্দেশ্য নির্ণয় করা যায়, আমি অন্তত জানতাম না। 🙁 🙁 অস্তিত্ববাদীরা ছেঁড়া কাঁথায় মুখ লুকাবে এই কথা শুনে। আর এই প্রশ্নটা খুব সম্ভবত আতলামিও না, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন।
অবশ্য “গুরুত্বপূর্ণ”- এই শব্দটার রকমফের আছে এবং সবাই একই চিন্তা দ্বারা তাড়িত হবে না, এও সত্য। কিন্তু সেই গুরুত্বটা যদি আগ্রাসী রূপ নেয়, তাহলে সেটা চিন্তারই বিষয় এবং তখনই অস্তিত্ববাদী প্রশ্নগুলো আসে, যেটা একটা স্বাভাবিক মানুষকে কোন না কোন ভাবে, কোন না কোন সময়ে তাড়িত করে। এবং মানুষ যে শুধু নিতান্তই বেঁচে থাকার জন্যে বেঁচে থাকে না এবং সবার বেঁচে থাকার মানে এক না (থাকা সাপেক্ষে)- সেই সাপেক্ষেও প্রশ্নটার গুরুত্ব উপলব্ধি করার মতো। 🙂
@শফিউল জয়,
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র দ্বারা যে “জীবনের” উদ্দেশ্য আসলে “নির্ণয়” করা যায় না। অভিজিৎ এন্ট্রপি বাড়ানো জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে যেটা উল্লেখ করেছে সেটা প্রাণ অর্থে, জীবন অর্থে নয়। আমি নিজেও মুক্তমনাতে অনেক আগে ইংরেজীতে A SCIENTIFIC VIEW OF LIFE, DEATH, IMMORTALITY নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেম। সেখানে লিখেছিলামঃ
“The purpose of life is to faithfully obey the Second Law of Thermodynamics by increasing entropy”
এখানে LIFE বলতে জৈববৈজ্ঞানিক প্রাণ বুঝিয়েছিলাম। এক কোষী প্রাণী ব্যাক্টেরিয়া থেকে মানুষ সবই প্রাণী এবং এই এন্ট্রপি বাড়ানো সব প্রাণের বেলাতেই প্রযোজ্য। এই এন্ট্রপি বাড়ানোর জৈববৈজ্ঞানিক প্রকাশ হল বংশাণু রক্ষা ও পরের প্রজন্মে প্রেরণ। কিন্তু এখানে বোধ হয় সবাই “মানুষের” জীবনের উদ্দেশ্য বোঝাতে চাইছে। মানুষের জন্য আলাদা (এন্ট্রপি বাড়ানো ছাড়া) মত জৈববৈজ্ঞানিক কোন “উদ্দেশ্য” নাই। মানুষের “জীবনের” উদ্দেশ্য একটি ব্যক্তনিষ্ঠ ধারণা। যার কাছে যেটা মনে হয়। তবে কেউ যদি এমন এক উদ্দেশ্য খোঁজে যা সবার জন্য একই, তাহলে বলতে হয় সন্ততি রক্ষা করা (অর্থাৎ বংশাণু রক্ষা ও পরের প্রজন্মে প্রেরণ)। সেটা আমরা অনুধাবণ করতে পারি, এন্ট্রপি বাড়ানোটা পারিনা, কারণ সেটা আণুবীক্ষণিক স্তরে ঘটছে। আসল কথা হল “মানুষের” জীবনের কোন বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা নেই। এটা এতই একটা ব্যক্তনিষ্ঠ ধারণা যে যার কাছে সেটা উদ্দেশ্য মনে হয় সেটাই ঠিক। যার কাছে কোন উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় নেই বা স্থির করতে পারছে না তার জন্য সেই জৈববৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যটাকেই (সন্তান লালন পালন করা, মানে বংশাণুকে অমরত্ব দেয়া) তার জীবনের উদ্দেশ্য বলে ধরে নেয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। 🙂
@অপার্থিব,
আপনার কথার সাথে একমত। 🙂 🙂 কিন্তু মানুষই বোধহয় একমাত্র প্রাণী যে কী না নিজের জৈবিক সত্ত্বাকে অস্বীকার করতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় জৈবিক সত্ত্বাকে অস্বীকার না করলে মানুষের পরিচয় নিয়েই সন্দিহান হয়ে যাই। মোটামুটি সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে জৈবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন “প্রাণী” মানুষ আর প্রকৃত “মানুষ” যে এক না- সেটা কেউ বোধহয় অস্বীকার করবে না।
আমি কিন্তু উপরের কথাটি অর্থাৎ আগের মন্তব্যটি নিজের অজ্ঞানতা বা মানুষের অক্ষমতা প্রকাশের জন্যে বলি নি। আমি অন্য কিছু বোঝাতে চেয়েছিলাম সূক্ষ্মভাবে। 🙂 🙂 কারণ আপনিই বললেন, মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য একটা ব্যক্তিনিষ্ঠ ধারণা- এতে আমি প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করি। 🙂 🙂
@অপার্থিব,
খটকা লাগছে।
“The purpose of life is to faithfully obey the Second Law of Thermodynamics by increasing entropy”
আর
Nobel-laureate physicist Erwin Schrödinger theorizes that life, contrary to the general tendency dictated by the Second law of thermodynamics, decreases or maintains its entropy by feeding on negative entropy. (Entropy and life)
কথা দুটো কি সরাসরি কন্ফ্লিক্ট করে না? একটু আলো ফেললে ভালো হতো।
@রূপম (ধ্রুব),
উপরে অভিজিতই আপনার খটকার সমাধান সুন্দর ভাষায় দিয়েছে। আমার বলা উচিত ছিল যে সব প্রানীর উদ্দেশ্যই হল গোটা বিশ্বের সার্বিক এন্ট্রপি বাড়িয়ে নিজেদের স্থানীয় বিন্যাসকে (Local Order) বাড়ানো। আসলে প্রাণ হল একটা অসাম্যমূলক তাপগতিবিদ্যক তন্ত্র (Non-Equlibrium Thermodynamic System) যার ধর্ম হল স্ববিন্যাস (Self-Organization). এই Self-Organization হল বিশ্বের সার্বিক এন্ট্রপি বাড়ানোর একটা দক্ষ পন্থা। ব্যাপারটা যতই ভিতরে ঢুকব ততি জটিল হতে থাকবে। তাই আর কথা বাড়াব না। 🙂
@অপার্থিব,
সার্বিক এনট্রপি বাড়ানোর জন্যে লোকাল অর্ডার তৈরি যদি একটা দক্ষ পন্থা হয়, তাহলে এটা বলা যায় না যে আমাদের ইমেডিয়েট গোল আসলে লোকার অর্ডার তৈরি করা, অর্থাৎ লোকালি এনট্রপি হ্রাস করার চেষ্টা করা। অবশ্য আপনার “বলা উচিত ছিলো”র ফ্রেইজিংটা ওরকমই হয়েছে।
আর ভেতরেই মনে হয় আমাদের ঢোকা উচিত। উপর দিয়ে উপর দিয়েই তো অধিকাংশ সময় সব চলে।
@রূপম (ধ্রুব),
হ্যাঁ ইমেডিয়েট গোল । আল্টিমেট গোল নয়। এটা অনেকটা সেক্স এর গোল কি প্রশ্নের মত। ইমেডিয়েট গোল হল সুখানুভূতি লাভ। আল্টিমেট গোল (বিবর্তনের) হল সন্তান জন্ম (বংশাণু সংরক্ষণ)।
ধন্যবাদ আপনার অন্য মন্তব্যে দেয়া লিঙ্কের জন্য।
@অপার্থিব,
আরেকটা ব্যাপার, বিবর্তনের ক্ষেত্রেও একইভাবে গোল নিয়ে কথা বলা চলে তাহলে। যদিও বলা হয় যে বিবর্তনের কোনো লক্ষ্য নেই। বিষয়টা মজার। এটা নিয়ে অভিজিৎ ভাইয়ের সাথে একবার কথা হয়েছিলো। সমস্যাটা হয় যখন আমরা অবজেক্টিভ ক্লেইম করি। কিন্তু আমার মতে প্রায় সকল ক্লেইমই দেখার একেকটা উপায়।
@রূপম (ধ্রুব),
হ্যাঁ তবে এই অর্থেঃ
পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম –> বিবর্তন
বিবর্তনের “উদ্দেশ্য” –> পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম পূরণ করা
পদার্থবিজ্ঞানের (অন্যতম)নিয়ম –> গোটা বিশ্বের এন্ট্রপি বাড়ানো
এখানে সবই অবজেক্টিভ। শুধু মানুষের জীবনের “উদ্দেশ্য” অবব্জেক্টিভ নয়।
@অপার্থিব, অভিজিৎ, রূপম (ধ্রুব), শফিউল জয়
শুরুতে ভেবেছিলাম এনট্রপি বাড়ানোর ব্যাপারটা অভিজিৎ-এর এক ধরনের মশকরা। মশকরা হোক আর নাই হোক, এ বিষয়ক কথাবার্তা ভাল লাগলো। আর লিঙ্কগুলোর জন্য বিশেষ ধন্যবাদ!
@অপার্থিব,
এই যে বললেন, বিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম পূরণ করা, এক দিক থেকে দেখলে এটা যেমন ঠিক লাগে, আবার যেই সেন্সে বলা হয় যে Evolution has no goal, সেদিক থেকে চিন্তা করলে সেটাও কিন্তু বেঠিক লাগে না।
এখন এই কন্ফ্লিক্টিং ক্লেইম দুটার কোনটা অবজেক্টিভ? আমি বলবো, এখানে অবজেক্টিভ ক্লেইম করতে যাওয়াটা বিপজ্জনক। দুটোই হলো দেখার উপায়। বিশেষ করে যখন গোল নিয়ে কথা বলছেন।
পর্যবেক্ষণ বলছে যে আপেল মাটিতে পড়ছে। আপনি ভাবতে পারেন যে আপেলের “গোল” মাটিতে পড়া কিংবা বলতে পারেন যে জগতের গোলের একটা অংশ হলো গ্র্যাভিটির ল কে মান্য করা। এখানে অবজেক্টিভ থাকে কেবল পর্যবেক্ষণের উপর পূর্বাভাসটা – যে আপেলটা এতো উচ্চতা থেকে ছেড়ে দিলে অমুক ত্বরণে মাটিতে এতো সময় ধরে পড়বে।
বিজ্ঞান এভাবে ফেনোমেননকে পূর্বাভাসসাধ্যভাবে বর্ণনা করছে। এর বাইরে ফেনোমেননগুলোর পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত গোল রয়েছে কিনা, সেটা আমাদের ভাষিক আরোপ।
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের কথাও যদি বলেন, এটা কেবল এই পূর্বাভাস করছে যে একটা ক্লোজড সিস্টেমে এনট্রপি বাড়তে থাকবে। দেখুন, গোলের উল্লেখ ছাড়াই এটা বর্ণনা করা গেলো। আবার চাইলে বলতে পারেন যে এটা একটা গোল-ড্রিভেন আচরণ।
গোলের তর্কটা ঠিক ঠিক মেটাফিজিক্যাল। প্রকৃতির গোল আছে এমন অবজেক্টিভ ক্লেইম teleology নামে দর্শনে আলোচিত হয়। আধুনিক বিজ্ঞানে teleological বক্তব্য এড়িয়ে চলার চল আছে, মূলত বলা চলে যাচাইঅযোগ্যতার কারণে। কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে গোল-ড্রিভেন আচরণ অনুমান করে বক্তব্য দেয়া অনেক সময়েই সুবিধাজনক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা কোনো গোল অবজেক্টিভলি ক্লেইম করছে। এটাকে apparent goal-directedness বা teleonomy বলে।
তেমনি আবার যে বললেন –
এখানেও সমস্যা। পদার্থ”বিজ্ঞান” তো বিশ্বের পর্যবেক্ষণের সাবসার্ভিয়ান্ট, বিশ্বের পর্যবেক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের সাবসার্ভিয়ান্ট নয়। তাহলে পদার্থ”বিজ্ঞান” কীভাবে এজেন্সি আরোপ করে গোটা বিশ্বের এনট্রপি বাড়াবে? ফলে এনট্রপি বাড়ানোর “গোল”টা এখানে কার এজেন্সির অধীন বলে দাবি করছেন, সেটা আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বলতে পারেন যে বিশ্বের গোল হচ্ছে তার নিজের এনট্রপি বাড়ানো এবং পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব সেটা উদ্ঘাটন করেছে। কিন্তু তাতেও আবার teleology আর teleonomy এর তর্ক চলে আসে, যে এটাকে আসলে গোল বলা চলে কিনা।
গোল নিয়ে কোনো অবজেক্টিভ ক্লেইমের ভবিষ্যতই তাই খুব উজ্জ্বল নয়।
@রূপম (ধ্রুব),
“গোল” শব্দটাই যত গোলের মূলে 🙂 । এটা একটা Figure of Speech হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। এটা ব্যবহার না করেও একই বক্তব্য দেয়া যায়। স্টিফেন হকিং যখন বলেন “Reading te mind of God” বা আইন্সটাইন যখন বলেছিলেন “God does not play dice” আমাদের যাদের সাধারণ জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস করি আমরা জানি ওগুলো Figure of Speech হিসেবেই বলেছিলেন, ইশ্বরে বিশ্বাসের কারণে বলেননি বা বলার মানে এটা বোঝান নয় যে ইশ্বরের অস্তিত্ব আছে ।
আপনি -> এর দিকটা দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের এজেন্সি ডিডিউস করেছেন। ভাল হয় যদি এভাবে লিখিঃ
গোটা বিশ্বের এন্ট্রপি বৃদ্ধি <— পদার্থবিজ্ঞানের (অন্যতম)নিয়ম
এখানে আরো ব্যাখ্যার প্রয়োজন। পদার্থ”বিজ্ঞান” বিশ্বের শুধু পর্যবেক্ষণই করাই নয়, পর্যবেক্ষণের দ্বারা এক নিয়ম আবিস্কার করা। পর্যবেক্ষণ ততটা গভীর ব্যাপার নয় (কষ্টসাধ্য হতে পারে)। এর দ্বারা অন্তর্নিহিত নিয়ম (Order/Law) আবিস্কার করা নন-ট্রিভিয়াল, আসল খেলা। সেটাই পদার্থবিজ্ঞানের কাজ। নিয়মগুলিকে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম বলা হলেও সেটা প্রকৃতিরই নিয়ম। নিয়মের প্রকাশ শৈলী (Formulation/Expression) পদার্থবিজ্ঞানী(মানুষ) দের সৃষ্ট হলেও বিশ্ব যে নিয়মপূর্ণ (Lawful Universe) সেটা মানুষের আবির্ভাবের উপর নির্ভর করে না। এখানে নিয়মটা একটা Abstract সেন্সে এ বোঝান হচ্ছে। প্রকৃতির Abstract নিয়মকে গাণিতিক ভাষায় ফর্ম দেয়াটাই পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র।
@অপার্থিব,
তা তো বটেই।
এটাও ফিগার অফ স্পিচই। কথাটাকে সিরিয়াসলি নিলে কী দাঁড়ায় দেখেন। পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ঘাটনকৃত তত্ত্ব বা নিয়ম ফলসিফায়েবল হতে বাধ্য। তার ভুল প্রমাণিত হবার সুযোগ থাকতে হবে। অন্যদিকে “প্রকৃতির নিয়ম” তো ফলসিফায়েবল হবার কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ তার যা নিয়ম, তা তো সত্য-ই। তার আবার ভুল হবার সুযোগ কী করে থাকে?
ফলে আমরা যেটা করি, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম খাঁড়া করি, তারপর ক্লেইম করি যে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ফিগার অফ স্পিচ। কিন্তু কথাটাকে লিটারালি ধরলে আমদের কিন্তু নিশ্চিত হবার উপায় নেই যে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কেবল মুখেই বলতে পারি। অনাগত পর্যবেক্ষণ সবসময় আমাদের ক্লেইম্ড তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। সত্যিই যদি প্রকৃতির নিয়ম পেতাম, এই অনিশ্চয়তা তো মোটেও থাকার কথা না।
যেমন গ্র্যাভিটেশন একটা ফেনোমেনন। পদার্থবিজ্ঞানের অবদান হচ্ছে সে একে পূর্বাভাসযোগ্য করে বর্ণনা করার জন্যে কতগুলো থিওরি খাঁড়া করেছে। সবচেয়ে প্রচলিতটা হলো জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নির্ভর। কিন্তু তার বিকল্প থিওরিও আছে। এই সবই পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তাবিত নিয়ম। কিন্তু “প্রকৃতির প্রকৃত নিয়ম”টা তো একসাথে সবগুলোই হতে পারে না, তাই না?
ফলে পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ঘাটিত নিয়ম প্রকৃতিরই নিয়ম আপনি দাবি করতে পারেন। কিন্তু সেটার জোর তেমন নেই। অথবা আপনি আশা করতে পারেন যে একদিন সত্যিই আমরা নিশ্চিত হতে পারবো যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রস্তাবিত নিয়মটা সত্যিই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেটা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে সেই মেথডলজিও বিজ্ঞানের দর্শনে এখনো অনুপস্থিত। ফলে ততোদিন পর্যন্ত এই ধরনের ক্লেইমের ব্যাপারে স্কেপটিক থাকাটা সম্ভবত সেন্সিবল হয়।
@রূপম (ধ্রুব),
এরকম ক্লেইম কেউ করে না/নি। “ক্লেইম” ধারণাটা বৈজ্ঞানিক নয়। এটা একটা অ্যাবসলিউটিস্ট কথা। তবে একটা টেন্টেটিভ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে আবিস্কৃত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মটি আসলেই প্রকৃতির নিয়মকেই প্রতিফলিত করছে। আবিস্কৃত নিয়মটি ফলসিফাইড হলে প্রকৃতির নিয়মের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে না। আবিস্কৃত নিয়মটির ভ্রান্তি নির্দেশ করে এবং এর ফলে ঐ নিয়মটির সংশোধন করা হয় বা অন্য কোন নিয়ম আবিস্কার (মানে বিকল্প কোন ফর্ম বা রূপ) করা হয় যা পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে। যতক্ষণ এই নতুন সংশোধিত নিয়মটি ফলসিফাইড না হচ্ছে ততক্ষন এটাকেই প্রকৃতির নিয়মের ইমেজ হিসেবে ধরে নেয়া হবে(টেন্টেটিভলি)। এভাবেই বিজ্ঞান চলতে থাকে। প্রকৃতির একটা নিয়ম আছে এটা ধরেই নেয়া হয়। এটাই বিজ্ঞানের মূল চালিকা। সেটা ফলসিফাইড কখনই করা যাবে না । ফলসিফাইড হতে পারে প্রকৃতির নিয়মের মনুষ্য উদ্ভাবিত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলি (প্রকৃতির নিয়মের ইমেজ)।
আবিস্কৃত নিয়মটি ফলসিফাইড হলে যেমন প্রকৃতির নিয়মের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে না তেমনি বিকল্প থিওরী (অর্থাৎ বিকল্প ফর্ম) থাকাটাও প্রকৃতির নিয়মের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে না। একই সিদ্ধান্ত দুই ভিন্ন বিকল্প দিয়ে উপনীত হয়া যায়। স্ট্রিং থিওরীর ৫টি বিভিন্ন রূপ আছে। তার মানে স্ট্রিং ধারণাটা ভুল তাতো নয়। প্রকৃতির নিয়ম একটা গন্তব্যের মত। দুই ভিন্ন রাস্তা দিয়ে পৌঁছান যায়। আবার ভুল রাস্তায় এগুলে পৌছান যায় না। এই তিন ক্ষেত্রেই গন্তব্যের অস্তিত্ব অপ্রমাণ হয় না।
@অপার্থিব,
আপনি প্রকৃতির নিয়মের অনুপস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন, কিন্তু আমি বলি নি যে প্রকৃতিতে নিয়ম অনুপস্থিত। আমি বরং
এই বক্তব্যটার বিপরীতে বলেছি। আমি বলছি যে এই বক্তব্যটা নিশ্চিত হবার উপায় নেই। প্রকৃতির “প্রকৃত” নিয়ম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারা কিন্তু “প্রকৃতিতে নিয়মের অনুপস্থিতি” ইনফার করে না।
তার চেয়ে
ঢের সেন্সিবল হয়েছে। 🙂
@অপার্থিব,
এখানে ভালো একটা ইন্ট্রোডাকশন আছে –
http://www.eoht.info/page/Local+entropy+decrease
@অভিজিৎ,
জীবনের কি কোন অর্থ আছে?
:guru:
@প্রতিফলন,
ব্যাপাটা আমার্ও বোধগম্য নয়! সেখানে তো আমার্ই আন্তর্জালিক ঠিকানা থাকার কথা।
এখন যদি সেখানে এডমিনে ই- মেল থাকে, সেটা মহামাত্য এডমিন্ই শুধু জানে।
@আহমেদ সায়েম,
আপনি মন্তব্য করার সময় URL এর ফিল্ডে ” http://[email protected]” ব্যবহার করেছেন, সেজন্যই প্রতিফলন যখন আপনার নামের উপর ক্লিক করছে, তখন এডিমিনের ইমেইল দেখাচ্ছে। দয়া করে এর পর মন্তব্যের সময় বৈধ লিঙ্ক (যেমন আপনার ওয়েব সাইটের লিঙ্ক, ফেবুকের লিঙ্ক বা ব্লগের লিঙ্ক) ব্যবহার করুন, কিংবা ফিল্ডটি খালি রাখুন।
অনেক ভাবাল আপনার প্রশ্নটা। পরে চিন্তা করে দেখলাম, আসলে সন্মান পাওয়ার ইচ্ছার মধ্যে মন্দ কিছু নেই। একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, সন্মান কিন্তু ভোগ্য বস্তু নয়। তবু সন্মানের জন্য লালায়িত থাকে মন, এর পেছনে নিশ্চয়ই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের কোন ব্যাখ্যা আছে। মনে করতে পারছি না, তবে অভিজিৎ-দার লেখাতেও এ সম্পর্কে কিছু থাকতে পারে! আমার মন হয়, সন্মান মানুষের বিশ্বাস-বর্ধক হিসাবে কাজ করে, যা পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য সত্যি জরুরি! তো এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বিজ্ঞাপনের আশ্রয় না নিয়ে যদি কিছু সন্মান প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা করা হয় নিজের মেধা আর কর্মের উপর ভর করে, তাহলে তাকে অন্তত ভণ্ডামি বলা যায় না!
জটিল প্রশ্ন! এবং অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত! তবে একজন আইনস্টাইনের বেঁচে থাকা বলতে শুধু তার প্রশংসা বোঝায় না, তার কর্মগুলোর বেঁচে থাকা বোঝায়, যার অবলম্বন মানুষকে হাজারো সুফল দেয়! তাই এমন কাজ যদি করা যায়, যা মানুষের/সমাজের/প্রকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় হবে, তাহলে সে কাজের বেঁচে থাকার সাথে কিছু প্রশংসা জুটলে তা ভন্ডামি হবে কেন? বরং, অকাজ করেও প্রশংসার জন্য ফন্দি-ফিকির করাই হল আসল ভণ্ডামি।
ধরুন শেক্সপিয়ারের প্রশংসা কেউ করছে না, তবু তিনি অনন্তকাল বেচে থাকবেন, কারণ তার নাটকগুলো যখন মঞ্চস্থ হবে, তখন যে ডায়ালগগুলো আউরান হবে, তা কিন্তু শেক্সপিয়ারেরই কথা! শেক্সপিয়ার এভাবে মরে গিয়েও বেচে থাকতে পারেন, কারণ তিনি কথা বলতে পারেন!
আপনার এ লেখাটা দারুণ চিন্তার খোরাক যোগালেও তা বলতে কেন যেন বাঁধছে! আর, কম্পিউটারের সহজপাঠগুলো অনেকদিন পাচ্ছি না আপনার কাছ থেকে!
@কাজি মামুন,
এই ভন্ডামির ব্যাপারটা এসেছে তখনই, যখন “মানুষ কর্মের মধ্যে বাঁচে” এই কথার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে গিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি, যখন নিজের জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছি যে, বিজ্ঞাপন বাদে কেবল নিজের কর্মের মাধ্যমে সম্মান কিংবা প্রশংসা অর্জন করার চেষ্টা করবো। তবে মূল প্রশ্নটার উত্তর কিন্তু এখনো অজানাই থেকে যাচ্ছে। উপরে শাখা নির্ভানার মন্তব্যের জবাবে কিছু বলেছি, পড়লে হয়তো আমার চিন্তা সম্পর্কে আরেকটু ধারণা পাবেন।
উপরের ২য় মন্তব্যটার সাথে মোটেও ভিন্নমত নেই আমার। আর ১ম মন্তব্য সম্পর্কে বলতে হয়, আমিও এভাবে ভাবার চেষ্টা করি, এভাবেই সান্ত্বনা দেই নিজেকে। কিন্তু যতক্ষণ জীবনের অর্থ সম্বন্ধে পরিষ্কার হতে না পারছি, ততক্ষণ এটাকে নিজের সামনে ‘অলীক’ স্ট্যান্ডার্ড হিসাবেই বিবেচনা করছি। কেননা, জীবনের আলটিমেট রেজাল্ট যদি শূন্য হয়, তাহলে বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিলেই কি আর না নিলেই কি? এতে কি ভাল-মন্দের কিছু আছে? এই অবস্থায় “আইনস্টাইন মরে গিয়ে কাজের মাধ্যমে কথা বলতে পারেন” – তাতে কী এসে গেলো বলেন! বিজ্ঞানের ভাষ্যে জীবনের আলটিমেট রেজাল্ট শূন্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হয়। তাই প্রশ্ন হলো, অলীক কোন কিছুর পিছনে দৌঁড়াচ্ছি না তো??
@প্রতিফলন,
আইনস্টাইন মরে গিয়েও তার চিন্তার মাধ্যমে জীবন্ত থাকেন আমাদের কাছে, মানে, জীবিতদের কাছে। বস্তুত এই যে আইনস্টাইনকে নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করছি, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকি পালন করছি সাড়ম্বরে, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলছি, এতে ঐ মহামানবদের আসলেই কিছু এসে যায় না, কারণ তারা এই সন্মান দেখতেও পাচ্ছেন না, ভোগ করতেও পারছেন না! তাই আইনস্টাইনের বা রবীন্দ্রনাথের বেঁচে থাকা বলতে তাদের নিজেদের বেঁচে থাকা বোঝায় বলে মনে হয় না, বরং জীবিত মানুষের নিকট তাদের চিন্তার বেঁচে থাকা বোঝায় সম্ভবত! এখন একটা মানুষ বেঁচে আছেন কিনা, আমরা কিভাবে বুঝব? সে যদি চিন্তা করতে পারে, কথা বলতে পারে, তাহলে তাকে জীবিত বলা যায়! আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ কি প্রত্যহ আমাদের সাথে কথা বলছেন না, বা তাদের চিন্তাগুলো কি আমাদের ভাবনার সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে না? এইজন্যই তারা জীবিত, এইজন্যই তারা সচল!
@কাজি মামুন,
এই মন্তব্যে কিছু মাইনর দিকে দৃষ্টি দিবো। মূল আলোচনা থেকে এদের দূরে রাখতে আলাদা করে মন্তব্য করা।
বিবর্তন তত্ত্ব কাজ করে জীবের শারীরিক কিংবা গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের উপর (ভাষাগতভাবে কোন অসামঞ্জস্য বা pitfall থাকলে কেউ ধরিয়ে দিবেন আশা করি)। সোজা করে বললে, কোন গাঠনিক বৈশিষ্ট্য যদি বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধা পায়, তাহলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই বৈশিষ্ট্যের আধিক্য দেখা দেয়; অন্য বৈশিষ্ট্য যখন টিকতে পারেনা, এই বৈশিষ্ট্য তখন টিকে যায়। তবে, এই তত্ত্ব মানব মনের উপর কাজ করে বলে এমন কোন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বরং এ তত্ত্ব বলে, মানুষের অভিজ্ঞতা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় না। মন তো আসলে অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তাই মনোবিজ্ঞানে বিবর্তনের কতখানি ভূমিকা আছে, তা নিয়েই আমার বিশেষ সন্দেহ আছে।
শেক্সপিয়ারের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, অথচ তার প্রশংসা করা হচ্ছে না – এরকম ব্যাপার ঘটতে পারে বলে আমার মনে হয় না। প্রশংসার নানা ধরন আছে। কেবল “হে মহান নাট্যকার, …” এই ভঙ্গিতে না বলে (মজা করে বললাম, অন্যভাবে নিবেন না যেন) তার নাটক মঞ্চস্থ করার মাধ্যমেও আসলে তার প্রশংসা করা হয়, তার প্রতি সম্মান জানানো হয়। বৃহত্তর অর্থে তাই প্রশংসা/সম্মান/কর্মের বেঁচে থাকে ব্যাপারগুলো একই।
আপনার কথাগুলোর সাথে আমার চিন্তার অনেক মিল দেখতে পাচ্ছি। লেখাটা সত্যি খুব ভাল লাগলো। এর কোন সমাধান আমার জানা নেই। তবে আমি যেটুকু বুঝি, নিজের প্রশংসা নিজে করলে ক্ষতি কী, যদি সত্যি প্রশংসা পাওয়ার মত কোন কাজই করে থাকেন? তবে একটা কথা বুঝি, মাহাত্ম্য দেখাতে গিয়ে নিজের মনকে অখুশি রাখায় কোন কৃতিত্ব নেই। কাউকে সাহায্য করে যদি সারা জীবন ধরে মনটা খচখচ করে, যদি মনে হয় এতকিছু করলাম অথচ কোন প্রতিদান পেলাম না- এমন মাহাত্ম্য না দেখানোই ভাল। আরো লিখতে থাকুন, নিজের চিন্তাগুলো শেয়ার করুন, শুভকামনা
@ক্ষুদ্র সত্তা,
মন্তব্য আর শুভকামনার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
জীবনের এবসোলিউট গোল না থাকলেও লোকাল গোল আছে। লোকাল গোল মানে ব্যক্তিক গন্তব্য। এটা আপনার উপর নির্ভর করে। আপনি এই গন্তব্যের নির্মাতা ঈশ্বর। কাজেই নির্মান করে জান। আর এস্টিমের দরকার আছে, এটা ব্রেনের ফুয়েল। তবে এস্টিমের জন্য ভন্ডামী করা ভাল না।
@শাখা নির্ভানা,
লোকাল গোলটাই আসলে এবসোলিউট। এটা অনেকেই বুঝতে পারেনা।
@শাখা নির্ভানা,
যতটুকু বুঝলাম, আপনার “লোকাল গোল”-এর ধারণা এ লেখায় উল্লেখিত “নিজের জন্য স্ট্যান্ডার্ড”-এর কাছাকাছি। কিন্তু এই লোকাল গোলগুলো কি নিজেদের জন্য কেবলই এক ধরনের সান্ত্বনা নয়? নিজেদের অর্থহীন ভাবতে ভাল লাগেনা আমাদের, তাই কিছু একটা অর্থ দাঁড়া করাই আমাদের সামনে। যখনই জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কূল-কিনারা পাওয়া যায়না, তখনই আমরা চিন্তাভাবনা ছেড়ে-ছুড়ে এ ধরনের লোকাল গোল সেট করে মনকে ভুলিয়ে রাখি; জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়ে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করি, প্রীত হই। কিন্তু সেই অর্থ কিংবা সেই গোলগুলো আসলে কতখানি ভ্যালিড – আমার প্রশ্নটা সেখানে। তাই লোকাল নয়, বরং এবসোলিউট গোলেই আমার আগ্রহ।
@প্রতিফলন, উদ্দেশ্য আসলে উক্ত বস্তুটির ধর্ম ব্যাতিত কিছু নয়।অক্সিজেনএর একটি ধর্মের কারণে প্রানিকুল বেচে আছে , এখন যদি এখান থেকে আমরা মনে করি অক্সিজেনের উদ্দেশ্য প্রানিকুলকে বাচিয়ে রাখা, তাহলে কেমন হয় ব্যাপারটা? ক্রমবিকাশের মাধ্যমে জীবন এসেছে। জীবনের কিছু ধর্ম আছে এবং সেটাই তার পরম উদ্দেশ্য।আপাত দৃষ্টিতে লোকাল উদ্দেশ্যগুলোকে তুচ্ছ মনে হলেও , সেটাই পরম উদ্দেশ্য।
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী,
বেশ, এতক্ষণে পেলাম তাহলে চিন্তা করার মতো নতুন কিছু কথা! কিছু মনে করবেন না, আপনার ভাবনা সম্বন্ধে একটু জানার জন্য জিজ্ঞেস করছি – জীবনের “কিছু ধর্ম” বলতে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন সে সম্বন্ধে যদি আলোকপাত করতেন (সম্ভব হলে উদাহরণ দিয়ে), তাহলে খুশি হতাম, বুঝতে পারতাম এ ব্যাপারে আপনার আদর্শগত অবস্থান। এছাড়া, জীবনের ধর্মের সাপেক্ষে “ভাল-মন্দ” বিবেচনাবোধের স্থান কোথায় সে ব্যাপারেও আমি আগ্রহী।
@প্রতিফলন, জীবন আসলেই কতগুলো প্রাকৃতিক ধর্মএর সমষ্টি(সেট অফ ন্যাচারআল লব্স) . তিনটে সরলরেখা পরস্পর যুক্ত হয়ে যেমন ত্রিভুজ গঠন করে , চারটে যুক্ত হয়ে চতুর্ভুজ , তেমনি কতগুলো ধর্ম(natural laws) পরস্পর যুক্ত হয়ে জীবন গঠন করে. সেই ধর্মগুলোই “জীবনের ধর্ম”.
মনে করুন আপনি রাস্তার উপর দেখতে পেলেন একটা কুকুর গভীর নিদ্রায় মগ্ন, তার পেটটা স্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য উঠছে আর নামছে. এই দৃশ্যটি আপনি গভীর মনোযোগের সাথে দেখ্তে দেখতে যদি প্রশ্ন করেন এই কুকুরটার পৃথিবীতে কি উদ্দেশ্য আছে? এর উত্তর আপনি কি দেবেন আমি জানিনা, কিন্তু আমি বলব ওই সময়ের জন্য কুকুরটির উদ্দেশ্য ঘুমানো এবং সেটাই তার ওই সময়ের পরম উদ্দেশ্য. ঘুম ভাঙ্গলে সে আরেকটি কাজে নিয়জিত হবে এবং সেটাই হবে তার ওই সময়ের পরম উদ্দেশ্য.
খুবই ভালো লেগেছে লেখাটি। আমার শ্রদ্ধেয় লেখক হুমায়ুন আজাদ তার কোন একটি লেখাতে এরকম একটি বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন। আমি দুঃখিত, সে লেখাটির নাম মনে করতে পারছিনা। লেখকের কাছ থেকে আরও লেখা প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ।(F)
@ভক্ত,
হুমায়ুন আজাদের লেখা সম্বন্ধে কিছু জানালে ভাল লাগতো।
@প্রতিফলন,
“আমার অবিশ্বাস” বইয়ে আত্মহত্যা নিয়ে বেশ খানিকটা প্রাণান্তকর একটা আলোচনা আছে। সেখানে তাঁর একটা বেশ অমর উক্তি আছে- “মানুষকে মরতে হবে, মিটমাট না করে”। মূলত এই একটা কথা দিয়েই তাঁর আত্মহত্যাসম্পর্কিত দর্শন সম্পর্কে প্রস্তাবনা পাওয়া যায়, অথবা তিনি কি বলতে চাচ্ছেন বা বলবেন বোঝা যায়।
কিন্তু এটা আমার মতে বা অনেকের মতেই ভ্রান্ত ধারণা। তাঁর অনুরাগী কবি এবং গদ্যকার কুমার চক্রবর্তী তাঁর “অস্তিত্ব ও আত্মহত্যা” নামের অসাধারণ একটা বইয়ে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বইটি উৎসর্গ করেছেন হুমায়ুন আজাদকে। বইয়ের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যতদূর মনে পড়ে- হুমায়ুন আজাদের আত্মহত্যা সম্পর্কিত কথাবার্তা হাস্যকর। এই বইটাই সম্ভবত বাঙলায় লেখা আত্মহত্যা নিয়ে একমাত্র পূর্নাঙ্গ বই। পড়ে দেখতে পারেন।
@শফিউল জয়,
অনেক ধন্যবাদ তথ্যগুলোর জন্য।
আপনার মতো আমিও অজ্ঞ এবং সংশয়ী…
তবে জীবনানন্দীয় একটি পংক্তি চরম(কোনো কিছুই তো ধ্রুব সত্য নয়,শেষ সত্য্ও নয়!) সত্য মনে হয়।
.
“এই ধাত্রী মাতার রণ রক্ত অস্র কাম সফলতা পণ্য।”
@আহমেদ সায়েম,
আপনার নামের লিংকে যেতে গিয়ে দেখলাম, সেখানে মুক্তমনা এডমিনের ইমেইল এড্রেস দেয়া। বোধগম্য হলো না ব্যাপারটা।
@অরণ্য,
হায় হায়, আপনার জীবনের তাহলে কোন মানে নাই। বেঁচে আছেন কেন তাহলে? মরেন না কেন? :-O
কথাগুলো আসলে আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলেও, নিজে মাঝে-মাঝেই ভাবি! কিন্তু যে সিদ্ধান্ত আসে, তা মানতে পারিনা। :-Y
@প্রতিফলন,
খটকা টা তো এখানেই। অর্থই যখন নেই তখন কেন বেঁচে থাকা! আসলে অর্থ কেন নাই তা জানার জন্যেই হয়তো এই বেঁচে থাকা।
@প্রতিফলন,
আলবেয়ার কামু কিন্তু এটাকেও একটা সমাধান বলেছেন।
Existential nihilism বলে একটা ব্যাপার আছে। জীবনের সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে যে সব দার্শনিক মতাদর্শ তৈরী হয়েছে তার মধ্যে যুক্তিবাদীদের কাছে এটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে আলবেয়ার কামু এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। Existential nihilism মতে, মানুষের জীবনের কোন অর্থ বা উদ্দেশ্য নেই। মানুষকে পৃথিবীতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। মানুষ নিজেই জানে না, সেটা কেন।
এর কিছুটা ভিন্ন মত হল Existentialism। যখন মানুষ নিজের মত করে জীবনের অর্থ খুঁজে নেয়। যেমন: ধর্ম দিয়ে পরকালে বিশ্বাস করে, নিজের কর্মফলে বিশ্বাস করে। পশ্চিমে Christian Existentialism একটা জনপ্রিয় ধারণা।
আলবেয়ার কামুর Absurdism আমার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে হয়। মানুষের জীবনের অর্থ জানার আগ্রহ এবং অক্ষমতা দুইটার মধ্যে যে দ্বন্দ সেটাকে Absurdism বলে। Absurd বলতে এখানে ‘লজিক্যালি ইম্পসিবল’ বুঝানো হচ্ছে না, বরং ‘হিউম্যানলি ইম্পসিবল’ বুঝানো হয়েছে। তার মানে জীবনের অর্থ থাকতে পারে। কিন্তু সেটা মানুষ এবং মহাজগত দুটোরই একইসাথে অস্তিত্বগত বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়ত সম্ভব হচ্ছে না।
সরেন এবং কামু এই Absurdity কাটিয়ে ওঠার ৩টি সমাধানও দিয়েছেন।
১) আত্মহত্যা – নিজেকে শেষ করে দেয়া
২) ধর্মে বিশ্বাস – অলৌকিকতায় বিশ্বাস করা
৩) Absurdity এর মধ্যেই জীবন কাটিয়ে দেয়া – এটাই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
আমার সবচেয়ে ভাল লাগে কলরাডো স্ট্যাট বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের প্রখ্যাত প্রফেসর ডোনাল্ড কর্সবির এই উক্তিটি,
“There is no justification for life, but also no reason not to live. Those who claim to find meaning in their lives are either dishonest or deluded. In either case, they fail to face up to the harsh reality of the human situation”.
“জীবনের কোন অর্থ বা যৌক্তিকতা নাই। তাই বলে জীবন উপভোগ না করারও কোন কারণ নাই। যারা জীবনের অর্থ পেয়েছে বলে দাবী করে তারা হয় মিথ্যে বলছে অথবা কোন মিথ্যা ভূয়া বিষয়ে বিশ্বাস করছে। দুটো ক্ষেত্রেই তারা মানব জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বিফল হয়।”