কিছুদিন আগে স্বভাবসুলভ চ্যানেল ভ্রমণ করছিলাম রিমোট হাতে, হঠাৎই একজন সুবেশী মৌলানার কণ্ঠে অ্যাডাম স্মীথ নামটি শুনে চক্ষু স্থির হয়ে গেল! উনি বলছিলেন, অ্যাডাম স্মীথকে অর্থনীতির জনক বলা সত্যের অপলাপ মাত্র! কারণ অ্যাডাম স্মীথের বহু আগেই ইসলাম অর্থনৈতিক সমস্যার এক চিরস্থায়ী সমাধান উপহার দিয়েছে বিশ্ববাসীকে! আর এ কারণে স্মীথের ‘ওয়েলথ অব ন্যাশান্স’ নয়, বরং ধর্মপুস্তকই অর্থনীতি বাছাধনকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখানোর প্রধান দাবীদার!
এখন প্রশ্ন উঠবে, কি সেই যাদু-বটিকা যার মাধ্যমে ইসলামই সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণার গোড়াপত্তন করল, বিশ্ববাসীকে শোনাল অর্থনৈতিক মুক্তির অমিয় সঙ্গীত? মৌলানা সাহেবের কথা থেকে বোঝা গেল, যাকাতই হচ্ছে সেই প্রাণ-ভোমরা যাতে লুকিয়ে রয়েছে সকল অর্থনৈতিক সমস্যার দাওয়াই, মানুষের নিরাপদ অর্থনৈতিক জীবনের ভূত-ভবিষ্যৎ!
বস্তুত যাকাত নিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের অহংকারের শেষ নেই! ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণে তারা যাকাতকে শক্ত গুটি হিসেবেই ব্যবহার করেন! যেমন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ সাইয়িদ আবুল আ’লা মওদূদীর ভাষ্যে:
মানুষ আল্লাহর পৃথিবীতে নিজ স্বভাব-প্রকৃতির গতি, ঝোঁক ও মানসিক ভাবধারা এবং নিজ ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুপাতে স্বীয় জীবিকার সন্ধান নিজেই করিবে-ইসলাম মানুষের এই স্বাভাবিক অধিকারই স্বীকার করিয়াছে।….. প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করাকে ইসলাম একেবারেই নিষিদ্ধ করিয়া দিয়াছে। ইসলামী নির্দেশ এই যে, তোমরা অর্থ-সম্পদ হয় নিজের প্রয়োজনে ব্যয় কর, নতুবা অন্যকে তাহার প্রয়োজন পূর্ণ করিবার জন্য দান কর। তাহাতে গোটা অর্থ-সম্পদ সমাজের লোকদের মধ্যে নিরন্তর আবর্তিত হইতে থাকিবে। কিন্তু ইহাতে যদি তুমি প্রস্তুত না হও বরং কেবল সঞ্চয় করিতে থাক, তাহা হইলে এই সঞ্চিত অর্থ হইতে বার্ষিক শতকরা আড়াই টাকা আইনত আদায় করিতে হইবে। এবং অর্থোপার্জনের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণে যাহারা অসমর্থ কিংবা অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ উপার্জন হইতে বঞ্চিত হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে তাহা বণ্টন করিতে হইবে। ইসলামী পরিভাষায় ইহাকেই বলে যাকাত। যাকাতের টাকা সংগ্রহ এবং যথাযথ বণ্টনের জন্য ইসলাম সমাজের সম্মিলিত ধনভাণ্ডার – বায়তুলমালের ব্যবস্থা পেশ করিয়াছেন। ইহা সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটাইবার জন্য দায়ী থাকিবে। বস্তুত ইহা সামাজিক ইন্সিউরেন্সের সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। সামাজিক সাহায্য সহানুভূতি এবং সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের ব্যবস্থা না থাকায় সমাজে যেসব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়, বায়তুলমালের ব্যবস্থা এই সব বিপর্যয়ের কার্যকারণ চিরতরে নষ্ট করে।
এই হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ধর্মীয় দাওয়াইয়ের সার কথা! শুনতে ভাল লাগলেও এই দাওয়াই নিয়ে কিন্তু অনেক প্রশ্ন তোলা যায়! যেমন, এমন মহা-বিধান থাকার পরেও মুসলিম বিশ্বে এত বৈষম্য কেন? মিডল ইস্টের আকাশ-ছোঁয়া দৌলত ও পশ্চিম আফ্রিকার কঙ্কালসার শিশুর ছবি কেন পাশাপাশি দেখতে হয় আমাদের? কেন বাংলাদেশের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ধনী-গরিবের এমন আশ্চর্য সহাবস্থান চোখে পড়ে (হিলারি ক্লিনটনের ‘লিভিং হিস্ট্রি’র বাংলাদেশ প্রসঙ্গ প্রণিধানযোগ্য, যেখানে পাঁচতারা সোনারগাঁয়ের পাশেই পোকা-মাকড়ের ঘর-বসতি-সম বস্তি দেখে যারপরনাই অবাক হওয়ার কথা লিখেছিলেন তিনি)।
তবে ধর্মীয় চিন্তাবিদগণের কাছে এইসব প্রশ্নের উত্তরও সদা-প্রস্তুত রয়েছে, যেমন, তারা বলে থাকেন, সত্যিকারের যাকাত ব্যবস্থা বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলোতে বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না বলেই তো এইসব বৈষম্য দেখতে হচ্ছে আমাদের! কিন্তু ধর্মতাত্ত্বিকদের এই যুক্তি ধোপে টিকে কি আদৌ? কারণ পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই উত্তম উত্তম বুলিতে ভর্তি, সবাই অর্থনৈতিক সমস্যার সত্যিকার সমাধান দেয়ার সবচেয়ে বড় দাবীদার! এইসব ব্যবস্থার সমর্থকেরাও ধার্মিক চিন্তকদের মত করেই বলেন, তাদের ব্যবস্থা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলেই……
আসলে প্রপোনেন্টদের কোন প্রশ্ন করে লাভ নেই, কারণ তারা তাদের নিজ নিজ অর্থনৈতিক বাম নিয়ে সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকেন। যেমন, এককালের বিখ্যাত পপস্টার ক্যাট স্টিভেন্স এবং এখনকার নওমুসলিম ইউসুফ ইসলামকে সিএনএনের ল্যারি কিং যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই ধর্মে সে কি পেয়েছে, যা অন্যত্র সে পায়নি, তখন সে আরো অনেক প্রাপ্তির সাথে নীচের প্রাপ্তিটিও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছিল:
You learn — well, you might already be giving charity, but here you learn how to give — you have to give charity. It’s not a question of an option or a voluntary choice. You have to give charity.
বস্তুত বাধ্যতামূলক চ্যারিটি খুব আকৃষ্ট করছিল ইউসুফ ইসলামের মত এক পশ্চিমা পপ-গায়ককে। আর বাধ্যতামূলক চ্যারিটি কিন্তু মন্দ নয় মোটেও। তবে প্রশ্ন উঠে, এরকম চ্যারিটির বিধান কি ইসলামের নিজস্ব, যার জোরে ধর্মবেত্তারা অর্থনীতির জনকাসনে বসিয়ে দেন ধর্মকে? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ইসলামের জন্মের অনেক পূর্বেই ইহুদি ধর্মে Tzedakah (এই শব্দটির সাথে ইসলামের সাদকাহ শব্দের মিল থাকলেও অর্থগত দিক থেকে যাকাতের সমকক্ষ, যেহেতু যাকাত হল বাধ্যতামূলক চ্যারিটি আর অন্যদিকে সাদকাহ নির্দেশ করে ইচ্ছামূলক চ্যারিটি) নামে একটি বিধানের প্রচলন ছিল, যার আভিধানিক অর্থ চ্যারিটি বা দান হলেও প্রকৃত অর্থ তা থেকে পৃথক, কারণ:
The word “charity” suggests benevolence and generosity, a magnanimous act by the wealthy and powerful for the benefit of the poor and needy. The word “tzedakah” is derived from the Hebrew root Tzadei-Dalet-Qof, meaning righteousness, justice or fairness. In Judaism, giving to the poor is not viewed as a generous, magnanimous act; it is simply an act of justice and righteousness, the performance of a duty, giving the poor their due.
এ থেকে বোঝা যায়, বাইবেলীয় ধর্মের আদি ধর্ম বাধ্যতামূলক চ্যারিটির প্রবর্তন করেছে অনেক অনেক আগে এবং তা অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের চেয়েও কঠোর বিধিবিধানে ঠাসা। তবে লক্ষণীয় হল, ধর্মবেত্তাদের দাবীমতে, যাকাত যেখানে অমুসলিমের (নওমুসলিম বা মুসলিম ধর্মগ্রহনেচ্ছু ব্যতীত) জন্য নিষিদ্ধ , ইহুদিদের Tzedakah (আয়ের দশ ভাগ বাধ্যতামূলকবাহবে দান করা) সেখানে অ-ইহুদিদের জন্যও হালাল বলে দাবী করা হয়। নীচের উদ্ধৃতি থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়:
The obligation includes giving to both Jews and gentiles; contrary to popular belief, Jews do not just “take care of our own.” Quite the contrary, a study reported in the Jewish Journal indicated that Jewish “mega-donors” (who give more than $10 million a year to charity) found that only 6% of their mega-dollars went to specifically Jewish causes.
তবে ইহুদিদের এই দাবী নিয়ে আহ্লাদিত হওয়ারও কিছু নেই, এটা লোক দেখানো হতে পারে, বিশেষত তাদের ঋণদান সম্পর্কিত নীচের বিধানের দিকে তাকালে উপরের দাবীকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না:
Deut 23:19-20 – “Do not charge a fellow Israelite interest, whether on money or food or anything else that may earn interest. You may charge a foreigner interest, but not a fellow Israelite, so that the LORD your God may bless you in everything you put your hand to in the land you are entering to possess.”
মানে, অ-ইসরায়েলি (অ-ইহুদি প্রকারান্তরে) উপর সুদ ধার্য করা যাবে, ফেলো ইসরায়েলির উপর নয়। ইহুদিদের এমন বৈষম্যমূলক বিধান তাদের জিজয়াহ সংক্রান্ত বিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা নিউ টেস্টামেন্ট থেকেও পরিষ্কার হয়:
মাসিহ সিমোনকে বলেন : ‘হে সিমোন! বাদশাহ যাদের কাছ থেকে কর বা জিযয়াহ্ গ্রহণ করে, তারা কি বাদশাহর প্রজাভুক্ত, না পরদেশি? পিটার্স তাকে বললেন : তারা পরদেশি। যিশু তাকে বললেন: তবে তাদের সন্তানেরা স্বাধীন।’ [মথি ১৭ : ২৪-২৫]
এই জিজিয়া কর ইসলাম ধর্মেও প্রচলিত হয়েছে এবং তাকে জায়েজ করতে যেয়ে প্রায়ই ইহুদিদের জিজিয়া ব্যবস্থার উদাহরণ দেয়া হয়। কিন্তু ইসলামের যাকাতও যে ইহুদি ধর্মের Tzedakah এর উত্তরসূরি, তা স্বীকার করতেই যত কুন্ঠা! বস্তুত ইসলাম যাকাতকে এক মহা-কৃতিত্ব হিসাবে দেখে এবং সেই কৃতিত্বের ভাগ কাউকেই দিতে রাজি নয়।
মোদ্দা কথা হল, ইহুদি ধর্মে বাধ্যতামূলক দান শুধু আগেই প্রবর্তিত হয়নি, তা একাধারে কঠোরতর এবং কিছুটা উদারতরও বটে (যেহেতু অ-ইহুদিদের জন্য প্রযোজ্য বলে অন্তত দাবী করা হয় ইহুদি ধর্মবেত্তাদের দ্বারা)।
কিন্তু তবু ধর্মবেত্তারা যাকাতের অভিনবত্বে এতই বেহুশ যে, অ্যাডাম স্মীথের জনক উপাধি কেড়ে নিতেও কসুর করেন না। তাদের মতে অ্যাডাম স্মীথের পুস্তকে নয়, বরং তাদের পুস্তকেই সূত্রপাত করা হয়েছে অর্থনীতির প্রথম পাঠ! এ যেন আমার ঐ বন্ধুর কথার মতই শোনায় যে, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা সবকিছুই ধর্মীয় পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে! আর সেখান থেকে চুরি করে বিদেশীরা সব আবিষ্কার করে ফেলছে। আর আমরা বোকার মত চেয়ে চেয়ে দেখছি!
সবচেয়ে দুঃখজনক হল, এই দাবীদারেরা অ্যাডাম স্মীথের ‘ওয়েল অব ন্যাশানস’ বোধহয় কখনো পড়ে দেখেননি বা কোন ধারনাই রাখেন না এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে! মনে প্রশ্ন জাগে, অ্যাডাম স্মীথ কি যাকাত সম্পর্কে কিছু বলেছেন অথবা এমন কিছু বলেছেন তার সুবিখ্যাত বইটিতে , যা ধর্মপন্ডিতদের কথিত ধর্ম আগেই প্রসব করেছে?
সত্যি বলতে কি, অ্যাডাম স্মীথ কিন্তু অর্থনীতির জন্ম দেননি! কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র তার বহু আগেই রচিত। তবে স্মীথ ১৭৭৬ সনে “An Inquiry Into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” বইটি লিখে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন, কারণ এই বইটির মাধ্যমেই তিনি মুক্ত বাণিজ্য, সরকারী হস্তক্ষেপ হৃাসকরণ, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, শ্রম বিভাগ প্রভৃতি ধারণার গোড়াপত্তন করেন যা পরবর্তী ইকোনমিক তত্ত্বসমূহের ভিত্তি বলে পরিগণিত হয়, যেমন, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট, ইকোনোমিকস অব স্কেল, চাহিদা-যোগানের তত্ত্ব প্রভৃতি। মূলত এজন্যই অ্যাডাম স্মীথকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
স্মীথের যে তত্ত্ব সবচেয়ে বেশী আলোড়ন সৃষ্টি করে তা হল ‘অদৃশ্য হাত (ইনভিসিবল হ্যান্ড) থিয়োরি’। এই তত্ত্বে ধারনা দেয়া হয় যে, একজন মাংস বিক্রেতা অর্থ চায়, তাই নিজের প্রয়োজনেই সে ভোক্তার জন্য উপাদেয় মাংসের ব্যবস্থা করবে, তবে এর ফলে সে মাংস বিক্রেতা নিজেই শুধু আর্থিক পুরুষ্কার (বিক্রয়লব্ধ অর্থ) লাভ করবে না, সঙ্গে সঙ্গে পুরো সমাজের জন্যও সম্পদ (মাংস, যা একজন ভোক্তার চাহিদা মেটায়) সৃষ্টি করবে। মূল কথা, একজন ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করলে, সে পুরো সমাজের জন্যই সম্পদ বৃদ্ধি করবে। ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, স্মীথের তত্ত্বে দানশীলতা, যাকাত বা Tzedakah এর তেমন গুরুত্ব নেই, গুরুত্ব রয়েছে ব্যক্তির নিজের প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার উপর, যার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই সে পুরো সমাজের মঙ্গল সাধন করবে নতুন নতুন পণ্য বা সেবা উৎপাদনের মাধ্যমে। ব্যক্তির বাধ্যতামূলক দানের কোন ভূমিকা স্মীথের বইটিতে অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তাহলে কি দাঁড়াল? সামান্য তত্ত্ব তালাস করে আমরা পেলাম যে, অ্যাডাম স্মীথ যা বলেছেন তা যাকাত বা ধর্মবেত্তাদের বিধিবিধানের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়, এবং তাদের পুস্তকেও তার কোন উল্লেখ সংগত কারণে থাকতে পারে না। তাছাড়া, যাকাত নিজেও কোন অভিনব পদ্ধতি নয়। এ ধরনের পদ্ধতি অন্যান্য প্রাচীন ধর্মেও বিদ্যমান ছিল। তাই শুধু যাকাতের ভিত্তিতেই যদি কোন ধর্মকে জনকুপাধি দিতে হয়, তাহলে বাইবেলিয় ধর্মগুলোর আদিমতম ধর্মের কাঁধেই এই গৌরব শোভা পায়!
তবে মজার ব্যাপার হল, আমার জনৈক বন্ধুর মত অনেকেই আছেন, যারা অর্থনীতি ও ধর্মীয় গ্রন্থ দুটোই পড়েছেন, তবু তাদের অন্তরে সিল-গালা করে দেয়া আছে এই অমোঘ মন্ত্র, ধর্মীয় গ্রন্থেই লুকানো রয়েছে অর্থনীতির আধুনিক সব তত্ত্ব, শুধু আমাদের তা খুঁজে বের করতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে! তারা অর্থনীতির নতুন তত্ত্ব অধ্যায়ন বা আবিষ্কারে আগ্রহী নন মোটেই, তাদের সমস্ত শ্রমঘন্টা নিবেদিত থাকে আদিম পুস্তক থেকে প্রচলিত তত্ত্ব আবিষ্কারে। এ থেকে তারা নিজেদের বা বিশ্বের জন্য কি অর্জন করছেন, তা শুধু তারাই জানেন। অন্যদের পক্ষে সে রহস্য ভেদ করা দুঃসাধ্য!
তথ্যসূত্রঃ উইকি এবং অন্যান্য ইন্টারেট উৎস
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ঠিক অর্থশাস্ত্র নয়, মূলত পাবলিক ফাইন্যান্স। ওনার কালের জন্য ভারতের সমাজে অবশ্য সেটাই প্রয়োজনীয় ছিলো।
@অপর্ণা,
ঠিক! আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম, স্মীথ আধুনিক অর্থনীতির জনক বলে বিবেচিত হলেও, তার আগেও অনেক অর্থনীতিবিদ ছিলেন, যারা অর্থনীতির অনেক ধ্যান-ধারণা উপহার দিয়েছিলেন!
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ!
চমৎকার যুক্তি-প্রতিযুক্তির লেখা। সবচেয়ে ভাল লাগলো যে বৈশিষ্ট্যটি – কেবল ধর্মের কিংবা কোন বিশেষ লোকের ভুল ধরিয়ে দেননি, পাশাপাশি আসল সত্যের দিকেও আলোকপাত করেছেন। (F)
@প্রতিফলন,
‘দ্বিধান্বিত মন’ নিয়ে আপনার মন্তব্যটির জবাব কিভাবে দেব, বুঝতে পারছিলাম না। আপনার এত সুন্দর মন্তব্য আমার জন্য ব্যাপক উৎসাহ ও আনন্দের কারণ হয়েছিল, অথচ তা প্রকাশ করতে গেলেই পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা!
যাহোক, ভাল থাকবেন, ভাইয়া।
বাহ্। আপনি এই পথে কখন যে এতো গভীরে চলে গেছেন টেরই পাই নি। এর জন্যে অভিনন্দন আপনাকে। (F)
এ ধরনের লেখা অনেক চিন্তা ভাবনা আলাপ আলোচনা ডেকে আনে। বিশেষ করে মুক্তমনায়। এই লেখায় ভালো কয়েকটা আলোচনা আপনার প্রাপ্য।
এখানে কয়েকটা বিষয়কে আলাদা করার চেষ্টা করি।
আমিও মনে করি যে ব্যক্তির নিজের উন্নয়ন করাটাই অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। কারণ এর মাধ্যমে প্রায় অবধারিতভাবেই সে অন্যেরও উন্নয়ন করছে। তবে সেখান থেকে খুব সহজে এটা দাবি করা হয়তো যায় না যে চ্যারিটির কোনোই অবদান নেই (আপনি দাবি করছেন তাও বলছি না)। সে অর্থে চ্যারিটিরও একটা মার্জিনাল অবদান হলেও থাকতে পারে। তবে সেটা মানব এমন কি গোষ্ঠি উন্নয়নেও মেজর ফ্যাক্টর কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। আর এটা যদি সত্যিই একটা মাইনর ফ্যাক্টর হয়, তাহলে সেটাকে বাধ্যতামূলক করার জাস্টিফিকেশন তো একটু কমেই আসে। ফলে বাধ্যতামূলক চ্যারিটি নিয়ে আহ্লাদিত হবার সত্যিই কিছু নেই।
তবে স্বেচ্ছামূলক চ্যারিটিতে ক্ষতি দেখি না।
আবার নিজের উন্নয়নের উপর নির্ভর না করে মানুষের খোদা, রাষ্ট্র বা চ্যারিটি দাতার বদান্যতার উপর নির্ভর করে বসে থাকাটাও বড় ক্ষতিকর ভাবনা। নিজের উন্নয়নের জন্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবার মতো গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু দেখছি না।
তবে, আপনার এই একই তর্ক কিন্তু গভর্নমেন্টের ট্যাক্সের উপরও খাটে। বরং সেটা এক অর্থে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওটাই পৃথিবীতে একমাত্র বাস্তবায়িত ও সর্ববিরাজমান যাকাত ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তির থেকে বাধ্যতামূলক টাকা নিয়ে “বায়তুল মালে” গচ্ছিত রাখা হয় জনকল্যাণ ও অনিষ্টকর ঘটনা মোকাবিলার লক্ষ্যে। ওটার ফলপ্রসুতা কতোটুকু? মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা কতোটুকু বলে মনে করেন?
@রূপম (ধ্রুব),
চমৎকার phrasing।
@রূপম (ধ্রুব),
কেউ যদি আমাকে ইসলাম ধর্মের ভাল কিছু দিক তুলে ধরতে বলে, আমি প্রথমেই যাকাত (বাধ্যতামূলক চ্যারিটি) এবং সাদকাহ (ঐচ্ছিক চ্যারিটি)-এর কথা বলব! তাই আধুনিক রাষ্ট্রের ট্যক্সেশনকে যাকাতের সাথে তুলনা করাতে আপত্তির কিছু দেখছি না! তবে ইসলাম অবশ্য যাকাত ও ট্যক্সকে আলাদা করে দেখে এই যুক্তিতে যে, যাকাত হল গরীবদের হক, যা তাদের দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যয় হবে আর অন্যদিকে ইসলামি রাষ্ট্রের ট্যাক্স ব্যয়িত হবে অবকাঠামো নির্মাণে বা তদ্রূপ কারণে। তবে আধুনিক রাষ্ট্রের ট্যাক্স যেহেতু সামাজিক খাতেও ব্যয়িত হয় অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি, সেই দিক থেকে সে ইসলামি রাষ্ট্রের যাকাত ও ইসলামি ট্যাক্স- এ দ্বৈত শর্তই পূরণ করে! যাকাতকে আক্রমণ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং এধরনের কিছু ইসলামী সংস্কৃতির উপর ভর করে ধর্মকে অর্থনীতির জনকুপাধি দেয়ার হাস্যকর দাবীর প্রতিক্রিয়ায় কিছু বলাই ছিল প্রকৃত উদ্দেশ্য!
এটা তো ভীষণ বড় একটি তর্কবান ইস্যু, যা বর্তমান দুনিয়ায় আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। একটা সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রের ভূমিকা কমিয়ে আনার কথা বলতেন আধুনিক অর্থনীতিবিদরা! কিন্তু এখন দেখেন, রাষ্ট্ররে ভূমিকার পুনরুজ্জীবন ঘটছে দুনিয়া জুড়ে, আধুনিক অর্থনীতিবিদরাও নতুন করে ভাবছেন অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার নতুনতর কোন দাওয়াই নিয়ে!
আজ আমার জন্য অসম্ভব আনন্দের দিন, কারণ প্রথমবারের মত আমার দুই প্রিয় লেখক, বিপ্লবদা ও রূপম ভাইয়ের (যাদের লেখা আমার চিন্তার জগতকে পুনর্নির্মাণ করে প্রায় সময়ই) পা পড়েছে আমার মত একজন অধমের ব্লগে। উৎসাহ দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, রূপা ভাই! ভাল থাকবেন!
কালকে একটা ডকুমেন্টারী দেখছিলাম-এমাজন অরণ্যের আদিবাসিদের নিয়ে। তাদের জীবনযাত্রা আজও ৫০,০০০ বছর আগের মানব প্রজাতির মতন।
অর্থাৎ কিছু কিছু সংস্কৃতি দ্রুত বিকাশলাভ করে উন্নতির দিকে-কিন্ত কিছু কিছু সংস্কৃতি বিবর্তিত হতে পারছে না। এরমধ্যে ইসলামিক সংস্কৃতি, ৭০০-১২০০ সাল পর্যন্ত দ্রুত বিবর্তিত এবং উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। এরপর আর ইসলামে বিবর্তন আসল না। ফলে সেই গোষ্ঠির লোকেদের জীবন ও আটকে গেল।
সংস্কৃতির একটা বড় অংশ ধর্ম-এবং সেখানে যদি চিন্তার বিবর্তন না আসে। তার মৃত্যু অপরিহার্য্য। এখানে একটা উল্লেখ করার মতন ঘটনা হচ্ছে ধর্মে সবই আছে। ইচ্ছা করলেই ধর্মকে সচল বা অচল করা যায়। সাধারনত রাজনীতিই এই ধর্মীয় অচলায়তনের জনক।
মহাভারতে ধর্মরাজ যখন যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিলেন-ধর্ম কি? যুধিষ্ঠির কোন ঈশ্বর বা মুনি প্রেরিত ধর্মের কথা বলেন নি। যুধিষ্ঠিরের উত্তর ছিল, ধর্ম নিয়ে যেহেতু নানা মুনির নানা মত, মানুষের স্বচ্ছ এবং সৎ বিবেকই শ্রেষ্ঠ মানব ধর্ম।
মহাভারত যেহেতু হিন্দু ধর্ম দর্শনের সব থেকে বড় আকর-একথা নিশ্চয় ভাবতে আশ্চর্য লাগে, তাহলে মনুস্মৃতির কবলে পরে এমন শাস্ত্র নির্মিত অমানবিক রূপে হিন্দু ধর্মের কিরুপে আবির্ভাব হল? যেখানে মহাভারতে পরিস্কার ভাবেই বলা আছে শাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থে নানান মুনির নানান মত মানুষের পরম ধর্ম হতে পারে না। মানবধর্মই যে আসল ধর্ম এবং তার স্থান ধর্মগ্রন্থের ওপরে-যেকথা আমরা আজ বারবার বলছি-সেকথা মহাভারতের যুগেই স্বীকৃত ছিল। অথচ বাস্তবে হিন্দু ধর্মে তার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন ঘটে নি।
ইসলামেও এর ব্যাতিক্রম নেই। ইসলামের মধ্যেই আধুনীকরনের বা পরিবর্তনের যে শক্তি আছে- যেটা আমরা সুফী আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি, রাজনৈতিক কারনেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারনেই হিন্দু বা ইসলাম ধর্মের উদার এবং মানবিক রুপের বদলে, তার দানবিক রুপকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে শাসকশ্রেনী সুবিধা। জেনারেল জিয়াউল হক থেকে খালেদা ম্যাডাম ও সেই এক খেলা খেলতে ভালবাসেন।
শাসন ব্যাবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছারা, ধর্মছাগলদের উৎপাৎ কম হওয়ার কারন দেখি না। সেই মহাভারতের যুগেই যখন সব থেকে জনপ্রিয় লোকগাথাতে মানব ধর্মকে শাস্থ্রয় ধর্মের ওপর স্থান দেওয় স্বত্বেও ধর্মের নিঠুর ইতিহাস বদলায় না-বা মানুষের ধর্মান্ধতা ঘোচে নি-আজ তা হঠাৎ করে যাবে না। রাজনৈতিক সিস্টেমের পরিবর্তন ছারা ধর্মের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনই অরণ্যে রোদন।
@বিপ্লব পাল,
ভেবেছিলাম, প্রশ্ন করব, কিভাবে ধর্মকে সচল বা অচল করা যায়, কিন্তু পরে আপনার মন্তব্যেই উত্তর পেয়ে গেলাম! আর আপনার এ যুক্তিটা আমার বেশ মনে ধরেছে, মানে, ধর্মকে বিষফোড়া বিবেচনা করে এর উচ্ছেদ যুদ্ধে নামার চেয়ে বরং এর সচলীকরণের পথে এগোনা যায়, তা শ্রেয়তর ফল দেবে বলে মনে হয়, কারণ ধর্মকে গলাধাক্কা দিয়ে পৃথিবী-চ্যুত করতে চাইলে তাকে রক্ষার তাগিদে কুটি কুটি জিহাদি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা, যারা এমন আক্রমণের শিকার না হলে হয়ত জিহাদি হত না, হত না এমন বেয়াড়া ধার্মিক, হয়ত জীবনের মহত্তম সত্যগুলোর দিকে তাকানোর ফুরসুত পেত তারা! অত্যধিক শাসন যেমন একটি সাধারণ দুষ্ট ছেলেকে উচ্ছন্নের গহবরে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি হয়ত ধর্মের উপর বাড়াবাড়ি ধরনের আক্রমণ তৈরি করতে পারে অনেক উচ্ছন্নে যাওয়া ধার্মিক, যারা হয়ত সাধারণ পরিবেশে অন্য অনেক নির্বিবাদী ধার্মিকের মতই জীবনযাপন করত! বস্তুত ধর্ম কিন্তু ভিন গ্রহ থেকে আসেনি, আমাদের পৃথিবীরই সন্তান এটি, যা সংস্কৃতির একটি অন্যতম অনুষঙ্গ! একে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব আছে মুক্তমনা নাগরিকদের!
প্রথমবারের মত আমার ব্লগে আপনার মন্তব্য পেয়ে চরম উৎসাহ বোধ করছি, কারণ আপনি আমার অনেক অনেক প্রিয় লেখক!
পোস্টের সার্বিক আলোচনা ভালো লেগেছে। যুক্তিযুক্ত ও প্রখর শব্দচয়নে আলোকিত।
@শনিবারের চিঠি,
অনেক অনেক ধন্যবাদ! ভাল থাকুন!
শুধু অর্থনীতি কেন, যেকোনো কিছুরই মূল জনক-জননী হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাতালা। তিনি একজন বিশাল অর্থনীতিবিদও। তিনি বলেছেন না ‘অপচয়কারী শয়তানের ভ্রাতা’!
যা নাই মহাভারতে তা নাই ভূ ভারতে ।ভূ ভারতে বলতে এখানে পৃথিবীতে। তেমনি কোরাণ সব জ্ঞানের উৎসভুমি। বান্দরবানের স্বর্ণমন্দিরে গতকাল ২৮ জুলাই এক ভান্তের সাথে কথা বলছিলাম । উনি বললেন স্বরস্বতী দেবীর ত্রিপিটক মুখস্ত। এর প্রমাণ হিসেবে বললেন আরেক আজগুবি কাহিনী।
যাহোক, সব ধর্ম গ্রন্থই ছিল সকল জ্ঞানের আধার, ধর্ম গ্রন্থেই আছে জ্ঞানের ভান্ডার, আর এতে strong>থাকবেও সকল জ্ঞানের উৎস।
বিশ্বাস করুন। কারণ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্ক বহুদূ—–র——–র ।
আচ্ছা,কম্পিউটারের বিষয় নিয়ে কোন ধর্মগ্রন্থে কিছু কি লেখা নেই! ফেইসবুক? ইন্টারনেট! এ সব নিয়ে ধর্মগ্রন্থে যৌক্তিক , বৈজ্ঞানিক, প্রমাননির্ভর তথ্য আছে বলে অনেক ধর্মীয় নেতার দাবি অচিরেই শুনতে পাওয়া যাবে।
কম্পিউটার? যখন একবার আবিষ্কৃত হয়ে গেছে তখন ঠিকই কোনোভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে…
@গীতা দাস,
এই জন্যই বলছিলাম, রোগটা সব ধর্মের, কোন ধর্মের একক কৃতিত্ব নেই এখানে! অভিজিৎদার ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ পড়লে আরো সম্যক উপলব্ধি সম্ভব!
সেই গল্পটা শেয়ার করতে পারতেন, দিদি! ব্যাপারটা মন্দ হত না, বরং পাঠকরা পেতে পারতেন কিছু নির্ভেজাল আনন্দের খোরাক!
ভাল থাকবেন, দিদি! আর বান্দরবন ভ্রমন নিয়ে একটা ফাটাফাটি পোস্ট আশা করছি আপনার কাছ থেকে! (F)
@তামান্না ঝুমু,
দারুণ বলেছেন তো! আজকের কৃচ্ছতাসাধনের যুগে এতো মহামূল্যবান কথা!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! (F)
মুসলমানদের মনোবেদনার একটা বিয়য় হলো
এইটাকে তারা ফেলতেও পারে না আবার রাখতেও পারে না। তাই বহুৎ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বছর শেষে সস্তা কিছু কাপড় চোপড় কিনে গরীবদের দান করে দায়িত্ব শেষ করে।
যাকাত শেষে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে। সভ্যতার উন্নতি হচ্ছে। দারিদ্র একদিন দূর হবেই। দেশে বা পৃথিবীতে কোনো মুসলিম যদি গরীব না থাকে তাহলে কে কাকে যাকাত দেবে ?
এই প্রশ্নটা কুরবানীর মাংস বন্টনের ক্ষেত্রেও খাটে। তিন ভাগের এক ভাগ মাংস গরীবদের দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু উপর্যুক্ত কারণে গরীব যদি না থাকে তাহলে কুরবানীর ঐ এক ভাগ মাংসের কী হবে ?
নাকি ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে কিছু মুসলিম সবসময় গরীব থাকবে এবং এটা বাধ্যতামূলক। তাই না হলে নবী কিভাবে বলে যায়, দুনিয়াতে যার সম্পদ কম আখেরাতে তার হিসাব সহজ হবে! ঠিক এই হাদিস তুলেই আমি একজন প্রশ্ন করেছিলাম, এই হাদিস কয়জন বিশ্বাস করে ? সে কখা বলতে পারে নি।
এছাড়াও কোরান হাদিসের আর কিছু বানীতেও দেখা যায় সেখানে দারিদ্রতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা কেনো ? ইসলাম কি গরীব আর ভিক্ষুকের ধর্ম ? ঢাকার রাস্তায় বেরোলে এই প্রশ্নটি আরও প্রকট হয়ে মাথায় ঘোরে, যখন দেখি সব ভিক্ষুকের ইসলামি বেশ, আর তাদের মুখেও আল্লা নবীর নাম।
@হৃদয়াকাশ,
এই প্রশ্ন আমারও! তবে মওদূদীর কাছে এই প্রশ্নেরও উত্তর আছে! তার মতে, পৃথিবীতে সমাজতন্ত্র কখনই বাস্তবায়িত করা সম্ভব না। কারণ এই দুনিয়ায় মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, তাই তাদের দক্ষতা ও তদনুযায়ী উপার্জনের ভিন্নতা হবেই। আর তাই চিরকালই এই পৃথিবীতে যাকাত প্রদানে সক্ষম ধনী থাকবে, আর থাকবে যাকাত প্রত্যাশী দরিদ্র মানুষও! এই হচ্ছে মওদূদীর ভাষ্য।
তবে মওদূদী যে ভুলটা করেছেন তা হল, তিনি দারিদ্র্যকে অবশ্যম্ভাবী মনে করছেন, যা জন্মজাত ক্ষমতার অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত তার কাছে। অথচ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ প্রমাণ করেছেন, দারিদ্র্য কোন জন্মজাত দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত নয়, দারিদ্র্যের সাথে সবচেয়ে বড় যে অনুষঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে, তা হল, সুযোগের অভাব! সুযোগের পরিবেশ সৃষ্টি হলে, একজন বিকলাঙ্গ ব্যক্তিও দারিদ্র্যকে জয় করতে পারে, এমন নজীর খুঁজলেই পাওয়া যাবে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, খ্রিস্টান ধর্মকে এই বিশেষণে অভিহিত করা হত! আর ইহুদি ধর্মকে পুঁজিবাদের সহায়ক হিসাবে দেখা হত। যাহোক, দরিদ্রদের দানের কথা কিন্তু সব ধর্মেই বলা হয়েছে।
আপনার চিন্তা-জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন।
@হৃদয়াকাশ,
কোরবানির সেই এক ভাগ মাংস তখন আমাকে দিয়ে দিতে পারেন। কাপড় চোপড়ের দরকার নাই।
অনেকদিন আগে মহানবী মুহম্মদ কেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইকনোমিষ্ট ছিলেন তার কারন একজন আমাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। কারন সেই সম্বল তাহার কম্বল খানি উদাহরনের মাধ্যমে উনি স্বনির্ভরতার মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরনের পথ বাতলে গেছিলেন।
@আদিল মাহমুদ,
বলিল সে, ‘আছে শুধু মোর কম্বল একখানি।’
কহিল রসুল, ‘এক্ষণি গিয়া দাও তাহা মোরে আনি।’
সম্বল তার কম্বলখানি বেচিয়া তাহার করে,
অর্ধেক দাম দিলেন রসুল খাদ্য কেনার তরে,
বাকি টাকা দিয়া কিনিয়া কুঠার, হাতল লাগায়ে নিজে,
কহিলেন, ‘যাও কাঠ কেটে খাও, দেখ খোদা করে কি-যে।’
সেদিন হইতে শ্রম সাধনায় ঢালিল ভিখারি প্রাণ,
বনের কাষ্ঠ বাজারে বেচিয়া দিন করে গুজরান।
অভাব তাহার রহিল না আর, হইল সে সুখী ভবে,
নবীর শিক্ষা ক’রো না ভিক্ষা, মেহনত কর সবে।
আহা, কত সুন্দর কবিতা, কিন্তু মুসলমান ভিখারিই রয়ে গেল। এই ওয়াজ মসজিদে করলে মসজিদ মুসল্লীশুন্য হয়ে যাবে। শ্রমজীবী মানুষের হাড়ভাঙ্গা কষ্টোপার্জিত ট্যাক্সের টাকা থেকে মিথ্যা, প্রবঞ্চণা, প্রতারণার মাধ্যমে লুট করে চুরি করে কী ভাবে মানুষ মুসল্লী হয় দেখতে হলে ইংল্যান্ড আসুন, দেখে যান ভন্ডামীর নমুনাটা। লম্বা সাদা আরবি কোরতা, দাড়ি, টুপি, আর আতরের প্রতিযোগীতা যুব সমাজের মাঝেও শুরু হয়ে গেছে। জীবনে এরা কেউ মাদ্রাসার দুয়ার দেখে নাই, অথচ বেশ ধরেছে যেন দেওবন্দ মাদ্রাসা পাশ কোন বিরাট মউলানা।
অর্থনীতির সাথে জনসংখ্যার সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে। এক মউলানার ভাষ্য পড়ুন-
(১) অসুস্থ স্ত্রীর জন্য স্বামীই হইল একমাত্র ডাক্তার, সন্তান গ্রহণ করা এবং না করার ব্যাপারে। যে জমীতে ফসল হয় না সে জমীতে বীজ বপন করাই অপচয় আর অপচয় কারী হইল শয়তানের ভাই।
(২) ইসলাম বংশ বিস্তারের যে বিধান দিয়াছে তাতে মানুষের চাহিদা বা নারী পুরুষের সুস্থ আর অসুস্থ অবস্থার উপর লক্ষ্য রেখে নয়, যেমন মহান আল্লাহপাক বলিয়াছেন, আমি যাহাকে ইচ্ছা ছেলে দেই, যাকে ইচ্ছা মেয়ে দেই, যাকে ইচ্ছা ছেলে -মেয়ে একত্রে দেই, আবার যাকে ইচ্ছা কিছুই দেই না। (সুরাঃ শূরা-৪৯, ৫০)।
বিস্তারিত এখানে-
@আকাশ মালিক,
আমিন।
এইসব আলেম মাওলানা (আবার শিক্ষিত চিকিতসক) আশেপাশে আছেন যেনেও মনে শান্তি, ফলাফল অনিবার্য। এইমাত্র খবরে দেখলাম সিরিয়ায় দুই সাংবাদিকদের ওপর জেহাদী নামধারী (ডিসক্লেমারঃ এই ধরনের জেহাদ বা জেহাদীদের সাথে ইসলামের সাথে কোনই সম্পর্ক নাই) কিছু সত্যের সেনানীর অত্যাচারের বিবরন। এমন খবরে কোন নতুনত্ব নেই, উতসাহিত বোধ করি না, তবে জেহাদী ব্রাদারদের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশী ভাইরাও আছেন যেনে অপরিসীম গর্ব বোধ করছি।
এইসব বাদ দেন, আপনার কোরবানীর ভাগ আমাকে দিবেন কিনা সেইটা বলেন।
@আদিল মাহমুদ,
মুহম্মদ যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইকোনোমিস্ট ছিলেন তাতে কেনো সন্দেহ নেই। কারণ, তিনিই বলেছিলেন কিভাবে অপরের সম্পদ ডাকাতির মাধ্যমে লুট করে নিজেদের অবস্থা ফেরাতে হয় ( মদীনার পাশ দিয়ে যাওয়া মক্কার কাফেলার উপর হামলা)। তিনিই পথ দেখিয়েছিলেন, কিভাবে অতর্কিতে অন্য গোত্রের উপর হামলা করে তাদের সম্পদকে গণিমতে মাল হিসেবে জব্দ করে ভোগ করতে হয়। তিনিই চালু করেছিলেন জিজিয়া করের। এই সব দিয়েই তো তিনি গড়ে তুলেছিলেন ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগার বাইতুল মাল। যা দিয়ে পরিচালিত হতো যুদ্ধ এবং যেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ হতো সেক্সি নবির হেরেম খানা।
এই অর্থনীতি দ্বারাই তো তিনি মুসলমানদের ভাগ্য ফিরিয়ে ছিলেন। সুতরাং তিনি যে সর্বশ্রেষ্ঠ (লুটপাটি) অর্থনীতিবিদ তাতে তো কেনো সন্দেহ নাই।
@হৃদয়াকাশ,
আপনাদের মূল্যবান আলোচনা থেকে আমি অসীম লাভবান হয়েছি, পরিষ্কার বুঝতে পারছি আমার দারিদ্র্যের কারন।
প্রশ্ন হল,এই যাকাতের ব্যাপারটি কি সত্যি সত্যি একটি সমাজে উৎপাদনমুলক,উপকারি বা লাভজনক কোন কাজে লাগে কিনা? হিসাবের(সঞ্চিত অর্থ হইতে বার্ষিক শতকরা আড়াই টাকা) অবস্থা দেখে তো মনেহচ্ছে,যাকাতের অর্থ দিয়ে একটি সমাজে আসলে দীর্ঘমেয়াদে আসলে তেমন সুফল আনবে না!
@রনি,
‘সঞ্চিত অর্থ হইতে বার্ষিক শতকরা আড়াই টাকা’ আপনার কম মনে হচ্ছে কেন? আর যাকাত কিন্তু দুঃস্থ মানুষদের জন্য, এর বাইরে ইসলামী ট্যাক্স রয়েছে, যা সমাজের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানে ব্যয় করবে রাষ্ট্র।
আর দীর্ঘমেয়াদে সুফল আনবে এমন নিশ্চিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত বোধহয় আবিষ্কৃত হয়নি। সব ব্যবস্থারই ইনহেরেন্ট ত্রুটি রয়েছে!
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া! ভাল থাকবেন!
ইসলাম একটি চেইন মার্কেটিং ধর্ম, আপনি সদস্য হলে পরেই সব সুবিধা ভোগ করবেন! নচেৎ নয়।
@অভিষেক,
কারণ উক্ত ব্যবস্থায় একটি কোম্পানি নিজেদের কাস্টমার বেসের আয়তন নিজেদের পুরনো কাস্টমার দিয়ে বৃদ্ধি করে থাকে, ব্যবসায় এর একটা অর্থনৈতিক ফায়দা থাকে, ধর্মের ক্ষেত্রে থাকে জান্নাত পাবার ফায়দা . এবং ধর্মের ক্ষেত্রে মার্কেটইং কাম্পেইং -এ ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নিচে দেখতে পারেন-
[img]http://www.calfinder.com/blog/wp-content/uploads/2010/02/garage-stickers-heaven-hell.jpg[/img]
ছবিটা পছন্দ হল 😛
@অভিষেক,
এই কৃতিত্ব ইসলাম ধর্মের একার নয়, সব ধর্মের সমান ভাগ আছে তাতে! যেমন, এ লেখাতেও আছে যে, ইহুদি ধর্মে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়, তবে এ সুবিধা শুধু সমগোত্রিয় ইহুদিদের জন্যই প্রযোজ্য। অ-ইহুদিদের ঋণের উপর সুদ ধার্য করার নির্দেশ ইহুদি ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
কথা সইত্য। ইসলাম একটি ‘যৌনাঙ্গ, থুক্কু পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান’। 😛
এই মউদুদি কি পাকিস্তান পালিয়ে যাওয়া বিশিষ্ট মউদুদি মহাশয়?
সম্প্রতি জানতে পেরেছি যে রোজা, খৎনা এই প্রথাগুলো সমসাময়িক ইহুদী-পেগান-দের থেকে মহম্মদ অনুসরণ করেছিল। আপনার লেখায় দেখতে পাচ্ছি জাকাত, জিজিয়া, সুদ হারাম ইত্যাদি প্রথাও তাদের থেকেই নেওয়া। 🙂
এইটা কতদূর সত্য?
@কৌস্তুভ,
কথাটার ভিতরই তো স্ববিরোধীতা রয়েছে, খেয়াল করেননি কৌস্তভদা? প্রয়োজনাতিরিক্ত সঞ্চয় নিষিদ্ধ থাকলে যাকাত দেবে কোথা থেকে? আর নিষিদ্ধ তো অনেক কিছুই থাকে, তারপরো কুয়াশা ভেদ করে আমরা শেখদের ঝা চকচকে মুখাবয়ব দেখার সৌভাগ্য লভি ক্ষনে ক্ষনে, তা কি করে সম্ভব হয় বলতে পারেন?
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ!
তাই তো দেখে মনে হল। তবে আপনি ওই অংশটাকে স্পষ্টভাবে রিফিউট করে দিলে ভাল হত।
@কৌস্তুভ,
এইটা কিন্তু ধর্মকারীতে প্রকাশিত আমার একটি স্যাটায়ারের লাইন।
হ্যাঁ, সেই জন্যেই তো কোটেশন হিসাবে ” চিহ্নের মধ্যে দেওয়া…
@কৌস্তুভ,
খুবই নিম্নমানের রসিকতা,আপনার কাছে এটা আশা করিনি।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমিও আশা করিনি! আমি মনে করি, ধর্ম বা ধর্মনেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করে শুধু পরিস্থিতি ঘোলাটে করা যাবে, ধর্মের ক্ষতগুলোকে সারানো যাবে না! অন্যদিকে, যত যুক্তিনির্ভর আলোচনা হবে, বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে, ধর্মের আগাছাগুলো এমনিতেই ঝরে পড়বে! আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কোন ধর্মকে আক্রমণ করা ছিল না, বরং অর্থনীতির পিতৃত্ব নিয়ে এক মৌলানার হাস্যকর দাবীর অসাড়তা তুলে ধরা!
কৌস্তভদার কমেন্টে আমিও আহত বোধ করেছিলাম! মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না তার কাছে! তার কাছ থেকে যুক্তির আলোই প্রত্যাশিত!
@কাজি মামুন আর রামগড়ুড়ের ছানা,
ধর্মকে ব্যঙ্গ করায় আমি অন্যায় দেখি না, যতক্ষণ না সেটাই একমাত্র পন্থা হিসাবে কেউ বেঁধে রাখছে। আর এইটা চটুল রসিকতা তাতে সন্দেহ নেই, তবে মিথ্যা ‘কুৎসা’ বলে আমার মনে হয়নি, কারণ যা দেখছি, রোজা, খৎনা, কাবা-উপাসনা, জাকাত, জিজিয়া, সুদ হারাম এই সব প্রথার কোনোটাই মহম্মদের নিজের চিন্তাপ্রসূত ব্যবস্থা নয়, ১৪০০ বছর আগের একজন অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি হিসাবে তার পক্ষে এত কিছু ভেবে ওঠা সম্ভবও নয়, তার প্রধান মৌলিকতা ছিল কেবল নিজের স্ত্রী-দাসী-যুদ্ধবন্দিনীসঙ্গম হালাল করার জন্য নিত্যনতুন আয়াত আবিষ্কারেই! (এবং অন্য জাতেদের লুন্ঠন ও হত্যা জায়েজ করার জন্যও বটে)
@কৌস্তুভদা,
প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো যদি নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রসূত হত, তাহলে উনি আপনার প্রশংসা পেতেন? উতর যদি ‘না’ হয়, সেক্ষেত্রে এগুলোর মৌলিকত্ব/অমৌলিকত্ব বিচার কি খুব বেশী গুরুত্ববহন করে? নাকি বিষয়গুলোর কার্যকারীতা নিয়ে আলোচনাই শ্রেয়? যেমন, ‘এক মাসের বাধ্যতামূলক রোযা’ বা ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায’-এর বিধান কিন্তু মৌলিক; এখন আপনার পন্থা কি হবে?
মানতে পারছি না, জিসাস, মোজেস বা আব্রাহামকেও তো এই মৌলিকত্বের ভাগ দিতে হবে, সেক্ষেত্রে অন্যরা মনে হয় মৌলিক কিছু করছে না, জাস্ট অনুসরণ করছে!
আসল কথা হল, এখানেও মৌলিকত্ব বিচার আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়! ধর্মগুলো সব একই ধারা অনুসরন করে চলছে, এখানে কোন বিশেষ ধর্মকে মৌলিকত্ব/অমৌলিকত্বের টাইটেল জুড়ে দিলে অন্য ধর্মগুলি কিন্তু বেজায় মন খারাপ করবে!
ভাল থাকবেন, কৌস্তভদা! আলোচনার জন্য ধন্যবাদ!
আমরা এই আলোচনাটা কেন করছি, সেটা তাহলে পরিষ্কার করে নিই – ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান’ এই দাবির প্যারডি হিসাবে ‘ইসলাম একটি যৌনাঙ্গ জীবনবিধান’, এই ইঙ্গিতটা আমি এখানে প্রকাশের মাধ্যমে অনুমোদন করেছি কেন, তাই নিয়ে। সেটা কি আসলেই অন্যায্য/মিথ্যা/কুৎসা?
তো আমার মূল বক্তব্য উপরে যা ছিল – সেই সময়ের প্রচলিত ইহুদী/পেগান জীবনবিধান থেকে যে মস্তবড় পার্থক্য/পরিবর্তন/উদ্ভাবন দেখতে পাই মহম্মদের প্রণীত জীবনবিধান অর্থাৎ ইসলামে, তা হল যৌনতাড়না-নির্ভরতা, মহম্মদ ও তার অনুচরদের।
সেটা তার নিজের স্ত্রী-দাসী-যুদ্ধবন্দিনীসঙ্গম হালাল করার জন্যও বটে, আবার অনুচরদের চার বৌ+যুদ্ধবন্দিনীসঙ্গম এবং পরলোকে গিয়ে আরো অক্ষতযোনি হূরসঙ্গম এই সব মিলিয়েই। এসবের কারণে তার যখন-তখন নিজেরই (দাবীমত তার মুখ দিয়ে আল্লার বলা) আগের বাণীগুলো খারিজ করে দিতেও বাধত না।
(নোট: রমজানের উপবাস বা পাঁচওয়াক্ত প্রার্থনা, কোনোটাই তার উদ্ভাবন নয়, সমকালীন অভ্যাসই তার নতুন সমাজেও প্রচলিত হয়ে চলেছিল, ব্যস। এই লেখাটা দেখুন।)
মোটের উপর এই অবস্থা থেকেই আমার সেই রসিকতাটাকে অনুমোদন করা।
দ্বিতীয় যে কারণে আমার এই কথাটা পছন্দ হয়েছে – তার মধ্যে প্যারডি হিসাবে ওয়ার্ডপ্লে আছে, এবং ওয়ার্ডপ্লে যেকোনো হিউমারে বাড়তি মাত্রা এনে দেয়। হালকার উপরে এই নমুনাটা দেখুন:
[img]http://uath.org/main/wp-content/uploads/2010/04/bilde1.jpg[/img]
এখানে চার্চের সেক্সস্ক্যান্ডাল নিয়েও রসিকতা করা হয়েছে, অল্প বাক্যের খেলা সহ। অবশ্যই, এটা চটুলতার মাত্রায় উন্নত, কারণ ভাষা তুলনায় মার্জিত (যেহেতু থুক্কু জাতীয় শব্দ ব্যবহৃত হয়নি) এবং সঙ্গে যত্ন করে আঁকা একটা ছবি আছে। যাহোক, মূল ব্যাপারটা এই যে অনৈতিক যৌনাচার করলে কাউকেই রসিকতার হাত থেকে ছাড় দেওয়ার কারণ নেই। আর যীশুকে আপনার দাবীমত ওই মৌলিকত্বের ভাগ দেওয়া যায় না, কারণ সে এই ধরনের কোনো যৌনবিধান প্রচলন করে নি। বাস্তবে, পড়ে দেখবেন, যীশুর জীবন বা বাণী সম্পর্কে জানা যায় খুব অল্পই, যা প্রচলিত তা কেবল কয়েক শতাব্দী পরের গসপেল-লেখকদের গল্প এবং সেগুলোর উপর আবার সেন্ট পল ইত্যাদিদের পছন্দসই বিকৃত ভার্শন।
যাহোক, রসিকতা বেশি ব্যাখ্যা করলে মজাটাই শুকিয়ে যায়, আর কোন রসিকতা কারো কাছে মজার লাগবে কি না সেটাও ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে মুক্তমনার মত জায়গায় মহম্মদের যৌনাবিধান নিয়ে রসিকতা করায় সেটাকে আমায় ডিফেন্ডও করতে হল, এতে কিঞ্চিত অবাক বোধ করছি।
@কৌস্তুভদা,
লিংকটার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কৌস্তভদা! ব্লগের এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা! সকলের সমৃদ্ধ আলোচনা থেকে কত নতুন কিছু যে জানা যায়!
একটি প্রশ্ন করতে পারি কৌস্তভদা? কেন আপনার কাছে যিশু সম্পর্কিত কাহিনিগুলো (যেমন, gnostic gospels) বিকৃত ভার্শন মনে হচ্ছে, আর ইসলামের কাহিনিগুলো ট্রু ভার্শন মনে হচ্ছে?
আর আপনি কি বিশ্বাস করেন, ইহুদি রিচুয়ালগুলোও একেবারে মৌলিক? এগুলোও যে সমকালীন কোন অভ্যাসকে অনুসরণ করে রচিত হয়নি, তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় কি?
মুক্তমনা সমৃদ্ধ আলোচনার জায়গা বলেই প্রশ্নগুলো করলাম! আপনাকে ডিফেন্ড করতে হবে, এই উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, বরং আপনার কাছ থেকে আরো সমৃদ্ধ হওয়ার আশায় প্রশ্নগুলোর অবতারণা! ভাল থাকবেন!
ইসলামের কাহিনীহগুলোকে অ্যাবসোলিউট ট্রুথ বলে কখনই মনে করছি না। বর্তমান কোরান যে মহম্মদ মারা যাওয়ার বহু বছর পরে গ্রন্থিত সেগুলো জানি, এবং আমার পোস্টে রূপম (ধ্রুব) একটা ভালো কমেন্ট করেছিলেম যে কোরান নির্মাণ ও সম্পাদনার এই কাহিনীগুলো সবার মধ্যে লেখা/ডকু হিসাবে ছড়িয়ে পড়লে ভালো হয়।
তবে যিশু আর মহম্মদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। মহম্মদ সারা জীবন ছিল লোকবেষ্টিত, এবং তারা প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সেই কাহিনীগুলো বলে গেছে, যা নানা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে অল্পবিস্তর পরিবর্তিত হয়ে কয়েক শতাব্দী পর লিপিবদ্ধ হয়েছে। এইভাবে বলা যায়, সিগনালে অনেক নয়েজ আছে কিন্তু সিগনালটা জেনুইন।
যিশুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। বর্তমানে যিশু বলতে যে ইমেজটাকে দাবি করা হয়, সেরকম কেউ বাস্তবে ছিলই না বলে গবেষকরা মনে করেন। শ্রীচৈতন্য হিন্দুধর্মে যে কাজটা করেছিলেন, একটা র্যাডিকালি নতুন ধর্মপ্রচার নয় কিন্তু প্রচলিত অবস্থার মধ্যে থেকেই ধর্মের একটা নতুন আঙ্গিক, প্রোটো-যিশু সেই ইহুদী ধর্মপ্রচারক তেমনই কিছু একটা করেছিলেন। এবং তিনি অনেকটাই অগুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, যে কারণে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর প্রচলিত ধর্মব্যাখ্যা/ধর্মমত ইসলামের মত অত বিশালভাবে ছড়িয়ে পড়েনি বা জনপ্রিয় হয়নি, এবং তাঁর সহকারীরা যে প্রচুর পরিমাণে প্রত্যক্ষদর্শীর কাহিনী বলে গেছেন তাও নয়।
অনেক শতাব্দী পর পর, যখন কোনো ব্যক্তির নতুন ধর্মমত প্রচার করার ইচ্ছা হয়, তখন তারা মোটামুটি ঢাকাচাপা পড়ে থাকা এই কাল্ট-টির ব্যবহার করে – সামান্য কিচু প্রচলিত অ্যানেকডোট, সমসাময়িক প্রচুর মিথ (যেমন ভার্জিন বার্থ ইত্যাদি) এবং আপন মনের মাধুরী অর্থাৎ ধর্মতত্ত্ব মিশিয়ে সেগুলোকে ওনার নামে প্রচার করতে থাকে, এবং সেগুলোই লিপিবদ্ধ হয়। পল, থমাস, লিউক ইত্যাদি সবার কাহিনীই মূলত এই।
কেবল বহু শতাব্দী পরে খ্রীষ্টধর্ম হঠাৎ একটা ভিত্তি পেয়ে গেল, যখন রাজা থিওডোসিয়াস হঠাৎ করে খ্রীষ্টধর্মকে সরকারী ধর্ম বানিয়ে দিলেন।
যাঁরা বাইবেল বস্তুটা তৈরি করেছেন সময়ে সময়ে, তাঁরাও ইচ্ছামত লোকের গসপেল রেখেছেন আর ইচ্ছামত বাদ দিয়েছেন। যা বাদ দিয়েছেন তা আবার একেবারে নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছেন।
সব মিলিয়ে যীশুর জীবন বা বাইবেলের ইতিহাস এবং মূলানুগতা দারুণ ঘোলা। আপনি এ বিষয়ে দুটো ডকুমেন্টারি দেখতে পারেন, the pagan christ আর who wrote the bible।
হাহা, ইহুদী ধর্ম একদম আলাদা ব্যাপার, অনেকটা সনাতন (হিন্দু) ধর্মের মত – এটা কোনো নবী-প্রবর্তিত ধর্ম নয়। ওই অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করা লোকেরাই ছিল ইহুদী, এবং তাদের আদি-প্রচলিত আচারনিয়মকেই একটা ধর্ম হিসাবে প্যাকেজ ধরে নাম দেওয়া যায় ইহুদী ধর্ম। মানে তাদের জাতিগোষ্ঠীর অনুসারেই তাদের ধর্মের নাম।
ইসলাম কিন্তু তা না – লোকেরা মূলে ছিল আরব, এবং তাদের মধ্যে চালু হওয়া এই নতুন ধর্মটার নাম স্পেসিফিকালি দেওয়া হল ইসলাম।
অতএব ইহুদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চালু থাকা কোনো লোকাচারকে যে আপনি ‘অমৌলিক’ বলবেন, এভাবে সংজ্ঞায়িত করাটাই প্রায় অসম্ভব।
একটা নমুনা দিই। খতনা প্রথার প্রথম লিপি/চিত্রবদ্ধ রেকর্ড পাওয়া যায় মিশরে, খ্রীষ্টজন্মের কয়েক হাজার বছর আগেই। সেই সময় ইহুদী বা আফ্রিকান অন্যান্য জনগোষ্ঠীর কোনো লিখিত রেকর্ড নেই যে তাদের সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে। কিন্তু হেরোডোটাস ইত্যাদিরা লক্ষ্য করেছেন যে তাঁদের সময় মিশরীয়, ইহুদী, আরব প্রায় সবাই এই প্রথা অনুসরণ করত। এখম আপনি কি এমন দাবি করতে পারেন, যে প্রথম খতনার প্রচলন করে মিশরীয়রা, এবং কয়েক হাজার বছর আগে হলেও সেটা তাদের থেকে নিয়েছে ইহুদীরা অতএব এটা তাদের মৌলিক নয়? তেমন কিছু বলা অসম্ভব।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কাজি মামুনকে যে উত্তরটা দিয়েছি, দেখবেন; আর সেটা লিখতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে আরো দুটো কথা আপনাকে লেখার ইচ্ছে হল, অপরাধ নেবেন না।
নিম্নমানের রসিকতা? আচ্ছা তাই সই, কিন্তু নিম্নমানের জীবনবিধানপ্রণেতা, নিম্নরুচির (নারীলোলুপ, পরধনলিপ্সু, হত্যালীলালিপ্ত) এক লোকের এর চেয়ে উঁচুদরের আর কী প্রাপ্য? নারীদের প্রতি তার যে বর্বর মানসিকতা, তার ফলেই আজও সৌদি আরবের মহিলারা ধর্ষণের বিচার পান না, বরং উল্টে নিজেরাই জেনার দায়ে পান বেত্রাঘাত। সারা দুনিয়া জুড়ে কোটি কোটি মানুষের এই অবস্থার জন্য যে বিধান দিয়েছিল তাকে চটুল ভাষায় দুটো ব্যঙ্গ করতে পারব না? আমেরিকার সমকামীদের এই অবস্থার জন্য দায়ী বিধানদাতা যে সেন্ট পল, শিশুকামীদের নিরাপত্তাদাতা যে পোপ বেনেডিক্ট, কর্মভিত্তিক শ্রেণীভেদকে প্রাণঘাতী বর্ণপ্রথায় নিয়ে যাওয়া যে ব্রাহ্মণকূল, তাদের দিকে দুটো ধিক্কার বা ব্যঙ্গ ছুঁড়ে দেওয়ার সময় ভাষা নিয়ে এত পলিটিকালি কারেক্ট থাকতে হবে? সময়সুযোগ পেলে বৌদ্ধধর্মের নারীবিদ্বেষ ইত্যাদি যুক্তিভিত্তিক প্রবন্ধ তো লিখবই, কিন্তু তার বাইরে দুটো পরিহাস করতে গেলে মুক্তমনার মত জায়গাতেও এত সাবধান থাকতে হবে?
@কৌস্তুভ,
আপনি দেখি সামান্যতেই অনেক উত্তেজিত হয়ে যান,একটা লাইন পরে পুরা ইসলাম ধর্মের গুষ্ঠি উদ্ধার করা শুরু করসেন!! মুক্তমনা বলেই সতর্ক থাকতে হবে, এখানে একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা হয়,পরিচ্ছন্ন ব্লগ বলে এটার একটা সুনাম আছে,সমালোচনা করতেতো কেও মানা করছেনা? আপনার রসিকতার হয়তো অনেক তাৎপর্য আছে যা আপনি উপরের মন্তব্যগুলোয় ব্যাখা করেছেন কিন্তু আমার মতো কিছু নাদান পাঠক হয়তো এটাকে ইসলাম বিদ্বেষী একটা সস্তা রসিকতা ভেবে বসতে পারে। মাথা গরম করার কিছু নেই,আমি আপনার লেখাগুলোর ভক্ত তাই আপনার কাছে এরকম মন্তব্য আসা করিনা।
@রামগড়ুড়ের ছানা এবং কাজি মামুন,
এই লাইনটির রচয়িতা আমি। তাই এর কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা আপনাদের দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।
প্রায় বছর খানেক আগে মুক্তমনা ব্লগার আবুল কাশেম এর ইসলামে কাম ও কেলি নামক প্রবন্ধগুলো আমি পড়ি। সেগুলোতে দেখতে পাই ইসলামে যৌনতার ছড়াছড়ি। সেক্স সম্পর্কে এমন কোনো কথা নেই যে মুহম্মদ বলে যায় নি। এ থেকেই স্বভাবতই মনে পশ্নে জাগে একজন নবী হিসেবে তার এসব বলার কী প্রয়োজন ছিলো ? তখন অবচতেনভাবেই আমার মনে ইসলাম সম্পর্কে বহুল প্রচলিত বানী- ইসলাম পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান- এর এই প্যারোডিটা আমার মনে চলে আসে এবং আমি ধর্মকারীতে প্রকাশিত একটা লেখায় এটি ব্যবহার করি।
আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনাদের যদি আবুল কাশেমের প্রবন্ধগুলো পড়া না থাকে তাহলে দয়া করে পড়ুন। আমার বিশ্বাস আপনাদেরও আমার মতোই মনে হবে। আবুল কাশেমের এই লেখাটি এখন নিয়মিত ধর্মকারীতেও প্রকাশ হচ্ছে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, ধন্যবাদ, এবং আবারো উত্তেজিত হয়ে পড়ার জন্য দুঃখিত।
@কৌস্তুভ,
হাঃ হাঃ … তোমারে ব্যঙ্গ করতে কেউ নিষেধ করতাছে না, তয় ‘চিপ শট’ বইলা তো একখান কথা আছে। আমার মনে হয় রামগড়ুড়ের ছানাের আপত্তিটা ঐখানে আছিল। তুমি তোমার অভিমত দিছ, রামগড়ুড়ের ছানা দিছে রামগড়ুড়ের ছানাের। মিট্টা গেছে। আর এখন তো ক্লিয়ার, আসলে উক্তিটা হৃদয়াকাশ-এর।
যাইহোক, এইটা বাদ দিয়া আসো অন্য মামদোবাজিতে কন্সেন্ট্রেট করি। 🙂
[img]http://forums.overclockersclub.com/public/style_emoticons/default/cheers.gif[/img]