ইদানিং কবিতা লিখতে বসলেই টের পাই যে কবিতা আর কবিতা থাকছে না, খুব সহজেই প্যাঁচালে পরিণত হচ্ছে। মনে হচ্ছে সাম্প্রতিক সব কবিতারই এই একই অদৃষ্ট। তা যা হোক, মাঝেমধ্যে আমার এক প্রিয় বন্ধু ও তার পরিবারের সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া হয় এখানে সেখানে– অনেক আগের একটা ড্রাইভে কাগজের অভাবে কোন দৈনিক পত্রিকায় এই কবিতার কিছু অংশ লিখেছিলাম, তারপর সেটা হারাতেও দেরি করি নি। কিছুদিন আগে এরকমই আরেকটা লং ড্রাইভে আবারো কিছু লিখলাম (এবার shoppers’ drug mart-এর রিসিটের ওপর চলন্ত গাড়িতে বসে অন্ধকারে অন্ধভাবে লেখা) এবং পণ করলাম হারানোর আগেই কবিতাটা শেষ করবো। আগের লেখা কবিতাটার কিছু লাইন স্মৃতিপটে উঁকি দেয়ায় সেগুলোও তাই চলে আসতে পারলো এই অ-কবিতায়।
অকবিতা
দু পাশে দু জানালা পৃথিবী দৌড়ে চলে যায়—
ছোট ছোট শহর আর শহরের আভাস
ছুটে যায় বিচ্ছিন্ন স্বপ্নের মতন
দ্রুত সরতে থাকা ইটের শিয়রে
একলা চাঁদটা ছাড়া।
কিছু বছরের চর্চাহীন পিছুটান
হঠাৎ কিসের ডাকে জড়ো হয় আড়ষ্ট ভাঁজে,
খানিক জায়গা দেই কোলের ওপরে বইয়ে
উড়ন্ত পাতায়, অচেনা শব্দে, পুরনো চায়ের দাগে।
ঘন হতে থাকা রাতের নীলটা
গলা টিপে ধরবে এখনই।
এখানে একলা কিছু অরণ্য আছে
পর্যটন ভিড়ে যারা অসহায় মাটি
পেতে দেয় কিশোর-কিশোরী দল
ক্যাম্পিং করবে বলে।
তবুও একাকি
বসে থাকে সূর্যহীন শীতের গুহায়
নিরুপায় বৃক্ষের দল।
কিছু কিছু সবুজেরা অনায়াসে খুঁজে নেয় পথ
শহরের কোণায় কোণায়—
এ শহরে তারা আর নয় আগন্তুক।
কিন্তু আমাকে
যে শহর ডাকে তার হাজার নিয়ন নয়নে
সেখানে সবুজগুলো হেলার ধুলায়
খয়েরি বাতাস ফুঁকে ক্রমশ ফেকাশে হয়ে আসে।
আমার পাঁজরে তার আধখেঁচড়া সুতো
টাবের ড্রেনের গায়ে অবাঞ্ছিত চুলের মতন …।
ছুটে চলা ফিটফাট শহরে
নড়েচড়ে বসে কিছু খোঁচাখুঁচি শুরু করি
বিরক্ত শব্দগুলোতে।
ভিতরের কবিতার কবরস্থানটাও
একটু কুয়াশা টেনে আনে,
এ রাতের প্রস্তুতি যদি
প্রার্থিত ভূত নিয়ে আসে!
কিন্তু এখন বোধহয়
আগলে ধরতে পারি না,
আঁকড়ে ধরতে পারি না— আমার অনভ্যস্ত বুক
বোধহয় অতটা আরামসই নয়।
যে শহর আজ শুধু ইতিহাসের অট্টহাস্য হয়ে
ময়লা দাঁতের ফাঁকে পানের পিকের মত রক্ত লুকায়,
আমার কবিতা ছিল সেইখানে অন্ধকারে অলিতে গলিতে
বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে
সেখানে আমাদের ছিল লাজুক মিলন।
এখানের ঘামহীন অলস রাতেরা
তাই শুধু এলোমেলো দুঃস্বপ্নের স্থান,
গুনে গুনে গুঁজে রাখা নিকেলের টান আর
মাথার পেছনে কিছু শব্দের ধ্বংসস্তূপ স্রেফ।
ভাবনাভীড়ে আটকে থাকা একটা কি দুটো ছেড়া লাইন…
আর নেই।
আর কিছুই নেই নিজেকে দেয়ার।
৩০ মে, ২০১২
ছন্দ বা অন্তমিল ছাড়া কবিতা।কবিতা লেখা তাই এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।তবু শব্দের একটা মজা আছে, সেই মজাটা পেয়েছি।কিন্তু কিছুই বুঝিনি।
ভীষন ভালো লাগল (F)
কবিতার প্রতিটি লাইন যদি মনকে ভাসিয়েই না নিয়ে যেতে পারল তবে সে কবিতার দুঃখ ঘুচবে কেমন করে 🙂
অনেক অনেক শুভো কামনা রইল আপনার জন্য (D)
@নিলীম আহসান, অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। 🙂
‘shoppers’ drug mart-এর রিসিটের ওপর চলন্ত গাড়িতে বসে অন্ধকারে অন্ধভাবে লেখা’ কবিতা আলোকিত করল পাঠক মনন; দুই পৃথিবীর এক টুকরো চিত্র নিখুঁতভাবে আঁকল শব্দের তুলিতে!
চিত্রকল্পগুলো অসাধারণ!
তবু শব্দের ধ্বংসস্তূপ আর ছেড়া লাইনই দিয়েছে মুক্তি! বেঁচে থাকার আনন্দ! এই শহরে!
@কাজি মামুন,
যা বলেছেন।
অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। 🙂
আমি হয়তো কবিতা বুঝি না,তাই ভুমিকাকেই কবিতা মনেহলো! (F)
@মাসুদ,
আহা, এমন পাঠকই তো চাই! যা বলবো তাই তবে কবিতা হয়ে যাবে! :rotfl:
@ভাস্বতী, কবিতাটা খুব ভাললেগেছে,ভুমিকাটাও ভাললেগেছে ।সে অর্থেই ঐ ভাবে বলা ।
এজন্য ই তো মনের আলো দ্যুতি মেলেছে।
আর আমি হলে এর নাম অকবিতা না দিয়ে ‘চলন্ত শব্দগুচ্ছ’ জাতীয় কোন নাম দিতাম।
তবে মুক্ত-মনার পর পর তিনটি কবিতাই কেন যে শুধু কবিতা না হয়ে অন্য বিভাগও সংযোজিত হল বুঝতে পারছিনা। এ মন্তব্য অন্য দুটি কবিতার কবিদের কাছেও জানার আগ্রহ থাকবে।
@গীতা দাস,
সুন্দর পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এখনকার বেশিরভাগ ‘কবিতা’গুলো লিখতে গিয়ে দেখি বরং কবিতার অভাব নিয়েই লেখা শুরু করে দিচ্ছি, তাই একে “অকবিতা” বলাটাই সমীচীন মনে হল।
অকবিতার প্রথমে যেমন বলেছি- এ কবিতার খুব অল্পই কবিতা, বাকিটা প্যাঁচালগোষ্ঠীর জিনিস, তাই মনে হল বুঝি কবিতার সাথে আড্ডাও যোগ করা যায়।
আপনার লেখায় মুক্তমনায় কবিতা পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আপনার আরো কবিতা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
@আফরোজা আলম,
মুক্তমনার কবিতার ভান্ডার দেখে আমি অভিভূত। প্রেরণাদায়ক পাঠক না থা্কলে এমন ভান্ডার গড়ে উঠতে পারত না। এমন পাঠক যে রয়েছে, সে আশাতেই লেখাগুলো দেয়া। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অসাধারন লাগল আপনার অকবিতা।
কথাগুলো অনবদ্য। আরও অকবিতা আসুক। (Y) (Y)
@অভ্র ব্যানার্জী,
সে কি! বরং বলুন কবিতা আসুক! জীবনে কবিতার বড় ঘাটতি চলছে, তাই তো এহেন “অকবিতা”। :))
(F)
@কাজী রহমান,
🙂
অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। অকবিতা চলুক অবিরাম। (F)
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক ধন্যবাদ ফরিদ ভাই। 🙂