অসংখ্য শব্দে শব্দজগত কানায়-কানায় ভরপুর!
কোন এক কালে ছিল তা শূন্য বৃত্তের খালি বিন্দু।
বিষয় মোহে অবিরত অতৃপ্ত মন-মস্তিষ্ক কত কিছু নিয়ে হচ্ছে পূর্ণ…।
পূর্ণতা ভাল লাগেনা, অপূর্ণতায় মন শূন্যতায় ফিরে যেতে চায়!
মনের এ-শূন্যতা কি করে আনয়ন করি?
অগণিত শব্দমালার ভিড়ে আমি অতিষ্ঠ কোলাহল, হৈচৈ বড্ড বিরক্তিকর!
যান্ত্রিক নগরের প্রচণ্ড বিকট শব্দ-আওয়াজে চুপিসারে বসে থাকা আর হয়ে ওঠে না,
একাকী চিত্তের নীরবতার ধ্যান ভাঙে স্বভাব কবির কাব্যময়তার ছন্দ পতন ঘটে,
শিল্পীর শৈল্পিক সৌন্দর্যেও আনে ব্যত্যয় সাধকের মানুসিক ব্যায়াম হয় ব্যাহত।
চঞ্চলমতি অস্থির প্রকৃতির বহিঃপ্রকাশিত ভাব ছুটে চলে দুরন্ত গতিশীল মনে,
ভাবনার অবসান কখনই শেষ আর নাহি হয়!
নগরের বায়ু-পানি-শব্দ দূষণে আমরা সবাই যেন দূষিত নাগরিক!
অহরহ নিত্যনতুন নৃশংস গুম-হত্যা, দুর্ঘটনা, অনিয়ম ইত্যাকার অমানবিকতা
দেখে-দেখে আমি বড়ই ক্লান্ত-অসুস্থ!
এবার কর্ণ চায় খোলাকাশে নিঃশব্দ নীরবতা চায় মৌনমিছিলের নির্জন প্রকৃতির নিস্তব্ধতা,
গহিন সুগভীর সবুজ-অরণ্যে, পাহাড়ে মন চায় হারাতে।
কলুষিত মন চায় সমুদ্রের নোনা জলে ধোয়ে-মোছে বিশুদ্ধ হতে
এবং বসবাসের অযোগ্য মনুষ্য জগত হতে দূরে, আরও দূরে, বহু দূরে…
লুকাতে চায় লোকালয়হীন জন-মানব শূন্য নিঃসঙ্গ জগতে…।
আমার শব্দ ভাল লাগে না শব্দহীন মানুষ নাই,
তাই মানুষ ভাল লাগে না প্রকারান্তে আমাকে আমার ভাল লাগে না!
সর্বদা একটা কিসের কম্পন যেন চারদিকে সে কম্পন সৃষ্টি করে অসংখ্য শব্দের।
আমার ভুবনে ভিতর-বাহিরে ভূকম্পন জেগেছে
সব সময় একটা আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা বড্ড ভয় মনে, মৃত্যু-ভীতি প্রাণে!
কখন জানি, একটা ভুমিকম্পে ভেঙ্গে-চুরে আমার সব চুরমার।
ভঙ্গুর দেহমন ভাঙার ভয়ে সদাই অস্থির চিত্ত, চঞ্চল।
মানুষ, কি করে মৃত্যুকে ভুলে থাকে?
সংসার-দুনিয়ার মোহ-মায়ার ফাঁদে পরে এতসব এতকিছু’র আয়োজন করে?
ধন-জন-জ্ঞান-গুণ সঞ্চয়ে সঞ্চয়ী আমরা মানুষ, সঞ্চিত বিষয়-বস্তুতে অহংকারী।
এ কিসের অহংকার মোদের? সবই নিরর্থক,মিছে মরিলে পরে!
পালাতে চাইলেই কি পালাতে পারবেন ভাই! এই যান্ত্রিক জীবনে অতিষ্ট হয়ে আমারও মন চায় ঐ অনন্ত মহাশূণ্যে হারিয়ে যেতে, ঐ দূর পাহাড়ের দেশে একা একা ঘুরে বেড়াতে, অসীম নীল সাগরে ডিঙ্গি নৌকায় একা একা দোল খেতে, নির্জন গভীর অরণ্যে গাছগাছালি-পাখপাখালির সাথে কথা বলতে।
সমুদ্রের নোনা জলও আমাদের বুড়ি গঙ্গা নদীর মত বিষাক্ত হতে শুরু করেছে!!! আমি গত বৎসর ভেনিস গিয়েছিলাম নোনা জলে গোসল করবো বলে কিন্তু সেখানকার কুলষিত জল দেখে বিষন্ন মন নিয়ে ফিরে এসেছি।
এই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা, মৃত্যু ভীতির কারণটা সব পাঠক হয়তো পুরোপুরি অনুভব করতে পারবেনা। যেহেতু আমরা দু’জনেই ইতালীর একই শহরে বসবাস তাই এই অনুভূতিটা আমিও হারে হারে টের পেয়েছিলাম। গত এক মাসে ভুমিকম্পে বলোনিয়াবাসির যে কি কাপুনিটা শুরু হয়েছিল তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মানুষ রাতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পার্কে তাবু গেড়ে রাত কাটিয়েছে। গত ০১/০৬/১২ পর্যন্ত ১১৭০ বার ভুমিকম্প অনুভূত হয়েছে, এর মধ্যে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৫.৯/৫.৬/৫.১। ১৯ জন প্রাণ হারানো সহ সহস্রাদিক আহত হয়েছে, বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাস্তহারা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার লোক।
সমসাময়িক বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে মনের মাধুরী মিশানো আপনার কবিতাটা ভাল লেগেছে আমার। আশা করি আপনার এই লেখার চেষ্টা অবিরত চলবে।
@জিল্লুর রহমান,
কবিতাটির মত পটভূমিসমেত আপনার মন্তব্যও ভাল লাগল, যা কবিতাটি বুঝতে সাহায্য করেছে।
তবে মুক্ত-মনার পর পর তিনটি কবিতাই কেন যে শুধু কবিতা না হয়ে অন্য বিভাগও সংযোজিত হল বুঝতে পারছিনা। এ মন্তব্য অন্য দুটি কবিতার কবিদের মত এখানেও প্রযোজ্য।
@গীতা দাস,
আসলে দিদি, কবিতার বিষয়বস্তুতে ছিল কয়েকটা ঘটনা তার মধ্যে অতি সম্প্রতি আমাদের এখানে বেশ আলোচিত ঘটনা বহুল “ভূমিকম্প”(যা উপরে জিল্লুর ব্যক্ত করেছে) এর প্রকোপ এতই ছিল যে, সে অনুভূতি আর ঘটনা নিয়ে কিছু একটা লেখার প্রচেষ্টা, আর ইচ্ছে ছিল সে-টা মুক্তমনার সকলের সাথে শেয়ার করা কিন্তু আমি তো লেখালেখির জগতে নবাগত ও আনাড়ি, তা আর কি করা? শুধুমাত্র কবিতা দিয়ে তা-প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি, আমার জায়গায় মুক্তমনার অন্য কেউ হলে এ নিয়ে রিপোর্টসহ বেশ একটা ভাল নিবন্ধ উপহার দিতে পারতো……।
ধন্যবাদ দিদি, ভাল থাকবেন।
@জিল্লুর রহমান,
হ্যাঁ জিল্লুর ঠিক তাই অনেকটাই মৃত্যুরমুখোমুখী, মাঝ রাতে হঠাৎ ভূমিকম্পের কম্পনে যখন রুমের সবকিছু কাঁপছিল আমি তো ঘুমের ঘোরে ভয়ে-আতঙ্কে আপনার ভাবীকে ফেলেই দৌড়-ঝাপ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম! পরে এ নিয়ে বন্ধু-মহলে বেশ হাসাহাসি হয়েছে, আপনার ভাবী অভিযোগ স্বরে বলেছে, “তুমি, আমায় একা ফেলে-রেখে কি করে চলে গেলে? এ প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারেনি।
জিল্লুর, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কবিতার প্রেক্ষাপট সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য এবং উৎসাহ-উদ্দীপনামূলক মন্তব্যের জন্যে……।।
মুক্তমনার কবিতাগুলো পড়ে নতুন করে যে কবিতা লেখার উৎসাহ জাগছে শুধু তাই নয়, কিছু কিছু কবিতা এতটা অনুভব করতে পারছি বলে দারুণ লাগছে। বিশেষ করে এই কবিতাটা এত ভাল লাগছে হয়ত এই কারণে যে অনেকটা এই বিষয়েই আমিও একটা ছোট্ট কবিতা লিখেছিলাম বেশ আগে। তখন আমার নিজস্ব ব্লগে পোস্ট করেছিলাম সেই পিচ্চি “কবিতা”টা, যদিও আমার সেসময়কার কবিতা থেকে শুরু করে মন্তব্য সবই এখনের থেকে অনেক ভিন্ন মানসিকতায় ছিল, তবু লিঙ্কটা এখানে না শেয়ার করে পারলাম না!
http://my.opera.com/symphonied/blog/show.dml/1877623
অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা কবিতার জন্য, আমি যা কিছুই তখন লিখতে পারি নি, আপনি তা পারলেন। খুব ভাল লাগলো। 🙂
@ভাস্বতী, কবিতাটি আপনার খুব ভালো লেগেছে, তার মানে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি…। সুন্দর পাঠ প্রতিক্রিয়ার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।