ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে তো নিত্যদিন শুনি ইসলামি ব্যাখ্যাকার দের মুখে। তাদের মতে , ইসলাম নারী কে যে অধিকার দিয়েছে , তা অন্য কোনও ধর্ম আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি আর ভবিষ্যতেও দিতে ও পারবে না । এদের মতে আজকের আধুনিক বিশ্বেও নাকি অ মুসলিম কোনও দেশে নারী রা এতো টা স্বাধীনতা ও মর্যাদা পায় না , যত টা পায় একজন মুসলিম নারী । এই দেশে জলসা গুলিতেও জোর প্রচার চালানো হয় এই বলে যে ,হিন্দু ধর্মের জঘন্য পণ প্রথা ইসলামের আদি থেকেই নিষিদ্ধ । বরং বিবাহের মাধ্যমে মুসলিমা গন আর্থিক স্বাধীনতার অধিকারিণী হন । কখনো কখনো এও বলা হয় যে একমাত্র ইসলাম ই নারী কে পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে ।

আরবী তে বিবাহ কে “নিকাহ” বলা হয় । যদিও বাঙালি দের মধ্যে প্রথম বিবাহ কে শাদী ও পরবর্তী বিবাহ গুলি কে নিকাহ বলাই অধিক প্রচলিত । মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহ এমন এক চুক্তি, “যাহার দ্বারা একজন পুরুষ কর্তৃক একজন নারী কে সম্ভোগের অধিকার দ্বারা দখল করা বোঝায়”— (মুসলিম ও পারিবারিক আইন পরিচিতি –মোঃ মজিবর রহমান) । হুমায়ুন আজাদ তার সুবিখ্যাত নারী গ্রন্থে বলেছেন , “ এই বিয়েতে একজন পুরুষ দখল করে একজন নারী কে ; দখল করে সম্ভোগের অধিকার দ্বারা । সম্ভোগ এবং দখল দুটি ই নৃশংস প্রভুর কাজ । এই চুক্তির অনন্ত সুফল ভোগ করে পুরুষ , নারী হয় শিকার ।” কঙ্কর সিংহের মতে ,“ মুসলিম ক্রীতদাসী ও এমনভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিজেকে সমর্পণ করে নাপ্রভুর কাছে যেভাবে করে মুসলমান স্ত্রী ।”

সম অধিকারের দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ইসলামী বিবাহ রীতি অনুসারে , পুরুষ নারীর কাছে প্রস্তাব পাঠাবে , ইসলামী পরিভাষায় যাকে ইজাব বলা হয় ; এবং নারী তা কবুল করবে । নারী ইজাব পাঠাবে আর পুরুষ কবুল করবে , এটা কখনই হতে পারে না । আবার নারীর সেই কবুল করা টাও কি রকম দেখুন ! “… সবাই জিজ্ঞেস করলেন । হে আল্লাহ-র রসুল , কুমারীর অনুমতি কিভাবে নেওয়া যাবে ? রসুলুল্লাহু সাল্লালাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম বললেন , তাদের নীরব থাকাই তাদের অনুমতি ।” (— মুসলিম—৩৩৩৭) । অর্থাৎ , অনুমতি না দিয়ে নীরব থাকাও যদি অনুমতি হিসাবে গ্রাহ্য হয় , তবে নিশ্চয়ই ওই অনুমতি মূল্যহীন !

তৃতীয় দৃষ্টান্ত (মুসলিম সপ্তদশ অধ্যায় অনুচ্ছেদ দশ) ইসলামে নাবালিকার বিবাহ বৈধ যদি অভিভাবকের অনুমতি থাকে । মহানবী এভাবেই আয়েশা কে বিবাহ করেছিলেন । এখনো পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ইসলামিক দেশে এক বছরের মুসলিম নাবালিকার বিবাহেরও আইনগত স্বীকৃতি আছে । সুতরাং নারীর অনুমতির প্রয়োজন কতটা , সে তো জলের মতোই পরিষ্কার ।

বিবাহের সংখ্যা ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহ সংক্রান্ত আয়াত টি সম্ভবত ইসলামের জন্মকাল থেকে সব চেয়ে বিতর্কিত ও বহু চর্চিত বিষয় । আয়াত টি কোরআনের সুরা নিসা , আয়াত নং ৩ , “… বিবাহ করবে স্বাধীনা নারী দের মধ্যে ,যাকে তোমার ভালো লাগে , দুই তিন অথবা চার ।” এই আয়াতটির একটি মাখন লাগানো ব্যাখ্যা ইসলামী ব্যাখ্যাকার রা দিয়ে থাকেন । সেই টি হল—প্রাক ইসলামী যুগ অর্থাৎ জাহিলিয়া যুগে প্রতি টি আরব পুরুষ অসংখ্য বিবাহ করত । এমন কি নিজের মা এবং বোনকেও । এই রকম অবস্থায় মহানবী হজরত মোহম্মদ বিবাহের সংখ্যা চার টি পর্যন্ত বেঁধে দিয়ে আরবের সমাজব্যবস্থা কে অবনমনের অতল তল থেকে উদ্ধার করে একটি সর্বাঙ্গসুন্দর রূপ দিয়েছেন ।— কিন্তু এই ব্যাখ্যা যদি মেনে নেওয়া হয় , তাহলে এটাও মানতে আমারা বাধ্য যে কোরআন কেবল আরব দের জন্য এসেছে , সারা পৃথিবীর সকলের জন্য নয় । কেননা সেই সব সমাজ ব্যবস্থা যেখানে একবিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল বা আছে সেখানে ইসলামের চার বিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত হলে সমাজব্যবস্থা কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাবে ,এ বিষয়ে নিশ্চয়ই কারো মনে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়।

আরেকদল ব্যাখ্যাকারী আয়াত টির স্পষ্টীকরণ করতে গিয়ে বলেন , কোরআনে চার টি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে , কিন্তু আবশ্যিক করা হয় নি । তাই পৃথিবীর সকল দেশেই এই আইন প্রযোজ্য হতে পারে । কিন্তু এই যুক্তি টি ঠিক নয় । কেননা , এক বিবাহ প্রচলিত থাকা সমাজে বহু বিবাহের অনুমোদন সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করতে বাধ্য ।

বর্তমানে জাকির নায়েক একাধিক লেকচারে বলছেন , যেহেতু পৃথিবী তে পুরুষের চেয়ে নারী অনেক বেশি , তাই একবিবাহ প্রথা কার্যকরী হলে লক্ষ লক্ষ নারীকে সারা জীবন অবিবাহিত হয়ে থাকতে হবে । ফল হিসাবে নারী নাকি গনসম্পত্তি তে পরিণত হবে ।—- এই যুক্তি টি একটি মিথ্যা তথ্য থেকে মিথ্যা সিদ্ধান্ত টানা । আসলে পৃথিবী তে নারীর থেকে পুরুষের সংখ্যাই বেশি । আর যদি বেশি হয় ও , তাহলেও চার গুণ তো নয়ই , দ্বিগুণ ও নয় দেড় গুণ ও নয় । তাহলে চার টি বিবাহের অনুমোদনের পক্ষে যুক্তি কোথায় ?

বিবাহ কি চারটির বেশি নয় ? এই বক্তব্যে সকল ইসলামী ব্যাখ্যাকারই একমত যে ইসলামে পুরুষের বিবাহ চার টি পর্যন্ত সীমায়িত করে দেওয়া হয়েছে । যদিও এই কথা সর্বৈব মিথ্যা । আসল কথা হল ইসলাম ধর্ম অনুসারে , একটি মুসলিম পুরুষ একই সঙ্গে চারটির বেশি স্ত্রী রাখতে পারে না । অর্থাৎ পঞ্চম নারী কে বিবাহ করতে হলে বর্তমান চারটি স্ত্রীর মধ্যে যে কোনও একটি বা একাধিক কে তালাক দিলেই হবে । এবং সেই তালাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চম বিবাহের বৈধতা এসে যায় । উদাহরণ তো প্রচুর দেওয়া যায় , আপাতত একটাই দিই । হাসান , যার জন্য আমরা প্রতি বছর হায় হায় করি , তার ৭০ জন স্ত্রী ছিল । সে বিবাহ করে বাসর ঘরে নারী ঢোকাত ,কাজ মিটে গেলেই তালাক দিয়ে বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে আসতো ।

মুসলিম আইনে ২৫৫ নং ধারা হল স্ত্রী দের সংখ্যা বিষয়ক । তাতে বলা আছে – একজন মুসলমান পুরুষ একই সময়ে চার জন স্ত্রী রাখার অধিকারী , কিন্তু তার বেশি নয় । যদি চারজন স্ত্রী বর্তমান থাকা কালীন তিনি পঞ্চমবার বিবাহ করেন ,তাহলে বিবাহ টি বাতিল নয় , কেবল নিয়ম বহির্ভূত । এবং তা শাস্তিযোগ্য নয় । এই নিয়ম বহির্ভূত বিবাহে আবদ্ধ নারী ও তার সন্তান পুরুষটির সম্পদের বৈধ উত্তরাধিকারী ।

আলোচ্য নিয়ম বহির্ভূত বিবাহ টির ক্ষেত্রে ইসলামের মীমাংসা হল ,পূর্ববর্তী যেকোনো একটি স্ত্রী কে তালাক দেওয়া । এই মীমাংসাও ঠিক নয় । কেননা ,
১) এখানে দোষ স্বামীর । চারটি স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে আরেকটি বিয়ে করেছে , তা যদি ইসলাম বিরুদ্ধ হয় তবে শাস্তি তার হওয়া উচিত । কিন্তু বাস্তবে শাস্তি হবে ওই পাঁচ স্ত্রীর মধ্যে কোনও এক বা একাধিক জনের । অর্থাৎ তাকে তার কোনও দোষ ছাড়াই ত্বালাক পেতে হবে ।
২) সম্ভবনা অতি নগণ্য হলেও যদি ধরেই নেওয়া যায় যে ওই চারটি নারীই তাকে সন্তুষ্টি দিতে পারছে না , তাহলে পঞ্চম বিবাহ করার সময় ওই চার টি নারীর মধ্যে একজনের সাথে বিবাহছিন্ন করা কতটা যুক্তিযুক্ত ?
৩)মুসলিম আইনের ২৫৬ নং ধারার সঙ্গে তুলনা করা যায় । সেখানে , বলা হয়েছে “কোনও নারী স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় পুনরায় বিবাহ করলে দণ্ডবিধি ৪৯৪ ধারা অনুসারে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে ।এবং সেই বিবাহ জাত সন্তান অবৈধ হবে ।” কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান না থাকা আসলে যথেচ্ছ বিবাহ কে বৈধতা দানেরই নামান্তর ।

সে যাই হোক , বিবাহের সংখ্যা নিয়ে ইসলামের বক্তব্য এখানেই শেষ নয় । স্বাধীনা নারী দের প্রতি সুবিচার না করার আশঙ্কা থাকলে পুরুষ কে একটি নারী বিবাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে , কিম্বা নিজের দক্ষিণহস্তের অধিকারে যেসব নারী গন আছে অর্থাৎ ক্রীতদাসী বা যুদ্ধ বন্দিনী , তাদের কে বিবাহ করার নির্দেশ আছে কিন্তু সেই সব নারী দের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা নেই ( কোরআন সুরা নিসা , আয়াত ৩) । অর্থাৎ যত জন নারী ক্রীতদাসী কে ইচ্ছা , তত জন কে বিবাহ করা যেতে পারে । এবং তাতে দোষের কিছু হবে না বলে কোরআনে মনে করা হয়েছে ।

দেনমোহর ইসলামে বিবাহে পুরুষ কর্তৃক নারী কে দেনমোহর প্রদান ইসলাম ধর্মে একটি অবশ্য কর্তব্য । এই বিষয়ে ইসলামী ব্যাখ্যাকার গন গর্ব করে বলেন যে ইসলাম ধর্মে পণ প্রথার মতো নোংরা প্রথা নেই । বরং ইসলাম ধর্মে পণ প্রথার বদলে দেনমোহর প্রদান নামক এমন এক প্রথা আছে , যেখানে নারী রা আর্থিক সঙ্গতি প্রাপ্ত হন । পৃথিবীর কোনও ধর্ম ই নারী কে এতটা সম্মান দিতে পারেনি , যত টা দিয়েছে ইসলাম । দেনমহরের মাধ্যমে নারী কে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যা আজকের সেকুলার পৃথিবীও ভাবতে পারছে না । কিন্তু এই ব্যাখ্যা আসলে অপব্যাখ্যা । কেন ? সেজন্য দেনমোহর বিষয় টির উপর আলোকপাত প্রয়োজন ।

বিবাহের সময় পতি তার পত্নী কে যে অর্থ দিতে প্রতিশ্রুত হয় , তা-ই দেনমোহর । বিবাহের অব্যবহিত পরে বা অন্তত দাম্পত্য জীবনের পরিসরের মধ্যেই পতি কর্তৃক পত্নী কে দেনমহরের পাই পয়সা মিটিয়ে দেওয়া ইসলামে ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য ।
দেনমোহর প্রথা টি ইসলাম কর্তৃক ব্যবহৃত হলেও এটি কিন্তু ইসলাম এর আবিষ্কার নয় , বরং এটি প্রাক ইসলামী যুগেও প্রচলিত ছিল । এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ হল মুহম্মদ ও খাদিজার বিবাহ । সেখানে আবু তালেব মুহাম্মদের তরফ থেকে খাদিজা কে ২০ টি উঠ মোহর হিসাবে দিয়েছিলেন । এই সময় কিন্তু কোরআন আবির্ভূত হয়নি । সুতরাং এই নীতি যে জাহিলিয় সময়ের এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।

আমরা আগেই দেখেছি যে , ইসলামে বিবাহ হল একটি চুক্তি ।এই চুক্তি দ্বারা পতি পায় পত্নীটির গুপ্তাঙ্গের অধিকার , বিনিময়ে পত্নী পায় মোহর । সহজ কোথায় পতি টি দেনমহরের বিনিময়ে পত্নী টিকে কিনে নেয় । শুনতে খুব খারাপ লাগলেও এটাই আসলে সত্যি যে , ইসলামী নারী রা আসলে নিজেকে বিক্রি করে মোহরের বিনিময়ে । বিশ্বাস হচ্ছে না ? এখানে নবীর দুটি উক্তি উল্লেখ করলে পরিষ্কার হবে ।“ নিশ্চয়ই এই ধরনের বিবাহে বরকত বেশি হয় , যে বিবাহের মোহর কম থাকে” —- কম মূল্যে পছন্দসই নারী কে পাওয়া গেলে সেটা তো সৌভাগ্যের অবশ্যই । কিম্বা , “ওই স্ত্রীলোক (বিবাহের পক্ষে) অতি উত্তম , যে দেখতে সুন্দরী এবং যার মোহর অতি নগণ্য ।” অর্থাৎ সস্তায় ভালো জিনিস পাওয়া গেলে সেটাই কেনা উচিত ।

দেনমোহরের পরিমাণ দেনমোহর নারী কে আর্থিক স্বাধীনতা দেয় বলে যারা মনে করেন , তারা যদি সহীহ হাদিস গুলি পড়ে থাকেন , তারা জানবেন , নারী কে আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান দেনমোহরের উদ্দেশ্য নয় । কেননা , তাহলে একজোড়া জুতো , একটি লোহার আংটি , বর্ম ,একমুঠো ছাতু খেজুর কিম্বা তিনখানি কাপড় দেনমোহর হিসাবে কখনো প্রদান করার অনুমতি থাকত না , যে অনুমতি নবী দিয়েছেন । এসবের তো কিছুটা পরিমাণ ও আর্থিক মূল্য আছে । কিন্তু কোরআন এর দুটি সুরা শেখানো (আবু দাউদ ,২১০৭ ) টা কি কোনও ভাবেই দেনমোহর হিসাবে গ্রহণীয় হতে পারে ? দেনমোহরের আসল উদ্দেশ্য পত্নী কে মনে করিয়ে দেওয়া যে “আমি তোমায় কিনে ফেলেছি । এখন তুমি আমার শস্যক্ষেত্র । তাই আমার যখন ইচ্ছা ,যেভাবে ইচ্ছা তোমাকে ব্যবহার করবো । ”

দেনমহরের বাস্তবতা সে যাই হোক , বাস্তবে নারী কি তার প্রাপ্য দেনমোহর পায় ? উত্তর–পায় না । যেহেতু আমআর জন্ম একটি মুসলিম পরিবারে তাই আমি খুব ভালো ভাবেই জানি , বাঙালি মুসলিম সমাজে তো বটেই , এমনকি এই উপমহাদেশীয় সমগ্র মুসলিম সমাজেই পণপ্রথার মতো খারাপ প্রথা হিন্দু সমাজের থেকে কিছু কম নাই । দেনমোহর এখানে শুধুমাত্র একটি মৌখিক চুক্তি , একটি ধর্মীয় আচার হিসাবেই থেকে গেছে । দেনমোহরের চুক্তি তে দুই পক্ষের দরাদরি আসলে খানিক টা খেলার মতোই । প্রহসন মাত্র । তার বাস্তব আদান প্রদান হয় না । কেন না , বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রী কে বিবাহের প্রথম রাত্রেই নাম মাত্র বাদ দিয়ে পুরো দেনমোহর টা মাফ করে দিতে হয় । কারন , এর উপর ই নির্ভর করে শ্বশুর বাড়ির নতুন নিজের লোকেদের কাছে নতুন বউ কত টা সদ গুনের অধিকারী রূপে গণ্য হবে । আমার এক বান্ধবী ১০ লক্ষ টাকা ধার্য দেনমোহরের মধ্যে নয়লক্ষ নিরানব্বুই হাজার নয় শো টাকা মাফ করে দিয়েছে । আরেকটি কথা , নারী টিকে পুরুষ টি অর্থাৎ তার পতি যদি তালাক ও দিয়ে দেয় , তাহলে তালাক কার্যকর করার ব্যাপারে মুসলিম আইন ও আইনের রক্ষক রা যত টা কার্যকরী ভূমিকা নেয় , দেনমোহর আদায়ের ক্ষেত্রে তার ৫ শতাংশ কার্যকরী ভূমিকাও পালন করে না । তাই ডিভোর্সি মুসলিম মহিলা দের অবস্থা বরাবরই খুব আশঙ্কাজনক অবস্থায় !

দেনমোহর গ্রহণের পর
ইসলাম অনুসারে পতি যতক্ষণ না পত্নী কে তার প্রাপ্য দেনমোহর প্রদান করছে , ততদিন পত্নী ইচ্ছা করলে বিছানায় শয্যা গ্রহণ না ও করতে পারে । অর্থাৎ ততদিন পর্যন্ত নারীর স্বাধীনতা থাকে । কিন্তু যে মুহূর্তে দেনমোহর গ্রহণ করলো , ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই সে নারী থেকে পুরুষের ব্যবহার্যে পরিণত হয় । তার সকল স্বাধীনতা , সকল স্বাতন্ত্রের অন্ত হয় । দাসীর থেকেও ভয়ানক হয়ে ওঠে তার জীবন । কিভাবে ? নিচে বিশ্লেষণ করা হল —

মহানবীর নির্দেশে বিবাহিতা নারীর জীবন হয়ে ওঠে সন্তান উৎপাদনের কারখানা । আমাদের মহান নবী তার অনুগামী পুরুষ দের নির্দেশ দিয়েছেন এমন নারী দের বিবাহ করতে বলেছেনযারা অধিক প্রেম(?) প্রিয়া ও অধিক সন্তান প্রসব কারিণী(আবু দাউদ ২০৪৬)। অর্থাৎ অধিক সন্তান উৎপন্ন করতে না পারলে এই নারী কে বিবাহ না করাই উচিত । একটু খেয়াল করলে বোঝা যাবে ইসলামে পুরুষ ও নারীর বিবাহ হয় না । পুরুষ বিয়ে করে নারী কে সন্তান উৎপাদনের এর উদ্দেশ্যে । পতি পত্নীর যৌথ ইচ্ছায় সন্তান ও সন্তানের সংখ্যা নির্ধারণ এর দিকে কখনই নবী গুরুত্ব দেন নি । বরং নবী পুরুষের নিজের উদ্দেশ্য(অধিক সন্তান উৎপাদন) পূরণ করার জন্য নারী কে ব্যবহার করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন । স্ত্রীর ইচ্ছা কে চূড়ান্ত অবহেলা করা হয়েছে । আর নবীর অনুসারী পুরুষেরা বেশি সন্তান উৎপন্ন করলে সেটা নবীর কাছে , ইসলামের কাছে গর্বের বিষয় , তা সে যতই স্ত্রীর শরীর খারাপ হয়ে উঠুক, বা স্ত্রীর সামর্থ্যের বাইরে হোক । সে যতই জনবিস্ফোরণের মতো সামাজিক ও সার্বিক সমস্যা উৎপন্ন হোক । আর জনসংখ্যার আধিক্যের সাথে অপরাধ বৃদ্ধির সম্পর্ক টা কি নবী বা আল্লাহ , কারো জানা ছিল না !

ইসলামে পুরুষ দের বীর্য বের করার নর্দমা হল নারী । মহানবীর নির্দেশ , যেই পরস্ত্রী কে দেখে কামনা জাগবে , সঙ্গে সঙ্গে সে যেন নিজ পত্নীর কাছে চলে আসে ও নিজের যৌন কামনা মেটায় । স্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকতে নেই । পত্নী কি অবস্থায় আছে দেখার প্রয়োজন নেই । । বাড়ির নর্দমার সাথে তুলনা করলেই বোঝা যাবে । যখনি বাড়িতে নোংরা জমা হল , তুলে নিয়ে গিয়ে নর্দমায় ফেলে দিয়ে এলাম । ঘর পরিষ্কার হয়ে গেলো । ইসলাম পুরুষ কে সংযম শেখায় না । (মুসলিম- বিবাহ অধ্যায় -৩২৭১) নবী নিজেও তার পত্নী জয়নব ও সাওদা কে এভাবে ব্যবহার করেছেন , সহিহ হাদিস গুলি তার প্রমাণ । । এবং এটা আল্লাহ-র নবীকে প্রদত্ত কোনও বিশেষ ক্ষমতা বলে নয় , বরং এই নির্দেশ সকল মুসলিম পুরুষদের জন্য । নারীর কি সম্মান , তাই না!

অন্যদিকে তিরমীযি ১১৫৯ এ বলা হয়েছে , কোনও পতি যদি তার পত্নী কে আহ্বান করে (এমনকি শয্যাতেও) তখন পত্নী যে অবস্থাতেই থাকুন না কেনও, সে পতির কাছে আসতে বাধ্য । একজন স্ত্রী তার স্বামীর কতখানি বাধ্য হবে ,তার উদাহরণ দিতে গিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক ডঃ ওসমান গণি ইসলামী পুরুষতান্ত্রিকতার দাঁত নখ দেখাতে ছাড়েন নি । “বীরভূম জেলার পাপুরি গ্রামের হারাত শাহ আসগর আলী কে লোকে খুব সম্মান করে মুসুল্লি সাহেব বলতো । একবার তিনি আপন খামার বাড়ি তে শাক সবজি লাগানর জন্য বেরা দিচ্ছিলেন । হেন কালে দুই জন মহিলা তার কাছে হাজির হয়ে বলে—কিভাবে স্বামীর অনুগত হতে হয় ,এবং কতটুকু ?তখন তিনি তাদের একজন কে বললেন , তুমি হামিদের মা (মুসল্লি সাহেবের স্ত্রী) কে একটু দেকে দাও । সে তাই করলো । যখন ডাকা হল তখন হামিদের মা দুধ ফোটাচ্ছিলেন । স্বামীর ডাক পাওয়ার সাথে সাথে আপন শারীর ত্যেপে ফুটন্ত দুধ ধরে স্বামীর কাছে উপস্থিত হলেন । এবং জিজ্ঞেস করলেন –কেন ডাকছ ? তখন মুসল্লি সাহেব বললেন , — দেখো এই গড়ত গুলো খুঁড়তে আমার কষ্ট হচ্ছে ,মাতি খুবই শক্ত । তুমি একটু করে দুধ ঢেলে দাও যাতে মাতি নরম হয় । তখন তার স্ত্রী ওই দুই মহিলার সামনে বিনা দ্বিধায়, বিনা বাক্যে ওইরূপ করলেন । শেষে মুসল্লি সাহেব বললেন ,এবার তুমি চলে যাও । স্ত্রী চলে যাওয়ার পর মুসল্লি সাহেব ওই দুই মহিলা কে বললেন , স্বামীর অনুগত হওয়া কাকে বলে তোমরা দেখলে কি ?” (এই মসল্লি ছিলেন গণি সাহেবের প্রপিতামহ) । এখান থেকে তিনি ভাবনায় গদগদ হয়ে সিদ্ধান্ত করেছেন “মহানবীর পবিত্র বাণীর অনুসারী মানুষ দুনিয়া তে এখন আছে ,এবং ভবিষ্যতে ও থাকবে” (–সমাজ ও চরিত্র গঠনে হাদিস শরিফ) । অর্থাৎ পুরুষেরা অন্যায় আদেশ করবে আর পত্নীরা তা বিনা বাক্যে মানবে ! কি অপূর্ব বাণী !! এমন কি পতির যৌন কামনা জাগলেও পত্নী সর্বাবস্থায় বাধ্য পতির যৌন কামনা মেটানোর জন্য তৎক্ষণাৎ নিজের শরীর বিছিয়ে দিতে । কিন্তু পুরুষ টিকে সংযত হওয়ার নির্দেশ কিন্তু ইসলামে দেওয়া হয় নি । বলা হয়নি যে, নিজেকে সংযত করো — পরস্ত্রী কে দেখে যেন তোমাদের কামনা না জাগে । আপন স্ত্রী তে সন্তুষ্ট থাক । অর্থাৎ খুব স্পষ্ট যে পতি কে সংযত হতে না বলে পত্নী কে বাধ্য করা হচ্ছে । কেন না সেই স্ত্রী দেনমোহর দিয়েই তাকে কিনেছে !

ঋতু কালে নারীর শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে ,তা আমরা নারী মাত্রই জানি । ইসলাম অনুসারে, ঋতু মতি নারী না-পাক। তাই সেই সময় তাদের মসজিদে স্পর্শ করাও বারণ । পুরুষকেও একাধিকবার বারণ করা হয়েছে ঋতুমতী নারীর সাথে সঙ্গম করতে । নারীর শারীরিক কষ্টের কথা ভেবে নয় , বরং পুরুষকে নাপাক হওয়া থেকে বিরত রাখতে । তবে পতিগণের কোনও চিন্তা নেই । কেননা কামনা মেটানর জন্য সেই সময় অন্য স্ত্রী তো আছেই । তবে সমস্যা যদি পুরুষটির সেই ঋতুমতী পত্নীর সাথেই সঙ্গমের ইচ্ছা হয় ! কুছ পরোয়া নেই , তার ও সমাধান আছে ইসলামে… বিশ্বের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানে । কি সমাধান ? আবু দাউদ হাদিসের কিতাব আল নিকাহ এর ২১৬৪-২১৬৫ নং হাদিসে বলা আছে , ঋতুমতী পত্নীর সাথেও সঙ্গম করা বৈধ । কিন্তু ঋতুর প্রথম দিকে হলে এক দিনার এবং শেষ দিকে হলে আধ দিনার সাদকাহ(দান) দিতে হবে । অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারী বলেন সেই দান টি প্রায়সচিত্য স্বরূপ(অর্থাৎ গরিব কে দান করতে হবে) আবার কেউ মনে করে সেই দান জরিমানা স্বরূপ (অর্থাৎ পত্নী কেই সাদকাহ দিতে হবে) । তবে সে যাই হোক , সাদকা-র পরিমাণ এতো কম যে কোনও পুরুষ ই তাকে গুরুত্ব দেবে না । অথচ পেয়ে যাবে নিষিদ্ধ সময়ে স্ত্রী সঙ্গমের অধিকার । স্ত্রী নাপাক হলেও পতি সঙ্গম করলেও নাপাক হবে না ! অসাধারণ বিধান !

আরেকটি কথা জানাতে চাই তাদের ,যারা মনে করেন ইসলাম হল পরম বিজ্ঞান । তারা কি জানেন ঋতু কালীন অবস্থায় স্ত্রীর অবস্থা কেমন থাকে ? কোনও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ কে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন । তারা আপনাদের জানিয়ে দেবেন যে ঋতুকালে বিশেষত প্রথম তিন দিন নারীর যোনি কতটা দুর্বল থাকে । এই সময় যৌন মিলনে যোনি তে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হতে পারে । যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে । কিন্তু ইসলামে এসবের কোনও গুরুত্বই নেই । যেমন মহৎ ইসলামীয় বিজ্ঞান তেমনই মহৎ তার নারী কে মর্যাদা প্রদান !

নারী তো ওই সময় তার শারীরিক দুর্বলতা ও অনিচ্ছার কারণে তার পতির কাছে না যেতে পারে ! তখন পুরুষ টি কি করবে ? চিন্তা নেই , চরম পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম ইসলাম পুরুষের ইচ্ছা পুরণের যাবতীয় সরঞ্জাম মজুত রেখেছে । নারীকে দৈব অভিশাপের ভয় দেখানো হয়েছে , যাতে করে নারী ভয়েও পুরুষের বিছানায় আসতে বাধ্য হয় । আবু দাউদ হাদিসের ২১৩৮ নং হাদিস টি দ্রষ্টব্য । “মুহাম্মাদ ইবন আমর… আবু হুরায়রা (রা) নবী করিম হতে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন ,যখন কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রী কে তার বিছানায় আহ্বান করে ,আর সেই স্ত্রী তার নিকট গমন করে না , যার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায় , ওই স্ত্রীলোকের উপর ফেরেস্তা গন সকাল পর্যন্ত(অন্য একটি হাদিস অনুযায়ী, বা যে পর্যন্ত না স্বামীর কাছে আসছে, সেই পর্যন্ত ) অভিসম্পাত করতে থাকেন” ।

নারীর বিরুদ্ধে আল্লাহ এবং নবীর মিলিত চক্রান্ত এখানেই শেষ নয় । স্ত্রীর অবাধ্যতার আশঙ্কা করলে তাকে প্রহারের ও নির্দেশ দিয়েছে আল্লাহ ( সুরা –নিসা , ৩৪ ) । আর নবী ও বলেছেন পতি কে ইহকালে বা পরকালে কখনই জানতে চাওয়া হবে না কেন সে তার পত্নী কে প্রহার করেছে । তবে নবী সাবধান করে দিয়েছেন , গোলামের মতো স্ত্রী কে যেন প্রহার করা না হয় ! কিন্তু এই জন্য নয় যে স্ত্রী ও একজন মানুষ , তারও ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকতে পারে , বা স্ত্রী তার আপন । বরং এই কারণে যে , রাত্রি বেলা স্ত্রী কে নিয়ে বিছানায় যেতে হবে তো ! তখন যেন স্ত্রী বিছানায় যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে । কিম্বা , যে স্ত্রী কে প্রহার করেছে, রাতে তার বিছানায় যেতে যেন পুরুষ টির সঙ্কোচ বোধ না হয় ( বুখারি ৪৮২৫)!

দেনমোহর গ্রহণের পর সারা জীবন নারী এই ভাবে নিজেকে নিঃস্ব করে পুরুষ কে সব কিছু দিয়ে যাবে , তবু নারী শয়তান । নারী অপয়া (বুখারি, ৪৭২২) নারী পুরুষের উপর সর্বাপেক্ষা বড় ফিতনা ( বুখারী,৪৭২৫) এবং অধিকাংশই জাহান্নামী (৪৮২৫) ।

এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রসঙ্গ টি অনিবার্য ভাবেই এসে পরে তা হল তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গ । ইসলামী ব্যাখ্যাকার রা এখানেও মিথ্যার আশ্রয় নেন । তারা বলেন , ইসলাম কেবল স্বামী কেই ত্বালাক দেওয়ার অধিকার দেয়নি , স্ত্রী দেরও দিয়েছে । যারা পড়েন ওই সব ইসলামের অন্ধ প্রশংসা করে লেখা বইগুলো , তারা যাচাই করে দেখেও না যে সত্যি টা কি ! তাই নারীর মর্যাদার আলোচনায় তালাকের বিষয়টি ও জেনে নেওয়া আবশ্যিক —

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পতি বা পত্নী যে কেউ তো একে অপরের বিরুদ্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) প্রার্থনা করে । কিন্তু এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আমরা জেনে নেবো ইসলামী ব্যবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ব্যতীত কিভাবে তালাক কার্যকর করার নির্দেশ আছে ।

মুসলিম আইন অনুসারে , আদালতের হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে পতি ও পত্নীর তালাক দুই ভাবে কার্যকর হতে পারে ।
১) পতির একক ইচ্ছায় — “মুসলিম আইনের ৩০৮ নং ধারায় বলা হয়েছে , সুস্থ মস্তিষ্ক ও সাবালক কোনও মুসলমান কোনরূপ কারন প্রদর্শন না করেই নিজ ইচ্ছানুযায়ী টার স্ত্রী কে এককভাবেই ত্বালাক দিতে পারে”। এই তালাক দুই ভাবে কার্যকরী হতে পারে । মৌখিক ঘোষণা ও লিখিত ঘোষণা । তবে সেই ঘোষণা টি পরিষ্কার হতে হবে । যেন তার অভিপ্রায় নিয়ে কারো মনে কোনও সংশয় না থাকে ।

২) পতি ও পত্নীর উভয়ের ইচ্ছায়— মুসলিম আইনের ৩১৯ নং ধারায় বলা হয়েছে , খুলা বা মুবারা দুই ভাবেও বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে । পত্নী সঙ্গত কারন প্রদর্শন করে পতির অনুমতি ক্রমে যদি তালাক চান ,তাহলে সেই তালাক কে খুলা বলা হয় । আর যদি উভয়ের ই সঙ্গত কারন বশত উভয়ের বিরুদ্ধে তালাক চান ,তাহলেও পারস্পরিক সম্মতিতে তালাক কার্যকর হতে পারে , একে মুবারা বলে ।

এছাড়াও ইলা , জেহার প্রভৃতি ভাবে তালাক হতে পারে । কিন্তু কোনও ভাবেই স্ত্রীর একক ইচ্ছায় তালাক কার্যকর হতে পারে না । সুতরাং তালাকের ক্ষেত্রে সমানাধিকারের বা সম মর্যাদার তত্ত্ব যে কতটা মিথ্যা , তা জলের মতোই পরিষ্কার ।

সব শেষে যে প্রসঙ্গ দিয়ে লেখা তে ইতি তানতে চাই তা হল , হিলা প্রসঙ্গ । একজন পতি যদি তার পত্নী কে রাগের মাথায় বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় তালাক দিয়ে থাকে তাহলে , স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃতিস্থ হলে তার অনুসুচনা হতে পারে । সেক্ষেত্রে তার নিজ স্ত্রী কে ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা হতে পারে । তখন ইসলাম তা করার নির্দেশ দেয় একটি শর্তে । তালাক সুদা সেই পত্নী কে ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর অন্য এক জন কে বিবাহ করতে হবে । তার সাথে বিছানায় যেতে হবে । এবং এরপর যদি সেই পতি তাকে তালাক দেয় , তবে পূর্বেকার পতি তাকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারবে । বেশিরভাগ ব্যাখ্যাকার এই নোংরা প্রসঙ্গ টি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়াই পছন্দ করেন । তবে কয়েকজন নিতান্তই নির্লজ্জ ব্যাখ্যাকার বলেন , তালাক কে আরও কঠিন ,আরও দুঃসাধ্য করার জন্য এই প্রথা গৃহীত হয়েছে । বাস্তবে কিন্তু তা সত্যি নয় । তালাক কে দুঃসাধ্য করার জন্য স্ত্রী কে অন্য একটি বিয়ে করতে হবে , তার পর সেই ব্যক্তি টির সাথে যৌন সঙ্গম করতে হবে । তারপর সেই দ্বিতিয় পতি যদি তার স্ত্রী কে তালাক দিতে রাজী থাকে ,তাহলে তালাক দেওয়ার পর সে আবার প্রথম পতির কাছে ফিরে যেতে পারে । বাহ ! তালাক দিয়ে দোষ করলো পতি , তাকে শাস্তি না দিয়ে , তালাক কে দুঃসাধ্য করার কি অপূর্ব চেষ্টা ! যার জন্য ভুগতে হবে পত্নী টি কে । দ্বিতীয় পতি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে গ্রহণ করতে হবে । অনিচ্ছা সাথেও তার সাথে বিছানায় যেতে হবে , শুধুমাত্র নিজের পতি কে ফিরে পাওয়ার জন্য ! । দ্বিতীয় পতি যৌন দুর্বল হলে তো প্রথম পতির কাছে ফিরে যাওয়ার আশা পূরণ হল না । আর সে যৌন সক্ষম হলে তাকে নিজদেহ ভোগ করতে দিতে হবে । এর পর সেই দ্বিতীয় পতি যদি তাকে তালাক দিতে না চায় , সেই ভয়ে বাকি দিন গুলো কাটাতে হবে । তারপর দ্বিতীয় পতি যদি দয়া করে তাকে তালাক দেয় , তবে সে আবার প্রথম পত্নীর কাছে ফিরে যেতে পারবে । পতি কে ফিরে পাওয়ার জন্য যার এতো আত্মত্যাগ , পতি কে ফিরে পেয়ে কি আর সে সেই সম্মান পাবে , যা আগে পেত ? এর উত্তর আমরা সবাই জানি ।

তাই, ইসলামে নারীর অধিকার , মর্যাদা আর স্বাধীনতা নিয়ে বড় বড় কথা না বলাই ভালো ।