অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ মুক্তমনার একজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। তিনি বহুদিন ধরেই মুক্তমনার সাথে, মুক্তমনাদের মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের সাথে জড়িত আছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছিলেন সতের বছরের এক কিশোর। তিনি তখনকার দেখা ঘটনাবলী মুক্তমনায় লিখেছিলেন সিরিজ আকারে। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পরে লেখা দশ পর্বের সেই সিরিজটিতে তিনি ব্যক্ত করেছেন তার দেখা একাত্তরকে, বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোন থেকে। তাঁর সব বিশ্লেষণের সাথে হয়তো সবাই একমত হবেন না, কিন্তু তাঁর এই রচনাটি নিঃসন্দেহে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য এক মহামূল্যবান সম্পদ। আমরা আনন্দিত যে, তার এই সিরিজটি আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তমনায় ই-বই আকারে প্রকাশ করতে পেরেছি।
মুক্তমনার সকল পাঠক এবং লেখকদের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
– সম্পাদকমণ্ডলী, মুক্তমনা
:line:
আমার চোখে একাত্তর
ইরতিশাদ আহমদ
চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও মনে হয় মাত্র সেদিনের কথা। যা নিজের চোখে দেখেছি তাকে ইতিহাস ভাবা যায় না, আমি ভাবতে পারি নি। তাই আমি যা লিখেছি তাকে ইতিহাস বলা যাবে না। স্মৃতিচারণ বলা যাবে কি? যেতে পারে, তবে এ শুধুই স্মৃতিচারণ নয়। আমার মনের অনুভূতি, আবেগ, পক্ষপাত, মতাদর্শ – সবকিছুর প্রতিফলন ঘটেছে এতে। প্রতারণাপরায়ন স্মৃতির সাথে লড়াই করতে হয়েছে নিরন্তর – সবসময় জিতেছি বলা যাবে না। তারপরেও কিছু কিছু ঘটনা যে ছায়াছবির দৃশ্যের মতো মনের বর্ণিল পর্দায় এমন স্পষ্ট হয়ে আঁকা আছে দেখে নিজেই অবাক হয়েছি। স্মৃতিচারণ না হলেও লেখাটা স্মৃতিনির্ভর। লিখেছি মনের তাগিদে, স্বতস্ফুর্ততার সাথে। এতে লেখাটা সমৃদ্ধ হয়েছে না তার অঙ্গহানি ঘটেছে – বিচারের ভার পাঠকের ওপরে রইলো।
মুক্তমনা আর অভ্র না থাকলে এই লেখাটা শুরুই হতো না, আর লেখাটা শেষ হতে পেরেছে মুক্তমনার ফরিদ আহমেদ, অভিজিৎ রায় আর কেয়া রোজারিও’র উৎসাহ আর তাগাদার জন্য। তাঁদেরকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পাওনা মুক্তমনার পাঠকদেরও, অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন আপনারাই। …
প্রথম পর্ব
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন আমার বয়স ছিল সতের। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজে এইচ, এস, সি-র ছাত্র। ঊনসত্তরে এস, এস, সি পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে ঢুকেছি। অস্থির সময়ের দাবী আর বেপরোয়া তারুণ্যের আবেগ-উচ্ছাস যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ওই বয়স যেন ওইরকম সময়ের প্রতীক্ষাতেই থাকে। আমার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া তাই নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আমি ছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন, মেনন গ্রুপের কর্মী। দল আমাকে রিক্রুট করেনি, আমিই তাদের খুঁজে নিয়েছিলাম। এস, এস, সি পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়েই (জানুয়ারী-মার্চ, ১৯৬৯) দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। ঊনসত্তরের বিশে জানুয়ারী আসাদ পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন। দাবানলের আগুনে যেন সারা দেশ জ্বলে উঠলো। গভীর আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে প্রতিদিন পত্রিকা পড়তাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণী প্রকাশিত হচ্ছিল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। অধুনালুপ্ত দৈনিক ‘আজাদ’ সেইসময়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছিলো আসাদের ডায়েরী। এই ডায়েরী আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং শিবপুরের কৃষক সমিতির একজন সংগঠক ছিলেন …(এর পর পড়ুন এখানে :pdf: )
এ কথা কয়টির দ্বারা কি বোঝাতে চাচ্ছেন? মেনে নিবে এই আশা আমি করছি, আর মেনে নিবেনা এই আশা আপনি করছেন, কেন? লেখাটাতো ‘বাংলাদেশের মানুষের’ মেনে নেয়ার জন্য লেখা হয় নি। আমিতো কোন রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো লিখি নাই। ইসলাম ধর্মবিরোধী বক্তব্যও তো ‘বাংলাদেশের মানুষ’ মেনে নেবে না। আপনার ‘যে সত্য বলা হয় নি’ তে যত সত্য কথাই থাকুক না কেন, তা কি ‘বাংলাদেশের মানুষ’ মেনে নেবে বা নিয়েছে বলে আপনার মনে হয়? ‘বাংলাদেশের মানুষ’ মেনে নেবে এই আশা করে কি লেখাটা লিখেছিলেন?
ঢালাও মন্তব্য। দেখিয়ে দিন কোথায় কোথায় স্ববিরোধিতা, নইলে আলোচনার সুযোগ নেই।
আমি কি লিখেছি, আর আপনি কি বলছেন। আমি লিখেছিলাম,
এই কথাটাকে আপনার হাস্যকর মনে হয়েছে। আপনার মনে হয়েছে, আমি নাকি বলতে চেয়েছি, ঝড় না হলে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারাতো। এখন আমারই হাসি পাচ্ছে। তবে হাসি ছাপিয়ে দুঃখও হচ্ছে। ব্লাইন্ড সাপোর্টার হলে এমনিই হয়।
তার পরেই কি লিখেছি, আবার দেখুন,
কথাটা লিখেছিলাম, ঝড়ের প্রভাবকে খুব বড় করে দেখাটা ভুল, এটা বলার জন্য। আপনি বুঝলেন উল্টাটা। নীচের উদ্ধৃতিগুলোতে দেখুন পশ্চিমা মিডিয়ায় আজো এই ঝড়কে এবং তার প্রভাবকে কিভাবে দেখা হয়।
সিদ্ধান্ত তো নিয়েছি, আপনি বুঝতে পারেন নি, বা বুঝতে চান নি। বলেছি, এটা ইতিহাস নয়। স্মৃতিচারণ বলবো কি না এ নিয়ে দ্বিধায় ভুগেছি, কেন তাও বলেছি। আমার পক্ষপাতমূলক বিশ্লেষণ আছে এতে, যা দৃশ্যত আপনার মনঃপুত হয় নি। কি আর করা যাবে, মন যোগানোর লেখা তো নয় এটি।
দুঃখিত, আপনাকে আশাহত করার জন্য। ডাক্তারদের ডায়াগনসিসও যেখানে অনুমাননির্ভর হয়, সেখানে আমার ‘পোস্টমর্টেম’, তাও চল্লিশ বছর আগের এক ‘বিকৃতগলিত লাশের’ ওপরে, অনুমাননির্ভরতো হবেই। অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পেছনের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি আমি নিজের মতো করে, আমার আত্মস্বীকৃত পক্ষপাত নিয়ে, এই সীমাবদ্ধতা তো আমার আছেই। মেনে নিচ্ছি।
অপ্রাসঙ্গিক লিঙ্ক এবং অসম্পূর্ণ মন্তব্য। এ ছাড়া আর কিছু বলার আছে বলে মনে হচ্ছে না।
কেন বললেন বুঝলাম না। আমি আপনার শিক্ষক নই। স্যার না বললেই খুশি হতাম। কেন যেন ‘ছাড়, ছাড়’ শোনায় (আর নিজেকে মনে হয় নাছোড়বান্দা)। এসব কথা কেন বললেন বুঝতে পারছিনা, একটু অসংলগ্ন মনে হয়েছে আমার। সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার মানসিকতা আমার আছে।
এই কথাটা বলে শেষ করছি, আপনি যেমন বিবেকের তাড়নায় মন্তব্য করেছেন, আমিও তেমনি মনের তাগিদে ‘আমার চোখে একাত্তর’ লিখেছি। রিজনেবল পিপল ক্যান ডিসএগ্রি, নো প্রব্লেম।
আপনার মনঃপুত হয় নি তবুও, মতের সাথে মেলেনি তা সত্বেও, সময় নিয়ে, পড়েছেন, ভেবেছেন, মন্তব্য করেছেন – অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সম্পূর্ণ বইটি পড়লাম স্যার। খুব ভাল একটা কাজ করেছেন। এই বইটা পড়ে এবার বুঝতে পারলাম ছোটবেলা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থন করে মোটেই ভুল করিনি, ভুল করেনি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ। আর আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে, সেই সঙ্কট সময়ে স্বদেশ কল্যাণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন নি তাও এই বই পড়ে নিশ্চিত হওয়া গেল। ছোটবেলা শুনতাম বিদেশের বাতাসের ছোঁয়ায় স্বদেশে একদল নবীণের আবির্ভাব হয়েছিল যারা মস্কো-পিকিং এ বৃষ্টি হলে নিজ দেশে মাথায় ছাতা ধরতো। আজ বুঝলাম সত্যি তারা কতো বিভ্রান্ত কতো বিশৃংখল ছিল। বিচ্ছিন্নতা বাদী নাম ধারণ করে তাতক্ষণিকভাবে অস্ত্রের মাধ্যমে খুনাখুনীর পথ না ধরে য়াওয়ামী লীগ ভুল করেছিল বলে, লেখাটিতে বামপন্থি কম্যুনিষ্টদের ভবিষ্যতদ্রষ্টা পীর হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। শেষ পর্যন্ত কী করেছেন পাঠকরাই সিদ্ধান্ত নিবে।
শুরুতে যে ভাবে আওয়ামী লীগকে বারবার জাতীয়তাবাদী বুর্জুয়া রাজনীতির অপবাদ দিচ্ছিলেন, হঠাৎ করে মধ্যখানে টীকায় এর ব্যাখ্যাটার প্রয়োজন বোধ করাটাই বলে দেয়, আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদী বুর্জুয়া, উচ্চবিত্ত ধনী সমাজের দল, এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিবেনা তা আপনিও ভাল করে জানেন। কতো অজস্র স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর লেখাটি। হাস্যকর মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সফলতার বা জনপ্রীয়তার উপর ঝড়ের প্রভাব বর্ণনা করে। সেদিন ঝড় না হলেও আওয়ামী লীগ জনপ্রীয়তা হারাতো না। ইতিহাস না স্মৃতিচারণ নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আপনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখায়- ‘মনে হয়’, ‘হয়তো’, ‘হতে পারে’, ‘শোনা যায়’, ‘সম্ভবত’ এ রকম অনুমান নির্ভর বিশ্লেষণ আশা করিনি।
ছয় দফার মধ্যে কী ছিল পাকিস্তান সরকার ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
প্রথম বাক্যতেই স্যার বলে সম্মোধন করেছি। কম করে হলেও বয়সে ৫ বছরের বড় হবেন, সর্বোপরি একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। উলটো স্রোতে মনের কিছু কথা বলে দিলাম, ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না, না বলতে পারলে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী থাকতাম।
সকলের মতো আমিও চাই বইটি হার্ড কভারে প্রকাশিত হউক, এর দরকার আছে। আপনার চিন্তা বিশ্বাস আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
আপনার মন্তব্যের জবাব দয়া করে নীচে দেখুন। ভুলে আলাদাভাবে পোস্ট হয়ে গেছে, দুঃখিত।
ইরতিশাদ ভাই,
লেখাটা শেষ করার জন্যে ধন্যবাদ আর আগামী বই মেলায় প্রকাশ করার জন্যে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
@কেয়া রোজারিও,
অনেক ধন্যবাদ, কেয়া। ই-বইয়ের পূর্বকথায় যেমন উল্লেখ করেছি, তোমাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া এই লেখাটা সাইবারস্পেসের আলো দেখতে পেত না। ই-বই প্রকাশিত হওয়ায় আমি বেশ আনন্দিত। বইমেলায় প্রকাশিত হোক না হোক, শুভেচ্ছাটুকু নিলাম।
ইরতিশাদ ভাই, সিরিয়াসলি, এটাকে আরেকটু বর্ধিত করে ( না হলে এভাবেই) বই হিসেবে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করুন।
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ, বন্যা। লেখাটার পরিসর আর কলেবর বর্ধিত করার ইচ্ছে আছে। তবে আমি তো লেখক, প্রকাশক নই।
বইটার পিডিএফ তৈরি করতে গিয়ে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলামক, ইরতিশাদ ভাইয়ের ‘আমার চোখে একাত্তর’ নামের এই অসামান্য বইটার পৃষ্ঠা সংখ্যাও একাত্তর। এটা কী কাকতালীয় নাকি ইরতিশাদ ভাইয়ের মিরাকেল, তা উনিই জবাব দিক।
অভিনন্দন ইরতিশাদ ভাই; হার্ড কভারেও বইটিকে দেখতে চাই অচীরেই।
@অভিজিৎ,
এটা আমিও লক্ষ্য করেছি, এবং চমৎকৃত হয়েছি। মুক্তমনায় নবীদের তালিকায় আমাকেও যোগ করতে পারো। মিরাকল ঊনিশের মতো আমার মিরাকল হচ্ছে একাত্তর।
এই সিরিজটাকে ই-বই আকারে প্রকাশ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মুক্তমনার সরব এবং নীরব পাঠক, সবাইকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ – কাজি মামুন, আফরোজা আলম, গীতা দাস, ফরিদ, লীনা রহমান, সৈকত চৌধুরী, স্বাধীন এবং অভিজিৎকে।
ভালই লাগল। তবে, ভারতের হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় লেখক নিজে যেমন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস যুদ্ধ না করে বসে ছিলেন, সেই ভাবে যদি সকল মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তা করতেন, তাহলে আমাদের আর স্বাধীন হওয়া হত না। তত্বের মায়াজালে বামপন্থিদের আটকে থাকার প্রবণতাই, আমার মতে, এদেশের বাম্পন্থিদের ব্য়র্থতার একটি বড় কারণ।
এছাড়া চট্টগ্রামের বিহারি হত্যার যে বর্ণনা রয়েছে, তা অনেক কেই বিভ্রান্ত করতে পারে। লেখক যে বিহারিদের রক্ত ড্রামে ভরে জমিয়ে রাখার যে তথ্য দিলেন, তার সূত্র কি, উল্লেখ করলে ভাল হত। চট্টগ্রামের বিহারি ও বাংগালি, উভয় পক্ষেরই নৃশংসতার নিদর্শণ ছিল, লেখকের বর্ণনায় এ ব্যপারটা অনেকটাই একপেশে মনে হচ্ছে। আজকেই সচলায়তনে ১৯৭১ এর মার্চ মাসের চট্টগ্রাম নিয়ে যে লেখা ছাপা হয়েছে, তা দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। http://www.sachalayatan.com/kingofgreenhill/43873
@ফাইয়াজ জামাল,
তো চট্টগ্রামের প্রাণকুমার ভট্টাচার্যের কি হয়েছিল, জানা আছে কি? এ-ও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে থাকা দরকার; তা না হলে ইতিহাস খুব একপেশে হয়ে যায়। আর লেখক অংশগ্রহণ করতে পারেননি, মানে তো এই নয় যে কেউ অংশ নেয়নি।
@স্বপন মাঝি, প্রানকুমারের কি হয়েছিল ??
@মাসুদ,
কি হয়েছিল প্রানকুমার ভট্টাচার্যের? স্বপন মাঝি কি জানাবেন?
@মাসুদ,
যতটুকু মনে আছে, তা হলো; অন্য অনেকের মত তিনি দেশ ত্যাগ করেন নি। অন্য অনেকের মত ছাতাটা আকাশে উড়িয়ে দিয়ে, স্বদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। না, ভারতের সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ করারও পক্ষপাতি ছিলেন না। তো মুজিব বাহিনী এলো তার এলাকায়। প্রস্তাব ছিল; তুমিও যুদ্ধ করছো, আমরাও – একসাথে করা হোক। প্রাণ কুমার রাজি হয়ে গেলেন। রাতের আধারে মুজিব বাহিনী তাকে ও তার সাথীদের হত্যা করে আশ্রয় দেয়ার উপহার দিয়ে এলাকা ত্যাগ করলো। এই আর কি!!!!!!!!!!!!!!!তেমন কিছু না।
শেখ মুজিব যদি তাজুদ্দীন আহমদকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন; তো ?
খুব বেশি প্রশ্ন করতে নেই; ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করলে নাস্তিক আর রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করলে কমুনিস্ট।
মুক্তমনা বললেই কি মুক্তমনের হওয়া যায়?
ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,
দারুণ একটা কথা বলেছেন। এবার বুঝলাম, প্রাণকুমারকে কেন প্রাণ দিতে হয়েছিল। প্রাণকুমারের মতো আরো অনেকেই আছেন, যাদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল ভারতের প্রত্যক্ষ্য মদদে গঠিত ও লালিত মুজিব বাহিনীর সাথে। খুব কম লেখা হয়েছে প্রাণকুমারদের কথা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত রচনাবলীতে। এর কারণও রাজনৈতিক। যাঁরা জানেন, আপনার মতো, তাঁদেরকে অনুরোধ, লিখুন প্রাণকুমারদের কথা, দেরি না করে।
ধন্যবাদ, স্বপন।
@স্বপন মাঝি,
অনেকানেক ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।
@ফাইয়াজ জামাল,
খুশি হলাম, শুধু পড়েছেন বলেই নয়, এ নিয়ে ভেবেছেন এবং মন্তব্যে আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
তর্কের খাতিরে আমিও বলতে পারি, ভারতের স্বার্থপর ভূমিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলগুলো সচেতন থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রটাই বদলে যেত। ‘স্বাধীন’ আমরা ঠিকই হতাম, হয়তো একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বরে নয়। যদিও এই ধরনের ‘হাইপথেটিক্যাল’ তর্কের তেমন কোন গুরুত্ব আছে বলে আমি মনে করি না।
যুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ নিয়ে আমি তর্কে লিপ্ত হতে চাই না। বলতে পারেন আমি বসে ছিলাম, তবে সামগ্রিকভাবে বামপন্থীরা যে বসে ছিল না, লেখার দশম পর্বটা ভালো করে পড়লে জানতে পারতেন। অনেক সূত্র/রেফারেন্স (যা আপনি অন্যত্র চেয়েছেন) আমি উল্লেখ করেছি আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে। আমার লেখার একটা অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই প্রচলিত ভুলটা ভাঙ্গানো যে বামপন্থীরা যুদ্ধে অংশ নেয় নি।
আমার লেখায় আপনার এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি পাবেন। তবুও আমি বলবো, লেখায় বেশ কয়েকবার বলেছিও, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। বায়ান্ন/ছাপ্পান্ন/ঊনসত্তরের ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। সেইসময়ে বামপন্থীদের ভূমিকা অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। খোলা মন নিয়ে চিন্তা করলে মানবেন, আমাদের যুদ্ধটাকে মুক্তিযুদ্ধে পরিণত করার পেছনে বামপন্থীদের অবদান অস্বীকার করলে ইতিহাসকেই অস্বীকার করা হয়।
আমি ইতিহাস লিখি নি। যদিও ইতিহাস এসেছে আমার লেখায় অনিবার্যভাবে, যেখান প্রয়োজন মনে করেছি, সূত্রের উল্লেখ করেছি। যে তথ্যটার সূত্র আপনি চাচ্ছেন, তা আমার কাছে নেই। এই ধরনের স্মৃতিতর্পণের সূত্র হয় না। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে এটা আমি নিজের মনে বানিয়ে নিয়েছি? যদি তাই মনে করেন, আমার কিছু করার নেই। সূত্র দিলেই কি আপনি মেনে নেবেন, ‘সেই সময়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতেও পারে’; আর না দিলে মনে করবেন, ‘না বাঙালিরা এই কাজ করতে পারে না?’
সত্য কঠিন হলেও তাকে অস্বীকার করা করা যায় না। সত্য জানলে মানুষ বিভ্রান্ত হয় না, না জানলে হয়। সূত্র পাওয়া গেলেই কি যে প্রশ্নটা এই কথিত ঘটনার মধ্য থেকে উঠে এসেছে, তার জবাব পাওয়া যাবে?
আপনি অন্য একটা ব্লগের একটা লেখার লিঙ্ক দিয়েছেন, লেখাটা আমি পড়ি নি। তবে আপনার মন্তব্য থেকে বুঝতে পারছি, ওই লেখায় বিহারী আর পাক-সৈন্যদের অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে লেখা হয়েছে। সেই লেখায় কি বাঙালিদের অমানবিক কার্যকলাপ নিয়ে কিছু বলা হয়েছে? ধারণা করি, হয় নি। কিন্তু তাই লেখাটাকে কি একপেশে বলবেন? বলবেন না, বলা উচিৎ হবে না।
অন্যদিকে, আমার লেখায় কোথায়ও কি আপনি পাকবাহিনীর অত্যাচার, পশ্চিমাদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কোন উল্লেখ দেখেন নি? আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে যা যথার্থ মনে হয়েছে লিখেছি।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য। আপনি মন্তব্য করেছেন বলে আমি আমার কথাগুলো বলার সুযোগ পেলাম।
@ইরতিশাদ, বামপন্থীরা অনেকেই যে যুদ্ধ করেছিল, সে কথা আমি অস্বীকার করছি না, মান্নান ভুইয়ার মত অনেকেই আবার সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন পুরো সময়েই. আমার বাবা ন্যাপ কমুনিস্ট পার্টির যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহন করেছিলেন, আমার খালা (ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী) পুরুষ বেশে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন পাবনা তে. আপনি আমার বাবার বয়সী হবেন প্রায়, তাই শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বামপন্থীরা, বিশেষ করে চীনপন্থী বামেরা অনেকেই ১৯৭১ এ বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন (যে বিষয় আপনার লেখায় এসেছে). আপনার লেখায় যা আসেনি, তা হলো নকশালরা তো যুদ্ধ শুরুর আগেই শ্রেনীশত্রু খতমের নামে আওয়ামী নিধনে লিপ্ত ছিল. প্রাথমিক প্রতিরোধে অনেকেই পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করলেও পরবর্তিতে ভারতের সহায়তার অভিযোগে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে তারা. উত্তরবঙ্গে টিপু বিশ্বাস, আলাউদ্দিন সরকাররা ১৯৭১ জুড়েই স্বাধীনতার স্বপক্ষের বাঙালিদের হত্যা করেছে. জাদু মিয়া, আনওয়ার জাহিদেরা ভারত থেকে ফিরে এসে মূলত পাক বাহিনিকেই সমর্থন করেছেন. আব্দুল হক এর মত নেতারা ১৯৭৩ এ এসে যখন ভুট্টোর কাছে অস্ত্র সাহায্য প্রার্থনা করেন, সে থেকেই বোঝা যায় তারা ৭১ এ কোন পক্ষে ছিলেন. সর্বহারা পার্টি অক্টোবর পর্যন্ত যুদ্ধের পক্ষে থাকলেও অক্টোবর এর পরে আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল আখ্যা দিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নেয়. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রলম্বিত হলে মস্কোপন্থীদের সাথেও আওয়ামী পন্থীদের লড়াই হত বলে আমার বিশ্বাস.
১৯৭১ এ যে অবস্থা ছিল, সে অবস্থায় decisively এক পক্ষে আসা উচিত ছিল. ভারত খারাপ, তাই যুদ্ধ করব না, এই অবস্থান নিলে তো শেষ বিচারে পাকিস্তানই লাভবান হয়. ক্রাক প্লাটুন এ যেমন দলমত নির্বিশেষে যোদ্ধারা অংশগ্রহন করেছিলেন, বামপন্থীদের যুদ্ধে অংশগ্রহনের সুযোগ যে একেবারে ছিল না, তা কোনমতেই বলা যাবেনা. চীনপন্থী বামেরা আরো ব্যাপক হারে অংশগ্রহন করলে স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের জাতীয় গতিপথ ভিন্ন হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল.
অভিনন্দন ইরতিশাদ আহমদকে…
(Y)
দারুন! ইরতিশাদ ভাইকে অভিনন্দন।
ইরতিশাদ ভাইকে অনেক অভিনন্দন। এ ধরণের বই আমার সবসময়ই পছন্দ। সময় করে পড়ে ফেলব আর আশা করছি সামনের বইমেলায় হার্ডকপিও দেখতে পাবো বইটির। 🙂
আগামী বইমেলায় বাঁধানো বই আকারে বিরাজ করুক।
এই লেখা এক অনবদ্য সৃস্টি। আর কাজি মামুন ও গীতাদি’র সাথে একমত।
স্বাধীনতা দিবসের সূচনায় এমন একটি অনন্য উপহার দেয়ার জন্য মুক্তমনা এডমিনকে ধন্যবাদ। সাথে ইরতিশাদ ভাইকেও।
আজকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি। স্বাধীনতার নায়ককে পাল্টে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। পাক বাহিনীর নৃশংসতাকে আড়াল বা খাটো করার চেষ্টা করা হয় ভারতের সীমান্ত নির্যাতনের কথা বলে। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, এই দেশের মানুষের সীমাহীন আত্মত্যাগকেও ছোট করার চেষ্টা করা হয় এই বলে যে, ভারত বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থে ভাগ করেছে।
এইসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইরতিশাদ ভাইয়ের ই-বইটি নতুন প্রজন্মের জন্য জন্য বিশেষ উপকারী হবে বলে মনে করি। বইটি ভার্চুয়াল জগত পাড়ি দিয়ে রিয়েল জগতেও অচিরেই চলে আসবে, সেই প্রত্যাশা করি।
@কাজি মামুন,
ভীষণভাবে একমত।