ধার্মিকেরা সর্বদাই দাবী করে ধর্মচারন করে সুখ পাওয়া যায়। ইবাদত বন্দেগী কিম্বা পূজা অর্চনা করার পরে মনে নাকি এক ধরনের ঐশী প্রশান্তি অনুভূত হয়। তা অপার্থিব। সে অনুভুতি প্রকাশ যোগ্য নয়। অধার্মিকেরা কিম্বা নাস্তিকেরা তার মর্ম কখনই বুঝবে না।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ দাবী। ঈশ্বর তার ভক্তবৃন্দের জন্য স্বর্গ থেকে সুখ পাঠিয়ে দেন। সেই সুখে বিশ্বাসীগণ ভড়ে ওঠেন কানায় কানায়। আর অবিশ্বাসীগণ কেবল অশান্তিতে ডুবে দাপাদাপি করে মরে। অবিশ্বাসীগণের জন্য দুঃখ হয়।

খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বর্গ থেকে কে সেই সুখ পাঠান? আল্লা, ভববান, গড, জেহোভা নাকি অন্য কেউ? নাকি সবাই। যার যার ভক্তের কাছে সেই সেই ঈশ্বর সুখ নাজেল করেন? তবে কী সব ঈশ্বরই স্বর্গ ভঁরে রয়েছেন? তারা তাদের ভক্তের নানাবিধ বিচিত্র রীতি-পদ্ধতির প্রার্থনা শোনেন আর বিনিময়ে তাদেরকে সুখী করেন? কেননা সব ধর্মের সব ধার্মিকেরাই তো সেই অত্যাশ্চার্য সুখ ভোগ করেন বলে দাবী করে চলেছেন।

প্রার্থনার সেই সুখ দেখবার জন্য ছেলেবালা থেকেই উবুর হয়েছি হাজার বার। প্রহরে প্রহরে। দিনে রাতে। সপ্তায় সপ্তায়। আর সব পুন্য রজনীতে। আমি পাইনি। আমার উবুর হওয়াটা হয়তো ঈশ্বর গ্রহন করেননি। আমি হতভাগা। কিন্তু ভাগ্যবান কে?

আমার শাশুড়ি? দিনে রাতে কত ওক্ত উনি নামাজ পরেন, মনে হয় ঈশ্বরও মনে রাখতে পারবে না। জায়নামাজ তার বিছানোই থাকে। নানাবিধ শারীরিক সমাস্য ভুগছেন। ডাক্তার তাকে রাতে ঘুমুতে বলেছেন। কিন্তু তিনি তো ঘুমনোর বান্দা না। তিনি রাতের পর রাত জেগে ঈশ্বরকে খুশী করে চলেছেন।

কিন্তু আল্লাপাক তাকে খুশী করছেন বলে মনে হয় না। তিনি একজন অসুখী মানুষ। তার দুঃখের শেষ নেই। সংসারে কে কখন একবেলা উবুর হতে ভুলে গেছে – তো তিনি অসুখী হন। তিনি অশান্তিতে থাকেন বউঝিরা স্টার প্লাসে নাটক দেখলে। নাটকে পুজো দেখায়। পুজো দেখা হারাম। পিস টিভি কেউ দেখে না বলে তার দুঃখের শেষ নেই।

তিনি সর্বাপেক্ষা অসুখী থাকেন রমজান মাসে। প্রতিদিনই বাড়ীর বউয়ের সাথে তর্ক হয়। তর্কটা দুপুর গড়ালে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তবে ইফতারটা শান্তিপূর্ণ। দানাপানি পেটে ঢুকলে পরে আল্লাপাক একটু একটু করে প্রশান্তি পাঠাতে থাকেন।

হেকমত উল্লা। ছেলেবেলায় দেখা মহল্লার সবচাইতে প্রভাবশালী অসুখী মানুষ। মহল্লার কোন বেগানা নারী কবে বুরখা ছাড়া ঘর থেকে বের হয়েছে তিনি তার খোজ রাখতেন। কবে কে সিনেমা দেখতে গেছে, কার ছেলে সারাদিন সাইকেল চালিয়ে বেড়ায়, নামাজকালাম নেই, কোথায় যাত্রার আসর বসেছে- সবই তার দুশ্চিন্তার কারন। তিনি সর্বদা অসুখী থাকতেন- কেননা দেশময় মানুষেরা হাসে, খেলে, মেয়েরা দাপাদাপি করে ছুটে বেড়ায়। যুবকেরা জিকির ফিকির করার চাইতে বাংলা কিম্বা হিন্দি গানের কলি আওরাতেই বেশী উৎসাহী। মহিলারা পোলাপান হতেও হাসপাতালে যায়! সবই নাসারাদের ষড়যন্ত্র!

এলাকায় টেলিভিশন এলো। আরেক গজব। পাড়ার ছেলেরা সেখানে টিভি দেখে। মহিলারাও দলবেঁধে সেখানে যায়। মহিলাদের নানারকম হাঁসিতে শব্দে আল্লার আরশ কেঁপে ওঠে। হেকমত উল্লা কাউকেই আর বেধে রাখতে পারেন না। এমনকি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও না! ( উল্লেখ্য তাঁর প্রথম স্ত্রী কোন এক মাঝ রাতে কুয়োয় পরে মারা গেছিল। মাঝরাতে কেন তিনি জল তুলতে গেছিলেন, এই প্রশ্নের কোন সুরাহা না হলেও তিনি অতি দ্রুত তার শালিকাকে বিয়ে করে পরিস্থিতি সামাল দেন)। তার এই বিবি তাকে সুখ না দিলেও, হেকমত উল্লা গোটা এলাকার মানুষকে তাঁর শাসনের মুখে রাখলেও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে কখনই কোন ব্যপারে ঘাটাননি !

আমার ধার্মিক স্বজনদের বেশ আত্ন তৃপ্তি পেতে দেখেছি, যখন কোন হিন্দু আমাদের বাসায় গোপনে গরুর গোস্ত বেশ মৌজ করে খেত। হিন্দুকে গরু খাওয়াতে পারলে মনে হয় ইসলামের বিজয়ানুভুতি জাগ্রত হয়। তারা হিন্দুর গোমাংস ভক্ষন দেখে সুখ পেত। কিন্তু আমি দুঃখ পেতাম। গরু খাওয়া হিন্দুদের হিংসে হত। তারা স্বাধীন হয়েছে। আমি কবে স্বাধীন হব? কবে শুকুর খাব, কচ্ছপ খাব, মদ্যপান করব!

অবশ্য হিন্দুরাও কম যায় না। কয়েকমাস আগের কথা। আমার অফিসে (ব্যাংকে) এক হিন্দু মহিলার সাথে কথা হচ্ছিল। পেশায় তিনি একজন ডাক্তার। আলোচনার বিষয় হজরত মুহাম্মদ। তিনি আমাকে খুশী করার জন্যে বললেন- দেখুন মুহাম্মদের মত শান্তিকামী মানুষ জগতে কয়জন আছে? তিনারা সারাজীবন জগতে কেবল শান্তি্র বানীই দিয়ে গেছেন! অহিংসার কথা বলেছেন!

আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেমন শান্তি? তিনি মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে একটা দল গঠন করলেন। তাদের পেশা কী ছিল? কৃষিকাজ নাকি ব্যবসা বনিজ্য? কিছুই না। সেটা ছিল মুলত একটা লুটেরার দল। মদিনা আর আশপাশের অঞ্চলে অভিযান চালনোই ছিল তাদের পেশা। লুটের মালামালের নামই গণিমত। তারা রাশি রাশি গণিমত লাভ করতেন। তার মধ্যে অর্থ, সম্পদ, কৃষিজমি, নারী সবই ছিল। এই গণিমত ভাগবাটোয়ারা করার জন্যে দরকার কিছু নিয়ম কানুন। এই নিয়ম কানুনের নামই শরীয়ত।

মহিলা বেশ খুশী হলেন। কিন্তু ধরা দিলেন না। মাথা নীচু করে বললেন- কী যে বলেন ভাই!

কদিন পরে তিনি তার স্বামী সহ এসে একাউন্ট খুললেন। তাদের আশ্রমের একাউন্টাও খোলা হল। তিনি এখন তার বন্ধু বান্ধবদের বলে বেড়ান- ম্যনেজার সাহের অতি অমায়িক মানুষ! অতি প্রগতিশীল!

ভগবানের কৃপায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাল ডিপোজিট পাচ্ছি।

তবে ধার্মিকের মত সুখ পেতে এখন আর ইচ্ছে করে না।