একটা পর্নো মুভি চলছে, মহা সমারোহে,
ছেলে-বুড়ো দেখছে সবাই, পরম তৃষ্ণা ভরে!
নেই ফাঁকিবাজি, ক্যামেরার জারিজুরি; সঙ্গী
চতুর্মাত্রিক ছবির টাইম-স্পেস রিয়েলিটি।
নেই নির্জন ঘর, পার্ক-সৈকতের দৃশ্য যত ভেজাল,
নগরীর ব্যস্ত সড়কে চিত্রিত, ছবিতে নেই কোন আড়াল।
বাস-রিকশা-যাত্রী-হকারের কোলাহল আর হুংকার,
নেই আলাদা করে আর কোন আবহ সংগীত-ওঙ্কার।
কোথাও লেখা নেই ‘অনলি ফর এডাল্ট’, নয় বেআইনি,
‘নট এলাউড’ বলে সরকার চোখে-ধুলো আইন করেনি।
নেই ডিরেক্টর, নেই আউটডোর, নেই কোন ভীম-নায়ক,
নায়িকা দর্শনে বাধা নেই, দর্শকরাই হয় নায়ক।
নায়িকা পাতেন না হাত কোন দর্শনার্থীর কাছে,
অগ্নিমূল্যের বাজারে ছবিটি ছাড় হয় ফ্রিতে।
ড্রেনের জলে বারবার ভেজায়, নগ্ন পা দু’খানি,
আপন মনেই এড়িয়ে চল, ঝর্ণার দুষিত পানি।
চারদিকে শত লোভাতুর চোখ, আহবানের শরা
নায়িকা ব্যস্ত, বিমোহ ; আবেদনে দেয়না সাড়া
চোখ তার তীক্ষ্ণ সন্ধানী, করে ব্যগ্র নিরীক্ষণ !
এদিক ওদিক লাঠি হাতে খুঁজে, ভিলেন অনুক্ষণ।
পরনে নেই কাপড়, নেই কোন রঙ্গিন সুতোর বাহারি সাজ-ভার,
গায়ে না চাপিয়ে হাতে নিয়ে হাটে মলিন বস্ত্রের ঝাড়।
পরিয়ে দিতে চায় নগ্ন পৃথিবীকে, নিজের ঝুল-কাপড়খানি,
ঢেকে দিতে চায়, আলো ঝলমল নগরের বেহায়া মুখোশ-দানি।
ফুট নোট: কিছুদিন আগে রাস্তায় এক অসহায় (ভদ্রলোকদের ভাষায় অপ্রকৃতিস্থ/অপ্রকৃতিস্থ) মহিলাকে দেখেছিলাম। তখনই কবিতাটি লেখার কথা মাথায় আসে। এটিই আমার প্রথম কবিতা-প্রচেষ্টা। তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এত কঠিন বাস্তবতা কে এত সহজ ভাবে উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ।:-)
@তাসনুভা,
স স
দেখুন, এটি আমার প্রথম। তাই মনে হয় অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। এরপরও আপনাদের উৎসাহে নিশ্চয়ই আরও ভাল লিখতে পারব সামনে।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!
কবি আমাদের হৃদয়ের , বিবেকের দরজা প্রসারিত করে দেন । সেটাই তাঁদের কাজ। এর সাথে কোন সোশ্যাল ওয়ার্কার যদি এইসব ভাগ্যহীন মানব মানবীদের কিভাবে সরকারী মা্নসিক হাসপাতালে পৌছে দেওয়া যায় সেবিষয়ে আলোকপাত করেন তাহলে কিছু মানুষের সক্রিয় হয়ে ওঠার সম্ভবনা আছে মনে হয়।
@জিয়াউল হক,
একমত। তবে মানসিক হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াটা হল ঘটনা পরবর্তী সমাধান। আমাদের দেশে অনেকেই সামাজিক নির্যাতনে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে; আমাদের ঘটনা পূর্ববর্তী ক্ষতগুলোরও নিরাময় করতে হবে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
@তামান্না ঝুমু,
অনেক সহৃদয় মানুষ রয়েছেন (কেউ পলায়নকারী, কেউ সাহায্যকারী); কিন্তু অনেক শেয়াল-কুকুরও রয়েছে, যারা এক অসুস্থ মানুষের নগ্নতাতেও ভাগ বসাতে পিছপা নয়। দৈহিক রোগের উপর হাত নেই (যদিও পরিবেষ দুষনের জন্য অনেককে দায়ী করা চলে)। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীণতা সামাজিক নির্যাতনেরই ফল অনেক ক্ষেত্রেই।
একজন কবির কাছ থেকে পাওয়া এমন মন্তব্য আমার জন্য বিরাট আশীর্বাদ।
ভাল থাকবেন।
আমার ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় একটি অপ্রকৃতিস্থ মহিলা ভিক্ষা করতে আসত। ওকে দেখলেই আমরা ছোটরা ভয়ে পালাতাম। ও কী সব যেন বলত তখন বুঝতাম না! শেয়াল-কুকুরেরা নাকি ওকে নিয়ে টানাটানি করে।এখন বুঝতে পারি, শেয়াল-কুকুরগুলো মানুষের অসুস্থতারও সদ্ব্যবহার করে। চমৎকার লিখেছেন। অনেক অভিনন্দন (F) (F)
…
লাজ মান কী খোদা ভগবান
বেচতে রাজি যা কিনতে চান,
নিজের পরের ব’লে কিছু নেই
টাকা পেলে সব বেচে দেই!
…
@অরণ্য,
ভাইয়া, একটু বুঝিয়ে বলবেন? অনেক রকম বেচা-কেনা তো রয়েছে! আপনি কোন বেচা-কেনার কথা বলছেন?
ভাল থাকবেন।
@কাজি মামুন,
বলা যাবে না। গুরুর নিষেধ আছে! :-[
@মামূণ
””’আমাদের বর্তমান বাস্তবতা টা কঠিন । আমরা অন্যর কষ্ট দেখলে আহা করি । সাহায্যর হাত বাড়াইনা । নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে অন্যকে দোষী করি। অন্যর দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাই আর বলি আহ সৃষ্টির লীলা খেলা।”””
কেউ কেউ হয়ত এমন করে; কিন্তু এই কবিতায় তাদের কথা বলা হয়েছে, যারা রাস্তায় এক বিবস্ত্র অসহায় (অসুস্থ, ভদ্র সমাজের চোখে ‘অপ্রকৃতিস্থ/মানসিক ভারসাম্যহীন’) মহিলাকে ”মানসিক ধর্ষণ” করে। অনেকে মানুষ আছে, যারা আহা-আহা করে দুঃখিত চিত্তে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আবার অনেক ভাল মানুষ থাকাও বিচিত্র নয়, যারা ঐ অসহায় মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য।
এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমি কোন গ্রুপে পড়ছি। আমার উত্তর হল, সে প্রশ্ন অবান্তর। কারণ আমি উপরের বর্ণিত প্রথম শ্রেণীকে দেখেছি এবং তা নিয়ে লিখেছি। এখন কেউ যদি দ্বিতীয় গ্রুপ বা তৃতীয় গ্রুপকে অবজার্ভ করে, তারা তা নিয়ে লিখতে পারে। সাহিত্যে কোন কিছু লেখা হলে, লেখাটির মধ্যে বাস্তবতা-বোধ ফুটে উঠেছে কিনা, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হয়; লেখক তার লেখার চরিত্রের সমরূপ কিনা, সেই প্রশ্ন সেখানে একেবারেই অমূলক; সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ দক্ষ হাতে মজিদ চরিত্র এঁকেছেন; এখন এমন প্রশ্ন করা কি যাবে যে, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ মজিদের মত ছিলেন কিনা, এই চরিত্র লেখার অভিজ্ঞতা উনি কই পেলেন বা এমন বাজে চরিত্র নিয়ে উনি উপন্যাস লিখতে পারেন না ইত্যাদি ইত্যাদি?
সুতরাং, ভাই মামূণ, আপনি আপনার দেখা লোকগুলোকে নিয়ে লিখুন। আমি ওরকম দেখিনি; আমি যা দেখেছি, তাই লিখেছি; তাই বলে আমি আপনার দেখাকেও অস্বীকার করছি না। ভাল থাকবেন।
@গীতা দাস,
””বাঁধা এর চন্দ্রবিন্দু হবে না বলেই মনে হচ্ছে।””
ধন্যবাদ দিদি, ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। সম্পাদনা করতে পারলে ঠিক করে দেব। সম্পাদনার জন্য ঢুকেছিলাম; কিন্তু উল্টা-পাল্টা দেখাচ্ছে সব!
””ওপরের লাইনটির মত আপনার প্রথম কবিতার অনেক লাইনই মনে রাখার মত।””
উপরে কাজি রহমান ভাইয়ের উত্তরেও বলেছি, মুক্তমনার এই বিষয়টিই সবচেয়ে ভাল লাগে; উৎসাহের ব্যাপারে সবাই মুক্তহস্ত। বলা যেতে পারে, এটা মুক্তমনার নিজস্ব কালচার, যা মুক্তমনাকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছে! আর মুক্তমনা তো এমনি হবে; জানালা-দরজা অবারিত রাখবে বলেই তো মুক্তমনার জন্ম।
@শাখা নির্ভানা,
আপু, অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
”’ভেবেছিলাম পদার্থ বিজ্ঞানের কোন জটিল বিষয় নিয়ে শুরুটা হবে।””
আপু, আমরা ইদানীং ত্রিমাত্রিক মুভি দেখছি, যা দেখলে বাস্তবের মত মনে হয়। আর আমার বর্ণিত অসহায় মহিলাটি (ভদ্রজনদের ভাষায় পাগল, অপ্রকৃতিস্থ বা মানসিক ভারসাম্যহীন) যখন রাস্তায় গায়ের কাপড় হাতে নিয়ে হাটে, তখন আশে-পাশে অনেক দর্শক জুটে যায়, যারা আসলে ত্রিমাত্রিক নয়, চতুর্মাত্রিক ছবি দেখে, যা আরও বেশী বাস্তব; কারণ এখানে বিরাজ করে টাইম-স্পেস রিয়েলিটি।
””কিন্ত এখান থেকে পরিত্রাণের উপায়টা কি?””’
এ জন্যই তো আমার কবিতার প্রধান চরিত্র আলো ঝলমল নগরের নগ্নতা ঢেকে দিতে চায়। এই পাগলিনীই এই দায়িত্ব নিয়েছে; যেখানে আমরা সুস্থ মানুষেরা বসে বসে সিনেমা দেখছি!
বাঁধা এর চন্দ্রবিন্দু হবে না বলেই মনে হচ্ছে। ওপরের লাইনটির মত আপনার প্রথম কবিতার অনেক লাইনই মনে রাখার মত। কবিতা লেখা অব্যাহত থাকুক।মুক্ত-মনায় নতুন কবিকে স্বাগতম।
আমাদের বর্তমান বাস্তবতা টা কঠিন । আমরা অন্যর কষ্ট দেখলে আহা করি । সাহায্যর হাত বাড়াইনা । নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে অন্যকে দোষী করি। অন্যর দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকাই আর বলি আহ সৃষ্টির লীলা খেলা।
ভেবেছিলাম পদার্থ বিজ্ঞানের কোন জটিল বিষয় নিয়ে শুরুটা হবে। কিন্ত কবিতাটা পড়ে ভালই লাগলো। একটা ক ঠিন বাস্তবতার কথা, পন্যের জগতে চক্ষুলজ্জা বলে আর কিছু নেই। সব উলঙ্গ বেহায়াপনায় ভরা। কিন্ত এখান থেকে পরিত্রানের উপায়টা কি?
@কাজী রহমান ভাই,
আপনার মন্তব্য আমার উৎসাহের পারদ চড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। এ জন্যই মুক্তমনা আমার প্রানের কাবা হয়ে উঠেছে ইদানিং। এখানে যেভাবে উৎসাহের বৃষ্টি ঝরে, তা আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। মুক্ত মনের বিকাশের জন্য দরজা-জানালাগুলো এখানে যেভাবে খুলে রাখা হয়, তা আর কোথাও দেখিনি।
আমি খুব আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েছি। তাই গুছিয়ে লিখতে পারলাম না, রহমান ভাই। আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা আপনার কাছে। মুক্তমনার কাছে।
””’কেউ নেই, সবাই, সবকিছু সেই, মানুষ কোথায়?””’
রহমান ভাই, এটাই স্পেস-টাইমের চরম বাস্তবতা হয়ে উঠেছে এখন! মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না; বাণিজ্য সর্বত্র; এমনকি আমাদের অনেক সমাজ-নেতা আদর্শের বুলি আওরাচ্ছে মূলত আদর্শের বাণিজ্য করার জন্য। সর্বত্র মিথ্যার বেসাতি। শোষণের নাগপাশে মানুষ আজ অসুস্থ, মানসিক ভারসাম্যহীন!
রাস্তার শত শত লোভাতুর চোখ অনুসরণ করছিল এক বিবস্ত্র অসহায় (অসুস্থ, ভদ্র সমাজের চোখে ‘অপ্রকৃতিস্থ/মানসিক ভারসাম্যহীন’) মহিলাকে; রসালো অনেক আলাপও হচ্ছিল। অনেকে কষ্ট করে হাসি লুকচ্ছিল। ঐ মহিলা কিছুক্ষণ বাদে বাদেই নিজের পা দু’খানি ড্রেনের জলে ভিজিয়ে নিচ্ছিল। তার গায়ে একটুকরো সুতা না থাকলেও, সে হাতে রাজ্যের কাপড়ের ঝুলি বহন করছিল। কেন? এই নিয়েই কবিতা লিখার ইচ্ছে হলো।
কবিতা কি হয়েছে, রহমান ভাই? এটি আমার প্রথম।
@কাজি মামুন,
মনের খুব গভীর থেকে উৎসারিত অনুভূতি লিখে দিয়েছেন। জীবন থেকে রঙ তুলে ছবি এঁকেছেন, লোভী চোখের দৃষ্টির বাইরে থেকে দেখেছেন আর মানুষ হয়ে মানবতা নিয়ে ভেবেছেন; হবেনা কেন? বেশ হয়েছে। লিখে যান মন খুলে। মানুষকে নিয়ে লিখে যান অবিরাম (D)
পরেরগুলোতে ফুটনোট থাকবে না তো আর?
কোথায় মানুষ, মানুষ কোথায়, এখানে সবাই বিপণনযোগ্য, পন্য, মানুষ কুকুর বাদাম ফুল আমি তুমি সে, কেউ নেই, সবাই, সবকিছু সেই, মানুষ কোথায়? 🙁