লিখেছেন – জালিশ মাহমুদ রিয়াদ

বেশ অনেকদিন আগে বিবর্তন-বিরোধী খুব-ই ভালো একটা লেখা শেয়ার করেছিলেন আমার এক বন্ধু (সম্ভবত অনি)।এটাকে ভালো বলছি কারণ, এই লেখাটিতে অন্তত আমি ১ টি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম যেটা পড়ে অন্য ১০ টা প্রশ্নের মত হাসি পায়নি। সত্যি বলতে, লেখকের ঐ প্রশ্নটা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছিলো। যদিও উত্তরের বেশ কিছুটা জানা ছিল, কিন্তু ব্যস্ততা বা আলসেমির কারণে সেটা নিয়ে আলাপ করা হয়ে ওঠেনি।আজকের এই লেখাটি তাই মূলতঃ অনিকে (আশা করি অনি-ই শেয়ার করেছিল) উদ্দেশ্য করে।
যাহোক, এত ভূমিকে দিতে গিয়ে আসল প্রশ্নটিই বলা হয়নি… “প্রকৃতিতে কেন দুটি লিঙ্গই (পুং-স্ত্রী) দেখা যায়?কেন ৩টি বা এরচেয়েও বেশি নয়? এটা কী বিধাতার সৃষ্টি করা প্রতিসাম্যের-ই সাক্ষ্য নয়?”

একটা ব্যাপার সচরাচর আমাদের চিন্তায় কখনো আসেনা। কাকে আমরা পুরুষ বলছি, আর কাকে-ই বা নারী ? এদের গুণগত পার্থক্যটা কী? মানুষের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে হয়ত ব্যাপারটা খুব সোজা-সাপ্টাঃপুরুষ তারাই, যাদের গঠন শক্ত, যারা পুরুষাঙ্গের অধিকারী; নারী তারাই যারা বাচ্চা ধারণ করে, সন্তানদের দুধ খাওয়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। এমন অনেক প্রজাতি পাবেন যাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে তাদের লিং নির্ধারণের ক্কোন উপায় নেই। এই যেমন ব্যাঙ। এদের মধ্যে “পুরুষত্ব”বাহী কোন যৌনাঙ্গ নেই। (হায়েনাদের ক্ষেত্রে মেয়েরাও PENIS বহন করে। যাহোক, কে বাচ্চাদের দুধ খাওয়াচ্ছে তা দেখেই আপনি বলতে পারবেন কে নারী।) ব্যাঙদের Gender খুঁজতে আপনি হয়ত ক্রোমোসম পর্যন্ত যাবেন। সেখানে একটা সুরাহা আপনি পাওয়ার আশা করতেই পারেন। কিন্তু সেই “ডিম আগে না মুরগী আগে” টাইপ প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। (মানুষের মত) ব্যাঙ এর জন্যও যদি আপনাকে বলে দেয়া না হয়, ওমুক ক্রোমোসমধারীরা পুরুষ, আর ওমুকেরা নারী, তাহলে আপনার জন্য কাজটা কঠিন-ই থেকে গেল। কিন্তু আমাদের এই সমস্যার একটা সুরাহা প্রকৃতি করে রেখেছে কয়েকশ মিলিয়ন বছর আগে। সেটা হচ্ছে জীবজগতে দুই ধরণের জনন কোষের (Sex Cells বা Gametes) উপস্থিতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরুষ গ্যামেটটি আয়তনে অনেক ছোট, কিন্তু অনেক বেশি চলনশীল; আর স্ত্রী গ্যামেটটি সাইজে অনেক বড়, আর অনেকটাই অচল। পুং গ্যামেটকে আমরা বলছি Sperm আর স্ত্রীকে Egg.

জীবজগতে Sperm আর Egg এর পার্থক্যটা খুব বেশি চোখে পড়ে। এই যেমন ধরুন সরীসৃপদের বা পাখিদের ক্ষেত্রে Egg সাইজ এতো বড় যে একটা Egg ই বহুদিন ধরে বড় Developing embryo এর খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। আমাদের মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্যটা এতো বেশি না হলেও ডিম্বাণূ শুক্রাণুর থেকে কয়েকশ গুণ বড় তো হবেই। কিন্তু কেন এই পার্থক্য? কোত্থেকে এলো এতো বড় তারতম্য?উত্তরটা জানতে আমাদের চোখ দিতে হবে একটু নিচু (!!!) প্রজাতির জীবদের দিকে। ছত্রাকদের ক্ষেত্রে জনন কোষগুলোর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্যই নেই। এদের জিনোম, এদের আকৃতি সবই এক। এজন্যই এদের বলা হয় isogamet (iso=same).এদের জননের ক্ষেত্রে একটাকে দেয়া হয় + চিহ্ন আর অন্যটাকে – চিহ্ন । (মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের সেই ভয়ঙ্কর সব জীবনচক্রের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, তাইনা?) লক্ষ্য করুন, ভ্রূণ তৈরিতে, এর রক্ষণাবেক্ষণ বা যত্ন-আত্তিরে দুটি গ্যামেটের ভূমিকাই সমান। কেউ কম দিচ্ছে না, কেউ বেশিও না। যেহেতু এইসব আদি-উৎপত্তির জীবদের মধ্যে সেক্স কোষের কোন পার্থক্য নেই, এদের দেহ কোষেরও বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের মাঝেও কোন Gender ভেদাভেদ নেই। তাহলে, আমরা যারা বিবর্তনের সিঁড়িতে আরো পরে এলাম, তাদের মাঝে এ ধরণের সেক্স-ism এর উৎপত্তি হলো কীভাবে?

উৎপত্তিটা আসলে হয়েছে selfishness থেকে, exploitation থেকে। আমাদের ২ ধরণের সেক্স গ্যামেটের মধ্যে শুধু Egg ই ভ্রূনের খাদ্য যোগায়, sperm নয়। অর্থাৎ বাবার শুক্রাণু তার জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের ৫০% দিয়েই খালাস। আর কোন কিছুতেই সে সত্যিকার ৫০% শেয়ার করছেনা। তার selfishness হল মায়ের ডিম্বাণুর উপর সব ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তে দিয়ে কেটে পড়া। কারণ কী?খুব সহজ ব্যাপার। COMPETITION of the selfish genes. সবার-ই মুখ্য উদ্দেষ্য হচ্ছে নিজের প্রজন্ম রেখে যাওয়া। তাই সবাই-ই চেষ্টা করছে যাতে অধিক সংখ্যক জননের মাধ্যমে নিজের জিনগুলোকে টিকে থাকার অধিকতর সুযোগ করে দেয়া যায়। অন্য কাউকে embryo এর পালা-পোষার দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে সে আসলে নিজের রিসোর্স বাঁচাচ্ছে। এর ফলাফল? পুরুষদের লক্ষ কোটি শুক্রাণু উৎপাদনের ক্ষমতা। আমরা পুরুষরা তাই বলতে গেলে অসীম সংখ্যক পুত্র-কন্যার বাবা হতে পারি। আর ওইদিকে, নারীদের ডিম্বাণু এক অর্থে explioted (আসলেই কি তাই?পড়তে থাকুন, উত্তর পরে), কারণ সে শুক্রাণুর চালে পড়ে ভ্রূণের ভরণ-পোষণ নিজেই পুরোটা করছে। ফলে, কোনভাবে রিসোর্স বাঁচিয়ে আরো অনেক সংখ্যক ডিম্বাণু তৈরির স্বাধীনতাটুকু তার নেই। একটা ডিম্বাণুই তাই নারীর ভূষণ (!!!)।

এবার শুরু যুক্তির পালা। সেই প্রাচীন অবস্থার কথা চিন্তা করুন, যখন পর্যন্ত আমাদের সেক্স-কোষগুলোর কোন পার্থক্য নেই। সবাই সমান, সবাই এক-ই। এবার ধাপে ধাপে এগোন।

১। বিবর্তনের ধারায়, কোন মিউটেশনের কারণে কিছু গ্যামেটের সাইজ একটুখানি বেড়ে গেল। মিউটেশনটা লিথাল না হলে এই ধরণের কিঞ্চিৎ বড় গ্যামেটগুলোর পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে, অর্থাৎ এর সন্তান-সন্ততিরাও (!!) একটুখানি বড় হবে। একটা বড় সুবিধা হচ্ছে,আপেক্ষিকভাবে অন্য সাধারণ সাইজের গ্যামেটের তুলনায় এদের (কিঞ্চিৎ বড়) প্রাথমিক খাদ্য-সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি। তাই, এরা যখন মিলনের জন্য সবার সাথে competition এ নামে, তখন এদের ফুয়েল বেশি থাকার কারণে এরা টিকে থাকে বেশিক্ষণ এবং এদের সাফল্যের হারটাও একটু বেশি হয়। অর্থাৎ ঐ প্রথম মিউটেশনটি এদের মাঝে একটা Reproductive success এনে দেয়। তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনে এদের এই বৈশিষ্ট্যটি প্রাধান্য পায়। এভাবেই এক ধরণের গ্যামেটের (তখন পর্যন্ত শুক্রাণু বা ডিম্বাণু টাইপের বৈষম্য আসেনি) সাইজ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

২। অন্যদিকে এক শ্রেণীর এই বড়-হওয়া-জনিত সুবিধা অন্য আপেক্ষিকভাবে ছোট আকারের গ্যামেটদেরকে একটা কঠিন সিলেকশনের মাঝে ফেলে দেয়। অর্থাৎ, মিলনে সাফল্য পেতে এদেরও মরিয়া হয়ে খুঁজে নিতে হয় অন্য কোন ছল-চাতুরী। অবশ্য ছোট আকৃতি যে সব সময়ই অসুবিধার, তা কিন্তু নয়। সত্যি বলতে, এই ছোট গ্যামেটদের মধ্যে কিছু এবার চেষ্টা করে আরো ছোট হতে। কেন?কারণ, এতে করে, তারা তাদের অতিরিক্ত ভর ত্যাগ করে বাড়তি গতির অধিকারী হতে পারে এবং সেই সাথে বড় আকারের গ্যামেটের সাথে এদের মিলনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কীভাবে? কল্পনা করুন, আপনার সামনে একটা বড় গোল-পোস্ট আছে এবং আপনি একসাথে একশ বলকে ছেড়ে দিলেন এটা দেখার জন্য কে আগে পৌঁছুতে পারে। যে বলটির গতি বেশি থাকবে এবং যে নিজের সাইজের তুলনায় অনেক বড় টার্গেট পাবে, সে-ই তো আগে লক্ষ্যমত পৌঁছুবে, তাইনা?

লক্ষ্য করুন, মিলনের জন্য যদি আপনি দুই শ্রেণী থেকে মাত্র ২টি গ্যামেটকে নির্বাচন করেন, তাহলে কার কার বাছাই হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক? উত্তরটা সহজঃ ক) সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে গতিশীল গ্যামেট যে অন্যদের থেকে দ্রুত টার্গেটে পৌঁছায়খ) সবচেয়ে বড়, দীর্ঘস্থায়ী গ্যামেট (যাকে আপনি কল্পনা করতে পারেন সেই গোল-পোস্টটির সাথে) যাতে করে সে অতি দ্রুত অন্যদেরকে মিলনে আমন্ত্রণ করতে পারে।অর্থাৎ এই পর্যায়ে আমরা পেয়ে গেলাম ২টি ভিন্ন বিবর্তনীয় স্ট্র্যাটেজী, যা দুটি ভিন্ন উপায়ে গ্যামেটকে reproductive success এনে দিতে পারে।

৩। উপরে বর্নিত দুই ধরণের সুবিধাবাদী গ্যামেটদের বিবর্তন চলতে থাকেঃ ছোট গ্যামেট আরো ছোট হতে থাকে,অতিরিক্ত গতি ও সংখ্যাধিক্য পাবার জন্য (সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি পূর্বে আলোচিত) এবং বড় গ্যামেট আরো বড় হতে থাকে যাতে তাড়াতাড়ি পৌছে যাওয়া ছোট গ্যামেটকে আরো বড় টার্গেট-সাইট দিতে পারে। তারা বড় হতে হতে একপর্যায়ে অচল হয়ে পড়ে তাদের সাইজের কারণে। অবশ্য এতে তাদের ক্ষতি হয়না, কারণ ছোটগুলি এমনিতেই তাদের পিছে মিলনের জন্য ছুঁটছে। এখানে আরো একটা মিউচুয়ালিজম চলে আসে এভাবে যে, বড় গ্যামেটগুলি খাদ্য-ভাণ্ডারের দিক দিয়ে ছোটগুলির অভাব পূরণ যথেষ্ট। এতে করে পরবর্তীতে সৃষ্ট ভ্রূণের কোন খাদ্যাভাব হয়না।

এবার আসা যাক আসল উত্তরে। উপরের আলোচনাটুকুতে এতোটুকু পরিস্কার যে, দুই সীমায় থাকা দুটি ভিন্ন স্ট্র্যাটেজীধারী গ্যামেটগুলোই Reproductive Success পাচ্ছে। এবার চিন্তা করুন, ৩য় সম্ভাবনার কথা। এমন এক শ্রেণীর গ্যামেট, যাদের আকার মাঝারি- খুব বড়ও না, খুব ছোটও না। তাদের গতিও মাঝারি ধরণের। এরা কী টিকে থাকতে পারবে?…না। কারণ, মাঝারি গতি হবার কারণে এরা বড় আকারের গ্যামেটের সাথে মিলনের আগেই অন্যরা পৌঁছে যাবে, এবং মাঝারি সাইজ হবার কারণে এরা বড় গ্যামেটগুলোর মত বর্ধনশীল ভ্রূণের পর্যাপ্ত চর্চা করতে পারবেনা। তাই, এদের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবর্তনের ধারায় টিকবে না। এজন্যই ২ প্রজাতির গ্যামেটের উৎপত্তি হয়, অর্থাৎ ২টি সেক্সের বিবর্তন ঘটে।

অবশ্য একটা বিষয় এখনো আলোচনা হয়নি। এতোক্ষণ যাবৎ আমরা এদের গঠনগত পরিবর্তনের কথাই বলেছি। একথা ভুলে যাবার নয়, selective beneficial mutation এর ফলাফল হিসেবেই এই গাঠনিক পার্থক্যের আগমন। তাই যতদিনে এদের বিবর্তন সম্পূর্ণ হয়েছে, তদ্দিনে এদের জিনগত অনেক পরিবর্তনও হয়েছে, যার অনেকটা তাদের সেক্স-ক্রোমোসমগুলোতে বিদ্যমান। কারো কারো মতে অপেক্ষাকৃত ছোট Y (পুরুষদের মাঝে থাকবেই) ক্রোমোসমের আগমনই ঘটেছে যাতে করে ছোট আকারের শুক্রাণু এদের সহজে বহন করতে পারে। আবার Y ক্রোমোসমে জিনের সংখ্যা অনেক কম হবার কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে এটি সর্বদা শুক্রাণু দ্বারা বাহিত হয়। আবার Y ক্রোমোসমের মিঊটেসশনের হার X এর দ্বিগুণ। তাই, Y এ জিন সংখ্যা কম থাকে যাতে করে ক্ষতিকর মিউটেশনের প্রভাব কমে যায়। এভাবে Evolutionary Arms Race এর মাধ্যমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎপত্তি, এবং এর মধ্যবর্তী কোন অবস্থা কোনভাবেই favorable নয়।

২টি মাত্র সেক্সের আরো একটি কারণ পাওয়া যায় মাইটোকন্ড্রিয়ার (কোষের শক্তিঘর) গঠন ও এর বংশগতি দেখলে। আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা যে, মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব DNA রয়েছে এবং মাইটোকন্ড্রিয়া পুরোপুরি আমরা আমাদের মায়েদের কাছ থেকে পাই।আমাদের শরীরের ১০০% মাইটকন্ড্রিয়া এবং তাদের মধ্যকার DNA এর উৎপত্তি আমাদের মা দের শরীরে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের সময় শুক্রাণু শুধু ক্রোমোসোম ছাড়া আর কিছুই দেয় না। তাই মায়ের শরীর অর্থাৎ ডিম্বাণু থেকেই আমরা সব পাবো- এটাই স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের এই ইনহেরিটেন্স দেখে আমরা খুব সহজে খুঁজে পেতে পারি আমাদের মা কে?কে আমাদের নানী?এভাবে হয়তো মানব-সভ্যতার আদি-মাতাকেও খুঁজতে পারি।যাহোক, খুব বড় একটা অসুবিধা হচ্ছে, এর DNA তে মিউটেশনের হার অনেক বেশি এবং এখানে DNA কপি-কালীন ভুল হলে তা সংশোধনের উপায় নেই। তাই, যত বেশি মিউটেশনের পরিমাণ, আপনার কোষের এই অপরিহার্য অঙ্গাণুটির ক্ষতিও তত বেশি। Host cell এর নিয়ন্ত্রিত মৃত্যু ঘটানোর প্রক্রিয়ায় মাইটকন্ড্রিয়ার ভূমিকে অসীম। তাই, এখানে যত বেশি মিউটেশন ও ঝামেলা, আপনার কোষেরও তত বেশি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।এবার চিন্তা করুন, সেক্সের জন্য অন্তত ২টি ভিন্ন সোর্স দরকার (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)। আমাদের কোষ (এবং একই সাথে প্রকৃতি) চেষ্টা করে এই মাইটোকন্ড্রিয়ার মিউটেশনের পরিমাণ যথাসম্ভব কম রাখতে। তাই শুক্রাণু থেকে আসা মাইটকন্ড্রিয়াকে selectively excluded করে দেয়া হয় মিলনের সময়-ই। কল্পনা করুন, যদি ২ এর ও অধিক সেক্স থাকতো, তাহলে ক্রোমোসমের এবং মাইটকন্ড্রিয়ার উৎসও হত তৎসংখ্যক। অর্থাৎ প্রকৃতিকে তখন এই ৩ বা ততোধিক সেক্স-কোষের থেকে আগত মাইটোকন্ড্রিয়াকে Exclude করতে হত!!তাই মিতব্যয়ী প্রকৃতিতে বিবর্তন এমনভাবে হয়েছে, যেন দুটি মাত্র সেক্স থাকে, অর্থাৎ selective exclusion সবচে কম শক্তি ব্যয়ে ঘটে।

উপরের নাতিদীর্ঘ (!!!) আলোচনার সারসংক্ষেপ একটাইঃ দুটি সেক্সের আগমন (এবং কোনভাবেই এর বেশি নয়) কোন অত্যাশ্চর্য ঘটনা নয়। এটা বিবর্তন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

জালিশ মাহমুদ রিয়াদ
১৭/১০/২০১১, ভোর ৫.১৫ মিনিট
ঢাকা।

তথ্যসূত্রঃ 1. Dr. Richard Dawkins – The Selfish Gene
Professor,Department of Zoology,
University of Oxford

2. Dr. C. William Birky, Jr.
(From his immense work on mitochondrial inheritance)
Professor, Department of Ecology and Evolutionary Biology,
The University Of Arizona