বছর খানেক আগে ১৬ বছরে এক কিশোরীকে মরা পাখীর মতন কাঁটাতারের বেড়াতে ঝুলিয়ে দেওয়ার রেশ শেষ না হতেই বি এস এফের, আরেক ভিডিও ভারতের জাতীয় লজ্জার কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই ভিডিওতে যেখা যাচ্ছে , বি এস এফের ১০ জওয়ান , বাংলাদেশের এক গরু চোরাচালানকারী হাবু শেখকে উলঙ্গ করে পেটাচ্ছেঃ

httpv://www.youtube.com/watch?v=wGptKuEqmX8

সীমান্তে গরুর চোরাচালান একটি বিশেষ সমস্যা। এবং এর পেছনে যদি কেও দায়ী থাকে- সেটা হচ্ছে বি এস এফ নিজে। এরাই এই সব গরু চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয় এবং গরুর চোরাচালানের সব থেকে বড় পার্টনার। বাংলাদেশের এই হাবু শেখ বা হতভাগ্য গরীব লোকগুলি হচ্ছে “ক্যারিয়ার”- যারা পেট চালাতে এপার কার মাল ওপারে করে থাকে। এই চোরাচালানের আসল কেষ্ট বিষ্টু হচ্ছে ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার কিছু মহাজনি ব্যক্তি-যারা এই ব্যবসাতে টাকা খাটায় এবং হাবু শেখের মতন হত দরিদ্রদের ক্যারিয়ার হিসাবে নিয়োগ করে-বি এস এফ এবং বিডিয়ার কে ম্যানেজ করে।

আমি সেই প্রসঙ্গে আসছি না। প্রশ্ন হচ্ছে একটি পেশাদারি বাহিনী যদিও কোন চোরাচালান ধরেও ফেলে, পৃথিবীর কোন আইনেই তাকে এই ভাবে নৃশংস ভাবে পেটাতে পারে না। সীমান্তে চোরাচালানের বিরুদ্ধে আইন আছে এবং আইন মোতাবেক তাকে পুলিশের কাছ হস্তান্তর করে কোর্ট তোলা উচিত ছিল। এই ভাবে একজন গরীব লোককে পেটানোর মধ্যে আদিম আদিবাসী “মব” মানসিকতা কাজ করে। এই সব নৃশংসতা, শুধু ডকুফ্লিমের মাধ্যমে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান এবং জার্মান সেনাবাহিনীর মধ্যে দেখতে অভ্যস্ত আমি। ভাবতে পারছি না-কিভাবে একটা পেশাদার সেনাবাহিনী এই ধরনের কাজ করতে পারে।

বি এস এফের মানবিকতা বিরোধি কার্যকলাপের লিস্টটা দীর্ঘ। গত দশ বছরে প্রায় ৭০০ জন বাংলাদেশী এবং ২০০ ভারতীয় বি এস এফের অত্যাচার ও গুলির শিকার হয়েছে।

কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দিল্লী বি এস এফকে শোধরানোর চেষ্টা করছে না। বছর খানেক আগে কানাডা কোন এক বি এস এফ অফিসারের ভিসা বাতিল করেছিল এই গ্রাউন্ডে যে এটি একটি কুখ্যাত প্যারামিলিটারী ফোর্স যারা অপেশাদার এবং মানবাধিকার মানে না। এই ঘটনায় দিল্লী কানাডাকে চাপ দিতে থাকে-পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ বি এস এফের হয়ে সাফাই গাইতে থাকেন এবং কানাডা যেহেতু ভারতের মতন বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে যাবে না, শেষমেশ কানাডা এই নিশেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই অবস্থায় এস এম কৃষ্ণা নিজের কর্তব্য করেছেন-কিন্ত তার সাথে সাথে বি এস এফের এত দুর্নাম কেন বাজারে সেটা নিয়ে কোন তদন্ত কমিশন বসাতে পারতেন। তাহলেই বুঝতেন এমন অপেশাদার সেনাবাহিনী আফ্রিকার যুদ্ধবাজ জমিদারদের ও নেই। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশানালের কাছে এটি একটি “কালো সংগঠন”।

তবে বি এস এফের এই ঘটনাকে ভারতে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা হিসাবে দেখতে রাজী নই। গত দুই সপ্তাহে পশ্চিম বঙ্গে ছাত্ররা আরাম করে নিজেদের কলেজের প্রিন্সিপালকে পিটিয়ে হাঁসপাতালে পাঠিয়েছে। আর হাবু শেখত কোন এক অন্যদেশের গরীব গরুচোর। আসলে জনসংখ্যার প্রচন্ড চাপে বিরাট অসহিষ্ণু হয়ে বড় হচ্ছে এক প্রজন্ম। তাদের যারা শিক্ষাদিক্ষা দিতে পারত-সেই সব শিক্ষক সমাজ এত অধপতিত যে ছাত্ররা পারলে শিক্ষকেই যখন খুশী পেটাতে পেছ পা হয় না। রাজনৈতিক দলগুলি আবার তাতে ইন্ধন যোগায়। বি এস ফের জওয়ানরা আসে ভারতের সেই সব নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি থেকে যেখানে এই ধরনের অসহিষ্ণু পরিবেশে তারা বড় হয়েছে। ফলে, হাতে ইনস্যাস রাইফেল পাওয়া মাত্রই তার অপব্যবহার করতে ছারে না। বর্ডার এলাকাতে ধর্ষন, দোকান লুটপাট কিছু এরা বাকী রাখে নি। আর এই ব্যপারে ভারতের আইন ও অসহায়। এদের জন্যে আলাদা মার্শাল আইন। ফলে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় বি এস এফ। এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রতিরক্ষামন্ত্রকে অভিযোগ জানালে তবে “কোর্ট মার্শাল” হতে পারে!

প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে বি এস এফের বিরুদ্ধে ভারতের মানবাধিকার কমিশন ও সোচ্চার। বি এস এফের এই পেটানোর ঘটনায় মমতা ব্যানার্জি ও ক্রুদ্ধ হয়ে বি এস এফের হাই কমান্ডের কাছ থেকে উত্তর চেয়েছেন। ফেসবুকের অনেক বাংলাদেশী দেখলাম, এই ঘটনায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি বাতিল-ইত্যাদির দাবী তুলেছেন। তারা ভুল করছেন। বি এস এফের বিরুদ্ধে ভারতের মানবাধিকার কমিশন থেকে আরো অনেকেই সোচ্চার। অমানবিকতার দেশ হয় না-অত্যাচারীর ও দেশ হয় না। এইসব ঘটনায় ভারত এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা একসুরে বি এস এফকে না চাপ দিলে, ফয়দা লুটবে ভারত আর বাংলাদেশের ধর্মীয় জাতিয়তাবাদিরা। ভারতের জাতীয়তাবাদিরা এই ঘটনায় খুশী-কারন একটা মুসলমান গরুচোরকে পেটানো গেছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদিরাও খুশী-কারন ভারত বিরোধিতার সুযোগ এসেছে।

মানবতাবাদি হিসাবে আমি ভীষন অখুশী-কারন এই ধরনের ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলবে। এবং তার জন্যে দিল্লীর বিরাট দায় আছে। এই বি এস এফ বাহিনী জাতীয় কলঙ্ক এবং অপেশাদার মানতে বাধা কোথায়? এদের আরো ট্রেনিং দরকার, দরকার কাউন্সেলিং-দরকার এই ধরনের কাজের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল আরো বেশী করে বসানো।
নইলে বি এস এফ, ভারতের লজ্জার আরো অনেক বেশী কারন হবে।