জাকির কিছুদিন হল নামায শুরু করেছে! সামনাসামনি বাহবার থুবড়ি ছোটালেও সবার মনেই বিরাট প্রশ্ন: ‘’কি হয়েছে জাকিরের? এমন কিছু ঘটেছে, যেটা আমরা জানি না?’’ সবাই যে যার মত এর উত্তর সন্ধানে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়লেও, জাকিরের কলিগরা জানে আসল ব্যাপারখানা! জাকিরকে প্রমোশনের জন্য ডেকেছে; আর সপ্তাহ বাদেই সে মাহেন্দ্রক্ষণ। এই প্রমোশনটা জাকিরের জন্য মহাগুরূত্বপূর্ণ- হয়ে গেলেই বাড়ি-গাড়ির এলাউন্স! বিশেষ করে ঝকঝকে-তকতকে একখানা গাড়ি- ভাবতেই জাকিরের শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ে! ছোটবেলায় গাড়ি নিয়ে সে কত খেলেছে আর ভেবেছে একদিন তার সত্যি সত্যি গাড়ি হবে! বার বার হাতছানি দেয়া সেই স্বপ্ন যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য জাকির স্রষ্টাকে দুহাত তুলে আকুলভাবে ডাকতে থাকে! সবচেয়ে কষ্ট হয় ফজরের সময়! কি যে অসহ্য যন্ত্রণা! তবু প্রাণপণ চেষ্টা করে ফজরের নামাযটা যথাসময়ে আদায় করার জন্য! তবে শুধু নামায পড়েই দায়িত্ব শেষ করে না জাকির; নিয়ম করে বিভিন্ন সংখ্যায় বিভিন্ন সুরা-কেরাত-দোয়া পড়ে। আর যখন মোনাজাত ধরে, তার ঐ হাত যে কখন নামবে কারো পক্ষেই তা ঠাহর করা সম্ভব হয় না!

পুরো অফিসেই জাকিরের কদর বেড়ে গেছে বহুগুণ! অফিসের সবাই যেন আগের চেয়ে একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জাকিরকে! যদিও কাদের নামে সম বয়সী ও সম পদমর্যাদার এক কলিগ এর ব্যতিক্রম। জাকিরের কানে এসেছে, কাদের নাকি অন্যদের বলেছে, ‘’প্রমোশন সামনে রেখে জাকিরের এই নামায আল্লাহর কাছে আদায় হবে না!’’ ‘আল্লাহর কাছে কি আদায় হবে আর হবে না, তা তুই বলার কে ? তুই কি আল্লাহর দূত ?’-জাকির মনে মনে রাগে গর্জাতে থাকে। তবে ওর নামায শুরুতে কাদেরের এই শ্লাঘার কারণ উপলব্ধি করতে পারে জাকির! কাদের হচ্ছে এই অফিসের সবচেয়ে রেগুলার নামাযী। কেউই এখন পর্যন্ত কাদেরকে নামায ছাড়তে দেখেনি। তাছাড়া, কাদের খুব ভদ্র ও শান্ত গোছের। কারো সাথে বিবাদে জড়ায় না। এজন্য পুরো অফিস জুড়েই কাদেরের একটি ‘ভাল-মানুষ’-সুলভ ইমেজ রয়েছে! কাদের হয়ত ভাবছে জাকির তার এই ইউনিক ইমেজে ভাগ বসাবে! তবে সুখের কথা হল, কাদেরের বিষোদগার অফিসের কারো সমর্থন পায়নি। বরং সবাই এখন কাদেরকে আগের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছে।

যাইহোক, অফিসের সবার এই অতিরিক্ত মনোযোগে খুশিতে গদ গদ হয় জাকিরের উৎসাহ বেড়ে যায় বহুগুণ। তার ঘড়ি যেন ওঁত পেতেই থাকে নামাযের সময়কে ধরার জন্য! সময় হলেই সে গুরুত্বপূর্ণ-গুরুত্বহীন সব কাজ ফেলে পড়িমরি করে ছুটে ওযুর উদ্দেশ্যে। ওযু করে ফিরতে ফিরতে সবাইকে নামাযের আহবান করতে থাকে (সে জানে দাওয়াতের এই কাজটি তার ইবাদতকে আরো বেশী ফলদায়ক করবে স্রষ্টার কাছে!)। কিন্তু দেখে, অনেকেই ‘হ্যাঁ’, ‘হু’ করে সাড়া দিলেও নামাযে আসছে না! জাকির এক নতুন ফন্দি আঁটে। অফিসে যদি জামাতের আয়োজন করা যায়, তা হলে সবাই বাধ্য হবে আসতে! বসের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে।

নামায পরার সিদ্ধান্তটা যে কতটা ইফেক্টিভ হয়েছে, তা আজ বুঝতে পারে জাকির। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বসের প্রশংসা পায়। জাকিরের বস সিদ্দিক সাহেব পঞ্চাশোর্ধ শক্ত-সমর্থ লোক। সারা জীবন স্ত্রীর সকল সুমন্ত্রনা-সদুপদেশ উপেক্ষা করে চললেও, গত দু’বছর হল সে স্ত্রীর অনুরোধে নামাজ ধরেছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু সালামের ক্যান্সারে মৃত্যু যেন তার চোখ খুলে দিয়েছে! অনেক তো হল, এইবার শুরু করা উচিত। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন সে পুরোই রেগুলার। যাই হোক, নিজের চেম্বারে জাকিরকে দেখতে পেয়েই সিদ্দিক সাহেব বলতে থাকে, “জাকির, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। দেখে নিও, নামায তোমার জীবনে স্থিরতা আনবে। এখন হচ্ছে তোমার সাধনার সময়। যদি লেগে থাক, অধ্যবসায় কর, তাহলে অনেক উপরে উঠবে। তোমার মত বয়সে আমরা তো শুধু আনন্দ-ফুর্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। সব সময় তক্কে তক্কে থাকতাম অফিস থেকে বেরুনোর। অফিস থেকে সরাসরি বন্ধুদের আড্ডায় চলে যেতাম। অনেক সময় কাটিয়েছি বারে। কোনদিন গভীর রাতের আগে বাড়ি ফিরতে পারতাম না। কিন্তু ঐসব করে জীবনটাকে ধ্বংস ফেলেছি। আজ আমার কোন কর্পোরেট হাউসের সিইউ থাকার কথা; অথচ দেখ, সামান্য ম্যানেজারের লেবেল লাগিয়েই চাকরি ছাড়তে হবে!’’ সিদ্দিক সাহবের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। একসময় মওকা বুঝে জাকির বসকে জামাতে নামায আয়োজনের কথাটা পাড়ে। বস অসম্ভব খুশি হয়, ‘’খুব ভাল প্রস্তাব। এতে অফিসের সবার ভিতর বন্ডেজ বাড়বে। ফলে টিম ওয়ার্কের মোটিভেশনও বাড়বে। তুমি ব্যবস্থা কর। আমি আছি তোমার সাথে।“

পরেরদিন সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাকির। জামাতের আয়োজন করতে গিয়ে অন্যান্য সব গৌণ কাজের ফাইলগুলো সরিয়ে রাখতে হয় ওকে। অফিস নোট করে সবাইকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেয় জাকির। এখন থেকে অফিসের কোন মেইল সদস্য যোহর আর আসর নামাযের সময় ডেস্কে থাকবে না। সবাই দল বেঁধে নামায পড়বে। তবে সমস্যা দেখা দিল, জামাতের সময় যদি কোন গেস্ট আসে, তখন তাদের কে এটেন্ড করবে তা নিয়ে। তবে সমাধানও বেরুল জাকিরের মাথা থেকে; সিদ্ধান্ত হল, মহিলা কলিগরা জামাতের সময় অফিসে আসা গেষ্টদের এটেন্ড করবে। আরো বড় সমস্যা দেখা দিল নামাযের জায়গা নিয়ে। জামাতে নামাযের জন্য বড় পরিসরের কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া গেল না অফিসে। তখন জাকিরের মাথা থেকে আবার আইডিয়া বেরুল। গেষ্টদের বসার সোফাগুলো সাময়িকভাবে সরানোর সিদ্ধান্ত হল। জামাত তো মাত্র কয়েক মিনিট হবে। ঐ সময়টুকু গেষ্টরা না হয় দাঁড়িয়েই থাকবে! যোহরের সময় পুরো জায়গাটা জুড়ে বিছিয়ে দেয়া হল চটের জায়নামাজ।

যথাসময়ে নামাযের স্থলে গিয়ে জাকিরের চোখ তো ছানাবড়া। অন্যদিন হাজার ডেকেও যাদের আনা যায় না, আজ তারা এমনকি জাকিরের আগেই এসে হাজির! সব অফিস নোটের ডাইরেক্ট অ্যাকশান। বসের ব্যাড বুকে কেউ থাকতে চায় না- মনে মনে হাসে জাকির। কাদেরকেও দেখতে পায় কিছু দূরে। মুখ কাঁচুমাচু করে রেখেছে। কারণটা সহজেই অনুমেয়। কাদেরের এই মুখভঙ্গি দারুণভাবে উপভোগ করে জাকির। কিছুক্ষণ বাদেই সিদ্দিক সাহেব এসে হাজির হয়। জাকিরকে দেখতে পেয়েই মুখমণ্ডল প্রসারিত হয় তার, “সত্যি, জাকির তোমার ভিতরে স্ট্রং লিডারশীপ কোয়ালিটি রয়েছে! তুমি অনেক উপরে উঠবে!’’ জাকির বলে, ‘’স্যার, আপনি ইমামের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান। নামাযের সময় প্রায় হয়ে এসেছে।‘’ সিদ্দিক সাহেব জিহবায় কামড় দেয়, ‘’মাত্র দু’বছর হল নামায ধরেছি। সারা জীবন যে কত পাপ করেছি, তার কোন ঠিক নেই। তুমি বরং ইমামতিত্ব কর; আজকের জামাতের কৃতিত্ব তো তোমারই!’’ অগত্যা জাকিরকে ইমাম হতে হয়; মুখে মৃদু বিব্রত হওয়ার ভান করলেও জাকির খুশিতে ডগমগ হয়। বসকে পিছনে রেখে পুরো অফিসের সবার ইমামতিত্ব করছে সে; যতবারই ভাবছে বিগলিত হচ্ছে মন, সাথে সাথে কণ্ঠও। সুরার সুর হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকের যে ধীর এবং ভাঙ্গা-ভাঙ্গা। জাকির প্রাণপণ চেষ্টা করেও সুরের বিকৃতি রোধ করতে পারছে না।

পরেরদিন সকালে জাকির অফিসে বসে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর চর্বিত-চর্বণ করছিল। অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে মন, গাড়ির স্বপ্নকে এখন আর দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে না। সিদ্দিক স্যার ওকে হাইয়েস্ট মার্কস দেবেন নিশ্চিত! সুখানুভূতিতে নয়নটা প্রায় মুদে আসছিল, এমন সময় ডাক পড়ে বসের। রুমে যেয়ে দেখে আরও কিছু সিনিয়র কলিগ সেখানে অবস্থান করছে। জাকিরকে দেখতে পেয়েই সিদ্দিক সাহেব খুশী হল, “শোন, তোমাকে একটা কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামীকাল এমডি স্যার আসছেন। এমনিতে উনাকে কয়েকবার আসতে বলেছি। কিন্তু ব্যস্ত থাকার কারণে আসতে পারেন না। আগামীকাল শুক্রবার উনি আমাদের অফিসের সামনে দিয়ে যাবেন একটা প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে! তো স্যার বলেছেন, তিনি আমাদের অফিসটা একবার ঘুরে যাবেন। তোমার লিডারশীপ স্কিল বিবেচনা করে স্যারকে এসকোর্ট করার মূল দায়িত্ব তোমাকেই দেয়া হচ্ছে!’’ জাকির মুখে সিরিয়াস হওয়ার ভান করলেও ভিতরে ভিতরে উল্লাসে ফেটে পড়ছে! ছুটির দিনটা মাটি হবে, এটা ঠিক। কিন্তু এমডি স্যারকে কাছে পাওয়া বা তাকে সামলানোর মূল দায়িত্ব হাতে পাওয়া- এ তো মেঘ না চাইতে শুধু জল নয়, বরং বৃষ্টির অবিরাম ধারায় সিক্ত হতে চলেছে সে!

শুক্রবার সকাল। ফিটফাট কেতা দুরস্ত পোষাকে জাকিরকে পুরো সাহেব সাহেব লাগছে। অন্য সবাইও মোটামুটি ফরমাল ড্রেসে এসেছে। শুধু কাদের নীল কাজ করা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে এসেছে। এ ধরনের পোশাকে আসার জন্য বসের কাছে ইতিমধ্যে বকুনিও খেয়েছে। কাদের অবশ্য মৃদু প্রতিবাদ জানিয়েছিল, ‘ছুটির দিনে ইনফর্মাল পোশাক পড়লে কি এমন ক্ষতি?’ কিন্তু স্যারের তোপের মুখে তা ধোপে টিকেনি। যা হোক, যথাসময়ে এমডি স্যার এসে হাজির হলেন। গাড়ি থেকে নামতেই জাকির লম্বা সালাম দিয়ে লম্বা দেহটাকে নিয়ে এমডি স্যারের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে পড়ে। এরপর করমর্দন পর্ব চলে। দারোয়ানকে গেট থেক আগেই সরিয়ে দিয়েছে। জাকিরকে আজ পার্টটাইম দারোয়ানের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু দারোয়ানের কাজে অনভ্যস্ত টেনশান করতে থাকে কিভাবে স্যারকে সর্বোচ্চ সন্মান দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকানো যায়! স্যার যেহেতু হাঁটতে পারে, সেহেতু স্যারকে তো ধরে উঠানোর কোন সুযোগ নেই। তাই আর কোন উপায় না দেখে স্যারের হাত থেকে ছোট ডায়েরিটা অনেকটা জোর করেই ছিনিয়ে নেয়। জাকির থাকতে স্যারকে ডায়েরি বহন করতে দেয়ার মানেই হয় না! এরপর আশে-পাশের কলিগদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্যারকে নিয়ে সে উপরে উঠতে থাকে। এ সময় স্যার জাকিরকে টুকটাক প্রশ্ন করে। যেমন, নাম কি, কি কাজ কর ইত্যাদি। জাকির জানে, সময় বার বার আসে না। নিজের সম্পর্কে যতটা বাড়িয়ে বলা যায় বলতে থাকে। ওকে ছাড়া যে এই অফিস মুহূর্তেই অচল হয়ে যাবে, তা জানাতে ভুলে না সে। কত কিছু যে তাকে এক হাতে সামলাতে হয়, তার ছোট্র একটি ফিরিস্তি (যা আগেই যত্ন করে বানিয়ে রেখেছিল এবং কয়েকবার রিহার্সেলও করেছিল) দিয়ে দেয় ঐ সময়ের মধ্যেই। এরপর স্যারকে সিদ্দিক সাহেবের রুমে নিয়ে যায়।

সিদ্দিক সাহেব আর স্যারের কথার ফাঁকে স্যারদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাকির! স্যারদের চা-নাস্তা সে নিজেই বহন করবে। এমডির সামনে টি বয়দের অন্তত নেয়া যায় না! এসময় হঠাৎ কাদের এসে বলে, ‘জাকির ভাই, জুমার নামাযের সময় হয়ে গেছে। নামায পড়তে যাবেন না?‘ ভুত দেখার ভঙ্গিতে জাকির উত্তর দেয়, ‘’স্যার যে কথাটা বলে, ঠিকই বলে, আপনার কমন সেন্স বলে আসলেই কিছু নেই! স্যারদের ফেলে রেখে আমরা যাব নামায পড়তে?” কাদের স্তম্ভিত হয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে! সর্বশেষ কবে জুমার নামায মিস হয়েছে, তা মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হ্য় সে! প্রাণটা ফেটে যায়, তবু কোন প্রতিবাদ করে না। ‘খোদাই বিচার করবে!’ এই ভেবে সে নিশ্চুপ হয়ে যায়! ওদিকে জাকির ট্রে নিয়ে স্যারদের রুমে ঢুকে। স্যারদের জন্য কাপে চা ঢালতে থাকে! এরপর অনেকটা রুকু করার ভঙ্গিতে শরীরটাকে সামনের দিকে অনেকখানি নুইয়ে এমডি স্যারের হাতে কাপটি তুলে দেয়! এরপর স্যারদের সামনে পরবর্তী নির্দেশের জন্য দুহাত বেধে অতিশয় ভক্তিভরে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যারদের মধ্যে অফিসের নানা ভাল-মন্দ নিয়ে কথা চলতে থাকে। অফিসের টার্গেট মনে করিয়ে দিয়ে এক সময় এমডি স্যার বিদায় নেয়ার কথা বলেন। উনাকে একটা বিয়ের প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে হবে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। স্যারের বিদায় পর্ব সাফল্যের সাথে সমাধা করার জন্য ব্যগ্র হয়ে পড়ে জাকির। সবশেষে, যখন স্যারকে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে যাবে, তখন হঠাৎ করেই স্যারের পায়ের ধুলো নেয়ার ঝোক মাথায় চেপে বসে জাকিরের। এ বিষয়টা ওর মাথায় ছিল না। তাই রিহার্সেলও করেনি। কিন্তু সময় বার বার আসে না। তাই ইচ্ছেকে অপূর্ণ রাখে না সে। পদধুলি নেয়ার সময় জাকিরের সারা শরীরটা অনেকটা সিজদার মতই এমডির পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে!

ঘড়িতে তখন দুটো বেজে তিরিশ মিনিট। এমডি স্যারের গাড়ির চাকা চলতে শুরু করেছে। ওদিকে নামাযের অন্তিম লগ্ন চলছে! কিন্তু জাকিরের সেদিকে খেয়াল নেই। ধ্যানমগ্ন নামাজির কিবলা দর্শনের মতই একদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে সে পথের দিকে যে পথ দিয়ে এমডি স্যারের গাড়ি আস্তে আস্তে বিলীন হচ্ছে বিশ্বরোডের বিশাল যানসমুদ্রে!