মুক্তমনায় প্রকাশ করা যেকোন লেখা লেখকের নিজ চিন্তার প্রকাশ, ওয়েবসাইট বা তার সাথে প্রত্তক্ষভাবে জড়িত কেউ য়যতার জন্য দায়বদ্ধ নয়।

(কোনো লেখা পোস্ট করার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তার বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষ আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজের মতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাঠকের য়যকাছে সুস্পষ্টভাবে নিজেকে তুলে ধরা। মুক্তমনা পরিবারের সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি কারন উপায় নেই আমার কারো প্রশ্নের জবাব দেবার। ধন্যবাদ দিয়ে আমার বন্ধুটিকে আর ছোট করতে চাই না যে তার শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার কিছু না বলা কথা মুক্তমনায় বলে যাবে। অন্তত চিন্তাগুলো ছড়িয়ে থাকুক এই সুন্দর পৃথিবীতে।)

আরে! তুমি তেমন কোনো বই পড়োনি বলছো, তাহলে নাস্তিক হইলা ক্যামনে??!
বছরের শুরুর দিকে জনৈক বন্ধুর এমন মন্তব্যে বিনা দোষে চড় খাবার মতন চমকে উঠেছিলাম। প্রায় ২৬ বছরের এই ছোট জীবনে যদিও কোরান শরীফ তিনবার খতম (reading without understanding) দেয়া এবং পুরো সূরা ইয়াসিন মুখস্ত করা হয়েছিল, কখনো বুঝিনি আমার দৈনন্দিন জীবনে ঈশ্বরের অবস্থান কোথায়। কখনও চিন্তা করার প্রয়যয়োজনও মনে করিনি এমন কেউ কি আদৌ আছে কি না। একাডেমিক জীবনে বেশ সফল এবং প্রচুর ফিকশন ও নন-ফিকশন সেই বন্ধুর কথার প্রেক্ষিতে তার তুলনাতে বলতে গেলে প্রায় অশিক্ষীত আমার নয় মিনিটের চিন্তার ফসল এই লেখা।

তারা বলে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি যেকোনো সময়ে, যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, যা উক্ত বৈশিষ্টকেই বুঝায়। খুব সাধারন ভাবে বলতে গেলে শক্তি বলতে আমরা কোনো কিছু করার সামর্থকেই বুঝি। এই সামর্থ নির্ভর করে উক্ত বিষয়/ঘটনা/অবস্থান যার উপর শক্তি প্রয়োগের প্রশ্ন আসে তার সম্পর্কিত জ্ঞান বা তথ্যের উপর। আমি যত জানি আমার ক্ষমতা বেশি হবার সম্ভাবনা তত বেশি, এর সাথে যদি সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে, ভিত্তি করে আমি কোন ঘটনা প্রবাহে তারতম্য ঘটাতে পারি তবেই আমাকে শক্তিমান বলা যাবে। তারতম্য ঘটানোর মাত্রার সামর্থের উপর নির্ভর করবে আমার ক্ষমতার মাত্রা। সর্বশক্তিমান হবার জন্য তাই দুটি শর্ত পূরন বাঞ্ছনীয়ঃ

প্রথমত, যেকোনো বিষয় সম্পর্কে সম্ভাব্য সবরকম জ্ঞান তথা তথ্য জানতে হবে। আরেকবার বলি, সবকিছুর সবকিছুই জানতে হবে, এমন কিছু যা আছে বা ছিলো বা হতে পারে তা না জানলে চলবে না। সব জানতে হবে, সব সব সব।
তারপরে, উক্ত সম্ভাব্য সবরকম জ্ঞান তথা তথ্য ব্যবহার করে যেকোনো পরিস্থিতিকে নিজের চাওয়ামতন সম্পুর্নভাবে, বিনা বাধায় পরিবর্তন করার সামর্থ।

চিন্তার এমন সময় ধাক্কা খেতে হয়। আমি যদি সবই জানি যেখানে সব মানে সব সব সব, অতীতের সব, বর্তমানের সব, পরে কি কি হতে পারে তার সব, প্রত্যেকটা বিষয়ের সম্ভাব্য সবরকম অবস্থান যদি আমার জানা থাকে যেখানে আমার অজানা কোনো কিছু থাকার অবকাশ থাকতে পারেনা সেইখানে পরিবর্তন করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? আমি তো সবই জানি, পরিবর্তন করলে কি হবে তাতো আমি জানি, কি দরকার এই ক্ষমতার! আর যদি এমন কোনো ক্ষমতা থেকেই থাকে, তাহলে তা দিয়ে করবটা কি আমি? আমি তো সবই জানি, সব সব সব, সবকিছু যা সম্ভব। কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাওয়া মানে এমন কিছু পরিস্থিতি যা আমার পছন্দ না, আমি চাইনা। আমি পরিবর্তনের মাধ্যমে আমার কাংখিত পরিস্থিতি চাই যা আমার ছিলনা। আমি যদি সর্বশক্তিমানই হয়ে থাকি তাহলে ব্যাপারটা কি এমন হওয়া যুক্তিযুক্ত নয় যে পুরো ব্যাপারটা আমার ইচ্ছা অনুযায়ী হবে প্রথম থেকে যাতে আমাকে আর মাঝে মাঝে খুটি নারতে না হয়???
ঈশ্বর বাবাজী আবার একজন বিশিষ্ট অস্তিত্ত যিনি নিয়ম গড়েন। তিনি যদি সবই জেনে থাকেন তবে তো তার এইটাও জানার কথা যে কোনো এক সময় তাকে পরিবর্তনের খেলায় নামতে হবে। তাহলে গোড়া থেকেই কেনো সব এমনভাবে শুরু না করা যাতে পরে আর খেলতে না হয়?
পরিবর্তনের খেলায় ব্যস্ত বলে ঈশ্বর আমাকে পাঠালেন বান্দার এত এত প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য। উত্তর একটাই, যে সবকিছু জানে তার কোনো কিছু করারই প্রয়োজন নেই। আমি যদি সবকিছু জেনেই ফেলি তাহলে কি আর কোনো কিছুরই প্রয়োজন আছে? সব জেনে থাকলে কোনো কিছু হওয়ার যুক্তি কি? সব কিছু গোলমাল করে দিল হতচ্ছাড়া সময় নামক কটি অদ্ভুত সুন্দর ধারনা। কিছু হচ্ছে, তা আমাদের কাছে ১৪ বিলিঅন বছর হোক আর তার কাছে পিকো সেকেন্ড হোক, হচ্ছে এবং প্রতিটা ক্ষনে পরিবর্তন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। কিছু হচ্ছে মানেই অনিশ্চয়তা, ঈশ্বর যদি সবই জেনে থাকে তবে কোন কিছু ঘটার দরকারই তো নেই, ঈশ্বর আবার কি নিয়ে অনিশ্চিত! সর্বশক্তিমানের প্রথম শর্তই যেখানে পূরন হচ্ছেনা সেইখানে আমার কি আর দরকার আছে পরের শর্ত নিয়ে কাজ করার? ব্যাপারটা কোনো পয়েন্টে ১ম ডেরিভাটিভ শূণ্য না হলে তা সর্বোচ্চ বা সর্বনিন্ম মান দিবে কি দিবেনা তা খতিয়ে না দেখার মতনই সহজ। থিওরেটিকালি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, সবজান্তা বা এই জাতীয় কোনো কিছু থাকতে পারেনা।

এইতো গেল আস্তিক ভাইবোন এবং ভয়াবহ সকল মডারেটদের মতে ক্রমপরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের কথা যা দুই দিন পরপর খালি নিজের ভুল বের করে। এইসব ভুয়া কথা, মানাটাই আসল পরীক্ষা। বাদ দেই অঙ্ক, একটা ঘটনা বলি। একদিন আমার ভাইজান কে নিয়ে গুলশান-২ সিগনালে গাড়িতে বসা। তখন উড়িয়া আসিল কিছু আল্লাহর পেয়ারের বান্দা যাদের ভ্রাম্যমান দোকানে গোলাপ ফুল থেকে শুরু করে অমর্ত্য সেন পর্যন্ত বিদ্যমান, যাদের কিছু আছে পন্য বিনা পয়সা চায়, মানে ভিক্ষুক আর কি। ভাইজান কে বললাম, এই গরমে আমরা গাড়ীতে বসে ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছি আর এই ফুটফুটে বাচ্চাগুলো মাঝরাস্তায় পেটের ভাত যোগাচ্ছে, এটা আল্লাহর কি হিসাব? উত্তরে বমির মতন নাজিল হইল সেই মহান উক্তি আমার অন্তরে, ” ভাইজান, আল্লাহ একেক জন কে একেক ভাবে পরীক্ষা করেন।” সেদিন শুধু একটা কথাই বলেছিলাম তাকে, সকাল থেকে ১২০০ টাকার তেল পুড়িয়েছি গাড়িতে, যেকটা বাচ্চা এই সিগনালে ভিক্ষা বা ফেরি করছে তাদের সবার সারাদিনের কামাই যোগ করলেও ১২০০ টাকা হবেনা। তুমি কি বুঝতে পারছ কি বলছ? কোনো জবাব পাইনি সেদিন।

ঈশ্বর মানতে হলে আমাকে মানতে হবে দারিদ্রতার পিছনে কোনো কারন আছে, যুক্তি আছে, আমি না জানলেও আছে, না বুঝলেও আছে। আমাকে মানতে হবে বৈষম্য, অন্যায় এমন কি একটা ছয় বছরের মেয়ের ধর্ষনের পিছনেও কোনো জাষ্টিফিকেশন আছে! সবকিছু মানা যায়, কিন্তু ধর্ষন কি মানা যায়?

আমার আরেক বন্ধু, ইউনিভার্সিটি পড়াকালীন সময়ে বিয়ে করে, জামাই-বউ মিলে ব্যাংক লোন নিয়ে গাড়িও নিয়ে নেয়। তারপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর ধসের শিকার অনেকের মতন সর্বস্রান্ত না হলেও বাধ্য হয়েছিল গাড়ি ফেরত দিতে। এই গল্প বলার পর সে একদিন চায়ের আড্ডায় বলল, “দোস, আল্লাহ আমাকে চোখে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে বেশি উড়িসনা, আস্তে আস্তে যা। আমাকে গাড়ির শো-রুমে বলা হয়েছিল একটু কম দামিটা কিনতে যার ইন্সটলমেন্ট অনেক কম ছিল, আমি ওইটা কিনলে আজ এত খারাপ অবস্থাতেও আমি গাড়ি মেইনটেন করতে পারতাম, আমার সেই ক্ষমতা আছে। বেশি বেড়ে গিয়েছিলাম, আল্লাহ একটা শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে।” ব্যাপারটা কি এমন নয় যে ও আসলে বলতে চেয়েছে ওর অনভিজ্ঞতা এবং সেই সময়ে টাকা নিয়ে উগ্র মনোভাব নিয়ে ও বেশিদূর যেতে পারত না। অনেক ভুল হয়েছে, বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে, আমি ভুলগুলো বুঝেছি এবং নিজেকে গুছাচ্ছি।

ছোটবেলা থেকে আমাদের ট্রেনিং দেয়া হয় ঈশ্বর নামের একটি অপ্রয়োজনীয় মশাল নিয়ে হাটতে যা যতটা না বেশি আলো দেয় ধুয়া ছড়ায় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি। হাজার হাজার বছর আগে যখন মানুষের জ্ঞানের পরিধি অনেক ছোট ছিল, যখন তারা অত একটা জানত না, বুঝতনা, তখন হয়ত প্রয়োজন ছিল ঈশ্বর ধারনাকে পুজি করে নিজেদের ভয়গুলোকে জয় করার। কিন্তু আজ এই দূর্গন্ধযুক্ত মশাল যা কিনা মানুষের মধ্যে বৈষম্যকে যুক্তিসংত এবং উচিত বলে দাবী করে, তা নিয়ে হেটে নিজেকে নোংরা করে লাভটা কোথায়!

আপনি নিশ্চয়ই বলতে চাননা যে আপনি চুরি করেন না বা করতে চাননা যার একমাত্র কারন আপনি আস্তিক। নিশ্চয়ই আপনি এটাও বলবেন না যে নিজের মাকে ভালবাসার একমাত্র উদ্দেশ্য তার পায়ের নিচের জান্নাত অর্জন করা?

আপনার চেতনাই ঈশ্বর সমতুল্য। নিজেকে বিশাস করতে শিখুন, দুনিয়াটা ভয়াবহ নোংরা হওয়ার পরেও বাস্তবতা অনেক সুন্দর। বাস্তবে ভালোবাসা যায়, কারো জন্য না খেয়ে থাকা যায়, এক পলক দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা যায় এটা জেনেও যে সে আসবে না, দাড়িয়ে আছি যেনেও না।

ঈশ্বর ধারনার মতন একটি সস্তা, অযৌক্তিক এবং সর্বোপরি নোংরা ধারনা থেকে বেড়িয়ে আসার ইচ্ছা আসুক সবার মনে। দুনিয়া থেকে বৈষম্য একটু না, অনেকাংশে কমবে বলেই আমি মনে করি।

আমারও একটা ধর্ম আছে। আমি মিথ্যা বিশাস করি না, আমি মিথ্যা অপছন্দ করি, হয়ত ঘৃনাও করি তা হোক কথা, কাজে বা চিন্তায়। এমন নয় যে আমি মিথ্যা বলিনা কিন্তু চেষ্টা করি না বলতে। সেদিন আমার বন্ধুর বড় বোন যখন আমার হাত ধরে ঝরঝর করে চোখের পানি ফেলছিল এই বলে যে আশিক তুমি কথা দাও আর কোনোদিন আত্নহত্যা করতে চাইবে না, এই কথা আর চিন্তাও করতে পারবেনা; তখনও চেষ্টা করেছি মিথ্যা না বলতে। হাত ধরেছি, কান্না থামেনি, পা ধরেছি, চোখ মুছেছি, কপালে চুমি খাবার পরও হাউমাউ কান্না যখন থামার বদলে যখন ছয় তলা থেকে সাত তলায় উঠি উঠি প্রায়, তখন বাধ্য হয়েই মিথ্যা বলতে হয়েছিল সেদিন।

শুভ বুদ্ধির উদয় হউক
মুক্ত চেতনার জয় হউক

সত্য বলার, সত্য ভাবার, সত্য করার, সৎ সাহস আসুক মানুষের মনে। মানুষের ঈশ্বর মানুষ নিজেই, অন্তত যতটুকু সম্ভব।