কুটিরের প্রাঙ্গণ হতে
আমার পায়ের চিহ্নগুলো কি গেছে মুছে,
আমার নামটি কি সকলের হৃদয় হতে গেছে ঘুচে।
দক্ষিণের তেতুঁল গাছটি
আমার প্রতীক্ষায় আজো কি আছে দাঁড়িয়ে।
পশ্চিমের বিলটি আজো কি আছে আমার পথ চেয়ে—
কবে আমি মুগ্ধ নয়ানে
চেয়ে রবো তার পানে;
কখনো প্রভাতে, কখনো মধ্যাহ্নে, কখনো অপরাহ্নে।
কখনো তার কচিধানে ভরা সবুজরূপ,
কখনো পাকাধানে ভরা সোনালিরূপ,
কখনো ফসল তোলার পর
তার শূন্য ধূসর-রূপ।
নীল জলে ভরা সরোবরগুলো কি
আছে আজো আমার প্রতীক্ষায়,
স্নানঘাটগুলো কি আছে আজো আমার প্রতীক্ষায়;
আমি কবে যাবো তাহাদের পারে
ঝাঁপ দেবো নীল জলরাশির উপরে।
কাটবো সাঁতার এপার-ওপার,
জলকেলীতে দিনমান হয়ে যাবে পার।
কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সূর্যরঙে সেজে
আজো কি দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রতীক্ষায়,
কবে আমি অপলক নেত্রে দেখবো তাদের
আগুনরূপ পাপড়ি হয়ে ঝ’রে পড়ে ধরায়।
ঝোপের ধারের ছোট ছোট অনাদৃত বেলীফুলগুলো
আজো কি বাতাসে সুরভী ছড়ায়,
আজো কি ওরা ফুটে আছে আমার প্রতীক্ষায়,
আড়াল থেকে কি চেয়ে আছে আমার পথপানে
কবে আমি তাকিয়ে রবো মুগ্ধ-নয়ানে।
জামগাছের মগডালে ব’সে বিরহী কোকিলটি
আজো কি ডাকছে কুহুতানে,
চেয়ে আছে কি আমার পথপানে,
কবে আমি সুর মিলাবো তার গানে।
সেই মেঠোপথ, সেই খড়ের কুটির,
সেই আম-কাঁঠাল, নারকেল-সুপরির বন
আজো কি আছে আগের মতন।
ওরা কি আমায় রেখেছে মনে তেমনি ক’রে
যেমনি ক’রে আমি তাদের
রেখেছি আমার হৃদয়ে করিয়া যতন।
খেলার মাঠটি আজো কি আছে আমার প্রতীক্ষায়,
কবে আমি খেলবো সেথায়-
কানামাছি, বৌচি, গোল্লাছুট।
আমার বাল্যকালের খেলার সাথীরা
তোমরা সকলে কি
আজ আমায় গেছ ভুলে।
আমার নামটি কি তোমাদের হৃদয় হতে
উৎপাটিত হয়েছে আজ সমূলে?
পথের ধার, সাগরপার, বন-বাদার,
আনাচ-কানাচ হতে সব জায়গার
পদচিহ্ন মুছে গেছে কি আমার।
সকলের অন্তর হতে
আমার নামটি আজ গেছে কি ঘুচে।
কুটিরের প্রাঙ্গণ হতে
আমার পায়ের চিহ্নগুলো কি গেছে মুছে?
@ তামান্না ঝুমু আক্ষেপ, আকাঙ্ক্ষা,আকুতি , অপেক্ষার আদুরে আস্বাদিত স্মৃতিকাতরতা কবিতার দেহ জুড়ে। এর বিপরীতে আমরা কি জিজ্ঞাসা করতে পারি হুমায়ুন আজাদ এর শুভেচ্ছা কবিতাটির মতো করে –
ভালো থেক ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেক।
ভালো থেক ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেক।
ভালো থেক মেঘ, মিটিমিটি তারা
ভালো থেক পাখি,সবুজ পাতারা….ধন্যবাদ
@আহমেদ সায়েম,
হৃদয়জুড়ে স্মৃতিকাতরতা। সেটাই কবিতায় ব্যক্ত করতে চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ।
অবিরল ধারায় বহমান কবিতা…সত্যি এমন আবেগ সবারই আছে। শব্দ ব্যবহারে একটু পশ্চাৎমুখি মনে হয়েছে। আর একটু আধুনিক হলে ভালো হতো। যাইহোক, সর্বপরি কবিতার গভীরতা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে…
@মাহমুদ মিটুল,
আমার কাছে প্রাচীন কবিতাগুলোই বেশি ভাল লাগে আধুনিক কবিতার চেয়ে। অনেক ধন্যবাদ পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য।
কবিতাটির সাথে অন্য দুটো কবিতার মিল পাই। একটি তাসলিমার- আমি পাখি হয়েও আসবো ফিরে। আর অন্যটি রবীন্দ্রনাথের- যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।
বানানগুলো না হয় একটু যাতনাই দিল, তবু হৃদয় নিংড়ানো কবিতা, মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। (Y) (F) (F)
@আকাশ মালিক,
কবিতাটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে। বানানের বেলায় আমি বেশ দুর্বল। ভুল বানানগুলো ধরিয়ে দিলে ভাল হ’ত। অনেক ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
“বানানের বেলায় আমি বেশ দুর্বল। ”
কবি হতে হলে কিন্তু ভাই বানান এর ব্যপারে আপোষহীন হতে হবে। আমার মত শুধু মন্তব্যকারী ছাড়া বানান এর বেলায় মাফ নাই।নিশ্চই আপনার বই একসময় বেরুবে বা বের হয়েছে, আমাদের মত নিন্দুক বাঙ্গালীদের কেনই বা আগ-বাড়িয়ে নিন্দার সুযোগ দেবেন।কবিতার মূল শক্তিই হোল শব্দ। তাই বানান …ইয়ে মানে মাইন্ড করেন নাই নিশ্চই।আগ বাড়ায়ে উপদেশ দেয়ার ইছায় কিন্তু না…আমিও একটু আধটু মাইনে লিখার চেষ্টা করি আর কি…তাই শেয়ার করলাম। 🙂
@সপ্তক,
স্পস্ট মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
(F) (Y) (Y) (Y)
@রাফি,
ধন্যবাদ।