১.
দীপ প্রতিদিনের মত আজও এলার্ম কলের শব্দে জেগে উঠে এবং স্বভাবসুলভ এলার্ম সুইচ বন্ধ রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। দীপের বাসা থেকে পাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গা দুরাশা মাত্র। বারান্দা থেকে হাত বাড়ালেই পাশের বিল্ডিংয়ের ধাতব দেয়াল ছোঁয়া যায়। সুতরাং, পাখির কলরব, ভোরের হাওয়া আর প্রত্যুষের সূর্য- এ সব এখানে শুধু স্বপ্নেই মেলে। এদিকে দীপের ঘুম কিন্তু আর ফিরে আসে না। তবু কিছুক্ষণ জেগে জেগেই ঘুমানোর চেষ্টা করে। যেহেতু ‘ঘুমিয়ে পড়া’ আর ‘জেগে উঠতে চাওয়ার দ্বন্দ্বে মস্তিষ্ক ক্রমশ ভারি হয়ে উঠতে থাকে, এক সময় অসন্তুষ্ট চিত্তেই বিছানা ছেড়ে দেয় দীপ। তারপর বদ্ধ ঘরের ভিতরই কিছুক্ষণ পায়চারি করতে থাকে। মাথাটা কিছুটা হালকা হয়ে এলে একে একে প্রাত্যহিক কাজগুলো, অর্থাৎ, শেভ, গোসল, ব্রেকফাস্ট ইত্যাদি সেরে ফেলে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। একসময় চোখ চলে যায় সদ্য পরিত্যক্ত বিছানার দিকে। মশারিটা বিশ্রীভাবে ঝুলে রয়েছে। মনে মনে একটা অপরাধ-বোধে ভুগতে থাকে। একটু চেষ্টা করলেই নিজের বিছানাটা গুছিয়ে ফেলতে পারত। আজ আর এক মুহূর্ত সময় নেই। এখন দুলিকেই সব ঝামেলা পোহাতে হবে। ১১ বৎসর বয়সী দুলি ৩ মাস হল ওদের বাসায় কাজ করছে। ইদানীং দীপের মা বেশিরভাগ সময়েই অসুখের কারণে বিছানা ছাড়তে পারে না; আর তাই ক্ষুদ্র ও শীর্ণ দুলির উপর দিয়ে প্রচণ্ড চাপ যাচ্ছে। দীপ মনে মনে পণ করে আগামী কাল থেকে যে করেই হোক নিজের বিছানা গোছানোর কাজ থেকে ছোট্র মেয়েটাকে রেহাই দেবে। এমন সময় মায়ের ডাক শুনতে পায়ঃ ”দীপ, মশারিটা খুলে রেখে যাও।” দীপ আবার অপরাধ-বোধে ভুগতে থাকে। সে যদি ঘরের কাজে কিছু সাহায্য করতে পারত, তাহলে মার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হত। দীপ মাকে বলে, ”একদম সময় নেই আজ। এখনই বেরুতে হবে।” কিন্তু মায়ের ঝাঁঝালো চিৎকার কানে আসে: ”মশারিটা খুলে দিয়ে যেতে কতক্ষণ লাগে? নিজের এই সামান্য কাজটি করতে তোমাকে প্রতিদিন বলে দিতে হয় কেন? তুমি প্রতিদিন মশারি এলোমেলো করে রেখে যাও, আর দুলিকে বাধ্য হয়ে নোংরা পায়ে তোমার বিছানায় উঠতে হয়!”
২.
দীপ রাস্তায় এসে রিকশা খুঁজতে থাকে। আজকাল রিকশা পাওয়া সিএনজি পাওয়ার মতই বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যথারীতি আজও কোন রিকশা পাওয়া গেল না। রিকশাওয়ালারা এমনকি তাকানোরও প্রয়োজন মনে করছে না। মাথা নাড়িয়ে হন হন করে চলে যাচ্ছে অথবা ‘যামু না’ বলে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলছে। আবার কিছু রিকশাওয়ালা দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে। যাইহোক, সময় নষ্ট না করে সোজা হাঁটা শুরু করে দীপ। সরু রাস্তাটা দিয়ে হাঁটাও বিরাট যন্ত্রণা। মানুষ ও গাড়িকে বাঁচিয়ে হাঁটতে হলে বিরাট শারীরিক কসরত করতে হয়। হাটতে হাটতেই নতুন গজিয়ে উঠা বহুতল ভবনগুলোর দিকে চোখ চলে যায়। এই রাস্তাটার দু’পাশে অন্তত ১৫টা বহুতল ভবন হচ্ছে। কোন পুরনো তিন তলা/চারতলা বিল্ডিং আর ফাঁকা নেই। সবগুলোতেই ডেভলপারদের নয়ন মনোহর আর মন জুড়ানো সব সাইনবোর্ড বসে গেছে। নির্মানাধীন বিল্ডিংগুলোতে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। শত শত নির্মাণ শ্রমিকের পদচারণায় মুখরিত। আর এই বিল্ডিংগুলোর অদূরেই রয়েছে, কিছু টিন-শেডের ঘর, যেগুলির ছাদ হাত দিয়েই ছোঁয়া যায়। ঘরগুলো থেকে প্রায়ই উঁচু স্বরে উচ্চদরের গালি-গালাজ শুনতে পাওয়া যায়। দীপ ভেবে পায় না, যেখানে পুরনো তিন-চারতলা বিল্ডিংগুলো ডেভলপারদের হাত থেকে রেহাই পায়নি, সেখানে এই নিতান্তই অপাংক্তেয় ঘরগুলি কিভাবে এখন অবধি টিকে আছে! এমনি সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎই একটি গোলযোগের শব্দ কানে আসে। ঘাড় ঘুরিয়েই দেখতে পায় চিরচেনা দৃশ্য। এক লোক সমানে চড়-থাপ্পড় মেরে যাচ্ছ এক রিকশাওয়ালাকে। অন্যদিকে রিকশাওয়ালাটি বার বার একই কথা বলে যাচ্ছে: ”আপনি আমার শরীরে আর হাত দিবেন না কইলাম!” রিকশাওয়ালা বেচারা বয়সে নিতান্তই ছোকরা; কিন্তু চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বেরুচ্ছে। আক্রমণকারী লোকটি আবার আঘাত করতে এগিয়ে আসে: ”এই জানোয়ারের বাচ্চা, ২৫ টাকার ভাড়া কোন সাহসে তুই ৬০ টাকা চাইলি?” ছোকরা কিছুটা তেজ দেখিয়ে জবাব দেয়: ”আমি যেইডা ন্যায্য মনে করছি, হেইডাই চাইছি। আপনের না পোষাইলে যাইবেন না।” লোকটি এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে: ”তুই আমারে ন্যায্য শিখাস? গায়ের লগে তো এখনো ড্রেনের গন্ধ লাইগা আছে, শুয়ারের বাচ্চা।” এই বলেই আবার চড় মারতে উদ্যত হয়। রাস্তার বহু লোক তখন এই তামাশা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিল। অন্যদিকে, দীপের গা গুলিয়ে আসছিল। দীপ ভাবে, কোনভাবে যদি এই অশ্রাব্য খিস্তি-খেউরের দেশ থেকে বের হতে পারত! ওর চোখে তখন আমেরিকার নীল আকাশ, ঝকঝকে প্রশস্ত রাস্তা, সুসজ্জিত ভবন, বিশাল সব বাগান, লেকের স্বচ্ছ জল….
৩.
দীপের অফিসে পৌঁছতে আজও লেট হয়ে গেল। পরপর তিন দিন এমন হলে হাজিরা খাতায় রেড মার্ক পড়ে যায়। আগামীকাল লেট হলে তাই আর রক্ষা নাই। যাই হোক, ডেস্কে যেয়েই রফিকের খোঁজ করে। রফিক দীপদের অফিসের ম্যাসেঞ্জার। পাশাপাশি, দীপদের অনেক কাজেও হেল্প করে। জানা গেল, রফিক আজ আসতে পারবে না; কারণ ওর ছ’মাসের শিশু বাচ্চাটি নাকি নাকি খুব অসুস্থ। দীপ খবরটা শুনে একটু দমে গেল। আজ রফিককে ওর খুব দরকার ছিল। কিন্তু কি করা! অফিসের কাজ তো আর বন্ধ থাকতে পারে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজে ডুবে গেল। একটানা কাজ করতে গিয়ে খেয়ালই করেনি, কখন পেটে খিদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদিও ঘড়িতে তখন কেবল মাত্র সোয়া একটা, তবু পেটটাকে শান্তি দিতে হাতের কাজ যা ছিল সব ফেলে রেখে ডাইনিং রুমের দিকে দৌড়াল। ভাগ্য ভাল বলতে হবে। ডাইনিং রুম প্রায় ফাকাই ছিল, অন্যান্য দিনে তো জায়গাই পাওয়া যায় না। অবশ্য এত তাড়াতাড়ি কেউ আসারও কথা নয়; শুধুমাত্র ম্যাসেঞ্জার রফিকের পরিবর্তে আসা জাকির মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছিল তখন। ম্যাসেঞ্জারেরা সাধারণত অফিসারদের ঘণ্টা খানেক আগেই খেয়ে নেয়। কিন্তু জাকির নতুন বলে এই নিয়ম সম্পর্কে হয়ত জানে না। দীপ এ ব্যাপারে আর মাথা না ঘামিয়ে খেতে বসে গেল। কিছুক্ষণ পর দীপের সহকর্মী রেজাকে দেখতে পাওয়া গেল, ডাইনিং রুমের দিকেই আসছে, মনে হয় তারও আজ তাড়াতাড়ি খিদে পেয়েছে। দীপ মনে মনে প্রমাদ গুনল। রেজা ইতিমধ্যেই জাকিরের অনভ্যস্ত ভুলভাল কাজে খুব রেগে আছে। এখন আবার ডাইনিং রুমে দেখে কি কাণ্ড ঘটায়, কে জানে! দীপের আশংকাই সত্যি হল। জাকিরকে দেখতে পেয়েই রেজা ক্ষেপে গেলঃ ”এই, তুমি এখানে কেন?” বয়সে রেজার থেকে অনেক বড় জাকির কিছুটা থতমত খেয়ে বলল: ”স্যার, একটু সময় পাইছিলাম। ভাবলাম তাড়াতাড়ি খাইয়া নেই।” রেজা এই উত্তরে সন্তুষ্ট নয়। নাছোড়বান্দার মত বলল: ”তোমার তো সাহস কম না; তুমি স্যারদের সাথে এক টেবিলে খেতে বসছ! ভাল চাইলে অন্য স্যারেরা আসার আগেই উঠে যাও।” এ কথার পর জাকির আর দেরি করল না; উঠে গেল খাওয়া শেষ না করেই; তবে ভঙ্গুর গলাতে রেজাকে শুনিয়ে বলতে লাগল: ”আপনাদের মত আমরাও এখানে চাকরি করি, স্যার। আপনাদের যে মালিক বেতন দেয়, আমাদেরও সেই মালিকই বেতন দেয়। আপনাদের চেয়ে আমাদের আয় কম হইতে পারে, কিন্তু পরিশ্রম কইরা হালাল খাই।” জাকিরের এই দীর্ঘ শ্লেষমিশ্রিত বয়ানে রেজা পুরোই তেতে উঠল: ”এই তোর লম্বা লম্বা কথা থামাবি? জানিস, একটার বেশি ফোন দেয়া লাগবে না তোর কোম্পানিকে। সংগে সংগে তোর চাকরি চলে যাবে।” জাকিরও বেয়াড়া ভঙ্গিতে বলে উঠে: ”যান, যা করার করেনগা। জাকির চাকরি নিয়া ডরায় না; আমাগো কয় টাকার চাকরি? গেলেই কি, আর না গেলেই কি! চাকরি নিয়া ডর তো আপনেগো!” নির্বাক দীপ চেয়ে চেয়ে সবই দেখছে। আর ভাবছে কখন এই অসুস্থ বাহাস শেষ হবে! তবে ঘটনার এত দ্রুত সমাপ্তি ঘটল না। একটা ম্যাসেঞ্জারের বেয়াদবিতে চরম ক্ষুদ্ধ রেজা, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শফিউল হকের কাছে নালিশ করে বসল। সব শুনে শফিউল সাহেব রেজার প্রতিই যেন বিরক্ত হল: ”আগেই বলেছি, এসব ব্যাপার নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। বেয়াদবি করলে এদেরকে সোজা অফিসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন।” রেজা বলল: ”ওর মত মানুষ আমার সাথে ঐভাবে কথা বলার সাহস পায় কি করে, স্যার? আপনি কি এরপরও ওকে আমাদের অফিসে বহাল রাখবেন?” স্যারের উত্তর: ”ওরা আবার মানুষ হল কবে থেকে? ওরা এক একটা গরু-ছাগল। এখন ওদের যদি ভালভাবে চড়াতে না পারেন, সেটা আপনারই ব্যর্থতা।” দীপ অসুস্থ বোধ করছিল। এ দেশের আলো বাতাস ওর কাছে ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে!
৪.
প্রায় ২৫ বছর পরের কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের একটি সুসজ্জিত ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছে দীপ। সঙ্গে আছে স্ত্রী রুপা ও নাতনি জাফরিন। যথারীতি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পছন্দের চ্যানেল নিয়ে তুমুল ঝগড়া চলছে। দীপের প্রিয় নিউজ আর স্পোর্টস চ্যানেল; অন্যদিকে, রপার পছন্দ ড্রামা সিরিয়াল। যাই হোক, দীপের মলিন মুখ দেখে রূপা ছাড় দেয়; সিএনএন নিউজ চ্যানেলে এসে রিমোট স্থির রাখে। কিছুক্ষণ পর স্ক্রিনে এমন একটি গা হিম করা দৃশ্য ভেসে উঠে, যার জন্য তারা মোটেই প্রস্তুত ছিল না।
সিএনএনের বিশেষ রিপোর্টার মিঃ রিচার্ড স্মিথ বাংলাদেশ থেকে রিপোর্ট করছেন:
“বাংলাদেশের এই দৃশ্য সত্যি অবিশ্বাস্য! হাজার হাজার নিম্নবিত্তের মানুষ বিত্তশালীদের ঘর-বাড়ি লুটপাট করছে; তারা সংখ্যায় এত বেশি যে, সরকার তাদেরকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এমনকি প্রশাসনের নিম্ন আয়ের বঞ্চিত মানুষেরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সবচেয়ে বীভৎস হল, রাস্তায় অনেক অভিজাত মানুষের লাশ পরে থাকতে দেখা গেছে। ধারনা করা হচ্ছে: তাদেরকে বটি, রামদা, চাপাতি, ছুরি ইত্যাদি হাতের কাছে যখন যা পেয়েছে, তাই দিয়েই কুপিয়েছে নিম্নশ্রেণীর মানুষ। অবস্থা এতটাই জটিল যে, জাতিসংঘ এই মুহূর্তে কোন শান্তিরক্ষী বাহিনীও পাঠাতে পারছে না। বাংলাদেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রকৃতি ও চরিত্র অনেককেই ফরাসী বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা কয়েকশ বছর পূর্বের ফরাসি বিপ্লব বাংলাদেশে ফিরে এল কি করে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন..।”
আগাম ভাবনা যথেষ্ট করে না ভাবলে আর মোটামুটি বাস্তব চিন্তায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নিয়ে প্রস্তুতি না নিলে কি হবে ভাবতেও পারিনা। আপনি কিছুটা হলেও ভেবেছেন, ধন্যবাদ, সেটুকু আশার কথা।
সংগঠিত ভাবনা ভাববার কথা কাদের? তারা ভাবছে কি? এত ঘনবসতির বাংলাদেশের ভেতর দিকটাতে যে নোনাজল ঢুকে চাষবাস কিছুই করতে দেবে না, তারা ভাবছে কি? ফরাসী বিপ্লবের মত বিপ্লব হয়ে গেলে……………..তারপর? তারপর, দুষ্টপ্রভূ যারা শুষে খায়, তারা বাংলায় খাবার খুঁজে দেবার নাম করে লূটেপূটে সব খাবে না নাকি? অবশিষ্টে বাংলার মানুষ বেঁচে থাকবার অবলম্বন পাবে কি? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষ কোথায় যাবে, পথ ছাদ পানিজল, কিছু তারা খুঁজে পাবে কি?
আশা কোথায়, কে দেবে আশা। নতুনদের মধ্যেই হয়ত রয়েছে আশার মশালগুলো, যে আলোতে বাকিরা এগুবে, ভাববে, সাথী হবে এবং করবে।
ঘুম ভাঙানিয়া লেখা দেখলে ভালো লাগে, বেশ অনেক ভালো লাগে
@কাজী রহমান,
অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্য এক সময় বিস্ফোরিত হবে বলে আমার ধারণা। বাংলাদেশে এখন আশংকাজনক হারে দুটি জিনিস বাড়ছে; এক, সহায়-সম্বলহীন মানুষ, দুই, প্রাইভেট কার। রাস্তায় এ দুয়ের ভিড় লেগেই থাকে আর আমাদের মাঝ বরাবর অতি সতর্ক পথ পাড়ি দিতে হয়। তবে আমাদের মত মাঝ পথে চলা লোকের সংখ্যা কমে গিয়ে আশে-পাশে আশ্রয় নিচ্ছে, আর উপরের শ্রেণীদুটো ক্রমশ নিকটতর হচ্ছে। যখন গায়ে ঠুকাঠুকি লেগে যাবে, তখনই জ্বলে উঠবে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।
আশার মশাল নতুনরাই জ্বালবে, কিন্তু মশাল জ্বালিয়ে দীর্ঘ আঁধার রাত পাড়ি দিতে নতুনদের দরকার শক্তি, সাহস আর মনের জোরের অফুরান সঞ্চয়। পুরনোদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা নতুনদের শক্তি-সাহসের গোলা ভরে দিতে পারে সহজেই। ভাল থাকবেন।
জীবনের যে টুকরো ঘটনা গুলো আমাদের মনে একটা তীরের মতন বিঁধে, হ্রদয়টাকে ভারী করে তোলে, কিন্তু পরিবার আর সমাজের কাছে হার মেনে চুপ করে যাই সেই ঘটনা গুলোকে টুকরো টুকরো করে সুন্দর ভাবে লিখে আমাদের অনেকেরই মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জানিনা গল্পের শেষাংশের সাথে একমত কিনা। মানে, ওমনটা হলে আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া কি হবে তা ভেবেও কোন জবাব পাইনি। তবে আমাদের সবার মাঝে কম বেশি দীপ লুকিয়ে থাকে। আবার অন্য দিকে লুকিয়ে থাকে একজন রিকশাচালকের গায়ে হাত তোলার মতন নিষ্ঠুরতা।
নিশ্চয়ই বলতে হবে না যে – ভালো লাগল। 🙂
@ছিন্ন পাতা,
ঝোঁকের মাথায় প্রায় নির্ঘুম রজনী পার করে মুক্তমনায় লেখাটা ছেড়ে দিয়ে অফিসে চলে যাই। কিন্তু বাসায় ফিরে যখন লেখাটি পড়ি, ভাষার গাঁথুনিটা নিজের কাছেই বড্ড পানসে লাগে। সামান্য পরিবর্তন করেছি যদিও জানি না কাজ হবে কিনা তাতে।
ভাষার ভয়ানক দুর্বলতা স্বত্বেও গল্পের পেছনের ভাবনাটি যে আপনার চোখ এড়িয়ে যায়নি, সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার অনুপ্রেরণা আমার পাথেয় হয়ে থাকবে।
@কাজি মামুন,
পরিবর্তনের আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয়নি। সব কিছুই জুৎসই লেগেছিল। তবে লেখক হিসেবে আপনি নিজ লিখা নিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে সন্তুষ্ট না হলে তা পরিবর্তন করার অধিকার অবশ্যই আছে, এবং এ সন্তুষ্টি আসা যে কি ভয়ানক জরুরী তা যিনি লিখেন, তিনিই বোঝেন।
তবে…
এ বাক্যের সাথে আপনার প্রথমে লিখা
“দুলিকে নোংরা পায়ে তোমার বিছানায় উঠতে দেবনা…” এ বাক্যের আকাশ পাতাল তফাৎ।
প্রথম নোংরা পায়ে বিছানায় উঠতে দেবনা শুনলে একজন কড়া গৃহিনীর রুপ দেখতে পাই, অথবা শাসক গোষ্ঠীর একজনের কন্ঠের মতন কথাটা শোনায়।
“বাধ্য হয়ে নোংরা পায়ে তোমার বিছানায় উঠতে হয়”… এ বাক্যে দুলির প্রতি কোন প্রকার ভেদাভেদ নজরে আসেনা, এটা এমন একটি কথা যা বাড়ির কাজের লোক ছাড়াও অন্য যে কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
নিজেকে কতটুকু পরিস্কার করতে পেরেছি জানিনে, তবে ধরে নিয়েছিলাম লেখকের লক্ষ্য ছিল সব জায়গায় শাসক গোষ্ঠী অথবা বিত্তশালীদের নিম্নশ্রেণীর মানুষদের প্রতি অত্যাচার আর বিভেদ তুলে ধরার, যা একটু পরিবর্তনের ফলে ওই জায়গা হতে হারিয়ে গেছে।
যদি মনে হয়, বেশি বুঝে, অথবা একদমই না বুঝে মন্তব্য করেছি, তবে দুঃখিত। যদিও আগেই বলেছি গল্পটি এবং গল্প বলার ধরণটি আমার খুব ভালো লেগেছে।
ভালো থাকবেন। আরো লিখবেন।
@ছিন্ন পাতা,
আপনার মতামতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমি একটা ‘কন্ট্রাস্ট’ দেখাতে চেয়েছি। দেখুন মায়ের মশারি খুলে ফেলার নির্দেশকে প্রথমে দীপের কাছে মনে হয় ‘নিজের কাজ নিজেই করে ফেলা’ এবং অন্যের উপর, বিশেষত, একটা বাচ্চা মেয়ের উপর তা চাপিয়ে না দেয়ার আহবান। কিন্তু যখন মায়ের মুখে ‘দুলিকে বাধ্য হয়ে নোংরা পায়ে তোমার বিছানায় উঠতে হয়’- এ কথা শুনে, ব্যাপারটা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায় দীপের কাছে। ‘বাধ্য’ শব্দটি এখানে কাঙ্ক্ষিত কন্ট্রাস্টকে কিছুটা জোরাল করে বলে মনে হয় না আপনার?
সমাজের ক্রমবর্ধমান বিভেদ আর তার সম্ভাব্য একটা পরিণতি দেখাবার চেষ্টা রয়েছে লেখাটিতে। প্রথমেই বলেছি, ভাষার গাঁথুনি ভয়ানক দুর্বল লেগেছে আমার নিজের কাছেই। তবু ভাবটুকু ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের ফলে দেখছি, ঐ ভাবনাটুকুও হারিয়ে যেতে বসেছে! জানি না, নতুন লেখকদের এই সমস্যা সার্বজনীন কিনা! যাইহোক, সুযোগ পেলে গল্পের লক্ষ্যটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@কাজি মামুন,
বুঝলাম। সুন্দর করে বোঝাতে পেরেছেন নিশ্চয়ই তাই। বিনয় জিনিসটি আমার ভীষণ পছন্দের। কিন্তু নিজ লিখাকে অতটা দুর্বল ভাবাটা বেশি মাত্রার বিনয়ে চলে যায়না? 🙂
***আরো লিখুন।***
স্বাগতম (F) (W)
@তামান্না ঝুমু,
অনেক ধন্যবাদ, আপু! তবে লেখার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে, খুশি হতাম।
মুক্তমনায় লেখার বৌনি করার শুভেচ্ছা। আপনার গল্পে নতুনত্ব আছে। আছে আশার বাণী। তবে সংলাপগুলো আরো বাস্তব ঘেঁষা করা যেত মনে হয়।
@অভিজিৎ-দা,
আপনি যেভাবে আমার নিতান্ত সাদা-সিধে মন্তব্যের দীর্ঘ ও প্রশ্রয়ী জবাব দিতেন, তা থেকে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করত আমি হয়ত লিখতে পারব। পরশু রাতে মুক্তমনায় ঢুকে কোন এক কারণে ভীষণ মন খারাপ হয়; তখনই লেখার ঝোঁক চেপে বসে। আর গতকাল রাত জেগে একেবারেই অনভ্যস্ত কাজটি করতে বসি। লেখার মাঝে একবার মনে হয়, এভাবে তাড়াহুড়ো করে লেখার দরকার নেই; আবার পরক্ষণেই মনে হয়, আজ যদি লিখতে না পারি তো আর কখনো লেখা হবে না। যাই হোক, এখন লেখাটি পড়ে আমি নিজেই প্রচন্ড হতাশ। বুঝতে পারছি, আরো অনেক ঘষা-মাজা করতে হবে।
আপনার লেখার পাশাপাশি আপনার উদারতাও আমাকে সমান মুগ্ধ করে। যেকোনো নবীন লেখককে আপনি খুব উৎসাহ দেন, তা সে যতই খারাপ লিখুক না কেন। প্রতিষ্ঠিত একজন লেখকের কাছ থেকে এমন উৎসাহ একজন নবীন লেখকের জন্য যে কত বড় সম্পদ, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আপনি আমাকেও এমন উৎসাহ দিয়েছেন; সেজন্য আপনার কাছে আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা।
গল্পের মধ্যে গল্প। আধার এক কথায় চমৎকার, আধেয় তার চেয়েও। গল্পের শিরোনামের তাৎপর্য খুঁজে, ব্যর্থ।
@স্বপন মাঝি,
অনেকটা ঝোঁকের মাথায় লেখা! রাত জেগে ঘুমের ঘোরে লিখেছি; এমনকি এডিটিং করারও সময় পাইনি! সময় পাইনি বলা ভুল; আসলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে করেই হোক আজকেই গল্পটি মুক্তমনায় পাঠাব; যখন লেখাটি শেষ করলাম, তখন দেখি অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে; অথচ তখনও শিরোনাম দেয়া হয়নি। হঠাৎ মাথায় এল আমার অতি প্রিয় একটি রবীন্দ্র সংগীতের লাইন। যেহেতু আমার লেখাটিতে অন্ধকার ভবিষ্যৎ দেখানোর প্রচেষ্টা ছিল, তাই আগুপিছু না ভেবে শিরোনামটি দিয়ে দিলাম।
যাই হোক, আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে ভবিষ্যতে আরও ভাল লিখতে পারব বলে মনে হয়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।