লিখেছেনঃ মহসিনা খাতুন

ছোট বেলা থেকে বাড়ীতে আম্মি, আব্বু কে মাঝে মাঝেই বলতে শুনেছি— ইসলামে ৭৩ ফেরকা…৭২ ফেরকা দোযখ, ১ ফেরকা জান্নাত। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করতো আব্বু কে…আচ্ছা আব্বু! আমার ফেরকা কোথায় যাবে? জান্নাত না জাহান্নাম? আব্বু কে ভয়ে শুধাতে পারিনি। আম্মিকে একদিন শুধালাম, “আম্মি আমরা কোথায় যাবো? জান্নাত?” আম্মি বললো, “ ভালো কাজ করলে জান্নাত আর খারাপ কাজ করলে দোজখ”। আম্মি কে আবার বললাম, আম্মি, “তুমি যে বল ৭৩ ফেরকা,এক ফেরকা   জান্নাত। আমরা কি জান্নাত এর ফেরকা ?” আম্মি বলল, “কে জানে মা। আল্লাই জানে।” আমি সেদিন বুঝেছিলাম এর উত্তর আম্মির জানা নেই।

নবি হজরত মহম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ইহুদিদের ৭১ টি ও খ্রিস্তিয়ান দের ৭২ টি  সম্প্রদায় বর্তমান কিন্তু ইসলামের ৭৩ টি ভাগ হবে (অর্থাৎ ইসলামে ৭৩ টি সম্প্রদায় হবে) যাদের মধ্যে ৭২ টি্র পরিনাম হবে  জাহান্নাম…ও ১ টি সম্প্রদায় এর জান্নাত নসিব হবে। অনেক ইসলাম প্রচারক থেকে শুরু করে অনেকেই বলেন, যে বা যারা ইমান এর পথে চলবে তারাই জান্নাত পাবে। কিন্তু নবি ত তা বলেন নি। নবি (সা: ) কি বলতেন তা আমরা সব মুসলিমরা-ই খুব পরিস্কার ভাবে জানি।

এই ৭২ টি সম্প্রদায় এর অন্তর্ভুক্ত তারা  ইমান এর পথে চলে কিনা জানি না…তবে আমি নিশ্চিত যে এদের মধ্যে অনেক ভাল ব্যাক্তি আছেন যারা মানুষের উপকার করেন। মানুষের দুঃখে কষ্ট পান। কিন্তু তবুও হাদিস অনুযায়ী তারা জাহান্নাম পাবেন। এটা কেমন বিচার ?

আমরা যারা মুসলিম হয়ে জন্মেছি তারা কেউ –ই নিশ্চিত নই যে, কোন কোন   সম্প্রদায় জাহান্নাম এর আগুনে পুড়বেন। আর কোন একটি আল্লাহ-র পেয়ারে সম্প্রদায়ের জান্নাত এর সুখ নাসিব হবে। তবু আমরা নিজেদের মুমিন বলে বড়াই করতে ছাড়ি না আর অন্যধর্মী দের ও কাফের বলতে ছাড়ি না। বস্তুতপক্ষে, আমাদের ইসলামের অধিকাংশ সম্প্রদায় ও আসলে কাফেরদের পরিনতি ই প্রাপ্ত হবে…একথা নবি (সাঃ) বললেও এখন আমাদের স্মরন করানোর কেউ নেই। যারা দিন রাত আমাদের ইসলাম এর শিক্ষা দেন তারা কেন বলতে ভুলে যান এই কথা গুলো? কিম্বা হয়ত জেনে শুনেই এড়িয়ে যান । কিন্তু যারা প্রবাবিলিটির গনিত এতোটুকু ও জানেন তারা জানবেন আমাদের প্রত্যেকের সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার চান্স ১/৭৩ । (অর্থাৎ আপনার চোখ বেঁধে দেওয়া হল। একটি পাত্রে ৭৩ টি  সমান মাপের বল রেখে দেওয়া হল এবং একটি বল এর গায়ে দাগ দিয়ে সেটিকে সেই পাত্রে রেখে মিসিয়ে দেওয়া হল। আপনাকে বলা হল  যে চোখ বাঁধা অবস্থায় ওই দাগ দেওয়া বলটি একবার পাত্রে হাত দিয়ে তুলতে হবে। প্রথম বার পাত্রে হাত দিয়ে আপনার ঐ দাগ দেওয়া বল টি ওঠাতে পারার সম্ভবনা যতটা আপনার তথা আপনার সম্প্রদায় এর সত্যিকার মুসলিম হওয়ার সম্ভবনা ও ততটা।)

কোন একটি সম্প্রদায় যদি জান্নাতে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলে তাহলে বাকি সম্প্রদায় গুলোর জাহান্নাম এ যাওয়া নিশ্চিত। আর জাহান্নামে গেলে তো মেনে নিতেই হয় যে ওই ৭২ টি সম্প্রদায় এর লোকদের আর কাফেরদের মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই। তাহলে আমাদের নিজেদেরকে কি করে আমরা মুসলিম বলে মনে করতে পারি, যেখানে আমাদের কাফের হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।

আবার যে সৌদি দের পারলে আমরা মাথায় তুলে নাচি, সেই সৌদি রা তো এই বলে দীর্ঘদিন প্রচার চালাচ্ছে যে, একটি মাত্র মাজহাব এর জন্মস্থান আরব। বাকি সব অন-আরবিয়। সেগুলির জাহান্নাম নাসিব হবে। আর নবির জন্মস্থান পবিত্র আরবে যে সম্প্রদায় এর উৎপত্তি তারাই একমাত্র জান্নাতের অধিকারী হবে। অর্থাৎ যদি আমরা ইসলাম কে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে মেনেও নি, তাহলেও আমার ধর্মই প্রকৃত ইসলাম কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। সুতরাং আমি মুসলিম… আমার ধর্ম সব চেয়ে পবিত্র… এই ধরনের কথা আমার কাছে খুব জল মেশান মনে হয়। মন প্রশ্ন করে… আমি কি সত্যিই মুসলিম?

কে জানে হয়ত অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা জান্নাত এর লোভ এর পরিনতি এই ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা । তবে সে যাই হোক না কেন, আজ জান্নাত এর উপর আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই। ইসলামেও আমার কোনো আকর্ষণ নেই। আমি সত্যিকারের মুসলিম কিনা সেটা আমার কাছে আজ গুরুত্ব হারিয়েছে। মুসলিম  হওয়ার চাইতে সত্যিকারের মানুষ হওয়া সহজ এবং অধিক কাজের কাজ বলে মনে করি। আজ আমি মানুষের কথা বলি।