সকাল থেকেই মেজাজটা খাট্টা সেলিম সাহেবের| ক্যাবল টিভির অনুষ্টানগুলো তাতে আরো একটু ঘি ঢেলে দিলো; সপ্তম থেকে তা চড়ে গেলো আরো উপরে| রাগে হাত রগড়াতে রগড়াতে দ্রুত গতিতে আঙ্গুলের চাপে এ-চ্যানেল থেকে ও-চ্যানেলে| না, সবখানেই সেই একই অনুষ্টান|
-দেশটার হোলোটা কী?সব দেখি শালা মালাউনের দখলে চলে যাচ্ছে দিন দিন|
রাগে বিড়বিড় করতে লাগলেন সেলিম সাহেব; ঢাকার সব ক্যাবল টিভিগুলোই বিভিন্ন মন্দির থেকে মহা-অষ্টমীর কুমারীপূজো সরাসরি দেখাচ্ছে|
শেষমেশ টিভি দেখা বন্ধ করে বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন| শরতের আকাশে পেজা তুলোর মতো সাদা মেঘেদের ফাঁক গলে নীল আকাশটা কেমন চকমক করছে| কেমন এক পশলা হালকা শীতের হল্কা সেলিম সাহেবের চোখ মুখে এসে লাগছে| মনের ভেতরে তেতিয়ে থাকা ক্ষোভটা একটু কমে আসছে মনে করে ক্ষণিকের জন্যে হলেও শান্তি পেলেন সেলিম সাহেব|
পুরানো ঢাকার এই বকশি বাজার এলাকাটা সেলিম সাহেবের বড় চেনা| সেই কবে সত্তরের দশকে গ্রাম থেকে কলেজে এসে এই এলাকাতেই থিতু হয়েছিলেন| তারপর ইউনিভার্সিটি,ছাত্র রাজনীতি,আইন পেশা, সবশেষে বাম রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব; সব কিছু এই লালবাগ-বকশিবাজার এলাকা ঘিরেই| আর সেই জন্যেই হয়তো ঋতু বদলের সব বাঁকগুলোই খুব চেনা তার| আরো চেনা এই এলাকার মাটি আর গাছগুলোও; কেমন আশ্চর্যভাবে বদলে যায় অলিগলি মাস কিংবা দিন বদলের সাথে সাথে| শীতের আগের এই সময়টা কেমন এক চিরচেনা গন্ধ মাটি থেকে বের হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে যায়| সেই সাথে গলির ওমাথায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে পূজো-পার্বণের সাথে সাথে হরেক রকম মানুষের আনাগোনা এই গলিটাকে বিচিত্র রকমে আমোদিত করে রাখে| এসব কিছুই এক সময় সেলিম সাহেবের কাছে খুব গর্বের আর সম্মানের বিষয় ছিলো; নিজের কাছে তো বটেই, পরিচিত মানুষজনের কাছেও মাথা উচুঁ করে বলে বেড়াতেন সেলিম সাহেব|
এতসব ভাবতে ভাবতে লোহার শিকের জাল ঘেরা বারান্দায় হালকা চালে পায়চারি করতে থাকলেন সেলিম সাহেব| এক সময় বারান্দায় রাখা চেয়ারটাতে যখন একটু আরাম করে বসবেন ভাবছেন, ঠিক তখনি আবার মেজাজটা পুরানো ক্ষোভে ফুঁসে উঠলো| ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ঢাকের বাদ্য আর পুরোহিতের মন্ত্র এক তীব্র কর্কশ শব্দে সেলিম সাহেবের কানে ঢুকে তা মুহুর্তেই শরীরের ইন্দ্রিয়গুলোকে এতো জোরে ধাক্কা দিলো যে, সেলিম সাহেব আবারো দ্রুত পায়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকে নিজের অজান্তেই চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন,- সালেহা,সালেহা|
সালেহা অর্থ্যাত সেলিম সাহেবের স্ত্রী ভাবলেশহীন ভাবে বেড রুম থেকে বাইরে এসে দাঁড়ালেন|
–ওই মালাউনটা কোথায়? দাও, পাঠিয়ে দাও হাতে শাঁখা আর কপালে সিঁদুর পড়িয়ে| মন্দিরে পূজো দিয়ে আসুক;পারলে তুমিও যাও সাথে|
-একটু ভদ্রভাবে কথা বলো;বাড়িতে তোমার মেয়ে ছাড়াও তো আরো অনেকে আছে| আছে না কি? সালেহা খুব শান্ত গলায় উত্তর দিলো|
-হ্যা, ভদ্র ছিলেম বলেই তো তোমার মেয়ে আজ এক মালাউনের সাথে ঘর বাঁধতে চলেছে| আর বলিহারি যাই তোমার ওই সংগীতচর্চ্চা দেখে; রবীন্দ্র সংগীত শেখাবে| কপালে লাল টিপ পড়ে, ওই মালাউনের গান| ধ্যাত, যেমন মা,তেমনি মেয়ে;আরে আমার সংস্কৃতি, প্রগতি।।
– সব দোষ এখন আমার| আর তুমি নিজে, কম্যুউনিষ্ট; ধর্ম মানেন না| বেশ, এখন এতো আপত্তি কিসের? মেনে নিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়|
সালেহা এবার গলা আরো একটু চড়ালো| সালেহার গলার তেজে সেলিম সাহেব একটু দমে যান| ঘরের ভেতর টানিয়ে রাখা মার্ক্সের ছবির দিকে চোখ ঘুরিয়ে আবার অন্য দেয়ালে চোখ রাখেন সেলিম সাহেব; চীন বিপ্লবের সেই ছবিটা,পাশে চেগুইভারা, আরো সরে ঠিক দরোজার উপর সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় সম্মেলনের ছবি অন্যান্য কম্যুউনিষ্ট নেতাদের সাথে| এ সব যেনো এক নিমিষেই সেলিম সাহেবের কাছে অসহ্য মনে হয়; দেয়াল থেকে টেনে নামিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে সেলিম সাহেবের|
সালেহা বলে উঠেন,- নিউ ইয়র্ক থেকে লুনা ফোন করেছিলো কাল রাতে|
– কি বললো তোমার বোন,সেখানেও এসব ছড়িয়ে গেছে নাকি? আরে বাবা, মেয়েটা তো এখনো হিন্দু হয়ে যায়নি|
– না, লুনা বললো নিউ ইয়র্কের আরেক ঘটনার কথা| সে সব নিয়ে নাকি ঢি ঢি পড়ে গেছে সারা আমেরিকায়| মোল্লারা ক্ষেপে গেছে; মিছিল-মিটিং হচ্ছে|
– আরে বাবা, ঘটনা কি সেটা তো আগে বলবে?
– কোন এক হিন্দু মেয়ে নাকি মুসলমান বিয়ে করেছিলো| কিন্তু ঘটনা সেটা না; তাদের মৃত ছেলেকে নিয়ে| তাকে নাকি দাফন না করে পুড়িয়েছে; তাই ক্ষেপেছে মোল্লারা|
মোল্লাদের কথা শুনে তাক করে মাথায় আবার মেজাজটা খেলে গেলো সেলিম সাহেবের|
– এতে মোল্লাব্যাটাদের কি? তাদের ছেলে মরে গেছে; আর সে মরা ছেলেকে পোড়াবে না জলে ভাসাবে তা বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেবে|
– লুনাকেও তো দেখলাম মোল্লাদের পক্ষেই; ওই মহিলা নাকি জামাতের বিরুদ্ধে কি সব লেখে-ট্যাখে|
– আসল কথা তো ওখানেই| আর তোমার বোনটারও তো বিয়ে হয়েছে সেই জামাত-শিবিরের সাথেই|
সেলিম সাহেবের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলেন সালেহা| সেলিম সাহেব শত রাগলেও সালেহাকে সমীহ করে চলেন;সালেহার বুদ্ধিমত্তার কাছে প্রায়ই হার মানেন সেলিম সাহেব| সালেহার হাসির পেছনের কারণের জন্যে অপেক্ষায় থাকেন সেলিম সাহেব|
-হাসলাম কারণ, লুনার বড় বোনটাও তো সেই জামাত শিবিরকেই বিয়ে করেছে|
-আমাকে আর যার সাথেই তুলনা করো, ওই পশুদের সাথে নয়, প্লিজ সালেহা|
– করলাম , কারণ এতোক্ষন মেয়ের ভালবাসার কারণে যে বিচ্ছিরি ভাষায় কথা বলছিলে; সেটা তো জামাত-শিবির আর রাজাকারের পক্ষেই সম্ভব|
সেলিম সাহেব একটা ধাক্কাখান তীব্র বেগে; ধর্মের সেই সামন্ত ধারনা এখনো থিতু হয়ে শেকড় গেড়ে আছে নিজের ভেতর| তার এতো দিনের প্রগতিশীল রাজনীতি,ধর্মের উপরে উঠে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার সেই মহান অহংকার,সভা-সমিতি আর সংবাদপত্রের পাতা ভরিয়ে ফেলা বক্তব্য-বিবৃতি,ভারি ভারি কথামালা; এসব কি তা হলে মেকি,মিথ্যে? কিন্ত নিজের মেয়ে যদি সেই হিন্দু ছেলেটিকে বিয়ে করে; আর সে সব যদি ছড়িয়ে যায় পার্টিতে,নেতা-কর্মীদের মাঝে,আত্মীয়-স্বজন আর সমাজের কাছে;তবে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে| ভবিষ্যতে নেতা হবার আর ইলেকশন করার সমস্ত আশা-ভরসা শুধু মেয়ের জন্যেই তলিয়ে যাবে একেবারে? সে সব ভেবে ভেবে এক গভীর সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে থাকেন সেলিম সাহেব | শেষে অসহায় ভাবে বলে উঠেন,
-জানো সালেহা,আমার সব কিছু কেমন উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে|
-না কিছুই উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে না| তোমার নিজের ভেতর আরো বোঝাপড়া করতে হবে সেলিম| ভেবে দেখোতো এতোদিন তুমি যা মনে করেছো নিজের অর্জণ,নিজের বিশ্বাস; তার কতোখানি খাঁটি আর কতোটুকু লোক দেখানো?
– না সালেহা, সেটা সত্য নয়| কিন্ত আমিও তো সন্তানের বাবা; সন্তানকে সুখী দেখতে আমি চাইতে পারি না?
-এটার সাথে মেয়ের অসুখী হবার সম্পর্ক কোথায়? মেয়েতো ভালোবেসেই বিয়ে করতে চাইছে|
– কিন্ত ও তো একটা হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে|
-সেলিম , তুমি না আগে বলতে আমার মেয়ে আর যাকেই বিয়ে করুক আপত্তি নেই; শুধু জামাত-শিবির আর রাজাকার পরিবারের কাউকে আত্মীয় হিসেবে গ্রহন করতে পারবো না| সে সব কী শুধুই কথার কথা ছিলো?
সালহার কথায় কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যান সেলিম সাহেব;কিছুতেই সব কিছুকে সমীকরণে মেলাতে পারেন না| কোথায় যেনো আত্মপ্রবঞ্চনার গন্ধ খুঁজে পান| সারা জীবনের বিশ্বাস, নীতি আর মূল্যবোধের সাথে আজকের সেলিম মাহমুদের একটা স্পষ্ট দৃশ্যমান দূরত্ব খুব সহজেই দেখতে পান সেলিম সাহেব| আর তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রী সালেহা,মেয়ে অন্তরা মাহমুদ আর সেই হিন্দু ছেলেটা| সহসাই মুখ থেকে বেড়িয়ে যায়,
– সালেহা, তুমি অন্তরাকে বলো , ছেলেটা যেনো মুসলমান হয়ে অন্তরাকে বিয়ে করে|
– কমরেড সেলিম মাহমুদের মুখ কী চমৎকার প্রগতিশীল কথা!
সালেহার খোঁচা হজম করে নেয় সেলিম মাহমুদ| তার পরেও বলেন,
– অন্তত পার্টিতে তবুও মুখ রক্ষা করা যাবে নিদেন পক্ষে|
– তোমাদের কম্যুউনিষ্টরা মুসলমানের সংখ্যা বাড়ানোর আন্দোলনও করছো নাকি আজকাল?
– আমার পার্টি পজিশনটার কথা ভেবে অন্ততঃ এইটুকু করো সালেহা, প্লিজ|
সেলিম সাহেবকে বড্ড অসহায় আর অচেনা লাগে সালেহার| তার একদা ভালোবাসার সেই সেলিম মাহমুদের সাথে আর দশটা ছেলের মুখ একাকার হয়ে মিশে যায়| টগবগে উচ্ছল প্রগতিশীল সেলিম মাহমুদ কোথায় যেনো হারিয়ে যায় এক নিমিষেই; তবু বাস্তবকে নিজের ভেতর আত্মস্থ করে সালেহা বলে,
– তোমার মনে হয় রাজনীতিটা ছেড়ে দেয়ার সময় হয়ে গেছে সেলিম; তা না হোলে অন্ততঃ আমি পারবো না আত্মপ্রবঞ্চক কোন মানুষের সাথে এক ছাদের নীচে বাস করতে|
– এর সাথে একত্রে বসবাস কিংবা রাজনীতি ছাড়ার সম্পর্ক কোথায়?
– সম্পর্ক আছে এবং খুবই গভীর সে সম্পর্ক| তোমার সামনে দু’টো পথ খোলা আছে সেলিম; যে কোন একটা তুমি বেছে নাও আমার কোন আপত্তি থাকবে না|প্রথম পথ, নীতি বিশ্বাসের পথে দৃঢ় থাকা,তাতে সালেহার মাথা গর্বে উঁচু হোয়ে থাকবে| আর দ্বিতীয় পথ, কম্যুউনিষ্ট পার্টি থেকে সরে দাঁড়িয়ে ধর্মের পথে চলে যাওয়া;সালেহা দুঃখ পাবে কিন্ত নিজের নিয়তিকে অভিসম্পাত দিয়ে হয়তো তোমার সাথেই কাটিয়ে দেবো বাকীটা জীবন|
সেলিম মাহমুদ এ এক অন্য সালেহাকে আজ দেখছে যেনো; কোথায় পেলো দৃঢ়তা সালেহা? চিরকালের সেই ভীতুটাইপের মেয়েটা, যে সারা জীবন বই আর সংগীত ছাড়া আর কোনো খবরই রাখতো না; সে কোথায় পেলো এই মনোবল,এই সাহস আর গুছিয়ে কথা বলার এই চমতকার ষ্টাইল; সেলিম মাহমুদ সালেহার এই যুক্তি আর বাগ্মীতাকে তো আগে কখনো দেখেনি| সব কিছুর কাছে যেনো হার মেনে নিতে হচ্ছে আজকাল|
-সালেহা, তোমার কাছে মনে হয় হারই মানতে হবে আমাকে আজ|
– দেখো, এটা হার মানার কোন ব্যাপার নয়, সেলিম| এটা নিজের ভেতরকে পরীক্ষা করে নেয়ার বিষয়| আমরা কেমন অন্য মানুষ হয়ে যাই নিমিষেই যখন দেখি আমাদের নীতি আদর্শগুলো আঘাত করছে আমাদেরই ঘুনে ধরা সামন্ত বিশ্বাস আর অহংকারের দেয়ালে| আজকে আমাদের মেয়ে অন্তরা ভালোবেসে বিয়ে করতে যাচ্ছে কোনো হিন্দু ছেলেকে| কিন্ত আমাদের কোনো ছেলে কোনো হিন্দু মেয়েকে মুসলমান বানিয়ে যদি ঘরে তুলে আনতো;আমরা তো তখন সানন্দে গ্রহন করে নিতাম তাকে| কিন্ত একজন মানুষ হিসেবে, একজন প্রগতিশীল মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসেবে এই দু’য়ের মধ্যে কোন বিশিষ্টতা আছে কী?
সালেহা ঘরের বন্ধ জানালাটা খুলে দিলো; শরতের ঠান্ডা বাতাস জানালার ফিনফিনে পর্দাটাকে উড়িয়ে দিয়ে একরাশ সজীবতা ছড়িয়ে দিলো সারা ঘরময়| গলির ওপাশ থেকে রিক্সার টুনটুন শব্দ আর শারদীয় পূজ়োর ঢাকের সেই চিরচেনা শব্দ ঘরের নিরবতার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো সহসাই| পাশের ঘর থেকে টেলিফোনের আওয়াজে সালেহা দৌঁড়ে গিয়ে রিসিভারটা উঠালো; ও পাশ থেকে সৌম্য-শান্ত গলার আওয়াজ,
-মাসিমা, আমি প্রদীপ্ত বলছি; অন্তরাকে একটু দেয়া যাবে|
সালেহা সহজ কন্ঠে উত্তর দিলো,
-একটু অপেক্ষা করো বাবা, আমি ডেকে দিচ্ছি|
বলেন কি দাদা ?? মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রানী এই ধরায় !!!!!!:-[
@নৃপেন্দ্র সরকার,
পরিবার,পরিবেশ,পরিজন পরিবেষ্টনে আমরা এমনভাবে আটকে আছি, বড় কঠিন সে বন্ধন;তাই ইচ্ছে করলেও কতটুকু থাকা যায় নির্মোহ নিরপেক্ষ! মনের অজান্তেই নিজের সম্প্রদায়ের জন্য,আজীবন দেখা আসা সংস্কারের জন্য এক চিলতে নরম জমিন কখন যে তৈরি হয়ে থাকে,অনেকেই তা জানেনও না।
আমি জানি, এই মুক্তমনাতেই যুক্তিবাদের ফোঁয়ারা ছুটান লেখাতে-কথাতে অথচ নিজের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন, “সন্তানের ওপর তার স্ত্রীরও তো আট আনা অধিকার আছে,তাই নিজের ইচ্ছে কি করে ষোল আনা খাটাই, বলুন।” চুপ থাকি। ভাবি, তিনি মুক্তমনার সাথে যুক্তিমনাও বটেন!!
আগে যা বলছিলাম; পরিবারের চাপ,আশপাশের সমাজ স্বজনের চাপ,এই সব নানাবিধ চাপে চাপাচাপি অবস্থান তো অনেকেরই। তাই তো আহমদ শরীফ স্যারকেও পুত্রবধুর আবদারে নাতিকে কোরআন শিক্ষার জন্য হুজুরের কাছে পাঠাতে সম্মতি দিতে হয় । আর এই জন্যেই হয়তো ,হুমায়ুন আজাদের মেয়ে যখন ফেইসবুকে মহানবীর বানী থেকে উদ্ধৃতি দেয়, তখনও আলোকিত বাতিঘরের এক কোনের অন্ধকারকে দেখেও থমকে যাই না।
আশাহত হবার কিছুই নেই @নৃপেন্দ্র সরকার,এই মুক্তমনাতেই দেখুন,আমাদের মত প্রবাসের নিরাপদ-নির্ভারে নয়,বাংলাদেশের মতো প্রতিকূল জমিতে দাঁড়িয়ে কত মুক্তমনা প্রতিবাদ করছে ধর্মীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে,সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। ওদের কথা যখন শুনি,ওদের লেখা যখন পড়ি,তখন সব হতাশা কেটে যায়। মানুষ প্রশ্ন করছে,প্রযুক্তির সুফলতায় উত্তরও পাচ্ছে হাতের নাগালেই (সঠিক-বেঠিক দু’টোই)। আমাদের সামনের বাতিঘর গুলো (আরজ আলী মাতুব্বর,আহমদ শরীফ,হুমায়ুন আজাদ,তসলিমা নাসরিন প্রমুখ)কতটা সমুজ্জ্বল আর সহজপ্রাপ্য আজকাল!ব্যক্তিগত ভাবে আমি কোনদিন-ই আশাহত হই নি,ইদানিং তো নই-ই! ভালো থাকবেন!
@ভজন সরকার, (Y)
@ভজন সরকার,
সত্তি কথা দাদা, আমার বাবা-মা তো ১৯৭১-এ মুস্লিম হোল অথচ আজও ঘরের ভেতর পূেবর
আচরন রয়ে গেছে। শুধু লোক দেখানো মুসলমানি আচরন, তাও যতটুকু না করলেই নয়।
এখনো আমার মা আর কাকি সব পুজোতেই মন্দিরে যান। কখনো কপালে টিপ আর হাতে শাখা ছাড়া থাকেন না। আমার পিসিদেরতো তবুও ভারতে বিয়ে হয়ে মান ইজ্জত রক্ষা হয়েছে, আর আমরা আছি এক অসহনীয় অবস্থায়, এপারেও না ওপারেও না।
@শিমুল,
“শুধু একজন কাঁদে
অন্যেরা ফেলে জল
অথচ এই সংক্রমিত সময়ে কান্নাটাই মহামারি ।
এমন যে জলের গভীরে ডুবো মাছ
তাহাদের মায়েদেরও কাঁদতে হয়
হত্যা-ধ্বংস সীমান্তের ক্ষতে
জলের সুবিশাল পাঁজরে পাঁজরে। ”
শিমুল,সীমান্তের ক্ষতে আপনাদের এই কান্না তো আরও অনেক মানুষের কান্না;আমিও তার বাইরে নই। তাই সাহস,সহানুভূতি আর সহমর্ম;শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!
@ভজন সরকার,
ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।
আমাদের মতো যারা এই অসহনীয় অবস্থায় আছে তাদের নিয়ে কিছু লিখুন না, নিজের কাছে ভালো
লাগবে, হয়তো এই পরিস্থিতিতে কেমনে চলতে হয় শিখতে পারবো।
আমাকে কোনো পথনির্দেশনা দিলে খুশি হতাম।
দাদা,
ঢাকায় শুধুমাত্র রামকৃষ্ণ মিশনেই কুমারী পূজা হয় বলে জানি, বিভিন্ন মন্দিরে নয়।গল্প হলেও এ তথ্যটি সঠিকভাবে গল্প দেওয়া যায় না কি!
আশেপাশে সেলিম মাহমুদদের অভাব নেই। নিজেদের উপরে আসলে সবাই সেলিন মাহমুদ। যাহোক, গল্পটির শুরুর সাথে শেষের আঁটুনীটি আরও শক্ত হতে পারতো।
আপনার আরও গল্পের অপেক্ষায়।
@গীতা দাস,
দিদি,পূজো-পার্বণের এই ব্যাপারগুলোতে আমি অকাট মূর্খ। আর গল্প লেখা, সে আমার কম্ম নয়;নাকেখত দিতে বললেও আমি রাজি আছি! এই মুক্তমনাতেই তো শুরু করেছিলাম ” যে জলে নদী নেই”,লিখতে গিয়ে দেখি আর মনে হয় হচ্ছে না কিছুই। ফুলস্টপ নয় ,আপাততঃ একটা বিরাট বিরতিচিহ্ন দিয়ে রেখেছি।
ভালো থাকবেন।
@ভজন সরকার,
‘যে জলে নদী নেই’ এর আমি কিন্তু একজন একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম। ধারাবাহিকটি সচল করার অনুরোধ করছি।
তাছাড়া, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে — বেশ কয়েক বছর আগে যখন আমি মুক্ত-মনায় নিয়মিত নই আপনাকে মেইল করেছিলাম আপনার ‘বিভক্তির সাত কাহনে’র সবগুলো পর্ব পড়ার জন্য উৎস জানতে।
যাহোক, ‘যে জলে নদী নেই’ সে জল প্রবাহিত হোক এ প্রত্যাশা করছি।
@গীতা দাস,
গীতাদির সাথে একমত পোষন করছি/
এই কমরেডের গল্পটা আমার চেনা আর এক কমরেডের কথা মনে করিয়ে দিল।
অনুষদের মিটিং চলছে নতুন ছাত্র ভর্তিসংক্রান্ত। সেক্রেটারী হৃদেশ হালদার পেছন থেকে মিনিটস তৈরী করছেন। কমরেড প্রফেসর “এল আর” খেয়ালই করেননি যে পেছনের সারিতে হালদার বাবু আছেন মিটিংএ। বলে ফেললেন, “ভর্তি পরীক্ষায় ভাইভা ঢুকাতে হবে। নইলে হিন্দু ছাত্রদের ঠেকানো যাবে না।”
সাম্প্রদায়িকতা হিন্দু এবং মুসলমান দুই তরফেই আছে। তবে স্বভাবতই কমরেডদের কাছ থেকে এরকম মানসিকতা আশা করি না। প্রফেসর গোলাম মুরশিদকে এই ঘটনা বিশ্বাসই করাতে পারলাম না। তাঁর হৃদয়ে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রের স্থান ছিল না। তাই তাঁর কমরেড বন্ধুটির ভিতরে যে একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি বাস করে তিনি তা ভাবতেই পারলেন না।
আমার এক সহকর্মী ছিলেন জামাতের আমীর। আমি যতটুকু চিনেছি এবং দেখেছি তিনি কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধ ছিলেন।
এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখছি যে দিন মানুষে মানুষে থাকবেনা আর কোন বিভেদ। বৈবাহিক বন্ধনে থকবেনা কোন ধর্মীয় বাধা। অনেক ধন্যবাদ লেখক ভজন সরকার কে। (Y)
লেখাটা আগে কোথায় যেন পড়েছি,ঠিক মনে করতে পারছি না।
আবারো পড়লাম।(Y)
আসলেই সোক্লড বামনেতা সেলিম মিয়াসাবদের :-X এমন মানসিক ভারসাম্যশূন্যতাই আমাদের দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের করুণদশা বর্তমান যার কোন দিক-নির্দেশনা নেই।শুধু দুই চরম ডান ও দক্ষিন পন্থী দলের লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া এরা যেন আর কিছুই জানে না।
এরা মুখে বলে প্রগতিশীলতার বানী কিন্তু অন্তরে ও কাজে প্রমান করে প্রতিক্রিয়াশীল আদর্শভরা করুন বুলির কচকচানি। :-Y এই যেমন,নারায়নগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে বামদের বুলির কচকচানি।
সব কিছু মিলিয়ে যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা আমাদের সব আঙিনায়।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আপনি ঠিক-ই বলেছেন, লেখাটি “স্বর্গীয় সাতরং” পত্রিকায় দেখে থাকতে পারেন। যেহেতু পত্রিকাটি এখন আর এই ধরাধামে নেই,এমনকি লেখাগুলোও স্বর্গগত;যদিও কমরেড সেলিম সাহেবেরা বাম-মুখোশে আমাদের চারপাশেই “প্রগতিশীলতার বানী” আওড়াচ্ছেন,তাই ভাবলাম প্রিয় মুক্তমনায় লেখাটি থাকুক। ধন্যবাদ।
@ভজন সরকার,
দাদা,
খুব ভাল কাজ করেছেন।
ভাল থাকুন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আমার কিন্তূ বিশ্বাস হয়না সেলিম সাহেব এ রকম করতে পারে।
আজকাল কিন্তু বৌদ্ধ ও হিন্দুদের মধ্যে সমন্ধ করে বিয়ে হচ্ছে। এটা জতো তারাতারি মুস্লিম আর হিন্দু অ অন্নান্ন ধ্রমাবলম্বিদের মধে চালু হবে তত মঙ্গল। সব ধরমের মিলিত সংস্ক্রিতিটাই হোলো আসল বাঙালি সংস্ক্রিতি।
আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ধম্রান্তরিত করা যায় কিন্তু মন থেকে তা মুছা যায় না।
আহারে কি সুন্দর একটা গল্প!
সারারাত গল্প শুনার পর লেখককে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, সীতা কার বাপ?
অগ্র পশ্চাতের দ্বন্দ্বগুলো এমন খিচুড়ি বানিয়ে গিলাতে গেলে যা হয়, তাই হয়েছে।
আমি দুঃখিত, এমন রূঢ় মন্তব্যের জন্য।
অন্যরকম এবং স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে লেখাটি আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। এরকম আরো প্রচুর লেখা আসা দরকার। বিশেষ বিবাহ আইন বিষয়খানা লেখাটিতে থাকলে এটি দিক নির্দেশনা দিতে পারত।
ইন্দিরা গান্ধী যখন অগ্নি উপাসক ফিরোজ গান্ধিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইন্দিরার বাবা জহর লালের মত ছিল না শোনা যায় মহাত্মা গান্ধির অনুরধে বা মধস্থথায় জহর লাল নেহ্রু এ বিয়ে পরে মেনে নেন। কিন্তু গান্ধির ছেলে যখন ইসলাম কবুল করলেন গান্ধী মানতে পারেন নাই, ছেলে প্রায়াছিত্ত করে আবার হিন্দু হয়েছিল।(ঘটনাটা আমার পড়া অনেক আগে,ভুল থাকলে কেউ শুধ্রে দেবেন)। তবে সংস্কার থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন। এই বিদেশ বিভুইয়ে যেমন নিজে কে বলি, আমার ছেলে শুধু অন্য আর একটা ছেলে কে বিয়ে না করলেই আমি খুশি,কিন্তু আমার ছেলে যদি একটা কাল বা সাদা মেয়েকে বিয়ে করে মানতে পারব?… এখনো জানি না, আবার এও জানি না আমার ছেলে একটা ছেলে কেই বিয়ে করবে কিনা?!!!,বিবরতনে ত সবই সম্ভব আর সব অনিবার্য তা কে মানাই ত প্রগতিশিলতা!।।আবার সভ্যতার চামড়া ত এত পুরু না যে আমাদের সবসময় রক্ষা করবে!!