তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নির্মিত “মুক্তির গান” প্রামান্যচিত্রটির ডিভিডি সংগ্রহে থাকলেও দেখা হয়ে ওঠেনি আজকের আগে। এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একদল তরুণ লেখক, আঁকিয়ে, গায়ক, বাদক, নাট্যশিল্পী সর্বোপরি একদল দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণীদের গড়া সাংস্কৃতিক দল “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা” এর শরণার্থী শিবির ও মুক্তাঞ্চলে গানের ও নাটকের ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ফুটেজ নিয়ে। এই ভিডিও ফুটেজগুলো সেলুলয়েডে ধারণ করেছিলেন মার্কিন চলচ্চিত্রকার লেয়ার লেভিন। “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা” দলটির কাজ ছিল ট্রাকে করে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা- দেশাত্মবোধক গানের আসর করে, মানুষের সাথে কথা বলে, পুতুল নাটকের আয়োজন করে। লেয়ার লেভিনের ধারণকৃত প্রায় ২০ ঘন্টার ফুটেজ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয়কৃত মুক্তিযুদ্ধকালীন ফুটেজ সংগ্রহ করে তা থেকে বাছাইকৃত কিছু অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রামান্যচিত্র। সাংস্কৃতিক দলটির কর্মকান্ড, শরনার্থীদের সাথে আলাপচারিতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও যুদ্ধ, সাধারণ মানুষদের অনুভূতি ও চিন্তা, আহতদের চিকিৎসার অস্থায়ী ক্যাম্প বা হাসপাতালের অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্জয় মনোবল ও অকুতোভয় চেতনা, দেশের ও স্বাধীনতার প্রতি সর্বসাধারণের আকুলতা, জয়ের আনন্দ এসব কিছু উঠে এসেছে ১ ঘন্টা ১৩ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রে।
এই প্রামাণ্যচিত্রের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এতে ওই সময়ের সকল স্বাভাবিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা খুব ভালভাবে এসেছে। ঐ সাংস্কৃতিক দলটি যখন এক শরণার্থী পরিবারের বাড়িতে আতিথেয়তা পায় তাতে সেই সর্বহারা পরিবারটির অন্তরের চিরায়ত বাঙালির আতিথিপরায়নতা যেমন চোখে পড়ে, তেমনি সেই পরিবারের পোষা তোতা পাখিটি উপহার পেয়ে দলটির সদস্য তারিক আলীর সেই পাখিটিকে “জয় বাংলা” বুলি শেখানোর চেষ্টায় “জয় বাংলা” স্লোগানের শক্তি ও মানুষের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা প্রকাশ পায়, আবার তারিক আলী যখন মুক্তিযোদ্ধা হবার অদম্য ইচ্ছেয় মুক্তিবাহিনিতে যোগ দিতে চায়, কিন্তু “চশমাওয়ালা” হওয়ার কারনে সুযোগ পায়না তখন ফিল্মিভাবে তাকে মুক্তিবাহিনিতে নেয়ার সুযোগ হয়না, কিন্তু সিনেমার চেয়েও বাস্তব দেখায় তার আশাভঙ্গের বেদনা ও স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের আকাঙ্খা। রেডিওতে বলা হচ্ছিল, এক ক্যাম্পে ২০-২২ বছরের এক যুবক মতিয়ুর- যার পায়ের মাংস উড়ে গেছে, ডাক্তারকে বলছিল তাড়াতাড়ি তাকে সুস্থ করে দিতে, কারণ খান সেনারা আসছে। দুই আহত মুক্তিসেনার একজন বলছে “ডাক্তারবাবু, আমি বাঁচবনা। ও বাঁচবে। আপনি ওকে দেখুন।”- এই বাস্তবতা সবচেয়ে ভাল অভিনেতার সবচেয়ে ভাল সিনেমার ডায়লগের চেয়ে অনেক বড় মনে হয়েছে আমার কাছে। পুতুল মুক্তিসেনা যখন নাটকে পুতুল ইয়াহিয়াকে ভয় পাওয়াচ্ছে তা দেখে মানুষ মজা পাওয়ার সাথে সাথে এই মেসেজটাও পেত যে ইয়াহিয়াকে অর্থাৎ পাকিস্তানি বাহিনিকে আসলেই হটতে হবে, হটানো হবেই। আসলে যখনই ভাবছিলাম যে, যা দেখছি সবটাই বাস্তব, কেমন অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিল। বিশেষ করে মুক্তাঞ্চলে আসার সুযোগ পেয়ে ঐ দলের মানুষগুলো যেমন হাভাতের মত মাটি কপালে ছোঁয়াচ্ছিল, কাঁদার দলা হাতে নিয়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি মুখে ফুটিয়ে তাকিয়ে ছিল- সেই সময়।
এই ছবি দেখে আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, ঐ সাংস্কৃতিক দলটিতে তরুণ-তরুণীর সহাবস্থান ছিল, এবং সেসব তরুণ-তরুণীরা প্রায় সবাইই ছিল শিক্ষিত ও প্রতিভাবান। ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি পুরুষ-নারী উভয়কে পাশাপাশি। এখানেও দেখা গেল এতগুলো মেয়ে একসাথে এমন একটা বিপদসঙ্কুল সময়ে ট্রাকে করে দেশজুড়ে গান গেয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার সঙ্গী পুরুষরা তাদেরকে নারী নয় সঙ্গী বা কম্প্যানিয়নের মতই ভাবছে। অথচ এত বছর পরে এখন এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মাঝেও এই স্বতস্ফুর্ততার ঘাটতি দেখি। অনেক ছেলেকে বলতে শুনেছি, “মেয়েমানুষ নিয়ে ঘোরা ঝামেলা” ইত্যাদি ইত্যাদি, ঢাকার বাইরে বা ২-৩ দিনের ট্যুরে পরিবার বা ডিপার্টমেন্ট ছাড়া শুধু বন্ধুরা- ছেলে-মেয়ে মিলে যাওয়া কেন যেন অনেকের কাছেই মঞ্জুর নয়। আর ছেলে-মেয়ে মিশ্রিত বন্ধুদল যদি ঘুরতে বের হয় তাহলে তাদের অনেক সহপাঠী বা পরিবার থেকেই কটাক্ষ শুনতে হয়, অনুমতি পাওয়া যায়না বিশেষ করে মেয়েদের বাড়ি থেকে অনুমতি পাওয়া যায়না, যে জায়গায় যাচ্ছে সে জায়গাটা মফস্বল বা প্রত্যন্ত হলে তো কথাই নেই, স্থানীয় লোকজনও কথা শোনাতে দ্বিধা করেনা। আর ঐ দলের এমন অনেক মেয়ে থাকে যারা এইসব অশিক্ষিত এবং সংকীর্ণমনা মানুষদের কথা বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর ইচ্ছের চেয়ে আর নিজের কান মলে সকল আকাঙ্ক্ষা রেখে দেয় স্বামীর সাথে বা অভিভাবকদের সাথে পূরণ করার আশায়। যেকোন জায়গার পরিবেশ ও সঙ্গীদের মনোভাব বুঝে সচেতন ও সাবধান থাকা জরুরি কিন্তু সংকীর্ণমনার ভুল একটা কথাতে গা ভাসিয়ে দিয়ে নিজের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ? আর আমাদের যেকোন আন্দোলনের সময় ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সবার সামনে থাকত ছাত্র-ছাত্রীরা, কিন্তু আজ তাদের অধিকাংশই রাজনীতিসহ এ ধরণের আন্দোলনের ধারণা রাখা ও পদক্ষেপ নেয়াতে অনেক পিছিয়ে। আমরা মনে হয় উলটোপথে হাঁটা শুরু করেছি এখন।
প্রামাণ্যচিত্রটির শেষ কথাগুলো ছিল,
“যুদ্ধ শেষ, দেশ স্বাধীন। বিজয়োল্লাস ও উৎসবের এই আনন্দমুহূর্তেও আমার মনে পড়ছে সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের চেহারা- সেই বালকযোদ্ধার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চাহনি, মনে পড়ছে বৃদ্ধ কৃষক সেই মুক্তিযোদ্ধার কথা, আমি কোনদিন ভুলবনা গামছা মাথায় সেই স্বাধীনতার সৈনিককে-যার সাহসিকতা ছিল কিংবদন্তির মত কোনদিন ভুলবনা অকুতোভয় সেই বীর শহীদদের যারা প্রাণ দিয়েছিল বিজয় ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু এই মহৎ আত্মদানের কথা মনে রাখাই কি যথেষ্ট? প্রশ্ন তবু থেকে যায়। আমরা কি পারব তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখতে? আমরা কি পারব তাদের সেই মহান লক্ষ্য সমুন্নত রাখতে?”
পারিনাই মনে হয় আমরা, পারছিনা… 🙁
সবশেষে প্রয়াত (বিশেষণটা লিখতে খুব কষ্ট লাগল, শূন্যতা টের পাচ্ছি বুকে) চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং চিত্রপরিচালক ক্যাথরিন মাসুদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা রইল যারা আমাদেরকে মুক্তির গান শোনাবার আন্তরিক তাগিদ থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে লেয়ার লেভিনের পাতাল কক্ষে বাক্সবন্দী ও নানা দেশের ধারণকৃত এই ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে স্বল্প পরিসরে বাস্তবতার এই শিল্পটি উপহার দিয়েছেন।
লীনা, প্রথমেই ধন্যবাদ এতো চমৎকার একটি সৃষ্টির এমন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায়। খুব দরকার তারেক মাসুদ এর রেখে যাওয়া কাজগুলো নিয়ে বিশ্লেষন।
প্রত্যেকটি কাজের আগে তাঁর ও ক্যাথরিনের সম্মিলিত গ্রন্থণায়, এক একটি চলচ্চিত্র যেন চলতে ফিরতে থাকা এক একটি বই।
মুক্তির গান’এর ফুটেজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রচার এবং প্রচার পরবর্তী সময়ে কি উৎকট জটিলতার মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হয়েছে, তা অকল্পনীয়। লেয়ার লেভিনের কাছ থেকে ফুটেজগুলো নিতে তাঁদেরকে পোহাতে হয়েছে বিশ্বস্ততা তৈরীর হাজারো ঝামেলা। পাওয়ার পর শুরু এডিটিং এর বিপুল কষ্ট। এতদিন ধরে স্টোরে রাখা এনালগ ক্লীপগুলোর বেশীরভাগেরই শব্দ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রয়োজন হল আবার সাউন্ড রেকর্ডিং এর। অরিজিনাল আর্টিস্টদের খুঁজে বের করে তাঁদের এ কাজে রাজী করানো এবং যথাযথ রেকর্ডিং। কিন্তু এত বছরের ব্যাবধানে অনেকেরই স্বর বদলে গেছে, যা কচি বয়েসের ফুটেজের সাথে খাপ খায় না। সেগুলোকে আবার প্রয়োজনীয় এডিটিং করা লাগলো। যতদূর জানি, তারিকের ভয়েস বোধহয় অবিকৃত ছিল, খুব বেশী এডিটের দরকার হয় নি। পালা করে চাকরি করতেন তারেক আর ক্যাথরিন, একজন চাকরিতে গেলে অন্যজন এডিটিং রুম সামলাতেন। এত কিছু করে নির্মানের পর সম্প্রচারের সময় তো আরো হাজারো বিপত্তি। অনেক সংগ্রামের পর মুক্তি পেল মুক্তির গান।
এ যেন চলচ্চিত্র নয়, দুই চিত্রকবি মিলে মহাকাব্যের লিখন।
কতদিন যে ফিল্ম দেখি না। ভাবছি মুক্তির গান দেখেই ফেলব, আর বোঝার চেষ্টা করব এটা নিয়ে এত হৈ চৈ কেন।
একটা টক শো তে দেখেছিলাম বা শুনেছিলাম তারেক ও ক্যাথেরিন এর কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ ছিল,কিন্তু এখানে ভিডিও ফুটেজ এ শুনলাম তারা বিয়ে করেছিল ঢাকায় । আমার ভুল হয়েছে, এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা পারথি। তারকে এর অকাল প্রয়ান এ তার শেষ অসমাপ্ত কাজ গুলো যদি ক্যাথেরিন এর দ্বারা সম্পন্ন হয় আমরা একটু সান্তনা পাব।
আমি ভাবতাছি ক্যাথেরিন মাসুদ যেমনে গড়্গড়াইয়া বাংলা কয় শুদ্ধ ভাবে, আমি বাংলায় জন্মাইয়াও তা পারি না কেন?…:-s । অহন কি ইংলিশ ছাইরা আবার বাংলা শিখুম?… :-X । মহিলা এত সুন্দর বাংলা বলেন ,খুব ভাল লাগ্ল।একটা টক শো তে শুনেছিলাম,তারেক মাসুদ বলছিলেন,শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি যে তারেক নাকি ক্যথেরিন কে বিয়ে করেছিলেন গ্রিন কার্ড পাবার জন্য, যা ছিল কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ। কিন্তু সেই কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ ই পরিনত হয়েছিল ভালবাসার পূর্ণ পাত্র যাতে অবগাহন করে দুজনে তৈরি করেছেন মুক্তির গান সহ আরও অনেককিছু। ভালবাসার মূল্য ছিল,আছে,থাকবে। 🙂
চমৎকার রিভিউ হয়েছে (Y) । আলোচনাগুলোও উপভোগ করলাম।
“মুক্তির গান” কি ইউটিউবে রয়েছে? যদি না থাকে তবে কেউ কি ইউটিউবে আপলোড করতে পারবেন? আমি জানি অনেকে কপিরাইটের প্রসঙ্গ তুলবেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে এই ধরণের অসমান্য শিল্পগুলোকে কপিরাইট জাতীয় বানিজ্যকরণের মাঝে না আটকিয়ে যত সংখ্যক বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যায় সেটাতেই এই শিল্পগুলো পরিপূর্ণতা পায়।
ইউটিউবে পেলাম। প্রথম খন্ডের লিঙ্ক উপরে আকাশ মালিক ভাই দিয়েছিলেন 🙁 । (http://www.youtube.com/watch?v=vpSR4NSgvrw)
একদম ঠিক তাই, (Y) , যতক্ষন পর্যন্ত না ওই দুইপক্ষ নিজেদেরকে “মানুষ” নামের শব্দটির জায়গায় বদলিয়ে বা রূপান্তর করে ততক্ষন পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্তে বা গন্ত্যবে পৌঁছাতে পারব বলে মনে হয় না।আর সাংস্কৃতিক দৈন্যতা তো মনে হয় একটি চলমান প্রক্রিয়া,এটার সাথে প্রতিনিয়ত,প্রতিদিন নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করাও একটি চলমান প্রক্রিয়া।ঘসামাজা করেই তো আমরা “মানুষ” নামের উচ্চমার্গীয় মনুষ্যত্বের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি বা পারার কথা। কিন্তু এই পথ বড়ই কঠিন,রূঢ ও কন্টকময় পথ।এমন রূঢ পথ হলেও এছাড়া যে আমাদের সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নাই। এবং সে-টাই আমাদের গন্ত্যব।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
(Y) :clap (O)
আলমগীর কবিরকেও আমরা হারিয়েছিলাম, সড়ক দুর্ঘটনায়। তারিক মাসু্দকেও হারাতে হলো। আমরা হারাতে হারাতে হারাতে, তারপর নিজেরাই হারিয়ে যাই। যে ছবিটা করতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু, সে ছবিটার কি হলো, কেউ কি এগিয়ে এলো,তা নিয়ে তেমন কোন মন্তব্য দৃষ্টিগোচর হলো না।
স্রোতের পাঁকে হারিয়ে গেল মূল স্রোত।
@স্বপন মাঝি,
যে ছবিটি করতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হলো, সে ছবিটি তো আজীবন অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে। আজকালকার যে নির্মাতাই হোকনা কেন, অথবা অতীতের সত্যজীৎ, কেউ কি কখনোই তা নির্মান করতে পারবে যা তারক মাসুদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন?
হুমায়ুন আজাদের একটি বইতে বোধ হয় পড়েছিলাম যে লাইট বাল্ব যদি ঠমাস আল্ভা এডিসন সৃষ্টি না করতেন, তবে অন্য কেই তা করতো। কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। কারন মানুষের জীবনের যা জরুরী, তা নিজ তাগিদেই কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে সৃষ্টি করেনই। তাছাড়া বিজ্ঞান একটি সূত্রে চলে বলে একজন বিজ্ঞানীর কিছু সৃষ্টির মাঝে মৃত্যু ঘটলে অন্য কেউ সূত্র অনুযায়ী ও কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গিতাঞ্জলী অথবা শেষের কবিতা যদি উনি অসম্পন্ন রাখতেন, এবং তা অন্য কেউ সম্পন্ন করতেন তাহলে কি তা আদৌ কখনো শেষের কবিতা হত? অথবা হুমায়ুন আজাদের নারী, সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে?
শৈল্পিক সত্তা এমনই একটি সৃজনশীলতা যার ঘাটতি কখোনই অন্য একজন পূরণ করতে পারেনা। কখনোই হবার নয়। তারেক মাসুদ যদি সবিস্তারে লিখেও যেতেন উনি কিভাবে চলচিত্রটি নির্মান করতে চান সেটা অনুসরন করে যা নির্মান হবে তাও ওটা তারেক মাসুদের হবেনা। তার দেখনী ভঙ্গী, তার নিজস্ব দৃষ্টির গভীরতা অন্য একজন কি করে দেখবেন। ক্যাথরিন মাসুদ, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব, যেই হোন না কেন ওনারা সবাই নিজের আঙ্গিকে, নিজস্ব ভঙ্গিতে, নিজেদের অন্তরদৃষ্টি দিয়ে চলচিত্রটি করবেন। ওটা তারেক মাসুদের হতে পারেনা।
রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আজাদ, তারেক মাসুদ বিখ্যাত আর প্রতিভাবান বলে নয়, বলতে চাচ্ছি যে কোন সৃজনশীল মানুষের একটি রচনা, মনোজগতের চিন্তা, এবং তা প্রকাশ করার উপায় এ পৃথিবীর কারো হাতেই নেই যদ্দিন অব্দি মানুষের মস্তিষ্কে ভিডিও ক্যামেরা বসানোর উপায় বের করা হচ্ছে, যাতে করে সব কিছু মুভির মতন দেখা যাবে।
শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্রষ্টাই জানে কিভাবে কোন বাক্যের পর কি আসবে, কিভাবে সমাপ্তি ঘটবে, মস্তিষ্কে কোন চিন্তা খেলা করছিল কখন, তাই আপনার আমার অসম্পন্ন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অশেষ ডকুমেন্টারি আপনি আমি ছাড়া যে শেষ করবে এটা তাদেরই হবে। “স্বপন মাঝি” অথবা “ছিন্ন পাতার” নয়।
আমার কামনা,- যে চলচিত্র তারেক মাসুদ শেষ করে যেতে পারলেন না, তাতে তারেক মাসুদকে যথাযোগ্য প্রাপ্য সম্মান এবং যথার্থ জায়গায় তার প্রাপ্য নাম ও কৃতিত্ব দিয়ে বাকি টুকু যিনি করবেন তার নামেই যেন বলা হয়, তাকেই যেন কৃতিত্ব দেয়া হয়। কারন যা তারেক মাসুদের নয়, সেটা তার বলাটা তার প্রতি যতটা অসম্মানজনক, তেমনি অসম্মাজনক তার মেধা, সৃজনশীলতা আর প্রতিভার প্রতি।
@ছিন্ন পাতা,
আপনার পর্যবেক্ষণ প্রশংসনীয়।
@স্বপন মাঝি,
প্রশংসনীয় না বলে সরাসরি প্রশংসা করে ফেললে কিন্তু মন্দ হত না, কি বলেন? :))
@কাজী রহমান,
কবি আর নবীদের চোখে কতকিছু, মাঝিদের চোখে তো এক নদী। প্রশংসার ব্যাপারে আমি বড় কৃপণ। কি করবো, নবী বা কবি কোনটাই তো হতে পারলাম না, তাই।
@স্বপন মাঝি,
😀 😀 😀 😀 😀
নদী জিনিশটাই বা কম কিসে? গানখানি শুনেছেন নিশ্চই-
“আমার দুই চোখে দুই নদী ।।
তুমি দু’হাত ভরে পানি নিও
তৃষ্ণা লাগে যদি,
দুই চোখে দুই নদী”
@স্বপন মাঝি, আমি একটা পত্রিকায় কাজ করি, সেখান থেকে ক্যাথরিন মাসুদের কাছে যাবার ইচ্ছে আছে ছবিতার ব্যাপারে খোঁজ নিতে। এটা খুব সৌভাগ্যের কথা যে ক্যাথরিন তারেকের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন তার কাজে ও চেতনায় তাই তার পক্ষে “কাগজের ফুল” কে তারেক মাসুদ লেভেলের সবচেয়ে কাছাকাছি তৈরি ক্যাথরিন ছাড়া কেউ পারবেনা। তবে “ছিন্ন পাতা” যা বলেছে তাও ভীষণ সত্যি
@লীনা রহমান,
এ নিয়ে লেখালেখির ধারাবাহিকতা, আশা করছি।
ঢালাওভাবে সব উচ্চবিত্ত নারীদের সম্পর্কে এমন ধারনা পোষন করলেতো বলতে হবে নারীদের উচ্চ শিক্ষারও দরকার নাই, উচ্চবিত্ত হওয়াও তাদের জন্য মানা। উচ্চবিত্ত, উচ্চশিক্ষিত নারী মানেই কি পরগাছা?
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না। ঢালাওভাবে কোথায় বলা হলো? পরগাছা শ্রেণী উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তে বেশি সেটাই বলেছি আমি। উচ্চশিক্ষিত নারী যদি চাকরিবাকরি না করে অন্যের ঘাড়ে বসে খায়, তবে সেই উচ্চশিক্ষা কোন কাজে আসবে সমাজের? শিক্ষিত সন্তান তৈরিতে? ব্যাস, দায়িত্ব শেষ। অশিক্ষিত নারীর অন্যের উপর নির্ভরশীলতায় আমি দোষ দেখি না। কারণ তার আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শিক্ষিত নারীর পরগাছা হওয়াটা আমার কাছে অমার্জনীয় অপরাধ।
কাজ না করা পরগাছা নারী উচ্চবিত্ত হয় কী করে? স্বামীর বদৌলতে?
@ফরিদ আহমেদ,
ঢালাওভাবে হয়ত বলেন নি কিন্তু পরগাছা শ্রেণী উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তে বেশি, এই বেশীটা কত পার্সেন্ট বললে ঢালাও বলা যাবেনা সেটাও পরিষ্কার নয়।
উচ্চশিক্ষিত নারীদের সবাই চাকরিবাকরি যে ইচ্ছাকৃতভাবে করছেনা, সে সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত হলেন কি করে? তাদের চাকরী না করার পিছনে বহু কারন আছে। আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে,
১। উচ্চবিত্ত পরিবার একজন শিক্ষিত বৌ পরিবারে নিয়ে আসে নিজেদের স্ট্যটাস বাড়াবার জন্য। কিন্তু সেই শিক্ষিত বৌ চাকুরী করতে চাইলে তাকে বাঁধা প্রদান করা হয়। কারন পরিবারটি মনে করে ঘরে শিক্ষিত বৌ থাকবে, কিন্তু সেই বৌ চাকুরী করলে পরিবারের অসম্মান ও অপমান হয়, ফলে বৌটির চাকুরী করার ইচ্ছা থাকলেও কোন উপায় থাকেনা।
২। এমন অনেক শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত স্বামী আছেন যারা তাদের শিক্ষিত বৌ চাকুরী করবে এটা কখনো চিন্তা করতে পারেনা। তাদের ধারনা বৌ চাকুরী করলে লোকে ভাববে তারা টাকা-পয়সা কম উপার্জন করছে, তাই বৌকে চাকুরী করতে দিচ্ছে। তাই শিক্ষিত বৌটির আর চাকুরী করা হয়ে উঠেনা।
৩। উচ্চবিত্ত স্বামীর বৌ যদি চাকুরী করে ধনী স্বামীটি মনে করে লোকে মনে করবে তাদের বিত্ত-বৈভবের কিছুটা অংশ তাদের বৌয়ের। স্বামী নিজে উচ্চবিত্ত বলে এটাকে সে অপমানজনক মনে করে।
৪। উচ্চবিত্ত স্বামীরা মনে করে তাদের বিত্ত-বৈভবের সমাজকে শো করবার দায়ীত্ব তাদের স্ত্রীদের। স্ত্রীরা চাকুরীতে নিয়োজিত থাকলে সেটা করার সময় পাবেনা বিশেষতঃ যখন স্ত্রীর ইনকামটি আয়ের দিক থেকে স্বামীর কাছে বিশেষ কোন গুরুত্ব বহন করেনা।
৫। অনেক স্বামী বৌকে চাকুরী করতে দিতে চায়না এই মনে করে যে তা হলে বৌ স্বাধীন হয়ে তাকে কম মান্য গন্য করবে।
৫। আবার এমনও হয় যে যদি বৌটি স্বামীর তুলনায় বেশী ইনকাম করতে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হয় তখন বৌটিকে চাকুরী করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়।
৬। এমন হয় যে স্বামী শিক্ষিত বউকে চাকুরী করতে দিতে চায়না বৌকে বাইরের পুরুষ লোকের সাথে মিশতে দিতে কমফোর্ট ফিল করেন না অথবা বৌকে স্রেফ সন্দেহ করেন।
৭। ধর্মীয় গোড়ামীর জন্য অনেক পরিবারে শিক্ষিত মেয়ে-বৌদের চাকুরী করতে দেয়া হয়না।
দেখুন, সমাজের অসুস্থ মানসিকতার শিকার মেয়েদেরকে তাদের উদ্ভট আচরনের জন্য এককভাবে তাদেরকে দোষ দেয়া আর ধর্মকে দোষ না দিয়ে ধর্মান্ধ লোকজনকে তাদের কার্য্যকলাপের জন্য এককভাবে দায়ী করা এক কথা। আপনি হয়তো বলবেন, শিক্ষিত মেয়েগুলো প্রতিবাদ করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেই পারে। কিন্তু সমাজ পরিবর্তন না হওয়া পর্য্যন্ত সে ক্ষেত্রে বেশীরভাগ শিক্ষিত পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর আর ঘর-সংসার করা হয়ে উঠবেনা, ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাবে, সেটা হবে সমাজের জন্য অন্য আরেক যন্ত্রনা।
তবে শিক্ষিত মেয়েরা যে প্রতিবাদী হচ্ছেনা তাও নয়, এদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সমাধানতো আর রাতারাতি হয়না। শুধু মেয়েরা প্রতিবাদ হয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে আসলেই হবেনা ছেলেদের রিয়েলাইজেশন ও সহযোগীতা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি, কারন নারী-পুরুষ নিয়েই সমাজ, নারীরা সমাজের বাইরের কেঊ নয়।
তবে হ্যা, কিছু শিক্ষিত মেয়ে হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করেনা কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম হিসাবে ধরা যায়, আর সেটা ছেলেদের বেলায়ও প্রযোজ্য যেটা আমি আগের মন্তব্যে উল্লেখ করেছিলাম। আর জগতে কোন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পাওয়া যায়না বলুন?
স্বামীর বদৌলতে স্ত্রী উচ্চবিত্ত হলে বা স্ত্রীর বদৌলতে স্বামী উচ্চবিত্ত হলে দোষের কিছু দেখছিনা। 🙂
@ব্রাইট স্মাইল্, আপনার মন্তব্য বেশ ভাল লাগল, তবে আমার মনে একতা প্রশ্ন জাগে…একটা মেয়ে, যে শিক্ষিত এবং নিজের যোগ্যতাতেই একটা চাকরি করবে বা কাজ করবে যদি সে করে, কিন্তু একজন শিক্ষিত ও যোগ্য মানুষকে যখন চাকরি করতে “দিতে” হয় তার চেয়ে হতাশাজনক আর কি আছে!
@লীনা রহমান,
ঠিক বলেছেন, খুবই হতাশাজনক। এই করতে “দিতে” – ই যদি না হতো তা হলে বোধ হয় এই সব যুক্তি তর্কের অবতারনা করে সময় ক্ষেপন করার দরকার পরতোনা। ধন্যবাদ।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমি সাধারণত খুব পরিষ্কার করে কথা বলার চেষ্টা করি। কোনো ধরনের অস্পষ্টতা আমার কথায় বা লেখায় থাকুক, এটা আমার কাছে খুবই অপছন্দের বিষয়। আমি ঢালাওভাবে মেয়েদের সম্পর্কে কোনো কথা বলি নাই। সেই সাথে এটাও বলছি যে, উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষিত নারীদের মধ্যে স্বামীর ঘাড়ে বসে তার অন্ন ধ্বংস করার পরিমাণ বাংলাদেশে লক্ষ্যণীয় পরিমাণে বেশি। আপনি চাইলে হয়তো পরিসংখ্যানও দেওয়া যাবে। তবে আমার মনে হয় না সে প্রয়োজন আছে।
আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত শ্রেণীর অশিক্ষিত মেয়েদেরও অনেককেই শিক্ষাদীক্ষার অভাব এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে বাইরের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এই গোত্রের মধ্যে আমাদের অনেকেরই মা-খালা, নানি-দাদিরা পড়ে। এদের প্রতি বিন্দুমাত্রও ক্ষোভ নেই আমার। কারণ, এরা বাস্তবিকই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিষ্ঠুর বৈষম্যের নির্বাক শিকার। আমার সমস্যা এই উচ্চশিক্ষিত পরিশ্রমবিমুখ সবাক শ্রেণী্টিকে নিয়ে। আজকের নখদন্তহীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুঠোকে ধাক্কা দিয়ে আলগা করে দেওয়ার সুযোগ থাকার পরেও এরা পরাজিত মুষ্টিযোদ্ধার মত লড়াইয়ে ক্ষান্ত দিয়ে লেপটে থাকতে চায় প্রতিপক্ষের গায়ের সাথে। তারপর তারস্বরে চেচায় এই বলে যে, আমিতো মুক্ত হতেই চাই। কিন্তু ও আমাকে আটকে রেখেছে।
আমি মাঝে মাঝে মুক্তমনায় নারীদের পক্ষ নিয়ে লেখা লোকজনের যুক্তি পড়ে খুব অবাক হয়ে যাই। ভেবে পাই না যে, তারা কি নারীদের সম্মান বাঁচাতে চাইছেন নাকি ডোবাতে চাইছেন। আজকে আপনার এই সাতটা পয়েন্ট দেখেই সেরকমই মনে হচ্ছে আমার। আপনি হয়তো ভেবেছেন যে, এগুলো দিয়ে ফরিদ আহমেদকে তর্কে পরাস্ত করা যাবে। অথচ কী ধরনের আত্মঘাতী কথাবার্তা লিখেছেন তা হয়তো স্বপ্নেও খেয়াল করেন নি আপনি। আমার খুব ইচ্ছা আপনার এই মন্তব্যটাকে তসলিমা নাসরিন বা আকিমুন রহমানের কাছে পাঠানোর। তাদের প্রতিক্রিয়াটা দেখতে পেলে দুর্দান্ত একটা ব্যাপার হতো।
শুরুতেই বলে নেই যে, উচ্চশিক্ষিত নারীর কাজ না করার পিছনে এই সাতটা পয়েন্টে আপনি পুরুষদের যে দায়দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন, তার সাথে সম্পূর্ণ একমত আমি। আমাদের সমাজ এখনো পুরুষশাসিত। প্রচুর পরিমাণে পুরুষ মানুষ এখনো এই ধরনের মধ্যযুগীয় মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারে নি। কিছুদিন আগের রুমানা মঞ্জুরের ঘটনাটাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
পুরুষদের দোষ স্বীকার করে নিয়েই এবার আসুন আমরা নারীর ভূমিকা দেখি। আপনি যে সমস্ত নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন, এরা সবাই-ই উচ্চশিক্ষিত এবং স্বচ্ছল পরিবারের নারী। এরা কেন পুরুষদের এই সমস্ত অযৌক্তিক আচরণকে মেনে নিচ্ছে? কেন বিয়ে করছে এই সমস্ত অসুস্থ পুরুষদের? কেনই বা বছরের পর বছর সংসার করে যাচ্ছে তাদের সাথে? এটা না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটাই কি সঠিক যুক্তি ছিল না? ঢাকা শহরে একা একজন মেয়ের টিকে থাকাটা একটু কষ্টকর, কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। বিশেষ করে এরা যেহেতু অনগ্রসর সমাজের সদস্য নয়, বরং অগ্রসর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে মোটামুটি শক্তিশালী পরিবারের সদস্য। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে অনগ্রসর মানসিকতার মানুষদের অযৌক্তিক চাহিদার কাছে নতি স্বীকারকে আমি যদি মেরুদণ্ডহীন এবং আত্মমর্যাদাবিহীন আচরণ বলে উল্লেখ করি, সেক্ষেত্রে কী আমাকে দোষ দেওয়া যাবে? পরিশ্রমী জীবন হয়তো এদের কাছে পছন্দের কিছু নয়। বরং পরগাছার জীবনটাই অনেক বেশি জরুরী এবং লোভনীয়। রোদ, জল, বৃষ্টি্র সম্মিলিত আক্রমণে সুবর্ণ ত্বক বিবর্ণ হোক তা হয়তো কাম্য নয় তাদের। সেকারণেই ব্যক্তিত্বের এত বড় অপমানকে মেনে নেয় মনের গহীনে সানন্দে, নিরানন্দময় মুখশ্রীর মুখোশ দেখিয়ে।
দীর্ঘ বিতর্কে ভুলে গিয়েছেন যে আমরা কী নিয়ে বিতর্ক করছি। আমার কোনো মন্তব্যেই আমি মেয়েদেরকে এককভাবে কোনো কিছুর জন্য দায়ী করি নি। বরং অযোক্তিকভাবে সবকিছুতেই পুরুষতন্ত্রের গায়ে দোষারোপের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করতে গিয়েই এই বিতর্কে আগমন ঘটেছে আমার। মেয়েদের ত্রুটিবিচ্যুতিও মেয়েদের দোষ নয়, সবই ছেলেদের দোষ, এই রকম এক তরফা আচরণ আমি এই বিতর্কে আসার আগ পর্যন্ত বেশ জোরেসোরেই চলছিল।
না হলে না হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একজন পুরুষের সাথে ঘর করার ইচ্ছা একটা শিক্ষিত মেয়ের হয় কী করে? প্রয়োজনে ডিভোর্স হবে। সংসার টিকিয়ে রাখার দায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজই মেয়েদের উপর চাপিয়েছে। সেটাকে অনুসরণ করার এত আগ্রহ কেনো আপনাদের? পচে যাওয়া সমাজে যন্ত্রণা তৈরি হয় শুদ্ধ সমাজ প্রসবের মানসে। সেই যন্ত্রণা এড়াতে চাইলে বিশুদ্ধ সমাজ পাবেন না কখনো।
আমি দেখি। এটা কাটাকুটি খেলা নয় যে একজনের দোষ দিয়ে আরেক জনের দোষ কাটাকুটি হয়ে যাবে। পরজীবী পুরুষ যেমন আমার কাছে পরিত্যাজ্য, তেমনি নুয়ে পড়া নারীও নিপাতিত একজনই।
@ফরিদ আহমেদ,
অপ্রাসঙ্গিক হলেও না বলে পারছি না যে
বাংলা ভাষার উপর আপনার অধিকার প্রায়ই আমাকে চমৎকৃত করে।
@ফরিদ আহমেদ,
না, তর্কে পরাস্ত করবার আশায় আমি কখনও মন্তব্য করিনা। আর এখানে কোন প্রতিযোগিতা হচ্ছেনা যে হার জিৎ-এর প্রশ্ন আসছে। আপনি আপনার মতামত দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার মতামত জানাতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই সবার সাথে শেয়ার করেছি। 🙂
@ব্রাইট স্মাইল্,
এই লাইনটার জন্য লজ্জিত আমি। দুঃখপ্রকাশ করছি।
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক শিক্ষিত নারীদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও চাকরী না করতে পারার যে সাতটি কারণ ব্রাইট স্মাইল দেখিয়েছেন এগুলোর সাথে আমি প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত। স্বাধীনতার অন্তরায়গুলো অনেক সময় অতিক্রম করা যায়না; উপায় জানা থাকলেও, ইচ্ছা থাকলেও। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে বাস করা অসম্ভব হলেও অনেক সময় তা করতে হয়, সন্তানের ভবিষয়ৎ ও বাবা মায়ের সম্মানের দিকে তাকিয়ে। আমাদের সমাজে ডিভোর্সী মেয়েকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। সব অপরাধ তার উপরে বর্তায়। তাই অনেকেই এসব ভেবে সব অন্যায় হজম করে জীবনটা পার করে দেয়। আমরা অনেক পরিবর্তনের কথা বলতে পারি, লিখতে পারি। কিন্তু বাস্তবায়িত করতে পারিনা।
@তামান্না ঝুমু,
মেয়েদের এই হাল ছেড়ে দেওয়া কম্প্রোমাইজিং এটিট্যুডটাই না পছন্দ আমার। এনিমেশন ফিল্ম রিও দেখেছেন কি না জানি। ওই ছবির মুক্তিপিয়াসী পাখি জুলের মত নিরন্তর খাঁচা ভাঙার রক্তাক্ত প্রচেষ্টাটা দেখতে চাই আমি। খাঁচাওয়ালাকে কতগুলো নিস্ফলা গালি দিয়ে আর কবে সে সদয় হয়ে খাঁচার দরজা খুলে দেবে সেই আশায় বসে থাকলে চলবে না।
@ফরিদ আহমেদ,
রক্তাক্ত প্রচেষ্টাটা হয়তো আপনার দৃষ্টিগোচর হয়না, কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আমাদের মতো আরো অনেকে দেখতে পান। সমাজের রক্ত চক্ষুকে যদি অগ্রাহ্য করার সাহস মেয়েরা না দেখাতো তা হলে তামান্না ঝুমু, লীনা রহমান এবং তাঁদের মতো আরও অনেক বাংলাদেশের মেয়েরা এখনও খাঁচায় বন্ধি হয়ে থাকতেন। খাঁচার বাইরে এসে এইভাবে নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ তাঁরা জীবনেও পেতেন না। এটাইতো অগ্রগতি।
আর খাঁচাওয়ালা সদয় হয়ে খাঁচার দরজা খোলার দরকার নাই নিজেদের স্বার্থেই খাঁচার দরজাটা তাদের খুলতে হবে, অন্যথায় বোকার স্বর্গে বাস করে নিজের পায়ে নিজের কুড়াল মারার সামিল হবে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমার চোখের দৃষ্টি ওতোটা খারাপ নয়, ম্যাম। কারো কারো মত একটা চোখ দিয়েও দেখি না আমি সমাজকে। পরিপূর্ণভাবে দুচোখ মেলে দুনিয়াটা দেখি আমি। তামান্না ঝুমু, লীনা রহমান, ব্রাইট স্মাইল, ছিন্ন পাতা, গীতা দাস, নীল রোদ্দুর, কেয়া রোজারিও সবাই-ই দৃষ্টিগোচর হয়। দৃষ্টিসীমায় আসে না শুধু সুবর্ণ কংকন পরা ফর্সা রমণীরা। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার লিস্ট দেখে আপনার দৃষ্টির ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি।
উল্টোটি বললেন, আপনার দৃষ্টিসীমার মধ্যেতো শুধু সুবর্ণ কংকন পরা ফর্সা রমণীরাই বিরাজ করেন। তা ভাই, সবাইকে বাদ দিয়ে চুড়ি পরা সুন্দরী রমণীদের প্রতি এই এতো মাথা ব্যথা তথা এই পক্ষপাতিত্বের কারনটা কি? :-Y এটা একটা ভাবনার বিষয় বটে। 🙂
@ব্রাইট স্মাইল্,
কেন? কেন? আকাশ মালিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে?
এইভাবে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়াটা কি ঠিক হলো? 🙁
হরমোন নামের এক হতচ্ছাড়া হতভাগাই এর জন্য দায়ী। আমি নই। 🙂
তাতো বটেই। :))
@ফরিদ আহমেদ,
না, আপনার অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার কায়দা দেখে। তবে কি জানেন, দৃষ্টির অভাব থাকলেও ক্ষমতাধর ব্যক্তিগন প্রায়শঃ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেই অভাবটা পুরন করেন।
অন্ধকারে ঢিল ছুড়ি নি আমি। ক্ষমতারও কোনো অপব্যবহার করি নি। এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি খুব ভালো একজন পর্যবেক্ষক। ভাষার অলিগলিতে কে কীভাবে হাঁটে, সেটা পর্যবেক্ষণ করাটা আমার এক ধরনের শখ। ভাষা হচ্ছে একজন মানুষের ডিএনএ। সব পরিচয় ওখানেই লুকোনো থাকে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার শখটা লেখকদের জন্যে ভয়ের কারণ হয়ে যাবেনা তো?
এক সময়ে আমিও ওভারনাইট দুনিয়াটাকে বদলে দিতে চাইতাম। বড় হতাশ ও বিচলিত হতাম বিশেষ করে সুবিধাপ্রাপ্ত নারীদের আচরণ দেখে। সমাজে অকর্মট, পরাগাছা, পরজীবী, অলস, ভীরু, ইউজলেস, অপদার্থ নামে পরিচিত, সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে আমার কর্মজীবনের বেশ কিছুটা দিন কেটেছে। তামান্না ঝুমু, তার কিছুটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, ইংল্যান্ডে একবার খাঁচার পাখিদের মুক্ত আকাশে উড়ে যেতে দিয়ে তাদের জীবনটাকেই ধ্বংসের সম্মুখীন করে দিয়েছিলাম। খুব কাছে থেকে খাঁচার বাহির ভেতরটাকে ভাল করে দেখার সুযোগ পেয়েছি। এখন বলি পাখিটা বাঁচুক, খাঁচার শিকল একদিন ভাঙ্গতেও পারে।
মাদ্রাসা থেকে সকলকে তারেক মাসুদ হয়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়, সকলকে তাসলিমা, হুমায়ুন আযাদ হওয়া সম্ভব নয়। একজন পদার্থ বিজ্ঞানের প্রফেসর, তার কিসের অভাব? সে মসজিদে মাথা কুটে মরে কোন অশ্ব ডিম্বের লোভে, কোন ভুতের ভয়ে?
মুক্তমনায় দীর্ঘ দিনের চলার পথে একটা বিশ্বাস মনে ধারন করতে পেরেছি যে, এখানে কেউ ওপরের মিথ্যা স্তুতি বা প্রশংসাকাতর নয়, কেউ হার-জিত প্রতিযোগী নয়। সবটুকু শ্রম, চেষ্টা সাধনা শুধুই অপরের তরে। ব্যতিক্রম থাকতে পারে অস্বীকার করিনা, তবে তা ধর্তব্য নয় মোটেই অন্যান্য ব্লগের তুলনায়। এখানে আপনার আমার, আমাদের সকলের উদ্দেশ্য বা গন্তব্য একটাই, রাস্থা বা বাহনটা হয়তো ভিন্ন হতে পারে।
অহেতুক এই আশংকা কেন? এই পৃথিবীতে তিন বিলিওন ম্যাম আছে আর তিন বিলিয়ন শ্যাম আছে। যদি বলি কেউ ম্যাম আর অন্য কেউ শ্যাম। ভয়ের ভেলা ভাসবে কেন ভাবসাগরে?
@ফরিদ আহমেদ,
যেখানে নিশ্বাসের শব্দ হলেই প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে সেখানে কি অধিকারের কথা বলা যায়? কেউ যদি হাইজাকার বা দস্যুর কবলে পড়ে সে কি দস্যুদেরকে যুক্তি ও মানবতার কথা বুঝিয়ে বলতে পারে? অনেক মেয়ের জীবন এখনো হাইজাকারের কবলে। কন্যা সন্তান অনেকেরই কাম্য নয়। অনেক মধ্যবিত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে পুত্র-কন্যার বৈষম্য সুস্পষ্ট। স্বয়ং মা বাবাই যদি সন্তানের প্রতি লিঙ্গ ভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারে সেখানে অন্য কারো কথা আর কী বলবো? আমি এমন কিছু সত্য ঘটনা জানি যেসব শুনলে সবার রূপকথা মনে হবে। এসব ঘটনা নিয়ে লেখার ভাষা আমার নেই। তবুও খাঁচা ভাঙার চেষ্টা করতে হবে সাধ্য মত। হাল ছাড়া যাবেনা।
@তামান্না ঝুমু,
আইভি যে দেশের সবচেয়ে সেরা সন্ত্রাসীটাকে ধরে ল্যাং মেরে কাদায় ফেলে দিলো, তারপরেও সাহসের অভাব কিসের?
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার কাছে হয়ত অবিশ্বাস্য মনে হবে; আমাকে এক সময় হ্যালোয়িন কস্টিউম(বোরখা) পড়তে হতো। নামাজ কোরান পড়ার অভিনয় করতে হতো। নিরুপায় ছিলাম জীবনের বেশির ভাগ সময়। এখন যেভাবে লিখছি, এভাবে লিখতে পারবো তা স্বপ্নেরও অতীত ছিল।
আমরা দেখে শিখবো, ঠ’কে শিখবো, জীবনের দায়ে শিখবো। এভাবেই আমরা আমাদের স্বাধীন জীবন গ’ড়ে তুলবো বিন্দু বিন্দু ক’রে।
@তামান্না ঝুমু,
হা…হা…হা… আজ সত্যি সত্যি হ্যলইন । বুরখা ত দারুন হ্যালইন ড্রেস আসলেই। নারী – পুরুষ ,অধিকার বঞ্চনা এগুলো খুব জনপ্রিয়। অধিকার ত কেউ কাউকে দেয় না যেখানে করতিত্ত আর সাশন এর প্রস্ন জড়িত। নিজের অধিকার নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে নারীকে। বাংলদেশে সরকারী চাকুরি করতে গিয়ে দেখেছি কোন বিভাগে মহিলা করমচারি বা কর্মকর্তা থাকলে বাকি সব পুরুষ দের কাজ হোল ঐ মহিলা বা মহিলাগন কে নিয়ে চর্চা করা।আর সবচেয়ে মজাদার রসালো আলাপ হোল যদি কোন ভাবে কোন নারী কর্মকর্তার চরিত্রের খুত কেউ আবিস্কার করতে পারে,তাইলে ত কথাই নেই। আমি ত ভয় এ বউ কে বি,সি,এস ই দিতে বারন করেছিলাম। এখন নাকি অবস্থা অনেক ভিন্ন মানে উন্নত হয়েছে। আর বিদেশে আসার পর আমার বউ আমার আগে চাকরি পেয়েছে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও। এই ক্যানাডার মত জায়গাতেও দেখেছি অনেক বাঙালি পুরুষ ড্রাইইভিং লাইসেন্স পান নাই কিন্তু বউ পেলে গাড়ি কিনেন না,বউ চালাবে পাশে বসে থাকব?।।লজ্জা না!!। আমি এখানে পৌরুষ (!!) দেখিয়েছিলাম আমি লাইসেন্স পাবার আগেই গাড়ি কিনেছিলাম এবং বউ এর পাশে বসে অনেকদিন গাড়ি কিভাবে চালায় শিখে তারপর লাইসেন্স পেয়েছিলাম। এখনো পারত পক্ষে চালাই না( ফাকি দেই)। উপজুক্ত পরিবেশে মনে হয় মানুষের সহনশিলতা বাড়ে। :))
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার পূর্বের মন্তব্যেই উল্লেখিত ম্যাম শব্দটা আমার ছিদ্রান্বেষী (কপি-রাইট কুলদা রায়) চোখ এড়ায়নি।
তারেক মাসুদ এবং মুক্তির গান নিয়ে লেখার জন্য লীনাকে ধন্যবাদ।
মুক্তির গানের সাথে সাথে এর তৈরির পটভূমিটাও বাংলাদেশিদের জন্য জানা জরুরী। কীভাবে নিউইয়র্কে বসে তারেক এবং ক্যাথেরিন দিনের পর দিন কষ্ট করেছেন এই ছবিটা বানাতে, তার প্রামাণ্য দলিল রয়েছে চার খণ্ডের এই ইউটিউব ভিডিওতে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=afd0tOsWLIs
httpv://www.youtube.com/watch?v=tstHk4_FL6U
httpv://www.youtube.com/watch?v=KI5EvmN_psU
httpv://www.youtube.com/watch?v=QjHV5h9uzo8
@ফরিদ আহমেদ,
ওটাই ডিভিডিতে ছিল “মেকিং অফ মুক্তির গান” নামে। ওটার কথাই বলছিলাম প্রথম মন্তব্যে। অসামান্য!
****জানতামনা ইউটুয়বে পাওয়া যায়। আপনাকে ধন্যবাদ। এখন অনেকে অনেকে অনেকে একটি অতুলনীয় সৃষ্টি তৈরীর স্বাদ টুকু পাবেন। 🙂 ****
ভালো লাগলো। তারেক মাসুদের আরেকটি ডকুমেন্টারি “মুক্তির কথা” পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখেছিলাম।
কিছু ছেলেদের মানসিকতার সমস্যা আছে তারা মেয়েদের মানুষই মনে করেনা,সাথে কিছু মেয়েরাও এই জন্য দায়ী। ঘুরতে গেলে হাটতে পারবেনা,হাটার গতি হবে পিপড়ার মত,ভালো দোকান ছাড়া খেতে পারবেনা এইরকম ন্যাকামি কিছু মেয়ে করে,ট্রাকে করে ঘোরাঘুরিতো অনেক দূরের ব্যাপার। অবশ্য আপনার মত ভয়ংকর “মহিলা”র কথা আলাদা :)) :)) :)) ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আপনার অভিজ্ঞতার মেয়েটির কথা জানি না। তবে ছোটবেলা থেকে মেয়েদের হাইহিল পরিয়ে অভ্যাস করানোই হয় হাঁটার গতি রোধ করার জন্য। আর শুধু হাইহিল কেন,মেয়েদের গজেন্দ্র গমনই যে সমাজের পছন্দ।
যাহোক, ধান ভানতে শিবের গীত শুরু করলাম।
‘মুক্তির গান’ নিয়ে লীনার পর্যালোচনাটি ভাল লেগেছে।
@গীতা দাস,
:clap :clap :clap
লীনা তার লেখায় দুটো দিকই সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। একজায়গায় বলেছেন-
বুঝা গেল সময়ের একটা ফ্যাক্টর আছে। কী ঘটেছে, কী হয়েছে এই মধ্যকার সময়ে? বিসমিল্লাহ বসেছে সংবিধানে, রাষ্টের মুসলমানি করানো হয়েছে, ব্যাঙ্গাচির মতো গড়ে উঠেছে মসজিদ আর মাদ্রাসা, খুন করা হয়েছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক কর্মী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিকে। এরপর কী আশা করেন ৩৪ বছর এই পরিবেশে বড় হওয়া নারীদের কাছ থেকে? এর পরেও আমাদের দেশের নারীরা বেরিয়ে এসেছে রাস্থায়, আন্দোলন করেছে রাজপথে, এমন প্রতিকুল পরিবেশেও তারা স্থান করে নিতে পেরেছে সংসদ থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমুহে। নারীর দিকে নয়, মগজপচা, ঘুনে ধরা সমাজের দিকে তাকান। দুনিয়ার কোন নারী সেচ্ছায় অবরোধবাসিনী হয়না, পুরুষের পেছনে হাটতে চায়না, এ সব পুরুষের স্বার্থে পুরুষের তৈরী শিক্ষা ও ব্যবস্থা।
@আকাশ মালিক, আমার বোনকে তার স্বামী চাকরি করতে দেবেনা, আমি এটা নিয়ে আপত্তি তোলায় সে বলেছে, “তোমার হয়ত চাকরি করা লাগতে পারে, কিন্তু আমার কখনো চাকরি করার মত অভাব পড়বেনা”… সে অলরেডি পড়াশোনা বাদ দিয়েছে। এসব নিয়ে কথা বলায় সে এবং তার স্বামী নাকি অপমানিত বোধ করছে, এবং এসব কথাবার্তার কারণে আমার বোন এখন আমার সাথে কথা বলেনা। বকরী একটা। কি আর বলব বলেন… আমার বোনের মত নারীরা অনেকেই নিজের পায়ে যে কিভাবে কুড়াল মারছে…রাগ লাগে রাগ… :-Y
@আকাশ মালিক,
একটু দ্বিমত আছে। মেয়েরা সব মুক্তবাতাসে বিশ্বাসী মুক্তবিহঙ্গ, পুরুষরা তাদের জোর করে খাঁচায় আটকে রেখেছে, এই মতবাদে পুরোপুরি বিশ্বাসী নই আমি। কিছু অলস, অকর্মণ্য, পরজীবি মেয়ে আছে যাদেরকে মুক্ত করে দিতে চাইলেও আকাশে উড়ার বদলে বরং দুশ্চিন্তায় পুরো আকাশটাই ভেঙে পড়বে তাদের মাথায়। এর পিছনেও জানি যুক্তি টানবেন এই বলে যে, দীর্ঘদিন উড়তে না দিয়ে তাদের উড়ার স্পৃহাটাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শুধু বলে রাখি, ওতেও একমত নই আমি। উড়ার জন্য মুক্ত আকাশ এখনো হয়তো হয় নি, তবে ডানা ঝাঁপটানোর মত ক্ষুদ্র পরিসর ঠিকই তৈরি হয়েছে। কিন্তু ওই ডানা ঝাঁপটানিটাও দিতে অনিচ্ছুক অনেক অবলারা।
যুগে যুগে বিহঙ্গের মত বন্ধনমুক্তির বর্ণিল স্বপ্ন নিয়ে জন্মেছে বহু তেজস্বিনী নারী। এদেরকে সমর্থন দেওয়াতো দূরের কথা, বরং তাদের ডানা ভেঙ্গে দেবার চেষ্টা পুরুষদের চেয়েও বিপুল উদ্যম নিয়ে করে গিয়েছে তারা। অবারিত অনিশ্চিত আকাশের চেয়ে সোনার খাঁচার সুনিশ্চিত অবমাননাকর আশ্রয় যে তাদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
শিক্ষাসফরে গেলে মালসামালে বোঝাই বিশাল আকৃতির ব্যাগ নিতে হবে। অথচ, সেই ব্যাগ নিজে টানার সামর্থ্য নেই। আগে থেকেই ধরে নেয় যে, কলুর বলদ ছেলেরা আছে। সেই বলদেরাই এই ব্যাগ টানবে। এরকম বহু নজির দেখেছি আমি। বাথরুমটাও খুঁজে করতে হয় ছেলেদের। শুধু খুঁজে বের করাই নয়, আগে গিয়ে সেটি ব্যবহার উপযোগী কি না সেই ইন্সপেকশনও করে আসতে হয় তাদের। মেয়েদের এইসব স্বার্থপর এবং পরাশ্রিত আচরণ নিশ্চয়ই সমাজ শেখায় না। অবশ্য অতি উৎসাহী বলদ ছেলেপেলেও দেখেছি, যারা মেয়েদের জন্য এইসব ফাইফরমাশ খেটে বা তাদের ব্যাগ টেনেই জীবনকে ধন্য বলে মনে করে।
@ফরিদ আহমেদ,
এই নিয়ে শুধু এক পক্ষকে দোষ দেওয়া যায়না। এমন অনেক অকর্মণ্য পুরুষ আছে যারা দিব্যি শ্বশুরের টাকায় সংসার চালায়, কিন্তু ভাবখানা দেখায় যে সে তার যোগ্যতাবলে বৌ পালছে। কিছুমাত্র উপার্জন না করে শ্বশুরের টাকায় বড়লোক হয়ে গাড়ী বাড়ী হেঁকে বেড়ায় এমন পুরুষলোকেরও সমাজে অভাব নাই। তাদেরকে মুক্ত করে দিতে চাইলে কি তারা মুক্ত হবে? শ্বশুরের টাকা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মাথায়ও আকাশ ভেঙ্গে পড়বে যদিও কিছু কাজ করে নিজে চলার সামর্থ্য তাদের আছে। আবার নিজে কিছুমাত্র উপার্জন না করে বউয়ের টাকায় বসে বসে খায় এমন পুরুষমানুষও আমাদের সমাজে বিরল নয়। আমাদের সমাজে আদিবাসী পরিবারের কাঠামো অনুযায়ী মহিলারা পুরুষদের থেকে বেশী কাজ করে বলেই জানি। সেখানেওতো পুরুষদের পরজীবি বলা যায়।
আমি বলতে চাইছি বসে বসে খাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হলে ছেলে কি মেয়ে, মানুষ মাত্রই সে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে শূধু মেয়েদের দোষারূপ করা এক পক্ষীয় নীতি অবলম্বন করা হয়ে যায়না?
@ব্রাইট স্মাইল্,
একপক্ষকে দোষ দিলাম কোথায়? পুরুষ পরজীবিদের কথাতো এখানে আসে নি। এলে ঠিকই বলতাম। এই যেমন, আপনার পুরো বক্তব্যের সাথেই একমত আমি। ঘরজামাইদের জোরসে ঘাড় ধাক্কা দেবার ক্ষেত্রে আমার অন্তত কোনো আপত্তি নেই।
পুরুষরা পরজীবি হলে, সেটা তাদেরই দোষ। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে মেয়েরা পরজীবি হলেও শুনতে হবে যে সেটা নাকি তাদের দোষ নয়, পুরুষরা তাদেরকে পরজীবি বানিয়ে ছেড়েছে। আরে বাবা কে কী করেছে সেই কথা না শুনিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেখাও না। না পারো অন্তত চেষ্টাটা যে করছো, সেটা অন্তত দেখাও। বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে হেশেল ঠেলার মানেটাতো বুঝি না আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
আমার আপত্তি আছে। আমি চাই বাংলাদেশের সব পুরুষমানুষগুলো ঘরজামাই হয়ে যাক। আমাদের দেশে মেয়েগুলোকে যে উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা হয়, সেটা এইভাবে কিছু মাত্র হলেও উসুল করা যাবে। 🙂
আমি সানন্দ চিত্তে রাজি। আমাকে দিয়েই শুরু করতে পারেন। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
একমত।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ভারতবর্ষে বিয়ের পরে মেয়েরাই সাধারণত শ্বশুড়বাড়িতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করে। এটা একটা চিরায়ত নিয়ম হিসেবে বহুকাল যাবত প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে যদি ব্যাপার উল্টো হয়ে থাকে মানে কোন ছেলে যদি শ্বশুড়বাড়িতে বাস করে তাহলে সে সমাজের কাছে ধিকৃত হয়। তাকে ঘর জামাই আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু কেন?শ্বশুড় বাড়িতে থাকা কোন বৌকে ত ঘরবৌ বলা হয়না এবং এটা তার জন্য লজ্জার ব্যাপারও নয়! অনেক বিত্তবানের বৌকে দেখেছি ২৪ ঘন্টায় ঘুমানো, রূপচর্চা করা,বরের টাকায় শপিং করা, বিউটি পার্লারে গিয়ে পড়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নেই। বাসায় কাজের লোক রাখে ৫/৬ টা। সাংসারিক কোন কাজও করেনা। সমাজে তাদের বেশ কদর। পুরুষ অকর্মণ্য হলে ধিক্কারের পাত্র হয়। নারী কেন নয়?
@তামান্না ঝুমু,
এই কেন-এর উত্তর আপনি আমি সবাই জানি। শুনুন, যাকে মানুষ হিসাবে গন্য করা হয় তার কর্মক্ষমতার বাহাদুরীর যেমন প্রশংসা করা হয় তেমনি অকর্মণ্য হলে ধিক্কারের পাত্র হতে হয়। এটাই নিয়ম, মানুষ নামক জীবের জন্য এটা প্রযোজ্য বলেই জানি। তা হলে বুঝুন সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
কিন্তু এ অকর্মণ্য পরগাছা-জীবন অধিকাংশ নারীর কাছে কাঙ্খিত ও গৌরবের কেন? পরের ঘাড়ে চড়ে বিনাকাজে, নিশ্চিন্তে অন্নধ্বংস করতে পারাকে ওরা গৌরবান্বিত ও সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করে কেন?
@তামান্না ঝুমু,
না, অকর্মণ্য পরগাছা-জীবন কোন সুস্থ্য লোকের কাম্য হতে পারেনা, আমি হলপ করে বলতে পারি কোন নারীর কাছেও তা কাম্য নয়। যেটা আপনার কাছে আপাতঃ দৃষ্টিতে “অধিকাংশ নারীর কাছে কাঙ্খিত ও গৌরবের” বলে মনে হচ্ছে সেটা আমার মনে হয় সমাজের অসুস্থ মানসিকতায় নারীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে এভাবে কিছুটা নিজকে সুখী রাখার চেষ্টা করে, কিছুটা নিজকে ধোঁকা দেয়, কিছুটা অভিনয় করে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
অনেক নারীর কাছে এই পরগাছা জীবন শুধু কাম্যই নয়, আরাধ্যও বটে। আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত নারীদের মধ্যে স্বর্ণলতিকা হবার সোহাগি প্রবনতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যণীয়। সেই তুলনায় নিম্নবিত্তের অশিক্ষিত নারীরা বরং অনেক বেশি শ্রমপ্রেমী, আয়াসবিবর্জী। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনজীবিকায় লিপ্ত তারা। কোথাকার কোন পুরুষতন্ত্র তাদের চলার পথে কাঁটা ছিটিয়ে রেখেছে কী রাখে নি, তার থোড়াই কেয়ার করে তারা।
@ফরিদ আহমেদ,
থোড়াই কেয়ার করার সময় কোথায়? উচ্চবিত্ত নারীদেরতো ভরন পোষনের চিন্তা নাই, তাই পুরুষতন্ত্র নিয়ে চিন্তা করার সময় পায়। নিম্নবিত্তের অশিক্ষিত নারীরাতো পুরুষতন্ত্রের যন্ত্রনা মাথা পেতে নিয়ে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতেই জীবনটা পার করে দেয়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরুষ মানুষটি নারীটির কাঁধে সংসারের সমস্ত বোঝা চাপিয়ে সটকে পরে। জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের যে পরিমান পরিশ্রম করতে হয় তাতে সমাজ তাকে কিভাবে ট্রিট করছে বা সে কতটা বঞ্চনার শীকার হচ্ছে তা ভাববার ফুরসুত কোথায়? ভাববার যদি ফুরসুত পেতো তা হলে থোড়াই কেয়ার ঠিকই করতো।
পরগাছা শ্রেণীর পুরুষতন্ত্র নিয়ে ভাবনা একধরনের সুখি সুখি দুঃখবিলাস। সোনার খাঁচার ক্ষেত্রটাকে আরেকটু বড় করার দাবীই সেখানে মূখ্য। আরেকটু বেশি গয়নাগাটির জন্য আদুরে বিড়ালের গড়গড়ই শুধু। শৃঙ্খলমুক্তির সৎসাহস সেখানে অনুপস্থিত। খাঁচা ভাঙাতো অনেক দূরের ব্যাপার।
দেখুন, এরা বঞ্চিত, পুরুষতন্ত্রের শিকার এতে কোনো সন্দেহই নেই। এর থেকে বের হবার মত শিক্ষাদীক্ষা তাঁদের নেই। কিন্তু সে কারণে এঁরা হাতপা গুটিয়ে বসে থাকেন না। থোড়াই কেয়ার করাদের মত এঁরাও যদি চিন্তাশীল হয়ে পুরুষদের ঘাড়ে বসে খেতেন, তাহলে আমাদের সমাজটাই অচল হয়ে যেতো এতদিনে। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নীরব, কিন্তু কার্যকর প্রতিবাদ এঁরাই করছেন। প্রাসাদে বসবাসকারী চক্ষুলাজহীন চিন্তাশীল চড়ুই পাখিরা নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
ওরা ননীর পুতুল। উচ্চবিত্ত নারীরা পরষ্পরের সাথে শাড়ী গহনার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত থাকে। নিজেকে দামী আবরণ ও ধাতব পদার্থের দামী আভরণে সুসজ্জিত করে বড় বড় পার্টিতে সামর্থ্য প্রদর্শন করে বেড়ায়। একটা দুর্মূল্য শাড়ী ২য় বার পরলে ওদের মর্যাদা ধুলিস্যাৎ হয়।এটা দাও, ওটা দাও,অরো দামী দাও, সবার চেয়ে দামীটা দাও ক’রে ক’রে বর বেচারার জীবন বিপন্ন করে তোলে। অনেক বর আবার বৌয়ের মাত্রাহীন চাহিদাকে নিজের বিত্ত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম মনে করে।
তাদের মধ্যে নারী পুরুষের বিভেদটাও তুলনামূলক কম। ধর্মের কঠোর নির্দেশাবলীও ওরা কম মেনে চলতে পারে হোকনা সেটা পেটের দায়ে। ধর্মগ্রন্থের দুর্নীতি ওরা জানেও না মানেও না।
@ফরিদ আহমেদ,
নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। এতো কথা হয়েছে এখানে তা তো খেয়াল করি নাই, আসলে বাইরে ছিলাম। অনেক অনেক কিছু বলেছেন, কিছুটার সাথে একমত, কিছুটার সাথে পুরোপুরি নই। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি- আমাদের দেশের নারীর উপর (বিশেষ করে মুসলিম সমাজে) ধর্ম, প্রথা, সংস্কার ও সমাজের (অবশ্যই পুরুষ রচিত) নীতি রীতি, বিধি-বিধানের প্রভাব মানবেনই না? আমি তো একই নারীকে ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন সমাজে ভিন্ন আচরণ করতে দেখেছি।
দুইটা সমবয়েসী ছেলে ও মেয়েকে সমান সুযোগ সুবিধা, সমান শিক্ষা ও পরিবেশে বড় হতে দিলে মেয়েটা কি অবরোধবাসী, পরগাছা জীবন বেছে নিবে? যে মেয়েটা ছোটবেলা তার সমবয়েসী ছেলেটার সাথে বল নিয়ে, বন্দুক নিয়ে কাড়াকাড়ি করলো, বড় হয়ে সে ছেলেটার চরণতলে বিনা কষ্টে, সহাস্যে সব জমা দিবে, তা আমার বিশ্বাস হয়না। এক সময় খালে বিলে দৌড়ে ঝাপটে যে মেয়েটা মাছ ধরতো, বড় হয়ে সে ঘাটেই যেতে পারেনা, তাকে বানাবেন মুক্ত-বিহঙ্গিনী? শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীর প্রতি আপনার ক্ষোভ। কিন্তু এরা কি সমাজ সংস্কৃতি, ধর্ম-বলয়ের বাইরে বড় হয়েছেন? স্রোতের উলটো পথে চলার মতো ব্যতিক্রম সব জায়গায়ই আছে।
পশ্চিমা দেশের কর্মজীবী নারীদের সাথে আমাদের দেশের নারীদের তুলনা করলে কেমন চিত্রটা পাওয়া যায়? বাংলাদেশের নারীরা দেখে নাই, কী মুল্যায়ণ করেছে সমাজ আমাদের বিরাঙ্গনাদের? আমি মনে করি সামাজিক এই সমস্যাটার জন্যে সমাজ ও রাষ্ট্রই বহুলাংশে দায়ী। বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যে দোষে নারী যতটুকু দোষী, পুরুষও ততটুকু দোষী।
বুড়ি আঙ্গুল উঁচায়ে একমত (Y) । আমার বউ সেটা খুব ভাল জানে।
খাইছে, মোল্লা মানুষ, পুরুষবাদী শিক্ষায় বড় হয়েছি এখন কই যাই?
বলতে পারি, অন্তত আমার বেলায় সম্পূর্নই ভুল। আমি নারীবাদি না পুরুষবাদি জানিনা, তবে দৃশ্যত নারীপক্ষের কথা বলার পেছনে রয়েছে অনেক বাস্তব তিক্ত অভিজ্ঞতা, রয়েছে নারী দমন-নিপীড়নের করুণ কাহিনি ।
আপনাকেই বরং পালটা একটা কথা জিজ্ঞেস করি। একই বাংলাদেশে একই শ্রেণীর নারীদের মধ্যে কেউ কেউ পরগাছার জীবন বেছে নিচ্ছে, আবার কেউ কেউ কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজেরাই উপার্জক হয়ে উঠছে। কেন?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল একটা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। ওই বিভাগে আবার মেয়েদের সংখ্যাধিক্য ছিলো অকল্পনীয় পরিমাণে। আমাদের ছেলেদের চেয়েও অনেক উন্নত সুযোগসুবিধা, পরিবেশ পাওয়া এবং বিত্তশালী হওয়ার পরেও মেয়েগুলোকে দেখেছি পটাপট প্রবাসী পাত্রের গলায় মালা দিতে।
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীর প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আপনি এবং ব্রাইটস্মাইল বুঝে কিংবা না বুঝে আমাকে পুরো শ্রেণীর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছেন। ঘটনাটা তা নয়। শিক্ষিত অলস এবং অকর্মা নারীর প্রতিই আমার সকল ক্ষোভ নিহিত। এই একই শ্রেণীর অনেক নারীই চাকরিবাকরি করছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। তারা পারলে অন্যেরা পারবে না কেন? সমাজ সংস্কৃতি, ধর্মবলয় কেন সবার ক্ষেত্রে কাজ করে না?
নিষ্কর্মাদের সাফাই গাইতে গেলে রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম কত কিছুকেই টেনে আনা যায়। আপনার এই যুক্তি শুনলে বাংলাদেশের কোনো নারীরই ঘরের বাইরে কাজ করার কথা নয়। অথচ লক্ষ্ লক্ষ্ নারী ঠিকই বাইরে কাজবাজ করে যাচ্ছে। পারছে না কিছু গোলগাল মেদবহুল মহিলারা। কারণ, রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম তাদের দিকে নখ দাঁত বের করে তেড়ে যাচ্ছে।
আমি দুপক্ষেরই অত্যাচার দেখেচি, দুপক্ষেরই দমন-নিপীড়ন দেখেছি। ফলে, আমার কাছে নারী পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। পক্ষ-অপক্ষ বিচার আমি করি না।
@তামান্না ঝুমু,
চড়ার মতো ঘাড় আছে তাই। এই সুন্দর বান্দরদের না চড়াটাই বরং ঘাড়ের অপচয়। আহা, মাটির পুতুল দেবী, পুজো নিবেনা? মানুষ হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। তার পুজোরও দরকার নেই কারো ঘাড়েও চড়ার লোভ নেই।
@আকাশ মালিক,
ঘাড় ত দেবীগণেরও রয়েছে। দেবীর ঘাড়ে বসে কয়জন পুরুষ নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে পারে? কারো কারো বৌ বা শ্বশুড়ের বদৌলতে সে ব্যবস্থা হয়ে থাকলে তার এত হেনস্থা কেন? আমি পুরুষদের পরজীবি হতে উৎসাহিত করছিনা। কিন্তু পরজীবি পুরুষ ও পরজীবি নারীর মধ্যে পার্থক্য কি?
@তামান্না ঝুমু,
আছে পার্থক্য আছে। একজন ধর্ম ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত পরজীবি-পরগাছা, ভোগের সামগ্রী আর অন্যজন তার উলটা।
আমার অভিজ্ঞতাও তাই বলে। (Y)
এর পরেও সামগ্রিকভাবে নারীদের উপর ধর্ম-সমাজ-পরিবেশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
@ফরিদ আহমেদ,
আমি সম্পূর্ণরুপে একমত আপনার সাথে। ঠিক আছে সমাজে হাজারো বাধা বিঘ্ন, ধর্ম আর পুরুষেরা মেয়েদের বিকাশের সব পথ কন্টকময় করে রেখেছে। কিন্তু একটি বয়শ পেরিয়ে মানসিক বিকাশের সাথে সাথে সঠিক আর ভুলের মধ্যকার পার্থক্যও যখন অনেক নারীর মাঝে আসেনা, তখন পুরুষের বিছানো কাঁটা নিজে না সরাবার মানসিকতা নিজ মস্তিষ্কেই তৈরি বৈকি। মেয়েরাই মেয়েদের সামনে যাবার পথে বাধা দেবার এবং বাধা হবার জন্য অধিকাংশে দায়ী।
সংসারের সব মারপ্যাঁচ সম্পর্কে অবগত, কোন ভাইএর বৌ কখন অপমান করলো, কে যথার্থ সম্মান দিলনা সব জানা। কেউ কোন টাকা নিয়ে ঠকাতে পারবেনা তাকে, কোন জায়গায় গেলে কোন জিনিস সস্তায় পাওয়া যায় সব জানা আছে জগৎ সংসারের। শুধু জানা নেই আত্মসাবলম্বী হবার কথা। শুধু জানা নেই নিজ কিভাবে শক্ত হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াবে সে ব্যাপারটি। “একটা ঠিকই বুঝে, অন্যটা বুঝবেনা, অ্যাঁআ তাতো হবেনা” (কাজী রহমানের ভাষায়)।
ঠিক আছে সমাজ তাকে এ জ্ঞান হতে বঞ্ছিত করে রেখেছিল। কিন্তু আমার চারপাশে শত শত নারীকে জানি, যাদের সামনে নিয়ে বসে বানান করে বুঝিয়ে, বলে, আলোচনা করে, উদাহরণ দিয়ে, গল্প শুনিয়ে বলার পরও শেষ কথা থাকে “এখন কি করবে বলো। মেয়েদের জীবন টাই ওরকম।” মানে আমার আরামের জীবন বেশ আচ্ছি, অত সমান অধিকারের দরকার নেই, আমাকে কোন কাজে মাঠে নামারো দরকার নেই। আসলে আরামের সুখ, ভোগের সুখ যখন বিস্তৃত হয় তখন তা আত্মমর্যাদা কে ঢেকে দিয়েই হয়। আর এইসবই হচ্ছে চিন্তার ব্যাপার, বোধের ব্যাপার, নিজের ভেতর হতে নিজ হতেই উঠে আসার ব্যাপার, যা চামচে করে কাউকে খাইয়ে দেয়া যায়না।
সত্যিই অধিকাংশ মেয়েই এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছে সবকিছু ধর্ম, সমাজ আর পুরুষদের উপর চাপিয়ে যে তাদের চলন্ত মেনিকিন ভাবলেও ভুল হয়না। আমার জানা একটি মেয়ের মা বাবার টাকার অভাব নেই। থাকে এ্যামেরিকা, অর্থ্যাৎ আধুনিক জীবনের সব কিছুই তার হাতের মুঠোয়। বয়েশ মাত্র উনিশ। বিয়ের জন্য আকুল। কেন? কারণ আল্টেমেটলি সেটাই করতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, কার আদেশে? জীবনটা তার, সেই ঠিক করুক কোন পথে যাবে। “না, দেশি ছেলেদের মানসিকতা তো জানই…” “দেশি অথবা বিদেশি, যে ছেলের মানসিকতা তোমার সাথে মিলবেনা, তাকে কেন বিয়ে করবে?!” জবাব – “আসলে যত যাই বলনা কেন, at the end of the day you have to be what a guy really likes, a good desi girl, otherwise he will not take care of you, and you would have to work all your life to support yourself”. এ যুগের “শিক্ষিত”, এ্যামেরিকার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, যার জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে অন্যের ঘাড়ে বসে বসে খাওয়া আর সবাচাইতে দামী শাড়ীটি পরে পার্টিতে যাওয়া তার মুখে ও কথা নিশ্চয়ই মানায়।
দেশের শিক্ষা সফরে গিয়ে ব্যাগ বহনের কথা বললেন। এখানকার নিত্যদিনের একটি ছবি দেখাই। হাই স্কুলে ঢুকেই দেখি প্রায় সব মেয়ের হাত খালি। “কি ব্যাপার তোমাদের বই কোথায়?” ওরা হেসে জবাব দেয় এতগুলো ছেলে থাকতে আমরা কেন বই ক্যারি করব! দেখাতে হবে ব্র্যান্ড নেম দামী জিন্স আর টপস। বয়ফ্রেন্ড হোক অথবা বন্ধু হোক, একটু খানি হেসে অথবা নারী সম্মানের কথা বলে অধিকাংশ মেয়েরাই তাদের সব মোটা মোটা ভারী বই অথবা বুকব্যাগ ছেলেদের হাতে দিয়ে দিব্যি হেঁটে বেড়ায়। কারন বিশ্বের সকল নারীর মতন ওরাও জানে একটু পুতুপুতু টাইপ মেয়ে হলেই ভাগ্য বর্তে যাবে।
(নিয়ম মানতে গিয়ে আমার নুতন ছেলে বন্ধুরা আমার বুকব্যাগ আর বই বহন করতে চাইলে অবাক হয়ে বলতাম “এ বইটার ওজন আমার হাতে যা, তোমার হাতে গিয়েও একই হবে! তুমি ছেলে বলে ওজন কিন্তু কমে যাবেনা”। শুরুতে হাসির পাত্র হলেও প্রশ্ন, আলোচনা, আর তর্কাতর্কির মাধ্যমে ছেলেরা বুঝে নিয়েছিল “এ পুতুপুতু টাইপ নয়”, আর মেয়েরা বুঝে নিয়েছিল “এ শুধু নিয়ম ভাঙ্গে, তাই নিজেকে না পাল্টালে এর জীবনে অনেক দুঃখ আছে, কারন কোন ছেলেই এ ধরনের মেয়ে পছন্দ করবেনা।”)
দেশের স্কুল কলেজেও কি ব্যাপারটা ছিল/আছে? হিন্দি কিছু চলচিত্রে দেখি এখানকান মতন ছেলেরা মেয়েদের বই বহন করছে। এটা কি আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে?
এত কিছু লিখে ফেললাম! :-O (তারপরো মনে হচ্ছে কই অনেক কিছুই বলিনি) (হাসি)
পুরো আলোচনা “মুক্তির গানের” বদলে হয়ে যাচ্ছে অন্য কিছুকে ঘিরে। :-s
@ছিন্ন পাতা,
তাইতো দেখছি। মুক্তির গানের বদলে নারী মুক্তির গান গাইছি সবাই। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আসল প্রশ্নটা এখানেই। কথা হলো আমরা আলোচনা করছি ইন্ডিবিজুয়েল কেইস নিয়ে, না সার্বিকভাবে নারী সমাজ নিয়ে। এ পর্যন্ত যতোটুকু আলোচনা হয়েছে, তা থেকে নির্দিষ্ট একটা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। সমস্যাটা ব্যক্তিক না সামষ্টিক, কারণটা জিন না পরিবেশ? আমরা বলছি, সমস্যার মূলে রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ। এখানে আপনার ও কিছু শিক্ষিত নারী সহযোদ্ধার মন্তব্যে প্রতিয়মান হয় যে, সমস্যাটা জৈবিক। সেটা তো ধর্মও বলে। একজন এখানেই কোন একদিন এক লেখায় বলেছিলেন- নারীরা জন্মগতভাবেই ঝগড়াটে। সন্তানের উপর রাষ্ট্র ও সমাজের প্রভাব দেখা যায় কিন্তু অনেকেই মূল উৎস মা-বাবা ও পরিবারের প্রভাবটা সচরাচর দেখেন না বা বিবেচনায় আনেন না।
আমরা অপ্রাসঙ্গিকভাবে এখানে এ নিয়ে আলোচনা না করে, আমি বরং অভিজিৎ দা’কে অনুরুধ করবো, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানে এর উপর কোন আয়াত হাদিস লিখা আছে কি না, সময় সুযোগে আলাদা ভাবে আমাদেরকে জানাতে। এই প্রশ্নের সমাধানের জন্যে বা উত্তরের জন্যে মনে হয় আমাদেরকে জীববিবর্তন মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আগে ভাবতাম, এই ব্লগে পুরুষবাদী একজনই এখন দেখি আরো আছেন।
@আকাশ মালিক, এইটা পুরুষবাদী না বাস্তববাদী কথা 😉 আমিও এর সাথে একমত।
@আকাশ মালিক,
সব পুরুষের মধ্যেই পুরুষবাদী আচরণ লুকিয়ে থাকে। সাহসীরা স্বীকার করে, অসাহসীরা অন্যের প্রশংসার আশায় অস্বীকার করে। 🙂
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমিও কিন্তু বেশিদূর হাটতে পারিনা, শারিরীক দুর্বলতার কারণে 🙁
আমি আমাদের গ্যাং এ একমাত্র মেয়ে, আমার মেয়েদের সাথে সখ্য কম অথচ আমি ঘুরাঘুরি করতে ভালবাসি (এমনও হয়েছে আমার ট্যুরে যেতে অনুমতির ভাবনা ভাবতে হয়নি কিন্তু ছেলেদের বাসা থেকে অনুমতির ঝামেলা হয়েছে :-O আসলে আম্মু বুঝে গেছে এইটা পুরাই গোল্লায় গেছে, এরে আটকানো যাবেনা, তাই সব প্রেসার যায় আমার ফার্মের মুরগি বোনটার উপর :D) ট্যুর তো দূরের কথা, আমাদের ভার্সিটিতে এমনও ছেলেমেয়ে আছে যারা যেসব মেয়েরা ছেলেদের সাথে সহজভাবে মেশে তাদের সম্পর্কে আজেবাজে ব্যাপার ভাবে, কটাক্ষ করে। মফস্বলের অশিক্ষিতের দোষ কি?
কিন্তু মেয়ে হওয়ার কারণে এবং গ্রুপের একমাত্র নারীসদস্য হওয়ার কারণে আমাকে অনেক কিছু মিস করতে হয়। এজন্য রাগে ক্ষোভে দিশেহারা হয়েছি, ভয়ানক কষ্ট পেয়েছি। তবে আমার বড় পাওয়া এই যে আমার যে বন্ধুগুলো আছে তারা আমাকে মেয়ে না বন্ধু হিসেবেই ভাবে, শুধু অনেক জায়গায় যাওয়ার সময় আমি একা মেয়ে হবার কারনে আর আশপাশকে পুরোপুরি গ্রাহ্য করার সাহস করে উঠতে পারেনা। তারপরেও আমি দমবার পাত্র নই। দেখা যাক ঠেইলা ধাক্কায়া কদ্দুর যাইতে পারি। যেইসব পাবলি্কের বেইল পাওয়ার যোগ্যতা নাই তাদের কথা মাথায় নিয়া নিজের মজা নষ্ট কইরা কি লাভ? :))
[img]http://kanakbarman.files.wordpress.com/2010/08/wwww.jpg[/img]
@লীনা রহমান,
অসামান্য ছবিটি সম্পর্কে একটি ছোট্ট তথ্য:
‘মুক্তির গান’ই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একমাত্র রঙিন ফুটেজ।
—
আমার মতে, ১৯৭১ এর ওপর নির্মিত প্রামান্যচিত্রগুলোর মধ্যে জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ এর পরেই ‘মুক্তির গান’ এর স্থান।
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। (Y)
@বিপ্লব রহমান, ছবির জন্য ধন্যবাদ। 🙂
বাংলাদেশে ৯৭-৯৮ সাল নাগাদ মুক্তির গানের কিছু কিছু অংশ বিটিভিতে খবরের আগে ও পরে প্রচারিত হত। (পুরো চলচিত্র বোধ হয় দুবার দেখানো হয়েছিল বিটিভিতে, সঠিকভাবে জানিনা) গান প্রেমি ছিলাম তাই হঠাৎ একদল শিল্পীকে এভাবে গান করতে দেখে টিভি সেটের সামনে বসে গোগ্রাসে গিলতাম এই অমূল্য চিত্রগুলি। আমি নিশ্চিত নই তখন বিটিভি লেয়ার লেভিন অথবা তারেক মাসুদ কে কৃতিত্ব দিয়ে ফুটেজ গুলো দেখাতেন কিনা। হয়ত দিতেন, কিন্তু তখনকার বয়েশে যা হয়। কে দেখাচ্ছেন তা নয়, কি দেখছি তাই মুখ্য হয়ে উঠত।
এবার দেশে গিয়ে মুক্তির গানের ডিভিডি সংগ্রহে এনেছি। পুরো চলচিত্রটি শৈল্পিক দিক হতে যতটা আকর্ষণীয়, তথ্যের দিক হতে যতটা ভরপুর, মন প্রান কে যেভাবে আন্দোলিত করে; চলচিত্রটি নির্মানের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে তৈরী “মেকিং অফ মুক্তির গান” ঠিক ততটাই অসামান্য। এমন একটি চলচিত্র “মুক্তির গান” যা প্রতিটি বাঙ্গালীর দেখা উচিত।
****আমরা পিছু হটছি। সার্বিক অর্থে। জীবনের সকল আঙ্গিকে আমরা পিছু হটছি। যেখানে মানবতা বোধ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সব কিছু হতে, সেখানে নারীদের বর্জন করা তো কিছুই নয়।****
****তারেক মাসুদের এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। এটা ওনার ভীষণ অনুচিত একটি কাজ হয়েছে, এভাবে আমাদের সবাইকে একা ফেলে চলে যাওয়া। এখন আমরা কি করব? আমাদের দেশে হাতে গোনা অল্প কজন সত্যিকারের শিল্পী রয়েছেন। অনেক অনেক মেধা আর প্রতিভা আছে কিন্তু সুযোগ আর সামর্থ্যের অভাবে কজন তারেক মাসুদে পরিণত হতে পারে? উনি একজন ছিলেন, তিনিও চলে গেলেন। রাগ হয় শুধু, অসম্ভব রাগ…কষ্ট হয় ভীষণ কষ্ট…****
@ছিন্ন পাতা, তারেক মাসুদ তো যেতে চাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পরিকল্পনা করছিলেন আগামীকাল ছবির কাজ কতটুকু করবেন…
তারেক মাসুদেরো সুযোগ ও সামর্থ্য ছিলনা, হৃদয় ছিল। এজন্যেই নিজের ও স্ত্রীর জায়গা জমি বেঁচে ছবি বানাচ্ছিলেন, একটা ডকুমেন্টারি বানাতে ৭-৮ বছরও লেগেছে (সুলতানকে নিয়ে ডকুমেন্টারি)। এই হৃদয়টাই দরকার, সুযোগ সামর্থ্য হওয়ার চেয়ে
দুষ্প্রাপ্য তথ্যগুলো নিয়ে তারেক, ক্যাথরিন আর পুরো দলের অসাধারন এই কাজটা সবার অবশ্য সংগ্রহে থাকা দরকার। এটার প্রচার প্রসারের জন্য রিভিউ দেখে ভাল লাগলো।
(Y)
মুক্তিযুদ্ধের গান ছবিটি এখনও দেখা হয় নি।
লিঙ্ক দিলে ভাল হত। এর আগে একজন লিংক দিয়েছিলেন–কিন্তু তা কাজ করে নি।
আপনার রিভিউ ভাল লাগলো।
@আবুল কাশেম,
নামটা মুক্তিযুদ্ধের গান নয় ‘মুক্তির গান’। প্রথম লিংকটা দিলাম, পরবর্তিগুলো ইউ টিউব থেকে নিতে পারবেন। তবে এর আগে এখানে তারক মাসুদ ও তার স্ত্রীর ইন্টারভিউওটা দেখুন আপনার ভাল লাগবে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=Ma477SJ6VOw&feature=related
httpv://www.youtube.com/watch?v=vpSR4NSgvrw
@আকাশ মালিক,
আমি অবাক হয়ে গেলাম ক্যাথরিন মাসুদের বাঙলায় পারদর্শিতা দেখে।
অনেক বাঙালিই এত সুন্দর পরিষ্কার বাঙলা বলতে পারে না।
কইলজাটা হাহাকার করে যখন অনুভব করি তারেক মাসুদ আর আমাদের মাঝে নাই, বুকের মধ্যে এক অনন্ত শূন্যতা বিরাজ করে যখন মনে হয় এমন সৃষ্টিশীল মানুষ আবার আমরা কবে পাব আমাদের চলচ্চিত্রের আঙগিনায়।হয়ত পাব কিন্তু তাঁর মতো তো আর পাওয়া যাবে না।তাঁর মৃত্যুটি এটি অস্বাভাবিক এবং একটি পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড। এমন হত্যাকান্ড যদি উন্নত বিশ্বে হত তা হলে যোগাযোগ মন্ত্রীর একদিকে যেমন নিজের কৈফিয়ৎ দিতে হত অন্যদিকে সাথে সাথে নিজের দপ্তর থেকেও ইস্তফা দিতে হতো,অথচ আমাদের দেশের আবুল ,আবুল কি আবল-তাবল :-X কথা বলে বেড়াচ্ছে যাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের সব পত্রিকার পাতা উল্টালেই ঐ মদনমার্কা পটলের কাতু কাতু কি হাজিবাজি বকবক করা কথা আমাদের আমজনতাকে প্রতিদিন শুনতে হয় তা যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন তারা সবাই অবগত আছেন।এমনকি ঐ ইডিয়ট নাকি ইতিমধ্যে কয়েক হাজার অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকজনদের জাল ডাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার মঞ্জর করেছেন।হায়,এমন পোঁড়া দেশে বুঝি সব কিছুই করা সম্ভব বা পান্তাভাত।জীবন এখানে কত সস্তা যেন রসগোল্লা। হায়রে কবে আমাদের অসভ্য,বর্বর নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে? আর এমন করে কত লোকজনকে নিষ্ঠুর অকাল মৃত্যুর কোলে জীবন বলি দিতে হবে?
তারেক মাসুদের তত্ত্বাবধানে করা সকল ছবি গুলি দেখার ইচ্ছে আছে।তার শুধু “মাটির ময়না” ছবিটি দেখেছি।কি অসাধারন করা ছবিটি।
লীনা, তোমার রিভিউটি দারুন হয়েছে।
(F)
“মুক্তির গান” ও ছবির পরিচালক নিয়ে যেহেতু এ লেখা তাই প্রাসংগিক বিধায় এই লিংকটি এখানে দিয়ে দিলাম।একোন অসভ্য ও বর্বর দেশে আমরা বাস করছি ? আদৌ কি আমরা সভ্য-বভ্য হবো কোনো কষ্মিনকালে ?? দেখুন আমাদের নাদুশ-নুদুশ নেতারা তাদের আচরন ও বানী আমাদের আমজনতার উদ্দেশে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন ?? :-Y
@মাহবুব সাঈদ মামুন, তারেক মাসুদের ছবিগুলোর মাঝে মাত্র তিনটিই ডিভিডি হিসেবে পাওয়া যায়, মাটির ময়না, মুক্তির গান ও অন্তর্যাত্রা। অন্তর্যাত্রাও অসাধারণ ছবি। থিম ও মিউজিক অসম্ভব সুন্দর। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য 🙂
“মুক্তির গান” শুধু মুক্তির ই গান না, মুক্তির প্রাণও বটে। এই মুক্তি শুধু দেশের মুক্তি নয় বরং মানুষ হিসেবে মুক্তির প্রেরণা।
আমরা মুক্তির গান”এ যে তরুণ সমাজ দেখি, তাদের মানবিকতা, তাদের আধুনিকতা, তাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব, মানুষ হিসেবে মানুষের সাথে সম্পর্ক, নারী পুরুষের পাশাপাশি সহবস্থান, সহযাত্রী হয়ে পথ চলার যে চিত্র আমরা দেখি তা আমাদের সংকীর্ণ মনটাকে মুক্তির পথ দেখায়। এ যেন আদর্শ তরুণ সমাজ।
আজকের তরুণ সমাজের সংকীর্ণ মনে আলো পৌঁছাক।
এত বিবর্তনের পরেও আমরা ঠিক মানুষ হয়ে উঠতে পারছিনা!