স্কুল-কলেজে জীববিজ্ঞান পড়েছি কেবল পাস করার জন্য। চোখ-মুখ বন্ধ করে গোগ্রাসে মুখস্থ করেছি আর পরীক্ষার হলে উগড়ে দিয়ে এসেছি। উচ্চ মাধ্যমিকেতো জীববিজ্ঞান নেয়ারই ইচ্ছে ছিলো না, নিয়েছিলাম কেবল ডাক্তারি পড়ার পথটা খোলা রাখতে। জীববিজ্ঞানের সুখস্মৃতি বলতে কেবল পরীক্ষার খাতায় আঁকা ছবিগুলো। দেখে শান্তি পেতাম। মনে হতো, বাহ্, এই খাতাটা দেখার মতো! ব্যস, এই হলো আমার জীববিজ্ঞান পাঠ।
ইদানিং বায়োইনফরমেটিক্স্ নিয়ে কিছু পড়াশুনা করছি। শুরু থেকেই মনের মধ্যে ভয় – বায়োলজিতো (জীববিজ্ঞান) পারি না, কতখানি এগুতে পারবো? তবে আনন্দের কথা – একটা ভাল বই পেয়েছি – Introduction to Bioinformatics Algorithms । লেখকঃ Jones ও Pevzner। তারা আমাকে অভয় দিয়েছেন। কম্পিউটারওয়ালাদের নাকি খুব বেশি বায়োলজি জানতে হয় না; যেটুকু জানতে হয় সেটুকু নাকি ১০ পাতাতেই লিখে ফেলা যেতে পারে! তবে ভাগ্য ভালো, লেখকরা ১০ পাতায় কাঠখোট্টা করে লিখেননি। অনেকটা গল্পের মতো করে লিখেছেন। যা লিখেছেন তা যে আগে জানা ছিলো না এমন নয়, তবে এমনভাবে মনে গেঁথে যায়নি আগে। জীন কোথায় থাকে তা বলেই তারা থামেননি, সাথে বলেছেন কিভাবে মানুষ ধারণা করলো যে জীন কোথায় থাকতে পারে; কেবল জীন সিকোয়েন্সের আবিষ্কারের তথ্যটুকু দেননি, বরং এই তথ্যগুলো কিভাবে বিজ্ঞানীরা বের করলেন সেই গল্পগুলোও বলেছেন। মুগ্ধ হয়ে গেলাম পড়ে। এতটাই মুগ্ধ যে, তেমন করে বাংলায় গল্প বলার দুঃসাহস জাগলো।
ছবিঃ রবার্ট হুক
জীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে যে কোষের মাঝে, সেই কোষ কিন্তু আবিষ্কৃত হয়েছে বহুদিন আগে – প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে, ১৬৬৫ সালে। রবার্ট হুক অনুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রথম দেখলেন যে, জীবদেহ কোষ নামের ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত। পরবর্তীতে স্লেইডেন আর সোয়ান বললেন, জগতে বিচিত্র যত জীব আছে সবারই দেহ গঠিত হয়েছে কোষ দিয়ে। কেমন আশ্চর্য লাগে না? সকল জীব একই ধরনের জিনিস দিয়ে তৈরি! গাছপালা, মানুষ, পশুপাখি, আরশোলা, ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সবই তৈরি কোষ দিয়ে। এটাই জীববিজ্ঞানে বিখ্যাত ‘কোষ তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। মজার কথা কি জানেন, এই কোষতত্ত্বের আগে কিন্তু লোকজন জীববিদ্যাকে বিজ্ঞানই মনে করতো না! পরে আস্তে আস্তে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, কোষ নিয়ে গবেষণাই হয়ে ওঠে জীবনের গবেষণা।
ছবিঃ কোষ
সব জীবের কোষ কিন্ত একরকম না, হাজার রকমের বৈচিত্র্য। তবে যত বৈচিত্র্যই থাকুক না কেন, তারা প্রত্যেকে একটা নির্দিষ্ট চক্র মেনে চলে- জন্ম, খাওয়া, বংশ-বৃদ্ধি ও মৃত্যু। তাদের জীবনচক্র অবিশ্বাস্য রকমের নিয়ম মেনে চলে। একটা উদাহরণ দেই – বংশবৃদ্ধির জন্য যা যা জিনিসপত্র প্রয়োজন তার সবকিছু যোগাড় করে তারপরেই কেবল প্রতিটা কোষ বংশবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়। এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে দুনিয়াতে তোলপাড় লেগে যেত। কিন্তু কোষের মধ্যে কী এমন আছে যা তার সব কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে? কী এমন আছে যা কোষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে? আসলে এসব কাজের সবই নিয়ন্ত্রিত হয় জটিল জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। এদেরকে বলে ‘পাথওয়ে’।
কোষকে অনুবীক্ষন যন্ত্র ছাড়া দেখা না গেলে কি হবে, তাদের কাজে এত জটিলতা থাকলে কি হবে, তাদের সকলের গঠন ও কাজের প্রক্রিয়ার মূল সূত্র কিন্তু একই ধরনের। জগতের সকল জীবেই তিন ধরনের অণু আছে –ডি.এন.এ., আর.এন.এ., ও প্রোটিন। কোষ কিভাবে কাজ করবে সেটার বিস্তারিত বিবরণ থাকে ডি.এন.এ. তে। আর.এন.এ. সেই বিস্তারিত তথ্য থেকে প্রয়োজনমতো কিছু তথ্য কোষের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় যেগুলো প্রোটিন তৈরির ছাঁচ হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন এনজাইম গঠন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়, এক কোষ থেকে অন্য কোষে তথ্য আদান-প্রদান করে, দেহের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। এভাবেই চলে কোষের কাজ।
কোষের কথা অনেক বলেছি, এখন বরং ঐসব ডি.এন.এ., আর.এন.এ., ও প্রোটিন কিভাবে আবিষ্কার হলো সেই গল্পে যাই।
কোষকে ভালভাবে বিভাজন করে বিজ্ঞানীরা তার নিউক্লিয়াসের ভিতর একসময় সুতার মতো ক্রোমোজোম আবিষ্কার করলো। আবিষ্কারের পর তারা অবাক হয়ে লক্ষ করল যে, একেকটা জীবের একেক সংখ্যক ক্রোমোজোম আছে। তারা ধারণা করলো, হয়তো এর মধ্যেই প্রজাতিভিত্তিক বৈশিষ্ট্যগুলোর ভান্ডার আছে।
ছবিঃ গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ও মটরশুটি গাছ
একজন ধর্মযাজকের কথা বলি। নাম গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। তিনি ১৮৫৬ থেকে ১৮৫৭ সালের মধ্যে প্রায় ২৯,০০০ মটরশুটি গাছ চাষ করেন। এসব গাছের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তত্ত্ব দিলেন যে, প্রজাতির বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ‘জীন’ দায়ী। প্রতিটা বৈশিষ্ট্যের জন্য এই জিনের ২টা অংশ থাকে। একটা আসে মায়ের কাছ থেকে, একটা বাবার কাছ থেকে। এর মধ্যে যে অংশটা প্রকট হয়, সেটাই দেখা যায়, বাকিটা লুকায়িত থাকে। মেন্ডেল জীন নিয়ে এত কথা বললেও, সেই জীন আসলে কি, কোথায় থাকে, কিভাবে কাজ করে কিছুই বলতে পারেননি।
এই জীন কোথায় আছে তা বের হয়েছে আরো প্রায় ৫০ বছর পরে। মরগ্যান নামের এক বিজ্ঞানী ছিলেন। থাকতেন নিউইয়র্কে। ব্যস্ত শহর। ওখানেতো আর বিশাল জায়গা নেই যে উনি মেন্ডেলের মতো বাগান করবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উনি বেছে নিলেন ফলের উপর বসা মাছিদের। শহুরে সংস্কৃতি বলে কথা। তবে এই মাছিদের ভাল গুণ হলো – তাদের জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং প্রজননক্ষমতা ব্যাপক, যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক প্রজন্ম পর্যবেক্ষণ করা যায়।
ছবিঃ মরগ্যান ও ফলের মাছি
তো, এই পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে মরগ্যান একটা মাছির চোখের রঙে ভিন্নতা দেখতে পেলেন। সাধারণত ঐসব মাছিদের চোখের রঙ হয় লাল, এর মধ্যে একটার রঙ দেখতে পেলেন সাদা। এই সাদা-চোখওয়ালা মাছিটাই যে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে কে জানতো। মরগ্যান খুব সতর্কভাবে এই সাদা-চোখওয়ালা মাছিটার সাথে সাধারণ মাছির ক্রসওভার ঘটালেন, সহজভাবে বললে তাদের মধ্যে প্রজনন ঘটালেন। ফলাফল ছিলো আশ্চর্যজনক, পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে সাদা-চোখওয়ালা মাছি খুব একটা বেশি দেখা যায় না, যাও দেখা যায় তাও কেবল পুরুষ মাছির মধ্যে। ততদিনে জানা হয়ে গেছে যে, এক ধরনের ক্রোমোজোম (সেক্স ক্রোমোজোম) আছে যা ঐসব মাছির লিঙ্গ নির্ধারণ করে। আর, সাদা রঙ যেহেতু কেবল পুরুষ মাছির মধ্যেই দেখা যায়, তাই মরগ্যান চিন্তা করলেন যে, চোখের রঙ নির্ধারণের জন্য যে জীন আছে তা নিশ্চয়ই সেই লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোমের মধ্যে আছে। এভাবেই বুঝা গেলো যে, জীন আছে আসলে ক্রোমোজোমের ভিতরে।
মরগ্যান কিন্তু তখনও জানতেন না জীন তৈরি হয়েছে কি দিয়ে। তবে ফলের মাছিকে কেন্দ্র করে গবেষণা চালিয়ে গেছেন তিনি তার ছাত্রদের সাথে নিয়ে। মাছি পর্যবেক্ষণের সময় মরগ্যান দেখলেন, কিছু কিছু মাছির গায়ের রঙ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন, ধূসর না হয়ে তাদের রঙ হয়েছে কালো। আশ্চর্যের সাথে খেয়াল করলেন, ঐসব মাছির পাখার গঠনও ভিন্ন। ইংরেজিতে সেই ভিন্ন গঠনের পাখাকে বলে ‘vestigial wings’। (আমি vestigial wings এর ভাল অনুবাদ করতে পারলাম না বলে এমনই রেখে দিলাম।) উনি দেখলেন এরকম কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেশির ভাগ সময় একই সাথে পাওয়া যায়, আলাদা-আলাদা ভাবে প্রায় দেখাই যায় না। এ ঘটনাকে মরগ্যান ক্রোমোজোমের একটা মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন। মা ও বাবা প্রত্যেকের কাছ থেকে একটা করে দুইটা সুতার মতো ক্রোমোজোম থেকে যখন নতুন সন্তান তৈরি হয়, তখন কোন এক জায়গায় ক্রোমোজোম দুইটা ভেঙ্গে যায়। এরপর মায়ের এক অংশ আর বাবার আরেক অংশ নিয়ে নতুন সন্তান তৈরি হয়। নিচের ছবিটার মতো।
ছবিঃ ক্রস-ওভার
উপরের ছবিতে সাদা সুতাকে যদি মায়ের ক্রোমোজোম ধরি, আর কালোটাকে বাবার, তাহলে ছবিটা থেকে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, মাঝামাঝি একটা জায়গায় ক্রোমোজোম দু’টো ভেংগে গিয়ে, এরপর সাদাটার এক অংশ কালোটার অন্য অংশের সাথে জোড়া লেগে সাদা-কালো দুইটা সুতা তৈরি হয়েছে। অন্যভাবে বললে, মায়ের ক্রোমোজোমের কিছু অংশ আর বাবার ক্রোমোজোমের কিছু অংশ মিলে সন্তানের ক্রোমোজোম তৈরি হয়েছে। একেই বলে ক্রস-ওভার। ক্রস-ওভারের কারণেই সন্তান কিছু বৈশিষ্ট্য পায় মায়ের, আর কিছু বাবার।
কি ভাবছেন? এই ক্রস-ওভারের সাথে মরগ্যানের পর্যবেক্ষণের দুইটা বৈশিষ্ট্য বেশির ভাগ সময় একই সাথে থাকার সম্পর্ক কোথায়? দাঁড়ান দেখাচ্ছি। মরগ্যান বলছেন, জীনগুলো ক্রোমোজোমের সুতার দৈর্ঘ্য বরাবর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে। দুইটা জিন যদি কাছাকাছি অবস্থানে থাকে, তাহলে তাদের একসাথে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। দুইটা জিন কাছাকাছি থাকলে ক্রোমোজোমটা হয় দুইটারই ডানে অথবা দুইটারই বামে ভাঙ্গে, মাঝে তো জায়গা কম (কাছাকাছি তো), তাই মাঝে ভাঙ্গে কম। আর মাঝে কম ভাঙ্গে বলে দুইটা বৈশিষ্ট্য আলাদাও হয় কম। দুইটাকেই তাই বেশিরভাগ সময় একসাথে দেখা যায়। আর এরকম সম্পর্কযুক্ত জিনকে বলে লিঙ্কড জিন। মরগ্যান এও বলেন যে, দুইটা জীন যত বেশি সম্পর্কযুক্ত, তত বেশি কাছাকাছি থাকে তারা।
এই যে মরগ্যান বললেন, সম্পর্কযুক্ত জিনগুলো বাস্তবে ক্রোমোজোমের মধ্যে কাছাকাছি অবস্থান করে, তার এই কথা যদি সত্য হয়, তাহলে বাস্তবে সম্পর্কযুক্ত জীনগুলো যদি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে নিশ্চয় বের করা যাবে কোন্ জীন অন্য কোন্ জীনের কাছে থাকে। ধরা যাক, ক, খ এর কাছে; আবার খ, গ এর কাছে; গ, ঘ এর কাছে। তাহলে ক, খ, গ, ঘ কে তাদের মধ্যকার দূরত্ব অনুসারে সাজালে একটা সিকোয়েন্স (ক-খ-গ-ঘ) পাওয়া যায় না? এভাবে, সম্পর্কযুক্ত জীনগুলো ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর পাশাপাশি বসালে নিশ্চয়ই জীনের একটা সিকোয়েন্স পাওয়া যাবে! এই চিন্তা মাথায় রেখে মরগ্যানের এক ছাত্র আলফ্রেড স্টুর্টভান্ট (বাংলা অনুবাদে ভুল হতে পারে, ইংরেজিতে Alfred Sturtevant) ১ম জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। কোন্ জীন কোন্টার কাছে সেটা কিভাবে বের করেছিলেন তা পরের উদাহরণটা দেখলেই বুঝা যাবে পরিষ্কারভাবে।
স্টুর্টভান্ট তিনটা জিন নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন – cn (যা চোখের রঙ নির্ধারণ করে, মাছির ক্ষেত্রে লাল নাকি সাদা), b (যা দেহের রঙ নির্ধারণ করে, মাছির ক্ষেত্রে ধূসর নাকি কালো), vg (যা ডানার ধরণ নির্ধারণ করে, মাছির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নাকি ভেস্টিজাল)। একটা স্বাভাবিক (ধূসর দেহ+স্বাভাবিক ডানা) মাছির সাথে (ধরি বাবা) কালো দেহ ও ভেস্টিজাল ডানাবিশিষ্ট মাছির (ধরি মা) প্রজনন ঘটালেন। দেখলেন, মাত্র ১৭% সন্তানদের মধ্যে এই দুই বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ পাওয়া গেছে। ৮৩% সন্তানই হয় বাবার উভয় বৈশিষ্ট্য (ধূসর দেহ+স্বাভাবিক ডানা) অথবা মায়ের উভয় বৈশিষ্ট্য (কালো দেহ+ভেস্টিজাল ডানা) পেয়েছে। তার মানে গায়ের রঙ আর ডানার ধরণ নির্ধারণকারী জীনগুলো, b ও vg, কাছাকাছি আছে। আবার স্বাভাবিক মাছি (ধূসর দেহ+লাল চোখ) এর সাথে (কালো দেহ+সাদা চোখ) বিশিষ্ট মাছির প্রজনন ঘটিয়ে দেখলেন, মাত্র ৯% (আগের দুইটার চেয়েও কম) সন্তানের ক্ষেত্রে দুই বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ পাওয়া গেছে। তার মানে দেহের রঙ আর চোখের রং নির্ধারণকারী জীনগুলোও, b ও cn, কাছাকাছি। এবং b আর cn এর মধ্যকার দূরত্ব b আর vg এর মধ্যকার দূরত্বের চেয়ে কম। এরপর cn আর vg নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন, মাত্র ৮% ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য আলাদা হয়, অর্থাৎ, cn আর vg আরো বেশি কাছে। তিনটা বৈশিষ্ট্য একসাথে করে, স্কেল অনুসারে সাজালে দেখা যায়, cn এর এক পাশে b (৯%), অন্যপাশে vg (৮%) থাকবে। তাহলে b আর vg এর মধ্যে দূরত্ব হবে ১৭% এর সমানুপাতিক।
ছবিঃ সম্পর্কযুক্ত জীনের তুলনামূলক অবস্থান
এভাবেই বাকি বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে পুরো জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করা যাবে, এভাবে ভাবলেই কেমন যেন রহস্য সমাধানের গন্ধ পাওয়া যায়, তাই না?
(আগামী পর্বে শেষ করার ইচ্ছা আছে, যদি লিখার সময়, সুযোগ ও ইচ্ছার মধ্যে সমন্বয় ঘটে।)
জটিল তত্ত্ব বেশ বোধগম্য ভাষায় লিখেছেন। কিছু বুঝলাম–কিছু না বুঝলাম। মনে হচ্ছে আরও কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
আসলে কোরান শরীফে কিন্তু ডি এন এ, আর এন এ, কোষ–এই সবকিছুই পরিষ্কার করে লিখা হয়েছে। আপনি আল্লাহর কালাম পড়ে নিন–সব কিছুই পেয়ে যাবেন। ঐ সব বিজ্ঞানিরা কিন্তু কোরান থেকেই জীববিজ্ঞান তত্ত্ব পেয়েছেন। কিন্তু ওনারা সবাই ছিলেন নাছারা–মানে খ্রীষ্টান, তাই কোরানের ব্যাপারটা চেপে গেছেন।
খুব সহজ ভাবে জীব বিজ্ঞান তুলে ধরার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
এখানে আমি একটু যোগ করতে চাই। কিছু কিছু প্রানি কোষ যাদের কোন মৃত্যু নাই। এরা পরিবেশ পেলে অনাদি অনন্ত কাল বেচে থাকতে পারে। যেমন ধরা যাক জীবানু (STAPHYLOCOCCUS)এর কথা। এরা উপযুক্ত পরিবেশ পাইলে প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর বিভাজন হয়ে বিস্তার লাভ করতে থাকে। অর্থাৎ ১টা বিভাজন হইয়া ২টা। ২টা হতে ৪টা। ৪টা হতে ৮টা। এ ভাবে অসিম কাল পর্যন্ত অসিম সংখ্যায় বিস্তার লাভ করতে পারে।এখানে মুল জীব কোষ কখনো বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেনা। বরং প্রতি বিভাজিত কোষ ই মুল কোষে পরিনত হতে থাকে।
এ ধরনের একটি জীবানু কে উপযূক্ত পরিবেশ দিতে পারলে কোন একটি সময়ের ব্যবধানে সমস্ত ভুমন্ডল কে পরিপুর্ন করে দিতে পারে।
VIRUS ও ক্রমান্বয়ে REPLICATE করে করে বিস্তার লাভ করতে থাকে।
CANCER CELL ও পরিবেশ পেলে দীর্ঘদিন বাচতে পারে।
ধন্যবাদান্ত,
আঃ হাকিম চাকলাদার
নিউ ইয়র্ক
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
নতুন কিছু জানলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ।
জীবনের গল্প অসম্ভব ভালো লাগলো। বিজ্ঞানকে গল্পের ছলে বলার সক্ষমতায় আপনিও পিছিয়ে নেই কারো থেকে এক বিন্দু।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, যেটুকু চিনি আপনার লেখালেখি আর আর মন্তব্যের মাধ্যমে। সেটুকু পরিচয়ের কারণেই আপনার কাছ থেকে এমন মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করেছে, বিশেষ করে আর কারো সাথে যে আমাকে তুলনা করেননি, সেটাতে আমি খুবই খুশি হয়েছি। অন্যের সাথে তুলনা করলে, সেই অন্য ব্যক্তিটা যত বিখ্যাত-সুলেখক-মহৎ কিংবা অখ্যাত-কুলেখক-খারাপ-ই হোক না কেন, আমার অস্বস্তি হয়। নিজ পরিচয়ে পরিচিত হতেই বেশি ভাল লাগে। আর হ্যাঁ, শুধু ভালো-লেগেছে টাইপ মন্তব্যের চেয়ে আলোচনা-সমালোচনামূলক মন্তব্য বেশি প্রত্যাশা করি। ভালো থাকবেন।
@প্রতিফলন,
বুঝতে পারছি, একটা ভুল হয়ে গেছে! তবে আপনি কতটা সহজ করে লিখেছেন বা পাঠক হিসাবে ‘জেনেটিক ম্যাপ’ এর মতো একটা জটিল বিষয় পড়তে গিয়ে আমি কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি, তা প্রকাশ করতেই তুলনাটা এসে গিয়েছিল! যাইহোক, আমি দুঃখিত আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য! পাশাপাশি, আপনার কাছ থেকে বিজ্ঞানের এমন আরো চমকপ্রদ লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
এই রকম লেখাগুলোর জন্যই তো চাতকের মত চেয়ে থাকি। লেখক খেটে খুটে মোখতাসার বানিয়ে দেন, আমরা আয়েশ করে তা চেখে দেখতে পাই। খাটা খাটুনিময় এই উপহারটার জন্য ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
@কাজী রহমান,
আচ্ছা, ‘মোখতাসার’ জিনিসটা কি? আমি খেতে চাই। 😛
@প্রতিফলন,
মোখতাসার মানে সারাংশ। আমি মনে করি দেবার মাঝেই অনেক আনন্দ। আপনার জ্ঞান ভাবনাগুলো দিচ্ছেন, তাই দেখে ভালো লাগলো। এখন খেতে চাইলে খান আর দিতে চাইলে দেন।
@কাজী রহমান,
হতাশ হলুম! কোথায় ভাবলাম খাওয়ার জিনিস, আর কোথায় কি!! এবার ঈদের দিন ঐতিহ্যগতভাবেই সেমাই খাওয়ার শখ হয়েছিল। কিন্তু হায়, এই কেউ খাওয়ালো না। 🙁 এখন খাবারের কথা শুনলেই, বিশেষত বাঙালি খাবার, চেখে দেখার শখ জাগে। 🙂
@প্রতিফলন,
…………………………ঘন্টাধ্বনি শুনিতেছি…..খড়খড়ে স্ট্যাটিকে…কে যেন কেবল খাই খাই করিচেছে…………..সূ সংবাদ শুনুনঃ
আল বাকারা 2:25
……………………ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে………………………………
শুধুই কি খাদ্য খাইবেন নাকি শুদ্ধচারিনী ইত্যাদি ইত্যাদি ………………
@কাজী রহমান,
হা হা হা 😀 মজা পেলাম। 🙂
আসলেই বাইরের লেখকরা গল্পের মত করে লেখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখেছি, যেখানে দেশি লেখকরা জটিল তত্ত্বগুলো ৪ পাতায় শেষ করে দিয়েছেন, বাইরের লেখকরা ঐ একই বিষয় বোঝাতে ৪০ পাতা খরচ করেছেন। বাইরের লেখকরা যেন রোমাঞ্চকর গল্প বলতেন মডিগ্লিয়ানি-মিলার এর বিখ্যাত তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে যেয়ে; অনেক সময়ই আমাদের মনে হতো আমাদের শিক্ষকেরা যদি সহজ করে লিখতে নাই পারেন, তাহলে অন্তত বাইরের বইগুলোর সরাসরি অনুবাদ তো করতে পারেন! কেন তারা সব বিখ্যাত বইগুলোর অংশবিশেষ গ্রহণ করে একটি সংক্ষিপ্ত ‘নোট বই’ টাইপের জগাখিচুড়ি রচনা করেন? এগুলো মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাস করা যায় হয়ত, কিন্তু জ্ঞানের খাতা থাকে পুরোপুরি শূন্য! সৌভাগ্যের বিষয় হলো, অভিজিৎ-দার মতো মানুষেরা আমাদের গল্পচ্ছলে বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলো কিভাবে বলতে হয় তার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, আর প্রতিফলন-এর মত নতুনেরা সেই পথে সার্থক-ভাবে হেঁটে চলেছেন!
এই লাইনগুলোর আগ পর্যন্ত লেখাটি ভালভাবেই বুঝতে পারছিলাম; কিন্তু এখানে এসে যেন কিছুটা হোঁচট খেলাম!
পরিশেষে, যেই ‘জেনেটিক ম্যাপ’এর নাম শুনে এসেছি এতদিন (এবং পিএইচডি-এর বিষয়বস্তু মনে করে জানার ইচ্ছাকে দমন করেছি), সে সম্পর্কে লেখক স্ব-প্রণোদিত হয়ে আমাদেরকে যে মূল্যবান ধারনা দিলেন, তার জন্য একজন নগণ্য পাঠক হিসাবে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি!
@কাজি মামুন,
বুঝা যাচ্ছে, বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। এই মনোযোগ আর সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আর, দেখি, ঐ লাইনগুলো আরেকবার অন্যভাবে লিখতে পারি কিনা।