সব মুসলমান এক ধর্ম ইসলাম মেনে চলে বলে মনে হলেও, কথাটায় সত্যের ঘাটতি আছে। মুসলমানের বিশ্বাসকে মাত্র একভাবে – চলতি বা প্রধানধারার ইসলামের বর্ণনায় – বুঝতে গেলে তাই সমস্যা ঘটে। ব্যক্তির ধর্মকে যখন তার কর্মকাণ্ড, আচারাদি দিয়ে জানতে পারা যায়, তখন দেখা যায় তারা প্রতিটাই ভিন্ন। সবার ধর্ম এক না। নামটা সবাই একই ব্যবহার করে হয়তো। ফলে একই নামের অধীন প্রধানধারাটির পুস্তকি বিবরণ থেকে বোঝার চেষ্টা করলে ধার্মিকের ধর্ম বা মন আর বোঝা হয় না।
ধার্মিক মুসলমানের একটা বড় অংশের মন বাস করে পুস্তকের বাইরে। তারা খোদায় বিশ্বাস করে। কিন্তু এই বিশ্বাস নিয়ে তারা আসলে কতোটা দার্শনিক? এদের একটা বড় অংশই আসলে খোদায় বিশ্বাসকে তাদের আধ্যাত্মিক সমস্যায় ব্যবহার করে কেবল। খোদায় বিশ্বাস তাদের কাছে কোনও দার্শনিক প্রশ্নের সমাধান হিসেবে আসে না। কিছুটা আসে হয়তো। কিন্তু তাদের খুব বড় দার্শনিক সঙ্কট নেই। অনেক অনেক মানুষেরই নেই। কারণ সেটা তাদের চিন্তাভাবনার বিষয় না। খোদায় বিশ্বাস বরং তাদের আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমাধান। অনিশ্চয়তায় অনুভূতির যে সঙ্কট, খোদায় বিশ্বাস তার সহজ সরল উত্তর। অনুভূতির সঙ্কটের সমাধানের অভাব যেহেতু তাদের ভৌত জীবনে প্রভাব ফেলে, সেই সঙ্কটের সমাধানস্বরূপ বিশ্বাসটা এক অর্থে তাদের একটা জাগতিক সমস্যারও সমাধান বলা চলে।
তারা যেহেতু দার্শনিক প্রশ্নে নিবিষ্ট থাকে না, অনিশ্চয়তাকে খোদায় বিশ্বাস দিয়ে সরলীকরণের দার্শনিক বিপদগুলো তাদের কাছে ধরা দেয় না। তাদের খোদায় বিশ্বাস ফলে অদার্শনিক, জাগতিক এবং বহুলাংশে ব্যক্তিক। ব্যক্তির নিজস্ব লাভক্ষতি ও অনুভূতিতে সে বিশ্বাস সীমাবদ্ধ। তাদের খোদা মূলত তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তারা সচরাচর ভাবতে বসে না, কোথায় সেই খোদা? বিশ্বসৃষ্টির রহস্য কী? এরা দার্শনিকতায় একেবারেই অনুপস্থিত এমন বলা উদ্দেশ্য নয়। তবে, খোদায় বিশ্বাস তাদের দার্শনিক প্রশ্নের যতোটা না সহায়, তার চেয়ে অনেক বেশি সহায় তাদের আধ্যাত্মিক প্রশ্নের। এদের পরিচয়কে সংক্ষেপে বলা চলে খোদামানা মুসলমান। এদের চেয়ে খোদায় বিশ্বাস নিয়ে দার্শনিক মুসলমানেরা বরং অনেক বেশি শঙ্কায় থাকে।
খোদামানা মুসলমানদের চেয়ে পুস্তকিরা পুরোপুরিই ভিন্ন ধর্মের মুসলমান। পুস্তকি মুসলমানেরা মুখে বলে যে তারা খোদা মানে। সেটা তাদের ঘোষণা। কিন্তু আসলে তারা যা মানে তা হলো পুস্তক। কোরান। সম্ভবত হাদিস ও অন্যান্যও। তাদের আচারাদিতে দেখা যায় এক অর্থে কোরান তাদের খোদার চেয়েও বড়। কারণ তাদের বিশ্বাস নির্ভর করে কোরানের বিশুদ্ধতার উপর। তারা খোদাকে চেনেও কোরানাদি দিয়েই। টেক্সটের মুখে। টেক্সটের বর্ণনায়। কোরান না থাকলে তাদের কাছে আর খোদা থাকে না। পুস্তকের অবর্তমানে তাদের পক্ষে খোদাকে চেনার আর কোনো উপায়ও থাকে না। তাদের বিশ্বাস, কর্ম সবকিছু কোরানচালিত। ফলে তারা যতোটা না খোদায় বিশ্বাসী, তার চেয়ে বেশি তারা কোরানে বিশ্বাসী।
অনেক মুসলমান আবার কোরানের বর্ণনার নির্দিষ্টতা নিয়ে খুব বেশি তোড়জোড় করে না। তারা ভাবে বা বলে যে কোরান একটা টেক্সট। এর নানা অর্থ হতে পারে। উদ্দিষ্ট অর্থ জানা নেই। এভাবে আসলে তারা কোরান মানতে মানতে না মানার একটা পথ তৈরি করে। অন্য দিকে কোরানে কঠোরভাবে বিশ্বাসীরা টেক্সটের অর্থে নির্দিষ্ট হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। তারা কোরানের বক্তব্যগুলোর কেবলমাত্র একটা অর্থেই প্রায় নিশ্চিতভাবে, নিশ্চিন্তে স্থিত হয়। অর্থাৎ কোরানে কঠোরভাবে বিশ্বাসীরা কেবল কোরানের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস করে না, এর একটা নির্দিষ্ট অর্থে তাদের বিশ্বাসকে স্থিত করে। কোরানের সেই বিশেষ অর্থটিই তাদের মূল বিশ্বাস। তাদের বিশ্বাসের খোদা ওই টেক্সট এবং তার সেই বিশেষ অর্থ দ্বারা নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ। মানে তাদের খোদা ঠিক অমুখাপেক্ষী না। তাদের খোদা নিজেও যেন প্রতিদিন কোরান পড়ে, কোরান মেনে চলে। তাদের খোদা পারলে কোরানের ওই অর্থবিশেষকেই প্রতিদিন সেজদা করে। এদের বলা চলে কোরানমানা মুসলমান। এরা প্রায় খোদা-না-মানা মুসলমান।
কোরানে বিশ্বাস করি করি বলেও যারা অর্থের অনির্দিষ্টতাকে সুযোগ দেয়, তারা কোরানের কোনও এক বিশেষ অর্থে নির্দিষ্ট হবার মৌলবাদিতা থেকে পলায়নের সুযোগ নেয়। অনেকক্ষেত্রে তারা এ ব্যাপারে ঠিক নিয়মানুগও থাকে না। অনেকক্ষেত্রে অর্থের অনির্দিষ্টতায় তাদের এই বিশ্বাস, পুস্তকের কর্তৃত্বে বিশ্বাসের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয়। পুস্তকের কর্তৃত্বকে তারা সামাল দেয় অনির্দিষ্টতার ঢাল দিয়ে। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তে থাকে খোদামানা মুসলমানেরা। যারা কেবল মুখে কোরানে বিশ্বাস আছে বোলে বোলে কোরানমানা মুসলমানদের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করে। কিন্তু এরা আসলে কোরান মানে না। মানে মেনে চলে না। চলে কি? তারা কোরান পড়ে না। নিজেদের জাগতিক কোনো সমস্যাই তারা কোরান মেনে সমাধান করে না। কয়েকটা প্রধান প্রথা হয়তো তারা বহন করে চলে। রুকু সেজদা করে। তারপর তাদের জায়নামাজ ভাঁজের সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতাও পলায়ন করে।
খোদামানা মুসলমানেরা কোরানে, তাতে যাই লেখা থাকুক, বিশ্বাস আছে বলে যেহেতু ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, সে নিয়ে তাদের আত্মিক বা সামাজিক বিব্রতীর সুযোগ অনেক কম। মৌলবাদী কোরানমানা মুসলমানেরা মাঝে সাঝে তাদের বিব্রত করে যদিও – আচারাদিতে কোরান না মানলে ঠিক মুসলমান হওয়া যায় না – এটা সেটা বুঝিয়ে। আর পুস্তকি নাস্তিকেরাও মাঝে সাঝে তাদের বিব্রত করে এসব বলে টলে যে – খোদা মানো কীভাবে, ধর্মেই বা কীভাবে বিশ্বাস, জানো না যে কোরানে বলা আছে অমুক সমুক তমুক খারাপ খারাপ কথা। তাদেরকে পুস্তকি বানানোর এক বৃথা চেষ্টা! যেন কোরানে সঙ্কট আছে দেখালেই তাদের ধর্ম বা খোদাবিশ্বাস টলে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস তাদের টলে কি তাতে? তারা তো কোরানই মানে না। তাদের খোদায় বিশ্বাস কোরানের উপর দাঁড়ায় না। তাদের খোদা বস্তুত কেবলই তাদের নিজ ব্যক্তিত্বের প্রতি মুখাপেক্ষী। তাদের মনে যে খোদার বাস, সে সদা মনধারীর ঘটনঅঘটন নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। তাদের খোদা তাদের মতই কোরান পড়ে না, কোরান মানে না। খোদামানা ব্যক্তির খোদা হলো ব্যক্তির-সাধ-আল্লাদ-মানা খোদা। কোরান টলে গেলে তাদের খোদা তাতে আর টলে কীভাবে? কোরানমানারাও তাই যতই বোঝাক, খোদামানারা তারপরেও কোরান না মেনেই মুসলমান। পুস্তকি যুক্তিবুদ্ধি তাদের ধর্ম না। এরা প্রায় কোরান-না-মানা মুসলমান।
এখন কিঞ্চিৎ পুস্তকি নাস্তিকদের নিয়েও বলা চলে। যারা মুসলমানের বিশ্বাসকে কোরানের যৌক্তিক, ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক ও মানবিক সঙ্কট-প্রদর্শনপূর্বক ভড়কানোর চেষ্টা চালায়। এতে কোরানমানা মুসলমানের টলার খানিক আশঙ্কা থাকে। দার্শনিক মুসলমানের বিব্রতীও মাঝে সাঝেই বাড়ে। কিন্তু কোরান-না-মানা মুসলমানের তাতে তো কিছু টলে না। অপুস্তকি মুসলমানের সামনে এই নাস্তিকেরাই বরং বেশি পুস্তকি ঠেকে। কারণ এই নাস্তিকেরা পুস্তকের বাইরে যেতে পারে না। কোরানমানা মুসলমানের মতই বিশ্বাসকে মোকাবেলা তারা করতে জানে কেবল পুস্তক দিয়ে। এবং কোরানমানা মুসলমানদের সাথে তাদের আরও আরও মিল। তারা কোরানাদি অত্যাধিক পাঠ করে। অর্থের অনির্দিষ্টতার বিপক্ষে এদের অবস্থান প্রায় কোরানমানা মুসলমানদেরই সমান। এরাও সর্বদা কোরানের প্রায় একটা নির্দিষ্ট অর্থে স্থিত হবার সাধনা করে। তারাও কোরানমানা মুসলমানদের মতো করেই বলে – ‘কোরানে স্পষ্ট বলা আছে এটা সেটা ওটা!’
কিছু পুস্তকি মুসলমানকে পুস্তকি নাস্তিক বানানো বাদে পুস্তকি নাস্তিকদের এই সকল কর্মকাণ্ড অনিবার্যভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অধিকাংশ পুস্তকি মুসলমানই দেখা যায় তাদের কথা শোনে না। যেভাবে তারা তাদের অন্যান্য ভিন্ন ভিন্ন অর্থধারী পুস্তকি মুসলমানদের কথাও শোনে না। খোদায় বিশ্বাসের দার্শনিক সমস্যা তাদের ঘাঁটায় না। কারণ, তাদের খোদা দার্শনিক না, পুস্তকি। ফলে দার্শনিকতার সঙ্কটে তাদের খোদা বিচলিত হয় না। অন্যদিকে, তাদের নিজস্ব অর্থে যেহেতু তারা স্থির বা মৌলবাদী হয়ে আছে, ভিন্ন অর্থ বা মূল্যবোধ তাদের ভেতরে জায়গা পায় না। খুনের কথা, নারী নির্যাতনের কথা তাদের টলায় না। কারণ তাদের মূল্যবোধতো তৈরিই হয়ে আছে পুস্তকের সেই বিশেষ অর্থের উপর। সেই বিশেষ অর্থে যদি খুন হয়, তাহলে খুনই মূল্যবোধ। সেই বিশেষ অর্থে নারীর প্রতি বৈষম্য ঘটলে নারীর প্রতি বৈষম্যই নৈতিক। তবে এরা যখন নাস্তিক হয়, তখনও পুস্তকে পুস্তকে অর্থের নির্দিষ্টতাই খুঁজে বেড়ায়। পুস্তকের বিশুদ্ধতার সাথে সাথে প্রথাট্রথা অবান্তর হয়ে পড়ে ছাড়া আর তেমন কিছুর তেমন আর পরিবর্তন হয় কই? এমনকি পুস্তকের বিশুদ্ধতা নাশের পরেও তো পুস্তকের অর্থনির্দিষ্টতার লক্ষ্যে কোনো হেরফের দেখা যায় না। আর খোদায় বিশ্বাস তো আগে থেকেই মূলত ছিল না।
দার্শনিক নাস্তিকেরা পুস্তকের মৌলবাদিতায় নাই। তারা খোদায় বিশ্বাসের দার্শনিক সঙ্কটকে সামনে নিয়ে আসে। তাদের চিন্তারাজ্য পুস্তকে নয়, বরং খোদার অস্তিত্ব সংক্রান্ত দার্শনিক প্রশ্নে বিরাজ করে। কখনো কখনো বৈজ্ঞানিক দার্শনিক প্রশ্নে। তাতে পুস্তকি, কোরানমানা মুসলমানের বিব্রতী কিছুটাও বাড়ে না। কিন্তু দার্শনিক মুসলমানেরা সঙ্কিত হয়। অনেকক্ষেত্রে সেটা প্রমাণের-দায়-কার আলাপে গিয়ে শেষ হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দার্শনিকেরা খোদায় বিশ্বাস করার চেয়ে না করাটায় কম সঙ্কট অনুভব করে। অনেকক্ষেত্রে দার্শনিক মুসলমানটি অজ্ঞেয়বাদী হয়ে ওঠে। অবশিষ্ট প্রথাকেও প্রায় বিদায় করে দেয়। তবে এতেও এছাড়া খুব এদিক সেদিক আর হয় না। দার্শনিক মুসলমানকে তো এমনিতেই অনেকটা অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক বলা চলে। সদা দ্বিধাগ্রস্ত। না হলে কেনো সদা খুঁজে মরে খোদাকে? নিশ্চয়ই খোদা তার মনের ভেতরে স্থির নাই।
তবে খোদামানা মুসলমানের সামনে এসে দার্শনিক নাস্তিকের যুক্তিও, পুস্তকি নাস্তিকের যুক্তির মতই বিফলে যায়। কারণ খোদামানা মুসলমান তো দার্শনিকও না। তার আধ্যাত্মিক সঙ্কটের জায়গায় তার খোদার বাস। তার কিছু কিছু বিজ্ঞানের বন্ধু মনোবিজ্ঞান, নিউরোবিজ্ঞান আর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান দিয়ে তাকে মাঝে সাঝে ধন্ধায় ফেলে দেয় বটে। সে যে খোদা মানে, সেটা সে কেনো মানে সেটার নির্বোধ কার্যকারণটা তার সামনে তারা তুলে ধরে। এতে তার চিন্তারাজ্যে কিঞ্চিৎ দুর্যোগ দেখা দেয়। কিন্তু জায়নামাজ ভাঁজ করে তার আধ্যাত্মিকতা যেমন পলায়ন করে, আড্ডা শেষেও জাগতিকতায় সবার চেয়ে দ্রুতই সে প্রবেশ করে। প্রাণী তার বিপরীত লিঙ্গকে দেখলে অনেকক্ষেত্রেই কেনো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা ভিন্নছন্দের অঙ্গ ও বাচনভঙ্গি করে, সেটা জানার পড়েও সেটা করাটা অনেকাংশেই যেমন মানুষের থেমে থাকে না, তেমনি খোদায় বিশ্বাসের নির্বোধ কার্যকারণটা জানার পরেও আধ্যাত্মিক বা আনুভূতিক সঙ্কট দেখামাত্রই খোদায় বিশ্বাস করাটা তাদের আর থেমে থাকে না।
তার নাস্তিক বন্ধুরা মাঝে মাঝেই তার একাগ্র জাগতিকতাকে মনে মনে হিংসা করে। খোদার অস্তিত্ব প্রশ্নে সর্বনিম্ন সময় ব্যয় করার ক্ষমতাটাকেও করে। কিছু আচার প্রথা বাদে খোদা তার মনে কেবল প্রয়োজনের সময়েই আবির্ভূত হয়। অন্যদিকে নাস্তিকের মনে খোদা অকাজের সময়ও উঁকি দেয় এসে। খোদাপ্রশ্নে তর্ক করে দিনের আলোর সর্বোচ্চকাল নাস্তিকেরা মানব মনে খোদার প্রকোপ জারি রাখে। মাঝে মাঝে তাই খোদামানা মুসলমানেরা যেন নাস্তিকের চেয়েও কম কম আস্তিক থাকে। সেই কম কম আস্তিকতাকে নিশ্চিতভাবে পরাস্ত করার জন্য নাস্তিকের যে মোক্ষম উপায় বাকি থাকে, সে হলো খোদা বিষয়ে তর্কও না তোলা, ভাবনাও না ভাবা। কিন্তু সে তো কেবল কদাচিৎই ঘটে। কোরানমানা মুসলমানের জুড়ি যেমন পুস্তকি নাস্তিক (যাদের ভেতর কম্যুনিস্ট নাস্তিকদের ধরা চলে), দার্শনিক মুসলমানের জুড়ি যেমন দার্শনিক নাস্তিক (খোদাপ্রশ্নে যাদের ক্ষান্তি নাই), ব্যবহারিকভাবে-খোদামানা, জাগতিক মুসলমানের কিন্তু তেমন কেবলই-জাগতিক-অপুস্তকি নাস্তিক জুড়িটা নাস্তিককুলেই মেলা ভার।
ওহ! আপনার এক একটা বাক্য যেন এক একটা টাওয়ার; চুড়ায় উঠতে অনেক কসরত করতে হয়; কিন্তু তারপর সত্য ধরতে পেরে যে অনাবিল আনন্দ হয়, তার তুলনা মেলা ভার!
পুস্তকি মুসলিম, খোদামনা মুসলমান আর দার্শনিক মুসলমানের সাথে পুস্তকি নাস্তিক আর দার্শনিক নাস্তিকের যে দ্বন্দ্ব ও নৈকট্য আপনি দেখালেন, তা এখন পর্যন্ত আর কারো লেখায় চোখে পড়েনি; তাই আমার মতে, এটি এ সংক্রান্ত আমার পড়া শ্রেষ্ঠ নিবন্ধ।
খোদামনা সাধারন মুসলিমরা যে আসলে ঐশ্বরিক সাধনার নামে জাগতিক সাধনারই চর্চা করে, এই সত্যখানি আপনি এখানে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
পুস্তকি মুসলমান বা মোল্লারা যে প্রকান্তরে খোদার পরিবর্তে পুস্তকের কাছেই আত্মসমর্পন করে বা সিজদা করে, এই সত্য এখানে পাওয়া গেল।
আবারো আপনার পাহাড়সম ওজনের বাক্য। ধরতে কস্ট হলেও বোঝার পর ব্যাপক আনন্দ হয়।
চরম হিউমার করে আপনি পুস্তকি মুসলমান ও পুস্তকি নাস্তিকদের মিল ধরিয়ে দেন।
আপনি মুসলিমদের ক্লাসিফিকেশনে শুধু এই দার্শনিক মুসলিমদের পরিচয়ই খুব একটা পরিস্কার করেননি। ডক্টর শমসের বা জাকির নায়েককে কি দার্শনিক মুসলিম বলা যায়?
দারুণ মজা পেলাম এই লেখাটা এবং ধ্রুব আর রৌরবের আলোচনা পড়ে। যে কোনো বিষয়কে অত্যন্ত গভীরে গিয়ে দেখার ক্ষেত্রে এই দুজনের তুলনা মেলা ভার।
এই আলোচনায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কাজেই নিচ্ছিও না। এইটুকুই শুধু বলে যাই যে, আপনাদের মত দার্শনিক গভীরতা আমার নেই, কিন্তু এই লেখার অনেক কিছুর সাথেই আমার ভাবনার মিল রয়েছে।
ভাই আপনি এতদিন কই ছিলেন? আমার মনেও বিষয়গুলো এভাবেই ধরা পরছে বেশকিছু দিন থেকে। কিন্তু ঠিক ভাষা জুগাতে পারছিলাম না। আপনার লেখা পড়ে দারুন উপকার হলো। আপনি যে স্টাইলে চিন্তা করেন সেটা চালিয়ে যান, আর আরও লেখা নামিয়ে ফেলেন। ধন্যবাদ।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মনস্তাত্বিক চাপ অস্বীকার করে ব্যাখ্যা, এখনো আমার বোধগম্য হয়ে উঠেনি।
পক্ষ-বিপক্ষ যতটা না পুস্তক-অপুস্তক কেন্দ্রিক তারচেয়েও বেশি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক।
@স্বপন মাঝি,
কোনও লেখার সকল বিষয় কভার করতে হবে কেনো? যেগুলো নিয়ে বলেছি, সেগুলো নিয়ে বলেছি দেখে অপরাপর বিষয় যেগুলো নিয়ে বলি নি, সেগুলো তুচ্ছ হবে কেনো? ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর যেধরনের চাপ আপনার মনে দৃশ্যমান হচ্ছে, সেগুলো আমি দেখতে পাচ্ছি না। আপনি বিস্তারিত লেখা লিখুন সে নিয়ে। বোঝার চেষ্টা করবো।
এই জুড়ি কি অর্থে প্রয়োজন? মোকাবিলা? না কি অন্য কোন দরকারে?
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
একটা লক্ষণ থেকে নানা উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়া যায়। ধরো খালি লক্ষণটাই ধরিয়ে দিলাম।
(Y)
কোরান মানা না মানা মুসলমানের পার্থক্য নিয়ে আলোচনার অংশটুকু বুঝলাম, দার্শনিকতার দ্বারা তারা কিভাবে প্রভাবিত হয় বা সেটাকে আদৌ বিশ্বাসের সাথে মেলাতে চেষ্টা করে কিনা তা পেলাম না। তবে লেখা ভাল হয়েছে।
* উদ্ধৃতির বাহুল্যে না গিয়ে নিজের চিন্তার প্রকাশ করা লেখাটির একটি ভালো দিক।
* লেখাটির মূল বক্তব্য সকল ধর্ম এবং সকল ধর্ম-বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – ইসলাম-কেন্দ্রিক হওয়া দার্শনিক তারল্য ঘটিয়েছে বলে মনে হয়।
* ধার্মিক-খোদামনা-দার্শনিক- কোরান- মানা – নামানা, পুস্তকি-মৌলবাদী ইত্যাদি বিভিন্ন রকম মুসলমানের উল্লেখ করা হয়েছে এই লেখায়। যেমন বিভিন্ন রকম আম রয়েছে যারা ভিন্ন রুপে-গুনে তবে সবাই আম কেও কলা নয়, তেমনি এরা সবাই মুসলমান তবে ভিন্ন রকমের। এই মুসলমানের সংজ্ঞা কি? আম গাছে ধরে বলেই যেমন আম তেমনি মুসলমান পরিবারে জন্ম হয়েছে বলেই মুসলমান? এই কথা পরিষ্কার না হলে ধার্মিক-খোদামনা-দার্শনিক- কোরান- মানা মুসলমানের পরিচয় ঘোলাটে থেকে যায়।
* জন্মসূত্রে মুসলমান দার্শনিক মুসলমান হবার বাস্তবতা কততুকু সেটাও ভেবে দেখা দরকার।
* পুস্তকি, অপুস্তকির বাইরে আধা-পুস্তকিরাও তো রয়েছে । বিভাজন গুলো কি একান্তই সাদা -কালো নাকি মাঝখানে আরও অনেক স্তর রয়েছে?
* পুস্তকের বিশুদ্ধতায় প্রশ্ন করা এবং দার্শনিক সঙ্কট তুলে ধরা এ দুই কাজ-ই কি এক সাথে সম্ভব নয়? করেছেন দুই-ই এরকম লেখক বা দার্শনিক কি নেই?
* লেখকের কিছু মন্তব্য ঃ ” তবে খোদামানা মুসলমানের সামনে এসে দার্শনিক নাস্তিকের যুক্তিও, পুস্তকি নাস্তিকের যুক্তির মতই বিফলে যায়। “, “তার নাস্তিক বন্ধুরা মাঝে মাঝেই তার একাগ্র জাগতিকতাকে মনে মনে হিংসা করে। খোদার অস্তিত্ব প্রশ্নে সর্বনিম্ন সময় ব্যয় করার ক্ষমতাটাকেও করে।” , … এসবে একরকম মৌলবাদী চেতনার গন্ধ পাওয়া যায়।
* চিন্তা করলেই দার্শনিক হওয়া হয় না। অধিকাংশ মানুষ যে ভাবে ধর্ম মানে ( গ্রন্থ অনুসরণ করে বা না করে)সেখানে দার্শনিকতার কোন প্রয়োগ আছে বলে মনে হয় না। সামাজিক আরামকে হারাম না করা, জন্মসূত্রে পাওয়া খুঁটি ধরে থাকার খুঁটি-প্রবণতাই বরং মূল কারণ বলে মনে হয়।
* লেখকের মন্তব্যঃ ” কোরানমানা মুসলমানের জুড়ি যেমন পুস্তকি নাস্তিক (যাদের ভেতর কম্যুনিস্ট নাস্তিকদের ধরা চলে), দার্শনিক মুসলমানের জুড়ি যেমন দার্শনিক নাস্তিক (খোদাপ্রশ্নে যাদের ক্ষান্তি নাই), ব্যবহারিকভাবে-খোদামানা, জাগতিক মুসলমানের কিন্তু তেমন কেবলই-জাগতিক-অপুস্তকি নাস্তিক জুড়িটা নাস্তিককুলেই মেলা ভার।”
– কম্যুনিস্টরাও তো লেখকের হরেকবরণ মুসলমানের মত হরেক ঘরানার হতে পারে – পুস্তকি-অপুস্তকি-এমনকি ধার্মিক? নয় কি? লেখকের মন্তব্য থেকে মনে হতে পারে পুস্তকি-অপুস্তকি মুসলমান বা ধরমানুসারীদের ঘায়েল করাই বুঝি সকল কম্যুনিস্টদের লক্ষ্য – এর কোন আর্থ-সামাজিক প্রয়োগ নেই, তাই কি? দার্শনিক মুসলমান বা দার্শনিক ধার্মিক যে কি বস্তু এবং এরা কম্যুনিস্ট বা কোন প্রগতিপন্থী আন্দোলনের কতটা লখ্যবস্তু তাও তো ভাববার বিষয়। জাগতিক অপুস্তকি নাস্তিকের জুড়ি পাওয়া যাচ্ছেনা?! কথাটা কি শুধু বাংলাদেশ বা অন্যান্য মুসলমান-প্রধান দেশকে ভেবে বলা? এই যেমন কানাডায় নাকি শতকরা ত্রিশভাগ লোক নাস্তিক — এরা কি সবাই কম্যুনিস্ট নাকি ‘জাগতিক অপুস্তকি নাস্তিক’?
** ধর্ম -গ্রন্থে বিশ্বাসী না হয়েও ধার্মিক হওয়া যায়। একথা বলার আগে ধার্মিক বলতে কি বোঝায় সেটা পরিষ্কার করা দরকার। অপুস্তকি দার্শনিক মুসলমান-হিন্দু-খ্রীষ্টান শব্দের প্রয়োগ অদার্শনিক বলেই মনে হয়।
** লেখক যেমন বলতে চাইছেন আস্তিক অপুস্তকি দার্শনিকরা, দার্শনিক বা পুস্তকি নাস্তিকের কথায় বদলাবেনা , এক-ই সুরে বলা যায় দার্শনিক পুস্তকি নাস্তিকেরা আস্তিক অপুস্তকি দার্শনিকের নির্লিপ্ততায় বদলাবেনা; বিশেষ করে শেষোক্ত ধারার প্রয়াস যেহেতু লেখক-কল্পিত প্রয়াসে সীমাবদ্ধ নয়।
@চার্বাক,
রূপম (ধ্রুব) ব্যাপারগুলো এখন আরো অনেক সুন্দর করে লিখতে পারবে আশা করছি।
@চার্বাক,
মাঝের স্তরই বেশি বেশি থাকার কথা। পিউর জিনিস বা সাদা কালোই তো বিরল।
অপুস্তকি দার্শনিক আস্তিকের সেই এজেন্ডা আদৌ আছে কিনা সে একটা প্রশ্ন।
@রূপম (ধ্রুব),
” অপুস্তকি দার্শনিক আস্তিকের সেই এজেন্ডা নেই ” , কিন্তু অন্য কারো তো রয়েছে, তা না হলে তো এ নিয়ে লেখার প্রয়োজন হতো না। আর এজেন্ডা থাকলে তো ক্ষতি নেই কোন, চলুক বিতর্ক, চলুক মগজের ঘষামাজা।
বেশ কিছু চিন্তা-ভাবনাকে কেন্দ্র করে যে আলোচনা তা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে, লেখাটা এ অর্থে সফল। কিন্তু সামাজিক পরিমন্ডল-পরিবেশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে অ্যাসাম্পশানগুলো নেওয়া হয়েছে তা কিছুটা সরলীকরণ মনে হয়েছে। দেশ-জাতি ভেদে মুসলমানদের আচরণ ভিন্ন, অ্যাক্টিভিট স্পেইস, চিন্তার ধরনও ভিন্ন।
তবে তারিফ করতে হয় লেখার মান নিয়ে। চমৎকার পরিমিতিবোধ। ঠাসবুনোটের এই লেখাটায় প্রাত্যহিক বিতর্কের উষ্মাটুকু নেই, তাই আস্তে আস্তে, একটু রয়ে সয়ে পড়তে বেশ আরাম লাগল। তবে শব্দচয়নে কয়েক জায়গায় (পুস্তকি নাস্তিক, প্রথা-ট্রথা, পুস্তকি যুক্তিবুদ্ধি,ভৌত জীবন ইত্যাদি অংশে) খটকা লেগেছে।
শুভেচ্ছা
@ফাহিম হাসান,
কেতাবি নাস্তিক বলা যেত, কী বলো? 🙂 বা সরাসরিঃ কোরানী নাস্তিক। যার নাস্তিকতা ও নাস্তিক কর্মকাণ্ড মূলত কোরানকেন্দ্রিক।
@রূপম (ধ্রুব), কেতাবি নাস্তিকটাই ভাল শোনাচ্ছে ভাইয়া।
@ফাহিম হাসান,
বলো কী? তৎসম শব্দ হাতে থাকতে আরবি শব্দে যাওয়াটা রীতিমতো ব্লাসফেমিরে ভাই।
@রূপম (ধ্রুব), হাসতে হাসতে বিষম খেলাম 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
প্লিজ, কোরানী নাস্তিক নয়। প্রথমবার পড়তে গিয়ে “কেরানী” নাস্তিক পড়ে ফেলেছিলাম 😀
@রৌরব,
খুব করে কোরানমানা নাস্তিকও বলতে ইচ্ছা করে। দেখা যায়, এরা ইসলাম বলতে কোরানের বিবরণকেই প্রমাণ মানে। যদিও কোরান নিজেই সহিহ না বলে জানে, ফলত ব্যাপারটা খুব গোলমেলে। তারপরেও, দেখা যায়, ইসলাম কোনটা, কোনটা না, মুসলমান কে বা কে না, সেটার বিবরণ একদম ঠিকঠাক কোরানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবে মেনে চলে। সেই অর্থে তারা কিন্তু কোরানমানা নাস্তিকও বটে!
@রূপম (ধ্রুব), রৌরব,
আপনাদের বাদানুবাদ ব্যাপক উপভোগ করছি। আশ্চর্য্যের বিষয় কোন conversational intolerance দেখছিনা। মহান স্যাম হ্যারিস আপনাদের হেদায়াত করুন। আরো একটু polemical হোন, পরস্পরের “দার্শনিক অনুভুতিতে” (ধরে নিচ্ছি আপনাদের “ধর্মীয় অনুভুতি” জাতীয় কিছু নেই) আর একটু আঘাত দিন। তাহলে খেলাটা জমবে ভাল। :))
একটা অভিনব বিষয়বস্ত নিয়ে একটা মৌলিক লেখা উপহার দেওয়ার জন্য রূপমকে একটা বিশাল প্লাস। তার চাইতে অভিনব, হেঁয়ালিপূর্ণ,এবং বেশ কিছুটা দুর্বোধ্য বাচনভঙ্গীর জন্য ছোটখাট একটা মাইনাস।
শুধু একটা ব্যাপারে মন্তব্য করব। পরে সময় পেলে বিস্তারিত মন্তব্য করব। আমার মনে হয় বর্তমান আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জোর জবরদস্তি বলতে রুপম intellectual coercion বুঝিয়েছেন। সাধারনত coercion বলতে কেও যেটা স্বইচ্ছায় করতে চায়না, সেটা করানোর জন্য মন বা শরীরের উপর অসঙ্গত চাপ সৃষ্টি করা বোঝানো হয়ে থাকে। কাওকে তার “অবস্থান পরিস্কার” করতে বলা কিংবা কোন শিল্পিকে তার “সামাজিক দায়িত্বের” কথা মনে করিয়ে দেওয়া এই ধরনের soft coercion. আমি রুপমের কথা ঠিকমত বুঝতে পেরেছি কিনা জানাবেন।
@হারুন উজ জামান, (Y)
@হারুন উজ জামান,
এই যে অবস্থান পরিষ্কার করার বা সামাজিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবার মৃদু জবরদস্তি, এটা যেমন আইনিভাবে বৈধ, একে ইগনোর করার অধিকার আইনিভাবে ততোধিক বৈধ। আর এখানে সবচেয়ে ডেলিকেট ( 😉 ) হলো জবরদস্তিকারীদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নের মধ্যে ফেলা যে ঠিক কী কী নির্দিষ্ট কারণে তারা এই জবরদস্তিতে শামিল এবং তাদের উদ্দেশ্যের সঙ্কটগুলো ধরিয়ে দেয়া। এই প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে প্রগতির পথে তাদের মহৎ জয়যাত্রা যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তার দায় প্রশ্নকারী নেবে না। প্রশ্নকারী মহৎ প্রগতির পথে অন্ধযাত্রার ব্যাপারে তেমন আস্থাশীল না।
@হারুন উজ জামান,
আপনার বিস্তারিত মন্তব্য পেলে ভাল লাগবে।
@রৌরব,
বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারলে আমারও ভাল লাগবে, বিশেষ করে আপনার এইরকম সনির্বন্ধ অনুরোধের পর। আমি আসলে একদম সময় করতে পারিনা। একটা কারন হল বাংলা সফ্টওয়ারে এখনও আমি বেশ অদক্ষ, খুব শম্বুক গতিতে লিখি। যাই হোক, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আপনার অনুরোধ রাখার চেষ্টা করব।
রচনাটি কিছু বুঝলাম কিছু বুঝলাম না। দোষ অবশ্য আমারই–খুব মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে। আর আমি হচ্ছে খুব ধীরে পড়া এবং তার চাইতেও অধিক ধীরে বুঝবার ক্ষমতাধারী।
যাই হোক, একটা সামাণ্য প্রশ্ন–
কোরানে বিশ্বাস না করে কেমন করে মুসলমান হওয়া যায়? খোদায় বিশ্বাস আর আল্লাহ বিশ্বাস কী এক? না বিভিন্ন?
আশ্চর্য! দেখা যাচ্ছে খোদা এবং আল্লাহ দুই সত্তা।
আল্লাহ লিখেছেন কোরান, আর খোদা পড়ছেন কোরান।
@আবুল কাশেম,
মুসলমান হতে কোরান মেনে চলতে হয় বা খোদাই কোরান লিখেছেন, এগুলো কি বিশ্বাস থেকে বলছেন নাকি? আপনার বিশ্বাসের প্রতি তাহলে শ্রদ্ধা জানাই কেবল। বিশ্বাসের সাথে আমার তর্ক নাই। ঘটনা আর লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করতে চাই খালি।
@রূপম (ধ্রুব),
না, আমি আমি বলছি যা মুসলিমরা বিশ্বাস করে।
কিছু ভুল বুঝা হিয়েছে–সেজন্য দুঃখিত।
@আবুল কাশেম,
লোকে কীসে মুসলমান হয়, সেটা তো অবজেক্টিভ প্রশ্ন। খোদা যারে মুসলমান বলে মুসলমান সেই হয়। মুসলমানরা তো তাও বলে। এখন খোদা না থাকলে তো মুসলমানও তাইলে কোনোভাবেই হতে পারার কথা না। সেখানে সাংস্কৃতিকভাবে যারা নানারকম মুসলমানিত্বের মধ্যে আছে, তাদের আমি মুসলমান শুধাই। এখানে আমার সাদা কালো বাছবিচার নাই। আপনি চাইলে এখন তাদের ভণ্ড মুসলমান বা মোনাফেকও শুধাইতে পারেন। হুজুররাও তো তাই বলে শোনা যায়।
@রূপম (ধ্রুব)
পুরো লেখাটার লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য তো বলাই বাহুল্য, ভালো।
ওই সব পুস্তকি মুসলমান, পুস্তকি নাস্তিক, খোদামানা মুসলমান, দার্শনিক নাস্তিক ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ বা লেখনিতে এমন একটা শ্রেণীর অবাধ উদ্ভব দেখে একটু কেমন যেন লাগলো।
মুক্তমনের মানুষরা বিভিন্ন ভাবে তাদের জ্ঞানলব্ধ অভিজ্ঞতাগুলো অন্যদের সাথে চালাচালি করবে। তারা তা করবে তাদের পছন্দের পদ্ধতি বা পদ্ধতি সমূহের প্রয়োগের মাধ্যমে। তার মানে প্রয়োগ পদ্ধতি একটা নাই হওয়ার সম্ভবনাই বেশী। তাদের প্রয়োগ লক্ষ্যটিও শুধু একটি শ্রেনীর উপর নয় বলেই আমার মনে হয়। আপনার পর্যবেক্ষণগুলো হয়ত আরো গভীরে যেতে পারতো।
শুভেচ্ছা।
@কাজী রহমান,
এই প্রতিটা শ্রেণীর বেশ খানিকটা বিবরণ দেবার চেষ্টা করেছি। বিবরণে আছে কাদের কথা বলছি। নাম দিয়েছি কথা বলবার সুবিধার জন্যে। তর্ক করতে পারেন, যেমন যেমন শ্রেণীর উল্লেখ করেছি, তেমন তেমন সত্যিই দেখা যায়, বা কখনো দেখি নি এমন বলে। তার বাইরে যদি কেবল আপনার অনুভূতিটাই জানান দিতেন চান, তাও ভালো। আপনার এই কেমন কেমন লাগাটা বেশ ভালোই লাগলো।
সবাইকে মুক্তমনা মানুষ বলে শ্রদ্ধা করে চলে আশাটা আমার কাজ না। অন্তত এই লেখায়। এই লেখাটা তো ঠিক এইটুকুই লেখার কথা। এর চেয়ে বেশি কেনো বলবো? লেখাটা সকল প্রকারের বিবরণ নয়। নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণের আলোচনা।
@রূপম (ধ্রুব),
ঠিক আছে তো, চলুক।
মুক্ত মনের প্রয়াসে তো যত বেশী সম্ভব তত বেশী দৃষ্টিকোন থাকা দরকার।
ভালো থাকুন।
@কাজী রহমান,
শুভেচ্ছা। 🙂
@কাজী রহমান,
আরেকটা কথা –
লক্ষ্য থাকে তো ব্যাপক, সেটা বটেই। কিন্তু পরিশেষে কাদের সাথে প্রয়োগ পদ্ধতিটা কমিউনিকেট করতে সক্ষম হলো, সেটা পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
@রূপম (ধ্রুব),
হ্যাঁ, এইটা বটম লাইনের কথা। এত সব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছুল এটা একটা বড় ব্যাপার।
আমি কিন্তু পদ্ধতি বা পদ্ধতিসমূহের কথা বলেছিলাম। বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জনের কাছে এপ্রোচের কথা বুঝিয়েছিলাম। যার যার ধারন ক্ষমতা বা গ্রহণ স্পৃহার উপরই নির্ভর করা উচিৎ সে কতটুকু নেবে আর কার কাছ থেকে নেবে, এই আর কি।
ভালো লাগলো (Y) আমিও তাই মনে করি, তিনশ তিন ঘন্টা বাক বিতণ্ডা শেষে কার লাভ কতটুকু হবে? তবে নীট ফলাফল সবসময়ই শুন্য এটা একটু বেশি জেনারালেইজেশন হয়ে গেছে কারণ আমি এই বাক বিতণ্ডার মধ্যে দিয়ে না গেলে দর্শনগত দূর্যোগে পড়ে খুচাতে খুচাতে আস্তিকের সীমানা থেকে বেরিয়ে যাওয়া হতোনা মনে হয়।
অন্যভাবে নিবেন না আশা করি, তবে আমার মনে হচ্ছে কোন এক অদ্ভুত কারণে আপনার লেখাগুলো একটু কেমন কেমন হয়ে যায়। আমি অনেকক্ষন চিন্তা করলাম কেন এমনটা হয় :-s …দু’টো দিক ধরতে পেরেছি মনে হচ্ছে,
এক) খুব টাইট ভাব কম্প্রেশান…একটা লাইনের মধ্যে অনেকগুলো কথা বসিয়ে দেয়ার ক্ষমতাটা আছে আপনার চমৎকার :-Y
দুই) উচ্চ মেমরির র্যামের দরকার হয়। একদম শেষের লাইনগুলোও পুরোপুরি বুঝতে প্রথম দিকের কথাগুলোও মাথায় রাখতে হবে…এক প্যারার ভাব অন্য প্যারার অর্থ ছাড়া সয়ংসম্পূর্ন নয়। সবাই একটা ফ্লো অনুসারে ভাবটিকে এগিয়ে নিয়ে যান, আপনি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
@টেকি সাফি,
হি হি। ভালোই যদি লাগে, তাইলে আর লেখা নিয়া বাড়তি দুশ্চিন্তা ক্যা?
সিঙ্গুলারিটির পর মানুষ র্যাম বাড়াইয়া আনজিপ কইরা নিয়া আরেকবার পইড়া নিবে নে। :-s
@টেকি সাফি,
আর বাক বিতণ্ডা তো নট নেসেসারিলি খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু। কিন্তু খোদা বা ধর্ম নিয়ে বাক বিতণ্ডা করার জন্য কমিট করলে খোদা ও ধর্মের প্রকোপ যে মিনিমাইজ করার বদলে সেটা এক অর্থে জারিই রাখা হয় সেটা অস্বীকার করার উপায় কই?
ফলে পুস্তকি নাস্তিকের কোরানভাঙা লেখা কমিউনিকেট করে কেবল স্বজাতি ও তার কাউন্টারপার্ট কোরানমানা মুসলমানদের সাথে। খোদাভাঙা দার্শনিক আলাপ তেমনি জারি থাকে দার্শনিকভাবে উৎসুক মুসলমানদের সাথে। এসব নিয়ে চিন্তাভাবনার আগ্রহহীন মুসলমান তো সেখানে এইসব আলাপে বরং নাই। তারাই তো তাহলে কোরানখোদার প্রকোপ মিনিমাইজ করছে।
এটা ভালো বলেছো যে
মানে এই বাক বিতণ্ডায় যাওয়াটা তুমিই বাছাই করে নিয়েছো, ফলে তোমার হেদায়েত হয়েছে এবং তাতে তুমি খুশি। কিন্তু যে এই বিতণ্ডায় যেতে চায় না, সে ধর্ম বা খোদা তার মতো করে মেনে যেতে চাইলে কি তাকেও জোর করে হেদায়েত দান করে দিতে হবে, যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় তোমার নিজের হেদায়েত হয়েছে? জিনিসটা তো তখন ঠিক আর এক হলো না। কারণ একটা ছিল সোৎসাহে, আরেকটা ঘটলো জবরদস্তিমূলক প্রচারণার ফলস্বরূপ। জোর করে খাওয়ালে বিজ্ঞানও সঙ্কটময়। যার দার্শনিক মুক্তির প্রয়োজন নেই, কোরানখোদার ধার্মিক প্রশ্নে যে ব্যতিব্যস্ত না, তাকে ধর্মের কোনো এক খারাপ বাণীর সম্ভাব্য প্রকোপের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে জোর করে যদি সতর্কতামূলক নিরোধক পড়ানো হয়, তাতে একটা কাজই নিশ্চয়তার সাথে ঘটে, আর তা হলো কোরানখোদাবিষয়াদির প্রকোপ বর্ধন।
তোমার আমার আল্লাখোদা নাই, তুমি আমি আল্লাখোদা নিয়ে অনেকরকম ধাঁধাঁর জট খুলতে পারি বলে এইসব চিন্তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না যারা, নিজের খোদা নিয়ে নিজে নিজে ব্যস্ত আছে যারা, তাদের তোমার আমার মতো হতে হবে কেন বলো? ধর্মের কারণে অনাচার ঘটতে দেখা গেলে তাবৎ মানুষকে ধর্মবিশ্বাসই বা বিসর্জন দিতে হবে কেন? এভাবে তো মোল্লারা ভাবে। মদ খেলে পীড়া দিতে পারে বলে মদ খাওয়াই বাতিল করতে চায় তারা। সুদও বাতিল করতে চায় যাতে একটা মানুষও ঋণের বোঝা নিয়ে মরার ঘটনা না ঘটে। অনেক প্রগতিশীল মোল্লারাও তাদের মতো করেই বলে। মাস্তুত ভাই তো। নিরোধ করাই এদের একমাত্র সমাধান। এরা আবার সদা ব্রেইনওয়াশ ঘটার ভয়ে ভীত থাকে, অন্যদের ভীতি দেখায়। তাই তারা নিজেরা কন্ডম পরে মাথায়। অন্যদেরও পরাতে চায়।
বারে যে ঢুকলো, সে বের হবার পর মদ্যপানের কারণে কী কী করবে না, তার গ্যারান্টি কে দিতে পারে? এর জন্যে আমাদের কী এখন লোকে যাতে বারে না ঢুকতে পারে তার নিশ্চয়তার দরকার পড়ে?
ফলে স্বেচ্ছায় করলে নেট ফল পজিটিভ হতে পারে (নিজের হেদায়েত বর্ধন), জবরদস্তিমূলকভাবে করলে নেট ফলাফল হতে পারে নেগেটিভ।
@রূপম (ধ্রুব),
কিন্তু “জোর করে” বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছেন? আইনী জোর, যাকে সত্যিকারের “জোর” বলা চলে, নাকি সামাজিক চাপ? স্যাম হ্যারিস বলছেন আস্তিকদের প্রতি “conversational intolerance” প্রদর্শন করতে। একে আপনার সংজ্ঞায় কি “জোর” এর মধ্যে ফেলবেন?
@রৌরব,
জোর বলে যে ব্যাপারটার এখানে মোকাবিলা করছি, সেটা ঠিক আইনি কিংবা শারীরীক জোর জবরদস্তি না। ওগুলো হলে এখনের মতো মৃদু বাক্যালাপ করতাম না। জোর খাটানোর যে মানসিক অভিলাষ দেখা যায়, যেমন স্যাম হ্যারিসের বৈজ্ঞানিক মোরালিটি/ভুত জাতীয় জিনিসপাতির প্রচারের নেপথ্যে, সেই চিন্তার উত্তর এটা। আমার চিন্তাটা সেই চিন্তার সাথে বাদানুবাদ। স্যাম হ্যারিস ঠিক ঠিক কী বলেছেন সের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখানে স্যাম হ্যারিস কীভাবে ভাবছেন। সব চিন্তাকে এক লাইনে নিয়ে আসার জবরদস্তিমূলক চিন্তার ছায়া আছে ওনার। চিন্তার একটা মানদণ্ডকে খুঁজছেন উনি। প্রায় ভাণ করছেন যে কিছু ক্ষেত্রে মানদণ্ড পেয়ে গেছেন। সেখানে ভিন্নচিন্তাগুলো ধীরে ধীরে অনুপস্থিত করে দেয়ার কর্তৃত্ববাদী একটা চিন্তা তো ওনার আছেই। কমনগুডের অপরাপর ফেরেস্তাদের মতো। ওনার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ওনাকে আগেই বলে দিয়েছে যে আস্তিকেরা লেসার মেন। সেখানে “conversational intolerance” প্রদর্শন করতে যে উনি বলবেন, সেটা তো বলাই বাহুল্য। এর নেপথ্যের ভাবনায় জোরের একটা প্রয়াস লক্ষণীয়, বলবো।
তবে আস্তিক যদি একটা intolerant conversation এ কমিট করে তর্কে শামিল হয়, সে ভিন্ন কথা। আর তা যদি আস্তিক না করে থাকে, তাহলে এই conversational intolerance এর ঠিক কী আউটকাম আশা করা হচ্ছে, জোরপূর্বক হেদায়েত করা ছাড়া (আসলেই উত্তর জানা থাকলে জানতে চাই)? মোল্লারা যখন প্রিচ করে, এবং সেটা করার জন্যে intolerant হওয়াটাও জরুরি মনে করে, সেখানেও তো এই একই জোরপূর্বক হেদায়েতের বাসনাই কাজ করে। কম্যুনিস্টরাও তাই করে। কম্যুনিস্টদের যখন বলা হয়, তোমরা মোল্লাদের মতো করেই জোরজবরদস্তি করছো কেনো, তখন তারা বলে যে মোল্লারা ভুল বলে, কিন্তু আমরা ঠিক বলি। ঠিক জিনিস জোর করে না খাওয়ানোর কী আছে? স্যাম হ্যারিসও conversational intolerance এর ব্যাপারে ঠিক এমন মতামতই কি পোষণ করছেন না?
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার সাথে কথা বলতে গেলেই আপনি বহুত চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য করেন। এও কি একধরণের conversational অত্যাচার নয়? :))
খোদামনা প্রসঙ্গে আসবার আগে (যেটা খুব সুক্ষ্ম প্রশ্ন মনে হয়েছে আমার) সাধারণ ভাবে “মতামতের যুদ্ধ” জিনিসটাকে দেখি। এব্যাপারে কিন্তু বলব, ডায়ালেকটিক ছাড়া কোন প্রগতি সম্ভব না। তাই বাকস্বাধীনতার ধারণা মতামতের যুদ্ধ-কে সহ্য করে শুধু নয়, মতামতের অবিরবত যুদ্ধ কে সম্ভব করার জন্যই বাক-স্বাধীনতা। আইনী সীমার মধ্যে তাই রণংদেহী ঝগড়া-ঝাটি অনবরত চলতে না থাকে একটি সমাজে, চিন্তিত হব আমি। মনে করব, তুমিও-ভাল-আমিও-ভাল সুলভ একটি উত্তরাধুনিক অধঃপতন ঘটেছে। স্বাস্থ্যনীতি, ইরাক যুদ্ধ, ট্রানজিট, প্যালেস্টাইন ইস্যু ইত্যাদি বিষয়ে হয়ত এই থিয়োরিতে আপনার আপত্তি হবে না?
এখন “খোদামনা” আস্তিকের বিষয়টি ভিন্ন, সেটা ঠিকই। তার কোন একটা “পাব্লিক” এজেন্ডা যেহেতু তার নেই, আপনার প্রশ্ন: তার সাথে মতামতের যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়োজন কি? Jehova’s Witness দের মত বাড়ির মধ্যে তাড়া করে গিয়ে ভদ্রতার সীমালঙ্ঘন করে লিপ্ত হওয়া অনুচিত, বলাই বাহুল্য। একাজ কিছু নাস্তিককে করতে দেখেছি, সেটাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি।
আমার মতে খোদামনা-দের কাছে যেটা চাওয়া হচ্ছে, সেটা হল তাদের অবস্থানের স্পষ্টীকরণ। দাবিটি আধুনিকতার দাবি — “আপনি পুস্তকী নন? চমৎকার, বলুন তাহলে সেটা স্পষ্ট। তার একটা তত্ব দিন, আপনার মধ্যপন্থাকে স্ফটিকায়িত করুন”। এই দাবি কাজ করেনা তা কিন্তু নয়। খ্রীস্টান জগতে ভালই কাজ করেছে। সময় লাগে আর কি।
@রৌরব,
বটেই! দুপক্ষ সজ্ঞানে আলাপে হাজির থেকে যুদ্ধ করুক না। আপত্তি কোথায়। কিন্তু আপনি কি না শোনার ও না দেখার ব্যক্তিস্বাধীনতারও পক্ষে নন? নাকি সবাইকে জোর করে দেখতে শুনতে হবে? সেটাই মনে হয় প্রগতি চায়।
তবে আমি কেবল বিশেষ ধরনের চিন্তার লক্ষণ নিয়ে বাদানুবাদ করছি। এটাও তো একটা লেভেলে মতামতের যুদ্ধই। স্বেচ্ছায় যোগদান। তাহলে মতামতের যুদ্ধে আমার আর আপত্তি কই?
@রূপম (ধ্রুব),
হ্যাঁ, কিন্তু না শুনে চলার ফিল্টারিং-এর দায়িত্বটা তাদের। তাদের না শুনে চলার অধিকার রক্ষার জন্য নিশ্চয় পা টিপে টিপে চলবেনা অন্যরা। সেটা “কোমল ধর্মানুভূতি”-তে আঘাতের জন্য বাক-স্বাধীনতা রোধের মত হয়ে যাচ্ছে না?
হয়ত পুরো বুঝতে পারছি না আপনার কথা…
@রৌরব,
পা টিপে টিপে চলতে হলে তো বাাকস্বাধীনতার লঙ্ঘন হয়। বাকস্বাধীনতার পক্ষে তো আমরা একমত হয়েই আছি। সেটা যারা বোঝে না, তাদের তো বোঝানোর তোড়জোর চলছেই। কারও মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না। ঘরে তো না, বাইরেও না। এ ব্যাপারে তো আমরা সদা সোচ্চার। সেটায় স্থির হবার পর এখন না-দেখার না-শোনার অধিকার নিয়ে কথা বলা যায় কি? এ নিয়ে যোদ্ধাদের চিন্তাভাবনা কেমন, সে নিয়েও তো একটা আলোচনা করা যায়। নাকি ভুল বার্তা পৌঁছে যাবার ভয়ে সেটা নিয়ে চুপচাপ বা পা টিপে টিপে থাকা ভালো।
@রৌরব,
এই দাবিটা কি অনেকটা অনুরোধের আসর টাইপের। আমাকে গান গাইবার বায়না ধরলেও গাই না। আর অবস্থান স্পষ্ট করতে বললে বেশ বিরক্তই হবো। মানুষের স্পষ্ট ঘোষিত অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু স্পষ্ট কোনও প্রকৃত ও নির্দিষ্ট অবস্থানের অস্তিত্বের আধুনিক চিন্তায় আমার অবিশ্বাস আছে। এরকম মার মার কাট কাট করে সবাইকে চিন্তা করতে বাধ্য করাটা বেশ লক্ষণীয়। নিজের মতো করে অস্পষ্ট কনফিউজ্ড যে আছে, তাকে নির্দিষ্ট হবার এই কর্তৃত্ববাদী আধুনিক ভাবধারণার সাথে শামিল হতে পারছি না। খালি মনে হচ্ছে, ভদ্র গোছের মোল্লাপনা এটা। মোল্লারাও অবস্থানের স্পষ্টতা দাবী করে। কিন্তু সেটা তারা করে নেয় লুঙ্গি চেক করে। মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার আধুনিকীকরণ বলতে বোধহয় এই-ই বোঝায়।
খ্রিস্টান জগতে কীভাবে কাজ করে জানতে আগ্রহী। তবে ‘কাজ করা’ ব্যাপারটা কি রাজনৈতিক না? মানে কোনো বিশেষ অবজেক্টিভ বা খায়েশের সাপেক্ষে সেটা কাজ করে বলে বোঝাচ্ছেন, তাই না? একটা বিশেষ দিকে কিছু একটা অগ্রসর হয়। সেই লক্ষ্যটা কি স্রেফ একটা রাজনৈতিক লক্ষ্য, নাকি ব্যক্তি নিরপেক্ষভাবে ওতে সবার শামিল হওয়ার একটা হাতছানি আছে?
প্রগতির সদিচ্ছায় আমার ভাবনা অংশীদার হয় না। কারণ ওটা একটা এজেন্ট বা কর্তা। বিশ্লেষকের আসনে বসে এজেন্ট হওয়াটা বিশ্লেষকের দুর্যোগ বলে আমি মনে করি। বিশ্লেষকের রাজনৈতিক লেখক হয়ে ওঠা। (বিশ্লেষক যে রাজনৈতিক চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেই এমন দাবি কিন্তু করছি না।)
ইতিহাসে প্রগতি ঘটেছে। আমি সেটাকে দেখছি। ক্রিটিক্যালি দেখছি। প্রগতির প্রতি আস্থাশীল হিসেবে ভাবতে বা লিখতে বসলে সেভাবে আর দেখা সম্ভব হয় কীভাবে? তখন তো প্রগতির ছুটে চলার পথ সুগম করার উপায়ই খালি ভাবা হবে। বা যেসব যেসবে কাজ হয়, তাদের জন্য (অনাগত সময়ের প্রতি প্রত্যাশার সাথে) আশা-মমতা-ভালোবাসাপূর্ণ হয়ে বসে থাকা হবে। প্রগতির অরক্ষণশীল ক্রিটিক নিজে তো প্রগতিশীল হতে পারে না।
@রূপম (ধ্রুব), (Y) । সুপার লাইক।
@রূপম (ধ্রুব),
যেটি পাচ্ছি আপনার চিন্তায় তা এরকম: তর্ক দুরকম হতে পারে। একটিতে দুপক্ষই সচেতন ভাবে তর্কের আসরে অবতীর্ণ, অন্য ক্ষেত্রে একপক্ষ আরেক পক্ষকে “সচেতন” করবার কাজে লিপ্ত। এই দ্বিতীয় ধরণের আলোচনাই আপনি কর্তৃত্ববাদী মোল্লাপনার গন্ধ পাচ্ছেন।
জুলিয়া চাইল্ডস ফ্রান্সে ঘুরে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে ফরাসী haute cuisine এর প্রবর্তন ঘটান। লক্ষ্য করুন, বিষয়টা এমন নয় যে মার্কিন জনগণ আগে ইতালীয় haute cuisine এর ভক্ত ছিল, চাইল্ডস তাদেরকে রন্ধন যুদ্ধে পরাস্ত করে ফরাসী খাদ্যের প্রচলন করেন। বস্তুত সাধারণ ভাবে বলতে গেলে haute cuisine এর h-ও তারা কোনদিন শোনেনি। এই “অচেতন” জনগণকে খাদ্য সম্বন্ধে তাদের অস্পষ্ট অলসতা কাটিয়ে টিভি-তে, বই-তে, ইন্টারভিউতে অনবরত কাজ করে তাদের কানে ধরে “সচেতন” করেছেন চাইল্ডস। এটা যে মোটেও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়, আমরা সকলেই জানি। বিশেষ ধরণের ফ্যাশন, বাচ্চা মানুষ করার নতুন পদ্ধতি, সাইলেন্ট সিনেমার উৎকর্ষ এবং এরকম আরো এককোটি জিনিস সম্বন্ধে বহু উৎসাহী লোক সমাজের discourse পরিবর্তনে আগ্রহী, শুধু মাত্র আগেই-সচেতন লোকেদের মত পরিবর্তনে নয়। এখন একে মোল্লাপনা বলা যেতেই পারে, কিন্তু তাতে মোল্লাপনার সংজ্ঞা এতই তরল হয়ে যায় যে তার উপযোগিতা কি থাকে সেটা স্পষ্ট নয়। নাকি, ধর্মের বিষয়টা আলাদা?
অবশ্যই। আমি ওই অনুচ্ছেদে নাস্তিকের যে উদ্দেশ্য অনুমান করেছিলাম, অর্থাৎ খোদামনার মনোভাবকে স্ফটিকায়িত করা, সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে “কাজ করে” বলে বুঝিয়েছি।
এ জায়গাটা ভাল বুঝলাম না। “রাজনীতি” আমি খুব বিস্তৃত অর্থে ধরছি…
@রৌরব,
Conversational intoleranceযুক্তভাবে বাচ্চা মানুষ করার পদ্ধতি শেখানো বা খাদ্যতালিকা সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্টিকরণের জন্য চাপ প্রয়োগ সম্পর্কে কী মনে করেন? ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আইনি হলেও এর সমালোচনা তো করা যায়? নব্যনাস্তিকতার এই পদ্ধতি বেশ অধৈর্য্যশীল, একগুঁয়ে, প্রায় মোল্লাগোছের (এজন্য বলে militant atheist), এটুকু দেখিয়ে দিতে না কেনো?
কিন্তু কাজ করার ব্যাপারে যেটা বলতে চাচ্ছি, ব্যাপারটা এমনভাবে বলেছেন, শুনে মনে হলো যে এটা লংরানে কাজ করে শুনে আমার আস্বস্ত হবার কথা, বা প্রায় নিঃশর্তে এতে শামিল হওয়া যায়, বা সমালোচনার হাত থেকে ছাড় দেয়া যায় ‘কাজ করে’ বলে। কিন্তু কীসের পক্ষে এটা কাজ করে, সেটা স্পষ্ট হতে চাই। সকল অবজেক্টিভ ফাংশনে তো আমি শামিল না। বরং সকল অবজেক্টিভ ফাংশনই যে সাবজেক্টিভ, সেটাই বহুদিন ধরিয়ে দিতে চাচ্ছি। ফলত বহুধরনের ডাকাডাকিই যে অন্য আরেকজনের কাছে ভোররাতে সোহরির সময় ডাকাডাকির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবার কথা না, সেটা বলতে চাইছি। সেহরির সময় ওঠাটা সঠিক তরিকায় রোজা রাখার পক্ষে কাজ করলেও। এমনকি আমি নিজে সেটা মানলেও অন্যের যে সেই ভাবনা ধারণের অবলিগেশান নাই, সেটা বলতে চাইছি। সমাজে তারপরেও ডিসকোর্সের পরিবর্তন চলে। চলুক। উদ্দেশ্যের সাবজেক্টিকতাকে তুলে ধরাটা এখানে আমার তরফ থেকে ডিসকোর্স পরিবর্তনের একধরনের উদ্যোগ মনে করতে পারেন। যখন নব্যনাস্তিকেরা দুনিয়ার একটা স্পষ্ট বা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আমাকে ও অন্যান্যকে ধাবিত করাতে চাইবে, তখন আমার তরফ থেকে এটা প্রত্যুত্তর। আমি কেনো এই ‘কাজের জিনিসে’ শামিল হতে পারছি না, সেটা ব্যাখ্যা করছি।
আপনিও দেখি conversational অত্যাচার করে অবস্থান স্পষ্টিকরণ করার ব্যাপারে কম যান না। 😀
@রূপম (ধ্রুব),
তাই কি? আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে হচ্ছিল, আপনি বলছেন কাজই করেনা (ভাল-মন্দের বিচার নির্বিশেষে)। নিচে লিখেছেন (বোল্ড করেছি আমি)ঃ
এই “কাজ” টা মোটের উপর ভাল, আমার মত তাই-ই, কিন্তু সেটা আলোচনার আগে কাজ করে কিনা সেটা বোধহয় স্পষ্ট করে নেয়া দরকার।
জেমস উডের প্রবন্ধটা দেখুন। সেখানে উনি এমন এক খ্রিস্টানের কথা বলছেন, যার মতে “It is impossible to be a serious Christian and believe in heaven and hell.”। আমার মতে, এই লোকের উৎপত্তি লিটারালিস্ট ধর্ম ও লিটারালিস্ট নাস্তিকতার সংঘর্ষের তীর্যক প্বার্শপ্রতিক্রিয়া। লিটারালিস্ট ধর্মকে ঠেঁসে ধরবার ফলে যে ফাঁকা স্থানটির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এরা এসে স্থান দখল করতে পেরেছেন। অর্থাৎ ফলটি খোদামনাদের লিটারালিস্ট বানানোর মাধ্যমে হয়নি, স্ফটিকায়নের একটি জমিন তৈরির মাধ্যমে হয়েছে।
আমি আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। Analogy টি শতভাগ না খাটলেও উল্লেখযোগ্য। মার্কিন সংবিধান হা-রে-রে মার্কা সেকুলার (প্রথম অ্যামেন্ডমেন্ট)। এখন এটা মোটামুটি বিশেষজ্ঞ স্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য যে…
১. মার্কিন যুক্তরাষ্টের জন্মের পরে অসংখ্য ব্যাঙের ছাতার মত ধর্মীয় গোষ্ঠী তৈরি হতে থাকে, এবং আজ পর্যন্ত মার্কিন ধর্ম-নিষ্ঠতার একটা অন্যতম ব্যাখ্যা ওই phenomena।
২. এই “ব্যাঙের ছাতার” উৎপত্তির কারণ হল প্রথম অ্যামেন্ডমেন্ট। কেন? কারণ একটি চার্চের খবরদারি নিরোধ করবার মাধ্যমে এই স্ফটিকায়িত, সুস্পষ্ট এবং সেকুলার সংবিধান ধর্মীয় experimentation এর দ্বার খুলে দিল।
Contradiction এই ধারণাটি মাথায় রাখা দরকার নব্য নাস্তিকতার ফল ধর্মের ওপর কি হতে পারে তা বোঝার জন্য। খোদামনাদের কেউ কেউ হয়ত তাদের ধারণাগুলিকে সুস্পষ্ট করতেই চান, কিন্তু লিটারালিস্টদের আপাত বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠতার কারণে সেটি করতে অক্ষম। নব্য নাস্তিকতা এখানে একটা ভূমিকা রাখতেই পারে।
@রৌরব,
এটা চমৎকার হয়েছে। ‘সকল ধর্মের পতন’জাতীয় অবজেক্টিভ ফাংশনের জন্য বা তারা যেমনটা দাবী করে সেটার পক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটাই অফলপ্রসু মনে হয়। এর বাইরে কাজ তো নিশ্চয়ই কিছু করে। আপনার বর্ণনামতোই কাজ হচ্ছে ধরে নিলে মনে হচ্ছে ধর্মের হেদায়েত করার জন্যে নব্যনাস্তিকরা একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মত্যাগই করছেন, সবভাবে দেখার সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে। অন্যদিকে সাধারণ মুসলমান এতে লিটারালিস্টও হয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু নিরাপদ দুরত্বে থেকে এই আলোচনা বা মতামতের যুদ্ধ থেকে নিজেদের অবস্থানকে স্পষ্টিকরণের সুযোগ পাচ্ছে, যদি চায়। সাথে কিছু বর্ধিত conversational intolerance এর বিপত্তি নয় সামলালো।
এখন এখানে লিটারালিজমের যে contradictionটা, সেটা যদি লিটারালিস্টদের ধরিয়ে দেয়া হয়, সেটার ফলাফল কি অকাজের হবে? বা এই বিরোধপূর্ণতাটা চোখে পড়লে না ধরিয়ে থাকাটা কেমন? না ধরিয়ে দিয়ে এই কাজের জিনিসে আমি কি আসলেই শামিল হয়ে যেতে পারি? চিন্তার উত্তরণ তো নাস্তিকদেরও দরকার। মানুষমাত্রই তো আস্তিক না। লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা খোদার ধারণা নিয়ে বাঁচতে অক্ষম। নব্যনাস্তিক হওয়া বা অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের হেদায়েত করাটাই তো নাস্তিকদের একমাত্র নিয়তি হতে পারে না। পৃথিবী সম্ভবত যদি ধীরে ধীরে নাস্তিকদের হয়ে উঠতে থাকে, তাদের মধ্যকার বিভিন্ন ধারণার experimentation এর জন্য হয়তো এই আত্মসমালোচনার দরকার আছে। না হয়ে উঠতে থাকলেও দরকার আছে। নাস্তিকরা নিশ্চয়ই সবাই এক না-খোদার নিচে থাকার পরিকল্পনা করছেন না। এমনকি আস্তিকদের সাথে নাস্তিকদের বোঝপড়ার ভিন্নমাত্রার সূচনার জন্যেও এই সমালোচনার দরকার পড়তে পারে। আর সেটার যদি দরকার থাকে, সেটা একাগ্রই হতে পারে। মৃদু মৃদু অভিমান না।
এমন কি যে উপায়ে কাজ করছে, সেটা যে ঘোষিত উদ্দেশ্যের চেয়ে ভিন্ন ধরনের, আপনার এই ধরিয়ে দেয়াটাও আমার প্রবন্ধের টোনের সাথে প্রায় একীভূত।
@রৌরব,
সরকারের সাথে conversational intolerance করা যায় এসব ব্যাপারে, কিন্তু আরেকজন যদি ইরাক যুদ্ধে মার্কিনদের বিপক্ষে থাকার জন্যে conversational intolerance দেখায়, অবস্থানের স্পষ্টিকরণ চায়, আপত্তি তো আছেই! এছাড়া এসব ইস্যুতে হাবিজাবি যুক্তিতত্ত্ব যারা বকবেন, তাদেরকেও তো সমালোচনার কাছ থেকে ছাড় দিতে রাজি নই।
@রূপম (ধ্রুব),
http://www.guardian.co.uk/books/2011/aug/26/james-wood-the-new-atheism
আপনার মতের সাথে কিছু মিল পেতে পারেন।
@রৌরব,
চমৎকার একটি লেখা। এভাবে তো আমাদের মধ্যে আরও আরও ভাবনা আসতে পারতো। মুক্তমনায় অধিকাংশই কি নব্যনাস্তিকের ভিড় হয়ে গেলো? লিটারালিজ্ম বেশ খোঁড়া মাপের চিন্তা। নাস্তিকরা, বিশেষ করে নাস্তিকতার রথী মহারথীরা এই একগুঁয়ে প্রায় এক চোখা আন্দোলনের অংশীদার হতে গেলো কেনো? ধর্ম আর খোদাই খালি অন্ধত্ব দেয় না। ওগুলো চলে গেলেই অন্ধত্বের মুক্তি না। চিন্তার অন্ধত্ব একটা লক্ষণ। খোদা, ধর্ম, মতাদর্শ, জাতীয়তাবাদ, এগুলো একেকটা উছিলা। নব্যনাস্তিকেরা অন্ধত্বের বিরুদ্ধে লড়ার নামে কেবল কয়েকটা উছিলার পেছনে লড়তে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। লড়াই বিষয়ের বিরুদ্ধে নয়। ধারণার বিরুদ্ধে। বৈষয়িক লড়াকুদের দিয়ে প্রগতি হবারও সম্ভাবনা দেখছি না। তবে তারা আগামিতে পৃথিবীতে গণসমর্থিত ও ক্ষমতাশালী হবেন, এই পূর্বাভাস করি।
@রূপম (ধ্রুব),
একটা জিনিস বলি, মজা পাইতে পারেন। জেমস উড সাহিত্যের ব্যাপারে ভীষণ হাইরারকিকাল, ভীষণ কড়া। “মহৎ সাহিত্যের” একটি কট্টর ধারাবাহিকতার প্রতি তার আনুগত্য দ্বিধাহীন।
ধর্মের সম্পূর্ণ আলোচনা নয়, এই অর্থে নব্য নাস্তিকতা যে খোঁড়া, তাতে সন্দেহ নাস্তি। কিন্তু সেটা ঠিক কত বড় সমালোচনা, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন হল, নব্য নাস্তিকতা কি ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতাকে চিহ্নিত করে তার সাথে আলোচনায় লিপ্ত হচ্ছে? আমার মতে তার উত্তর হ্যাঁ, কাজেই নব্য নাস্তিকতা “খোঁড়া” কিন্তু বৈধ। তার সাথে জেমস উড-সুলভ আলোচনার বিরোধ কেন থাকতেই হবে, স্পষ্ট নয়।
নারীবাদ একটা ভাল তুলনামূলক উদাহরণ হতে পারে। ধ্রুপদী নারীবাদ অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধংদেহী ছিল। প্রাণে ধরে তার সমালোচনা করতে আমি অক্ষম, নারীদের দাসসুলভ বাস্তবতার নিরিখে। এও স্বীকার করি যে এই যুদ্ধংদেহী মনোভাব রেডিক্যাল নারীবাদে গিয়ে একটি প্রায়-উন্মাদ রূপ নিয়েছিল কোন কোন ক্ষেত্রে। কাজেই বিপদটা আছেই। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। তৃতীয় প্রজন্মের নারীবাদীরা সেখান থেকে (অনেকটা) বেরিয়ে এসেছেন। একজন বিশেষ ব্যক্তি বা এমনকি একটি বিশেষ আন্দোলন বাস্তবতার যাবতীয় সূক্ষ্মতাকে ধারণ করুক, এই দাবী বাস্তবতাসম্মত মনে হয়না। বহু ব্যক্তি ও বহু আন্দোলনের সমন্বয়ে “সমাজ”-এর পক্ষেই সেটা সম্ভব হতে পারে। পরিচ্ছন্নতা ও একাগ্রতারও মূল্য আছে।
তেমনি নাস্তিকতা যে গোঁড়া হয়ে উঠতে পারে, বা অলরেডী বহু সংখ্যক গোঁড়া নাস্তিক আছেন, তাও অস্বীকার করবার উপায় নেই। কিন্তু উড যে বলছেন…
তা শুনে আমার মন্তব্য, বটেই তো! সেই জন্যই তো সাহিত্য আর পলেমিক দুটো ভিন্ন জিনিস! অনিকেত সূক্ষ্মতার চর্চার জন্য সাহিত্য — চমৎকার, লাল সালাম। কিন্তু পলেমিস্টদের সেই মানদণ্ডে বিচার করে লাভটা কি?
শুধু তাই না। নব্য নাস্তিকতার গুরুদের যে অ-সূক্ষ্মতার গঞ্জনা দিচ্ছেন, তা পুরোপুরি উৎরোয় না। ডকিন্স বা ডেনেটার ক্ষেত্রে অনেকটা উৎরোয় হয়ত। জেমস উডের শব্দ ধার করে বলি, উনি যে ডকিন্সের উপর জোর দিচ্ছেন এটা “telling”। স্যাম হ্যারিস নিজেকে বৌদ্ধ পরিচয় দিয়ে থাকেন, জাতিস্মর সম্বন্ধে তাকে আমি দ্বিধা প্রকাশ করতে শুনেছি। এ লোককে অসূক্ষ্মতার অপবাদ দেয়াটা একটু rich। এখন, নিশ্চয় সূক্ষ্মতার এমন অনেক প্রকাশ আছে, যা স্যাম হ্যারিসের আয়ত্বাধীন নয়। স্যাম হ্যারিস চেকভ, এমন দাবি কেউ করছে না। আর হিচেন্স? জেমস উডকে সাহিত্য সমালোচক হিসেবে মোটামুটি এক নম্বর ধরা হয় — কিন্তু পাঁচের মধ্যে হিচেন্স পড়ে যাবেন।
আর ব্যক্তি ধরে কোনো বক্তব্য যদ
@রৌরব,
ব্যক্তি ধরে কোনো বক্তব্য যদি দিয়েও থাকি, ব্যক্তি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই যেমন এখন কে উৎরায় কে উৎরায় না, সেই আলোচনা চলে এলো। এটা কাম্য নয়। এটার অবতারণার দায় আমার। এ জন্য দুঃখিত। একজন ব্যক্তির একটা বিশেষ ধারণা উৎরাতে বা না উৎরাতে পারে। ব্যক্তি কী করে উৎরায়? ব্যক্তিকে আলোচনার প্রধান করাটা ঠিক নয়। একই ব্যক্তি অনেক অনেক ভালো কথার সাথে অনেক অনেক খারাপ কথা বলতে পারেন। ভালো কথাগুলো উৎরায়, খারাপগুলো উৎরায় না। এতে কি ব্যক্তিটা উৎরায় নাকি না? ব্যক্তিকে উৎরে দিলে যেটা হয়, তখন তার খারাপ কথাগুলোকেও উৎরে দেবার একটা প্রবণতা দেখা যায়। আর ব্যক্তিকে বাতিল করলে তখন তার ভালো কথাগুলোও বাতিল। বাই দ্য ওয়ে, এটা জাতীয়তাবাদীদেরও একটা খুব কমন আচরণ। ব্যক্তি নিয়ে তারা আলোচনা করে। রবীন্দ্রনাথ বা বঙ্গবন্ধু বা জিয়া দেবতা, নয়তো পুরোপুরি বাতিল।
স্যাম হ্যারিসের অনেক কথাই আমি মন দিয়ে শুনি, ভালোও লাগে। যদিও তার বৈজ্ঞানিক মোরালিটির আমি একনিষ্ঠ সমালোচক।
@রৌরব,
চমৎকার বলেছেন।
আমার মনে হয় বেশ বড় মাপেরই সমালোচনা। কারণ, এমন নয় যে একটা বিশেষ মতকে সমালোচনা করছে। একটা অনুপস্থিত ধারণারও জন্ম তো দিচ্ছে। আপনার স্ফটিকায়তনের প্রায় পীড়াপীড়িতে ( 🙂 ) স্পষ্ট করছি কীভাবে এই সমালোচনাটা এগুতে পারে বলে দেখছিঃ
১) নব্যনাস্তিকেরা, লিটারালিস্টরা যে ধর্মের একটা সার্বিক সমালোচনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, এটা তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের সমালোচনা একটা বিশাল ধার্মিক গোষ্ঠির সাথেই যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলত এভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছে যে তাদের ধর্ম দূর করার প্রচেষ্টাগুলো ধার্মিকতার একটা সংস্কৃতিই কেবল বর্ধন করছে। (তারা নিজেরা ধর্ম নিয়ে যে অফলপ্রসু তর্ক করছে, সেটাকে ধার্মিকতার প্রকোপ বর্ধন হিসেবে চিহ্নিত করছি।)
২) একটা বিশাল গোষ্ঠি যেহেতু নামে মাত্র ধর্মচর্চা আর কাজে মাত্র খোদাকে মানে, তারা সম্ভবত ধর্মের সেসব বড় বড় ক্ষতির বাইরে, যেগুলোর ধোঁয়া নব্যনাস্তিকেরা সর্বদা তুলে থাকে।
৩) ফলে ধর্মের একটি প্রবণতার বৈধ সমালোচনাকে কেন্দ্র করে নব্যনাস্তিকতা আরেকটি জীবন ব্যবস্থামাত্র হয়ে দাঁড়ায়। যদিও তারা নিজেরা এটাকেই মানদণ্ড মনে করে যেতে পারে। অনেকটা এমন যে তাদের অবস্থানটা তাদের কাছে স্ফটিকায়িত করে তুলে ধরা হলো।
৪) এর প্রত্যুত্তর আসা প্রায় অবশ্যম্ভাবী। তবে যেকোনো যুক্তিপূর্ণ উত্তরের ক্ষেত্রে এটাই সম্ভাব্য যে সেটা তাদেরকে তাদের বর্তমান ভাবনার চেয়ে ভিন্ন ভাবনায় যেতে সাহায্য করবে। এটা সবাই করবে তা না। জঙ্গিপনা অনেকের মাঝে রয়েই যাবে। ভিন্ন ভাবনাকারীরা একটা ভিন্ন মতবাদের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। অন্যদিকে যারা জঙ্গিপনা করছিলেন না, তাদের অনেকে একটু পিছিয়েই থাকবেন এই চিন্তার দৌঁড়ে। কারণ, তারা অনেকে জঙ্গিনাস্তিকতাকে একহাত নেয়া গেছে ভেবেই তৃপ্তিতে বসে থাকবেন।
৫) সাধারণ ধার্মিকরা যেহেতু অনেকেই ধর্মের প্রকোপের বাইরে থাকে, অনেক এজেন্ডাভিত্তিক নাস্তিক এটাও অনুভব করতে পারতে পারে যে ধর্মের প্রকোপ থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখার জন্যে সাধারণ ধার্মিক হয়তো সঠিক টার্গেট না। হয়তো তারা কম কমের বেশ কাছেই আছে। নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আস্তিকদের ব্যাপারে যে অচ্ছুৎভাব, সেটার কিছুট কমতি ঘটাবে, অন্তত নাস্তিকদের একাংশের তরফ থেকে।
এরকম কতো সম্ভাবনাই তৈরি হতে পারে এই ডিসকোর্স থেকে। তৃতীয় প্রজন্মের নারীবাদের আবির্ভাবে জঙ্গিবাদী নারীবাদের প্রবণতাগুলোর সমালোচনাগুলো কোনও সাহায্য করে না থাকে, তাহলে সত্যিই অবাক হবো।
যদিও বেশ কয়েকবার প্রায় হত্যার হুমকির পেয়েছি, তারপরও জানতে চাই, নাস্তিকতা ঠিক কতোটা অত্যাচারিত এই মুহূর্তে বা কতোটা বেশি অত্যাচারিত, একটা রাষ্ট্রের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের থেকে। আমি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের কথা ভাবতে পারছি না, যেটা পশ্চিম দুনিয়ায় একজন নাস্তিক পেতে পারে না। এমন কি বাংলাদেশেও এমন অধিকারগুলোর লিস্টি করলে তেমন বড়ো হবে কিনা ভাবছি। কিন্তু অত্যাচারিত? বরং বিশ্বে ক্ষমতার যে মেরুকরণ, সেখানে জয়ীগণ বা অত্যাচার করার সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্তগণের পাশেই কিন্তু নব্যনাস্তিকতাকে অধিক কল্পনা করা যায়। নব্যনাস্তিকতার এজেণ্ডা আর বিশ্বমোড়লের এজেণ্ডা প্রায় তো একীভূত। সে অর্থে নব্যনাস্তিকতা তো ক্ষমতাবানদের কোলেই নিরাপদে থেকে তাদের যুদ্ধটা চালাচ্ছে। প্রতিপক্ষ বরং এক অর্থে দুর্বল পক্ষই। অত্যাচারিত হবার সমূহ সম্ভাবনাযুক্ত। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তো অস্ত্রধারীর আস্তিনে লুকানোর মনমানসিকতাটা হয়ে উঠে না। বরং প্রাণে ধরে সমালোচনা করতেই মন চায়।
নব্যনাস্তিকতার একটা বড় অংশের ব্যর্থতার নিদর্শন অনেকটা এরকম – তারা প্রথমত সাধারণ মুসলমানদের দেখানোর চেষ্টা করে যে তারা আসলে প্রকৃত মুসলমান না। কোরান আক্ষরিক অর্থে না মেেন মুসলমান হওয়া যায় না। তাদের জীবনাচরণ, তাদের বিশ্বাসের আকার প্রকার, কোনোকিছুই কোরান মোতাবেক না। বুকে বোমা বাঁধা মুসলমানরাই প্রকৃত মুসলমান। তাদের আকাশকুসুম কল্পনা যে এতে তারা বোধবুদ্ধির সাথে রাজি হবে। তারপর দ্বিতীয়ত নব্যনাস্তিকেরা তখন চেষ্টা করে আক্ষরিক কোরানের উপর ভিত্তি করে ইসলামের যে ভার্শন, সেটার যৌক্তিক, বৈজ্ঞানিক, মানবিক সঙ্কটগুলো তুলে ধরে সাধারণ মুসলমানের চোখের সামনে তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামকে নাঙা করা। এভাবে তারা বল লাইনে এনে মাঠের বাইরে পাঠাতে চায়।
কিন্তু এটা থোড়াই কাজ করে। সাধারণ মুসলমানের ঘোষিত স্বীকারোক্তিতেই যেহেতু আছে যে তারা কোরানে বিশ্বাস করে, তাদের যখন বল হয় “কোরান আক্ষরিক অর্থে না মেেন মুসলমান হওয়া যায় না”, তখন তারা বলে, “হুঁ, হুঁ”। যেমনটা তারা মোল্লাদের পাল্লায় পড়লেও বলে। আবার “তাদের জীবনাচরণ, তাদের বিশ্বাসের আকার প্রকার, কোনোকিছুই কোরান মোতাবেক না” বললে তারা নিশ্চয়ই বলে যে তারা চেষ্টা করছে বা করবে কোরানকে মেনে চলার। কিন্তু তাদের এগুলো তো মনের কথা না। এগুলো ধর্মের শক্তিশালী প্রকোপময়তা থেকে উদ্ধারের একটা মোক্ষম উপায় বরং। ফলে তারা এসব বললেও, তাদের মনে তো কোরান মেনে মেনে জীবনযাপন করার প্রকৃত কোনো বাসনা কখনো তেমন জাগে না। ফলে তাদের সামনে কোরানবর্ণিত ইসলামকে যখন নাঙা করা হয়, তাতে নব্যনাস্তিকেরা যতই তৃপ্তি পাক, সাধারণ মুসলমানের ইসলাম তাতে তার কাছ থেকে পালায় না। সাধারণ মুসলমানের ধর্ম তার কাছে তার মতোই থাকে – অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট, ব্যক্তিক, স্বস্তিময়। ফলে এই হলো যোগাযোগের সেই সমস্যা। নব্যনাস্তিকেরা বল লাইনে এনে একের পর এক মাঠের বাইরে পাঠানোর তৃপ্তিভোগ করছে। কিন্তু এতে কড়া নড়ছে কেবল কিছু লিটারালিস্ট মাইন্ডসেটের মানুষজনের। ননলিটারালিস্টদের আগে লিটারালিস্ট বানিয়ে নিয়ে তারপর লিটারাল ইসলামকে নাঙা করে মুসলমানের ধর্মনাশ করাটা কতোটা ফলপ্রসু? ননলিটারালিস্ট মানুষেরা কি অনেক অনেক করে আগামিতে লিটারালিস্ট হয়ে উঠবে? সেই প্রগতিশীল আশার গুড়ে বালি।
ভালই বলেছেন :guru: :guru: :guru:
নতুন ভাবনার খোরাক পেলাম।
ভাল লিখেছেন। “খোদামানা” গোত্রের সাথে নাস্তিকদের মিথষ্ক্রিয়া যা লিখেছেন তার চেয়ে একটু জটিলতর হয়ত।
গ্রাম্য ভাষায় ‘হুইন্যা মুসলমান’ ( খোদা মানা) আর হাদিস-কোরান ঘেটে ফতোয়া খোঁজা ( কোরান মানা) নিয়ে আলোচনাটা চিন্তার দোয়ারে কড়া নাড়তে নাড়তে এগিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু এ লেখাটি পড়ে, কোনভাবে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবহারের ব্যাখ্যাটি পাইনি।
এখানে “তার” কে? বুঝিনি।
আমি দুঃখিত, এ বাক্যের অর্থও উদ্ধার করতে পারিনি।
ধন্যবাদ, বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে দেখার এবং আলোচনার সুযোগ করে দেবার জন্য।