এই লেখাটি একটি হালকা লেখা। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনর্থক দীর্ঘস্থায়ী বিতর্ক স্নায়ুর উপর যে চাপ ফেলেছিল তার থেকে বেরিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা এটি। এখানে যে মতামত দিয়েছি তা আমার একান্তই ব্যক্তিগত। এর সাথে সবার মতামত মিলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দ্বিমত পোষণের স্বাধীনতা সবারই রয়েছে।
লেখাটির পরিকল্পনা করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু লেখা হয়ে উঠে নি। কিছুদিন আগে মহীনের ঘোড়াগুলি নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ওই পোস্টের পরে সামান্য একটু অপরাধবোধে ভুগেছিলাম আমি। ব্যান্ড সংগীতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিম বঙ্গ এখনো শিশু। অথচ বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কোলকাতার একটা ব্যান্ড নিয়েই আমি প্রথম লেখা লিখেছি মুক্তমনায়। এটা বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের প্রতি একটু অবিচারই মনে হয়েছিল আমার কাছে। ফলে, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে মাকসুদকে নিয়ে একটা কিছু লিখবো। কারণ, তিনি আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন শিল্পী। নিয়মিতই তাঁর গান শোনা হয় আমার।
এই লেখার বিষয়বস্তুর সাথে শিরোনামের কোনো সম্পর্ক নেই। না থাকারই কথা। শুরুতে এর শিরোনাম ভিন্নতর ছিল। হুট করেই শিরোনামটিকে পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি যুক্তিহীন কোনো এক কারণে। সবসময় যে যুক্তিপূর্ণ কাজ করতে হবে এমনতো কোনো কথা নেই। তাই না? অথবা কে জানে যুক্তিহীনতার মধ্যেই হয়তো সংগোপনে সুপ্ত অবস্থায় শুয়ে থাকে সুনিপুন কোনো শক্তিমত্ত যুক্তি।
নব্বই সালের ঘটনা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। পড়াশোনা করছি বললে অবশ্য পড়ালেখাকে অপমান করা হয়। ছাত্র হিসাবে নাম আছে এটুকুই শুধু। ইচ্ছা হলে ক্লাসে যাই, ইচ্ছা না হলে যাই না। আর বেশিরভাগ সময়েই কী কারণে যেন আমার ইচ্ছা না হওয়াটাই বেশি ঘটতো। ক্লাস না করার এই স্বাধীনতা বাংলাদেশে মোটামুটি সবাই পায় কলেজ জীবনে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল উল্টোটা। নটরডেম কলেছে পড়েছি। এখানে ফাঁকি দেওয়াটা পৃথিবীর দুরুহতম কাজগুলোর মধ্যে একটা ছিল। স্কুল ফাঁকি দিয়েছি মাস্টার মশাইদের পশু পেটানোর মত করে নিয়মিত পেটানোকে হজম করেই। কিন্তু কলেজে ওই সব মারপিট টারপিটের বালাই ছিল না। এর বদলে কলেজ থেকে বিদায় করে দেবার চল ছিল। পড়াশোনা করি আর না করি, কলেজ থেকে বিতাড়িত হতে হবে, সেটাকে কোনোভাবে মেনে নেবার মত মানসিকতা আমার ছিল না। ফলে, বাধ্য হয়েই ক্লাস করতে হতো তখন। কলেজ জীবনে বাধ্যতামূলক ক্লাস করতে করতে ক্লাসের উপরে যে ঘেন্না তৈরি হয়েছিল, সুযোগ পেয়ে সুদে আসলে তার পুরোটা মিটিয়ে নিচ্ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে।
ক্লাস বাদ দিয়ে টিএসসির আশেপাশ দিয়েই ঘুরঘুর করি অকারণে। টিএসসিই তখন আমার কাছে তীর্থস্থান। স্বল্প দৈর্ঘের ছবি দেখি, আবৃত্তির অনুষ্ঠান দেখি, মারামারি কাটাকাটি দেখি আর মাঝে মাঝে হাভাতের মত হা করে তাকিয়ে থেকে হরেকপদের মিষ্টিমিষ্টি মেয়ে দেখি। এই বস্তুও তখন আমার কাছে নতুন বিস্ময়। স্কুল এবং কলেজ জীবনে পৃথিবীতে যে পুরুষ ছাড়া অন্য প্রজাতিরও মানুষ আছে বিপুল পরিমাণে জানাই ছিল না সেকথা। সংখ্যার প্রাচুর্যে সুন্দরী বাছাই করাই সমস্যা হতো। এতসব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আসল কাজটাও ঠিকমত চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আন্নার সাথে চুটিয়ে প্রেম চলছে তখন আমার। চালচুলোহীন চ্যাংড়া একটা ছেলে। নিজেরই থাকার জায়গা নেই, অথচ সংসার সাজানোর সুখস্বপ্ন দেখাচ্ছিলাম তাকে। কী দেখে যে সে আমার প্রেমে পড়েছিল তা অবশ্য এখনও জানি না। হাবাগোবা ধরনের একটা হাবিজাবি মানুষ ছিলাম আমি। প্রেমের ক্ষেত্রে শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও যে একটু বোকা কিসিমের হয় সেটা তাকে দেখেই বুঝেছি তখন। এখন অবশ্য চালাক হয়ে গেছে। আমার সব কথাই যে ফাঁকিবাজি ছিল বুঝে গিয়েছে এতদিনে। সেকারণেই এখন রাতদিন কপাল চাপড়ায় বাচ্চা বয়সে করা ভুলের অনুশোচনায়।
যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠান খুব জাকজমকের সাথে করা হতো। বাংলাদেশের মিউজিক ব্যান্ডগুলোর তখন স্বর্ণযুগ। ছাত্র সংসদের অভিষেকে প্রধান কোনো ব্যান্ড না এলে সেই অভিষেক জমতোই না। হঠাৎ করেই শুনলাম যে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের অভিষেক হবে এবং সেখানে ফিডব্যাক আসবে। ফিডব্যাক তখন সেরা ব্যান্ড। একের পর এক জনপ্রিয় গান তৈরি করছে তারা। সেই সব গান ছেলেপেলেদের মুখে মুখে ফিরতো। রোকেয়া হলে দেখেই আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় নি। কারণ রোকেয়া হল ছিল মোগল হারেমের মত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঢাকা। পুরুষের সেখানে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু, সেই নিষিদ্ধ জায়গাতেও যাবার জন্য উতলা হয়ে উঠলাম আমি। ফিডব্যাকের গান শোনার জন্য নয়। অন্য কারণে। আন্না থাকতো বাসায়। ফিডব্যাকের গান শোনার জন্য সুড়সুড় করে হলে চলে এসেছে সে সেদিন বন্ধুদের সাথে। ওর কারণেই মেয়েদের হলে ঢোকার জন্য মরিয়া আমি। ছাত্রদল করা (ছোটোখাটো ক্যাডার ছিল সে) আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্বপনকে বললাম সেকথা। সে বলে, কোনো সমস্যা নাই। চিন্তা করিস না। জোৎস্না আপারে কইলেই ঢোকা যাইবো। জোৎস্না আপা তখন রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের জিএস। অল্পবিস্তর চেনাশোনা আমার সাথেও আছে। এই জোৎস্না আপার প্রেমিক ছিলেন বেলাল ভাই। বেলাল ভাই খুবই সাদাসিধে বন্ধুবৎসল ভালমানুষ ধরনের লোক ছিলেন। কিন্তু তাঁর এক বিচিত্র সমস্যা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের একমাত্র নেতা এবং কর্মী ছিলেন তিনি। জাতীয় পার্টির বিভিন্ন প্রোগ্রামে, ছাত্রব্রিগেড এর মত আর্থিক লাভবান প্রকল্পে ছাত্রদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যেতেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরশাদ তখন সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণী। তার সমর্থনে একটা ভালো কথা কেউ বললেই সে লোকের হালুয়া টাইট করে দেয়া হতো। অথচ বেলাল ভাই নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের সক্রিয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর গায়ে সামান্যতমও টোকা পড়ে নি কখনো। জোৎস্না আপার প্রেমিক হিসাবে ছাত্রদলের ক্যাডারটা তাঁকে দুলাভাইয়ের মত সম্মান করতো। অন্য সংগঠনে বন্ধু থাকলে এই সৌজন্যতা সেই সময় পাওয়া যেত। আমি ছাত্র লীগার হবার পরেও স্বপন এবং আরো কয়েকজন বন্ধুর কারণে ছাত্রদলের শক্তিশালী ঘাটি বলে পরিচিত সূর্যসেন হলে অবাধে ঘোরাফেরা করেছি। এই বেলাল ভাইয়ের ছোটো ভাই ছিল আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ছোটো ভাইয়ের বন্ধুর সুবাদে আমাদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি।
রোকেয়া হলের অভিষেক অনুষ্ঠানে ঢোকার জন্য আমরা গিয়ে ধরলাম বেলাল ভাইকে। কোনো অজুহাত টজুহাত না দেখিয়েই তিনি বললেন যে, দাঁড়াও জোৎস্নাকে বলে ইনভাইটেশন কার্ডের ব্যবস্থা করছি। জোৎস্না আপার সাথে আলাপ করে এসে বেলাল ভাই আমাদের দুঃসংবাদ জানালেন। সব ইনভাইটেশন কার্ডই বিলিবন্টন হয়ে গিয়েছে। শুনে আমারতো মাথায় হাত। আমার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছেন বেলাল ভাই। বললেন যে, চিন্তা কইরো না। অন্য ব্যবস্থা হইছে। গেটে জোৎস্না আর রানু, শানু থাকবো। অন্য অতিথিদের সাথে তোমরাও ঢুকে পড়বা। ওরা ভান করবে যে তোমাদের কাছে কার্ড আছে। এখানে বলে নেই রানু, শানু জোৎস্না আপার ছোটো দুই বোন। বড় বোনের মত তারাও সক্রিয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতি করে। হল সংসদের কী কী পোস্টে যেন তারাও নির্বাচিত হয়েছে। এতদিন পরে সেগুলো মনে নেই আমার। এই দুই বোনের সাথে আমারও পরিচয় ছিল, কিন্তু খুব বেশি কথা হয় নি কখনো। শান্তশিষ্ট মেয়ে ছিল তারা।
সন্ধ্যার দিকে রোকেয়া হলের গেটে গিয়ে ভিড় করেছি আমরা। হল সংসদের মেয়েরা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটে। আমন্ত্রণ পত্র পরীক্ষা করে করে ঢুকতে দিচ্ছে অতিথিদের। প্রবল ধাক্কাধাক্কি চলছে। বিশৃঙ্খল অবস্থা। এর মধ্যে কোন ফাঁকে দেখি স্বপন সুড়ুৎ ঢুকে পড়েছে হলের ভিতরে। ধাক্কাধাক্কির গুঁতোয় আমি ছিটকে পড়েছি একপাশে। শত শত ছেলে হলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মেয়েরা দারোয়ানদের নির্দেশ দিয়েছে গেট বন্ধ করে দিতে। গেটের বাইরে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। কিছুক্ষণ পরে দেখি বড় গেটের লাগোয়া ছোট্ট গেট দিয়ে হলের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে রানু এবং শানু। ইতি উতি করে কাকে যেন খুঁজছে। আমাকে দেখেই হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে যায় দু বোনের মুখ। দুজনের মাঝখানে আমকে দাঁড় করিয়ে, শত শত উন্মত্ত ছাত্রের মাঝখান দিয়ে রাজকীয়ভাবে আমাকে নিয়ে হলে ঢুকে পড়ে তারা। পরে জেনেছিলাম যে এই দুই বোন কোন এক বিচিত্র কারণে আমাকে খুব পছন্দ করতো। হলের মধ্যে স্বপনের সাথে আমাকে না দেখে তারা বের হয়ে এসেছিল আমাকে ভিতরে নেওয়ার জন্য।
কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের ক্যাডার পুলিশ বাহিনীর অত্যাচারের ইউটিউব ভিডিও দেখছিলাম। বিনএনপির চিফ হুইপকে পিটিয়ে প্রায় লাশ বানিয়ে ছেড়েছে রাস্তার গুন্ডাদের মত আচরণ করা পুলিশ অফিসারেরা। সেই ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখি সাদামাটা চেহারার বিএনপির এক মহিলা সংসদ সদস্য তীব্র ভাষায় পুলিশের এই পাশবিক আচরণের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন। টেলপে নাম ভেসে উঠেছে রেহানা আক্তার রানু।
রাজনৈতিক নেতাদের দীর্ঘ বক্তৃতার পরে তুমুল করতালির এবং মেয়েদের তীক্ষ্ণ চিৎকারের মধ্য দিয়ে মঞ্চে উঠে আসে ফিডব্যাক। সেই প্রথম আমার মাকসুদকে চাক্ষুস দেখা। সুঠাম দেহের শ্যামল বর্ণের এক পরিপূর্ণ যুবক। শুরুতেই জানিয়ে দিলেন যে, মাত্র গতরাতেই তাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান শেষ করে সড়কপথে ঢাকা ফিরেছেন। পর্যান্ত বিশ্রাম পান নি। ফলে, কতখানি আনন্দ দিতে পারবেন দর্শকদের সে বিষয়ে সেন্দেহ আছে। আমরা যেন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখি। ওইটুকু যে কথার কথা ছিল সেটা বুঝতে বেশিক্ষণ সময় লাগে নি আমাদের। শুরু হলো মঞ্চ কাঁপিয়ে মাকসুদের নর্দনকুর্তন। সেই সাথে তাঁর ভরাট, বলিষ্ঠ এবং অননুকরণীয় কণ্ঠের গান। ফিডব্যাক তখন তাদের স্বর্ণসময় পার করছে। অসংখ্য জনপ্রিয় নতুন গান তৈরি করেছে তাঁরা। মেলা, মৌসুমী দুই, মাঝি, জীবনজ্বালা এই সমস্ত গান তখন একেবারে টাটকা, সদ্যজাত সতেজ। দর্শকদের অনুরোধে কোনো গানকে একাধিকবারও গাইতে হচ্ছে মাকসুদকে। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে সব ছেলেমেয়েরা। মেয়েদের কেউ কেউ উদ্দাম নাচ শুরু করে দিয়েছে। সেগুলোকে সামলাতে হাউজ টিউটরদের সেকি প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। রাত একটার দিকে হঠাৎ করে অনুষ্ঠান শেষ করে দেয় ফিডব্যাক ক্লান্তির অজুহাত দেখিয়ে। হতাশ মনে সূর্যসেন হলে ফিরে আসি আমরা। সবে মাত্র বিছানায় গিয়েছে, হঠাৎ করে দেখি বিকট শব্দে ড্রাম বেজে উঠেছে। কানে ভেসে আসে মাকসুদের গান। কণ্ঠে চরম বিরক্তি নিয়ে স্বপন আমাকে বলে, “দেখছোস, মাইয়ারা কেমন ফটকাবাজ। আমগোরে বাইর কইরা দিয়া হেরা আবার গান শুনতাছে।“ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছোট্ট করে শুধু বলি, “হু।“
ফিডব্যাকের গান প্রথম শুনি আমি তিরাশি চুরাশি সালের দিকে। ফিডব্যাকের প্রথম বাংলা ক্যাসেট ছিল ওটা। তবে ওই ক্যাসেটে মাকসুদের কোনো গান ছিল না। বেশিরভাগ গান গেয়েছিলেন রোমেল নামের এক ভদ্রলোক। এই ভদ্রলোককে খুব কম লোকই চেনে। কারণ, বাংলাদেশে ব্যান্ড ক্রেজ জন্ম নেবার আগেই দেশ ছেড়ে আমেরিকাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। যদিও মাকসুদ ফিডব্যাকে যোগ দিয়েছেন ছিয়াত্তর সালে। কিন্তু তখন পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফিডব্যাকের ইংরেজি গানের ভোকাল। বাংলায় গান করতেন না তিনি। রোমেলের বিদায়ের পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই বাংলা গান শুরু করে তিনি। মাকসুদের ভাষ্য অনুযায়ী আজম খান প্রায়ই নাকি তাঁকে তাগাদা দিতেন এই বলে যে, “এই তুই বাংলা গান গাওয়া শুরু কর”। বাংলা গান গাওয়ার ব্যাপারে মাকসুদের নিজেরই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। সাতাশি সাল থেকে বাংলা গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। তারপর ইতিহাস। বাংলাদেশের ব্যান্ডের গানের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী তিনি, তাঁর কণ্ঠ থেকেই বেরিয়ে এসেছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গান। যার কোনো কোনোটি ক্লাসিকের পর্যায়ে চলে যাওয়ার পথে রয়েছে।
বাংলাদেশের সেরা ব্যান্ডগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিরই মঞ্চ পারফরম্যান্স দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেই সুবাদে নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি যে, স্টেজ পারফরম্যান্সে মাকসুদকে টেক্কা দেবার ক্ষমতা কারো ছিল না। এখনকার এই পঞ্চাশোর্ধ স্থূলকায় মাকসুদকে দেখে আগের মাকসুদকে বিচার করাটা কষ্টকরই। কিন্তু যাঁরা মাকসুদের যুবক বয়সের সোনালি সময়কে কাছে থেকে দেখেছেন তাঁরা যানেন যে কী প্রবল পৌরুষের দাপট নিয়েই না তিনি মঞ্চে দাপাদাপি করতেন।
শুধু মঞ্চ পারফরম্যান্স এর বিচারেই নয়, সামগ্রিকভাবেও জেমস এবং আইউব বাচ্চুকে বাইরে রেখে, আজম খানকে সশ্রদ্ধায় একপাশে সরিয়ে দিয়ে, মাকসুদই আমার চোখে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের শ্রেষ্ঠতম পুরুষ ।
হুট করেই ছিয়ানব্বই সালে ফিডব্যাক ছেড়ে দেন মাকসুদ। এই ঘটনা সেই সময়ে বিরাট আলোড়ন তুলেছিল। হাজারো গুজবে গুঞ্জরিত হয়েছিল চারপাশ। মাকসুদের চলে যাওয়াতে ফিডব্যাক ডানা ভাঙা পাখির মত মুখ থুবড়ে পড়েছিল মাটিতে। আজকে এত বছর পরেও সেই ভাঙা ডানা আর জোড়া লাগে নি তাঁদের। ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদেরও ক্ষতি কম হয় নি। তিনি নতুন একটা ব্যান্ড খুলেছিলেন মাকসুদ ও ঢাকা নামে। কিন্তু এই ব্যান্ডটি ফিডব্যাকের ধারেকাছেও যেতে পারে নি। মাকসুদকে হারিয়ে ফিডব্যাক ডানা ভেঙে উড়া ভুলেছে, আর মাকসুদ হাজার চেষ্টা করেও মাকসুদ ও ঢাকার ডানা গজাতে পারেন নি, একে উড়ালপক্ষি বানানোর জন্য। কিছুদিন আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাকসুদ তাঁর ফিডব্যাক ছেড়ে চলে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন যে, তিনি যে ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত গান করতে চান সেটা ফিডব্যাকের কাঠামোর মধ্যে সম্ভব ছিল না। কাজেই, ফিডব্যাকের সাথে আমার ডিভোর্স বা সেপারেশন কিছুই ঘটে নি, বরং বন্ধুসুলভ ভঙ্গিতে করমর্দন করে বিদায় জানিয়ে যাঁর যাঁর পথে চলে গিয়েছি আমরা।
মাকসুদ অনেক জনপ্রিয় গান করেছেন। এর অনেকগুলোই দীর্ঘ সময় ধরে অনাগত দিনের তরুণ প্রজন্মদের মাতাবে। তবে এগুলো তাঁর সেরা পাওনা নয়। তিনি একটা গান গেয়েছেন মেলায় যাইরে বলে। বাংলাদেশে অসম্ভব জনপ্রিয় এই গান। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই গানটি টিকে থাকবে দীর্ঘ দীর্ঘকাল। বাঙালির একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব নববর্ষ। আগে বৈশাখকে বরণ করার জন্য একমাত্র গান ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ। এই গানটি অত্যন্ত ধীর লয়ের, উত্তেজনাহীন, নিষ্প্রাণ, গম্ভীর এবং আনন্দহীন একটা গান। বাংলা নববর্ষের গতিময়তার সাথে, থরথর কম্পমানতার সাথে, তীব্র উত্তেজনার সাথে, আনন্দমুখরতা এবং উৎসব উৎফুল্লতার সাথে খুব একটা মানানসই ছিল না এটা। কিন্তু এর কোনো বিকল্প আমাদের হাতে ছিল না। ফলে, নববর্ষে একদল নিষ্প্রাণ গম্ভীর মানুষের কণ্ঠে নিরস এই গান শুনেই নববর্ষকে বরণ করতে হতো আমাদের। এই শুন্যস্থানকে পরিপূর্ণভাবে ভরে দিয়েছে মাকসুদ তাঁর মেলায় যাইরে গানটা দিয়ে। এই গানের দুরন্ত গতি, সপ্রাণতা, তীব্র উত্তেজনা, আনন্দঝংকার নববর্ষের উৎসবে সত্যিকারের প্রাণ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশে এখন নববর্ষ বরণ মাকসুদের এই গান ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোথাও বনভোজনে গেলে যেমন অবশ্যম্ভাবী হ্যাপির গাওয়া চলো না ঘুরে আসি গাওয়া হবে, তেমনি নববর্ষের অনুষ্ঠানে, উৎসবে মেলায় যাইরে যতিহীন মধু ঝরাবে।
মুক্তমনার একজন সদস্যের মন উজাড় করা ভালবাসা নিয়ে ভালো থাকুন মাকসুদ আপনি।
httpv://www.youtube.com/watch?v=9TZTXRX7_Vo
আপনে কেমনে মাকসুদের মাটরো একটা গান দিলেন আপনার পোশেটে! আমি হইলে কিনটু পারতামনা।মাকসদের এত favourite gan আছে আমার, কোন টা দিমু দিশা পাইতাম না।
তোবে আপনে উপোরে মিলার জেই গান টা দিসেন, আমার মোনে হোৈ এই গান তা আমি একটা বাংলা ণাটকে 16/17 বছোর আগে শউনছি।
আপনার লেখাটা ভাল লাগল।
ব্যান্ড জনরার গানের সাধারণভাবে আমি অনুরাগী শ্রোতা নই। সুর এবং কথায় অধিকাংশেরই একটা নির্দিষ্ট ধাঁচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ লাগে, নতুনত্ব না পেলে আকর্ষিত হই না। অল্প কিছু গান ভালো লাগে। উইট এবং স্যাটায়ারের জন্য যেমন চন্দ্রিলের লেখা চন্দ্রবিন্দুর অনেকগুলো গান পছন্দ হয়।
বিলেতের কবিগুরু বলেছিলেন যারা সঙ্গীত ভালোবাসে না, তারা খুন করতে পারে; কিন্তু আজকাল হাইফাই শোনার সাথে সাথে এক ছুরিকায় কয়েকটি-গীতিকার, সুরকার, গায়ক/গায়িকাকে-খুন করতে ইচ্ছে হয়।-হুমায়ুন আজাদ
@অর্ধেক নবী,
মাকসুদকেও কি আপনার খুন করতে ইচ্ছা করছে নাকি?
@ফরিদ আহমেদ,
হা হা হা……… লেখাটা হালকা তাই হালকা একটা মন্তব্য করেছি। জামাতি ইসলাম ছাড়া আল্লাহর দুনিয়ায় কাউকে খুন করতে ইচ্ছা করেনা। হঠাৎ মনে পড়ল তাই হুমায়ুন আজাদ এর প্রবচনটি তুলে ধরলাম।
মুক্তমনার অন্যান্য লেখাগুলোর মত এই লেখাটিও অনেক ভালো হয়েছে। মুক্তমনার প্রতিটি লেখা পড়ার পরে মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়, আবার কখনও তৈরি হয় অনেক উত্তর। মোট কথা মুক্তমনার লেখাগুলো অনেক ভাবায়। এই লেখাটিও পড়ার সময় ব্যান্ড সঙ্গীত ঘিরে ছেলেবেলার অনেক কথা মনে পড়ছিল।
মাকসুদ ছিলেন আপনার জেনারেশন এর একজন শিল্পী, আমার জেনারেশনে ছিল আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, জেমস, বিপ্লব। তখন এদের গান অসম্ভব ভালো লাগতো। তখন ব্যান্ডের গান শুনলে বড়রা বলত কি সব আজেবাজে গান শুনিস? সারাদিন কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে। মানে এমন একটা অবস্থা যেন ব্যান্ডের গান শোনা বিশাল অপরাধ। এখন অবশ্য ব্যান্ডের গান খুব একটা ভালো লাগেনা শিরোনামহীন ছাড়া । এই ব্যান্ড এর সবাই শিক্ষিত এবং তাদের গানের সব কিছুই ভালো লাগে। এখন কিছু কিছু শিল্পী আছে, যেমন মিলা, আরেফিন রুমী, শিরিন, ফুয়াদ এদের গান শুনলে হুমায়ুন আজাদ এর কথাটি মনে পড়ে যায়। সুর নকল, রুচিহীন কথা, মিউজিক ভিডিও গুলো অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে পূর্ণ। অবশ্য এইগুলো আমার দৃষ্টিতে। অন্যর কেমন লাগে জানিনা। তাই মাঝে মাঝে চিন্তা হয় একটা বয়স পেরিয়ে যাবার পরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। গানের রুচিতেও পরিবর্তন হয়। এখন কোন টিনেজার হাইফাই গান শুনলে নিষেধ করিনা। মনে মনে বলি হয়তবা বয়স পেরিয়ে গেলে রুচির পরিবর্তন হবে। তবে সত্য কথাটি এখনকার বেশির ভাগ গানের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়। তবে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্ভবত জীবনের বেশিরভাগ সময় ভালো লাগে (টিনএজ পেরিয়ে গেলে)। যাই হোক গান শুনুন………..গানের সঙ্গে থাকুন……….. এইসব গানের সঙ্গে সঙ্গে কুরাআনিক, বৈদিক, বাইবৈলিক গান শুনতে যেন ভূলে না যান 😀 । ভালো থাকবেন, শেষে শিরোনামহীন এর একটা গানের লিঙ্গ দিয়ে দিলাম একদম ফ্রি
@অর্ধেক নবী,
আশ্বস্ত হলাম আপনার দীর্ঘ বক্তব্য পড়ে। নবীর ফতোয়া ভেবে শুরুতে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। 🙂
এদের গানও প্রচুর শুনেছি আমি। আমাকে আগের জেনারেশন বলে সাইডলাইনে ঠেলে দেওয়া যাবে না। প্রমিথিউস, নোভার জন্ম আমার ছাত্র বয়সে। এই দুটো ব্যান্ডেরই প্রথম ক্যাসেট বিরাট সাড়া ফেলেছিল। আইউব বাচ্চু, জেমস এবং নকীব খান পছন্দের শীর্ষে এখনও।
শিরোনামহীনের অনেক সুনাম শুনেছি আমি, যদিও খুব একটা শোনা হয় নি। ইচ্ছা আছে, একসময় বসে যাবো শুনতে। ও হ্যাঁ, আপনার দেওয়া লিংকটা আসে নি।
হা হা হা। এই তালিকা থেকে মিলাকে বাদ দেওয়া যায় না। ওর ফ্যান আমি। একসময় সাবা তানিকে দেখলে যেমন লাগতো, মিলাকে দেখলেও সেই রকমই লাগে। জেনারেশন গ্যাপ ভুলিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। :)) ওর এই গানটাতো আমার দারুণ পছন্দের। যেমন শ্রুতিমধুর, তেমনি দর্শনীয়ও। 🙂
httpv://www.youtube.com/watch?v=LqXYQo2p2xU
@ফরিদ আহমেদ,
লিংক আসে নাই কেন? আল্লাহর কি গজব পড়ছে? আচ্ছা আবার দিলাম, সময় থাকলে দেখে নিয়েন, আশা করি ভালো লাগবে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=d0hDreyxw7o
@অর্ধেক নবী,
হাফ নবী হলে গজবতো পড়বেই। ফুল নবী হলে সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি। 🙂
গানটা শুনলাম এবং বিপুল পরিমাণে বিমুগ্ধ হলাম। সব গান শুনে ফেলবো এবার এদের। ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
@ফরিদ আহমেদ,
শিরোনামহীন আমার মতে বর্তমান বাঙলাদেশের শ্রেষ্ঠ ব্যান্ড। যদিও শ্রেষ্ঠত্বের কোন মাপকাঠি দিতে পারব ন। কিন্তু আমি রীতিমতন মৌলবাদী এই ব্যান্ডের ব্যাপারে। যে বলে এদের গান ভালো লাগে না, ইচ্ছা করে ধইরা পিডাই। :))
@সাইফুল ইসলাম,
ভাগ্যিস ভালো বলছিলাম আমি এই ব্যান্ড সম্পর্কে। নইলেতো দেখি বিপদই ছিলো। 🙂
ম্াকসুদ এর সাথে টিভি তে কয়েকটা টক শো তে অংশ নিএছিলাম,একটু পাগলা টাইপ । তাও ভাল । ব্যান্ড করা আর মাদকাসাক্তি কি সমার্থক নাকি ?। অনেক কে দেখেছি মনে করে নেশা আর ব্যান্ড এক ই । প্রমিথিউস নামে একটা ব্যান্ড আছে জার বেস গিটারিস্ট আমার ভাইগ্না , কদিন পর পর ই মাদক শোধনাগার এ যায় । ধনীর ছেলে । বয়স কিন্তু কম , কিছুদিন আগে হেপাটাইটিস বি না জানি সি ধরা পরেছে যা নাকি সারে না । পশ্চিমা র ব্যান্ড এর শিল্পীরা নেশার ঘরে ই প্রাণ হারায়। নোভা নামে একটা ব্যান্ড ছিল যার মেইন ভোকালিস্ট ফজল এর সাথে ভাল পরিচয় ছিল , খুব এ ভাল , নেশা টেশার মধ্যে নাই । আবার আজম খান কে দেখেছি কিছু না টানলে গান ই করতে পারতেন না । জেমস,ফন্টি …এদের একই অবস্থা দেখেছি। আমি ভয় পাই ব্যান্ড এর মানুষদের ।
লেখাটা পড়ছি অনেক আগেই। লেখা পইড়া প্রথমে যে কাম করলাম তা হলো আমার এক বন্ধু আছে, তাকে মাকসুদ ভক্ত বললে ভুল হবে একেবারে মাকসুদ নামে পাগল ছিল (যদিও সময়ের পরিক্রমায় সেই ক্রেজ কমে যেতে পারে কিন্তু মুগ্ধতা নিশ্চয়ই এখনো আছে), তারে লেখাটার লিঙ্ক উপহার দিলাম। (Y)
অনেক দিন ধরে পড়তে পারচিলাম না। অভিজিতের গাইডেন্সে পড়তে পারলাম।
মনটা নানা কারনে অবদমিত।
বাসতবতার ঘাত প্রতিঘাতে অবদমিত।
ভাল লাগলো। গান গুলির সাথে একাত্ত বোধ করলাম।
উইকেন্ড,মুক্ত মনা আর রেড ওয়াইন।
এখন আর সেই দিন নাই। পোলাপাইন এখন হিসাব করে ক্লাস পালায়। অংক করে তারা বের করছে প্রতি মাসে মোট আঠারোটা করে ক্লাস বাদ দিলে এটেন্ডেন্স ৮০ পার্সেন্টের নিচে নামবে না, আর পায় কে!
@পৃথিবী,
ডিজিটাল যুগের পোলাপাইন। :))
এটা কি আন্না ভাবীর সাথে পরিচয়ের আগের ঘটনা নাকি পরের?
@তামান্না ঝুমু,
পরের ঘটনা। 🙂 ওর সাথে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই। একসাথে পড়াশোনা করেছি আমরা। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
তাহলে তো এটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 😛 😛
@তামান্না ঝুমু,
কোন আইনে? :-s
ইসলামি আইনে ফাঁসাতে পারবেন না। কারণ আমি মুসলমান নই। 🙂
পারিবারিক আইনেও শাস্তি দিতে পারবেন না এ কারণে যে আমি তখনও বিয়ে করি নাই। বিয়ের আগে চোখের পর্দা করা ফরজ না। এ ছাড়া নাবালকও ছিলাম তখন আমি। কাজেই শাস্তি মওকুফ। :))
@ফরিদ আহমেদ,
প্রেমের আইনে, ভালবাসার আদালতে। এ অপরাধের জন্য আন্না ভাবী আপনাকে যে শাস্তি দিতে চান সে শাস্তিই মাথা পেতে নিতে হবে। 😛
@তামান্না ঝুমু,
সেই শাস্তিইতো মাথায় পেতে নিয়েছি। যাবজ্জীবনের কারাবাস হয়েছে আমার। আমি বন্দি কারাগারে, বাইরের আলো চোখে পড়ে না …………… 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
এতদিন জানতাম নারীরা বন্দী, কোন পুরুষ যে বন্দী দশায় আছে তা জানা ছিলনা। জেনে ভাল লাগছে। পৃথিবীর সব পুরুষকে এভাবে বন্দী করে রাখত পারলে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যাবে।
‘বাইরের আলো চোখে পড়েনা’ মানে কি? সে ব্যবস্থা থাকলে কি ভাল হতো?
@তামান্না ঝুমু,
ভুল জানতেন। ঘটনা আসলে উলটো। সংসার মানেইতো পুরুষের জন্য বন্দী দশা। ঘরে ঘরে একেকটা মেয়ে যে কী পরিমাণে স্বৈরতন্ত্র চালায় তা কোনোদিন প্রকাশ পাবে না নারীবাদী নারী আর তাদের ন্যাওটা নারীবাদীর ভেক ধরা পুরুষদের কারণে। 🙁
দেখেছেন কি না জানি না। যদি দেখে না থাকেন, তবে এই দুষ্টু মুভিটা দেখে ফেলুন। বাইরের আলো কেন চোখে পড়ে না বা পড়লে ভালো হতো কি না জেনে যাবেন। 😛
httpv://www.youtube.com/watch?v=tvqbOPX3wBs
@ফরিদ আহমেদ,
সেদিন ক্রাইম পেট্রোলে দেখলাম, ভারতে প্রতি ৭৭ মিনিটে ১ জন নারী খুন হয় যৌতুকের জন্য। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত কোন পুরুষ যৌতুকের জন্য খুন হয়েছে কি? কোন পুরুষের মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে কি, রাস্তা ঘাটে কোন পুরুষ যৌন হয়রানির শিকার হয় কি? প্রতিনিয়ত ঘরে ঘরে কত নারী যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েও নীরবে নিভৃতে নিরুপায় দুঃসহ জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে তার হিসাব রাখার কি কোন উপায় আছে?
মুভিটি এখনো দেখা হয়নি। দেখতে হবে।
@তামান্না ঝুমু,
বেশ অবাক হলাম আপনার উত্তরটা দেখে। মনে হচ্ছে আপনি পুরো বিষয়টাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছেন। আমার মন্তব্যটা একটা রসিকতাপূর্ণ মন্তব্য ছিল। কোনো কারণে আপনি হয়তো সেটা বুঝতে পারেন নি। এজন্য আপনাকে আমি দোষ দিচ্ছি না। এটা আমার ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার কারণে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন বলেই আশা করছি।
ছবিটা না দেখলেও চলবে। ওটাও ওই রসিকতারই অংশ ছিল। এখন অপ্রাসঙ্গিক এবং অপ্রয়োজনীয়।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার রসিকতা বুঝতে পারি বলেই আপনার লেখা এত ভাল লাগে। আপনার মন্তব্যের রসিকতাও বুঝতে পেরেছি। আসলে আমারই উচিত হয়নি এত সিরিয়াস প্রতি উত্তর করা। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
লজ্জায় মরে যাচ্ছি।
হা হা হা। লজ্জায় লাল টাল হয় মানুষ যায় জানি, কিন্তু মরে যায় এই প্রথম শুনলাম। মরতে হবে না বেঁচে উঠুন। আমি কিছু মনে করি নি। আপনার সিরিয়াস আচরণ দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে আমার অতিরিক্ত রসিকতা করার প্রবনতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে কি না।
বেঁচেবর্তে উঠে এবার হল পাস ছবিটা দেখে ফেলুন। দারুণ মজার দম ফাটানো হাসির ছবি এটি। প্রাণ খুলে হাসবেন ছবিটা দেখে, এ নিশ্চয়তা দিতে পারি।
মাকসুদকে নিয়ে লেখা পেয়ে খুব ভাল লাগল। কদিন আগে মিউজিক.কম.বিডি থেকে মাকসুদের অনেকগুলো গান ডাউনলোড করলাম। আমার কাছে মাকসুদের সব গানই ভাল লাগে। তবে মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ’ এর রাজনৈতিক এবং জামাতবিরোধী গানগুলো রক্ত গরম করে দেয়। তার মত এমন রাজনৈতিক গান কেউ গায়নি আর। অনেক ধন্যবাদ।
@সন্ন্যাসী,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য।
মাকসুদের ভাষ্য অনুযায়ী এই ধরনের রাজনৈতিক গান করার জন্যই ফিডব্যাক ছেড়েছিলেন তিনি।
গান নিয়ে কোন মন্তব্য করবো না।
কিন্তু উল্লেখিত তীর্থস্থানে চিৎপাত শুয়ে শুয়ে জীবনের কত প্রহর যে কেটে গেছে, ভাবতে গেলে আমার এখনো কান্না পায়।
আমার স্মরণ-শক্তি খুব খারাপ। তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে, দেখা হলে চমকে উঠবো না তো?
@স্বপন মাঝি,
রবীন্দ্র সংগীতের ভাবসম্পদ নিয়ে একটা লেখা লিখেও ফেলতে পারি যে কোনো দিন। :))
বিচিত্র কিছু নয়। পৃথিবীটা খুবই ছোটো জায়গা, তার চেয়ে ছোটো বাংলাদেশ, আর টিএসসিতো ছোট্ট একটা চিনে বাদামের মত। সেই সাথে যোগ করুন নব্বই সাল, ঐতিহাসিক সময়। রাজপথের সব কমরেডইতো তখন হাতে হাত মিলিয়ে হেঁটেছি আমরা বহুদূর একনায়কের বিদায়ের প্রতীক্ষায়।
কেন জানি ব্যন্ডের গান আমাকে খুব একটা টানে না তার পরেও দু একটা বেন্ডের গান যে ভাল লাগেনি তা নয়। আসলে গানের সুর ও কথা যদি ভাল হয় তখন যে কোন গানি ভাল লাগে। ব্যন্ড জগতে তপন চৌধুরী ছিল আমার সব চাইতে প্রিয় শিল্পী।
@রাজেশ তালুকদার,
পছন্দের ভ্যারিয়েশন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি। আপনি প্রথমে খুবই প্যনপ্যানে টাইপ গান শোনা শুরু করেন। তারপরে আস্তে আস্তে ভালো লাগতেও পারে। :))
@ফরিদ আহমেদ,- ওমা সর্বপ্রথম ধন্যবাদটি যে আপনাকেই দিলাম! ওটা এত সহজে আপনার চোখ এড়িয়ে গেল?! (৮ নঃ লাইন।)
@ছিন্ন পাতা,
না, না, আমারে ধন্যবাদ দিছিলেন, সেইটাই ঠিক ছিলো। ফরিদ ভাইয়ের ধন্যবাদ দরকার নাই 🙂
আপনার ইমেইল চেক করেন, আর এখন থেকে লগ ইন করে মন্তব্য করতে পারেন।
এটি লেখকের অজ্ঞতার পরিচয়। ভূমি চন্রবিন্দু সহ প্রায় ২০০ টি এদিকের বাংলার ব্যান্ডের হদিস আমার কাছেই আছে। বাংলাদেশের ও প্রায় ১২০ টি মতন ব্যান্ডের ডাটাবেস আমার কাছে আছে।
বাঙালী গান, লেখা সংস্কৃতি আঁতলেমো পছন্দ করে। সর্বত্রই ব্যাঙের ছাতার মতন ব্যান্ড গজিয়েছে। এটা অত্যন্ত ভাল লক্ষণ। এটা বললে ভাল হত এই উপমহাদেশে বাঙালীরাই গানে অনেক এগিয়ে। মুম্বাই এর গায়কদের মধ্যে ৫০% ই বাঙালী-এবং এদিকের বাঙালী-সেই জন্যে কি আমি দাবী করতে পারি আমরা গানে অনেক এগিয়ে?
বাঙালী গান ভালবাসে-এবং বাঙালী গানে ব্যন্ডে এগিয়ে এমন দাবী করাই ঠিক।
@বিপ্লব পাল,
তুমি যে মিয়া ব্যান্ডের ডাটাবেস নিয়াও কায়কারবার করো তাতো জানতাম না। আমি খালি রবীন্দ্রনাথ নিয়া আশংকিত ছিলাম, কোন ফাঁকে দেখছি পশ্চিম বঙ্গও এসে হাজির হয়েছে। 🙁
এনিওয়ে, অজ্ঞতা স্বীকার করে নিচ্ছি। সংখ্যা দিয়ে কোয়ালিটি যাচাই করা হয় জানা ছিল না আমার। তারপরেও বলবো যে, ব্যান্ডের সংখ্যাতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই বলেই আমার বিশ্বাস। ব্যান্ড ক্রেজ নিয়েই বড় হয় বাংলাদেশের ছেলেপেলেরা। ঢাকা শহরে পাড়ায় পাড়ায় ব্যান্ড দেখেছি আমি নিজের চোখেই। তোমার ডাটাবেসে সেগুলো ঠিকমত রেকর্ড করা হয় নি মনে হয়। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আরে নবান্নের গান বলে আমি ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলেছিলাম-সব ব্যন্ডে গুলোকে এক জায়গায় করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে।
কালক্রমে ২৫০০ মেম্বার জড় হয়-কিন্ত কাজটা আর আগোয় নি-তখনই সবার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে মডু করে দিচ্ছি-দেখ যদি রিভাইভ করাতে পার। ২৫০০ মেম্বার হাতে শুরু করছ-মন্দ কি?
গ্রুপটার লিংক এখানে
আমার ধারনা দুই বাংলা মিলিয়ে প্রায় ২০০০+ পেশাদার গায়ক, ব্যন্ড আছে। ওদের সবার প্রমোশনের খুব দরকার। ভাবছি সেই জন্যে নবান্নের গানের প্রজেক্টটা আবার শুরু করব-প্রায় ৫০,০০০ মতন মেম্বার হলেই, যেকোন গানকে প্রথমে কিছুটা পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাবে। আমার হাতে বাংলা সিনেমার পেজের জন্যে ৩০,০০০ মতন মেম্বার আছে-তাই মেম্বার সংগ্রহ করাটা সমস্যা হবে না।
এদের জন্যে এইটুকু করে দিতে পারলে ভাল লাগত।
তোমার বহুমুখী কর্মদক্ষতা দেখে সবসময়ই ইর্ষান্বিত হই। আবারো হলাম। এই মহৎ প্রচেষ্টা চলুক অব্যাহত।
আমার কী মাথা খারাপ হইছে নাকি। এক মুক্তমনার মডু হয়েi যে পরিমাণ ভার্চুয়াল গালিগালাজ হজম করেছি, আমার সারাজীবনে বাস্তবে এর সিকিভাগও খাই নি আমি। মডু ভূমিকারে আমি ডরাই। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
আরে ওটাত বিতর্ক সভা না। উদ্দেশ্য একটাই যাতে অনামী গানের দলগুলোকে একটু প্রচারের আলোতে আনা যেতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
মোটেই ধরে নেবেন না পশ্চিমবঙ্গকে আমি ছোট করে দেখছি। আপনাদের সম্পূর্ণ পশ্চিমবঙ্গে যে কয়টি ব্যন্ড আছে তার থেকে বেশী আছে শুধু আমাদের ঢাকাতেই। আমি যেই রোডে থাকি সেই রোডেই কয়টা ব্যান্ড আছে সেইটার হিসাব করতে পরিসংখ্যান ব্যুরোরে ডাকতে হইব।
আর ব্যন্ডের সংখ্যা দিয়ে যদি আপনি গানের মান আর বৈচিত্রটা বিচার করেন তাহলে আমি বলতে বাধ্য আপনি ব্যান্ড সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না।
খুব সহজেই একটা পরীক্ষা করা যায় আপনার ব্যান্ডের জগতের ধারনা নিয়ে। আপনার পছন্দের অল্প কয়েকটা ব্যান্ডের নাম বলুন এবং সেই ব্যান্ডগুলোর একটা করে গান। অন্তত একটা যাকে কিনা আপনি পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখবেন। জাস্ট একটা।
আপনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের কথা বলছেন তো, আমি আপনাকে পরিষ্কার করে বলি, পশ্চিমবঙ্গ তো পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র এশিয়ার মধ্যে বাঙলাদেশের ব্যন্ডের অবস্থান একেবারে শীর্ষে। আপনি আপনার ডাটাবেজের(পশ্চিমবঙ্গের দুশো আর বাঙলাদেশের ১২০!!!!) যে উদাহরন দিলেন সেই ক্ষেত্রে অবশ্য আপনি আবার প্যাচাল শুরু করতে পারেন। একটু খোজ খবর নিয়ে দেখেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।
বাঙলাদেশের অভাব শুধু এখন দুএকটা জায়গাতে। নাম্বার এক, পাবলিসিটি। আপনি জাস্ট চিন্তা করতে পারবেন না যদি না দেখেন(অবশ্য বোঝার ব্যাপারও আছে) আমাদের এখানে যে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলো লেজেন্ডারী ব্যান্ডগুলোর গান কভার করে তাদের ট্যালেন্ট সম্পর্কে। কিন্তু কোন এক্সপোসার নাই। আমেরিকার মাঝারী মানের অনেক ব্যান্ড আছে যারা কিনা বাঙলাদেশের অনেক ব্যান্ডের নখের সমতুল্য না তারাও একটা এলবাম কয়েক লাখ কপি বিক্রি করছে বের করার দিনই। কেমনে কী, কন?
নাম্বার দুই, টেকনোলজি। এটা মনে হয় বোঝানোর কিছু নেই।
সব ব্যাপারেই যদি পিএইচডি কইরা ফেলেন তাইলে ত সমস্যা। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
(Y)
আমাগো মহল্লাতেও একই অবস্থা!!! শুধু পুরানা ইংলিশ ব্যান্ডগুলার ট্রিবিউট ব্যান্ডের গুনতে গেলেই কাগজ কলম লাগবে (@)
@বিপ্লব-দা,
পশ্চিমবঙ্গে এখন ব্যান্ডদলগুলোর রমরমা অবস্থা থাকলেও আগে এমন ছিল না। এমনকি বাংলাদেশেও নব্বই দশকের আগে সুধী সমাজ এবং মিডিয়ায় ব্যান্ড সংগীতকে হেয় চোখে দেখা হতো। পশ্চিমবঙ্গের ‘তারা টিভি’ চ্যানেলে গায়ক সুমন চট্টোপাধ্যায় ও হৈমন্তী শুক্লার একটি আড্ডায় আমি সুমনদাকে বলতে শুনেছিলাম যে, পশ্চিমবঙ্গের ব্যান্ড সংগীতের জোয়ার বাংলাদেশের প্রভাবেই এসেছে (বস্তুত সুমনদা কথাটি নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছিলেন, কারণ উনারা ‘শুদ্ধ সংগীতের উপর গ্রামার-বিহীন ব্যান্ড সংগীতের বদ আছর’ নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন)। এমনকি ঐ অনুষ্ঠানে মাকসুদের ‘মেলায় যাইরে’ গানটিরও সমালোচনা করা হয়েছিল।
যদিও বাংলাদেশে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার বা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এর মতো সংগীতশিল্পী জন্মাননি, বাংলা ব্যান্ড সংগীতে যে বাংলাদেশই Pioneer, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
@কাজি মামুন,
একটা কথা সত্য যে ব্যান্ড সঙ্গীত সারা জীবনের জন্য নয়। কিছুক্ষণ আনন্দ দেয়
অনেকটা one time use এর মত। রাগ করবেন না।
সহমত নাও হতে পারেন। এইটা আমার এবং তথা অনেকেরই মতামত।
লতা মুঙ্গেশকর, মোঃ রফি, কিশোর কুমার, ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী,
আরো আরো— ক্ষনজন্মা প্রতিভা আর পাবো কীনা কে জানে। অন্য দেশ বলে গুনীর করদর করবনা তা কী করে হয় 🙂
@আফরোজা আলম,
দেখুন ব্যান্ড সংগীতের প্রতি আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যান্ড আমাদের মিডিয়ায় এবং সুধী সমাজে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে। তার আগ পর্যন্ত ব্যান্ড সঙ্গীতের ব্যাপারে কমন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, “এতো কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণের উৎকট ও অসুস্থ চেঁচামেচি। দেশের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে, এদেরকে বর্জন করতে হবে, নইলে এরা শুদ্ধ সংগীতের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে!” যাইহোক, ব্যান্ড সংগীতের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায়নি; বরং, সুধী সমাজতো এখন ব্যান্ড সংগীতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! যারা আগে শিল্প-সংস্কৃতি ধংসের রব তুলেছিলেন, তারাই এখন সময় ও জীবনের অমোঘ পরিবর্তনের কথা বলে ব্যান্ড সংগীতকে ‘জাস্টিফাই’ করে থাকেন। এই যে ‘ইউ-টার্ন’, এর পেছনের কারণ কি বলে মনে হয় আপনার? আমিতো বিশ্বাস করি, ব্যান্ড সংগীত সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সে যে ‘not for one time use’, তা প্রমাণ করতে পেরেছে। ফরিদ ভাইয়ের এই লেখায় যে গানগুলোর রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, তা কত পুরনো বলুন তো! এগুলো কিন্তু বেঁচে আছে। আমি নিজেও রবীন্দ্র সংগীত বা অন্যান্য ক্লাসিকাল সংগীতের চরম ভক্ত। তাই বলে ব্যান্ড সংগীতের রস আস্বাদন থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার মানে হয়, বলুন? আমিতো ব্যান্ডের দুর্দান্ত গতিতে গা ভাসিয়ে দিতে একটুও দেরি করতে রাজি নই।
আর আপনার শেষের লাইনটা আমি ঠিক বুঝলাম না! অন্য দেশ বলে আমরা গুনির কদরে কোন ঘাটতি করছি? আমার তো মনে হয়, আমরা ভারতের legendary শিল্পীদের মাথায় করে রেখেছি! যার ‘equal reciprocate’ হয়, আপনি হলফ করে বলতে পারবেন না! আর এটাও সত্যি আমাদের দেশে ঐ মানের শিল্পী জন্মায়নি এবং এর পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। তবে সামনে নিশ্চয় আমরা হয়তো তাঁদের চেয়েও বড় কোন শিল্পী পাব! দেখলেন না, আমাদের জেমস মাত্র একটি গান গেয়ে কিভাবে সারা ইন্ডিয়া মাত করে দিলো!
@কাজি মামুন,
গোস্তাখি মাফ করবেন। আমি ভিন্ন আঙ্গিকে বলেছিলাম। এবং সেইটা আপনি সুন্দর ভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন। আমার তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂
@বিপ্লব পাল,
কেবল বাংলা ব্যান্ড এর কথা বলে লাভ নেই। সাংস্কৃতিক জগতে পশ্চিম বাংলা
১০০/২০০ বছর এগিয়ে, সাহিত্য বলেন আর যাই বলেন। এই কথা যারা
স্বীকার করবে না তারা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খবরই রাখেন না। সর্ব দিকে, সর্ব ক্ষেত্রে, সাহিত্য থেকে শুরু করে সঙ্গীত সব দিক দিয়ে। আমরা বাংলাদেশিরা নকল করতে (কিছুটা) পছন্দ করি। অস্বীকার করার উপাই নেই। জানিনা আপনি আমার সাথে সহমত হবেন কিনা। তবে ইতিহাস ঘাঁটলে এই তত্থই পাওয়া যায়।
রক্তের ভেতর যখন গানের নিত্য চলাচল, তখন এতোগুলো গান হঠাৎ পেয়ে গেলে কেমন লাগে! কোন নাচের অনুষ্ঠান দেখতে বসলে হঠাৎ লক্ষ্য করি নাচের দিক হতে মনোযোগ অনেক আগেই চলে গেছে গানের দিকে, তা যত শুন্দর নাচ পরিবেশনাই হোক না কেন। ফরিদ আহমেদের – “তুমিহীনতায় কোন যুক্তি নেই” অর্ধেক পড়েই যখন দেখতে পেলাম গান আছে, তখন প্রথমেই গানটি না শুনলে গানকে অসম্মান দেখানো হত। তারপর শুধু বসে বসে বাকি গানগুলো শোনা! (তবে হ্যাঁ সব কিছুই একটু ধাতস্থ হয়ে পরে পড়েছি।)
“তুমিহীনাতায় কোন যুক্তি নেই” এবং “সে যেন চোখেই বলে” আমার আগে শোনা ছিলনা। অসংখ্য ধন্যবাদ ফরিদ আহমেদ, অসংখ্য ধন্যবাদ সংশপ্তক। 🙂
“আইলো আইলো আইলো রে, রঙ্গে ভরা বৈশাখ আমার আইলোরে…” এটাও অজানা ছিলো। কি শুন্দর গান! যদিও এ গানটির লিংক জাহিদ রাসেল দিয়েছেন গান পাগল ফরিদ আহমেদের জন্নে, তবুও এ আমাদের সবার গান, আমি বাঙ্গালির গান, এমনটা ভেবে এবং জেনে কি যে শুখ! কি যে শুখ! আমাদের বাঙ্গালি উৎসবের গান হাতে গোনা অল্প কটি। যার মাঝে মেলায় যাইরে, আর এখন বৈশাখের এ গানটি। এ গানটির মাঝে অনেক কিছু চলে এসেছে। ভীষণ ভাবে নাচতে ইচ্ছে করে গানটি শুনলেই! রক্তে সাড়া জাগিয়ে দেয়। আমার মা শুনে বললেন – “অশুস্থ মানুষ ও শুনলে সুস্থ হয়ে যাবে। ছেলেটা দরদ দিয়ে গেয়েছে তো সে জন্নে।”
খুব প্রিয় কোন অভিনেতাকে দেখলে কম বয়শি কেউ মহা উল্লাসে যেভাবে চেঁচায়, উত্তেজনা প্রকাশের জন্নে কি করে উঠবে বুঝে উঠতে পারেনা, আমার অবস্থা হয়েছে তাই। ভীষণ কোন সুখবর পেলে সব সময় যা করি, আশেপাশের বন্ধুদের ফোনে জানানো তৎক্ষনাত, এ গানটি তাদের ফোনে শুনিয়েই তাড়াহুড়ো করে রেখে দিয়েছি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে। জাহিদ রাসেল কে সেভাবে ধন্যবাদ দিতে পারছিনা, পাছে আবার কম বয়শী বাচ্চা মানুষ আনন্দে চেঁচাচ্ছে ভেবে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ কে গ্রহন না করেন। তবুও :guru:
“চোখ জলে ভেজা স্যাঁতসেতে…” এটা খুব শোনা হত। অনেক স্মৃতি বিজড়িত। ভাইয়ারা বাহির হতে ঘরে ঢুকত এ গানটি জোরে গেয়ে গেয়ে। তখন গানটির অর্থ বুঝতামনা। হেসে (মনে করতাম ওরা ভুল গাইছে) বড় আপার কাছে গিয়ে জানতে চাইতাম ওরা ভালবাসা কে ধন্যবাদ দিচ্ছে কেন? ভালবাসা আর দুঃখকে কেউ বুঝি আবার ধন্যবাদ দেয়? তার কিছু বছর পরই হয়তো আমিও ওদের দলে সামিল হই।
অতএব- “ধন্যবাদ হে অভিজিৎ দা, ধন্যবাদ হে মুক্তমনা…” 🙂
@ছিন্ন পাতা,
আপনার বাধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখে দারুণ আমোদ পেলাম।
আমার প্রাপ্য ধন্যবাদ কই?
লেখাটা আমাকে স্মৃতিবিধুর করে ফেললো, ফরিদ ভাই। মাকসুদ তার সংগীত জগতে পরিচিত ‘ম্যাক’ নামে। ছোটবেলা থেকেই ব্যাণ্ড সংগীতের সাথে ওঠা বসা আমার। আমার বন্ধুরা বাচ্চু, জেমস, মাকসুদের সাথে গীটার বাজিয়েছিলো, অনেকে এখনো আছে তাদের সাথেই। অর্থহীনের (মোটা) সুমন, মাইলসের (কেল্টু) সুমন (প্রয়াত ডঃ ম আখতারুজ্জামানের ছেলে এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাজ গিটারিস্ট) আমার খুব ছোটবেলার বন্ধু। সায়ান তার ‘সায়ানের গান’ নামে যে অদ্ভুত সুন্দর এলব্যামটি করেছে (এবং এখন ও বাংলাদেশের খুব পরিচিত মুখ), সায়ানকেও বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম ভাগ্যক্রমেই। আর আগুন (খান আতার ছেলে এবং খুব জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী) তো আমার স্কুলের সহপাঠী। আমি খুব গর্ব করেই বলি, মাইলস, ফিডব্যাক, এল আরবি, ওয়ারফেস… এ ব্যাণ্ডগুলোর অনেক শিল্পী এবং বাদ্যযন্ত্রীই আমার বন্ধু। একটা একটা বড় জগৎ গড়ে উঠেছিলো উনাদের নিয়েই, আজ লেখালেখির কারণে তাদের জগৎ আর আমার জগৎ আলাদা হয়ে গেলেও বন্ধুত্বের টান কখনো ম্লান হয়নি। আমি লেখালেখির জগতে না এলে হয়তো তাদের সাথেই থাকতাম এখনো।
হ্যা ‘ম্যাক’কে বেশ কয়েকবারই কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, আলাপ পরিচয়ও ছিলো আমার সাথে। এটা হয়তো অনেকেই জানেন না – তিনি কিছুদিন মুক্তমনাতেও ইংরেজীতে লিখেছিলেন (তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ থেকে পাশ করেছিলেন), তার লেখার হাতও অসামান্য ছিলো। তার এবং ফীডব্যাকের কারণেই আমার ব্যান্ড সংগীত রক্তে ঢুকে গিয়েছিলো। ‘মৌসুমী বল কারে খোঁজ তুমি’ – কত যে গেয়েছি, কতবার মাক্সুদের সাথে গলা মিলিয়েছি বুয়েটের কনসার্টে তার ইয়ত্ত্বা নেই। তিনি অসামান্য এক শিল্পী নিঃসন্দেহে।
আর আমার মতে ফিডব্যাকের সেরা এলবাম হচ্ছে বঙ্গাব্দ ১৪০০। সেখান থেকে মাকসুদের গাওয়া একটি গান –
httpv://www.youtube.com/watch?v=7iWLHsZHeK8
এ লেখাটা নিঃসন্দেহে ম্যাকের চোখে পড়বে।
@অভিজিৎ,
তুমিতো দেখছি বিখ্যাত লোক। গানের জগতে থাকলে আজকে আমরা এইখানে তোমারে নিয়াও আর্টিকেল লিখতাম। 🙂
পড়লে খুশি হবো। আরো খুশি হবো যদি তিনি এখানে মন্তব্য করেন। ম্যাক ব্লগিং করেন, এটা জানি আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
পড়বেন কিংবা পড়ছেন কনফার্ম। মন্তব্যও হয়তো করতে দেখা যেতে পারে সামনে, কে জানে! 😉
@অভিজিৎ,
খাইছে! আফনের তো ব্যাপক অবস্থা।
স্যারের ছেলে এইটা কিন্তু জানা ছিল না!
আর আফনে শীর্ষস্থানীয় কইয়া কিন্তু হেরে অফমান করছেন। হাচা কতা অইল হের ধারে কাছে যাওনের মতন ব্যাসিষ্ট বাঙলাদেশে আপাতত নাই।
ওয়ারফেযের কার কার লগে পরিচয় আছে???? মানে আমি হেগোর ডাই হার্ড ফ্যান। মানে তার ছিড়া একটা ব্যান্ড। বেশী জোশ।
@সাইফুল ইসলাম,
সুমনকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে আমার ফুরোবে না। আমার সবচেয়ে ছোটবেলার বন্ধু, সেই নার্সারি স্কুল থেকে … আমি নাকি ওরে কইছিলাম প্লেন কিনা দিমু 🙂 (প্রথম দিন থেকেই চাপাবাজ আছিলাম মনে হয়), এখনো দেশে গেলে আমারে কয় – কই আমার প্লেন কই!
যাহোক, সুমন শুধু বাংলাদেশের সেরা ব্যাসিষ্টই নয়, ছোটবেলা থেকেই প্রগতিশীল, সংশয়বাদী এবং দুর্দান্ত। আর দেখতেও অসম্ভব সুদর্শন। আমার আজকের এই অভিজিৎ হয়ে উঠার পেছনে বড় একটা ভূমিকা ওরই। স্কুলে যখন সবাই আল্লাহ বিল্লাহ করে একাকার করে ফেলতো, তখন ওকেই আমি দেখেছিলাম স্রোতের বিপরীতে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে। নাস্তিকতা জিনসটা কী তখন আমি বুঝতাম না, কিন্তু সম্ভবতঃ সুমনই ছিলো আমার দেখা প্রথম নাস্তিক! তার বাসায় আমাদের নিরন্তর আড্ডা হত। তার গিটার শেখা, বাজানো, আজম খানের গানে সুর মিলিয়ে গাওয়া, স্টুয়ার্ট হ্যামের গিটার শুনে শুনে বাজানোর চেষ্টা …। সবই আমার চোখের সামনেই। এখন অনেক বড় গিটারিস্ট ও। কিন্তু আমার কাছে সে আমার খুব কাছের বন্ধু, কেল্টু সুমন!
কোনদিন যদি তার বাজানো ভিডিও পাই দিতে চেষ্টা করব!
@অভিজিৎ দা, …আর অর্থহীনের সুমন টিভিতে(ও রেডিওতে) ভূত বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান করতেন। যেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভূত খুঁজা হতো 😛
@জাহিদ রাসেল,
আমি যে সুমনের কথা বলছি সে মাইলসের সুমন। অর্থহীনের সুমনও আমার পরিচিত, সেও একই সময় গিটার বাজানো আর গান গাওয়া শুরু করেছিলো। দুর্দান্ত ব্যাসিস্ট সেও। ব্যাটায় ভুত খুঁজতো নাকি ? তো খুঁইজা পাইছিলো শ্যাষ পর্যন্ত? 🙂
অর্থহীন সুমনের একটা গান (ক্লান্তি)
httpv://www.youtube.com/watch?v=a9ReG__ZsFM
@অভিজিৎ দা , এই গানটা আমারো খুব প্রিয়। আর হ্যা,
সুমনের ”ভৌতিষ্ট” নামক অনুষ্ঠানের ফুল ট্রেইলারটা দিয়ে দিলাম। দেখেন ভূত কিভাবে সুমনের মাথার উপর সিলিং ফ্যান ফেলে দিছে :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot:
httpv://www.youtube.com/watch?v=-L7mFTfoT_k&feature=related
@জাহিদ রাসেল,
হিঃ হিঃ, তাই তো, মহা ভৌতিক ব্যাপারই তো দেখি। ইএমএফ রিডার, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, এক্সট্রাসেনসেটিভ সাউণ্ড রেকর্ডার, পোলারাইজড ক্যামেরা দিয়া ভুত সনাক্ত করতেছে। ভাল ভাল। মৌমাছি তো এমনিতেই পোলারাইজড আলো সনাক্ত করতে পারে, আর বাদুড় পারে আল্ট্রাসাউণ্ড তৈরি করতে আর শুনতে। হেরা মনে হয় সারাদিনই ভুত পেত্নি দেহে!
গান গাওয়া বাদ দিয়ে ভুত ধরণের ভুত তার চাপছিলো ক্যান!
@অভিজিৎ,
হ্যাঁ ম্যাক নামেই ওকে আমরা ডাকতাম। বেশ অনেকদিন ধরে যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে। পেশাগত কারনে যথেষ্ট কাছে থেকে কাজ করেছি আমরা। আমরা দুজনই ছিলাম দুটো নামকরা বিদেশী এয়ারলাইন্সে। তুখোড়, অসম্ভব একরোখা, অভিমানী, বন্ধুসূলভ, ইত্যাদি ইত্যাদি অথচ রীতিমত ঈর্ষনীয় ব্যাক্তিত্বের অধিকারী এই ম্যাক। কক্ষনোই ওর কাজের স্টাইল আর দশটা ছেলের মত গৎবাঁধা দেখিনি। এই দুর্ধর্ষ স্মার্ট ছেলেটাকে শেরাটনে ইংরেজীতে গান করতে দেখেছি ৮৬ তে। মেলায় যাইরে গাইবার পর ওর দেখা পাওয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। দেখা হোত শুধু মাত্র কোন কোন পারফরমেন্সে অথবা সোনারগাতে উইকএন্ডের এয়ারলাইন্স ড্যান্স ফ্লোরে। ওখানেই দেখা হোত সবার, যার যার পার্টনার নিয়ে। ৯২ এর পর আর দেখা হয়নি।
বলাই বাহুল্য, মাকসুদের গান আমার বেঙ্গি ও আমার খুবই পছন্দের।
@কাজী রহমান,
আপনি নবী মানুষ। সোনারগাঁয়ে গিয়ে নাচানাচি করেন, ব্যান্ডের গান শোনেন বেঙ্গিরে নিয়ে। এই গুলা কী? আপনার উম্মতরা কী শিখবে আপনার কাছ থেকে? ঘোর কলিকাল!! নবীরাও নবীগো মতন কাজকারবার করে না এখন। :-Y
@ফরিদ আহমেদ,
আ আ ধু নি ই ই ইক নবী তো, তা ই ই ই আর কি। তবে চিন্তা করবেন না। এর সমর্থনে ওহী নাযিল হয়ে যাবে, মহাম্যাডের ওপর যেমন নাযিল হোত; তেমন ভাবে। উম্মতরা সুখী হবে। অনেক কিছু শুধু নবীর জন্য হালাল :))
ভার্সিটিতে পড়ার সময় দেখেছি, মাকসুদের কি ক্রেজ! আমার বন্ধুদের অনেকেরই সবচেয়ে প্রিয় ব্যান্ড তারকা ছিল মাকসুদ। আমার অন্তত দুজন বন্ধুর মতে, আমার চুল ছিল মাকসুদের মতো! যেহেতু লেখাটির শুরুতেই ”দয়া করে এখানে কেউ তর্ক-বিতর্ক শুরু না করলে খুব খুশি হবো” এরকম কথা বলা আছে, তাই পাঠক হিসেবে খটকা লাগা বিষয়গুলো অনেকটা বাধ্য হয়েই এড়িয়ে যেতে হচ্ছে।
@কাজি মামুন,
স্যরি ভাইয়া, ওই কথাটা ভূমিকাতে দেবার জন্য। পাঠকের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছি আমি, স্বীকার করছি। এই লেখায় মাকসুদের গাওয়া মেলায় যাইরে এবং রবীন্দ্রনাথের এসো হে বৈশাখ এই দুটো গানের বিষয়ে আমার নিজস্ব একটা মূল্যায়ন আছে। সে কারণেই আশংকা জেগেছিল যে আবারো না আরেকটি ক্লান্তিকর বিতর্ক তৈরি হয়ে যায়। সে কারণেই ওই সতর্কতা। এই লেখাটা নিছকই বিনোদনমূলক, এখানে কোনো তিক্ত বিতর্ক তৈরি হয়ে আনন্দে যেন খামতি না পড়ে সেটাই আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল।
তারপরেও আপনার খটকা দূরীকরণের জন্য ওই বাধ্যবাধকতা তুলে নিচ্ছি আমি। লাইনটা মুছে দিয়েছি। বলুন, কী কী খটকা আছে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনেরে দুইটা ভাল লিঙ্ক দেই মাকসুদের লেখার। প্রথম আলো সহ অন্য কিছু জায়গায় ছাপা হইছিলো, হয়তো পড়ছেন আগেও, তারপরেও –
রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে আমার কথা
গগনবিদারী ওয়াহিদুল হক সমীপেষু
খেয়াল করছেন কিনা জানিনা, মাকসুদও গগন হরকার গানটার কথা তার লেখায় উল্লেখ করছিলো। যদিও মাকসুদের আর্গুমেন্ট ছিলো ভিন্ন, মূলতঃ রবীন্দ্রমোল্লাদের মোল্লামি পয়েন্ট আউট করে ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’ গানটার জ্যাজরক ফিউশন জাস্টিফাই করাটাই ছিলো উদ্দেশ্য, কিন্তু ব্যাপারটা যে শিল্পীদের মনে বহুদিন ধরেই ঘুরছে এ লেখাগুলোই তার প্রমাণ।
@অভিজিৎ,
এই লেখা দুটোর সারমর্ম জানতাম, সেতো জানোই তুমি। আমাদের লেখাতেও এই বিতর্কটাকে আমরা দেখিয়েছিলাম। তবে, এই মুহুর্তে লাইন বাই লাইন পড়ে অদ্ভুত অনুভূতি হলো। আমি জানতাম ভদ্রলোক ইংরেজিতে তুখোড়, এখন দেখছি বাংলাতেও তিনি দুর্ধর্ষ। দ্বিতীয় লেখাটা পড়েতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই ভাষায় ব্লগিং করতে পারলে আর কিছুই লাগতো না। আমি মডারেটর পজিশন থেকে রিজাইন করলে, ম্যাককে অনুসরণ করবো ব্লগিং এর ক্ষেত্রে। 🙂
রবীন্দ্র মোল্লারা সব জায়গাতেই আছে, শান্তিনিকেতনে ছিল, দেবব্রত বিশ্বাসকে জ্বালিয়েছে, ছায়ানটে আছে, মাকসুদকে বিড়ম্বিত করেছে, আর ……. থাক আর বললাম না। এই লেখায় তর্ক-বিতর্ক না করার জন্য নিজেই সবাইকে বলেছি।
ম্যাককে দিয়ে মুক্তমনায় বাংলায় ব্লগিং করানো যায় না? গেলে একটা অসাধারণ কাজ হতো।
খাইছে আমারে, মাকসুদ ভাইয়ের দ্বিতীয় লেখাটা কেউ পড়ছেন???????
মানে লেখা তো না, বোমা!!!!!!!জঙ্গীগুলার গ্রেনেড না, সোজাসুজি এটম।
বাপ্রে। মাকসুদ ভাই, আপনি আমার এই মন্তব্যটা দেখলে, আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি মাসে অন্তত একটা ঐরকম আগুন লেখা এইখানে দেন।
:guru:
@অভিজিৎ,
এই বিতর্ক নিয়ে মাকসুদের একটা সাক্ষাৎকারও খুঁজে পেলাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=I2mB7zvVEEs&feature=related
@অভিজিৎ,
কাউকে সমর্থন অথবা সমালোচনা করার আগে, এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের মতামত জেনে নিলে ভাল হয়। তাঁর গান কিভাবে গাওয়া হবে এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান খুব স্পষ্ট ছিল।
@স্বপন মাঝি,
এক্ষেত্রে আমার বরাবরই মনে হয়েছে সূর্যের চেয়ে যেন বালি বেশি গরম। রবীন্দ্রনাথ যা বলে গেছেন, ‘পারিষদ বলছে তার শতগুণ’। না হলে দেবব্রত বিশ্বাসের মত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীকে রীতিমত জ্বালিয়ে মারতো না ‘রবীন্দ্রভারতী মিউজিক বোর্ড’। রবীন্দ্রভারতী একাধিকবার দেবব্রত বিশ্বাসের গানকে অনুমোদন দেয় নি বিচ্যুতি এবং অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের অজুহাত তুলে, সেগুলো আমরা আমাদের লেখায় বলেছিও। দেবব্রত বিশ্বাস না হয় বাদ দেই, আমি দেখেছি সনাতনপন্থীরা এমনকি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানকেও আপত্তি জানাতে কসুর করেননি, কারন তিনিও কিছু কিছু মডার্নাইজেশন (যেমন রবীন্দ্রসংগীতে কিবোর্ডের ব্যবহার সহ আনুসঙ্গিক যন্ত্র) করতে শুরু করেছিলেন।
আর রবীন্দ্রনাথ যদি কিছু রেগুলেশন দিয়েই থাকেন, সেটা একেবারে ‘প্রস্তরখণ্ডে লিখিত’ কিংবা ‘ধর্মগ্রন্থের মতোই’ সারা জীবন শিরোধার্য করে রাখতে হবে, তা তো নয়। যুগ পাল্টেছে। পাল্টাচ্ছে। আর তাছাড়া, রবীন্দ্রনাথ নিজেই তো আইরিশ এবং স্কটিশ ঘরনার উপাদান নিজ গানে ব্যবহার করেছেন, ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছেন auld lang syne দিয়ে, ‘পুরানো সব দিনের কথা’র সুর বানাতে। তাহলে আজকের জামানার শিল্পীরা জ্যাজফিউশন রকের ছাঁচে ফেলে ভাঙ্গাচোরা করলে আমি অন্ততঃ মাথায় বাজ পড়ার মতো কিছু খুঁজে পাই না।
@অভিজিৎ,
মধু, মধু।
@অভিজিৎ,
এই ব্যাপারে আমি একমত আপনার সাথে অনেকটা ধর্মের মত গেলো গেলো
রব তুলে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে । আমি তো শুনেছি আশা ভোসলের গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত- বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে নাও
অপূর্ব লাগে এমন সুরেলা কন্ঠে। কিন্তু তা আর হচ্ছ কই 🙁
রবীন্দ্র সঙ্গীতকে যদি আধুনিক রুপান্তর করা যেতো তবে এই প্রজন্মের অত্নতঃ তাঁর গান শোনার জন্য আগ্রহ বাড়ত। এখনকার ছেলে মেয়েরা তাই রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতেই চায় না। একটাই কথা বলে –ঘুম পায়-
বড় ভাবনার কথা :-X
আমার ঘরেই দেখছি অন্যের খবর কী বলব– (U)
@অভিজিৎ,
বাহ্। পলেমিসিস্ট হিসেবে মাকসুদ মন্দ নন তো! বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ পলেমিসিস্ট নিঃসন্দেহে আল্লাচালাইনা, তবে মাকসুদও খুব কম যাননা 🙂
@রৌরব,
(Y) :guru: :guru: :guru: :guru:
@রৌরব,
একদম খাঁটি কথা। ব্লগে আমি কাউকে ভয় পাই না, কিন্তু আল্লাচালাইনার ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। তাঁর সাথে তর্কে জড়াতে গেলে কমপক্ষে একশ’-বার ভাববো আমি। 🙁
রবীন্দ্র বিতর্কে আল্লাচালাইনার অভাব বোধ করেছি খুব। তিনি থাকলে বিতর্ক হয়তো অতদূর গড়াতো না। 🙂
@ফরিদ আহমেদ, আল্লা!!! আমাকে নিয়ে রমরমা গসিপ চলতেছে, লজ্জায় কানটান লাল হয়ে গেল পুরা!! কয়েকদিন অফুরন্ত অবসর নিয়ে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার এবং ফেইসবুক পুরা চর্কিঘুরা ঘুরলাম, ২৪/৭ পেট্রোল দেওয়া যাকে বলে; ফলে চোখ এড়ায়নি কোনকিছুই। আমারব্লগে মানুষজন কথা নেই বার্তা নেই একদিন ছাগালাপী-অছাগালাপী সকলপ্রকারের ছাগু ধরে জব্বর মাইর শুরু করলো, একেবারে নির্মম মাইর যাকে বলে- এইটা খুব নিবিড়ভাবে দেখলাম, এবং উপভোগ করলাম। ফেইসবুকে অনেক তরুণ অনুর্ধব ১৮ থেকে অনুর্ধব ২৫ র্যাশনালিস্ট এবং হিউম্যানিস্টদের সাথে কথা হলো, তাদের সাথে সোস্যালাইজ করলাম, অনুপ্রাণীত করলাম এবং হলাম। এই হয়েছে আমার বিগত কয়েকদিনের কর্মকান্ড।
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক ক্যাচাল দেখলাম, মুক্তমনায় আমার দেখা সবচেয়ে ভাইব্রান্ট ক্যাচাল সম্ভবত এইটাই! অভিজিত রায়-ফরিদ আহমেদের যৌথ রচনা দেখে এবং রচনার বিষয়বস্তু দেখেই বুঝেছি খুব একটা শান্তিপুর্ন পোস্ট হতে যাচ্ছে না এইটা। আমি অংশগ্রহন করিনি পক্ষ নির্ধারণ করতে না পেরে; কোন পক্ষে কথা বলবো এইটাই নির্ধারণ করতে না পারলে কিভাবে কথা বলা সম্ভব? কুলদা রায়-বিপ্লব পালের আউটরেইজাস যুক্তির ঘোড়াকে দিগ্বিদিক ছুটতে দেখে বলাই বাহুল্য একটা পক্ষে প্রিডিস্পোসড হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরমুহুর্তেই রবীন্দ্রনাথের দিকটা চিন্তা করেও প্রিডিস্পোজিশন কিছুটা টাল-মাটাল হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথের কাছে অনেক অনেক ঋণী; রবীন্দ্রনাথ মানুষকে স্মার্ট বানায়, রবীন্দ্রনাথের অনুপস্থিতিতে সেক্সুয়াল সিলেক্সনে পড়ে বহু বাঙ্গালী বিলীন হয়ে যেতো বলে আমি মনে করি। এছাড়াও হাঁড়ভাঙ্গা খাঁটুনী যারা করতে জানে এদের প্রতি আমার রয়েছে একটি সহজাত একটি দুর্বলতা, কেননা আমি হাঁড়ভাঙ্গা খাঁটুনী করতে জানি না, জানলে আমি ভালো আউটপুট দিতে পারতাম। রবীন্দ্রনাথকে দেখেছি প্রত্যেকদিনই, অনেকসময় প্রত্যেক ঘন্টায়ই একটা না একটা কিছু লিখেছে, দুই নাম্বার লেখা হলেও লিখেছে, ফলে তার স্যাম্পল সাইজ হয়েছে অনেক বড়ো, একহাজারটার মধ্যে ৯৯৯ টাই কোথাও না গিয়ে পৌছা স্বত্বেও একটি মাস্টারপিসের জন্ম সে ফলশ্রুতিতে দিতে পেরেছে। রবীন্দ্রনাথের জিনিষপত্র আমি সচেতনভাবে কপি করি; বাংলাভাষায় যে ফ্লির্টিং করা যায়- সুইট টক করা যায়, গদ্যে ইমোশনালি কানেক্ট করা যায়, রোমান্টিক হওয়া যায়- এই চেতনাটা রবীন্দ্রনাথই সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সৈয়দ শামসুল হকের একটা বই পড়েছি, বইটার নাম মনে নেই, বইটায় দুইটা পর্ব ছিলো গল্পের কলকব্জা আর কবিতার কিমিয়া। বইটা ছিলো লেখা কি করে ভালো করা যায় এই বিষয়ক উপদেশাবলী নিয়ে। সেখানে তিনটি গল্প নিয়ে আলোচনা করে- রবীন্দ্রনাথের ‘পোস্টোমাস্টার’ আর ‘কঙ্কাল’ এবং প্রবীর মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’। আমি লিখতে শিখেছি বস্তুত রবীন্দ্রনাথ পড়ে এবং রবীন্দ্রনাথ বোঝারচেষ্টা করে। খুব সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ না পড়ে কোন বাঙ্গালীর কোন কিছু লেখাটা এবং সেই লেখাটা কোন জাতের কিছুটা হওয়াটা সম্ভব নয়। ফলে আমার ব্যক্তিগত ডিস্পোজিশন সর্বদাই রবীন্দ্রনাথের দিকেই শক্ত।
রবীন্দ্রনাথের সাথে সমস্যা আমার একটাই- সুডোসায়েন্স, হোমিওপ্যাথি এবং অল্টার্নেটিভ মেডিসিন। সায়েন্স জীবন বাঁচায়, এইটা সবকিছুর উপরে, সবচেয়ে সুপিরিয়র এবং মানব কর্মকান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাসেট, এইটার সাথে কোন কম্প্রোমাইজ হতে পারে না; হ্যা, একটিভলি সুডোসায়েন্স প্রমোট করার জন্য রবীন্দ্রনাথের কিছু এবিউস অবশ্যই পাওনা রয়েছে। তবে এবিউসটা আমি মনে করি হওয়া উচিত যতোটা না অজ্ঞানতা ও অসততার দায়ে, তারচেয়ে বেশী গাফেলতির দায়ে। হাওএভার, ‘এতোকিছু বোঝে, এতোকিছু পারে, নোবেল জিতে ফেলে, কিন্তু এইটা বোঝে না যে কোনটা বিরিঞ্চিবাবাগিরি’ এই যুক্তি ছুড়ে কেউ অসততার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করলেও শক্ত কোন ডিফেন্স নেই।
আরেকজনের লেখা হাইজ্যাক করে নেওয়া পুকুরচুরি, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। গরীব মানুষ নিয়ে লেখে নাই এইটা শক্ত অভিযোগ না; হলে মানিক বন্দোপাধ্যায়কেও অভিযুক্ত করা যায় বড়লোক নিয়ে লেখে নাই কেনো এই বলে। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত টেইক এইরকমই। তবে বাঙ্গালী যেইরকম একটা অন্ধ আইডলেট্রি ঘিরে তুলেছে রবিকে ঘিরে এইটা নিয়ে আমার কম্পলেইন আছে; আনকনসাসলি অন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের স্বভাব বিধায় কোন পুঁজোর বেদী স্থাপন করার আগে জাতিগতভাবে আমাদের বহু আগ-পিছ ভাবতে হবে। রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ সচেতনভাবে সুডোসায়েন্সের বিষ ছড়ানো এবং একজন বিজ্ঞান অশিক্ষিত হিসেবে সুবিশাল আয়ু পার করে ফেলা। আর তার সফলতা বেশ কিছু কাজের লেখা লিখতে পারাটা যেগুল কিনা বিনোদনের চেয়েও একটু বেশী কিছু মানুষকে দেয়, যেমন- শিক্ষা দেয়, সুশিক্ষা, কালচার শেখায়।
@রৌরব,
‘শ্রেষ্ঠ’ ট্যাগ করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি; সেইসাথে এর নীচে টেকিসাফির তালি দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি আরও জোরালো ভাষায়!!
@আল্লাচালাইনা,
প্রশ্ন: zoned out অবস্থায় রবিসংগীত শুনতে কেমন লাগবে বলে মনে হয় আপনার?
আপনার মন্তব্যটা পড়ে বেরিয়ে গেছিলাম, মাথায় ঘুরছিল বোধহয়, কারণ পরে কনিয়াক হাতে গীটার বাদন শুনতে শুনতে রবিসংগীতের কথাটা হঠাৎ আবার মনে পড়ল। গীটারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, খুব virtuoso বাদন শোনার জন্য কান খুব চটপটে অবস্থায় থাকা চাই, তার জন্য কনিয়াক খুব সুবিধার সঙ্গী নয়। কিন্তু একটু comtemplative ধরণের বাজনা হলে তখন আবার ওটা চমৎকার কাজে দেয়। রবিসংগীত যেহেতু comtemplative সংগীতের শ্রেষ্ঠ প্রকাশগুলির মধ্যে গণ্য, তাই ভাবছি কেমন জমবে…
@আল্লাচালাইনা,
শুধুমাত্র মন্তব্য দিয়েও যে মানুষকে আকর্ষিত করা যায়, আমোদিত এবং আনন্দিত করা যায়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছেন আপনি।
মুদ্রা নিক্ষেপ করে পক্ষ বিপক্ষ বাছাই করে নিলেই পারতেন। হেড পড়লে অভিজিৎ এবং ফরিদের পক্ষে যাবো, আর টেইল পড়লে কুলদা এবং বিপ্লবের বন্ধু হবো। 🙂
সম্পূর্ন একমত।বরাবরের মতই ফরিদ ভাই এবং অভিজিৎদার শক্তিশালী হাতের তথ্যসমৃদ্ধ ঐ লিখা এবং পাঠকদের মন্তব্য থেকে প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে অনেক অজানা তথ্য জানলাম। সবচেয়ে ভাল লেগেছে গীতা দাসের এই মন্তব্যটিঃ
@ফরিদ ভাই,
আমার খটকা লাগার বিষয় ঐ রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ’ নিয়েই, যা আপনি উল্লেখ করেছেন। মাকসুদের ‘মেলায় যাইরে’ এবং কবিগুরুর ‘এসো হে বৈশাখ’ দুটোই আমাদের নববর্ষের জাতীয় সংগীত হয়ে গেছে এবং আমার কাছে এ দুটো ‘মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ’ নয়। নববর্ষের প্রভাতে ‘এসো হে বৈশাখ’ এর যেমন বিকল্প নেই, তেমনি ক্যাম্পাসে বন্ধুদের আড্ডায় মেতে উঠার জন্য ‘মেলায় যাইরে’ এর চেয়ে ভাল গান হওয়া সম্ভব নয়। ধীর লয়ের হলেও ‘এসো হে বৈশাখ’ রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের দিনে যে স্বর্গীয় আবেদন তৈরি করে এবং যেভাবে সমবেত কণ্ঠে অনুরণিত হয়ে আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে যেতে থাকে, তার তুলনা মেলা ভার।
আর একটা বিষয়ে এখানে শেয়ার করতে মন চাচ্ছে। গায়ক মাকসুদের কাছে গান ছাড়াও আরেকটা কারণে আমি কৃতজ্ঞ। ভার্সিটির প্রথম দিনেই আমি জানতে পেরেছিলাম আমার চেহারা/ চুল নাকি অনেকটা মাকসুদের মতো! আর এ কারণে বন্ধুদের কাছে আমার একটা আলাদা খাতির ছিল এবং অনেকে আমাকে মাকসুদ নামেই ডাকত!
পরিশেষে, আমার মতো নগণ্য পাঠকের কথা ভেবে লেখায় পরিবর্তন আনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার ও অভিজিৎ-দার লেখা ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটি আমার খুবই প্রিয়।
@কাজি মামুন,
আর্ট প্রচন্ডভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। একজনের ভাল লাগা বা খারাপ লাগা দিয়ে কী অন্যেরটা বিশ্লেষণ করা যায়? মানে ফরিদ ভাই উনার রুচির কথা জানিয়েছেন, আপনি আপনারটা জানালেন কিন্তু আপনার পছন্দ দিয়ে অন্যের পছন্দকে বিচার করাটার মানে দেখছি না।
@টেকি সাফি,
আর্ট যেহেতু ব্যাক্তিকেন্দ্রিক, তাই এতে ভিন্নমতও প্রবলভাবে বিদ্যমান। এবং আমি ফরিদ ভাইয়ের লেখার ”আগে বৈশাখকে বরণ করার জন্য একমাত্র গান ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ। এই গানটি অত্যন্ত ধীর লয়ের, উত্তেজনাহীন, নিষ্প্রাণ, গম্ভীর এবং আনন্দহীন একটা গান।” – এই অংশের ব্যাপারে আমার ভিন্নমত জানিয়েছি মাত্র। আমার পছন্দ দিয়ে ফরিদ ভাইয়ের পছন্দকে বিচার তো করিনি!
ফরিদ ভাই ‘এসো হে বৈশাখ’কে তেমন পছন্দ নাই করতে পারেন; কিন্তু যখন উনি একটা লেখা লেখেন যা সর্বসাধারণের পাঠের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, তখন পাঠকও কিন্তু ঐ লেখাটির একজন অংশীদার হয়ে যায় এবং তার ভিন্ন মত পোষণের অধিকার জন্মায় (এবং বিষয়টা ফরিদ ভাই স্বীকারও করেছেন!)। তাছাড়া, ফরিদ ভাইয়ের এই লেখাটা কিন্তু এক প্রকার সাহিত্য (প্রবন্ধ সাহিত্য); তাই এর কোন একটি বক্তব্য নিয়ে মতদ্বৈততা থাকতেই পারে যেহেতু সমালোচনা শিল্প-সাহিত্যের আবশ্যকীয় উপাদান।
@কাজি মামুন,
আপনার মতামতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রইলো। এসো হে বৈশাখ যে আমার খুব অপছন্দের গান, তা নয়। আমার কাছে শুধু মনে হয়েছে যে, বাংলা নববর্ষকে আমরা এখন যে ব্যাপক উৎ্সবমুখরতার মধ্য দিয়ে পালন করি, সেটাকে ধারণ করতে এই গান ব্যর্থ। মাত্র বিশ-পচিশ বছর আগেও নববর্ষকে এভাবে আমরা উদযাপন করতাম না। নববর্ষ তখন ছিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের এসো হে বৈশাখ গান, আর্ট ইনস্টিট্যুট এর ছেলেমেয়েদের আলপনা আঁকা, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সময় বড় খারাপ জিনিস। এর চলমানতায় আজকে যা অসাধারণ, কালকেই তা নেমে আসে সাধারণের মানে, আজকে যা অপরিহার্য কালকেই তা হয়ে যায় বাতিল জিনিস। দীর্ঘ অভ্যাসের বশে সেই সত্যকে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমাদের, এটুকুই যা সমস্যা।
এর পুরো কৃতিত্ব ছায়ানটের। রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ পাকিস্তান আমলের বৈরী সময়ে তারাই শুরু করেছিল প্রথম।
মেলায় যাইরের একটা সিকুয়েল করেছে ফিডব্যাক সাম্প্রতিক সময়ে। শুনেছেন কি না জানি না। ফিডব্যাকের নতুন ভোকালিস্ট লুমিনের গাওয়া এই গানটাও দারুণ লেগেছে আমার। খুবই ভরাট গলা এর। এই ছেলেটা অনেক দূর যাবে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=x2cCzCi_Ofc&feature=related
ভাল লাগল
ধন্যবাদ হে মহান রৌরব।
আমার অতি প্রিয় শিল্পি মাকসুদকে নিয়ে লেখার জন্য ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ। গান পাগল ফরিদ ভাইয়ের জন্যে, বৈশাখ নিয়ে নীচের এই ব্যান্ডের গানটার লিংক দিলাম। যেটি আমার মতে মাকসুদের ”মেলায় যাইরের” পর সবচেয়ে সুন্দর বৈশাখের গান। আশা করি আপনার গানটি ভালো লাগবে
httpv://www.youtube.com/watch?v=sc-UzF_qU-4
@জাহিদ রাসেল,
দারুণ সুন্দরতো গানটা। একেবারে বৈশাখের আনন্দমুখরতার সাথে মানানসই।
কোন ব্যান্ড গেয়েছে এটা?
@জাহিদ রাসেল,
মেলায় যাইরে গানটার এই দৃশ্যায়নটা অসাধারণ লেগেছে আমার। দেখে মনে হলো যেন নববর্ষ মূর্ত হয়ে চলে এসেছে আমার ঘরে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=H84HlqdY-x4
@জাহিদ রাসেল,
ভাই আপনারে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাব তা মুখে প্রকাশ করতে পারছি না। এই গান টা খুজে খুজে হয়রান হয়ে শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
ফরিদ সাহেবকে ধন্যবাদ মাকসুদকে নিয়ে লেখাটার জন্য । মাকসুদ আমার একমাত্র প্রিয় বাংলাদেশী পুরুষ কন্ঠশিল্পী । ফিডব্যাকের অসম্ভব সফলতা সম্ভবপর হয়েছিলো ফোয়াদ নাসের বাবুর সংগীত এবং মাকসুদের অনন্য কন্ঠের এক বিরল সংমিশ্রনে। জ্যাজের একজন অনুরাগী হিসেবে ফিডব্যকেই খুঁজে পেতাম জ্যাজ সংগীত এবং বাংলা ভাষার এক অপূর্ব মিলনবিন্দু।
মাকসুদ এবং ফিডব্যাকের গাওয়া আমার শোনা এখন পর্যন্ত সেরা গানটি তাদের ‘উল্লাস’ এলবামের ‘চোখ’ যা ওরা বহুদিন পর্যন্ত (১৯৮৮ পর্যন্ত) লাইভ কনসার্টে গাইতে পারেনি টেকনিক্যাল কারনে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=AfW7Cm05QZQ&feature=results_video&playnext=1&list=PL8E79620A34590E4C
@সংশপ্তক,
আপনিও যে মাকসুদ ভক্ত, এটা জেনে খুশি লাগছে।
জানা ছিল না। কী ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল জানা আছে কি আপনার?
@ফরিদ আহমেদ,
‘চোখ’ গানটা রেকর্ড করা হয়েছিলো খুবই জটিল একটা সংগীতের আবহের উপর যা ছিলো বাংলাদেশের যে কোন রকম সংগীতের ক্ষেত্রেই প্রথম। ১৯৮৫ সালে সম্পূর্ণ সংগীতটা কম্পিউটার সিকোয়েন্সার ব্যবহার করে একাই তৈরী করেন ফিডব্যাকের কি বোর্ডিস্ট ফোয়াদ নাসের বাবু যা লাইভ পারফরমেন্সে বাজানো যে কারও জন্য একটা চ্যালেঞ্জ, এমনকি এখনও!
১৯৮৮ সালে আমি যখন দেশে অবস্থান করছিলাম, রমনায় ইন্জিনিয়ারিং ইন্সিটিউটে ফিডব্যাকের একটা কন্সার্ট ছিলো সাবা তানি এবং প্রয়াত শেখ ইশতিয়াকের সাথে যৌথভাবে। সেখানেই মাকসুদ প্রথবারের মত ‘চোখ’ লাইভ পরিবেশন করে এবং এই ঘোষনাটা সেখানেই দেয়া হয়। তবে সেটাও ঠিক মত করা সম্ভব হয়নি অনেক চেষ্টার পরেও।