“Koi desh perfect nehi hota, Usko perfect banana pudta hai.” (“No country is perfect. It has to be made perfect.”)
তেজদীপ্ত কন্ঠে বলে ওঠে এক যুবক, সেই প্রত্যয়ী তরুণদলটি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে রেডিওতে জানান দিচ্ছে, এক এক করে কয়েকজন ক্ষমতাধারী দুর্নীতিপরায়ণ মানুষকে তারা ছুটি দিয়েছে পৃথিবীর দেনা পাওনার খাতা থেকে… তারা জানে, তাদের নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসার সময় ঘড়ির কাটার চেয়েও দ্রুতই এগিয়ে আসছে… এমনই এক মুহূর্তে তারা দেশবাসীকে জানান দিচ্ছে… এই দেশকে বদলে দেবার প্রত্যয়ের কথা! এটা আমার অন্যতম প্রিয় চলচ্চিত্র “RANG DE BASANTI” এর সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত! বুলেটবিদ্ধ রক্তাক্ত শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যটা আমাদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছে… যদি দেশটাকে বদলে দিতে চাও তবে বদলে ফেলো, করবো বলার আগে বলে ওঠো আমি যা করতে চেয়েছি, তাই করেছি!এই দেশটাকে অন্যায়ের কালো রঙ থেকে তুলে শুদ্ধতার রঙে আলোকিত করে দেব, কথাটি যতটা অন্তঃসারশূন্য, আমি বা আমরা শুদ্ধতার পথে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পদক্ষেপটা বাড়িয়ে ফেলেছি, এই উচ্চারণটা ততটাই আনন্দে দৃপ্ততায় সাহসে পরিপূর্ণ!
কিন্তু এই সাহসী ছেলেমেয়েগুলো কিভাবে বদলে দেবার পথে পা বাড়ালো? রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারকাল একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেছিল এই বিপ্লবীকে, এইভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে রেডিও স্টেশন দখল করে দেশবাসীকে তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানান দেয়া কি সন্ত্রাস নয়? সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে কি পার্থক্য থাকল তাদের? আর এইখানেই আমার গল্পটা মোড় নিল মূল প্রসঙ্গে! দেশবাসী তাদের ধারণাকে কতটা অনুকরণ করতে পারল আসলে? চলচ্চিত্রে ছিল না যে অংশটুকু, সেটা আমার অনুধাবন থেকে লিখছি।
১. একদলের মনে হল, কিছু করতে হলে হতে হবে এমনই বেপরোয়া। এরা বিপ্লবী, তরুণ সমাজ জেগে উঠেছে, ক্ষুদিরাম ব্রিটিশদের কাছে ডাকাত হলেও আমাদের কাছে নায়ক!
২. আরেকদলের মনে হল, দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে তা আইন হাতে তুলে হোক আর আইন মেনে হোক, সেটা চিন্তার বিষয় নয়। করছি দেশের জন্য সেটাই আসল কথা।
৩. আরেকদল ভেবেছে, কে কীভাবে এইসব তরুণদের মূল্যায়ন করল, তা ব্যাপার নয়, ব্যাপার হল বদলে দিতে হবে। এই তরুণদের আত্মত্যাগের লক্ষ্য কেবল একটাই ছিল, অন্যায়ের শিকড় ধরে উপড়ে ফেলা।
৪. খুব সম্ভবত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি দল ভেবেছে পাল্টে দিতে হবে শাসনযন্ত্রকে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের শাসনে যাচ্ছে, রুখে দিতে হবে তাদের। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার দায়িত্ব যেমনি মন্ত্রীর ছেলের, তেমনি সাধারণ জনগণের। পরিবর্তন দরকার সর্বস্তরে।
না, আমি সঠিক পথ, ভুল পথ দেখাতে চাচ্ছি না, চাচ্ছি কেবল একটি কেন্দ্রীয় ধারণা কী করে অন্য দশজন মানুষের কাছে ভিন্নভাবে পৌঁছায় তা দেখাতে। ধারণা বা মিমের সঞ্চালনের প্রক্রিয়াটি এমনই অস্থিতিশীল, বহুমূখী। এখানে মূল ভাবের চেয়ে দুই লাইন কম বোঝা থেকে দুই লাইন বেশি বোঝা সবই ঘটে। পৃথিবীতে খুব কম ধারণাই আছে, যা E=mc^2 এর মত গাণিতিক সমীকরণে প্রকাশ করা যায়। এবং সেইভাবে এর বিশুদ্ধতা ধরে রাখা যায়। বাইবেলে্রই ওল্ড টেস্টামেন, নিউ টেস্টামেন মিলিয়ে একাধিক সংস্করণ পাবেন। গৌতম বুদ্ধের বোধি লাভের পরবর্তী সময়টাতে বেশ অনেকসময় জুড়েই বুদ্ধের মূর্তি গড়া বারণ ছিল, তিনি নিজেই মূর্তির বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু তারপরও বুদ্ধের মূর্তি গড়া শুরু হয়েছে এবং তা বুদ্ধের জীবদ্দশাতেই। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে দ্য সেলফিশ জিনের হাত ধরে “ধারণার বিবর্তন” বা “মিমের বিবর্তন” তত্ত্বটি যুক্ত হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলার জন্যই এতো বড় ভূমিকা টানলাম। জেনেটিক বিবর্তনে যেমন জিনের মিউটেশন হয়, তেমনি বলা যায়, পরিবর্তন মিমেও হচ্ছে, কিন্তু মিমের ক্ষেত্রে মিউটেশন, একাধিক মিমের ব্লেন্ডিং যেমন ঘটছে, সেই সাথে আমার স্বাভাবিক চিন্তা বলে বেশ খানিকটা অপদ্রব্যও ঢুকছে সেখানে।
RANG DE BASANTI চলচ্চিত্রটি আমাদের কাছে একটা শিল্প, পরিচালকের মনের মধ্যে গ্রন্থিত এক বা একাধিক ধারণা, সেলুলয়েডের ফিতেয় ভরে পরিচালক আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন… উপস্থাপন করেছেন, পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের মনের ভাবনাকে, অসংখ্য আবেগ, ইতিহাস, ঘটনার সংঘাত, কিছু রূপক বাস্তবতা সমন্বিত একটি তথ্য বা ধারণা, যার গভীরতা অনুভব করে দর্শক উত্তেজিত হয়ে ওঠে, মনের মধ্যে জেগে ওঠে একটি প্রত্যয়, বদলে দেব নয়, বদলে দিয়েছি, বলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে… যে মূহুর্তে দর্শকের মনে এই ধারণার বীজ বুনে দিতে পারলেন পরিচালক, নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, সেই মূহুর্তে তারা হয়ে গেলেন সফল, বাণিজ্যিক ভাবে বলছি না, একটা বিশেষ ধারণার সফল সঞ্চালনে তথা মিমের (MEME) সঞ্চালনে সফল হবার কথাই বলছিলাম! এইটাই রিচার্ড ডকিন্সের সেই নতুন রেপ্লিকেটর যা গত কয়েক দশক ধরে আমাদের মনে নতুন এক বিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ডারউইনবাদী জীববিজ্ঞানীদের মত এখন রিচার্ড ডকিন্স, ড্যানিয়েল ডেনেট, সুসান ব্ল্যাকমোর প্রমুখেরা মেমেটিক্সের ঝান্ডা তুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন গোটা মানব জাতির সামনে। ইউটিউবে বা TED এর লেকচার খুঁজলেই মিম সম্পর্কিত অনেকগুলো ভিডিও লেকচার পেয়ে যাবেন। TED যেনো মেমেটিক্সের পতাকা তুলে ধরার জন্যই যেন শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে,
Ideas worth spreading.
রিচার্ড ডকিন্স ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত তার সর্বাধিক বিক্রিত বই “দ্য সেলফিশ জিন” এ উপস্থাপন করেন মিমের ধারণাটি। কিন্তু এই উপস্থাপনের পিছনে কাজ করছিল তার কিছু বহুদর্শী চিন্তা। ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব ততদিনে অধিকাংশ জীববিজ্ঞানীর মনে জায়গা করে নিয়েছে… পৃথিবীর জীবজগতের বিবর্তনের নিয়ন্ত্রণ যে প্রাকৃতিক নির্বাচন, জেনেটিক মিউটেশনের কারণেই হচ্ছে, তা প্রমাণসমেত হাজির হয়ে গেছে মানব জাতির সামনে… সেই সাথে আরও কিছু প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে মানুষের মনে, মানব প্রজাতি কেন আর সব জীবের চেয়ে ব্যতিক্রম? মহাবিশ্বের আর কোন স্থানে যদি প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে তাদের বিকাশ কি আমাদের মত জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমেই হবে? কেমন হবে সেখানকার প্রাণের প্রকৃতি… এমন অজস্র প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরগুলোও তেমনি অজস্র এবং কোন উত্তরের স্বপক্ষেই নেই কোন নিশ্চয়তা, আছে কেবলি সম্ভাব্যতা! রিচার্ড ডকিন্স তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন, তাঁকে বাজি ধরতে বলা হলে তিনি একটা মৌলিক সত্যের পক্ষেই বাজি ধরবেন, আর তা হল,
This is the law that all life evolves by the differential
survival of replicating entities.
তাঁর মতে, জিন বা ডিএনএ অণু আমাদের পৃথিবীর পরিবেশে সুবিধাজনকভাবে নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে পেরেছে বলেই আমাদের পৃথিবীতে প্রাণের এমন বিবর্তন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ভিন্ন কোন পরিবেশে হয়ত, ভিন্ন কোন প্রতিলিপিকারক বিবর্তিত হবার সুযোগ পাবে, এবং সেটা হয়ত জিন নয়। সেখানকার প্রাণ কার্বন ভিত্তিক না হয়ে হতে পারে সিলিকন ভিত্তিক। এসব কথার সারমর্ম একটাই, মহাবিশ্বে জিন ছাড়াও আরো অনেক প্রতিলিপিকারক একক থাকতে পারে। এদের খোঁজে কি আমাদের পৃথিবী ছেড়ে বহুদূরে যাবার দরকার আছে?
ডকিন্সের ধারণা, আমাদের এই পৃথিবীতেই নতুন ধরণের এক প্রতিলিপিকারকের আবির্ভাব হয়েছে, যদিও তা এখনো আছে তার শৈশবে, আর তা হল মিম! মানুষের মনে জিনের ধারণা গেঁথে যাবার সাথে সাথে যে প্রশ্নটা উঁকি দিয়েছিল মনে, কেন মানবপ্রজাতি এতো ব্যতিক্রম অন্য সব জীবের চেয়ে, তার উত্তর হয়ত দিতে পারে এই শিশু প্রতিলিপিকারক বা রেপ্লিকেটর মিমই! মিম আছে এখন সেই আদিম স্যুপের মত আরেক ধরণের স্যুপে, আর তার নাম হচ্ছে সংস্কৃতি বা কালচার। রিচার্ড ডকিন্স আদর করে নতুন রেপ্লিকেটরের নাম দিয়েছেন মিম, যা শুনলে মনে হয়, জিনের সাথে ছন্দে মিলে যায়। মূল গ্রীক শব্দ, Mimeme এর সংক্ষিপ্ত রূপ meme (মিম)। তিনি চেয়েছিলেন নতুন এই রেপ্লিকেটরের এমন একটা নাম দিতে যা সাংস্কৃতিক প্রবাহ বা অনুকরণের এককের ধারণাকে প্রকাশ করে। ডকিন্স চেয়েছিলেন প্রতিলিপিকারক হিসেবে জিনের সমার্থক আরেকটি ধারণাকে মানুষের সামনে আনতে, মানুষের মনে একমাত্র প্রতিলিপিকারক হিসেবে জিনের যে আসন গড়ে উঠেছে, তাছাড়াও যে আরো প্রতিলিপিকারক থাকতে পারে, সেই ধারণাটাকে প্রতিষ্ঠা করতে। আর এইভাবেই বিজ্ঞানের জগতে ঢুকে পড়ে নতুন একটি মিম, যার নাম Meme বা মিম!
ডকিন্সের ভাষায়,
Examples of memes are tunes, ideas, catch-phrases,
clothes fashions, ways of making pots or of building arches. Just as
genes propagate themselves in the gene pool by leaping from body
to body via sperms or eggs, so memes propagate themselves
in the meme pool by leaping from brain to brain via a process
which, in the broad sense, can be called imitation.
যখন একটি উর্বর মিম বা ধারণাকে আমি প্রকাশ করব অন্য কারোর কাছে, তখন আক্ষরিক অর্থে আমি তার মস্তিষ্কে আমার ধারণা চালান করে দিচ্ছি। সেখান থেকে এই ধারণাটি অন্য কোথাও সঞ্চালিত হবে, সেখান থেকে অন্য কোথাও… অনেকটা ভাইরাসের মত… কিংবা কনসার্টে বাপ্পা মজুমদারের গাওয়া নতুন একটি গান হয়তো শ্রোতাদের মনে গেঁথে গেল, পরদিন দেখা গেলো, গতরাতে কনসার্টে আসা অনেক মানুষ পথ চলতে চলতে গুণগুণ করে সেই নতুন গানের সুরটি ভাঁজছে! গানটি এখন আর কেবল বাপ্পা মজুমদারের মস্তিষ্কে নেই, ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর অসংখ্য শ্রোতাদের মাঝে… IDEAS WORTH SPREADING!
এই ধরনের সাধারণ একটা ঘটনাই ঘটে ঈশ্বর তত্ত্বের ক্ষেত্রে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আসলে একটি ধারণা মাত্র… কিন্তু তবুও এই ঈশ্বরকেই আঁকড়ে ধরে আছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ! কী করে ঈশ্বর তত্ত্বের মিম এভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে গেল এবং হাজার হাজার বছর ধরে টিকেও গেল! কারণ একটাই, মিমটির নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে মানুষের বিশ্বাসে জায়গা করে নেবার ক্ষমতা আছে, এই একটি ধারণা বহু মানুষকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, আমি একা নই, আমরা অসহায় নই, ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বর সবার মঙ্গল করবেন। থ্রি ইডিওটস সিনেমার একটা সংলাপ ছিল, মানুষের হৃদয়টা (পড়ুন মনটা) খুব ভীরু, একে সবসময় বোকা বানিয়ে রাখতে হয়! কথা সত্যি, ঈশ্বর তত্ত্বের সাহায্য নিয়ে মানুষ নিজের মনকেই বোকা বানিয়ে মনের জোর পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, আর হাজার হাজার বছর ধরে সেটা করে যাচ্ছে বলেই ধর্ম নামের একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তার আনুষঙ্গিক কিছু রীতিনীতি নিয়ে, যেমন মুসলিমদের রোজা রাখা, হিন্দুদের গোমাংস না খাওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি… শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরতত্ত্ব কিন্তু একটা মিমই। কিন্তু গোটা ধর্মটা আসলে এমন অনেকগুলো মিমের সহাবস্থান। আমি যদি বলি, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তার মানেই কিন্তু ধর্ম মানা নয়… এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে বরং মূল কথায় আসি…
রিচার্ড ডকিন্স তার বইতে অনুলিপিকারকের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন,
১. স্থায়িত্ব (Longevity)
২. গ্রহণযোগ্য ধারণার বুদ্ধিভিত্তিক উর্বরতা (Fecundity)
৩. প্রতিলিপির বস্তুনিষ্ঠতা (Copying Fidelity)
University of Oxford এর Public Understanding of Science এর প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স দারুণ সুন্দর করে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করতে পারেন।। এটা অনেক বড় ব্যাপার। ভাষার গাঁথুনি এমন, সেখান থেকে অন্য কোন যুক্তি খুঁজে বের করা রীতিমত কঠিন ব্যাপার। ডকিন্সের মিমের মিমটি সমর্থন পেয়েছে যাদের তাদের মধ্যে অন্যতম ড্যানিয়েল ডেনেট এবং সুসান ব্ল্যাকমোর। সুসান ব্ল্যাকমোর তো রীতিমত মিমের মিমে তীব্রভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।
সেই আদিম স্যুপ, যাতে জন্ম হয়েছিল প্রথম প্রাণের, তিন হাজার মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে তা প্রশ্রয় দিয়ে গেছে DNA বা একমাত্র রেপ্লিকেটরকে যার ক্রমাগত বিবর্তনে আমরা এসে পৌঁছেছি আমাদের বর্তমান অবস্থায়, আমাদের দেহের সাথে আছে একটি স্নায়ুতন্ত্র, একটি শক্তিশালী মস্তিষ্ক, যাতে আশ্রয় নিতে পারে অনেক ধারণা, অনেক মিম, সৃষ্টি করতে পারে ধারণার বিবর্তন, জিনের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়তে পারে। জীববিজ্ঞানীরা ভুলে যান, জিনকেন্দ্রিক বিবর্তন কেবল বহু সম্ভাব্য বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি মাত্র। ডকিন্সের মতে, যখন একটি নতুন রেপ্লিকেটরের নিজের প্রতিলিপি তৈরি করার এবং বিস্তারের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তখন সেই নতুন রেপ্লিকেটরটিই পুরোনো রেপ্লিকেটরকে হঠিয়ে দিয়ে বিবর্তনের গতিপথ নিজের মত করে নিয়ন্ত্রণে নেবে এবং নিজেদের মধ্যে নতুন ধরনের বিবর্তন বৈশিষ্ট্যের সূচনা করবে, যা বর্তমানে করছে মিম।
মিমের প্রতিলিপি তৈরি করার পদ্ধতি হল অনুকরণ বা IMITATION. মিম অনেকটা জিনের মতই, নিজের প্রতিলিপি নিজেই তৈরি করে টিকে থাকতে পারে… স্থায়িত্বের দিক থেকে কিছু মিম টিকে থাকে খুব অল্প সময়ের জন্য, আর কিছু মিম টিকে থাকে বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী! ডকিন্স বলেন, মিমের ক্ষেত্রে মিম পুলে একটি মিমের স্থায়ীত্বের ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ যেমন জিন পুলে একটা জিনের টিকে থাকা তেমন বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়।
একটি মিমের প্রতিলিপি একজন মানুষের মাঝে কেবল জীবনের বাকি সময় ধরে টিকে থাকতে পারে, যদি ছাপার অক্ষরে সংরক্ষিত হয়ে থাকে তাহলে তার চেয়ে অনেক বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব। মানুষের মস্তিষ্ক এবং ছাপার অক্ষর মিলিয়ে অনেকদিন টিকে থাকা সম্ভব। মিমের ক্ষেত্রে আসলে জিনের মতই গ্রহণযোগ্য ধারণার বুদ্ধিভিত্তিক উর্বরতা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ম্যাক প্ল্যাঙ্কের বপন করা কণা পদার্থবিজ্ঞানের অস্তিত্ব বা আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র টিকে আছে শতাব্দী ধরে, হয়ত থাকবে আরো অনেকদিন, এর মূল কারণ হল, এইসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আমাদের মাঝে। সহস্র বছর ধরে ঈশ্বরতত্ত্ব আমাদের মনে রাজত্ব করে যাচ্ছে, কারণ এই তত্ত্ব আমাদেরকে আমাদের অস্তিত্ব, পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে একটা সান্ত্বনামূলক উত্তর দিচ্ছে, যে একজন ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন এই মহাবিশ্ব। এখন বিজ্ঞান উঠে এসেছে ঈশ্বরতত্ত্বের মিমটির সাথে প্রতিযোগিতা করে মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং অস্তিত্ব সম্পর্কে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে। ঈশ্বর তত্ত্বের মিমের দিন ফুরাবে তখনই যখন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মানুষের মনে বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। বিশ্ববাণিজ্য বা ফ্যাশন জগতের দিকে তাকালে দেখা যায়, এর আয়ু এক দশকের কম বা বেশি, ষাটের দশকের ফ্যাশন বা বাজার চাহিদার সাথে সত্তরের দশকের বিশাল তফাত। বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রহণযোগ্য অপেক্ষাকৃত অগভীর বলেই এতো দ্রুত বদলাচ্ছে বাণিজ্যের রঙ! তাহলে সার কথা দাঁড়ালো এমন, যে জিনটির প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে প্রতিদ্বন্দী জিনকে হঠিয়ে টিকে থাকার সাধ্য আছে, সেটি যেমন জিন পুলে টিকে থাকে দীর্ঘসময়, তেমনি যে মিমটির গ্রহণযোগ্যতা বেশি তা টিকে থাকে দীর্ঘসময়। এখানে মিমের মান বিচার করা প্রসঙ্গে ড্যানিয়েল ডেনেট বলেন, একটা মিম ভালো বা খারাপ এটা বলার দ্বায়িত্ব আমার বা রিচার্ডের নয়, মূল ব্যাপার হচ্ছে তা মিম পুলে সফল কিনা।
প্রতিলিপিকারকের তৃতীয় সাধারণ বৈশিষ্ট্যটি হল, প্রতিলিপির বস্তুনিষ্ঠতা। এই সম্পর্কে ডকিন্সের নিজেরই উক্তি,
Here I must admit that I am on shaky ground.
তিনি জিনের সাথে তুলনা করে বলেছেন, জিনের বংশানুক্রমিকতার দিকে তাকালেও দেখা যাবে, সাদা এবং কাল গাত্রবর্ণের দুজন মানুষের যৌনমিলনের ফলে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার গাত্রবর্ণে মিশ্র অবস্থা দেখা যায় অধিকাংশ সময়েই। তিনি মিমের মিউটেশনের সাথে এভাবেই জিনের মিউটেশনের তুলনা দিয়েছেন। ডকিন্সের ব্যাখ্যাটা ছিল এমন, অধিকাংশ ডারউনবাদী জীববিজ্ঞানী ডারউইন তত্ত্বের যুক্তি মানেন, কিন্তু তারা হয়ত সরাসরি ডারউইনের কাছ থেকে বা ডারউইনের লেখা থেকে তত্ত্বটি পড়েননি। বরং ডারউইন যা বলে গিয়েছিলেন, বর্তমানের প্রেক্ষাপটে তার অনেকাংশই ভুল। কিন্তু ডারউইনের বক্তব্যের যে সারমর্ম ছিল তা এখন বর্তমানের বিবর্তনের ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিবর্তন তত্ত্বের বর্তমান রূপ এসেছে ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের হাত ধরেই। তাই ডারউইনবাদী জীববিজ্ঞানী মানেই তাদের মস্তিষ্ক ডারউইনের মস্তিষ্কের অনুরূপ নয়। বরং তারা নিজেদের যুক্তি বুদ্ধিতে ডারউইনের তত্ত্বের অনুরূপ ধারণা ধারণ করছেন। যেমন আমি এখন রিচার্ড ডকিন্সের দেয়া মিমের ধারণা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, কিন্তু ডকিন্সের ভাষায় নয়, আমার ভাষায়, আমার কাছে ডকিন্সের বলা কথাগুলো যে ভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, সেভাবে বলছি। আমি বলার চেষ্টা করছি ডকিন্সের কথা, কিন্তু বলতে গিয়ে কিছুটা হলেও আমার চিন্তা ভাবনা মিশে যাচ্ছে। এখানে ধারণার মিউটেশন এবং মিশ্রণ দুটোই ঘটছে। সেদিক থেকে দেখলে জেনেটিক মিউটেশনের সাথে মেমেটিক মিউটেশন এবং ব্লেন্ডিং এর মিল আছে।
এখানে উল্লেখ্য, মিশ্রগাত্রবর্ণ বা আমরা যে বাহ্যিক বৈশিষ্টগুলো দেখতে পাই, তাকে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলে ফিনোটাইপ। ফিনোটাইপের সাথে জিনোটাইপ বা অভ্যন্তরীন জেনেটিক সিকোয়েন্সে যথেষ্টই পার্থক্য থাকে। একটি বৈশিষ্ট্যের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালেলদের মাঝে বাবা-মায়ের জিনের ক্রসওভার এবং জেনেটিক মিউটেশনের ফলে সন্তানের জিনের বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। সন্তানের জিনেও প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালেল থাকে এবং এদের মাঝে একটি প্রকট, আরেকটি প্রচ্ছন্ন। ফিনোটাইপে প্রকট অ্যালেলটির ভূমিকাই বহুলাংশে প্রকাশ হয়। এখন প্রশ্ন হল, আমরা কি মিমের ক্ষেত্রেও এমনভাবে প্রকট প্রচ্ছন্ন জোড়া খুঁজব? মিমের ক্ষুদ্রতম একক কি? আমরা কি আদৌ মিমকে জোড়ায় জোড়ায় বাঁধতে পারি? বা মিমের একক নির্ধারণ করতে পারি? মিম নিজের প্রতিলিপি তৈরি করছে, কিন্তু প্রতিলিপি যা তৈরি হচ্ছে তা কি একটি মিমের প্রতিলিপি? মিউচুয়ালি অ্যাসিস্টেড মিমের প্রতিলিপি? নাকি মিমের ভগ্নাংশের প্রতিলিপি?
পদার্থবিদদের ধারণা, সময়ের শুরু হয়েছে বিগ ব্যাং থেকে, কিন্তু ক্ষুদ্র একদল বিজ্ঞানীও আছে, যারা বলতে চান, সময়ের কোন শুরু বা শেষ নেই, সময় অসীম, বিগ ব্যাং এর আগেও সময় ছিল, তার পরেও সময় আছে! এই দুটি ধারণার মধ্যে কোনটা মিমপুলে শেষপর্যন্ত টিকে থাকবে? কোন্টি প্রকট, কোন্টি প্রচ্ছন্ন? সময়ের ধারণা কি আদৌ একটি মিম? নাকি অনেকগুলো মিমের সমন্বয়? সময় কি? বিগ ব্যাং কি? অসীম কি? এতোসব প্রশ্ন, দ্বিধার ভিড়ে মিমের রূপটা আসলে কি দাঁড়ালো? এইসব অসংখ্য প্রশ্নের উত্তরে রিচার্ড ডকিন্স দিয়েছেন একটি সম্ভাব্য উত্তর, মেমেটিক এভোলিউশন এখনও তার শৈশবকাল অতিক্রম করেনি, জিনের ক্ষেত্রে আদিম স্যুপ যে ভূমিকাটা পালন করেছিল, মিমের ক্ষেত্রে মানব সংস্কৃতি-সভ্যতা সেই স্যুপের দায়িত্বটি পালন করছে। ডকিন্সের এইরূপ উত্তর থেকে ধারণা করা যায়, মানব সভ্যতা-সংস্কৃতি যখন সময়ের পরিক্রমায় আরো পরিণত হবে, তখন মিম সংক্রান্ত, এর একক সংক্রান্ত, স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোকে পাড়ি দিয়ে বৈজ্ঞানিক সীমারেখায় নিজেদের সংঙ্গায়িত করতে পারবে এই নতুন ধারার বিবর্তন প্রক্রিয়াটি।
এখানেই শেষ নয়, ডকিন্স বলতে চেয়েছেন, প্রকৃতিতে আমরা দুটি জীবের মাঝে যেমন মিথোজীবিতার উদাহরণ দেখতে পাই, মিমের ক্ষেত্রেও তেমন একাধিক মিমের সহাবস্থান দেখা যায়। অনেক সময় দুটি জীব পারষ্পারিক সহযোগিতা নিয়ে থাকতে থাকতে এমন উদাহরণ দেখা যায়, আমাদের কাছে মনে হয়, এখানে দুটি জীব নয়, আছে একটি মাত্র জীবই। তেমনি মিমের ক্ষেত্রেও অনে সময়ই দুইটি আলাদা মিমকে আলাদা বলে মনে হয়না, যেমন ঈশ্বরতত্ত্ব এবং ধর্ম। পৃথিবীতে এমন কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব নেই যার সাথে ধর্মীয় আচরণ-রীতি সম্পৃক্ত নেই। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দুটি আলাদা মিম একসাথে অবস্থান করছে, একটি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বের ধারণা, আরেকটি ধারণাকৃত ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট রাখতে ধর্মীয় আচরণ পালন করা। এরকম বহু মিম মিলেমিশে এমনভাবে একাকার হয়ে গেছে, যে এখন আমরা ঐগুলোকে আর আলাদা বলে ভাবছিনা। এদের বলা হয় মিউচুয়ালি অ্যাসিস্টেড মিম।
জেনেটিক বিবর্তনের ধারণা থেকে আমরা জানি, জিন নিজের ইচ্ছামত বিবর্তিত হয় না, বিবর্তিত হয় প্রাকৃতিক নির্বাচনের চাপে, শেষ পর্যন্ত জিন পুলে টিকে যাবার পথটাকে আমরা বলছি এভোলিউশনারীলি স্টেবল স্ট্রাটেজী বা ESS. আমরা যদি মিমের বিবর্তন প্রক্রিয়াকে হিসাবের তালিকায় যুক্ত করি, তাহলে পৃথিবীতে যত প্রজাতি আছে, তাদের মধ্যকার উন্নত মস্তিষ্কের মাত্র অল্প কয়েকটি প্রজাতিতে একই সময়ে জেনেটিক এবং মেমেটিক বিবর্তন ঘটছে। তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কি এখন কেবল জেনেটিক বিবর্তন বা মেমেটিক বিবর্তন আলোচনা করাটা যথেষ্ট হবে? জিন এবং মিম উভয়ই পরষ্পরকে প্রভাবিত করছে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, ভাবের আদান-প্রদান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজনৈতিক চিন্তা, সব কিছুই এমন একটা ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে মানব প্রজাতিতে, যে শুধু জিনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তন আলোচনা করা যথেষ্ট নয়।
আমার প্রশ্ন, আসলেই মেমেটিক বিবর্তন কি নতুন ধরনের বিবর্তন? নাকি জেনেটিক বিবর্তনের অধীন বিবর্তন? সাংকেতিক ভাষা, ভাবের আদান প্রদান, যূথবদ্ধতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ এই অবস্থায় এসে দাঁড়ানোর পিছনে মিরর নিউরনের ভূমিকা অনেকখানি। এই মিরর নিউরনের সৃষ্টিওতো কোন এককালের জেনেটিক মিউটেশনের ফলাফল হিসেবেই এসেছে… আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্রমাগত মানব প্রজাতিকে বাধ্য করছে মস্তিষ্কের আয়তন বাড়াতে, এটা বিবর্তনের প্রাকৃতিক চাপ, কম দক্ষতাসম্পন্ন জীব বা মানুষ আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনে, অভিজিত দা, উনার “সখি ভালোবাসা কারে কয়?” প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন কীভাবে যোগ্যতর মানুষগুলোকেই সংগী হিসেবে নির্বাচনের প্রবণতা তৈরি করে দিয়েছে আমাদের মাঝে। তাই এই প্রশ্নটা করতেই হচ্ছে, মেমেটিক বিবর্তন স্বাধীন নাকি জেনেটিক বিবর্তন প্রসূত? বিজ্ঞানীমহলে জেনেটিক-মেমেটিক কো-এভোলিউশন শব্দটা ভালোই পরিচিত একটা শব্দ। আমার “মস্তিষ্কে অণুরনণ, সংগোপনে” প্রবন্ধের একটি পর্বে মুক্তমনার বিবর্তনবাদীদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, বিবর্তনে জিন-মস্তিষ্ক-পরিবেশের প্রভাব তিনটি ভ্যারিয়েবল বা চলক হলে মস্তিষ্ক এবং পরিবেশের পারষ্পারিক প্রভাব স্পষ্টভাবে আমরা বুঝতে পারলেও জেনেটিক বিবর্তনে এদের প্রভাব কতখানি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এবার শরণাপন্ন হতে হবে জেনেটিক-মেমেটিক কো-এভোলিউশনের!
পৃথিবী বিখ্যাত জনপ্রিয় জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্সের মস্তিষ্কপ্রসূত বিজ্ঞানের নতুন শাখা মেমেটিক্স, যার বিবর্তন আজ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। অনেক বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী মিম নিয়ে ইতিমধ্যে এসব নিয়ে প্রশ্ন করে ফেলেছেন। প্রফেসর ডকিন্সও তাঁর লেখা বই “দ্য সেলফিশ জিন”-এ মিম সংক্রান্ত ধারণাটি কিছুটা দ্বিধান্বিত সুরেই উপস্থাপন করেছেন। বিজ্ঞানের জগতে একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই তাকে বৈজ্ঞানিক সত্য বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তত্ত্বের পরীক্ষণযোগ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে। অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত তার সঠিক রূপরেখার ধারণা গড়তে না পেরে হারিয়ে গেছে… আলোর তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সামনে এসেছে কণা পদার্থবিদ্যা! অনুসন্ধানী মনের প্রশ্ন কখনো থেমে থাকেনা। বিবর্তনের প্রচলিত ধারণা পাল্টে যাবার আগে তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, একটি উত্তরের জন্য, বিবর্তন এখনো জিনেই সীমাবদ্ধ আছে, নাকি মিমের বিবর্তন নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে বিবর্তনবিদ্যার, নাকি জেনেটিক-মেমেটিক কো-এভোলিউশন চলতে থাকবে সামনের অনেকটা সময় ধরে?
মেমেটিক বিবর্তনের ধারণা সম্বলিত অধ্যায়ের শেষে এসে স্যার রিচার্ড ডকিন্স বলেছেন,
We have the power to defy the selfish genes as our birth
and, if necessary, the selfish memes of our indoctrination. We can
even discuss ways, of deliberately cultivating and nurturing pure,
disinterested altruism- something that has no place in nature,
something that has never existed before in the whole history of the
world. We are built as gene machines, but we have the power to
turn against our creators.
We, alone on the earth can rebel against the tyranny
of the selfish replicator.
একজন কঠিন যুক্তিবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স সমস্ত মানবজাতি সম্পর্কে এমন আশাবাদী মতামত জোর গলায় দিয়েছেন, ঋণাত্মকতা বা স্বার্থপরতা আমাদের জিনের আজন্মের সংগী হলেও মানব প্রজাতি পারে তার প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে, প্রকৃতিকেও পারে নিয়ন্ত্রণ করতে, হয়ে উঠতে পারে নিজেই নিজের নিয়ন্তা, সেজন্য স্যালুট স্যার রিচার্ড ডকিন্সকে।
*********** [আগামী পর্বে সমাপ্য] ************
মিম যে আছে এটা আমার মনে হচ্ছে, সব জিনিসের ই একটা সরল রূপ আছে, সংস্কৃতির ও একটা সরলীকৃত রূপ অবশ্যই থাকবে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় এটা ধরা পড়বে না, কারণ এটা কোন ভৌত বস্তু নয়, মনে হয় সফটওয়্যারের মত।
ডকিন্স এর বইটা কি বাংলায় পাওয়া যায় ।
@লিটন,
মুক্তমনার কয়েকজন এই বইটার অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছেন। কিন্তু আমার জানামতে বাংলায় পাওয়া যায় না এখনও। আপনি ইংরেজীটাই পড়ে ফেলতে পারেন, সহজবোধ্য ইংরেজীতেই লেখা। কেবল স্ট্রাটেজী গুলো ধরতে পারলেই কাজ হবে। এবং সেটা মস্তিষ্কের কাজ, ভাষায় জটিলতা নেই বলে মস্তিষ্কের কাজে বাধ সাধবে না। 🙂
“স্বার্থপরতা আমাদের জিনের আজন্মের সংগী হলেও মানব প্রজাতি পারে তার প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে, প্রকৃতিকেও পারে নিয়ন্ত্রণ করতে, হয়ে উঠতে পারে নিজেই নিজের নিয়ন্তা”
আহ্ কী চমৎকার কথা, আমার মনের মত কথা। কেন যে আমাদের অনেক বন্ধুরা এই সহজ কথাগুলো বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না সেটাই বুঝি না। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যে। ভাল থাকবেন।
@আব্দুল হক, 🙂
চমৎকার সহজপাঠ্য একটা লেখা। খুবই ভালো লাগল পরে। মানে এত সুন্দর,সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন প্রশ্ন করার মতন কিছু নেই। আমি একজন শক্তিশালী ভবিষ্যত বিজ্ঞান লেখক দেখতে পাচ্ছি। অধীরভাবে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
শুভকামনা রইল।
@সাইফুল ইসলাম,
কতকাল যে কবিতা ছাড়া আর কোন উপন্যাস গল্প পড়িনা আমি… বিজ্ঞানের চেয়ে মজার কিছু পাইনা তাতে… জীবনটা সুন্দর, ঠিক মত তাতে রঙ দিতে পারলেই হয়… বিজ্ঞান ছেড়ে অন্যকিছু গেলেই মস্তিষ্কে আমার চাপ পড়ে… শুধু কবিতাকে ছুটি দেই নি আমি। 🙂
এটা খুব ভাল টপিক ছিল। আমার খুব প্রিয়। আবার বিতর্কিত ও। তবে ডকিন্সের বাইরে ঢুকে কিছু ভাল গবেষণার রেফারেন্স দিলে ভাল হত!
(১) মেমেটিক্সের সাথে জেনেটিক্সের একটা বিশাল পার্থক্য হচ্ছে বাপ আর ছেলের মধ্যে জেনেটিক্স পার্থক্য থাকে না-কিন্ত বাপ ক্যাপিটালিস্ট ছেলে কমিনিউস্ট বা ঊলটোটা হামেশাই আমরা দেখি। শুধু ঈশ্বরের ধারনার ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম আমরা দেখি। যেমন বাবা ঈশ্বর ভক্ত ছেলে নাস্তিক হাজার হাজার পাওয়া যায়, কিন্ত বাবা নাস্তিক ছেলে ঈশ্বরভক্ত-এটা আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।
(২) সংস্কৃতির ব্যপারটা আবহাওয়ার সাথে টিকে থাকার জন্যে একটা বিবর্তিত ট্যাকটিক্স-এই এই যে ইসলাম ইসলাম বলে লোকে এত লাফাচ্ছে-আসলে ব্যাপারটা কি?? ওটা ওই সপ্তম শতকে মরুভূমিতে বেঁচে থাকার জন্যে একটা শক্তিশালী সংস্কৃতি-যা অন্য সংস্কৃতিকে হারিয়ে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্ত ভারতীয় আবহাওয়াতে তা বেমানান-সংস্কৃতি আবহাওয়ার বাই প্রোডাক্ট।
(৩) একটা মজার মিম নিয়ে আলোচনা করা যাক। ভারতে বিশেষত হিন্দুদের মধ্যে ডিভোর্স হয় না বা প্রচলন ছিল না। এটা একটা মিম। বংশ পরস্পরায় তাই চলে এসেছে। বিধবা বিবাহ এই সেই দিন ও ছিল না। অর্থাৎ মেয়েদের জীবনে “দুটো” বিয়ে হতে পারে এই ব্যাপারটাই ভারতে ছিল না!
এটা বেশ ব্যতিক্রমী মিম-কারন পৃথিবীর সব সংস্কৃতিতেই বিধবা বিবাহ বা মেয়েদের ডিভোর্স সমস্যা ছিল না। ভারতে ব্যতিক্রম কেন? আদি বৈদিক যুগেও জাবালা বা অন্য রমণীর দেখা পাওয়া যায় যারা স্বামী ছেরে পরপুরুষ গমন করেছে। কিন্ত এর পরে কি হল?
এইটার মূল কারন বোধ হয় ভারতের ভীষন স্যাঁত সেঁতে আদ্র জলবায়ু-যেখানে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনাচরনের প্রভাবে মেয়েদের “শ্রম” সমাজের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচিত হয় নি।
@বিপ্লব পাল, ভাইয়া, আমার কাছে তো মিমের ধারণার চেয়ে অনেক বেশী ইন্টারেস্টিং লাগে বিতর্ক গুলো। ওগুলোতে সলিড কিছু বস্তু আছে। আর ইসলামের ব্যাপারে যা বললেন, তাতে সহমত। কারণ, আমার কখনই মনে হয় না, মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া আর কোথাও ইসলামের নিয়মগুলো ২৪ ঘন্টার রুটিন, আবহাওয়া কোন কিছুতে খাপ খায়। এইটা কেউ বুঝে না কেন? শুধু শুধু গায়ের উপর বোরকা আর জোব্বা চাপায়। 🙁
আমি রিচার্ড ডকিন্সের বাইরে যেতে চাচ্ছি… কিন্তু গুরুজীর দোয়া না নিলে শিক্ষা সমাপ্ত হবে না যে… 🙂
@তপন গোমেজ,
কারণ, জিন মিম জেনেটিক মেমেটিক কোএভোলিউশন কোনটাই আমার বানানো টার্ম না… আর জিন নিয়ে আমার আমার কোন দ্বিধা না থাকলেও মিম নিয়ে আছে, লেখাটা পজেটিভ টোনে মিম সঙ্ক্রান্ত প্রশ্ন গুলোকে জাগিয়ে দেয়ার জন্যই। খেয়াল করে দেখুন, আমি আসলে কোন উত্তর দেইনি, প্রশ্ন আর প্রশ্ন করেছি … উত্তরে পৌছানোর আগে যা করা উচিত তাই। যে আইডিয়া গুলো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেগুলো পরীক্ষিত হবার আগে বৈজ্ঞানিক সত্য বলে আমি মনে করিনা। মাল্টিভার্স, আইডিয়াটা চমকে দেবার মত বটেই, কিন্তু আগে Large Hadron Collider এর মধ্যে যেভাবে Particle Physics কে পরীক্ষায় দাড়াতে হয়েছে, সেভাবে দাঁড়াক, তার আগ পর্যন্ত এর শুণ্যতা/পরিপূর্ণতার ব্যাপারে মতামত দেবার মত লজিক ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই কিন্তু… 🙂
শেষপর্যন্ত মিম যদি কখনো ছদ্মবিজ্ঞান বলে আখ্যা পায়, আমি অবাক হব না। মিম বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়, কেবলি ডকিন্সের মস্তিষ্কপ্রসূত আর এই নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ বিতর্ক আছে।
আপনার পরবর্তী প্রশ্নের অপেক্ষায় … 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আমার মত অনেকের প্রশ্ন আপনি কি খণ্ডন করতে চাইছেন সেটা নিয়ে । মিম সংক্রান্ত এমন কিছু কি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে যা আপনার দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডনযোগ্য বলে মনে হয়েছে ? এমন কোন তত্ত্ব যাকে খণ্ডনযোগ্য বলা যায় ? আপনি নিশ্চয়ই এখানে একটা strawman তৈরী করে সেটাকে খণ্ডন করতে চাইছেন না। আপনার কাছে মিমের উপর মাত্র একটা পুরোদস্তুর গবেষণাপত্রের নাম জানতে চাইবো যা সাইন্স বা নেচারের মত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে । একটা বেস্টসেলার পেপারব্যাক নিয়ে কি বিজ্ঞান নিদ্রাহীন রজনী যাপন করতে পারে ?
প্রবন্ধের শুরুতেই একটা পারফেক্ট বা আদর্শ দেশের কথা তুলেছেন। এরকম একটা পারফেক্ট দেশের নামসহ উদাহরণ পেলে উপকৃত হতাম। পারফেক্ট দেশ বলে কি কিছু বাস্তবে আছে ?
আমার কাছে কেন যেন এই প্রবন্ধটির বক্তব্য বরং আদর্শবাদী সমাজতাত্ত্বিক দর্শন ঘেঁষা বলে মনে হয়েছে যা বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমার প্রশ্নগুলো বেশী তীক্ষ মনে হলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন।
@তপন গোমেজ,
আমি যদি বলি, আমি একটি বেস্টসেলার পেপারব্যাক নিয়ে চারপাশের অনেক মানুষের উচ্ছাস দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হয়েই এই লেখা শুরু করেছি! এটা আমার ডিবেট স্ট্রাটেজি, একটা তত্ত্বের অসামঞ্জস্যতা দেখাবার আগে তত্ত্বটাকে আগা গোড়া পাঠকের কাছে বা সামনে বসে থাকা বিপক্ষ দলের বক্তাটির কাছে তত্ত্বটার আগা গোড়া দেখিয়ে নেয়া।
আমার মাথায় একটা মৌলিক প্রশ্ন আছে, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমি যেভাবে চিন্তা করছি, আপনি সেভাবেই ভাবছেন। তাই প্রশ্নটা আপনাকেই করছি, উত্তর পেলে খুব খুব খুশি হব।
মিম কি আসলেই বিজ্ঞানের তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য? নাকি এর স্থান সমাজ বিজ্ঞানের খাতায়? সমাজ বিজ্ঞানকে যে আদতে কোন বিজ্ঞান বলে ভাবাই হয়না, তা হয়ত অনেকেই জানে বা জানে না।
বেস্টসেলার পড়ে যারা ভাবেন অনেক বুঝে ফেলেছি, তাদের যদি বলি, বেস্ট সেলার পপুলাত সায়েন্স পড়ে বিজ্ঞানী হওয়া যায় না, তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে বুঝতে পারছি না আসলেই। তবে ডকিন্সের মস্তিষ্কপ্রসুত একটা তত্ত্ব নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি, তা আমার ধৃষ্টতা বলে ভাবার পাঠক লেখকের কমতি পড়বে না, আমি জানি।
মিম যে একটি Strawman, এটা আমার ধারণা ডকিন্স ভালো করেই জানেন। আমার নতুন করে কিছু দাঁড় করাবার প্রশ্নই দেখিনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলায় ব্লগ লেখেন, তাদের মাঝে মিম সম্পর্কে ঋণাত্মক কথা একটিও শুনিনি বা কোন ব্লগেও দেখিনি। অ্যাজ ইফ, He is the most respected priest of this century! He can’t say anything wrong!
সাথে থাকুন। প্রশ্নের তীব্রতাই চাই আমি। প্রশ্ন আমাকে কখন বিব্রত করেনা। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
জীব অথবা জড় কোন কিছুকে বিজ্ঞানের তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য হতে হলে তাকে প্রথমেই পদার্থবিদ্যার প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের আওতায় সনাক্তকরণ পূর্বক কোয়ান্টিফাইয়েবল হতে হবে যা ১,২,৩ করে গননা যোগ্য , পরিমাপযোগ্য , ভৌতিক পর্যবেক্ষন যোগ্য (ধ্যান-ভাবনা দিয়ে নয়!) এবং পরীক্ষন যোগ্য। জিন এসব শর্ত পূরন করে কিন্তু মিম কি অন্তত এর একটা শর্ত পূরন করতে সক্ষম ?
এখন দেখলেন।
@তপন গোমেজ
ঠিক এই উত্তরটাই চাইছিলাম। 🙂
পারফেক্ট বলে কিছু নেই, এটা একটা স্টান্ডার্ডের নাম, যার সাপেক্ষে তুলনা করা সম্ভব বলে ধারণা করি আমরা। পারফেক্ট হওয়া সম্ভব হলে, বা হয়ে গেলে পৃথিবীর সব কর্ম, সব গতি থেমে যেতো, কারণ অর্জন করার আর কিছুই থাকতো না। সকালে এটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
আবার পড়লাম এইবার একদম সহজপাঠ্য মনে হইলো…কালকে ঘুমের ঘোরে পড়ছিলাম মনে হয় :))
@টেকি সাফি, 😀 😀
আচ্ছা, বলুনতো আপনার এই প্রবন্ধটিকে কেন ছদ্মবিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করা যাবে না ?
আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগল। :clap মিম বিষয়ে আগেও ভাল কতগুলো লেখা পড়েছি। আপনিও অনেক স্পষ্টভাবে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
আমি অবশ্য জানি বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন সময়ের কোন শুরু নাই। বিগ ব্যাং এর আগে থেকেও সময় চলে আসছে এবং চলতে থাকবে।
সবশেষে একটি কথা জানাতে চাই। রিচার্ড ডকিন্স নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞানী/দার্শনিক। তবে আমার মনে হয় মুক্তমনায় তাকে নিয়ে লেখার সময় তার নামের আগে বেশি বিশেষণ না বসালেও চলে। তিনি তার নিজের নামেই বিখ্যাত। যেমনটা স্টিফেন হকিং বা স্টিভেন ওয়াইনবার্গের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম (W)
@অভীক,
বিশেষণ গুলো মুক্তমনার জন্য না… অপ্রিয়ভাষিনী বলে আমার খ্যাতি আছে… 🙂 এই পুরা লেখাটার নাম আগে দিয়েছিলাম কাঠগড়ায় মেমেটিক্স… 🙂
আপনাকে বলবনে কাঠগড়ায় কিভাবে … 🙂
@অভীক,
“What Time is it?” BBC এর একটা ডকুমেন্টারী আছে… ২০০৮ এর ঐটা দেখতে পারেন… সময় বিগ ব্যাং নির্ভর না, আগেও ছিল, এটাই আমার কাছে বেশী লজিকাল মনে হয়… আসলে গ্রুপ দুটোই আছে… কিন্তু সাধারণের চিন্তাকে প্রভাবান্বিত করে পপুলার সায়েন্স বেশী বা সায়েন্টিস্টের পপুলারিটি। MIT এর প্রফেসরের উক্তির চেয়ে আগে জনগণের কানে পৌছায় মিশিও কাকু বা ব্রায়ান কক্সের উক্তি…
ভালো লাগলো,অনেক নতুন তথ্য জান্তে পারলা্ম,ধন্যবাদ (Y) (F)
@আস্তরিন, 🙂
সরাসরি প্রিয়তে। এমন সহজভাবে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে আবার শুরু থেকে পড়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।এ বিষয়টি নিয়ে কিছু লেখাপড়ার চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু সময় আর ধৈর্য্যের অভাবে হয়ে ওঠেনি।আপনার এ প্রবন্ধে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।
আপনার লেখা পড়তে পড়তে একটা সময় হঠাৎ আমার ‘Inception’ মুভিটার কথা মনে পড়ে গেল।
@নিটোল, ধন্যবাদ আপনাকে একটানে পড়ার জন্য। এটা করতে পেরেছি বলে খুশি লাগছে… 🙂
@ নীল রোদ্দুর,
এক টানে পড়লাম।
মেমেটিক্সকে, জেনেটিক্সের সাথে চমৎকার ভাবেই মিল দেখানো হয়েছে। জেনেটিক্সে লিথাল জিন নামক এক প্রকার জীন থাকে যা একই জীবের অন্য জীনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় বা ঐ জীবটিকে মেরে ফেলে। মেমেটিক্সেও মনে হয় এমন কোন ব্যাপার আছে যা যুক্তির কাছে আমাদের প্রচলিত কুসংস্কার গুলোকে হার মানায়। জেনেটিক্সের কাঙ্ক্ষিত মিউটেশন ঘটানোর জন্য যেমন নির্দিষ্ট তাপ, চাপ, আলো এবং অন্যান্য রেডিয়েশন ও ক্যামিকেল নিয়ামক হিসেবে দরকার হয়, তেমনই মেমেটিক্সের মিউটেশনেও মনে হয় যুক্তি গ্রহণ করার মত উপযুক্ত মানসিকতা, জ্ঞান, মোটিভেশন, অন্য মানুষের সাপোর্ট ইত্যাদি নিয়ামক দরকার হয়।
সুন্দর একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@হেলাল, মেমেটিক্সের কাউন্টার লজিক আগামী পর্বে দিচ্ছি ভাইয়া…
আপু বুঝলাম না তো :-Y
গ্রুপে ধরছি তোমাকে…খানিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে বুঝা যাবেনা এইটা বুঝছি :))
তবে ইদানিং মুক্তমনায় সায়েন্সের লেখার মহা-খরা চলতেছে…তাই এই তোমার এই সিরিজটা শুরু করার জন্য একটা গোলাপ দেয়া যাইতে পারে… :)) (F)
@টেকি সাফি, ভাইয়া, এইটা শুরু করার আগে শেষটা করেছি… পরের পর্ব অর্ধেক লিখে বসে আছি… এবং ঐটা আগামী মাসের প্রথম দিয়েই দিয়ে দিব… দৌড়ের উপর আছি… আশা বেশী কইরো না, তাড়াতাড়ি অন্যদের তাড়া দাও, বিজ্ঞানের লেখা চাই… 🙂