ঈশানচন্দ্র ঘোষের অনুবাদে জাতক পড়ছি কয়েকদিন ধরে। ছয় খণ্ডে তাঁর এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুপাঠ্য বলে রবিবাবু থেকে আলীসাহেব সবারই প্রশংসা লাভ করেছিল, আমারও পড়তে লাগছে চমৎকার। সাথে সাথে তাঁর টীকাগুলিও দারুণ। পড়তে পড়তে এর সপ্তম অংশ, ‘স্ত্রীবর্গ’-তে এসে আমি বেশ অবাকই হলাম। সেই প্রসঙ্গেই দু-এক-কথা বলব বলে এই শিরোনাম। কিন্তু তার আগে কাঠামো হিসাবে জাতক নিয়ে কিছু নবলব্ধ জ্ঞান ভাগ করে নিই।
(১)
গৌতম বুদ্ধের সময়কাল আনুমানিক ৫৬৩ – ৪৮৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। কিন্তু বৌদ্ধ কাহিনীর মতে, তিনি এর আগেও বহু বার মানুষ অথবা জীবজন্তুর রূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং প্রত্যেকবারই পরম জ্ঞান অর্থাৎ বোধি লাভ করে বোধিসত্ত্ব হয়েছেন। সেই অতীত বুদ্ধ’দের জীবনের থেকে নেওয়া শিক্ষামূলক কাহিনী-সংগ্রহ, যেগুলো জাতিস্মর বলে গৌতম বুদ্ধ এই জীবনে শিষ্যদের শুনিয়েছেন, তার সংকলন হল জাতক।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরেই রাজগৃহ (বর্তমান রাজগির)-তে রাজা অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি (সম্মেলন) আয়োজন করেন, যেখানে ত্রিপিটক অর্থাৎ বাণী-আচার-নিয়মাবলী ইত্যাদি একত্রিত করা হয় পালি ভাষায়। তার ১০০ বছর পরে, ৩৭০ খ্রী.পূ.র আশপাশে বৈশালীতে দ্বিতীয় সম্মেলনে এই বৌদ্ধগ্রন্থগুলি আলোচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে বর্তমান রূপ গ্রহণ করেছিল।
কলিঙ্গ যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে সম্রাট অশোক ২৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের সময়ে পাটলিপুত্র (পাটনা)-য় তৃতীয় সঙ্গীতি আয়োজন করেন। তার অল্প পরেই, ২৪১ খ্রী.পূ. নাগাদ তাঁর পুত্র মহেন্দ্র সমগ্র বৌদ্ধগ্রন্থ নিয়ে সিংহলে যান এবং সিংহলী ভাষায় সেগুলোর অনুবাদ করান। পরে জাতক ইত্যাদি বহু আলোচনা-গ্রন্থের পালি মূল নষ্ট হয়ে যায়। খ্রীষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে মগধ থেকে বুদ্ধঘোষ গিয়ে সেগুলিতে আবার পালিতে অনুবাদ করে আনেন। এর পরে সিংহলে মূল অনুবাদগুলি নষ্ট হয়ে গেলে তারা আবার বুদ্ধঘোষের অনুবাদ থেকে সেগুলিকে সিংহলী ভাষায় ফিরে অনুবাদ করে।
বুদ্ধঘোষ বা তাঁর সমসাময়িক কেউ জাতকের কাহিনীগুলির যে অনুবাদ করেছিলেন, সেগুলির সংকলন এবং সম্পাদনা করে ৫৪৭টি কাহিনী নিয়ে ড্যানিশ গবেষক Viggo Fausböll ১৮৭২ সালে জাতকার্থবর্ণনা নামে পালি ভাষায় প্রকাশ করেন। ঈশান ঘোষের বইটি তারই অনুবাদ।
(২)
এই ইতিহাস-আলোচনার একটা উদ্দেশ্য ছিল, এই দেখানো যে জাতক-কাহিনীগুলি অতি প্রাচীন কালেই লিপিবদ্ধ হয়ে পড়ে – বুদ্ধের বলা মূল কাহিনীর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে কিছু যোগ-বিয়োগ হয়ে থাকলেও তা খুব বেশিদিন পরে নয়। হিন্দু পুরাণগুলি যেমন অনেক সাম্প্রতিক কালেও পরিবর্তিত হয়েছে।
অবশ্য কোন জাতকগুলি প্রাচীনতম, বুদ্ধেরই বলা, আর কোনগুলি পরবর্তী সংযোজন, তা বলা কঠিন। তবে লেখক ভাব ও ভাষা বিচার করে কয়েকটিকে চিহ্নিত করেছেন। জাতকের মোট সংখ্যা কটি, তা নিয়েও কিছু দ্বিমত আছে। একই গল্প নানা জাতকে ভিন্ন নাম দিয়ে লেখা হয়েছে, আবার একাধিক গল্প একই জাতকে ঢুকিয়ে সেটাকে প্রায় উপন্যাসের মত বড় করে ফেলা হয়েছে।
তিনি উপক্রমণিকায় দেখিয়েছেন, যে সমসাময়িক অনেক লোকগাথা, বেদ-উপনিষদ, এমনকি মহাভারত-রামায়ণের গল্প থেকেও উপাদান নিয়ে সেগুলিকে শিক্ষামূলক রূপ দিয়ে এই জাতকগুলি লেখা। আবার জাতকের কাহিনী থেকে নিয়ে পরে লেখা হয়েছে পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ ইত্যাদি।
খ্রীষ্টজন্মের আগেই বৌদ্ধ দূতেরা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলেও ধর্মপ্রচারে যেতেন। সেই সময়ের ঈশপ ইত্যাদি গ্রীক আখ্যানেও জাতকের গল্পের ছায়া পাওয়া যায়। রাজা সলোমনের গল্প, আরব্য রজনীর গল্প, বাইবেলের গল্পেও।
উনি বলছেন, বেইরুটের কাছে খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে তৈরী যে বৌদ্ধস্তূপ আছে (এর রেফারেন্স আমি গুগল খুঁজে পাইনি, কেউ পেলে জানাবেন দয়া করে) তাতে নাকি নাম উল্লেখ করে করেই জাতকের গল্প খোদাই করা আছে। জাতকের প্রাচীনত্বের এটাও আরেক নিদর্শন।
(৩)
জাতকের প্রাচীনত্বের কথা এই দেখানোর জন্য দরকারি, যে এই কাহিনী বাস্তবিকই বুদ্ধের সময়ের এবং তার কয়েক শতাব্দী আগে-পরের সমাজচিত্র এবং মানসিকতা তুলে ধরে। যাঁরা নীতিনির্দেশক, তাঁদের ধ্যানধারণারও একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এ থেকে। তা চলুন, জাতকের দর্পণে দেখি, আজ থেকে দু-আড়াই হাজার বছর আগে, যীশু বা মহম্মদেরও পূর্বে, ভারতে মহিলাদের কেমন সম্মান করা হত।
সপ্তম অংশ অর্থাৎ স্ত্রীবর্গে ৬১ থেকে ৭০ এই দশখানা জাতক আছে। এর মধ্যে কেবল প্রথম সাতটিরই মূল উপজীব্য হল রমণী। সেগুলোই এক এক করে দেখি।
প্রথমটি হল অশাতমন্ত্র-জাতক (অশাত = অমঙ্গল)। এর শুরু হচ্ছে এইভাবে, “শাস্তা জেতবনে জনৈক উৎকন্ঠিত ভিক্ষুকে … বলিলেন, ‘দেখ, রমণীরা কামপরায়ণা, অসতী, হেয়া ও নীচমনা। তুমি এইরূপ জঘন্যপ্রকৃতি নারীর জন্য কেন উৎকণ্ঠিত হইলে?’ ” আহা, বিক্ষুব্ধ চিত্তকে সৎপথে আনার জন্য কী চমৎকার ভাষণ!
অবাস্তব গল্পটি সংক্ষেপে এইরকম। পুরাকালে বারাণসীতে বোধিসত্ত্ব এক বিখ্যাত গুরু হিসাবে জন্মেছিলেন। এক ব্রাহ্মণসন্তান তাঁর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে সংসারধর্ম শুরু করতে গেলে তার মা-বাবার মনে হয়, সংসার অনর্থের মূল, ছেলেকে সন্ন্যাস নেওয়াতে হবে। এবং তার মনে বৈরাগ্য জন্মাতে হবে স্ত্রীচরিত্রের দোষ দেখিয়ে। তখন তার মা তাকে বলে, ‘বাছা, তুমি অনেক বিদ্যা শিখলেও অশাতমন্ত্র নিশ্চয়ই শেখ নি। যাও, গুরুর কাছে ফিরে তা শিখে এস।’
বোধিসত্ত্ব শুনে বুঝলেন, অশাতমন্ত্র নামে বাস্তবে তো কোনো মন্ত্র নেই, নিশ্চয়ই এর মা তাকে স্ত্রীচরিত্রের দোষ শেখাতে চান। তা তখন তাঁর ১২০ বছর বয়সী বিধবা মা তাঁর কুটিরেই বাস করতেন, বৃদ্ধা জরাগ্রস্তা দৃষ্টিশক্তিহীনা মাকে তিনি নিজে হাতেই সেবাযত্ন করতেন। তখন শিষ্যকে তাঁর সেবার ভার দিলেন, আর বললেন, নিয়মিত তাঁকে সেবা করার সময় তাঁর রূপের প্রশংসা করবে। মা যা বলেন, শুনে এসে আমাকে বলবে।
“স্ত্রীজাতি এতই অসতী, হেয়া ও নীচাশয়া যে এত অধিকবয়স্কা বৃদ্ধাও কামভাবের বশবর্তী হইয়া” সেই তরুণের প্রতি ঢলে পড়লেন, এবং বললেন, যে আমিও তোমার প্রতি আসক্ত হয়েছি, কিন্তু আমার ছেলে খুব কঠোর স্বভাবের, তাই তাকে আমার ভয় হয় – তুমি তাকে মেরে ফেল, তাহলেই আমাদের মিলন হবে। শিষ্য গুরুকে হত্যা করতে অস্বীকার করলে তিনি বললেন, তুমি ব্যবস্থা কর, আমি নিজে হাতেই তাকে বধ করব।
এরপর বোধিসত্ত্ব নিজের বিছানায় নিজের এক কাঠের মূর্তি শুইয়ে শিষ্যকে বললেন, সে বৃদ্ধাকে গিয়ে খবর দিল। বৃদ্ধা কাঁপতে কাঁপতেই কুঠার হাতে গিয়ে তাতে আঘাত করলেন, কিন্তু কাঠের শব্দে বুঝতে পারলেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তখনই তাঁর মৃত্যু হল। এই ঘটনা দেখিয়ে বোধিসত্ত্ব শিষ্যকে ব্যাখ্যা করলেন, যে নারীজাতির অসতীত্বই অশাতমন্ত্র।
(৪)
এর পর আসে অন্ধভূত-জাতক। এর থীম হল, “রমণীরা নিতান্ত অরক্ষণীয়া”, এবং গল্প এইরকম – প্রাচীনকালে বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তাঁর পুরোহিতের সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই জিততেন। সেটির অংশবিশেষ:
“পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধর্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”
তো এই শুনে পুরোহিত প্ল্যান কষে, কখনও অন্য পুরুষ দেখে নাই এমন একটি সদ্যোজাত কন্যা এক দুঃখিনী নারীর থেকে কিনে এনে তাকে প্রতিপালন করতে লাগলেন, এবং বয়সে পড়তেই তাকে বিয়ে করলেন। এরপর থেকে রাজা ওই গানটি গাইলেই পুরোহিত বলতেন, “কেবল আমার গৃহিণী ছাড়া।” অতএব এবার থেকে তাঁরই জয় হত।
এই দেখে রাজা (তিনি কিন্তু বোধিসত্ত্ব, খেয়াল রাখবেন, তাও প্রত্যেকবারই এই কাজ করান) এক ধূর্তকে টাকা দিয়ে বললেন এই নারীর চরিত্রনাশ করতে। সে ওই বাড়ির এক দাসীর মন ভিজিয়ে তার মাথার ফুলের ঝুড়িতে লুকিয়ে (!) ওই বাসায় ঢুকে পুরোহিতের স্ত্রীর সঙ্গে প্রমোদে লিপ্ত হল। পরে ছল করে ব্রাহ্মণের চোখ বেঁধে দুজনে তাঁকে প্রচুর পেটাল।
এরপর তিনি প্রাসাদে পাশা খেলতে গিয়ে ওই কথা বলেও হেরে গেলেন। তখন রাজা তাঁকে জ্ঞানদান করে বললেন, তোমার বউয়েরও চরিত্রটি গেছে। (নিজেই একাজ করিয়েছেন সেটা হয়ত চেপে গেলেন।)
পুরোহিত যখন বাসায় ফিরে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন সে প্ল্যান অনুযায়ী দাবি করল, আমি সতী, আসুন সবার সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছি। আর সেই লোক ভিড়ে লুকিয়ে ছিল, দৌড়ে এসে মহিলার হাত ধরে বলল, না না, এই পুরোহিতের মাথা খারাপ, আপনি এমন করবেন না। তখন বউ এই অজুহাত দেখিয়ে বলল, এর আগে কোনো পরপুরুষ আমায় ছোঁয় নি, কিন্তু এই যে এখন আমার হাত ধরে ফেলল, আমি তো আর অগ্নিপরীক্ষা দিতে পারব না। তবুও আপনার সন্দেহ মিথ্যা।
তখন এতে না ভুলে ব্রাহ্মণ তাকে বাড়ী থেকে দূর করে দিলেন।
(৫)
এর পরের তক্ক-জাতক এর মরাল হল, “স্ত্রীজাতি অকৃতজ্ঞ ও মিত্রদ্রোহী”। তার গল্প –
বারাণসীতে এক ব্যবসায়ীর এক বদমেজাজি মেয়ে ছিল, নাম দুষ্টকুমারী। সে তার দাসীদের খুব অত্যাচার করত। তাই একদিন গঙ্গায় নৌকা করে বেড়াবার সময় দারুণ ঝড় উঠলে দাসীরা তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে ফিরে এসে বলে, কুমারী ডুবে গেছেন।
এদিকে বোধিসত্ত্ব নদীতীরে কুটির বানিয়ে তপস্যা করতেন, তিনি মেয়ের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে আনলেন। মেয়েটি তাঁকে দেখে ভাবল, “প্রণয়পাশে আবদ্ধ করিয়া এই তপস্বীর চরিত্রভ্রংশ ঘটাইতে হইবে।” তার প্রেম-ছলনায় ভুলে তিনি সত্যিই সাধনা ছেড়েছুড়ে তাকে বিয়ে করে এক গ্রামে গিয়ে বসত করলেন। কিন্তু অচিরেই তাঁর অনুপস্থিতিতে গ্রামে ডাকাত পড়ল, ডাকাতসর্দার মেয়েটিকে লুঠ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করল।
কুমারী ভাবল, আমি এখানে খুবই সুখে আছি, কিন্তু আমার আগের স্বামী আমায় খুঁজতে এখানে চলে এলে গণ্ডগোলের সম্ভাবনা। তাই তাঁকে এখানে আনিয়ে খুন করাতে হবে। সে একজনকে দিয়ে খবর পাঠাল, বোধিসত্ত্ব সেখানে এলে তাঁকে খাইয়েদাইয়ে লুকিয়ে রাখল, বলল আমরা রাত্রে পালাব। এদিকে সন্ধ্যায় ডাকাতসর্দার এলে সে তাঁকে ধরিয়ে দিল, অনেক মেরেধরে সর্দার তাঁকে ঝুলিয়ে রাখল।
সারারাত তিনি “অহো! কি নিষ্ঠুরা, কি অকৃতজ্ঞা, …” বলে আর্তনাদ করতে লাগলেন। সেই শুনে সকালে সর্দার ভাবল, এ লোক “মাগো বাবাগো” না বলে এইসব বলে কেন? ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি সব শোনালেন। তাতে সেও নারীজাতির সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে কুমারীকে দুটুকরো করে ফেলল, আর বোধিসত্ত্বের সাথে মিলে তপস্যা করতে চলে গেল।
(৬)
পরেরটি হল দুরাজান (দুর্জ্ঞেয়)-জাতক। এই ছোট্ট গল্পটার বক্তব্য হল, “রমণীরা যেদিন দুষ্কার্য্য করে সেদিন স্বামীর অনুবর্ত্তন করে, দাসীর ন্যায় বিনীত হইয়া চলে; কিন্তু যেদিন দুষ্কার্য্য করে না, সেদিন তাহারা মদোদ্ধতা হইয়া স্বামীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।” এর মধ্যে একটি কবিতা আছে –
“ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কি আসে যায়?
নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”
তার পরের ছোট গল্পটি হল অনভিরতি-জাতক। এর বক্তব্য এর কবিতাটিতেই স্পষ্ট –
“নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।
তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জন।”
তার পরে মৃদুলক্ষণা-জাতক। এটিতে কামভাব-সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বোধিসত্ত্ব তপস্বী হিসাবে এক রাজার কাছে ভিক্ষা করতে এলে রাজা রাণীকে তাঁর পরিচর্যার ভার দেন। কিন্তু মৃদুলক্ষণা নামের ওই রাণীকে দেখে তাঁর মধ্যে কামভাবের উদয় হয়। এই শুনের রাজা তাঁকে রাণীকেই দান করে দেন। কিন্তু এরপর রাণীর কথায় তিনি রাজার থেকে পরপর বাসগৃহ, শয্যা, সজ্জা ইত্যাদি চেয়ে আনতে লাগলেন। অবশেষে সেই বিছানার রাণীর সঙ্গে শুলে’পর তিনি যখন বোধিসত্ত্বের দাড়ি ধরে টেনে “তুমি না শ্রমণ?” বলে প্রশ্ন করেন, তখন তাঁর চৈতন্য হয়, তিনি মহিলাদের অনন্ত চাহিদার কথা ভেবে রাণীকে ফিরিয়ে দিয়ে আবার হিমালয়ে ফিরে যান।
(৭)
উৎসঙ্গ-জাতক গল্পটা বরং অন্যরকম লেগেছে। এর প্রথম অংশে বলা হচ্ছে, “স্বামীই নারীদিগের প্রকৃত আচ্ছাদন।” –
“নগ্না জলহীনা নদী, নগ্ন অরাজক দেশ,
বিধবা রমণী নগ্না, কি বলিব তাহার ক্লেশ?”
কিন্তু গল্পটার মরাল একটু আলাদা। বোধিসত্ত্ব যখন কোশল রাজ্যের রাজা, তখন এই নারীর অনুপস্থিতিতে তার স্বামী-পুত্র-ভ্রাতাকে রাজপেয়াদারা চোর ভেবে ধরে নিয়ে আসে। তখন সেই মহিলা রাজার কাছে গিয়ে “আমায় আচ্ছাদন দাও” বলে কান্নাকাটি করে। রাজার আদেশে যখন লোকে তাকে একটি কাপড় দিতে যায়, তখন সে ওই কবিতাটি বলে এবং ব্যাখ্যা করে, যা শুনে রাজা খুব প্রসন্ন হন।
তখন তিনি বলেন, এই তিনজনের একজনের প্রাণ ভিক্ষা দিতে পারি, কাকে তা তুমি বেছে নাও। সে তখন বলে, স্বামী গেলে আবার স্বামী পাব, সন্তানও আবার হবে, কিন্তু আমার বাবা-মা মারা গেছেন, তাই ভাই গেলে তো ভাই আর পাব না। আপনি ওকেই মুক্তি দিন। এই থিয়োরিতে চমৎকৃত হয়ে রাজা তিনজনকেই মুক্তি দেন।
তা, লজিকটা কিন্তু সত্যিই বেশ – সেলফিশ জিন থিয়োরিও কিন্তু ভাবলে পর এমনই কিছু বলবে!
(৮)
গল্পগুলো পড়ে আমি যা বুঝলাম, তা এই স্ত্রীবর্গের শুরুতে ঈশান ঘোষও বলছেন, “এই সকল উপাখ্যানে নারীজাতির প্রতি উৎকট ঘৃণা প্রদর্শিত হইয়াছে। কামিনী ও কাঞ্চনের অপকারিশক্তি সম্বন্ধে পরষ্পর বিবদমান ধর্ম্মমতেরও ঐক্য দেখা যায় বটে, কিন্তু তাহা বলিয়া অন্য কোন শাস্ত্রকার সমগ্র নারী সমাজকে এত ঘৃণার্হ বলিয়া নির্দ্দেশ করেন নাই।”
এর পর খানিক অ্যাপলোজিস্ট ভাবে তিনি বলেছেন, পরের দিকে বুদ্ধদেব কিন্তু নারীজাতির প্রতি অনেক উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। ভিক্ষুণী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা, অনেক উপাসিকাকে বিশেষ সম্মান দেওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই সে নিয়েও একটু খোঁজ করতে হল।
গৌতম বুদ্ধের মাসী, বিমাতা এবং ধাত্রী, মহাপ্রজাপতি গৌতমী যখন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, তখন বুদ্ধ প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ মহিলারা বিদ্যাবুদ্ধিতে পুরুষদের সমতুল্য নয়, তারা সংঘে এসে পড়লে শৃঙ্খলার সমস্যা ঘটবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু পরে যখন একবার বুদ্ধ বৈশালীকে অবস্থান করছিলেন, তখন গৌতমী আরো অনেক নারীদের সঙ্গে সেখানে গিয়ে আবারও সেই অনুরোধ করেন। এবার প্রিয় শিষ্য আনন্দের উপরোধে বুদ্ধ সম্মত হন তাঁদের গ্রহণ করতে। (কারণ আনন্দের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা অস্বীকার করেন নি, যে নারীরাও নির্বাণ লাভ করতে পারে।) অতএব এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠাও খুব আগ্রহের সঙ্গে করেন নি তিনি।
তাই ভিক্ষুণীদের জন্য আরো বেশি নিয়মের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই ধর্মে। (এ নিয়ে মতভেদ আছে, যে নিয়মগুলি বুদ্ধেরই বানানো, নাকি পরবর্তীকালের।) ভিক্ষুদের জন্য বিনয়পিটকে চারটি ‘বিনয়’ বা নিয়ম আছে, যাতে বলা হয়েছে কী কী অন্যায় কাজ করলে তাদের সঙ্ঘ থেকে বহিষ্কার করা হবে – যৌনাচার, চুরি, হত্যা, মিথ্যা অহঙ্কার।
ভিক্ষুণীদের জন্য কিন্তু আছে উপরি আরো চারটি –
কোনো কামাতুর পুরুষকে তাঁর কাছে আসবার বা স্পর্শ করবার অনুমতি দিলে,
কোনো কামাতুর পুরুষ তাঁদের অঙ্গ স্পর্শ বা মর্দন করলে,
দলের কোনো ভিক্ষুণী অন্যায় আচরণ করলে অন্য কেউ সে সংবাদ গোপন রাখলে,
কোনো নির্বাসিত ভিক্ষুর সঙ্গ নিতে কোনো ভিক্ষুণী আগ্রহী হলে,
তাঁদের ধর্ম থেকে পতন হবে।
অতএব কাম-সংক্রান্ত ফ্যাসাদ আসতে পারে অনুমান করেই তাদের আরও কঠোর শাসনে বেঁধে ফেলতে হবে, কারণ নারীই কামভাব ইত্যাদি পাপের মূলে।
(৯)
তাহলে বুদ্ধের দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্মের অনুশাসন, এবং আখ্যানগ্রন্থ থেকে সে সময়ের বৌদ্ধ ধর্মে এবং সমাজে মহিলাদের কেমন ‘সম্মানের’ চোখে দেখা হত তা ভালই বোঝা যাচ্ছে। তবে এখনকার বুদ্ধ-অনুগামীদের সমাজে অবশ্য মহিলাদের বিরুদ্ধে বায়াস বা ভায়োলেন্স তেমন দেখা যায় না বলেই আমার ধারণা। তার একটা কারণ হয়ত হতে পারে বহু অতিরিক্ত আখ্যান-আড়ম্বর-পূজা-নিয়মনীতি-সম্বলিত মহাযান মতের উদ্ভব। যাহোক, অহিংস, ‘নরম’ বৌদ্ধমতের মধ্যে এরকম একটা কড়া শভিনিস্টিক মনোভাব দেখে আমি বেশ অবাকই হয়েছি। তবে সেসময়ের সমাজে তো মহিলাদের সম্পর্কে বিশাল সম্মানের আবহ কিছু ছিল না, তাই ওরকম হওয়াটাই হয়ত আসলে স্বাভাবিক।
(১০-সংযোগ)
এই কথাটা আমার মনে এলেও আগে লেখা হয়নি – কেউ বলতেই পারেন, জাতকে কি আর ভালো মহিলাদের কথা নেই? তা আছে, ওই উৎসঙ্গ-জাতকই যেমন। বা গ্রাম্যবালিকা সুজাতা, যে বুদ্ধের প্রাণ না বাঁচালে এই ধর্মটাই থাকত না। তবে, মহিলাদের প্রধান মর্যাদা দিয়ে কোনো জাতক লেখা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না, ঈশানচন্দ্রও এমন কিছু উল্লেখ করতে পারেন নি। তা ছাড়া, সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই যে, কোনো গল্পে একজন ভালো মহিলা থাকলেও কিন্তু সেটাকে বিস্তার/জেনারেলাইজ করে “রমণীরা নিতান্ত দয়াশীলা, গুণবতী” এরকম কিছু কখনই বলা হয় নি, উল্টোটা বহুবার করা হলেও।
(১১)
লেখার পর, প্রায় আফটার’থট হিসাবেই (এর জুতসই বাংলা কী হবে?) মনে হল, যে প্রাচীন হিন্দু সমাজে (বা অন্যত্রও) স্ত্রী নেহাত বন্ধ্যা বা অসতী না হলে তাকে পরিত্যাগ করা বড় নিন্দনীয় কাজ। অথচ এটাই একমাত্র পরিস্থিতি যেখানে পতিব্রতা স্ত্রী, নাবালক সন্তান, বৃদ্ধ পিতামাতা-কে ফেলে গটগটিয়ে চলে যাওয়া বরং প্রশংসনীয় কাজ বলে বিবেচিত হয় – যখন কেউ পরিবার-সমাজ ত্যাগ করে ‘সত্যের’ সন্ধানে সুদূর বনে বা আশ্রমে তপস্যা করতে যায়। কী অদ্ভুত মিম!
আর এই মিমের বশবর্তী হলে যেহেতু প্রজননের পথ একেবারে সংযমের তালাচাবি এঁটে বন্ধ করে দিতে হয়, তাই এটা কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের ঠিক বিপরীতপন্থী! অথচ কি দ্রুত এই দর্শন সারা দুনিয়ার মানুষের মনে বসত করে নিয়েছে!
——————————————————
**** শুরুর ছবিটি অজন্তা’র প্রথম গুহা-বিহারে কৃষ্ণা-রাজকুমারীর চিত্র।
কিছু লিঙ্ক:
Women in Buddhism
Vinaya – Monks And Women, Nuns And Men
Damming the Dhamma: Problems with Bhikkhunīs in the Pali Vinaya
Can There Be Buddhist Gender Equality?
বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের মধ্যে রাগের পরিমাণ কম দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়, যেমনটা হয়েছিলাম আমি নিজেই। কিন্তু এই লেখা পড়ে কিছুটা তুলনামূলকভাবে হলেও বলাযায় যে, সনাতন ধর্ম এর থেকে পুরাতন হলেও কিছুটা সম্মান নারীদেরকে দিয়ে গেছে… অথচ এর পরে এসেও বুদ্ধ সেটা করে যেতে পারেনি। যাহোক, চমৎকার লেখা। (Y)
নোটটি খুবই সুলিখিত। এটি অনেকবার পড়েছি, বার বার পড়েই চলেছি, যদিও মন্তব্য করছি অনেক দেরীতে।
সমস্ত ধর্মই চরম নারী বিদ্বেষী, পুরুষতান্ত্রিক, বুদ্ধ ধর্মও তাই। উপরন্তু এটি যেহেতু সন্ন্যাস ধর্ম, তাই এটি নারীকে নীচ প্রাণী [কামের আধার?] হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কৌস্তুভ’কে সবিশেষ সাধুবাদ, তিনি শুধু বুদ্ধ ধর্মে নারীর অবস্থানই ব্যাখ্যা করেননি, নানান টিকা ভাষ্যে প্রাচীন ভারতের সমসাময়ীক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেছেন। ব্লগ বারান্দায় বুদ্ধ ধর্মে নারীর অবস্থান নিয়ে এমন আদ্যপান্ত নোট আগে পড়িনি।
ঈশানচন্দ্র ঘোষের অনুবাদে “জাতক” নামের মূল বইটি পড়ার প্রবল আগ্রহ হচ্ছে।
অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
দিদিমনি রাখি !! ছোঁয়া ছুয়ির ব্যাপারে ধর্ম গত ব্যাপার থেকে ও প্রত্ন তাত্ত্বিক ব্যাপার টা লক্ষ্য রাখা আপনার উচিত ছিল !! তবে তো আমাদের জাদু ঘরে রাখা সব কিছু ছুয়ে ছুয়ে দেখতে হতো !!! !!
জাতক আসলে কোন ধর্ম গ্রন্থ নয় !! হিত উপদেশ সংবলিত বচন মাত্র !! বৌদ্ধ মতবাদের মূল ভিত্তি অহিংসার উপরে দাড় করানো ! যে মানুষ কি না ষড়ঋপু কে দমন করতে পারে !! তার কাছে নারী পুরুষ কোন লৈঙ্গিক ভেদ ছাড়া জ্ঞান গত নাই !! বুদ্ধ নিজে ঋপুর দমন করেছিলেন ! কিন্তু হয়তো স্থুল বুদ্ধির অনুসরণ কারিদের কে উপদেশ দিতে ! উপরোক্ত জাতক গুলি প্রয়োগ করেছিলেন !! আমার মতে তিনি যুক্তি বাদ কেই অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছিলেন !! সহিংসতা নয় !! এদিক দিয়ে তিনি প্রশংসার যোগ্য !! দশ পারমি পুরন করে নির্বাণ লাভ এর মূল লক্ষ্য ! গৃহী থেকে সংসারী হয়ে ও যে নির্বাণ লাভ হয় ! তা তিনি বলেছিলেন !!গৃহীদের মূল ভিত্তি পঞ্চ শীল এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পালন !! এই সহজ বোধ্য দুটি জিনিস যারা জটিল করে বোঝে তাদের জন্যই এত প্যাঁচা প্যাচি !! ! গৌতম বুদ্ধ নিজেই বলেছিলেন, জগত কক্ষনো বুদ্ধ ( জ্ঞানী ) শুন্য থাকবে না !! ভ্রাতা উপরোক্ত সকল জ্ঞানী ভ্রাতা ভগিনী গণ আপনারা গৌতম বুদ্ধ না হলে ও তার চেয়ে কিঞ্চিত উচ্চ মার্গের বুদ্ধ বটে !! ( যেহেতু আপনারা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ হিসেবে অনেক জানেন )আপনারা নির্বাণ বা অপরাপর ধর্মের ন্যায় স্বগ লাভ থেকে ও আরো বড় কিছু লাভ করবেন বৈকি !!!!আপনাদের বিজ্ঞ বিচক্ষণতা সৌরভ কুসুমের মত ছড়িয়ে পড়ুক !!
চমৎকার বিশ্লেষন এবং বেশ পরিশ্রম করে লেখা। কৌস্তভের লেখাগুলোতে তার নিজের বিশ্লেষন গুলো চিন্তার খোরাক যোগায়। উইকেন্ডে পড়বো বলে জমিয়ে রেখেছিলাম।
বৌদ্ধ ধর্মের মূল নীতি, ‘কামনা সাধনার অন্তরায়’ —-তাই জানতাম–নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে যা সমান ভাবেই প্রযোজ্য। কিন্তু এই নারী বিদ্বেষী ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।
বুদ্ধের জীবনে নারীরা কি ছিলোনা?
@মৌনতা, ধন্যবাদ। ‘কামনা সাধনার অন্তরায়’ নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে সমান ভাবেই প্রযোজ্য। কিন্তু কামনার উৎস হিসাবে মূল দায় হচ্ছে নারীর। পুরুষ সেই আগুনের পতঙ্গ। এইরকমই কথা বুঝলাম।
জাতক, বুদ্ধ, বোধিসত্ব নিয়ে বিভিন্ন জনের মন্তব্য পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। কারো কারো মন্তব্য পড়ে আশাবাদী হই, আবার কারো কারো মন্তব্য পড়ে সন্ধেহ হয়, বুদ্ধ নারী বিদ্ধেষী ছিলেন না, সে সময়ের সামাজিক অবস্থায় নারীদের কতটুকু সমঅধিকার দিয়েছিল থেরী গাথা নামক বইটি পড়লে বুঝা যায়। আশা করি সংগ্রহ করে পড়ে নিবেন।
@অরূপ, মন্তব্যরাশি পড়ে আপনার কী মনে হল তা বললেন, লেখাটা পড়ে কী মনে হল তা বললেন না তো!
বইটা সম্বন্ধে আরেকটু বিশদে জানাতে পারেন?
দারুন লাগল কৌস্তুভ!
বুদ্ধের দর্শন আমার ভালোই লাগত…ধর্ম সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি নিশ্চিত ছিলাম কোন ধর্মই নারীকে সম্মান দেয় নি…
বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কে তেমন জানা ছিল না।বৌদ্ধ মন্দিরে একবারই ঘুরতে গিয়েছিলাম।সেখানে বৌদ্ধ মূর্তি আমাদের ধরতে মানা করেছিল।মহিলাদের ছোয়া লাগলে নাকি মূর্তি অপবিত্র হয়ে যাবে! :-X
সেইসময়েই বুঝে গিয়েছিলাম বুদ্ধ নিজেও একই গানের গায়ক :-Y
আমার ধারনা ছিল বুদ্ধ নারী বিবর্জিত হয়ে নারী সম্পর্কে হয়ত সর্বদাই উদাসীন ছিলেন।কিন্তু আজ জানলাম তিনিও ছিলেন নারী বিদ্বেষী।
অভিনন্দন। (Y)
@রাহনুমা রাখী, ধন্যবাদ।
বলেন কী! ব্যাটারা এতদূর গেছে? এই ব্যাপারটা এখন এরাও ধরেছে, জানতাম না তো। কোন বৌদ্ধ মন্দির, বলুন না, মনে থাকলে।
@কৌস্তুভ,
দুঃক্ষিত দেরিতে রিপ্লাই দেয়ার জন্য।
এটা কক্সবাজারে।খুব সম্ভবত রাখাইন সম্প্রদায়ের মন্দির ছিল ওটা।আমি গাইডকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু তিনি জবাব দিতে পারেন নি।শুধু এতোটুকুই বলেছে ধর্মে নিষেধ আছে।গাইডটা কম বয়সী ছিল।
রাখাইন সম্প্রদায়ের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আপনার কাছে শুনে গুগল করে দেখলাম। তারা নাকি বৌদ্ধ ধর্মের এক প্রাচীন শাখা। তবে তাদের সামগ্রিক অবস্থার কথা শুনে খারাপই লাগল।
শেষ করে দেই।
লেখা বেশ ভালো হয়েছে। ডেব্যুতে ডবল অর্থাৎ, হাজার বার পঠিত এবং সেঞ্চুরি মন্তব্যের সংখ্যা সত্যিই এক বিরল নজির বটে।
তাহলে বুদ্ধ এতো শ্রদ্ধেয় হলেন কী করে বা এখনো তাঁর ধর্মমত মোটামুটি এতো নিরীহ হিসেবে খ্যাতি পেলো কেন?
সত্যিকার অর্থে বৌদ্ধ ধর্ম কিন্তু জীবনবিরোধী ধর্ম। এটা নরেন দত্ত বুঝেছিলেন হিন্দু ধর্মের প্রচারক বলে, আর এখানে অনেক বুঝবেন বিবর্তন বোঝেন বলে। একটা সময়ের বা এলাকার সব পুরুষই (এবং নারীও) যদি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, তবে জীবনের ধারা ওখানে তো শেষই; ওই লোকালয়ের সামগ্রিক ভবিষ্যতই অন্ধকার। কারণ, সন্তান জন্ম নিচ্ছে না এবং সামাজিক বিবর্তনও হচ্ছে না। না থাকবে গবেষণার প্রণোদনা বা না থাকবে অর্থনৈতিক উন্নতির কোন প্রচেষ্টা। কারণ, কাজ মানে তো স্রেফ ভিক্ষাবৃত্তি!
তাহলে এর দুনিয়াজোড়া জনপ্রিয়তা কেনে? এই বিশ্লেষণ ব্যাপক। ক্ষুদ্র মন্তব্যের আওতায় পড়বে না তা। শুধু এটুকুই বলা যায়, জপ-তপ, সন্ন্যাসাদি এতদঞ্চলে অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিলো এবং শ্রদ্ধেয়। বুদ্ধ সে-পথেই গেছেন মাত্র। রবীন্দ্রনাথ যে-কারণে পাশ্চাত্যে পরিচিত ও শ্রদ্ধেয় হন তাঁর কবিতার চাইতেও বেশি করে ‘মিস্টিক কবি’ হিসেবে, এমনকি নোবেলের জন্যেও বিবেচিত হন, তেমনি করেই রবার্তো বাজ্জো বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন বা ম্যাডোনা চর্চা করেন কাব্বালার কিংবা টম ক্রুজ আশ্রয় নেন সায়ান্টোলজিতে। তাঁরা ভোগে ক্লান্ত, তাই নতুন পথ খোঁজেন। কিন্তু, আমরা নিম্নবর্গীয়েরা আগে তো সুযোগ পাই, কা পরে অন্য কথা। তাই, আপাতত সব কাজকাম ছেড়ে, ঘরের পরের দায়িত্ব ফেলে “রাজপুত্র পরিয়াছে ছিন্নকন্থা, বিষয়ে বিবাগী” হয়ে বেরুনোর “সুযোগ যে নেই, সুযোগ যে নেই।” তাই তো সৈয়দ মুজতবা আলী ‘দেশে-বিদেশে’-তে আলোচনাপ্রসঙ্গে নিয়ে আসেন কেন এখানটায় (গান্ধার প্রদেশে) বৌদ্ধধর্ম ব্যর্থ হলো এবং কেন ইসলাম সাফল্য লাভ করলো, তার বিবরণ। ইসলাম অন্তত অনেক জীবনমুখী, যদিও অনেকক্ষেত্রে ভুলভাবে। তবে বৌদ্ধধর্ম মানসিক শান্তি কতটা দেয় জানি না, অন্তত কেউ কেউ নিশ্চয় পান, কিন্তু মানবসভ্যতার জন্যে এটা বেশ একটু স্লো পয়জনই বটে। মজার ব্যাপার হলো, বৌদ্ধ ধর্ম বৈজ্ঞানিক না হলেও এখানে ‘বিজ্ঞান’ শব্দের ব্যবহার আছে এবং তা চেতনা বা মন অর্থে। বুদ্ধ নিজেও কিছু বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন না! :lotpot:
বিপ্লব পালের মন্তব্যে কিছু মনে না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। উনি সার্থকনামা সাহসী পুরুষ বটে, আমৃত্যু বিপ্লবী। তিনি সবার সাথেই লড়াই করতে প্রস্তুত এবং করেনও। তিনি বিবর্তনলেখকের সাথে বিবর্তন নিয়ে লড়েন; সমকামিতা সম্পর্কে যিনি লেখেন, তার সাথে লড়েন সমকামিতা নিয়ে; কমিউনিস্টদের সাথে লড়েন কমিউনিজম নিয়ে; নারীদের সাথে লড়াই করেন কেন নারী নির্যাতনে ধর্মকে টেনে আনা হলো এ-নিয়ে; বায়োলজিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনো করছে এমন লোকের সাথে লড়তে থাকেন চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ওষুধের বিরুদ্ধে; উঠতি প্রোগ্রামারকে ভুল ধরিয়ে দেন লিনাক্স নিয়ে-এমনি অঢেল অনেক কিছুই। :guru: :guru: :guru:
তবে, মাঝেমাঝে ধরা খেয়েও যান আর কি অন্য মহাপুরুষদের মতোই। :-Y :-Y :-Y
সর্বভূতে তিনি সমজ্ঞান করেন। তাই, সবাই তাঁর কাছে ‘তুমি’, সে যেই হোক। মাঝেসাঝে অবশ্য কাউকে কাউকে ভুলবশত বা স্নেহবশত ‘আপনি’ বলেন। দুঃখ যে, তিনি আমায় স্নেহ করেন না। আপনি যে-কোন ব্যাপারেই হোক, তাঁর নিশ্চিত মতামত এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবেন। অপেক্ষা এবং দর্শনের জন্যে কিঞ্চিৎ সময় রাখুন।
মুক্তমনায় স্বাগতম আবারো।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
চমৎকার বিশ্লেষণ। বুদ্ধের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার প্রতি যা একটু শ্রদ্ধা-বিশ্বাস ছিল আজ তা’ও শেষ হয়ে গেল।
ওয়াও! দিছেন বাঙ্গীটা আস্তই ফাটাইয়া।
বিপ্লব দা সকল ধর্মেই ভাল নতুন কিছু শেখার পান। বলেছিলাম ইসলামে কী পেলেন? এরপরে এতোকিছু আলোচনা হলো। ইসলামের কথা উঠলেই বিপ্লব দা বলবেন- ”ইসলাম নৃতাত্বিক কারনে আসা একটি সামাজিক আন্দোলন, মুহাম্মদ সমাজ সংস্কারক।” ব্যস, বনি কুরাইজা গনহত্যা যায়েজ হয়ে গেলো? এসব নিয়ে আলোচনায় বিপ্লব দা প্রায়ই উদাহরণ দেন জালালুদ্দীন রূমী আর স্বামী বিবেকানন্দের। ইচ্ছে জাগে এদের কর্মজীবন, তাদের জীবনদর্শন নিয়ে বিস্তারিত জানার।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আপনার মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
১. পরিসংখ্যানব্যবসায়ী বলে ডবলের দিকে নজর আমারও ছিল, তবে সেটা কেবলই ফিনোটাইপ, জিনোটাইপ হচ্ছে লেখার মান। সেটায় মুক্তমনার পাঠকরা যে সন্তুষ্ট, এতেই আমি খুশি।
২. চেরি-পিকিং এর অভিযোগের কথা ভেবেই, ৮-১০ অংশে আমি যে আলোচনা করেছি, তাতে এগুলোকে ৪-৫টি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ হিসাবে না দেখিয়ে, প্রকৃত মনোভাবেরই যে প্রতিনিধি সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। অন্য একটি খণ্ডে ঈশানচন্দ্র স্ত্রীবর্গের বাইরের আরো দুতিনটি জাতককেও ঘৃণাপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।
পুরুষদের, এমনকি খোদ বোধিসত্ত্বেরই, নক্কারজনক আচরণের উদাহরণ এই লেখায় এসেছে। তা থেকে কিন্তু নারীদের চরিত্রের মত কোনো জেনারেলাইজেশন টানা হয়নি। এই কথাটা পোস্টে উল্লেখ করলে ভালোই হত, ঠিকই বলেছেন।
এরও বাইরে জাতকের উপর ‘আরো কিছু বিশ্লেষণ’ কিছু করা যেত কি না, আমি নিশ্চিত নই। পরিসরও সংক্ষিপ্ত।
৩. “বুদ্ধ নিজেই ঠিক বিশ্বাসী ছিলেন না পুনর্জন্মে।” সিদ্ধার্থ গৌতমের আর পুনর্জন্ম হবে না, এ কথা আমিও পড়েছি, কিন্তু তার মানে যে উনি ওই আইডিয়াটিকেই অস্বীকার করছেন, না নয় মনে হয়। আপনি এই বিষয়ে কোনো বিশ্লেষণ পেলে জানাবেন।
৪. আপনি বুদ্ধের উপর একটি সুন্দর আলোচনা করেছেন। কিছু পাঠক আমার এই লেখাটির বক্তব্য যে ওই সময়ের সমষ্টিগত ধারণার সমালোচনা, তা ছাড়িয়ে স্বয়ং বুদ্ধের চরিত্র নিয়ে সমালোচনার সন্ধান করছিলেন। তাঁদের জন্য আপনার আলোচনাটি সহায়ক হবে।
খুব সহমত।
কৌস্তুভকে প্রথমেই স্বাগতম এবং শুভেচ্ছা। মুক্তমনায় তাঁর মতো অন্য আরো মুক্তচিন্তার লেখকেরা আরো আসবেন এবং তাঁদের নানামুখিন জ্ঞানের ও বিশ্ববীক্ষার চর্চায় এই অঙ্গন ঋদ্ধ করবেন, এটা আশা করি এর সাথে জড়িত সবাই কামনা করেন।
সচলায়তনে কৌস্তুভের নানান লেখার আমি নিয়মিত এবং মুগ্ধ পাঠক বটে। আশা করি, তিনি এখন এখানটায়ও নিয়মিত হবেন। সচলায়তনের কিছু অলিখিত আপত্তির শিকার তিনি এখানটায় হবেন না, এমন আশ্বাস দেওয়াই যায় নিজে এখানকার কর্তাব্যক্তি না হয়েও।
লেখাটার ব্যাপারেই আসা যাক, অবশ্য দেরিতেই এলাম। অনেক আলোচনা হয়ে গেছে, প্রাসঙ্গিক আলোচনার অনেক ডালপালা বেরিয়ে গেছে। এমনকি, সেগুলোর কোন কোনটা নিজেই আলাদা পোস্ট/লেখা হওয়ার দাবি রাখে। তা ভালো, দ্বন্দ্বেই বিকাশ।
কৌস্তুভের লেখায় মূল যে-জিনিসটা এসেছে, সেটা হচ্ছে জাতকে (অথবা, বৌদ্ধ মানসিকতায়) নারীর অবনমনের ছাপ। প্রসঙ্গত তিনি বৌদ্ধ ধর্মের আরো কিছু ঐতিহাসিকতা তুলে এনেছেন এবং সামগ্রিকভাবে এই ধর্মে নারীদের অবস্থান নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনায়ও করেছেন।
লেখার শিরোনামটা ‘জাতক ও কামিনী’। লেখকের নারীর এই প্রতিশব্দের ব্যবহারটি ইঙ্গিতপূর্ণ। তিনি পাঠককে পড়ার আগেই একটি পূর্বধারণা দিতে চাইছেন যেন জাতকে নারীর নেতিবাচকতার ব্যাপারটি সম্পর্কে তাঁরা অবগত হন এবং লেখাটা পড়তে পড়তে আরো হবেন। সেদিক থেকে মনে করি, জাতকসংক্রান্ত আরো কিছু বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে গেলে লেখাটা আরো পূর্ণতা পেতো। ঈশান ঘোষের জাতকসংকলন বিশাল বপুর। সেখান থেকে আরো আলোচনা আসতেই পারতো নারীদের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে। নইলে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বৌদ্ধ ধর্মে নারীদের অবমাননা প্রদর্শনের জন্যে ‘চেরি-পিকিং’ করেছেন, এমন অভিযোগ ( :-s ) আসাটা অসম্ভব ছিলো না। নেহাৎ মুক্তমনা বলেই বোধহয় তিনি বেঁচে গেছেন! অথবা, পুরুষদের দুষ্কর্ম ও দুশ্চরিত্রের নানা উদাহরণে জাতক ভর্তি। এমনকি, খোদ বোধিসত্ত্বও নানা জন্মে নানা দুষ্কর্ম করেছেন বলেই জাতকে দেখা যায়। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, রবীন্দ্রনাথের শ্যামা নৃত্যনাট্যের কথা। মূল জাতকে, বিপ্রদাশ বড়ুয়া দেখিয়েছেন, বজ্রসেনই পালিয়েছিলো শ্যামাকে ফেলে। এবং, সেটা রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “এ জন্মের লাগি/তোর পাপমূল্যে কেনা মহাপাপভাগী এজীবন করিলি/ ধিক ধিক মোর/কলঙ্কিনী, ধিক নিঃশ্বাস মোর তোর কাছে ঋণী/কলঙ্কিনী”জাতীয় কোন কারণে ছিলো না মোটেই। ওহো, বলতে ভুলে গেছি, বোধিসত্ত্বই বজ্রসেন ছিলেন।
তবে কথা হচ্ছে কি, জাতক তো আর বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ নয়। তবে, নৈষ্ঠিক বৌদ্ধদের কাছে এগুলোর বেশ কিছুটা দাম আছে বটে। সত্যি কথা বলতে কি, বুদ্ধ নিজেই ঠিক বিশ্বাসী ছিলেন না পুনর্জন্মে। উদাহরণ:
“…জন্মের কু-পরিণামকে জেনে …অনুপম নির্বাণ প্রাপ্ত হলাম…আমার জ্ঞান দর্শনের পর্যায়ভুক্ত হলো, চিত্তের মুক্তি অচল হলো, এই জন্মই অন্তিম, পুনর্জন্ম নেই (হবে না)।” [মজ্ঝিমনিকায়; ১।৩।৬, উদ্ধৃত: দর্শন-দিগদর্শন (দ্বিতীয় খণ্ড): রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ১৯৯৯; পৃ: ৭৩] তাঁর মূল দর্শনেই তা স্বপ্রকাশ। ‘অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম’। আত্মাকে উপনিষদ যে নিত্য, ধ্রুব, শাশ্বত, অনন্তকালচারী বলে, সেটা তিনি ‘পরিপুরো বাল-ধম্মো’ বা, বালসুলভ মূর্খ-বিশ্বাসে পরিপূর্ণ বলেছেন। বরং, তিনি জোর দিয়েছেন বা প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘প্রতীত্য-সমুৎপাদ’, মানে পরিবর্তন। কোন কিছু ধ্বংস হলেই সেটা অন্যটায় রূপ নেবে। বিশ্বে কোন বস্তুই নিত্য নয়, নয় ধ্রুব বা অপরিবর্তনীয়।
তবে, বুদ্ধ স্বাভাবিকভাবেই যুগের চাইতে সব কিছুতে অগ্রগামী হতে পারেন নি। যেমন তিনি ঠেলায় পড়ে ঋণগ্রস্ত বা সৈনিকদের নিষিদ্ধ করেছিলেন সংঘে। তেমনি, গাছকাটার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। কর্ম বা কর্মফল অগ্রাহ্য করতে পারেন নি। তিনি সংসার ত্যাগ করেন জরা, দুঃখ, শোক, মৃত্যু দেখে, কিন্তু তিনি নিজেই রোগগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে জরাও ঠেকাতে পারতেন না। সুতরাং, একদিক থেকে তিনি ব্যর্থই বটে!
বাকি কথা পরে বলবো।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
“বোধিসত্ত্ব” টার্মটা ব্যাখ্যা করবেন? আপনার লেখা পড়ে মনে হল বুদ্ধ অর্থে বোধিসত্ব বুঝিয়েছেন। যতদূর জানতাম, শব্দ দুটোর অর্থ এক নয়।
কৌস্তুভকে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। (তাঁর নামের choiceটি বেশ ইন্টারেস্টিং)। তাঁর লেখার সূত্র ধরে যে সমস্ত মন্তব্য দেয়া হয়েছে সেগুলো দেখলাম। অনেক কিছু জানলাম এবং শিখলাম। এখানে অনেক পাল্টা তর্ক চললেও আমার মনে হয় সবাই মোটামুটি একটা মূল ভিত্তিতে একমত। বিপ্লব পালের approach অনেক সময় abrasive মনে হতে পারে, কিন্তু তাঁর লেখার বিভিন্ন দিক আছে যা বেশ ইন্টারেস্টিং এবং শিক্ষণীয়।
আতিকুর রহমান সুমনের পোস্টগুলো বোধহয় আমি কিছুটা বুঝতে পেরেছি। আমার দর্শনকে আমি বস্তুবাদ আর ভাববাদে আলাদা করতে চাই না। নাস্তিক হয়েও জীবনের প্রতি মানুষের একটা জটিল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।
@দীপেন ভট্টাচার্য, আপনাকেও ধন্যবাদ।
ওই বিষয়ে আমি আর কথা বাড়াতে চাই না, আপনার ঠিক কী কী দিক ভালো লেগেছে তাও স্পষ্ট করে বলেন নি, শুধু এটুকু বলি, আপনার কাছে যা আকর্ষণীয় আমাদের কাছে তা বিরক্তিকর, আপনার কাছে যা শিক্ষণীয় আমাদের কাছে তা হাস্যকর লাগতেই পারে।
নাস্তিক কিন্তু দুইরকমের – সচেতন আর অচেতন। সচেতন হচ্ছেন যাঁরা র্যাশনালিস্ট, আর অচেতন নাস্তিক হচ্ছে যা সোভিয়েত বা চীন সরকার তাদের জনগণকে বানাতে চাইত, বা যখন লোকে ঝোঁকে পড়ে নাস্তিক হয়। জীবনের প্রতি একটা অহেতুক জটিল দৃষ্টিভঙ্গি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাস্তিকেরাই বেশি পোষণ করে।
@কৌস্তুভ, জিমেইলে মুক্তমনায় আপনার মন্তব্যের একটি নতুন জবাব আছে দেখে ভাবলাম আমি একটা ধারাবাহিক গল্প লিখছি সেই সংক্রান্ত কোন মেইল হবে। তারপর দেখলাম আপনার জবাব। ভাবলাম হ্য়তো কোন সৌজন্যসূচক চিঠি কারণ আমি একটা নির্দোষ বক্তব্য (আমার চোখে) দিয়েছিলাম। জবাবটা পড়ে খুব দমে গেলাম।
wow! আশা করি অচেতন দ্বিতীয় শ্রেণীর “নাস্তিক” হয়ে প্রথম শ্রেণীর সচেতন নাস্তিকদের কথায় অহেতুক মন্তব্য করার দুঃসাহস আমার ভবিষ্যতে হবে না। 🙂
@দীপেন ভট্টাচার্য, আপনাকে ‘দমিয়ে দেওয়ার’ বা আহত করার কোনো মোটিভ নিয়ে আমি মন্তব্যটি করিনি। আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পয়েন্ট নিয়ে আমি সহমত ছিলাম না বলে ভিন্নমত জানিয়েছি।
এখানে স্পষ্টতই দ্বিতীয় শ্রেণী বলতে ‘second class’ নয়, বরং ‘second type’ অর্থাৎ অন্য ধরনের নাস্তিকদের বোঝানো হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অন্যত্র হয়েছিল কদিন আগেই। অবশ্য এমন ‘জঙ্গি নাস্তিক’ও আছেন যাঁরা অচেতন নাস্তিকদের বাস্তবিকই second class মনে করেন, তবে আমি তেমন বলি না।
তা ছাড়া, আপনাকে কোথাও second-class বলা হয় নি, অচেতনও বলা হয় নি। একটা জেনারেল অবজার্ভেশন করা হয়েছে, non-conscious atheist দের সম্পর্কে। সেটা আপনি অকারণেই নিজের গায়ে টানছেন।
এইবার একটা পর্যবেক্ষণ বলি। আপনার ধারণা ছিল আপনি একটা নির্দোষ বক্তব্য করেছেন, যার জবাব সৌজন্যসূচক হওয়া ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার কথা নয়। আমারও তাই ধারণা ছিল, যে আমি দুই রকম নাস্তিকের সম্পর্কে একটু নির্দোষ অবজার্ভেশন বলেছি। সেটাতে আপনি আহত হলেন দেখলাম। তাহলে আপনার প্রতি অনুরোধ রইল, আপনার যে মন্তব্যটাকে আপনি নির্দোষ বলে ভাবছেন, (বা বিপ্লব পালের যে মন্তব্যগুলোকে আপনার নির্দোষ বলে মনে হয়েছে), সেগুলোও কিন্তু অন্যদের কাছে নির্দোষ মনে না-ই হতে পারে।
@কৌস্তুভ,
লিঙ্ক দাগান দেখি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে অচেতন নাস্তিকদের দ্বিতীয়শ্রেণীর নয়, চতুর্থ/পঞ্চম/পঞ্চদশ you number it শ্রেণীর নাস্তিক বলেই মনে করি। এইজন্যে অনেকে আবার আমাকে জঙ্গি নাস্তিক বোলে মনে করে। তারা বলে ‘এইভাবে কথা বলো কেনো? আমার মতো মিনমিন করে কথা বলতে পারোনা? নীচুস্বরে, শুনে যাতে বোঝাই না যায় পক্ষ না বিপক্ষ কোথায় তোমার অবস্থান?’ এদেরকে আমি মনে করি ত্রয়োবিংশসহস্রতম শ্রেণীর নাস্তিক। আপনার স্পষ্টভাষণ ভালো লাগলো, স্পষ্টভাষীতা চিরজীবী হোক।। আপনার এই
উক্তিটা ভবিষ্যতে ব্যাবহার করবো জাগায় জাগায়।
@আল্লাচালাইনা, কাল ইন্টারনেটের সমস্যায় একটা বাদে বাকি কমেন্টের উত্তর দিতে পারি নি। আপনাকে জবাব দিতে দেরি হল, দুঃখিত।
আমাদের কয়েকজনের একটা আলোচনা ফেসবুকে খুঁজে পেলাম, সেটার স্ক্রিনশট দিচ্ছি।
[img]http://i1203.photobucket.com/albums/bb398/kaustubhad/Capture.png[/img]
@আল্লাচালাইনা, আপনার কথা শুনে ডকিন্সের কথা মনে পড়ে গেল, যিনি আস্তিকদের থেকেও কনফিউজড বলে অজ্ঞেয়বাদীদের বেশি অপছন্দ করেন।
অচেতন নাস্তিকদের আমি স্বেচ্ছা-কনফিউজড বলে সবসময় দেখি না। এই যেমন চীন সরকার রাষ্ট্রধর্মের মত করেই নাস্তিকতা সবার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যাঁরা চাপে পড়ে নাস্তিক, তাঁদের তো ভেবেচিন্তে যৌক্তিক অবস্থান নেওয়ার সুযোগই আসেনি, নেওয়া যে প্রয়োজন সে কথাও মাথায় আসে নি। এঁদের প্রতি আমার সহানুভূতিই আছে।
যারা কেবল ব্রান্ডি ও রামপক্ষী খাওয়ার লোভেই নাস্তিক, তাদের উপর বঙ্কিম চটে থাকতেন (সে অবশ্য অন্য কারণে, তিনি সনাতন হিন্দুধর্মের প্রতি বিগলিতপ্রাণ বলে)। এরকম হুজুগে নাস্তিক লোকেদের অপছন্দ করাই উচিত।
এখানে ভারতীয় দর্শন নিয়ে লোকে যা ভাবছে তা ঠিক না। ভারতীয় দর্শন, দর্শন শাস্ত্রএর মিউজিয়াম। এইখানে বস্তুবাদি এবং ভাববাদি দর্শন দুটোরই চর্চা হয়েছে-কিন্ত বস্তবাদি দর্শন দানা বাঁধে নি-কারন বস্তুবাদি দর্শনকে উন্নত উৎপাদনে কাজে লাগানোর কথা কেও ভাবে নি।
আনুমানিক প্রথম থেকে সপ্তম শতাব্দিতে চিকিৎসা শাস্ত্রএ বৌদ্ধ চিকিৎসকরা পৃথিবীতে অগ্রগণ্য ভূমিকাতে ছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠবে তাহলে, আধুনিক জীববিদ্যার জন্ম ভারতে হল না কেন? একই প্রশ্ন উঠবে আরবে কোপার্নিকাস কিংবা নিউটন জন্মালেন না কেন? ইতিহাসের গতি অনুযায়ী সেটাই হওয়া উচিত ছিল?
এই প্রশ্নগুলির উত্তরের মধ্যেই মানব সভ্যতার বিবর্তনের কতগুলো অদ্ভুত সত্য উন্মোচিত হতে পারে। যার সাথে ভাববাদি বা বস্তুবাদি ইত্যাদি গালাগালের সম্পর্ক নেই-নিউটন বা গ্যালিলিও যথেষ্টই ধর্মভীরু ছিলেন।
ইউরোপে রেঁনেসাস বা আধুনিক বিজ্ঞানের উত্থানের পেছনে মূলত যেটা কাজ করেছে সেটা হচ্ছে অটোম্যানদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ইউরোপের সিটি স্টেটগুলির অদম্য ইচ্ছা। অটোমান আক্রমনের সামনে ভেনিস, প্যারিস সব উড়ে যেত। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল ইউরোপের লোক সংখ্যা বৃদ্ধি ( ১৩০০ শতক থেকে ইউরোপের লোক সব থেকে বেশী বৃদ্ধি পেতে থাকে) এবং সেই অনুপাতে অর্থনীতি না বাড়ার কারনে নতুন দেশ এবং নতুন মাটি জয় করার চেষ্টা। ধার্মিকতা মুসলমানদের হাত থেকে ইউরোপকে বাঁচাতে পারবে না-এই ব্যাপারে ইউরোপিয়ান এলিট দের মধ্যে একটা কনসেসসাস তৈরী হয়-ফলে আবিস্কারের মাধ্যমেই বাঁচতে হবে-এর একটা প্রবল চাপ প্রতিটা সিটি স্টেটের মধ্যেই ছিল-এবং যেকোন আবিস্কারকে বাণিজ্যকরনের কারনে, আবিস্কারকদের একটা চাহিদা তৈরী হয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে , গ্যালিলিও, লিও নার্ডো দ্য ভিন্সি সবাই সামরিক শক্তি বাড়ানোর যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। কারন সেগুলিই ছিল অটোমানদের বিরুদ্ধে রক্ষা কবচ। গ্রীসের স্বাধীনতা যুদ্ধে -যা অটোমান বনাম ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাথে হয়েছিল-এই চিন্তা পরিপূর্ন ভাবে রূপ পেল। অটোমানরা ইউরোপ ছাড়তে বাধ্য হল এবং সভ্যতার রাশ অটোমানদের হাত থেকে ইউরোপের হাতে আসল।
এবার প্রশ্ন উঠবে
[১] মুসলিম আক্রমনের সামনে ইউরোপ বিজ্ঞানের পথ ধরল-ভারত পারল না কেন?
[২] অটোমানরা কেন বিজ্ঞানে উন্নতি করতে পারল না? রিসোর্সত তাদেরই সব থেকে বেশী ছিল?
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর সহজ। কারন অটোমানরা সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে আটকে ছিল-সেখানে ইউরোপের সিটি স্টেটগুলি ধনতান্ত্রিক একটা সিস্টেমের দিকে আস্তে আস্তে বিবর্তিত হচ্ছিল যেখানে নতুন আবিস্কার করা সহজ এবং তার দামও পাওয়া যায়।
প্রথমটির উত্তর কঠিন। মুসলিম আক্রমনের সময় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান চর্চার বিরাট উন্নতি হয়েছিল বলে শোনা যায়। এই ব্যাপারটিতে আমার সন্দেহ আছে। নালন্দার বিদ্যাচর্চা নিয়ে ঘাটতে গিয়ে দেখেছি সেখানে সমর শাস্ত্র পড়ানো হত না যেহেতু অহিংসা ব্যাপারটা তাদের চার্টারে ছিল। পৃথিবীর ৮০% প্রযুক্তির আবিস্কার হয়েছে সামরিক প্রয়োজনে-সামরিক চাহিদা প্রযুক্তির সাথে না যোগ হলে, কোন স্থলেই বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি হয় নি।
ভারতে হিন্দুরা বিদ্যাচর্চাতে পিছিয়ে ছিল-বিদ্যাচর্চা বা জ্ঞান চর্চা করত বৌদ্ধরা। কিন্ত তাদের অহিংসা নীতির কারনে এবং কামনা বর্জিত দর্শনের কারনে, তাদের বিদ্যাচর্চা উৎপাদনমুখী ছিল না-সমরমুখী একেবারেই ছিল না। ফলে ভারতে বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ আটকে যায়-এবং এর জন্যে মূলত বৌদ্ধ দর্শনের অহিংসা নীতিই দায়ী।
আর যদি ভাববাদের প্রশ্ন ওঠে-আগেই বলেছি তখনকার দিনে অধিকাংশ বিজ্ঞানী ধর্মভীরুই ছিল। সেটা কারন না।
@বিপ্লব পাল,
এই “তখনকার দিনে” সময়কালটা কত পিছন পর্যন্ত যায় বলে বিপ্লব পালের ধারণা? এবং “বিজ্ঞান” বলতে বিপ্লব পাল ঠিক কি বোঝেন জানা জরুরী।
@বিপ্লব পাল,
আমার কাছে প্রথমটা উত্তরও সহজ। মুসলিম আক্রমণ ভারতে সফল হয়েছিল। কাজেই ওই অর্থে কোন ভয় পরে আর কাজ করেনি।
বু্দ্ধ বলেছিলেন সত্য অনেক আমি শুধু তার কিছুমাত্র জান্তে পেরেছি।ভেবেছিলাম বুদ্ধ মতটা অনেক উচু মানের।ধন্যবাদ ভূলটা ভা্নগিএ দেয়ার জন্য।অনেক দিন ধরে এরকম একটা লেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
@আস্তরিন, ধন্যবাদ।
তাঁর কথাগুলো অন্য অনেক ধর্মগুরুর তুলনায় উঁচু, তাতে সন্দেহ নেই, হুট করে বিধর্মীদের মুণ্ডু কাটার বিধান ইত্যাদি তিনি দেন নি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও মানুষ, তাঁর ধ্যানধারণাতেও ভুল থাকবেই।
আমার মনে হয়, নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ, নবি বা পয়গাম্বর বলে দাবী করেছেন, নিজের মুখের কথা আল্লাহর বাণী বলেছেন, অপরের সাহায্যে ধর্মগ্রন্থ লিখেছেন, এমন ব্যক্তি পৃথিবীতে একজনই ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ তিনিই প্রথম আর তিনিই শেষ।
চল্লিশ ছিলিম গাঁজা একসাথে সেবন করতে পারলে যে কোন মানুষই আধ্যাতিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। সুফীবাদ আধ্যাত্ববাদিতা এক শ্রেষ্ট ভন্ডামী ছাড়া আর কিছু নয়।
@আকাশ মালিক,
একমত।
@আকাশ মালিক, সহমত।
বেশ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। অনেক নতুন কিছু জানতে পারলাম। কৌস্তুভকে ধন্যবাদ, মুক্তমনায় স্বাগতম। বুদ্ধ সম্পর্কে শুধু ইতিবাচক কথাই শুনেছি, বাস্তবতা ও সত্যকে এড়িয়ে গিয়েছেন অনেকেই। মিথ্যের জগতে বাস করে সত্যকে খুঁজে ফেরেন তারা।
@ইরতিশাদ, ধন্যবাদ আপনাকেও।
ইতিবাচক কথাগুলো যে সম্পূর্ণ অসত্য, তাও নয় বোধহয়… ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ, কিন্তু ধর্মগুরুর ক্ষেত্রে মন্দগুলোর বিরাট প্রভাব পড়ে ভবিষ্যতে।
কৌস্তুভ, আলোচনায় যোগ করার মত আমার কিছু নেই, শুধু একটা রেফারেন্সের কথা বলা ছাড়া। কিছুকাল আগে এই বইটার অনুবাদ পড়েছিলাম – ডি ডি কোসাম্বির (ম্যাথ/স্ট্যাটের ডিডিকোসাম্বির বাবা, আপনার এলাকারই লোক) “গৌতম বুদ্ধ” – যাতে উনি বিভিন্ন বৌদ্ধ টেক্সট-এর ইনকন্সিসটেন্সি বিচার করে এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ করে মোটামুটিভাবে বুদ্ধ নিজে কী বলেছিলেন সেটার কাছাকাছি পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন। লেখকের বুদ্ধ ধর্মের প্রতি নিজস্ব বায়াসের কথা মাথায় রাখলে বইটাকে আশ্চর্যজনক্ভাবে অবজেকটিভ লাগে।
@Suku,
আরে, এই কোসাম্বি যে ওই কোসাম্বির বাবা তা জানতাম না তো! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
বুদ্ধ ঠিক কী বলেছিলেন তাই নিয়ে এখানে অনেকেই উৎসাহী দেখলাম। সম্ভব হলে বইটা নিয়ে একটা আলোচনা দিন না।
এটা আপনি পছন্দ করুন আর নাই-ই করুন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আসলেই তার একটা ব্রেইন ছিলো। সেই মহামুল্যবান ব্রেইনটিকে আসলেই সকলের উপকারের তরে কোন কাজে না লাগিয়ে নিজের অবচেতনের সস্তা মুল্যহীন অনুতপাদনশীল আধ্যাত্নবাদী গুব্লি-ডি-গুকের বেলুন ফোলাতে ব্যায় করেছেন তিনি। এটা না করে তিনি যদি সেই সময় ভাবতে বসতেন, তামার চেয়ে উন্নতমানের আর কোন ম্যাটেরিয়াল রয়েছে কিনা (তার সমকালীন সময়ে বোধহয় লৌহযুগ শুরু হয়নি তখনো, নিশ্চিত নই), থাকলে কিভাবে সেটা এক্সট্রাক্ট করা যায়, ম্যানিপুলেট করা যায়, এবং ম্যানিপুলেট করতে শেখানো যায় মানুষকে, তার সমকালীন সভ্যতাকে একহাজার বছর এগিয়ে দিতো সেটা এক ধাক্কায়! রাজা নাকি ছিলো বলে সে, জনহিতের স্বার্থে মন যদি এতোই কাঁদবে, নিজের বিশাল সামর্থ, বিত্ত, বৈভব আর ক্ষমতা দিয়ে বনবাসে গিয়ে চুল-চামড়া গল্প ফাঁদার চেয়ে অপেক্ষাকৃত আরেকটু বেশী ভালো, অপেক্ষাকৃত আরেকটু বেশী উপকারী এবং ট্রান্সলেশনাল গুরুত্বসম্পন্ন কোন কাজ করতে পারলো না সে? করে নাই এইটা তার দোষ না, দোষ হচ্ছে সেইসব বিরিঞ্চিবাবাদের যারা কিনা ক্রনিকভাবে প্রস্তরযুগের ফ্যান্টাজমে ভুগে ভুগে মোটা-তাজা, তাগড়া হয়ে উঠেছে মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এবং এখন গ্লরিফাই করছে এইসকল অনুতপাদনশীলতার ডায়াগ্নোস্টিক সিগ্নেচার রুপী প্রস্তরযুগীয় অধ্যাত্নবাদী দার্শনিক ধর্মেবেত্তা বিরিঞ্চিবাবাদেরকে! আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমার পয়েন্টটা সম্পুর্ণ ধরতে পেরেছেন।
বুদ্ধকে আমি বুদ্ধু মনে করছি কিন্তু প্রথমত এইজন্য না যে- সে পরিবার টরিবার ফেলে বনে গিয়ে ধ্যানে বসেছিলো। আমি সমালোচনা করছি ধ্যান থেকে উঠে যে সে দাবী করে বসলো- ‘দুনিয়ার সমস্ত কিছু সে জেনে ফেলেছে’ তার এই ধ্যাষ্টামোর বিরুদ্ধে। সে যদি বলতো, ওয়েল ধ্যান করে আমার মনটা বড্ড ফুরফুরে হয়ে গেল, তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো- আমার কিচ্ছু বলার ছিলোনা। কিন্তু যখন কিনা সে বলছে- ‘ধ্যানে বসলাম আমি, বসে দুনিয়ার সমস্তকিছু জেনে ফেলেছি, এমন জ্ঞান লাভ করেছি যেই জ্ঞান কিনা পৃথিবীর অন্যান্য স-ক-ল জ্ঞানের চেয়ে সুপিরিয়র, এমনকি e সমান সমান যে mc^2 এই অন্তদৃষ্টির চেয়েও সুপিরিয়র; তখন কি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার একটি গদাম পাওনা হয়ে যায়না?
মন ফুরফুরে হয়ে যাবার দাবীটা নিছকই একটি ব্যক্তিগত অনুভুতির স্টেইটমেন্ট। অপরপক্ষে দুনিয়ার সবকিছু জেনে-বুঝে ফেলার দাবীটা, দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অন্তদৃষ্টি লাভ করে বসে থাকার দাবীটা বাস্তবতা বিষয়ক একটি স্টেইটমেন্ট, এই স্টেইটমেন্টের পক্ষে এভিডেন্স লাগবে, এই স্টেইটমেন্টটি ভ্যারিফাইয়েবল হতে হবে। আধ্যাত্নবাদরে কইষা গদাম; আধ্যাত্নবাদ-দর্শন-কমিউনিজম-সনাজবিজ্ঞান-পোস্টমডার্নিজম-এনিমল রাইটস এক্টিভিজম অসত সুডোস্কলারির এইসকল ধ্বংসাত্নক জীবানুর সংক্রমনমুক্ত স্মার্ট এবং প্রডাক্টিভ তরুণ প্রজন্ম চাই। মানসিকভাবে যারা বুড়িয়ে গিয়েছে, দেহে বল কমে গর্দান সরু হয়ে গিয়েছে; তারা তাদের দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, লালনগীতি আর আধ্যাত্নবাদ নিয়ে জাহান্নামে যাক; তরুণ প্রজন্মকে এইসব করোসিভ মতাদর্শ দ্বারা দুষিত করা চলবে না। বাস্তবতার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, প্রস্তরযুগের প্রেমে পাগলপরা তরুণ প্রজন্ম আমাদের কাম্য হওয়া উচিত নয়, আমাদের কাম্য এমন তরুণ প্রজন্ম যারা সমুন্নত করে রিজন, সায়েন্টিজম এবং ওয়েস্টার্ন ভ্যালু।।
বিঃদ্রঃ- যদিও মন্তব্যটা টেকিসাফি আর সংসপ্তকের মন্তব্যের সুত্র ধরে, এইটা আমি সকলকেই এড্রেস করতে চাই বলেই খালি তাদের দুইজনকে এড্রেস করলাম না।
@আল্লাচালাইনা, ব্রেন যেহেতু বুদ্ধেরও ছিল এবং তা আমাদের মতই, তাহলে তার কথা বা কাজকে একেবারে উড়িয়ে দেয়ার আগে কিন্তু একাধিকবার ভাবা দরকার। যারা মানুষকে লৌহ এক্সট্রাক্ট করতে শিখিয়েছে তারা কি মানবজাতির উপকার করেছে না অপকার করেছে তা কিন্তু এখন আর এত সহজেই বলা যাচ্ছে না। কোটি কোটি বছর ধরে যে খনিজ পৃথীবির বুকে জমা হয়েছিল, সেসব কয়েক হাজার বছরেই নিঃশ্বেস করে মানুষ কিন্তু তার আবাসভূমিকেই আবাস অযোগ্য করে তুলছে। সামান্য কিছু সুখভোগের আশায় এখন জীবনধারনের পরিবেশই কিন্তু বিপন্নপ্রায়। আর পৃথীবিতে বসবাসের অধিকার কিন্তু শুধু মানুষেরই নেই। আমরা যেভাবে মহামারি রূপে পৃথীবির বুকে ছড়িয়ে পরেছি তাতে কিন্তু আখেরে করোই লাভ হয়নি।
দুনিয়ার সমস্ত কিছু জেনে ফেলা কি অসম্ভব? ধরুন যদি স্ট্রীং থিউরী গ্র্যান্ড ইউনিফায়িং থিউরী হিসেবে প্রমানিত হয় এবং কেউ যদি সেটা বুঝে, তাহলে কিন্তু সে দাবি করতেই পারে সে পদার্থ বিজ্ঞানের সবই জানে। এখন যদি আপনি তাকে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব জিজ্ঞেস করেন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে তা না জানে তাহলে কি আপনি বলবেন সে পদার্থ বিজ্ঞানের সব জানে না। আপনি বলতেই পারেন। এখানেই নির্ভর করছে সব জানা বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন। গ্রান্ড ইউনিফায়িং থিউরী জানা থাকলে অন্যকিছু না জানলেও তো চলে।
🙂
“তর্কের খাতিরে তর্ক করি
যদি কিছু জানতে পারি।” 🙂
@আতিকুর রাহমান সুমন,
হাঃহাঃহাঃ :lotpot:
এই একটা লাইনই যথেষ্ট আমাকে আপনা হতে অহেতুক তর্ক থেকে দূরে রাখতে, বলি মশায়, উনিফাইড থিউরিতো বুঝা অনেক অনেক অনেক দুরের কথা, স্ট্রিং তত্ত্বটা বুঝার চেষ্টা করে দেখুনগে, একেবারে গ্রীকদের “অকর্তনীয় বস্তু” ধারণা থেকে যদি শুরু না করতে হয় তাহলে আবার এসে মন্তব্য করুন 😀
@টেকি সাফি, আমি কিন্তু নিশ্চিত, আমি যা বুঝাতে চেয়েছি আপনি তা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। 🙂
@আতিকুর রাহমান সুমন,
ইউনিফিকেশন টার্মটি আপনি স্পষ্টতই ভুল বুঝেছেন। বিজ্ঞানে ইউনিফায়িং থিওরি বলতে যা বোঝানে হয় আর সাধারণ জনমানসে এই একই টার্মটিকে যেইভাবে বোঝে তারা দুটি সমার্থক নয়। যেমন- গ্যাস ফেইজ কেমিস্ট্রিকে যদি আপনি একবাক্যে প্রকাশ করতে যান, সেই বাক্যটি হবে গিয়ে pv=nRT। এটি একটি ইউনিফাইড থিওরি। ঐতিহাসিকভাবে, বোয়েলস ল, চার্লস ল আর গাই-লুসাকস ল যখন আবিষ্কৃত হয় তখনই আবছা আবছাভাবে বঝা যাচ্ছিলো যে আমরা রয়েছি গ্যাস ফেইজ কেমিস্ট্রিকে এইসব আলাদা আলাদা বিচ্ছিন্ন ল এর পরিবর্তে সম্পুর্ণ একটি ইউনিফাইড থিওরি দ্বারা প্রকাশ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। ঠিক, সেই সময়েই যখন কিনা প্রকাশ হল আভোগাড্রোস ল- ব্যাস, চারটি বিচ্ছিন্ন ল ইউনিফাইড হয়ে pv=nRT এই রুপ ধারণ করলো। এখন, প্রশ্ন হচ্ছে এই একটি থিওরি বোঝার মধ্য দিয়ে কি আপনি গ্যাস ফেইজ কেমিস্ট্রির সম্পুর্ণটাই বুঝে বসে আছেন? hell no, I wish life was that easy! ইউনিফাইড থিওরি একটি ফ্যাসেটে এই পর্যন্ত হওয়া বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন আবিষ্কারকে একীভুত করে; এটা কখনও এই উপসঙ্ঘারে পৌছে না যে- সবকিছুই সে আবিষ্কার করে ফেলেছে। পরিষ্কার হল আশা করি।
বাস্তবতা এইসব অধিকার-ফধিকার ইত্যাদি ভাববাদী আবেদনকে নিয়ে কাজ করে না। পৃথিবীতে যদি মানুষ আর ফানুসে দুইজনেরই বসবাস করার অধিকার থাকে; কিন্তু পর্যাপ্ত রিসোর্স থাকে শুধুমাত্র একজনকে সাস্টেইন করার মতো, তাহলে হয় মানুষকে নতুবা ফানুসকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে। কখনও যদি মনে প্রশ্ন জেগে থাকে স্ট্রাটা এবং ফসিল রেকর্ডে প্রাপ্ত প্রজাতি সমুহের ৯৯%ই কেনো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, then there goes your answer!
আপনার দাবীটা কি? কি করতে হবে এখন? বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে? একটি পপুলেশন যতো বড় তার লংরানে টিকে থাকার সম্ভাবনা ততো বেশী, এখন আমাদের পপুলেশন ৬ বিলিয়ন এটা আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে খুব বড় কোন দুর্যোগ না হলে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছি না আগামী কয়েকশো হাজার বছরের মধ্যে। এবং অবশ্যই এটাতে আখেরে আমাদের লাভ হচ্ছে। এছাড়াও একটি পপুলেশন যতো বড় সেই পপুলেশনে লস অফ হেটেরোযাইগোসিটি প্রসুত ফিটনেসের ঘাটতি কম হবে, আমাদের পপুলেশন ছোট হলে হোমোযাইগোট লোসাইতে ডিলিট্রিয়াস রিসেসিভ এলিল বহনকারী কানা-লুলা-খোড়া-হাদা-খাঁদা বাচ্চা জন্ম নিবে বেশী, সেই বাচ্চাগুলোও খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করবে তাদের জীবন। টেকনিকাল টার্ম যেগুলো বলেছি সেগুলো আপনি উইকিপিডিয়ায় সার্চ করে জেনে নিবেন প্লিজ।
প্রথমত খনিজ কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর বুকে জমা হয়না। লোহা আর্থক্রাস্টের সবচেয়ে এবান্ডেন্ট একটি মেটাল, বস্তুত সবচেয়ে এবান্ডেন্ট একটি এলিমেন্ট-ই, তবে লোহাকে আহরণ ও ম্যানিপুলেট করার প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে খুবই সাম্প্রতীক কালে। আর্কিওলজিকালি মানব সভ্যতার টাইমলাইনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়- প্রস্তরযুগ, তাম্রযুগ এবং লৌহযুগ। বর্তমানে চলছে লৌহ যুগ। এবং বর্তমান সময়ের যা যা কমোডিটি এর সবগুলোই এসেছে কেননা মানুষ লোহাকে মেটেরিয়াল হিসেবে ব্যাবহার করতে শিখেছে বলে। আর আপনি বলছেন লোহাকে মেটেরিয়াল হিসেবে ব্যাবহার করতে শেখাটা মানুষের জন্য ভালো কিছু হয়েছে কিনা এখনও বলা যাচ্ছেনা? are you serious?
@আল্লাচালাইনা, বিসমিল্লাহ্ । আবার একটু চেষ্টা করে দেখি।
ইউনিফাইং থিউরী বলতে আমি যা বুঝি তাহলো এমন একটি তত্ত্ব যা দিয়ে মহাবিশ্বের সবই ব্যাখ্যা করা যাবে ছোট-বড় সবই। যদিও এই উদাহরন দিয়েছি একটু রূপক অর্থে।
বাস্তবতা কি নিয়ে কাজ করে তা আমিও জানি আপনিও। কিন্তু মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে তো আর আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি-তর্কের অবকাশ থাকে না। আমি যে উপরোক্ত বাক্যটা লিখলাম এটাই কিন্তু প্রমাণ করে বাস্তবতা সবার জন্য এক না।
বিলুপ্ত না হলেও চলবে। শুধু একটু নিয়ন্ত্রণ দরকার। আপনি যেসব ট্যাকনিক্যাল টার্ম লিখলেন সেগুলো না বুঝেই বলছি, আপনি কি জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরোধি?
খনিজ কোটি কোটি বছর ধরে জমা হয় না? তাহলে কয়লা, তেল, গ্যাস এগুলা কি খনিজের মধ্যে পরে না?
আপনার এই কথার সাথে তো দ্বিমত নাই। আর আমি তো খুবই সিরিয়াস। পাথর, তামা, লোহা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের মত এত এত শক্তিশালী হাতিয়ার মানুষের মত অনিয়ন্ত্রিত, বাস্তববাদী প্রাণীর হাতে এসে পরাটা কিন্তু এখন বিপদজনকই প্রমানিত হচ্ছে। মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না শিখেই, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেছে, এটা কিন্তু ভালো হয়নি।
এখন আপনি হয়তো ইভলিউশনের বাস্তবতার কথা তুলতে পারেন। কিন্তু সবই যদি প্রাকৃতিক নিয়মে হয়, তাহলে মানুষের নিয়তিবাদী হয়ে আঙ্গুল চোষা ছাড়া কি কোন পথ নেই?
@আল্লাচালাইনা,
আলোচনার জন্য প্রথম দুটি ঠিক আছে, শেষেরটিতে একটু আপত্তি আছে। কারন এখন নতুন ওয়েস্টার্ন ভ্যালু গঠনের সময়, গড়ে ওঠেনি। রিয়েলাইজেশনকে নোলেজের উপর স্থান দেয়া হচ্ছে ইদানিং। শোনা যাচ্ছে, we are fenced by the fence we make around us by ourselves!!! অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ভ্যালুর আরেকটি অপ্রচারিত দিক আছে-Diogenes ভুলে গেলেন?
@মোহোলি.জোলা, আসলে আমিও ওয়েস্টার্ন ভ্যালুর কথাটা শুনে খুবই অবাক হয়েছিলাম। ভারতীয় দর্শন নাকি জীবন বিমুখ? কিন্তু ওয়েস্টার্ন ভ্যালুর self-centered, highly competitiveness, exploiting others, profit maximizing ইত্যাদি ভ্যালু নিয়ে কিন্তু নতুন করে মূল্যায়ন করার সময় এসে গেছে।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
আসলে প্রশ্নটা ভারতীয় কিংবা নাইজেরিয় দর্শন জীবনমুখী নাকি খিচুড়িমুখী সেটা নয়। আমার পয়েন্ট ছিলো- হাইপারদার্শনিকতাময় তরুণ প্রজন্ম আমাদের কাম্য হওয়া উচিত নয়। ইন্টেলেকচুয়াল আলস্যকে দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি গালফোলা নাম দিয়ে বিরিঞ্চিবাবারা একাডেমিয়ায় তাদের শরীর সেধিয়ে দেক আমার কোন আপত্তি নেই, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ যেই দেশের বেশীরভাগই কিনা শিশু-কিশোর-যুবক এইরকম একটা দেশে আমি আশা করবো বাস্তববাদী এবং বাস্তবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তরুণ প্রজন্ম; হাইপারস্বপ্নময়, দার্শনিকতাময়, সমাজবিজ্ঞানময়, রোমান্টিক, দুধ-মাখনের অনুতপাদনশীল আদুল-বাদুল তরুণ সম্প্রদায় নয়। একটি পিনের আগায় কয়টি জিব্রাইল ফেরেস্তা আঁটা যাবে, কিংবা খাচার ভেত্রে পক্ষী কি করে আসা-যাওয়া করে, জীবনের উদ্দেশ্য কি এইসব সম্পুর্ণই অবান্তর, সম্পুর্ণই অগুরুত্বপুর্ণ, ১০০% টাইমওয়েইস্টিং প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনি পিপের পর পিপে নস্যি আর রাতের পর রাত ফুরিয়ে ফেলতে পারেন; কিন্তু এটা আপনাকে কোথাও নিতে যাচ্ছে না। জীবনমুখী ভারতীয় দর্শন নিয়ে ভারতীয়রা সাত হাজার বছরেও কিছু করতে পারেনাই কিন্তু, অপরপক্ষে সেলফসেন্টার্ড মুল্যবোধ, রিজন, সায়েন্টিফিক এচিভমেন্টস এবং বাস্তবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা দিয়ে ওয়েস্টার্নাররা চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে নিরাপদেও সেই মানুষ পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে, মানুষকে দিয়েছে ৭৭ বছরের গড় আয়ু, মানুষকে ভ্যাক্সিনেটেড করেছে, ইনফ্যান্ট মর্টালিটি-ম্যাটার্নাল মর্টালিটিকে নামিয়ে এনেছে প্রায় শুন্যের ঘরে। নতুন করে মুল্যায়ন করেন দেখি আমরা একটু শুনি কি কি উপসঙ্ঘারে আপনি পৌছেন।
@মোহোলি.জোলা,
স্যরি আমি আপনার বক্তব্য বুঝতে পারিনি, আপনি আমাকে যতোটা ইনফর্মড মনে করেছেন অতোটা আমি আসলে নি, ভেঙ্গে বলে বুঝিয়ে আবার আপনি মন্তব্য করুন প্লিজ যদি সময় থাকে হাতে।
@আল্লাচালাইনা, আপনাকে সরাসরি চিনলে আরও অনেক কিছু বলতাম, কিন্তু স্বল্প-পরিচয়ের খাতিরেই বলি – ব্রাভো! কেয়াবাত!
ইংরেজীতে এর একটা গালভরা নামও আছে – তাকে বলে “ওম্ফালোস্কেপ্সিস” – নিজ নাভীর চিন্তন। উদাহরণগুলো আপনার লেখায় অগণ্য।
আবার বলি – ব্রাভো! (Y)
@আল্লাচালাইনা,
(Y)
@আল্লাচালাইনা,
ভারতে লৌহযুগ শুরু হয়ে গিয়েছিল ১০০০ খ্রী পূ-র দিকে। যজুর্বেদে লোহার উল্লেখ আছে।
যাক গে। আপনার মন্তব্য সবসময়ই একধরণের jest, এবং সবসময়ই সেরকম থাকুক এই আশাই করি। কাজেই একেবারের point by point আলোচনা করার দরকার নেই। দুয়েকটা কথা শুধু। ব্যক্তি বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম, এদুটোর পার্থক্য সম্বন্ধে সচেতন থেকেই কি “বুদ্ধ সব জেনে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন” এ মন্তব্যটি করেছেন? বৌদ্ধরা যা মানে তাই বৌদ্ধধর্ম, কিন্তু বুদ্ধ একটা ঐতিহাসিক চরিত্র। তার বিচার ঐতিহাসিক পদ্ধতির rigor দাবি করে। ভদ্রলোক ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে অস্পষ্ট, তিনি কি বলেছেন না বলেছেন এ ব্যাপারে অত নিশ্চিত না হওয়াই ভাল।
এমনটা যে ভাবা যেতে পারে, সভ্যতার “এগিয়ে” যাওয়া একটি বাস্তবধর্মী আইডিয়া, এসব আপনি জানলেন কি করে? আপনার এই “বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি” এটাও একটা ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, এর জন্য প্রয়োজন একটি সফিসটিকেটেড ইতিহাস চেতনা এবং (the horrors) একটি বিশেষ দার্শনিক কাঠামো। সায়েন্টিফিক রেভুলেশনের হাত থেকে এই উত্তরাধিকার ধার পেয়ে আপনি অভিযোগ করছেন, বুদ্ধের কাছেও এটা স্বতঃসিদ্ধ কেন হল না!
@রৌরব, না, আসলে ব্যক্তিগত বুদ্ধকে নিয়ে আমি একেবারে ভাবিতই ছিলাম না, আমার ফোকাস ছিলো ‘বুদ্ধ’ বলতে যেই একটা ধারণা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিংবা সাম্প্রতীকতার নিউএইজ বাবাজানেরা গড়ে তুলেছে সেটাকে উদ্দেশ্য করে। বুদ্ধ নিজে কি বলেছিলো সেটার এসেসমেন্টেও আমি যাইনি, এই ব্যাপারে আমি যথেষ্ট ইনফর্মডও নই এমনকি। বুদ্ধ বলতে আসলে আমি বুঝি নির্বান-বুদ্ধ-বোধিবৃক্ষ-সংসারত্যাগ-গাঁজা-লালনগীতি ইত্যাদির একটি ভার্সাটাইল খিচুড়ীকেই; একটি ধারণাকেই, কোন ব্যক্তিকে নয়।
কেউ যখন বলছে he was the best man জাতীয় কোনকিছু, এবং স্পষ্টতই যখন কিনা আমি দেখছি যে তার এড্রেস করা ব্যক্তিটি একজন আধ্যাত্নবাদী ধর্মবেত্তা, আমি সচেতনভাবে এটা কাউন্টার করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি। আমার কৈশরে আমিও বিপ্লব পালের মতো জট্টিল জট্টিল সব টেনশনে পড়ে যেতাম- ‘এইযে দুনিয়া এইডা কি আসলেই সইত্য নাকি ছায়া মায়া’ কিংবা ‘এইযে জীবন, এই জীবনের উদ্দেশ্য কি, বিধেয়-ই বা কি’ জাতীয় ১০০% অপ্রয়োজনীয়, ১০০% অগুরুত্বপুর্ণ, সময়নষ্টকারী এবং শক্তিনষ্টকারী, সেক্সুয়ালি আনসিলেক্টেবল প্রশ্নাবলী উত্থাপন করতাম, এবং নিজেকে সান্তনা দিতাম যে- বাস্তবতাকে টাটা দিয়ে বিরিঞ্চিবাবাগিরির এই অন্ধগলিতে ঘুরকি-ফিরকি করাটাও একটা ‘কাজ’ যেই কাজটি করতে কিনা স্কীল লাগে, ইন্টেলিজেন্স লাগে। কিন্তু, বড় হয়ে যখন আসলেই আমি মুখোমুখী হয়েছি সেইসমস্ত কাজকর্মগুলোর যেগুলো করতে কিনা আসলেই স্কীল লাগে, হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনী করতে হয় তখন আমি অনুধাবন করেছি যে আমার সেই পুরনো দিনগুলো ইনফ্যাক্ট ছিলো কতোটা অনুতপাদনশীল আর শোচনীয়।
এইযে যেমন এই পোস্টে দেখেন কারা কারা ঠোট ফুলিয় গাল ফুলিয়ে বসে আছে? ওয়েল- হার্শ কিন্তু বাস্তব উত্তর হচ্ছে- পরিবেশবাদীরা, পোস্টমডার্নিস্টরা, দার্শনিকরা, সমাজবৈজ্ঞিনীরা, এনিমল রাইটস এক্টিভিস্টরা, নৃতাত্বিকরা, তাই না? একটা মানুষ কি প্যাটার্নে চিন্তা করে এটার ভিত্তিকে তাকে একটা দলে ফেলা যায়। নীচে যেমন কৌস্তভ দলগঠন করেছে- সচেতন আর অচেতন নাস্তিক বা প্রথম অথবা দ্বিতীয়শ্রেণীর নাস্তিক। আধুনিক নিউএইজ বুদ্ধভক্তরা বুদ্ধের যেই ট্রাকরেকর্ড উপস্থাপন করে এটার ভিত্তিতে বুদ্ধকে আপনি যদি এইরক দুইটা ডাইকটমাস দলের যেকোন একটিতে ফেলতে যান, কোনটিতে ফেলবেন আপনি?
এইটা আমিও মনে করি যে একজন আলোকিত মানুষকে হতে হবে একগুচ্ছ প্রিন্সিপলের মানুষ, কিছু চেতনা ও আদর্শের মানুষ। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী আমি ইতিহাস পড়ে শিখিনি। বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী আমি লাভ করেছি বরং নিজের চোখে এইটা দেখে যে- বিজ্ঞান কাজ করে।
@আল্লাচালাইনা, আপনের লগে কোলাকুলি করন যায় না? আপনের মন্তব্যগুলি পইর্যা আমি খালি মাথা দুলাই ইন কমপ্লীট এগ্রীমেন্ট। জটায়ুর ভাষায়, আপনারে তো কাল্টিভেট করতে হইতাসে মশয়!!
ব্রাভো! :guru:
তবে এই সম্পর্কিত একটা কথার উল্লেখ করার দরকার – আপনি সন্দেহাতীতভাবে সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল – তাও, শুধু সাধারণ জ্ঞানের জন্যই বলি। “বিজ্ঞান কাজ করে” নিঃসন্দেহে, কিন্তু আজকাল অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে বিজ্ঞানকে তার কাজ, বা আউটপুট – যার প্রকাশ হল প্রযুক্তি – তা দিয়ে ডিফাইন করা। বিজ্ঞানের উদাহরণ হিসাবে প্রযুক্তিগত সাফল্য – বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত, অ্যাপলায়েড সায়েন্সে, যেমন এঞ্জিনীয়ারিং বা মেডিসিন – তা-ই তুলে ধরা হয়। এই সব ক্ষেত্রে অ্যাচিভমেন্টগুলো নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের দান, কিন্তু এর আড়ালে অনেক সময়ে আরেকটা – এবং আমার বিবেচনায় অনেক বেশী মূল্যবান – কন্সিডারেশন ঢাকা পড়ে যায়। সেটা হল, সায়েন্টিফিক মেথড, বিজ্ঞানভিত্তিক বা বিজ্ঞানসম্মত প্রণালী (জানিনা, অনুবাদটা সঠিক হল কিনা)।
বিজ্ঞান এবং তার চর্চা দাঁড়িয়ে আছে সায়েন্টিফিক মেথডের ওপরে, যার সূত্রপাত হয় অনুসন্ধিৎসা থেকে। বিভিন্ন ঘটনাবলীর কার্যকারণসম্পর্ক খুঁজে বার করার জন্য, নতুন জ্ঞান আহরণের জন্য, এবং সময়বিশেষে বা প্রয়োজনবিশেষে সংশোধন-পরিমার্জনের মাধ্যমে মানবজাতির জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করা জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর হয় না। বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে প্রশ্ন করাকে উৎসাহ দেওয়া হয়, এবং প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ব্যবহার করা হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এক্সপেরিমেন্টেশন, যার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে যুক্তিসম্মত এবং পরিমাপ-সম্ভব প্রমাণ, এম্পিরিকাল, রেশনাল, মেজারেব্ল এভিডেন্স। এই প্রণালীর প্রয়োজনীয় দিকগুলো বা স্টেপ্স্ হল যৌক্তিক নিয়মাবলী অনুসারে পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ, পরীক্ষণ, এবং প্রকল্পীকরণ বা ফর্ম্যুলেশন অফ হাইপোথিসিস, আবার তার পরীক্ষা এবং প্রয়োজনবিশেষে সংশোধন। যুক্তিযুক্ত প্রমাণ হতে গেলে এই সমস্ত স্টেপগুলোর বারংবার অনুষ্ঠান প্রয়োজন; প্রয়োজন প্রশ্নসংকুল, সমালোচনাসূচক মনোবৃত্তির। এই ধরণের মনোবৃত্তি বিজ্ঞান চর্চা, আলোচনা, প্রসার এবং বিজ্ঞানের বোধের জন্য অত্যন্ত আবশ্যক।
পো-মো কচকচি এবং দর্শনশাস্ত্রের জটিলতার কথা বাদ দিলে, বাকি যা যা আপনি উল্লেখ করেছেন, পরিবেশবাদ, নৃতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, পশু-অধিকার অ্যাক্টিভিজ্ম – এর সবই কিন্তু একই সূত্রে বাঁধা হতে পারে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চর্চার। যুক্তি-প্রমাণ-পরীক্ষণের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে এনে ফেলতে পারলে কিন্তু এগুলো উপকারী জ্ঞান হয়ে ওঠে। জীবনের যে কোন দিকের মতনই বিজ্ঞানের চর্চাতেও একটা ব্যালান্স দরকার; অনেক সময়ে আমরা এক বিষয় নিয়ে কাজ করতে করতে অজান্তেই সেদিকে বায়াস্ড্ হয়ে পড়ি, বিপরীত বা পৃথক মতবাদগুলোকে চেনার ক্ষমতা কমে আসে। এই বিপরীত মতবাদগুলো যদি অকাট্য যুক্তির ওপরে নির্ভরশীল হয় বা সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়, তাহলে সেগুলো আমাদেরকে বাধ্য করে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য, রি-ইভ্যালুয়েশনের জন্য। এতে আখেরে জ্ঞানসম্পদেরই উন্নতি ঘটে। আপনি যে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর কথা বলেছেন, আমার মতে তার সারগর্ভ হল সায়েন্টিফিক মেথড।
শুধু দুঃখের কথা এই যে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে এই বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর চূড়ান্ত অভাব, এবং বেশীর ভাগ আর্গ্যুমেন্ট যুক্তি-বুদ্ধির ধার ধারে না। কৌস্তুভের ‘অচেতন নাস্তিক’রা যেমন এই দলে পড়েন, তেমনি পড়েন ঐ মাত্রাতিরিক্ত নিউ এজ নিয়ে মাতামাতি করা লোকজন। একধরণের নিউ এজ-ই বৌদ্ধদের খোঁজ পেয়েছি, যারা একজন জাপানী বৌদ্ধ দার্শনিকের ধ্যানধারণাকে ফলো করেন – যেটা অনুযায়ী তারা তাদের কোন মনোবাসনার কথা স্মরণে রেখে প্রাণপণে একটা মন্ত্র জপ করে যান, তাতে নাকি অবশেষে মহাবিশ্ব তাদের মনস্কামনা পূরণ করে থাকে! এরকমই আরেক গা** হলেন প্রাক্তন ডাক্তার শ্রী দীপক চোপরা – যিনি পাশ্চাত্যের নিউ এজ-ই মানুষের কাছে খুবই আবেদনপূর্ণ এবং গ্রহনযোগ্য, কিন্তু যার কথাবার্তা একটু মন দিয়ে শুনলে বা বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় তা কতটা অন্তঃসারশূন্য, ইন্টেলেকচ্যুয়াল স্বমেহন!
@কৌশিকদা, সহমত। এখানে আল্লাচালাইনা আর ব্লাডি সিভিলিয়ান এই দুজনের চমৎকার ধারালো কমেন্টগুলো পেয়ে এঁদের আরো কাল্টিভেট করতে আমারও মন চাইছে।
@আল্লাচালাইনা,
চমৎকার! এই পয়েন্টে তাহলে আপনার সাথে কোলাকুলি করতে আমারও আগ্রহ, উপরে কৌশিকের মত।
পয়েন্টটা পরিষ্কার করার প্রয়োজন মনে করেছি কৌস্তুভের প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে। লক্ষ্য করবেন, জাতকের ঐতিহাসিকতা নিয়ে কৌস্তুভ কতকটা সময় ব্যয় করেছেন **ব্যক্তি** বুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্টতার চেষ্টায়। কারণ তা না হলে জাতক ত্রয়োদশ শতাব্দীতে লেখা হলেও কিছু এসে যায় না, তাই না? সেক্ষেত্রে মূল কথাটা দাঁড়ায় বৌদ্ধ ধর্মতত্বে জাতকের স্থান কি সেটা, তার ঐতিহাসিক পরিচয় নয়। অবশ্য আপনার clarification এর পরে এ নিয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন নেই।
আপনি ইতিহাস পড়ে শিখেছেন সেটা আমি বলিনি। খুব কম লোকই বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক বিকাশ সম্বন্ধে সচেতন থেকে বিজ্ঞান শেখে, আমিও শিখিনি। সেটা পয়েন্ট নয়। আপনি-আমি সচেতন থাকি না থাকি, সায়েন্টিফিক রেভিলুশনের সময় বিরাট দার্শনিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ফলেই আজকে আমার-আপনার কাছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দৃষ্টিভঙ্গিটি obvious। আমার মন্তব্য ছিল, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি একটি সাংস্কৃতিক-দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেটা বুদ্ধের সময় মোটামুটি অবিকশিত ছিল (বিশেষত ভারতে)।
@রৌরব, ইস, এই “পদ্ধতি” কথাটা আমার মাথায় চমকালো না! ধন্যবাদ।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার কি মনে হয় কৌস্তুভের ডাইকটমি আপনার লিস্টের সাথে খাপ খাপ মিলে যায়? ধরেন একজন উন্মাদ এনিমল রাইটস এক্টিভিস্ট (আপনি চিনি কিছু)। সে কেন necessarily (এমনকি statistically) অচেতন নাস্তিক, বুঝলাম না কিন্তু। false ডাইকটমি মনে হচ্ছে।
সে কারণেই বুদ্ধকে কোন মুরতাদ-ঈমানদার মার্কা ইসলামগন্ধী ডাইকটমির মধ্যে ফেলতে অনাগ্রহী আমি। স্যাম হ্যারিস একজন বুদ্ধ ভক্ত (ঐতিহাসিক ব্যক্তি অর্থে)। তার এই ভক্তি সম্বন্ধে ব্যক্তিগত ভাবে আমি nonchalant। কিন্তু এই exquisite যুক্তিবাদীকে তাই বলে অচেতন নাস্তিক ঘোষণা করতে নারাজ আছি।
ইদানিং অধ্যাত্মিকবাদিদের নিয়ে খুবই ঝামেলায় আছি। তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরলাম শুধু আলোচনার খাতিরে। আর এরকম একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
১.
বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং ইসলাম এই তিনটি ধর্মেরই লিখিত রূপ প্রকাশ পায় এর প্রবর্তকরা মারা যাবার পর। তাই আমার ধারনা এইসব বই পুস্তক দিয়ে ধর্ম প্রচারের কোন ইচ্ছাই তাদের ছিল না। কাজেই আমরা যখন জাতক, বাইবেল বা কোরআন হাদিসের আলোকে ধর্মকে বিচার করি তখন আমার ধারনা আমরা ভুল করি। কাজেই গুরুবাদ এখানে একটা সমাধান হতে পারে। যদি সেই গুরুও বই-পুস্তকের মুখাপেক্ষী না হয়।
২.
অনেকের মাঝেই দেখলাম সংসার ত্যাগ করাটাকে খুব খারাপ কাজ হিসেবে ভাবার একটা প্রবণতা আছে। আসলে আমরা প্রতিনিয়তই কিন্তু এই কাজ করে যাচ্ছি। যারা নিজের বাবা-মা, বাড়ী-ঘর ছেড়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় বা খেলাধুলা করতে সারা দুনিয়া ঘুরে বেরায় তারাও কি এক ধরনের সংসার ত্যাগী না? নিজেদের পড়ালেখা বা কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে তারা কি জীবনের অনেক কিছুই উপেক্ষা করছেন না? আর সাধনা করার জন্য সংসার ত্যাগ করাটা কিন্তু সারাজীবনের জন্য নয়। অনেকটা ব্যচেলর ডিগ্রীর মত চার-পাঁচ বছরের ব্যপার। এরপর কেউ চাইলে সংসারী হয়, আর কেউ চাইলে সন্ন্যাস নিয়ে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার কাজে জীবন ব্যয় করতে পারে।
তবে সংসার ত্যাগ করা বলতে যারা যৌণজীবন ত্যাগ করা বুঝাচ্ছেন, তাদের জন্য সাধু-সন্ন্যাসীদের বক্তব্য হলো, যৌণতা শুধুই পুনঃউৎপাদনের জন্যই। কাজেই সংসার করলেও যা না করলেও তাই।
৩.
ইদানিং কিছু মিস্টিকদের ফলো করে যা জানলাম আধ্যাত্মিকতা আসলে কোন যুক্তি-তর্কের বিষয় নয়। এটা মানুষের যুক্তি-বোধেরও বাইরে। নির্দষ্ট কিছু নিয়ম (যার আবার হাজার হাজার পথ আছে) মেনে অধ্যাবসায় করলে তা মানুষের অভিজ্ঞতার মধ্যে (অনেকে বলে alter consciousness )ধরা পরে। তাহলে এটাকে আমরা যুক্তি-তর্ক দিয়ে কিভাবে বিচার করব?
৪.
ধর্মবদীদের চেয়ে আধ্যাত্মিকতাবাদীদের পথ একটু বেশি সাহসী। তারা শুধু তাদেরকেই অনুসরন করতে বলে যারা নিজেরাই বৌদ্ধের মত নির্বাণপ্রাপ্ত। এরকম Enlightened গুরু দাবিকারি মানুষ কিন্তু এই জামানাতেও কম নেই। তাদের নিয়ে আলোচনা করলে বোধহয় বিষয়টা আরও পরিস্কার হয়।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
১ নং এর প্রেক্ষিতে বলতে পারি, প্রচলিত ধর্মের সমালোচনার জন্য ওই ধর্মের ঘোষিত প্রচারকের মূল বাণী কি ছিল এটা অবান্তর। যেভাবেই হোক ধর্ম একটি বিশেষ রূপ পেয়েছে, সেই প্রচলিত রূপের সমালোচনা হতেই পারে। অনেক ধর্মের প্রবক্তারা ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন কিনা সেবিষয়েই সন্দেহ আছে (ইহুদী ও হিন্দুধর্ম উল্লেখ্য)। তার মানে এই নয় যে ধর্মগুলি হাজার হাজার বছর ধরে তাদের (কু)-কাজ গুলি করে যায় নি।
সোজা কথা ভারতীয় ট্রাডিশনে একটা জীবনবিমূখতা আছে যেটা এই সংসার ত্যাগের বাতিকগ্রস্ততার মধ্যে প্রকাশিত। জীবনবাদীদের পক্ষে একে গ্রহণ করা মুশকিল।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
১। তাঁরা যা বলেছিলেন ধর্ম সম্পর্কে, তারই সংকলন কিন্তু বইগুলো। পরে অবশ্য ধর্মীয় নেতারা অনেক অদলবদল করেছেন, কিন্তু বইগুলো অংশত হলেও তাঁদের মতেরও প্রকাশ।
তারপর রৌরব যা বলেছেন সেটাও সত্যি। “যেভাবেই হোক ধর্ম একটি বিশেষ রূপ পেয়েছে, সেই প্রচলিত রূপের সমালোচনা হতেই পারে।”
২। আমার কথাটা খেয়াল করে দেখুন – সংসার-সমাজ। যে বিদেশে যাচ্ছে সে তার দেশের পরিবার, সমাজকে ত্যাগ করে গেলেও সেখানে গিয়ে একটা নতুন সমাজেই বাসা করছে। আর সন্ন্যাসীরা সব ছেড়ে নির্জনে গিয়ে তপস্যায় বসছেন।
এটাই মূল পয়েন্টও নয় – মূল কথা হল, আমি বিদেশে যাচ্ছি উচ্চশিক্ষা বা চাকরি করতে, যেটা একটা বাস্তব লক্ষ্য। আর ‘পরম শান্তি’র মত একটা অবাস্তব, ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়ে তাঁরা সব ছেড়ে যাচ্ছেন।
আর “যৌণতা শুধুই পুনঃউৎপাদনের জন্যই। কাজেই সংসার করলেও যা না করলেও তাই।” বিষয়ে আপনার কি মনে হয়, তাঁরা সবাই সংসার না করলেও বনে গিয়ে নিয়মিত পুনঃউৎপাদন ঠিকই করতেন? নইলে এ কথার অর্থ কী?
৩। মিস্টিকদের ওই কথাগুলো ভ্রান্ত যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। “আমার এ ক্ষেত্র তোমাদের বোধ্যের অগম্য, প্রবেশের অযোগ্য, তোমরা দূরেই থাক, আমার এ ক্ষেত্র নিয়ে কেবল আমিই চিন্তাভাবনায় থাকব” টাইপের ছেঁদো কথা, পষ্টাপষ্টি বলতে গেলে। (ডেনেটের বই থেকে বলছি), অনেকটা যেমন প্রথমযুগের পাশ্চাত্য নারীবাদীরা বলতেন, নারীদের প্রকৃত কথা বুঝতে গেলে নারী হয়ে জন্মানো আবশ্যক, তাই womens’ studies এ পুরুষদের কোনো স্থান নেই।
৪। “ধর্মবদীদের চেয়ে আধ্যাত্মিকতাবাদীদের পথ একটু বেশি সাহসী।” এই কথাটার পেছনে কোনো যুক্তি দেখলাম না। যাহোক, এই প্রবন্ধটার উদ্দেশ্য যা, সেটা আশাকরি ধরতে পেরেছেন, আর সেটা আধ্যাত্মিকতাবাদ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তাই সেটাতে ওই নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করিনি। আপনি চাইলে ভিন্ন একটা পোস্ট দিয়ে আলোচনা শুরু করুন না। তবে দোহাই আপনার, ওই ৩-এর মত কারুর কারুর ছেঁদো যুক্তিকে কোট করে তাই-নির্ভর আলোচনা চালাবেন না প্লিজ। যথার্থ যুক্তির অপেক্ষায় রইলাম।
@কৌস্তুভ,
আপনার পোস্টের মূল অর্থ ধরতে পেরেছি। কিন্তু আসলে এখানে এসব লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার ধারনা এই পোস্ট যারা পড়বে তারা এসব নিয়ে ভাবে। তাই হয়তো কিছু উত্তর পাওয়া যাবে। আমি নতুন পোস্ট দিতে পারলে তো হতোই!:)। কিন্তু সেটা আর এক পড়বে?
১.
এই ব্যাপারে একমত। তবে যারা এগুলো প্রচার করেছেন তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে এটা মনে হয় খুব সহায়ক না। তাদের উদ্দেশ্য আমি বুঝতে চাচ্ছি, কারন তাদের দাবি অনেক বড়, ওখানে আশা অনেক বেশি। তারা সমাধান দিতে পারে বা সমাধান তাদের কাছে ছিল এরকমই প্রচলিত ধারনা। “আমি জানি না” এটা মতবাদ হিসেবে ভালো, কিন্তু মানুষ কখনও এতে শান্তি বা স্বস্তি লাভ করে না। জানতে তাকে হবেই। কৌতুহল তার মজ্জাগত। তাই যখন কেউ দাবি করে আমার কাছে উত্তর আছে, তখন তাকে বুঝতে মন চায়।
২. সব সন্ন্যাসীরা কিন্তু নির্জনে গিয়ে একা সাধনা করে না। বেশিরভাগই কোন না কোন গুরুর অধীনে থাকে, তাদের একটা সন্ন্যাসী সমাজও আছে। আর বাস্তব অবাস্তব তো একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কত জনই তো ব্যাংকে চাকরি করছে। বিষয়টা না জানার আগে এবং তার প্রয়োগ বাস্তব জীবনে করতে না পারলে সবই কিন্তু অবাস্তব।
এই কথা বলে আসলে বুঝাতে চাচ্ছি যে, সন্ন্যাসীরা কিন্তু তাদের লিংঙ্গ কর্তন করছে না বা তাদের যৌণ ক্ষমতাও ধ্বংস করার উদ্দেশ্য তাদের নয়। পৃথীবিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিই আসলে বড় সমস্যা। তাই যারা এর বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের তো সাধুবাদ দিতেই হয়। যদি প্রয়োজন পরতো বা পরে তাহলে একজন সন্ন্যাসীও যৌণতায় অংশ নিতে পারে পুনঃউৎপাদনের জন্য। (তাত্ত্বিকভাবে)
৩. মিস্টিকরা কিন্তু অন্যদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন না। তারা সবাইকে সাধনা করতে বলছেন। তারা কিন্তু বলছেন না আপনাকে দিয়ে সাধনা হবে না, তাই আপনি অফ যান।
৪. আধ্যাত্মবাদিরা বেশি সাহসী বলছি এইকারনে যে তারা সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন যে, নির্দিষ্ট সময় সাধনা করে দেখুন যদি কিছু না পান তাহলে গালি দিয়েন এবং সেটা বর্তমানেই। মৃত্যুর পরে না।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
১. ঠিক আছে, তবে আগে বিচার করে নেবেন যে সে ভ্রান্ত/ভণ্ড কি না। হলে তার দাবির উপর মিথ্যা আশা রেখে লাভ নেই।
২। “সব সন্ন্যাসীরা কিন্তু নির্জনে গিয়ে একা সাধনা করে না। … তাদের একটা সন্ন্যাসী সমাজও আছে।”
ঠিক।
কৃষিবিদ্যা একটা বাস্তব বিদ্যা, সেটা অনুসরণ করলে সত্যিই চাষে উন্নতি করা সম্ভব। ব্যাঙ্কিং ও তাই। কিন্তু থিওলজি একটা অবাস্তব, কাল্পনিক, ভ্রান্ত বিদ্যা। প্রয়োগ না করতে পারলেই একটা বাস্তব বিদ্যা অবাস্তব হয়ে যায় না। তেমনই কথার মারপ্যাঁচে কোনো অবাস্তব বিদ্যাকেও বাস্তব করে তোলা যায় না।
৩। তপস্যার মত একটা অনর্থক জিনিস তারা আমাকে করবার অনুমতি দিলেই বা কি কচু? তারা যেটা বলছে, যেটায় আমাদের আপত্তি, সেটা এই, যে সাধক না হলে সাধনাকে সমালোচনা করার যোগ্যতা তোমার নেই। মিস্টিক ছাড়া মিস্টিসিজম-কে সমালোচনা করার অধিকার অন্যদের নেই।
এইরকম চ্যালেঞ্জ কোনো বিখ্যাত গুরু দিয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই। রেফারেন্স দেন তাহলে। অনেকদিন সাধনা করেও ব্যর্থ হলে সে দায় আপনারই চিত্তচাঞ্চল্য ইত্যাদির উপর চাপানো হয়।
@কৌস্তুভ,
সে হিসাবে কিন্তু আধ্যাত্মিকতাও বাস্তব বিদ্যা। মেডিটেশন করলে যে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে এবং যোগ ব্যয়ামে যে শরীরের উপর নিয়ন্ত্রন বাড়ে এটা তো আর অপ্রমানিত নেই। মিস্টিসিজমে তো এগুলো দিয়েই হাতে খড়ি।
মিস্টিসিজমকে সমালোচনা করার অধিকার নেই তা না, তারা বলতে চায় সেটা বুঝার ক্ষমতা নেই।
আমাদের দেশে একজন আছেন, ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী। তিনি দাবি করেন তার অধীনে চারমাস সাধনা করলে আধ্যাত্মিকতার মূল জিনিসটা অন্ত্যত বুঝা যায়। যদিও উনি তকদীরে বিশ্বাসী, কেউ না বুঝলে তকদীরের উপর চাপান কিনা জানি না।
ভারতে একজন আছেন সাদগুরু বাসুদেব। তার কথা হলো আপনি যত শক্ত সুপারিই হন না কেন, যেহেতু আপনি তার কাছে গিয়েছেন তিনি আপনাকে ভেঙ্গে ছাড়বেনই।
কামনা এবং নারী নিয়ে বৌদ্ধ দর্শনের অবস্থান বেশ ভুলভাল-সেটা নিয়ে আমি বছর চারেক আগেই একটি ব্লগ লিখেছিলাম।
Absurdity of Buddhist philosophy
তবে তাতে বৌদ্ধ দর্শন ১০০% ভুল এমন ভাবার কারন নেই। বুদ্ধর কৃতিত্বকেও ছোট করা যায় না। তিনিই প্রথম একটি যুক্তিবাদি জীবন দর্শনের জন্ম দিয়েছেন।
সব ধর্ম থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে। অন্তত আমি শিখেছি। আবার বর্জন করার মতন আবর্জনাও আছে প্রচুর। ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে রাডিক্যাল অবস্থান নেওয়ার আমি ঘোর বিরোধি।
@বিপ্লব পাল,
আমি ধর্মের বিপক্ষে র্যাশনাল অবস্থান নেওয়ার পক্ষে। :))
@কৌস্তুভ,
জীবনের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে ১০০% যুক্তিবাদি অবস্থান বলতে কিছু হয় না। এই মহাবিশ্ব একটি বিন্দু হতে সৃষ্ট, একটি বিন্দুতেই এর শেষ। সুতরাং জীবনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় যায় থাকুক না কেন, কিছুই বদলাবে না। সেই জন্যেই এই ব্যাপারে যুক্তি খাটে না-মানবতা একমাত্র গ্রহণযোগ্য ।
@বিপ্লব পাল,
১) মানবতা গ্রহণ বা পালনের জন্য ধর্মের খিদমতগারী করার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ধর্মের বিপক্ষে যুক্তিযুক্তভাবে কিছু বলার থাকলে বলে ফেলাটাই সমীচিন
২) যুক্তিবাদ বা রেশনালিজম “জীবনের উদ্দেশ্য”র মত ব্যক্তিগত এবং নেব্যুলাস কনসেপ্ট নিয়ে সাধারণত মাথা ঘামায় না
৩) মহাবিশ্ব বিন্দুতে সৃষ্টি ও শেষের সঙ্গে যুক্তিবাদ বা যুক্তিবাদী অবস্থানের সংঘাত কোথায়? মানবতাবাদের সঙ্গেই বা যুক্তির কোথায় বিতর্ক রয়েছে? এই ধরণের অদ্ভুত অবস্থান নেওয়াতে শুধু শুধু একটা ভ্রান্ত দ্বিমুখিতা (ফল্স্ ডাইকোটোমী) তৈরী করাই সার হয়।
@বিপ্লব পাল,
মাফ করবেন, কিন্তু মনে হচ্ছে, আপনি ইচ্ছা করে সোজা ব্যাপারগুলোকে মিস্টিক রাখতে চাইছেন। নইলে ধর্ম বা যুক্তিবাদের আলোচনায় ‘বিন্দু থেকে শুরু আর বিন্দুতেই শেষ’ টাইপের অ্যাবস্ট্রাক্ট কথা টেনে আনার কোনো যুক্তি দেখি না। আমরা যখন ক্যান্সার রোগের পেছনে মিউটেশনগুলো খোঁজবার চেষ্টা করি, তখন ডিএনএ’র মধ্যে কার্বন পরমাণু আর তার মধ্যে কোয়ার্ক-এই স্তরে গিয়ে লাভ নেই, সেটা যতই সত্যি হোক সেটা এই আলোচনায় প্রয়োজনীয় নয়। এই আলোচনায় বিগ ব্যাং-এর কথা তুলে আনাও তাই।
“জীবনের উদ্দেশ্য”-র মত একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট শব্দ প্রয়োগেই বা আপনি কী বোঝাতে চাইছেন তা স্পষ্ট নয়। সচেতন উদ্দেশ্য, না অসচেতন উদ্দেশ্য? লোকে যখন ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদ্দেশ্য’ বলে তখন সেটাকে একটা সচেতন বস্তু বলে ধরে নেয় না। তার একটা পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য আছে বলে কেউ মনে করে না। তবুও সেটা এমনভাবে কাজ করে যে সেই পন্থার একটা বিশেষ পথ, একটা বিশেষ টার্গেট আছে বলে মনে হয়। তা “প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদ্দেশ্য বা বিধেয় কিছুই বদলাবে না, তাই যুক্তিবাদ দিয়ে কোনো কাজ নেই” এরকম কথার আমি কোনো কারণ দেখি না।
@কৌস্তুভ,
তোমার জীবন আসলে তোমার নিজের নেওয়া কোটি কোটি সিদ্ধান্তের মিলিত ফসল। তোমার প্রতিটা একশনের পেছনে আছে কোন না কোন সিদ্ধান্ত।
তা এই যে কোটি কোটি সিদ্ধান্ত প্রতি মুহুর্তে নিয়ে চলেছ-এর মধ্যে কোনটির সাথে জীবনের উদ্দেশ্যের যোগ নেই?
তুমি একটি সিদ্ধান্ত বা একটি একশন দেখাও যা জীবনের উদ্দেশ্য দ্বারা চালিত না। তারপর তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব। যুক্তির ওপরে স্তরে আছে বোধ। এগুলো রিয়ালাইজেশন ছারা বুঝবে না। আগে দেখাও একটি ও সিদ্ধান্ত তুমি নিয়েছ যার সাথে জীবনের উদ্দেশ্যের যোগ নেই। তারপরে আমি লিখছি, এই পরম শুন্যতা কি করে, ডাইসিঙ্ক্রনাস ওয়ার্লড ভিউ তৈরী করে।
আরে, আপনি আগে তো বারবার “জীবনের উদ্দেশ্য” বলতে কী বোঝাচ্ছেন তা সংজ্ঞায়িত করুন, তবে তো পরবর্তী কথা!
@কৌস্তুভ,
বা, তাহলে পালাচ্ছ। সুবিধা হবে না। দর্শনে ডিকনস্ট্রাকশন বলে একটা ব্যাপার দারিদা দেখিয়ে গেছেন, যা থেকে পরিস্কার, পৃথিবীর কোন বাক্যের কোন সঠিক মানে হয় না-সব বাক্যের বা ফ্রেজের মধ্যেই অপূর্নতা থাকবে। সুতরাং ১০০% পরিস্কার কোন বক্তব্য বাক্যই রাখতে পারে না -“জীবনের উদ্দেশ্য” এই দুটি শব্দও নয়। কোন যুক্তিবাদি বক্তব্যও একই কারনে ১০০% পরিস্কার ব্যাখ্যায়িত হতে পারে না।
জীবনের উদ্দেশ্যের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা- “বেঁচে থাকার ইচ্ছা হয় কেন? “-এটি ১০০% অর্থ পরিস্কার করে না-কিন্ত তবুও কাছাকাছি বক্তব্য রাখে।
@বিপ্লব পাল,
বাঃ, বাঃ… আপনি পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করলেন না বলে ফিরে প্রশ্ন করলাম, আর সেটাকে আমার পালানো হিসাবে ইন্টারপ্রেট করে আমাকেই দায়ী করলেন!
অবশ্য এ ধরনের ব্যবহারের সঙ্গে আমি অপরিচিত নই। তেমনই অপরিচিত নই, একটা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী আলোচনায় ফুকো-দেরিদার প্রসঙ্গ এনে সেটাকে ঘোলাটে করে দেওয়ার প্রয়াসেও। তাই সেই পন্থায় সুবিধা পাবেন না।
“পৃথিবীর কোন বাক্যের কোন সঠিক মানে হয় না” অতএব ডারউইনের তত্ত্বেরও কোনো পরিষ্কার মানে হয় না অতএব সেটাও সম্পূর্ণ সঠিক নয়… এরকম লাইনে চলে যাবার প্রচেষ্টাও আসতেই পারে এর পর তাহলে, তার সঙ্গেও আমি অপরিচিত নই।
“বেঁচে থাকার ইচ্ছা হয় কেন” প্রশ্নটার খুবই সুসংজ্ঞাত, কংক্রিট উত্তর আছে। মুক্তমনার লেখক-পাঠক হিসাবে আপনার সেটা জানা না থাকলে আশ্চর্যই হব।
এটাতে আগে স্পষ্ট করে নিতে হবে, কার ইচ্ছা? মানুষ ইত্যাদি বুদ্ধিমান প্রাণীর যেমন একটা সচেতন ‘ইচ্ছা’ বলে বস্তু আছে, ব্যাকটিরিয়া ইত্যাদির তা নেই। তাও তারা অজ্ঞানেই এমনভাবে আচরণ করে যে তাদেরও বাঁচার ইচ্ছা আছে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূলের সেই মোটিভই মানুষের অবচেতনেও রয়ে গেছে। তবে সচেতন প্রাণী বলে আমরা সেটাকে ওভাররাইড করতে পারি, আত্মবলিদান দিতে পারি। এ নিয়ে তো ডকিন্স ইত্যাদির বইতেই বিস্তারিত আলোচনা আছে।
@কৌস্তুভ,
1. জীবনের উদ্দেশ্য এর মানে তুমি জানতে চেয়েছ। আমি না। সুতরাং আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরিয়েছ তুমি। আমি আবার জিজ্ঞাসা করছি, তুমি এমন একটা একশন বা সিদ্ধান্ত দেখাও যেটার পেছনে “জীবন দর্শনের ” বা জীবনের উদ্দেশ্যের ভূমিকা নেই।
২| চেতনা বস্তুটা নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক মডেল আজও নেই-যেটুকু আছে, সেটুকু খুবই দুর্বল। আর এখানে আমি চেতনা নিয়ে কথা বলছি না। প্রশ্ন আবার করছি-জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে।
আর বায়োলজী দিয়ে যদি জীবনের উদ্দেশ্য ডেরাইভ করা যেত, তাহলে যেসব দম্পতি সন্তান ইচ্ছা করে নেয় না তাদের জীবনের উদ্দেশ্য তারা কোথা হইতে পায়? আর বায়োলজি দিয়েই যদি জীবন দর্শন আনা যায় সম্পূর্ন-তা হলে পাশবিক আচরনে বাধা কোথায়?
তবে এত ভাবতে হবে না। আমি শুধু সংক্ষিপ্ত উত্তর চাইছি-তোমার জীবনে একটি মাত্র সিদ্ধান্ত বা কর্ম বল, যার সাথে তোমার জীবনের উদ্দেশ্যের যোগ নেই। তারপর দেখা যাবে।
@বিপ্লব পাল,
আপনার “পালাচ্ছ”, “কথা ঘুরিয়েছ” এইধরণের অহেতুক এবং বিনা প্ররোচনায় আসা কথাগুলি আমার কাছে আপত্তিজনক এবং অপমানজনক মনে হয়েছে।
আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে আমি আপনার প্রশ্নটাই সঠিকভাবে বুঝতে চেয়েছি, তাই ক্ল্যারিফিকেশনের জন্য আপনাকে ফিরতি প্রশ্ন করেছি, এবং সেই ক্ল্যারিফিকেশন আসা পর্যন্ত আপনার উত্তর দিতে অপেক্ষা করেছি। এই ‘পজ’ এর মধ্যে কথা ঘোরানো বা পালানো আবিষ্কার করে আমায় অভিযুক্ত করা আমার কাছে আপত্তিজনক।
এই পোস্টে আরো অনেকের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তর্ক হয়েছে। তাঁরা কেউই আমায় এভাবে অযথা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। এবং, জাস্ট ফর এক্সাম্পল, এখানে অনেক অপরিচিত জনের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে, তাঁরা কেউই কিন্তু হঠাৎ করে আমায় ‘তুমি’ও বলেননি। তুমি বলার জন্য আমি আপনার কাছে জবাবদিহি চাইছি না, অভিযোগও করছি না। শুধু আপনার এই আন-ইউজুয়াল আচরণের ইউনিকনেস দেখাতে এই প্রসঙ্গ তুললাম।
ভবিষ্যতে আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় সাবধান থাকতে হবে, বুঝলাম।
———————————————————–
এবার আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
“জীবনের উদ্দেশ্য” বলতে আপনি বলছেন “বেঁচে থাকার ইচ্ছা”। আমাদের অনেক ক্রিয়াই কেবলমাত্র আমাদের খামখেয়াল-নির্ভর, বা এমন যুক্তিনির্ভর যার সঙ্গে “বেঁচে থাকার ইচ্ছা”-র কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই।
একটা উদাহরণ চেয়েছেন। দিচ্ছি। আমি এই লেখাটা লেখার পর সচলায়তনে পোস্ট করব না মুক্তমনায় পোস্ট করব তাই নিয়ে ভাবছিলাম। শেষে আমি এখানে পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নিই। এর পেছনে এমন যুক্তি, যা আমার “বেঁচে থাকার ইচ্ছা”-প্রসূত, বা এই কাজটি যে আমার “সারভাইভাল প্রবাবিলিটি”-তে কোনোভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখানো সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা।
@কৌস্তুভ,
বিশ্লেষন গ্রহণযোগ্য নহে। লেখার মধ্যে নিজের জীবন দর্শন অন্যকে জানানো সব থেকে বেশী বড় ড্রাইভার। যেকোন লেখা এবং লেখা পোষ্ট করা[ যেখানেই হোক না কেন] তা জীবন দর্শনের তাড়না থেকেই আসে।
আর খাম খেয়ালি পনা বা ইরাশানালিজমকে মেনে নিলে ত আমার আপত্তি নেই। তাহলে ধর্মকে মানতেই বা দোষ কোথায়? আমি ত ঠিক এটাই বলছিলাম, জীবনের সব কিছু যুক্তিপূর্ণ হতে পারে না-সেখানে অযৌক্তিকতার স্থান যথেষ্টই। তাই যদি হয়, ধর্মের মতন অযৌত্বিক জিনিসও [ যদিও ঐতিহাসিক ভাবে সামাজিক শক্তির উত্থানে ধর্মের দরকার ছিল ] টীকে থাকতেই পারে। অযৌক্তিকতাবাদকে মেনে নিলে, বিতর্কের প্রয়োজন নেই-তবে সেখানে সর্বত্র যুক্তি এবং বিজ্ঞান দিয়ে সব কিছু পেয়ে গেছি এমন ভাবে না লিখলেই হবে :lotpot:
@কৌস্তুভ,
একমত। বিপ্লবের উচিৎ নতুন সদস্যদের সাথে আলোচনায় আরেকটু সংবেদনশীল হওয়া। কারো প্রশ্নের উত্তরে “পালাচ্ছ”, “কথা ঘুরিয়েছ” ইত্যাদি প্রোভোকেটিভ শব্দ ব্যবহার না করাই ভাল। আমি আবেগের সাথে বিতর্ক করতে নিষেধ করছি না, কিন্তু অযাচিত বিশেষণ এবং উপসংহার অনেকের বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে, বিশেষতঃ যারা বিপ্লবের টোন এবং মন্তব্যের ঢং এর সাথে পরিচিত নয়। আর কারো সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় বা আলাপ না থাকলে আপনি করে বলাই সমীচীন। এর আগেও অনেকে হঠাৎ ‘তুমি’, ‘তুমি’ করে বলায় সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছেন। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে অনুরোধ করছি।
@বিপ্লব পাল,
ইসলাম থেকে নতুন কী এমন শিখেছেন, যা পূর্বের কোন ধর্মগ্রন্থে বা দর্শনে এর আগে ছিলনা?
@আকাশ মালিক,
ইসলাম একেশ্বরবাদের সর্বাধিক বিবর্তিত রূপ। এই ধর্মে প্রথম সামাজিক শক্তির ওপর সব থেকে বেশী জোর দেওয়া হয়। ধর্মের ভিত্তিতে সমাজকে একত্রিত এর আগেও হয়েছে-কিন্ত ইসলামে সেটির পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়া যায়। মধ্যযুগে সেটিই ছিল প্রগতিশীলতা-কিন্ত বর্তমানে তাই হয়ে ঊঠেছে জঞ্জাল।
তাছারা সুফী ইসলাম মানুষ এবং মানবতাকে মুক্ত করেছে-জাতি ধর্ম দেশের ওপরে মানুষের স্থান, সুফীগুরু রুমি যে ভাষায় লিখে গেছেন, এর আগে কেও লিখেছে বলে জানি না।
***********************
The outcome of my life is no more than three lines:
I was a raw material.
I became mature and cooked.
And I was burned into nothingness.
— — Rumi
Why think thus O men of piety
I have returned to sobriety
I am neither a Moslem nor a Hindu
I am not Christian, Zoroastrian, nor Jew
I am neither of the West nor the East
Not of the ocean, nor an earthly beast
I am neither a natural wonder
Nor from the stars yonder
Neither flesh of dust, nor wind inspire
Nor water in veins, nor made of fire
I am neither an earthly carpet, nor gems terrestrial
Nor am I confined to Creation, nor the Throne Celestial
Not of ancient promises, nor of future prophecy
Not of hellish anguish, nor of paradisic ecstasy
Neither the progeny of Adam, nor Eve
Nor of the world of heavenly make-believe
My place is the no-place
My image is without face
Neither of body nor the soul
I am of the Divine Whole.
I eliminated duality with joyous laughter
Saw the unity of here and the hereafter
Unity is what I sing, unity is what I speak
Unity is what I know, unity is what I seek
— রুমি
********************
কনফুসিয়াসও এই বিশ্বমানবতার পথিক-কিন্ত তার লেখাও এতটা মানব মুক্তির সাধনা ছিল না।
@বিপ্লব পাল,
ইসলাম যে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে মোটামুটি নতুনত্ববিহীন, এটা কিন্তু আপনার প্রশংসামূলক মন্তব্যেও প্রকাশিত। আগেই প্রচারিত কিছু জিনিসের “বিশুদ্ধ”-তর ফর্ম ছাড়া আসলেই এর মধ্যে কিছু নেই।
@বিপ্লব পাল,
ইসলাম-এর শিক্ষার প্রসঙ্গে সুফীদের কথা টেনে আনার জন্য ধন্যবাদ। এতে আমার বক্তব্যের কিঞ্চিৎ সুবিধা হল। ‘প্রগতিশীল’, ‘বিবর্তিত’, ‘সমাজকে একত্রিত’কারী ইসলাম – সুন্নি এবং শি’য়া – কখনোই সুফীদের খুব একটা পছন্দ করেনি, যদিও সুফীরা প্রথাগতভাবে নিজেদের মুসলমান বলে পরিচয় দিয়ে এসেছে। সুফী লেখাপত্রে খ্রীষ্টধর্মের, এমনকি মধ্যযুগীয় নস্টিক বা হেরেটিকাল খ্রীষ্টীয় মিস্টিসিজম-এর, যরথ্রুস্টবাদ-এর, কিয়ৎপরিমাণে হিন্দুধর্মের ছোঁওয়া লেগে আছে। সুফীরা ইসলামিক আইনাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করে না, এবং তাদের ইচ্ছানুযায়ী এমন কিছু মিথিক্যাল ক্যারেক্টারের ভজনা করে যা কিনা ইসলামে নেই। যেমন, আল-খিদ্র, যার মৃত্যু নেই, যে ইচ্ছাখুশীমত মানুষজনকে হত্যা করতে পারে, কয়েকটি হাডিথ/haহাদীশ অনুযায়ী (বুখারী, ১-১২৪) আল্লাহ তাকে মুসার (মোজেস)-এর থেকে বেশী প্রাজ্ঞ বলে মনে করেন। সুফী ধর্মের কয়েকটি মূলসূত্র আছে – যার অনেক কিছুই ইসলামে জায়েজ হবে না – যেমন, সুফী নিজেকে আল্লাহর সঙ্গে একাত্ম করতে পারে, যার পরে সে-ই আল্লাহ হয়ে ওঠে; সুফীরা মনে করে এটি একটি সাংঘাতিক জরুরী গোপন তথ্য, যেটা জানতে পারলে বাকি মুসলমানের তাদের মেরে ফেলবে – এবং তার থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যাচারণেও কোন দোষ নেই।
ব্যথা-যন্ত্রণা সুফীধর্মের একটি উপপাদ্য। তারা মনে করে শারীরিক ব্যথা তাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি আনে, এবং অনেকে এর জন্য স্ব-চাবকানি (সেলফ-ফ্ল্যাজেলেশন)-এর অনুষ্ঠান করে থাকে। ওপাস ডেই-এর মত অতি রক্ষণশীল খ্রীষ্টধর্মের সেক্ট-এ এরকম আছে।
সুতরাং সংক্ষেপে বলতে গেলে – ১) সুফী ধর্ম আর ইসলাম এক নয়, ২) মানবতাবাদের বুলি কপচালেও সুফী ধর্ম সময়বিশেষে ইসলামের বা অন্য যে কোন ধর্মের সমানই ভ্রান্ত, এবং ৩) না, কোন ধর্মের থেকে নতুন কিছু শেখার নেই।
(Y)
@কৌশিক,
(Y)
এবং সুফি সাধকদের যতটা শান্তিপ্রিয় ভাবা হয় আসলে অতটা নয়। ভারতবর্ষে সুফি সাধকদের ইতিহাস পড়তে গিয়ে পেলাম, শান্তিপ্রিয় সুফি সাধকেরাও আসলে মুলতঃ ছিলো জিহাদী। নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি, আমীর খসরু প্রমুখ সুফী সাধকেরা আধ্যাত্মিকতার নামে বহু নৃশংসতার চাষ করেছিলেন। এ নিয়ে কিছু ভাল আলোচনা আছে – এম এ খানের Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery বইয়ে। যেমন আমীর খসরুর জিহাদী কর্ম কান্ডের বর্ণনা পাওয়া যায় এরকম –
Amir Khasrau showed delights in describing the barbaric slaughter of Hindu captives by Muslim warriors. Describing Khizr Khan’s order to massacre 30,000 Hindus in the conquest of Chittor in 1303, he gloated: ‘Praise be to God! That he so ordered the massacre of all chiefs of Hind out of the pale of Islam, by his infidelsmiting swords… in the name of this Khalifa of God, that heterodoxy has no rights (in India).’cxxxi He took poetic delight in describing Malik Kafur’s destruction of a famous Hindu temple in South India and the grisly slaughter of the Hindus and their priests therein.cxxxii In describing the slaughter, he wrote, ‘…the heads of brahmans and idolaters danced from their necks and fell to the ground at their feet, and blood flowed in torrents.’
সুফি সাধকদের এ ধরণের নৃশংসতার উদাহরণ বহু দেয়া যাবে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই বেশ কিছু ভাল ভাল কথা আছে (এগুলো নিয়ে আমাদের নাস্তিকদের কিংবা কারোই আপত্তি করার কিছু নেই); এ গুলো নিয়েই ধার্মিকেরা গর্ববোধ করেন আর এ কথাগুলোকেই নৈতিকতার চাবিকাঠি বলে মনে করেন তারা। কিন্তু একটু সংশয়বাদী দৃষ্টিকোন থেকে দেখলেই বোঝা যাবে – ভালবাসা প্রেম এবং সহিষ্ণুতার বিভিন্ন উদাহরণ যে ধর্মগ্রন্থ এবং তার প্রচারকদের সাথে লেবেল হিসেবে লাগিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো কোনটাই ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের জন্য মৌলিক নয়। যেমন, যীশুখ্রীষ্টের অনেক আগেই লেভিটিকাস (১৯:১৮) বলে গেছেন, ‘নিজেকে যেমন ভালবাস, তেমনি ভালবাসবে তোমার প্রতিবেশীদের।’ বাইবেল এবং কোরানে যে সহনশীলতার কথা বলা আছে, সেগুলোর অনেক আগেই (খ্রীষ্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে) কনফুসিয়াস একইরকমভাবে বলেছিলেন – ‘অন্যের প্রতি সেরকম ব্যবহার কোর না, যা তুমি নিজে পেতে চাও না’। আইসোক্রেটস খ্রীষ্টের জন্মের ৩৭৫ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘অন্যের যে কাজে তুমি রাগান্নিত বোধ কর, তেমন কিছু তুমি অন্যদের প্রতি কোর না’। এমনকি শত্রুদের ভালবাসতে বলার কথা অন্যকে ঘৃণা না করার কথা, পাড়াপড়শিকে ভালবাসার কথা বহু প্রাচীন পুথিপত্রেই পাওয়া যায়, যীশু মুহম্মদ আর এই সব সুফী সাধকেরা বলে যাওয়ার অনেক আগেই। সমাজ তৈরির প্রক্রিয়াতেই এই সুগুণের চর্চা মানুষকে অব্যাহতভাবে করতে হয়েছে, ধর্মের জন্য নয়। আমার অবিশ্বাসের দর্শন বইটায় এ নিয়ে আলোচনা আছে কিছুটা।
@অভিজিৎ,
আধ্যাত্মিকতা নৈতিকতার সাথে খুব বেশী যুক্ত না। আধ্যাত্মিকতা সেই অর্থে জীবন দর্শন এবং বোধের প্রশ্ন–গণিতিক দৃষ্টিতে দেখলে জীবন দর্শনের একধরনের এবস্ট্রাক্ট মডেলিং। তার সাথে নৈতিকতাকে না জড়ানোই ভাল-নৈতিকতা ধর্মের সামাজিক শক্তির রূপ-সেটা নিয়ে আমিও লিখেছিলাম। এই প্রবন্ধে নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতা মধ্যে পার্থক্য পরিস্কার করা আছে।
@বিপ্লব পাল,
তুমি ইদানিং সহজ জিনিস প্যাচাও। আধ্যাত্মিকতা কাহাকে বলে আর তাহার সাথে নৈতিকতার সাথে খুব বেশী যুক্ত কি বিযুক্ত সেই বিতর্কে না ঢুকেও বলা যায় সব আধ্যাত্মবাদীরাই নৈতিকতার দোহাই সবার আগে পড়েন, তুমিও সুফি সাধকেরা কত কামেল আদমী তা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে গুণকীর্তন করে মন্তব্য শুরু করেছিলে – তারা মানবতাকে উপরে স্থান দিয়েছিল, জীবে প্রেম কর্তে বলছিল – আর কী কী, এখন আবার বলছ এটা একধরনের এবস্ট্রাক্ট মডেলিং, যেন সুফিসাধকেরা তোমার এবস্ট্র্যাক্ট মডেলিং বুঝে কোয়ান্টাম জীবপ্রেমের সাধনায় নেমেছে! তোমার মডেলিং নিয়ে তুমি থাক। আমার কথা খুব স্পষ্ট ছিল – সমাজ তৈরির প্রক্রিয়াতেই এই সুগুণের চর্চা মানুষকে অব্যাহতভাবে করতে হয়েছে, ধর্মের কারণে নয়। আর চেনা জানা ধর্মগুরুরা তো নতুন কিছু বলেন নি, তারা যা বলেছেন তা সবই প্রাচীন মানুষের আগেই জানা ছিল।
যাককে, তোমার লগে অযথা বিতর্কে লাভ নেই, হাতে অনেক কাজ… 🙂
@অভিজিৎ,
এটাত আমার জানা ছিল না। ভারতীয় দর্শনে আধ্যাত্মিকতার প্রথম ধাপ হল “পাপ” ইত্যাদির ভয় থেকে মুক্ত হওয়া -অর্থাৎ ধর্ম প্রবর্তিত নৈতিকতা থেকে মুক্তি। সুফীরাও সেটা মানে।
ধর্মীয় নৈতিকতা- পাপের ভয়, পুণ্যের লোভ থেকে মুক্ত হওয়া আধ্যাত্মিক পথের প্রথম সোপান।
The Vedanta (ঊপনিশদ) recognizes no sin- it only recognizes error. And the greatest error, says the Vedanta is to say that you are weak, that you are a sinner, a miserable creature, and that you have no power and you cannot do this and that.
Swami Vivekananda
@বিপ্লব পাল,
হেঃ হেঃ, মনে হইতেছে তুমি নির্বান প্রাপ্ত হৈয়াছ! তোমার জন্য বাংলা সিনেমার গানই ভরসা –
♪ ♫ ♬ ♭
শোনো ভাইয়েরা কথা শোনো,
এমন একজন মানুষ আনো –
যেজন পাপ না করেছে,
যেজন পাপী নহে … ♫ ♬
(8) (I)
@অভিজিৎ,
প্যাচাপেচির আর কি দেখছেন। আপনি কি জ্যাক ডেরিডা এর সম্পর্কে অবগত? বলাই বাহুল্য জ্যাক ডেরিডা নাম না হয়ে জার্ক ডেরিডা কেনো হলো না সেটি জিজ্ঞেস করার মতোই একটি প্রশ্ন বটে! সেইরকমই একজন দুধেল-নধর বিরিঞ্চিবাবা ছিলেন বটে এই জার্ক ডেরিডা-
httpv://www.youtube.com/watch?v=0nmu3uwqzbI
উপরের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একজন সুন্দরী মধ্যবয়ষ্কা ফরাসী ভদ্রমহিলা তার সেক্সি-ক্রিমি-মিল্কি-চকলেটি ফরাসী আক্সেন্টে ডেরিডার কাছে ভুত :-[ বিষয়ে তার অভিমত জানতে চাচ্ছে, এবং না মহিলাটি ফাজলামো করছে না…সে সিরিয়াসলিই ভুত বিষয়েই জানতে চাচ্ছে, কিংবা এটি মহিলাটির পক্ষ থেকে কোন সেক্সুয়ালি সাজেস্টিভ কোন ইঙ্গিত কিনা আমি জানিনা! যাই হোক, বাবাজী ডেরিডাও তার ভুতের ঝোলা খুলে বসলেন :-[ , সুদীর্ঘ ছয় মিনিট ধরে ভুত বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ লেকচার ছাড়লেন ডেরিডা যেই লেকচারটি শুনে আমি নিশ্চিত ওই ভদ্রমহিলা ভুত বিষয়ে একটি গভীর অন্তদৃষ্টি লাভপুর্বক বাড়ি ফিরেছিলো সেইদিন 😀 ।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে গিয়ে ভুত :-[ বিষয়ক ডেরিডার ছয় মিনিটের লেকচার যে কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হলো, কোথা থেকে যাত্রা ধরে কোথা দিয়ে ঘুরে ফিরে কোথায় গিয়ে যে তিনি পৌছুলেন, এইটা ডিসাইফার করার জন্য পঞ্চাশ হাজারটি এলান টুরিঙ্গ লাগবে; প্রশ্ন জাগে না মনে- শুন্যগর্ভ, শুন্যসার আজাইড়া প্যাচাল কতোটা পাড়া সম্ভব একটা মানুষের পক্ষে? এক বাক্যের একটি বক্তব্যকে ত্যানা পেচাতে পেচাতে পেচাতে ৬ মিনিটে দীর্ঘায়িত করতে পারার স্কীলের অধিকারী বিধায় তিনি আবার একজন স্কলারও কিন্তু, একজন ছমাজবৈজ্ঞিনী তিনি, এবং বলাই বাহুল্য একজন দার্শনিকও বটে! ‘পোস্টমডার্নিজম ডিসরোবড’ এর শেষ প্যারায় একে নিয়ে একটু হাসাহাসি করেছিলেন আবার রিচার্ড ডকিন্স লক্ষ্য করে থাকবেন হয়তো। তবে অস্বীকার করবো না, কোন মধ্যবয়ষ্কা ফরাসী ভদ্রমহিলা যদি এইরকম মিল্কি, ক্রিমি, চকলেটি আক্সেন্টে আমার কাছে বসে ভুত বিষয়ে আমার মতামত এতো গভীর মনযোগের সহিত শ্রবন করার সৌজন্য প্রদর্শন করতো, তবে আমার জীবনের সুবিশাল চাহিদাতালিকার একটি উল্লেখযোগ্য শতাংশই এক ধাক্কায় পুর্ণ হয়ে চাহিদাতালিকা খাটো হয়ে যেতো এরাউন্ড ৪০% :lotpot: !!
নাস্তিকতা বিষয়েও এই সমাজবৈজ্ঞিনী দার্শনিক বিরিঞ্চিবাবাটির কিছু অসহনীয় অসহনীয় বক্তব্য রয়েছে, লিঙ্ক করছি না (ইউটিউবে সার্চ করে দেখতে পারেন) দুটি কারণে। প্রথমত, একটি ভিডিও লিঙ্ক করেছি বলেই ভয়ে ভয়ে আছি যে আপনার জীবনের ছিনতাইহৃত ৬ মিনিট না জানি আপনি আমার কাছে ফেরত চান! আর দ্বিতীয়ত, নাস্তিকতা বিষয়ে তার অসহনীয় বক্তব্য শুনে গদিয়ে তার পেলভিস ফাটিয়ে ফেলার ইচ্ছে জাগবে যে কোন সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কেই খুব সম্ভবত, যেটি কিনা বলাই বাহুল্য শালীন কোন ইচ্ছা নয়!!
@কৌশিক, আসল সমস্যা তাহলে কোথায়? কথাটা কি ‘পাপ বলতে কিছু নেই তবে পাপবোধ তো আছে’ গোছের হলো না? আধুনিকতার সাথে ধর্মের বাঁধা কোথায়? বিজ্ঞানমনস্কতা/যুক্তিবাদীতা এগুলোও তো আধুনিক ধর্ম! অবতার ছাড়া ধর্ম!
@আকাশ মালিক,
আমার তো মনে হয়, সব ধর্মের বইতেই গড়ে পাঁচটা ভালো কথা আর দশটা খারাপ কথা লেখা থাকে। ইসলামের বইতেও থাকে, সাথী ইসলামীদের সাহায্য কর, কিন্তু কাফেরদের হত্যা কর। তা এই ভাল কথাগুলো শিখতে ধর্মের বইখানাই পড়ার কি দরকার? একটা ধর্ম-সম্পর্কহীন নীতিকথা-সংকলন পড়লেই হয়, ‘গান্ধীজীর বাণী’ টাইপের? তাতে অন্তত শুধু ইসলামীদের ভালো না বাসতে বলে সবাইকেই ভালোবাসার কথা লেখা থাকবে।
@ রৌরব, কৌশিক এবং অভিজিত
ইসলাম নৃতাত্বিক কারনে আসা একটি সামাজিক আন্দোলন। ফলে ইসলামের বক্তব্য পৃথিবীর অন্যান্য সামাজিক আন্দোলন থেকে কিভাবে আলাদা হবে? তাহলে ত সামাজিক বিবর্তনের অস্তিত্বই থাকবে না। ইসলামের ৮০% ই খ্রীষ্ঠান এবং ইহুদি ধর্ম থেকে নেওয়া। মহম্মদ এই সামাজিক আন্দোলন গুলিকে দেখেছিলেন- এবং তাদের ত্রুটি গুলি তার কাছে যা মনে হয়েছিল, তাই দিয়ে সংস্কার করে ছেন -এবং সেটা আল্লার নামে চালিয়েছেন যা সব ধর্মগুরুই করে। ইসলামকে সেই সপ্তম শতকের আরবের প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে।
সুফি আন্দোলনের জন্ম ইসলামের সেই সব অনুগামীদের মধ্যে থেকে যারা মনে করত, ইসলাম আধ্যাত্মিকতা বিচ্ছিন্ন হয় আচার আচরন সামাজিকতা যুদ্ধ নিয়ে পড়ে আছে। ওটা ইসলামের মধ্যের সংস্কার আন্দোলন। সুফী সাধকরা কি করেছেন থেকে, তারা কি লিখে গেছেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হলে ভাল হয়। কারন সেই অর্থে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ সহ সব আধ্যাত্মিক গুরুদের জীবন যাত্রায় বা দর্শনে বেশ কিছু ত্রুটি ত অবশ্যই ছিল। তার মানেই যে তাদের সব কিছু ফেলে দিতে হবে-এমন ভাবাটাকে আমি আরেক ধরনের ধর্ম বিরোধি রাডিক্যালিজম হিসাবেই নেব।
@বিপ্লব পাল,
‘ইসলাম নৃতাত্বিক কারনে আসা একটি সামাজিক আন্দোলন।”
সামাজিক আন্দোলন ঠিক আছে, কিন্তু সেটাই তার প্রধান সত্ত্বা নয়। তার প্রধান সত্ত্বা, সেটি একটি ধর্ম। সেটিকে কেবল সামাজিক আন্দোলন বানিয়ে ফেলে তার প্রতি নরম ভাব দেখানোর কোনো কারণ নেই।
আর সামাজিক আন্দোলন-ই হোক, যেইটাই নারীকে পুরুষের সম্পত্তি হিসাবে ধরা হয়, ভিন্নমতানুসারীদের নির্দ্বিধায় হত্যা করতে বলা হয়, সেটা সপ্তম শতাব্দীই হোক আর একবিংশ, সেটাকে সম্মান দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
ইসলাম যদি কেবলই একটা ঐতিহাসিক, অধুনাবিলুপ্ত অবজেক্ট হত, যদি হায়ারোগ্লিফিক্সের মত তাকে নিয়ে কেবল ইতিহাসচর্চাই করা যেত, তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু প্রচুর প্রচুর লোক এখনও সেটা চালাতে, সবার উপর চাপাতে উৎসাহী। সেটা তো আর সপ্তম শতাব্দীর আরবের প্রেক্ষাপটে সীমিত নেই।
@কৌস্তুভ,
সমাজ বাদ দিয়ে ধর্ম কি জিনিস? বা মানুষই বা কি জিনিস?
@বিপ্লব পাল,
এ অংশটা আমার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ধরে নিচ্ছি। ইতিহাসের যেকোন আন্দোলন বা বিকাশ পূর্ববর্তী ধারাগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট, এটা ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে কোন কোন আন্দোলনকে বিশেষ রকম সৃজনশীল, আর কোন কোনটাকে ঠঁুটো জগন্নাথ ভাবার অবকাশ নেই।
@আকাশ মালিক,
:lotpot: সায়েন্টোলজি নামক ধর্মখানা থেকে বিপ্লব পাল কি কি শিখেছেন ঝানতে ছাই.. :lotpot:
@আল্লাচালাইনা,
সায়েন্টোলজি মানুষের মনস্তত্বকে বেশী গুরুত্ব দেয়। ওদের ধর্ম খানায় ভর্তি হবার একবার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথমেই ৫০০ টা প্রশ্ন ধরিয়ে দিল আমার মনকে জানার জন্যে। অনেক মাল্টিপল প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে ওরা মনের গঠনকে জানার চেষ্টা করে এবং তার মধ্যে থেকে মনকে উন্নত করার চেষ্টা করে। তবে ৫০০ টা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতন ধৈর্য্য ছিল না। তাই ১০০ টা উত্তর দিয়েই রণে ভঙ্গ দিয়েছি।
@বিপ্লব পাল, clearly missed the undertone dodn’t you…
@কৌশিক,
খালি সাইন্টোলজিইতো বিপ্লব পালের সমস্যা না, আরও কতো টেনশন-স্মস্যার ভেতর দিয়ে বিপ্লব পাল জীবনতিবাহিত করেন…এইযে দুনিয়াতে এতো হেজেমোনি চলতেছে, এইটা নিয়েতো বিপ্লব পালের মতো আর কাউকেতো টেনশনে পরতে দেখিনা। পৃথিবীতে কতোপ্রজাতির ভুত-দৈত্যি-দানো বসবাস করে এইসব নিয়েওতো কাউকে না কাউকে ভাবতে হবে তাই না? সো, আপাতত জার্ক ডেরিডা আর বিপ্লব পাল মিলে ভাবুক, দেখি আমরা উনারা কি উপসঙ্ঘারে উপনীত হন তারা। তারপর মনে করেন যে- গৈতম বুদ্ধু, প্রাইচ্যের প্রস্তরযুগীয় হান্টার-গ্যাদারার হিন্দু মিথোলজির ভাববাদী দর্শন বাস্তবজীবনে ইত্যাদির ইম্পলিকেশন নিয়েওতো কাউকে ভাবতে হবে তাই না। আফটার অল সুডোস্কলারিও কিন্তু একধরণের স্কলারিই এটা আপনি পছন্দ করুন আর না-ই করুন!!
@আল্লাচালাইনা,
না। নিজের নাম নিয়ে যাদের লেখার ক্ষমতা নেই ঘোমটার আড়ালে বিজ্ঞানকে আশ্রয় নিয়ে গালি দেওয়া একটি ক্যারেকটরের কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। আমি যেটা বলতে চেয়েছি বারে বারে সেটাও বোঝ নি। সেটা এই যে পৃথিবীতে যাবতীয় ঘটনাবলীর মধ্যে স্ট্রাকচার থাকে না-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে। আর স্টাকচার না থাকলে বৈজ্ঞানিক সূত্রের অস্তিত্বও থাকে না। যেখানে স্টাকচার নেই সেখানে জোর করে সূত্রের অবতাড়না করতে গেলে কমিনিউজমের মতন সিউডোসায়েন্সের উৎপাত হবে।
আর আমি ত জীবন দর্শন নিয়ে সামান্য প্রশ্ন করেছি। সেটাকে উত্তর না দিতে পেরে যেভাবে সিউডোস্কলার শিপ ইত্যাদি নিয়ে আক্রমন করছে, তাতে আমার কাছে আল্লাচালনা বা কৌস্তভের সাথে একজন মুসলিম বা হিন্দু বা কমি মোল্লার কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য হচ্ছে ওরা একদিকে , আর এরা আরেকদিকে। আসলে জীবন দর্শনের ডাইক্রোনাস ভিউ ধরতে না পেরে সবাই কুয়োর জলে ব্যাঙাচির মতন লাফাচ্ছে আর সেটাকেই সমুদ্র বলে ভাবছে।
@বিপ্লব পাল, জীবনদর্শন নিয়ে আপনার করা গরুবান্ধা প্রশ্নের উত্তর দিতে বসার চেয়ে পনের মিনিট পর্নোগ্রাফির চর্চা করা আমি মনে করি আমার মানসিক স্ব্যাস্থের জন্য অনেক বেশী উপকারী। আমি এছাড়াও মনে করি নিজ নামে অনবরত বিরিঞ্চিবাবাগিরি করে চলার থেকে, অনিজ নামে বিজ্ঞান করা বহু ভালো। বাই দা ওয়ে, এটাতো আপনার ব্রক্ষ্মাস্ত্র তাই না? এত অল্পতেই নিজের ব্রক্ষ্মাস্ত্র খসিয়ে দিলে হবে? আবার আমি যদি আমার ব্রক্ষ্মাস্ত্র ছুড়ি তহন কিন্তু দেহা যাইবো বাবাগো-মাগো কয়া মডারেটর ডাকাডাকি করা লাগতেছে, সো আমরা এইখানেই থামি।
@আল্লাচালাইনা,
এর একটাই উত্তরঃ ইক্যুইভোকেশন Equivocation – erএর বাংলাটা ঠিক জানিনা। কিন্তু এতে সায়েন্টোলজিস্টরা (এবং বিপ্লব পাল মহোদয়) বেশ দড় বোধ হচ্ছে। :lotpot:
শুধু নারী বিদ্বেষী জাতক দিয়ে বুদ্ধ নারী বিদ্বেষী ছিলেন এই উপসংহার টানা সমীচিন হবে না বোধহয় কারন নারী বিদ্বেষী জাতক গুলো সত্যি বুদ্ধের মুখ নিঃসৃত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বুদ্ধ যদি এতই কঠোর নারী বিদ্বেষী হতেন তাহলে নারীদের ভিক্ষু সংঘে প্রবেশের অনুমতি তিনি হয়তো শেষ পর্যন্ত দিতে চাইতেন না।বিষয়টা এমনো হতে পারে হয়তো পুরুষ ভিক্ষুদের সহজ কামনা বাসনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে তিনি নারীদের প্রথমে ভিক্ষুনী করতে চান নি কিন্তু নারীদের নির্বানের কথা চিন্তা করে পরে আনন্দের যুক্তির কাছে হার মেনে মত পরিবর্তন করেন। সুজাতার দেয়া পায়েসঅন্ন খেয়েই তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। বুদ্ধত্ব লাভের পরেও সুজাতাকে তিনি যথেষ্ট সন্মান করতে দেখি আমরা বৌদ্ধ ইতিহাসে। আরেক বারবনিতা ছিল আম্রপালী। আম্রপালী বুদ্ধকে নিমন্ত্রন করলে ধনী শ্রেষ্ঠীদের আঁতে ঘা লাঘে তারা এক জোট হয়ে বারবার বুদ্ধকে অনুরোধ করেন আম্রপালীর নিমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করে তাদের যে কারো নিমন্ত্রন গ্রহন করতে কিন্তু বুদ্ধ আম্রপালীর নিমন্ত্রন সাদরে রক্ষা করে আম্রপালীকে মানুষ হিসাবে মর্যাদা দিয়ে তাকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন। তাছাড়া বুদ্ধ বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীদের জন্য কোন বিধি নিষেধের নিয়ম কানুনের বেড়া জাল কোথাও বিস্তৃত করে গেছেন বলেও শুনা যায় না। বর্তমানে বুদ্ধ ধর্মের যে রূপ আমরা দেখি তাকে বিকৃত রূপই বলা চলে। বুদ্ধ ধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকলেও অধিকাংশ বৌদ্ধ আজ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। মূর্তি ও দেব-দেবী পূজার স্থান না থাকলেও মহা সমারোহে বৌদ্ধদের তা করতে দেখি আমরা। প্রার্থনায় কোন ফল আসে না বলে গেলেও বৌদ্ধরা তাদের দুঃখ মুক্তির জন্য করজোড়ে পাথরের বুদ্ধ মূর্তির কাছে নত শিরে প্রার্থনা করতে বসে।
@রাজেশ তালুকদার,
এই নিয়ে উপরে রনবীর সরকার-কে যা বলেছি, আপনাকেও প্রায় একই কথা বলা যেতে পারে। দয়া করে আমার ওই মন্তব্যটি দেখুন। সুজাতা, আম্রপালী, মহাগৌতমী নিজের দীপ্তিতে উজ্জ্বল, কিন্তু তাঁরা বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলা চলে।
দারুন একটা লেখা ভাইজান ! খুব ভালো লাগলো, এই বিষয়ে আরো লেখা পড়তে চাই।
@সাজ্জাদ হোসেন, ধন্যবাদ আপনাকে। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, সম্প্রতি যেটুকু পড়ে জানলাম তাই নিয়েই লিখেছি। আবারও উল্লেখযোগ্য কিছু জানতে পারলে লিখব।
মুক্তমনায় স্বাগতম। কৌস্তভের লেখা বরাবরই বেশ সাবলীল। এটাও ব্যতিক্রম হয়নি। সেই সাথে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল। অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে। (Y)
@স্বাধীন, ধন্যবাদ!
জাতকের কাহিনী গুলি বুদ্ধের নিজেরই বলা, এর কোন রেফারেন্স আছে কি? উইকিপিডিয়ার যে রেফারেন্স দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে গল্পগুলি কিছুকাল পরে লিখিত।
@রৌরব,
উপরে রনবীর সরকার-কে দেওয়া মন্তব্যে আমি এই নিয়ে কিছু কথা বলেছি, দয়া করে দেখুন। এগুলি যে লিখিত নথিভুক্ত হয়েছিল ওঁর কিছুকাল পরে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
@কৌস্তুভ,
আপনার মন্তব্যটি পড়লাম। ওখানে আপনি মূলত বলছেন, জাতক ব্যক্তি বুদ্ধের না হোক, প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের পরিচায়ক। এটা নিয়ে আমি অচিন্তিত। জাতকের সাথে সিদ্ধার্থ গৌতম আদৌ সংশ্লিষ্টতা আছে, এই বিশ্বাসের কারণ জানতে চাইছিলাম। বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে আপনার থিসিসের সাথে আমার দ্বিমত নেই।
কোন ধর্মেই তো আজ অব্ধি দেখলাম না পুরোপুরি ভালো কথাবার্তা বলে এসেছে বা পার্শিয়ালিটি না করে জ্ঞানের কথা শুনিয়েছে। একটা ধর্মকে অর্ধেক মানার চেয়ে,মানে যেটা বেশিরভাগ লোকেই করে থাকে, একেবারেই না মানা ভালো নয় কি? যদিও সমাজের মধ্যে থেকে সেটা করতে গেলে একটু গাটস লাগে, তাই আমি পুরোপুরি করে উঠতে পারিনি!!! :(….
@মৃগাঙ্ক,
১০০% সহমত। তবে ধর্মগুলোর বিধানের যা ছিরি, কোনোটারই ১০০% মানতে গেলে সবসময়েই খড়্গ উঁচিয়ে থাকতে হবে…
চমৎকার এই লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। বৌদ্ধধর্মের অনেক কিছুই আসলে মিথ; এর প্রতি আমার মোহ কেটে গিয়েছিলো অনেক আগেই – যখন ছোটবেলায় বানী বসুর মৈত্রেয় জাতক পড়েছিলাম। এত জ্ঞানবান, এত দয়াবান, অহিংসতার প্রচারক বৌদ্ধ তার সঙ্ঘে কোন নারী যাজক রাখতে চাননি। পরে অবশ্য তিনি মত পরিবর্তন করেন, নারীরা সঙ্ঘে ঢোকার অনুমতি পায়, কিন্তু তিনি নস্ট্রাডামুসের মত ভবিষ্যদ্বানী করে গিয়েছিলেন যে, মেয়েদের সংঘে ঢোকানোর ফলে বৌদ্ধ জামানার আয়ুস্কাল নাকি অর্ধেকে নেমে আসবে। আজকের আমীনী গং এরা যে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এতো সোচ্চার, গৌতম বুদ্ধের মনোভাবও এর থেকে খুব বেশি অগ্রসর ছিলো না। তিনি যে রমণীদের কামপরায়ণা, অসতী, হেয়া ও নীচমনা ভাববেন তাতে আর সন্দেহ কি? কিন্তু মুশকিল হল এ ব্যাপারগুলো অনেকেই জানে না। আমি এ কথাগুলো একবার আমাদের মুক্তমনা ফোরামে বলেছিলাম (তখনও মুক্তমনা ব্লগ সাইট হয়নি), এক বৌদ্ধ সদস্য রেগে চটিতং, ঠিক যেমন ইস্লামিস্টরা চটিতং হয়ে উঠে কোরানের কিংবা মুহম্মদের সমালোচনা শুনলে। হিন্দুরাও তাই। এমন বুদ্ধিস্ট এপোলজিস্টও আমি দেখেছি যারা বুকাইলীর মতোই বৌদ্ধ ধর্মে আধুনিক বিজ্ঞান খুঁজে পান। (এরকম একজনের সাথে আমার আলোচনা আছে এখানে)। আসলে সব রসুনের কোয়াই বোধ হয় একই রকম, কোথাও একটু ঊনিশ, কোথাও বা বিশ।
আপনাকে ধন্যবাদ এরকম একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য। অন্য মিথের মত বৌদ্ধধর্মের ‘শান্তির প্রতীক’ টাইপের কিংবা ‘নারীর প্রতি একমাত্র সহনশীল ধর্ম’ টাইপের মিথগুলো ভাঙ্গা দরকার। শুরুটা আপনিই করলেন! (Y)
@অভিজিৎ,
কাকতালীয়ভাবে হলেও তার সেই ভবিষ্যৎবাণী কিন্তু সত্য হয়েছিল।
সত্যিকারঅর্থে বলতে গেলে এটাকে পুরোপুরি কাকতালীয় বলা যায় না। সংঘে নারীপ্রবেশ পরবর্তীতে সহজযানের উৎপত্তির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলেই আমার ধারণা।
বৌদ্ধধর্মের প্রাণ যে চারিত্রিক বিশুদ্ধতা ক্রমেই সে ধর্ম নেড়া-নেড়ির দলে পরিনতে হয়ে গিয়েছিল।
যে বুদ্ধদেব দেবতা মানিতেন না, যিনি বলতেন যে মানুষ নিজে থেকেই নিজের চরিত্রশুদ্ধ করে দেবতা অপেক্ষাও উচ্চপদে যেতে পারে, তার শিষ্যরাই কিনা শেষে ডাক-ডাকিনী, প্রেত, পিশাচ, পিশাচিনী প্রভূতির উপাসনা করা শুরু করল।
@রনবীর সরকার,
হায় হায় বু্দ্ধের শিষ্যরাতো বুদ্ধের বাণীরই বিরোধিতা করছে।
“আত্মদীপো ভব
আত্মশরণো ভব
অনন্যশরণো ভব” —- গৌতম বুদ্ধ
(নিজের বিবেকের নির্দেশে, আত্মদীপের আলোয় পথ খুঁজে নিও। পরের কথায় কান দিও না। তুমিই তোমার গুরু, তুমিই তোমার পথপ্রদর্শক ! )
আর তারা কিনা এখন বুদ্ধের কথায় কান দিচ্ছে। বুদ্ধের কথার মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান খুজছে। :lotpot:
@অভিজিৎদা, আমাকে মুক্তমনায় ধরে এনেছেন আপনিই, অতএব ধন্যবাদ তো আপনারই প্রাপ্য :))
আলোচনাটা দেখলাম। উনি তো জাকির নায়েকের বুদ্ধিস্ট ভার্শন স্টাইলের কথাবার্তা বলেন 😀
মুক্ত-মনায় স্বাগতম। (F)
বৌদ্ধদের হীনযানপন্থিরা তো পরজন্মে বিশ্বাস করে না। বুদ্ধ নিজেও তাতে বিশ্বাসী ছিলেন বলে মনে হয় না।
বুদ্ধের নারী ভাবনা ঠিক কিরূপ ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানার ইচ্ছে ছিল।
@সৈকত চৌধুরী,
তাই? এ নিয়ে বিস্তারিত জানি না, পারলে খোঁজ নিয়ে দেখবেন তো। তবে হয়ত বুদ্ধ মহাপুরুষ বলে তাঁর ক্ষেত্রে আলাদা ব্যাপার।
জাতকের কয়েকটা যে বুদ্ধের নিজেরই বলা, তা নিশ্চিত, (যেমন শুদ্ধোদন, যশোধরা এঁদের কিছু গল্প শুনিয়ে শোক ভুলতে, সত্যের পথে আসতে, উদ্বুদ্ধ করেছিলেন), তবে ঠিক এই রুপেই বলেছিলেন কিনা তা বলা মুশকিল।
এইটা একটা ভাবনার মত পয়েন্ট, ধন্যবাদ আপনাকে।
@কৌস্তুভ,
বৌদ্ধধর্মে পূনর্জন্মবাদ আছে। তবে সেটা ঠিক সাধারনভাবে হিন্দুদের মধ্যে যে পুনর্জন্মবাদ দেখা যায় সেরকম নয়।
বৌদ্ধধর্মমতে সংস্কারগুলোরই অভিব্যক্তি হতে থাকে তাই এটাকে সেই অর্থে পুনর্জন্ম বলা যায় না। এদিক দিয়ে হিন্দু ধর্মের চেয়ে বুদ্ধের দর্শন কিছুটা উন্নত।
যাহোক আমি বুদ্ধদেবকে তার দর্শনের জন্য শ্রদ্ধা করি না।
শুধু তার ভালবাসা যা মনুষ্য ছাড়িয়ে সকল প্রাণীর উপর বর্ষিত হয়েছিল তার জন্য তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাভাব সবসময় থাকবে।
আর সেই বুদ্ধদেব নারীর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষন করবে তা মানতে পারছি না যদিও আপনার লেখা আমাকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু আমি যতদূর জানি জাতকগুলোতে পরবর্তীতে অনেকের হাত পরেছে। তাই এর মধ্যে কোনটা সত্যি বুদ্ধের আর কোনটা নয় সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বিশেষ করে আপনি যে জাতকগুলো বললেন সেগুলো আসলেই বুদ্ধদেবের কিনা সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।
চমৎকার একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@রনবীর সরকার,
আপনার মনে গৌতম বুদ্ধের যে ইমেজ আছে সেটাকে ভাঙা বা গড়া আমার উদ্দেশ্য নয়। খেয়াল করে দেখবেন, আমার লেখাটার উদ্দেশ্য বলেছি, সামগ্রিকভাবে ওই সময় এবং তার দুয়েক শতাব্দী আগে-পরে, বুদ্ধ এবং ওনার ধর্মের বড় নেতাদের যা মনোভাব ছিল, বা সাধারণভাবে সমাজের যা মনোভাব ছিল – নারী সম্পর্কে – তা আলোচনা করা।
অনেক বিষয়ে বুদ্ধের ঠিক যা মনোভাব ছিল তা পরবর্তীকালে তাঁর ধর্মের আচারে বদলে গেছে অনেকটাই। এই যেমন উনি পুজো করার বিরোধী ছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, পরবর্তীকালে লোকেরা ওনাকেই পুজো করতে লাগল। আমি তাই ওই টাইমস্প্যানের মধ্যে, ওনার এবং ধর্মের নীতিনির্ধারক অন্যদের, একটা সম্মিলিত মনোভাবের আভাস পেতে চেষ্টা করেছি।
———————-
এ কথা সত্যি যে কোন জাতকগুলো বুদ্ধ বলেছেন আর কোনগুলো তাঁর শিষ্যরা বা তাঁদের শিষ্যেরা বলেছেন সেগুলো আলাদা করা দুরুহ। আর উনি ঠিক যা বলেছেন সেটাই হুবহু লিপিবদ্ধ না হওয়ার সম্ভাবনাও আছে, কারণ তা হয়েছিল এক-দুই শতাব্দী পর।
তবে আমি যেহেতু বুদ্ধের মত বা তাঁর শিষ্যের মত তাই নিয়ে খুব চিন্তিত হবার প্রয়োজন দেখিনা এই লেখায়, তাই আমার এতে সমস্যা নেই।
এই নিয়ে ঈশানচন্দ্র বলছেন, “তিনি মহাধম্মপালজাতক বলিয়া নিজের পিতাকে স্বধর্ম্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন, চন্দ্রকিন্নরজাতক বলিয়া যশোধরার পাতিব্রত্যধর্ম্ম যে পূর্ব্বজন্মসংস্কারজ তাহা বুঝাইয়াছিলেন, এবং স্পন্দন, দদ্দভ, লটুকিক, বৃক্ষধর্ম্ম ও সম্মোদমান এই পঞ্চ জাতক শুনাইয়া শাক্য ও কোলিয়দিগের বিরোধ নিবারণ করিয়াছিলেন।’ (রেফারেন্স দেন নি)
অতএব ধরে নিতে পারি এগুলো মূল জাতক সেটের মধ্যে। বিনয়পিটক, সুত্তপিটক, চরিয়াপিটক এগুলিতে যে জাতকগুলো দেখা যায়, ধরে নেওয়া যেতে পারে সেগুলোও মোটামুটি প্রাচীন। উনি ভাষারীতি ও ভাব পরীক্ষা করে আরো কিছু জাতক শনাক্ত করেছেন, যেমন লোশক, ন্যগ্রোধমৃগ জাতক ইত্যাদি। এ কথা সত্যি, বেশ কিছু জাতক পড়লেই সেগুলো কাঁচা হাতের রচনা মনে হয়।
তা আলোচ্য জাতক কয়টির মধ্যে কোনটা প্রাচীন আর কোনটা নবীনতর, তাই নিয়ে ওনার কোনো ইঙ্গিত পাইনি।
এখন ব্যাপার হল, জাতক আদি হোক তার তুলনামূলক নতুন, সবই কিন্তু ওই প্রাচীন সময়েই লেখা। তাই আমার আলোচনার জন্য সবকটিই চলবে।
—————————-
ধরে নিলাম, এই জাতকগুলি ওনার বলা নয়। এও ধরে নিলাম, ওই অতিরিক্ত চারটি বিনয়-ও উনি বলেন নি। তাও, নারীদের উনি যে ধর্মপথে খুব সম্মানের চোখে দেখতেন না, এটা ওনার নানা আচরণে (লেখায় বা অভিজিৎদার মন্তব্যে) স্পষ্ট। এ থেকে আপনি ঠিক কী ইমেজ গড়বেন, তা একান্তই আপনার ব্যাপার।
@সৈকত চৌধুরী,
(Y) আমারও তাই সন্দেহ। কারণ আত্মায় অবিশ্বাসের সাথে জন্মান্তর একেবারেই যায় না। বুদ্ধ নিজে, অথবা পরবর্তীকালে তাঁর শিষ্যরা লোক হারানোর ভয়েই বোধহয় এই অবান্তর হিন্দু ধারণাটা ত্যাগ করতে পারেনি।
এই লেখাটির জন্য আপনার একটি বিশাল সাধুবাদ পাওনা থাকলো শুধু এই কারণে যে- এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন যেই বিষয় নিয়ে আগে আমি কাউকে লিখতে দেখিনি; এমনকি বিষয়টি যে কনসার্নড হবার যোগ্য এই মনোভাবও কারও ভেতরে দেখিনি। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি সবারই রয়েছে একটা উষ্ণ-নরম, কসুম-গরম সহানুভুতি; কেননা এই ধর্মটা রক্ত-টক্ত তেমন একটা ঝরানোর সুযোগ পায়নি মানুষের, উপরন্তু ‘হগলে বনে যাওগা, গিয়া তপস্যা করো’ মার্কা বাস্তবতা বিবর্জিত সেক্সি সেক্সি কথাবার্তা বলে আমাদের দুধ-মাখনের ওয়্যাকি নিউএইজ আধ্যাত্নবাদী বিরিঞ্চিবাবাদের অনুতপাদনশীল ফ্যান্টাসীর অন্তর্বাস রেখেছে সর্বদাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে!
আমি ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখি। আমি মনে করি ধর্ম এমন একটি সিস্টেম, যেটির সবচেয়ে স্টেইবল স্টেইট হচ্ছে লংরানে সমাজে সবচেয়ে বেশী অশান্তি উতপাদন করতে সক্ষম থাকাটা, প্রত্যেকটি ধর্মই। খৃষ্টধর্মের আশান্তি উতপাদন করার ক্ষমতাটা নিউট্রালাইজ করে রাখা হয়েছে সক্রিয়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে; এই ধর্মের ডেমোগ্রাফির ভেতর পরে যেইসব মানুষ তাদের তুলনামুলকভাবে বেশী শিক্ষিত হওয়া, অর্থনৈতিকভাবে বেশী স্বচ্ছল হওয়া, একটি উন্নত কালচার এবং মুল্যবোধ সমুন্নতকারী হওয়ার মধ্য দিয়ে। মুসলমানরা উতপাত করে পৃথিবী অতিষ্ট করে রাখছে, একসময় এদেরও হয়তো শক্তি হবে শিক্ষিত হবার এবং সভ্য হবার; তখন হয়তো ইসলামের উতপাতও আর গা করার মতো কোন হুমকী হিসেবে গন্য হবেনা। বুদ্ধধর্ম কিন্তু এইসব কোর্স অফ ইভেন্টসের ভেতর দিয়ে যাবার সুযোগই পায়নি কোন। চুল গজানোর পুর্বেই এই ধর্মটির হেয়ার ফলিকল কোষসমেত চামড়ার সম্পুর্ণ উপরিভাগটিই উতপাটন করে নিয়েছে হিন্দুধর্ম। বিষফোঁড়া হয়ে ওঠার পুর্বে প্রত্যেকটি ধর্মই থাকে এসিম্পটোটিক; এইসময় তারা শান্তির বাণী প্রচার করে, একগালে চড় খেয়ে অপর গাল বাড়িয়ে দেয় পরম বিনম্রতায়। দীর্ঘসময় পরে এই এসিম্পটোটিক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ধর্ম বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে যখন কোন না কোনভাবে একটা রাজা কিনা সেই ধর্মে দিক্ষীত হয়; রাজা দিক্ষীত হয়ে মন্ত্রীকে দেয় কষে প্যাদানী ‘তুই-ও এই ধর্মে দিক্ষীত হচ্ছিস না কেনো’ বলে; মন্ত্রীও অতপর সেই ধর্মে দিক্ষীত হয়ে আমাত্যদেরকে দেয় প্যাদানী একই কথা বলে; আমাত্য প্যাদায় তাদের সাবজেক্টদেরকে; এইভাবে সম্পুর্ণ রাষ্ট্রটাই শরীয়াভিত্তিক ইছলামী রাষ্টে পরিনত হয় একসময়। অতপর রাষ্ট্র দেয় তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে প্যাদানী বলে ‘এইবার তোরাও এই ধর্মের ছায়ায় আয়’, ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।
হাওএভার, প্যাদানোর এই হায়ারার্কিকাল চেইন যদি কোন না কোন পর্যায়ে ব্যার্থ হয় তবে হয় ধর্মটিকে এক পা বা কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে নুতন করে শুরু করতে হয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো আপাদমস্তক বিলুপ্তই হয়ে যেতে হয়! বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে তাদের প্যাদানীর চেইন খুবই খুবই প্রাথমিক অবস্থায় ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু সৌভাগ্যবশত বিলুপ্ত হয়ে যেতে হয়নি ধর্মটিকে বরঞ্চ নন-ভাইরুলেন্ট একটি অবস্থায় এটি টিকে গিয়েছে কালের যাত্রায়। তবে ভাইরুলেন্ট হয়ে ওঠার যথেষ্ট মালমসলাই যে এতে ছিলো তার প্রমান আছে আপনার লেখাটিতে। গল্প ফেঁদে যখন মেয়ে মানুষকে দুই টুকরা করে ফেলে; বাস্তবে ক্ষমতা লাভ করলে যে কয় টুকরা করতো সেটার সম্পর্কে কিছু অনুমান আমরা করতে পারি।
গৌতম বুদ্ধ বলে নানাবিধ টেনশন থেকে রক্ষার একটি ইফেক্টিভ উপায় হিসেবে বৌ-বাচ্চা পরিত্যাগপুর্বক চোরের মতো একরাতে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে অনুদ্দেশ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রথম কথা হচ্ছে ছেলেটা মস্তবড় একটা কাওয়ার্ড, সে রাজার ছেলে বলে ব্যতিক্রম কিন্তু একটা অস্বচ্ছল ঘরের কোন ছেলে এভাবে বৌ-সংসার ত্যাগ করলে পরে অনেকগুলো জীবনের উপর সে অবর্ণনীয় অশান্তিই নামিয়ে নিয়ে আসবে; কিন্তু সেইটা সমস্যা না। সমস্যা শুরু হয় যখন কিনা সে কোন শ্যাওড়া তলায় ধ্যানে বসলে পরে তাকে গাছে বসবাসরত পেত্নী এসে ধরে। পেত্নীর আছড়ে পড়ে যেই হোকাস-পোকাস গল্পগুলো তিনি ফেঁদেছিলেন, হযরত মুহাম্মদের নিন্মমানের হাস্যকর গাঁজাখুরী মেরাজের গল্পের সাথে কি সেটার কোন পার্থক্য আছে? আধ্যাত্নবাদরে কইষা গদাম, ফিজিকাল এভিডেন্সবিহীন দাবীকে বাস্তব বলে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শ্রম ব্যয় করে এমন প্রত্যেকটি মতাদর্শকেই কইষা গদাম। গৌতম বুদ্ধের প্রতি আমি একফোঁটাও শ্রদ্ধাশীল নই, যেমন আমি শ্রদ্ধাশীল নই কার্লমার্ক্স বা ফ্রেডরিখ নিটশের প্রতি। সেক্সী সাউন্ডিং হোকাস-পোকাস কথা বলতে কোন স্কীল লাগে না, কোন মেধা লাগে না। আবারও, পোস্ট ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ।।
@আল্লাচালাইনা,
আমার কথাগুলো সবই আপনি বলে দেয়ায় নতুন করে বলার কিছু পেলাম না।
তবে, আজ গৌতম এসেছে সেক্সী সাউন্ডিং হোকাস-পোকাস কথা নিয়ে , কাল আসবে রাম , মুহাম্মাদ, যীশু, মাও জে দং প্রমুখ। বড় বিপ্লবী পরিচয়ে চাঁদাবাজ খুনী ডাকাতদের নামেও দেখা যাবে মন্ত্র দোয়া পাঠ করা হচ্ছে , ব্যক্তিপূজা করা হচ্ছে।
এর শেষ কোথায় ? মুক্তমনা তো দেখা যায় সাপের তেল বিক্রেতাদের আখড়ায় পরিনত হতে বেশী দিন বাকী নেই।
ধর্ম এবং দর্শন যেসব কথা বলে সেসব কথাকে এর প্রচারকেরা আবেগ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভৌতিক প্রমানের কিনারা পর্যন্ত না ঘেঁষে।
ব্যাক্তিগত হাইজিনের একটা বুকলেট পড়ে যা শেখা যাবে তা সেক্সী সাউন্ডিং হোকাস-পোকাস ধর্মীয় কিতাব পড়েও শেখা সম্ভব নয়। ভালো কথার নামে কেরোসিনের বোতলে দুধ পান করার কোন অর্থ হয় না।
@সংশপ্তক,
বুঝলাম না 🙁
@সংশপ্তক,
ঠিক বুঝলাম না। কিছু মনে করবেন না, আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে মুক্ত-মনা সম্পর্কে তবে প্রকাশ্যে এখানে বা প্রয়োজন হলে মডারেটরদের জানাতে পারেন। কিন্তু তা না করে হঠাৎ এরকম মন্তব্য আমাদেরকে বিচলিত করে। আপনি নিশ্চয়ই একমত হবেন যে আমরা যারা মুক্ত-মনার সাথে কমবেশি জড়িত আছি তাদের আবেগের কোনো ঘাটতি নেই মুক্ত-মনার প্রতি।
@সংশপ্তক,
সৈকত, আমিও খুব অবাক হলাম সংশপ্তকের এই বাক্যটি পড়ে। মুক্তমনা তো বরং সব ধরণের সাপের তেল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেই সোচ্চার দেখছি, সেটা কোরানই হোক, হোমিওপ্যাথিই হোক, কিংবা হোক কোন নারী বিদ্বেষী বৌদ্ধ শিক্ষা। এটাই কি দরকার নয়? কেন হঠাৎ মনে হল যে, মুক্তমনা সাপের তেল বিক্রেতাদের আখড়ায় পরিনত হচ্ছে? মুক্তমনা ছাড়া আর কোন ব্লগসাইটেই তো কুসংস্কার এবং মিথকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যা মুক্তমনা থেকে করা হচ্ছে অহরহ। হ্যা মাঝে মধ্যে যে এখানেও বিশ্বাসনির্ভর প্যারাসাইট ঢুকে পড়ে না তা নয়, তবে তারা খুব বেশি হালে পানি পায় কি?
@আল্লাচালাইনা,
ঠিক এই মনোভাব থেকেই যখন জাতক পড়লাম তখন এতটা অবাক হলাম, আর তাই থেকেই লেখাটা।
আপনার প্রত্যেকটা পয়েন্টের সঙ্গেই মোটামুটিভাবে সহমত।
@আল্লাচালাইনা,
আসল কথাটা এই খানেই। বটগাছের নিচে বসে, ক্ষিদা আর দূর্বলতা আর ওদিকে আছে অবেচতন মনে বুধিসত্ত্বের আকাঙ্ক্ষা বুষ্টার, সব মিলিয়ে মনোবিভ্রমে কী আবোল-তাবোল দেখেছে বা ভেবেছে সেটাকেই আবার সকল শিংযুক্ত মনুষ্যসম্প্রদায় পরম পূজনীয় বলে লেহন,মর্দন করে বটিকা বানিয়ে খেয়েদেয়ে একেকটার কী ভাব?! বিশাল জ্ঞানী একেকটা, ব্রেন একখান থাকলেই হলো? আর ১৬ বছর ধরে ভাবলেই হলো? জগৎ সংসারের পরম জ্ঞান পেয়ে বসে আছে! :lotpot:
ঐসব হাংকি-পাংকি মার্কা ভাব উৎপাদন করতে বাস্তবিকই কিছুই লাগেনা, চোখ বন্ধ করে কল্পনা শুরু করলেই হলো, দেখুনঃ
উপযুক্ত ব্রেইন আর তিনশত তিনদিন তিন ঘন্টা না খাওয়া, গুহায় বসে চোখ মুদে না থাকায় মোদ্দা কথা উপযুক্ত মানসিক অবস্থা ও পরিবেশ না পাওয়ায় আমার ধর্মকথাগুলোর হয়তো একটু ধর্মীয় সাহিত্যমান ( 😛 ) কমে গেল কিন্তু ধর্মের হাংকি-পাংকিগুলোর কি এর থেকে খুব পার্থক্য আছে? 🙂
:lotpot:
স্রষ্টা না থাকলে নারী হীন হয় কিভাবে তা আমার মাথাতেও ঢুকছে না। অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
@বাসার,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মুক্তমনায় স্বাগতম। বৌদ্ধ ধর্মের কিছু কিছু ব্যপার আমার ভল লাগে। যেমন অহিংসা, নরীশ্বর বাদ,উপাসনা হীনতা ইত্যাদি। কিন্তু যে বুদ্ধ আরো হাজার হাজার বছর আগে বলে দিয়েছেন ঈশ্বর নেই, যিনি সকল জীবের প্রতি এতো দয়াবান ছিলেন নারী কেন তাঁর কাছে এত তুচ্ছ ছিল তা বুঝতে পারিনা।
@তামান্না ঝুমু,
এর সঙ্গে একটা ঘটনার সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছি। আমেরিকায় যে সমস্ত ধর্মপ্রচারক সমকামীদের মনুষ্যেতর প্রাণী বলে গণ্য করে, প্রচণ্ড জোর গলায় চেঁচিয়ে সমকামিতার উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে, সমকামিতাকে ঘৃণ্য, হীন, পাপাচার বলে গণ্য করার দাবী জানায় – এবং সমকামীদের হত্যা করার আবেদন জানাতেও পিছপা হয় না – তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে সমকামী (এবং সময় বিশেষে, শিশুকামী) হিসেবে প্রমাণিত হয়ে পড়েছে। একেই বোধহয় বলা হয়, সর্ষের মধ্যেই ভূত। পুরুষতান্ত্রিক ধর্মগুলো নারী উপস্থিতি, অধিকার – এসব খর্ব করার জন্য যে সদা-সচেষ্ট তার একটা কারণ কি অন্তর্নিহিত গিল্ট কমপ্লেক্স নয়? তাদের নিজের শরীর বা মনের ওপরে তাদের কন্ট্রোল কম, এবং সেই দোষটি তারা মহিলাদের ওপরে চাপিয়ে থাকে অবলীলাক্রমে – কারণ ধর্মের নামে চালিয়ে দিলে সেটা লোক খায় বেশী।
হুমম, বাইবেলের সূত্রগুলো যিনি একসাথে জড়ো করা একটা বইয়ের রূপ দেবার কাজ শুরু করেন, সেই সেন্ট পল-ও নাকি যেমন ছিলেন সমকামী তেমনই তাঁর কথাবার্তায় ছিলেন খুব হোমোফোবিক। (এইটা অনেক আগে পড়া, রেফারেন্স মনে নাই।)
@কৌস্তুভ, এখানে ধর্মের কাঠামোর ভেতর নারীতান্ত্রিকতা-পুরুষন্ত্রিকতা ছিলো সেই তো ভালো ছিলো… নারীপুরুষের জৈবিক অভ্যাসের প্রতি কেনো আসলো? সম্ভবত: মানুষই একমাত্র প্রানী যে প্রজনন-প্রয়োজন ছাড়াও যৌনক্রিয়ায় আনন্দ(রিক্রিয়েশন) পায় এবং করে। মনে রাখতে হবে, ধর্মই মানুষকে যৌনতার মধ্যে আনন্দ খুঁজতে শিখিয়েছে। সে নিজেই প্রচলন করেছে এবং যৌনাচারটিকে নিয়ন্তণের মাধ্যমে মানুষ দুটিকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে। সমাজবিজ্ঞানে পরিবার ক্ষুদ্রতম ইউনিট যা যৌনতার ভিত্তিতে Kinship তৈরি করে, Scion নির্ধারন করে। এটিকে নিয়ন্ত্রন করে ধর্মনিয়ন্ত্রক সমাজপতি, তথা রাষ্ট্র/রাজা।
কিন্তু শুধু সন্তান উৎপাদন মানব-যৌনমানসিকতার একমাত্র প্রেষণা হিসেবে ধার্য্য ছিলো না কোনো কালেই। স্বাভাবিককামের পাশাপাশি সমকাম এমনকি বিচিত্রকামের বা বিভৎসকামের প্রচলন কি অস্বীকার করা যায়? প্রাচীন ধর্মে রোগবালাই দূর করতে পশুমৈথুনের প্রচলণ ছিলো। (মৌর্যসভ্যতার গুহাচিত্র ও টেরাকোটা দেখুন)। অন্যদিকে সমকামীতা ধর্মের আগের আবিস্কার, নব-পাথর-যুগেও সমকামীতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সব সমাজে ধর্মে যৌনতা একটি প্রধান নিয়ন্ত্রণের বিষয় হিসেবে বিবেচিত বলেই এর প্রাধান্য বেশি। আনন্দের উপর শুল্ক-প্রয়োগের স্বার্থে সবধর্মে, দর্শনে শুধমাত্র জন্ম-সংক্রান্ত নারী-পুরুষ মিলনই বৈধ।
@মোহোলি.জোলা,
১) “সম্ভবত: মানুষই একমাত্র প্রানী যে প্রজনন-প্রয়োজন ছাড়াও যৌনক্রিয়ায় আনন্দ(রিক্রিয়েশন) পায় এবং করে।”
২) “মনে রাখতে হবে, ধর্মই মানুষকে যৌনতার মধ্যে আনন্দ খুঁজতে শিখিয়েছে।”
:-Y
দুঃখিত, দুটোই ভুল ধারণা। প্রথমটির উদাহরণ শুধু মানবেতর প্রাইমেটদের মধ্যেই পাওয়া গেছে তা নয়, অ-প্রাইমেট চতুষ্পদ প্রাণী – যেমন, হাতি – তার মধ্যেও পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয়টি সম্পর্কে কিছু বলার আগেই উইকিপিডিয়ার প্রণালী অনুসরণে বলি – [সাইটেশন প্লীজ্]
@কৌশিক,
‘ আমেরিকায় যে সমস্ত ধর্মপ্রচারক সমকামীদের মনুষ্যেতর প্রাণী বলে গণ্য করে, প্রচণ্ড জোর গলায় চেঁচিয়ে সমকামিতার উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে, সমকামিতাকে ঘৃণ্য, হীন, পাপাচার বলে গণ্য করার দাবী জানায় – এবং সমকামীদের হত্যা করার আবেদন জানাতেও পিছপা হয় না – তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে সমকামী (এবং সময় বিশেষে, শিশুকামী) হিসেবে প্রমাণিত হয়ে পড়েছে। একেই বোধহয় বলা হয়, সর্ষের মধ্যেই ভূত। ‘
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সমাজের স্বাভাবিক রীতি নীতির বাইরে গিয়ে সমকামীতা চর্চা করতে গিয়ে তাদের মনে এক ধরণের চাপ পড়ে। এই গিল্ট থেকে তারা তাদের এই স্বাভাবিক যৌন আচরণকে ঢাকার চেষ্টা করে।
@তামান্না ঝুমু,
বুদ্ধকে মূলে অনেকেই দেখিয়েছেন নিরীশ্বরবাদী বলে। সেই থেকে আরো অনেক গিয়ানজাম ঢুকিয়ে – কারণ উপাসনা, আড়ম্বরই মানুষের অভ্যাস – বৌদ্ধধর্ম আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে।
মনে হয় ওনার মূল ভাবনাটা খুব সরল ছিল – কামনা (যার মূলে নারী, পুরুষদের কোনো দোষ নেই, তাদের চিত্ত কেবল একটু ভেসে যায়) হচ্ছে সাধনার অন্তরায়, আর সাধনাই আসল বস্তু। তাই নারী বাদ।
@কৌস্তুভ, এবং @তামান্না, আরেকটি কথা মনে পড়ে গেল। কৌস্তুভ এই ব্যাপারে আমার থেকে অনেক বেশী জ্ঞানসম্পন্ন, তবু বলি – বৌদ্ধধর্মের পরের দিকে যে arrzআর্য তারা (বা যেতসুন দলমা) নাম্নী বোধিসত্ত্ব এবং মহাযান ও বজ্রযান সম্প্রদায়ে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের প্রচলন হয়, সেটি থেকে কিন্তু সম্যক ধারণা করা যেতে পারে যে শত চেষ্টা করেও বৌদ্ধরা নারীসংসর্গ পুরোপুরি পরিত্যাগ করে উঠতে পারেনি – মানবীতে মুশকিল হওয়াতে দেবী হিসেবে ফিরিয়ে এনেছে। :lotpot:
:lotpot:
ঠিক, তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম বেশ দুষ্টু জিনিস, আমিও ভাবি, বুদ্ধের ভাবনাচিন্তা থেকে কতটা সরে এসেছে জিনিসটা!
কিন্তু কথায় কথায় আমাকে কি এত গ্যাস না দিলেই নয়?
@কৌস্তুভ,
বৎস, গ্যাস না থাকিলে উর্দ্ধপথে তব উত্তরণ ঘটিবে কি প্রকারে?
তাছাড়া সত্যবাচনকে গ্যাস-এর সঙ্গে তুলনা করা নিতান্তই বাতুলতা। :lotpot:
নিমাইয়ের মা-বৌ ফেলে চলে যাওয়াটাও আমার কাছে অপরাধ বলে মনে হয়।
এক হরিবোল হরিবোল করনেওয়ালা যে কিনা আবার মাঝে মাঝেই সংসার ছেড়ে চলে যাবে বলে বয়ান দেয়- একদিন মেজাজ গরম করে বলে ফেলেছিলাম- নিমাই বা এর সাথে আরো যারা বৌ-সংসার ফেলে সন্ন্যাস নিল, তারা কি গে টাইপের কিছু ছিলো?
এরপর সে আর আমার সামনে ঐ সংসার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে নি। ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতেও আসে নি। মনে বড় দুঃখ পেয়েছিলাম। 🙁
@শ্রাবণ আকাশ,
ও-ও তো ওই একই ব্যাপার!
আপনি দেখি বড়ই পাষণ্ড, সেই জগাই-মাধাই-দের মত, আপনার উদ্ধার কে করবে? 😛
@কৌস্তুভ, উদ্ধার নয়, তবে বুঝি- শুধু দল ভারী করার জন্য অনেকেই “দাওয়াত” দিতে আসে।
@শ্রাবণ আকাশ,
হায় হায় কি বলেন? নিমাই পন্ডিত দুইটি বিবাহ করেছিল। আর আপনি সরাসরি গে বলে দিলেন?
দেখুন তৎকালে ভারতের উন্নত দর্শনগুলো কিন্তু এই সকল সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীদের থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।
আর একটা ব্যাপার প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সংসারের কোন ব্যাপারে প্রচন্ড দুঃখ পেয়েই তাদের অনেকে সংসারত্যাগী হয়েছিলেন। যেমন নিমাইপন্ডিতের প্রথমা স্ত্রীর বিয়োগের পরই তার মধ্যে বৈরাগ্যভাব প্রবল হয়ে ওঠে।
আর একটা মজার ব্যাপার হল মহাভাবের শিরোমনি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য(নিমাই পন্ডিতের সন্ন্যাস গ্রহনের পরবর্তী নাম) তার স্ত্রীবিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রখর যুক্তিবাদী ছিলেন (তিনি তখন পথে পথে ভাববাদীদের ধরে ধরে রঙ্গ-তামাশা করতেন এবং ভাববাদীরা উনার ভয়ে যথাসম্ভব উনার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন)।
@রনবীর সরকার, যদি সবাইকে দলে না টেনে অন্তত একজনকেও যুক্তিতে মুক্তি দিতে পারত, তাহলে কি আরো ভালো হত না?
@শ্রাবণ আকাশ,
‘সন্ন্যাসীদের ব্যক্তিগত আধ্যাতিক সাধনা ( যেমন- ‘কোন ব্যাপারে প্রচন্ড দুঃখ পেয়েই তাদের অনেকে সংসারত্যাগী হয়েছিলেন।’) যখন দর্শন হিসেবে কোনো গোষ্ঠী গ্রহণ করে তখনই ঘোট পাকায়—- এক ব্যক্তির জীবনের এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চয় সবার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
@মৌনতা, সাধারণত কোনো গোষ্ঠীই কারো ব্যক্তিগত দর্শন গ্রহন করার জন্য নিজেদের লেজ বাড়িয়ে দেয় না। বরং লেজকাটা শেয়ালরাই অন্যের লেজ কাটার জন্য ঐ ব্যক্তিগত দর্শন গেলাতে আসে।
(এখানে অবশ্য ভালো-মন্দের ব্যাপারটা আপেক্ষিক বলে ভিন্ন বিতর্ক)
মুক্তমনায় স্বাগতম (F) । বৌদ্ধ ধর্মে নারীদের অধিকারকে খর্ব করা হয়নি যা লক্ষনীয় তবে হারিয়ে যাওয়া ভিক্ষুনী সংঘে প্রবজ্জা দিতে অনেক থেরবাদলম্বী ভিক্ষুরা অনুমতি দিতে চান না । কারণ এমন ও হয়, কোন নারীর সাথে কোন ভিক্ষুককে কথা বলতে অথবা হাঁটতে দেখলে অনেকেই অনেক কথা বলে । ভিক্ষুককে দুঃশীল বলে বিবেচিত করা হয় । তবে সাধারণভাবে নারীদের স্বাধীনতা লক্ষনীয় । অন্ততঃ যেখান থেকে বেড়ে উঠেছি ।
@অমিত হিল, দূঃখিত, ভিক্ষুক এর জায়গায় ভিক্ষু হবে ।
@অমিত হিল, হাতে পায়ে বেড়ি দিয়ে রাখলে তবেই নারী স্বাধীনতা খর্ব হবে, নতুবা নয় – এমনটাই কি সত্যি? নারী-পুরুষ আলাদা করে রাখা, মহিলাদের সম্পর্কে প্রভূত বাজে কথা বলে তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি করা, যেখানে যতটুকে সম্ভব মহিলাদেরকে চূড়ান্ত কঠিন শাসনের মধ্যে রাখা – এগুলো কি নারী-স্বাধীনতা, ইন ফ্যাক্ট, মানবাধিকারের পরিপন্থী নয়?
@অমিত হিল,
ধন্যবাদ। আমারও এইরকমই একটা ধারণা হয়েছিল ওনাদের সংস্কৃতি দেখে।
মুক্তমনায় স্বাগতম! বুঝতেই পারছি, পড়ে আরাম পাবো। এখনো পড়িনি, কিন্তু আমার আরেকজন পছন্দের ব্লগারের লেখা মুক্তমনায় পেয়ে আগে শুভকামনা জানিয়ে গেলাম… আপনার বিসমাথের উপর লেখাটা পড়ে তো মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
ধন্যবাদ! পড়ার পর বিস্তারিত মন্তব্যের আশায় রইলাম।
@কৌস্তুভ,
আসলেই কি খুব দ্রুত এই দর্শন সারা দুনিয়ার মানুষের মনে বসত করে নিয়েছে? বৌদ্ধ ধর্ম শুধু ত সন্যাসীর জন্য নয়, গৃহীর জন্যও। ভিক্ষাজিবী ভিক্ষুরা তো বৌদ্ধ ধর্ম মতাবলম্বীদের একটা অংশ মাত্র! তাহলে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ঠিক বিপরীতে কজন গেল?
সন্যাসব্রতের উদ্দেশ্য হল পরম শান্তি, যা তারা বিশ্বাস করত সত্যকে কঠিন তপস্যার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারলেই সম্ভব। আপনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিপরীতে যে মিমকে দাঁড় করালেন, তা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মিম নয়। তাহল পরম শান্তি লাভের উপায় বা প্রক্রিয়া হিসেবে গৃহীত বা স্বীকৃত! যদি মিম মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন বলতে চান, তাহলে আমার ধারণা, প্রকৃত পক্ষে একজন মানুষের পক্ষেও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি, এমনকি স্বয়ং বুদ্ধ পেরেছিলেন কিনা, সন্দেহ আছে… বুদ্ধ কি সত্যিকার অর্থে একটা বিশাল সংসারী জীবন বহন করেন নি? সমগ্র ভিক্ষু-ভিক্ষুণী সম্প্রদায়, তাদের জন্য ধর্মসভা, জেতবন, বহু অনুসারীর যন্ত্রণা কষ্টের কথা শোনা, ঈশ্বর নেই বলে তৎকালের মানুষগুলোকে নিজের মতে দীক্ষীতকরণ, কি করেন নি তিনি? তিনি যা করেছেন, তার মধ্যে বৃহত সংসারের ধারণাটা বাদ দিলে, সংযমী জীবনযাপনটাকেই নির্দেশ করা যায়। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছিল না, কিন্তু আমাদের চেয়ে বড় সংসার তাকে সামলাতে হয়েছে… এবং যথারিতী সেই সংসারে অশান্তি ছিল বলেই শান্তির বানীই বারবার এসেছে।
@কৌস্তুভ,
সত্য জানার জন্য চিন্তার দরকার আছে, গভীরতা দরকার আছে…, তার জনয সংসার ছেড়ে না পালালেই কি নয়? আর সত্য জানার যে পথটা ভ্রান্ত/ জটিলতাকে উপেক্ষা করার একটা নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার গভীরতায় ঘাটতি থাকবে অস্বাভাবিক নয় কিন্তু! বুদ্ধের যাদুকরী ব্যক্তিত্ব্য (ক্যারিশম্যাটিক পারসোনালিটি) সব কথাকে সত্য করে দেয় না।
বৌদ্ধ ধর্মকে কি ধর্ম হিসেবে না দেখে দর্শন হিসেবে দেখা যায়? দর্শন কিন্তু ধর্মের মত কঠিন না, সংশোধন যোগ্য, খন্ডন যোগ্য! সেই বিচারে, জাতকের এইসব গল্পগুলো নিয়ে হতাশ না হই। অধিকাংশ ধর্মেই প্রচুর মিথ থাকে। আপনাকে সাধুবাদ, সেরকম কিছু নিদর্শন তুলে ধরার জন্য।
@নীল রোদ্দুর,
আমার কাছে বৌদ্ধ ধর্মের বদলে বৌদ্ধ দর্শন বললেই অনেক বেশি ভালো শোনায়!
@সাজ্জাদ হোসেন, বেগুনকে প্রাণনাথ! তাতে কি স্বাদ বদলায়? ইসলামকে অনেকে ধর্ম বলেন না, বলেন দর্শন। যেমন দেখুন, টেক্সটবুক বোর্ড বলে, ইসলাম শিক্ষা অথচ আমাদের অনেকের মার্কশীটে সেই পুরোনো কোন আমলে লিখেছিলো, ইসলাম ধর্ম শিক্ষা!
@নীল রোদ্দুর, আমার কাছে কিন্তু এই গটগটিয়ে চলে যাওয়াটা একতা পলায়ন বৃত্তি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। ধর্ম-কর্মই যদি সার হবে তবে কেন এই সন্তান-সন্ততি কেন এই সংসাররঙ্গ? যাও না তুমি কারও জন্ম নও ভেবে নিয়ে বুদ্ধের কিংবা যিশুর মতো একটা থিম দ্বার করিয়ে সন্ত হয়ে যাও।
@কৌস্তুভ, নারীকে বন্দী করে রাখা, তাকে জানানো সে নীচুস্তরের মানুষ, তাকে শাসনে না রাখলে সমাজের অমঙ্গল হবে, এসব কিন্তু একদৃষ্টিতে পুরুষের সারভাইভাল স্ট্রাটেজী! নইলে পুরুষ নারীর উপর সন্তানের দ্বায়িত্ব অর্পন করে বহু রমনীতে আসক্ত হত কি করে আর কি করেই বা জনসংখ্যা তথা নিজের জিন বিস্তারের এমন পরাক্রমশালী হয়ে উঠত!
আর ধর্মের নীতি নারীকে এভাবে দেখানো, তা তো হতেই হবে, দাসী না থাকলে প্রভুত্ব করবে কার উপর!
@নীল রোদ্দুর,
আপনার ‘সারভাইভাল স্ট্র্যাটেজি’ কথাটা মোটামুটি সত্যি। তাই সেটার আলোচনায় বেশি না গিয়ে মিম নিয়ে আপনার মন্তব্যটা নিয়েই বলছি।
কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে, মিম-এর ধারণাটা আপনার কাছে খুব স্পষ্ট নয়, অন্তত এই ক্ষেত্রে। আমার যা মনে হয়েছে, বলি।
‘পরম শান্তি’ একটা ধারণা বা আইডিয়া। সেই সঙ্গে, অন্যভাবে দেখলে, একটা অনুভূতিও বটে। এই অনুভূতিটাকে খোঁজ করে চলেন সাধকেরা। আর আইডিয়াটা এই, যে পরম শান্তি বলে যে কিছু আসলে আছে, সেটা যে কাঙ্খিত বস্তু, সেটা যে খোঁজা উচিত, সেটা। অর্থাৎ, এই আইডিয়াটা ওই অনুভূতিটাকে স্বীকৃতি দেয়।
তা, এই অনুভূতিটা কিন্তু একটা মিম নয়। সত্যি বলতে, ওটা যেহেতু অবাস্তব, তাই সেটার অস্তিত্বই তো নেই।
কিন্তু এই যে আইডিয়া-টা, সেটা একটা মিম। এমন মিম, যা একটা অবাস্তব ধারণাকে স্বীকৃতি দেয়। আমাদের সেটা বিশ্বাস করতে জোর করে। এইটাই সমাজে ছড়িয়ে যায়, যাঁরা পরম শান্তি নিজেরা খুঁজছেন না, তাঁরাও যাঁরা খুঁজছেন তাদের সেই ধারণাকে সম্মান করেন।
(এটার তুলনা হচ্ছে, ডেনেট যা বলেছিলেন, অনেকেই হয়ত belief in god রাখেন না, কিন্তু অন্য যারা বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করেন, অর্থাৎ belief in belief in god তাঁরা মানেন।)
তেমনই, ‘পরম শান্তি পেতে গেলে সংসার ছেড়েছুড়ে তপস্যায় যেতে হয়’ এই ধারনাটিও একটা মিম। এটা অনেকে কাজে অনুসরণ করেন, কিন্তু আরো বহু লোকে এটায় বিশ্বাস করেন। তাঁদের মাথায় এটা বসতি করে নিয়েছে। আমরা করি না, আমাদের মাথায় একে বসতি করতে দিই নি বলে।
@কৌস্তুভ,
আমি মিম বলতে পরম শান্তির ধারণাকে বুঝিয়েছি, যেটা অবাস্তব একটা ধারণা, এই ধারণার পিছনেই বুদ্ধ ছুটেছেন বলে লোকে বিশ্বাস করে। কিন্তু এই অবাস্তবের প্রবর্তক একমাত্র বুদ্ধ নয়। 🙂
এই ধারণা মিম, যুক্তিতে ঠিক আছে, সেটা আমাদের দৃষ্টিতে সঠিক মিম হোক, আর ভুল হোক, তবে সেখানে ”
“এই প্রশ্নটা আগে সন্যাসীর মনে জেগেছে কিনা, সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। কিন্তু বুদ্ধের অনুসারীদের মাঝে পরম শান্তি পেতে গেলে সংসার ছেড়ে যেতে হয়, এই ধারণা মোটেও মিম হিসেবে ছড়ায় নি। ছড়িয়েছে করণীয় হিসেবে, ধর্ম হিসেবে। যারা সন্যাস নিয়েছিল বা এখনও নেয়, তারা পরম শান্তি পেতে হলে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে হবে জংগলে, সেটা ভেবে যায় না, যায়, বুদ্ধকে অনুসরণ করে। আর যদি বা ধরি, তারা জঙ্গলে সন্যাসে গেলে পরম শান্তি পাওয়া যাবে, এটা ভেবেই যায়, তাহলে বলতে হবে, পরম শান্তি নামের যে ধারণাটা আছে, সেটা তাদের কাছে ধারণা নয় বস্তু। নদীতে জল পাওয়া যায়, তেমনি সন্যাস নিয়ে সংসার ছেড়ে নির্জনে গেলে শান্তি পাওয়া যায়। একটা কঠিন ফ্যালাসী আছে এখানে। সত্যিকার অর্থে যদি বুদ্ধের মিম ছড়িয়ে গেছে, এটা ভাবতে হয়, তাহলে, পরম শান্তির ধারণা, এবং সন্যাস অর্জনের সম্ভাব্য উপায়ের ধারণা উভয়কেই জানতে হবে। ধর্মের মাধ্যমে বা প্রথাকে অনুকরণ করে মিম ছড়ায় না, কাস্টম বা রিতী ছড়ায়। 🙂
একালেও অনেক লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিককে পাওয়া যাবে যারা নিরিবিলিতে শান্ত মনে লেখালেখি করার জন্য বা ভাবার জন্য লোকালয় ছেড়ে দূরে যাচ্ছেন, তারা কিন্তু প্রকৃত অর্থে বুদ্ধের মিমকে মনে স্থান দিয়েছেন। বলা চলে, তিনি বৌদ্ধ না হলেও বুদ্ধের অনুরূপ মিম দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু বুদ্ধ সন্যাস নিয়েছিল বলে তার পরবর্তী অনুসারীরা অনুসরণ করে যখন সন্যাস নেয়, তখন তা মিমের সঞ্চালন হয় কি?
মিম এর সঞ্চালন তো ধারণার সঞ্চালন, কিন্তু বৌদ্ধ সন্যাসীরা যা করেন, তা প্রক্রিয়ার অনুসরণ, হিন্দুদের দেবীর চরণে পূজা দেয়া, মুসলিমদের রোজা রাখা, খ্রিষ্টানদের রবিবারে চার্চে যাওয়ার মত করে।
মিমের সঞ্চালন ঘটে বৌদ্ধিক জগতে, অনুসরণ বা অনুকরণে নয়। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
দুঃখিত, এটা হবে,
সত্যিকার অর্থে যদি বুদ্ধের মিম ছড়িয়ে গেছে, এটা ভাবতে হয়, তাহলে, পরম শান্তির ধারণা, এবং পরম শান্তি অর্জনের সম্ভাব্য উপায়ের ধারণা উভয়কেই জানতে হবে। ধর্মের মাধ্যমে বা প্রথাকে অনুকরণ করে মিম ছড়ায় না, কাস্টম বা রিতী ছড়ায়।
@নীল রোদ্দুর,
ধর্ম কী? কতগুলো আইডিয়া/মিমের সমষ্টি বই তো নয়!
এইটা দেখেছেন কি না জানিনা, নইলে দেখতে পারেন…
অবশ্যই অনুসরণে বা অনুকরণেও ঘটে বই কি। আপনার অনুকরণ করার সিদ্ধান্তটাই হচ্ছে সেটাকে মাথায় ঢুকতে দেওয়ার পারমিট।
আপনার পয়েন্টটা আমি ধরতে পারছি মনে হয়। বুদ্ধ সচেতনভাবে ‘পরম শান্তি কামনীয়’ এই মিমের জন্য সংসার ছাড়লেন, আর বাকিরা ‘পরম শান্তি কামনীয়’ ঠিক এই মিমের জন্য নয়, বরং ‘বুদ্ধকে অনুসরণ করা উচিত’ এই মিমের জন্য সংসার ছাড়লেন, এই কথা বলছেন তো? তাঁরা কিন্তু পরোক্ষে ওই মিমটাকেও মাথায় জায়গা করে দিচ্ছেন।
@কৌস্তুভ, তাহলে বলতে হয়, সকল জাগতিক কর্মকান্ডই মিম! আমার দ্বিমত আছে।
ধর্ম একটা সিস্টেম যা তার অবশ্য পালনীয় নির্দেশ গুলোর অস্তিত্ব দাবী করে কোন প্রকার প্রশ্নের উর্ধে থেকেই। ধর্ম কোন প্রশ্নকে ঠাঁই দেয় না, বুদ্ধিবৃত্তিকে অস্বীকার করে, এমন কি ধর্ম বুদ্ধি বৃত্তিকে প্রশ্রয় দেয় না অস্বীকার করে সেই প্রশ্নের সুযোগও ধর্মে নেই, চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে, ধর্ম অভ্রান্ত! যা বুদ্ধির গলা এইভাবে টিপে মারছে, তা কি করে সামগ্রিকভাবে মিম হয়? আমার চিন্তা চেতনার সহস্র প্রতিলিপি তৈরী করে যাওয়া সম্ভব মিমের মাধ্যমে, জিনের সাহায্য না নিয়েই। কিন্তু আমার যে কাজের পিছনে কোন চিন্তা চেতনা নেই, তাকে প্রসার করলে কিভাবে মিমের প্রসার হয়?
ডান হাতে ভাত খাই, এটা মিম? বাম হাতের দোষটা কোথায়? পেন্সিলটা যেদিন ডান হাতে ধরেছি, সেদিন বাম হাত হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছিলাম কোন বৌদ্ধিক জাগরণের কারণে? অন্ধত্বকে মিমের সঞ্চালন বলে আমি আসলে মানতে পারিনা।
রিচার্ড ডকিন্সের মিমের আইডিয়াতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে দেখব, যুক্তি এবং যুক্তিহীনতাকে একই সাথে মিম বলে প্রমোট করেছেন কিনা।
ধর্ম অবশ্যই একটা সারভাইভাল স্ট্রাটেজী, নাহয় সহস্র বছর ধরে টিকে থাকতো না। ধর্ম শেষ পর্যন্ত মানব প্রজাতিকে টিকে থাকতে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে। কিন্তু আস্ত ধর্ম নয়।
@নীল রোদ্দুর,
এখানে ছোট্ট একটা সত্য আড়াল হয়ে গেছে, ধরে নিন আমি ধর্মপ্রচারক, আমার প্ল্যান, আমি ধর্ম অনুসরণ করাবো, শেখাবো করতে হবে, এই যে অনুসরণ করাবো, আমার উদ্দেশ্য সফল করতে, এই উদ্দেশ্যের আইডিয়াটা আমি কিন্তু সঞ্চালিত করছিনা। 😀
চোখ বেঁধে দিয়ে বলেছি হাঁট, তারা পথ দেখে হাঁটা যায় জানতো না বলেই, বাধ্য হয়ে চোখ বেধেই হাঁটছে। খুব দারুন ভাবে আরেকটা আইডিয়া চিরতরে হারিয়ে গেল। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
দুঃখিত, আপনার এই দুটি মন্তব্য আগে খেয়াল করি নি। একসাথেই উত্তর দিচ্ছি।
আপনি ভালই বলেছেন, মিম নিয়ে ডকিন্স এবং অন্যদের মন্তব্য তাহলে একটু রিভিউ করে নিন। ডকিন্স ‘গড ডিলিউশন’ বইতেও বলেছেন, ধর্মের আইডিয়াটাকে সামগ্রিক অর্থে একটা মিম ধরা যেতেই পারে, তবে সেটা একটু দুর্বল নির্মাণ, কারণ ধর্মের বহু কমপোনেন্ট আছে যারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে, তাদেরকেই মিম ধরা উচিত, আর ধর্মকে একটা আলগা বান্ডিল। এ নিয়ে অন্যদেরও আলোচনা আছে।
আমরা ডান হাতে ভাত খাই এটা অংশত আমাদের স্বাভাবিক ডানহাত-পটুতার জন্য। কিন্তু বাঁ হাতে একেবারেই খাওয়াই যাবে না, এইটা চালু রাখতেন আমাদের পুরাতনপন্থী পিসিমা-ঠাকুমারা, যেহেতু আমরা বাঁ হাত দিয়ে ইয়ে করে এসেছি এতকাল। এইটা মিম, এবং আপনার নজরে তা বৌদ্ধিক অবস্থান। হ্যাঁ। কিন্তু ঠাকুমার থেকে এটা অভ্যস্ত হয়ে হয়ে এসে যখন মা-ও কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই বাঁ হাত দিয়ে খেতে বারণ করেন, সেটাও মিমেরই ট্রান্সমিশন।
“রিচার্ড ডকিন্সের মিমের আইডিয়াতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে দেখব, যুক্তি এবং যুক্তিহীনতাকে একই সাথে মিম বলে প্রমোট করেছেন কিনা। ”
আমার তো মনে হয় উনি তাই বলেছেন। পড়ে দেখুন।
এই অংশটা বুঝতে পারি নি 🙁
@নীল রোদ্দুর, রীতিমতো বাজে কথা। আসলে সামাজিক অবস্থান থেকে বিচার করার আগে চাহিদাগত অবস্থান বিচার করা বাঞ্ছনীয়। আদিম-নারীকে আদিম-পুরুষের দুইটি কারণে প্রয়োজন। প্রথমত জৈবিক, দ্বিতীয়ত সামাজিক।(অবশ্যই তখনকার আদিম সমাজটি হলিউডের প্রিমিটিভ-ওয়ার্ল্ড সিনে সেটের মতো নয়, সেখানে নারীও শিকার করে বীজ বোনে) অন্যদিকে নারী হলো সম্পদবতি। তার সন্তান (জনশক্তি) আছে।
শামান-পুরোহিতরা যখন মাতৃতান্ত্রিক সমাজকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পরিনত করলো তখন সবার আগে নারী যে জিনিসটি হারালো তা হলো সন্তানের উপর তার অধিকার। অন্যদিকে Kinship-এর চেয়ে একটি নিয়ন্ত্রক যোগ হয় যখন সম্পদের জন্য যুদ্ধ ব্যাপারটি অবধারিত হয়ে পড়ে, এবং যুদ্ধরীতি অনুয়ায়ী পুরুষ হত্যা করা হলেও নারীদের রেখে দেয়া হতো নতুন ট্রাইব বা ক্লান গড়তে। নারীরাও বেচে যেতো সম্পত্তি হয়ে। মজার কথাটি হলো, নারী নিজেই নারীর সর্বনাশ করেছে। এই দীর্ঘ দশ হাজার বছরের সভ্যতায় নারী আশ্রয় এবং নিরাপত্তা ছাড়া পুরুষের বশ মানেনি। যারাই তাকে নিরাপত্তা দিয়েছে সে তাদের কাছেই গেছে। ডমিনেটিঙ/ডমিনেটেড লড়াই? না কি জেীবনের লড়াইয়ের কাছে ‘লিঙ্গ-লড়াই’ পরাজিত। ডমিনেটিঙ/ডমিনেটেড কিছু নেই।
@মোহোলি.জোলা, কিছু মনে করবেন না, আপনার এই লেখাটা পড়ে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া হল – ষণ্ডবিষ্ঠা!
আপনার এই বক্তব্য অসত্য, মহিলাদের পক্ষে অপমানজনক এবং অত্যাচারিতকে দোষারোপ করার (ভিকটিম ব্লেমিং) প্রবণতাপূর্ণ। ঠিক একই রকম কুযুক্তির ব্যবহার আমরা দেখেছি পশ্চিমী দেশগুলোতে – বিশেষত আমেরিকা এবং ইউ কে তে – বিভিন্ন মার্জিনালাইজ্ড্ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে, যেমন কৃষ্ণাঙ্গ, সমকামী, লিঙ্গান্তরকারী ইত্যাদি। ছিঃ!
বস্তাপচা অন্ধকারযুগীয় প্রথা-প্রচলনের কথা টেনে না এনে সামনের দিকে তাকিয়ে চলুন না? আপনি হয়ত খেয়াল করেন নি, পৃথিবী কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে গেছে।
@কৌশিকদা, ষণ্ডবিষ্ঠা-র তুলনায় ‘বৃষবিষ্ঠা অথবা বলদার্গু’ ভালো শোনায় না কি? 😛
কৌস্তূভের জ্ঞানগর্ভ লেখা আগেও পড়েছি অন্যজায়গায়, সববারের মত এবারও অসাধারণ লাগল। তবে জাতকের গল্পে সীমাহীন মহিলাবিদ্বেষ দেখে খুব একটা অবাক হলাম না। এ নিয়ে বলতে গেলে সাতকাহন হয়ে যাবে, কিন্তু এইটুকু বলি যে তৎকালে এবং সমকালে ধর্মগুলি পুরুষতন্ত্রের প্রতিবিম্ব মাত্র। b
আফটার থট কে ‘পরচিন্তা’ বা ‘উত্তরচিন্তা’ হয়ত বলা যেত, কিন্তু বাংলায় অ্যাপোলজিস্ট বা মিম-এর সঠিক প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। সব ভাষার কি আর অনুবাদ হয়?
@কৌশিক,
মিম শব্দটির বাংলা অনুবাদ আমি আশা করি নি। তবে, প্ল্যান, মরাল, থিয়োরি, লজিক, শভিনিস্টিক, বায়াস, ভায়োলেন্স ইত্যাদি শব্দের উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ আছে বলেই আমি মনে করি।
@তুহিন তালুকদার, বিলক্ষণ। তবে সেই সব বাংলা প্রতিশব্দের কি একই রকম ইম্প্যাক্ট hoyহয়? জানিনা।
@কৌশিক, শভিনিস্টিক শব্দটি ছাড়া অন্য শব্দেগুলি বাঙলা হরে ক্ষতি কি?
শভিনিস্টিক শব্দটি উৎসগত কারনে বাঙলা না করলে ভালো মনে করি। সব শব্দ বাঙলা করতে হবে এমনও নয়। আমার ভাষায় বিদেশী শব্দ আসতেই পারে! আগেও এসেছে। তাতে াামার ভাষার মান যায়নি বরং বেড়েছে।
@মোহোলি.জোলা, আমি সামান্য কিছু বলার দৃষ্টতা দেখাছি…… এমন কিছু শব্দ যা বাংলা কিংবা ইংরেজি দুভাবেই দেয়া যায়। তবে আপাত দৃষ্টিতে যেগুলোর গ্রহনজুজ্ঞ বাংলা রয়েছে সেগুলুর ইংরেজি ব্যবহার না করাই ভালো।
@তুহিন তালুকদার,
আপনার সঙ্গে সহমত, ইংরিজি আমিও যথাসম্ভব কম রাখতে চাই। তবে ইংরিজি ব্যবহার করতে হয়েছে দুটো কারণে। “মহিলাদের বিরুদ্ধে বায়াস” বাক্যটায় বায়াস শব্দটার প্রচলিত প্রতিশব্দ বসালে কিন্তু ঠিক মানেটা আসে না বলেই আমার মনে হয়। একই রকম শভিনিস্টিক ইত্যাদিতেও।
আর জাতকের গল্পগুলোর সারসংক্ষেপ করার সময় আমি যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় আনতে চেয়েছি। পরিকল্পনা বললে সেই সাধু ভাষার কাছাকাছি চলে যেত, তার চেয়ে প্ল্যান অনেক সহজগ্রাহ্য পাঠকদের কাছে। আরক্ষা না বলে পুলিশ বলা, ওইরকম আর কি।
@কৌস্তুভ,
হ্যাঁ, সেই জন্যই হয়ত আমার মতো কিছু পাঠক সম্পূর্ণ লেখাটি আগ্রহ নিয়ে শেষ করতে পেরেছে। 🙂
@কৌশিকদা, [img]http://i72.photobucket.com/albums/i188/dburdyshaw/Z%20Misc%202%20Gifs/Blushing_Smiley_1.gif[/img]
(Y)
@কৌস্তুভ, আদিম কালে শামানদের মধ্যে ধর্মচর্চা প্রথম বীজ বোনে। নৃতত্ব বলে, শিকারে যাওয়ার অনুপযুক্তরা শিকারে তাদের নিজস্ব অংশগ্রহণের চিহ্ন হিসেবে আয়োজন করে Rites. ধর্ম যদি শুধু আচার-চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হয়েছে, কৃষিভিত্তিক সমাজের আগে বা ক্লোনভিত্তিক সমাজের আগেই, একসময় সম্পতির ধারনা প্রাধান্য পেতে শুরু করলো। তার আগ পর্যন্ত ধর্ম শুধু রিচুয়াল ছিলো। এরপর ধর্ম হাজির হয় নিয়ন্ত্রক হিসেবে। পিতৃত্বের ধারণা ছিলো তার প্রধান অস্ত্র। জমিতে বীজ না দিলে ফসল হবে না। বীজের মালিককে ফসলের (অর্থাৎ সন্তানের মালিক বাবা) অধিকার ধর্মই দিয়েছে। ধর্মের উৎপত্তির পর প্রথম দিকে সব ধর্মের নারীকে/দেবীকে পুরুষের/দেবতার অধস্তন থাকতেই দেখা য়ায়। ধর্ম যখন টেস্টিমোনিয়াল রূপ পায় তখন, সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে ঘরে ওঠা সমাজব্যবস্থায় নারী ভুমির মতো সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। অনেকে ভাবেন- নারীর শক্তি কম ছিলো, জীবনের লড়াইয়ে তাই পুরুষের কাছে হেরে গেছে। ব্যাপারটি আদৌ পাত্তা পায় না কারন নারী স্বয়ঙসম্পূর্ণা ঠিক পুরুষের মতোই। প্রানীজগতের নিয়ম তো তাই। অন্যদিকে কৃষির পুরোভাগ জুড়েই তো মেয়েরা। শিকার একমাত্র পেশা নয় যখন মানুষ ধর্ম গড়ে তোলে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে… ভাষার অনেক পরে লিপি এবং বেশিরভাগ লিখনব্যবস্থার উদ্ভব রাজকার্য্য। আদিম ক্লোনভিত্তিক শাসন/রাজকার্যের শামান এডিশন ধর্ম। এর পরই তো হানাহানির পালা। একটি ক্লান/ট্রাইবের অন্যট্রাইবের উপর নিয়ন্ত্রণ।… সেখানে দেখুন রাজা মাত্রই ঋষি। ভারতে, চীনে, আফ্রিকায়, লাতিন আমেরিকায় কোথায় নয়? সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণে পুরুষ। নারী সে সময়, বিখ্যাত ধর্মগ্রন্থগুলি প্রবর্তণের সময়কালে নারী সম্পত্তি হবার মতো হার মেনে নিয়েছে। নারী ‘যুদ্ধসমাজে’ সম্পত্তির মালিকানার সাথে সঙশ্লিস্ট হতে পারেনি বলে নিজেই সম্পত্তি হয়ে গেছে। নারীর এই পিছিয়ে পড়া নিয়ে নানারকম তত্ব আছে যা আলোচনায় আনতে পারেন।
@মোহোলি.জোলা,
তাহলে বলছেন, দোষটা সব মহিলাদের-ই? 😕 :-s
আপনি অনেক কিছু বললেন, কিন্তু আমার মত মূর্খ মানুষের কাছে ঠিক স্পষ্ট হলনা আপনার প্রতিপাদ্য বিষয়টা কি ছিল। একটু কি বুঝিয়ে দেবেন, প্লীজ?
এতো চমৎকার একটা লেখা পরার সুযুগ পেলাম যা সারা জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। লেখকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠিক এই ধরনের না হোক কাছাকাছি মানের বইয়ের একটা লিংক দিলাম http://www.sacred-texts.com/download.htm আশা করি উপকৃত হবেন।
@Zaman,
বলেন কি, এত ভালো লেগেছে! আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার তথ্যবহুল লেখা পড়ে বৌদ্ধধর্ম ও জাতকগ্রন্থ সম্পর্কে অনেক অজানা কথা জানলাম।
এজন্য আমারও মনে হয়েছিল, বৌদ্ধধর্মে হয়তো নারীদের সম্পর্কে মানবিক ধারণাই ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোন ধর্মই আসলে নারীর পক্ষ অবলম্বন করেনি, বরং তাকে শত্রুভাবেই দেখেছে।
আপনার লেখায় অনেক ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছেন। সেগুলোকে বাংলা প্রতিশব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে বোধহয় ভালো হত। ধন্যবাদ।
@তুহিন তালুকদার,
ধন্যবাদ। আমারও তাই ধারণা ছিল যে বৌদ্ধধর্মে হয়ত এই ক্ষতিকর অভ্যাসটা ভাগ্যক্রমে কম আছে। বইটা পড়ে, এবং একটু খোঁজখবর নিয়ে, দেখলাম যে আমার ধারণা ভুল। সেই অবাক হওয়া থেকেই লেখাটা।
বাংলা নিয়ে উত্তর নিচেই দিচ্ছি।
@কৌস্তুভ, প্রচলিত ধরম-মতগুলোর বিরুদ্ধে মুক্তমনায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে পথপ্রদরশকের ভূমিকা পালনের জন্য অভিনন্দন।
বৌদ্ধধর্ম সম্পরকিত প্রচুর অতিমূল্যায়িত উপাখ্যান পড়েছি বিগত ১৬ বছরে(নারীঃ হুয়া ব্যতীত); তারপর একদিন———
এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে, এটিও নজরুল-সুকান্ত-শরত-এর মতই হাওয়াই মিঠাই; চিরায়ত ভারতীয় ধারনা এবং সনাতনীদের চেয়ে প্রতিভায় হ্রস ও বদ্ধ।
ব্যস্ততা খুব বেশি; অবসরে লেখার প্রচেষ্টা থাকবে।
@শান্তনু সাহা, ধন্যবাদ।
আপনার এই কথাটার অর্থ বুঝিনি।