বেশ কয়েক মাস আগে মুক্তমনায় একটা লেখা লিখেছিলাম – “মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌঁছে।” লেখাটা সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সী আবিষ্কারের ওপর ছিল, গ্যালাক্সীটি বিগ ব্যাংগের মাত্র ৬০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ লেখাটার সূত্র ধরে ও কিছু প্রশ্নের আলোকে কিছু বক্তব্যকে পুনরায় উপস্থাপনা করছি।
সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সীগুলো পার হলে আমরা পাই নিউট্রাল হাইড্রোজেনের একটা স্তর, তার পরে একটা অস্বচ্ছ দেয়াল যার পেছনে বিগ ব্যংএ সৃষ্ট ফোটন আলোক কণাসমূহ ইলেকট্রনের মেঘের মাঝে আটকা পড়ে আছে। সেই দেয়াল হচ্ছে আমাদের পর্যবেক্ষণের শেষ সীমা, যে দেয়ালের বিকিরণ আমরা পৃথিবী থেকে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রউন্ড হিসেবে দেখছি। সেই দেয়ালের পেছনে হচ্ছে বিগ ব্যাং। আমার বক্তব্য ছিল আমরা যদি “এই মূহুর্তে” সেই অস্বচ্ছ দেয়ালের কাছে পৌঁছতে পারতাম তাহলে সেখানে কোন দেয়াল থাকত না, বরং আমরা দেখতাম আমাদের মতই একটা মহাবিশ্ব – গ্যালাক্সিতে ভরা। কিন্তু সেই জায়গা থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে পৃথিবী দেখা যেত নয়া, দেখা যেত একটি অস্বচ্ছ দেয়াল। এর মানে হচ্ছে বিগ ব্যাংএর পরবর্তী মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের তরঙ্গ পৃথিবী যেখানে আজ অবস্থিত সেখান থেকে সবে মাত্র ঐ জায়গায় পৌঁছাচ্ছে।
অর্থাৎ মহাবিশ্বের যে কোন বিন্দুতেই যাওয়া যাক না কেন সেখান থেকে একটা গোলকের কল্পনা করা যেতে পারে যার সীমা রচিত হবে সেই অস্বচ্ছ দেয়াল দিয়ে। যত দিন যাবে সেই দেয়ালের দূরত্ব আমাদের থেকে বাড়বে কারণ দেয়ালের পেছন থেকে আলো আমাদের কাছে পৌঁছানোর সময় পাবে। বিগ ব্যাং যদি প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে সংঘটিত হয়, তবে সেখান থেকে আলো এসে পৌঁছাতে ১৪ বিলিয়ন বছর লেগেছে। এর মানে এই নয় সেই দেয়ালের দূরত্ব ১৪ বিলিয়ন আলোকবছর। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জীর মডেলের গণনা অনুযায়ী সেই দেয়াল “এই মূহুর্তে” আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে, অর্থাৎ মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ৯০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ধরে নেয়া যায়। কি ভাবে ১৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যে মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ হল সেটা নিয়ে আর এক দিন আলোচনা করা যাবে, এখানে শুধু বলে রাখি যখন কোন দূরবর্তী বিন্দু থেকে আমাদের কাছে আলো আসে তখন আলোকে একটা প্রসারণশীল দেশ বা স্থানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ আলো যে উৎস থেকে রওনা হয়েছিল তা পেছন দিকে আরো দূরে সরে যেতে থাকে এবং সামনে যেখানে আলোর পৌঁছনোর কথা সেই উদ্দেশ্য বিন্দুও দূরে সরে যেতে থাকে।
আমি এখানে গোলক, ব্যাস, ব্যাসার্ধ ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার করছি কারণ ইদানীং কালের পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হচ্ছে মহাবিশ্বের সামগ্রিক জ্যামিতি ইউক্লিডিও, অর্থাৎ দেশ-কালের “মেট্রিক” সমতল। তার মানে এই মহাবিশ্বে একটি বিশাল ত্রিভূজ আঁকলে তার তিনটি কোণের সমষ্টি হবে ১৮০ ডিগ্রী। কিন্তু ইউক্লিডিও মহাবিশ্ব মানে একটি অসীম মহাবিশ্বও বটে!
কিন্তু মহাবিশ্ব যদি “এই মূহুর্তে” অসীম হয়, তবে সে অতীতেও অসীম ছিল। কোন একটি “সীমিত” বিন্দু থেকে অসীম মহাবিশ্বের সূত্রপাত হতে পারে না। শুধুমাত্র একটি অসীম মহাবিশ্ব থেকেই আর একটি অসীম মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে।
তাহলে আমাদের বিগ ব্যাংএর মডেলটি কি রকম হওয়া উচিত?
ধরে নিন আজ থেকে ১৪ বিলিয়ন বছর আগে সেই অসীম মহাবিশ্বের ঘনত্ব সাংঘাতিক রকম বেশী ছিল। চিন্তা করুন একটা বিশাল কাদামাটির (বা রাবারের) দলা যা কিনা প্রতিটি মাত্রায় অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কোন একটা বিশেষ মূহুর্তে, যাকে আমরা বিগ ব্যাং বলছি, দলাটি বিস্তৃত হতে শুরু করল। এই মডেলটি আপনি একটা রাবারের দলাকে হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। দেখবেন যে এই প্রসারণের ফলে রাবার বা কাদামাটির ঘনত্ব কমে যাচ্ছে এবং আপনি যদি নিজেকে একটি রাবারের কণা হিসেবে কল্পনা করেন দেখবেন যে অন্য সব কণাই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এখন মনে করুন যে মুহূর্তে প্রসারণ শুরু হল সেই মুহূর্তে অনেক আলোরও (ফোটনের) সৃষ্টি হল (বিগ ব্যাং জনিত আলো, বস্তু-প্রতি বস্তু ধ্বংসের আলো, ইত্যাদি)। ধীরে ধীরে ঘনত্ব কমে গেলে সেই আলো মুক্তি পেয়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে রওনা দিল। আমাদের পৃথিবী যেখানে সৃষ্টি হবার কথা সেই জায়গার আলো অনেক আগেই চলে গেছে (১৪ বিলিয়ন বছর আগে), সেই আলোই এখন ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সীরা কসমিক মাইক্রোওয়েভ হিসেবে দেখছে।
আমাদের যদি “ঈশ্বরের দৃষ্টি” থাকত তবে আমরা দেখতাম আমাদের মহাবিশ্বের গ্যালাক্সীপুঞ্জের মত গঠনই একটা অসীম স্থানে ছড়িয়ে আছে, কিন্তু আলোর সীমিত গতির জন্য দূরবর্তী স্থানের সংবাদ শুধুমাত্র এখনই আমাদের কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে।
১৪ বিলিয়ন বছর আগে কিছু একটা হয়েছিল। কিন্তু সেটা একটি বিন্দু থেকে বিস্ফোরণের মত নয়। [এমনও সম্ভব দুটি অসীম ত্রি-মাত্রিক মহাবিশ্ব চতুর্থ মাত্রায় ভাসতে ভাসতে ধাক্কা খেয়েছিল যা কিনা স্থান-কালের প্রসারণের সৃষ্টি করেছিল। সেটাও এক ধরণের বিগ ব্যাং।] সাধারণতঃ পাঠ্যবইএ বা জনপ্রিয় বিজ্ঞান প্রবন্ধে এই ছবিটা ঠিকমত দেয়া হয় না, তার একটা কারণ অবশ্য এই নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিজেরাই একটু দ্বিধান্বিত আছেন, অসীম স্থানে বিস্তৃত আদি মহাবিশ্বের ধারণাটা বোধগম্য নয়।
(Y)
দীপেনদা, এবারের লেখাটি ছোট হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। আপনার ব্যাখ্যাগুলো বরাবরের মতোই অসাধারণ। লেখালিখিতে একটু নিয়মিত হলে আনন্দিত হই!
@অভিজিৎ,
আপনার সাথে একমত।
(Y)
@অভিজিৎ, আপনার সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ। লেখার চেষ্টা করব অবশ্যই।
দীপেনদা,
এত সহজ আর সুন্দর করে বললেন যে না বুঝে উপায় আছে? এতক্ষণে মাথা ক্লিয়ার হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এখন অনুরুধের পালা-
দয়া করে কি পরের লেখাটা তাড়াতাড়ি ছাড়া যায়না?
কোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন করলেও বেসিক জ্ঞান লাগে, কিন্ত আমার সেটাও না থাকার ফলে প্রশ্নগুলো অনেকটা বেফাস কথার মত শুনায় আর উত্তর দাতা বিব্রত হন। তবু আরো কয়েকটি বেফাস প্রশ্ন করি।
১. বিং ব্যাং এর ফলে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই প্রতিটি থেকে দুরে সরে যাচ্ছে এবং এই দুরে সরে যাবার গতি অত্যন্ত বেশী হওয়ারই কথা। তাহলে আমাদের সৌর জগতের গ্রহ গুলো একে অপর থেকে এবং প্রতিটি গ্রহ সূর্য্য থেকে সেই গতিতে দুরে সরে যাচ্ছে না কেন? এমনকি আমাদের প্রতিবেশী সৌর জগত প্রক্সিমা সেনটুয়ারি ( Proxima Centauri) ও তো সব সময় একই দুরত্ব ( ৪.২ আলোক বর্ষ) শুনি।
২. সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সীগুলো পার হলে আমরা পাই নিউট্রাল হাইড্রোজেনের একটা স্তর, তার পরে একটা অস্বচ্ছ দেয়াল যার পেছনে বিগ ব্যংএ সৃষ্ট ফোটন আলোক কণাসমূহ ইলেকট্রনের মেঘের মাঝে আটকা পড়ে আছে
আবার-
এই মূহুর্তে” সেই অস্বচ্ছ দেয়ালের কাছে পৌঁছতে পারতাম তাহলে সেখানে কোন দেয়াল থাকত না, বরং আমরা দেখতাম আমাদের মতই একটা মহাবিশ্ব – গ্যালাক্সিতে ভরা
তাহলে আমাদের সৌর জগত তথা মহাবিশ্বে সেই নিউট্রাল হাইড্রোজেনের স্তর তো দেখিনা। আবার অস্বচ্ছ দেয়ালের পেছনে যেহেতু আমাদের সৌর জগতও থাকতে পারে তাহলে এখানেও ফোটন আলোক কণাসমূহ ইলেকট্রনের মেঘের মাঝে আটকা পড়ে থাকার কথা কিন্ত কোথাওতো আটকা পড়তে শুনিনি।
এটা এমনকি যে, কেউ সিএমবি দেয়াল থেকে আমাদেরকে পর্যবেক্ষন করলে তার কাছে আমাদের স্থানে উপরোক্ত গঠনা গুলো মনে হবে আছে, কিন্ত বাস্তবে এখানে নিউট্রাল হাইড্রোজেনের স্তর নেয় বা ফোটন কণা ইলেকট্রনের মেঘে আটকা পড়েনা।
প্লিজ একটু সহজ করে বলবেন যাতে মাথায় বাড়ি মারা ছাড়া ঢুকাতে পারি।
ধন্যবাদ দীপেনদা।
@হেলাল, যথাযথ প্রশ্ন।
১. যদি দুটি বস্তু বা বস্তুকণার মাঝে কোন ধরণের আকর্ষণ বল কাজ না করে (যেমন মাধ্যাকর্ষণ, তড়িৎ-চুম্বকীয় কিংবা স্ট্রং বল), তবে অবশ্যই স্থান বা দেশের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে তারা একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্তু তাদের মধ্যে আকর্ষণ বল বেশী হলে মহাবিশ্বের প্রসারণশীলতায় তাদের অংশগ্রহণ খুব বেশী হবে না। আমাদের শরীরের পরমাণুরা একে অপরের সঙ্গে তড়িৎ-চুম্বকীয় বলের আকর্ষণ প্রভাবে আটকে আছে, মহাবিশ্বের প্রসারণ সেই বলকে অতিক্রম করতে পারে না। সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে যে মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে সেটাও প্রসারণকে রোধ করতে সক্ষম। অন্যদিকে দূরবর্তী গ্যালাক্সিদের মধ্যে মহাকর্ষ বল খুবই দুর্বল, সেই ক্ষেত্রে প্রসারণ ভাল ভাবে কাজ করে। তাই তারা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
মহাবিশ্বের প্রসারণ বিগ ব্যাংএর সাথে যুক্ত। তখন থেকে মহাবিশ্বের সমস্ত কণিকা Hubble Flowর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই আবার কাছাকাছি কণিকারা বিভিন্ন বলের আকর্ষণের সাহায্য নিয়ে নক্ষত্র, গ্রহ ও গ্যালাক্সি গড়ে তুলেছে। প্রসারণের বিরুদ্ধে ঐ সমস্ত বল কাজ না করলে মহাবিশ্বে কোন ধরণের structureই থাকত না, আমরাও থাকতাম না।
২. আমি এখন যে চেয়ারে বসে এটা লিখছি, সেই স্থানে বা বিন্দুতে বিগ ব্যাং সংগঠিত হয়েছিল প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। সেই বিগ ব্যাংএর শক্তি বা আলো এই চেয়ারের আসে পাশেই ইলেকট্রন মেঘের দ্বারা আটকে ছিল প্রায় চার লক্ষ বছর। কিন্তু এর মধ্যে স্থানের প্রসারণের ফলে তাপমাত্রা কমতে থাকল এবং ইলেক্ট্রনের প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল নিউট্রাল হাইড্রোজেনের। তখন সেই ফোটন মুক্তি পেয়ে যাত্রা শুরু করল চতুর্দিকে। তাই আমাদের এখানকার কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ফোটন অনেক আগেই চলে গেছে। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সেইখানে ১৪ বিলিয়ন বছর আগে যে বিগ ব্যাং হয়েছিল তার আলো আমরা ২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লক্ষ বছরে পরে পাব। কিন্ত এন্ড্রোমিডায় যারা থাকে তাদের জন্য সেই আলো চার লক্ষ বছরের পরই বিদায় নিয়েছে, আমাদের মতই। আমাদের এখানে যে নিউট্রাল হাইড্রোজেন ছিল ১৪ বিলিয়ন বছর পরে সে কোথায় উবে গেছে। কিন্তু অনেক অনেক দূরে অবস্থিত স্থান থেকে সেই নিউট্রাল হাইড্রোজেন বা কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা আমাদের কাছে সবে মাত্র পৌছাচ্ছে (আলোর সীমিত গতির জন্য), যদিও সেই সব জায়গার লোকদের জন্য সেই আলো অনেক আগেই চলে গেছে। তেমনি তাদের কাছে আমাদের সংবাদ হয়তো এখন পৌছাচ্ছে। এটা কি বোঝা গেল?
পড়ছি; যতটুকু পারি বোঝার চেষ্টা করছি। লেখক এবং বাকি সব মন্তব্যকারিদের ধন্যবাদ। শুধু বলব, আমাদের মত আম জনতার কথা মাথায় রেখে চালিয়ে যান। দারুণ হচ্ছে।
“আমি এখানে গোলক, ব্যাস, ব্যাসার্ধ ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার করছি কারণ ইদানীং কালের পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হচ্ছে মহাবিশ্বের সামগ্রিক জ্যামিতি ইউক্লিডিও, অর্থাৎ দেশ-কালের “মেট্রিক” সমতল। তার মানে এই মহাবিশ্বে একটি বিশাল ত্রিভূজ আঁকলে তার তিনটি কোণের সমষ্টি হবে ১৮০ ডিগ্রী। কিন্তু ইউক্লিডিও মহাবিশ্ব মানে একটি অসীম মহাবিশ্বও বটে”
কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব http://www.mukto-mona.com/Articles/alo_hate/jaatree3.pdf
সমতল নাকি বক্র
@মন্টি ব্যারেট, এতে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
গাউস, বলিয়াই, লবাচেভস্কি, রিমান ইত্যাদি গবেষকরা ১৮শো শতকে বক্রতলের জ্যামিতি নিয়ে যে গবেষণা করেন তার থেকেই বিভিন্ন ধরণের বক্রতার ফল পাওয়া যায়। আইনস্টাইন এই বক্রতার বাস্তবতা তার সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে অন্তর্ভূক্ত করেন, তাই আপেক্ষিকতার যে সমস্ত সমাধান সমীকরণ আছে তাতে এই ধরণের বক্রতা স্বাভাবিক ভাবেই পাওয়া যায়। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে না কোন ধরণের বিশ্ব (কোন ধরণের বক্রতা) বাস্তবে পাওয়া যাবে। এই মূহুর্তে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণই বলতে পারে মহাবিশ্বের বক্রতা কি ধরণের। বক্রতা যদি শূন্য হয় (সমতল) তবে সেই তথ্যটা সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সমীকরণে ঢুকিয়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্যারামিটার (যেমন প্রসারণশীলতা) মাপা যেতে পারে।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
ধন্যবাদ দাদা ব্যাপারটা পরিস্কার করার জন্য।এই ব্যাপারে লেখা কিছু বই এর নাম জানালে আমার একটু সুবিধা হত।
@মন্টি ব্যারেট,
১. Ned Wrightএর online Cosmology Tutorial একেবারে সোনার খনি।
http://www.astro.ucla.edu/~wright/cosmolog.htm
২. Brian Greeneএর দ্বিতীয় বই The Fabric of the Cosmos। আমার মনে হয় Brian Greene এখনাকার সময়ে এই বিষয়ের সবচেয়ে ভাল লেখকই নন, তিনি সব সময় ভাববার মত নতুন চিন্তার অবতারণা করেন। [তাঁর আর একটি বই বেরিয়েছে The Hidden Reality।]
৩. কিছুটা গাণিতিক basic cosmology’র জন্য Barbara Rydenএর Introduction to Cosmology (Addison Wesley)। এটা মোটামুটি বোধগম্য একটি পাঠ্যপুস্তক। সাধারণ আপেক্ষিকতার tensor formalism ইত্যাদির ঝামেলা এর মধ্যে নেই।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
Brian Greene এর ইলিগ্যান্ট ইউনিভার্স বইটা কেমন লেগেছে? বাংলাতে স্ট্রিং থিউরি নিয়ে কোনো লেখাই নেই, আপনি প্রথম অধ্যায়ের অনেকটা অনুবাদ করেছি, মুক্তমনায় দিব নাকি ভাবছি। তবে আবার ভয় লাগে অনুবাদ ভয়ানক জিনিস, মানুষ না বুঝলে ঝাড়ি মারব 😛
@টেকি সাফি,
টাইপোঃ আমি* প্রথম অধ্যায়ের অনেকটা অনুবাদ করেছি
@টেকি সাফি, আমার মতে এখনকার সময়ের তিনটি ভাল সর্বজন-বোধগম্য বিজ্ঞান বইএর মধ্যে Elegant Universe অবশ্যই পড়বে। এর অনুবাদের প্রচেষ্টা তো এক মহান উদ্যোগ। প্রকাশ করতে থাকুন, এখানকার মন্তব্যে সাহায্যও কিছু হতে পারে (পালটা ঝাড়িও দেয়া যাবে)। 🙂
উপরের কমেন্টগুলোর উত্তরের অপেক্ষায় আছি।(Y)
দীপেনদা,
আপনার লেখা দেখলেই ঈদানন্দ লেগে যায়।
দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন, না হলে ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
১। একটি কাদা মাটির দলা বা রাবারের বল হঠাৎ প্রসারণ শুরু হলে যতই প্রসারিত হোক তারতো একটা প্রান্ত থাকার কথা, আর প্রান্ত (পরিধি) থাকলে ( আমি সিএমবি দেয়াল বুঝাচ্ছিনা।) আমাদের মহাবিশ্বের আকার (পরিধি) অসীম হয় কি করে? আর অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব থাকলে তো প্রতিটি মহাবিশ্বেরই প্রান্ত থাকার কথা।
২। ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্ব বলতে আমি বুঝেছি যেখানে সময় নাই বা স্থির আর চতুর্মাত্রিক বলতে যেখানে সময় পরিবর্তনশীল যেমন আমাদের মহাবিশ্ব। যদি আমার ধারণা সত্যি হয় তাহলে প্রশ্ন হল- সময় স্থির এমন মহাবিশ্বটা কেমন হতে পারে, সেখানে কি কোন কিছুর নড়া চড়া নাই বা নির্দিষ্ট সংখ্যক বস্তু নাই যার অবস্থান পরিবর্তন ঘটে?
৩। বিগ ব্যাং যদি প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে সংঘটিত হয়, তবে সেখান থেকে আলো এসে পৌঁছাতে ১৪ বিলিয়ন বছর লেগেছে
যদিও প্রসারণের দূরত্ব সম্বন্ধে একটা ধারনা দিয়েছেন-তবু একটু প্রশ্ন করতে চাই- এই ১৪ সংখ্যাটা কাকতালীয় নাকি এই হিসেবে বিগ ব্যাং যদি প্রায় ১ বছর আগে সংঘটিত হতো, তবে সেখান থেকে আলো আসতে ১ বছর লাগত অর্থাৎ ব্যাপারটি কি এ রকম- বিগ ব্যাং সংঘটিত কাল= সিএমবি দেয়াল থেকে আলো আমাদের কাছে পৌঁছানোর কাল।
আপনার এই অসাধারণ লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। (Y)
@হেলাল, দ্রুত কিছু লিখলাম, সব উত্তর দেয়া গেল কিনা জানি না।
১.চিন্তা করুন কাদা মাটির দলাটির প্রতিটি মাত্রা অসীমে বিস্তৃত। এবং সেই দলার প্রটি বিন্দুতে স্থান প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে সেই দলার যে কোন দুটি কণা একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, আবার প্রতিটি কণাই অন্য যে কোন কণা থেকে দূরে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন মহাবিশ্বের কথা বলা হচ্ছে না। একটি অসীম (অথবা খুবই বড়) মহাবশ্বের কথা বলা হচ্ছে।
২. এখানে ত্রিমাত্রিক স্থানের (বা দেশের বা spaceএর) কথা বলা হচ্ছে। সময় যে ভাবে বইবার সে ভাবেই বইছে। সময় যেখানে স্থির সেখানে সময় বলতে হয়তো কিছু নেই, আমার পক্ষে এখানে কিছু বলা মুশকিল।
৩. হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যেহেতু মহাবিশ্ব প্রসারণশীল আমরা যে সিএমবি দেয়াল আজ দেখছই, তার থেকে আলো যখন নির্গত হয়েছিল, সেই দেয়াল আমাদের অনেক কাছে ছিল, হয়তো মাত্র ৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। সেই দেয়াল থেকে আলো আসতে ১৪ বিলিয়ন বছর লাগল। কিন্তু সেই ১৪ বিলিয়ন বছরে সেই দেয়াল প্রায় ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছে। আজ সেই দেয়াল থেকে যে আলো বের হচ্ছে সেটা আমরা কোন দিনই দেখব না, কারণ বর্তমানে সেই দেয়াল হাবল দূরত্বের বাইরে (এই দূরত্বের বাইরের বিন্দুরা আমাদের থেকে আলোর গতির বেশীতে ভ্রমন করছে)।
আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিছুই ঢুকছে না। লেখাটির জন্য তারপর ধন্যবাদ লেখক কে।
মানে ঠিক বুঝিনি। এখানে কী পরিধি অসীম বুঝিয়েছেন? বাহুগুলোকে পারফেক্ট সিমেট্রিক্যাল ধরে?
এই দূরত্বই কী হাবল দূরত্ব?
মাত্র এক লাইন লিখলেন? এখানে চতুর্থমাত্রা কাকে ধরছেন? স্ট্রিং থিউরিতে যে ধরনের চতুর্থমাত্রা দেখানো হয় সেরকম?
@টেকি সাফি,
@টেকি সাফি, আপনার প্রশ্নগুলো যথাযথ, একটু গুছিয়ে উত্তর দিতে সময় লাগবে। এখানে দ্রুত কিছু লিখছি –
১. এখানে ইউক্লিড স্থান বলতে সমতল স্থান বোঝানো হয়েছে। সেখানে স্থানের বক্রতা নেই। আপনি যদি একটা টর্চের আলোকে মহাশূন্যে নিক্ষেপ করেন তাহলে সেই আলোর রেখা বক্র হয়ে কোথাও ফিরে আসবে না, বরং মোটামুটি একটা সরল রেখায় চলতে থাকবে। এই মহাবিশ্বের তিনটি মাত্রাই অসীমে চলে গেছে।
২. হাবল দূরত্বের ধারণাটা একটু misleading, কারণ এই দূরত্বটা দেয়া হয় c/H = আলোর গতি/হাবল ধ্রুবক দিয়ে। বর্তমান H ব্যবহার করে আমরা পাই ১৪ থেকে ১৬ বিলিয়ন আলোক-বর্ষের একটা সংখ্যা। এর মানে হচ্ছে যে সমস্ত গ্যালাক্সি এই মূহুর্তে ১৪-১৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষের বাইরে আছে তাদের আলো আমাদের কাছে কখনই পৌঁছাবে না।
তাহলে অন্য ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ (আসলে ~১৩.৭) হিসাবটা কোনখান থেকে আসছে? এর মানে হচ্ছে সবচেয়ে দূরবর্তী বিন্দু থেকে আলো আসতে মহাবিশ্বের বয়সের সমান সময় লেগেছে। সেই বিন্দু থেকে আলো যখন রওনা দিয়েছিল সেই বিন্দু আমাদের থেকে মাত্র ৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ছিল, কিন্তু আজ তার “এই মুহূর্তে”র proper distance হচ্ছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। “এই মূহুর্তে” সেই বিন্দু থেকে যে আলো বার হচ্ছে সেটা আমরা কোন দিনই দেখতে পাব না, তার কারণ তার “এই মূহুর্তের” দূরত্ব হাবল দূরত্বের থেকে বেশী। proper distance মডেল নির্ভর, সেটা ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জী ইত্যাদির ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে।
৩. ঠিকই ধরেছেন। এই মডেলটা স্ট্রিং তাত্ত্বিকরাই দিয়েছেন। তাঁরা “ত্রি-মাত্রিক” স্থানের মহাবিশ্বকে Brane বলছেন। স্ট্রিং সম্পর্কে আমার যা ধারণা তাতে এক লাইনের বেশী লেখা মুশকিল 🙂
@দীপেন ভট্টাচার্য,
১) নং পয়েন্টটা সুন্দর বুঝিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ।
২)
দুটোই জানতাম, একটু ভুইলা গেসিলাম ;-(
৩) স্ট্রিং সম্পর্কে আমারও ধারনা খুব বেশী নেই তবে ব্রায়ান গ্রীনের ইলিগ্যান্ট ইউনিভার্স বইটা পড়ছি (আপনিও পড়তে পারেন), খুব সুন্দর করে একবারে গোড়া থেকে বুঝানো হয়েছে। প্রথম অধ্যায় পড়লাম ও বুঝলাম, দেখি ধৈর্য ধরে টাইপ করতে পারলে মুক্তমনায় দিব 🙂
@দীপেন ভট্টাচার্য,
৪০ মিলিয়ন দুরুত্ব থাকলে আজ ‘এই মুহুর্তে ৪৫ বিলিয়ন কেনো?
বুঝি নি।
@বুনো বিড়াল,
বুঝেন নি স্পেস এর এক্সপ্যানশন ছেড়ে দিয়েছেন বলে :))
আরো ব্যাখ্যা করা দরকার?
@বুনো বিড়াল,
আরেকটু খোলসা করেই দিই ধরুন আপনি উত্তরমুখী, আমি দক্ষিনমুখী দুটি চলমান সিড়িতে দাঁড়িয়ে আছি কয়েক মিটার দূরে। এবার একটা সুইচ টিপে দুইটা সিড়িই চালু করে দেয়া হলো, তাহলে কী হবে? আপনি আমি পরস্পর থেকে দূরে সরে যাব ঠিক? ধরুন সেকেন্ডে ১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে চলে যাচ্ছি আমরা।
ও হ্যা আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, সুইচ চাপার সাথে সাথে আপনি একটা বল আমার দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন (অবশ্যই ১ মিলিয়ন কিমি/সেকেন্ডের চেয়ে বেশী বেগে মারতে হবে) এখন ধরুন আমি বলটা পেলাম ৬ সেকেন্ড পর তাহলে মানে কী দাড়ালো? বলটা যখন আপনার কাছ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল তখন আমার কাছ থেকে আপনার দূরত্ব ছিল কত? মাত্র কয়েকমিটার কিন্তু এই ৬ সেকেন্ড পর বলটার যাত্রাবিন্দু (আপনি) এখন কতদূরে? এই প্রায় ১*৬*২=১২মিলিয়ন কিমি দূরে 🙂
কতটুকু বুঝাতে পারলাম? 🙂
@টেকি সাফি,
ওহ!!!
বুঝতে পেরেছি।সেইসময় মস্তিষকে জ্যাম ছিল মনে হয়!!! :-X
ধন্যবাদ।
@টেকি সাফি,
তুমি তো দেখি ভালই বুজছ! ব্যাখ্যাও সুন্দর হৈসে।
@অভিজিৎ,
আজ্ঞে ধন্যবাদ! 🙂
@টেকি সাফি, (Y)