এই মুহূর্তে দুটি ঘটনা নিয়ে আমেরিকান মিডিয়া তোলপার। একটি হচ্ছে প্রভাবশালী ফরাসী অর্থনীতিবিদ, আইনবিদ এবং রাজনীতিবিদ, আইএমএফ এর প্রধান ডমেনিক স্ট্রাউস কান আমেরিকায় এসে হটেলে থাকাকালীন অবস্থায় হোটেলের এক পরিচারিকাকে (ক্লিনার) যৌননির্যাতন করে গ্রেফতার হয়েছেন। ডমেনিক স্ট্রাউস কান বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা। তাকে আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। এই ডমেনিক স্ট্রাউস কান যখন হোটেলে এই বিদ্ঘুটে ঘটনা ঘটিয়ে বমাল সমেত আমেরিকা ত্যাগ করছিলেন, তখন তাকে প্লেন থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ডমেনিক স্ট্রাউসের এই নিন্দনীয় ঘটনায় যখন মিডিয়া ব্যতিব্যস্ত, ঠিক একই সময় দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনা চলে এল মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূতপূর্ব গভর্নর এবং খ্যাতিমান অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্সনেগার এবং তার স্ত্রী মারিয়া শ্রাইভারের দীর্ঘ পঁচিশ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। প্রথম প্রথম মনে হচ্ছিলো দুজনের রাজনৈতিক মনোমালিন্যতার কারণেই কিংবা বনিবনা হচ্ছে না বলেই বুঝি পারষ্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছেন তারা। কিন্তু কয়েকদিন পরেই মিডিয়ায় চলে আসল আসল খবর। আর্নল্ড শোয়ার্সনেগার বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে তার বাসার গৃহপরিচারিকার সাথে যৌনসম্পর্ক ছিলো। শুধু তাই নয় তাদের এই সম্পর্কের ফলশ্রুতিতে একটি সন্তানও জন্মেছিলো ১৪ বছর আগে। আর সেই সন্তানটি জন্মেছিলো তার এবং তার স্ত্রী মারিয়ার ছোট সন্তানের জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে।
চিত্র – শোয়ার্সনেগার এবং তার স্ত্রী মারিয়া শ্রাইভারের দীর্ঘ পঁচিশ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক এখন কেবলই স্মৃতি।
আবারো পুরোন ব্যাপারটা নতুন করে সামনে চলে এসেছে। কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরনারীতে আসক্ত হয়, কেন অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি বাড়ার সাথে সাথে তাদের অনেকেরই বেলাল্লাপণা পাল্লা দিয়ে বাড়ে? তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকেন, সমাজ এবং সম্মান নিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হয় অহর্নিশি, তাদেরই বরং মান সম্মানের ব্যাপারে অনেক সচেতন থাকার কথা। তা না হয়ে উলটোটাই কেন ঘটতে দেখা যায়? কেন বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা সামান্য একটি ‘এফেয়ার’ করতে গিয়ে এমন সব ঝুঁকি নেন, যা শেষ পর্যন্ত তাদের পতন ডেকে আনে?
প্রশ্নটি শুধু আমার না, আমার মতো অনেকেরই। ব্যাপারটি পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্বনামখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন এই সপ্তাহে একটি কভারস্টোরি করেছে তাদের পত্রিকায়, – ‘Sex. Lies. Arrogance. What Makes Powerful Men Act Like Pigs’ নামের উত্তেজক একটি শিরোনামে-
চিত্র – টাইম ম্যাগাজিনের এ সপ্তাহের (৩০ মে, ২০০১) ইস্যুর প্রচ্ছদ
পাঠকদের বোধ হয় মনে আছে – এ ব্যাপারটা নিয়ে আমি আগে কিছুটা আলোকপাত করেছিলাম -বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সহিংসতা নিয়ে একটি সিরিজ লেখার সময়। লেখাটি পড়া যাবে এখান থেকে – ‘সহিংসতা, নির্যাতন এবং ‘লুল পুরুষ’ উপাখ্যান – একটি বিবর্তনীয় অনুসন্ধান’। সেই লেখায় পুরুষালী সহিংসতা নিয়ে লেখার পাশাপাশি শেষ অংশে আলোচনা করেছিলাম ‘কেন ক্ষমতাশালী (লুল)পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?’। আমার লেখাটি প্রকাশের পর পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু আলোচনার প্রেক্ষাপট সূচিত হয়েছিল। আমি ২০১০ সালের অগাস্ট মাসে যে কথাগুলো বলেছিলাম আজ টাইমের কভারস্টোরিতে প্রায় একই ধারণার প্রতিফলন দেখিছি। টাইম ম্যাগাজিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ন্যান্সি গিবস তার লেখায় খুব স্পস্ট করেই বলেন[1] –
‘সাইকোলজিকাল সায়েন্সের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে ব্যবসা বানিজ্য কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে যারা মুলতঃ শীর্ষস্থান অধিকার করে থাকেন, তাদের মধ্যেই পরকীয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্ষমতা কেবল একা আসে না, ক্ষমতার সাথে সাথে দুটি জিনিস অনিবার্য ভাবে চলে আসে – সুযোগ এবং আত্মবিশ্বাস। বলা বাহুল্য, সুযোগ আর আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারটা বহুসময়ই সমাজে পরিস্ফুট হয় যৌনতার মাধ্যমে। যদি প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা যৌনতার সুযোগকে অপরিবর্তনীয়ভাবে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে, বহু পুরুষই তার সদ্ব্যবহার করে। বিবর্তনীয় বিজ্ঞানীরা বলেন, হঠাৎ আসা ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি অনেক সময়ই মানুষের আত্মসংযমের দেওয়ালকে অকেযো করে সামাজিকীকরণের স্তরকে ক্ষয়িষ্ণু করে তুলতে পারে।’
এটি বেশ পরিতৃপ্তিদায়ক যে, সমাজের যে অভিব্যক্তিগুলো ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিজ্ঞানীরা দেখবার চেষ্টা করছিলেন বিগত কয়েক বছর ধরে, তার প্রতিফলন আমরা ধীরে ধীরে দেখতে পাচ্ছি পপুলার মিডিয়াতেও। কিছুদিন আগ পর্যন্ত ডারউইনীয় বিশ্লেষণকে বাইরে রেখেই কাজ করতেন সমাজ বিজ্ঞানীরা এবং নৃতত্ত্ববিদেরা। এখন সময় পাল্টেছে। লরা বেটজিগ, নেপোলিয়ন চ্যাংনন, ডেভিড বাস, মার্টিন ড্যালি, মার্গো উইলসন সহ বহু বিজ্ঞানীদের ক্রমিক গবেষণার ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে বোঝা যাচ্ছে যে ডারউইনীয় বিশ্লেষণকে আর বাইরে রাখা যাচ্ছে না, সেটা সমাজ বিজ্ঞানই হোক, নৃতত্ত্বই হোক, কিংবা হোক নিরস ইতিহাস বিশ্লেষণ। সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণেও ডারউইন চলে আসছে অবলীলায়। টাইম ম্যাগাজিনে ন্যান্সি গিবসের প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রবন্ধে বিবর্তনীয় বিজ্ঞানীরদের কাজের উল্লেখ তারই একটি শক্তিশালী প্রমাণ। এটি নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। তবে ‘সেক্স লাইস এণ্ড এরগেন্স’ শিরোনামে টাইম ম্যাগাজিনের কভার স্টোরির লেখিকা ন্যান্সি গিবস সে লেখায় বিবর্তনীয় বিজ্ঞানীদের অনুকল্প রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করলেও, ব্যাপারটিকে খুব বেশি বিস্তৃত করেননি। ভাবছি আমি আমার আগের ‘লুলপুরুষ’ নিয়ে লেখায় যে কথাগুলো বলেছিলাম, আজকেও বলা যেতে পারে।
বিল ক্লিন্টনের সেই বিখ্যাত কেলেঙ্কারির কথা মনে আছে নিশ্চয় সবার। ক্লিন্টন ২৪ বছর বয়স্ক মনিকা লিউনেস্কির সাথে নিজের অফিসে দৈহিক সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর। ১৯৯৮ সালের ২১ শে জানুয়ারী তা মিডিয়ার প্রথম খবর হিসবে সাড়া বিশ্বে প্রচারিত হয়ে যায়।
চিত্র-মনিকা লিউনস্কি এবং বিল ক্লিন্টন
অনেকেই অবাক হলেও অবাক হননি ডারউইনীয় ইতিহাসবিদ লরা বেটজিগ (Laura Betzig)। তিনি প্রায় বিশ বছর ধরে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতিবিদদের কিংবা প্রভাবশালী চালচিত্র নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছিলেন[2],[3]। খবরটা শোনার পর তার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল, “কি, বলেছিলাম না?”[4]। তার এহেন প্রতিক্রিয়ার কারণ আছে। তিনি বহুদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছিলেন যে, ইতিহাসে প্রভাবশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা তাদের ‘বৈধ’ স্ত্রীর পাশাপাশি সব সময়ই চেষ্টা করেছে অধিক সংখ্যক নারীর দখল নিতে এবং তাদের গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে। ইতিহাসে রাজা বাদশাহদের রঙ বেরঙের জীবন-কাহিনী পড়লেই দেখা যাবে, কেউ রক্ষিতা রেখেছেন, কেউ দাসীর সাথে সম্পর্ক করেছিলেন, কেউ বা হারেম ভর্তি করে রেখেছিলেন অগনিত সুন্দরী নারীতে। সলোমনের নাকি ছিলো তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী। মহামতি আকবরের হারেমে নাকি ছিল ৫০০০ এর উপর নারী। ফিরোজ শাহ নাকি তার হারেমে প্রতিদিন তিনশ নারীকে উপভোগ করতেন। মরোক্কান সুলতান মৌলে ইসমাইলের হারেমে দুই হাজারের উপরে নারী ছিল, এবং ইসমাইল সাহেব বৈধ অবৈধ সব মিলিয়ে এক হাজারের উপর সন্তান সন্ততি তিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন[5]। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার, দ্বিগবিজয়ী আলেকজান্ডার কিংবা চেঙ্গিসখানের নারী-লালসার কথাও সর্বজনবিদিত। তাদের সন্তান সন্তদিদের সংখ্যাও অসংখ্য[6]। এর মাধ্যমে একটি নির্জলা সত্য বেড়িয়ে আসে, ইতিহাসের ক্ষমতাশালী পুরুষেরা তাদের প্রজননগত সফলতার (reproductive success) মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল বহুনারীর দখলদারিত্বকে। আজকে আমরা যতই ‘মনোগামিতা’র বিজয়কেতন উড়াই না কেন, পুরুষের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে বহুগামিতার প্রকাশ ঘটে বহু ক্ষেত্রেই খুব অনিবার্যভাবে। কিংবা আরো পরিস্কার করে বললে বলা যায়, মানসিকভাবে বহুগামী পুরুষেরা নারীদের আকর্ষণ এবং ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করতে পারে যদি তাদের হাতে পর্যাপ্ত যশ, প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা থাকে।
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ন্যান্সি গিবসের সেই সম্পাদকীয়তে একটি চার্টও সংযোজিত হয়েছে, ‘দ্য মিসকন্ডাক্ট ম্যাট্রিক্স’ নামে। সেই চার্টটি দেখলেই পাঠকেরা বুঝবেন, কেবল বিল ক্লিণ্টনকে দিয়েই আমেরিকায় নারী লোলুপতা কিংবা পরকীয়ার অধ্যায় শুরু হয়নি, শুরু হয়েছিলো বহু আগেই। আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের দাসীর সাথে সম্পর্ক করে ‘অবৈধ’ সন্তানের পিতা হয়েছিলেন। আমেরিকার বিগত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ডেমক্রেটিক দলের অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপার্থী জন এডোয়ার্ডস এবং তার ক্যাম্পেইনের ভিডিও ক্যামেরাম্যান হান্টারের সাথে অবৈধ সম্পর্কের খবর ফাঁস হয়ে গেলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। এর আগে একই ধরনের কাজ, অর্থাৎ নিজের স্ত্রীকে ফেলে পরনারীর পেছনের ছুটেছিলেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাকেইন কিংবা নিউইয়র্কের গভর্নর রুডি জুলিয়ানী। তারা অবশ্য নিজের প্রেমিকাকে পরে বিয়ে করে নিজের অবৈধ সম্পর্ককে বৈধ করতে পেরেছেন জনগনের সামনে। আগামী ২০১২ এর নির্বাচনেও রিপাবলিকান পদপ্রার্থী হিসেবে আছেন ভুতপূর্ব হাউজ-স্পিকার নিউট গিংরিচ, যিনি ইতোমধ্যেই তিনটি বিয়ে করেছেন, প্রতিবারই স্ত্রী থাকা অবস্থায় অপর নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, এবং শেষমেষ পুরোন স্ত্রীকে ছেড়ে নতুন প্রেমিকাকে ঘরে তুলেছেন। তাতে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না, যদি না ফাঁস হয়ে যেত যে, তিনি যে সময়টাতে ক্লিটননের অবৈধ কুকর্মের বিরুদ্ধে সদা-সোচ্চার ছিলেন, এবং ক্লিন্টনের ইম্পিচমেন্টে মূল উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই গিংরিচ নিজেই তখন এফেয়ার করে বেড়াচ্ছিলেন তার চেয়ে ২৩ বছরের ছোট এক হাউজ অব রিপ্রেসেন্টেটিভ স্টাফের সাথে। অবশ্য এগুলো কোনটাই আমেরিকার রাজনীতিতে ফেরৎ আসতে তাদের বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, কারণ তারা সকলেই তাদের নিজেদের দাবীমত ‘পূর্বের ভুল হতে শিক্ষা নিয়েছেন’। যা হোক, টাইমের ‘দ্য মিসকন্ডাক্ট ম্যাট্রিক্স’-এ আছে থমাস জেফারসন থেকে শুরু করে জন এফ জেনেডি, বিল ক্লিন্টন, এলিয়ট স্পিটজার, আর্নল্ড শোয়ার্সনেগার, জন এডওয়ার্ডস, নিউট গিংরিচ, উডি এলেন, মাইক টাইসন, রোমান পোলান্সকি, টেড হ্যাগার্ড, টাইগার উডস সহ বহু রথী মহারথীদের নাম – যারা ক্ষমতা যশ আর প্রতিপত্তির স্বর্ণশিখরে বসে পরকীয়ায় আকন্ঠ নিমগ্ন ছিলেন।
চিত্র – টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মিসকন্ডাক্ট ম্যাট্রিক্স – আমেরিকায় ক্ষমতাধর মানুষদের নারীলোলুপতার চালচিত্র
আমাদের দেশেও আমরা দেখেছি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, জয়নাল হাজারির মত ‘লুলপুরুষেরা’[7] কীভাবে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তিকে নারীলোলুপতার উপঢৌকন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা পুরুষেরা নয়, অর্থ বিত্ত বৈভবে শক্তিশালী হয়ে উঠলে সাধারণ পুরুষেরাও কীভাবে আকর্ষনীয় নারীর দখলে উন্মুখ হয়ে উঠতে পারে জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহামেদের জীবনালোচনা করলে এর সত্যতা মিলে। হুমায়ূন আহমেদ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ‘সাধারণ’ শিক্ষক ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ফ্ল্যাটে থাকতেন, এত পয়সাকড়ি ছিলো না, তখন গুলতেকিনকে নিয়ে সংসারী ছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থ বিত্ত বাড়ার সাথে সাথে তার চাহিদাও বদলে গিয়েছিলো। তার কন্যার বয়সী শাওনের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।পরবর্তীতে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার কন্যার বয়সী প্রেমিকা শাওনকে ঘরে তুলেন তিনি।
চিত্র – লুলপুরুষ হিসেবে আমাদের লেজেহোমো এরশাদের খ্যাতিও একেবারে কম নয়
হুমায়ূন আহমেদ যে কাজটি বাংলাদেশে করেছেন সে ধরণের কাজ পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষেরা বহুদিন ধরেই করে আসছেন। পাশ্চাত্যবিশ্বকে ‘মনোগোমাস’ বা একগামী হিসেবে চিত্রিত করা হলেও, খেয়াল করলে দেখা যাবে সেখানকার পুরুষেরা উদার বিবাহবিচ্ছেদ আইনের (Liberal divorce laws) মাধ্যমে[8] একটার পর একটা স্ত্রী বদল করেন। ব্যাপারটাকে অনেকেই ‘সিরিয়াল পলিগামি’[9] (তারা আইনকানুনের বাধ্যবাধকতার কারণে একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন না, কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে একের পর এক সঙ্গি পরিবর্তন করেন) হিসেবে অভিহিত করেছেন। সিএনএন এর প্রাইম টাইম নিউজ হোস্ট ল্যারি কিং ইতোমধ্যেই আটটি বিয়ে (সিরিয়ালি) করেছেন। আমাদের বিবর্তনের পথিকৃত সুদর্শন রিচার্ড ডকিন্সও তিনখানা বিয়ে সেরে ফেলেছেন সিরিয়ালি। স্টিফেন হকিংও তাই। অবশ্য মেয়েদের মধ্যেও এ ধরনের উদাহরণ দেয়া যাবে। যেমন – হলিউডের একসময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর (যিনি আটবার সঙ্গিবদল করেছেন), কিন্তু তারপরেও পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় যে, পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী পুরুষেরাই সাধারণতঃ খুব কম সময়ের মধ্যে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন, নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ, ‘সিরিয়াল পলিগামি’র চর্চা পুরুষদের মধ্যেই বেশি, এবং ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি অর্জনের সাথে সাথে সেটা পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
একটি ব্যাপারে এখানে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। উপরের আলোচনা থেকে কেউ যদি ধরে নেন, ক্ষমতাশালী হলেই সবাই পরকীয়ায় আসক্ত হবেন কিংবা নারীলোলুপ হয়ে যাবেন, তা কিন্তু ভুল হবে। বিবর্তনের যে কোন মানবিক বৈশিষ্ট্যের যে প্যাটার্ণ আমরা পাই তা মানুষের মধ্যে পারিসাংখ্যিক সীমায় বিস্তৃত, সবার ক্ষেত্রেই তা ঘটতেই হবে তা হলফ করে বলা যায় না। আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদের নামে যে রকম নারী কেলেঙ্কারীর অপবাদ ছিলো, বাংলাদেশের অন্য অনেক রাষ্ট্রপতির (যেমন শেখ মুজিবর রহমান কিংবা জিয়াউর রহমান প্রমুখ)দের ক্ষেত্রে তা ছিলো না। অথচ সকলেই ছিলেন একইরকমভাবেই বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষে। আমেরিকাতে বিল ক্লিন্টন মনিকার সাথে যা করেছেন বুশ তা করেননি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামারও কোন নারী বিষয়ক স্ক্যান্ডাল নেই, অন্ততঃ এখনো তা মিডিয়ায় উন্মোচিত হয়নি বলেই মনে হয়। ক্ষমতা থাকলেই কেউ এরশাদের মত নারীলোলুপ হয় না কিংবা ক্লিন্টন যা করেছেন তা ওবামার মতো অনেকেই করেন না, খুব সত্যি কথা। কিন্তু এরশাদ সাহেবের মত এত ব্যাপকহারে নারীলোলুপতা বাস্তবায়িত করতে হলে বোধ করি রাজৈনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী হওয়া চাই। অর্থাৎ, ক্ষমতার শীর্ষে থাকলে কিংবা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে সেই ‘পুরুষালী লালসা’ পুরিস্ফুটনের সুযোগ থাকে বেশি, ব্যাপারটা ত্বরান্বিত হয় অনেক ক্ষেত্রেই। আকবরের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ৫০০০ নারীর হারেম পোষার, কিংবা সুলতান মৌলে ইসমাইলের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ১০৪২জন সন্তান সন্ততি ধরাধামে রেখে যাবার, সহায়সম্বলহীন রহিমুদ্দিনের পক্ষে নয়। সেজন্যই তার বইয়ের ‘গাইস গন ওয়াইল্ড’ অধ্যায়ে বলেছেন –
Powerful men of high status throughout the history attained very high reproductive success, leaving a large number of offspring (legitimate or otherwise), while countless poor men in the country died mateless and childless. Moulay Ismail the Bloodthirsty stands out quantitively, having left more offspring than anyone else on record, but he was by no means qualitatively different from other powerful men, like Bill Clinton.
বিভিন্ন ধর্মীয় চরিত্র এবং ধর্ম প্রচারকদের জীবনী বিশ্লেষণ করলেও এই অনুকল্পের সত্যতা মিলবে। পদ্মপুরাণ অনুসারে (৫/৩১/১৪) শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার একশ। এদের সকলেই যে গোপবালা ছিলেন তা নয়, নানা দেশ থেকে সুন্দরীদের সংগ্রহ করে তার ‘হারেমে’ পুরেছিলেন কৃষ্ণ স্বীয় ক্ষমতার আস্ফালনে। হিন্দু ধর্মের ক্ষমতাবান দেবচরিত্রগুলো – ইন্দ্র থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন ব্যভিচারী; ক্ষমতাবান ব্রাহ্মণ মুণিঋষিরা যে ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নিক এবং অজাচারী, এগুলো তৎকালীন সাহিত্যে চোখ রাখলেই দেখা যায়। এই সব মুণিঋষিরা ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর জাত্যাভিমানকে ব্যবহার করতেন একাধিক নারীদখলের কারিশমায়। ইসলামের প্রচারক মুহম্মদ যখন প্রথম জীবনে দরিদ্র ছিলেন, প্রভাব প্রতিপত্তি তেমন ছিলো না, তিনি খাদিজার সাথে সংসার করেছিলেন। খাদিজা ছিলেন বয়সে মুহম্মদের ১৫ বছরের বড়। কিন্তু পরবর্তী জীবনে মুহম্মদ অর্থ, বৈভব এবং সমরাঙ্গণে অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করার পর অপেক্ষাকৃত কম বয়সী সুন্দরী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হন। খাদিজা মারা যাওয়ার সময় মহানবীর বয়স ছিল ৪৯। সেই ৪৯ থেকে ৬৩ বছর বয়সে মারা যাবার আগ পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে হলেও ১১ টি বিয়ে করেন[10]। এর মধ্যে আয়েশাকে বিয়ে করেন আয়েশার মাত্র ৬ বছর বয়সের সময়। এ ছাড়া তার দত্তক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করেন (সে সময় আরবে দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার রীতি প্রচলিত ছিল না, কিন্তু মুহম্মদ আল্লাহকে দিয়ে কোরেনের ৩৩:৪, ৩৩:৩৭, ৩৩:৪০ সহ প্রভৃতি আয়াত নাজিল করিয়ে নেন); এ ছাড়া ক্রীত দাসী মারিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন (সে সময় তিনি হাফসাকে মিথ্যে কথা বলে ওমরের বাড়ি পাঠিয়েছিলেন বলে কথিত আছে[11]) যা হাফসা এবং আয়েশাকে রাগান্বিত করে তুলেছিলো; যুদ্ধবন্দি হিসেবে জুয়ারিয়া এবং সাফিয়ার সাথে সম্পর্ক পরবর্তীতে নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন বৈধ অবৈধ পথে নারীর দখল নিতে মুহম্মদ আগ্রাসী হয়েছিলেন তখনই যখন তার অর্থ প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণে।
প্রভুত ক্ষমতা এবং যশ মানুষকে অনৈতিক করে তোলে। কিংবা কথাটা ঘুরিয়েও বলা যায় -অনৈতিকতা এবং ভোগলিপ্সাকে চরিতার্থ করতে পারে মানুষ, যদি তার হাতে প্রভুত ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে। এটা বুঝতে কারো রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। সেজন্যই টাইম ম্যাগাজিনের আলোচিত সম্পাদকীয়টিতে উল্লেখ করেছেন ন্যান্সি গিবস –
‘ক্ষমতাধর মানুষেরা ভিন্নভাবে ঝুঁকি নিতে চায় অনেকটা নার্সাসিস্টদের মতোই। তারা মনে করতে শুরু করে সমাজের সাধারণ নিয়মকানুনগুলো আর তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে তারা। আর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে সে সময় তাদেরকে ঘিরে থাকে তার পরম হিতৈষী অনুরাগী, স্তাবক আর কর্মীরা, যারা নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ক্ষমতাধারী মানুষটিকে রক্ষা করে যায়, তার করা অপরাধকে ঢেকে রাখতে চায়, আর তার অনৈতিক ব্যাপার স্যাপারগুলোকে নানাভাবে ন্যায্যতা দিতে সচেষ্ট হয়।
লর্ড একটন বহু আগেই বলে গিয়েছিলেন – ‘Absolute power corrupts absolutely’। এই ব্যাপারটা এতোটাই নির্জলা সত্য যে এ নিয়ে কেউ আলাদা করে চিন্তা করার প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু কেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রায়ই নিরঙ্কুশ দুর্নীতির জন্ম দেয়, কেন তৈরি করে এরশাদের মতো লুলপুরুষ? লরা বেটজিগ তার বইয়ে যে কথাটি ইঙ্গিত করেছিলেন, সেটা উল্লেখ করেই সমাপ্তি টানি – এগুলোর উত্তর দুর্ভাগ্যজনকভাবে লুকিয়ে রয়েছে সমাজ এবং ইতিহাসের বিবর্তনবাদী বিশ্লেষণের মধ্যেই।
:line:
তথ্যসূত্রঃ
[1] Nancy Gibbs, Men Behaving Badly: What is it about Power that Makes Men crazy? (Cover Story: Sex. Lies. Arrogance. What Makes Powerful Men Act Like Pigs) Times, May 30, 2011 Issue.
[2] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A cross cultural correlation of conflict asymmetry, hierarchy, and degree of polygyny. Ethology and Sociobiology, 3: 209-221, 1982.
[3] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A Darwinian View of History, Newyork, Aldine Transaction, 1986.
[4] Alan S. Miller and Satoshi Kanazawa, Why Beautiful People Have More Daughters: From Dating, Shopping, and Praying to Going to War and Becoming a Billionaire– Two Evolutionary Psychologists Explain Why We Do What We Do, Perigee Trade; Reprint edition, 2008
[5] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A Darwinian View of History, পূর্বোক্ত।
[6] চেঙ্গিস খান যুদ্ধ জয়ের সময় ক্ষমতার দাপটে পুরো অঞ্চলের এত নারীদের ভোগ করেছেন যে এখন এশিয়া মাইনরের আটভাগের একভাগ জনপুঞ্জে নাকি এখনো চেঙ্গিসের জিনের রুট ট্র্যাক করা যায়।
[7] লুল পুরুষ – একটি ব্লগীয় অপভাষা; এ নিয়ে মুক্তমনা থেকে পড়ুন – বিপ্লব রহমান, বাংলা ব্লগের অপ-শব্দসমূহ।
[8] অনেকে আপত্তি করতে পারেন এই বলে যে, পশ্চিমের বিবাহবিচ্ছেদ আইনকে সত্যিই আমদের দেশের চেয়ে উদার বলা যায় কিনা তা আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ। অন্তত যারা সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের অনেকেই বলবেন, আমেরিকায় বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে পুরুষদের যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। অ্যালিমোনি, চাইল্ডকেয়ার সংক্রান্ত আইনগুলি অনেকক্ষেত্রেই পুরুষদের বিপক্ষেই যায় বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু তাও যদি হয়, পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী পুরুষেরা কঠিন বিবাহবিচ্ছেদ আইন থাকা সত্ত্বেও একাধিক স্ত্রী সিরিয়ালি গ্রহণ করার দিকে লালায়িত হওয়ার মধ্যেও এই সত্য প্রস্ফুটিত হয় যে, বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত ঝামেলা থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী পুরুষেরা ‘সিরিয়াল পলিগামি’র চর্চা অধিকহারে করে থাকেন।
[9] Quoted from Why Beautiful People Have More Daughters:
“Contemporary westerners who live in nominally monogamous societies that nonetheless permit divorce are therefore in effect polygynous; they practice serial polygamy।”
[10] ইরানি স্কলার আলি দস্তি তাঁর ‘Twenty Three Years: A Study of the Prophetic Career of Mohammad’ গ্রন্থে প্রফেটের জীবনে ২২ জন রমণীর উল্লেখ করেছেন, এদের মধ্যে ১৬ জনকে তিনি বিবাহের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করেন, এ ছাড়া তিনি সম্পর্ক করেছিলেন ২ জন দাসী এবং অন্য ৪ জনের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল।
[11] William Muir, ‘Life of Mahomet’ Vol.IV Ch.26 pp. 160-163
আমার ঝড়ে বক মারা হাইপোথিসিস হলঃ মেয়েরা বেশী সাবধানী, অপেক্ষা করে শ্রেষ্ঠটা বেছে নেবার। প্রতিযোগিতায় যারা সামনে, তাদের থেকেই কাউকে কামনা করে সেই সাবধানী মেয়ে। যেসব পুরুষ অতি বিক্রয়ে আযথা ব্যাস্ত থাকে তারা বাদ পড়ে, বাজী মারে তারা, যারা সময় মত সাড়া দেয়। অবশ্য ক্ষমতা এখানে পূর্বশর্ত। পরকীয়াতে ক্ষমতা মোটেও একমাত্র শর্ত নয়।
আমার তো মনে হয় ক্ষমতাহীন পুরুষরাও পরকীয়ায় আসক্ত হয়, কিন্তু সেটা মিডিয়ার বিষয় নই, মানে, পাত্র-পাত্রী ক্ষমতাহীন বলে ততটা আলোচনায় আসে না। তবে ক্ষমতাশীল পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা করা সুবিধা কারণ ক্ষমতা থাকে বলে পরস্ত্রীকে সহজেই পটানো যায়। যেমনটি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকবে। তবে এটা ঠিক প্রত্যেক পুরুষই কম-বেশি পরকীয়ায় আসক্ত। অনেকের ক্ষেত্রে সেটা প্রকাশ পায়, অনেকের ক্ষেত্রে পাই না।
আপনার লেখাটির মাধ্যমে পরকীয়ার নতুন এক ব্যাখ্যা পেলাম। ধন্যবাদ।
এই “বিশ্লেষণের” বিশ্লেষণটা আরেকটু বিশেষ ভাবে বিশ্লেষণ করা যায় কি?
@শ্রাবণ আকাশ,
পুরো লেখাটাই তো এই বিশ্লেষণের বিশ্লেষণ। যা হোক, আপনার অনুরোধে ব্যপারটিকে আরো একটু বিস্তৃত ভাবে বলেছি এই মন্তব্যে।
@অভিজিৎ,
ভিতরের একটা মন্তব্য লিংক কীভাবে করলেন?
@রূপম (ধ্রুব),
উনি অ্যাডমিন প্রিজিলেজ দিয়ে কিছু একটা করেছেন মনে হচ্ছে, কিন্তু টেকিদেরও পারার কথা, দেখা যাক এই লিঙ্ক কোথায় নিয়ে যায় 😛
@টেকি সাফি,
টেকিরা তুকতাক জানে নাকি?
@রূপম (ধ্রুব),
খানিক জানতুম 😛 আপনিও পারছেন দেখছি!
@রূপম (ধ্রুব),
yay!! :rotfl: পারছি !! 😀
আমি ক্রোম ইউজ করি, এটাই রাইট বাটনে ক্লিক করে যেকোন যায়গার সোর্স কোড দেখা যায়, চুটকিতে আপনার কমেন্টের সোর্সকোড থেকে কমেন্ট আইডি টা দেখেনিলাম তারপর অন্য যেকোন পারমালিংক যেভাবে করে যেমন সেভাবে পারমালিঙ্ক করে দিলাম আপনার কমেন্টে! নিচের লিঙ্কের শেষের ডিজিটটা আপনার শেষ কমেন্টের কমেন্ট আইডি 🙂
http://blog.mukto-mona.com/?p=16471&cpage=1#comment-57958
@টেকি সাফি,
(Y) হ্যা, এভাবেই করা যায়। ক্রোম, ফায়ারফক্স অনেক ব্রাউসারেই সোর্সকোড দেখলে সেটা করা যায়। id=”comment-57985″ এখান থেকে নিয়ে জুড়ে দিলেই হল
@রূপম (ধ্রুব),
এই যে এভাবে। 🙂
সরি আপনার মন্তব্য দেখার আগেই কম্পিউটার বন্ধ করে দিয়েছিলাম। টেকি সাফি আর আপনি তো সমাধান করে ফেলেছেনই!
@সাইফুল ইসলাম,
পুরুষগুলা এই আকাম করে কার লগে? অন্য পুরুষের লগে নিশ্চই না? তাইলে হুদা পুরুষের দোষ কেন অইব এইডা তো ভাই বুঝতাছি না
ভাই যায়গা মতো আটকায়া দিলেন। তবে আমি বলতে চাচ্ছিলাম-
১. মক্তবের মোল্লা বা লজিং মাস্টার ছাত্রীর সাথে বা ছাত্রের মার সাথে পরকিয়া করল। এখানে মোল্লা বা লজিং মাস্টারের ক্রমাগত ফোসলানোর ফলে তারা হয়তো খুব একটা ইচ্ছা না থাকা সত্তেও কুপ্রস্তাবে একটু রাজি হল।
তারা হাতে নাতে কোন কারণে ধরা পড়ল। তাহলে দুইজনকেই সমান অপরাধী ধরা কি ঠিক।
২. দু- একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে , সংখ্যার বিচারে সব সময় তো দেখি নিচের সমিকরনটাই সঠিক-
পুরষ মাস্টারের লুচ্চামি+ছাত্রীর প্রেম> মহিলা মাস্টারের নষ্টামি +ছাত্রের প্রেম।
(এখানে ছাত্র এবং ছাত্রী দুজনেই ধ্রবক কারণ তারা ছোট এবং সেক্সোয়ালি রিসিসিব অন্য দিকে শিক্ষক/শিক্ষিকা বড়, ক্ষমতাবান এবং সেক্সোয়ালি ডুমিনেন্ট।)
৩. যুবক যুবতি দুজনের সমান সমান প্রেমের চাহিদা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অবিবাহিত পুলারা যে বিপুল সময় ও শক্তি ব্যয় করে কুচিন্তা করে, মেয়েরা তার সিকি ভাগও তো ব্যায় করেনা ( এখানে স্বর্গীয় প্রেমের কথা বলা হয়নি)।
৪. এমন হতে পারেনা- হু মো এরশাদরা চায় যৌন বাসনা আর বিদিশারা চায় ক্ষমতা ও টাকা
অথবা
হু মো এরশাদরা করে প্রতারণা আর মিথ্যা এবং বিদিশারা সত্যিকারের ভালবাসা, যা আমাদের চোখে মনে হয় দুজনেই আকামের বাসনায়….।
এখনও আমার ধারণা-
একই পরিমাণ সুযোগ দিলেও ( ধরুন কোন বৈজ্ঞানিক পরিক্ষার জন্য নির্জন ঘরে…)পুরুষদের আগ্রাসীর পরিমাণ মহিলাদের চেয়ে অনেক বেশীই হবে।
@হেলাল,
গ্রামগঞ্জে একটা কথা আছে- কুত্তার সিজন আছে, মানুষের নাই।
আমার ধারনা, এখানে মানুষ বলতে শুধু পুরুষকেই বোঝানো হয়েছে।
এখন একই ধরে নারী-পুরুষ রেখে দিলে… ধরেন পুরুষের হাত-পা বেঁধে রাখলে, ওদিকে নারীর উত্তেজিত হতে হতে ভোর ছাড়া আর কিছুই হবে না। তো হাত-পা খোলা থাকলে পুরুষের যেহেতু “সিজন” নাই, সেহেতু…
এখন এই আগে-পরে উত্তেজিত হওয়া, না হওয়া নিয়ে একটা “বৈজ্ঞানিক পোস্ট” হতে পারে।
@হোরাস,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এগুলো নিয়ে আগেই বলেছিলাম; আপনার পোস্টের কথা মাথায় রেখে যেহেতু লিখিনি, তাই বেশি রেফারেন্স দেওয়ার প্রয়োজন করিনি। চেঙ্গিস খান যে যুদ্ধ জয়ের পর ধর্ষণ করতে পছন্দ করতেন তা তার বিভিন্ন উক্তি থেকেই স্পষ্ট হয়। এমনি একটি স্মরনীয় উক্তি –
সর্বোত্তম আনন্দজনক ব্যাপার নিহিত রয়েছে শত্রুকে ধ্বংসের মধ্যে, তাদেরকে তাড়া করার মধ্যে আর তাদের যাবতীয় সম্পদ লুটপাটের মধ্যে, ধ্বংসের আর্তনাদে আক্রান্তদের আপনজনের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরা অবলোকন করতে, তাদের অশ্বের দখল নিতে, আর তাদের স্ত্রী এবং কন্যাদের নগ্নশরীরের উপর উপগত হতে। (রেফারেন্স – Trevor Royle, Collins Dictionary of Military Quotations, Collins; New Ed edition, 1991)
আপনি ডেভিড বাসের বিভিন্ন গ্রন্থ ‘মার্ডারার নেক্সট ডোর’, কিংবা ‘ The Evolution of desire’ প্রভৃতি গ্রন্থেও এর উল্লেখ পাবেন।
এটার রেফারেন্সও আমি বহু জায়হাতেই পেয়েছি। এটা এখন এমন একটি সাধারণ জ্ঞান, যার কারণে আমি আর বাড়তি রেফারেন্স দেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। আপনি খুঁজলেই পাবেন। যেমন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্রকাশিত এই লেখাটি দেখতে পারেন –
Genghis Khan a Prolific Lover, DNA Data Implies, Hillary Mayell for National Geographic News, February 14, 2003
উইকিতেও আছে –
Zerjal et al. [2003] [6] identified a Y-chromosomal lineage present in about 8% of the men in a large region of Asia (about 0.5% of the men in the world). The paper suggests that the pattern of variation within the lineage is consistent with a hypothesis that it originated in Mongolia about 1,000 years ago (thus several generations prior to the birth of Genghis). Such a spread would be too rapid to have occurred by genetic drift, and must therefore be the result of selection. The authors propose that the lineage is carried by likely male-line descendants of Genghis Khan and his close male relatives, and that it has spread through social selection. Both due to the power that Khan and his direct descendants held and a society which allowed one man to have many children through having multiple wives and widespread rape in conquered cities.
আপনি খুঁজলেও বহু রেফারেন্সই পাবেন। আপনার পোস্টের স্ফলতা কামনা করছি। 🙂
@অভিজিৎ,
আপনি আসলে ভুল বুঝেছেন। চেঙ্গিস খান সম্পর্কে কথাটা পোস্টে পড়ে আমি একটু খুশী হয়েছিলাম এই ভেবে যে যাক, একটা বাড়তি রেফারেন্স পাওয়া গেল। তাই বলেছিলাম আমার লেখার প্রয়োজনেই আমি রেফারেন্সটা মনে মনে আশা করেছিলাম।
ডিরেক্ট ডিসেন্ড্যান্ট কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। চেঙ্গিস খানে বংশধররা জাপান সাগর থেকে শুরু করে রাশিয়ার হার্টল্যান্ড এমনকি বেশ একটা লম্বা সময় বাগদাদ পর্যন্ত সবখানেই শাসন করেছে। তার নাতি কুবলাই খান তার সাম্রাজ্য আরও বড় করেছিলো। সবখানেই তার বংশধররা শাসন করেছে। আমাদের উপমহাদেশে মোঘল সম্রাটরাও সব চেঙ্গিস খানের বংশধর। তাদের প্রত্যেকের হারেমেই শ শ কখনও বা হাজার হাজার নারী থাকত। তাই এশিয়াতে ৮% জনসংখ্যার মধ্যে চেঙ্গিসের জীন পাওয়ার কৃতিত্ব আমার মনে হয় তার বংশধরদেরই অনেক বেশী পাওনা।
@হোরাস,
আপনার তথ্য সঠিক হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। চেঙ্গিস খানের বড় ছেলে তুসির নাকি ৪০ টা ছেলে ছিল, আর তার প্রপৌত্র কুবলাই খান নাকি তার হারেমে প্রতি বছর ৩০টা করে কুমারী যোগ করত। হতেই পারে চেঙ্গিস খানের চেয়ে তার সুযোগ্য বংশধরদেরই কৃতিত্ব বেশি ৮% জনসংখ্যার মধ্যে চেঙ্গিসের জীন পাওয়ার ক্ষেত্রে। তবে চেঙ্গিস খান যে যুদ্ধ জয়ের পর অমানুষের মত ধর্ষণ করতো আর বহু নারীর দখল নিয়েছিলো, এবং এভাবে তার ‘সুযোগ্য’ বংশের বাতি জ্বালানোর কাজটি জিন ছড়িয়ে সেই শুরু করেছিলো – সেটাই এ লেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
ভাগ্যিশ বেশী টাকা পয়সা ক্ষমতা এইসব হয় নাই, তা হলে তো দেখি আর ভাল থাকা যেত না। কম টাকা পয়সা থাকতেই মাঝে মাঝে যেসব খায়েশ হয় :lotpot: আল্লাহ বাচাইছে।
ক্ষমতাশালী হইতে মন চায় 🙁 (H)
@টেকি সাফি, আগে বয়স বাড়াইয়া আসেন 🙂
মিডিয়া পেছনে লাগলে মুক্তমনারও হয়তো অনেকের পরকিয়ার থলের বেড়াল বেরিয়ে পরত যাদের ক্ষমতা নাই বললেই চলে। আসলে আমরা সব পুরুষই লুচ্চা স্বভাবের। নির্জন ঘরে সুন্দরী তরুণীর সাথে রাতে থাকতে দিলে কুকর্মের যে পরিসংখ্যানিক ডাটা পাওয়া যেত- সেখানে অতি অবশ্যই মেয়েদের চেয়ে পুরুষরাই দায়ী হত বেশী এবং পুরুষদের মধ্যে ক্ষমতাশালী আর ক্ষমতাহীনদের অনুপাতও প্রায় সমানই হত।
কিন্তু অভিজিতদার লেখার শানে-নুযুলটাকি এটা –
যারা সুযোগ বেশী পায় পরকিয়া করতে তারাই বেশী পরকিয়া করে।
এ ক্ষেত্রে আমি সুযোগ পাইনা পরকিয়া করতে তাই পরকিয়াসক্ত না, আর ক্ষমতাশালীরা যতই ব্যস্ত থাকুক তারা ক্ষমতার কারনে পরকিয়ার সুযোগ বেশী পায় তাই তারা বেশী পরকিয়া করে। তবে কিছু ক্ষমতাহীনরাও বেশী সুযোগ পায়, যেমন বস্তিবাসী, রিকসাওয়ালা ইত্যাদি পেশার লোকেরা।
সময়োপযোগী লেখার জন্য অভিজিতদার তুলনা হয়না। কামদেব অভিজিতদার মাধ্যমে আরো কাম বিষয়ক লেখা আমাদের উপহার দিক।
@হেলাল,
তাইলে পুরুষগুলা এই আকাম করে কার লগে? অন্য পুরুষের লগে নিশ্চই না? তাইলে হুদা পুরুষের দোষ কেন অইব এইডা তো ভাই বুঝতাছি না। 😕
নারীরা সংখ্যায় কম অইব? ও হরি, তাইলে সমস্যা আরো উপ্রের দিকে। নারীরা যদি সংখ্যায় পুরুষের চাইয়া কম পরকীয়া করে তাইলে তো কইতে অইব নারীরা পুরুষের চাইয়াও লুলু( লুলু’র স্ত্রী লিঙ্গ কী জানিনা)। কারন তাইলে একজন নারী অতি অবশ্যই কয়েক পুরুষের লগে পরকিয়ায় লিপ্ত নাকি? :))
@সাইফুল ইসলাম,
হ ঠিকই কইছেন। এই জন্যই মাফফুজরে উত্তর দিতে গিয়া আমি কইছিলাম -“পুরুষেরা যতই পরকীয়ায় উৎসুক হোক না কেন, নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়।”। চিন্তা করেন… এক লুল এরশাদের পরকীয়া সম্ভব হয় যখন আরেক লুল জিনাত মোশারফরে পাওন যায়। এরশাদ যেমনে জিনাত, মারিয়া, সামিয়া, শাকিলা, বিদিশা … আর কার কার লগে লুলগিরি করছে এদের আগ্রহ ছাড়া তো হেইটা আর সম্ভব হয় নাই, তাই না? কিন্তু আবার এটাও সত্য এক এরশাদ যতজনের লগে লুলগিরি করছে, এক বিদিশা হয়ত এরশাদের লগে করলেও এরশাদের তালিকার মতো এতজনের সাথে কইরা উঠবার পারে নাই। পুরুষের লুলগিরির কারিশমাটা এইখানেই। এখন আপনে কোন দিক থেইকা দেখবেন সেটাই কথা। :))
@অভিজিৎ,
এতদিনে পথে আইছেন। কেবল নারী বিদ্বেষী বইলা ধর্মগ্রন্থগুলারে গাইল পাড়েন।
এখন তো নিজেই স্বীকার গেলেন যে…
নারী নরকের দ্বারি আর এমন কি ভুল ??
@আদিল মাহমুদ,
আইচ্ছা আদিল ভাই ঘটনা কী কন তো, আফনেরে যে একদমই দেহা যায় না। মানে এইডা কিন্তু ভালা কাম না আফনে যাই মনে করেন। 🙁
@সাইফুল ইসলাম,
আমি এখন পাঁড় নাস্তিকদের এড়ায় চলি। আবারো ধর্মের পথে আসতেছি। এখন নিজেই নুতন ধর্ম নিয়া সহসাই হাজির হব ঠিক করছি যেহেতু অন্য ধর্মগুলায় তেমন আস্থা নাই।
নুতন ধর্মের নাম হইল ধমাধম ধর্ম (নাম ভীতিকর মনে হইলেও এতে মারধোরের কোন ব্যাপার নাই, দম মারো দম থেকে এই নাম, কারন এই ধর্ম লেখা হবে দমের ঘোরে)। ধর্ম নাজিল হইলেই ব্লগে ব্লগে পিডিএফ আকারে এই ধর্ম পাঠানো হবে, যে বা যারা এই ধর্ম গ্রহন করবে না তাদের জন্য পরকালে ভয়াবহ শাস্তির ব্যাবস্থা করা হবে। তাদের বলা হবে নরাধ্ম।
অন্য কোন ধর্ম সম্পর্কে আমরা কোন খারাপ কথা বলব না, আমরা অন্য সব ধর্মকেই অসীম শ্রদ্ধা করি; তবে একই সাথে তাদের বাতিল বলে ঘোষনা করি (সেটা কিভাবে সম্ভব আশা করি সে প্রশ্ন করবেন না, তাহলে কিন্তু ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগবে)। কারো প্রতি আমাদের কোন জাতিগত বিদ্বেষ নেই বা থাকছে না, তবে যে যা যাহারা আমাদের ধমাধম ধর্মে প্রশ্নাতীত আনুগত্য না আনছে, বিনা প্রশ্নে মেনে না নিচ্ছে তাদের জন্য পরকালে অন্ততকাল ভয়াবহ শাস্তির ব্যাবস্থা করা হবে। ধরাধমের শত্রু তারা নরাধম।
আপাতত এইখানে আরো কিছুটা বিস্তারিত পাবেন। ধমাধম ধর্ম গ্রহনের মানসিক প্রস্তুতি নিন, আলোর পথে আসুন।
@আদিল মাহমুদ,
আমি আফনার ধমাধম ধর্ম সম্পর্কে জানিয়া এর সুশীতল ছায়াতলে আসিতে আগ্রহী!! ওহী নাযিল শুরু হইলে খবর দিয়েন, আমি টেকি মানুষ, এর আর্কাইভিং এবং ১৩ মিরাকল মেইন্টেইন কইরা একটা ডাটাবেজ করার দায়িত্ব আমারেই দিয়েন। ফাঁকতালে মহান ধমাধম ধম্মগ্রন্থে আমার নামডাও ঢুকাই দিমু 😛
@টেকি সাফি,
অবশ্যই।
আমরা এখন কোন এক অমাবশ্যা রাতে ঈশ্বরের ডাক শোনার অপেক্ষায় আছি। ডাক শুনলেই প্রচারনা শুরু হয়ে যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
আমারে একটা দায়িত্ব দিলে বাধিত হই!!
এই গ্রুপে কথা হইলো, এক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো ওরা কী পাইবে?
আপনি ওখানে গিয়ে একটু ব্যাখ্যা করে দিন না!
@টেকি সাফি,
হ, জানতে হইব ‘ওরা কী পাইবে’। ওরা পুরষের থাইকা এতটুকু কম পাইলে হেই ধর্ম মানুম না। :guli:
@আদিল মাহমুদ,
উলটা কইলেন নাকি? বরং বলেন যে, নারীপ্রেমিক বইলা খালি নারীদের ডিফেন্ড কইরা পুরুষবাদী ধর্মগ্রন্থগুলারে গাইল পাড়েন। তাইলে ঠিকাছে।
@অভিজিৎ দা,
আফনে কতা সইত্য কইছেন। :))
@সাইফুল ইসলাম,
পুরুষের সাথেও কিন্তু পুরুষের পরকীয়া হতে পারে। আজকাল একটা স্টাইল হয়ে গেছে সব দোষ পুরুষের ঘাড়ে চাপানোর।ক্লিন্টন থেকে হুমায়ুন আহমেদ পর্যন্ত যত কেলেঙ্কারি হয়েছে সব দোষ পুরুষের উপরে চাপানো হয়েছে। যেসব নারীদের সাথে তাদের সম্পর্ক হয়েছে তারা সবাই কি ধোয়া তুলসি পাতা,তারা কি জানতোনা এ পুরুষগুলো বিবাহিত ?
@তামান্না ঝুমু,
(Y)
@তামান্না ঝুমু,
আমার কথা ছিল আসলে এটাই। পরকীয়া তো আর একা একা হয় না! করলে নারীদেরও দোষ দিতে হবে(যদি এটা আদৌ দোষ হয় আর কী)।
আর পুরুষের সাথে পুরুষের যদি হয় তাহলে সে ব্যাপার কিন্তু আলোচনায় আসবে না সেরকমভাবে, কারন হল যে পুরুষের ক্ষেত্রে এটা ঘটবে সে থাকবে সমকামী। তারমানে দুজন সমকামী পুরুষ। আমাদের পরকীয়া নিয়ে নিজেদের ভেতরে এত সমস্যা হল পরকীয়াতে একজন নারীর অধিকার বঞ্চিত হবার ঘটনা ঘটে(অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে)। অন্যদিকে সর্বত্রই পুরুষরা দেখা যায় নারীদের থেকে অর্থনৈতিকভাবে অধিক সাবলম্বী। যার জন্য একজন সমকামী পুরুষ যদিও বা পরকীয়া করে থাকে তারপরেও সেটা তার সঙ্গীর ওপরে খুব একটা অর্থনৈতিক চাপ ফেলবে না। যার জন্য হয়ত এটা খুব একটা আলোচিতও হবে না।
ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাহীন সব পুরুষই কমবেশি পরনারীতে আসক্ত। এদের মধ্যে কে কত বেশি পর নারী দখল করতে পারে সেটা নির্ভর করে তার ক্ষমতার উপর । ক্ষমতাবানদের স্ক্যান্ডালগুলো আমরা জানতে পারি কারণ মিডিয়া সেগুলো লুফে নিয়ে আমাদের জানার সুযোগ করে দেয়। যেটা ক্ষমতাহীনদের বেলায় প্রায়শই ঘটে না। এই যেমন রাজিব আর প্রভার ঘটনাটা। প্রাপ্তবয়স্ক এমন কোন নারী-পুরুষ আছে যারা সুযোগ পেয়েছে আর এমন ঘটনা ঘটায়নি ? ইন্টারনেটে এই অখ্যাতদের ভিডিও ও হয়তো আমরা দেখি, কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ কতটুকু ? কিন্তু প্রভার বেলায় এই আগ্রহ………. ??? এটাই হলো বিষয়।
আমার মনে হয় জীবনসঙ্গিনী থাকা অবস্থায় পর নারীতে লিপ্ত এক ব্যপার আর জীবনে বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক নারীর সাথে লিপ্ত হওয়া ভিন্ন ব্যপার।
একটার পর একটা ডিভোর্স এরপর বিয়ে শুধু পুরুষে নয় অনেক নারীকেও করতে দেখা যায়।
যদিও তুলনামুলকভাবে নারীর ভিতর এই আসক্তি কম।
পাশ্চাত্য হোক প্রাচ্য হোক সবখানেই পুরুষকে যেই উদার পরিবেশে বড় করে তুলা হয় নারীর পরিবেশ কিন্তু সবসময়ই সঙ্কীর্ন করে রাখা হয়।তাই পুরুষের সাথে সম্পর্কে যেতে নারী যতটা ভাবে পুরুষ অতোটা ভাবে না।ক্ষমতা দাপট তাই পুরুষকে যতটা প্রভাবিত করে নারীকে করে তুলনামুলকভাবে কম।
আলোচনা ভালো লেগেছে।কিন্তু আমার মনে হয় আলোচনা যেখানে যৌন হয়রানি অথবা প্রতারনার সম্পর্কে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ ছিল তা এর বাইরেও চলে গিয়েছে।ধন্যবাদ।
তোমার লেখা লুলু পুরুষ উপখ্যান পড়েছিলাম( আমার কোন টীপন্নি ছিল না)। সেই লেখার অনেক অনেক পরে টাইমস পত্রিকায় প্রায় অনেকটা একই সুরের লেখা প্রকাশিত হল। এটা সত্যিই আনন্দের ও উতসাহের বিষয়।
ধন সম্পত্তি যষ প্রতিপত্তি নারী (ও সাথে সাথে নারীর প্রাচুর্যতাও থাকা চাই) । কি সুন্দর মেল বন্ধন।
অনেকে পুরুষের ধন সম্পত্তি প্রতিপত্তি যষ থাকে কিন্তু তাদেরকে নারী রহিত থাকতেও দেখা যায়। এটাকে কি ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?
@সেন্টু টিকাদার,
এরা মনে হয় সমকামী পুরুষ, নাইলে রামগড়ুড়ের ছানাের মতো হার্ডকোর প্রোগ্রামার। :))
As Aristotle Onasiss said, “All money in the world would make no sense if women did not exist” 🙂
ক্ষমতাশীল বা অর্থনৈতিক সামর্থশীল পুরুষেরা পরকীয়া বেশী করবে এটা খুবই স্বাভাবিক; একইভাবে এইটাও স্বাভাবিক যে- সামর্থের অভাবে মানসিক পরকীয়া ( 😀 ) যারা করে তাদের অনুপাতটা ভার্চুয়ালি ১০০%। যেমন আমি নিজেও ক্রিস মার্টিনের বউ গিনেথ প্যালট্রো’র সাথে বেয়াদবের মতো মানসিক পরকীয়া চালিয়ে যাচ্ছি দীর্ঘকাল যাবত! কিন্তু যেটা স্বাভাবিক নয় সেটা হচ্ছে- এর সাথে ডারউইনের রিলেভেন্সটা কি? ডারউইনের এই- ‘সকল জীব তাদের এক্সটেন্ডেড ইতিহাসের কোন না কোন সময় একটি কমন এনসেস্টর শেয়ার করে থাকে- তত্বটি ঠিক কেনো দরকার পরছে এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে? কিংবা ঘটনাটির নির্দিষ্ট কোন প্রেক্ষাপটটি ঠিক ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ডারউইনের এই তত্বের সাহায্যে?
সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে আসলেই ‘সামর্থবান পুরুষেরা পরকীয়া বেশী করে কিনা’ এই ইনভেস্টিগেশনটি কোন সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন নয়, তাই না! এটি প্রথম থেকেই একটি ডাইকটমাস অবস্থান, যার উত্তর হতে পারে হয় হ্যা, নতুবা না। দুটারই এক্সপেক্টেশন ভ্যালু .৫। এখন ডারউইনের তত্ব না, শুধু কান্ডজ্ঞান খাটিয়েইতো বলা যায় যে- উত্তর হ্যা হবার সম্ভাবনাই বেশী। ব্যাপারটা যদি উল্টো হতো যে- ‘না, স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে সামর্থশীল পুরুষেরা বেশী পরকীয়া করে না’ তাহলে সেটাই না হতো বরং পাবলিশেবল একটা ঘটনা! এছাড়াও এনেকডোটাল স্ট্যাটিস্টিক্স উপস্থাপনের সময় আরও কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত, স্যাম্পলিং এরর। ক্লিনটন, সোয়ার্টজনিগার প্রমুখের পরকীয়ার স্ট্যাটিস্টিক্সের এন সাইজ কতো? সত্যিকারের স্ট্যাটিস্টিক্স যা কিনা জীবন-মরণ সিদ্ধান্ত নিবে যেমন- ‘হর্মোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী আসলেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রিডিস্পোজিং ফ্যাক্টর কিনা’ এই স্টাডি কন্ডাক্ট করতে এন সাইজ লেগেছে এ-ক মি-লি-য়-ন, যেটাকে কিনা বলা হয় ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র ঐতিহাসিক ‘ওয়ান মিলিয়ন ওম্যান স্টাডি’; ড্রাগ সিসপ্লাটিনের ফেইজ থ্রি ট্রায়ালের এন সাইজ ছিলো ‘১৮০,০০০’! এছাড়াও স্যাম্পলিঙ্গ এরর নির্মুল করার জন্য প্রয়োগ করা হয় অন্যান্য গানিতিক টুল যেমন- টি টেস্ট, যেড টেস্ট, কাই স্কয়ার টেস্ট, ম্যান-হুইটনী টেস্ট, এফ স্ট্যাটিস্টিক্স ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধাপগুলো নিশ্চিত করে একটা স্ট্যাটিস্টিকাল উপাত্ত স্ট্যাটিস্টিকাল সিগনিফিকেন্স সম্পন্ন কি নয়, এই ধাপগুলো সম্পন্ন করেই কেবলমাত্র বলা যায় যে একটা স্ট্যাটিস্টিক্স গুরুত্বের সাথে নেওয়ার যোগ্য কি নয়। এছাড়াও শুধুই একটি কোরিলেশন কোন উপসঙ্ঘারই টানতে পারে না, যতোক্ষণ না পর্যন্ত কোরিলেশনকে কজেশনে ট্রান্সলেট করা না যায়। কোরিলেশনকে কজেশনে ট্রান্সলেট করতে লাগে লস অফ ফাঙ্কশন এবং গেইন অফ ফাঙ্কশন এভিডেন্স। কি এমন এভিডেন্স রয়েছে এই স্ট্যাটিস্টিক্সের সমর্থনে? এছাড়াও এমন একটা স্টাডি যেখানে কিনা আমি নিজেই চাই যে এইরকম একটি উপসঙ্ঘারই সত্যি হোক, সেই স্টাডিটি হবে কনফার্মেশনাল বায়াস দ্বারা দুষিত। এই বায়াস দুর করতে লাগবে মাস্কিঙ্গ, ব্লাইন্ড কিংবা ডবল ব্লাইন্ড মাস্কিঙ্গ। এছাড়াও লাগবে কন্ট্রোল, হয় প্লেসেবি নতুবা একটিভ কন্ট্রোল। সত্যিকারের সায়েন্স কিন্তু এতোটাই রিগোরাস। সত্যকার সায়েন্সের এই কঠোর রিগরসিটির কাছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং অগুরুত্বপুর্ণ এইসকল সমাজবৈজ্ঞানীক স্টাডির রিগোরসিটি কতোটুকু? কিংবা রিচার্ড ডকিন্সের এক এক্সটেন্ডেড ফিনোটাইপ তত্ত্ব ইভলিউশনারি বায়োলজিকে যতোটা বিপ্লবায়িত করেছে, এইরকম হাজারখানেক স্টাডিওকি সেটার সিকিভাগ করতে পারবে?
আমি ব্যক্তিগতভাবে ইভলিউশনারি সাইকোলজিকে সুডোসায়েন্স মনে করি, কেননা তারা নতুন কোন উপাত্ত উতপাদন করতে পারে না। ইতিমধ্যেই জানা একোটা উপাত্তকে পোস্টমডার্ন উপায়ে ডিকন্সট্রাক্ট করে তারা সিদ্ধান্তে পৌছায় ‘দেখছো বলছিলাম না, ডারউইনই ঠিক’! আমি ইভলিউওশনারি বায়োলজির দুই একটা বই পড়েছি, তাদের কোনটিতেই এইসব কার্গো কাল্ট সায়েন্সকে প্রশ্রয় দিতে দেখিনি।
@আল্লাচালাইনা,
যা হোক একটা ভাল মন্তব্য পাওয়া গেল। এর উত্তর আমাকে দিতেই হবে! 🙂 এ মুহূর্তে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সময় নিয়ে উত্তর করছি। ধৈর্য ধরুন।
@আল্লাচালাইনা,
শুরু করা যাক তাহলে।
একদম বেসিক থেকেই শুরু করি। প্রতিটি জীব -সেটা মানুষই হোক আর তেলাপোকাই হোক, কতকগুলো কর্মক্ষম অংশের (functional parts) সমাহার। জীবের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যেমন – হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, চোখ, রক্ত, হাড়, মাংশপেশী, যকৃত, চামড়া, অন্ত্র, জনন গ্রন্থি সবগুলোরই আলাদা কাজ আছে। বলা বাহুল্য, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে এই কর্মক্ষম অংশগুলোর কাজকে আলাদাভাবে দেখার এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণের উপরেই। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় বিভিন্ন অঙ্গের আলাদা কাজ করার ক্ষমতাকে বলে অভিযোজন বা এডাপ্টেশন। আর এই অভিযোজন ঘটে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ নামে একটি ধীর স্থির এবং দীর্ঘকালীন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মতে প্রাকৃতিক নির্বাচন দেহের অন্যান্য অংগের বিকাশে যেভাবে প্রভাব রেখেছে, ঠিক সেরকমভাবেই প্রভাবিত করেছে মস্তিস্ককে এবং এর সাথে জড়িত স্নায়বিক বর্তনীকেও। কাজেই মস্তিস্ককেও বিবর্তনের উপজাত হিসেবেই দেখতে হবে, চিন্তা করতে হবে অভিযোজনের মিথস্ক্রিয়ার সমন্বিত প্রতিরূপ হিসবেই ।
যারা মনে করেন সমাজকে ব্যাখ্যা করার জন্য ডারউইনের তত্ত্বের কোন প্রয়োজন নেই (বিশেষ করে সনাতন সমাজবিজ্ঞানীরা) একটা বড় অংশই ভুলভাবে মনে করেন বিবর্তন বোধ হয় ঘারের কাছে এসে থেমে গেছে, এর উপরে আর উঠেনি । এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা ধারণা। মানুষের হাতের আঙ্গুল কিংবা পায়ের পাতা তৈরিতে যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং যৌনতার নির্বাচন সহ বিবর্তনের নানা প্রক্রিয়াগুলো ভূমিকা রেখে থাকে, মস্তিস্ক তৈরির ব্যাপারেও এটি ভূমিকা রাখবে এটাই স্বাভাবিক। আর মানব মস্তিস্ক গঠনের পেছনে যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন, সেক্সুয়াল সিলেকশন সহ নানা বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রভাব পড়বে মস্তিস্কের কাজেও। মানুষের আচরণই হচ্ছে মস্তিস্কের কাজের ফসল। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বিবর্তনের যে সূত্রগুলো শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য সত্যি মনে করেন, সেগুলো মস্তিস্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্যও ব্যবহার করতে চান। তারা (যৌক্তিকভাবেই) মনে করেন, বিবর্তন কখনোই ঘারের কাছে হঠাৎ করেই এসে শেষ হয়ে যায়নি, বরং উঠে গেছে একদম উপর পর্যন্ত।
আমরা পিঁপড়া, কচ্ছপ, গরিলা, শিম্পাঞ্জি ওরাং ওটাং নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাদের সমাজের কমন প্যাটার্ণ খুঁজে বের করি এবং বিবর্তনীয়ভাবে দেখতে চেষ্টা করি কেন এই প্যাটার্ণগুলো তাদের সেই সমাজে উদ্ভুত হয়েছে। যেমন শিম্পাঞ্জি নিয়ে যারা গবেষনা করেন তারা জানেন যে, শিম্পাঞ্জি সমাজে নারী শিম্পাঞ্জিরা বহুগামী হয়। কিন্তু গরিলাদের ক্ষেত্রে ঠিক উলটো। গরিলারা হারেম করে চলাফেরা করে, এবং একটি শক্তিশালী গরিলা তার শক্তিমত্তার মাধ্যমে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নেয়। এখন গরিলার মেটিং স্ট্র্যাটিজির সাথে শিম্পাঞ্জির মেটিং স্ট্র্যাটিজির পার্থক্য থাকবেই। শিম্পাঞ্জি আর গরিলাদের আচরণ আমরা বিবর্তন ছাড়া ব্যাখ্যা করার কথা চিন্তাই করতে পারি না, সেটা আপনিও জানেন। কিন্তু যত সমস্যা হয় মানুষের ক্ষেত্রে। মানুষের ক্ষেত্রে আমরা বলার চেষ্টা করি মানব আচরণ ব্যাখ্যা করার জন্য ডারউইনের তত্ত্বের প্রয়োজন নেই। আসলে এর মাধ্যমে স্বজ্ঞাত ভাবে ধরে নেয়া হয়, বৈধতা দেয়া হয় ঐ ক্রিয়েশনিস্টদের বর্নাঢ্য মিথ্যেটিই – মানুষ হচ্ছে খোদ ঈশ্বরের হাতে বানানো ‘সেরা জীব’ তাই মানুষ অন্য প্রানী থেকে আলাদা। অন্য প্রানীদের আচরণ আপনারা বিবর্তন ফিবর্তন যা ইচ্ছা দিয়ে ব্যাখ্যা করুন, মানুষের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য এর ধারের কাছে আসার দরকার নেই। বলা বাহুল্য আমি এই ধারনাটিকে একেবারেই ভুল মনে করি। মানব সমাজের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট কিংবা জটিলতা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মানুষ শেষ পর্যন্ত জীবজগতেরই অংশ। বিখ্যাত সামাজিক জীববিজ্ঞানী পিয়ারি এল ভ্যান দেন বার্গি (Pierre L. van den Berghe) সেজন্যই বলেন –
‘নিঃসন্দেহে আমরা অনন্য। কিন্তু আমরা স্রেফ অনন্য হবার জন্য অনন্য নই। বৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করলে – প্রতিটি প্রজাতিই আসলে অনন্য, এবং তাদের অনন্য বৈশিষ্টগুলো পরিবেশের সাথে অভিযোজন করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের বিবর্তনের ফলশ্রুতিতেই উদ্ভুত হয়েছে’।’
তাই মানব সমাজের বিশ্লেষণে ডারউইন আসবেই।
তাই কি? আমি তা মনে করি না। আসলে বিবর্তনীয়ভাবে উদ্ভুত আচরণগুলোর সাথে আমাদের একাত্মতা এতো বেশি যে সেগুলো ডারউইনীয় ছকে পড়লে আমরা অবাক হই না। এই যে অধিকাংশ নারী বিয়ের সময় কিংবা প্রেম করার সময় তাদের চেয়ে উচ্চতায় বড় ছেলেকে পছন্দ করে, সাহসী, নির্ভিক ছেলে পছন্দ করে, ভীরু কাপুরুষ কিংবা তার নিজের উচ্চতার চেয়ে উচ্চতায় খাটো পার্টনার পছন্দ করে না, আপনি কি মনে করেন এর পেছনে বিবর্তনের কোন ছাপ নেই? ছেলেরাও যে মেয়েদেরকে পছন্দের সময় তার স্ট্যাটাসের চেয়ে সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে, এটাও বিবর্তনের সাথে খুব ভালভাবেই মানানসই। কিন্তু মুশকিল হল এগুলো এতোটাই মানানসই বলে মনে করি যে এগুলো আমাদের আর অবাক করেনা, আমরা ভাবি অবাক করতো যদি উল্টোটা হত। আপনি যে বলেছেন, যদি দেখা যেত সামর্থশীল পুরুষেরা বেশী পরকীয়া করে না’ তাহলে সেটাই না হতো বরং পাবলিশেবল একটা ঘটনা! – এই উক্তি থেকে সেই একই চিন্তাভাবনার আমেজ পাওয়া যায়।
আমি মনে করি ‘সামর্থবান পুরুষেরা পরকীয়া বেশী করে ’ এই ইনভেস্টিগেশনটি সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন হতেই পারে। ইন ফ্যাক্ট আমরা যখন হান্টার গ্যাদারার হিসেবে জীবন যাপন করতাম, সেইরকম আদিম কিছু হান্টার গ্যাদারার সোসাইটির উপর গবেষণা করে এই অনুকল্পের পক্ষে জোরালো সমর্থন মিলেছে। যেমন ভেনিজুয়ালার আদিম ট্রাইব ইয়ানোমামো (Ya̧nomamö)দের নিয়ে গবেষণা করে নৃতত্ত্ববিদ নেপোলিয়ন চ্যাংনন উপসংহারে এসেছেন, ‘এরা শুধু সম্পদ আহরণের জন্য যুদ্ধ করেনা, এরা যুদ্ধ করে নারীদের উপর অধিকার নিতেও’।
দেখা গেল ট্রাইবে যতবেশি শক্তিশালী, প্রভাবশালী এবং সমর-দক্ষ পুরুষ পাওয়া যাচ্ছে, তত বেশি তারা নারীদের উপর অধিকার নিতে পেরেছে। শুধু ইয়ানোমামো নয়, আদিম ট্রাইব থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ‘ডিফারেনশিয়াল রিপ্রোডাকশনের’ নানা পরিসংখ্যান হাজির করা হয়েছে লরা বেটজিগের Despotism and differential reproduction: A Darwinian View of History বইটিতে। মডেলগুলো রিগোরাস কিনা তা নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু অন্ততঃ ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে সেটা কিন্তু মিথ্যে নয়। বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া শুরু হয় এভাবেই। সময়ের সাথে সাথে মডেলের জতিলতা বাড়বে তা অনুমান করা অত্যুক্তি হবে না।
আপনি যে রিচার্ড ডকিন্সের দোহাই পাড়ছেন, সেই ডকিন্স নিজেই নিজেকে সামাজিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত করেছেন (যদিও সামাজিক জীববিজ্ঞান নামটি তার পছন্দ ছিলো না কখনই)। সামাজিক জীববিজ্ঞানকে ডিফেন্ড করে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধও লিখেছেন (একটি আছে এখানে)। ডকিন্সের সামান্য একটি উদ্ধৃতিই যথেষ্ট এটি বোঝাতে যে, তিনি সামাজিকভাবে ডারউইনবাদের প্রয়োগকে তিনি হেয় করেন না, বরং গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন –
Sociobiologists, such as myself (much as I have always disliked the name, this …), are in the business of trying to work out the conditions under which Darwinian theory might be applicable to behaviour. If we tried to do our Darwinian theorising without postulating genes affecting behaviour, we should get it wrong.
বস্তুতঃ বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সামাজিক ডারউইনবাদেরই উত্তোরণ হিসেবে ধরা হয়, যে শাখাটি প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ও উইলসন চালু করেছিলেন। এটি মাথায় রাখতে হবে।
বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের উপর বেশ কিছু ভাল বই পড়ার আগে আমারো অনেকটা সেরকমই ধারনা ছিলো। কিন্তু আমি এখন ঠিক সেভাবে দেখি না। বিশেষ করে ম্যাট রিডলীর ‘রেড কুইন’ কিংবা জিওফ্রি মিলারের ‘দা মেটিং মাইন্ড’ বইটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। রিচার্ড ডকিন্স নিজেও বইদুটোর খুব ভুয়সী প্রসংশা করেছেন। পড়ে দেখতে পারেন।
আর একটি ব্যাপার বলি। বিবর্তনকে যে ‘স্ট্রং সায়েন্স’ মনে করা হয় – সেই বিবর্তনেরও অনেক কিছু কিন্তু প্রেডিক্টিভ নয়, বরং এর ভিত্তি রেট্রোডিকশন। জেরি কয়েন তার ‘হোয়াই ইভলুশন ইজ ট্রু’ বইয়ে তা ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন আপনাকে যদি বলা হয় আপনি গানিতিক ভাবে সেক্সের উদ্ভব ব্যাখ্যা করুন আপনি পারবেন না। রিচার্ড ডকিন্সের ‘ বিবর্তনীয় স্বার্থপর জিন’ (selfish gene) তত্ত্ব সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হবে যৌনতার উদ্ভব নিঃসন্দেহে প্রকৃতির একটি মন্দ অভিলাস (bad idea)। কারণ দেখা গেছে অযৌন জনন (asexual) প্রক্রিয়ায় জিন সঞ্চালনের মাধ্যমে যদি বংশ বিস্তার করা হয় (প্রকৃতিতে এখনো অনেক এককোষী জীব, কিছু পতংগ, কিছু সরিসৃপ এবং কিছু উদ্ভিদ- যেমন ব্ল্যাক বেরি অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে থাকে) তবে বাহকের পুরো জিনটুকু অবিকৃত অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করা যায়। কিন্তু সে বাহক যদি যৌন জননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে, তবে তার জিনের অর্ধেকটুকুমাত্র ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে এটি বাহকের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে স্থানান্তরিত করবার সম্ভাবনাকে সরাসরি অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এই অপচয়ী প্রক্রিয়ার আসলে কোন অর্থই হয় না। কারণ, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মুল নির্যাসটিই হল – প্রকৃতি তাদেরই টিকে থাকার ক্ষেত্রে তাদেরকেই বাড়তি সুবিধা দেয় যারা অত্যন্ত ফলপ্রসু ভাবে নিজ জিনের বেশি সংখ্যক অনুলিপি ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করতে পারে। সে হিসাবে কিন্তু অযৌন জননধারীরা (‘অযৌনপ্রজ’ ) বহু ধাপ এগিয়ে আছে যৌনধারীদের থেকে। কারণ অযৌনপ্রজদের যৌনপ্রজদের মত সময় নষ্ট করে সঙ্গী খুজে জোড় বাঁধতে হয় না। সংগম করে করে শক্তি বিনষ্ট করতে হয় না। নিজের বা সঙ্গির বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। বুড়ো বয়সে ভায়াগ্রা সেবন করতে হয় না। কিংবা সন্তানের আশায় হুজুর সাঈদাবাদীর কাছে ধর্ণা দিতে হয় না। যথাসময়ে এমনিতেই তাদের বাচ্চা পয়দা হয়ে যায়। কিভাবে? আমরা এখন যে ক্লোনিং –এর কথা জেনেছি, এদের প্রক্রিয়াটা অনেকটা সেরকম। এক ধরনের ‘প্রাকৃতিক ক্লোনিং’ এর মাধ্যমে এদের দেহের অভ্যন্তরে নিষেক ঘটে চলে অবিরত। ফলে কোন রকম শুক্রানুর সংযোগ ছাড়াই দেহের ডিপ্লয়েড ডিম্বানুর নিষেক ঘটে চলে। জীববিজ্ঞানে এর একটি গালভরা নাম আছে – পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis)। এরকম একটা সফল প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও সেক্স নামক অপচয়ী বস্তুটির উদ্ভব হয়েছে জীবজগতে। কেন? এখানেই চলে আসে রেট্রোডিকশনের প্রশ্ন। যৌন প্রজনন জীবজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন বা ভিন্নতা তৈরি করে বলে মনে করা হয়, যা বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। রেড কুইন হাইপোথিসিস দিয়ে সেক্সের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে রেট্রোডিক্টিভভাবে। তা বলে কি বিবর্তন সুডো সায়েন্স হয়ে গেছে? হয়নি কিন্তু। তাহলে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানই বা সুডোসায়েন্স হবে কেন?
আর সামাজিক বিজ্ঞানীদের বহু প্রেডিকশন যে ইভলুশনারী সাইকোলজির প্রেডিকশন দিয়ে নস্যাৎ হয়েছে তা প্রমাণিত। ব্যাপারগুলো আলোচনা সময় সাপেক্ষ। পরে আবার আলোচনা করা যাবে।
@অভিজিৎ,সেক্স না থাকলে হুর গুলো কী করত?
@আল্লাচালাইনা,
আচ্ছা ঠিক কী কারণে এর জন্য আপনার এমন হচ্ছে, বলতে পারবেন কি?
আমি আসলেই কৌতুহলী। গিনেথ প্যালট্রো square jaw-ওয়ালীদের একজন। এই তুলনামূলক ভাবে বড় বা square jaw-ওয়ালীদের নাকি আলাদা কিসব ব্যাপার আছে, কারো এ নিয়ে জানা-শোনা থাকলে আলাদা একটা পোস্টও হতে পারে।
সিরিয়াসলী!
@শ্রাবণ আকাশ,
কি রকম হচ্ছে? ফিজিওলজি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে? 😛
ওয়েল ফিজিওলজি পরিবর্তিত হওয়াটা সম্পুর্ণরুপে চোয়ালের জিওমেট্রির উপর নির্ভর করছে না কিন্তু। প্রথমত গিনেথ প্যাল্ট্রো আসলেই খুবই সুন্দরী একজন মহিলা আমার দৃষ্টিতে। তার অভিনয় আমার খুবই ভালো লাগে, মহিলা আসলেই ড্রামা জানে। এছাড়াও তাকে আমার মনে হয় so full of romance. সে ব্যক্তিত্বশীল। ব্যক্তিত্বই বোধহয় শুধু পার্থক্য করতে পারে একজন কেটি প্রাইস আর একজন গিনেথ প্যাল্ট্রোর মধ্যে, তাই না? এছাড়াও তার ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা কেমন যেমো কমান্ডিং কমান্ডিং ভাব রয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়; কোন পুরুষকে যদি বলে ‘এইখানে দাড়ায় থাকো’, দিন, রাতের পর রাত পার করে দিয়ে সম্ভবত দাঁড়িয়ে থাকবে যে কোন পুরুষই। এইসব কারনেই গিনেথ প্যাল্ট্রোকে ভালো লাগে। একই কারণসকল অন্যান্য নারীর মধ্যে থাকলে তাকেও আমার খুব সম্ভবত ভালো লাগবে, এমনকি যদি তার চোয়াল যদি পোলিও ভাইরাসের মতো আইকোসাহিড্রালও হয়!! :))
httpv://www.youtube.com/watch?v=UKhsbpDHfSo
আমার ছোট্ট দুটো প্রশ্ন আছে-
১) নারীরা কেন পরকীয়ায় আসক্ত হয়?
২) সমস্ত নারীরাই কী মানসিকভাবে পরকীয়ায় আসক্ত?
@মাহফুজ,
আপনার প্রশ্নগুলো ছোট, কিন্তু উত্তর বোধ হয় এত স্বল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব না। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই যেমন একগামিতা দৃশ্যমান, তেমনি দৃশ্যমান বহুগামিতাও। পুরুষের মধ্যে বহুগামিতা বেশি, কারণ হান্টার গ্যাদারার সমাজে যেভাবে শক্তিশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা নারীর দখল নিত, সেটার পর্যাক্রমিক ছাপ এখনো ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করলে পাওয়া যাবে। আমার প্রবন্ধের মূল ফোকাস এখানেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীরা পরকীয়া করে না, কিংবা তাদের মধ্যে বহুগামিতা নেই। প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা যেমন পরকীয়া করতে উন্মুখ থাকে, তেমনি, ক্ষমতাশালী কিংবা প্রভাবশালী পুরুষের স্ট্যাটাস আবার নারীর কাছে পছন্দনীয়। এখানেই নারীর মানস্পটের একটা ক্লু পাওয়া যায়। কোন নারীর বর্তমান পার্টনারের চেয়ে যদি তার প্রেমিকের স্ট্যাটাস ভাল হয়, কিংবা প্রেমিক দেখতে শুনতে সুদর্শন হয়, কিংবা যে সমস্যাগুলো নিয়ে একটি নারী তার পার্টনার কিংবা স্বামীর সাথে অসুন্তুষ্ট, সেগুলোর সমাধান যদি তার প্রেমিকের মধ্যে খুঁজে পায়, নারী পরকীয়া করে। তাই আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, নিউট গিংরিচ কিংবা বিল ক্লিন্টন যখন পরকীয়া করতে চেয়েছে, তারা সেটা করতে পেরেছে, কারণ নারীরাও তাদের মত ‘হাই স্ট্যাটাসের’ কেউকেটাদের সাথে সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য।
আগেই বলেছি লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই এটি নারী পরকীয়া করতে পারে, যেতে পারে বহুগামিতায়। আমি আমার আলোচনা বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। নারীর পরকীয়ার ব্যাপারে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাইপোথিসিস প্রস্তাব করা হয়েছে, যারা এ বিষয়ে গবেষণা করেন তাদের দ্বারা – রিসোর্স হাইপোথিসিস, জেনেটিক হাইপোথিসিস, মেট সুইচিং হাইপোথিসিস, মেট স্কিল একুজেশন হাইপোথিসিস, মেট ম্যানুপুলেশন হাইপথিসিস ইত্যাদি। আমি এই হাইপোথিসিসগুলো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনায় যাচ্ছি না। আপনি চাইলে অধ্যাপক ডেভিড বাসের এই পেপারটি থেকে জিনিসগুলো পড়ে নিতে পারেন। পেপারটির Women’s Short-Term Mating Strategies অংশে (পৃঃ ৫৪) এ নিয়ে আলোচনা আছে।
সাধারণ ভাবে বললে বলা যায়। একটি নারী পরকীয়া করে, যখন –
* বর্তমান পার্টনারের চেয়ে আরো কাংক্ষিত (desirable) পার্টনার খুঁজে পায়
* নতুন সম্পর্ক সূচনা করলে পুরোন অনাকাংক্ষিত সম্পর্ক যদি ভেঙ্গে ফেলা সহজ হয়
* সঙ্গি বদল সুলভ হয়ে উঠে
* যদি দেখে প্রভাবশালী/প্রতিপত্তিশালী কেউ তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে
* যদি দেখে তার পার্টনারের চেয়ে তার নতুন সঙ্গি সুদর্শন, সেক্সি, কিংবা যার সাথে এক্সট্রা পেয়ার বন্ডিং করলে তার যৌনচাহিদা কিংবা মানসিক চাহিদা আরো ভালভাবে মিটতে পারে।
* নতুন পার্টনার যদি তার জন্য অনেক সময় এবং শক্তি ব্যয় করে, কিংবা ঠিক মত সিডিউস করে।
* নতুন পার্টনার যদি তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে, যদি সে নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পায়
* নতুন পার্টনার যদি তার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে, এবং তাদের সম্পর্কে স্থায়ী রূপ দিয়ে যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে চায়
* নতুন পার্টনারের সাথে থাকার ফলে যদি তার নিজেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, সুন্দর কিংবা যৌনাবেদনময়ী মনে হয় ইত্যাদি।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম বহুগামী (স্ট্যাটিস্টিকাল ভায়রিয়েন্সের নিরিখে), কিন্তু নারীরাও বহুগামী হতে পারে, তারাও পরকীয়া করতে পারে। আগেই বলা হয়েছে পুরুষেরা যতই পরকীয়ায় উৎসুক হোক না কেন, নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়। নারীর পরকীয়ার পেছনে ‘সেলফএস্টিম’, ‘কনফিডেন্স’, ‘ফিল গুড’ সহ অনেক ব্যাপারই আছে যা একটি নারীর জন্য গুরুত্বপুর্ণ। তবে জরিপে দেখা গেছে, সাধারণতঃ একজন বিবাহিত নারী যখন অন্য কোন পুরুষের সাথে এফেয়্যার করে, সেই পুরুষের স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি তার বর্তমান স্বামীর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এগুলোর যে কোন একটি কিংবা সবগুলোই কিন্তু কারণ হতে পারে।
@মাহফুজ,
ব্লগের বাইরে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল।
আমি সোজাসুজি #১ প্রশ্নটি করেছিলাম। উত্তরঃ ভালোবাসার অভাবে। (সখী ভালোবাসা কারে কয়!) 🙂
#২। কথাটা যেহেতু “মানসিকভাবে”, তাই একটু সাহস নিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে- আমার মনে হয় সবার জীবনেই একাধিক প্রেম আসে। এখন এটাকে “মানসিকভাবে পরকীয়া” বলা যায় কি না- কে জানে!
@শ্রাবণ আকাশ,
রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে কখনও কখনও নারীদের প্রতি আমরা তাকাই এবং আকর্ষণ অনুভব করি। এই আকর্ষণটাকেই আবার নিয়ন্ত্রণ করি। এই ধরনের কামনা-বাসনাকে কি প্রেম বলা যায়? প্রেম এবং কাম -এর মধ্যে নিশ্চয়ই তফাৎ আছে।
এই ধরনের আকর্ষণ যে শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতিই যে হবে তা কিন্তু নয়, সমলিঙ্গের প্রতিও হতে পারে। একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর একদা আপন গৃহের দরজার পাশে বসা ছিলেন। এমন সময় সুন্দর সুশ্রী একটি বালকের তাঁর দৃষ্টি পতিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখান থেকে উঠে গৃহে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলেন: কিহে, সেই ফেতনা কি এখনো আছে, না চলে গেছে? আরজ করা হলো, চলে গেছে। অতপর তিনি দরজা খুলে বাইরে আসলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: হে আব্দুল্লাহ! আপনি কি এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুলের পবিত্র যবানে কোন হাদীস শুনেছেন? তিনি বললেন: খবরদার! এ বয়সের বালকদের প্রতি দৃষ্টি করা হারাম, তাদের সাথে কথা বলা হারাম, তাদের সাথে উঠা-বসাও হারাম।’
কাজী ইমাম (রহঃ) বলেছেন: আমি এক বুজুর্গকে বলতে শুনেছি যে, একজন স্ত্রীলোকের সাথে শয়তান থাকে একটি; কিন্তু একজন বালকের সাথে থাকে আঠারোটি।
বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি কোন বালককে কামাতুর হয়ে চুম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচশত বছর পর্যন্ত শাস্তি দিবেন। আর স্ত্রীলোককে কামাতুর হয়ে চুম্বন করা সত্তরজন কুমারীকে ধর্ষণ করা অপেক্ষা জঘন্য। অনুরূপ যদি কেউ একজন কুমারীর সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়, তাহলে সে যেন সত্তর হাজার বিবাহিতা মহিলার সাথে জেনা করলো। (মুকাশাফাতুল কুলুব, ইমাম গাজ্জালী)
তাহলেই বুঝুন পরকীয়ার কত শাস্তি আছে।
আবার বাইবেলে আছে- যে কেউ কোন স্ত্রী লোকের দিকে কামভাবে তাকালো, সে তখনই মনে মনে তার সাথে ব্যভিচার করলো। তোমার চোখ কিম্বা হাত যদি বিঘ্ন ঘটায় তাহলে তা উপড়ে বা কেটে ফেলো; দোযখে যাবার চেয়ে কেটে ফেলাই উত্তম।
ধর্মীয় গ্রন্থগুলো এভাবেই বর্ণনা করে পরকীয়ার পরিণাম।
কিন্তু প্রশ্ন হলো মনকে নিয়ন্ত্রণ করা কি এতই সহজ?
আমি এর আগেও লিখেছিলাম, এটা ঠিক না। আমেরিকার ৬৭% পুরুষ পরকীয়াতে আচ্ছন্ন। সেখানে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সংখ্যাটি ৬৭% এর বেশী? ভারতে ২৩% পুরুষ সিরিয়াসলি পরকীয়া করে( মানে দৈহিক সম্পর্ক আছে, মানসিক ধরলে, পৃথিবীর ১০০% পুরুষই পরকীয়াতে আচ্ছন্ন)-তাই ভারতের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ১০-২০% পাওয়া যাবে যাদের মিসট্রেস আছে।
পরকীয়া বা নারীভোগের সাথে ক্ষমতার কোন সম্পর্ক নেই। সুযোগের আছে। বেশ্যাগৃহে সর্বহারা থেকে রাজা উজির সবাইকেই পাওয়া যাবে।
পরকীয়ার সাথে কোন কিছুর সিরিয়াসলি সম্পর্ক থাকলে-সেটা হচ্ছে পুরুষের হাতে সময় :guru: তাই কেও পরকীয়াতে হাত পাকালে চাইলে, তার জন্যে উপদেশ হচ্ছে পরকীয়ার জন্যে বৈজ্ঞানিক যুক্তি বার না করে, মেয়েদের জন্যে সময় বার করা 😀
@বিপ্লব পাল,
হেঃ হেঃ, তুমি যত না না করতেছ, পৃথিবী যাইতেছে উলটা দিকে। কী আর করবা। টাইম ম্যাগাজিনেও এখন আমরা যেইটা কইছিলাম সেটাই আউড়াইতেসে। তোমার দিনকাল ভাল যাইতেসে না। স্ট্যাটাস আর বহুগামিতার স্ট্যাটিস্টিক্স আমি অন্যান্যদের উত্তরে দিছি, তাই আর রিপিট করলাম না।
হতে পারে। কিন্তু সেই মানসিক ব্যপ্তিটা ঠিক কেন এরকম হল, সেটা খুঁজে বের করাটা কঠিন নয়, এবং এটাও বের করা কঠিন নয় কী কী কারণে সেই পরকীয়ার পরিবেশ প্রস্ফুটিত হতে পারে। সেটা পরিস্ফুটনের সুযোগ যে ক্ষমতাবান পুরুষেরা নেয় , সেটা তো বলাই বাহুল্য।
তুমি যত ইচ্ছা হাত পাকাও না, মানা করছে কে? আমি না হয় বৈজ্ঞানিকভাবে বহুগামিতার প্যাটার্ণ ব্যাখ্যা করি, তুমি সেটা ব্যাবহারিকভাবে সফল প্রমাণ কর। তাইলে দুইজনেরই উইন-উইন সিচুয়েশন হইল। কি কও?
@বিপ্লব পাল,
তাই কি বাউল গাইয়ে গেছেন- সময় গেলে সাধন হবে না… 😀
সে-ক্ষেত্রে মন হচ্ছে প্রশ্নটার মধ্যেই উত্তরটা দেয়া। পুরো লেখাটাকে দুই লাইনেই প্রকাশ করা যায়। কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়? উত্তরঃ তারা ক্ষমতাশালী তাই।
@মইনুল রাজু,
ঠিক কথা। এই দুই লাইনের বাক্যটিই আমার লেখার সারাংশ। কিন্তু সেটা আসল কথা নয়। কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়? তারা ক্ষমতাশালী তাই। ঠিক কথা। কিন্তু কেন পরকীয়া? কেন অধিক নারীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা? ক্ষমতাশালী পুরুষেরা তো অন্য কিছুও করতে পারতেন – বাগান ভরে গোলালুর চাষ করতে পারতেন, ময়ুরের মত চুলে ঝুঁটি করে ঘুরতে পারতেন, শ্যাওড়া পাতা দিয়ে কিভাবে কাবাব বানিয়ে খাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে পারতেন, কিংবা দল বেধে কুতুব মিনারের চূড়ায় উঠে বসে থাকতে পারতেন। সেগুলো না করে পয়সা কড়ি ক্ষমতা হবার সাথে সাথে কেন ক্ষমতাবানেরা অধিক সংখ্যক নারীর প্রতি লালায়িত হন, কেন পরকীয়ার পেছনে ছোটেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানলেই বুঝতে পারবেন আমি লেখাটায় কি বলতে চাইছি। আমাদের মানস পট তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিনের মেটিং সিলেকশনের উপর ভিত্তি করে। সেই সিলেকশনগুলো কাজ করে এখনো, এবং সেটি চেষ্টা করলেই ধরতে পারা যায়। এটাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে।
@অভিজিৎ,
আমার প্রথম দুইটা মন্তব্য এবং আপনার উত্তর থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে উপসংহারে যাচ্ছি (যেটা ভুলও হতে পারে), ‘কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?’ তার চেয়ে ‘কেন পুরুষ পরকীয়ায় আসক্ত হয়’ সেটাই বেশি বিবেচ্য হতে পারতো। এখানে ‘ক্ষমতাশালী’ কিংবা ‘বেশি’ শব্দ দুটি অবান্তর। লেখায় যদিও ক্ষমতাশালীদের উদাহরণ আছে, কিন্তু ‘বেশি’ শব্দটাকে যৌক্তিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। কেননা, ক্ষমতাবানরা বাগান ভরে গোল আলু চাষ না করে পরকীয়ায় মত্ত হতে চায় এবং ক্ষমতা থাকার কারণে হতে পারেও তারা। আর, ক্ষমতাহীনরা বাগান ভরে গোল আলু চাষ করার পর, অবসর সময়টুকুতে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে চায় (মিডিয়া কিংবা পাবুলিক ইন্টারেস্ট না থাকার কারণে সেটা প্রকাশিত হয় না), কিন্তু ক্ষমতা না থাকার কারণে তাদের আর পরকীয়ায় মেতে উঠা হয়ে উঠে না।
আপনার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
@মইনুল রাজু,
পুরুষ পরকীয়ায় আসক্ত হয় সেটা বোধ হয় জানা কথাই, এবং ক্ষেত্র বিশেষে নারীরাও। কে কখন কি করবে তা নির্ভর করে নিজস্ব মেটিং স্ট্র্যাটিজির উপর। ‘ক্ষমতাশালী’ ব্যাপারটা আপনার কাছে অবান্তর মনে হলেও আমার কাছে হয়নি। ক্ষমতা আহরণ করা, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিপত্তিশালী প্রমাণ করা পুরুষদের এক ধরণের মেটিং স্ট্র্যাটিজি (সেজন্যই এখনো পুরুষদের মধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বেশি দেখা যায় নারীদের তুলনায়, আগেকার সময় হাণ্টার গ্যাদারার সোসাইটিতে এই প্রতিযোগিতা হত শারিরীক ভাবে, এখন হয় সমাজে টাকা পয়সা, ক্ষমতা, যশ, প্রতিপত্তি সম্মান ইত্যাদির মাধ্যমে )। এই স্ট্র্যাটিজির মাধ্যমে যারা শীর্ষে উঠে আসে, ক্ষমতার দাপট তাদের বেশি থাকে, আর তারা স্বভাবতই অনেক সময় বহু নারীর দখল নিতে চায়, সেই আদিম মানসপট রাজত্ব করার কারণেই। আমি এখানে টাইমে প্রকাশিত ‘‘Sex. Lies. Arrogance. What Makes Powerful Men Act Like Pigs’ লেখাটির উপর ভিত্তি করেই কথা বলছি। এখানে Powerful Men শব্দটি খেয়াল করুন। টাইমেসের সম্পাদকের কাছে পাওয়ারফুল শব্দটিকে যেমন অবান্তর মনে হয়নি, আমারো মনে হচ্ছে না।
আপনাকেও আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@মইনুল রাজু,
মন্তব্য যৌক্তিক । আসলে ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?
না বলে বরং বলা উচিৎ ক্ষমতাশালী পুরুষেরা পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হতে পারে। ক্ষমতাহীন পুরুষেরা পরকীয়ায় ( বেশি তো বটেই) আসক্ত হতে চায় কিন্তু বিত্ত বা প্রভাবের অভাবে তা বাস্তবায়িত করতে পারে না। অবশ্য ক্ষমতাহীন পুরুষেরা তাদের নিজের বলইয়ে থেকে নীচু মানের পরকীয়ায় (অর্থাৎ নামী দামী সুন্দরী নয়) লিপ্ত হতে পারে। যেমন তামান্না ঝুমুর রিক্সাওয়ালার উদাহরণে। ঢাকার বস্তিবাসীদের অনেকেও সিরিয়াল বা প্যারালাল মনোগ্যামী করে। কিন্তু গুলশান বা ধানমন্ডির অভিজাত মেয়েদের সাথে নয়, বস্তিরই জীর্ণ দরিদ্র মেয়েদের সাথে। পরকীয়ায় আসক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারটা হল অনেকটা “পান না তাই খান না” র মত ব্যাপার। ক্ষমতা বা বিত্তের অভাবে পরকীয়ায় লিপ্ত না হওয়াটা পরকীয়া আসক্তির অভাব নয় বরং অক্ষমতারই প্রতিফলন। অভিজিৎ যেমনটি মন্তব্যে বলেছে “ক্ষমতা আহরণ করা, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিপত্তিশালী প্রমাণ করা পুরুষদের এক ধরণের মেটিং স্ট্র্যাটিজি” এখানে “পুরুষদের” ব্যবহার লক্ষ্যণীয়, “ক্ষমতাশীন পুরুষ” বলা হয় নি। কাজেই মইনুলের “ক্ষমতাশীন” অবান্তর বলাটা সেই অর্থে সঠিক। আবার অভিজিৎএর “ক্ষমতাশীন” অবান্তর নয় বলাটা আরেক অর্থে সঠিক। দুজন দু অর্থে “অবান্তর/বান্তর” বলছে। অভিজিৎ বলতে চাইছে পুরুষেরা ক্ষমতা (বিত্ত বা প্রভাব অর্থে) আহরণ করে পরকীয়া লিপ্ত হবার ক্ষমতা (ability) অর্জনের জন্য। সেই অর্থে ক্ষমতা অবান্তর নয়। আজ যে ক্ষমতা/বিত্ত হীন বলে পরকীয়ায় আসক্ত হচ্ছে না (আসলে লিপ্ত হতে পারছে না) কাল সেই ক্ষমতা বা বিত্তশালী হলে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারবে এবং হবে। তবে পারিসাঙ্খ্যিক ব্যতিক্রম ছাড়া।
@অপার্থিব,
আচ্ছা তাইলে হতে পারেই সই!
কিন্তু মইনুল রাজুর মন্তব্য থেকে মনে হয়েছে উনি ক্ষমতাশালী এবং বেশি শব্দদুটিতেই আপত্তি করেছেন, হতে পারের সংযোজন বিয়োজনে নয়। পুরুষেরা বহুগামিতায় যেমন আসক্ত হতে চায়, তেমনি আবার মেয়েরা উঁচু স্ট্যাটাসের ছেলেদের মেটিং পার্টনার হিসেবে পছন্দ করে। সেটা ভেনিজুয়ালার আদিম Yanomamo ট্রাইব থেকে শুরু করে প্যারাগুয়ের Ache, বৎসোয়ানার !Kung ট্রাইব থেকে শুরু করে আধুনিক সমাজের বিভিন্ন দেশেই পাওয়া গিয়েছে। তাইওয়ানের মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ৬৩% বেশি গুরুত্ব দেয় স্ট্যাটাসকে জাম্বিয়ায় ৩০% বেশি, জার্মানীতে ৩৮ % বেশি, ব্রাজিলে ৪০% বেশি ইত্যাদি। তাই সম্পদ আহরণ, আর স্ট্যাটাসের সাথে পুরুষ নারীর মেটিং স্ট্র্যাটিজির জোরালো সম্পর্ক আছে বইকি। ক্ষমতাবান তথা হাই স্ট্যাটাসের পুরুষদের পক্ষে বহুগামিতা সহজ আর সুলভ কারণ বহু কিংবা ‘সুন্দরী’ নারী তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় – যা আবার ক্ষমতাবান পুরুষের কাছে কাংক্ষিত। এই মেটিং স্ট্রাটিজিগুলোকে নির্মোহভাবে ফোকাস করাই ছিলো উদ্দেশ্য। আসলে এ সংক্রান্ত আমার আগের ধারাবাহিক লেখাগুলো সম্ভবতঃ রাজুর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে, না হলে স্ট্র্যাটিজির ব্যাপারগুলো পরিস্কার থাকতো মনে হয়।
@অভিজিৎ,
সত্যি কথা বলতে কি, আপনার এই লাইনের পর আমি আর কথা বাড়াইনি। টাইমসের সম্পাদকরা কি বলেছে সেটাকে যদি বেদ বাক্য মনে করতাম, তাহলে আমি প্রশ্নটাই তুলতাম না।
“ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?” এবং “ক্ষমতাশালী পুরুষেরা পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হতে পারে।” আমার দৃষ্টিতে দুইটা বাক্যের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। আপার্থিব যেমনটা বলেছেন, যদি বলা হয়, কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নেই। অন্যথায়, আপনি এবং টাইমসের সম্পাদকদের মতের প্রতি সন্মান জানিয়েই বলছি, আমি নিদেনপক্ষে লেখার শিরোনাম বা বিষয়ের সাথে একমত হতে পারছিনা।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, এ সংক্রান্ত আপনার অন্য লেখাগুলি আমি আসলে পড়তে পারিনি। তাহলে হয়তো আপনার অবস্থানটা আরো একটু ভালো বুঝতে পারতাম।
@মইনুল রাজু,
টাইমসের সম্পাদকদের কথা বেদবাক্য তা আমিও বলছি না। স্রেফ বলছি আমার এবারের লেখাটা টাইমসের এই সংখ্যাটাকে কেন্দ্র করেই, আমি আগে যে ধারণাগুলোর কথা অন্য লেখায় ধারাবাহিকভাবে লিখেছি, সেটার প্রতিফলন ইদানিং টাইমসের মত পত্রিকাতেও দেখতে পাচ্ছি । এ থেকে বোঝা যায় যে, আমিই কেবল এ ধারনার কথা ব্যক্ত করছি না, বরং পপুলার মিডিয়াতেও এটি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। এটি আশার কথাই। আর “ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?” এবং “ক্ষমতাশালী পুরুষেরা পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হতে পারে।” – দুইটা বাক্যের মধ্যে আপনার কাছে আকাশ পাতাল পার্থক্য মনে হলে আমার আর কিছু বলার নাই। “ক্ষমতাশালী পুরুষেরা পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হতে পারে” ধরনের শিরোনাম আমার কাছে নিরস, সারবস্তুহীন, অপাংক্তেয় এবং একেবারেই ফোকাসহীন মনে হয়। যা হোক পাঠক হিসেবে আপনার অভিমতও আমি শুনলাম, যদিও এর সাথে আমি একমত হতে পারছি না। আমি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এবং বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ করেই দেখিয়েছি যে, ক্ষমতা আহরণ করে অধিক নারীর দখল নেয়া বরাবরই (সেই হান্টার গ্যাদারার সমাজ থেকে শুরু করে আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস খান থেকে এখন পর্যন্ত) পুরুষদের একটি শক্তিশালী মেটিং স্ট্র্যাটিজি মানব সমাজে। এই স্ট্রাটিজির প্রভাব আধুনিক বিশ্বেও খুব ভালভাবেই দৃশ্যমান। সেটা তুলে আনাই আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ছিলো। আপনার প্রাথমিক অভিযোগটুকু অবশ্য ছিলো ‘ক্ষমতাশালী আর ‘বেশি’ নিয়ে, ‘হতে পারে’ নিয়ে নয়।
সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। লেখাগুলো ধারাবাহিক ভাবে পড়লে বোধ হয় অনর্থক বিতর্ক এড়ানো যেত। আমার লেখার উদ্দেশ্য আসলে বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় কিছু প্যাটার্ণ খুঁজে বের করা, ওয়ান টু ওয়ান ডিটারমিনিস্টিক রিলেশনশিপ প্রতিষ্ঠিত করা নয়।
@অভিজিৎ,
আমিও স্রেফ আপনার লেখা এবং পপুলার মিডিয়া টাইমসের লেখা বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলছি। যদিও আপনার লেখা টাইমসের মত পপুলার, নামী-দামী পত্রিকায় প্রতিফলন হওয়াটা আমিও আশার কথা বলেই মনে করছি, কিন্তু,
পপুলার মিডিয়া অনেক সময় হিতে বিপরীত ঘটিয়ে থাকে। সেটা কারোর জন্য আশার কথা হয়ে থাকলেও, কারো কারো জন্য হতাশার কথাও হতে পারে।
আপনার কি মনে হয় না, “অনর্থক” শব্দটা ব্যবহার করে আপনি বিচারকের ভূমিকা নিয়ে নিলেন এবং প্রকারান্তরে বিতর্কটাকেই অনুৎসাহিত করলেন?
@মইনুল রাজু,
হতেই পারে। কিন্তু পপুলার মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে বলেই যেমন সেটাকে ন্যায্যতা দেয়া যায় না, আবার স্রেফ পপুলার মিডিয়ায় প্রকাশের কারণেই স্রেফ হতাশ হয়ে সেটাকে বাদও দেয়া যায় না। আসলে লেখার পেছনে আর্গুমেন্টগুলোই হওয়া উচিৎ মূখ্য। আমার মনে হয় আমরা দুজনেই এ বিষয়ে একমত হতে পারি।
ঠিক আছে, অনর্থক শব্দটাকে না হয় ফিরিয়েই নিলাম। বিতর্ক যে খাপার লেগেছে তা নয়। বরং খুশিই হয়েছি। তবে আপনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন সেগুলো আমি আগের অনেক লেখাতেই উত্তর দিয়েছিলাম। আপনি সেগুলো পড়লে হয়ত সেই পুনরুক্তিটুকু এড়ানো যেত। এইটুকুই। সেজন্য যদি আপনার আমাকে ‘বিচারক’ মনে হয়, তবে আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম। আপনি যত ইচ্ছা আলোচনা বিতর্ক করতে পারেন। উচ্ছ্বাসের সাথেই অভিবাদন জানাবো।
তবে বিচারক না হলেও কিছু না কিছুতে বিচারবোধ কিন্তু এসে যায়। আপনি প্রায়ই কেবল নিজের লেখাতেই মন্তব্য করেন, অন্য কারো লেখাতে একেবারেই আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না (আপনি কিন্তু নিজেই স্বীকার করেছেন যে এনিয়ে আপনি আগের লেখাগুলো পড়েননি )। তাই এবারে হঠাৎ করেই লেখায় মন্তব্য দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম 🙂 । আপনি যে অন্য লেখাতেও মন্তব্য করতে শুরু করেছেন এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। আপনার এরকম অংশগ্রহণ আরো কামনা করছি। ভাল থাকুন।
@অভিজিৎ,
মাননীয় আদালত :))
আপনি হয়তো অবগত আছেন যে, আমার জন্য সময় বের করা কতটুকু কঠিন। আমি স্বীকার করছি যে, অন্য লেখাগুলোতে আমি ততটা মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু, তার বদৌলতে আমার নিজের লেখায়ও মানুষজন মন্তব্য করতে উৎসাহী হন না। সে নির্মম বাস্তবতা আমি মেনে নিয়েছি। কারণ, দোষ আমার-ই। 😛
সবচেয়ে বড় কথা হলো একটা মন্তব্য করতে গেলে পড়তে হয়, অনেক জানতে হয়। যেমন, আপনার এই লেখায় সঠিকভাবে মন্তব্য করতে গেলে, আমাকে আরো বেশ কয়েকটি লেখা পড়ে তবেই করতে হতো, যেটা সবসময় করা সম্ভব হয় না।কিন্তু, সাথে সাথে আমি এও স্বীকার করছি, এ-সব বলে দায় এড়ানো যায় না। মুক্তমনায় কিছু কিছু লেখক মাঝে মাঝে বেসিক কিছু ভুল করেন, যেটা নিয়ে অন্তত মন্তব্য করা যেতে পারে।
এবার একটা মনগড়া কথা বলি। সঠিক বা ভুল দু’ই হতে পারে। আমার এ ব্যাপারটি কিন্তু আপনি প্রথম খেয়াল করেন নি। অন্য একজন ধরেছে, তারপর আপনাকে বা আপনাদেরকে বলা হয়েছে। আপনারা দেখতে পেলেন ঘটনা সত্য। :)) অথবা, হতে পারে, আপনি প্রথম খেয়াল করে অন্যদের জানিয়েছেন। ঐক্যজোট। :-s
তবে শেষকথা হচ্ছে, মন্তব্য করাটা ক্ষেত্রবিশেষে দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি অবশ্যই, দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবো। 🙂
@মইনুল রাজু,
হাঃ হাঃ, ঠিক আছে। আপনে খালি নিজের লেখা লিখলে আর সেইটাতে কমেন্ট করলে পাবলিকেও আপনের লেখায় কমেন্ট করা বাদ দিবে একসময়। :)) সময় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আপনার লেখায় কেউ কমেন্ট করলে তড়িৎ গতিতে সেটার প্রত্যুত্তর চলে আসে, কিন্তু অন্যদের লেখার বেলায় কমেন্ট করার সময় না পেলে চলবে? যাহোক আপনি এ লেখায় যে মন্তব্য করে সেই শিকল যে ভেগেছেন সেটাতে ধন্যবাদ জানাতেই হবে।
কিংবা এমনো হতে পারে, যে আলাদা আলাদা ভাবে অনেকেরই নজরে পড়েছে, অনেকেরই চোখে লেগেছে 🙂
(Y) অনেক ধন্যবাদ! আমার তরফ থেকে কোন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলে ক্ষমাপ্রার্থী।
@মইনুল রাজু,
কেন, যদি এভাবে বলি- ক্ষমতাশালীদের সুযোগ বেশি? 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
এভাবেও বলতে পারেন। 🙂
আমি কয়েকজন রিক্সাচালক ও দিনমজুরকে চিনি যাদের কয়েকটি করে বৌ থাকার পরেও তারা চুটিয়ে পরকীয়া প্রেম ক’রে যাচ্ছে।তাদের বৌদেরও এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা বলে,”পুরুষ-মানুষ তো এসব করবেই।” তাদেরকে গুটি কয়েকজন মানুষে চিনে এজন্য তাদের এসব ঘটনা নিয়ে বিশ্বব্যপী তোলপাড় পড়েনা।অবশ্য ক্ষমতাও একটি ব্যাপার কিন্তু ক্ষমতাশালীরা তাদের মান সম্মানের পরোয়া না করে কেন যে আরো বেপরোয়া ভাবে পরকীয়া প্রেমিক হয়ে উঠেন তা বুঝতে পারিনা।
সলোমন কি নবী সোলায়মান? ফিরোজ শাহ কি কখনো ঘুমাতেননা? ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩০০ জন নারী উপভোগ কীকরে সম্ভব?:razz: আমি কোথাও পড়েছিলাম, মহামতি আকবর তিন শতাধিক বিয়ে করেছিলেন এবং অগণিত নারীর সাথে তাঁর শারিরীক সম্পর্ক ছিল। তার পরেও তাকে মহামতি বলা হয় কেন? ইতিহাস প্রসিদ্ধ এসব মহামানবদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষের কী শিক্ষনীয় আছে, তাদের চরিত্রে কোন অনুকরনীয় আদর্শ আছে কি? তারা যৌন বাহিত কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা তাও তো এখন জানা সম্ভব নয়।:-?
@তামান্না ঝুমু,
আকবরই প্রথম মুঘল বাদশাহ যিনি বিজীত ভারতীয়দের শুধু বিজীত ভাবেই দেখেন নাই। তাদের সাথে নানা ভাবে উতপীড়ন ব্যতিরেকে ( বা কম অত্যাচারের মাধ্যমে) সুসম্পর্ক স্তাপনের জন্যে ততপর হয়েছিলেন। অনান্য মুঘল বাদশাহের বা সমোসাময়িক মধ্য এশিয়ার লুটেরার কট্টর শাষকদের মত সাম্প্রদায়ীক ছিলেন না এবং তিনিই প্রথম হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সমন্নয় সাধনের উদযোগী হয়েছিলেন। দীন-ই-ইলাহি তার এই উদযোগের এক অন্যত্তম উতকৃষ্ট উদাহরণ।
কথিত আছে যে তিনি তার হিন্দু পত্নিকে রাজ প্রাসদেই মন্দির নির্মান করে পুজা উপোশনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ততকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষীতে এটা তাঁর মহানুভবতার আরও একটি উদাহরণ।
তাঁর নানা সুগুনাবলী তাঁর বহুবিবাহ ও হারেম রাখার অনেক উর্ধে আরোহণ করেছিল। তাই তিনি মহামতি। 🙂
@সেন্টু টিকাদার,
পয়েন্ট নোটেট ভালকাজ করলে, নারী লিপসু হতে কোন ক্ষতি নাই, কোন দাগ লাগে না। :lotpot: :rotfl:
@তামান্না ঝুমু,
এটা নিয়ে আমি বরাবরই লেখায় বলেছি যে, ধনী গরিব সকলেই পরকীয়া করে। দিনমজুর রিক্সাওয়ালা যেমনি করে, তেমনি করে বিল ক্লিন্টনও। কিন্তু যে ব্যাপারটা আমি লেখায় তুলে আনতে চেয়েছি সেটা হল – ব্যাপকহারে নারীলোলুপতা বাস্তবায়িত করতে হলে বোধ করি রাজৈনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী হওয়া চাই। অর্থাৎ, ক্ষমতার শীর্ষে থাকলে কিংবা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে সেই ‘পুরুষালী লালসা’ পুরিস্ফুটনের সুযোগ থাকে বেশি, ব্যাপারটা ত্বরান্বিত হয় অনেক ক্ষেত্রেই। আকবরের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ৫০০০ নারীর হারেম পোষার, কিংবা সুলতান মৌলে ইসমাইলের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ১০৪২জন সন্তান সন্ততি ধরাধামে রেখে যাবার, সহায়সম্বলহীন রহিমুদ্দিনের পক্ষে নয়। এখন বিবর্তনের যাত্রাপথের এই সিমুলেশনগুলো বার বার করুন দেখবেন, সম্পদের সাথে মেটিং স্ট্রাটিজির একটা সম্পর্ক বেড়িয়ে আসছে। প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরাই অনেক নারীর দখল নিতে পারছে, আবার অন্য দিকে নারীরাও প্রভাবশালী পুরুষদের মেটিং পার্টনার হিসেবে নির্বাচিত করতে চাইছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সেতাই পাওয়া যায়। সেজন্যই পুরুষেরা ধন সম্পদ আহরণে, কিংবা নিজের খ্যাতি যশ, ধন সম্পদ, স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতা করে, নারীরাও অন্যদিকে এ ধরণের যশস্বী প্রতিপত্তিশালী লোকজনকে আকর্ষনীয় মনে করছে। হুমায়ুন আহমেদ পরকীয়া করতে পারেন, কারণ শাওনের মত কেউ তাতে আগ্রহী থাকে বলেই। পরকীয়ার দ্বিমুখি কড়াত টিকে থাকে এভাবেই।
এটাই এ লেখার উপজীব্য। আমি আমার লেখার শুরুতেই বলেছি – সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকেন, সমাজ এবং সম্মান নিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হয় অহর্নিশি, তাদেরই বরং মান সম্মানের ব্যাপারে অনেক সচেতন থাকার কথা। তা না হয়ে উলটোটাই কেন ঘটতে দেখা যায়? কেন বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা সামান্য একটি ‘এফেয়ার’ করতে গিয়ে এমন সব ঝুঁকি নেন, যা শেষ পর্যন্ত তাদের পতন ডেকে আনে?
এ প্রসঙ্গে ন্যান্সি গিবস টাইমে যা বলেছেন তা হল – ‘ ব্যবসা বানিজ্য কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে যারা মুলতঃ শীর্ষস্থান অধিকার করে থাকেন, তাদের মধ্যেই পরকীয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্ষমতা কেবল একা আসে না, ক্ষমতার সাথে সাথে দুটি জিনিস অনিবার্য ভাবে চলে আসে – সুযোগ এবং আত্মবিশ্বাস। বলা বাহুল্য, সুযোগ আর আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারটা বহুসময়ই সমাজে পরিস্ফুট হয় যৌনতার মাধ্যমে। যদি প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা যৌনতার সুযোগকে অপরিবর্তনীয়ভাবে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে, বহু পুরুষই তার সদ্ব্যবহার করে …’
আমি মইনুল রাজুকে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলাম (নীচে মন্তব্যে দেখুন) ক্ষমতা আহরণ করা, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিপত্তিশালী প্রমাণ করা পুরুষদের এক ধরণের মেটিং স্ট্র্যাটিজি (সেজন্যই এখনো পুরুষদের মধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বেশি দেখা যায় নারীদের তুলনায়, আগেকার সময় হাণ্টার গ্যাদারার সোসাইটিতে এই প্রতিযোগিতা হত শারিরীক ভাবে, এখন হয় সমাজে টাকা পয়সা, ক্ষমতা, যশ, প্রতিপত্তি সম্মান ইত্যাদির মাধ্যমে )। এই স্ট্র্যাটিজির মাধ্যমে যারা শীর্ষে উঠে আসে, ক্ষমতার দাপট তাদের বেশি থাকে, আর তারা স্বভাবতই অনেক সময় বহু নারীর দখল নিতে চায়, সেই আদিম মানসপট রাজত্ব করার কারণেই। আদিম মানসপটের ব্যাপারটা গুরুত্বপুর্ণ, কারণ বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে মনে করা হয় যে, মানুষের মস্তিস্কের বেসিক মডিউলগুলো তৈরি হয়েছিলো তখনই যখন আমরা হান্টার গ্যাদারার হিসেবে জীবন যাপন করতাম (আমাদের মানব সভ্যতার শতকরা ৯৯ ভাগই কাটিয়েছি আমরা সেভাবে)। তখন তাদের নিজস্ব সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য যে স্ট্র্যাটিজিগুলো গড়ে উঠেছিল, সেই একই স্ট্র্যাটিজির অবশেষ এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে। পরিবেশ বদলালেও স্ট্র্যাটিজি সেরকমই আছে – যেভাবেই হোক ক্ষমতা বাড়িয়ে অধিক নারীর দখল নেয়া!
@অভিজিৎ,
“ব্যাপকহারে” শব্দ দুইটা ব্যবহার করলে ঠিকই আছে। কিন্তু সমাজে মোটামুটি সবাই-ই যার যার ক্ষমতা আর সুযোগ নিয়ে ওত পেতে থাকে। মানে ব্যাপকহারে করতে চাইলে ব্যাপক ক্ষমতা আবার ক্ষমতা কম হলে কমহারে।
আদিম রিপু বলে কি পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া যায় নাকি যাওয়া উচিত? 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
হ্যা – ব্যাপকহারে বুঝাতেই আমি শিরোনামে ‘বেশি’ শব্দটা ব্যবহার করেছি। ঠিক বলেছেন ক্ষমতা আর সুযোগ পেলে সবাই করে। কিন্তু পর্যপ্ত ক্ষমতা থাকলে সুযোগের পরিধি বেড়ে যায়। তাই ক্ষমতা বাড়িয়ে অধিক নারীর দখল নেয়া সম্ভবতঃ পুরুষদের মেটিং স্ট্র্যাটিজি ছিলো বরাবরই। এখন ডারুইনীয় প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিরিখে ব্যাপারগুলো চিন্তা করুন। যারা এই স্ট্রাটিজিতে সফল হয়েছে, তারাই অধিক হারে নারীর দখল নিতে পেরেছে, আর বহু সন্তান সন্ততি রেখে গেছে। যেমন মৌলে ইসমেইল এক হাজারের উপর সন্তান সন্ততি রেখে গিয়েছিলেন হারেমে পালা অসংখ্য নারীর মাধ্যমে। চেঙ্গিস খান আর বংশধরেরা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধজয়ের পরে মনের আনন্দে এমনই ধর্ষণ করেছিলেন যে, এশিয়ার প্রায় ৮% জন্সংখ্যার মধ্যে তাদের জিন ট্র্যাক করা যায় এখনো। শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, কিন্তু সেই স্ট্র্যাটিজিগুলো যদি ক্ষমতাবান পুরুষেরা একসময় ব্যবহার করে থাকে প্রজননগত সফলতা পেতে, সেগুলোর ছাপ আধুনিক সমাজেও পাওয়া যাবে। সেজন্যই ভেনিজুয়ালার আদিম Yanomamo ট্রাইব থেকে শুরু করে প্যারাগুয়ের Ache, বৎসোয়ানার !Kung ট্রাইব থেকে শুরু করে আলেকজান্ডার চেঙ্গিসখান থেকে আধুনিক সমাজের বিল ক্লিন্টন, ডমেনিক স্ট্রাউস কান, আর আর্নল্ড শোয়ার্সনেগারদের মত ক্ষমতাশালীদের আচরণে এটাই বোঝা যায় যে ক্ষমতার সাথে বহুগামিতার জোরালো সম্পর্ক আছে।
@তামান্না ঝুমু, আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে আমারও কিছুটা মেলে। আমাদের সমাজে নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্তে এসব কোনো ব্যাপারই না। সেই তুলনায় মধ্যবিত্তে এসব মনে হয় কম। কারণ হয়তো এদের পান থেকে চুন খসলেই আমাদের সমাজের মারমুখী হয়ে ঝাপিয়ে পড়াটা। আবার আমাদের দেশে মেয়েরা কাছের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা যে যৌননিগ্রহের সম্মুখীন হয় তা কিন্তু মনে হয় এই মধ্যবিত্তেই বেশী হয়। আবার এটার কারণটাও মনে হয় আমাদের সমাজ। সমাজ যেহেতু এদেরকে প্রকাশ্যে এসব করতে বাধা দেয় তাই ঐ অদম্য আকাঙ্খাটা ওভাবে গোপনে-লুকিয়ে-চুরিয়ে বাড়ে।
@তামান্না ঝুমু,
তারপরেও তাকে মহামতি বলা হয় কারন ভারতবর্ষে উনার কিছু কাজ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
তার নারীঘটিত ব্যপার নিয়ে কেউ কিন্তু উচ্চবাচ্য করছে না। কারন নারী আজও সমাজের কাছে এক যৌন মাংসপিন্ড হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।নারী সে তো ভোগের বস্তুই।
@তামান্না ঝুমু,
সত্যই কি বিচিত্র পুরুষ মানুষ। :lotpot:
লেখায় আপত্তিকর রকমের বানান ভুল। এত বেশি যে উদাহরণ টানলাম না। অনেকগুলো হতে পারে টাইপিং এর কারণে। কিন্তু সে যাই হোক, অন্তত আরেক বার দেখে নেয়া উচিত।
আর ক্ষমতাশীলরাই শুধু নয়, ক্ষমতাহীনরাও পরকীয়ায় আসক্ত। কেউ হয়তো প্রতিপত্তি খাটিয়ে সেটাকে বাস্তবে রূপ দেয়, কেউ হয়তো সুযোগের অভাবে বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। অন্যদিকে, মিডিয়াতো আছেই ক্ষমতাশীলদের খবর প্রকাশের জন্য। তাই, ‘কেন বেশি আসক্ত’ তার আগে আসলেই বেশি আসক্ত কি-না, না-কি ক্ষমতাহীন আর ক্ষমতাশীল সবাই সমান আসক্ত, তার কোনো পরিসংখ্যান কি আছে?
@মইনুল রাজু,
হ্যা, তাড়াহুড়া করে লেখা এবং পোস্ট দেয়ায় বানান ভুলগুলো রয়ে গেছে। ধীরে ধীরে দেখে ঠিক করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ ব্যাপারটি ধরিয়ে দেবার জন্য।
এক্সাকটলি। ক্ষমতাশীলরাই শুধু নয়, ক্ষমতাহীনরাও পরকীয়ায় আসক্ত হতে পারে, এবং হয়ও। কিন্তু আপনিই স্বীকার করেছেন যে, প্রতিপত্তি না থাকলে সেটা বাস্তবে রূপ দেয়া অনেকের পক্ষেই কঠিন। মূল ইস্যুটা এখানেই। সেজন্যই বলেছি অনৈতিকতা বলুন কিংবা ভোগলিপ্সা বলুন – এগুলো চরিতার্থ করতে পারে মানুষ, যদি তার হাতে প্রভুত ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে। আকবরের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ৫০০০ নারীর হারেম পোষার, কিংবা সুলতান মৌলে ইসমাইলের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ১০৪২জন সন্তান সন্ততি ধরাধামে রেখে যাবার, সহায়সম্বলহীন রহিমুদ্দিনের পক্ষে নয়। ক্ষমতার শীর্ষে বসে এরশাদ সাহেব যা করেছেন তা মইনুল রাজু বা অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছে থাকলেও করা সম্ভব নয়, তাই না?
হ্যা মিডিয়ার ব্যাপারটা সব সময়ই সত্য, তবে আমার অনুমান সেটা লেখার বাস্তবতাকে উলটে দেয় না।
প্রলুব্ধকরনে নারীরা আর অক্রিয় যৌনতার বস্তু হিসেবে বসে নেই , তারা নিজেরাই এখন পুরোদমে সক্রিয় প্রপঞ্চ , শক্তির প্রতীক। এখানে নারীদের এই প্রলুব্ধকারী শক্তির রূপটা যতনা শারীরিক তার চেয়েও মানসিক , যতোনা তেজস্বী তার চেয়েও বক্র এবং ধূর্ত। পুরাতন টেস্টামেন্টের বেথশেবা , ট্টয়ের হেলেন, চীনের সি সি এবং সর্বকালের শ্রেষ্ট সাইরেন মিসরের ক্লেওপাত্রার এমনি নারী ছিলেন । তারা আগুন জ্বালিয়েছেন, যে আগুনে পারিস , বাইবেলের কিং ডেভিড , রাজা ফু চাই এবং জুলিয়াস সীজাররা অনুগত দাসের মত শুধু ঝাপ দিয়েছেন।
আদিম শিকারি-সংগ্রাহক পরিবেশে জৈবিক তাড়না এবং নিজ ও সন্তান সন্ততির নিরাপত্তাই ছিল নারী-পুরুষের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু যার মৌলিক আকর্ষণ-যোজন নির্যাসটা এখন পর্যন্ত অটুট থাকলেও সামাজিক বিবর্তনে প্রেমের কার্যপ্রণালীতে অনেকগুলো গুনগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর পেছনে পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকাটাই অগ্রগণ্য।
হাজার হাজার বছর আগে ক্ষমতা দখলের একমাত্র হাতিয়ার ছিল শারীরিক সহিংসতা । আর সেই ক্ষমতাকে অটুট রাখতে ব্যবহার করা হতো পাশবিক শক্তিমত্তা। রাজা বা সম্রাটদের সুক্ষ্মদর্শী হওয়ার দরকার পড়তো না। তাদের হতে হত নির্দয় নির্মম। অল্প সংখ্যক ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকত সকল ক্ষমতা । এই রকম রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভুক্তভোগী ছিল – আর কেউ নয় , নারীরা। প্রতিযোগিতা করার মত অবস্থায় তারা ছিল না। পুরুষদের রাজনৈতিক , সামাজিক এমনকি বাসগৃহে কোন কিছু মানাতে বাধ্য করানোর মতো এমন কোন অস্ত্র নারীদের হাতে ছিলোনা ।
অপরদিকে পুরুষদের একটা দুর্বলতা অবশ্যই ছিল – চির-তৃপ্তিহীন যৌন আকাঙ্ক্ষা । একজন নারী ইচ্ছে করলেই পুরুষদের এই চির-তৃপ্তিহীন যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খেলতে পারতো কিন্তু যখনই সে নিজেকে সমর্পন করতো নিয়ন্ত্রন পুনরায় চলে যেত পুরুষদের হাতে। যদি সে বাধা দিত , পুরুষেরা অন্য নারীর দিকে নজর দিতো অথবা শক্তি প্রয়োগের আশ্রয় নিত। নারীদের আসলে এই পরিস্হিতির সাথে মানিয়ে না নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলো না। এরকম যৌনাবেদনময়ী ক্ষমতায় কি লাভ যখন তার স্হায়ীত্ব এত সংক্ষিপ্ত ?
কিছু নারী এ অবস্হা মানতে পারেননি । তারা ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত এবং অত্যন্ত মেধাবী। এই নারীরা প্রলুব্ধকরনকে পরিনত করেছেন সফস্টিকেটেড শিল্পে যাকে তুলনা করা যায় শক্তি এবং প্ররোচনার সর্বোচ্চ শিখর হিসেবে । তারা জানেন কি করে প্রথমে পুরুষদের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করতে হয় , তার ফ্যান্টাসীকে সিমুউলেইট করতে হয় , একজন পুরুষকে আরও বেশী চাইতে বাধ্য করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত আশা আর নিরাশার নকশায় বন্দী করতে হয়।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি ভাবছি নারীদের ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার প্রভৃতি ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে মেটিং স্ট্র্যাটিজিতে কি রকম রদ বদল আনবে। আপনার কোন হাইপোথিসিস থাকলে বলেন।
@অভিজিৎ,
প্রায় সব অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মেটিংয়ে নারীরা মূখ্য নির্বাচক এবং পুরুষেরা প্রার্থীর ভূমিকা পালন করে থাকে । কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে অনেক মতভেদ লক্ষ্য করা যায় যদিও মতভেদগুলো অনেকাংশেই ন্যারেটিভ নির্ভর। ইউরোপ , আমেরিকা , চীন সহ পৃথিবীর বেশীরভাগ অঞ্চলে নারীরা মেটিং নির্বাচন করছেন। ভারতেও তার হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশে পারিবারিক বিবাহের বাহিরে এবং সেকেন্ডারী মেটিংয়ে একই চিত্র দেখা যায় যে নারীরাই মূখ্য মেটিং নির্বাচক।
আমার নিজস্ব বিগত ২০ বছরের ‘জীবিত জীবনের’ ‘প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায়’ সব সময়ই দেখেছি যে মেটিংয়ে নারীরাই মূখ্য নির্বাচক থাকছেন কোনরকম ব্যতিক্রম ছাড়াই। ভবিষ্যতে নারীদের এই মূখ্য নির্বাচকের ভূমিকাটা অন্যান্য প্রাণীদের মতই সর্বত্র স্বীকৃতি পাবে কোন রকম বিতর্ক ছাড়াই। 🙂
@সংশপ্তক, চমৎকার লাগলো আপনার আলোচনা। 🙂
(Y)