অনেক সময় বলতে শোনা যায় “‘প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জৈববিবর্তন’ জীববিজ্ঞানের নিছক একটি ‘তত্ত্ব’ (থিওরি) মাত্র, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।” বিজ্ঞানে কোনো তত্ত্বের ‘বাস্তব ভিত্তি’ বা ফ্যাক্ট আছে কি নেই, বুঝতে হলে প্রথমে বিজ্ঞানে তত্ত্ব কিভাবে গঠিত হয়, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের কাজ কি-সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। প্রায়শ আমরা যেভাবে সাদামাটা অর্থে ‘তত্ত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি (যেমন কারো ব্যক্তিগত ধারণা, অনুমান, বিশ্বাসকে বোঝাতে), বিজ্ঞানে কিন্তু মোটেও সেরকমভাবে হাল্কা মেজাজে ‘তত্ত্ব’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। বিজ্ঞানে ‘তত্ত্ব’ শব্দটির অর্থ বেশ গভীর। অনেক সময় আমরা বলে থাকি, ‘বাংলাদেশের অমুক অঞ্চলের মানুষগুলো বড় বাজে, হাড়কিপ্টে। তাদের সাথে সম্পর্ক করা ভালো না।’ ‘সাদাদের তুলনায় কালো মানুষেরা বেশি বদমেজাজি, রাগী, খিটখিটে হয়’ কিংবা ‘মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মেধাবী হয়।’ উক্ত উদাহরণগুলির কোনোটিই পরীক্ষিত-প্রমাণিত কোনো বক্তব্য নয়; যেনতেন অনুমান, লোককথা, আর stereotype মানসিকতায় আচ্ছন্ন বক্তব্য। বিজ্ঞান মোটেও লোককথা, stereotype বক্তব্য, যেনতেন অনুমানকে ‘থিওরি’ বা ‘তত্ত্ব’ বলে গ্রহণ করে না। বিজ্ঞান গবেষণা-পরীক্ষণ-প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের যে কোনো শাখায় গবেষণার প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘অনুকল্প’ (hypothesis) গঠন। সেটা নতুন তত্ত্ব গঠনের জন্য হতে পারে অথবা পুরাতন তত্ত্বকে সময়ের পরিবর্তনে নতুন করে ঝাচাই করে নেয়ার জন্য হতে পারে। অনুকল্প গঠনের কিছু আবশ্যিক পূর্বশর্ত আছে। যেমন : ‘অনুকল্পটি অবশ্যই বাস্তব অভিজ্ঞতাপুষ্ট ধারণা হতে হবে, সুনির্দিষ্ট হতে হবে, প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণ-বিশ্লেষণ-যাচাইযোগ্য, যুক্তিসঙ্গত ধারণার প্রকাশক হতে হবে, ইত্যাদি।’ উক্ত পূর্বশর্তগুলি পূরণ করে অনুকল্প গঠিত হলে এরপর অনুকল্পের অন্তর্ভুক্ত ঘটনা বা বিষয়গুলিকে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে উক্ত বিষয় বা ঘটনাগুলি বিভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হলে তবেই অনুকল্পটি ‘তত্ত্ব’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়; নয়তো অনুকল্পটি খারিজ হয়ে যায় … বাকিটুকু এখানে :pdf:
বিবর্তন কি কেবলই একটি তত্ত্ব?(পুনঃপ্রকাশিত)
By অনন্ত বিজয় দাশ|2017-05-16T18:10:40+06:00ফেব্রুয়ারী 13, 2011|Categories: জৈব বিবর্তন, ডারউইন দিবস, বিজ্ঞান|6 Comments
About the Author: অনন্ত বিজয় দাশ
বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোটকাগজ 'যুক্তি'র সম্পাদক। মানবতা এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থ :
(১) পার্থিব, (সহলেখক সৈকত চৌধুরী), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১১।
(২) ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, (সম্পাদিত), অবসর, ঢাকা, ২০১১।
(৩) সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব : লিসেঙ্কো অধ্যায়, শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১২।
(৪) জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল: ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ: অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর), চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৪
পিডিএফ ফাইল এইমাত্র নামিয়েই পড়তে বসলাম। দীর্ঘ ১৮ পৃষ্ঠা। ৩ নং পৃষ্ঠায় বক্সের মধ্যে কিছু ফন্ট অন্যরকম হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ইউনিকোডে করা হয়নি।
বিবর্তন শুধু যে তত্ত্ব না তা ভালোমতই উপলব্ধি করতে পারছি। আমরা যারা কৃষি কাজের সাথে যুক্ত। ফসলের পোকামাকড় দমনের জন্য যে বিষ প্রয়োগ করা হয়, পরবর্তী বছর সেই বিষে আর কোনো ক্রিয়া করে না। নতুন ধরনের বিষ কিনতে হয়। এটাই তো জৈববিবর্তন তা-ই নয় কি?
@মাহফুজ,
ঠিকই ধরেছেন মাহফুজ ভাই। তবে এটাই একমাত্র নয়। জৈববিবর্তনের বিশাল পরিসরের সামান্য অংশ মাত্র।
আপনার উল্লেখিত পয়েন্টটি নিয়ে আমার এ প্রবন্ধে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। আমি এখান থেকে (১৪ পৃষ্ঠা দেখুন) কিছু অংশ ইউনিকোডে কনভার্ট করে দিচ্ছি :
ডারউইনবাদ নিয়ে এর আগেো আপনার লেখা পড়েছি। আমার কাছে ডারইউন অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ কিন্তু সারাদেশে এর প্রচারটা থেমে গেছে। ধমর্ী আগ্রাসন গ্রাস করতে চাচ্ছে ডারউইনবাদকে। আমার মনে আছে তখন নটরডেম কলেছে পড়তাম। জীববিজ্ঞানে ডারউইন ছিল। আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন মিজানুর রহমান, তিনি কিছুটা মেৌলবাদী টাইপের মানুষ। সিলেবাসে ছিল না কিন্তু পড়ানো হতো। তিনি আগেই বলে নিলেন, কোন যুক্তি তকর্ ছাড়াই আমি ডারউইনবাদকে বিশ্বাস করি না। পড়ানোর জন্য পড়াচ্ছি। বইতে ছিল বলে অনেকেই পড়তে পেরেছিলেন। বতর্মানে ডারইউন সারা দেশে নিষিদ্ধ। তাকে মুক্ত করতে না পারলে মেৌলবাদের থাবা থেকে রক্ষা করা যাবে না দেশকে। ডারউইনবাদকে উচ্চ মাধ্যমিক পযর্ায় থেকেই সিলেবাসে অন্তভূর্ক্ত করা দরকার। এজন্য একটি আন্দোলন চালানো দরকার, সরকারকে চাপ দেয়া দরকার। সারা পৃথিবীতে ডারউইন বাদ পড়ানো হচ্ছে আর আমরা অন্যায়ভাবে ছেটে ফেলেছি তাকে।
@Mojib Rahman,
আপনার বক্তব্যের সাথে একমত আমি। পাঠ্যক্রমে জৈববিবর্তনবিদ্যা পুনরায় সংযোজনের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করা দরকার এখনই। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আড্ডা-আলোচনার মধ্যে এ দাবিটি সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্রীয়-নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছে দেয়ার জন্য অবশ্যই কিছু করা দরকার।
অবসর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিতব্য ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা গ্রন্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার এ দাবির যৌক্তিকতা অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
এছাড়া পরবর্তী কার্যক্রম কি কি গ্রহণ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
খুব ভালো প্রবন্ধ হয়েছে অনন্ত। আঠারো পৃষ্ঠার দীর্ঘ প্রবন্ধটি এক টানে পড়ে ফেললাম। রেফারেন্স তালিকায় বন্যা আপার ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটা না দেখে একটু অবাক হলাম।
@প্রদীপ দেব,
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রদীপদা,
উত্তর দিতে দেরি হল। বাসার বাহিরে ছিলাম আর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও পাইনি তখন।
এই প্রবন্ধটি আমার একটি বইয়ের অধ্যায়ের খসড়া বলতে পারেন। মোট দশটির মত অধ্যায় হয়তো লেখা হতে পারে। রেফারেন্স তালিকা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই ইনফরমেশন একাধিক বইয়ে পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে রেফারেন্স লিস্ট কী রকম হবে সে সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।