দৃশ্যপটে আবির্ভাবের ১৫২ বছর পর, বিবর্তনবাদ নামের একসময়ের এক দার্শনিক কৌতুহল আজ পরিনত হয়েছে জীবদেহ এবং জীবের আচরণ তথা জীব জগৎকে জানার পূর্বশর্তে, যার মূলে রয়েছে বিগত ৫০ বছরের আনবিক জীববিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি । গত ১০ বছরে মানব জিনোম প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে যা জিনোম সিকোয়েন্স নামে পরিচিত। এই জিনোম সিকোয়েন্সের সাহায্যে ইদানিং প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর কোন না কোন পরীক্ষাগারে মানব এবং অন্যান্য জীবদেহ সংক্রান্ত বিবিধ রহস্য এক এক করে উদঘাটিত হচ্ছে । কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশী লাভবান হচ্ছে চিকিৎসাশাস্ত্র এবং ফরেনসিক বিজ্ঞান, যার ফলে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে অনেক বিপন্ন জীবন , নিশ্চিত হচ্ছে সুবিচার । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে , সবাই এই সুফল ভোগ করলেও বিবর্তনবাদ নিয়ে জনমনে রয়েছে অনেক বিভ্রান্তি । অনেকে সজ্ঞানে বিবিধ কারনে তথাকথিত ‘সৃষ্টিতত্ত্ববাদী দর্শনের মোড়কে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন , আবার অনেকে জীব বিজ্ঞান এবং এর সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। বিতর্কটা বর্তমানে যতটা না জীববিজ্ঞানের , তার চেয়েও বেশী মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে বিবিধ ভাবাদর্শিকদের মাঝে যার মধ্যে উগ্র ধর্মবাদী থেকে শুরু করে অধ্যাত্মবাদী নাস্তিক এবং সুবিধাবাদী জনপ্রিয় বানিজ্যিক মিডিয়া পর্যন্ত সকলকেই পাওয়া যাবে।
আমার এই লেখাটা মুক্তমনায় প্রবন্ধাকারে ধারাবাহিকভাবে লেখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের মূল উদ্দেশ্য:
১। সস্তা এবং ভাবাদর্শিক চাঞ্চল্যতা পরিহার করে আনবিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা করা এবং এর সমালোচনার জবাব দেয়া।
২। মানুষকে সৃষ্টিতত্ত্ববাদী দর্শনের প্রচারিত বিভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করা এবং যারা ‘সৃষ্টিতত্ত্ববাদী দর্শনে স্থির থাকবেন বলে দৃঢ় পণ করেছেন ,তাদেরও আলোকিত করা।
৩। বানিজ্যিক মিডিয়ায় প্রকাশিত মনগড়া চাঞ্চল্যকর তথ্য (ছদ্ম-বিবর্তনবাদী!) সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।
এছাড়া জীব দেহের অনু পর্যায়ের ঘটনাবলী তথা বিবর্তন সম্পর্কে যারা কৌতূহলী , তারাও এই লেখা পড়ে নতুন কিছু জানতে পারলে আমি আমার পরিশ্রম ধন্য হয়েছে বলে মনে করবো । লেখার প্রথম পর্যায়ে বিবর্তনবাদের মৌলিক বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে আরো গভীর ও জটিল বিবিধ বিতর্কিত বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিবর্তনবাদ জীববিজ্ঞানের অত্যন্ত জটিল বিষয়গুলোর অন্যতম । সে কারনেই এখানে ধ্রুপদী সাহিত্যের ধারার বদলে যথাসম্ভব বিজ্ঞানকে সামনে রেখে এবং ব্লগের উপযোগী করে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে করে পরিচিত বৈজ্ঞানিক পরিশব্দ অযাচিতভাবে সাহিত্যের অনুবাদে হারিয়ে না যায় এবং অধিকতর অনুসন্ধানার্থে পাঠকের কোন পরিশব্দ তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেটে খুজে পেতে সমস্যা না হয়।
এক নজরে বিবর্তন
১। সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশে টিকে থাকতে সকল জীবের নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হয় । এর অন্যথায় , এসকল জীব বিলুপ্তির শিকার হয় । এটাকে বলা হয় অভিযোজন (adaptation) ।
২। নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোটা জীবের ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না । এটা নির্ভর করে জীবের জিন সিকোয়েন্সে পরিব্যক্তির (mutation) উপর যা বিক্ষিপ্তভাবে হয়ে থাকে। আমরা একে বলি জীনের বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) ।
৩। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জীনের বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি জীবের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যা প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য জীবের সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে আবার নাও করতে পারে । শুধুমাত্র স্বল্পসংখ্যক পরিব্যক্তি একান্ত ‘ভাগ্যক্রমে’ (by chance) পরিবেশের এই নতুল চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।
৪। যেসব জীবে এই অনুকূল পরিব্যক্তি ঘটে তারা ক্ষতিকর পরিব্যক্তির শিকার জীবের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশী বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয় যার ফলে তারা এক পর্যায়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয় যা ধারাবাহিকভাবে এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় যখন এই সবল জনগোষ্ঠী দ্বারা ক্ষতিকর পরিব্যক্তির শিকার জনগোষ্ঠী প্রতিস্হাপিত হয়। এই প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection) নামে পরিচিত।
৫। যেসকল জীব পরিবর্তনশীল পরিবেশে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় সফল হয়েছে বিবর্তনের এই ইতিহাস তাদের জীনে ধারন করা থাকে ।
৬। বিবর্তনবাদ কোন সরল রৈখিক এবং সরল থেকে জটিল অথবা বোকা থেকে চালাক এমন প্রক্রিয়া নয়। এখানে বেঁচে থেকে বংশবিস্তার করতে পারাটাই মূখ্য।
৭। বিবর্তন কোন সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া নয় , বরং এক ধরনের আলগোরিদম (algorithm) যেখানে বিক্ষিপ্ত পরিবর্তন থেকে কখনও সখনও সম্পূর্ন ভাগ্যক্রমে সফল ফলাফল উৎপন্ন হয়।
৮। বিবর্তনের কোন সুনির্দিষ্ট বা চুড়ান্ত উদ্দেশ্য এবং বিধেয় নেই । এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া যেখানে সবসময়ই প্রতিটা জীবের সার্বিক রূপ বা প্রকৃতি অস্থায়ী বলে বিবেচ্য।
এক নজরে সৃষ্টিতত্ত্ববাদী দর্শন
১। প্রতিটা প্রজাতির জীবই স্বতন্ত্র এবং পৃথকভাবে ভাবে ‘স্রষ্টা’ কতৃক নির্ভুলভাবে সৃষ্ট এবং একাধিক প্রজাতির মধ্যে পরস্পর কোন জৈবিক সম্পর্ক নেই।
২। একাধিক প্রজাতির জীবের মধ্যে একই রকম জিনোম সিকোয়েন্স এবং সংশ্লিষ্ট জীন ফাংশন থাকা স্বাভাবিক যা স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।
৩। শুধুমাত্র জীবের কোষ পর্যায়ে একই রকম জিনোম সিকোয়েন্স এবং সংশ্লিষ্ট জীন ফাংশন নয় , একাধিক প্রজাতির জীবের দৈহিক কার্যক্রমেও মিল থাকাটা ‘স্রষ্টার’ একান্ত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ।
মিলন বিন্দু
অতএব দেখা যাচ্ছে যে , জিনোম সিকোয়েন্স এবং সংশ্লিষ্ট জীন ফাংশন কিভাবে কাজ করে এবিষয়ে জীববিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্ববাদ পুরোপুরি একমত । আসল বিরোধটা অন্য জায়গায় – ” প্রতিটা জীবই স্বতন্ত্র এবং পৃথকভাবে নির্ভুলভাবে ভাবে সৃষ্ট এবং একাধিক প্রজাতির মধ্যে কোন জৈবিক সম্পর্ক নেই।” স্রষ্টা নিয়ে গবেষনা করা জীববিজ্ঞানের কাজ নয় বিধায় এই প্রসঙ্গে অন্তত জীববিজ্ঞানের সাথে সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের কোন বিরোধের অবকাশ নেই ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউন যখন সারা পৃথিবী জাহাজে ঘুরে তার On the Origin of Species বইটায় জীবের বিবর্তনের কথা সকলের সামনে তুলে করেন , একই সময় আধুনিক জেনেটিক্সের জনক গ্রেগর মেন্ডেল মটরশুঁটির চারাগাছ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট বংশানুক্রমিক ধারা বা প্যাটার্ন পর্যবেক্ষন করে এর উৎসের নাম দেন “ কিছু ফ্যাক্টর” যা বর্তমানে জীন নামে সুপরিচিত । মেন্ডেলের নিয়মের (Mendel’s law) মাধ্যমে আধুনিক জেনেটিক্সের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ডারউন অথবা মেন্ডেল এ দুজনের কেউই জীন কিংবা ক্রোমোজমের কথা জানতেন না । তারা যেহেতু জানতেন না কোষ বিভাজন কি জিনিষ , তাদের দেখা হয়ে উঠেনি মাইটোসেস আর মায়োসিসের ডায়াগ্রাম কিংবা স্লাইড কি রকম হয়। আজকের আধুনিক জীববিজ্ঞানের কঠিন মানদণ্ডে বিচার করলে বিবর্তনবাদ সেসময় ছিলো মূলত একটা দার্শনিক কৌতূহল । বিবর্তনবাদ নিয়ে সেই সময়কার বিতর্কে দার্শনিকদের দাপটে জীববিজ্ঞানের হাত পা অনেকটাই বাঁধা ছিলো ,এমনকি অসহায় বললে অত্যুক্তি হবে না । কিন্তু পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
সমষ্টিগত জেনেটিক্স, হার্ডি-ভাইনবের্গ ভারসাম্য মডেল এবং ডিএনএ
ডারউইন অভিযোজনের ফলশ্রুতিতে জীবের মধ্যে যে সার্বিক দৈহিক পরিবর্তন ঘটছে , সেটা সনাক্ত করতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে মেন্ডেল সনাক্ত করেছিলেন কিছু সুনির্দিষ্ট জেনোটাইপের (genotype) মিশ্রনের ফলাফল। কিন্তু তাঁদের কেউই বিষয়টা বড় ক্যানভাসে অনুধাবন করতে পারেননি অথবা জীনগত তথ্যাদির প্রকৃত উৎসটা বুঝে উঠতে পারেন নি ।
১৯১৮ সাল থেকে বিবর্তনবাদ শক্তি সন্চয় শুরু করতে থাকে যখন বিবর্তনবাদের মূখ্য চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সমষ্টিগত জেনেটিক্সের (population genetics) কাজ শুরু হয় যা ১৯৩২ পর্যন্ত চলে :
১।প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection)
২।জীনগত তাড়না (genetic drift)
৩।পরিব্যক্তি (mutation)
৪।জীন প্রবাহ (gene flow)
সমষ্টিগত জেনেটিক্স প্রকল্প থেকে প্রতীয়মান হয় যে , প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং এর ফলশ্রুতিতে ক্রমশ বিবর্তনের সাথে মেন্ডেলের ধারনা সামন্জস্যপূর্ন ছিলো। এ প্রসঙ্গে গডফ্রে হার্ডি (১৮৭৭-১৯৪৭) এবং ভিলহেল্ম ভাইনবের্গ (১৮৩৭-১৯৪৭) এর হার্ডি-ভাইনবের্গ ভারসাম্য মডেল ( Hardy-Weinberg equilibrium model) এর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য । এই মডেল অনুযায়ী দেখানো হয় যে , সাতটি শর্ত পূরন হলে সমষ্টিগত বিবর্তন ঘটবে না যদি :
১। পরিব্যক্তি ঘটছে না
২। প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটছে না
৩। জনসমষ্টির আকৃতি অসীমভাবে বৃহৎ
৪। জনসমষ্টির প্রতিটি সদস্য প্রজননে অংশগ্রহন করছে
৫। সকল যৌনক্রিয়া সম্পূর্ন বিক্ষিপ্তভাবে ঘটছে
৬। প্রত্যেকেই সমান সংখ্যক সন্তান জন্মদান করছে
৭। একটা জনসমষ্টি থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ঐ জনসমষ্টিতে কোন অভিপ্রয়ান (migration) ঘটছে না
এই শর্তগুলো আসলে যেসব জিনিষ বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি তার সম্পূর্ন বিপরীত । অর্থাৎ , বিবর্তনের মূল কার্যসম্পাদন পদ্ধতিসমূহ যদি কোন জীবসমষ্টির উপর কাজ না করে , তাহলে জীবের জীন পর্যায়ের পুল ফ্রিকোয়েন্সি অপরিবর্তিত থাকবে এবং বিবর্তন ঘটবেনা। কিন্তু উপরোক্ত সাতটি শর্তের মধ্যে একটিও প্রকৃতিতে খুজে পাওয়া যাবে না , অর্থাৎ বিবর্তন প্রক্রিয়া প্রকৃতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে , জীনের এই পুল ফ্রিকোয়েন্সী সাধারনত অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং আপনা আপনি কোন পরিবর্তন সেখানে ঘটে না যদি না কোন পরিব্যক্তি এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করে।
এর আগেই মেন্ডেলের ‘প্রবল ও দুর্বল নিয়ম’ ( Mendel’s rules of dominance and recessiveness) ব্যবহার করে মা-বাবার জেনোটাইপের উপর ভিত্তি করে নবজাত সন্তানের কিছু বৈশিষ্টের পুর্বাভাস দেয়া সম্ভব ছিলো , কিন্তু হার্ডি-ভাইনবের্গ ভারসাম্য মডেল দিয়ে পুরো জনসমষ্টির জেনোটাইপের পূর্বাভাস করা সম্ভব হয়। এর আগে জীনখোর(genophagy) তত্ত্ব অনুসারে ধারনা করা হতো যে , প্রবল জেনোটাইপ ধীরে ধীরে পরবর্তী প্রজন্মের দূর্বল জেনোটাইপকে বিলীন করে দেয় এবং একটা পর্যায়ে সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্হাপন করে। হার্ডি এবং ভাইনবের্গ এই ধারনাকে ভ্রান্ত প্রমান করে দেখান যে , দুর্বলের মত প্রবল জেনোটাইপেরও একইভাবে পরবর্তী প্রজন্মে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা সমান।
এর পরেও হার্ডি-ভাইনবের্গ ভারসাম্য মডেলের প্রধান দুর্বলতা ছিলো বিবর্তনের পেছনে যে জীন পুল ফ্রিকোয়েন্সীর পরিবর্তন কাজ করে তার সঠিক কারন চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়া। পরবর্তীতে আধুনিক বিবর্তনীয় সিনথেসিস যা ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে এবং জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিকের ডিএনএ (DNA) আবিস্কার এই সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিকের ডিএনএ (DNA- Deoxyribonucleic acid) কাঠামো আবিস্কারের মধ্য দিয়ে জীববিজ্ঞান এতদিন পর বুঝতে সক্ষম হয় কিভাবে জীবকোষের অভ্যন্তরে জেনেটিক তথ্য ডিএনএ থেকে আরএনএ (RNA-Ribonucleic acid) এবং আরএনএ থেকে প্রোটিনে সঞ্চারিত হয়। বর্তমান মানব জিনোম প্রকল্পের প্রথম পর্যায় জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করার পেছনের মূল চালিকাশক্তি জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিকের ডিএনএ কাঠামো আবিস্কার।
সম্ভাব্য মীমাংসা ?
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, জিনোম সিকোয়েন্স এবং সংশ্লিষ্ট জীন ফাংশন কিভাবে কাজ করে এবিষয়ে জীববিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্ববাদ পুরোপুরি একমত । আসল বিরোধটা , ” প্রতিটা প্রজাতির জীবই স্বতন্ত্র এবং পৃথকভাবে নির্ভুলভাবে ভাবে সৃষ্ট এবং একাধিক প্রজাতির মধ্যে কোন জৈবিক সম্পর্ক নেই।” – এই বিষয়টা। এখন এটার একটা সুন্দর সমাধান বের করা সকলেরই কাম্য যদি সকলই সত্য অনুসন্ধান করতে চান । অরিজিনাল সৃষ্টি বলতে বোঝায় যা অন্য কোন কিছুর নক্সা না নকল করে সৃষ্টি করা । যদি প্রমান পাওয়া যায় যে , কোন কিছু তৈরীর সময় পূর্ব থেকে তৈরী এমন কোন কিছুর নক্সা নকল করা হয়েছে , তাহলে ঐ জিনিষটার স্বাতন্ত্র্য ও মৌলিকত্বের দাবী নস্যাৎ হয়ে যায়। এটা প্রমান করার অন্যতম উপায় হচ্ছে দুটো জিনিষের নক্সার সঠিক এলাকাগুলো ছেড়ে দিয়ে ত্রুটিপূর্ন এলাকাগুলোর দিকে নজর দেয়া। যদি উভয় এলাকায় একই জায়গায় একই রকম ত্রুটি সনাক্ত করা যায় , তাহলে এটা প্রমান করা যায় যে , এক্ষেত্রে কাব্যচৌর্যের মত ঘটনা ঘটেছে। অতএব , আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে , একাধিক প্রাণীর জিনোম সিকোয়েন্সের মধ্যকার একই রকম ত্রুটি খুজে বেড় করা । জীবের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাধারন এনাটমি নিয়ে এখানে আমরা মাথা ঘামাবো না । জীবদেহের সকল কর্মকান্ড সম্পাদিত হয় জীবের কোষে যা নিয়ন্ত্রিত হয় সংশ্লিষ্ট জীনের দ্বারা এবং সে জন্যেই জীব বিষয়ক যে কোন আলোচনায় জীবের কোষ এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকারী জীনকে রাখতে হবে আলোচনার কেন্দ্রস্থলে। আনবিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আমরা জীবের অনু পর্যায়ের কাঠামোতে দৃষ্টি দেব , যার জন্য আমরা জীবের ডিএনএ -এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করবো । সেই ভ্রমণের জন্য আগামী পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইলো। (প্রথম পর্ব সমাপ্ত)
সাহায্যকারী প্রকাশনা :
“Fitness and adaptation”. Natural selection in the wild. Princeton University Press. pp. 33–51. ISBN 0691083878. Endler, John A (1986).
“Shaping bacterial genomes with integrative and conjugative elements”. Res. Microbiol. 155 (5): 376–86. Burrus V, Waldor M (2004)
“Mendel’s laws and their probable relation to intra-racial heredity”. Yule, G. U. (1902)
“The Hardy–Weinberg law”. Science 97: 137–138 Stern, C. (1943).
“Über den Nachweis der Vererbung beim Menschen”. Jahreshefte des Vereins für vaterländische Naturkunde in Württemberg 64: 368–382. Weinberg, W. (1908).
আপনার লেখাটিতে মন্তব্য করা হয়নি আগে! লেখাটা কিন্তু দুর্দান্ত দিকে যাচ্ছে। আনবিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাড ডিজাইন খুবই প্রাণবন্ত হবে বলে আমার ধারণা। বাংলায় এ নিয়ে ভাল লেখা আছে বলেও আমার জানা নেই।
আপনার লেখাগুলো দীর্ঘ সিরিজে রূপান্তরিত হোক, আর শেষ পর্যন্ত বই হয়ে উঠুক এই কামনা করি।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ । আনবিক জীববিজ্ঞানে ভালো বাংলাদেশী শিক্ষক তো বটেই ছাত্র-ছাত্রী পাওয়াটাও কঠিন ব্যপার। আমার এখানে তো একজনকেও পেলাম না , এবং আমি সেখানে একমাত্র পুরুষ (@) । অনেক হাত পা ধরেও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজী করানো যায় না। সবাই জৈবরসায়ন কিংবা নিউরোসাইন্সের মত বিষয় পড়তে চায় :-[ আমার সিরিজটা পড়ে আনবিক জীববিজ্ঞানে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা আগ্রহী হলে খুব ভালো হয়।
জনপ্রকাশনার ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা প্রামান্যচিত্র নির্মানেই সীমাবদ্ধ , বইয়ের ক্ষেত্রে তা শুন্যের কোঠায়। এ বিষয়ে দ্বিধার মধ্যে আছি। ছবি না বই সেটাই প্রশ্ন।
@সংশপ্তক, বিস্তারিত বিষয়বস্তু এবং অন্যান্য ডিটেইলস ঠিক করেছেন প্রামান্যচিত্রের? বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপর বেশ কিছু প্রামান্যচিত্র তৈরি করা নিয়ে একবার অনেক কথা হয়েছিল দেশে কয়েকজনের সাথেই। করা তো যায়ই, সময়, টাকা এবং রিসোর্স যোগাড় করতে পারলেই করা সম্ভব। আপনি আগ্রহী হলে অফলাইনে এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করা যেতে পারে…
@বন্যা আহমেদ,
মুক্তমনার জন্য একটা থিম সং প্রজেক্টের কাজ এই মাসের গোড়ার দিকে শুরু করেছি , যার সাথে ভিডিও ক্লিপও আসবে। জনসংযোগের জন্য এটা খুবই কার্যকর। আমি কোয়ালিটির ব্যপারে ভীষণ কড়া বিধায় , এই প্রজেক্টটা যথেষ্ট সময় নিয়ে পলিশিং দিয়ে শেষ করতে চাই।
অফলাইনের জন্য অভিজিৎ সাহেবের কাছে আমার ই-মেইল ডিটেইল পাবেন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। প্রবন্ধটি খুব ভাল লাগলো। তথ্যসমৃদ্ধ, সুখপাঠ্য এবং Basic থেকে শুরু বলে বুঝতে সুবিধা। সংশপ্তক, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@গোলাপ,
আপনাদের মত পাঠকরাই তো আমার সকল উৎসাহ উদ্দীপনার মূল উৎস। পরবর্তী পর্বের জন্য বেশ কিছু ভারী কাজ আমাকে করতে হবে । সবকিছু সম্পন্ন করেই আমি আপনাদের পরবর্তী পর্ব উপহার দেবো।
খুব ভালো লেখা। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়।
@প্রদীপ দেব,
ধন্যবাদ । আপনাদের দেশে একটা খুবই অনন্য এবং কৌতুহলোদ্দীপক প্রানী (এখনই নাম বলবো না ) আছে যেটা সারা পৃথিবীতে তার জীব গোত্রের একমাত্র অবশিষ্ট সদস্য । এই প্রানীটাকে দেখার পর কিছুক্ষন হা করে তাকিয়েছিলাম। ওর উপর একটা প্রতিবেদন লেখার ইচ্ছা আছে।
নাহ, বেশির ভাগ পরিব্যক্তি নিরপেক্ষ; ক্ষতিকর নয়, লাভজনকও নয়।
Q: Doesn’t evolution depend on mutations and aren’t most mutations harmful?
A: No. Most mutations are neither harmful nor helpful.
That’s the short answer. The long answer is that mutations can be neutral (neither helpful nor harmful), strictly harmful, strictly helpful, or (and this is important) whether they are harmful or helpful depends on the environment. Most mutations are either neutral or their effect depends on the environment.
বিস্তারিত
@সৈকত চৌধুরী,
আমি এখানে সেটাই উল্লেখ করেছি । পরিস্কার ভাবে ধীরে ধীরে এবং ভেঙ্গে ভেঙ্গে আবার পড়লে :
প্রতিটা বাক্য লক্ষ্য করুন:
-বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জীনের বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি জীবের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যা প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য জীবের সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে
-আবার নাও করতে পারে ।
-শুধুমাত্র স্বল্পসংখ্যক পরিব্যক্তি একান্ত ‘ভাগ্যক্রমে’ (by chance) পরিবেশের এই নতুল চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।
এখানে একান্ত ‘ভাগ্যক্রমে’ (by chance) কথাটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন কেননা তা পরিবেশের অনুকূলতা বা প্রতিকূলতা এবং জীবদেহে অন্যন্য ফাংশনের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।
ভ্রুনে শুধুমাত্র একটা বিশেষ জীনের পরিব্যক্তি একটা নবজাত শিশুকে মানসিক বৈকল্য এনে দেয়ার জন্য যথেষ্ট যা তার বংশবিস্তারের ক্ষমতা অথবা মেটিংয়ের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে।
ল্যাবে আমরা জীন নিয়ে যে রকম খেলাধুলা করি সেটা দেখলে দার্শনিকেরা ল্যাবের চৌদ্দ সীমানায় ভয়ে আসতে চাইবে না। :))
আপনারা কি সবাই লেখালেখি কইরা টাকা পান? আমি পাইনা ক্যান? 🙁
এইবার সিরিয়াসঃ মুক্তমনার একজন সদস্য হিসেবে আজকেই সত্যিই গর্ব হচ্ছে। একমাত্র এই জায়গাতেই বোধহয় কথার চেয়ে কাজ সবচেয়ে বেশি হয়। এই যে, বাংলাদেশে আজকে এতো এতো মানুষ বিবর্তন পড়ে, বুঝে, আলোচনা করে এর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান এই মুক্তমনার অসাধারণ পরিশ্রমী কিছু মানুষের কল্যাণে। আমি অবশ্য এবার ডারউইনডের তোড়জোড় একটু পরে শুরু হওয়ায় ভেবেছি খুব বেশি লেখা হয়তো আসবেনা। কিন্তু ব্লগে ঢুকে রীতিমতো টাশকি। মুক্তমনারা নিজেদের নাম ধরে রেখেছে।
ওহ উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। লেখা বেশ ভালো হচ্ছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
@রায়হান আবীর,
এই দুঃখ শুধু তোমার একার নারে ভাই, আমারও। অভির সাথে কোনো যৌথ কারবারে গেলেই আমূল ঠকার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ওর বিদেশী চেহারা দেখে মোসাদের বিদেশীগুলা শুধু ওর সাথেই কয়। বাঙালি চেহারার কাউরে পাত্তাই দেয় না তারা। টাকা-পয়সার সব লেনদেন ওর মাধ্যমেই হয়। 🙁
আমি নিশ্চিত যে, সংশপ্তকের চেহারাতেও অভির মতই বিদেশী বিদেশী একটা ভাবসাব আছে। 🙂
@ফরিদ ভাই,
এ যাত্রা আমি অটোগ্রাফ দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছি :))
@ফরিদ আহমেদ, আমার একটা অনুকল্প আছে অভিদের এরকম চাইনিজ চাইনিজ চেহারার পিছনে। Y ক্রমোজোম টেস্ট করলেই এর রহস্য ধরা পড়বে। আমার মতে সেই মধ্যযুগে চেঙ্গিস খানদের ভারত মহাদেশব্যাপি জোরপূর্বক বংশাণু ছড়াতে ছড়াতে যাওয়ার সাক্ষাৎ প্রমাণ এটা :-s । সাম্প্রতিক একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে চেঙ্গিস খান এবং তাদের বংশধরের যে সব জায়গায় রাজত্ব করেছে বা রেপ করার সুযোগ পেয়েছে সেখানে একটা একটা বিশেষ Y ক্রমোজোমের সংখ্যা অত্যন্ত বেশী, জনসংখ্যার প্রায় ৮%। এই ক্রমোজোমটির এভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্যাটার্নের গবেষণা এবং বিশ্লেষণগুলো চেঙ্গিস খানের রাজত্বের সময়সীমার দিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করে।
@বন্যাপা,
আজকে মনে হয় তিন তালাক খেয়ে যাবেন। গৃহহীন হলে আমার বাসায় চলে আইসেন :))
@রায়হান আবীর, কী মুশকিল :-Y ! একটা বৈজ্ঞানিক হাইপথিসিস দিলাম, যেটাকে আবার আজকের যুগে হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখার উপায় আছে, তার জন্য এরকম একটা মধ্যযুগীয় বর্বর থ্রেট শুনতে হল? মুক্তমনায় বিজ্ঞানমনষ্কতার এই অবস্থা?
@ফরিদ আহমেদ,
আমার ক্ষেত্রে আপনার ধারণা সত্যি। শুধু চেহারা নয় চোখ, নাক , চুলের গঠন, কন্ঠস্বর এবং আচরণও। তবে এটার মূলে আছে আমার R1a1a গোত্রের Y ক্রোমোজম যার সাথে গ্রীসের মেসিডোনিয়ান অঞ্চলের অধিবাসীদের সাদৃশ্য বেশী। সুদীর্ঘকাল অনুকূল পরিবেশে ( এবং গ্রীক জলপাই তেলে রান্না) বসবাসও এক্ষেত্রে সাহায্যকারী হতে পারে। 🙂
@রায়হান আবীর,
ছায়াছবির স্ক্রীপ্ট লিখতে পারবেন ? আমি কোন বই না সিরিয়াসলি চলচিত্র নির্মানে ইচ্ছুক । চিত্র এবং সংগীত পরিচালনা আমার নিজের। ছবিটা লন্ডন থেকে মুক্তি দেওয়াবো যাতে বাংলাদেশের এফডিসি বাগড়া না দিতে পারে। আর দিলেও এই পাইরেসীর যুগে কোন সমস্যা হবে না। কি বলেন ? (@)
@সংশপ্তক,
এহে দিলেন তো বিপদে ফেলে। আমার আবার সৃজনশীলনতা ঋণাত্মক দিকে ঝোঁকা। তবে উড়ো কথায় শুনেছি আমাদের বন্যাপা নাকি মাঝে সাঝেই কবিতা-টবিতা লেখেন; তাকে বলে দেখতে পারেন :))
@ সংশপ্তক, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই অনেকদিন ধরে। বিবর্তন কিছুটা বুঝলেও জেনেটিক্সের কিছুই তেমন বুঝি না আমি। একটা কথা প্রায়ই ভাবি, মা বাবা সাদা এবং কালো হলে বাচ্চাগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝামঝি ট্যান টাইপের গায়ের রঙ এর হয় কেন? জিন তো জানতাম মিক্স হয় না, তাহলে সেই হিসেবে তো ছেলে মেয়ে হয় সাদা না হলে কালো হওয়া উচিত। মাঝামাঝি হয় কীভাবে?
@ফাহিম রেজা,
গায়ের রংটা একটা পলিজেনিক ফেনোটাইপ কারন এই বিশেষ ফেনোটাইপটা একাধিক ধরনের জীন জুটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যাদের অবস্হান পৃথক ক্রোমোজমে এবং এরা পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র । পলিজেনিক ফেনোটাইপে জীন সমষ্টিদের আচরন খুবই পরিসাংখ্যিকভাবে অনিয়মিত। দুজন কালো বাবা মার সন্তানও পুরোপুরি তাদের মা বাবার গায়ের রংটা পায় না, কিছুটা ভিন্ন হয়। সাদাদের ক্ষেত্রেও তাই। এ ব্যপারে ভবিষ্যতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।
ভালো একটা সিরিজ হবে আশা করছি। লেখার স্টাইলটা ভালো্, বুঝতে সুবিধা হচ্ছে।
@ইরতিশাদ,
আপনারা বুঝতে পারলেই আমি আমার পরিশ্রম সার্থক মনে করবো। ধন্যবাদ।
চমৎকার। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) তো সব সময় ঘটছেই , নয় কি? তাহলে জীনের এই পুল ফ্রিকোয়েন্সী সাধারনত অত্যন্ত স্থিতিশীল কিভাবে হয়?
@ফারুক,
ভালো প্রশ্ন।এখানে জীন পুল ফ্রিকোয়েন্সী বলতে একটা সম্পূর্ন জনসমষ্টির জেনোটাইপকে বোঝায় যা এক প্রজন্ম থেকে আরেকটা প্রজন্মে ঐ জেনোটাইপটা বহন করে। শুধুমাত্র বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি সরাসরি প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। কারন প্রাকৃতিক নির্বাচন তখনই ঘটে যখন :
যেসব জীবে অনুকূল পরিব্যক্তি ঘটে তারা ক্ষতিকর পরিব্যক্তির শিকার জীবের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশী বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয় যার ফলে তারা এক পর্যায়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয় যা ধারাবাহিকভাবে এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় যখন এই সবল জনগোষ্ঠী দ্বারা ক্ষতিকর পরিব্যক্তির শিকার জনগোষ্ঠী প্রতিস্থাপিত হয়।
এছাড়া জীনপুলের স্হিতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে , ‘হার্ডি-ভাইনবের্গ ভারসাম্য মডেল ‘ কাজ করবে, p² + 2pq + q² = 1। এখানে p প্রবল এবং q দুর্বল জীন পুল প্রতিনিধিত্ব করছে।
অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে। বিবর্তনের একেবারে মূল বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বারবার আলোচনা করা প্রয়োজন।তা না হলে মুক্তমনায় নতুন এসেছে এমন কেও বিবর্তন নিয়ে যুক্তিতর্ক দেখার সুযোগ পাবে না। সেদিক থেকে দেখলে আপনার লেখাটি অনেকের তৃষ্ণা মেটাবে বলে মনে করি।
চমৎকার লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনি তো দেখি ডুমুরের ফুল হয়ে গেলেন ? বিষয়টা কি? (@)
@সংশপ্তক,
লাব্বাইক। :))
লেখাটা বেশ সহজ ও সাবলীল।
বছর তিনেক আগে অনেক ঢাক ঢোল শুনে ডারউনের সেই বিশ্ববিখ্যাত বইটা কিনলাম। আজ পর্যন্ত মাত্র ৩০ পাতা পড়া হয়েছে। বইটা এখনও শেলফে আঁটকা আছে। আর কোনদিন হাতে আসবে কি না জানিনা।
যে যাই বলুক, ডারউনের লিখার ধরণ সহজ নয়। মনে হচ্ছিল ডারউইন বইটা লিখেছিলেন শুধুমাত্র তাদেরই জন্যে যাদের মাথার ঘিলু উনার মত–আমাদের মত অনুর্বর মস্তিষকের জন্যে নয়। উনার ইংরাজিও বড়ই খটামটা।
যাই হোক, আপনার এই লেখায় যা শিখলাম তা ডারউনের বই থেকে অনেক সহজে ও অল্প সময়ে।
সহজ ভাষায় এই জটিল পদ্ধতির বাখ্যা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@আবুল কাশেম,আমি অরিজিন অব স্পিসিজ দু’বার পড়েছি। ভিকটোরীয় ইংরেজিটা কোনভাবে হজম করতে পারলে লেখার মূলভাবটা বুঝতে আর সমস্যা হয় না। তবে ভূতত্ত্বের অংশগুলো বোঝা বেশ কঠিন।
@আবুল কাশেম,
সহজ করে কঠিন জিনিষ ব্যাখ্যা করাটা আমিও বেশী দিন আগে রপ্ত করিনি। অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে এখনও শিখছি যা মরন পর্যন্ত যেন চলে সেটাই কামনা। আপনাদের উৎসাহ আমার মনোসংযোগের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ন। ধন্যবাদ।
জীবের বিবর্তন মানে জীবের কোষের বিবর্তন ,জেনেটিক্সের পরিবর্তন। বিবর্তন এখন একান্তই জীববিজ্ঞানের এলাকা। 🙂
@সংশপ্তক,
সেটা জানি। কিন্তু আমি যে কাঁচা, সেটাও একটা ফ্যাক্ট। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
*জানি
শুরুটা বেশ হল!
নামটা পড়ে আমার মনে হয়েছে ক্রসফায়ারকে বিবর্তনগত মনোবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা হবে। পড়তে গিয়ে মনে হল ক্রসফায়ার নামক মানবতাবিরোধী শব্দটার অনুপযুক্ত প্রয়োগ হল। 🙁
সাতটার সবগুলো না যেকোন একটি?
বিবর্তনে আমি বহুত কাঁচা। আমাকে লিখতে অনুরোধ করা চিঠিগুলো লজ্জা লজ্জা চোখে দেখেছি। বিবর্তন দিবসে লিখতে তো আমারও ইচ্ছে করে। কিন্তু আগে শেখাটাই তো ভালমত হল না। কচিকাঁচা লেভেলের প্রশ্ন করবো। 🙂
পরিব্যক্তি কেন ও কিভাবে ঘটে?
কথাটা
কথাটার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে। অ্যালগরিদম তো সংজ্ঞানুসারে সুসংহত প্রক্রিয়া। আর অ্যালগরিদম হল গণনাযোগ্য। ফলে দাবী মতে বিবর্তনও গণনাযোগ্য। আর তার জন্যে তাকে সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া না হলে তো চলবে না। এখানে সুপরিকল্পিত কথাটার মানে আমি এমন ধরি নি যে এর পেছনে কোন পরিকল্পনাকারী আছে। আপনি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা অবশ্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আমরা উদ্দেশ্য আরোপ করতে পারি, নাকি? যেমন মহাবিশ্বের উদ্দেশ্য যেমন বলা যায় এনট্রপি বৃদ্ধি করা, সেরকম কোন উদ্দেশ্য কি বিবর্তন প্রক্রিয়ার উপর আরোপ করা যায়?
আমার কাছে সৃষ্টিতত্ত্বের দাবীর এই প্রক্রিয়াটা বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে। কি ধরনের যুক্তির উপর ভিত্তি করে ত্রুটিকে সৃষ্টিতত্ত্বের জন্যে সমস্যাজনক দেখানো হবে জানতে ইচ্ছে করছে। ওরা তো আগেই বলে নিয়েছে যে
তার ওপর আশংকা করছি ত্রুটির উপর ভিত্তি করে দেয়া যুক্তিগুলো হবে ঘটে যাওয়ার পরে দেয়া ব্যাখ্যামূলক। ভবিষ্যত পর্যবেক্ষণের পূর্বাভাসমূলক নয়। বৈজ্ঞানিক আর্গুমেন্ট হিসেবে সেটা বেশ দুর্বল হবে।
তবে আমার মতে সৃষ্টিতত্ত্বকে নাকচ করার জন্যে বিবর্তনকে আনয়নেরই প্রয়োজন নেই। শুধু এটা বলাই যথেষ্ট যে সৃষ্টিতত্ত্ব যেহেতু অনাগত পর্যবেক্ষণের উপর পূর্বাভাস তৈরি করতে পারে না, এটা যাচাইঅযোগ্য ও অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। অর্থাৎ এটা বিবেচনার টেবিলেই নেই।
বিবর্তনের পূর্বাভাসযোগ্যতা নিয়ে একটা সেকশান রাখলে খুব আনন্দিত হতাম। এটা নিয়ে আমার কাছে এখনো খুব ভালো ডেটাবেইজ তৈরি হয় নি।
লেখার জন্যে আবারও ধন্যবাদ!
@রূপম (ধ্রুব), algorithm নিয়ে আমারও একই রকম প্রশ্ন ছিল। Algorithm প্রক্রিয়ার ইনপুট র্যানডম হলেও এর ফলাফল তো সুনির্ধারিত হওয়া উচিত। আপনি গুন করার জন্য ইচ্ছেমত সংখ্যা নির্বাচন করতে পারেন, তবে গুনের ফলাফল কিন্তু predict করা সম্ভব।
@পৃথিবী,
একটা বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি ঘটার পর , একটা জীবকে বেঁচে থাকার জন্য অনেকগুলো বহিরাগত বস্তু এবং বিষয়ের উপর নির্ভর করতে হয় যার উপরে তাদের নিয়ন্ত্রন নেই , যেমন জলবায়ু , প্রতিকূল পরিবেশ , শত্রু র আক্রমন , অনুজীবের আক্রমন ইত্যদি । এই জিনিষগুলো ধ্রুব নয় , বরং অতি পরিবর্তনশীল। এখন এই জীবটা বাঁচবে কিনা এটা বলা বোকামী। এ কারনে ধ্রুবতা নির্ভর পূর্বাভাস বিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ করবে না।একটা সাইক্লোনকে মাত্র ১ সপ্তাহের বেশী আগে পূর্বাভাস দেয়া যায় না , কিন্তু ঝড়ের পর এর কারন থারমোডাইনামিক্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এটাকে রেট্রোডিকশন বলা হয়।
তারপরেও , এন্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া অথবা কীটনাশক প্রতিরোধী কীটের পূর্বাভাসের জন্য আলাদা রেজিস্ট্যান্স ম্যানেজমেন্ট শাখা আছে। জীবের কৃত্রিম নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে Quantitative Trait Loci (QTLs) ব্যবহার করা হয়।
আগ্রহোদ্দীপক একটা সিরিজ হতে চলেছে। মোসাদ বেশ ভালই পেমেন্ট করেছে আপনাকে বোঝা যাচ্ছে। 🙂
সিরিজের নামকরণটা কি একটু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে নাকি? হঠাৎ করে শুনলে কেন যেন মনে হচ্ছে যে কেউ একজন বিবর্তনের বিরুদ্ধে লিখছে।
@ফরিদ আহমেদ,
ক্রসফায়ার মানে আসলে বিবদমান একাধিক পক্ষের গোলাগুলির মাঝে আটকা পড়াটাও বোঝায় (@)
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি আর বন্যাদি যেভাবে স্ক্রীনসটের যোগান দিচ্ছেন তাতে আমার সন্দেহ হচ্ছে আপনারা আবার স্ক্রীনসট ব্যবসায়ী সদা-প্রলাপীদের কাছ থেকে পেমেন্ট পাচ্ছেন কি না :-s :-s ।
সংশপ্তক, বিবর্তন নিয়ে এরকম একটা অরিজিনাল সিরিজ শুরু করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এত জটিল একটা বিষয় এত অনায়াসে বিশ্লেষণ করে গেছেন যে একটানেই পড়ে ফেললাম। শেষ প্যারাটা পড়ে পরের পর্বের জন্য অধীরতা শুধু বাড়লো।
ইয়ে মানে, মোসাদের অনুরোধ (মানে নির্দেশ) রেখে পরের বই মেলায় একখানা বই বের করার টার্গেট করে ফেলবেন নাকি …
কতগুলো প্রশ্ন ছিল, পরে করছি।
@বন্যা আহমেদ,
আমি আসলে কখনই টার্গেট নিয়ে তেমন একটা ভাবিনা । শুধু নিজের কনসেন্ট্রেইশনটা ধরে রাখার চেষ্টা করি। পরে দেখা যায় ঠিকই লক্ষ্যে পৌছে গেছি , অনেকটাই বোলিং খেলার মত 🙂
@সংশপ্তক, ভাই আপনাদের এক বিবর্তন বাদীকে প্রশ্ন করেছিলাম – প্রথম প্রাণের উদ্ভব হল কিভাবে/? তারপর থেকে তাকে আর পাচ্ছিনা। হয়ত ব্যস্ত। আপনাকেও করি দুটি প্রশ্ন -১। পৃথিবীতে পানি এল কি করে? ২।প্রথম প্রাণ কিভাবে তৈরি হল( সৃষ্টি নয় কিন্তু)?। জবাব দিবেন আশা করি।
@মরুঝড়,
ভাল প্রশ্ন করেছেন সাইমুম সাহেব। আমি আপনাকে বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো । পৃথিবী পানি কি করে এল এই প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর নিহিত আছে মহাবিশ্বে পানির কি করে উদ্ভব হয়েছে সেখানে। আমাদের পৃথিবী মহাবিশ্বেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাইড্রোজেন মহাবিশ্বের প্রাথমিক নির্মান উপাদান। অক্সিজেন তৈরী হয় নক্ষত্রের ভিতরের পারমানবিক প্রতিক্রিয়ায়। মহাবিশ্বের বেশীরভাগ অক্সিজেনই পাওয়া যায় পানির অবস্হায় এবং সেখানে পানির ছড়াছড়ি। তবে , প্রশ্ন করতে পারেন মহাবিশ্বের অন্য স্হানের চাইতে পৃথিবীতে পানির পরিমান এত বেশ কেন দেখা যায় এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী ? এর অনেক হাইপোথিসিস আছে কিন্ত অকাট্য বৈজ্ঞানিক প্রমান সহ এ বিষয়ের উপর কোন তত্ত্ব এখনও নেই। গবেষণা চলছে , ভবিষ্যতে জানা যাবে।
প্রথম প্রানের উদ্ভব ঠিক কিভাবে হয়েছে সে ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক মহল এখনও একমত হতে পারেন নি যেমন প্রাণ বলতে যে আসলে কি বোঝায় সে বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হয়নি। প্রানের উদ্ভবের ইতিহাস জানা সম্ভব নয় যদি না এটা বৈজ্ঞানিকভাবে স্হির করা সম্ভব না হয় যে , জীব কি এবং জড় কি ? প্রাইয়ন , ভাইরয়েড কিংবা ভাইরাস অনেক কিছুই পারে, জীবের জীবনচক্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে যা কথিত জীবেরা পারে না এবং এরা কেউই এখন পর্যন্ত প্রচলিত অর্থে জীব নয় তাই প্রানের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণেই আমাদের এখন মনযোগ দেয়া দরকার।