প্রচলিত ধর্ম আর জাত-পাতে আমার অরুচি বা অনীহা অনেকদিনের; সেই হবু হবু করেও না হওয়া প্রথম প্রেমে ধরা খাওয়ার পর থেকেই। স্কুল-কলেজে বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেও দেখেছি জাত-পাত নিয়ে নাক উঁচু মনোভাব। অনেক সময় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে অনেক অপ্রিয় প্রসঙ্গও চলে আসত। তবুও নিজেকে বড় বলে মনে করার মনোভাব ঘুচে না সে যতই শিক্ষা-দীক্ষায় শিক্ষিত-দীক্ষিত হোক না কেন। আবার অনেকে আসল কথা জেনেও মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে মিথ্যে অহংকারের বোঝা বয়ে নিজের কাছেই নিজের মাথাটা নিচু করে চলেন। অন্যকে ছোটো করতে গিয়ে নিজেকেই ছোটো করেন নিজের ইতিহাস বৃত্তান্ত না জানার কারণে।
কলেজে ইতিহাস পাঠ্য ছিলো না। স্কুলে ছিল। বরাবরই তারিখ-সন ভুল করতাম। সুতরাং নাম্বারও কম পাওয়াতে ইতিহাসের প্রতি একটা বিরাগ তৈরী হয়ে গিয়েছিল। মজা পেতে শুরু করলাম যখন কলেজের শেষের দিকে শরদিন্দুর ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসগুলো হাতে আসতে আরম্ভ করলো। সেই শুরু।
শুরু হলো হাজারো প্রশ্নের অনুসন্ধান। হাতে পেতে শুরু করলাম অনেক রেফারেন্স। সাথে যোগ হলো উইকি। (উইকি নির্ভুল নয়, কিন্তু যখন রেফারেন্স সহ তথ্য হাজির করে তখন জেনে নিতে সমস্যা হয় না।) অনেকদিন ধরে শুরু করেছিলাম নীহাররঞ্জন রায়ের “বাঙালীর ইতিহাস – আদিপর্ব”। ঘুরে ফিরে বর্ণ বিন্যাস আর শ্রেণী বিন্যাসেই মনটা বেশী ছুটে যায়। মৌলিক রচনা নয়, বিভিন্ন উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ। ঘুরে ফিরে আসে বাঙালীদের বর্ণ-উপবর্ণ-শ্রেণী-জাত-পাত-বংশ পরিচয়। সেখানে থেকে আমার কিছু নেয়া নোট–
বর্ণপ্রথাগুলো ভারতীয় সমাজ বিন্যাসের ভিত্তি। গড়ে উঠছিল মানুষের কর্ম অনুসারে। কিন্তু কালক্রমে অনেকেই অন্যকে শোষণ বা ঘৃণা করার একটা উপলক্ষ তৈরী করে নিয়েছেন।
ভারতে একমাত্র বাঙালীরাই সবচে বড় সংকর বা মিশ্র জাত। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শুদ্র – এই চতুর্বর্ণের কথা সবাই জানি। বাঙালীদের মধ্য আগে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ছিল না। আবার বাঙলার তথাকথির ‘ছত্রিশ জাত’ যা ভারতের আর কোথাও নাই। মাছ-মাংস খাওয়া ব্রাহ্মণও বাঙালা ছাড়া ভারতের আর কোথাও খুব বেশী নাই। বৃহদ্ধর্ম ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বাঙলার আদিপর্বের এই বর্ণ বিন্যাসের পরচয় মেলে।
বর্তমান বর্ণ ব্যবস্থার সূত্রপাতের পরিচয় পাওয়া যায় বল্লাল সেনের আমলে রচিত বল্লাল-চরিত গ্রন্থে। কাহিনী সংক্ষেপে এরকম–
অন্য রাজার সাথে যুদ্ধ করার জন্য বল্লাল সেন দেশের এক ধনী বনিকের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার করেন। যুদ্ধে বার বার হেরে গেলে আরো টাকা চান। কিন্তু বনিক এবার শর্ত জুড়ে দিলে বল্লাল সেন রাগ হয়ে বনিকদের টাকা-পয়সা লুট করে অত্যাচার করেন। পরে কোনো এক অনুষ্ঠানে রাজা সবাইকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলে তারা “সৎশুদ্র” (সৎশুদ্র/অসৎশুদ্রের ব্যাপারটা পরে বলছি) রাজার সাথে এক আসনে বসে খেতে অস্বীকার করেন। রাজা তখন এদের একঘরে করে শুদ্রের স্তরে নামিয়ে দেন এবং নিচু সমাজের টাকাওয়ালা অনেককে সৎশুদ্রে উন্নিত করেন। এররকম ভাবেই জাতের প্রমোশন-ডিমোশনের খেলা চলতে থাকে।
ব্রাহ্মণেরা বাঙলার বাইরে থেকে কিভাবে এসেছেন – সেটা নিয়ে দু-চারটে কাহিনী আছে। কিছু এসেছেন ভারতের উত্তর-পশ্চিম থেকে তাড়া খেয়ে। আবার রাজারা দেশের কাজের জন্য কিছু এনেছেন দক্ষিণ ভারত থেকে। বাংলাদেশে কিছু ব্রাহ্মণদের গায়ের রঙ ফর্সা আবার কারো কালো – ব্যাপারটা এ থেকে বোঝা যায়।
বাঙলার বর্ণবিভাগের পরবর্তী ধাপটি হয়েছে শিক্ষা-দীক্ষা-বুদ্ধিতে অগ্রসর এই সব ব্রাহ্মণদের হাতে। বাঙলায় ব্রাহ্মণ বাদে আর যত বর্ণ আছে সবই সংকর বর্ণ, চার বর্ণের যথেচ্ছ পারস্পরিক যৌনমিলনে উৎপন্ন মিশ্রবর্ণ এবং এরা সকলেই শুদ্রবর্ণের অন্তর্গত। একটা চাইনীজকে যত সহজে চেনা যায়, বাঙালীদের চেনা এত সহজ নয়। দেশের বাইরে, আপনি কি বাঙালী – এই প্রশ্নটা যত বেশী শোনা যায় আর কোনো জাতের লোক এটা শোনে কিনা সন্দেহ। এমন ভাবে মিক্সড হয়েছে যে চেনা বড় দায়!বাঙালীদের মধ্য ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের উল্লেখ নাই।
ব্রাহ্মণেরা এই সমস্ত শুদ্র সংকর উপবর্ণগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে সমাজে যার যার স্থান ও কাজ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। বাঙলায় জাত সংখ্যা বলতে আজও আমরা বলি ছত্রিশ জাত। পরে অবশ্য আরো পাঁচটি উপবর্ণ যোগ হয়েছে।
উত্তম-সংকর পর্যায়ের ২০টি উপবর্ণ:
১. করণ – এরা লেখক ও পুস্তককর্মদক্ষ এবং সৎশুদ্র বলে পরিগণিত।
২. অম্বষ্ঠ – এদের বৃত্তি চিকিৎসক ও আয়ুর্বেদচর্চা, বৈদ্য বলে পরিচিত। ঔষধ তৈরী করতে হয় বলে বৃত্তি বৈশ্যের কিন্তু ধর্মকর্মানুষ্ঠানের ব্যাপারে শুদ্র।
৩. উগ্র – বৃত্তি ক্ষত্রিয়ের, ধর্ম যুদ্ধবিদ্যা।
৪. মাগধ – যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় বৃত্তি হয়েছিল সূত বা চারণের এবং সংবাদবাহীর।
৫. তন্ত্রবায় – তাঁতী।
৬. গান্ধিক বনিক – বৃত্তি গন্ধদ্রব্য বিক্রয়; বর্তমানে গন্ধবনিক।
৭. নাপিত।
৮. গোপ (লেখক)।
৯. কর্মকার (কামার)।
১০. তৈলিক বা তৌলিক – (গুবাক-ব্যবসায়ী)।
১১. কুম্ভকার (কুমোর)।
১২. কাংসকার (কাঁসারী)।
১৩. শাঙ্খিক বা শঙ্খকার (শাঁখারী)।
১৪. দাস – বৃত্তি কৃষিকাজ, চাষী।
১৫. বারজীবী (বারুই) – পানের বরজ ও পান উৎপাদন বৃত্তি।
১৬. মোদক (ময়রা)।
১৭. মালাকার।
১৮. সূত – (বৃত্তি উল্লেখ নাই কিন্তু অনুমান এরা চারণ-গায়ক)।
১৯. রাজপুত্র – (বৃত্তি অনুল্লিখিত; রাজপুত?)
২০. তাম্বলী (তামলী) – পানবিক্রেতা।
মধ্যম-সংকর পর্যায়ে ১২টি উপবর্ণ :
২১. তক্ষণ – খোদাইকর।
২২. রজক – (ধোপা)।
২৩. স্বর্ণকার – (সোনার অলংকার ইত্যাদি প্রস্তুতকারক)।
২৪. সুবর্ণবনিক – সোনা ব্যবসায়ী।
২৫. আভীর (আহীর) – (গোয়ালা, গোরক্ষক)।
২৬. তৈলকার – (তেলী)।
২৭. ধীবর – (মৎস্যব্যবসায়ী)।
২৮. শৌণ্ডিক – (শুঁড়ি)।
২৯. নট – বৃত্তি নাচ, খেলা, বাজি দেখানো।
৩০. শাবাক, শাবক, শারক, শাবার (?) – (বৌদ্ধ শ্রাবকদের বংশধর বলে মনে করা হয়)।
৩১. শেখর (?)
৩২. জালিক (জেলে, জালিয়া)।
অধম-সংকর বা অন্ত্যজ:
এ পর্যায়ে ৯টি উপবর্ণ। এরা বর্ণাশ্রম বহির্ভূত অর্থাত এরা অস্পৃশ্য।
৩৩. মলেগ্রহী (বঙ্গবাসী, সং: মলেগৃহি)।
৩৪. কুড়ব (?)।
৩৫. চণ্ডাল (চাঁড়াল)।
৩৬. বরুড় (বাউড়ী?)
৩৭. তক্ষ (তক্ষণকার?)।
৩৮. চর্মকার (চামার)।
৩৯. ঘট্টজীবী (খেয়াপারাপারের মাঝি)।
৪০. ডোলাবাহী – ডুলি-বেহারা, বর্তমানে দুলিয়া বা দুলে।
৪১. মল্ল (বর্তমানে মালো)।
ম্লেচ্ছ :
এই ৪১টি জাত ছাড়া কিছু দেশী বা ভিনদেশী আদিবাসিদের নাম পাওয়া যায়। যেমন – পুক্কশ, পুলিন্দ, খস, থর, কম্বোজ, যবন, সুহ্ম, শবর ইত্যাদি। স্থানীয় বর্ণ ব্যবস্থার মধ্যে এদের কোনো স্থান ছিল না।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে সমস্ত সংকর বা মিশ্র উপবর্ণগুলিকে সৎ ও অসৎ (উচ্চ ও নিম্ন) এই দুই পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।
সৎশুদ্র:
১. করণ
২. অম্বষ্ঠ
৩. বৈদ্য
৪. গোপ
৫. নাপিত
৬. ভিল্ল (আদিবাসী কোম; কিভাবে সৎশদ্র পর্যায়ে পরিগণিত হলেন, বলা কঠিন)
৭. মোদক
৮. কুবর
৯. তাম্বুলী
১০. বনিক
১১. মালাকার
১২. কর্মকার
১৩. শঙ্খকার
১৪. কুবিন্দক (তন্তুবায়)
১৫. কুম্ভকার
১৬. কাংসকার
১৭. সূত্রধার
১৮. চিত্রকার (পটুয়া)
১৯. স্বর্ণকার
স্বর্ণকার ও অন্যান্য বনিকরা সোনাচুরির অপরাধে ব্রাহ্মণদের অভিশাপে পতিত হয়ে অসৎশুদ্রে নেমে যান)।
সূত্রধর ও চিত্রকর – এরা কর্তব্যপালনে অবহেলা করায় অপরাধে ব্রাহ্মণদের অভিশাপে পতিত হয়ে অসৎশুদ্রে নেমে যান।
অসৎশদ্র:
স্বর্ণকার, (সুবর্ণ) বনিক, সূত্রধার, চিত্রকার।
২০. অট্টালিকাকার
২১. কোটক (ঘরবাড়ি তৈরীর মিস্ত্রী)
২২. তীবর
২৩. তৈলকার
২৪. লেট
২৫. মল্ল
২৬. চর্মকার
২৭. শুঁড়ি
২৮. পৌণ্ড্রক (পোদ?)
২৯. কসাই
৩০. রাজপুত্র (পরে রাউত?)
৩১. কৈবর্ত (কলিযুগের ধীবর)
৩২. রজক
৩৩. কৌয়ালী
৩৪. গঙ্গাপুত্র (লেট-তীবরের বর্ণ-সংকর সন্তান)
৩৫. যুঙ্গি (যুগী?)
৩৬. আগরী (উগ্র, বর্তমানে আগুরী)
অসৎশদ্রের নিম্নপর্যায়ে যাদের গণনা করা হয়-
ব্যাধ্ম ভড়, কাপালী, কোল (আদিবাসী কোম), কোঞ্চ (কোচ, আদিবাসী কোম), হড্ডি (হাড়ি), ডোম, জোলা, বাগতীত (বাগদী), শরাক, ব্যালগ্রাহী, চণ্ডাল ইত্যাদি।
এত জাত-পাতের মধ্যেও লালনের মত মানুষও তার জাত খুঁজে পেলনা, আর আমরা চুনোপুঁটিরা জাত্যাভিমানে আকাশে উইড়া উইড়া হাঁটি।
—————–
আলুব্লগে আগে প্রকাশিত।
—————–
প্রসঙ্গক্রমে শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসের একটা গানের কথা শেয়ার করছি…
———————–
(কথিত শূদ্রবর্ণের লোকেরা মন্দিরের প্রণামীর বাক্সে হাত দিয়ে টাকা ফেললেও প্রণামীর বাক্স বা মন্দির কোনোটাই অপবিত্র হয় না। এমন কি, সেই টাকায় ঠাকুর-দেবতার নৈবিদ্য কিনলেও পূজা অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু কোনো নিম্নবর্ণের ভক্ত যদি পূজারীকে ছুঁয়ে দেয় তখন পূজারীকে আবার স্নান করে অথবা গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ হয়ে তবে পূজায় বসতে হয়। এমনি একটি বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটির উৎপত্তি।)
বর্ণভেদের মর্মবাণী শোনো বলি তথ্য তার
সাহা-কুণ্ডু-ব্রাহ্মণ-মুচি কোন্ বর্ণে জন্ম কাহার।
‘বৃ’-ধাতু হইতে সৃষ্টি বর্ণ কথাটিরে ভাই
‘বৃ’ অর্থ বরণ করা শোনো তোমাদের জানাই
যে কর্ম যে বরণ করে
সেজনই সে বর্ণ ধরে
শুদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে
শাস্ত্রে পাই তা দেখিবার।।
“চাতুরবর্ণং ময়াসৃষ্টং গুণকর্ম বিভাগশঃ”
গীতার পাতায় লেখা আছে খুলে একবার পড়ে এসো
তোমরা গীতার পাতা নাহি পড়ে
পিতার পরিচয়টি ধরে
রক্তের দাবি শক্ত করে
কেউ ধারো না কারো ধার।।
কর্মগুণে বর্ণ পাল্টায় শাস্ত্রের পাতায় দেখতে পাই
ক্ষত্রিয় সে বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণ হয়েছিলো তাই
শূদ্র নাকি ছিলো শুনি
কক্ষিবত্ আর ঔলষমুনি
হলো তারা হয়ে গুণী
ব্রাহ্মণ বর্ণে একাকার।।
তবে শুদ্র গুণী হলেও কেনো বৈশ্যতে ঘৃণা করে
দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত হলেও ব্রাহ্মণে নেয় না ঘরে
বর্ণ-জাতি এক করেছে
ওই বেদখানা কে লিখেছে
নকুল বলে আশা আছে
জাতিভেদ জানিবার।।
——————————
এত জাত-পাতের মধ্যেও লালনের মত মানুষও তার জাত খুঁজে পেলনা, আর আমরা চুনোপুঁটিরা জাত্যাভিমানে আকাশে উইড়া উইড়া হাঁটি।
এত কিছুর পরও কিন্তু জাত-পাতের ব্যপারগুলো উঠে যায়নি। গত কালই তো একজন ব্রাহ্মনের সাথে ফেসবুকে চ্যাট করে বুঝলাম, এখনো কতটা পিছিয়ে আছি। ধর্ম এর কারণে এটা যে প্রকট হয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ধর্ম যতটা না জাত-পাতের ব্যাপার গুলোকে সহায়তা করেছে, তার চেয়ে বেশী করেছে মানুষের অহং বোধটা।
শ্রাবণ আকাশ,
লেখাটা বেশ ভাল লাগল!
নিজেদের শেকড়ের ইতিহাস জানা যায় এতে।
একবার প্যারিসে যেয়ে শুনতে হয়েছে আমি সুরিনামী নাকি?
বেশ মজা পেয়েছিলাম।
এর অবশ্য ঐতিহাসিক কারণ আছে, সুরিনামের ভারতীয়রা বেশীরভাগই ভারতের বিহার রাজ্যের, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কাছাকাছি।
তাই হয়ত মিল দেখেছে!
@লাইজু নাহার, প্রোপিকে ছবি থাকলে বুঝতে পারতাম ফরাসীদের ধারনা কতটা সত্য। তবে মনে মনে সুরিনামীদের সাথে আপনার চেহারাটা মিলিয়ে দেখলাম। 🙂
ধন্যবাদ আপনার তথ্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
খুব ভালো কাজ হয়েছে। এভাবেই লিখতে থাকুন। জাতিভেদের ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং জটিল। আপনি কিছুটা সহজবোধ্যভাবে তুলে ধরেছেন। খুবই ভালো প্রয়াস। এরকমই তথ্যমুলক লেখা চাই ভবিষ্যতে।
@রুশদি, এখানেআমার লেখালেখির কিছু নাই। পড়তে পড়তে নেয়া কিছু নোট শেয়ার করেছি মাত্র। তথ্যমূলক নোট অবশ্যই শেয়ার করার ইচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এযুগে আরেকটা জাত সৃষ্টি করতে হবে ব্লোপ (ব্লগার) ব্লোপরা বই ছাপিয়ে গোপে উন্নীত হবেন।
এতএত জাত খুঁজে পেলেন কেমনে? বাংলা উইকিতে একটা পেজ করে ফেলতে পারেন কিন্তু।
@তানভীরুল ইসলাম, বাংলা উইকি আমার একটা ব্যাক্তিগত সাইট (নাম বলা যাবে না 🙂 ) থেকে এমনিতেই অনেক কিছু কপি-পেষ্ট করে মেরে দিচ্ছে। তাই নিজ থেকে আর কষ্ট করতে হয় না 🙂
ব্লগের কল্যানে এখন অনেক নতুন নতুন জাতের সন্ধানই পাওয়া যায়। ছাগু, ভাদা, পাদা, আস্তিক, নাস্তিক- আরো কত কী! আপনার কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে- লিস্টটা সংগ্রহ করে লাগিয়ে দেব কিনা। 🙂
নতুন বাঙালির জাত নিয়ে আপনি নিজেওতো একটা পোস্ট দিতে পারেন। 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
জাত-পাত সব অতীত হয়ে গেছে।ভুল বললাম,সব অতীত হয়নি। দু’টো আছে।
১.যুক্তিবাদী
২.ভাববাদী।
অন্ততঃ মুক্তমনার সদস্যদের কাছে।
“গুবাক” কি?
(Y)
বাংগালি যে…
@লীনা রহমান,
গুবাক [ gubāka ] বি. সুপারি গাছ।
:-$
জাতপাতের লিস্টিগুলো সব দুনিয়া থেকে একবারে বিলুপ্ত হয়ে গেলেই ভালো হত। ঐটা শুধু ইতিহাস লেখার জন্য থাকুক।
বাঙ্গালীদের গায়ের বর্ণ তো মিষ্টি, সবাইকেই আমার সুন্দর লাগে। 🙂
@নীল রোদ্দুর, দেশের বাইরে অনেক দেশী ছেলে-মেয়ে বিদেশীদের বিয়ে করে। তখন কিছু মুরুব্বী তাদের “অভিজ্ঞতার আলোকে” কটাক্ষ করে বলেন- ঐ সাদা মূলাগুলোর মধ্যে কি পাইলি?!
তখন আমার একটা গানের লাইন মনে পড়ে- “এত সুন্দর পানি তবু পিপাষা না মেটে…”
দেশীদের জন্য একটা টান থাকেই, কিন্তু ফরিদ আহমেদ কেন যে বিপরীত পথে ঘুরে হাঁটা শুরু করেন, সেটাই বুঝতে পারলাম না 🙂
ওরে বাবা রে! এত বড় জাতের লিস্টি। দেখে তো ফিট হওয়ার উপক্রম হল।
@সুমিত দেবনাথ, ফিট হন আর যাই হন, হাওয়াও তো ভাসেন না, নাকি? 🙂
জাতপাত এর এত বর্ণিল ভেদাভেদ দেখেতো চমকে উঠলাম। 🙁
কথা সত্যি। বাঙালির একক কোনো দৈহিক বৈশিষ্ট্য নেই। আমার এক সহকর্মী ছিল। ছয়ফুটের উপরে লম্বা, গাত্রবর্ণ গৌর, চোখ ঘন নীল। বাংলাদেশ বিমানে এয়ারহোস্টেসরা তাঁকে বিদেশি ভেবে ইংরেজিতে কথা বলে সবসময়। তাঁর পরিবারের আর কেউই এরকম নয়। সবারই সাদামাটা বাঙালি চেহারা। কোনো এক দূর অতীতে তাঁর কোনো এক প্র-প্র-মাতামহীকে জোর করে শয্যাসঙ্গী করেছিল হয়তো কোনো পর্তুগীজ জলদস্যু। সেই জিনের ছাপ এসে পড়েছে এত বছর পরে তার মধ্যে। :))
তবে আমি কিন্তু বাঙালি চিনে ফেলি প্রথম দর্শনেই। হাজারো ভারতীয়ের ভিড়েও ভুল হয় না আমার কখনই। বাঙালিদের চেহারায় মলিনতার ছাপ মাখানো মায়া জড়ানো অসহায় একটা ভাব আছে। এটা দেখলেই বুঝে ফেলি যে, এই লোক বাঙালি না হয়েই যায় না। সাথে সাথেই অন্যদিকে ঘুরে বিপরীত পথে যাত্রা করি আমি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
:lotpot:
সেদিন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ক্লাসে বলছিলেন বাঙ্গালিদের কথা “এরা এক খানে বসে লেজ নাড়ছে তো নাড়ছেই…” :lotpot: আমরা আরেকদিন ম্যাক্সিম গোর্কির একটা গল্প নিয়ে আলোচনা করছিলাম স্যারের সাথে।ওখানে ডানকো বলে একটা চরিত্র থাকে যে নিজের বুক চিরে জ্বলন্ত হৃদয় বের করে সেই আলোতে পথ দেখিয়ে তার দলের মানুষদের অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসে, সবাই যখন খুশিতে হইচই করতে থাকে তখন ডানকো পড়ে যায় কিন্তু তার হৃদয় জ্বলতেই থাকে মাটিতে পড়ে। এটা দেখে দুজন লোক ভয় পেয়ে সেই জ্বলন্ত হৃদয়কে পা দিয়ে মাটিতে দলে দিল।স্যার বললেন, “এই হলো বাঙালি…” কথাটা দুঃখজনকভাবে সত্যি!
আমার অবাক লাগে রবীন্দ্রনাথ কোন চিপা দিয়ে বাঙালি ঘরে জন্মে গেছিলেন?? 😕
@লীনা রহমান,
রবি বাবু একা নয়— আরও অনেক আছে। অ – নে– ক। অ – নে– ক।
@গীতা দাস, জানি। তাৎক্ষণিকভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাই মনে পড়ল…
@ফরিদ আহমেদ,
পুরাটাই মনে হয় ভিটামিনের অভাবের জন্য।
হ্যাঁ বাঙালী দেখলে ১০০% না হলেও ৮০% চিনতে পারি। তবে বিদেশে বড় হওয়া অনেক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কিন্তু ঐ মায়া জড়ানো ভাবটা নেই। তখন সমস্যা হয় চিনতে। অনেকটা গায়ানিজদের মত লাগে। আর কিছু কিছু মেয়ে আছে পুর্তোরিকান বা ডোমেনিকান স্পানিশ বলে মনে হয়। এরা বিদেশী কালচার ফলো করতে যায় কিন্তু না পারে সাদাইয়াদের মতো হতে, না পারে কাল্লুদের মতো হতে। তখন মাঝামাঝি ঐ স্পানিশদের মতো হয়ে যায়।
গাত্রবর্ণে পর্তুগীজ জলদস্যুদের প্রভাবটার কিছু বর্ণনা পাই “কীর্তিহাটের কড়চায়”। এক্সসেপশন দেখলেই আপনার সেইরকম গল্পের কথা মনে পড়ে।
আমাদের এলাকার একটা ফ্যামিলি আছে- ফর্সা, চোখঘোলা, দেখতে অ্যারাবিয়ানদের মত। সেটা নিয়ে তাদের খুব গর্ব। যদিও আমি জানি পুরা বাঙালীজাতিটাই সংকর জাত তবুও এরকম কাউকে গর্ব ফলাতে দেখলেই আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে।
আপনার “বিপরীত পথে যাত্রা”র কী কোনো বিশেষ কারন আছে? 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
বাঙালি এমনই এক জাতি, ইহাকে দূর হইতে ভীষণ রকমের ভালবাসা যায়, কিন্তু কাছে আসিতে দিলেই প্রবল বিপদের সমূহ সম্ভাবনা থাকে। (এইখানে আমার বক্তব্যের সমর্থন হিসাবে লীনা রহমানের মন্তব্যকে রেফার করিব।) 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আরেহ একদম!!
দুদিন আগেও এ নিয়ে ভাবছিলাম। এখানে এক পিক আপে করে কয়েকজন নির্মান শ্রমিক যাচ্ছেন দেখেই বোঝা গেল সবাই বাঙালী। খেয়াল করে দেখলাম সবার চেহারাই দারুণ রকমের ভিন্ন। তারপরেও কী যেন এক অন্তমিল। দেখলেও বোঝা যায় এ আমার ভাই।
দারুণ কাজ করেছেন। জাত তালিকাটা এত লম্বা হতে পারে জানা ছিল না। চটজলদি রেফারেন্স হিসাবে তো খুবই ভালো। ফাঁকিবাজদের পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। 😀
@কাজী রহমান, এই জাতপাতের বিচার ছোটোবেলায় খুব ভুগিয়েছে। তথাকথিত উচ্চবর্ণের কেউ যখন অযথা জাত তুলে গালি দিত তখন মনে মনে খুব রাগ হলেও উত্তর জানা ছিল না। তখন যদি এসব জানা থাকত তো সবগুলোর মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারতাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ।