টমাস পেইনের পরে এবার ধ্রুপদী উদারপন্থার আরেকজন প্রতিনিধির লেখা উপস্থাপন করছি। ভদ্রলোকের নাম ফ্রেডরিক হায়েক। হায়েক বিংশ শতাব্দীতে মুক্ত বাজার অর্থনীতির সবচেয়ে খ্যাতিমান সমর্থকদের একজন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ হলেও জনমানসে হায়েকের পরিচিতি “দাসত্বের পথ” বইটির জন্য। এ বিতর্কিত বইয়ের মূল দাবি হল কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অবধারিত ভাবে tyranny-র জন্ম দেবে।
ষাটের দশকে লেখা Why I am not a conservative প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্ততর, ২ বা ৩ ভাগে প্রকাশ করে ফেলতে পারার কথা। প্রবন্ধের কিছু বিষয় ওই বিশেষ সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা যা এসময়ে প্রযোজ্য নয়, তবে তারপরও এ লেখাটি থেকে হায়েকের মূল দর্শনের একটি ভাল পরিচয় পাঠকের পাওয়ার কথা। হায়েকের এই লেখাটি শেষ হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দর্শনের কিছু লেখাও অনুবাদের ইচ্ছা আছে।
অনুবাদের ব্যাকরণ ও ভাষা সম্বন্ধে মতামত বিশেষভাবে কাম্য।
আমি কেন রক্ষণশীল নই ২
আমি কেন রক্ষণশীল নই ৩
“স্বাধীনতার অকৃত্রিম বন্ধু সর্বকালেই সীমিত। কাজেই যখন স্বাধীনতার জয় হয়েছে, তখন তা ঘটেছে সংখ্যালঘুদের অবদানে। যেহেতু স্বাধীনতাকামীরা সংখ্যায় কম, তাই বিজয় অর্জনের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন লক্ষ্যের শক্তির সাথে তাদের সহযোগিতা করতে হয়। এধরণের সহযোগিতা সবসময়ই বিপজ্জনক, কিছু ক্ষেত্রে সর্বনাশা, কারণ এই আপস বিপক্ষের হাতে তুলে দেয় বিরোধিতার যুক্তিযুক্ত কারণ।” — লর্ড অ্যাকটন[*]
১।
আজকের দিনে প্রগতিশীল বলে পরিচিত আন্দোলনগুলি ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ক্রমশ খর্ব করার পক্ষপাতী[১]। এমতাবস্থায় স্বাধীনতাপ্রেমীরা এই প্রবণতার বিরোধী হিসেবেই দাঁড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা করতে গিয়ে তারা প্রায়ই নিজেদের দেখতে পায় এমন একটি শক্তির সঙ্গী হিসেবে, যেটি কিনা মজ্জাগতভাবেই পরিবর্তন-বিরোধী। তারপরও বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে রক্ষণশীল দলগুলোকে সমর্থন করা ছাড়া অনেক সময়ই তাদের উপায় থাকেনা। ফলে স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বনকারীদরকেও অনেক সময় “রক্ষণশীল” বলে বর্ণনা করা হয়, যদিও রক্ষণশীলতা বলে যাকে সঙ্গতকারণেই ডাকা হয় তার সাথে তাদের মিল সামান্যই। সত্যিকারের রক্ষণশীল আর স্বাধীনতাবাদী “রক্ষণশীল” — এ দুই পক্ষ একটি সাধারণ শত্রুর বিরূদ্ধে এক হতে গিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কাজেই আমার নিজের স্বাধীনতা-কেন্দ্রিক অবস্থানকে সত্যিকারের রক্ষণশীলতা থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
সত্যিকারের রক্ষণশীলতা হচ্ছে একটি বহুবিস্তৃত, বৈধ, এবং সম্ভবত প্রয়োজনীয় প্রবণতা, যার মূল কাজ হল আকস্মিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করা। ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে গত দেড়শ বছরে ইউরোপের রাজনীতিতে এই প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সমাজতন্ত্রের উত্থানের আগে পর্যন্ত রক্ষণশীলতার বিপক্ষ ছিল উদারপন্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই দ্বন্দটি ঠিক এভাবে ঘটেনি, কারণ ইউরোপে যাকে “উদারপন্থা” বলা হত এখানে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) সেটিই ছিল রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিভূমি, কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে লোক ঐতিহ্যকে অপরিবর্তিত রাখার পক্ষপাতী সে ইউরোপীয় অর্থে উদারপন্থী[২]। ইউরোপীয় ধাঁচের খাঁটি রক্ষণশীলতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করার ফলে ইদানিং এই বিভ্রান্তি আরো জটিল রূপ ধারণ করেছে, এবং এই রক্ষণশীলতা অপরিচিত মার্কিন ভূমিতে কিছুটা অদ্ভুত একটি রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে, এর কিছুদিন আগে থেকেই মার্কিন র্যাডিকাল ও সমাজবাদীরা নিজেদের “উদারপন্থী” বলে ডাকা শুরু করেছে। এসব বিভ্রান্তি সত্বেও আমি আপাতত আমার অবস্থানকে উদারপন্থা বলব, যেটা আমার মতে খাঁটি রক্ষণশীলতা এবং সমাজতন্ত্র, দুটি থেকেই ভিন্ন। আগেই বলে নিই, এটা আমি করছি বেশ একটু দ্বিধা নিয়ে, এবং পরে আমাকে ভাবতে হবে স্বাধীনতার পার্টির আসলে কি নাম নেয়া উচিত। এই দ্বিধার একটা কারণ উদারপন্থা নিয়ে বিরাট মার্কিন বিভ্রান্তি, কিন্তু আরেকটা কারণ ইউরোপের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, যেখানে যুক্তিবাদী উদারপন্থার সবচেয়ে প্রভাবশালী রূপটি দীর্ঘদিন যাবৎই সমাজতন্ত্রের অগ্রপথিক।
আমার মতে, সত্যিকারের রক্ষণশীলতার বিরূদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তিটি এরকম: তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই রক্ষণশীলতা সমাজের বর্তমান গতিপথের কোন বিকল্পের হদিস দিতে পারেনা। পরিবর্তনের বর্তমান প্রবণতার বিরূদ্ধে সংগ্রাম করে ক্ষতিকর পরিবর্তনগুলিকে এটা কিছুটা ধীর করতে পারে বটে, কিন্তু ভিন্ন প্রস্তাবের অভাবে এগুলিকে বন্ধ করে দিতে পারে না। ফলে অপছন্দের পথ ধরে অনিচ্ছা সত্বেও ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে এগিয়ে যাওয়াই রক্ষণশীলতার ললাট লিখন। প্রগতিশীল ও রক্ষণশীলদের মধ্যে দড়ি টানাটানি তাই পরিবর্তনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু পথ-বদল ঘটাতে পারে না। যদিও এই “প্রগতি-গাড়ির ব্রেক”[৩] এর প্রয়োজন আছে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে শুধুমাত্র ব্রেক হিসেবে কাজ করে যেতে নারাজ। একজন উদারপন্থীর প্রথম দায়িত্ব আমরা কত জোরে যাব বা কত দূরে যাব সেটা নির্ধারণ করা নয়, বরং আমরা কোথায় যাব সেটি বের করা। এ ব্যাপারে সমষ্টিবাদী র্যাডিকালদের সাথে রক্ষণশীলদের যতটুকু পার্থক্য, সমষ্টিবাদের সাথে উদারপন্থার পার্থক্য তার তুলনায় অনেক বেশি। রক্ষণশীলেরা এসময়ের প্রবণতাগুলোর একটি মধ্যপন্থী ও নরম রূপ ধারণ করে, তুলনায় উদারপন্থীকে হতে হবে রক্ষণশীল ও সমাজতন্ত্রীদের সাধারণ প্রবণতাগুলির সুস্পষ্ট বিরোধিতাকারী।
২।
এই তিন দলের আপেক্ষিক অবস্থান সম্বন্ধে সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণা বিভ্রান্তিকর। প্রচলিত ধারণায় এই অবস্থানগুলিকে একটি সরলরেখা বরাবর অবস্থিত বলে মনে করা হয়, যেখানে উদারপন্থীরা সমাজতান্ত্রিক আর রক্ষণশীলদের মাঝামাঝি কোথাও অবস্থান করে। এই ধারণা হাস্যকর রকমের ভুল। ছবি যদি আঁকতেই হয়, সেটি হতে হবে একটি ত্রিভূজের, যার তিন কোণায় তিন দলের অবস্থান। কিন্তু যেহেতু সমাজতন্ত্রীরা তাদের কোণটির দিকে সজোরে টেনে চলেছে বাকি সবাইকে, রক্ষণশীলেরা তাদের স্বভাবমতে ধীরে ধীরে সেদিকেই এগিয়ে চলেছে, উদারপন্থী কোণের দিকে নয়। শুধু তাই নয়, আগে যেসব মতামত র্যাডিকাল ছিল, কিছুদিন পরপর তারা সেগুলিকে সম্মানীয় রক্ষণশীল অবস্থান হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছে। সমাজতন্ত্রের সাথে নিয়মিত আপস করে তাদের অবস্থানগুলিকে নিজেদের করে নিয়েছে রক্ষণশীলেরা। মধ্যপন্থার এই ওকালতকারীরা[৪] মনে করে সত্যের অবস্থান দুই চরমের মাঝামাঝি কোথাও অবস্থিত, কাজেই যখনই অপর পক্ষগুলির কোনটা চরমপন্থী অবস্থান ধারণ করে, তখনই এরাও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে বসে।
যে অবস্থানকে সঙ্গত ভাবেই রক্ষণশীল বলা হয়, সেটি তাই নির্ভর করে বিদ্যমান প্রবণতাগুলি কোনমুখী, তার উপর। যেহেতু ইদানিং সমাজতান্ত্রিক প্রবণতাই শক্তিশালী, কাজেই এমন মনে হতে পারে যে রক্ষণশীল ও উদারপন্থীরা মূলত এই প্রবণতাকে রোধ করার চেষ্টাতেই ব্যস্ত। কিন্তু উদারপন্থা স্থির হয়ে বসে থাকতে চায় না, সে যেতে চায় অন্য কোথাও। উদারপন্থাকে কিছুটা রক্ষণশীল শক্তি মনে করার একটা কারণ হতে পারে যে একটা সময়ে উদারপন্থা বেশ জনপ্রিয় এবং সফল একটি মতবাদ ছিল। কিন্তু তৎসত্বেও এটি পশ্চাৎমুখী কোন দর্শন নয়। উদারপন্থীরা সামাজিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির পরিবর্তন ও উন্নয়নে কখনই অনাগ্রহী ছিল না — এবং যখনই স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে রূদ্ধ হয়েছে, তখনই তারা সরকারি নীতির পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। আজকের দিনের সরকারি আচরণের কথা যদি ওঠে, তাহলে কোন উদারপন্থীই চাইবে না বিদ্যমান পরিস্থিিতকে অপরিবির্তিত রাখতে। বরং তাদের এটাই মনে হবে যে পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গাতেই যেটা দরকার সেটা হল মুক্ত প্রবৃদ্ধির পথের বাধাগুলি সমূল দূরীকরণ।
আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে রক্ষা করা সম্ভব, এটা সত্যি হলেও এর মানে এই নয় যে রক্ষণশীল আর উদারপন্থীদের মধ্যে কোন পার্থক্য রইল না। উদারপন্থী এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমর্থন করে এরা পুরোনো বলে নয়, বা মার্কিন বলেও নয়, বরং এই কারণে যে এগুলি তার নিজের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৩.
উদারপন্থার সাথে রক্ষণশীলতার মূল পার্থক্যগুলি বর্ণনা করবার আগে একটা কথা বলা প্রয়োজন। রক্ষণশীল লেখকদের কারো কারো কাছ থেকে উদারপন্থীদের অনেক কিছু শেখবার আছে। দীর্ঘদীন ধরে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলির বিষয়ে তাঁদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ আলোচনাগুলি গভীর অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী, যেগুলি থেকে মুক্ত সমাজ সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানা সম্ভব (অন্তত অর্থনীতির বাইরের বিষয়গুলোতে)। কোলরিজ, বোনাল, দ্য মেস্ত্র, য়ুসটুস মোসের বা ডোনোসো কোরতেস এর রাজনীতি যতই প্রতিক্রিয়াশীল হোক না কেন — ভাষা, আইন, নৈতিকতার মত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তাঁদের জানা ছিল, এবং এই গুরুত্ববোধ উদারপন্থীদেরও থাকলে মন্দ হয় না। কিন্তু মুক্ত, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের প্রতি রক্ষণশীলদের শ্রদ্ধা শুধু মাত্র অতীতের প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য সংরক্ষিত। আজকের দিনে একই ভাবে যেসব স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন ঘটছে — যেগুলি থেকে কিনা ভবিষ্যতের মানব-কর্মযজ্ঞের হাতিয়ার গুলি বেরিয়ে আসবে — সেগুলিকে গ্রহণ করবার ব্যাপারে তাঁদের উৎসাহ বেশ খানিকটাই কম।
রক্ষণশীল ও উদারপন্থী মনোভাবের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্যের সূত্র উপরের আলোচনা থেকে পাওয়া যায়। রক্ষণশীল লেখকেরা নিজেরাই স্বীকার করে থাকেন যে তাঁদের মনোভাবের একটা মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল পরিবর্তন-ভীতি, নতুনের প্রতি অবিশ্বাস স্রেফ তার নতুনত্বের কারণেই[৫]; তুলনায় উদারপন্থার ভিত্তি হল সাহস, এবং পরিবর্তনের পরিণতি কি হবে সেটি না জানা থাকা সত্বেও পরিবর্তনের ধারাকে নিজের গতিতে বইতে দেয়ার আত্মবিশ্বাস। রক্ষণশীলেরা যদি শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নীতির আকস্মিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করতেন, তাহলে আপত্তির তেমন কোন কারণ ছিল না, কারণ এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা ও ধীর পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি যথেষ্টই শক্তিশালি। সমস্যা হল, রক্ষণশীলেরা পরিবর্তন রোধ করতে বা তার গতি কমিয়ে নিজেদের দুর্বল মনের জন্য গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের শক্তি ব্যবহার করতে চায়। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রক্ষণশীলেরা সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত শক্তিগুলির খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার উপর আস্থা রাখতে পারে না, তুলনায় উদাপন্থীদের সেই আস্থা আছে যার ফলে পরিবর্তনকে সে মেনে নিতে পারে, যদিও পরিবর্তনের ফলে প্রয়োজনীয় অভিযোজনের প্রক্রিয়াটি ঠিক কিভাবে ঘটবে সেটা সে তার জানা নেই। উদারপন্থী মনোভাবের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিশেষত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, এই বিশ্বাস যে বাজারের স্ব-নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলি নতুন পরিস্থিতির সাথে অভিযোজিত হয়, যদিও কোন বিশেষ ক্ষেত্রে ঠিক কিভাবে এটা ঘটবে সেটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। বহু লোকই বুঝতে পারে না কিভাবে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চাহিদা ও সরবরাহ, বা আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে, আর বাজারকে কাজ করতে দেয়ার ব্যাপারে মানুষের সমূহ দ্বিধার পেছনে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণই এই অজ্ঞতা। কোন উচ্চতর মহাজ্ঞানী কর্তৃপক্ষ পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণে রেখে “সুশৃঙ্খল” ভাবে বিকশিত হতে দিলে রক্ষণশীলেরা নিরাপদ বোধ করে, নচেৎ নয়।
নিয়ন্ত্রণহীন সামাজিক শক্তির ব্যাপারে রক্ষণশীলের ভয় তার অন্য দুটি বৈশিষ্টের সাথে সম্পর্কিত: কর্তৃত্বধারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও অর্থনীতির বিষয়ে অজ্ঞতা। রক্ষণশীল ব্যক্তি বিমূর্ত তত্ব ও সাধারণ নিয়ম দুটির ব্যাপারেই সন্দিহান [৬], ফলে স্বাধীনতা ভিত্তিক সমাজ যেসব স্বতঃস্ফূর্ত শক্তির ওপর নির্ভর করে সেগুলি যেমন সে বুঝতে অক্ষম, তেমনি সামাজিক কর্মসূচী নির্ধারণের কোন নৈতিক ভিত্তিও তার থাকে না। শৃঙ্খলা, রক্ষণশীলের চোখে, ক্ষমতাধরদের বিরতিহীন মনোযোগের ফল। অতএব, তাদের মতে, কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে দিতে হবে এবং তাকে কঠোর আইনের আওতায় বেঁধে রাখা উচিত হবে না। অন্যদিকে নীতিনিষ্ঠতার প্রতি উদারপন্থী অঙ্গীকারের জন্য দরকার সামাজিক কার্যক্রমকে যে স্বতঃস্ফূর্ত শক্তিগুলি সমন্বিত করে, সেসবের ব্যাপারে জ্ঞান। কিন্তু সমাজ ও বিশেষত অর্থনীতির এই ধরণের কোন তত্ব রক্ষণশীলের হাতে নেই। সামাজিক শৃঙ্খলার একটি সাধারণ তত্ব নির্মাণে রক্ষণশীলেরা এমন ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে যে রক্ষণশীলতার আধুনিক পূজারীরা তাত্বিক ভিত্তি গঠনের জন্য অবধারিত ভাবে এমন সব লেখকের কাছে হাত পাতেন যারা নিজেদের উদারপন্থী ভাবতেন। ম্যাকলে, টকভিল, লর্ড অ্যাকটন ও লেকি নিজেদের সঙ্গত ভাবেই উদাপন্থী ভাবতেন, এমনকি এডমুন্ড বার্ক-ও শেষ অব্দি হুইগ-ই থেকে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে কেউ রক্ষণশীলতার অপবাদ দিলে নিঃসন্দেহে শিউরে উঠতেন।
কিন্তু মূল কথাটায় ফেরত আসা যাক। এই মূল কথাটা হল, প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্বের ব্যাপারে রক্ষণশীলের অবধারিত তুষ্টির মনোভাব, কাজেই রক্ষণশীলের প্রধান লক্ষ্য শক্তিকে সীমার মধ্যে রাখা নয়, বরং বৈধ কর্তৃপক্ষ যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে সেই চেষ্টা করা। স্বাধীনতার ধারণার সাথে এই মনোভাবকে একীভূত করা কঠিন। সাধারণ ভাবে বলা যায়, দমননীতি বা স্বৈরাচারের এর ব্যবহারে রক্ষণশীলের আপত্তি নেই যতক্ষন না পর্যন্ত ওই শক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে সদুদ্দেশ্যে (তার মতে)। সে মনে করে, সরকার যদি ভাল লোকেদের হাতে থাকে, তাহলে খুব বেশি আইন কানুন দিয়ে তাকে বাধাগ্রস্থ করার দরকার নেই। যেহেতু সে নিয়মনিষ্ঠ নয়, বরং সুবিধাবাদী — তার আশার ভিত্তি হচ্ছে যে ভাল ও জ্ঞানীরা শাসন করবে, শুধু উদাহরণ হিসেবে নয়, তাদেরকে দেয়া কর্তৃত্বকে ব্যবহার করে[৭]। কাজেই, ঠিক সমাজতন্ত্রীর মত, তার চিন্তার মূল লক্ষ্য সরকারের শক্তিকে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, বরং কে বা কারা এই শক্তির অধিকারী হবে তা নির্ধারণ করা; এবং সমাজতন্ত্রীর মতই, সে মনে করে মানুষের ওপর তার নিজের নৈতিকতা কে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার অধিকার তার আছে।
চলবে…
ফুটনোট
[*] উদ্ধৃতিটি অ্যাকটন রচিত স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রথম পাতা থেকে।
[১] এই অবস্থা অন্তত শখানেক বছর ধরে চলছে। ১৮৫৫ সালেই জন স্টুয়ার্ট মিল বলেছিলেন, “আজকের দিনে সমাজ সংস্কারকদের প্রায় সব উদ্দেশ্যই স্বাধীনতা-হন্তা” (দেখুন আমার বই “J. S. Mill and Harriet Taylor” (১৯৫১), পৃ ২১৬)
[২] বি. ক্রিক, “The Strange Quest for an American Conservatism”, Review of Politics, XVII (1955), পৃ ৩৬৫, এ সঠিক ভাবেই বলা হয়েছে, “যে সাধারণ আমেরিকান নিজেকে `রক্ষণশীল’ বলেন, আসলে তিনি `উদারপন্থী’। সম্ভবত এই `রক্ষণশীলদের’ এহেন নাম বেছে নেয়া চালু হয়েছে New Deal এর সময় `উদারপন্থী’ নামের অপব্যবহারের সময় থেকে।”
[৩] এই বাক্যটি পেয়েছি R. G. Collingwood, The New Leviathan (Oxford: Oxford University Press, 1942), পৃ ২০৯ থেকে।
[৪] দেখুন রক্ষণশীল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান কর্তৃক এই “মধ্যপন্থা” শব্দের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যবহার; তার বিখ্যাত বইটির নাম “মধ্যপন্থা” (১৯৩৮)।
[৫] দেখুন, লর্ড হিউগ সেসিল এর “Conservatism” (লণ্ডন ১৯১২, পৃ ৯) “স্বাভাবিক রক্ষণশীলতা হচ্ছে…পরিবর্তন বিরোধি মনোভাব; এবং এর উৎস, অংশত, অজানার প্রতি ভয়”।
[৬] দেখুন কে. ফেইলিং-এর গোমর ফাঁস করা আত্ম-বর্ণনা (Sketches in Nineteenth Century Biography (লন্ডন, ১৯৩০), পৃ. ১৭৪): “সবকিছু মিলে, নতুন ধারণার প্রতি ডানপন্থার মনোভাব সুতীব্র ভীতির, কারণ, প্র্যাকটিকাল মানুষ কি সেই নয়, যে ডিজরেলির ভাষায় `পূর্বপুরুষের ভুলের চর্চাকারী’? ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে ডানপন্থীরা উন্নতিকে অন্ধভাবে প্রতিরোধ করেছে, এবং পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধার নামে পুরোনো সংস্কারকে কে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। এদের অবস্থান নিরাপদতর, কিন্তু জটিলতর হয়, যখন আমরা এর সাথে যোগ করি এই তথ্য যে, ডানপন্থীরা অনবরত বামপন্থীদের দ্বারস্থ, উদারপন্থার ধারণাগুলির ক্রম-গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে রক্ষণশীলতা সবসময়ই অবস্থান করে সদা-অসম্পূর্ণ আপসের পরিস্থিতিতে।”
[৭] নিজেরই আগে লেখা কিছু কথা উদ্ধৃত করি, আশা করি পাঠক নিজগুণে ক্ষমা করবেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমি উত্থাপন করেছিলাম এই বাক্যগুলিতে: “[অ্যাডাম স্মিথ] ও তার সমসাময়িক অন্য কিছু লেখক যে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদকে সমর্থন করেছিলেন, তার সবচেয়ে ভাল গুণ হল, এই ব্যবস্থায় মন্দ লোকেরা সবচেয়ে কম ক্ষতি করতে পারে। এই ব্যবস্থা এমন নয় যা চালানোর জন্য ভাল লোক খুঁজে বের করতে হবে, বা সব মানুষকে এখনকার চেয়ে অনেক উন্নত হতে হবে, বরং এমন ব্যবস্থা যা সব ধরণের মানুষের বৈচিত্র্য ও জটিলতাকে ব্যবহার করে, কখনও ভাল কখনও মন্দ, কখনও বুদ্ধিমান, প্রায়শই বুদ্ধিহীন” (Individualism and Economic Order [লন্ডন ও শিকাগো, ১৯৪৮], পৃ ১১)
অনুবাদের জন্য (F)
লেখা আর কমেন্ট পড়ে তাব্দা খায়া গেলাম…কিছুই তো বুঝিনা ;-(
আমার কাছে খুবই কঠিন লাগে এ ধরণের বিষয়গুলো আবার এটাও মনে হয় জানা্টা জরুরি। আমি কেন যেন এ ধরণের লেখা পড়ে কিছু বুঝিনা, কারো কাছ থেকে আলোচনা শোনা গেলে ভাল হত কিন্তু তেমন মানুষই বা কই আর তেমন সুযোগই বা কই…তবে পড়ে যাব, দেখি কতটুকু বুঝি
@লীনা রহমান,
আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব খুশী হলাম। প্রথমত, “তাব্দা” শব্দটা জানা ছিলনা, শিখে ফেললাম :-)। আর, দ্বিতীয়ত, আপনি এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন জেনেই ভাল লাগছে। প্রশ্ন-ট্রশ্ন থাকলে করতে দ্বিধা করবেন না, সেসব আলোচনার সূত্রে কিছু জিনিস হয়ত স্পষ্ট হতেও পারে। আমি পেইনের একটি লেখা আগে অনুবাদ করেছিলাম, সেটি কিছুটা সহজপাচ্য হতে পারে হয়ত। পড়েছিলেন কি সেটি?
ধন্যবাদ আবারও (*)
@রৌরব, পড়েছিলাম তো মনে হয়। আগে পড়ে বুঝি যে আমার না বোঝাটা কোথায়, তারপর প্রশ্ন করতে হলে আপনারা তো আছেনই উত্তর দেবার জন্য।
আপনার ভোকাবুলারি বাড়ানোর জন্য (D) দিলেন না তো তাই নিজেই নিয়া নিলাম 😛
@লীনা রহমান,
দূর! ককটেল তো মেয়েদের খাদ্য। আপনি বরং…
[img]http://www.winesbeers.com/photos/500026702360G.jpg[/img]
চেখে দেখুন একটু।
অবশেষে এই ছেলেটিও গণিত ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিলো। 🙁
@তানভীরুল ইসলাম, 😉
বাহ, চমত্কার! রক্ষণশীল আর উদারপন্থী, এদের সংজ্ঞার ব্যাপারে অনেককিছু জানা গেল। সময়মত আপনার লেখাটা রেফার করে শব্দ দুটো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। :laugh:
লেখাটা যখন পড়ছিলাম, বারবার বাংলাদেশের রাজনীতির কথা চিন্তা করছিলাম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারা রক্ষণশীল, কারা উদারপন্থী। বাংলাদেশের রাজনীতিকেও এই তিন মেরুতে ভাগ করা যাবে বলে আশা করছিলাম। একটা সরল রেখার উপরে ডান, মধ্য আর বাম হিসেবে ভাবার চেয়ে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেরুকরণটা অদ্ভূত বলে মনে হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রগতিশীল বলে পরিচিত সমাজের অনুকূল হতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই উদারপন্থী মনে হচ্ছে না। মানুষের স্বাধীনতার ব্যাপারে তারা মোটেও চিন্তিত বলে মনে হয় না। শক্তি বর্ধন ও তার ব্যবহারে বেশ আগ্রহী। বি এন পি কেও এ ব্যাপারে একই রকম মনে হয়, কেবল প্রগতিশীল সমাজের কাছে অতটা পছন্দনীয় নয়। কিন্তু তাদেরকে কাউকে ক্লাসিফাই করতে পারছি না।
জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যেভাবে যুগে যুগে শক্তির ভক্তি দেখা গেছে, সৎ লোকের শাসনের উপরে জোর দিতে দেখা গেছে, তাদের রক্ষণশীল বলেই মনে হয়।
তবে এসব দলের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আবার অন্যরকম একটা চিত্র দেখা যায়। বিশেষ করে আমরা যাদের বাংলাদেশে প্রগতিশীল বলি, তাদের মূল পরিচয় সম্ভবত মুক্ত-চিন্তার সমর্থক ও মৌলবাদ বিরোধী। কিন্তু সেটার জন্যে আবার শক্তির ব্যবহারে তাদের চিন্তিত থাকতে দেখা যায় না। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূলে সরকারের শক্তি প্রয়োগ হতে দেখলে তারা বিচলিত হয় না। আর মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার, এসব তাদের মূল বিষয় নয়।
ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেবল বি এন পি জামায়াত পন্থী বুদ্ধিজীবীদেরই দেখা যাচ্ছে, সরকারের শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা, ইত্যাদি উদারপন্থী শব্দমালা ব্যবহার করতে।
কিছু বুদ্ধিজীবীকে (আমি সহ) অনেকে একদা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী কিন্তু বর্তমানে রক্ষণশীলদের সহচর হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তাদের কারো কারো জন্যে আপনার লেখার প্রথম অংশটা খুবই প্রযোজ্য হতে পারে।
সমীকরণটা যে ঠিক অতটা সোজা নয়, সেটা বোঝা দরকার। তবে ফ্রেডরিক হায়েকের মত করে যদি তাদের কেউ বলতেন,
তাদের অবস্থানকে বোঝা আরো সহজ হত।
আর ইসলামী র্যাডিকালরা এখানে কোন দলে পড়ে? তারা নিশ্চয়ই সংজ্ঞা মতে রক্ষণশীল নয়।
বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে অনেক বামপন্থী যেমনটা কমন শত্রুর বিরুদ্ধে একাট্টা হতে ইসলামী র্যাডিকালদের সাথে নিয়ে ইসলামী বাম তৈরী করছে, সেটা নিয়ে একটা বিশ্লেষণ দরকার। তবে ওদের সমষ্টিবাদী র্যাডিকাল দলে ফেলে নিশ্চিন্তেই উদারপন্থার বিপরীত ঘরানা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
@রূপম (ধ্রুব), আপনি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা তে করে মনে হচ্ছে আপনি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শুধু সামাজিক নীতিগুলো (উদার নাকি রক্ষণশীল) বিবেচনা করে তাদের শ্রেণীবিন্যাস করার চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয়, উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য আসে ফিসকাল পলিসি থেকে, তার সাথে সামাজিক উদারতা বা রক্ষণশীলতা যোগ হয় বা একে অপরকে প্রভাবিত করে। মানছি যে, অনেক সময় এদের জটিল সংমিশ্রণও দেখা যায়। আমি অবশ্য আপনার কথা ভুলও বুঝতে পারি, তবে আমি যতবারই এ নিয়ে ভাবতে গেছি ততবারই কয়েকটা প্রশ্ন করার পর থেমে যেতে বাধ্য হয়েছি। মনে হয়েছে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ফিসকাল অবস্থানটা কী সেটা কী আমরা আদৌ জানি, অথবা ওদের ফিসকাল পলিসিতে কী কোন ভিন্নতা আছে, অথবা আসলেই কী ওদের কোন পলিসি আছে? উন্নত পুঁজিবাদী বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের করা এই শ্রেণীবিন্যাসগুলো আমাদের মত আধা সামন্ততান্ত্রিক, আধা পুঁজিবাদী, ‘বিকৃত’ এবং দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন অর্থনীতিসম্পন্ন অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে আদৌ খাটে কিনা সেটাই এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না। এ ব্যাপারে আপনার কিংবা রৌরবের ( বা ব্লগের অন্য যে কারও) মন্তব্য শুনতে আগ্রহী।
@বন্যা আহমেদ,
আপনার সাথে একমত। আমি মোটা দাগের একটা ক্লাসিফিকেশন করার চেষ্টা করেছি। তবে মূল রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু (উচ্চ)-শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধি নয়, তাদের ভাষা ব্যবহার করে সংগঠিত হবার তাগিদটাও তারা পায় না। (আবার মোটা দাগে কথা বলে ফেললাম।)
তবু দেখা যাক তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক দর্শনগুলো কি:
বিএনপি:
প্রথম প্যারা খুবই সৎ। দ্বিতীয় প্যারা হলো একটা অঘটিত সংশোধনের দাবী।
আওয়ামী লীগ:
(পুরনো গঠনতন্ত্রে দেখা যাচ্ছে লেখা)
নতুন গঠনতন্ত্রের ফন্ট-উদ্ধারের চেষ্টা থেকে আপাতত রহিত হলাম।
জামায়াতে ইসলামী:
এর চেয়ে ভালো কিছু পেলাম না।
প্রদত্ত লিংকগুলোতে ফিস্কাল পলিসি খুঁজে দেখা যায়।
শেখ হাসিনা, খালদা জিয়া আর নিজামী সেজে এই কুইজটা তিনবার দিতে পারেন:
[img=http://theadvocates.org/admin/system/images/2010-01/quiz.jpg]
এখানে রাজনৈতিক অবস্থানকে সামাজিক আর অর্থনৈতিক, দুটি ইস্যু দিয়ে ম্যাপ করেছে। বেশ অ্যাকুরেট
@রূপম (ধ্রুব),
অর্থনীতিবিদ কেউ লিখলে ভাল হত আমাদের ফিসকাল পলিসি বা তার অভাব নিয়ে। আমার ধারণা আমাদের দলগুলোর ফিসকাল পলিসি নির্বাচনের আগে চালের দাম কমানোর চেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
@রূপম (ধ্রুব),
একমত। এর জন্য ঔপনিবেশিক শাসন দায়ী বলে সন্দেহ হয়। আমাদের লেন্সটা এর ফলে হয়ে গেছে “জাতীয় স্বাধীনতা”-র লেন্স, জাতির মধ্যে স্বাধীনতার কথা খুব একটা শোনা যায় না।
তাদের বাকশালীয় রেকর্ডের কারণে আওয়ামী লীগ সংগত ভাবেই সন্দেহভাজন, কিন্তু ৭২ এর সংবিধানটা একেবারে অনুদার ছিলনা কিন্তু।
ডানপন্থী রক্ষণশীল। আমার মনে হয় না তারা হায়েকিয় মুক্তবাজারেও বিশ্বাসী, স্রেফ কমিউনিজমকে অপছন্দ করে, এটুকুই। নিজেরাই নিজেদের ওয়েব পেজে যেখানে লিখে রেখেছে তার corporatist, সেখানে আর কিই বা বলার আছে।
না, তা নয়। র্যাডিকাল শব্দটাই তাদের জন্য প্রযোজ্য, বা মৌলবাদী।
বাংলাদেশে ধ্রুপদী উদারপন্থা জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
@রৌরব,
সমাজতন্ত্রকে কী অর্থনৈতিক অনৌদার্য্য বলা যায়? আওয়ামী লীগ লেফ্ট লিবারেল, বিএনপি রাইট কনজারভেটিভ আর জামায়াত স্টেটিস্ট বলা যায়।
ধ্রুপদী উদারপন্থা তো মনে হয় সকল রাষ্ট্রেই অজনপ্রিয়। বাংলাদেশে এই ধারণাটার সাথে মানুষের আবার পরিচয়ই হয় নি। এই কাজটা করা দরকার।
ধ্রুপদী উদারপন্থা নিয়ে আরো আরো লেখা চাই। বেশ আগ্রহ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, ধ্রুপদী উদারপন্থার সাথে এর প্রবর্তকদের ধর্ম-বিশ্বাসের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। কথাটা কি ঠিক? আমেরিকাতে সমকালীন ধ্রুপদী উদারপন্থী রাজনীতিবিদ কে? রন পল? সে কিন্তু দেখা যাচ্ছে খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী। তার বিবর্তনে অবিশ্বাস তাকে কোনো বিজ্ঞান-বিরোধী সিদ্ধান্তে প্ররোচিত করবে কিনা জানা দরকার। ধ্রুপদী উদারপন্থার উত্পত্তিতে কি খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাব কোনোভাবে জড়িত?
লিবার্টারিয়ান বাংলা কি?
@রূপম (ধ্রুব),
তা তো বটেই। আসলে ৭২ এর সংবিধানে বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদির কথা বলছিলাম।
In principle সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। তবে কেউ যদি তার ধর্মের রাজনৈতিক অংশটুকুও বিশ্বাস করে (উদাহরণস্বরূপ, ইসলাম) তাহলে তার পক্ষে কিভাবে ধ্রূপদী উদারপন্থী হওয়া সম্ভব বোঝা কঠিন। রন পল সম্বন্ধে আরেকটু জানতে হবে মনে হচ্ছে :)।
না। এর “দেবতা”-রা হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল, অ্যাডাম স্মিথ, টমাস পেইন, ভলতেয়ার, জেফারসন, ম্যাডিসন — অধার্মিক একটি গোষ্ঠী।
ভাল প্রশ্ন। স্বাধীনতাবাদী?
@বন্যা আহমেদ,
আপনার মন্তব্যে আরো কিছু জিনিস মিস করে গেছিলাম
আমার মনে হয়, হায়েক প্রথম অ্যামেন্ডমেন্ট ইত্যাদির কথা বলছেন। প্রথম অ্যামেন্ডমেন্ট নিঃসন্দেহে উদারপন্থী, কিন্তু সেটা যেহেতু অনেক দিন ধরে আছে, কাজেই সেটিকে রক্ষা করার চেষ্টা এক অর্থে “রক্ষণশীল”।
কঠিন প্রশ্ন। ভাববার চেষ্টা করছি হায়েক কি বলতেন। যদিও ওবামাকে “কমিউনিস্ট” বা “সোশ্যালিস্ট” বলাটা মূর্খতা, হায়েক বর্তমানের লিবারালদের “সোশ্যাল ডেমোক্রাট” ধরণের কিছু একটা ভাবতেন, এ সম্ভাবনা আছে। মনে রাখতে হবে, ধ্রুপদী উদারপন্থী হিসেবে হায়েক যথেষ্ট “উগ্র” ছিলেন।
অন্যদিকে একটি ধনী দেশের উচিত জনগণের ন্যূনতম খাদ্যবস্ত্রের নিশ্চয়তা দেয়া উচিত, এরকম একটা আপাত সমাজতান্ত্রিক বক্তব্য হায়েক “দাসত্বের পথে” বইতে লিখেছেন।
[img]http://www.leftycartoons.com/wp-content/uploads/how_libertarians_vote.png[/img]
@ রৌরব,
আহহহ, এবার আমেরিকার লিবারটেরিয়ানদের সাথে রক্ষণশীল রিপাব্লিকানদের সম্পর্কটা ঠিকমত বুঝতে পারলাম…
[আমেরিকার এখনকার ‘লিবারেল’ এবং লিবারটেরিয়ানদের নিয়ে ভালো একটা কার্টুন খুঁজে পাচ্ছি না]
@বন্যা আহমেদ,
:laugh:
@বন্যা আহমেদ,
পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
একমত। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল paradox-ই তাই। সমস্যা হল, গ্লোবালাইজেশন হচ্ছে গ্লোবাল আইন কানুন ছাড়া। এখন “গ্লোবাল আইন কানুন চাই” বললে সাম্রাজ্যবাদ বা জাতি-রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমতার উপর আঘাতের মত শোনায়। আবার সেটা ছাড়া কিভাবে পররাষ্ট্রনীতিকে mercentilist ডাকাতির পর্যায় থেকে কিভাবে নামিয়ে আনা সম্ভব সেটাও পুরো স্পষ্ট নয় আমার কাছে।
@রৌরব, paradox এর বাংলা কী হবে বলেন তো, এটা নিয়ে আমি অনেক দিন ধরে ‘ছ্যাঁচঁড়াঁচ্ছি’।
এই ফ্লো টা ঠিক হলে বলতে হবে অনুবাদ বা ‘এড্যাপ্টেশন’ যাই বলেন না কেন খুব অদ্ভুত হল।
আর এ জন্যই ওয়েস্টের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের মুখে বড় বড় সব আদর্শবাদী কথা শুনলে কেমন যেন ‘চেতে উঠতে’ ইচ্ছা করে :-Y ।
@বন্যা আহমেদ,
বাংলা একাডেমী বলছে কূটাভাস।
@বন্যা দি,
বাংলা একাডেমী অভিধানে দেয়া আছে “কূটাভাস”, তাই নির্দ্বিধায় তা দিয়ে চালিয়ে দিতে পারেন। তবে আমার মনে হয় এর পরিবর্তে paradox শব্দটিকেই বরং আত্তীকরণ করে ফেলি আমরা- প্যারাডক্স, কেমন হয়?
@বন্যা আহমেদ,
আপু, আমার ‘মোবাইল বাংলা ডিকশেনারী’ যা বলে তা হচ্ছে
paradox এর সহজ বাংলা ‘বৈপরিত্য’ বা ‘স্ববিরোধী’ মতামত। :))
আমার কিন্তু পছন্দ হইসে, আসল অর্থের সাথে খারাপ যায় না!
পড়তে যতটা ভাল লেগেছে বুঝতে ততটা নয়।
তবে মনে হয় কাঠামোটা ধরতে পেরেছি।
আমি বিষয়টা ভালভাবে বুঝতে চাইছি তাই আবার পড়বো।
:yes:
@আসরাফ,
ধন্যবাদ, তবে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে জেনে খুশি হতে পারছি না। আপনি চাইলে সমস্যার জায়গা গুলি আলোচনা করতে পারেন।
রৌরবের এই অনুবাদ কর্ম দারুন লাগল।
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ 🙂
@রৌরব,
ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে — মুখের ভাষার চমৎকার ব্যবহার।
আমরা কত জোরে যাব বা কত দূরে যাব ———— মন ভরে পড়া গেল। কেমন যেন ছান্দিক ভাব।
ধন্যবাদ।
@গীতা দাস,
🙂 :rose2:
আমি সফিকের সাথে একমত। রৌরব খুব ভালো কাজ করেছেন (এবং করছেন) এ ধরণের লেখার সাথে মুক্তমনার পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। আমি নিজে টমাস পেইনের অনেক লেখার সাথে পরিচিত হলেও হায়েকের সাথে সেভাবে ছিলাম না। ধন্যবাদ লেখাটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
অনুবাদ খুবই চমৎকার হয়েছে। আপনার ভাষারীতি আর শব্দচয়ন নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মোসাদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা অচীরেই আপনি পেয়ে যাবেন, যদি না ফরিদ ভাই তার গুরুকে অনুসরণ করে পথমধ্যে জংগীবাহিনী নিয়ে উটের কাফেলায় হামলা চালায়। 🙂
আর ইয়ে, কোথায় যেন বিরোধী বানানটা হ্রস্ব-ইকার সহযোগে দেখেছিলাম। আমার মতে বিরোধিতায় হ্রস্ব-ইকার, কিন্তু বিরোধী বোধ হয় দীর্ঘ-ই কার। ঠিক যেমন প্রতিযোগিতা – প্রতিযোগী। নাকি ভুল বললাম? এখন অবশ্য খুঁজে পাচ্ছি না।
আচ্ছা এই সামাজিক রক্ষণশীলতা আর অর্থনৈতিক রক্ষণশীলতার পার্থক্যের ব্যাপারগুলো কখন থেকে সূচিত হয়েছিল, একটু বিস্তৃত করে বলা যায়?
@অভিজিৎ,
:laugh:
ঠিকই দেখেছিলেন। লেখার উপরের দিকেই ছিল, ঠিক করে দিলাম 🙂
আমার কাছেও এটা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। হায়েকের কথায় মনে হয়েছে, বিংশ শতাব্দীতে উদারপন্থী ও রক্ষণশীল, এ দুটো শব্দই বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে, বিশেষত New Deal এর সময় থেকে। আবার “ইদানিং ইউরোপীয় ধাঁচের রক্ষণশীলতা এখানে আমদানি হয়েছে” জাতীয় একটা কথাও বললেন। কাজেই মনে হয় এই শব্দগুলো বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তাদের আজকের অর্থ নিতে শুরু করে।
জবাবটা মোটেও ভাল হল না…
@অভিজিৎ,
এই টার্মগুলোর প্রচলন কখন ঘটেছে সেটা জানি না, কিন্তু সামাজিক এবং ফিসকাল উদারতা বা রক্ষণশীলতা তো সব সময়ই থাকার কথা। আমার তো মনে হয় জেফারসনদের সময়ও এটা ছিল, নাকি?
যাক, রৌরবের এই অনুবাদগুলো পড়তে পড়তে ‘হিস্টরি অফ আমেরিকান ইকোনমি ১০১’ ক্লাসটা করা হয়ে যাবে… এজন্য রৌরবকে একটা স্পাইনোসরাস সাইজের ধন্যবাদ জানানো দরকার।
@অভিজিৎ,
:lotpot: :lotpot:
পেপল একাউন্টে উটের কাফেলা দিয়ে টাকা পাঠাবেন।
আমাদের রেবের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। :laugh:
লেখাটি প্রাণজল আর সহজবোধ্য হওয়াতে পড়ে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ লেখককে সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। :yes:
@ফালগুন,
পড়বার জন্য ধন্যবাদ আপনাকেও :rose:
রৌরব, খুব ভালো কাজ করেছেন হায়েক কে মুক্তমনার পাঠকদের সাথে পরিচয় এর সূচনা করে। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে, একের পর এক মতবাদ এর ভীড়ে, স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা’র স্বরূপ বুঝতে হায়েক এর চাইতে ভালো গুরু পাওয়া দুষ্কর। মানুষের এবং মতবাদের imperfectability সম্পর্কে যারা সচেতন, তাদের কাছে হায়েক প্রিয় হওয়া স্বাভাবিক।
হায়েক এর লেখার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি প্যারাই এক একটি gem এর মতো। এর মধ্যেও, এই লেখার দুটি অংশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন। প্রথমত, আমাদের দেশের অনেকেই বামপন্থার সাথে প্রগতিশীলতা (Progressive) বা উদারপন্থাকে একীভূত করে ফেলেন।উদারপন্থা যে ডান-বামের বাইরে আরেক ডাইমেনশন এই মতকে পূন:র্বাসনে হায়েক এর ভূমিকা অনেক বড়। দ্বীতিয়ত, ক্ষমতা যদি ভাললোকদের হাতে থাকে (আমার প্রিয় দল ও ব্যাক্তির কাছে) তাহলে সরকার একটু আধটু জোর করে ভালো জিনিষ জনগনের উপরে চাপিয়ে দিতেই পারে, এব্যাপারে ডান-বামের ঐক্যমত্য তুলে ধরা।
হায়েক সম্পর্কে কথা বলতে গেলে কিছু সীমবদ্ধতার কথা চলে আসে। একটি দেশের চলমান অর্থনীতিতে Wisdom of market যে Tyranny of Central Planning এর চাইতে শ্রেয়তর, এই উপলদ্ধি প্রতিষ্ঠায় মনে হয় হায়েক এবং অন্যান্যরা সফল হয়েছেন। কিন্তু দেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে strategic central planning (as opposed to tactical planning) এর ভূমিকা অগ্রাহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধ পরবর্তী জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান এবং ‘৮০ দশকের পর চীনের অভূতপূর্ব উথ্থানে দূরমেয়াদী strategic planning এর কেন্দ্রীয় অবদান রয়েছে। অবশ্য চলমান অর্থনীতিতে এসব দেশ, মানুষের লোভ এবং উ্চ্চাশা দ্বারা চালিত মুক্তবাজারএর দুর্নিবার স্রোতকেই উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
@সফিক,
আপনার কাছে একটা মন্তব্য আশা করছিলাম, আপনি হায়েকের নামটা তোলবার পরেই এ লেখার ধারণাটি মাথায় আসে :rose:
একমত, যদিও অর্থনীতি সম্বন্ধে বাস্তব জ্ঞান আমার কম। সমাজের Infrastructure নির্মাণে বাজারের দুর্বলতা আছে বলে সন্দেহ হয়। Strategic planning কে সে ধরণের Infrastructure বলে মনে করা যায়, একই ভাবে রাস্তাঘাট বা শিক্ষাব্যবস্থাকে Infrastructure মনে করা চলে। খাঁটি Libertarian রা এসমস্যার কি সমাধান প্রস্তাব করেন সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
রৌরব, সকাল থেকেই লেখাটায় মন্তব্য করতে চাচ্ছি, কিন্তু কাজের চাপে করতে পারছি না। অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সমায়াভাবে এই মুহূর্তে যেটুকু লিখেছি তাই পোষ্ট করে দিচ্ছি। পরে আপনি উত্তর দিলে আবার বাকিতা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
এই ব্যাপারটা বোধ হয় আর ঠিক এরকম নেই ( আপনি অবশ্য সেটা লেখার উপরেই উল্লেখ করেছেন)। গত দুই দশকে আমেরিকায়ও রক্ষণশীলদের সংগা বোধ হয় বদলে গেছে। আজকের রক্ষণশীলেরা (টি পার্টির সদস্যদের দেখুন) মনে হচ্ছে বেশ কিছু জিনিসের সংমিশ্রণ। বুশের মত রক্ষণশীল বড় গভর্নমেন্ট বানাতে বা ডেফিসিট বাড়াতে দ্বিধা করে না। আবার টি পার্টির মত রক্ষণশীলেরা গভর্নমেন্ট ছোট করতে চায়, খরচ কমাতে চায় কিন্তু ডিফেন্স খাতে হাত দিতে নারাজ। আজকাল রক্ষণশীলেরা ব্যক্তিজীবনে সরকারের নূন্যতম হস্তক্ষেপের কথা বলছে, যদিও সামাজিক ক্ষেত্রে তারা আবার উল্টোটা চায়, ঐতিহাসিকভাবে কী আমেরিকায় সবসময়ই তাই ছিল?
আচ্ছা, হায়েক কী এখানে শুধু ফিসকাল রক্ষণশীলদের কথা বলেছেন নাকি সামাজিক রক্ষণশীলদের কথাও বুঝিয়েছেন?
এটাও বদলে গেছে গত কয়েক দশকে। হাস্যকরভাবে ব্যাপারটা উলটো হয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। উদারপন্থীদেরকেই এখন অহরহ সমাজতন্ত্রী বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়। ওবামাকে সমাজতন্ত্রী বলে গালি দেওয়াটা তো ফ্যশান হয়ে উঠেছে। ধরুন, আজকের অমেরিকার লিবারেলেরা ইউরোপ বা কানাডার মত সরকারীভাবে কিছু বেসিক অধিকারের, যেমন রাস্ট্রীয় স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার দাবী জানাচ্ছে। এনফোর্স করার ব্যাপারটা সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রিত হলেও যদিও সিস্টেমটা কিন্ত মুক্ত বাজার অর্থনীতির উপর ভিত্তি করেই বানানো কথা বলছে। এখানে কী এদেরকে উদারপন্থী না বলে সমাজতন্ত্রী বলাটা সঠিক?
যেমন? আমি অর্থনৈতিক ধ্বস নামার সময় বেশ কিছু উদাহরণই দেখেছি যেখানে রক্ষণশীল এবং উদারনৈতিক পলিসি একাকার হয়ে গেছে। তবে আমার বোঝার ভুলও হতে পারে, তাই আপনার কাছ থেকে শুনতে চাইছি আগে :laugh:
হ্যা এটা অবশ্য আমেরিকার রক্ষণশীলদের ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য। যেমন ধরুন, তারা নিজেরা ছোট গভর্নমেন্টের পক্ষে গলা ফাটিয়ে মরে আবার যে মূহুর্তে গর্ভপাত বা সমকামিতার মত ব্যাপারগুলো আসে তখনই তারা সব ধরণের সরকারী নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ঝাপিয়ে পড়ে রায় দেয়।
আসলে যে যার মত করে সুবিধাবাদী অবস্থান নেয়। যেমন ধরুন রক্ষণশীল সম্পর্কে হায়েকের বিশ্লেষণ সঠিক মনে হলেও (যদিও গত কয়েক দশকে বেশ কিছু সংগা বদলে গেছে)সমাজতন্ত্রীদের সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা আমি ব্যক্তিগতভাবে সঠিক বলে মনে করি না। কিন্তু সেই বিতর্কে আপাতত যাচ্ছি না।
একটা ব্যাপার বুঝলাম না, হায়েক বলছেন
কিন্তু এ ব্যাপারটা তো উদারপন্থীদের ক্ষেত্রেও কম বেশী প্রযোজ্য। যেমন ধরুন, উদারপন্থীরাও তো তাদের সমমনা সরকার ক্ষমতায় রাখতে চায়। আবার ধরুন, আজকের আমেরিকার উদারপন্থীরা উচ্চবিত্তদের উপর ট্যাক্সের রেট বাড়াতে চাচ্ছে। এ ধরণের রাষ্টীয় সিদ্ধান্তগুলো রক্ষণশীল বা উদারন্থী যাদের দ্বারাই প্রণীত হোক এবং জনগণের একটা অংশ মেনে নিক বা না নিক, জোর করেই কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া হয়।
আরেকটা ব্যাপার ভেবেছি অনেক সময়ই, আমরা এই ধরণের বড় বড় দার্শনিকদের শুধু দেশের ভিতরের পলিসি নিয়ে কথা বলতে শুনি। এই একবিংশ শতাব্দীতে গ্লোবাল ইকনমিতে পৌঁছে একটা দেশের আভ্যন্তরীন পলিসি অনেক উদার হতে পারে কিন্তু বিশ্বব্যাপী তারা সম্পূর্ণ উলটো পলিসির রামরাজত্ব চালাতে পারে। তখন সেটাকে কীভাবে মূল্যায়ণ করা হবে?
অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন করি, বাংলা বা হিন্দিতে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়, এর ‘মার্কিন’ অংশটা কোথা থেকে এসেছে, জানেন?
@বন্যা আহমেদ, আমি যতদুর জানি মার্কিন শব্দটি আমেরিকা নামের বাংলারূপ।
@সফিক, আমার প্রশ্নটা আসলে সেটাই ছিল, ‘United States’ না হয় ‘যুক্তরাষ্ট্র’ হল, আমেরিকা কী করে ‘মার্কিন’ হয়ে গেল? মার্কিন শব্দটার কী কোন অর্থ আছে?
@বন্যা আহমেদ,
আমেরিকান -> মেরিকান -> মার্কিন?
@রৌরব,
সঠিক। এর আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। মনে আছে ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা? 🙂
@বন্যা আহমেদ,
এই ব্যাপারটা কিন্তু প্রথমে লর্ড অ্যাকটনের উদ্ধৃতি ও হায়েকের প্রথম অনুচ্ছেদে আছে। বিভিন্ন গ্রুপ, যাদের মধ্যে প্রচুর অমিল, তারা নানান কারণে এক হতে বাধ্য হয়েছে। যেমন, ধ্রুপদী উদারপন্থীরা ভাগ হয়ে ডেমোক্রেট দলেও আছেন (তথাকথিত “নীল কুকুর” ডেমেক্রাটদের কেউ কেউ) আবার রিপাবলিকান দলেও আছেন (রন পল)।
হ্যাঁ সেটাই। বুশ হচ্ছে সামাজিক রক্ষণশীল, আর মৌখিক ভাবে ফিসকাল রক্ষণশীল। বস্তুত তাকে কর্পোরেটিস্ট বলা চলে। টি পার্টি ফিসকালি রক্ষণশীল হলেও তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট ধরণের কিছু উপাদান পাওয়া যায় (populism ইত্যাদি)।
আসলে রক্ষণশীল লেবেলটাই সমস্যামূলক। এই প্রশ্নটা অভিজিৎও করেছেন, যার ভাল কোন জবাব আমি দিতে পারিনি।
ক্রিস্টোফার হিচেন্স কোথাও বলেছিলেন, “what is important is not what you think, but how you think”। হায়েক যাদেরকে রক্ষণশীল বলছেন, তাদের এজেন্ডা কি সেটা অত গুরুত্বপূর্ণ নয় (হায়েকের আলোচলার জন্য)। তাদের এজেন্ডা যাই হোক না কেন, তারা সেই মতামতে পৌঁছেছেন আকস্মিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে গিয়ে। তুলনায় হায়েক, বা হায়েকের অর্থে যারা “উদারপন্থী”, তারা হয়ত একই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন, কিন্তু ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করবার কারণে নয়, উদারপন্থার পদ্ধতি ব্যবহার করে।
সেটা ঠিক, কিন্তু তারা এটাও চায় যে এই সরকার সমমনা হলেও তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হোক।
সেই সংজ্ঞার ব্যাপার। আজকের উদারপন্থীদের হায়েক উদারপন্থী বলতেনই না। একারণেই হায়েকিয় উদারপন্থাকে আলাদা করার জন্য একে ধ্রুপদী উদারপন্থা বা libertarianism বলাই শ্রেয়। হায়েক নিজেও এই প্রবন্ধে “উদারপন্থা” শব্দটাকে ব্যবহার করার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত, প্রায় apologetic।
@রৌরব,
সুন্দর, সরল অনুবাদ ভালো লাগলো পড়ে।
@তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ 🙂
চমৎকার সাবলীল অনুবাদ হয়েছে। মূল লেখাটা পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছি। কষ্ট হয়েছে পড়তে ইংরেজি জ্ঞানের অভাবে। কিন্তু আপনার অনুবাদে হোঁচট খাই নি বিন্দুমাত্রও। পড়াটা সে কারণেই হয়েছে মসৃন এবং আরামদায়ক।
মুক্তমনায় টাকা-পয়সা থাকলে আমি আপনাকে আর তানভীরকে অনুবাদক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে দিতাম। দুর্ভাগ্য যে কিছুই নেই আমাদের। অনেকে অবশ্য বলে যে, আমরা নাকি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ আর ইজরায়েলি গুপ্তচর সংগঠন মোসাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা পাই। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, সেই টাকা আমি কখনোই চোখে দেখি নি। এদের সাথে প্রাথমিক যোগাযোগের মূল দায়িত্ব অভির। সেই মনে হয় পুরো টাকাটা মেরেটেরে দেয়। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যি বলতে, আমার মনে হয়েছে হায়েকের লেখাটি আসলেই কিছুটা জবড়জং (ভাষাগত দিক থেকে)। পুনরাবৃত্তি আছে কিছু জায়গায়, যার উদাহরণ এই পর্বেও পাওয়া যাবে। অবশ্য অনুবাদের সাফাই নয় এটা, সেটার দুর্বলতার জন্য আমিই দায়ি … 😛
আর, আপনাকে আমার পেপ্যালের নাম্বারটা জানিয়ে দেব। মাসে মাসে “ভারতমাতা বৃত্তি” বা “জায়ন মেধা পুরস্কার” এধরণের কোন শিরোনামে কিছু কিছু টাকা জমা পড়লে বাধিত থাকব।