ভুমিকাঃ এই প্রবন্ধে যা লেখা সব আমার নিজের ধারণা এবং এখানে ব্যবহৃত সব fact এর সঠিকতার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছি না। কোনও fact এ ভুল থাকলে সেটি ঠিক করিয়ে দেওয়ার জন্য সবার কাছে অনুরোধ থাকল। আর আমার idea এর বিরুদ্ধে কোনও যুক্তিমূলক মন্তব্যকেও আমি স্বাগতম জানাচ্ছি।

Happiness. এই শব্দটি খাটি বাংলা কি তা আমার ঠিক জানা নেই। হয়তো ‘সুখ’ শব্দটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তাতে এই শব্দের অর্থ কিছুটা ক্ষুন্ন হয়। তা বাংলা মানে যাই হোক না কেন, happiness শব্দটির সাথে সবাই পরিচিত। আমাদের মোটামুটি সবারই জীবনের লক্ষ্য সুখ অর্জন করা। বিশেষ করে যারা নাস্তিক, তাদের জীবনের এটাই মূল লক্ষ্য (যদিও এই ধারণাকে সাপোর্ট করার মত কোন প্রমাণ আমার কাছে নেই)।
কিন্তু ‘সুখ’ আসলে কি? সুখ কি দুঃখ, রাগ, আনন্দ বা বেদনার মত শুধুমাত্র একটি আবেগানুভূতিই নয়? অবশ্যই সুখ শুধুমাত্র একটি অনুভূতি, অন্তত অনেক কয়েকটি অনুভূতির সমষ্টি। তাহলে সুখের দাম অন্য সব অনুভুতির চেয়ে এত বেশি কেন? এখানে আগে আরেকটি বিষয় নিয়ে আগে বলা উচিত, সেটি হল ‘আবেগ’। আবেগ আসলে কি? জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আবেগ আমাদের মস্তিষ্কে বিশেষ ধরণের বিক্রিয়ার জন্য সৃষ্টি হয়, এবং এটি আসলে আমাদের মস্তিস্কের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে এই আবেগ এর কাজ/প্রয়োজন কি? বিবর্তন এর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে দেখা যায় মানুষ (এবং অন্য সকল পশুও) এর অস্তিত্ব রক্ষায় আবেগের ব্যাপক অবদান রয়েছে। ভয় আমাদের অজানা এবং জানা বিপদ থেকে দূরে রাখে। ভালাবাসা আমাদের সমাজ এবং পরিবার গঠনে সাহায্য করে। যা করলে দুঃখ আসে, আমারা ভবিষ্যতে তা করা থেকে বিরত থাকি। এখানে দেখা যাচ্ছে যে আমরা আবেগ একটি হাতিয়ার বা tool হিসেবে ব্যবহার করি। এই হাতিয়ার আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। ‘সুখ’ও এর ব্যতিক্রম নয়, সুখও অন্য সব আবেগের মত একটি হাতিয়ার। যে কাজ করে আমরা সুখ অনুভব করি, সে সকল কাজ করতে আমরা ভবিষ্যতে উদ্বুদ্ধ হই। সে কারণে সুখকে কোন লক্ষ্য বলা যুক্তিহীন। সুখের পিছনে ছোটা যুক্তিহীন। বরং ‘সুখ’ অন্য কোন লক্ষ্য অর্জনে ‘হাতিয়ার’ মাত্র। এবং আসলেই, সুখের অনুভুতি পাওয়া এত কঠিনও নয়। এজন্য আমাদের মস্তিস্কের যে অংশে, যে বিক্রিয়া সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে, তা রেপ্লিকেট করাই যথেষ্ট। সুখই যদি একজনের মূল লক্ষ হয়, এজন্য তাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না, ড্রাগ গ্রহন করেই এই রূপ অনুভূতি পাওয়া যেতে পারে। সুখ আমাদের কার মূল লক্ষ্য হতে পারে না, হয়া উচিত নয়। আমাদের লক্ষ্য হতে পারে আমাদের প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা। প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা স্পষ্টতই এত সহজ কন কাজ নয়। আমাদের সামনে অনেক বাধা আছে। পরিবেশ বিপর্জয় থেকে শুরু করে, দরিদ্রতা, এমনকি সুর্যের জ্বালানী শেষ হয়ে যাওয়া, বিগ ক্রাঞ্চ (অথবা মহাবিশ্বের অন্য কোনরূপ মৃত্যু) – সবই আমাদের প্রজাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এই পরিণতির সবগুলির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের জ্ঞানের পরিধি আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বিজ্ঞানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। জ্ঞানের সমৃদ্ধির জন্য একটি বড় বাধা হল অযৌক্তিক কুসংস্কার, মানসিক অজ্ঞতা এবং নতুনকে গ্রহন না করার মানসিকতা। বিজ্ঞানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জ্ঞানের পরিধির বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন জ্ঞানের সকল বাধাকে দমন করা।
আমি মনে করি সুখের পিছনে ছোটা যুক্তিহীন, বোকামি, অর্থহীন। আমি সুখের পিছনে ছুটতে রাজী নই, কিন্তু আমি সুখকে আমার দরকারে এবং মানব যাতির কল্যাণে ব্যবহার করার পরিপন্থি। সুখ আমাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। আবার অধিক সুখ দক্ষতা হ্রাসও করে। সকল আবেগের মিশ্রণের যে অনুপাত একজনের কাজের দক্ষতা সর্বোচ্চ করে, সেটি ব্যবহার করে তার কাজ করা উচিত। এবং আমাদের সকলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা।