লিখেছেনঃ নাসিম মাহ্মুদ
এ বছরের গ্রীষ্মটা বেশ দীর্ঘ ছিল। চারদিকে সবুজ পাতা আর গায়ে সোনালী রোদ। মনে হয় এমন যদি থাকত সারাটা জীবন। তা কি হয়? সোনালী দিনগুলোকে ভালভাবে পাবার আগেই যাই যাই করছে। দেখতে দেখতে পাতা ঝরার বেলা এসে গেল। গাছগুলো সাজছে রঙিন পাতায়। উইলো, বার্চ, মেপল আরও কত নাম না জানা গাছ। আমার ঘরের জানালা দিয়ে রোজ দেখি, পাতাগুলো একটু একটু করে রং বদলাচ্ছে। সবুজ থেকে হলুদ কিংবা গোলাপী, ধীরে ধীরে লাল।
ইদানীং ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে। কোন দূর শীতল মেরু থেকে শ্বেত ভালুকের ঘ্রান নিয়ে এসেছে। রঙিন পাতাগুলো ঝরতে শুরু করেছে। হঠাৎ হঠাৎ দমকা বাতাস এসে ঝরিয়ে দিচ্ছে পাতা। ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি শুনি কান পেতে। আমি মাঝে মাঝে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। আজ একটু বেশি ঠান্ডা পড়েছে। প্রতিদিনের মত পাতলা কার্ডিগেনে ঠান্ডাটা যাচ্ছে না। ঘর থেকে একটা চাদর নিয়ে এলে ভাল হতো।
আমার বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে ঘরের লাগোয়া সবুজ মাঠ। ঘাসগুলোও কিছুটা হলদে হয়ে এসেছে। মাঠের পাশেই গাছের সারি। অনেকটা জঙ্গলের মতই। পুরো মাঠ ভরে গেছে ঝরা পাতায়। পাশের জঙ্গলেও তাই। আর তাই এরই মাঝে বনের মধ্য থেকে উঁকি দিচ্ছে আমার প্রিয় বাদামী খরগোশদুটো। জঙ্গল থেকে বের হয়েই সতর্কভাবে কান খাড়া করে তাকিয়ে আছে। আমার থেকে অনেকটা দূরে যদিও, তবুও মনে হচ্ছে ওরা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ এক ঝলক বাতাস এল। ঝরে পড়ল আরো অনেক পাতা। দুলে দুলে পড়ছে। খরগোশগুলো চমকে ছুটে গেল বনের মধ্যে।
দূরের বেঞ্চিটা কেমন শূন্য দেখাচ্ছে। অনেকগুলো পাতা পড়ে আছে। তাতে শূন্যতাই যেন আরো বেড়েছে। প্রতিদিন আমি ঐ বেঞ্চিটাতে বসি। হেলান দিয়ে বসে উল বুনি। এভাবেই আমার দিনগুলো কেটে যায়। গ্রীষ্মের দিনগুলোর মাঠের পাশের ঝাঁকের ছোট সাদাফুলগুলো দেখেই আমার আনন্দ। উল বুনতে বুনতে কখনো ভুল হয়ে যায়। আজ এ নিয়ে তিনবার হলো। আমার তাতে খারাপ লাগে না। তবুও সময়টাতো কেটে যাচ্ছে। সারাটা দিন আমার কিই বা করার আছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করা। নাস্তা সারা। এরপর নার্স আসলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। প্রতিদিন একই প্রশ্ন। আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। এমনকি নার্সটি কিভাবে কলম ধরবে, কিভাবে লিখবে, সব খুটিনাটি।
প্রথম প্রথম কষ্ট লাগত, অসহ্য লাগত। আমিতো সুস্থ, কেন আমাকে মানসিক হাসপাতালে রেখেছে। ওরা বোঝায় যে, এটা আমার মনে হচ্ছে। আরও কিছুদিন এখানে থাকতে হবে। তবে আমি সুস্থ হয়ে উঠবো।
প্রথমদিকে একা থাকতে খুব কষ্ট হতো, ছোট্ট বাচ্চাটার জন্য, মার্কের জন্য। প্রথমদিকে মার্ক প্রতিদিন এসেছে। পরে সপ্তাহে দু’দিন। এটাই এখানকার নিয়ম। এভাবে মাস ছয়েক গেল। অফিসে মার্কের প্রমোশন হলো। এরপর শুধু রবিবার আসত। মাঝে মাঝে তাও পারতনা, অফিসের কাজে বাইরে যেতে হয়। আমিও বুঝি, আর কত? মার্কের কথা কেমন যেন পাল্টে গেছে। যাওয়ারই কথা। সে কিই বা করতে পারে। তারও একটা জীবন আছে।
মার্ক আসে, আমার সাথে কথা বলে, নার্সদের কাছে খোঁজখবর নেয়। বাচ্চাটাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু উপায় নেই। বাচ্চাটাকে বোর্ডিং স্কুলে দিয়েছে। এতটুকুন শিশু, পারছে তো? খুব কষ্ট লাগে। বছরে একবার দেখা হয়।
মার্কের সাথে শেষবার দেখা হবার পর আবারও প্রায় দু’মাস হয়ে গেল। আজ মার্কের আসার কথা। এস্টেলাকেও আনার কথা। আজ মেয়েটার জন্মদিন। আমার জীবনে এস্টেলার জন্মদিনের চেয়ে বড় আর কিইবা আছে। আজ আমি অন্য সব দিনের চেয়েও আগে ঘুম থেকে উঠেছি। নাস্তা করেছি। নার্সদের সাথে বিনা যুদ্ধে ওষুধ খেয়েছি।
এস্টেলার জন্য গোলাপী উলের একটা টুপি বুনেছি, আজ ওর জন্মদিনে উপহার দিব। নার্সকেও তাই বললাম। নার্স হাসে। আমি জানি ওরা আমাকে অসুস্থ ভাবে, তাই এমন করে হাসে। কিন্তু একদিন যখন আমি এখান থেকে চলে যাব, তখন বুঝবে, আমি কিছুই ভুল বলিনি। আমার সত্যিই এস্টেলা আছে।
আজকাল আমার কেমন যেন লাগে। বয়সের ছাপ পড়েছে, গালে, নাকে, চুলের ডগায়। আমার ভীষণ লম্বা চুল ছিল, সোনালী। মার্ক কাব্য করে বলত, সেবা নগরের রানীর মত স্বর্ণ ঝরানো চুল, যেন সোনালী ঝর্নাধারা। আমার সে চুল আর নেই। একদিন হাসপাতালে ওরা ঘুমের মধ্যে কেটে ফেলেছে। ওরা তো আসলে আমার শত্রু। ওরা তো আমার ভাল চায়ই না, আমার কথাও কেউ বিশ্বাস করে না।
আজ রবিবার। গত বেশ কতগুলো রবিবার গেল, মার্ক আসেনি। আজ সে আসবেই। সকাল থেকে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। জানি, নার্স দেখলেই বলবে, ঠান্ডা লাগবে, ভেতরে যাও। ওরা কি বোঝে, মার্ক আর এস্টেলার জন্য আমি সব করতে পারি! আমার কোন কষ্টই হয়না। ওরা দুপুরে আসবে। এখনো অনেক দেরি। কিন্তু আমার তর সইছে না। আমি এরই মধ্যে গেটের কাছ থেকে একবার ঘুরে এসেছি। গেটকিপারকে বলে এসেছি, মার্ক আসলেই যেন আমাকে ডাক দেয়, সাথে সাথে। আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে, মার্ক আসলে ওরা হয়ত আমার সাথে দেখা করতে দেয়না। গেটের পাশে গিয়ে বসে থাকতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু তার নিয়ম নেই। অদ্ভুত একটা হাসপাতাল। হাসপাতাল না ছাই। আসলে জেলখানা। ওরা হয়ত ছদ্মবেশী পুলিশ। সব মিথ্যুক।
আমি গেটের কাছ থেকে চলে এলাম। হেঁটে ঘাসে ডাকা মাঠটা পার হয়ে প্রায় গাছগুলোর কাছে চলে এলাম। আমার ঘরটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। মার্ক আসবে, ঘর গোছাতে হবে। গুছানোর আসলে কিছু নেই। ঘরে একটা মাত্র জামা। একটা কম্বল। এটা তো জেলখানা। তবুও আমি আবার তাড়াহুড়া করে ঘরে গেলাম। ভাঁজ করা কম্বলই আবার খুলে ভাঁজ করলাম। জামাটা হ্যাঙ্গারে ঝোলানোই ছিল। হাত দিয়ে আবার ঠিক করলাম। ইস, কিছু ফুল এনে রাখতে পারলে ভাল হতো। ফুল কোথায় পাই? পাশের রুমের মিসেস জেনকে জিজ্ঞেস করব, নাকি নার্সকে। ফুল কোথায় পাই। দুঃশ্চিন্তায় আমার গা ঘামতে শুরু করল। হাত ঘেমে গেছে। আমি টের পাচ্ছি, এই ঠান্ডা বাতাসেও আমার ঘা গরম হয়ে গেছে। হাত ভিজে গেছে। মার্ক চলে আসবে। উফ! আমি দৌড়ে নার্সের কাছে গেলাম। ফুল কোথায় পাই, নার্স হাসল। আমি ঠিকই বুঝতে পারছি, ও এখন শয়তানী করবে। ওরা জেলখানার জল্লাদ। আমি উঁচু গলায় আবারও বলতে চাইলাম, ফুল কোথায় পাব। বলতে পারলাম না। আমার জিভ জড়িয়ে আসছে। নার্স ছুটে আসছে আমার দিকে। আমি হাত দিয়ে একটা ঝটকা মারলাম। ব্যাথা পেলেও নার্সটা বিরক্ত হলোনা। নিশ্চয়ই খারাপ মতলব আছে। আমি বলতে চাইলাম, মার্ক আসবে, ফুল……। নার্সটা বলল, মার্ক আসতে এখনো অনেক দেরি। সে বিকেলে আসবে। এর মধ্যে বাগান থেকেই ফুল আনা যাবে। আমার হঠাৎ মনে পড়ল, বাগান ভরা ফুল। যদিও ঠান্ডা পড়াতে ফুল অনেক কমে গেছে, তাও অনেক ফুল আছে বাগানে। ইস, আগে কেন মনে পড়ল না! কিন্তু নার্স জোর করে ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছে। আমার চোখ ভারী হয়ে আসছে। নার্স বলছে আরাম করে ঘুমাতে। সে নিজেই ফুল এনে রাখবে। আমি বলতে চাইলাম, না। আমি নিজে আনব। পারলাম না। একটা আরাম ভরা গভীর অতলে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। শীত শীত লাগছে। নার্স একটা কম্বল এনে ঢেকে দিল। নিজে নিজেই কথা বলছে, নাকি আমাকে কিছু বলছে, বুঝতে পারছি না। বুঝলাম, আজ রবিবার… … বাকি কথাগুলো হারিয়ে গেল। ধীরে ধীরে আমি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম, আর ভাবছিলাম, এখন মার্ক চলে আসলে কি হবে। ওরা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল কেন….. বেশি কিছু ভাবতে পারলাম না। গভীর ঘুমের অতলে হারিয়ে গেলাম।
আমার ঘুম ভাঙল, তখন বিকেল। অন্য একটা নার্স ডেকে তুলল। আমার দূর্বল লাগছিল। নার্সটির হাতে স্যুপ। আমাকে স্যুপ খেতে বলল। আমি নিজে খেতে চাইলেও বলল, সে খাইয়ে দিবে। ভালভাবে চোখ খুলে দেখি, পাশের টেবিলে কিছু ফুল রাখা। জিজ্ঞেস করলাম, কে এনেছে, মার্ক? না সকালে যে নার্স ডিউটিতে ছিল, সে সাজিয়ে রেখে গেছে। ভাবলাম নার্সটা এত খারাপ না। কালই দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। আমার হঠাৎ মনে হলো, আমি তো এখনো রেডি হইনি। কয়টা বাজে, মার্ক কি এসে পড়েছে, নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল, আমার ভিজিটর আসতে এখনো এক ঘন্টা বাকি। আমি পোশাক পাল্টাতে চাইলাম। সে বলল, আমার পোশাক অনেক সুন্দর, শুধু চুল আঁচড়ে নিলেই হবে। সে নিজেই আমার চুল আঁচড়ে দিল। আমার চুল এখন প্রায় ছেলেদের মত। এ দেখি এতেই অনেক খুশি। বলল, সুন্দর। আমি আগে আমার চুল কত বড় আর সুন্দর ছিল বললাম। সে নিজেই জানতে চাইল ছবি আছে কি না। বললাম, মার্ক এর কাছে আছে। ঠাট্টা করে বলল, না এখন দেখাতে হবে। আমার ওকে খুব বন্ধু মনে হলো। সে বলল, তুমি আগেও বলেছ, ছবি দেখাবে, দেখাওনি। আমিতো অবাক, জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের আগেও দেখা হয়েছে কি না। সে হেসে বলল, কি জানি। তাতে কি এসে যায়? আজ আমাদের দেখা হলো এটাই বা কম কি। পরের বার যেন ছবি দেখাতে না ভুলি। আমি বললাম আচ্ছা। আমার চুল আঁচড়ে আয়নাতে দেখাল, ভালই লাগছে। চেহারায় শুধু বয়সের ছাপ বাড়ছে। এই আয়নায় কতগুলো মাস আর বছর মুখ দেখছি জানিনা, আর কতদিন দেখতে হবে তাও জানিনা। এটাই খারাপ লাগে বেশি। যদি জানতাম, আর এক মাস বা এক বছর থাকতে হবে। আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতাম।
মার্ক আসতে আসতে সেই বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এল। মার্ক যখন আসল, আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। মার্ক যে এস্টেলাকে আনেনি, তার কথা মনেও এলনা। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলতে পারলাম, তুমি এতমাস পরে কেন আস? কেন প্রতি সপ্তাহে আসনা? মার্ক ধীরে ধীরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, লরা, আমি তো গত রবিবারেও এসেছি, তোমার মনে পড়ছে না? আমি ভীষন লজ্জা পেয়ে গেলাম। মুখ লুকিয়ে মার্ককে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। বাইরে প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে। খরগোশ দু’টিও বুঝি লজ্জা পেল। ছুটে হাড়িয়ে গেল অন্ধকারে। এক ঝলক বাতাসে মর্মর ধ্বনিতে ঝরে পড়ল আরও কতগুলো সোনালী পাতা। জীবনের সোনালী দিনগুলোর মত ওরাও ঝরে যায়, বড় অবেলায়।
কোথায় জানি ছন্দটা ঠিক নেই।
তবে অধ্যাবসায়ের ফলে অনেক কিছুই সম্ভব হয়।
@ক্রান্তিলগ্ন,
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আমি দু:খিত যে আপনার মন্তব্যের কোনটিই আমি বুঝতে পারিনি।
আপনি কোন ছন্দের কথা বলছেন?
এটা দিয়েই বা কি বোঝাতে চেয়েছেন?
দয়া করে সুনির্দিষ্ট করে বলুন। উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
@নাসিম মাহ্মুদ/
মানবদেহ কি রকম আমরা সবাই জানি, তারপরও আমরা পোশাক দ্বারা শরীর ঢাকি, নগ্ন অবস্থায় থাকি না। তেমনি কথাকেও নগ্ন রাখা কিংবা করা উচিৎ না।
আমি খুব কম সময়ই নগ্ন কথা বলি।
আমি চক্ষুলজ্জাহেতু আমার মন্তব্য আর খোলাসা করতে পারব না। আমায় ক্ষমা করবেন।
@ক্রান্তিলগ্ন,
আপনি যথার্থই বলেছেন। আপনার উপলব্ধি আমাকেও স্পর্শকরেছে।
আপনার মন্তব্য সবার কাছে এমন ঠেকছে,
“এপার হতে মারলাম তীর লাগল কলাগাছে,
হাটু বেয়ে রক্ত পরে চোখ গেলরে বাবা।”
কারও চক্ষুলজ্জা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকলে, জনস্বার্থে তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে লিখলেইতো হয়!
:lotpot: :-/
@নাসিম মাহ্মুদ/
:-@
গল্পটা ভীষণ ভাল লেগেছে। :rose:
@সৈকত চৌধুরী,
আপনাকে ধন্যবাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর একটা কথা প্রায়ই শুনতে পেতাম,সেটা হচ্ছে কারো লেখা নিম্নমানের হলে তাকে ‘মোরগা লেখক’ বলা হয়।তো আমি এই মোরগা আর প্রকৃত লেখকদের পার্থক্য বুঝার জন্য বহু অখ্যাত আর বিখ্যাত লেখকদের বই কিনলাম আর পড়তে শুরু করলাম।একটা বিষয় খেয়াল করলাম যে,মোরগাদের সাথে প্রকৃত লেখকদের পার্থক্য হচ্ছে প্রকৃতরা বেশ নাটকীয় হয়ে থাকেন।ছোট গল্পে আমি যে ধারাটা দেখলাম বেশ আধুনিক ,আমার দৃষ্টিতে,তা হল-ছোট ছোট বাক্যে তার অনুভূতিকে ধারণ করা,কিছুটা কবিতার মতো।এখনে এক ধরণের প্রতীকায়নও কাজ করে খুব সূক্ষ স্তরে।আমি আপনার লেখায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো পেয়েছি।আপনার গল্প আমাকে বেশ নাড়াও দিয়েছে।গীতা দাস যেটা বলেছেন,হ্যাঁ,এই রকম মনস্তাত্তিক কনসেপ্ট বিভিন্ন গল্পে থাকতে পারে।অনেকেই একই থিম নিয়ে বিভিন্ন বিখ্যাত কাজ বিভিন্ন সময়ে করেছেন।কিন্তু এই গল্পে আপনাকে দেখতে হবে লেখক কীভাবে ডেলিভারী দিয়েছেন।এই গল্পে প্রায় প্রতিটা ছোট ছোট বাক্যের প্রতিকায়নে সাসপেন্স বেশ তীব্র হয়েছে।আপনি অসাধারণ লিখেছেন।শুভকামনা রইল।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
প্রথমত, “নিম্নমানের হলে তাকে ‘মোরগা লেখক’ বলা”র বিষয়টি আমার ভাল লাগেনি 🙁 একজন নতুন লেখক কিছুটা খারাপ লিখতেই পারেন। প্রবীনরাও যে খুব ভাল লিখছেন তারই বা প্রমান কী!
আমার লেখাটি আপনার ভাললেগেছে জেনে খুশী হলাম:)
অনেক ধন্যবাদ।
@নাসিম মাহ্মুদ/
//“নিম্নমানের হলে তাকে ‘মোরগা লেখক’ বলা”র বিষয়টি আমার ভাল লাগেনি।// :yes: :yes:
@নাসিম মাহ্মুদ, এটা বাংলাবাজারের বহুল আলোচিত শব্দ।
আপনার লেখার স্টাইলটা বেশ ভালো লাগল। আরোও লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আর হ্যা, একটা লেখার সাথে অন্য আরেকটা লেখার ভাবগত মিল থাকতেই পারে, এটা এমন কোন বিষয় না। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আপনাকে ধন্যবাদ। আমার এই বিশেষ “স্টাইলটা” কিন্তু আমার অগ্ঞাত! একটা বিষয় কি লক্ষ্য করেছেন এই “মিলের” ব্যপারটা কিন্তু পরবর্তি সবার “আলোচনায়”ই আসছে। দার্শনিকের ঢঙে বললে, “ফ্যাক্ট এন্ড পসিবিলিটি”র মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থেকেই হয়ত আসছে। আর শুরুতে এই বিষয়টিই আমাকে সঙ্কিত করেছিল! তবে বিষয়টা আমি এখন বুঝতে পেরেছি। শুভেচ্ছা রইলো, আর আমার আসছে দিনের লেখার সমালোচনা লেখার দাওয়াত রইলো। 🙂
নাসিম মাহ্মুদ,
ছোটগল্পের আঙ্গিক চমৎকারভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। ভাষাটাও ঝরঝরে। তকতকে। তবে আপনার লরার মতই আমার মনের অবস্থা। ( ক্ষমা করবেন ) কোথায় জানি এমন ধরণের একটা কাহিনী পড়েছি। কিন্তু মনে করতে পারছি না।
@গীতা দাস,
লেখাটির প্লট আজ থেকে চার বছরের কিছু বেশীদিন আগে মাথায় আসে। লিখতে পারছিলাম না। কারন স্পষ্ট, আমি কোন বড় লেখক না। লেখক হওয়ার একটা সাধ এখনও আছে। তবে, সময় যে খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে তা বেশ অনুভব করছিলাম। গত চার বছরে আমিওতো বুড়ো হয়েছি, হচ্ছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু কত কিছুইতো করা হচ্ছে না, “বহু ভালবাসা বাসি দিয়েও বসন্তের সময়টাকে আটকাতে পারছি না” এই বোধ ইদানিং আমাকে অনেক বেশী করে ভাবিয়ে তুলছিল। তাই হঠাৎই লিখে ফেললাম। লিখলাম তাও খুব অদ্ভুদ যায়গায় বসে। স্পেনের আন্দালুসিয়ার সৈকতের শহর মালাগা যাচ্ছিলাম কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্য। বিমানে বসে যাওয়া ও আসার সময় দুই ভাগে লিখে ফেললাম। বেশী কাগজ ছিলনা হাতে, তাই কষ্ট করে লিখতে হল।
এখানে দুটিকথা না বললেই নয়, এই দীর্ঘ চার বছর, আমি প্রতিনিয়ত গাছের পাতা ঝরা খুব মন দিয়ে দেখেছি।(এ নিয়ে ২/১ টি গল্পও লিখেছি 🙂 ) অনেক ছবি তুলেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি বয়স বারার সাথে সাথে আমার মনের বোধটাকে। একজন রমনী তার বয়স বাড়াটাকে কিভাবে দেখবে? এটা এখনও আমার কাছে বড় একটা প্রশ্ন। এগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখেনা। অবজারভেশনের দরকার ছিল এবং আছে। আমি ঝরা পাতার দেশে বড় হইনি।
নটরডেম কলেজে আজমল স্যার তার অনুজ, লেখক হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে বলেছিলেন, হুমায়ুন আহমেদ তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বেইলীরোডের ড্রেনে কি ধরনের শৈবাল আছে। কারন তিনি তার গল্পে বেইলীরোডের (হয়ত) ড্রেনের বিষয়ে কিছু লিখবেন। আজমল স্যার খুব প্রসংশা করলেন, হুমায়ুন না জেনে বা জানার চেষ্টা না করেই লেখে না। আমি মুগ্ধ হইনি। একজন লেখকের তাইতো করার কথা! আমার ক্ষুদ্র কলমে তাই চেষ্টা করেছি। হ্য়তো সামনের গল্পে আরও আসবে।
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি গভীর আগ্রহের ও গুরুত্বের সাথে পড়ছি, তাই সময় নিয়েছি সঠিক উত্তর দেয়ার জন্য। মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া বা করার প্রশ্ন আসেনা, আমরা যারা লিখছি (বা আমার মত অন্তত চেষ্টা করছি) তারা জেনে বুঝেই লিখছে, যে ভাললাগা মন্দ লাগা আসবে। আমরা যারা মন্তব্য করছি, তারাও দায়িত্ব নিয়ই ‘সাধারনত’ করছি। গল্পের লরার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই বলছি, তার অবস্থানটা একটু ভিন্ন যায়গায়। তার শশ্রুসার প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রায় নবজাত একটা লেখা প্রসঙ্গে, সামান্যতম তথ্য প্রমান ছাড়া, শুধুমাত্র হেয় অনুমান নির্ভর এই ধরনের প্রশ্ন তোলাটা খুব বেশী প্রগ্ঞার পরিচয় নয়, এবং এটা দায় মুক্তির জন্য যথেষ্ট কঠিন যুক্তিও নয় বলে আমি ব্যথিত বোধ করা থেকে বিরত থাকতে পারছি না। এটা অন্য পাঠককেও দু:খিত করবে। একটা সহয লেখা পড়ার পর, এই সন্দেহের তীর তাদেরকেও বিদ্ধ করবে, তারা পরিচ্ছন্ন আনন্দের পরিবর্তে বিবমিশা বোধ করবে। যা কোন ভাবেই কারো কাম্য নয়।
মুক্তমনায় আমি নতুন। তবে মুক্ত মন নিয়ে থাকতে চাই। তাই আমি বিনয়ের সাথে আহ্বান জানাব, দয়া করে কিছু সময় নিন। মনে করুন। সকলকে জানান কোথায় পড়েছেন, যেটা আমাদের সকলের জন্যই সব দিক থেকে ভাল হবে।
@নাসিম মাহ্মুদ,
আমি বিষয়টি এভাবে বুঝাতে চাইনি। আপনি কোথাও থেকে কপি করেছেন এমন ইঙ্গিত করা আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল না। যদি আমার মন্তব্য এমন অর্থবহন করে তার জন্য আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। আমি এমন মানসিক রোগীর কাহিনীর / গল্ল্পের সমাপ্তির সাথে মিলে এমন কোথায় যেন পড়েছি। অর্থাৎ চরিত্রটির স্বাভাবিক পরিণতির বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছি। আশা করি পাঠকরা বিষয়টি বুঝবেন আর আপনিও আপনার লেখা চালিয়ে যাবেন।
@নাসিম মাহ্মুদ,
আপনার দীর্ঘ লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। আপনি একটুও চিন্তা না করে লিখে যান। আবার একটা কথা জানেন কী” বেদনাই সৃষ্টির মূল রহস্য”। আপনি লিখবেন আপনার লেখা আমার মত আরও অনেকেরই মন কেড়ে নিয়েছে। বই আমিও কম পড়িনা আমি আপনার লেখার সাথে কোনো লেখার মিল পাইনি। তবে এক ভাবনা আমরা অনেকেই ভাবতে পারি। এখন ভাবনায় মিলে গেলে করার কিছু নেই।
আমার মনে হয় গীতা’দি সেইটাই বোঝাতে চেয়েছেন।
আমরা অনেকেই আপনার পরবর্তি লেখা পড়বার আশায় থাকলাম।
এইটা গল্প মনে হল না। মনে হল একটা জীবনের প্রতিচ্ছবি। যেখানে সময় অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে,যেখানে অসুখ অনেক সুখ কেড়ে নিয়েছে। অশ্রু সংবরণ করা কঠিন হয়ে গেল। বড্ড মন কেমন করে উঠল। লেখককে আমার আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা।
@আফরোজা আলম,
আপনাকে ধন্যবাদ। ভাললেগেছে জেনে খুশি হলাম। এটা জীবনের প্রতিচ্ছবি কিনা জানি না; তবে আমি নিজে খুব অনু্ভব করি যে সময় চলে যাচ্ছে। তাকে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। লেখাটি লিখতে আমি অতিদীর্ঘ সময় নিয়েছি! যা ভেবেছি, লেখায় তার অনেক কিছুই ফোটাতে পারিনি। আবার অনেক নতুন কিছু পেরেছি! সময়টা দু্ভাবে যাচ্ছে, ছোট ছোট দমকা হাওয়ায়, আবার দীর্ঘ ও প্রলম্বিত কিন্তু ঘ্রান ছড়িয়ে। দীর্ঘ পথে বা ছোট্ট ঢিবি ডিঙিয়ে সময়…সময় যাচ্ছে!
@নাসিম মাহ্মুদ,
নাসিম মাহমুদ,
আপনার সাবলীল লেখার জন্য ধন্যবাদ। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একধরনের রহস্যময়তা ছিল যেটা ভালো লেগেছে। তবে, যখন মানসিক রোগনিয়ে বা যেকোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে লিখবেন তখন আরেকটু সচেতনভাবে বিষয়টা নিয়ে পড়লে লেখাটা আরো বেশী নিখুঁত হবে।
নাজমুন