ইদানিং পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ে ব্যপক কথা বার্তা হচ্ছে সারা দুনিয়াতে । বিশেষ করে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষ উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায়ও নেই। দিন দিন যে ভাবে উষ্ণতা বেড়ে চলেছে তা সত্যিই আতংকের বিষয়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন উনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের পর পরই মূলত: বিশ্বের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর কারনও খুব সোজা তা হলো – এ সময়ের পর থেকে শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে যে যন্ত্রের ব্যপক ব্যবহার শুরু হয় তার চালিকা শক্তি ছিল ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন- কয়লা, তেল এসব। কয়লা ও তেল পোড়ালে বিপুল পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এটা আমরা এখন প্রায় সবাই জানি। আর এটাও জানি যে , কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস হলো একটা গ্রীন হাউস গ্যাস। গ্রীন হাউস গ্যাস বলতে কি বোঝায়? অনেকেই বিষয়টি জানেন। তার পরেও একটু খোলাসা করা যাক। আমরা দেখেছি -শীত প্রধান দেশে কাঁচ দিয়ে এক খন্ড জমি উপর নীচ ঘেরা দেয়া হয় ও তার ভিতর শাক শবজি চাষ করা হয়, যাকে গ্রীন হাউজ বলা হয়। প্রচন্ড শীতের সময় যখন বাইরে বরফ জমতে থাকে , তখন এ গ্রীন হাউজের মধ্যে কোন বরফ জমে না। এর কারন হলো – স্বচ্ছ কাঁচের ফাক দিয়ে সূর্যের যে পরিমান তাপ ভিতরে প্রবেশ করে ঠিক সেই পরিমান তাপ আর বিকিরিত হয়ে বের হতে পারে না। কাঁচের দেয়াল তাপ বিকিরনে বাধা দেয়। তাই কিছু পরিমান তাপ ভিতরে অতিরিক্ত জমা হয়ে থাকে। এর ফলাফল হলো – গ্রীন হাউজের ভিতরকার তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার চাইতে বেশী থাকে তাই বাইরে বরফ জমতে শুরু করলেও ভিতরে তা জমে না ও উষ্ণ থাকে আর তার ফলে শীত কালেও শাক শবজি চাষ করা সম্ভব হয়। একে বলে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া। তো এ গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার নাম থেকেই গ্রীন হাউজ গ্যসের নাম করনের সূত্রপাত।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড তাপ ধরে রাখার কাজটা করে বলে একে গ্রীন হাউজ গ্যাস বলে। তার মানে- সূর্য থেকে যে পরিমান তাপ পৃথিবীতে পতিত হয় ঠিক সেই পরিমান তাপ প্রতিফলিত হয়ে পূনরায় মহাশূন্যে ফিরে যায় না। তা যদি যেত তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটত না। এ তাপের একটা অংশ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে থাকে, এর ফলে এরা নিজেরা যেমন কিছুটা উত্তপ্ত হয়, তেমনি গোটা বায়ূমন্ডলকেও উত্তপ্ত করে তোলে। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস যে পরিমান তাপ শোষন করত তা যদি আবার রাতের বেলায় বিমুক্ত করে দিত তাহলে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তবে পৃথিবীর জলবায়ূ গঠনের জন্য আবার সীমিত আকারে এ প্রতিক্রিয়ার দরকারও আছে। তা না হলে পৃথিবী হতো প্রচন্ড ঠান্ডা একটা জায়গা। সমস্যা হচ্ছে- বর্তমানে যা ঘটছে তা হলো বিষয়টা বর্তমানে চলছে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে । এটাই আমাদের বিশ্ব প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিরাট রকম হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য শুধু যে কার্বন ডাই অক্সাইড ই এ কান্ড টি করে মানে গ্রীন হাউজ গ্যাসের কাজটা করে তা কিন্তু নয়। বায়ূমন্ডলের জলীয় বাষ্প, মিথেন গ্যাস এরাও দারুন ভাবে এ কাজটা করে। যেমন- জলীয় বাষ্প প্রায় ৩৬-৭০%, কার্বন ডাই অক্সাইড ০৯-২৬%, মিথেন-০৪-০৯%, ওজোন ০৩-০৭% পর্যন্ত গ্রীন হাউজ এফেক্টের কাজ করতে পারে। কিন্তু তাহলে প্রশ্ন ওঠে- সব দোষ কেন কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপর দেয়া হচ্ছে? গুরুত্ব পূর্ন প্রশ্ন। বিষয়টি হলো – সেই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে যে পানি ছিল তা আজও প্রায় একই রকম আছে তাই তা থেকে উৎপন্ন জলীয় বাষ্পের পরিমানও প্রায় একই রকম।ওজোন গ্যাসের বিষয়টাও তাই। সেকারনে এরা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পর্যায়ক্রমিক ভাবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রন করেছে। তাই পৃথিবীতে পর্যায় ক্রমিকভাবে কখনো বরফ যুগের সূচনা ঘটেছে কখনো বা উষ্ণ যুগের সূচনা ঘটেছে , বলা বাহুল্য তা ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ন। যখন খুব ঠান্ডা যুগের সূচনা ঘটেছে তখন পৃথিবীতে বিচরন করা বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর এক বিরাট অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে শুধুমাত্র বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প বা অন্যান্য গ্যাসই এসব বিরাট পরিবর্তনের একমাত্র নিয়ামক তা ঠিক নয়, এর সাথে আরও অন্যান্য নিয়ামক আছে। কখনো কখনো উল্কাপাতও আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। এখন সবাই জানে যে আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে সারা দুনিয়ার প্রবল পরাক্রান্তের মত বিচরন করে বেড়ানো ডাইনোসর জাতীয় প্রানীরা সমূলে বিনাশ হয়ে গেছে এরকমই একটা উল্কাপাতের কারনে। প্রায় ১২ কোটি বছর আগে সৃষ্ট ডাইনোসররা গোটা পৃথিবীতে দাপটের সাথে সুদীর্ঘ ৬ কোটি বছর রাজত্ব করার পর অবশেষে তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিজ্ঞানী মহলে দারুন কৌতুহল আর আগ্রহের বিষয়। কিভাবে উল্কাপাতের ফলে সেটা সম্ভব? বেশ বড় আকারের ( আনুমানিক এক কিলোমিটার লম্বা) একটা উল্কা পিন্ড যখন প্রচন্ড বেগে ( প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪৫ কিমি) পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল ( অনুমান করা হয় আমেরিকার আরিজোনাতে, সাগর মহাসাগরের কোথাও পড়তে পারে) তখন সে সংঘর্ষটা ছিল কয়েক হাজার পারমানবিক বোমার সমতূল্য। এতে গোটা পৃথিবীর আকাশ ধুলিপূর্ন মেঘে ঢাকা পড়ে গেছিল দীর্ঘদিন। এর ফলে সূর্য থেকে আলো ও তাপ ঠিক মতো পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত হয়নি দীর্ঘ সময়। একারনে পৃথিবীতে বন জঙ্গলের এক বিরাট অংশ ধ্বংশ হয়ে গেছিল সঠিক তাপ ও আলোর অভাবে। তাতে তৃণভোজী প্রজাতির একটা বিরাট অংশই খাদ্যের অভাবে মারা যায়। অন্যদিকে তৃন ভোজী ডাইনোসররাও খাদ্যের অভাবে সব মারা যায়, অন্যান্য প্রজাতির প্রানী মারা যাওয়াতে খাদ্যের অভাবে মাংশাসী ডাইনোসররাও সবাই মারা যায়। তাদের এ মৃত্যূ ত্বরান্বিত হয় তারা মূলত ঠান্ডা রক্তের প্রানী বলে। যেমন- সাপ বা ব্যাঙ এরা ঠান্ডা রক্তবাহী প্রানী। যে কারনে শীত কালে এরা বাইরে তেমন বিচরন করে না। গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যাকে হাইবারনেশন বলে। শীত কাল পার হলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। তাপের অভাবে ডাইনোসরদের ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বেরোয় না। সব ডিমগুলো জমে যায়। যা এখনও বিভিন্ন যায়গাতে ফসিল আকারে পাওয়া যায়। এভাবেই তখন ডাইনোসর সহ এক বিপুল সংখ্যক প্রজাতির বিনাশ ঘটে যায় দুনিয়া থেকে। তবে এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে ক্ষুদ্র আকারের উষ্ণ রক্ত বাহী স্তন্যপায়ী প্রানীদের কিছু বেঁচে যায়। আর তাদের থেকেই উদ্ভব ঘটে আজকের বিপুল সংখ্যক স্তন্যপায়ী প্রজাতির যার অন্যতম এক প্রজাতি আমরা মানুষরাও। সুতরাং ধরে নেয়া যায় যে – এ ধরনের উল্কাপাতের মত একটা ঘটনা না ঘটলে দুনিয়াটা এখনও ডাইনোসরদের কবলেই থাকত। হয়ত এসব ডাইনোসররা বুদ্ধিমান জীবে পরিনত হতো , কে জানে ? যাহোক, এত কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে – সব সময় নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই যে পৃথিবীর সব কিছু চলেছে বা চলে তা ঠিক নয়।
আবার পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। কেন সব দোষ কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপর দেয়া হচ্ছে? কারন, মানুষ খুব দ্রুত বায়ূমন্ডলে এ গ্যাসটির পরিমান বৃদ্ধি করেছে ও অদ্যাবধি করে চলেছে। যে কারনে এ গ্যাসের কারনে বিশ্ব বায়ূমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে বহুগুন। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বর্তমানে যে পরিমান জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো হয় তা থেকে আনুমানিক ২১.৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় প্রতি বছর। তবে পুরো কার্বন ডাই অক্সাইড যে বায়ূ মন্ডলে জমা হয় তা ঠিক নয়। এর একটা অংশ সবুজ গাছপালা তাদের খাদ্য প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার করে যাকে আমরা সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বলি আর বস্তুত: যা গোটা জীব জগতের খাদ্যের যোগান দেয়। দেখা গেছে, এভাবে উদ্ভিদ কর্তৃক ব্যবহার ও সাগরের পানি কর্তৃক শোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্র ৫০% অর্থাৎ ১০.৬৫ বিলিয়ন টন বিনষ্ট হয় কিন্তু বাকী ১০.৬৫ বিলিয়ন টন বায়ূমন্ডলে অতিরিক্ত হিসাবে জমা হয় ও প্রতি বছর এ হারেই কার্বন ডাই অক্সাইড জমা হয়ে চলেছে। একটা সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি দিন প্রায় ১৮ মিলিয়ন টন কয়লা, ৮৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১.০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। যদি এ মাত্রায় ব্যবহার স্থির থাকে তাহলে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত নিশ্চিত প্রাপ্ত জীবাশ্ম জ্বালানী দিয়ে চলতে পারে:কয়লা- ১৪৮ বছর, তেল – ৪৩ বছর ও প্রাকৃতিক গ্যাস- ৬১ বছর। তবে উৎপাদনে যায় নি এমন ধরনের সম্ভাব্য খনির মজুদ হিসাবে ধরলে এ হিসাব টা হবে এরকম- কয়লা-৪১৭ বছর, তেল- ৪৩ বছর, গ্যাস- ১৬৭ বছর (সূত্র: উইকিপিডিয়া) ।তবে হিসাবটা স্থির নয় কারন প্রতি বছর সারা বিশ্বের জ্বালানী চাহিদা বাড়ছে। এখন চলছে ২০১০ সাল, যে হিসাব দেয়া হলো তা ৪ বছর আগের,তার মানে ইতোমধ্যেই চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে ও সে হিসাবে জ্বালানী পোড়ানো হচ্ছে। তার অর্থ- প্রমানিত রিজার্ভ আগের হিসাবে না থেকে তা কমে যাবে। জ্বালানী পোড়ানোর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো- আরও অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন ও তা বায়ূমন্ডলে জমা হওয়া যা পরিনতিতে বায়ুমন্ডলের আরও বেশী উষ্ণায়ণ। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর শেষ তিন দশকে সারা বিশ্বে জ্বালানী ব্যবহারের মাত্রা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহের পাশা পাশি অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের উন্নয়নকে লক্ষ্যনীয় পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে- চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিন কোরিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা ইত্যাদি দেশের কথা ধরা যায়। এছাড়া অন্যান্য ছোট ছোট উন্নয়নশীল দেশও লক্ষনীয় মাত্রায় অগ্রগতি সাধন করে। একারনে একদিকে যেমন জ্বালানী তেলের ব্যবহার বেড়েছে অন্যদিকে ব্যপকভাবে বনাঞ্চল উজাড় করে সেখানে নতুন নতুন জনবসতি গড়ে উঠেছে, ফসল ফলানোর জন্য কৃষি জমিতে পরিনত করা হয়েছে। ব্রাজিলের বিখ্যাত রেইন ফরেষ্ট আমাজন বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যের একটা বড় নিয়মকের ভূমিকা পালন করে। ব্রাজিলে বিগত কয়েক দশকে ব্যপকভাবে সে বন উজাড় করে নতুন নতুন জনবসতি ও চাষ যোগ্য জমি সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া ভারত চীন ইত্যাদি দেশ সহ আফ্রিকা ইত্যাদি জায়গাতে ব্যপক ভাবে বন উজাড় করা হয়েছে অতিরিক্ত জনবসতির চাহিদা মিটাতে। যার ফলে, বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের যে প্রাকৃতিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র সবুজ গাছ পালা তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমে গেছে। এতে বায়ূমন্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড প্রতি নিয়ত জমা হচ্ছে যা পরিশেষে বিশ্ব উষ্ণায়নকে বেগবান করছে।
বায়ুমন্ডলে বর্তমানে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান ৩৯০ পি পি এম যা প্রতি বছর প্রায় ২ পি পি এম বা তারও বেশী হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পি পি এম হলো – পার্টিকেল পার মিলিয়ন। অর্থাৎ বায়ূমন্ডলের প্রতি এক মিলিয়ন অনুর মধ্যে ৩৯০ টা অনু হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। পরিমানটা দেখে খুব কম মনে হতে পারে কিন্তু দেখা গেছে, এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্বল্প মাত্রাই মিলিয়ন মিলিয়ন বছরে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে পাল্টে দিয়েছে। অতীতে পৃথিবী যে মাঝে মাঝে বরফ যুগের মধ্য দিয়ে গেছে আবার তা শেষ হয়েছে, এর পুরা নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমানের কমা ও বাড়ার ওপর। কমে যাওয়ার মানে হলো- বিশ্ব অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হয়ে যাওয়া যার ফলে বরফ যুগের সূচনা, আবার যখন এর পরিমান বেড়েছে তখন বিশ্ব উষ্ণ হয়েছে ও দুনিয়ার বিরাট অংশ বরফ মুক্ত হয়েছে। এ ঘটনাটাই বিগত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চক্রাকারে ঘটেছে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে। তবে মাঝে মাঝে উল্কা পাত বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাত এ নিয়মের মধ্যে ছেদ ঘটিয়েছে। বর্তমানে সেই প্রাকৃতিক নিয়মের একটা বড় রকম ব্যত্যায় ঘটিয়েছে মানুষ। আর তাই এর প্রেক্ষিতে যাবতীয় ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার শিকারও মানুষ। ব্যপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা গেছে গত ৮ লাখ বছরের মধ্যে এটাই বায়ূমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের সর্বোচ্চ পরিমান।
নানা তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৮৫০ সালের আগে , হাজারের বেশী বছর ধরে বিশ্ব তাপমাত্রা সার্বিকভাবে স্থির ছিল। এর পর থেকেই বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। কারন সহজেই বোধগম্য। এ সময় থেকেই মানব জাতি শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে, অন্যন্য কাজে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এ উষ্ণায়নের গতি অতটা মারাত্মক ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকেই উষ্ণায়নের গতি বেগবান হয় যা বিগত কয়েক দশকে রীতি মতো মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেচে। একটা সমীক্ষায় দেখা যায়- ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতি দশকে বিশ্ব তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে ০.২৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হারে (সূত্র: উইকিপিডিয়া)। তার মানে গত ৩০ বছরে এটা বেড়ে ০.৭৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে এক ডিগ্রীর কম অর্থাৎ খুব কম বলে মনে হতে পারে, কিন্তু গোটা বিশ্বের বায়ূমন্ডলের সাপেক্ষে এটা কম তো নয়ই বরং গোটা বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ওলট পালট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট আর যা আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি। সারা দুনিয়াতে ঘূর্ণিঝড় , হারিকেন ইত্যাদির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, আগের চাইতে অনেক ঘন ঘন এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটছে। এন্টার্কটিকার জমাট বরফ গলে গেছে অনেক খানি, উত্তর মেরুর বরফেরও অনেকটা পানিতে পরিনত হয়ে গেছে,পৃথিবীর বিভিন্ন পাহাড় পর্বত শৃঙ্গে থাকা হিমবাহের অনেকগুলোই নেই হয়ে গেছে, বাকীগুলোও নেই হয়ে যাওয়ার পথে। এর ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষনীয় ভাবেই। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভারত ইত্যাদি সহ অন্যান্য সাগর মহাসাগর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল আস্তে আস্তে পানির নীচে যেতে শুরু করেছে। এই ০.৭৫ ডিগ্রী হলো গড় বৃদ্ধি । বাস্তবে কোথাও .২৫ আবার কোথাও বা ১ ডিগ্রীর বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন গত ৩০ বছর যাবত এন্টার্কটিকার তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.৫ থেকে ০.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে কমপক্ষে ১.৫ ডিগ্রী সে. বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত ৩০ বছরে (সূত্র: British Antarctic Survey, Natural Environment Research Council, Cambridge CB3 0ET, UK.). ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে প্রমান পেয়েছেন যে শুধুমাত্র ২০০৫ সালেই প্রায় ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের মত এক বিশাল জায়গার বরফ গলে গেছে(www.nasa.gov/vision/earth/lookingatearth/arctic-20070515.html) । আরও প্রমান পাওয়া গেছে যে , দিন যতই যাচ্ছে আরও অনেক বেশী বরফ গলে যাচ্ছে , যে সব হিমবাহ আছে তার পুরুত্ব কমে যাচ্ছে। ডিসকভারী বা জিওগ্রাফিক চ্যনেলে প্রতি নিয়ত এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফ কি মাত্রায় গলে যাচ্ছে তার প্রামান্য চিত্র অহরহ প্রচার করে। পৃথিবীর প্রায় ৯০% বরফ আছে এন্টার্কটিকা মহাদেশে। যদি এ মহাদেশের সব বরফ গলে যায় কোন এক দিন তাহলে সাগর মহাসাগর তলের উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার বৃদ্ধি পাবে বর্তমানের তুলনায় (সূত্র: www.pbs.org/wgbh/nova/warnings/waterworld/)। আর তখন বিশ্ব ব্যাপী কি ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসবে তা চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। যে পানির কারনে বিশ্বে জীব জগতের সৃষ্টি হয়েছে , সেই পানির কারনেই আবার দুনিয়ার লয় ঘটে যাবে। এ যেন সেই নূহ নবীর মহাপ্লাবন। উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, আজ থেকে ২০,০০০ বছর আগে গোটা দুনিয়া জুড়ে চলছিল বরফ যুগ। বরফ যুগের শেষ হয়েছে আজ থেকে মাত্র বার তের হাজার বছর আগে , আর তার ফলে সাগর তলের উচ্চতা বেড়েছে ১০০ মিটারেরও বেশী। ফলে বিভিন্ন মহাদেশের এক বিরাট অংশই সাগর তলে তলিয়ে গেছে। ধারনা করা হয়, সেই বরফ যুগে ইউরোপ-এশিয়া থেকে মানুষ আমেরিকায় গেছিল আলাস্কা হয়ে কারন তখন যে বেরিং প্রনালী আমেরিকার আলাস্কাকে এশিয়ার ভূখন্ড থেকে উত্তর মেরুর কাছে বিভক্ত করেছে তখন তা ছিল বরফাচ্ছাদিত আর তা পার হয়েই সর্ব প্রথম মানুষ আমেরিকা মহাদেশে পা বাড়ায়।
দুনিয়া জুড়ে অধিকাংশ বিজ্ঞানীই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়কে এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। আর আমরা সাধারন মানুষরা কোন রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়াই সেটা বুঝতে পারি বর্তমানে যে ভাবে প্রতি বছর গরমের প্রভাব নাগাড়ে অনুভব করি। অতীতে কোন বিশেষ কারনে যেমন- এল নিনো , এর প্রভাবে কোন কোন বছর মাত্রা ছাড়া গরম পড়তে দেখেছি যেমন ১৯৯৮ সালে । কিন্তু পরবর্তীতে এখন আমরা দেখি প্রতি বছরই মাত্রা ছাড়া গরম পড়ে,ঋতু চক্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বাংলাদেশে এক সময় ছয়টা ঋতু ছিল ,গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত , শীত ও বসন্ত। বর্তমানে তারা মাত্র তিনটি ঋতুতে এসে ঠেকেছে। গ্রীষ্ম , বর্ষা ও শীত। অন্যান্যগুলো স্রেফ উবে গেছে জলবায়ূ পরিবর্তনের শিকার হয়ে। তার মধ্যে গ্রীষ্মকাল প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সময় জুড়ে বছরের, বাকী কয়মাস বর্ষা আর মাত্র মাসখানেক হলো শীত। শীত প্রধান দেশ যেমন- ইংল্যান্ড, জার্মানী, হল্যান্ড, বেলজিয়াম ইত্যাদি ইউরোপিয় দেশসমূহে দেখা যাচ্ছে শীত ঋতুর স্থায়ীত্ব কমে গ্রীষ্ম ঋতুর দৈর্ঘ বেড়েছে। বছরের যে সময়ে সেসব দেশে শীত অনুভুত হওয়ার কথা সেসময়ে তেমন শীত অনুভুত হয় না । শুধু তাই নয়, গ্রীষ্মকালে সেসব দেশে কখনও কখনেও উষ্ম মন্ডলীয় দেশের সমান তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়।কয় বছর আগে এসব দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা বসানোর কথা চিন্তা করত না বসত বাটিতে , বর্তমানে অনেক ঘরেই সে ব্যবস্থা আছে। আগে যেসব স্থানে শীতকালে বরফ পড়ত সেখানে বেশ কয় বছর ধরে বরফের কোন দেখা নেই। সুতরাং বৈশ্বিক উষ্ণতা অনুভব বা বোঝার জন্য আর বিজ্ঞানী বা জলবায়ূ বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। সাগর তলের উচ্চতা যে লক্ষনীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার উজ্জ্বল নিদর্শন বাংলাদেশ। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশের দক্ষিন অঞ্চল পর পর দুটি ঘুর্ণিঝড়ের শিকার হয় যাদের বাহারি নাম হলো – আইলা ও সিডর। এ ঝড়ের ফলে দক্ষিন অঞ্চলের মূলত সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয়। এসব এলাকার বেড়ী বাধ গুলো সব বালির বাধের মত উবে যায় সাগরের পানির জলোচ্ছ্বাসে। পানি স্থলভাগের অনেক অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেমে যাওয়ার পর স্থলভাগে ঢুকে পড়া পানি আর বের হয় না। ঝড় হয়েছে দু তিন বছর আগে কিন্তু পানি আজও বেরিয়ে যায়নি। কারন স্থল ভাগের তল সাগরের পানির তলের চেয়ে নিম্নতর হয়ে গেছে। যতদিন বেড়ীবাধ ছিল ততদিন বিষয়টা ভালমতো বোঝা যায় নি। এসব অঞ্চলে সুদীর্ঘকাল কোন ঘুর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হয়নি। তাই বিষয়টা এতদিন ধরা পড়ে নি। এসব অঞ্চলের মানুষ সেই যে ভিটে মাটি হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে দুবছর হলো , আজও তারা তাদের ভিটে মাটিতে ফিরতে পারেনি, কারন তা পানির নীচে অবস্থান করছে। আজও তারা রাস্তার দুপাশে বস্তি তৈরী করে মানবেতর জীবন যাপন করছে, বেচে থাকার জন্যে নির্ভর করে আছে সরকারী বেসরকারী ত্রাণ সাহয্যের ওপর। যে কারনে গত ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কোপেনহেগেনের বিশ্ব পরিবেশ সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের এ বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক দাতা দেশ সাহায্য করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এ সাহায্য দিয়ে যদি আগের মত মাটির বেড়ী বাধ তৈরী করে তা হবে স্রেফ অর্থের অপচয়। কারন যে কোন জলোচ্ছাসে তা আবারও বালির বাধের মত উবে যাবে। এখন দরকার হল্যান্ডের মত সাগরতীরে কংক্রিটের বাধ নির্মান। যে বাধ দিয়ে হল্যান্ড সাগর সমতলের প্রায় ২৩ ফুট নীচে হওয়ার পরও তাদের দেশটিকে রক্ষা করতে পেরেছে , একই সাথে সাগর থেকে অনেকখানি জমিও উদ্ধার করেছে। অর্থাভাবে সরকার সেধরনের কোন পরিকল্পনা করতে পারবে না , আর দাতাদের সাহায্যে কাচা মাটির বেড়ী বাধ দিলে তা হবে স্রেফ অর্থের অপচয় , তবে সরকারী দলের কিছু নেতা -পাতি নেতার আর্থিক অবস্থা তাতে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, লাভের মধ্যে ওটাই।
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে আবার নানা রকম খেলা আছে আর তা বলা বাহুল্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারনে। অধিকাংশ বিজ্ঞানী বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানীর মাত্রারিক্ত ব্যবহারের ব্যপারে সম্পূর্ন একমত। তারপরও কিছু কিছু বিজ্ঞানী আছে যারা বলতে চায় যে হারে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটছে তা নাকি তেমন উদ্বেগজনক কিছু নয়। বলাবাহুল্য, এটা তারা বলছে বড় বড় তেল কোম্পানীর কাছ থেকে টাকা খেয়ে । বড় বড় তেল কোম্পানীগুলো যারা এ ব্যবসা থেকে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে, বাজার অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী তাদের কাছে মুনাফাটাই বড়। ভাবটা এমন যে – তাদের জীবনকালে পৃথিবী ধ্বংস না হলেই হলো , তারা মরার পর দুনিয়ার কি হবে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। অত্যন্ত উদ্বিগ্নের বিষয় হলো – এ শ্রেনীর লোকদের মধ্যে মার্কিন মালিকানাধীন তেল কোম্পানী গুলি অগ্রগন্য। মার্কিন সরকারও অনেকটা এদের ক্রিড়ানক মাত্র। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে মার্কিন সরকারের একগুয়ে মনোভাবে তার বহি:প্রকাশ ঘটতে দেখা গেছে। পৃথিবীর যে সব দেশ সর্বোচ্চ মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে তার তালিকা নিম্নরূপ:
চীন- ২২.৩০%
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- ১৯.৯১%
ভারত- ৫.৫০%
রাশিয়া- ৫.২৪%
জাপান-৪.২৮%
(তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ২০০৭ সালের তথ্য)
তালিকায় দেখা যাচ্ছে, চীন সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এর কিছু কাল আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রথম ও তার কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার ছিল প্রায় ২৫%। কিন্তু সেটাও আসল বিষয় নয়। বিষয়টা হলো – মাথা পিছু কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন। সেখানে দেখা যাচ্ছে- ২০০৭ সালে আমেরিকার একজনের মাথা পিছু নির্গমনের হার বার্ষিক ১৮.৯ মে.টন যেখানে চীনের মাথা পিছু নির্গমনের হার মাত্র ৪.৯ মে.টন। আরও মজার তথ্য হলো – ১৯৯০ সালে যেখানে একজন মার্কিন নাগরিকের বার্ষিক নির্গমনের হার ছিল ১৯ মে.টন সেখানে চীনের হার ছিল মাত্র ২.২ মে.টন। কারন ১৯৯০ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল ১১৪ কোটি, যেখানে আমেরিকার লোকসংখ্যা ছিল -২৫ কোটি। বর্তমানে চীনের লোকসংখ্যা ১৩৪ কোটির কিছু বেশী যেখানে আমেরিকার জনসংখ্যা হলো ৩০ কোটির মত। উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত চীনের মাথা পিছু বার্ষিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার ছিল ২ থেকে ২.৯ মে.টন যেখানে আমেরিকার ছিল ১৯ থেকে ২০ মে.টনের মধ্যে। সুতরাং উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে এটা অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে , বিশ্ব উষ্ণায়নের সিংহভাগ দায় বর্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে। সুতরাং এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার দায়টাও তাদের ওপর বেশী বর্তাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন দেখা যাক , আমেরিকা কিভাবে সে দায়টা গ্রহন করছে।
২০০৯ সালের কোপেনহেগেনে বারাক ওবামা যে ভাষণ দেন তাতে তিনি উল্লেখ করেন যে – তার দেশ ২০২০ সাল নাগাদ তাদের কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার বর্তমানের ১৭% কমিয়ে ফেলবে আর ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০% কমাবে। তার মানে ২০২০ পর্যন্ত তাদের মোট নির্গমনের পরিমান বৈশ্বিক মোট পরিমানের ১৬% এর মতই থাকবে। কিন্তু এটা তো একটা কথার কথা। বাস্তবে দেখা যাবে আদৌ কমানো হয়নি। তার অর্থ আমেরিকা কোন রকম ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা চায় অন্য দেশ সমূহ তাদের গ্রীন হাউজ গ্যাস নি:সরন কমিয়ে ফেলুক, পৃথিবীকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করুক আর ওরা শুধু বসে বসে নিরাপদে দুনিয়াদারী মাতব্বরী করবে ও জীবনকে ষোল আনা আনন্দ ফুর্তিতে ভাসিয়ে দেবে। এটা বোঝা যায়-এর আগে যখন বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন হয় তখন আমেরিকাকে গ্রীন হাউজ গ্যাস নি:সরনের মাত্রা কমিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়েছিল, তখন বুশ জুনিয়র ছিলেন ক্ষমতায়, তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এটা করতে হলে তাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে, বহুলোক চাকরি হারাবে তাই তা করা সম্ভব নয়। এবার তো বারাক ওবামা মৌখিক ভাবে হলেও স্বীকার করেছে যে গ্রীন হাউজ গ্যাস নি:সরন আর তার প্রেক্ষিতে বিশ্ব উষ্ণায়ন একটা সত্যিকারের সমস্যা, বুশ তো সেটাও মানতে রাজী ছিল না। এসব দেখে শুনে মাঝে মাঝে মনে হতো , আমেরিকাতে যারা ক্ষমতায় যায় বা রাজনীতি করে তারা এতটা আহাম্মক হয় কেমনে। আর তাদের সাঙ্গ পাঙ্গরাই বা এসব বিষয়ে কিভাবে উল্টা পাল্টা পরামর্শ দেয়? পরে বুঝেছি আসলে তারা মোটেই আহাম্মক নয়। আসলে প্রথমত: তারা মুনাফার ব্যপারে কোন রকম ছাড় দিতে রাজি নয়, আর পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা আমেরিকাতে তেমন প্রকট নয়, যে কারনে বাকী বিশ্বে কোথায় কি হলো সে ব্যপারে মাথা ঘামানোটাকে তারা ফালতু হিসাবে গন্য করে। অবশ্য কোপেনহেগেন সম্মেলনে ওবামা রাজী হয়েছেন এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য তারা প্রাথমিকভাবে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা তহবিল গঠনে রাজী আছে। বিষয়টাকে আবার সেই তাদের মত বরাবর আর্থিক হিসেবেই গন্য করেছে। ভাবখানা যেন – এ টাকা কিছু গরীব দেশগুলোকে দিয়ে সেখানে কিছু গাছপালা লাগালে বা তাদের দেশের সাগর পাড় গুলোকে বাধ দিয়ে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে। সেই সাথে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা যে কিছু করল সেটাও প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এ ধরনের হালকা মানসিকতা বা মানব জাতির প্রতি তাদের এ ধরনের হালকা দায়িত্ববোধ আমাকে মাঝে মাঝে বিস্মিত করে। আর সাথে সাথে মনে হয় মানুষ যদি এতটা স্বার্থপর হয় তাহলে মনে হয় এ পৃথিবী থেকে এ জীবের চিরতরে বিলুপ্তি ঘটে যাওয়া স্রেফ সময়ের ব্যপার মাত্র।
বর্তমানেই সমস্যাটা যে পর্যায়ে চলে গেছে , সেখান থেকে সহসাই কোন ভাবে পরিস্থিতির উন্নতি না করলে মানব জাতির কপালে খারাবি আছে। এখন আর চিন্তা ভাবনা করে আস্তে ধীরে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন সময় ও সুযোগ নেই। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারনে ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্ব পরিবেশে যে বিরূপ পরিস্থিতি অবলোকন করছি তাতে খুব বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না যেদিন গোটা দুনিয়াতে কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। সম্ভাব্য কি কি ঘটতে পারে তার একটা অনুমান করা যেতে পারে-
প্রথমত: গোটা দুনিয়ায় যে ঋতু বৈচিত্রে পরিবর্তন ঘটে গেছে আর কিছুটা পরিবর্তন ঘটলে এর সাথে আমাদের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা এক সময় ঠিক মতো খাপ খাওয়াতে নাও পারে। ঋতু বৈচিত্রের কারনে, অসময়ে অধিক বৃষ্টিপাত, খরা, অত্যাধিক সংখ্যায় ঘুর্ণিঝড়, দাবানল খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে ইতোমধ্যে। এসব ঘটনার কারনে শস্য উৎপাদন যে কোন বছর হঠাৎ করে দারুনভাবে ব্যহত হতে পারে। যেমন- সাম্প্রতিক রাশিয়ার দাবানল। যার অনিবার্য ফলাফল- বিপুল শস্যহানি ও শস্য উৎপাদনে বিরাট ঘাটতি যা গোটা মানব সমাজকে একটা দীর্ঘ মেয়াদী দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তখন খাদ্য নিয়ে সারা বিশ্বে যুদ্ধ বিগ্রহ ঘটা আশ্চর্য কিছু না। তখন আর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার জমা থাকলেও তা দিয়ে খাদ্য পাওয়া যাবে না। কারন তখন কোন দেশ নিজেরা না খেয়ে খাদ্য বিক্রি করবে না। এর উদাহরন বিগত সময়ে আমরা দেখেছি। অনেক দেশই মাঝে মাঝে খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নানা সময়ে , বর্তমানে রাশিয়াতে সেটা এখনও চালূ আছে দাবানলে তাদের বিপুল শস্য হানি হওয়ার কারনে। এছাড়া অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পরিবেশে এমন নতুন ধরনের ভাইরাস বা ব্যক্টেরিয়ার উদ্ভব ঘটতে পারে যারা ফসল উৎপাদনে বিপুল ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে অথবা মানুষও তাতে ব্যপকভাবে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যা মহামারির আকারে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে পারে , যার নমুনা ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি , যেমন- বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, অ্যানথ্রাক্স ইত্যাদি। ভাগ্য ভাল এরা অতটা মারাত্মক নয়। কিন্তু এরা এইডস ভাইরাসের মত মারাত্মক হলে কি ঘটনা ঘটত একবার কল্পনা করা যাক। তখন দেখা যাবে, বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের চরিত্র বুঝে ওঠার আগেই দুনিয়া থেকে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। আর চরিত্র বুঝতে পারলেই যে তার চিকিৎসা তাড়াতাড়ি তারা আবিষ্কার করে বসবে তেমন নিশ্চয়তাও নেই , যেমনটি ঘটেছে এইডস ভাইরাসের ক্ষেত্রে।
দ্বিতীয়ত: পৃথিবীতে মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় উৎস হলো নদী-নালা খাল বিল, বৃষ্টির পানি, ভূ-গর্ভস্থ পানি এসব। আবার নদীনালা গুলোর পানির উৎস হলো পাহাড় পর্বতের ওপর অবস্থিত নানা হিমবাহ। এসব হিমবাহ দিন দিন গলে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। এক পর্যবেক্ষনে জানা যায়, হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ দিন দিন গলে তা নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর ফলে শুধু যে নদীর পানির পরিমান কমে যাচ্ছে তাই নয়, মাটির নীচের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে কারন এসব নদী নালার পানিই তো চুইয়ে চুইয়ে মাটির নীচে জমা হয়। হিমবাহগুলো সম্পূর্ন গলে গেলে নদীগুলো যাবে মরে। যা পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাবে। বর্ষাকালে একটু বেশী বৃষ্টি হলে মরা নদী তা ধারন করতে পারবে না কারন তারা সবাই নাব্যতা হারাবে, ফলে জনপদ মারাত্মক বন্যার কবলে পড়বে। ধ্বংস হয়ে যাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। এধরনের বন্যার কবলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে পড়া শুরু করেছে। সাম্প্রতিক পাকিস্তানের পাহাড়ী অঞ্চলে বন্যা তার প্রকৃষ্ট উদাহরন।পক্ষান্তরে গ্রীষ্মের সময় পানির প্রচন্ড অভাব হবে, মানুষ পানি পাবে না , চাষাবাদ করা যাবে না , এমনকি শুধুমাত্র পান করার পানি পাওয়াটাও দুস্কর হয়ে পড়বে। যা কিন্তু ইতোমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন নগরীতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ঢাকা শহর তার উৎকৃষ্ট উদাহরন, প্রতি বছর এখানে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে হু হু করে।
তৃতীয়ত: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ইতোমধ্যেই ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে, নীচু অঞ্চল সাগরের পানির নীচে চলে যাবে। যেমন- মালদ্বীপ ইতোমধ্যেই এধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। আসলে সাগর মহাসাগরের তীরে অবস্থিত সব দেশের ক্ষেত্রেই ব্যপারটি সত্য। বহু দ্বীপ , উপদ্বীপ পানির নীচে তলিয়ে যাবে। এর ফলে সৃষ্টি হবে ভয়াবহ এক মানবিক সমস্যা। কোটি কোটি মানুষ হারাবে তাদের ভিটে মাটি। হয়ে পড়বে উদ্বাস্তু। উন্নত দেশসমূহে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তারা হয়ত বিষয়টাকে সামাল দিতে পারল, কিন্তু অনুন্নত দরিদ্র দেশে ঘটলে কিভাবে বিষয়টাকে সামাল দেয়া যাবে ? যেমন – বাংলাদেশ। ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে এদেশের সমস্ত নিম্নাঞ্চল সাগরের তলে তলিয়ে যাবে। এমনিতেই দেশটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত। ছোট্ট এ দেশের মাত্র ১. ১৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে বর্তমানে ১৬ কোটির বেশী মানুষ যার অধিকাংশই দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। জনসংখ্যার আধিক্যে দেশের প্রতিটি শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিছুকাল আগে একটা জরীপে দেখলাম, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সারা পৃথিবীর ১৫০ শহরের মধ্যে ১৪৯ তম স্থান দখল করেছে মানুষের বসবাসোপযোগী ভাল নগর হিসাবে। রাস্তাঘাটে মানুষ খালি গিজ গিজ করে, রাস্তা ঘাটে ট্রাফিক জ্যাম, বিদ্যুত নেই, পানি নেই, ঠিক মতো গ্যাস নেই। এত কষ্টের মধ্যেও মানুষ যে বেঁচে আছে এটাই আশ্চর্য। এর মধ্যে যদি কয়েক কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে, দেশটার কি অবস্থা হতে পারে কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। তো এ ধরনের ঘটনা খালি বাংলাদেশ নয় দুনিয়ার আরো অনুন্নত ও দরিদ্র দেশে ঘটবে, কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা হয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে ও গোটা বিশ্ব জুড়ে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে যা থেকে উত্তোরনের জন্য হয়ত কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না।
চতুর্থত: বিশ্ব উষ্ণায়নে মরুকরন শুরু হয়ে যেতে পারে ব্যপকভাবে।কয় বছর আগেও শুনতাম লিবিয়ার আজিজিয়া হলো পৃথিবীর সব চাইতে উষ্ণ জায়গা যার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড । আর এখন গরম কালে বাংলাদেশে হর হামেশা ৪৪/৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে তাপমাত্রা উঠে যায়। ভারতের গুজরাট রাজস্থানে কোথাও কোথাও নাকি ৫০ এর কাছাকাছি তাপমাত্রা উঠে যায়। এ হলো বিশ্ব উষ্ণায়নের সরাসরি প্রতিক্রিয়া। ইংল্যান্ড, হলান্ড, জার্মানীতে যেখানে ৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা ছিল আগে বিরল ঘটনা সেখানে অনায়াসে তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৫ ডিগ্রী সে.। এতে বোঝা যায়, সার্বিক ভাবে গত তিরিশ বছরে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ০.৭৫ থেকে ১ ডিগ্রী বাড়লেও স্থানে স্থানে এ তাপমাত্রা কোথাও কোথাও সময়ে সময়ে ৫/৬ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে যা কোন রকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই আমরা টের পাচ্ছি। যে কারনে উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ার পত্তন, যদি সেটার আশু চিকিৎসা না হয় , এ প্রবনতা বাড়তেই থাকবে বলা বাহুল্য। এ তাপমাত্রা এক সময় উদ্ভিদের সহনীয় মাত্রার বেশী হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ভুমির আদ্রতা কমে যাচ্ছে ক্রমশ:, মাটি হয়ে পড়ছে শুকনা খটখটে। যে সব উদ্ভিদের শিকড় মাটির বেশী নিচে যায় না , পানির অভাবে তারা মারা যাচ্ছে, পানির স্তর আরও নীচে চলে যাওয়াতে বড় বড় গাছও মারা পড়বে পানির অভাবে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলে ব্যপক মরুকরন শুরু হয়ে যাবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েও গেছে। কি দ্রুত গতিতে মরুকরন হচ্ছে তা বোঝা যায় কতকগুলি সমীক্ষায়, যেমন- সাহারা মরুভুমি প্রতি বছর ৪৮ কি. মি. গতিতে দক্ষিনে বিস্তৃত হচ্ছে, ঘানা ও নাইজেরিয়ার ৩,৫০০ ব.কি. ভুমি প্রতিবছর মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে, চীনে প্রতি বছর প্রায় ৯০০ ব.মাইল ভূমি মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে, গোবি মরুভূমি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত মোট প্রায় ৫২,০০০ ব.কি. বৃদ্ধি পেয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ৮০% ভুমি মরুভূমিতে পরিনত হওয়ার ঝুকিতে, ১৯৮০ সালের পর থেকে কাজাখস্থানের প্রায় ৫০% আবাদী জমি মরুকরনের কারনে পরিত্যাক্ত হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো ও ব্রাজিলও মরুকরনের শিকার।(সূত্র: উইকিপিডিয়া)। এ মরুকরনের অন্যতম প্রধান কারন বিশ্ব উষ্ণায়ন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেখা যাবে দুনিয়ার আবাদী জমি ও জঙ্গলের সিংহভাগই মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যাবে, তখন বিশ্ববাসী কি খেয়ে বাঁচবে সেটাই বিরাট প্রশ্ন। পৃথিবীতে অতীতেও মরুকরন হয়েছে, কিন্তু তা এত দ্রুত গতিতে কখনো ঘটেনি। এখনকার মরুকরন হচ্ছে অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে।
পরিশেষে, যদি এখনই বিশ্ব উষ্ণায়ন থামানো না যায় , তখন গোটা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য হঠাৎ করে হুড় মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের মত। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন , টুইন টাওয়ারের উপরের অংশ ঘন্টা দুই ধরে জ্বলছিল, মনে হচ্ছিল ক্ষয় ক্ষতি উপরের ঐ কয় তলাতে সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ হুড় মুড় করে গোটা দুটো টাওয়ারই ধ্বসে পড়ে। বর্তমানে আমাদের বিশ্ব প্রাকৃতিক পরিবেশও উপর দিয়ে জ্বলছে, এভাবে জ্বলতে জ্বলতে কখন হুড়মুড় করে হঠাৎ ধ্বসে পড়বে তা আমরা কেউ জানি না। আর তখন পৃথিবীটা হয়ে পড়তে পারে শুক্র গ্রহের মত একটা উত্তপ্ত গ্রহ, যেখানে কোন একদিন যে জীবজগত ছিল তা হবে সৌরজগতের বাইরের ভিন গ্রহবাসীর জন্য এক গবেষণার বিষয়।
খুব দরকারি একটা লেখা। ভাল লাগলো।
আমার মতে, আমরা বাংলাদেশিরা প্রচন্ড খাদ্য ঝুঁকির মধ্যে আছি। সিডরের সময় দেখা গিয়েছিল কেউ আমাদের কাছে চাল বেঁচতে চাচ্ছে না। প্রাকৃ্তিক দূর্যোগের কারণে পর পর দুইটা ফসল মার খেলে, খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করা কঠিণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের বেশি কিছু করার নেই। ব্যাপারটা হতাশার। আপাতত খাদ্য মজুদের ক্ষমতা বাড়ান দরকার। সরকার অবশ্য সেই চেষ্টা করছে।
আমেরিকানদের লাইফ স্টাইলের কারনে আমরা মরছি। বিকল্প জ্বালানি ছাড়া বাঁচার আর কোন পথ দেখছিনা।
ধন্যবাদ ভবঘুরে। কোন সন্দেহ নেই, মানব জাতির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। কেউ যদি মনে করে বিকল্প প্রযুক্তির উদ্ভাব্ন ঘটিয়ে ত্রাণ পাবে, সেটা হবে বোকার স্বর্গে বসবাস। সাধারণভাবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা না জেনে, না বুঝে অন্ধের মত পথ চলতে গিয়ে ধর্মকে আঁকড়ে ধরি। জাগতিক জীবনে না হোক,অন্তত “পরকালে” একটা কিছু যেন পাই, এই পাওয়া-র লোভ, আমাদের লোভী করে তুলে। এর প্রভাব আমাদের জাগতিক জীবনেও ঘটে। যা কিছু আরামদায়ক-সহজলভ্য-বিলাসী তাকেই আমরা গ্রহণ করি প্রশ্নহীনভাবে। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে মুনাফাখোর কোম্পানিগুলো।
ইদানিং কিছু কিছু পত্র-পত্রিকায় পরিবেশ নিয়ে লেখা-লেখি হচ্ছে, আর দায়ী করা হচ্ছে মানুষের অপরিকল্পিত আচরণকে। আপনি যথার্থই বলেছেন, কারা এই নাটের গু্রু। Stephanie-র (minimumsecurity.net) সাথে অনেকদিন আগে থেকেই এ নিয়ে কথাবার্তা হতো, এখনো হয়। তো কয়েকদিন আগে একটি ই-মেইল করে যে তথ্যগুলো আমাকে দিলো, তা এখানে প্রাসংগিক বলেই দিয়ে দিলাম।
The Earth is being killed for profit.
Our planet is in a dire emergency, but this is not because of natural
events or accidents. Governments everywhere betray the people and the
health of the natural world by selling us out to international
corporations. The pursuit of profit and industrial development are risking
the very future of life on Earth.
Consider these facts:
• 80% of rivers worldwide no longer support life.
• 94% of the large fish in the oceans are gone.
• The oceans are acidifying 100 times faster than in the last 20 million
years, threatening all marine life.
• Phytoplankton, which are at the bottom of the food chain and produce
half of the oxygen we breathe, have declined by 40% since 1950.
• 98% of old growth forests have been cut down.
• 99% of the prairies are gone.
• According to the United Nations, 150-200 species per day become extinct.
• Oil spills have ruined the Gulf of Mexico, the Niger Delta, large parts
of Ecuador and other areas.
• 1% of the world’s topsoil is lost each year, mostly due to conventional
agriculture (it can take 500 years to form an inch of topsoil naturally).
• More than 33% of the world is “under stress” regarding fresh water supply.
• Rainforests once covered 14% of the Earth’s surface; now only 6%.
• 400 million metric tons of hazardous waste is produced each year,
contaminating the soil, air and water.
Global warming, caused by the burning of fossil fuels such as oil and
coal, mostly for industry, is already affecting coastal areas and millions
of people around the world. It is causing droughts, floods, extreme heat
waves, unusual storms, wildfires, and rising oceans. Some small island
nations have already disappeared under water. Farmland and forest are
being lost. Glaciers are melting from the Rockies to the Himalayas to the
Alps, putting rivers, and billions of people, at risk of severe water
shortages.
We can not stand by while big corporations, with the assistance of
governments, destroy our lives and our planet for their own gain. We must
stop them before they kill everything. We depend upon the natural world
for our lives — we must now urgently come to its defense.
সুহৃদ ভবঘুরে,
উষ্ণায়নের ওপর এত সময়-উপযোগী ও সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। অনেক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে আপনি উষ্ণায়নের ঋণাত্মক দিকগুলি খুবই পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপনা করেছেন।
আপনি চমৎকার ভাবে আইলার দুর্যোগের কথাটা বলছেনঃ
এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার কিছু বিনীত মতামত ছিল। আইলার ঘটনাটা প্রথম দৃষ্টিতে সরাসরি সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতার বৃদ্ধির পরিণতি মনে হলেও এর জন্য বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টর কাজ করছে। বিশ্ব-ব্যাপী সমুদ্র-পৃষ্ঠ বৃদ্ধির পরিমাণ ভাল ভাবে জানলেও বঙ্গোপসাগরে এর সঠিক হিসাবটা জানা নেই, করাও মুশকিল। গত ৫০ বছরে এর বৈশ্বিক মানটা ২ থেকে ৩ মিলিমিটার ধরা হয়। কিন্তু আপনি জানেন যে বঙ্গীয় বদ্বীপে অবনমন (subsidence) বলে একটা ব্যাপার আছে। টেকটনিক কারণে এই বদ্বীপ নিচে নামছে। এই অবনমনের মানটা এক এক জায়গায় এক এক রকম, এর হিসাবটাও আমাদের সঠিক জানা নেই, তবে এটার মান বছরে ১ থকে ৭ মিলিমিটার হতে পারে। দক্ষিণ বঙ্গে ধরুণ এর মান বছরে ৪ মিলিমিটার। তাহলে গত ৫০ বছরে সমুদ্র-পৃষ্ঠ ৩ + ৪ = ৭ মিলিমিটার করে বেড়েছে বছরে। বাধগুলির বয়েস ৫০ বছর ধরলে, ৫০ বছরে ৩৫০ মিমি বা ৩৫ সেন্টিমিটার সমুদ্র উচ্চতা বেড়েছে। এটা আমার মতে সর্বোচ্চ সীমা। কথা হচ্ছে এই ৩৫ সেমি আইলা পরবর্তী বিপর্য্য় ঘটাতে পারে কিনা? উঁচু জোয়ার ইত্যাদি ধরলে হয়তো পারে। কিন্তু ৫০ বছর আগে কি হতো? তখনো তো ভূমির অবনমন হতো।
গত ৫০ বছরে, উপকূলীয় বাধ দেবার ফলে সমুদ্র বাহিত স্রোতে যে পলি মেঘনা মোহনা থেকে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে আসতো সেটা ব্যহত হয়েছে। বাধের পূর্ববর্তী সময়ে এই পলিভরণ প্রক্রিয়ায় ভূমির অবনমনকে এবং (হতে পারে) সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি অনেকাংশে ঠেকা দেয়া যেত। কিন্তু ৫০ বছরে এই জমিতে পলি পড়তে না দেয়ায় জমি অবনমনের ফলে নিচে নেমে গেছে, যার ফলে যেখানে আগে বন্যা হত না সেখানে বন্যার প্রকোপ বেড়েছে। অবাধে বাধ দেবার ফলে এই অবস্থাটা সারা বাংলাদেশেই হচ্ছে।
আমি বাংলাদেশের এক অভিজ্ঞ পানি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে শুনেছি আইলা উপদ্রুত এলাকায়, যেখানে বাধ ভেঙ্গে গেছে, সেখানে নাকি ইতিমধ্যে এক মিটার পর্যন্ত পলি পড়েছে। এই পলি আসার উৎস একটাই, মেঘনা মোহনা। বাধ না থাকলে এই পলি ভূমিকে সমুদ্রের ওপরে রাখতে সাহায্য করত। এখানে আমি যেটা বলতে চাইছিলাম যে বিশ্ব উষ্ণায়ন একটা সক্রিয় প্রক্রিয়া, সেখানে প্রাকৃতিক ও মনুষ্য-কৃত উভয়ের অবদানই আছে, অনেক প্রক্রিয়া আপাতঃদৃষ্টিতে বোধগম্য মনে হলেও, দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তাকে ব্যাখ্যা করতে হলে অন্য অনেক মডেলের আশ্রয় নিতে হয়।
শুভেচ্ছান্তে।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
আপনার বক্তব্য ঠিক। বাধ না থাকলে অবাধ জোয়ার ভাটার কারনে সেখানে পলি জমে ভূমির উচ্চতা বাড়াত। কিন্তু অবাধ জোয়ার ভাটা রাখার ব্যবস্থাও সম্ভব ছিল না ফসল উৎপাদনের জন্য। লবনাক্ত পানি দ্বারা ভূমি বিধৌত হলে তাতে কোন ফসল ফলত না। তার অর্থ বাধ দেয়া সেখানে জরুরী ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও আমার কাছে মনে হয় সাগর তলের উচ্চতা বৃদ্ধিই মূলত স্থল ভাগ থেকে পানি সরে না যাওয়ার কারন। হতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলের সাগর তলে পলি জমে তা উচু হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে তো সার্বিকভাবে সাগরের পানির তলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে না। সে কারনেই তো সাগরের বুকে চর বা দ্বীপ গজিয়ে ওঠে।অর্থাৎ সার্বিকভাবে সাগরের পানির তল স্থলভাগের তলের নীচে অবস্থান করার কথা। এ ক্ষেত্রে, হতে পারে স্থল ভাগে ঢুকে পড়া পানি সাগরে সরে যেতে একটু সময় বেশী লাগবে। কিন্তু সে পানি সরে না গিয়ে ঠায় জমে রইল স্থল ভাগে দু/তিন বছর ধরে- এর কি ব্যখ্যা হতে পারে ? তবে অবশ্যই আপনার বক্তব্যের সত্যতা আছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে যে ধূমকেতুটি ডাইনোসর সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণিকেই বিলুপ্ত করে দিয়েছে সেটি মেক্সিকোর উত্তর ইউক্যাটান পেনিনসুলাতে আঘাত হেনেছিলো।
জলবায়ুর উষ্ণতা নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে। সেজন্য আপনার এই পোস্টটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। একটি বেশ ইন্টারেস্টিং তথ্য আমরা অনেকেই জানিনা যেটা হলো ৮৫০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১২৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ু বেশ ভালো রকমের উষ্ণ ছিলো যাকে বলা হয় Medieval Warm Period (MWP) আর তার পরপরই ১৩৫০ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী ঠান্ডা ছিলো যাকে বলা হয় Little Ice Age (LIA)।
@হোরাস, ধন্যবাদ আপনাকে নতুন তথ্য দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ লেখককে ও তাঁর তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধের জন্য। আমরা এ ধরনের আরো লেখা আশা করি মুক্তমনার লেখকদের কাছ থেকে।
লেখাটা ভাল লাগল!
আমারও মনে হয় আমদের ব্যাপকভাবে সাগরপারে উইন্ডমিল বসিয়ে ও
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে শক্তি র উৎপাদন করা শুরু করা উচিত।
তেলও একদিন ফুরিয়ে যাবে!
টিভিতে দেখলাম পানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা চলছে
আইসল্যান্ডে।
আমাদের দেশে সাধারন লোকজন খুব কম বিদ্যুত ব্যবহার করে,
তারাই মাশুল দিচ্ছে সবচেয়ে বেশী!
রাজধানীর বিয়ে ও মল গুলোর আলোকসজ্জায় যথেচ্ছ বিদ্যুতের অপচয় হয়!
সরকার এব্যাপারে কঠোর হতে পারেন!
এসির ব্যবহারও কমিয়ে আনতে হবে!
ত্রিশ বছর আগে আমরাত এসি ব্যবহার করিনি!
সেটাও পরিবেশের জন্য ভাবতে হবে
এ ব্যাপারে সবারই দায়িত্ব আছে।
@লাইজু নাহার,
ব্যপার বাস্তবে সত্যি যদি হয় , তাহলে তো আমাদের আনন্দে নাচবার কথা । :laugh:
কার্বনের বিকল্প শক্তির ব্যবস্থা করা শুধু জরুরী নয় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সোলার প্যানেল এখনো বেশ ব্যয়বহুল,তারপরেও সোলার শক্তি ব্যবহারের উপর আরো জোর দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
ধন্যবাদ প্রবন্ধটি লেখার জন্য।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
শুধু সোলার প্যানেল দিয়ে কাজ হবে না , আরও কিছু নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে মনে হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে আমাদের আরো বেশী বেশী সোচ্চার হওয়া দরকার । লেখাটি প্রানবন্ত এবং সময়োপযোগী।
@shahnaz,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আপনাদের অনুপ্রেরনা আমার লেখার উৎস।
পরিবেশ নিয়ে লেখার জন্যে ধন্যবাদ। এই ধরনের আলোচনা এখানে আসেই না। কার্বন এবং কার্বন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বিকল্প শক্তি-এবং বিকল্প শক্তি নির্ভর অর্থনীতি।
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
কার্বন দুষনের হাত থেকে বাচার যে বিকল্প ব্যবস্থা সে ব্যপারে ইচ্ছে করেই লিখিনি। ভাবছিলাম পাঠকরাই সে ব্যাপারে আলোচনা করবে ব্যপকভাবে। দেখি তারা কি সাজেশান দেয়।
@ভবঘুরে,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ‘গ্রিন হাউজ’ দূষনের ভয়াবহ সম্ভাব্য পরিনতির উপর এমন একটি তথ্যবহুল লিখা পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য। নিঃসন্দেহে উন্নত দেশগুলো এর জন্য সিংহভাগ দায়ী, কিন্ত এর পরিনতি পৃথিবীর সমস্ত প্রানীকুলকেই (not only Human) ভোগ করতে হবে। পরিত্রানের দ্রত ব্যবস্থা না নিতে পারলে এটাই হবে সাড়ে চার শত কোটী বছর পৃথিবীর ইতিহাসে তার বাসিন্দাদের দ্বারা প্রথম “self made catastrophe”.
পৃথিবীর ইতিহাসে যে তিনটি mass extinction এর ঘটনা আমার জানি, যথাঃ ‘ ৭০ কোটি বছর আগের ‘snow ball effect’, ২৫ কোটি বছর আগের বিশাল ‘volcanic eruption effect’ যেখানে ৯৫% “জীবেনর ‘ করুন সমাপ্তি, সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ‘Asteroid effect’ যেখানে ডাইনোসার সহ ৭৫% ভাগ জীবনের সমাপ্তির ঘটনা প্রমান করে ‘প্রকৃতির’ কাছে ‘জীবকূল” কতটা অসহায়। নিচের ভিডিও ক্লিপগুলো পাঠকদের সাথে share করতে চাই।
250 million yrs ago (over 95% of all species were extinct):
http://www.youtube.com/watch?v=hDbz2dpebhQ
65 million years ago (over 75% of all species disappeared along with Dinosaurs):
http://www.youtube.com/watch?v=N72kRbvXcvo
http://www.youtube.com/watch?v=XYAFptyG9P4&NR=1
লিখাটি খুব ভাল লেগেছে।
@গোলাপ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য ও লিংক এর জন্য।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ কখনই দুনিয়াজোড়া প্রভাব বিস্তারকারী কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করেনি। করেছে স্থানীয়ভাবে কিছু দুর্যোগ। এই যেমন- বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়, ভুমিকম্প ইত্যাদি। বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো বিশ্ব ব্যপী এক ভয়াবহ দুর্যোগ। আমার তো আশংকা হয়- তাই কেউ বিষয়টিকে নিজের বলে মনে করবে না , অন্যের ওপর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করবে বা দায় এড়াতে চাইবে, যা মানুষের মজ্জাগত। যা আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্যও করছি। গণ মানুষের মধ্যে হয়ত কিছু সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিন্তু এর বিরুদ্ধে যে সমন্বিত কার্য পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার তার ছিটে ফোটাও লক্ষ্যনীয় নয়। যার ফলাফল মারাত্মক। এখন দেখা যাক, মানব জাতির কপালে কি অপেক্ষা করছে।
ভবঘুরেকে আন্তরিক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। বেশ সুন্দর ভঙ্গিতে লিখেছেন।
@সৈকত চৌধুরী,
এতদিন তো ধর্ম নিয়ে লিখলাম। এবার চেষ্টা করলাম অন্য বিষয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
@ভবঘুরে,
অগ্নি-বীণায় এ কোন বিষাদের সুর ভাই? অরুণ বীণায় এখনই কি সুর উঠবে- ‘ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি’? ঘুম ভাঙ্গানোর গান, রাতের কবিতা শেষ না করে এখনই কি ঘুমাবে হে কবি? তবে ভিন্ন সুরে এটাও আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচানোর গান। চলুক-
আমরা সথে আছি। :yes: :yes:
@আকাশ মালিক,
বস্ কি যে বলেন। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাই কি করে। আপাতত: একটু বিষয় বৈচিত্র আনলাম। তবে এটাও তো সেই ধর্মীয় কুসংস্কারের মতই মহাগুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাছাড়া এটা ছিল আমার আগ্রহের অন্যতম বিষয়। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা ও মহাবিশ্ব বিদ্যাতেও আমার সমান আগ্রহ বিদ্যমান। আশা করি সে বিষয়েও ভবিষ্যতে লিখব।
সময়োপযোগী পোস্ট। জানা জিনিসগুলোই এভাবে সুসংগঠিত করে সামনে আসায় ভয় লাগছে একথাগুলো ভেবে
😥
@লীনা রহমান,
এটা আমার আশংকা নয়, আমি মনে করি মানুষ তার স্বার্থপরতা ত্যাগ না করে যে ভাবে ভোগবাদীতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে, তাতে পৃথিবীর পরিনতি এরকম হবেই। শুক্র গ্রহ যে প্রচন্ড উষ্ণ একটা গ্রহ তার কারন সেখানে বিপুল পরিমান গ্রীন হাউজ গ্যাস কার্বনডাই অক্সাইড আছে। এখন আমরা যদি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নি:সরন নিয়ন্ত্রন না করি , তাহলে একদিন যে পৃথিবী শুক্র গ্রহে পরিনত হবে তা যে কোন মূর্খ লোকও বলে দিতে পারে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।