কিছুদিন আগে সিদ্ধার্থ একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন মুক্তমনায় ‘ঈশ্বর ও নৈতিকতা‘ শিরোনামে। প্রবন্ধটিতে তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন ধর্মকেন্দ্রিক নৈতিকতার অসারতা। তার উপসংহার ছিলো নৈতিক বিধানের উৎস অনুসন্ধানের জন্য ‘ঈশ্বর’ নামক অনুকল্পের কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। যথার্থ মূল্যায়ন, এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু একটি জায়গায় কিছুটা অসুম্পূর্ণতা রয়ে গিয়েছিলো আমার মতে। নৈতিকতার উৎস সন্ধানের জন্য ঈশ্বর বা ধর্মের প্রয়োজন নেই সত্যি, কিন্তু আমাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস পরিক্রময়ায় দেখাতে হবে কীভাবে সমাজে নৈতিকতার উদ্ভব ঘটেছিলো। এটি এড়িয়ে গেলে কিন্তু চলবে না। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি না দেখাতে পারলে সম্পূর্ণতার স্বাধ বোধ হয় আস্বাদন করা যায় না। ব্লগার সংসপ্তক সিদ্ধার্থের লেখাটিতে মন্তব্য করতে গিয়ে চমৎকার একটি লাইন লিখেছিলেন –
নৈতিকতাকে তাই স্বতন্ত্র কোন প্রতিষ্ঠান হিসেবে না দেখে বিবর্তনের আলোকেই দেখা উচিৎ।
আমার আজকের প্রবন্ধটি মূলত সংসপ্তকের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। আমি এই প্রবন্ধে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের বিবর্তনীয় উৎস সন্ধান করতে সচেষ্ট হয়েছি। বিবর্তনের যাত্রা পথে হাটতে হাটতে আমরা খুঁজে নিতে চেষ্টা করব কীভাবে স্বার্থপর প্রতিযোগিতার মাঝেই পরার্থিতার বীজ লুকিয়ে থাকে, আর তারপর এক সময় মহীরূহ আকারে জীবজগতে উদ্ভুত হয় সহযোগিতা, নৈতিকতা আর মূল্যবোধের মত অভিব্যক্তিগুলো। প্রবন্ধটি দুই পর্বে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করবো। আজকে দেয়া হল এর প্রথম পর্ব।
:line:
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব
কয়েকদিন আগে জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নামে সহিংসতা নিয়ে একটা সিরিজ লিখেছিলাম (১ | ২ | ৩ | ৪ )। সিরিজটিতে সহিংসতার একটি নৃতাত্ত্বিক এবং সামাজিক বিশ্লেষণ হাজির কারার চেষ্টা ছিলো আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পটভূমিকায়। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব সহিংসতার বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে গিয়েই কিভাবে একসময় পরার্থপরায়ণতা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটেছিলো মানব সমাজে।
সহিংসতা আর নৈতিকতা – দুটি বৈশিষ্ট্যকে সাদা চোখে দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দা মনে হবে। কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন সহিংসতা আর নৈতিকতার মধ্যে একধরণের অলিখিত সম্পর্ক আছে। গবেষক স্যামুয়েল বাওয়েল তার একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখিয়েছেন আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজে বিদ্যমান নৃশংস সহিংসতা থেকেই শেষ পর্যন্ত সহযোগিতা আর সহমর্মিতার উদ্ভব হয়েছিলো[1]। ব্যাপারটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। আমরা জানি আমাদের ২৫ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ইতিহাসে শতকরা প্রায় ৯৯ সময়ই আমরা শিকারী-সংগ্রাহক হিসেবে কাটিয়েছি। শিকারী সংগ্রাহক সমাজের শতকরা ৯০ ভাগ গোত্রই হানাহানি মারামারিতে লিপ্ত থাকতো, আর ১৫ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকতো যুদ্ধ কিংবা খুনোখুনিতে মানুষের মারা যাবার। বাওয়েল তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, আদিম শিকারী সংগ্রাহকদের এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে গোত্রের সদস্যরা অনেক বেশি নিজেদের মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করেছে, স্বার্থত্যাগ করে সদস্যদের জীবন রক্ষায় কাজ করতে পেরেছে, তারাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের ছাকুঁনিতে তারাই টিকতে পেরেছে অন্যদের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ, সোজা বাংলায় বললে, মূঢ় সহিংসতা থেকেই একসময় জন্ম হয়েছে মূঢ় পরার্থিতার, নীচের কার্টুনটিতে তার একটি আলামত তুলে ধরা হয়েছে –
চিত্র: মূঢ় সহিংসতা থেকেই কি এক সময় জন্ম হয়েছিলো মূঢ় পরার্থিতার?
কিন্তু কিভাবে স্বার্থপরতা কিংবা সহিংসতার মত বদ খদ ব্যাপার স্যাপার থেকে নৈতিকতার মতো একটি ‘আপাত বিপরীতমুখী’ গুণাবলীর জন্ম হতে পারে? আসুন ব্যাপারটি একটু বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝার চেষ্টা করি। তবে এ ব্যাপারটি বুঝতে আগে হলে আমাদের চোখ মেলে প্রকৃতির দিকে তাকাতে হবে, তাকাতে হবে প্রাণীজগতের দিকেও। আমাদের জানতে হবে নৈতিকতার ব্যাপারটি কি কেবল মানব সমাজেরই একচেটিয়া নাকি অপরাপর প্রানীজগতেও এর হদিস মেলে?
প্রাণীজগতে পরার্থিতা এবং নৈতিকতা
১৯৯৬ সালের আগাস্ট মাসের ১৬ তারিখ। শিকাগোর ব্রুকফিল্ড চিড়িয়াখানা। বিন্তি জুয়া (Binti Jua) নামে এক মেয়ে গরিলা খাঁচার ভিতর পায়চারী করছিল। হঠাৎ,খাঁচার বাইরে দর্শকদের মধ্য থেকে একটি তিন বছরের শিশু দেয়ালের উপর বসে গরিলাকে দেখতে গিয়ে খাঁচার ভিতরে প্রায় বিশফুট নীচে কংক্রিটের মেঝেতে আছরে পড়ে। পড়েই জ্ঞান হারায় ছেলেটি। বিন্তি পায়চারী বাদ দিয়ে ছেলেটির দিকে এগিয়ে যায়। ১৬০ পাউণ্ডের দীর্ঘদেহী গরিলাটিকে ছেলেটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে দর্শকদের মধ্যে মুহূর্তেই চীৎকার চ্যাচামেচি শুরু হয়ে যায়। বিন্তি কাছে গিয়ে অনেক মনোযোগ দিয়ে ছেলেটিকে দেখতে লাগলো। তারপর এক সময় দুই হাতে শিশুটিকে বগলদাবা করে ফেললো। দর্শকদের মধ্যে তখন আতংক চরমমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।অনেকেই ভাবছিলেন, এবারে নিশ্চয়ই বাচ্চাটাকে ছিঁড়ে খুরে খেয়ে ফেলবে ঐ পাষণ্ড গরিলা। কিন্তু তারপরে যা ঘটল, তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। এ কাহিনী কেবল আমরা রূপকথাতে কিংবা কল্পকাহিনীতেই শুনেছি। বিন্তি শিশুটিকে নিয়ে বিশফুট দেয়াল পার হয়ে খাঁচার এক প্রান্তের একটি প্রবেশ দ্বারে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো যাতে নিরাপত্তাকর্মীরা তার কাছ থেকে এসে নিয়ে যেতে পারে। নিরাপত্তাকর্মীরা বিন্তির কাছ থেকে বাচ্চাটি নিয়েই সোজা হাসপাতালের দিকে ছুটলেন। শিশুটি পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলো দিন কয়েকের মধ্যেই। এভাবেই ব্রুকফিল্ড চিরিয়াখানার বিন্তি নামের গরিলাটি বাঁচিয়ে দিয়েছিলো একটি ছোট্ট শিশুর জীবন।
চিত্র: বিন্তি জুয়া নামের গরিলাটি বিশ ফুট নীচে পড়ে যাওয়া ছেলেকে কোলে তুলে নিচ্ছে। ১৯৯৬ সালের আগাস্ট মাসের ১৬ তারিকে এভাবেই গরিলাটি বাঁচিয়েছিলো ছেলেটির জীবন।
এ ধরণের পরার্থপরতামূলক কাজ যে কেবল বিন্তিই নামের পশুটিই করেছে তা কিন্তু নয়। ১৯৮৬ সালে জার্সি চিরিয়াখানায় জাম্বো নামে আরেকটি গরিলাও ঠিক এমনিভাবে আরেকটি মানব শিশুর জীবন বাঁচিয়েছিল। সেখানেও শিশুটি খাঁচার ভিতরে পড়ে গিয়েছিল, আর জাম্বো বিন্তির মতো শিশুটিকে কোলে করে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে তুলে না দিলেও বহুক্ষণ ধরে শিশুটির কাছে দাঁড়িয়ে তাকে রক্ষা করেছিল, যাতে অন্য গরিলারা আক্রমণ করতে না পারে। এতোদিন মানবিকতা, সহিষ্ণুতা, পরার্থপরায়ণতা, সহযোগিতা, নৈতিকতা প্রভৃতি শব্দগুলোকে ‘মানুষের’ একচেটিয়া সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করার যে রেওয়াজ ছিল, বিন্তি কিংবা জাম্বোর প্রয়াস সে সব স্বতঃসিদ্ধ ধারণার প্রতি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো যেন। বিজ্ঞানীরা বলেন, শুধু গরিলা নয় শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং,কিংবা বনোবোদের মধ্যে এ ধরণের পরার্থিতার সন্ধান খোঁজ করলেই পাওয়া যায়, তারা একে বলেন আবেগানুভুতি (empathy)। আবেগানুভূতি মানুষ শুধু নয়,অন্যান্য অনেক প্রাণীর মধ্যেও দৃশ্যমান (animal empathy)। আর আবেগানুভূতির সাথে নৈতিকতার একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। বিজ্ঞানী ফ্র্যান্স ডি ওয়াল তার ‘আওয়ার ইনার এপ’ গ্রন্থে বিন্তির ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে অভিমত দিয়েছেন যে, নৈতিকতার ব্যাপারগুলোকে কেবল মানব সমাজের সাংস্কৃতিক অংগ বলে ভেবে নেওয়া হত তা মোটেও ঠিক নয়; আসলে মানব সমাজে নৈতিকতার উদ্ভবের উৎস লুকিয়ে আছে আমাদের বিবর্তনীয় যাত্রা পথে[2]। ছয় মিলিয়ন বছর আগে আমরা আমাদের শিম্পাঞ্জি জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলাম। বিজ্ঞানী ফ্রান্স ডি ওয়াল তার সাম্প্রতিক ‘প্রাইমেটস এণ্ড ফিলোসফারস’[3] গ্রন্থে বেশ কিছু আকর্ষনীয় উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছেন যে শিম্পাঞ্জি এবং বনমানুষেরাও অনেকটা মানুষের মতো করেই ব্যাথা বেদনায় আক্রান্ত হয়, এমনকি গোত্রে যুদ্ধে পরাজিত হলে পরাজিত শিম্পাঞ্জিকে অন্য একটি শিম্পাঞ্জি সান্ত্বনা জানানোর উদাহরণও তিনি বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। কাজেই শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বনোবোসহ আমাদের খুব কাছাকাছি প্রজাতিগুলোর আবেগানুভূতি বিশ্লেষণের মাধ্যমেই মানব সমাজে নৈতিকতার প্রকৃত উৎস বৈজ্ঞানিকভাবে জানা সম্ভব বলে বিজ্ঞানীরা আজ মনে করেন।
চিত্র: যুদ্ধে পরাজয়ের পর পরাজিত শিম্পাঞ্জির পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে আরেকটি শিম্পাঞ্জি (উৎস : Frans de Waal, Primates and Philosophers, 2006)
নৈতিকতার ব্যাপারটি মানুষ, গরিলা কিংবা কিংবা অন্য প্রাইমেটদেরই আছে তা কিন্তু নয়। ছোট স্কেলে তথাকথিত অনেক ‘ইতর প্রাণী’র মধ্যেও কিন্তু এটি দেখা যায়। রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার বাদুরেরা নিজেদের মধ্যে খাদ্য ভাগাভাগি করে, বানর এবং গরিলারা তাদের দলের কোন সদস্য মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তাকে সহায়তা করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে, এমনকি ‘দশে মিলে’ কাজ করে তার জন্য খাবার পর্যন্ত নিয়ে আসে। ডলফিনেরা অসুস্থ অপর সহযাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সৈকতের দিকে নিয়ে যায়, যার ফলে অসুস্থ ডলফিনটির পর্যাপ্ত আলো বাতাস পেতে সুবিধা হয়, তিমি মাছেরা তাদের দলের অপর কোন আহত তিমি মাছকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। হাতীরা তাদের পরিবারের অসুস্থ বা আহত সদস্যকে বাঁচানোর জন্য সবোর্চ্চ ত্যাগ স্বীকার করে[4]। এ ধরনের দৃষ্টান্ত বিরল নয়। অনেক সময় পরার্থপরায়ণতার ব্যাপারটি কেবল নিজেদের প্রজাতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, বহু ক্ষেত্রেই অতিক্রম করে প্রজাতির আঙ্গিনা। যেমন, ডলিফিনেরা হাঙ্গরের আক্রমণ থেকে বিপন্ন মানুষজনকে বাঁচিয়েছে এমন বেশ কিছু নথিবদ্ধ ঘটনার উল্লেখ আছে বিজ্ঞানীদের গবেষনায়[5], [6], [7]।
স্বার্থপরতা থেকে সহযোগিতা
প্রকৃতিতে প্রতিযোগিতা আছে, আছে নিষ্ঠুরতা – এ কথা বোধ হয় আমরা সবাই জানি। কিন্তু কতটুকু নিষ্ঠুরতা? প্রকৃতি যে আসলে ঠিক কি পরিমাণ নিষ্ঠুর তা বোধ হয় অনেক সময় আমাদের চিন্তাতেও আসে না। হোরাস সম্প্রতি প্রানীজগতে নিষ্ঠুরতার বেশ কিছু নমুনা মুক্তমনা ব্লগে হাজির করেছেন[8]। সেই লেখাটি থেকেই কিছু উদাহরণ হাজির করা যাক।
মায়ের গর্ভে থাকা অবস্হাতেই শিশু হাঙরেরা একজন আরেকজনকে আক্রমণ করে হত্যা করে এবং তাদের খেয়ে ফেলে যা তাদের পুষ্টি জোগায়। শুরুতে ২০টির মত শিশু হাঙর মায়ের গর্ভে বড় হতে শুরু করলেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে একটি মাত্র স্যান্ড শার্কের শিশু বেঁচে থাকে। মার কাছে রাখা কোলের শিশু অরক্ষিত হয়ে পরলে পুরুষ সিফাকা লিমারেরা শিশু লিমারটিকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট দুভাগ করে মাটিতে ফেলে দেয়।
তারপর ধরুন পাখিদের মধ্যে বিদ্যমান নিষ্ঠুরতার উদাহরণগুলো। কোকিলের নিষ্ঠুরতার উদাহরণ তো আমাদের সবারই জানা। একে তো কোকিল প্রতারণা করে অন্য পাখির রাসায় ডিম পাড়ে। শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে না হয় কথা ছিলো। কোকিল শিশু ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথেই যে কাজটি করে তা হলো অন্য ডিমগুলোকে বাসা থেকে ফেলে দেয়া, এমনকি আশে পাশের ডিম ফুটে সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চাকেও। শিশু কোকিলের পিঠে বিশেষ ধরণের একটি খাঁজের মত থাকে যেটা দিয়ে সে ডিমগুলোকে পাখির বাসার বাইরে ফেলে দিতে সাহায্য করে। বলা বাহুল্য, কোকিল শিশুরা এই কাজটি সহজাত প্রবৃত্তির বশেই করে থাকে। আবার, ব্লু ফুটেড বুবিস নামক পাখিরা খাদ্যস্বল্পতার সময় (যখন সবচাইতে বাচ্চাদের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে ২০ ভাগের বেশী কমে যায়), বড় বাচ্চাটি তখন অন্য সহোদরদের ঠোকর দিয়ে মেরে ফেলে অথবা বাসা থেকে বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে ছোট বাচ্চাটি খাদ্যের অভাবে কিংবা অন্য প্রাণীদের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়।
কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও নিষ্ঠুরতা প্রবল। মৌমাছিদের কথাই ধরা যাক। রাণী মৌমাছি যখন লার্ভা থেকে পিউপাতে পরিণত হয়, তখন প্রথম মৌমাছিটা সাথে সাথেই সে অন্যান্য সকল প্রতিদ্বন্দী সহোদরাদের হুল ফুটিয়ে মেরে ফেলে। তার বোনদের একজনও তার হাত থেকে নিস্তার পায় না। তবে প্রকৃতির সম্ভবতঃ সবচেয়ে চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ পেয়েছিলাম যখন আমাদের মুক্তমনা সদস্য পৃথিবী একবার ইমেইল করে আমাকে ইকনিউমেন (Ichneumon) প্রজাতির একধরণের প্যারাসিটোয়েড বোলতার কথা জানিয়েছিলেন। এরা একটি শুঁয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং সেটার দেহে ডিম পাড়ে। অর্থাৎ, শিকারকে সরাসরি হত্যা না করে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে। এই ডিম ফুটে যে শূককীট (larva) বের হয়, তা শিকারের দেহের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। স্ত্রী বোলতাগুলো তার শিকারের প্রত্যেকটি স্নায়ুগ্রন্থি সতর্কতার সাথে নষ্ট করে দেয় যাতে তাদের শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
চিত্র: ইকনিউমেন প্রজাতির বোলতা শুয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে,আর তার দেহকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার এই নির্বিচারী উন্মাদনা দেখে সময় সময় বিচলিত হয়েছেন আস্তিক, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, প্রকৃতিবাদী, মানবতাবাদী, সংশয়বাদী – সকলেই। বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এই ইকনিউমেন প্রজাতির বোলতার উদাহরণটিকে তার গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বইয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি রবিন উইলিয়ামসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এই প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর নিষ্ঠুরতা দেখলেই বোঝা যায় যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের মতো কোন পরিকল্পণাকারী দ্বারা এই মহাবিশ্ব তৈরি হলে তিনি একজন স্যাডিস্টিক বাস্টার্ড ছাড়া আর কিছু হবেন না’[9]। প্রকৃতির এই ঢালাও নিষ্ঠুরতা দেখে এক সময় বিচলিত হয়েছিলেন ডারউইনও। তিনি প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর বীভৎসতা দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন; তিনি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন[10] –
আমি ভাবতেই পারিনা, একজন পরম করুণাময় এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কোন ঈশ্বর এইভাবে ডিজাইন করে তার সৃষ্টি তৈরি করেছেন যে, ইকনিউমেনগুলোর খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য একটি জীবন্ত কিন্তু প্যারালাইজড শুয়োপোকার প্রয়োজন হয়।
ঈশ্বরের ‘ভুল ডিজাইনের’ কথা না হয় বাদ থাকুক । আমরা বরং বৈজ্ঞানিকভাবেই খুঁজে দেখার চেষ্টা করি কেন প্রকৃতিতে এই ঢালাও নিষ্ঠুরতা এমনিভাবে টিকে আছে! বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের একটি সর্বজনগ্রাহ্য বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন চার্লস ডারউইনই, ১৮৫৯ সালে প্রস্তাবিত বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে। ডারউইন বুঝেছিলেন যে, প্রকৃতিতে প্রতিটি জীবের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা যত, সে পরিমাণ খাদ্যের যোগান প্রকৃতিতে কখনোই থাকে না।শুধু খাদ্য নয়, আশ্রয়, বাসস্থান এমনকি প্রজনন সঙ্গীরও ঘাটতি থাকে।এ সব নিয়ে প্রতিনিয়ত অন্তঃপ্রজাতি (intra-species) এবং আন্তঃপ্রজাতি (inter-species) প্রতিযোগিতা চলে। জীবজগতে সবাইকেই বেঁচে থাকার, অধঃবংশ রেখে যাওয়ার অর্থাৎ এক কথায় টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চলে। তিনি এর নাম দেন জীবনের জন্য সংগ্রাম বা জীবন-সংগ্রাম (struggle of existence)। ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন- জীবন সংগ্রামের কারণেই প্রকৃতির জীবজগৎকে কিছু ক্ষেত্রে চরম নিষ্ঠুর হতে হয়েছে।
এখন ডারউইন প্রস্তাবিত বিবর্তনীয় পটভুমিকায় প্যারাসিটোয়েড বোলতার নিষ্ঠুরতার ব্যাপারটা আরেকবার চিন্তা করা যাক। উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। শুয়োপোকার জীবন্ত দেহ নিঃসন্দেহে শূককীটের জন্য খুব ভাল আশ্রয় এবং নিরাপদ খাদ্যের যোগান।কাজেই বিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এমন কোন জীব খুঁজে পেলে নিশ্চয় আমরা অবাক হব না যে কিনা খাদ্যের চালান এবং আশ্রয় বজায় রাখার জন্য শুয়োপোকাকে নিস্তেজ করে তার দেহকে ব্যবহার করার সুযোগ নিতে চাইবে। প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলো সেই সুযোগেরই সফল সদ্ব্যাবহারকারী মাত্র।
ডারউইইন যখন বিবর্তন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন তখন তিনি জিনের ব্যাপার স্যাপারগুলো মোটেই জানতেন না। জানবেনই বা কি করে? জেনেটিক্সের তখন জন্মই হয়নি। এমনকি মেণ্ডেলের সমসাময়িক হওয়া সত্ত্বেও মেণ্ডেলের জিন নিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো তার দৃষ্টির অগোচরে থেকে গিয়েছিলো।শুধু ডারউইনই নন, সেসময়কার সমসাময়িক কোন বিজ্ঞানীই মেণ্ডেলের কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন নি, তার কাজ মূলত হারিয়েই গিয়েছিলো বিস্তৃতির অন্তরালে। মেণ্ডেলের মৃত্যুর ১৬ বছর পরে সেগুলো পুনরাবিস্কৃত হয় ইউগো দ্য ফ্রিস, কার্ল করেন্স এবং এরিখ ফন শেরমাখ- সেসেনাগ প্রমুখ বিজ্ঞানীদের দ্বারা। তারপর থেকে বিশেষতঃ আধুনিক বংশগতিবিদ্যার উন্মেষের পর থেকে আমরা জিন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা অর্জন করেছি। চল্লিশের দশকে জনপুঞ্জ বংশগতিবিদ্যার অভ্যুদয়ের পর প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে বংশগতির সম্মিলন ঘটে। জনপুঞ্জে জিন কিভাবে বংশানুসৃত হয়, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন গনিতবিদ জি এইচ হার্ডি এবং জার্মান চিকিৎসক ভিলহেল্ম ওয়েইনবার্গ। পরে পরিসংখ্যানবিদ ইউল দেখিয়েছিলেন যে ডারউইনের অবিচ্ছিন্ন পরিবৃত্তি যে মেন্ডেলবাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, পরিসংখ্যান দিয়ে তা প্রমাণ করা যায়। জীববিদ নিলসনের গবেষনায় ইউলের প্রকল্পের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক ইনফ্লুয়েনশিয়াল ছিলো ১৯৩৭ সালে ডবজাবনস্কির ‘জেনেটিক্স এন্ড অরিজিন অব স্পিশিজ’ নামক বইটির প্রকাশ। এই বইয়ের মাধ্যমেই আসলে আধুনিক বংশগতিবিদ্যার সাথে ডারউইনবাদের সমন্বয় ঘটে। রঙ্গমঞ্চে আসে বিবর্তনের সংশ্লেষনী তত্ত্ব তথা আধুনিক বিবর্তনের তত্ত্ব, যা এখনো বিবর্তনের স্বীকৃত তত্ত্ব হিসেবে জীববিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে রাজত্ব করে চলেছে।
সেই আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব আমাদের খুব ভালভাবে দেখিয়েছে জিনগত স্তরে এক ধরণের স্বার্থপরতা কাজ করে[11]। আমরা সবাই অবগত যে, মানুষ সহ যে কোন প্রানীর মধ্যেই সন্তানদের প্রতি অপত্য স্নেহ প্রদর্শন কিংবা সন্তানদের রক্ষা করার জন্য মা বাবারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে। অর্থাৎ, নিজের দেহকে বিনষ্ট করে হলেও পরবর্তী জিনকে রক্ষা করে চলতে সচেষ্ট হয় জীবগগতের প্রায় সকল সদস্যরাই। কারণ, ‘পরবর্তী জিন’ রক্ষা না পেলে নিজের দেহ সুন্দর, কিংবা সুরক্ষিত হোক না কেন, বিবর্তনের দিক থেকে কোন অভিযোজিত মূল্য নেই। সেজন্যই নেকড়ে যখন আক্রমণ করে, গোত্রের ছোট বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য বুনো মোষেরা বাচ্চাদের চারিদিকে ঘিরে শিং উঁচিয়ে নেকড়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও। এভাবেই জীব নিজেকে বিবর্তনের পথ ধরে এমনভাবে নিয়ে চলে যাতে তার জিন-বিস্তারে কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় উদ্যোগী হয়, টিকে থাকার প্রয়োজনেই। আসলে যার সাথে সে বেশী জিন বিনিময় করবে, যত ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে, তত বাড়বে নিজের জিন বিস্তারের সম্ভাবনা, সেজন্যই, জীব নির্বিশেষে সন্তানের প্রতি, পরিবারের প্রতি, নিকটাত্মীয়রের প্রতি এবং গোত্রের প্রতি একধরনের জৈবিক টান উপলব্ধি করে, এবং তাদেরকে রক্ষার চেষ্টা করে। কাজেই জিনের উদ্দেশ্য যদি কেউ বলেন – কেবল স্বার্থপরভাবে প্রতিলিপি করা আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা – তাহলে সেটা অত্যুক্তি হবে না মোটেই। সেজন্যই স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার সেলফিশ জিন গ্রন্থে অনুপম কাব্যিক ভঙ্গিমায় বলেন[12] –
আমরা সবাই একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র (survival machine)- অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক বাহন মাত্র – যার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরণের জৈবঅনুকে সংরক্ষণ করা। … তারা আমার ভেতরে আছে, তারা রয়েছে আপনার ভেতরেও; তারাই আমাদের সৃষ্টি করেছে, আমাদের দেহ আর আমাদের মন; আর তাদের সংরক্ষণশীলতাই আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত মৌলিকত্ব। ওই অনুলিপিকারকেরা এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন তাদেরকে জিন বলে ডাকা হয়, আর আমরা হলাম তাদের উত্তরজীবীতার যন্ত্র।
কাজেই জৈব যন্ত্র যে স্বার্থপর তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। জিনগত স্তরে স্বার্থপরতা থাকার কারণেই অনেকটা ‘ টিকে থাকার যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করে যায়। কিন্তু বিস্ময়কর যে ব্যাপারটি গবেষণায় বেরিয়ে আসলো তা হল – জিনের এই স্বার্থপরতা থেকেই পরার্থতার মতো এক ধরণের বিপরীতমুখি অভিব্যক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে । ‘দ্য এন্ট এন্ড পিকক’ গ্রন্থের লেখিকা জীববিজ্ঞানী হেলেনা ক্রনিন তার ‘দ্য বেটেল অব সেক্সেস রিভিসিটেড’ নামের প্রবন্ধে বলেন[13] –
Among genes all is selfishness, every gene out for its own replication. But from conflict can come forth harmony; the very selfishness of genes can give rise to cooperation. For among the potential resources, that genes can exploit is the potential for cooperation with other genes. And if it pays to cooperate, natural selection will favor genes that do so.
স্বার্থপর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরার্থপরায়ণতার উদ্ভবের ব্যাপারটি শিক্ষায়তনে গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মত তুলে ধরেন বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস এবং উইলিয়াম হ্যামিলটন[14]। পরবর্তীতে ধারনাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন রিচার্ড ডকিন্স তার উপরে উল্লিখিত ‘দ্য সেলফিশ জিন‘ বইয়ের মাধ্যমে[15]। তারা দেখালেন, স্বার্থপর জিন যেমন আত্মত্যাগ কিংবা পরার্থতা তৈরি করে, ঠিক তেমনি আবার প্রতিযগিতামূলক জীবন সংগ্রাম থেকেই জীবজগতে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরণের পারষ্পরিক সহযোগিতা, মিথোজীবীতা কিংবা সহ-বিবর্তন। টিকে থাকার প্রয়োজনেই কিন্তু এগুলো ঘটে।
চিত্র: ক্লাউন মাছ আর এনিমোনের সহবিবর্তন গড়ে উঠে তাদের নিজেদের স্বার্থের কারণেই।
এমনি একটি চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে ‘কালারফুল ক্লাউন’ মাছের সাথে এনিমোনের সহবিবর্তন। এ ধরনের মাছ তার গাঢ় রঙের কারণে সহজেই অন্যের শিকারে পরিণত হতে পারে, আত্মরক্ষার জন্য গাঢ় রঙের সামুদ্রিক এনিমোনের শুঁড়ের ভিতর প্রায়শঃই আত্মগোপন করে। এভাবে ক্লাউন মাছগুলো শিকারী মাছের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়। আবার অন্যদিকে এনিমোনগুলোও ক্লাউন মাছের কারণে উপকৃত হয়। কারণ ক্লাউন মাছগুলো এনিমোনভোগী ছোট মাছকে তাড়িয়ে দেয়। এনিমোন এবং ক্লাউন মাছের সহবিবর্তনের ফলে উপকৃত হচ্ছে দুই প্রজাতিই। নিঃস্বার্থ ভাবে একে অপরের সেবা করার জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেনি, বরং বন্ধুর প্রকৃতিতে আত্মরক্ষা আর টিকে থাকার প্রয়োজনেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক। এ ধরণের অনেক সম্পর্কই প্রকৃতিতে আছে। হামিং বার্ডের সাথে অর্নিথোপথিলাস ফুলের সহবিবর্তন, এংরাকোয়িড অর্কিডের সাথে আফ্রিকান মথের সহবিবর্তন এগুলোর প্রত্যক্ষ উদাহরণ । অত্যন্ত স্বার্থপর কারণেই তাদের মধ্যে সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে; আর সেই নিতান্ত স্বার্থপর কারণটি হল – সফলভাবে টিকে থাকার ইচ্ছে। স্বার্থপরতার কারণেই কীভাবে সহযোগিতার গুণাবলী প্রকৃতিতে বেড়ে উঠে সেটি বিশ্লেষণ করতে গিয়েই বিজ্ঞান লেখক ম্যাট রিডলী তার ‘নৈতিকতার উৎস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন-‘উই কোঅপারেট ইন অর্ডার টু কম্পিট বেটার’। ব্যাপারটা নির্জলা সত্য।
আমরা ছোটবেলায় কামিনী রায়ের অনেক পরার্থপরতামূলক কবিতা পড়েছি –
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি,
এ জীবন মন সকলই দাও
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও। …”
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ‘ আপনার কথা ভুলিয়া পরের কারণে স্বার্থ বিলিয়ে’ দেয়ার মতো করে প্রকৃতির জীবজগৎ করে কাজ করে না। ডারউইন অনেক আগেই ধারণা করেছিলেন যে, তার বিবর্তন তত্ত্ব সত্যি হলে, প্রকৃতিতে এমন কোন জীব পাওয়া যাবে না যে শুধু নিঃস্বার্থভাবে অন্য প্রজাতির সেবা করার জন্য বেঁচে থাকে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মেই সে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য। ডারউইন তার ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ বইতে তার পাঠকদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এ ধরণের একটা প্রজাতি খুঁজে বের করার জন্য, এবং স্বাভাবিক কারণেই আজ পর্যন্ত কেউ সে চ্যালেঞ্জের উত্তর দিতে পারেনি। এই সহজ ব্যাপারটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। আমাদের দেহের ভিতরেই অসংখ্য উপকারী ব্যকটেরিয়া বাস করে, এগুলো আমাদের দেহে থাকার ফলে আমরা যেমন তাদের দিয়ে উপকৃত হচ্ছি, তেমনি আবার ব্যাকটেরিয়াগুলোও বেঁচে থাকার নানা রসদ খুঁজে পাচ্ছে আমাদের দেহে। এমন কিন্তু নয় যে, আমরা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সেবা করার পশরা সাজিয়ে বসে আছি তাদের উপকার করার জন্য।কিংবা উল্টোভাবে ব্যাক্টেরিয়াগুলো সাহায্যের দোকান খুলে বসে আছে মানব সমাজকে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। বরং দুইপক্ষের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে বলেই এই সহযোগিতার সম্পর্কগুলো টিকে রয়েছে।অর্থাৎ, পরার্থতা বলি কিংবা সহযোগিতা যাই বলি না কেন এর মূলে কিন্তু রয়ে যাচ্ছে সেই মোটা দাগে লোভাতুর স্বার্থপরতাই। বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস সেজন্য খুব চাঁছাছোলাভাবেই বলেছেন[16] –
যখন একজন জীববিজ্ঞানী দেখেন কোন প্রানী অন্য কারো উপকার করে চলেছে, তিনি সহজাত নিয়মেই ধরে নেন যে,প্রানীটিকে উপকারের নামে আসলে তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে,কিংবা এর পেছনে রয়েছে কোন প্রচ্ছন্ন স্বার্থপরতা।
একই ব্যাপার চোখে পড়েছিলো বিজ্ঞানী হ্যামিলটানেরও। তিনি পিঁপড়ে, মৌমাছি সহ বিভিন্ন সামাজিক কীট পতঙ্গের কাজ এবং আচার ব্যবহার বহুদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, তাদের পরার্থতামূলক কাজগুলো আসলে ঢালাওভাবে পরার্থতামূলক নয়, বরং তাদের বিভিন্ন কাজের পেছনে আসল অভিসন্ধি হচ্ছে খুব স্বার্থপরভাবে জিনের রক্ষা আর বহুপ্রতিলিপি রেখে যাওয়ার পথ সুগম করা। পিঁপড়েরা একসাথে খাদ্যের অন্বেষণ করে, সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিরাট কলোনি গড়ে তুলে। মৌমাছিরাও তাই। তাদের মধ্যে আছে এমনকি বন্ধ্যা সৈন্যের (sterile worker) উপস্থিতিও, যারা পুরো জীবন ব্যয় করে দেয় রাণীর সেবা যত্নে, নয়তো গোত্রকে রক্ষা করে শত্রুর আক্রমণ থেকে। জৈবিকভাবে চিন্তা করলে এরা তো পরার্থতার চূড়ান্ত! কারণ নপুংসক এই বন্ধ্যা সৈন্যদের কখনো কোন সন্তান হয় না।তারা কেবল খোঁজা প্রহররীর মত হেরেম পাহার দেয়! সাদা চোখে দেখলে জৈবিকভাবে এদের নিজের জিন রক্ষার তাগিদ একেবারে শূন্য। তাহলে ? কলুর বলদের মতো বেগার খাটা এই সৈন্যরা বিদ্রোহ করছে না কেন? এই ধাঁধাই সমাধান করলেন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম ডোনাল্ড হ্যামিলটন। তিনি তার গবেষনায় দেখালেন যে মৌমাছি কিংবা পিঁপড়েদের সমাজ খুব জটিল। সেখানে রাণী মৌমাছির সাথে কর্মী মৌমাছির (যার অধিকাংশই নিজের সন্তান) সম্পর্কের এক জটিল টানাপোড়েন চলে প্রতিনিয়ত। দেখা গেছে, রানী মৌমাছি দিনে প্রায় আড়াই হাজার ডিম পাড়ে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই কলোনিতে ডিমের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। সেই ডিমের কিছু অংশকে রাণী নিষেক ঘটায় পুরুষ মৌমাছির শুক্রাণু দিয়ে, আবার বহুসংখ্যক ডিম নিষেক ছাড়াই পড়ে থাকে।নিষেক ঘটানো ডিমগুলো থেকে জন্ম হয় কেবল নারী মৌমাছির।এরা ডিপ্লয়েড। এদের ক্রোমজোমে থাকে যুগল বন্ধন। এই যুগল সেটটির অর্ধেক আসে বাবার কাছ থেকে আর অর্ধেক মায়ের। কিন্তু অন্যদিকে পুরুষ মৌমাছিরীরা হ্যাপ্লয়েড, তাদের জন্ম হয় অনিষিক্ত ডিম থেকে জন্ম । এদের কেবল একটিই ক্রোমোজম থাকে, যা সরাসরি তাদের মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ফলে কর্মী নারী মৌমাছিরা তাদের বোনদের সাথে এমনকি শতকরা ৭৫ ভাগ সদৃশ জিনের অংশ বিনিময় করে, যেখানে তার মার সাথে কিংবা তার নিজের সন্তানের সাথে জিনের সাদৃশ্য তাকে শতকরা ৫০ ভাগ, এবং তার ভাইদের সাথে মাত্র ২৫ ভাগ। অর্থাৎ, একটি কর্মী মৌমাছি যদি নিজের বংশ রক্ষার চেয়ে যদি তার সহদোর বোনদের প্রজননে পরোক্ষভাবে সুবিধা করে দেয়, কিংবা তার রানী মৌমাছির সন্তানদের রক্ষা করায় সচেষ্ট হয়, তাবেই তার অধিকতর জেনেটিক সাফল্য থাকবে। হিসেব কষলে কিন্তু তাই পাওয়া যাচ্ছে। পিঁপড়া, মৌমাছি কিংবা উইপোকা – যাদের এ ধরণের জটিল সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সবার মধ্যেই এ ধরণের জটিল সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠে।কিন্তু এই সহযোহিতা ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি’ টাইপের সহযোগিতা নয়, বরং এই সহযোগিতার মূলে থাকে সেই একই স্বার্থপরতাই – জিনের আত্মপরাণয়নতা। সেজন্যই ম্যাট রিডলী তার ‘দ্য অরিজিন অব ভার্চু’ বইয়ে বলেন[17] –
‘In the world of biology, an ant slaves away celibate on behalf of its sisters not out of goodness of its little heart, but out of the selfishness of genes.’
চিত্র: পিঁপড়েদের মধ্যে বিদ্যমান জটিল জেনেটিক সম্পর্কের কারণেই তাদের মধ্যে একধরণের সামাজিক সহযোগিতা গড়ে উঠে।
বিজ্ঞানী হ্যামিলটন দেখিয়েছেন এই সহযোগিতার মূলে থাকে জিনকেন্দ্রিক স্বার্থপরতাই। কিভাবে পরার্থতামূলক অভিব্যক্তি গড়ে উঠে তা নির্ণয়ের জন্য হ্যামিলটন একটি নিয়ম প্রস্তাব করেন, যা জীববিজ্ঞানে হ্যামিলটনের সূত্র হিসেবে পরিচিত। সূত্রটির গাণিতিক সংজ্ঞায়ন এরকম[18] –
$latex b>c/r $
যেখানে,
c হচ্ছে পরার্থতার ব্যয় (cost)
b হচ্ছে গ্রাহকের পাওয়া উপযোগিতা (benefit)
r হচ্ছে সম্পর্কের গুণাঙ্ক (coefficient of relationship)
অর্থাৎ, সোজা বাংলায়,যখন কোন প্রজাতির মধ্যে সহযোগিতার উপযোগিতা তার ব্যয়কে অতিক্রম করে যায় তখনই পরার্থতা উদ্ভুত হবে। হ্যামিলটনের এই নীতিটিকেই বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী মায়নার্ড স্মিথ নামকরণ করেছিলেন স্বজাতি নির্বাচন (kin selection) হিসেবে। স্বজাতি নির্বাচনের মোদ্দা কথা হল, জিনের নৈকট্য (অর্থাৎ হ্যামিলটনের সূত্রে rএর মান) যত বেশী হবে, তত বেশি হবে পরার্থতাসূচক মনোভাব। সেজন্যই দেখা যায় সবাই নিজের সন্তান এবং পরিবারের প্রতি সবার আগে পরার্থতা প্রদর্শন করে । পরিবারের কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে চিন্তিত হয় সবচেয়ে কাছের জেনেটিক সদস্যরাই,তারপরে একটু দুরের আত্মীয় স্বজন। সেজন্যই সন্তানের প্রতি বাবা মার আত্মত্যাগের ব্যাপারটি সব সংস্কৃতিতেই পাওয়া যায়, আসলে যা কিনা জীববিজ্ঞানীদের চোখে স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমে জিনপুল রক্ষার প্রয়াস। একইভাবে ছোট ভাইকে ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে বড়ভাইয়ের আত্মত্যাগের নানা ঘটনাও বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে পাওয়া যায়।
‘স্বজাতি নির্বাচন’- প্রকৃতিতে খুব চমৎকারভাবে কাজ করে বলেই আমরা দেখি – কোন হিংস্র শিকারী পাখি যখন কোন ছোট পাখিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে, তখন অনেক সময় দেখা যায় যে গোত্রের অন্য পাখি চিৎকার করে ডেকে উঠে তাকে সতর্ক করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে সেই শিকারী পাখি আর তার আদি লক্ষ্যকে তাড়া না করে ওই চিৎকার করা পাখিটিকে আক্রমণ শুরু করে। এই ধরনের পরার্থতা এবং আত্মত্যাগ কিন্তু প্রকৃতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়। এই ব্যাপারগুলো স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমেই উদ্ভুত হয়েছে। হ্যামিলটন বা মায়নার্ড স্মিথের গবেষণার অনেক আগে থেকেই জীববিজ্ঞানীরা ‘কমন সেন্স’ হিসেবে জানতেন। যেমন ১৯৩০ সালে একবার বিজ্ঞানী জ়ে বি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তিনি তার ভাইয়ের জন্য জীবন বিপন্ন করবেন কিনা। তিনি রসিকতা করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না একটিমাত্র ভাইয়ের জন্য নয়; কিন্তু দুটি ভাই কিংবা আটটি কাজিনের জন্য হলে আমি আছি’। বলা বাহুল্য, হালডেন মনে মনে স্বজাতির নৈকট্য হিসেব করেই তার এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন।
এবারে আরেকটু গভীরে ঢুকি।হ্যামিলটন-স্মিথের প্রস্তাবিত স্বজাতি নির্বাচনের ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু আমাদের ব্যাখ্যা করতে হবে স্বজাতি নির্বাচন ব্যাপারটা সার্বিকভাবে জীবজগতে কাজ করে কিভাবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমে পরার্থতা এমনি এমনি কোথাও কাজ করে না, এটি মূলত কাজ করে হয় বিবর্তনের ক্রীড়াতত্ত্ব বা গেম থিওরীর মাধ্যমে ঘটা স্থিতিশীল কৌশল রাজত্ব করার কারণে।
ক্রীড়াতত্ত্ব বা গেম থিওরীর যাত্রা শুরু হয়েছিল হাঙ্গেরীর প্রতিভাধর গণিতবিদ জন ভন নিউম্যানের হাত দিয়ে ১৯৪৪ সালের দিকে। পরে ১৯৫১ সালের দিকে আরো শক্ত গাঁথুনি দেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ জন ন্যাশ (হ্যা, সেই জনপ্রিয় বিউটিফুল মাইন্ড সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র – স্কিজোফ্রেনিয়া রোগী এবং পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক), তৈরি করেন ন্যাশ স্থিতাবস্থার মডেল (Nash Equilibrium)। প্রথমদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন স্ট্র্যাটিজির ব্যাখ্যায় গেম তত্ত্ব ব্যবহৃত হলেও পরে দেখা গেলো জীববিজ্ঞানেও এটি সমানভাবে কার্যকরী। জন মায়নার্ড স্মিথ সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীই গেম তত্ত্বের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, শুধু প্রতিযোগিতা কিংবা স্বার্থপরতা দেখালে জীনপুলকে সর্বোচ্চ দক্ষতায় বাঁচিয়ে রাখা যায় না, সাথে আনতে হয় সহযোগিতা এবং পরার্থতার কৌশলও।
কিন্তু কথা হচ্ছে, কতকগুলো ভারী ভারী কথা বলে দিলেই তো হল না। কিভাবে বিবর্তনের গেম থিওরী জীবজগতের উপর কাজ করে সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝা চাই। এটি বুঝতে হলে আমাদের সবার প্রথমে তাকাতে হবে জেলখানায় বন্দী আসামীদের উভয়-সংকটের দিকে।
আসামীর সংকট
গাণিতিকভাবে গেম থিওরীর বুৎপত্তি না ঘটলেও এই ধরনের স্ট্র্যাটেজিক সমস্যাগুলো প্রাচীনকালে দার্শনিক আর রাজনীতিবিদদেরও আকৃষ্ট করেছিলো পুরোমাত্রায়। প্রাচীন কালে রাজাবাদশাহরা নিজেদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে নানা ধরণের ‘গেম প্ল্যান’ করতেন।কখন কোন্ রাজার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে, কখন পাশের রাজ্য আক্রমণ করতে হবে, আর কখন বা আবার আক্রমণ ভুলে দেশ রক্ষায় মনোনিবেশ করতে হবে – এগুলো নিয়ে তারা চিন্তিত থাকতেন অহর্নিশি। যারা এ ব্যাপারে ভাল কূটবুদ্ধি দিয়ে রাজাদের সাহায্য করতে পারতেন, তাদেরককে রাজসভায় আপ্যায়ন করে নিয়োগ দেয়া হতো। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের কথা আমরা সবাই জানি – কূটবুদ্ধির জাল বুনে কিভাবে রাজাকে সহায়তা করা যায় – তার শক্তিশালী দলিল এটি। রাজনীতি আর অর্থনীতির নানা প্যাচ ঘোচ খুঁজে প্রজাদের রোষ থেকে রাজার গদি রক্ষার তল্পিবাহক হিসেবে কৌটিল্যকে এখন অভিযুক্ত করা হলেও কৌটিল্যই সম্ভবত ছিলেন মানবেতিহাসের প্রথম অর্থনীতিবিদ যিনি গেম থিওরীর মত স্ট্র্যাটেজিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতির বিদ্যমান সমস্যাগুলোর এক ধরণের যৌক্তিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু রাজনীতিবিদেরাই নন, অর্থনীতিবিদ, গণিতবিদ কিংবা দার্শনিক থেকে শুরু করে যে কোন সাধারণ মানুষই বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি পর্যালোচনা করেই জীবনের নানা সিদ্ধান্ত নেন। হাতে একাধিক ভাল চাকরীর অফার থাকলে আমরা নতুন চাকরীর বেতন, চাকরীর স্টেবিলিটি কিংবা চাপ, সেখানকার পরিবেশ, তেলের খরচ, বাড়ি থেকে যাত্রাপথের দূরত্ব কিংবা সময় প্রভৃতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেই কোন্ চাকরীতে যোগ দিব। সামাজিকভাবে বন্ধুত্ব কিংবা মেলামিশির ক্ষেত্রেও আগাপাশতলা সব কিছু বিবেচনা করেই নেয়া হয় কার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে, আর প্রতি থেকে যাওয়া হবে নিরপেক্ষ। ফেসবুকে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিংবা বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখির ক্ষেত্রেও অনেকে নানা স্ট্রেটেজির আশ্রয় নেন – কাকে সমালোচনা করা হবে, আর কার প্রতি যোগাতে হবে প্রচ্ছন্ন সমর্থন। আসলে আমরা নিজেদের অযান্তেই খেলি ক্রীড়াতত্ত্বের জটিল খেলা। প্রাচীন কালে যখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এখনকার মতো ছিলো না, পরিস্থিতি ছিলো যুদ্ধাংদেহী, তখন প্রাচীন কালের মানুষদের মধ্যে ব্যাপারগুলো আরো স্পষ্ট ছিলো। তারা বুঝতে পেরেছিলো যে, এমন অনেক পরিস্থিতিই জীবনে আসে যখন নিজের একতরফা জয়লাভ করতে যাওয়ার চেয়ে ভাল কোন স্ট্র্যাটেজি করে প্রতিপক্ষকে দীর্ঘক্ষণ ঘায়েল করে রাখতে পারলে সুবিধা বেশি।কিংবা কখনো সরাসরি প্রতিযোগিতায় না নেমে তৃতীয় পক্ষের সাথে ঝামেলা তৈরি করে দিতে পারলে বেশি সুফল পাওয়া যেতে পারে। কখনো আবার এগুলো কোনটাতেই না গিয়ে স্রেফ জনসমর্থন বাড়িয়ে কিংবা কিংবা সাময়িক সহযোগিতার মাধ্যমেও সর্বোচ্চ সুফল আদায় করে নেয়া সম্ভব।
স্ট্র্যাটিজির ব্যাপারগুলো বোঝার জন্য এবার একটি পরিচিত ধাঁধা নিয়ে আলোচনা করা যাক। গেম থিওরীর প্রয়োগ সংক্রান্ত অত্যন্ত সহজ সরল কিন্তু শক্তিশালী এই ধাঁধাটির নাম দেয়া হয়েছে আসামীর সংকট (Prisoner’s dilemma)। মুক্তমনায় অপার্থিব ‘বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব’ নামের একটি চমৎকার লেখায় আসামীর সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন[19]। ব্যাপারটা অনেকটা এরকমের –
ধরা যাক একজন পুলিশ একটি হত্যা মামলায় দুই জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ খুবই অপ্রতুল। ফলে পুলিশ কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এখন আসামীদের দুজন সত্যই অপরাধ করেছে কিনা কিংবা কে আসল অপরাধী তা নির্ধারণ করতে নীচের শর্তগুলো আসামীদের সামনে হাজির করা হল –
১) একজন আসামী যদি দাবী করে (বিশ্বাসঘাতকতা)যে, অপর জন অপরাধী আর অপর জন যদি নিশ্চুপ থাকে (সহযোগিতা), তাহলে প্রথম জন মুক্তি পাবে, এবং দ্বিতীয়জন ৫ বছরের কারাদণ্ড পাবে।
২) উভয়েই যদি নিশ্চুপ থাকে (দুজনের মধ্যে সহযোগিতা) তাহলে উভয়েরই ২ বছরের কারাদন্ড হবে।
৩) উভয়েই যদি একে অপরকে দোষারোপ করে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করে (দুইজনের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা), তবে তাদের প্রত্যেকের ৪ বছরের কারাদন্ড হবে।
এখন তাহলে আসামীদ্বয় কি করবে? তারা উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করবে, কি করে নিজের সর্বোচ্চ লাভ হবে কিংবা নিজের সর্বোচ্চ ক্ষতি এড়ানো যাবে। প্রথমে হয়তো এক আসামী ভাববে, আমি যদি অপরককে দোষী বানাতে পারি, তাহলে আমি মুক্তি পাব। সুতরাং সে অপরজনকে দোষারোপ করবে। এখন দ্বিতীয়জন যদি নিশ্চুপ থাকতো তাহলে প্রথমজন মুক্তি পেয়ে সর্বোচ্চ লাভ অর্জন করে ফেলতো। কিন্তু মুশকিলটা হলো – দ্বিতীয় আসামী যে নিশ্চুপ থাকবে তার তো কোন গ্যারান্টি নেই। দ্বিতীয়জনও যদি প্রথমজনের মতই অপরকে দোষারোপের কৌশল নেয়, তাহলেই হবে সমস্যা। দুইজনেরই সর্বোচ্চ ৪ বছর করে কারাদন্ড হয়ে যাচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, দুজন দুজনকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেরাই সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তারচেয়ে বরং দুইজনই যদি নিশ্চুপ থাকত,তখন হয়তো শাস্তিরমাত্রা কমে আসতো। এই পুরো খেলাটা একাধিকবার পরিচালনা করা হলে হয়তো কারাবন্দিদের মধ্যে একটা সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে, ফলে তারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপরা করে গেম থিওরীর মাধ্যমে ঘটা স্থিতিশীল কৌশল আয়ত্ব করে নেবে। বাস্তবেও তাই হয়। সেজন্যই আমরা দেখি দাগী ভঙ্কর সব আসামীদের মধ্যেও কিংবা মাফিয়া চক্রের মধ্যেও এক ধরণের সহযোগিতার সম্পর্ক থাকে। তারা পারতপক্ষে একে অপরকে ধরিয়ে দেয় না।
চিত্র: আসামীর সঙ্কট – ক্রীড়াতত্ত্বের একটি অতি পরিচিত উদাহরণ।
ট্রপিকাল রেইন ফরেস্টের দীর্ঘকায়া গাছগুলো আসামীর সংকটের বাস্তব উদাহরণ। সেখানে গাছগুলোকে কেবল বংশবৃদ্ধির ব্যাপারটিই কেবল দেখতে হয় না, পাশাপাশি বাড়াতে হয় নিজেদের উচ্চতাকেও। সেই ঘন বণভূমিগুলোতে সূর্যের আলো নীচ পর্যন্ত পৌঁছয় না। কাজেই উচ্চতায় খাটো হলে থেকে যায় সূর্যের আলো না পেয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা। কাজেই অন্য জায়গার গাছেদের মতো উচ্চতা বাদ দিয়ে কেবল বংশবৃদ্ধি করা কোন অপশনই নয় তাদের জন্য। তাই রেইন ফরেস্টের গাছের জন্য কখন বংশবৃদ্ধি করতে হবে, আর কখন উচ্চতা বাড়াতে হবে – এ নিয়ে সবসময় চলে ক্রীড়া তত্ত্বের জটিল এক খেলা। ক্রীড়া তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় জমিতে কৃষকদের কীটনাশক প্রদানের ক্ষেত্রেও। কৃষকেরা দেখেছেন যে একটি কীটনাশক ব্যবহার করে কোনো একটি ক্ষতিকর কীট ধ্বংস করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয় – দেখা যায় সেই কীট মরলেও তার প্রতিযোগী অন্য কোন ক্ষতিকর কীটের সুবিধা করে দেবার ঘটনা ঘটছে; যার নীট ফলাফল ফসলের জন্য ক্ষতি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই কৃষকেরা সিদ্ধান্ত নেন কখন কীটনাশক প্রয়োগ করবেন, কখন ছাড় দেবেন, আর প্রয়োগ করলে কোন কোন কীটের জন্য ওষুধ প্রয়োগ করবেন ইত্যাদি। আসলে কৃষকের মনে চলতে থাকে আসামীর সংকটের মতোই গেম তত্ত্বের নিরন্তর খেলা। জীবজগতের বিবর্তন ভারসাম্যও কিন্তু অনেকটা এভাবেই কাজ করে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবর্তন আদিমকালের মানুষের মধ্যে বহু সংঘর্ষ, সহাবস্থান, পারষ্পরিক যোগাযোগ, প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক লাভ ক্ষতির হিসেবে থেকে এক ধরণের নৈতিক চেতনার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটিয়েছে। কীভাবে সেটা সম্ভব তা বুঝতে হলে আমাদের রিচার্ড ডকিন্সের স্বার্থপর জিন তত্ত্বের মাধ্যমে ঘটা ‘বিবর্তনীয় স্থিতিশীল কৌশল’ সম্বন্ধে একটু জানতে হবে। আর এটা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী পর্বের জন্য।
চলবে…
—————————————-
তথ্যসূত্র:
[1] Samuel Bowles, Did Warfare Among Ancestral Hunter-Gatherers Affect the Evolution of Human Social Behaviors?, Science 5 June 2009: Vol. 324. no. 5932, pp. 1293 – 1298
[2] Frans De Waal, Our Inner Ape, Riverhead Books; 2005.
[3] Frans de Waal, Stephen Macedo and Josiah Ober, Primates and Philosophers: How Morality Evolved, Princeton University Press, 2006
[4] অভিজিৎ রায়, নৈতিকতা ও ধর্ম,স্বতন্ত্র ভাবনা (সম্পাদনা সাদ কামালী ও অভিজিৎ রায়, চারদিক, ২০০৮) গ্রন্থে সংকলিত।
[5] Caldwell, M. C. & Caldwell, D. K. (1966). Epimeletic (caregiving) behaviour in cetacea. In: Whales, Dolphins and Porpoises. (Ed. K. S. Norris). University of California Press. pp. 755-789.
[6] V. G. Cockcroft and W. Sauer, Observed and inferred epimeletic (nurturant) behaviour in bottlenose dolphins, Aquatic Mammals 1990, 16.1, 31-32
[7] Connor R.C. and K.S. Norris. Are dolphins reciprocal altruists?. American Naturalist. 119: 358-374.
[8] হোরাস, পরিকল্পিত ডিজাইনঃ God Must Be Crazy, মুক্তমনা।
[9] Richard Dawkins, The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution, Free Press, 2009; p 370.
[10] Darwin’s letter to Asa Gray, 22 Mary 1860 ; Quoted in Richard Dawkins, The Greatest Show on Earth, পূর্বক্ত, p 370.
[11] Richard Dawkins wrote a very popular book called the Selfish Gene that explained, for a popular audience, many of the exciting new theories and discoveries being made in evolutionary biology in the 1960’s and 70’s. The metaphor Dawkins chose, the selfish gene, was an extremely powerful metaphor, so powerful that it has often overshadowed the science itself! The controversies that swirl around EP are often tightly bound up with Dawkins� metaphor. If our genes are selfish, are we all, deep down, unalterably selfish ourselves? Why did Dawkins chose this metaphor, what does it really mean, and what are its implications for EP and human nature? To read more in technical terms Why are genes selfish, please refer to Edward H. Hagen, Institute for Theoretical Biology, Berlin, Why are genes selfish? http://www.anth.ucsb.edu/projects/human/epfaq/selfishgene.html
[12] Richard Dawkins, The Selfish Gene: 30th Anniversary Edition, Oxford University Press, USA; 3 edition, 2006; অনুবাদের কিয়দাংশ – অনীক আন্দালিব, সেলফিশ জিন, মুক্তমনা।
[13] Helena Cronin, The Ant and the Peacock: Altruism and Sexual Selection from Darwin to Today, Cambridge University Press, 1993
[14] Hamilton W.D., The genetical evolution of social behaviour I and II. — Journal of Theoretical Biology 7: 1-16 and 17-52, 1964.
[15] Richard dawkins, The Selfish Gene. Oxford: Oxford University Press. 1976.
[16] Paradis, J. and G.C. Williams, T.H. Huxley’s Evolution and Ethics : with New Essays on its Victorian and Sociobiological Context. Princeton University Press, Princeton, N.J, 1989.
[17] Matt Ridley, The Origins of Virtue: Human Instincts and the Evolution of Cooperation, Penguin; 1998
[18] W. D. Hamilton, “The Genetical Evolution of Social Behavior”. Journal of Theoretical Biology 7 (1), 1964
[19] অপার্থিব জামান, বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব, বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়, মুক্তমনা ই-বুক, মুক্তমনা দ্রষ্টব্য
অভিজিৎ দা’র আরেকটা মাস্টার পিস। :yes:
@ফাহিম রেজা
“বালিশ ফুটা করা আতলামি” কেন বললেন? এধরনের মন্তব্য শুনতে পাওয়া আমার বা আর যারা আলোচনা করছেন, কারোই কাম্য নয়। এখন আপনার এধরনের মন্তব্য না শুনতে হলে কি করতে হবে? আলোচনা করার সময় সবাইকে রয়েসয়ে আলোচনা করতে হবে যাতে আপনার কাছে মনে না হয় যে আতলামিতে বালিশ ফুট হয়ে যাচ্ছে?
লেখাটা আমি নাও দিতে পারি। সবাই আমার লেখাটার জন্যই যে আলোচনা করছেন তাও মনে হয় না। এই আলোচনা কোনো লেখার জন্ম না দিলেও আলোচনাকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে জন্যই আলোচনা করছেন। কারো পড়তে ভালো লাগলে ভালো, কিন্তু না লাগলে এরকম প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখানো মানে কিন্তু ব্লগটার পরিবেশটা বারোটা বাজানো।
আপনি কি চাইছেন একজন লেখক আপনার “যে লেখার প্রি-আলোচনার চেহারা এরকম তার আসল এবং পোষ্ট চেহারা না জানি কি হবে? ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে” এই কথাটা মাথায় নিয়ে একটা লেখা লেখুক?
এরকম খোঁচাখুঁচির দরকার ছিল না ভাই। একটা ব্লগ থাকা দরকার, যেখানে শান্তি করে নৈর্ব্যক্তিক আলাপ করার সময় টিপ্পনি, খোঁচা, “আতলামি”, এসব শব্দ শুনতে হয় না।
@ধ্রুব, আপনি মনে হয় আমাকে ভুল বুঝলেন, কিংবা আমারই বোঝানোর ভুল হয়ে থাকবে। আন্তরিকভাবেই দুঃখিত আমি। আমি মুক্তমনায় আসিই এ ধরণের আলোচনা, লেখা, মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যগুলো পড়তে, বাংলায় আর কোন ব্লগ নেই যেখানে এই মানের আলোচনা হয়। এখানে যারা আলোচনা করছেন তাদের প্রত্যেকে আমার খুব প্রিয় লেখক। আপনাদের প্রতিটা মন্তব্য আমি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছি এবং যতই পড়ছিলাম ততই আপনার লেখাটা পড়ার আগ্রহ বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল আপনাকে একটু ঠাট্টাচ্ছলে লেখাটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়ার জন্য তাগাদা দেই। আসলে প্রি, পোষ্ট আলোচনার গভীরতা, আতলামী, এসবই আমার কাছে মুক্তমনার একটা পজিটিভ দিক বলেই মনে হয়, তবে আতলামি শব্দটা যে খারাপভাবেই ব্যবহৃত হয় সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল ( আর ‘বালিশ ফুটো’টা নিতান্তই ফাজলামো ছিল যা হয়তো বলা উচিতই হয়নি), আবারো দুঃখ প্রকাশ করছি।
@ফাহিম রেজা,
:-/ এখন এসব বললে চলবে না। আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন :laugh: |
আমি আবার লেখাকেন্দ্রিক মানুষ না। লেখাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। বরং এই মন্তব্য গুলা অনেক বেশি পারপাস সার্ভ করছে। একটা ভুল ধারণা নিয়ে বিশ প্যারা লেখার চেয়ে এক প্যারা লেখা আর ভুল ধরা পড়ার পর আবার শুধরিয়ে লেখা। খুব ঘোলা বিষয়গুলোতে এই আড্ডাগুলোই বেশি কাজের 🙂
অস্তিত্বের সংগ্রামের ব্যপারটা মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রানীর ক্ষেত্রেও যা তেলাপোকার ক্ষেত্রেও তা। কিন্তু কেউই কাজটা সচেতন ভাবে করে বলে মনে হয়না।
এমন তো হতে পারে, কোন ভয়াবহ প্রাকৃ্তিক বিপর্যয়ের ফলে মানুষের বিলুপ্তি ঘটল আবার টিকে গেল তেলাপোকার মত কোন প্রানী। সেক্ষেত্রে বুদ্ধি কোন কাজে আসলো না, যা এযাবৎ আমাদেরকে(মানুষকে) টিকে থাকার সংগ্রামে সাহায্য করে এসেছে। এটা বলছি কারন টিকে থাকার সংগ্রামে সচেতন প্রয়াসের ভূমিকা খুবই গৌ্ন, এটা বুঝাতে। যে প্রয়াস এমিবার মত এক কোষী প্রানী থেকে শুরু হয়ে এখনও চলছে এর প্রায় পুরোটাই সয়ংক্রিয় একটা প্রক্রিয়া।
নাকি এটা কোন সচেতন প্রক্রিয়া ? সব প্রানী কি সচেতন ভাবেই তাদের বংশ বিস্তারের কাজটি করে ? যেমন-কিছু প্রানী অসংখ্য ডিম পাড়ে যাতে নষ্ট হবার পরেও যা টিকে যায়, তাই তাদের বংশ রক্ষার জন্য যথেষ্ট। আবার হাতির যেমন বেঁচে থাকার জন্য অনেক খাদ্য দরকার ফলে দেখা যায় এদের জন্ম হার খুব কম।
টিকে থাকার এই সচেতন আর আসচেতন প্রয়াসের ব্যাপারে জানা দরকার। কিভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করা যায় ?
অস্তিত্ব মানে কি? আমার মন বদলাচ্ছে। আমার দেহকোষ প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে।
যা ক্রমশ বদলাচ্ছে, তার আবার অস্তিত্ব কি?
সুতরাং দেখাযাচ্ছে দেহ বা মন কোনটাই স্থায়ী মানব অস্তিত্ব না। একমাত্র স্থায়ী মানব অস্তিত্ব ডি এন এ-যা তার সন্তানের মধ্যে দিয়ে সামান্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে টিকে থাকবে। সুতরাং ডি এন এ তার ইনফর্মেটিভ এই সত্ত্বাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেই। সেটা ত বিবর্তন থেকেই আসে যে সেই ডি এন এ এর পরিবর্তন গুলোই টিকে যাবে যারা নিজেদের পরিবেশের সাথে বাঁচাতে পারবে।
আর ডি এন এ মানে হলো -কোড অব কেমিক্যাল রিয়াকশন ইন আওয়ার বডি-যেভাবে নানান প্রোটিন তৈরী হবে। সুতরাং বিবর্তনের ফলে সেই সব নিউরোহর্মোনগুলি বা তাদের কার্যকলাপই টিকবে যেখানে ডি এন এটা এই ভাবে বিবর্তিত হয়ে যে ওই নিউরোহর্মোনগুলি তার ডি এন এ কে প্রজযোনের মাধ্যমে টেকাতে অগ্রনী।
ধন্যবাদ অভিজিৎ দা। আমার প্রিয় বিষয় এটা। আপনার এই লেখা চিন্তায় বেদম ঝাকি দিচ্ছে। খুব খারাপ রকমের ব্যাস্ত থাকায় মন্তব্য করতে দেরি হয়ে গেল। অনেক আলোচনা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, আমি কিছু সেয়ার করি।
নীতি মানে পদ্ধতি/উপায়/পথ। নীতি দুই রকমই হতে পারে, সুনীতি আর দূর্নীতি। কিন্তু নৈ্তিকতা বলতে কেন জানি শুধু সুনীতিকেই বোঝান হয় বলে আমার মনে হয়। আবার সুনীতি বলতে ঐসব নীতিকেই বোঝান হয় যেগুলি সামাজিক বা সমস্টিক দায়কে স্বী্কার করে। ব্যাক্তি যদি তার প্রাপ্য অংশ সমাজকে বিলিয়ে দেয় সেটাও সুনীতির অর্ন্তরভূক্ত, এর উলটা হলেই দূর্নীতি। আমার মনে হয় নৈ্তিকতা বলতে আমরা মূলত সুনীতিকেই বোঝাচ্ছি।
কোন কাজের উদ্দেশ্য ও ফলাফল সবসময় এক হয়না। ফলে ভাল চিন্তাকে, ভাল কাজের চেয়ে আমারা গুরুত্ত্বপূর্ন মনে করি। যেমন আলফ্রেড নোবেলের উদ্দেশ্যকেই আমরা সম্নান জানাই। যুদ্ধে ডিনামাইটের ব্যাবহারের জন্য কেউই তাঁকে দায়ি করেনা। এখানে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে, নৈ্তিকতা-তার স্বি্কৃতির জন্য মানুষের বিচার-বুদ্ধির দিকে চেয়ে থাকে।
মানুষের বিচার-বুদ্ধি আবার নিদৃষ্ট কালের উৎপাদন ব্যাবস্থার সাথে উৎপাদন শক্তির দ্বন্দ্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে, চিরন্তন নৈ্তিকতা বলে কিছু থাকা সম্ভব না, যতক্ষন আমরা একে একটি মানবীয় গুন বা বৈশিষ্ট হিসাবে দেখছি।
কিন্তু পরার্থপরতা যেহেতু নিচু মাত্রায় হলেও অন্যপ্রানীর মধ্যে রয়েছে ফলে পুরো ব্যপারটাকে আবার নতুন করে না ভেবে থাকা যাচ্ছে না। আবার মাত্রাগত এই পার্থক্যকে আমরা কিভাবে গুনগত পার্থক্য থেকে আলাদা করবো সেটা এক জটিল প্রশ্ন। মানে মানুষের পরার্থপরতা থেকে অন্য প্রানীর পরার্থপরতাকে কি আমরা আলাদা করতে পারি ?
যেমন – পশুদের ক্ষেত্রে প্রবৃত্তি শব্দের মাধ্যমে এদের পুরো আচরনকে ব্যাখ্যার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার একটা প্রবনাতা আমাদের রয়েছে। আমার মনে হয়, এখনো এটাই শক্তিশালী প্রবনতা। এখন কথা হচ্ছে, নৈ্তিকতা বা সুনীতি বা পরার্থপরতা যদি কাছাকাছি ভাব প্রকাশ করে তবে, নৈ্তিকতা কেবলমাত্র মানবীয় গুন এমন দাবি আমরা করতে পারি কিনা। আমার মনেহয়, নৈ্তিকতা হলো মূলত টিকে থাকার কৌশল। ব্যাক্তির নিজের জন্যই দরকার সমস্টির টিকে থাকা। পশু-প্রাণি-মানুষ সবাই টিকে থাকার জন্য যা করে, তাই হচ্ছে নৈ্তিকতা। সঠিক কৌশল না নিতে পারলে বিলুপ্তি। এই সঠিক কৌশল নিয়ে আমাদের মাঝে রয়েছে অযস্র বিতর্ক। পরস্পরকে দূর্নীতিগ্রস্থ বলছি আমরা, কারন আমরা ভাবছি অন্যদের উদ্দেশ্য বা কাজ আমাদের অস্তিত্ত্বকে বিপন্ন করছে বা করবে। এই তর্ক চলে আবার অধিকতর সঠিক টিকে থাকার কৌশলের খোঁজে। কিন্তু আমরা ব্যাক্তি মানুষ বা সমস্টি কোন না কোন পক্ষে অবস্থান করি। ফলে অপর পক্ষকে দূর্নীতিগ্রস্থ বলি। কখনও আমরা সঠিক কাজ করি, কখনো আমাদের প্রতিপক্ষ সঠিক কাজ করে। মানে এই আমরাই কখন সুনীতি অবলম্বন করি, আবার দূর্নীতি অবলম্বন করি। উদ্দেশ্য টিকে থাকা।
কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেন সবাই অস্তিত্ত্ব রক্ষার জন্য এত ব্যাকুল? কেন অসচেতন ভাবেও এই উদ্দেশ্যে সব প্রজাতি ধাবিত? এটাও ইশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছের মত এক বেয়াড়া প্রশ্ন। আশাকরি কেউ এব্যাপারে আলোকপাত করবেন।
বিবর্তনের আলোকে বেশ মজার একটা পর্যবেক্ষন। :-*
তবুও অভিজিতের প্রশংসা করতে বাধ্য হচ্ছি, দারুণ একটা লেখা! অভিজিতের লেখা ভালো এই কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে মনে হয় না। লেখাটা যে মুক্তমনার অনেক চিন্তাশীল পাঠককে গভীরভাবে ভাবিয়েছে তা উঁচু মানের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য থেকেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। অভিজিতের সাথে তাই আলোচনায় অংশগ্রহনকারীদেরও ধন্যবাদ জানাতে হয়।
লেখা ভাল তবে উচ্চ নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন প্রানীদের আলোচনায় আমার প্রিয় কুকুরের নাম না আসায় অত্যন্ত হতাশ হয়েছি। কুকুরের নৈতিকতা, মানুষের জীবন বাঁচানোর কাহিনী নিয়ে পুরো বই লিখতে পারি। আর আপনি দেখলেন কেবল গরিলা। পূর্ব পুরুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বড় বেশী দৃষ্টিকটু লেগেছে।
মানুষের নৈতিকতাবোধও বিবর্তনেরধারায় বদল হচ্ছে, কোন সন্দেহ নেই। তবে কিছু নৈতিকতাবোধ যা অতীতে হয়ত ছিল না, বিবর্তনের ধারায়ই এসেছে যেমন সত্য কথা বলা বা চুরি ডাকাতি না করা এ জাতীয় কিছু নৈতিকতাবোধ তো আর বদলে যাবার কথা নয়। নাকি তেমন সম্ভাবনাও আছে? হয়ত পৃথিবীতে সম্পদের অপ্রতুলতা বড় বেশী প্রকট হলে এগুলিও বদলে যেতে পারে। অর্থাৎ নৈতিকতা বদলে যাবার ব্যাপারটাও পরিবেশের প্রভাবেই র্যান্ডমলি ঘটে এমন কি বলা যায়? হয়ত শুধু পরিবেশ নয়, অন্য আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর আছে।
@আদিল মাহমুদ,
হাঃ হাঃ, ঠিকই বলেছেন। কুকুরের নৈতিকতার ব্যাপারটাও বলা উচিৎ ছিলো। আসলে কুকুরের প্রভুবক্তির অনেক কাহিনী তো আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি। একটা গল্পও বোধ হয় কোথাও পড়েছিলাম যে, মনিব মারা যাওয়ার পরে কুকুরটি নাকি মনিবের শোকে মনিবের সমাধিস্থলে গিয়ে বসে থাকতো আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। সত্য মিথ্যা জানিনা, তবে নিঃসন্দেহে কুকুরের মধ্যে সহমর্মিতা বা এনিমেল এম্প্যাথি আছে প্রবলভাবেই। আপনি যেহেতু নিজেই কুকুর পালেন, এবং এ সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন, আপনার কাছ থেকে কিছু মজার ঘটনা (যদি থাকে) দাবী করছি। আমার বরাবরই এ ব্যাপারটায় আগ্রহ আছে।
@অভিজিৎ,
গড়পড়তা হিসেব নিলে কুকুরের নৈতিকতা বোধ মানুষের থেকে অনেক উপরে এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই। মানুষ হয়ত বেঈমানী করতে পারে, তবে কুকুর বেঈমানী করছে শুনলে মনে করতে হবে যে সেটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মনিব মারা যাবার পরে শোকে কুকুরের মৃত্যুর ঘটনা হাজারে হাজারে আছে। আপনি মনে হয় স্কটল্যান্ডের ববির কথা বলছেন, এটা আমরা ফোরে রেডিয়েন্ট ওয়েতে পড়েছিলাম।
কুকুর কারো সন্তানকে পেলে পুষে বড় করার কাজে সাহায্য করছে এমন উদাহরনও আছে। একাধিক বাড়ির কথা জানি যেখানে কুকুর অনেকটা মেইড এর মত নিউ বর্ন বেবির দেখা শোনা করে। তারা ঘুম থেকে উঠলে তারা মনিবকে ডেকে নিয়ে আসে, বিপদজনক কিছু করতে গেলে যেমন খাট থেকে নামার তাল করলে বা দরজা দিয়ে বেরিয়া যেতে চাইলে বাধা দেয় এ ধরনের কাজ করে। মাঝে মাঝে শিশু প্রীতি এমনও হয় যে বাবা মা সন্তানের উপর বিরক্ত হয়ে ধমকাধমকি করলে কুকুর তাদের দিকে তেড়ে আসে।
আমাদের কুকুর ও আমাদের দাম্পত্য কলহ নিবারনে মাঝে মাঝে বেশ সাহায্য করে বলতেই হবে। সামান্য গলা উঁচু করে কথা বললেই সে তীব্র ধমক দেয়। আমাদের কারো মন খারাপ থাকলে বা অসূস্থ হলেও সে কিভাবে যেন টের পায়, কাছে এসে একান্ত আপনজনের মতই সংগ দেয়। টেলিপ্যাথী না কি কে জানে। মানূষের সাথে যেকোন ভাবেই হোক তাদের এক অচ্ছেদ্য বন্ধন হয়ে গেছে। তারা মনে হয় এখন আর মানুষের সংগ ছাড়া বাঁচতে পারে না।
আজকাল অনেক ষ্টাডিতে দেখা গেছে যে বাড়িতে কুকুর বিড়াল পালা হাই ব্লাড প্রেশার, হাইপারটেনশন এ জাতীয় রোগীদের বেশ সাহায্য করে।
তবে মানুষের প্রান বাঁচাতে কুকুর ছাড়াও ডলফিন, হাতি, ঘোড়া এদেরও দেখা যায়।
@আদিল মাহমুদ,
গৃহপালিত কুকুরদের (Canis lupus familiaris) ‘নৈতিকতার’ ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে গৃহপালিত কুকুরের মনস্তত্ব বোঝা একান্ত অপরিহার্য। একটু ব্যাখ্যা করি।
কুকুর এক প্রজাতির দলবদ্ধ প্রানী (pack animal) যারা দলবদ্ধভাবে শিকার করে থাকে। আমরা যে কুকুর পালন করি তা আসলে এক ধরনের ধুসর নেকড়ের (Canis lupus) মানব পরিচালিত বিবর্তনীয় রূপ । প্রায় সারে ষোল হাজার (১৬,৫০০) বছর আগে চীনের ইয়াংজি নদীর তীরে মানুষ এই নেকড়ে পোষা শুরু করে। পরে পরিকল্পিত ব্রীডিংয়ের মাধ্যমে এই ধুসর নেকড়ের শিকারী প্রবৃত্তি কমিয়ে আনা হয়।
আগেই বলেছি যে কুকুর একটা দলবদ্ধ প্রানী । এই দলের একটা নেতা থাকে যে শিকারে নেতৃত্ব দেয় এবং যার কথা বাকি সদস্যরা মানতে বাধ্য। আপনি যখন কোন কুকুর ছানা বাসায় নিয়ে আসেন এবং তাকে খাদ্য প্রদান করতে থাকেন , সে আপনাকে দলের নেতা হিসেবে মানতে শুরু করে। আপনার স্ত্রী ও পরিবারবর্গকে সে দলের সাধারন সদস্য হিসেবেই বিবেচনা করে। কুকুর আপনাকে যেহেতু নেতা হিসেবে মানে , আপনার কথা সে মানতে বাধ্য কেননা যে কুকুর তার নেতার কথা মানে না তাকে কুকুর দল থেকে বেড় করে দেয়া হয়। কুকুর সহ সব দলবদ্ধ প্রানীর (যেমন, নেকড়ে , হায়না) ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।
অনেক কুকুর মালিকের অভাবে মারা যায় যখন মালিক তাকে না জানিয়ে উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধারকারী দলের সাথে চলে যায়। এর কারন , কুকুর জেনেটিক অর্থে নেতা বিহীন একক সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। অন্যদিকে, মাকড়সা, বাঘ , মানুষ ,ওরাংওটান , গন্ডার ও বিড়ালের এ সমস্যা নেই কারন তারা প্রাকৃতিকভাবেই (জীনগত) একা টিকে থাকতে সক্ষম।
@সংশপ্তক,
আদিলের সাথে আপনার বক্তব্যের কোন বিরোধ নেই। আপনাদের দুজনের মন্তব্যে এই সত্যটাই আরো পরিস্কার হচ্ছে যে নৈতিকতা (এবং নৈতিকতাবোধ) আসলেই বিবর্তনজনিত। কুকুরের বেলায়েও, মানুষের বেলায়ও। কুকুরের বিবর্তনজনিত (যেটা আপনি সুন্দর করে বর্ণনা করলেন) নৈতিকতাকে আদিলের কাছে খুব উঁচুমানের নৈতিকতা মনে হয়েছে কারণ বিবর্তনই আদিলের মস্তিষ্কে সেটাকেই উঁচুমানের নৈতিকতার ধারণা হিসেবে প্রোথিত করেছে। ঘুরে ফিরে সেই একই কথা এসে যায় যে নৈতিকতা চূড়ান্ত বিবেচনায় মানব সৃষ্ট নয়। আমরা বিবর্তনের (চূড়ান্ত বিবেচনায় পদার্থ বিজ্ঞানে)এর নিয়মে সৃষ্ট উন্নতমানের রোবট ছাড়া কিছু না। আমাদের নৈতিকতাবোধ, অনুভূতি, আবেগ, বিবেক সবই বিবর্তনেরই সৃষ্টি, মানুষ সুধু নিমিত্ত মাত্র। আমরা যা কিছু করি তা বিবর্তনের হয়েই করি।
@অপার্থিব,
একমত। এটাই আমি এভাবে সংজ্ঞায়িত করি যে, ‘নৈতিকতা’ আসলে ‘নৃতত্ত্ব’ দ্বারা প্রভাবিত প্রাণীকূলের বিজ্ঞান নির্ভর বিবর্তনীয় ‘প্রবৃত্তির’ ‘ভাববাদী’ সাংস্কৃতিক প্রতিরূপের বহিঃপ্রকাশ ।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ আমার ধারনাকে তথ্য ও যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যার জন্য। বন্যা আহমেদের একটি লেখায় দেখেছিলাম যে কুকুর নেকড়ে থেকে বিবর্তিত হয়েছে। যদিও জানতাম না ঠিক কতদিন আগে এই বিভাজনটা হয়েছে। সাড়ে ১৬ হাজার বছর খুব বেশী মনে হচ্ছে না যদিও। এখনকার কুকুর প্রজাতি আর নেকড়ের মাঝে মিল খুব বেশী আর নেই। বুনো নেকড়ের জীবন সম্পর্কে কিছু কিছু জানি, এসব প্রোগ্রাম বেশ উতসাহ নিয়ে দেখি। তাদের দলবদ্ধ জীবন ও সেই জীবনে নেতার গুরুত্ব ভালই জানি। দল ছাড়া নেকড়ের যে মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ থাকে না সেটাও জানি। কুকুররের বিবর্তন তো মনে হচ্চে ন্যাচারাল নয় পুরোপুরি, মানুষের ভূমিকা আছে যথেষ্ট।
কুকুরের প্রভুভক্তি বা উচ্চ নৈতিকতার পেছনে যে এই একই নেতৃত্বের ভূমিকার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা আছে সেটা জানতাম না।
তবে ব্যাখ্যা যাই দেন না কেন, সত্য হল কুকুরের মত ভাল প্রানী খুব কমই আছে।
@আদিল মাহমুদ,
কুকুরে টানা স্লেজ গাড়ি না হলে পুর্ব এশিয়া হতে বেরিং প্রনালী পেড়িয়ে উত্তর আমেরিকায় প্রথম মানব বসতি স্হাপন হয়তোবা বহুদিন পিছিয়ে যেত। তাই কুকুরদের একটা ঐতিহাসিক ভুমিকা আছে।
@সংশপ্তক,
আপনি তো দেখি বেশ কুকুর বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তি। কুকুরের বিবর্তন বিষয়ে একটা লেখা লিখেই ফেলেন না? আমি এ বিষয়ে বেশ আগ্রহী বুঝতেই পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
ছোটবেলা কুকুর ছিল আমার সার্বক্ষণিক সাথী। আপনার আগ্রহ দেখে কিছুটা ইনফরমেশন শেয়ার করলাম।
নেকড়ে থেকে কুকুরের বিবর্তন-
Dog Domestication-
httpv://www.youtube.com/watch?v=nzwYJzAY1go
@আকাশ মালিক,
বিবর্তনের লেখাটি পড়লাম। ভিডিও বাড়ি গিয়ে দেখবো।
আমি যখন ঘোর ধার্মিক ছিলাম তখনো চিন্তা করতাম যে এত ভাল একটি প্রানীকে কেন মোল্লা মাওলানারা এত তীব্র ঘৃণা করেন। এখনো আমার নিজের এক বোনের বাড়িতে কুকুর সহকারে যাওয়া নিষেধ আছে।
@ধ্রুব,
আপনার প্রশ্নটা বৈজ্ঞানিক না ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে করা হয়েছে কি না তা আগে নির্ধারন করা দরকার। আপনার প্রশ্ন “গর্ভপাত উচিত না অনুচিত, এই প্রশ্নের কি কোন কাল নিরপেক্ষ উত্তর বের করা সম্ভব?” এখন দেখতে হবে যে সমস্যাটা বিজ্ঞানের না ভাববাদের।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর উত্তর একটাই। তা হচ্ছে যে , উচিত অনুচিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বিজ্ঞানের কাজ নয় । গর্ভপাতের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং নিরাপদ গর্ভপাত নিশ্চিত করাই এখানে বিজ্ঞানের কাজ। ভাববাদী সমস্যার সমাধান বিজ্ঞান দিয়ে সম্ভব নয়।
@সংশপ্তক,
বিশেষ কোন দৃষ্টিভঙ্গির চিন্তা করি নি। তবে অাপনার প্রস্তাবটা কাজের।
ঠিক!
ঠিক!
এখন ধরি প্রশ্নটা ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গির। এখন ভাববাদী সমস্যা সমাধানের উপায় কি? যদি অামরা বলতে পারি, ভাববাদী সমস্যা সমাধানের কোন উপায় নেই, তাহলেই তো অামার উপরের প্রশ্নটার একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ উত্তর চলে অাসে, নাকি? 🙂
অাচ্ছা, একটা রাষ্ট্র যদি তার নীতিমালা তৈরি করার সময় উপরের প্রশ্নটি বিবেচনা করে (করা উচিত না অনুচিত সেটা ভিন্ন প্রশ্ন 🙂 ), তাহলে কি সেটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিবেচনা, নাকি ভাববাদী?
@ধ্রুব,
উত্তর : ভাববাদে বৈজ্ঞানিক ধারনার সর্বোচ্চ অনুপ্রবেশ ঘটানো যাতে করে ভাববাদে ব্যপক মিউটেশনের সূত্রপাত ঘটে ভাববাদের ভৌত গুনাগুন বদলে পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে ওঠে।
উত্তর : রাষ্ঠ্র ভাববাদী না হয়ে বিজ্ঞাননির্ভর এবং রাষ্ট্রের প্রকৃত ‘সমস্যা চিহ্নিতকরণে’ ও সমাধানে বিজ্ঞান নির্ভর হলেই তা হবে রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।
@সংশপ্তক,
“সমস্যা” কি? “মঙ্গল” কি?
আগে বলেছিলেন
তাহলে “মঙ্গল” নির্ধারিত করছেন কিভাবে, বিজ্ঞানের বাইরে কিছুর আশ্রয় না নিয়ে?
@রৌরব,
সুন্দর প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আলোচ্য বক্তব্যে “সমস্যা” এবং “মঙ্গল” শব্দযুগলের ব্যাখ্যা নিচে দেয়া হলো:
এখানে “সমস্যা” বলতে এমন কোন প্রতিবন্ধকতা বা অবস্থা বা পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছে যা এক্ষেত্রে রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করে বা অর্জিত লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে , অথবা ক্ষতিকর হয় অনুরূপ হুমকির সৃষ্টি করে যা স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড এবং কর্ম প্রক্রিয়ার অধীনে পর্যবেক্ষন যোগ্য , পরিসংখ্যান যোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য এবং তৎসহ পূর্বাভাস যোগ্য।
“মঙ্গলজনক” বলতে এখানে এমন অবস্থা বোঝানো হয়েছে যা উপরোল্লিখিত “সমস্যা”-এর রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত কাঙ্খিত সমাধানোত্তর পরিস্থিতি যা স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড এবং কর্ম প্রক্রিয়ার অধীনে পর্যবেক্ষন যোগ্য , পরিসংখ্যান যোগ্য, পরিমাপযোগ্য এবং তৎসহ পূর্বাভাস যোগ্য। এসকল কিছুই বিজ্ঞানের বাইরের কিছুর আশ্রয় না নিয়েই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে শর্ত থাকে এই যে, রাষ্ট্রের আইন এক্ষেত্রে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক ধারনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
@সংশপ্তক,
আপনার সমস্যার সংজ্ঞাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ঠিকভাবে বুঝি, সংজ্ঞাটা আপেক্ষিক। আমি বলছি না যে একটা পরম সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব, কিংবা আপনার সংজ্ঞাটা মানে খাটো কোনো অংশে। সংজ্ঞাটা বেশ। খালি এটার উপর ভিত্তি করে কথা আগাচ্ছি।
তো কিসের উপর আপেক্ষিক? “রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য”-এর উপর আপেক্ষিক। রাষ্ট্রে কে কিভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করছে, সেই লক্ষ্যটা ভালো কি মন্দ, সেটার উপর আপনার সংজ্ঞা নির্ভরশীল নয়। রাষ্ট্রের নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য, সে যাই হোক, সেটা অর্জনের পথের পর্যবেক্ষণযোগ্য বাধাগুলিই “সমস্যা”।
যেমন ধরেন একটি ইসলামী রাষ্ট্র নির্ধারণ করলো দেশের হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। এই লক্ষ্য অর্জনের যে বাধাগুলি, সেগুলো অবশ্যই পর্যবেক্ষণযোগ্য, তথাপি সেগুলো হবে প্রকৃত সমস্যা।
মানে, উদ্দেশ্য গিভেন থাকলে (অর্থাত আপেক্ষিকভাবে), একটা পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত সমস্যা নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু পরম বিষয়ে সেটা সম্ভব না। যেমন হিন্দু জনসংখ্যা কি কমানো উচিত কি না, সেটার উত্তর রাষ্ট্র বিজ্ঞান নির্ভরভাবে বের করতে পারে না। ফলে রাষ্ট্রের মূল এজাম্প্শানগুলো সবসময় ভাববাদীই, হয়। যেগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র চাইলে বিজ্ঞান ব্যবহার করতে পারে।
আরেকটা উদাহরণ হলো মানুষ খুন। রাষ্ট্রের নির্ধারিত লক্ষ্য যদি হয় মানুষ খুন কমানো, তো সেটার জন্য বাধাগুলোকে রাষ্ট্র সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু মানুষ খুন কমানো কেন উচিত, এটার উত্তর তো বিজ্ঞান-নির্ভর্ভাবে বের করতে পারে না। তথাপি, রাষ্ট্র কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর করে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই। এগুলো হলো সেই নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য। আপনার মূল প্রস্তাব ছিল, রাষ্ট্র যাতে ভাববাদী প্রশ্ন থেকে সরে আসে। সেক্ষেত্রে এসকল বিষয়ে কিন্তু রাষ্ট্রের আর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত না।
@সংশপ্তক,
রাষ্ট্রকে খুন করার (জীবিত মানুষকে মৃত করে দেয়া) ব্যাপারে নৈতিক অবস্থান নিতে দেখা যায়, এবং তদানুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়। মানে রাষ্ট্র “মানুষ খুন করা উচিত কি না” এই প্রশ্নের অনুসন্ধান করে। রাষ্ট্রের এই অনুসন্ধান কি বিজ্ঞান নির্ভর না ভাববাদীর? বিজ্ঞান কি এই উচিত অনুচিতের উত্তর করতে পারে? এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েই গিয়েছি যে বিজ্ঞান সেটা পারে না। ফলে এটাও মূলত ভাববাদী প্রশ্ন। অর্থাত রাষ্ট্রের এই অনুসন্ধান ও তত-সংক্রান্ত অবস্থান ভাববাদী। রাষ্ট্র যদি মানুষ খুনের উপর নৈতিক অবস্থান নিতে পারে, তাহলে গর্ভপাত বিষয়ে কেন পারে না?
আর মানুষ খুন মানে যেহেতু জীবিত মানুষকে মৃত বানানো, অতএব মায়ের পেটে থাকা ভ্রুণটা জীবিত কিনা, প্রাণ কিনা, এই প্রশ্নও তখন প্রাসংগিক।
@ধ্রুব,
অত্যন্ত সুচিন্তিত প্রশ্ন করছেন যার উত্তর ‘হযবরল’ আকারে দেয়া হবে ভীষন অন্যায়। সঠিক উত্তর আমার মত গৌণ নাগরিকের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় বিধায় প্রথমেই পাঠকের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আমি কিছু দিক নির্দেশনা দিতে পারি যা আপনাকে এই প্রশ্নে উত্তর খুজতে ভাবনার খোরাক জোগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমাদের প্রথমেই রাষ্ট্রের প্রাথমিক ভুমিকা সম্পর্কে স্বচ্ছ এবং সু-সংজ্ঞায়িত ধারণায় উপনীত হতে হবে। কোন ‘নৈতিক’ অবস্থান নেয়া কি রাষ্ট্রের কাজ ? না অভ্যন্তরীন আর্থ-সামাজিক শৃঙ্খলা-নৈরাজ্য নিয়ে কাজ করাই রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব ? রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সনাক্ত এবং নির্ণয় করা অতটা কঠিন কাজ নয় যতটা কঠিন অনৈতিকতার মানদণ্ড নির্ণয় করা। এর কারন বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য প্রত্যক্ষ করা যায় , অনুভব করা যায়।
একটা কার্যকরী রাষ্ট্র তাই সবসময় চেষ্টা করে যে কোন মুল্যে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকা যা রাষ্ট্রকে আপাত: বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত করে। শৃঙ্খলা-নৈরাজ্যের সূচক সমূহ সদা বিবর্তন নির্ভর এবং পরিবর্তনশীল বিধায় তৎসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় নীতিমালাও তদ্রুপ বিবর্তন নির্ভর এবং পরিবর্তনশীল। রাষ্ট্রের মৃত্যুদণ্ড এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত বিধিমালা এর ব্যতিক্রম নয়। ভ্রূণহত্যা মানব হত্যার সমতুল্য কিনা তা রাষ্ট্রীয় বিধানে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে জনস্বার্থ এবং সংশ্লিষ্ট জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন অগ্রাধিকার পাবে। অন্যকিছু এখানে গৌণ কারন ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্র অস্থিতিশীলতা পরিহার করতে চায়।
@সংশপ্তক,
আপনার সুন্দর উত্তরের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
:yes:
চিন্তা ভাবনায় প্যাঁচ লাগতেই থাকে। “অভ্যন্তরীন আর্থ-সামাজিক শৃঙ্খলা-নৈরাজ্য” এড়ানো একটি গ্রহণযোগ্য লক্ষ্য, কারণ এটা পর্যবেক্ষণ করা যায়। আবার রাষ্ট্র তার জনগণকে “আলোকিত” করার চেষ্টাও করে। যেমন সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, দোররা মারা প্রথা, ইত্যাদি তুলে দেয়া। এগুলো অনেক সময় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এড়ানোর বিপরীতে যেতেও পারে। মানে সবসময় যে “জনস্বার্থ এবং সংশ্লিষ্ট জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন অগ্রাধিকার” দেয়াটাই উচিত, এমনটা “প্রগতিশীল” রাষ্ট্র নাও মানতে চাইতে পারে।
তো জনগণের শৃঙ্খলা, ইচ্ছার প্রতিফলন আর তাদেরকে আলোকিতকরণ, এর ব্যালেন্সটা কিরকম, আর জনগোষ্ঠীকে আলোকিত করার এই ইচ্ছাটা আধিবিদ্যিক কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর বের করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়।
@ধ্রুব,
এবার আমার খুব পছন্দের একটা টপিকে ঢুকে যেতে শুরু করেছেন। গর্ভপাতের এই প্রশ্নে কতগুলো বিবেচ্য বিষয় চলে আসে দেখুন।
প্রথমতঃ এটা অবশ্যই কাল নির্ভর। আজ থেকে কয়েকশ’ বছর আগেও গর্ভপাত নিয়ে এধরণের আলোচনা করারই প্রশ্ন উঠতে পারতো না। তখন তথাকথিত ‘নৈতিকতা’ই আপনাকে বাঁধা দিত উচিত কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন করতে কারণ জীবন বা প্রাণ যেহেতু তথাকথিত ‘স্রষ্টা’র তৈরি এটাকে বিনাশ করার কথা চিন্তা করাই হত পাপ। এখন কালের সাথে সাথে আমাদের বিজ্ঞান এবং অধিকার প্রশ্নে দৃষ্টিভংগী বদলেছে। আবার দেখুন, আমাদের প্রজাতির জনসংখ্যা প্রযুক্তির কারণে যে সাইজে এসে পৌছেছে তাতে করে গর্ভপাতের মত একটা প্রশ্ন করার লাক্সারি আমরা পাচ্ছি। ধরুন ধরুন আজ থেকে ৫০-১০০ হাজার বছর আগে যখন মানুষের জনসংখ্যা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষে (অনেকে মনে করেন কয়েক হাজারে নেমে এসেছিল, আমাদের প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক ডিভার্সিটির পরিমাণ হিসেব করলেও এই সংখ্যাটাকে সঠিক বলেই মনে হয়) এসে ঠেকেছিল তখন যদি মেয়েরা গর্ভপাতের আওধিকার চাইতো তখন কি হত?
এখন প্রশ্নগুলো আসছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রথমে ডিফাইন করুন প্রাণ কি? ভ্রূণতে কখন প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে। এখানে আপনাকে বিজ্ঞানের স্মরাণপন্নই হতে হবে মনে হয়। যদি বলেন যে প্রাণের বৈজ্ঞানিক সংগা অনুযায়ী প্রথম ১২ সপ্তাহে ভ্রুণকে প্রাণ বলে সংজ্ঞায়িত করা যায় না, তখন কিন্তু আলোচনার মোড় ঘুরে যাবে।
তারপরের প্রশ্ন চলে আসছে এই সিদ্ধান্ত কে নেবে? রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক কারা? ছেলে না মেয়েরা? আজকে আমাদের সনাজে ছেলে এবং মেয়েদের সমাধিকারের প্রশ্ন আসছে দেখেই এই প্রশ্নটা সামনে চলে এসেছে। আমাদের মত বহু লিবারেলই আজকে বলছেন মেয়েদের দেহ যেহেতু সন্তান ধরাণ করে সেহেতু এই সিদ্ধান্ত মেয়েদেরই নিতে দেওয়া উচিত। কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের এই সমাধিকারের প্রশ্নটাই কি জৈবিক বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবেন? আপনি যদি এখানে স্রেফ জৈবিক বিবর্তনের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেন তাহলে বংশবৃদ্ধি এবং টিকে থাকাই তো একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আমি খুব জোরালোভাবে মনে করি যে, মানব বিবর্তনকে কোনভাবেই আর শুধু জৈবিক বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই আমাদের মস্তিষ্ক, বুদ্ধিমত্তা এবং চেতনার বিবর্তন যেভাবে ঘটেছে তাতে করে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই জৈবিক বিবর্তনের পেরিফেরির বাইরে চলে যেতে শুরু করেছি, অনেক ক্ষেত্রে বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণও করতে শুরু করেছি। ধরুন গর্ভপাতের প্রশ্নে বা স্টেম সেল রিসার্চের ক্ষেত্রে আপনি বৈজ্ঞানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তা করলেও বেশ কিছু গ্রে এরিয়া থেকে যাচ্ছে। এখানে কি সঠিক উত্তর বলে কিছু আদৌ আছে? এ ধরণের ব্যাপারগুলো কি অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়?
@বন্যা আহমেদ,
অবশ্যই। আমিও তাই মনে করি।
দয়া-মায়া, স্নেহ-ভালোবাসা, এমন কি পরার্থিতা এবং সহমর্মিতাও, এইসব বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় উদ্ভুত হয়েছে এমন ধারণার পেছনে যুক্তি আছে। কিন্তু নৈতিকতা, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা, আইন-কানুন সামাজিক প্রয়োজনে এসেছে বলেই আমার মনে হয়। তবে সমাজওতো বিবর্তনের ফল, এই যুক্তিতে নৈতিকতাকে পরোক্ষে বিবর্তনের ফলশ্রুতি বলা যেতে পারে – তবে আমার মনে হয় এই যুক্তিতে সবইতো বিবর্তনের ফলশ্রুতি – গাড়ি, এরোপ্লেন, কম্পিউটার সবই – কারণ মানুষ প্রজাতিটাই বিবর্তনের ফলশ্রুতি।
আমি বন্যার সাথে একমত – আমরা মানুষেরা জৈবিক বিবর্তনের পেরিফেরির বাইরে চলে যেতে শুরু করেছি – এই সত্যটা উপলদ্ধি করা দরকার।
@বন্যা আহমেদ,
আপনার নিম্নোক্ত মন্তব্যগুলো আলোচনা আগানোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
আমি এ ব্যাপারে পুরোপুরিই অজ্ঞ। প্রাণের ডেফিনিশন আমি সত্যিই জানি না। আমার বর্তমান ধারণা ”প্রাণ” ধারণাটা যতটা বৈজ্ঞানিক, তার চেয়ে বেশি ভাববাদী। আমার দেহের র মেটারিয়েলগুলো থেকে আমি ঠিক কিভাবে আলাদা? আমি জড় আর জীবের পর্যবেক্ষণগত পার্থক্য ছাড়া কোন গুণগত পার্থক্য স্বীকার করতে পারি না। মানে জীব, জড়ই। শুধু পদার্থ বিজ্ঞানের একটা সংজ্ঞা আমাকে ভাবায়
in the famous 1944 book What is Life?, Nobel-laureate physicist Erwin Schrödinger theorizes that life, contrary to the general tendency dictated by the Second law of thermodynamics, decreases or maintains its entropy by feeding on negative entropy.
সূত্র
কিন্তু এই সংজ্ঞাও আমি নিঃশঙ্কোচে মেনে নিতে পারি না যতক্ষণ না এটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে কোনো এনটিটিই ঋণাত্মক এনট্রপি গ্রহণ করা ব্যতিরেকে প্রাণীর মত আচরণ করতে পারে না। আমার কাছে প্রাণী হলো প্রাণীর আচরণ। পর্যবেক্ষণগত পার্থক্যটাই মূল।
তো আমার আসলেই প্রশ্ন:
ভ্রুণের ঠিক কোন পর্যায়টা প্রাণ বলা যায়?
এটা তো বিবর্তন প্রদত্ত লক্ষ্য। কিন্তু এই লক্ষ্যটা উচিত না অনুচিত, সেটা বলা কিভাবে যায় সেটা আমার অনুসন্ধানের একটা অংশ। অর্থাত আমরা কি বলতে পারি যে অনুসন্ধানী হওয়াই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত অথবা বিবর্তনের যে মূল লক্ষ্য, বংশবৃদ্ধি এবং টিকে থাকা, প্রতিটি মানুষের সজ্ঞান লক্ষ্যও সেটা হওয়া উচিত?
আমার মতে এগুলার উত্তর নাই। উত্তর অসম্ভব। বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণকে পূর্বাভাসক্ষম করে তুলতে পারে। কিন্তু এগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের কাজ না। আবার এমন না যে অন্য কোন টুল আছে যেগুলো দিয়ে এইসব প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব। এগুলো চিরস্থায়ী ভাববাদী প্রশ্ন। এসব অন্ধকার অঞ্চলে কোনদিনও বিজ্ঞানের আলো পড়বে না, এবং সভ্যতার আদি-লগ্ন থেকে এসব অনেক প্রশ্নের শুরু এবং মানুষ চাইলে চিরকাল এই প্রশ্নগুলো টিকিয়ে রাখতে পারবে, (যতদিন পর্যন্ত না সকল মানুষ অধিবিদ্যাকে বর্জন করে)।
মানুষের একটা অঞ্চলে বিজ্ঞান কখনো দখল আনতে পারবে না দেখতে পাওয়াটা একরকমের হতাশার। তবে এটা উত্তরণের পথ আছে বলে ভাবার দৃঢ়তা পোষণ করি।
@বন্যা আহমেদ,
নৈতিকতার ব্যাপারে প্রথম আমি যেটা মাথায় রাখবো, তা হল, আমরা বিবর্তনের ফসল। সহোযোগিতা, পরার্থিতা, নৈতিকতা, এই ব্যাপারগুলো আমাদের মাঝে এসেছে প্রথমে বায়োলজিকালি, তারপর সামাজিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। অভিদা যেই জিনিশটা প্রথমেই তুলে এনেছেন, নৈতিকতা মানুষের একচেটিয়া কোন ব্যাপার নয়। আমাদের মস্তিষ্কের গঠন যেহেতু অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো, তাই আমরা নৈতিকতার ক্ষেত্রে অনেক ভালো অবস্থাটাই প্রদর্শন করি। ভালো মানে স্রেফ অধিক জটিল, good বলিনি।
এখন ব্যাপার হল, বায়োলজিকাল ব্যাপার যখন আমাদের চলনের একটা ফর্ম তৈরী করে দিল, তখন আমরা গড়লাম একটা দল বা সমাজ। সেইখানে আসল, সংখ্যা গরিষ্ঠ জন কোন আচরন করে? এবং সেটা কেমন তা বিচার। ধরেন একটা সমাজ, যেখানে জনসংখ্যা ১০০ জন। খাবার আছে ২০ জনের। সেইখানে কি হতে পারে?
১. ৮০ জন না খেয়ে মারা যাবে, কিন্তু কোন ২০ জন বাচবে তা নিয়ে চলবে প্রতিদ্বন্দিতা। সেক্ষেত্রে যে আরেকজনকে আহত করে হোক, নিহত করে হোক বা বেধে রেখে হোক, অপরজনকে খাবার ছিনিয়ে নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে, সেই টিকে থাকবে। এটাকে আমরা বলি, টিকে থাকার জন্য সার্থপরতা বা সহিংসতা।
২. ২০ জনের খাবার ৪০ জন ভাগাভাগি করে খেয়ে বেচে থাকলো, কিনতু সবাই তুলনা মূলক ভাবে কম সময়। কিন্তু এই ২০ জনও কিন্তু একটা সময় স্বার্থপরতায় চলে যাবে, যখন ভাগাভাগি করে নেয়ার মত খ্যাদ্য অবশিষ্ট থাকবে না।
এই অবস্থায়, আপনি কোনটাকে নৈতিকতা বলবেন। পরের কারনে স্বার্থ দিয়া বলি? নাকি নিজেকে বাচানো? সাধারন অবস্থা হচ্ছে, ভালোসময়ে পরার্থিতা শোভন এবং আকাঙ্খিত, কিন্তু সঙ্কটের সময়ে স্বার্থপরতায় প্রাধান্য পায়, স্বাভাবিকও বটে। সুতরাং নৈতিকতা নির্ভর করছে কালের উপর, অবস্থার উপর।
এইবার বায়লজিকালি চিন্তা করি, আমি বেচে থাকার জন্য সহোদরকে বঞ্চিত করব না, নিজে মরব, এই সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছে? আমার মস্তিষ্ক বা মন। এইটা একটা রাসায়নিক ব্যাপার, বেচে থাকার তাগিদের মত জৈবিক ব্যাপার। চাবিকাঠি হল জীব রসায়ন, তাকে প্রভাবিত করছে কাল প্রভাবিত সামাজিক নিয়ম।
আমাদেরকে ইতিমধ্যে আমাদের সমাজ শিখিয়ে দিয়েছে, অপরকে খুন করা খারাপ, তাই আমি যখন আমার সহোদরকে বঞ্চিত করে খাবারের অধিকার নিচ্ছি, তখনো আমার মনে একটা দংশন হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি অনৈতিক কিছু করেছি। কিন্তু সমাজ যদি আমার মনে এই ছাপ ফেলে না দিত, যে খুন করা খারাপ, তাহলে কি আমি তা ভাবতাম?
সমাজ কেন এই শিক্ষা আমাকে দিয়েছে, খুন করা খারাপ! মানুষ একসময় দেখেছে, একা টিকে থাকা যতটা কঠিন, দলবদ্ধভাবে কিছু সাধারন সহযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকা তার চেয়ে সহজ। সেইখান থেকে এই বোধ এসেছে, আমিও বাচবো, আমার সংগীও বাচবে। এই বোধ ততক্ষন কার্যকর, যতক্ষন আরেকজনের বেচে থাকা আমার বেচে থাকার জন্য ক্ষতিকর না।
গর্ভপাতের বিষয়টা এসেছে, এসেছে কাল নিরপেক্ষ নৈতিকতার ব্যাপারটা। কোন প্রজাতির অনন্তকাল টিকে থাকায় যখন প্রশ্ন, তখন কাল নিরপেক্ষ নৈতিকতার প্রশ্নটা কি অবান্তর নয়?
আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গর্ভপাত অনৈতিক। কিন্তু কখন? একটা ভ্রুনে যখন মস্তিষ্কের বিকাশ হচ্ছে, তখন আমরা তাকে আরেকটা এন্টিটি হিসেবে গণ্য করছি। নিষিক্ত হবার বেশ অনেকদিন পরেই আমরা তাকে প্রান বলে বিবেচনা করছি। তখনই আমাদের মাঝে প্রশ্ন, ভ্রূনের বেচে থাকার অধিকার আছে কি নেই? তারমানে মস্তিষ্কবিহিন ভ্রূনের বাচার অধিকার নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। তেমনি, পায়ের চাপে একটা কেঁচো মেরে ফেলা, নৈতিক কি অনৈতিক তাও আমরা ভাবছি না। ভাবছি কেবল আপন প্রজাতির কথা। এইভাবে আপন প্রজাতির কথা ভাবাই হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের জন্য স্বাভাবিক। তাই আজ গর্ভপাত নৈতিক কি অনৈতিক, এটা প্রশ্ন। তারমানে, সর্বাধিক প্রচলিত ও গৃহিত ব্যাপারগুলোই নৈতিক। আর এরই মাঝে আইনের মত চেপে বসেছে ধর্মীয় বিধানগুলো। ধর্মগুলোকে আজ আর সমাজ বিচ্ছিন্ন, ঐশ্বরিক আলাদা কিছু ভাবার সুযোগ আমাদের নেই, স্রেফ সমাজকে প্রভাবিত করার শক্তিশালী হাতিয়ার। যদি, মানুষের সামাজিক ব্যবস্থা আজ ফিরে যায় আদিম যুগে, আচরণ হয়ে যায় হিংস্র, তাহলে আমাদের আজকের সামাজিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সাথে সাথে বিলুপ্ত হবে ধর্মীয় বিধানও। তখন নতুন সমাজ ব্যবস্থায় নতুন ধর্ম আসবে, নতুন নৈতিক মানদন্ড আসবে।
@নীল রোদ্দুর,
একজন লিবারেল হিউম্যানিস্ট-এর সাথে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বললেন, যে ভ্রূণ মায়ের পেটের বাইরে এলে নিজে সারভাইভ করতে পারে, সেটা হলো মানব পর্যায়ের প্রাণ আর তার বাঁচার অধিকার আছে। এর আগের লেভেলের ভ্রূণকে মেরে ফেলা যায়, যেভাবে গরু ছাগল মেরে ফেলা যায়।
মানব সমাজের কথিত “নিঃস্বার্থ এবং স্বার্থপরতা” এবং তার উৎস নিয়ে এখনও যারা বিভ্রান্তিতে আছেন তাদেরকে আমি রিচার্ড ডকিন্সের ” The Selfish Gene” বইটা পড়ার পরামর্শ দেই। বইটার Chapter 11 , Memes: The New Replicators এ ডকিন্স বলছেন :
@সংশপ্তক,
সহমত।
তাই যদি হয় তবে দাতা হাতেম তাই, হাজী মুহম্মদ মহসীন, মাদার তেরেসা,
বাংলাদেশের রণদা প্রসাদ সাহা, রবীন হুড(মিথ কিনা জানিনা) এ কালের
বিল গেটসের কাজকে লেখক কোন আলোকে ব্যাখ্যা করবেন!
@লাইজু নাহার,
লাইজু, আপনি লালু, ফালু, ইমদু, বাংলা ভাই, নিজামী, তারিক রহমান, হিটলার সহ হাজারো স্বার্থপর লোকের অস্তিত্ব যে আলোকে ব্যাখ্যা করবেন সেই একই আলোকেই হাজী মুহম্মদ মহসীন, মাদার তেরেসাদের অস্তিত্বকেও ব্যাখ্যা করা যাবে। একটা সমাজ যেমন কেবল চোর ছ্যাচোর স্বার্থপরদের নিয়ে তৈরি হতে পারে না, ঠিক তেমনি কোন সমাজ কেবল ঢালাওভাবে দাতা হাতেম দিয়েও তৈরি হতে পারে না। সমাজ হয় এদের নানাবিধ মিশ্রণ। বিবর্তনের গেম থিওরীতেই এটা পাওয়া যায়। সেটা শুধু সমাজ নয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় প্রযোজ্য। এমনকি একজন চরম স্বার্থপর মানুষও জীবনের সবসময় স্বার্থপর থাকতে পারে না। টিকে থাকার জন্যই তাকে পরার্থতার চর্চা করতে হয়। যেমন হিটলারকে আমরা যতই স্বার্থপর বলে রায় দেই না কেন তার আবার কিছু ভাল গুণ ছিলো – যেমন তিনি ছিলেন সাধারন মানুষের প্রতি উদার, একদারপত্নী, মদ খেতেন না, জুয়া খেলতেন না ইত্যাদি। ঠিক আবার উল্টোভাবে দেখলে দেখা যাবে – মাদার তেরেসারও বেশ কিছু অন্ধকার দিক ছিলো, যেমন – তিনি দাতব্য প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে কালো বাজারীদের এবং দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ নিতেন (যেমন চার্লস কিটিং এর কাছ থেকে দেড় মিলিয়ন ডলার নিয়েছিলেন ইত্যাদি)। হাইতির গণহত্যাকারী দুভালিয়ারের কাছ থেকেও অর্থ নিয়েছিলেন তেরেসা। তিনি দারিদ্য নিয়ে ব্যাবসা করেছেন এমন অভিযোগও করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স সহ বহু গবেষক। যাহোক এগুলো বলার অর্থ মাদার তেরেসা খারাপ সেটা বলা নয় – বলার উদ্দেশ্য হল – আদর্শ নিঃস্বার্থ ভাল মানুষ কিংবা নিঃস্বার্থ সমাজব্যবস্থা কেবল কল্পনায় মেলে – আর বাস্তবে থাকে গেম থিওরীর নানা সিমুলেশনের ফল।
@অভিজিৎ, ইন্টারেস্টিং। আমি এটা একটু বোঝার চেষ্টা করি। ধরা যাক সিমুলেশন বলছে মাদার টেরিসার ৯০% নিঃস্বার্থ সেবা ও সাদা টাকা, বাকি ১০% দারিদ্রতার সুযোগে নাম কেনা ও কালো টাকা, হিটলার ৯৭% গণ-খুনী, ৩% পশুদের প্রতি সদয়। সমাজের বাকি সবাই নিক্তির এই উঁচু ও নিচু মানের মধ্যে বাস করছে – আমি ৫৫% ভাল চিন্তা, ৪৫% অলসতা (সময় মত কাজ না করার ফলে কারুর নিশ্চয় ক্ষতি হচ্ছে)। তাহলে কি ধরে নিতে হবে ভবিষ্যৎ সমাজও এই মিশ্রণ থেকে রেহাই পাবে না (স্টারট্রেকের নিঃস্বার্থ “কম্যুনিজম” নিতান্তই কল্পনা)?
আর একটা কথা, আমার ধারণা ছিল মানুষের স্বজ্ঞার উদ্ভবের সাথে সাথে প্রাকৃতিক বিবর্তন বলতে আমরা যা বুঝাই তার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত দেশে মূল গোষ্ঠীর জনসংখ্যা হ্রাসকে কি ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
এই দুনিয়া স্বার্থে ভরা—
httpv://www.youtube.com/watch?v=XpniCBZYEU8
আল্লাহর রাস্তায় নয়, বাঁচার জন্যে সংগ্রাম করা–
httpv://www.youtube.com/watch?v=SLvuevf__Ok
জোর যার মুল্লুক তার—
httpv://www.youtube.com/watch?v=JDSf3Kshq1M&feature=related
বরাবরের মতই ফালতু লেহা। এত খারপ লেহা মাইনষ্যে লেহে কেমনে। এর তে তো মোর লেহাই অনেক বালা।
লেখাখানি পড়লাম অভিজিত বাবুর প্রত্যেকটা লেখা তথ্য বহুল।শুধু তথ্য বহুল নয়। আপনার লেখা পড়তে কোন সময় বিরক্তি ভাব টুকু আসে না। প্রত্যেকটি লাইনই সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো। আমি ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির বিভিন্ন নিষ্ঠুরতা নিয়ে চিন্তা করতাম। আর ভাবতাম তার কারণ কি? প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যোগ্য জীবের টিকে থাকা আমরা মানব সমাজেও দেখতে পাই সবলের দুবর্লের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন,শোষণ । ছোটদের খেলার মাঠ থেকে রাষ্টীয় স্তর সব জায়গায়ই বিদ্ধমান। বুদ্ধিমান,শক্তিশালীরাই যোগ্য হিসাবে সমাজে নির্বাচিত হয় সেই নেচারাল সিলেক্শন মেনে বোধ হয়। আর তাদের হাতেই তৈরী হয় নৈতিকতা, ধর্ম, নিষ্ঠুরতা, আদর্শ। আর তাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে মানব সমাজ নিজের বৃদ্ধিকে বিলোপ করে দিয়ে। পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম। :rose2:
দারুন পোস্ট। পরের পর্বের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে থাকলাম। :yes:
@অভিজিৎ,
উপরের উল্লেখিত অংশটুকুই আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটা প্রাণীদের সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া পিরামিড মডেলের ভিত্তি করে ওপর প্রাকৃতিক বিবর্তনের আড়ালে বিভিন্ন সময়ে শুরু হয়। বিভিন্ন রকম বাঘদের ব্যাপারটা যদিও কিছুটা ভিন্ন।এখন , এই সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রাণীদের নিজস্ব ভাষাগত ও আচরণগত বৈশিষ্ট গুলো গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। মানুষ তার ভাষা তার নিজের ও অন্যের সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে থাকে । মানুষের ভাষায় একই সঙ্গে ও একই সময়ে স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কিত তথ্যাবলী আদান-প্রদান মরা সম্ভব। অন্যান্য প্রাণীরা কেবল পাত্র বা বস্তু সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করতে পারে যেখানে বস্তুর অবস্থান ও সময় সূচক তথ্যাবলী অনুপস্থিত থাকে।
শুধুমাত্র স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কিত তথ্যাবলী দিয়েই মানুষ এবং অন্যান্য প্রানীদের ভাষাগত ও মস্তিষ্কচালনার পার্থক্য নির্ণয় করা যথেষ্ট নয় কেননা একমাত্র মানুষই প্রকৃত স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কিত তথ্যাবলীর বদলে সংশ্লিষ্ট ‘কাল্পনিক রাশি’ ব্যবহার করতে পারে যার কারনে মানুষ ভূতে ভয় পায় আবার কখনও ‘কাল্পনিক রাশি’ ব্যবহার করে জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে। ‘কাল্পনিক রাশি’ যেমন যৌক্তিক মডেল তৈরীতে ব্যবহার হয় , তেমনি এর দ্বারা অযৌক্তিক ভূত-প্রেত-ভীতি, প্রেম, ঘৃনা ইত্যাদি এমনকি বহুল প্রচারিত ‘নৈতিকতাও’ মানুষের মষ্তিষ্কের নিওকরটেক্স বাসা বাধে।
সবশেষে, গণিকাবৃত্তি মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে বহু সময়কাল পর্যন্ত সম্মানজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত হত। গ্রীক সভ্যতায় গণিকারা πόρνη বা পর্ণী নামে পরিচিত হতেন যেটা একটা উভলিঙ্গ শব্দ। পুরুষ বা স্ত্রী যে কেউ চাইলে এ পেশায় আসলে পারতেন। তারা সরকারকে কর দিতেন এবং তাদের মধ্যে অনেকে সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ছিলেন। আর এখন , নানাবিধ অাব্রাহামীয় মতাদর্শের প্রভাবে এক কালের অভিজাত πόρνη পর্ণী থেকে সামাজিক টাবু ‘পর্নোগ্রাফির’ বিবর্তন। এর কারন আর কিছু না। বিবর্তনের কোন এক সন্ধিক্ষণে অন্য সব স্তন্যপায়ীদের কলা দেখিয়ে মানব মস্তিষ্ক ‘কাল্পনিক রাশি’ ব্যবহার করা শেখে যার প্রভাব এখন সর্বত্র বিরাজমান।
@সংশপ্তক,
দুর্দান্ত! :yes:
চলুক। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় — গেম থিয়োরির বিবর্তনীয় ব্যবহারের বিষয়ে কৌতুহল বোধ করছি।
কিছু মন্তব্য:
empathy র বাংলা পছন্দ হলনা। ওর মধ্যে অন্যের অনুভূতি নিজের করে বোঝার ব্যাপার আছে, সহমর্মিতা ধরণের কিছু হলে বোধহয় ভাল হত।
একজায়গায় “বুৎপত্তি” ব্যবহার করেছেন, “উৎপত্তি” হবে?
জন ভন নিউম্যান। বা জন ফন নয়মাহ্ন।
@রৌরব,
চমৎকার কিছু সংশোধনীর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। empathy র বাংলা হিসেবে সহমর্মিতাটা বেশ পছন্দ হলো।
বার বার ব্লগে ঢুকি কেবল কমেন্ট পড়ার জন্য।
@আসরাফ, ভাই, আমিও।
অসাধারণ লাগল অভিজিৎদা।
নৈতিকতার সাথে ঈশ্বরের যে কোন সম্পর্ক নেই এবং এর অস্তিত্ব যে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল নয়, আমার লেখাটিতে আমি মূলত এ ব্যাপারটিই দেখাতে চেয়েছি।বিবর্তনের দিকে আর পা বাড়াইনি। আমার লেখাটি অসম্পূর্ণ ছিল। আপনার লেখাটি সেটিকে পূর্ণতা দিল। অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়ে অনেককিছু জানলাম। পরবর্তী অংশ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ স্যার।
অভিদার দুর্দান্ত লেখা নিয়েতো নতুন কিছু বলার নেই,তবে লেখার শিরোনাম নিয়ে বলার আছে। আগের কয়েকটা লেখার শিরোনাম আমার মোটেও ভালো লাগেনি,এবারেরটা ঠিক আছে 🙂 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
একটা জিনিস বুঝলাম তোমার খুব ট্র্যাডিশনাল শিরোনাম পছন্দের। ‘লুল পুরুষ’, ‘জীবিত বিবাহিত’ টাইপের শব্দ শিরোনামে থাকলে তোমার মাথায় আকাশ ভাইঙ্গা পড়ে! 😀 । এটা কিন্তু তোমার হেভিমেটাল গান শোনা সি শার্প প্রোগ্রামারের নেচারের সাথে যায় না! :rotfl:
আরেকটা কথা, আগেই বলা উচিৎ ছিলো যদিও। এই একই শিরোনাম অপার্থিবও তার একটি লেখায় ব্যবহার করেছিলেন। (শেষ রেফারেন্সটা দেখো)। কাজেই এই সুযোগে তাকেও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলাম। প্রশংসা উনারও প্রাপ্য।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। লেখার বিষয়বস্তু ইন্টারেস্টিং। ভাল লাগল। :yes: :yes: :yes:
এই লেখাটির অভাব বোধ করছিলাম অনেক দিন ধরে। অভি’দাকে ধন্যবাদ এই বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ লেখা লেখার জন্য। নৈতিকতা নিয়ে অনেকরই লেখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তবে এই লেখাটির মত পূর্ণাঙ্গ ছিল না কোনটাই। আপনার বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বই এই লেখা ছাড়া অপূর্ণ থেকে যেত।
বিপ্লব’দার মন্তব্যের বিপরীতে অভিজিৎ’দা এর মধ্যেই বলেছেন, তারপরেও আমি কিছু যুক্ত করি। আমার মতে বিবর্তন মানেই জেনেটিক্স সে চিন্তা থেকেও আমাদের সরে আসতে হবে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে মানুষ অথবা অন্যান্য প্রাণীদের আচরণের যে ব্যাখ্যাগুলো দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেখানে জেনেটিক্সের অবদান সামান্য বলে মনে করি। গ্রুপ সিলেকশনে ইন্ডিভিজিউল জেনেটিক্সের অবদান নেই। তবে সম্মিলিত ভাবে সেই জিন টিকে থাকায় সুবিধে পাবে।
গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের আচরণ বোঝার জন্য এই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি। বিবর্তনকে শুধু মাত্র জেনেটিক্সের মধ্য সীমাবদ্ধ না রেখে মানব মস্তিষ্কের চিন্তা/ভাবনা কিভাবে বিবর্তিত হচ্ছে সেগুলোকে স্টাডি করা উচিত। এর মাঝেই মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমাধানগুলো রয়েছে।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসুক 🙂 ।
@স্বাধীন,
চমৎকার এই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, স্বাধীন! একেবারে বুলস আই! :yes:
দেখি তাড়াতাড়িই পরের পর্ব দেয়ার চেষ্টা করবো।
@স্বাধীন,
১] জৈবিক বিবর্তনের ছাপ, জেনেটিক্স ছারা আর কিভাবে মানব মনে আসতে পারে-একটু বোঝাও ত। আমার মাথায় ঢুকছে না। জেনেটিক মার্কারের সাথে ব্যাবহারের সম্পর্ক না থাকলে, আর কোথা দিয়ে বিবর্তনীয় ছাপটা আসবে?? যুক্তি দাও
২] দ্বিতীয় কথাটা খুবই ভুল। সামাজিক বিবর্তনের চাবিকাঠি উৎপাদন ব্যাবস্থা এবং উদ্ভাবনে নিহিত। আর কালকে কি আবিস্কার হবে তা কেও জানে না।
কালকে কৃত্রিম ফটোসিন্থেসিস আবিস্কার হলে পৃথিবীর রাজনীতি সব বদলে যাবে। আবার এটাও ধর, বাস্পীয় ইঞ্জিনের আবিস্কার অর্থনীতি সম্পূর্ন বদলে দিয়েছিল। এগুলোর সাথে জেনেটিক্সের সম্পর্ক কি??
আমি জেনে শুনেই জেনেটিক্স কথাটা ব্যাবহার করলাম। কারন ডি এন এ ছারা আর কোথায় বিবর্তন তার অর্জিত সংকেত আমার মধ্যে রেখেছে বা সেই সংকেতকে চালানো সম্ভব?
@বিপ্লব পাল,
আমার ধারনা আপনি বিবর্তন বলতে শুধু মাত্র জৈবিক বিবর্তনকেই বুঝাচ্ছেন, আরা আমি সেটাকে যে কোন বিবর্তনকেই বুঝাচ্ছি। মানুষের ভাষার যেমন বিবর্তন হয়, সংস্কৃতির যেমন বিবর্তন হয়, সামাজিক রীতি নীতির যেমন বিবর্তন হয়, সভ্যতার যেমন বিবর্তন হয়, এগুলো কোনটাই জৈবিক নয়। আপনি বলতে পারেন এগুলোর সাথে বিবর্তনের সম্পর্ক কি? বড়জোর বলতে পারো পরিবর্তন। কিন্তু আমি এগুলোকে নিছক পরিবর্তন বলবো না। সকল পরিবর্তন কোন না কোন কারণে হয়েছে। হতে পারে সেটা নুতন কিছু আবিষ্কারে, অথবা হতে পারে প্রকৃতিক কোন কারণে। কিন্তু যে কারণেই হোক, সেটা মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীদের চরিত্রের মাঝেও পরিবর্তন আনে। এখন সেটি অবশ্যই জৈবিক নয়, কিংবা কোন প্রকার জেনেটিক পরিবর্তন নয়। কিন্তু সেটাও একটি পরিবর্তন যা পরবর্তী জেনেরাশেনে প্রবাহিত হচ্ছে কালচারের মধ্য দিয়ে। ডকিন্স যেটাকে বলছেন মেমেটিক্স। আমি এটাকেই বুঝাচ্ছি। এটা মনে হয় “পরিবেশ বনাম পরিবেশ” অথবা “প্রকৃতি বনাম প্রকৃতি” সেই বিতর্কের মাঝে পড়ে।
@স্বাধীন,
অভিজিত যেভাবে প্রানীজগতের উদাহরন টানছে তা বিপজ্জনক। মেয়ে পেঙ্গুইন দের মধ্যে বেশ্যাবৃত্তি খুব সাধারন ব্যাপার-এবার সেই কারনে যদি কেও দাবি করে বসে নারীত্বের নৈতিকতায় বেশ্যাবৃত্তি “তাই” দোষনীয় না, মেয়েরা আসলেই বেশ্যাতুর ( মানে সব মেয়ের মধ্যেই একটু আধটু বেশ্যাবৃত্তির প্রবণতা আছে) -কারন পশুকূলে তাই হয়ে আসছে-তাহলে মুশকিল।
মেমেটিক্সের পেছনে চালিকা শক্তিও সেই রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস। সামাজিক নৈতিকতা এবং উন্নততর উৎপাদনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক। আমেরিকাতে একজন মেয়ের যৌন নৈতিকতা অনেক স্বাধীন -কারন সে উন্নত উৎপাদনের সমাজে বাস করে।
@বিপ্লব পাল,
কেউ যদি এক প্রাণী গোষ্ঠির মধ্য কোন আচরণ আছে তাই সেটাও মানুষের মাঝে হবে সেরকম কথা বলে সেটা অবশ্যয়ই বিপজ্জনক হবে। কিন্তু আমার মনে হয় না এমন কথা কেউ বলছে। মেয়ে পেঙ্গুইন দের মধ্যে বেশ্যাবৃত্তি খুব সাধারন ব্যাপার হলেই যে অন্য প্রাইমেটদের বেলায় সেটা হবে সে ধরনের যুক্তি যদি কেউ দেয় সেটা তার সমস্যা। মানুষের যেহেতু উন্নত একটি মস্তিষ্ক রয়েছে তাই তার আচরণ ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। এখন মানুষের আচরণ কেমন হবে সেটা বুঝার জন্য তো আমাদেরকে সেই মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝা প্রয়োজন ঠিক কিনা?
আমরা তো মনে হয় একই কথাই বলছি। এখন যে কোন গোষ্ঠিবদ্ধ মানুষের আচরণ বুঝার জন্য আমি জেনেটিক্সের চেয়ে মেমেটিক্সকেই গুরুত্ব দিব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তারা কাজ করুক জেনেটিক্স নিয়ে। এটা স্বীকার করি ভবিষ্যতে জেনেটিক্স দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান, উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেটা কখনই উৎপাদন ব্যবস্থাকে এবং চাহিদাকে সমান করবে না। অর্থাৎ একটি পার্থক্য রয়েই যাবে। এখন যতদিন পার্থক্য থাকবে ততদিন মেমেটিক্সের অবদান থাকবে। রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসও রয়ে যাবে। এ কারণেই বলেছিলাম যে বিবর্তনের মাঝেই মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমাধানগুলো রয়েছে।
@স্বাধীন,
এটাও ঠিক না। ধর এখন দুই ভাই এর মধ্যে যেটুকু পার্থক্য আছে ডি এন এ তে তার কারন মিউটেশনের র্যান্ডমনেস। ন্যানোটেকের আরো অধিক উন্নতি হলে, জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিপ্লব আসবে-সেক্ষেত্রে কোন ডি এন এ বাজে মিউটেশন হলে ঠিক করে দেওয়া যাবে, বা আরো সুদূর ভবিষ্যতেই সম্পূর্ন ভাবেই আরো উন্নত সিন্থেটিক মানব ডি এন এ বানানো সম্ভব হবে। সুতরাং জৈবিক সিলেকশনের সুযোগ যত দিন যাবে-তত কমবে।
এবার মেমেটিক্সে আসি। মেমেটিক্সের একটা বড় চালিকা শক্তি আবাহাওয়া। এবং সাধারনত মিম গুলি ফ্যামিলি পরিবাহিত। ফলে ডাইভার্সিটি থাকে যার থেকে নির্বাচনের একটা পদ্ধতিও কাজ করে। আমার ধারনা নিকট ভবিষ্যতেই আস্তে আস্তে কমিনিউজম (লেনিনিজম না) এর দিকে সমাজ এগোবে-সেক্ষেত্রে ছেলে মেয়েদের দ্বায়িত্ব থাকবে কমিউনিটির।
এবং তথ্যবিস্ফোরনের ফলে ছোট বেলা থেকেই কার কি করা উচিত বা উচিত না-সেগুলো আস্তে আস্তে এখনি মিশে আচ্ছে এবং একটা কনভার্জিং সংস্কৃতির জন্ম আমরা দেখতে পাচ্ছি। নিউউয়ার্ক, ঢাকা বা কলকাতার মেট্রোকালচার
আগের থেকে অনেকটা এক হচ্ছে। আগে ভারতে প্রাক বৈবাহিক সেক্স নিয়ে মেয়েদের নৈতিক ব্যারিয়ার ছিল-এখন শহরাঞ্চলে তা কমে গেছে।
নানান কালচারাল ইউনিট না থাকলে বিবর্তন হবে কি করে? ডাইভার্সিটিই আস্তে আস্তে কমে যাবে বিশ্বটা ছোট হওয়ার জন্যে এবং কমিনিউজমের দিকে সমাজের প্রগতির জন্যে।
@বিপ্লব পাল,
এই মুহুর্তে বাহিরে যাচ্ছি। পরে আবার আলোচনা হবে আশা করি।
@বিপ্লব পাল,
হাঃ হাঃ আমার মুখে কথা বসাচ্ছ কেন? আমি তো সেকথা বলিনি। আমার প্রবন্ধের মূলকথা হল, নৈতিকতার জন্য কোন স্বর্গীয় উৎস খোঁজার দরকার নেই, বিবর্তনের নিয়মেই পরার্থপরায়ণতার মতো গুণাবলীর উদ্ভব হতে পারে। অন্য প্রানীজগতেও এভাবে হয়েছে, হয়েছে মানুষের মধ্যেও। মানুষ প্রানীজগতের বাইরে নয়। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, মানব সমাজ অনেক জটিল। কিন্তু জটিলতা ব্যাখ্যার জন্য জীববিজ্ঞান বাদ দেয়ার দরকার নেই। পিঁপড়ে, মৌমাছি কিংবা ডলফিনদের সমাজও জটিল। জটিল শিম্পাঞ্জীদের সমাজও। তাদেরও ভিন্ন ভিন্ন জটিল সোশাল স্ট্রাকচার আছে। সেগুলো বিজ্ঞানীরা জৈববৈজ্ঞানিক উপায়েই বিশ্লেষণ করেছেন। কেউ বলছে না যে পেঙ্গুইনে মেয়েরা বেশ্যাতুর হলে পিঁপড়ে কিংবা ডলফিনেও হবে। বিবর্তনের ক্রীড়াতত্ত্বের স্থিতিশীল কৌশলের ফলাফল কোন প্রজাতিতে কিভাবে পড়েছে সেটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে বের করাটাও একটা বড় কাজ। মানব সমাজের বিবিধ জটিলতার উৎসের কারণে নৈতিকতার স্তরে যে পার্থক্যগুলো আছে তা বিভিন্নভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় স্বর্গীয় উৎস সরিয়ে রেখে।
মানুষকে জীবজগতের বাইরে রেখে ব্যাখ্যা দেয়ার প্রচেষ্টাই বরং আমার কাছে বিপজ্জনক ঠেকে।
@অভিজিৎ,
মানুষের নৈতিকতার ব্যাখ্যা আমিও ধর্ম থেকে দিতে বলছি না। কিন্ত এখন ত আমরা জানতে পারছি আমাদের ব্রেনের ওপরে সাংঘাতিক কন্ডিশনিং করা যায়-ব্রেইন খুব প্লাস্টিক জিনিস। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান থেকেই নৈতিকতার ব্যখ্যা দেওয়া ভাল-তবে হ্যা নৈতিকতার উদ্ভবে রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের একটা বড় ভূমিক আছে।
যে কন্যাসন্তান বেশ্যাগৃহে জন্মেছে, তার কাছে দেহ ব্যাবসা স্বাভাবিক-আর অন্য কন্যাসন্তানের কাছে তাই অস্বাভাবিক। এর কারন আমাদের ব্রেইনটাই প্লাস্টিক। একজন ধর্মভীরু মুসলিমের কাছে অনেক কিছুই হারাম-মহম্মদ বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষন করেছে বললে তার মাথায় বাজ ভেঙে পড়তে পারে-পাপের ভয়ে সে করবের তলায় লুকাতে পারে বা ক্রোধে পেটাটে আসতে পারে। আবার তার প্রতিবেশী বা ভাই যদি যুক্তিবাদি হয়-সেই ওটা শুনে হাঁসবে।
সুতরাং আমাদের ব্যাবহারের পেছনে আছে ব্রেনের প্ল্যাস্টিক কন্ডিশনিং। আর আইন এবং প্রচলিত নৈতিকতার উৎসের পেছনে আছে উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন-যা অকস্মিক এবং কেও ভবিষ্যত বানী করতে পারবে না।
@বিপ্লব পাল,
হল না হয় প্লাস্টিক। কিন্তু সেটা তো আর গায়েবী পথে উদ্ভুত হয়নি, হয়েছে জৈববৈজ্ঞানিক পথেই। সেই ব্যাপারটা জানা এবং ফোকাস করা জরুরী। এ নিয়ে কিন্তু চমৎকার সব গবেষণা হচ্ছে ইদানিং।
কোন কিছু ভবিষ্যদ্বানী করার উদ্দেশ্যে তো এই প্রবন্ধ লেখা হয়নি, বরং উদ্দেশ্য পাঠকদের পরার্থিতার জৈবিক একটা উৎসের হদিস দেয়া, যেটা অন্য প্রানীজগতেও বিরাজমান। আর বিবর্তন অনেকক্ষেত্রেই প্রেডিকটিভ নয়, বরং রেট্রোডিক্টিভ, সেটা তো জানা কথাই।
@স্বাধীন,
ভাষার বিবর্তন প্রায় ১০০% জৈবিক-ভাষার জেনেটিক মার্কার খুব পরিস্কার।
@বিপ্লব পাল,
জৈবিক পরিবর্তনের কারণে আমরা কথা বলতে পারি ঠিক আছে, কিন্তু কেন বিশ্বে হাজারের উপর ভিন্ন ভিন্ন ভাষা? সে ব্যাপারে জৈবিক বিবর্তন কি কোন ব্যাখ্যা দেয়? কেন সকলের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, রীতি নীতি? সে ব্যাপারে জৈবিক বিবর্তন কি কোন ব্যাখ্যা দেয়? দেয় না।
এখন যদি ধরি মেমেটিক্স কেবল মাত্র একটি ধারনা মাত্র, তাহলেও তো সমস্যা দেখি না। এখনকার হিসেবে এই মডেল উপরোক্ত বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারে। যে দিন মিম এর চেয়ে ভালো কোন ধারনা আসবে তখন সেটি নিশ্চয়ই আরো উন্নতর ব্যাখ্যা নিয়ে আসবে। এভাবেই তো মানুষের জ্ঞান এগোয়। মিমের চেয়ে উন্নতর কোন ব্যাখ্যা কি কোথাও আছে?
@স্বাধীন,
মিম নিয়ে অভিজিৎ’দার দেওয়া আগের একটি ভিডিও আবার দিলাম সকলের জন্য।
@স্বাধীন,
httpv://www.youtube.com/watch?v=fQ_9-Qx5Hz4&feature=player_embedded#!
@স্বাধীন,
দেয়। মাইক্রোবিবর্তন এক্ষেত্রেও লক্ষ্যনীয়।
এমন কি সংস্কৃতির পার্থকের সাথেও জেনেটিক্সের ভূমিকা আছে-এই নিয়ে অনেক কাজ আছে-কারন
একেকটি জাতি একেকটি আবহাওয়াতে বড় হয়েছে। ফলে খুব হাল্কা কিছু কিছু আলাদা মিউটেশন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যাদের খাদ্যাভাস এবং বিশেষত রোগের ব্যাপারে ভূমিকা আছে।
বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে দেখতে গেলে মনে হয় মানুষ নিজের স্বার্থপরতাকেই নৈতিকতা নাম দিয়েছে। অনেকটা তিতা ওষুধ এর উপর sugar coating এর মত। যে অর্থে আমরা নৈতিকতা শব্দটা ব্যবহার করি এর খোলস ভাঙলে ওটা আর নৈতিকতা থাকেনা। শুধু কিছু survival rules. কে জানে হয়ত এই শব্দ টাও একদিন obsolete হয়ে যাবে।
@নার্শিয়া নীল,
আপনার মন্তব্যটা পড়ে ম্যাট রিডলীর একটা উক্তি মনে পড়ে গেলো। এটা আছে তার অরিজিন অব ভার্চু’ বইয়ে –
Cooperation was first used, not for virtuous reasons, but as a tool to achieve selfish results. And if we are to celebrate the unusually cooperative result of the societies, we must first recognize the base metal from which it was forged.
অারেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কদিন ধরে নৈতিকতা নিয়ে একটা লেখা দেবার পরিকল্পনা করছি (যদিও সেটা বাস্তবে রূপ নিতে বহু দূর)। মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে কোন অাদর্শ বা পরম নৈতিকতার অস্তিত্ব নেই, সৃষ্টিও অসম্ভব। দার্শনিক অালাপ। এমনটা কি এই মহলে স্বীকৃত, নাকি এ নিয়ে তর্ক অাছে? অনেককেই বলতে শুনি নাস্তিকের পক্ষেও নৈতিক জীবনযাপন সম্ভব।
@ধ্রুব,
খুবই ইন্টেরেস্টিং হবে লেখাটা। দিয়ে ফেলো। সেখানে আলোচনা করা যাবে। আমি নিজেও এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছি। আসলে কি পুরোপুরি নৈতিক হওয়া সম্ভব? অন্তত বিবর্তনগত ভাবে দেখলে এবং বাস্তবতা বিচার করলে আমার মতে সম্ভব নয়। লিখে ফেলো, জমজমাট আলোচনার আশায় রইলাম।
@স্বাধীন,
ওকে! কোন একদিন নিশ্চয়ই দিব 🙂
@ধ্রুব,
কোন একদিন হলে হবে না। সাত দিনের মধ্য দিতে হবে, দিয়ে দাও :rotfl: ।
@স্বাধীন,
😥
@ধ্রুব,
আদর্শ বা পরম নৈতিকতার অস্তিত্ব আছে কী নেই – এ ধরণের দার্শনিক অভিব্যক্তিকে টার্গেট করে হলে মুক্তমনায় একটা ইন্টারেস্টিং লেখার লিঙ্ক দিতে পারি। লেখক পুরজিৎ সাহা। প্রসংগ – নৈতিকতা। দেখতে পারেন।
আপনার লেখার ফন্ট মাঝে মাঝে ভেঙ্গে যাচ্ছে, কেন? আপনি অভ্র ব্যবহার করছেন না?
@অভিজিৎ,
এই জন্য অাপনাকে জিজ্ঞেস করা। একটা গতি হবে জানতামই।
অামার কম্পিউটার ম্যাক। অভ্র পাই না এখানে। একুশে ব্যবহার করি, কিন্তু মাঝে মাঝে ভেঙ্গে যায়। গুগল ট্রান্সলিটারেশান ব্যবহার করতে হবে হয়তো।
প্রভাতটা দেখছি কাছাকাছি। এটা ব্যবহার করে দেখা যায়।
ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
পুরজিৎ সাহার লেখা পড়ে আমি তো মুগ্ধ। সব ঠিক ঠাক! আগের লেখাগুলো অনুরোধের ভিত্তিতে কিছু কিছু আবার ব্লগে দেওয়া যায়? আলোচনা করা যেত।
@ধ্রুব,
অস্তিত্ব নেই বা আছে কিনা সেই প্রশ্নের আগে “পরম নৈতিকতা” র এক সর্ব্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা থাকা দরকার। তা না হলে এক জনের সংজ্ঞায় তা আছে আবার আর এক জনের সংজ্ঞায় তা নেই। দুটোর কোনটাকেই নাকচ করা যাবে না যতক্ষণ দুটো সংজ্ঞাই মেনে নেয়া হয়। একই সমস্যা আমরা দেখেছি ইশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে। অদৃশ্য, অজানা কোন বস্তু/ধারণার সংজ্ঞা দেয়াটাই এক ভ্রান্তিময় প্রচেষ্টা। যাহোক পরম নৈতিকতার একটা সংজ্ঞা আমি দিতে চেষ্টা করি। “পরম নৈতিকতা” বলতে যদি আমরা বুঝি এমন কোন নৈতিক বিধান বা নিয়ম সমষ্টি যা প্রকৃতির নিয়মে (পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রে) প্রচ্ছন্ন আছে। অর্থাৎ মানুষ যা কিছুই করে বা করবে (পারিসাংখ্যিকভাবে) সেটা বিজ্ঞানের নিয়মই গড়ভাবে নির্ধারণ করে দেয়। গড়ের চারপাশে অবশ্যই বিচ্যুতি হতে পারে। এই সংজ্ঞার “পরম নৈতিকতা” কি আছে? আছে। সেটাই তো বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের প্রতিপাদ্য। মানুষের তাবৎ আচরণ (নৈতিকতার অবভাস তার এক উদাহরণ) বিবর্তনের নিয়মের দ্বারাই নির্ধারিত। অনেকে বলে নৈতিকতা তো পরিবর্তনশীল। কিন্তু পরিবর্তনটা আমাদের মনের এক অবভাস । নিয়মের প্রকাশ সময়ের সাথে ভিন্ন রূপ নিতে পারে। কিন্তু নিয়মটা তো পরিবর্তনশীল নয়। পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মে জড় জগত প্রথমে সৃষ্ট হল। অনেক পরে প্রাণের আবির্ভব ঘটল। কিন্তু দুটোর মূলেই সেই একই পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো। অথচ প্রাণের সাথে জড়ের তফাৎ কত বিরাট মনে হয়, যার কারণে একটা প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্ট মানতে কষ্ট হয় না, কিন্তু অন্যটা হয়। আবার প্রাণের অভিব্যক্তিও কত পরিবর্তনশীল। সেরকম নৈতিকতার বিধানসমূহের প্রকাশ বা অভিব্যক্তিও পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনটা প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভুত কোন ব্যাপার নয়, বরং প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেই।
আরেকটা “সংজ্ঞা” হল পরম নৈতিকতা এমন কোন নৈতিক বিধান সমূহ যা প্রকৃতির জানা নিয়মে প্রচ্ছন্ন নেই, তাই প্রকৃতির নিয়মে মানুষের মস্তিস্কে সৃষ্ট নয়, কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক সেই বিধান সমূহকেই (যা আছে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে) গড়ভাবে অনুসরণ করে। এটা অনেকটা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম আবিষ্কারের আগে গ্রহসমূহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাকারে ঘোরে কোন এক বিধি (যদিও বিধিটা তখন জানা নেই) মেনে চলার কারনে, এটা বিশ্বাস করার মত। এখন আসি “পরম নৈতিকতা” র এই সংজ্ঞা অনুযায়ী “পরম নৈতিকতা” র অস্তিত্বে বিশ্বাসের ভাবার্থ বা লক্ষণ (Implication). যেহেতু এই নৈতিক বিধানের উৎস কোন জানা প্রাকৃতিক নিয়ম (পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র) নয় তাই এর উৎস অতিপ্রাকৃত (Supernatural). তাই এই পরম নৈতিকতায় বিশ্বাস করা অনিবার্য্যভাবে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করারই সামিল। এবং বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের স্বতঃসিধের সাথে এই সংজ্ঞার পরম নৈতিকতার অস্তিত্বে বিশ্বাস সাঙ্ঘর্ষিক। কারণ বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের এক স্বতঃসিদ্ধই হল মানুষের সব আচরণ বা অনুভূতি বিবর্তন বা প্রাকৃতিক নিয়মে উদ্ভূত।
এ পর্যন্তই থাক। দেখা যাক বিতর্ক কোথায় গড়ায়।
@অপার্থিব,
অাপনি ঠিকই ধরেছেন। নৈতিকতা বলতে কি বুঝাচ্ছি, সেটা অাগে পরিষ্কার করা দরকার। অাপনার সংজ্ঞা দেখে মনে হচ্ছে অাপনি নৈতিকতা বলতে মানুষ গড়ভাবে যা অনুসরণ করে তেমন কিছু বুঝিয়েছেন। প্রথম সংজ্ঞায় সেটার নিয়ামক ভৌত, পরেরটায় অাধিভৌত।
অামি নৈতিকতাকে অনেকটা প্রচলিত অর্থে বুঝিয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অর্থে অামরা বুঝি – যা কিছু অামাদের প্রতিটি অথবা অন্তত কিছু কর্মের উপর পরমভাবে ভাল মন্দ অারোপ করতে পারে। যেমন ‘দান করা ভালো কাজ’। এই অর্থ নিলে অাপনার প্রথম সংজ্ঞাটি মেশে না। কারণ ওটা সবকিছুকেই বলবে নৈতিক, কারণ সবকিছুই প্রকৃতির নিয়মানুসারে ঘটছে।
এমন কোন (অনৈশ্বরিক) মানদণ্ড কি প্রকৃতিতে বিদ্যমান যা মানুষের কর্মের ভালো মন্দ বলে দিতে পারে?
(স্বাধীনভাই, অালোচনা তো হয়েই যাচ্ছে 🙂 )
(প্রভাতে লেখা। এখন ভেঙ্গেছে কি?)
@ধ্রুব,
ভাল মন্দের ধারণাটাতো নৈতিকতার অবিচ্ছেদ্য অংগ। যখন বলা হয় নৈতিকতার নিয়ামক ভৌত,তার মানে কোনটা ভাল বা কোনটা মন্দ, মস্তিষ্কে এই ধারণার সৃষ্টি হয় ভৌত নিয়মের কারণে। মানুষ গড়ভাবে সেটাই অনুসরণ করে যেটা তার মস্তিষ্কে ভাল বলে অনুভূত হয়। স্পষ্ট করে না বল্লেও এটা প্রচ্ছন্ন যে নৈতিকতা বলতে ভাল বা মন্দের ধারণাকেই বোঝায়, যে ধারণার পরিণতিতে মানুষ নৈতিক বিধান বা আচরণবিধি (Code of Conduct) তৈরী করে এবং তা অনুসরণ করে গড়ভাবে। কাজেই আপনার প্রশ্নঃ
এর উত্তরে আবারও ঘুরে ফিরে সেই একই কথাই বলতে হয় যে হ্যাঁ আছে, বিবর্তনের সুত্র (বা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র)। বিবর্তনের কারণেই মানুষের মস্তিষ্কে ভাল মন্দের ধারণার সৃষ্টি হয় যার ভিত্তিতে নৈতিকতার বিধান সমূহ বাস্তব রূপ নেয়। আর বিবর্তনের দৃষ্টিতে ভাল বলতে যা উদ্বর্তনের সহায়ক তাই বোঝায়। গড়ভাবে মানুষের মনে যেটা ভাল বলে স্বীকৃত হয়, সেটা বিবর্তনের দৃষ্টিতে সহায়ক বা স্থিতিশীল। এখানে মানুষকে বিবর্তনের এক উৎপাদ্য হিসেবেই দেখতে হবে, আলাদা কোন বিশেষ সত্বা হিসেবে নয়। বিবর্তন মানুষের দ্বারা তারই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। এটাই Selfish Gene এর মূল কথা। বংশাণু রক্ষা ও বিস্তারের জন্য বংশাণুগুলি পরস্পরের সাথে জোট বেধে বংশাণু যন্ত্র (Gene Machine) তৈরী করে, মানুষ বা যে কোন প্রাণী বংশাণু যন্ত্রএর উদাহরণ। আলোচনা চলুক।
দ্রঃ প্রভাতে ফন্টের অনেক উন্নতি হয়েছে।
@অপার্থিব,
কিন্তু সেটা পরম নয়। পরিবর্তনশীল। সতীদাহ প্রথার ব্যাপারে এককালে গড়ভাবে মানুষ এক সিদ্ধান্ত নিবে, অন্যকালে অন্য। অামার বক্তব্য ছিল পরম নৈতিকতা নিয়ে।
অথবা অাপনি একটা উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারেন অাপনার প্রস্তাবিত, বিবর্তনপ্রণোদিত নৈতিকতা কোন কর্মকে মন্দ বলতে পারে কিনা।
নৈতিকতার মধ্যে পালন করার বাধ্যবাধকতাও অাছে। মানে মানদণ্ড যদি কিছুকে ভালো বলে তো বলা চলে সে কাজ করা উচিত। অাবার খারাপ বলে তো বলা চলে ওটা করা উচিত নয়।
অাপনার উল্লিখিত মানদণ্ডে কি এরকম কিছু দেখানো সম্ভব?
@ধ্রুব,
দুটো পয়েন্ট। গড় বলতে গোটা মানব সমাজের গড় বুঝিয়েছিলাম। সতীদাহ গোটা মানব সমাজের জন্য গড় নৈতিকতা ছিল না। এটা একটা স্থানীয় বিচ্যুতি (Local fluctuation) বলা যেতে পারে। এ জন্যই এটা গোটা মানব প্রজাতির জন্য গড় হতে পারে নি। মানে সতীদাহ বিবর্তন জনিত নৈতিকতার গড়ের সাথে বিরোধাত্মক। দ্বিতীয় পয়েন্ট হল পরম বনাম পরিবর্তনশীলতা। আমি আগের মন্তব্যে এটাই বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম যে নৈতিকতার উৎস যে প্রাকৃতিক নিয়ম সেটা(অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মটা) অপরিবর্তনীয়, কিন্তু নৈতিকতার প্রকাশ পরিবর্তনশীল হতে পারে। কিন্তু সব সময়েই প্রকাশের সেই পরিবর্তনশীল রূপটা অপরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক নিয়মের দ্বারাই চালিত হচ্ছে। সেখানেই তার পরমত্ব। পরম মানে যা প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত (আমার দেয়া প্রথম বা অনৈশ্বরিক সংজ্ঞা অনুযায়ী)।
Thou shalt not kill। এটা তো খুবই মৌলিক। অনেক মন্দের ধারণাই তো বিবর্তন জনিত মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আমার সন্দেহ হচ্ছে আমরা দুই সমান্তরাল রেখা দিয়ে যাচ্ছি।
মানুষ যখন তার নৈতিকতার সহজাত ধারণাকে ভিত্তি করে নৈতিক আচরনমলা সৃষ্টি করে সেখানে তো বাধ্যবাধকতা বা শাস্তির বিধান তো থাকেই। পুলিস, আদালত আছে কেন?
@অপার্থিব,
নৈতিকতার প্রচলিত অর্থের সাথে গড়ের ব্যাপারটা মেলাতে পারছি না। প্রচলিত অর্থে নৈতিকতা মানুষের কর্মের ভালোমন্দের একটা মানদণ্ড, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেটা না মেনেই চলতে পারে বিনা ক্ষতিতে। নৈতিকতা মানে যেটা করা উচিত, কিন্তু হয়তো অধিকাংশই করে না।
কিন্তু অাপনি সংজ্ঞায়িত করছেন ভিন্নভাবে। অাপনার সংজ্ঞানুসারে, যেটা মানুষ গড়ভাবে করে, সেটা নৈতিকতা। মানে গড়ই ভালো। এর পিছনের বক্তব্য হচ্ছে, বিবর্তন ভালো, বা প্রকৃতি যা করছে সেটাই ভালোর মানদণ্ড। এই যুক্তির মাঝে কিন্তু প্রকৃতিবাদীর হেত্বাভাস অার প্রচলিত বনাম যথার্থের জটিলতা উঁকি দিচ্ছে।
@ধ্রুব,
মানতে পারছি না। অধিকাংশ মানুষই মেনে চলে প্রচলিত নৈতিকতা। গড়টাই তো প্রচলিত। প্রচলিত নৈতিকতাটাই তো আইন হিসেবে রূপ লাভ করে, যা বেশির ভাগ লোক মেনে চলে। তা না হলে সমাজে অরাজকতা নেমে আসত।
প্রকৃতিতে যা কিছুই ঘটে সেটাই ভাল তা তো বলা হচ্ছে না। প্রকৃতিতে গড়ের বাইরে কিছু বিচ্যুতি ঘটে (যেমন ধর্ষণ, প্রচলিত নৈতিকতাবিরধী মানুষ খুন ইত্যাদি) সেগুলিকে তে ভাল বলা হচ্ছে না। মানুষের মনে ভাল বা মন্দের গড় ধারণা বিবর্তজনিত, সেটাই বলা হচ্ছে বারবার। আর এখানে “আমি” গৌণ। এখানে মানব প্রজাতির গড় নৈতিক চেতনার উদ্ভব নিয়ে আলাপ হচ্ছে। প্রকৃতিবাদীর হেত্বাভাস হল যখন একজন মানুষ যুক্তি দেয় যে প্রকৃতিতে “ক” ঘটতে দেখা যায় সেহেতু “ক” ভাল (“ক” হতে পারে ধর্ষণ, খুন, যা কিছুই প্রকৃতিতে ঘটতে দেখা যায়, বিচ্যুতি হিসেবে হলেও) । আমি তা করিনি। গড়ের মধ্যে বিচ্যুতি অন্তর্ভুক্ত নয়। আমি চেষ্টা করছি (যা সকল বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা করেন) মানুষের গড় নৈতিক চেতনাবোধ কে বিবর্তনের সৃষ্টি হিসেবে দেখার। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা যে কারণে প্রকৃতিবাদীর হেত্বাভাস এর ভুগছেননা আমিও সে কারণে এই হেত্বাভাসে ভুগছি না।
@অপার্থিব,
এখানে একটা ব্যাপার মনে হয় অাপনাকে পরিষ্কার করতে পারি নি। মানুষের বিদ্যমান গড় নৈতিকতাবোধ বিবর্তনজনিত ঠিক অাছে। কিন্তু মানুষের মাঝে কি বিদ্যমান, সেটা নিয়ে তো অামি চিন্তিত নই। অামি চিন্তিত, কোনটা হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে। মানে অামার অালোচনায় সম্ভাবনা রাখছি, যেটা প্রকৃতি প্রদত্ত গড়ভাব, সেটাই উচিত নাও হতে পারে। এটাই হল “ইজ-ওট প্রবলেম”। অামরা সমান্তারাল পথে হাঁটছি কি না,এটা নিশ্চিত করার জন্য উত্তর জানানঃ কি হচ্ছে অার কি হওয়া উচিতের মধ্যে কোনটা নিয়ে অাপনি বলছেন? বিষয়টা যেহেতু অামার উত্থাপিত, অামার এখন দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা যে অাপনি অামার অালোচ্য বিষয় (ঔচিত্য) নিয়ে অালোচনা করছেন, ভিন্ন কিছু নিয়ে নয়।
অাপনি যদি ঔচিত্য প্রসঙ্গে উপরের সমস্ত কথা না বলে থাকেন, তবে অামরা শুরু থেকে শুরু করতে পারি অথবা অামার প্রবন্ধের জন্য অপেক্ষা করতে পারি। কোনটাতেই অামার অাপত্তি নেই।
অার অাপনি যদি প্রকৃতিপ্রদত্ত গড়টাকেই ঔচিত্যের মাপকাঠি বলতে চান, তার মানে দাঁড়াচ্ছে, অাপনার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রকৃতিপ্রদত্ত গড় যেটা সেটাই ভালো। অামি এটা বলছি না যে প্রকৃতিতে যেকোন বিচ্যুতি “ক” ঘটতে দেখা গেলেই “ক” ভাল সেটা অাপনি বলছেন। অামি বলছি যে অাপনার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রকৃতিতে (গোটা মানব সমাজের উপর) একটা গড় ভাব “ক” হলে “ক” ভাল। ঠিক বললাম? নিশ্চিত করুন প্লিজ। অাপনি যদি তাই মিন করে থাকেন, তবে এটাকেও প্রকৃতিবাদী হেত্বাভাস বলে। প্রকৃতিবাদী হেত্বাভাস বলতে এটা বোঝায় না যে বিচ্যুতিটাই শুধু হেত্বাভাস হয়, গড়টা হয় না। প্রকৃতিতে ঘটা যেকোন কিছু-(গড়, সার্বজনীন, ধ্রুবক)-কে ভাল-মন্দ (ঔচিত্য) দাবী করাটাই প্রকৃতিবাদী হেত্বাভাস।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা প্রকৃতিবাদীর হেত্বাভাস করেন না কারণ ওনারা প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে কি অাছে (is) সেটা ডিরাইভ করেন, কি হওয়া উচিত (ought), কোনটা ভাল-মন্দ, সেই জাজমেন্ট দেন না। মানে মানুষের বিদ্যমান নৈতিকতার ঝোঁককে বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু সেই নৈতিকতাই অবশ্য পালনীয়, এমন বের করেন না। যেমন ধরেন, ওনারা বের করলেন, গড়ে মানুষ খুন করা বিবর্তনের অালোকে অানফিটিং একটা কাজ, ফলে একারণেই হয়তো মানুষের উদ্ভুত নৈতিকতাবোধে খুন না করা অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু জাজমেন্ট দেন না যে: অতএব, মানুষ খুন করা সার্বজনীনভাবে একটি অনুচিত কাজ, বা মানুষ খুন প্রকৃতই অনুচিত।
অারেকটি উদাহরণ হতে পারে, ঈশ্বরে বিশ্বাস। অধিকাংশ মানুষ এটাতে বিশ্বাস করে দেখে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী ধরুন বের করলেন যে এর পিছনে ফিটনেসের অ্যাডভান্টেজ থাকতে পারে। কিন্তু ওনারা কিংবা অাপনিও বলবেন না যে: অতএব, ঈশ্বরে বিশ্বাস করাই উচিত।
@ধ্রুব,
আমি তো ধরে নিয়েছিলাম যে কি হওয়া উচিত বা উচিত নয় সেই বিচারটাই তো নৈতিকতা। আর এই উচিত/অনুচিত বিচারবোধটাই বিবর্তনের কারসাজি বলে আমি মনে করে আসছি (বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের আলোকে)। ইজ টা তো নৈতিকতা নয়, অট টাই নৈতিকতা। আর কোনটা উচিত সেই বিচার তো মানুষই করবে। না কি বিচার করার অন্য কোন সত্বা আছে? মানুষের বিচার টা তো বিবর্তনের সৃষ্টি। মানুষ কার সৃষ্টি, বিবর্তনের না কি অন্য কোন সত্বার? বিবর্তনের সৃষ্টি হলে মানুষের নৈতিক বিচারবোধ চূড়ান্ত বিচারে বিবর্তন সৃষ্ট নয় কি? তাহলে আলাদা করে কোনটা উচিত বা অনুচিত এই প্রশ্ন উঠছে কেন? তার মানে কি আপনি ধরে নিচ্ছেন যে বিবর্তনের দ্বারা মানুষের মস্তিষ্কে প্রোথিত গড় নৈতিকচেতনা (উচিত।অনুচিত বিচার) ছাড়া স্বতন্ত্র কোন নৈতিকচেতনার উৎস আছে বা থাকতে পারে? (ইশ্বর বাদই দিলাম)।
এই মন্তব্যেই সমস্যাটা পরিষ্কার হল। অবশ্যই না। গড় ভাব “ক” টাই তো হল ভাল বা মন্দের (বিবর্তন জনিত) । গড় বলতে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে যা সত্য সেটাই বোঝাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ যদি বিবর্তনজাত প্রবৃত্তির কারণে মনে করে যে “ক” কাজটি উচিত/অনুচিত তাহলে আবার আলাদা করে কাউকে ঘোষণা দিতে হবে কেন যেহেতু “ক” কাজটি অধিকআংশ মানুষ উচিত/অনুচিত
বলে মনে করে সেহেতু ‘ক’ কাজটি উচিত/অনুচিত। এটা তো দ্বিরুক্তি বা টটলজি হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, উচিত অনুচিত বিচার বোধটা তো প্রবৃত্তিগতভাবে আসে বিবর্তনের কারণে, “যেহেতু/সেহেতু” সেখানে প্রযোজ্য হয় কিভাবে? উচিত বা অনুচিত একজন মানুষ কি অধিকাংশ মানুষের মনে কোনটা উচিত বা উচিত বলে অনুভূত হয় সেই পোল ব পরিসঙ্খ্যান নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা দেয় যে আসলেই তা উচিত বা অনুচিত?
@অপার্থিব,
বটেই। এটা বিবর্তনের একটা চতুর সৃষ্টি। পরম কিছু নয় বটে!
অামার মনে হয় এখনো চিন্তার সমান্তরাল পথের সুযোগ রয়ে গেছে। অাসুন অাবার প্রশ্ন-উত্তরে যাই। অামি যদি অাপনার চিন্তাগুলো অনুমান করতে না পারি, এই অালোচনা অামার কাছে বোধগম্য রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তো, বিবর্তন তার প্রয়োজনে একই বিষয়ে দুটি ভিন্নকালে দুটি ভিন্ন ধরনের (এমনকি বিপরীত) নৈতিকতা তৈরি করতে পারে। এটা মানেন?
অধিকাংশ মানুষের নৈতিকতাবোধে ঈশ্বরে বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত। অামি যদি বলি, অতএব ঈশ্বরে বিশ্বাসটাই উচিত, অাপনার মতে সেটা দ্বিরুক্তি হয়ে গেল? ঠিক ধরলাম?
অাপাতত প্রশ্ন এই দুটোই থাক। কারণ চিন্তা ধীরে ধীরে সমান্তরাল থেকে ডাইভারজিং হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
@ধ্রুব,
বিবর্তনজনিত নৈতিক বিধানের রূপায়ন পরিবর্তনশীল সেটা তো বহুবার বলেছি। পরিবর্তনশীল কথাটা যদিও বিপরীতকেও অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু তার বাস্তব উদাহরণ আমার কাছে মনে হয় নেই। এটা একটা চরম বিচ্যুতি হবে। নৈতিকতাকে প্রথা থেকে আলাদা করে দেখতে হবে। নৈতিকতার চেতনা বিবর্তনীয় প্রবৃত্তি থেকে উদ্ভূত। প্রথাগুলি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে আসে। যা শেখান। প্রবৃত্তিজাত নয়। বিশ্বাসের জন্য কোন কাজ করার ইচ্ছাকে বা তাড়নাকে নৈতিকচেতনা বলতে পারি না। নৈতিক চেতনা স্রেফ প্রবৃত্তিগত (Instinct)। মনের মধ্যে কোনটা করা উচিত বা উচিত না এই ভাবের উদ্ভব হওয়া। এটা একজন আরেকজনকে শেখায় না। প্রথা অনুসরণ করাটা একটা শেখান ব্যাপার। এর পেছনে বিবর্তনজনিত নৈতিকপ্রবৃত্তি কাজ করে না। নৈতিকতাকে অবশ্যই মানব গোষ্ঠির গরিষ্ঠদের প্রতিনিধিত্বমূলক হতে হবে। কিছু কিছু প্রথা বা কাস্টম চালু থাকতে পারে সমাজের একটা সাবসেটের জন্য। সতীদাহ তেমন একটা প্রথা। আমি সেটাকে নৈতিকতা মানতে রাজী নই। নৈতিকতা বলতে জীবন যাপনের একটা সার্বিক আচরণবিধি বুঝি। এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত না ইত্যাদি যা সমাজের সব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় গড়ভাবে মানবে। সমাজের কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন প্রথা সেই সাধারণ আচরণবিধির কোন ক্লজ বা অংশ নয়। কাজেই সেটাকে নৈতিকতা বলা ঠিক হবে না। মানব প্রজাতি বাদই দিলাম সতীদাহ ভারতের সব হিন্দুদের (বর্ণ বা অঞ্চল ভিত্তিতে) মধ্যে কি চালু ছিল বা সেটা মেনে চলায় বাধ্যবাধকতা ছিল? (নৈতিক বিধানে যেটা থাকে)।
আমার কথার সঙ্গে আপনার উপরের মন্তব্যের তফাৎটা লক্ষ্য করুন। আমার উক্তি ছিল(নীচে ইটালিকেঃ)
অধিকাংশ মানুষ যদি বিবর্তনজাত প্রবৃত্তির কারণে মনে করে যে “ক” কাজটি উচিত/অনুচিত তাহলে আবার আলাদা করে কাউকে ঘোষণা দিতে হবে কেন যেহেতু “ক” কাজটি অধিকআংশ মানুষ উচিত/অনুচিত
বলে মনে করে সেহেতু ‘ক’ কাজটি উচিত/অনুচিত। এটা তো দ্বিরুক্তি বা টটলজি হয়ে গেল
আমার উক্তিতে মানুষের মনে কোন কাজ উচিত বা অনুচিত তার বিবর্তনজনিত বিচারবোধের কথা বলা হয়েছে। মনের মধ্যে যদি কারো ‘ক’ কাজটি করা (অন)উচিত বলে মনে হয় তাহলে সেটাকে সে (অন)উচিত মনে করে বলাটা (সেই মানুষের জন্য) তো দ্বিরুক্তিই হল। কারও মনের উচিত/অনুচিত এর বিচারবোধ তো অন্যের জন্য উচিত অনুচিতের বিচারবোধ কারণ হতে পারে না। যে যার নিজের মনের বিচারবোধটাকেই তো তার জন্য উচিত/অনুচিত বলবে। ‘ক’ এর মনে যে কাজটা উচিত বলে মনে হয় সেটা ‘খ’ কেন তার বা সবার জন্য উচিত বলতে যাবে? অবশ্য যখন কোন ব্যাপারে (বা কর্মে) অধিকাংশ মানুষের নৈতিক বিচারবোধ অভিন্ন হয় তখনই তা সামাজিক/রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার মর্যাদায় উন্নীত হয় একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। একজনের সিদ্ধান্তে নয়।
আর আপনার উক্তিতে বিশ্বাসের কথা (যেটা নৈতিকচেতনা থেকে ভিন্ন) বলেছেন। তবুও এটা এখানেও বলা যায় যে ‘ক’ (বা ‘ক’, ‘গ’, ‘ঘ’…) যদি ইশ্বরে বিশ্বাস করে তা হলে ‘খ’ কেন বলবে যে ইশ্বরে বিশ্বাস করা ঠিক?। ‘খ’ তার নিজের বিশ্বাসকেই (সেটা ইশ্বরে বিশ্বাস হোক বা অবিশ্বাসই হোক) ঠিক বলবে এটাই তো স্বাভাবিক।
সমস্যাটা হল আপনি সবসময় আমাকে (অপার্থিবকে) বিচারকের আসনে বসিয়ে দিয়ে সেই ভ্যান্টেজ পয়েন্ট থেকে সব আলাপ বিতর্ক করছেন। আমাই কখনই আমার নিজের মনের উচিত/অনুচিতের বোধটা এখানে কোথায় ও ব্যক্ত করিনি। করাটা অপ্রাসঙ্গিক। আমি শুধু বিবর্তনের সাথে মানুষের গড় নৈতিকবিচারবোধের একটা কার্য কারণ সম্পর্কের কথা বলে যাচ্ছি। আমি যখন বলি যে অধিকাংশ মানুষ গড়ে কোনটা উচিত বা অনুচিত বলে মনে করে সেটা বিবর্তন নির্ধারণ করে দেয় তখন কি এটাই ধরে নেয়া হবে যে “বিবর্তন নির্ধারণ করে দেয়” বলাটা বক্তার (এক্ষেত্রে আমার) নিজস্ব উচিত/অনুচিতের বিচার? আমার উচিত/অনিচিত তো আমার নিজের প্রবৃত্তিগত, নিজের কনের ভেতর। আমি আর বিবর্তন কি একই সত্ত্বা? আমার নিজস্ব বিচারবোধ তো বিবর্তনের গড়ের বাইরেও হতে পারে। নয় কি? আমি কিন্তু বিবর্তনী মনোবিজ্ঞানীদের থেকে আলাদা করে নিজের কোন মত দেই নি যা আমার নিজের বিচারবোধকে প্রকাশ্যে হাজির করে। বাক্যের সঠিক অর্থারোপন (Construction) খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বিতর্কমূলক আলোচনায়।
@অপার্থিব,
ঠিক বলেছেন, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে হলে ‘নৈতিকতা’ (এই শব্দটাতেই আমার আপত্তি আছে, কিন্তু সেটা আরেক আলোচনা) এবং প্রথার মধ্যে পার্থক্য বোঝাটা অপরিহার্য। যেমন ধরুন, কম বেশী সব ধরণের সমাজব্যবস্থায়ই স্বার্থপরতা এবং পরার্থিপরতার মত সামগ্রিক ‘নৈতিক চেতনা’র ( বা অনৈতিক) অস্তিত্ব দেখা যায় এবং আমাদের মধ্যে প্রবৃত্তিগত বা প্রকৃতিগতভাবেই সেটা রয়েছে। এতদিন বলা হয়েছে এই ধরণের নৈতিকতাগুলোকে বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যাবে না শুধুমাত্র ধর্ম বা অন্য কোন এ্যবস্ট্রাক্ট নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমেই এগুলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, নাহ, বিবর্তনীয়ভাবেই এগুলোকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে। কিন্তু এখানে মনে রাখা দরকার যে, বিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এই নৈতিক চেতনাগুলোর সামগ্রিক উৎপত্তি বা বিকাশের মূল ট্রেন্ডটাকে ব্যাখ্যা করছি। কিন্তু এগুলোকে প্রয়োগ করার জন্য কোন সমাজ কোন পরিস্থিতিতে কি প্রথার উদ্ভব ঘটিয়েছে ( যেখানে কোন বিশেষ প্রথা বা আচরণগুলোর প্রয়োগ ‘উচিত’ কি ‘অনুচিত’ এর প্রশ্ন আসে) সেটা মনে হয় বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বিবেচ্য বিষয় নয়। সেটাকে ব্যাখ্যা করতে হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে বসতে হবে। কিন্তু এই প্রথাগুলোর পিছনে যে প্রবৃত্তিগতভাবে উদ্ভূত ওভার আর্চিং ‘নৈতিক চেতনা’গুলো কাজ করে তার উৎপত্তিগুলো ঘটেছে বিবর্তনের পথ ধরেই। পরার্থিপরতার জন্য ‘ঈশ্বরীয়’ কোন গুণাবলীর দরকার নেই,বা স্বার্থপরতার জন্য সাপের সাথে বন্ধুত্ব করা কোন আব্রহামিক শয়তানেরও অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই। আমাদের টিকে থাকার জন্যই এসের প্রয়োজন হয়েছে বলেই এই প্রবৃত্তিগুলোর উৎপত্তি ঘটেছে।
ধ্রুব যেমন প্রশ্ন করেছেন
‘বিবর্তন তার প্রয়োজনে একই বিষয়ে দুটি ভিন্নকালে দুটি ভিন্ন ধরনের (এমনকি বিপরীত) নৈতিকতা তৈরি করতে পারে। এটা মানেন?’ –
এখানে ওনার বেশ কিছু ভ্যারিয়েবল বিশ্লেষণ করতে হবে। স্বার্থপরতা এবং পরার্থিপরতার উদাহরণেই যদি ফেরত যাই, কোন এক বিশেষ অবস্থায় কোন সমাজে টিকে থাকার স্বার্থে বিশেষ কোন স্বার্থপর প্রথার বিকাশ ঘটাতে পারে, যা পরবর্তীতে আবার আমাদের কাছে ‘অনুচিত’ বা এক্সট্রিম বা ‘অমানবিক’ স্বার্থর্পরতা বলে বর্জনীয় হয়ে যেতে পারে। একই কথা প্রযোজ্য পরার্থিপরতার বিভিন্ন প্রথার ক্ষেত্রেও। আপাতদৃষ্টিতে কোন এক বিশেষ সময় বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এদেরকে বিপরীত বলে মনে হলেও এরা কিন্তু ওভারঅল বিবর্তনীয় প্রবৃত্তির আওতায়ই পড়ছে। আমার কাছে মনে হয় এখানেই আমাদের সমাজের তথাকথিত ‘উচিত’ বা ‘অনুচিত’ টাইপের সেন্সের এর সাথে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান এখানে বলতে আসে না কি করা উচিত হয়েছে বা উচিত হয়নি, বরং সে ব্যাখ্যা করে কোন ‘গড়’ বিবর্তনীয় ট্রেন্ডের কারণে কোন সমাজে কোন বিশেষ প্রথাটার উদ্ভব ঘটেছিল এবং কেন বিবর্তনীয় কারণেই এই গড় প্রবৃত্তিগুলোর উৎপত্তি ঘটেছিল। কিন্তু এখন আমরা কি এমন কোন সমাজ দেখি যেখানে শুধু স্বার্থপরতাই আছে, কোন পরার্থিপরতার নামগন্ধও নেই? এমন কোন প্রথার যদি আস্তিত্ব পাওয়া যায় যেটা বিবর্তনীয়ভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, তখন সেটার পিছনের বেসিক ট্রেন্ড বা প্রবৃত্তি বোঝার জন্য আবার ড্রয়িং বোর্ডে ফিরে যেতে হবে বৈ কি।
@অপার্থিব,
অামিও কিন্তু অাপনার নিজস্ব বিচার জানতে চাই নি একবারের জন্যও। প্রতিবার অামি জানতে চাইছি বিবর্তনীয় সংজ্ঞাটার ব্যাপারে অাপনার ভাষ্য। বিবর্তন কি বলে, সেটা অাপনি কেমন দাবী করছেন, সেটা অাপনার মুখ থেকে শুনে বুঝতে চেষ্টা করছি। কারণ অাপনার ব্যাখ্যা অামি ধরতে পারছি না।
মানুষের নৈতিকতাবোধ, উচিত-অনুচিতবোধ, এগুলো বিবর্তনজনিত। এখন এই যে উদ্ভুত বোধগুলি, এগুলোর অাদৌ কোন পরম সত্যমূল্য অাছে কিনা, অামি এই প্রশ্ন বের করার চেষ্টা করছি। অামার ধারণা অাপনি বলবেন, এই প্রশ্নটাই অবান্তর। অামার প্রতিপাদ্যও তাই। স্বাধীন ভাইও অামার এই পয়েন্টটা সহজেই ধরলেন
অামার অনাগত লেখাটার প্রথমাংশের বক্তব্য মূলত এটাই। অনেকের কাছে সেটা সহজে বোধগম্য না, সে কারণেই অামার লেখাটা অবতারণার ইচ্ছাটা ছিল।
বিবর্তন অবশ্যই এখানে সাহায্য করে বুঝতে যে যেহেতু এগুলো সবই ফিটনেসের নিমিত্তে তৈরি, অতএব এগুলোর সত্যাসত্য থাকাটা অবান্তর। এটা একটা দিক গেল।
দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে, মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সামাজিকভাবে কোন পরম নৈতিকতা তৈরি করতে পারে কিনা। এখানটায় অাপনার সাথে অামার নৈতিকতার স্কোপ ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। অাপনার কাছে নৈতিকতা হল ইন্সটিংক্টের ব্যাপার। অামার কাছে সামাজিক প্রথা সামাজিক নৈতিকতার নামান্তর, যদি এর সাথে ভালো খারাপ নির্ধারণের সম্পর্ক থাকে। যেমন বিধবার স্বামীর সাথে চিতায় যাওয়া উচিত না অনুচিত, ভালো না খারাপ, এ ব্যাপারে সতীদাহ প্রথার নিজস্ব উত্তর অাছে। ফলে এটা নৈতিকতা। অামি অাগেও বলেছি, নৈতিকতা হল যেটা যেকোন কর্মের উপর ভালো মন্দ অারোপ করে। অর্থাৎ এটাকে একটি ফাংশান হিসেবে কল্পনা করা যায়। এবং এরকম সম্ভাব্য অজস্র ফাংশান থাকতে পারে। যেকোন কর্মকে তার কনটেক্সট সহকারে এরকম একটি ক্যান্ডিডেট ফাংশানকে দিলে সে ভাল বা মন্দ উত্তর করবে। যেমন ইসলামী নৈতিকতা। মানুষের বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের উপর সে ভাল মন্দ মূল্য প্রদান করতে পারে। মূল খুঁজতে গেলে বিবর্তনই এর পিছনের উৎস সন্দেহ নেই।
এখন অামি নৈতিকতার যে সংজ্ঞা দিলাম, সে অনুযায়ী অগুণিত নতুন ক্যান্ডিডেট নৈতিক স্ট্রাকচার তৈরি করা যায়। যেমন, একটা এই মুহূর্তে বানাচ্ছি, ইন্্ভার্টেড-ইস্লামিক নৈতিকতা, যেটা ইস্লামিক নৈতিকতা ফাংশানটির অাউটপুটের ঠিক উল্টোটা সবসময় উত্তর করে। ইস্লামিক নৈতিকতা যদি বলে গর্ভপাত খারাপ, ইন্্ভার্টেড-ইস্লামিক নৈতিকতা বলবে গর্ভপাত ভাল, ইস্লামিক নৈতিকতা যদি বলে দান করা ভালো, ইন্্ভার্টেড-ইস্লামিক নৈতিকতা বলবে দান করা খারাপ। এটা একটা ক্যান্ডিডেট নৈতিকতা। এরকম সকল ক্যান্ডিডেট নৈতিকতার একটা সেট অাছে। পৃথিবীতে বিরাজমান, বিবর্তন দ্বারা উদ্ভূত সকল নৈতিকতাবোধ এই সেটের সদস্য। অাবার অজস্র কৃত্রিম ক্যান্ডিডেট নৈতিকতাও এই সেটের সদস্য, যেগুলো বিবর্র্তন দ্বারা উদ্ভূত নয়, এমন কি মানুষের মাঝে বিরাজও করে না।
এবার অামি নৈতিকতা বলতে কি বুঝাচ্ছি সেটার একটা এক্সপ্লিসিট গাণিতিক সংজ্ঞা দিয়ে দিলাম। অামার অালোচনা নৈতিকতার এই অর্থ নিয়েই।
অামার প্রশ্ন হচ্ছে, নৈতিকতার এই সেটে এমন কোনটা (বিদ্যমান কিংবা তৈরিকৃত) কি অাছে, যেটা মানুষ স্থান কাল নির্বিশেষে গ্রহণ করতে পারে? অামার লেখায় এই প্রশ্নের উত্তর করারই চেষ্টা করবো।
@অপার্থিব,
ধ্রুব-র মত গড়ের ব্যাপারটা আমিও মেলাতে পারছি না। মানুষের ব্যবহারের একটা “গড়” থাকবেই, তার কারণ বিবর্তনই হোক আর ঈশ্বরের আদেশই হোক। সেটা যদি পরম নৈতিকতার সংজ্ঞা হয় তাহলে ব্যাখ্যা নিরপেক্ষভাবেই বলা যায় যে তার অস্তিত্ব রয়েছে। সাধারণভাবে নৈতিকতার সংজ্ঞা সেটা নয় বলেই মনে হয়।
@রৌরব,
@রৌরব,
সাধারণভাবে নৈতিকতার সংজ্ঞাটা কি? আর সেটা গড় নৈতিকতার থেকে কেন ভিন্ন সেটা বুঝিয়ে দিলে ভাল হয়
না সেটা পরম নৈতিকতার সংজ্ঞা নয়। আমি সংজ্ঞাটা দিয়েছিলাম মানুষের মস্তিষ্কে বিবর্তন জনিত সৃষ্ট ভাল মন্দের ধারণার গড় হিসেবে। সূক্ষ তফাৎ আছে। আপনি যেভাবে আমি সংজ্ঞায়িত করেছি বলে দাবী করছেন তাতে বিবর্তনের কোন ভূমিকা নেই। এভাবে বললে এটা নিছক একটা শব্দের উদ্ভাবন ছাড়া আর কিছু নয়। আমার সংজ্ঞায় বিবর্তনের ভূমিকাকে মুখ্য হিসেবে দেখে সেখান থেকে ধারণাটাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
@অপার্থিব,
এখান থেকে অামার ধারণা হচ্ছে যে অাপনি অাসলেই is নিয়ে বলছেন, ought নিয়ে নয়। তবুও অামার উপরের মন্তব্যে নিশ্চিত করুন।
@ধ্রুব, আমার মতে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বা বিবর্তন সামগ্রিকভাবে is নিয়েই কথা বলে, ought নিয়ে নয়। উপরে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি, কতটুকু সফল হয়েছি জানি না।
আপনি এবং রৌরব নীচে এক জায়গায় বলেছেন,
একটু কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি। অপ্টিমাম মানে তো আমি বুঝি, most desirable or favorable, নাকি ভুল বুঝলাম। আর কোন প্রজাতির জনপুঞ্জের বিবর্তন তো কোন বিশেষ পরিবেশ এবং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে টিকে থাকার জন্য ‘অপ্টিমাম’ বলেই তো মনে হয়। ‘অপ্টিমাম’ না হলে হয়তো তারা বিলুপ্তই হয়ে যেতে পারে। আর এই ‘অপ্টিমাম’ ব্যাপারতা খুবই আপেক্ষিক, পরিবেশ, পরিস্থিতি, মিউটেশন, জেনেটিক প্রকারণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তা অহরহ বদলায়, এখানে ‘পরম’ বলে কিছু নেই। আপনার যেভাবে বিবর্তন-নিরপেক্ষ ভাবেই “অমুক কাজটি নৈতিক কিনা” র প্রসংগ আনছেন তাতে করে মনে হচ্ছে এখানে আবার ought এর প্রশ্ন চলে আসছে, is নয়। সে হিসেবে তো বিবর্তনের আলোকে কোন কিছু ‘নৈতিক কিনা’র প্রশ্নটাই অবান্তর, it is what it is, right?
@বন্যা আহমেদ,
অাপনার উপরে করা কমেন্টের জবাব দেয়ার লিংক গায়েব হয়ে গেল কেন? কয়টা নেস্টেড কমেন্ট হতে পারে, তার লিমিট অাছে কি?
@বন্যা আহমেদ,
একই বিষয়ে দুটি ভিন্ন নৈতিকতা উদ্ভব যে “ওভারঅল বিবর্তনীয় প্রবৃত্তির আওতায়ই পড়ছে” এটা নিয়ে অামার কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু অামার প্রশ্ন ছিল এমন ঘটতে পারে কি পারে না। নির্ঘাত উত্তর পারে। অামি প্রশ্নটি করেছি, অামি পরম নৈতিকতা বলতে যে অর্থটি বুঝিয়েছি সেটা পরিষ্কার করার জন্য। অর্থাৎ পরম নৈতিকতা কালের সাথে পরিবর্তন হবে না।
@ধ্রুব,
কালের (অর্থাৎ সময়) সাথে বস্তুর সম্পর্ক রয়েছে। ‘নৈতিকতা’ মানব মনের অনেক ধারনার মতই একটা ধারনা মাত্র , কোন বস্তু , বল বা শক্তি নয়। তাই কালের সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক সন্ধান করা ঠিক হবে না। প্রকৃতি আপেক্ষিকতা মেনে চলে যেখানে কোন সার্বভৌম (অর্থাৎ প্রকৃতি নিরপেক্ষ) সত্বা বা শক্তির উপস্থিতি নেই। বিবর্তন এবং চরমভাবে বললে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মেই সকল জীব ও জড় পরিচালিত হচ্ছে এবং মানুষসহ সকল মস্তিষ্কযুক্ত বা মস্তিষ্কহীন প্রাণীর প্রবৃত্তি প্রাকৃতিক আইনের সাথে সম্পর্কিত।
@সংশপ্তক,
গর্র্ভপাত উচিত না অনুচিত, এই প্রশ্নের কি কোন কাল নিরপেক্ষ উত্তর বের করা সম্ভব?
সম্ভাব্য উত্তর:
ক) সম্ভব এবং উচিত
খ) সম্ভব এবং অনুচিত
গ) সম্ভব কিন্তু অামি নিজে এই প্রশ্নের উত্তর জানি না
ঘ) কাল নিরপেক্ষ উত্তর অসম্ভব, কিন্তু কাল নির্ভরশীলভাবে সম্ভব
ঙ) কাল নিরপেক্ষ বা অনিরপেক্ষ, কোনভাবেই এই উচিত অনুচিত প্রশ্নের উত্তর সম্ভব নয় (কারণ উচিত অনুচিতের কোন পরম অস্তিত্বই নেই বা প্রশ্নটা অবান্তর)
অামি কি মোটামুটি সকল সম্ভাব্য উত্তর লিস্টে রাখতে পারলাম? তাহলে অামার উদ্দেশ্য হচ্ছে সঠিক উত্তরটা বের করা। অাশা করি অামার অনুসন্ধানের বিষয়টা বুঝাতে পারলেম।
@বন্যা আহমেদ,
অামি কিন্তু অপার্থিবকে অনেকবার উপরে বলেছিই, অামার অালোচ্য হল ought। Is নয়। “সে হিসেবে বিবর্তনের আলোকে কোন কিছু ‘নৈতিক কিনা’র প্রশ্নটাই অবান্তর” তো বটেই। অামি কিন্তু বিবর্তনের অালোকে এ কারণে ব্যাপারটা নিয়ে অালোচনা করতে চাই নি। কিন্তু অপার্থিব একই সাথে কিভাবে ought নিয়ে অালাপ করছেন অাবার সাথে বিবর্তনের অালোকে করছেন, সেটা অামি বুঝতেই পারছি না, সর্বাত্মক চেষ্টা করছি বোঝার।
@বন্যা আহমেদ,
অাপনি যেমন বললেন, “‘অপ্টিমাম’ ব্যাপারতা খুবই আপেক্ষিক, পরিবেশ, পরিস্থিতি, মিউটেশন, জেনেটিক প্রকারণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তা অহরহ বদলায়, এখানে ‘পরম’ বলে কিছু নেই”, ব্যাপারটা অনেকটা সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। অপ্টিমাম কথাটা তুললে সাথে সাথে চলে অাসে – কিসের সাপেক্ষে? মানে একটা মেজার থাকতে হবে, which is being optimized.
এখন বিবর্তনও একটা মেজার অপ্টিমাইজ করছে, সেটা ঠিক। ওই মেজার অপ্টিমাইজ করার অারো ভিন্ন মেথড থাকতে পারে। এখন অপ্টিমাইজ করা অার অপ্টিমাল সল্যুশান দেয়া কিন্তু এক না। একটি অপ্টিমাইজেশান মেথড সাব-অপ্টিমাল সল্যুশান দিতে পারে।
এটা সাব-অপ্টিমালিটির একটা দিক। অারেকটা দিক হলো, বিবর্তন যদি অপ্টিমাল সল্যুশানও দেয়, সেটা একটা বিশেষ মেজারের সাপেক্ষে। এখানে একটা মোস্ট কমন মিস্টেক হল, ধারণা করা, বিবর্তনের প্রোডাক্ট অন্য মেজারের সাপেক্ষেও অপ্টিমাল। যেমন, রৌরব মেজারের উদাহরণ হিসেবে হাঁটার কথা বললেন। বিবর্তন নিশ্চয়ই হাঁটার অপ্টিমাল কংকাল বের করে না। অন্তত এটা তার প্রাইমারী গোল না। হাঁটাটা সাবগোল হিসেবে অাসতে পারে। কিন্তু বিবর্তন কি সেটার অপ্টিমাল সল্যুশান দেয়? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেকেই সরাসরি ভেবে বসেন, বিবর্তনের সবকিছুই সব মেজার সাপেক্ষে অপ্টিমাল। অামি এটার দিকে ইংগিত করেছি।
সাথে বিবর্তনের প্রভাব কমে অাসার সম্ভাব্যতা নিয়েও বিপ্লব ভাই ইন্টারেস্টিং কিছু কথা বলেছেন। কি ঘটে গেছে, সেটার ব্যাখ্যার জন্য বিবর্তনের দ্বারস্থ হওয়াটা যেমন একান্ত জরুরি, তেমনি কি অাগামীতে ঘটবে সেটার বোঝার জন্যে বিবর্তনের বাইরে এসেও চিন্তা করা দরকার। সাধারণ মানুষ বিবর্তন বোঝে না, বা বিশ্বাস করে না। তাদের এডুকেট করার দরকার অাছে। কিন্তু নিজেদের চিন্তার লেভেলে এসে অাবার সকল চিন্তায় কেবল বিবর্তনের গণ্ডিতে অাবদ্ধ থাকা মানে কিন্তু বিজ্ঞানের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া। বিবর্তনবাদীদের (মানে অামাদের) মাঝে এই কমন মিস্টেকগুলোর দিকে ইঙ্গিত করা প্রয়োজন।
@বন্যা আহমেদ,
দীর্ঘদিন টিকে থেকে যেহেতু অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অতএব “চিরকাল টিকে থাকা” এই ফাংশনের তুলনায় তাদের ক্ষেত্রে বিবর্তন সাব-অপটিমাল বইকি। এখন “চিরকাল টিকে থাকা” ফাংশনটিই ঠিক ফাংশন কিনা সে নিয়ে নিশ্চয়ই তর্ক চলতে পারে। কিন্তু আমার মূল কথাটি অনেকটা তাই। বিবর্তন যাই করুক না কেন, আমার পছন্দের ফাংশনটির অপটিমাল সমাধানকে যদি আমি “নৈতিক” বলি, তাহলে সেই অপটিমাল সমাধান কি, তা নিয়ে আলোচনা necessarily বিবর্তন নির্ভর নয়। যদি বলি “সর্বে সুখিন সন্তু” আমার উদ্দেশ্য, সেটাকে বাড়িয়ে তোলাই করা আমার নৈতিকতা, সেটার সমাধান বিবর্তনীয় অর্থে অপটিমাল নাও হতে পারে।
আমাদের নৈতিকতার ধারণা আমাদের চোখের গঠনের মতই বিবর্তনের ফসল, এটা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। আগেও বলেছি এটা। কিন্তু নৈতিকতার normative ও descriptive প্রশ্ন দুটি এক প্রশ্ন নয়, এটাই আমার মন্তব্য।
@ধ্রুব,
হেগেলের is-ought মন্তব্য সম্বন্ধে আপনার ভাবনা কি? আমার হেগেলের মন্তব্যটিকে অবান্তর মনে হয়।
@রৌরব,
অাপনার সাথে ভিউপয়েন্ট মিলে যাচ্ছে। অাপনি বিজ্ঞানের কোন ডিসিপ্লিনে পড়াশোনা করেছেন জানতে পারি কি? 🙂
@রৌরব,
হেগেল কি বলেছেন, একটু রেফারেন্স দেন। পড়ে দেখি।
@ধ্রুব,
দুচ্ছাই। হিউম লিখতে গিয়ে হেগেল লিখে ফেলেছি।
what ought to be cannot be derived form what is
আপনার অন্য প্রশ্নের উত্তর, সংক্ষেপে, গণিত।
@রৌরব,
what ought to be cannot be derived form what is
এই কথাটা ঠিক কোন জায়গায় বলেছেন খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এই কথাটা নিয়ে আমার ভাবনা বলি। এই ought যদি কোনো পরম বিষয়ে হয়, তবে সেই ought যেকোনো ভাবেই বের করা অবান্তর। অতএব, is থেকেও বের করা অবান্তর।
আর যদি, আপেক্ষিক ought হয়, মানে কোনো গিভেন গোলের সাপেক্ষে হয় এবং পর্যবেক্ষণ-সাধ্য হয় (যেমন দৌড়ে জিততে হলে দৌড়াতে হবে), সেক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ দ্বারা সেটা যাচাই করে এই ought বের করা সম্ভব, ফলে is এখানে রিলেভেন্ট।
নিচের প্যারাটি সাহায্য করতে পারে:
Many modern naturalistic philosophers see no impenetrable barrier in deriving “ought” from “is”, believing it can be done whenever we analyze goal-directed behavior, and a statement of the form “In order for agent A to achieve goal B, Aought to do C” exhibits no category error and may be factually verified or refuted.
Of course, it can be argued that this doesn’t really address the problems of a ‘moral’ ought, since the “goal” itself (to be good) becomes another ought. This would amount to deriving an ought from an ought. In other words, the question of “why be good” can become difficult to answer, even if good is well defined.
সূত্র
@ধ্রুব, আপনাদের এত্ত জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অংশগ্রহণ করার মত যোগ্যতা আমার নেই, কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল আপনার জন্য। সবাই যে কারণে আপনার সাথে এরকম ‘বালিশ ফুটা করা আতলামি’ আলোচনা করে যাচ্ছে সেই লেখাটা কখন পোষ্ট করবেন? যে লেখার প্রি-আলোচনার চেহারা এরকম তার আসল এবং পোষ্ট চেহারা না জানি কি হবে? ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে :guru:
@ধ্রুব,
অনুচ্ছেদটি ভাল লেগেছে, আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করার আশা ত্যাগ করতে হবে দেখছি :laugh:
@অপার্থিব,
Normative অর্থে নৈতিকতার কথা বলছি, descriptive অর্থে নয়। কারণ আমার মনে হচ্ছিল ধ্রুব প্রথম থেকেই normative অর্থেই বলছিলেন। ধ্রুব-র is-ought বিষয়ক মন্তব্যেও সেটাই মনে হচ্ছে।
নৈতিকতার ধারণার উদ্ভবের বিবর্তনীয় বিবরণ আপনি দিচ্ছেন তার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছিনা, আর আমি নিজেও কোন পরম নৈতিকতায় বিশ্বাস করিনা। কিন্তু বিবর্তন নিঃসন্দেহে optimum নয় (সেই optimum যে উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতেই সংজ্ঞায়িত হোক না কেন), তাই বিবর্তন-নিরপেক্ষ ভাবেই “অমুক কাজটি নৈতিক কিনা” এই প্রশ্ন করা যায়।
যেমন ধরুন মানুষের কংকাল। কংকাল এই রূপ কেন পেল সেটার বিবর্তনীয় বিবরণ এক জিনিস, আর কোন ধরণের কংকালের ডিজাইন আমাদের হেঁটে বেড়ানোর জন্য optimum, সেটা আরেক জিনিস। দুটো এক নাও হতে পারে, বা প্রশ্ন দুটোও এক প্রশ্ন নয়।
@রৌরব,
এটা অামার মতে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি। বিবর্তনবাদী অনেকেই সেটা মানেন কিনা সে নিয়ে সন্দেহ অাছে। সমস্যা হচ্ছে, অপার্থিবের চিন্তার রেফারেন্স পয়েন্টটাই ধরতে পারছি না।
@ধ্রুব,
দারুণ আলোচনা হচ্ছে। আলোচনায় অংশগ্রহন করছি না আপাতত।
তবে আমি অপার্থিব উনার এই কথাটিকে বিশেষ ভাবে নিবো,
মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতি যদি আমরা আরো বেশি বুঝতে পারি তবে তোমার প্রশ্নের জবাব আরো ভাল ভাবে পাওয়া সম্ভব।
@স্বাধীন,
স্বাধীন ভাই, এখানে একটা গিয়ানজাম লেগে গেছে। অামি বের করতে চাচ্ছি, কোনটা করা উচিত। মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে সাড়া দেয়, কোনটা অনুসৃত হয়, সেটার উপর নিশ্চয়ই ঔচিত্য নির্ভর করে না। বোঝাতে পারলাম?
অামার লেখার বিষয় হল: এমন কোন পরম নৈতিক-মাপকাঠি অাছে কিনা, যেটা বলে দিতে পাের, কোনটা উচিত, যাতে করে অাপনি -অামি সেই মাপকাঠি ফলো করতে পারি।
@ধ্রুব,
দেখি আমি চেষ্টা করি, আমার নিজের চিন্তাটুকু বুঝাতে পারি কিনা। এটা অপার্থিব’দার সাথে মিলতেও পারে নাও মিলতে পারে।
তোমার প্রথম প্রশ্নের জবাব আমার কাছে পরম কিছু নেই। পরম ঈশ্বরও নেই, পরম সত্যও নেই, পরম নৈতিকতাও নেই। তাহলে কি আছে? কিভাবে বুঝবো কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত নয়। কোনটা আসলেই করা উচিত সেটা ব্যক্তি নির্ভর। একেক জনের কাছে একেকটি পরম সত্য। কারোর কাছে ঈশ্বর পরম সত্য, কারো কাছে নয়। তাহলে কোনটি সঠিক? এই প্রশ্নের কোন জবাব হতে পারে না, কারণ যেহেতু পরম সত্য বলে কিছু নেই। যদি পরম কিছু থাকতো তবে তার সাপেক্ষে বলতে পারতে এটা সঠিক, এটা বেঠিক। এই হল পরম নিয়ে আমার অভিমত।
এবার আসি তাহলে আমরা কোনটা মেনে চলবো? ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা যদি বলি তবে আমি যেটা সত্য বলে মানি সেটাই আমি মেনে চলবো। কিন্তু যখন গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের প্রশ্ন আসবে, অর্থাৎ আমি যখন একটি সমাজে চলবো তখন সমাজ হতে (অথবা গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্য হতে) যদি কোন সুবিধে পেতে চাই তবে সেই সমাজের যে সব নর্ম আছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। যদি আমি সমাজের সেই নর্ম মানতে না চাই সমাজ আমাকে বাধা দিতে পারে না, কিন্তু আমিও সমাজের কাছে কোন কিছু দাবী করতে পারি না।
এখন সমাজের এই নর্ম কিভাবে ঠিক হয়? সেটা ঠিক হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতে। এখানেই অপার্থিব’দার গড়ে ব্যাপারটি চলে আসে। অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ যেটা ভাল/মন্দ হিসেবে বিবেচনা করে সেটাই আইন হিসেবে মানুষ মেনে চলে। তাই এই আইন সময়ের সাথে, সমাজের সাথে, রাষ্ট্রভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেটাকে আমরা সংবিধান হিসেবে বলতে পারি। এখন তোমার অন্য প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। তুমি জানতে চেয়েছো বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই এখন ঈশ্বরের বিশ্বাস করে, তার মানে তো সেটা সত্যি নয়। কথা সত্য, কিন্তু আর একশত বছর তুমি দেখবে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে না। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এটা মেনে নিবে তখন সেটা প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবেই নীতি বলো, আর ভালো/মন্দ বলো নির্ধারিত হয়েছে। তাই আমার মতে পরম নৈতিকতা খুঁজতে যাওয়া ভুল হবে। যেটার অস্তিত্ব নেই সেটাকে প্রমান করা অসম্ভব। এটা অস্তিত্বহীন ঈশ্বর প্রমানের মতই হবে।
@স্বাধীন,
রাইট ইউ অার।
অামার মূল বক্তব্য এটুকুই। অাপনি যেমন খুব সহজে উপলব্ধি করলেন, এটা নিয়ে বোঝাপড়ায় অনেকরই সমস্যা হয়। অনেকেই অন্যথা ভাবেন। পৃথিবীর তাবদ্ বড় বড় ক্যাচালের পিছনে কিন্তু এটাই দায়ী!
এখানে অাবার অামার তালগোল পেঁকে গেল। অাপনি কি কোনটা মেনে চলা উচিত সেটা বের করছেন নাকি সমাজে একটা কালে নর্ম কিভাবে তৈরি হয় সেটা বের করছেন? দুটা কি একই ব্যাপার?
অার কোনটা মেনে চলবো, সেটা কিন্তু পরিষ্কার করলেন না। সমাজের নর্মটাই মেনে চলবো নাকি না? সমাজের নর্ম মেনে চলাই উচিত, এটা যদি বলতে চান। তবে কোন সমাজের নর্ম? এখনের? নাকি একশ বছর পরের।
অামার বক্তব্যের অারেকটি অংশ ছিল, পরম নৈতিকতা সৃষ্টিও অসম্ভব। সমাজের নর্ম মেনে চলার এই নৈতিকতাটাও কিন্তু মানা যাচ্ছে না। কেউ বলবে মেনে চলাটাই ভবিষ্যতের জন্যে বেনিফিট। কেউ বলবে পাল্টে দেয়াটাই বেনিফিট। অাবার কোনটা বেনিফিশাল, তার সংজ্ঞও অাপেক্ষিক!
@ধ্রুব,
মনে হয় কিছুটা বুঝতে পারছি তোমার প্রশ্নটি।
তুমি এবার আমার আগের মন্তব্যের মধ্যম প্যারাটি দেখ যেখানে তোমার এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিঃ
এবার আরেকটু বিস্তারিত বলি। আমি কোনটা মেনে চলবো সেটা নির্ভর করবে আপেক্ষিকতার উপর। যেহেতু আগেই স্বীকার করেছি আমরা যে পরম বলে কিছু নেই তাই আমাকে কোন পরম নীতি মানতে হচ্ছে না। এখন কোনটা মানবো সেটা নির্ভর করছে আমি যেই পরিবেশ/সমাজে আছি সেটা কতটা ফ্লেক্সিবল অথবা সে সমাজ আমাকে কতটা স্বাধীনতা দিচ্ছে।
ধরো, তুমি এখন পাশ্চাত্যে যে পরিমান স্বাধীনতা ভোগ করবে একই স্বাধীনতা তুমি বাংলাদেশে পেতে না। সেটা রাষ্ট্রীয় কারণ হতে পারে, কিংবা পারিবারিক সীমাবদ্ধতা, সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা, নানান কারণেই হতে পারে। তাই পাশাচাত্যে যেহেতু তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর তেমন হস্তক্ষেপ আসবে না তুমি চাইলে তোমার নিজস্ব নীতিতেই চলতে পারো। সেটা গড়ের নীতিও হতে পারে অথবা তোমার নীতিও হতে পারে। যেমন অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বলেই যে আমাকেও বিশ্বাস করতে হবে তা তো নয়। অর্থাৎ তোমার স্বাধীনতা রয়েছে তোমার নীতি বেছে নেওয়ার। এই কথাটিই বলেছিলাম এই বাক্যে ঃ
এখন আসে সমাজ অথবা যে কোন গোষ্ঠীবদ্ধ গ্রুপের কথা। ধরো তোমার শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন নীতির সাথে তোমার মিলছে না, বা তুমি ভাবছো সেটা বাহুল্য। অথবা এই ব্লগের কথাই ভাবো। এ ক্ষেত্রে তোমার দুটি অপশন রয়েছে। এক নীতি পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা। কিন্তু নীতি পরিবর্তনের জন্য কিছু নীতি আছে। এগুলো রাখা হয়েছে যেন কেউ ইচ্ছেমত কিছু করার স্বাধীনতা না পায়। আমরা ইতিহাস থেকে এটাই শিখেছি যে কাউকে পরম ক্ষমতা দেওয়া হলে সেটা সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। তাই এগুলোকে এক রকম ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে নিতে পারো। যা হোক, কথা হল যদি তুমি সেই নীতি পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হও তবে কি করবে, হয় তুমি সেই নীতি মেনে চলবে অথবা তুমি গ্রুপ থেকে বের হয়ে যাবে। এখন যেহেতু সমাজ হতে বের হয়ে যাওয়া কষ্টকর তাই তোমাকে সমাজে থাকতে হলে মেজরিটির নীতি মানতে হয়। অনেকেই এক দেশে নিজেকে স্বাধীন না ভাবলে অন্য দেশে মাইগ্রেট করে সে জন্য। যেমন ইরান হতে প্রচুর মানুষ পাশ্চাত্যে মাইগ্রেট করে উন্নতর স্বাধীনতার আশায়।
এই সাথে তোমাকে আরেকটি বিষয় নিয়ে বলি। এই পরম নৈতিকতা বনাম গড় নৈতিকতার বিষয়টী সম্পর্কিত হচ্ছে গণতন্ত্র বনাম অভিভাবকতন্ত্র এই বিতর্কের সাথে। এখন তুমি চিন্তা করে দেখতে পারো সমাজ কি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে চলা উচিত নাকি কতিপয় দার্শনিকদের মতামতে চলা উচিত। তাহলেই তুমি তোমার প্রশ্নের জবাব পাবে। মনে আছে আমার গণতন্ত্র নিয়ে লেখায় এ নিয়ে কিছু আলাপ হয়েছিল। আশা করি এবার আমার বক্তব্য পরিষ্কার হবে। তারপরেও প্রশ্ন থাকলে বলো, জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।
@ধ্রুব,
উপরে মনে হয় এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। সমাজে একটি নর্ম কিভাবে তৈরী হয় সেটা বুঝা জরুরী কারণ তুমি যখন একটি সংবিধান বা নীতিমালা রচনা করবে তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্যে করা হয়। এখন তুমি চিন্তা করে দেখ যে তুমি যদি কোট প্রজেক্ট হাতে নিতে চাও, একটি এলাকায় বিদ্যালয় বা রাস্তা বা হাসপাতাল বানাতে চাও তবে সেটা এমন স্থানে বা এমন ভাবেই করতে হবে যেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কাজে আসে। কখনই মুষ্টিমেয় লোকের জন্য কোন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হবে না।
তবে সংবিধান বা নীতিমালা যেহতু শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য নয়, সবার জন্য তাই এটা এত সরল রৈখিক নয়। অর্থাৎ নীতিমালার মাঝে আবার এমন নীতিও রাখা হয় যেন কারোর ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর পুরোপুরি আঘাত না আসে। তারপরেও সমস্যা রয়ে যায়। আমাকে ধর্ম পালন করতে না দিলে সেটা যেমন ব্যক্তিস্বাধীনতার হস্তক্ষেপ আবার অন্যকে ধর্ম পালন করতে দিলে সেটাও অন্য কারোর জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী মনে হতে পারে। এই সব কনফ্লিক্টিং ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতটাই গ্রহন করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এখন মনে হয় তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছো। দু’টি একই ব্যাপার নয়। সমাজের নর্ম এক জিনিস আর আমি কোনটা মানবো সেটা ভিন্ন জিনিস। আমার নর্মের সাথে সমাজের নর্ম মিলতেও পারে অথবা নাও পারে। তবে কোনটা পালন করবো সেটা নির্ভর করবে সমাজ/গ্রুপ কতটা স্বাধীনতা আমাকে দিচ্ছে।
এখানে আরকেটি বিষয়ের অবতারনা করি। প্রণীজগতের কেউই, এমনকি মানুষও নিঃস্বার্থ পরোপকারী নয়। “গিভ এন্ড টেক” এবং “টিট ফর ট্যাট” হচ্ছে সকল প্রাণীজগতের নীতি। তোমার থেকে যদি আমি কোন উপকার না পাই তবে আমিও তোমার কোন উপকার করবো না। যে নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যের উপকার করে যাবে সে টিকে থাকার সংগ্রামে পিছিয়ে পড়বে। একই কথা প্রযোজ্য গ্রুপের ক্ষেত্রে। গ্রুপ থেকে তুমি যেমন উপকৃত হবে গ্রুপ নিজেও উপকৃত হবে। যদি কেউ কারোর কাছ থেকে কোন বেনিফিট না পায় তবে একে অন্যকে টিকিয়ে রাখবে না। তাই গ্রুপ/সমাজের নীতি তুমি মানবে কি মানবে না সেটাও নির্ভর করছে তোমার সিদ্ধান্তের উপর। তুমি যদি গ্রুপ হতে কোন উপকার আশা না করো তবে তুমি গ্রুপের নীতিকেও কেয়ার করবে না। এভাবেই ব্যাপারগুলো নির্ধারিত হয় বলে আমার অভিমত।
@স্বাধীন,
মানে ঔচিত্যের বিচার ব্যাপকভাবে অাপেক্ষিক। নির্ভর করে ব্যক্তির উপর, কোন সমাজে অাছে, েসটার চরিত্রের উপর, বহু কিছুর উপর। ফলে পরম নৈতিকতা জিনিসটা অাগেই অাউট অফ কন্সিডারেশান।
এখন অাপেক্ষিকতায় অাসি। অামি বের করতে চাচ্ছি, এমন কোন নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব কিনা যেটা সকলেরই খুশি হবার সুযোগ দিবে। এমন হয় সম্ভব, নয়তো অসম্ভব। অসম্ভব হলেও কাজ শেষ হয়ে যায় না। তখন অাসে as best as possible এর। মানে এখানে অপ্টিমাইজেশানের একটা মেজারের প্রশ্ন চলে অাসে। সবাইকে সর্বোচ্চ খুশি করার কোন মেজার ডিফাইন করা সম্ভব কিনা?
অাপনি যেমন স্কুল কলেজ হাসপাতালের কতগুলো কেস স্টাডি দিলেন। এমন জায়গায় বসানো যাতে অধিকাংশ সুবিধা পায়। অাবার কেবল অধিকাংশ দেখলেই চলবে না। নীতিমালাতে এসব ব্যাপারগুলোই অাওতাভুক্ত হতে হবে। এখন ব্যাপারটাকে একটা গাণিতিক সমস্যায় ফেলা যায় কিনা? গাণিতিকভাবে অামাদের গোল (যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠের সুখ একটা ক্যান্ডিডেট গোল, অাবার সংখ্যালঘুর সুখ একটা ক্যান্ডিডেট গোল) এখানে ডিফাইন করা সম্ভব কিনা?
গোল বা অবজেক্টিভ ফাংশান ডিফাইন করা না গেলে, এটা একটা ইম্পসিবল প্রবলেম।
গাণিতিক স্ট্রাকচারটা দেই। অবজেক্টিভ ফাংশান অামাদের প্রিসাইসলি ডিফাইন করতে হবে, তবে সেটা হবে একটা ফাংশান। একটা ক্যান্ডিডেট তন্ত্র (গণতন্ত্র কিংবা হিটলার তন্ত্র) বা নীতিমালা ওতে ইনপুট হিসেবে দেয়া হলে অবজেক্টিভ ফাংশান একটা রিয়েল নাম্বার রিটার্ন করবে। অামাদের উদ্দেশ্য হবে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করা, যেটা অবজেক্টিভ ফাংশান থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন ভ্যালু অাদায় করতে পারে।
এখন এমন কোন অবজেক্টিভ ফাংশান ফাংশান ডিফাইন করা সম্ভব কিনা, যেটা সবাই মেনে নিবে? না হলে এমন কোন অবজেক্টিভ ফাংশান তৈরি করা সম্ভব কিনা যেটা সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মেনে নেবে? এই সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের সেটটা অানবায়াস্ড উপায়ে বের করার পথ অাছে কিনা?
মানে অামি কৃত্রিম নৈতিকতা তৈরির চেষ্টা করছি। উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর না হলে এটা একটা ইম্পসিবল প্রবলেম। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এটা অাসলেই একটা ইম্পসিবল প্রবলেম।
তবে কিছু কিছু অ্যাসাম্পশান তুলে নিলে অাবার সমস্যাটা সমাধানের একটা সম্ভাবনা দেখা যায়। যেমন, অামার গাণিতিক সমস্যায় জনগোষ্ঠীর সদস্যতা অপরিবর্তনীয় ধরা হয়েছে। কিন্তু যদি নাখোশ মানুষের অন্য সিস্টেমে চলে যাবার পথটা বিবেচনায় নেয়া হয়, তাহলে দেখা যাক কি দাঁড়ায়?
এখন ধরা যাক একটা বায়াস্ড অবজেক্টিভ ফাংশান ডিফাইন করলাম, যেটা সংখ্যাগরিষ্ঠের একটা বায়াস্ড সেটের প্রতিটি সদস্যকে সমানভাবে ফেভার করে ও এই অবজেক্টিভ ফাংশানের উপর ওই সেটের সকলে অাস্থাশীল। এখন অাপনি যেমনটা বললেন, ইরান থেকে অনেকে মাইগ্রেট করছে, তেমনি ওই সেটে যারা পড়ল না, তারা এমন দেশে চলে গেল, যেখানের সিস্টেমের অবজেক্টিভ ফাংশানটা তাদের জন্য বেটার, তাহলে তো খারাপ না। ফলে অজস্র ভিন্ন মতের সমাজ বা সিস্টেম থাকাটা কাম্য মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাকে সার্বিকভাবে একটা গাণিতিক ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে অানতে না পারা পর্যন্ত অামি অাস্থাশীল হতে পারছি না। লেখাটা নীতিমালার গাণিতিক ফ্রেমওয়ার্কের সম্ভাব্যতা নিয়েই হতে পারে।
@ধ্রুব,
যদি কনফ্লিক্ট এবং কম্পিটিশান বিদ্যমান থাকে তবে সেরকম নীতিমালা অসম্ভব।
এই মেজার কিন্তু বিবর্তনের মাঝে অথবা প্রকৃতির মাঝেই দেখতে পাই। যেটা হচ্ছে পরষ্পরের সহোযোগিতার মাধ্যমে একে অপরে উপকৃত হওয়া। ধরো সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যা লঘু তাঁদের মধ্যকার বিভেদ দূর না করতে পেরে সহিংসতার আশ্রয় নিল। দু’পক্ষেরই ক্ষতি হল। এভাবে অনেক বছর নিজেদের মধ্যকার লড়াইয়ে কেউই লাভবান হলো না। এখন যদি এখানে তৃতীয় কোন পক্ষ থাকে দেখা যাবে তাঁদের লড়াই সেই পক্ষ লাভবান হচ্ছে। কোনদিন দেখা যাবে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু হিসেবে করে দেখবে যে তারা যদি লড়াই না করে, দু’পক্ষই কিছু সুখ ছাড় দেয় তবে দু’পক্ষই লাভবান হবে, তখন সেটাই অপ্টিমাম সুখ (কম্বাইন্ডলি)। আসামীর সংকটেও একই কথাই বলে।
এই একই নীতি কিন্তু প্রাণীজগতে দেখতে পাই। উপরে অভিজিৎ’দার দেওয়া নিমো ফিশের ক্ষেত্রে যেমন।
গাণিতিক মডেলে তুমি ঠিক কি করতে চাচ্ছো পরিষ্কার নয়। তবে আমি যেটা বুঝি আগে যদি সত্যিকার মডেল বুঝতে পারা যায় তখন সেটার গাণিতিক মডেল ব্যাপার না। আমরা তো সেটাই এখনো বুঝে উঠতে পারিনি ঠিক মত।
@স্বাধীন,
গাণিতিক মডেলের চেষ্টাটা হচ্ছে জিনিসটা অামরা ভালো মত বুঝি কিনা সেটার একটা ভ্যালিডিটি। অর্থাৎ কেউ যদি দাবী করে, তার একটা প্রস্তাবিত মডেল অাছে তবে তার একটা গাণিতিক রিপ্রেজেন্টেশান থাকতেই হবে।
অামি গাণিতিক ফ্রেমওয়ার্কটি অারও সুসংসহত করবার চেষ্টা করব, যেটার ভেতরে একটা মডেল বা তন্ত্র প্রস্তাব করা যায়।
বিপ্লব ভাইয়ের কথাটা ভাববার মত। সবকিছুকে জৈবিক বিবর্তনের ফ্রেমওয়ার্কে ফেলার পক্ষপাতী অামিও না। মানে পরার্থতার জন্যও একটা জিন খুঁজতে অামি যাব না।
তবে বিবর্তনকে কেবল জৈবিক বিবর্তন হিসেবে না দেখে একটা গণনা হিসেবে দেখলে কিন্তু অাবার পরম্পরাগত সবকিছু এই ফ্রেমওয়ার্কে চলে অাসে। সামাজিক অাচার অাচরণ, সংস্কৃতি, ব্যবহার, ধারণা, বিশ্বাস, এসবকিছুকে কন্সেপচুয়াল ইভলু্যশান হিসেবে নেয়া যায়। এর সাথে জৈবিক বিবর্তনের ইন্টারেকশান অবশ্যই অাছে। নৈতিকতা সেই কন্সেপচুয়াল ইভলু্যশানেরই একটা প্রোডাক্ট, এভাবে ভাবা যায়।
অ্যাব্সট্রাক্টের বিবর্তন নিয়ে কি কোথাও অালোচনা হয়েছে?
@ধ্রুব,
আপনাদের দু’জনেরই কোথাও ভুল হচ্ছে। এই প্রবন্ধের বিষয় পরার্থিতার জিন খোঁজা নয়। আসলে পরার্থিতার জিন বলে কিছু নেই। বরং জিনগুলোর আচরণ যদি গোনায় ধরি সেগুলো স্বার্থপর ( ডকিন্সের বলা মেটাফরিক সেন্সে)। অত্যন্ত স্বার্থপরভাবেই নিজের প্রতিলিপ তৈরি করা এবং ছড়ানোর মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে জিনগুলো। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এটাও দেখেছেন যে, এই স্বার্থপর জিনের কর্মকান্ডই ভিত্তি তৈরি করে পরার্থিতা এবং সহযোগিতার। উইলিয়াম হ্যামিলটন, মেয়ার্ড স্মিথ ডকিন্সের গবেষনায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। হেলেনা ক্রনিন এজন্যই বলেছেন – “Among genes all is selfishness, every gene out for its own replication. But from conflict can come forth harmony; the very selfishness of genes can give rise to cooperation. ” শিকারী মাছদের থেকে বাঁচার জন্য ক্লাউন মাছদের সাথে এনিমোনের সহবিবর্তন, হামিং বার্ডের সাথে অর্নিথোপথিলাস ফুলের সহবিবর্তন, এংরাকোয়িড অর্কিডের সাথে আফ্রিকান মথের সহবিবর্তন এগুলোর প্রত্যক্ষ উদাহরণ তো প্রকৃতেই আছে। বলা বাহুল্য, এগুলো কোন পরার্থিতার মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে তৈরি হয়নি, বরং হয়েছে নিজেদের সবচেয়ে ভালভাবে টিকে থাকার নিতান্ত এক স্বার্থপর প্রয়োজনে। এটা ভুলে গেলে চলবে না। নিঃসন্দেহে মানুষের আচরণ অনেক জটিল। কিন্তু তারপরেও তা জীববিজ্ঞানের বাইরে নয়। ধার্মিকদের নৈতিকতা ব্যাখ্যার জন্য আমরা সামাজিক মডেলগুলোর শরণাপন্ন হতে পারি বটে, কিন্তু জৈবিকভাবে অন্য প্রানীতে যেভাবে পরার্থিতার উদ্ভব ঘতেছে, সেই একই উৎস কাজ করছে মানব বিবর্তনেও। আমার প্রবন্ধে মূলতঃ সেই দিকটাই ফোকাস করার চেষ্টা করেছি।
@অভিজিৎ,
গট ইট।
কিছু খটকা…
মানব নৈতিকতার একটা ব্যাখ্যা হিসেবে জিনিসটা ঠিক অাছে, তবে মানব বিবর্তনে নৈতিকতা বা অন্যান্য ব্যাপারের জন্য জৈবিক উৎসের উপর জোর প্রয়োগটা অামার কাছে কেন জানি ভাইটালিজ্ম টাইপ ঠ্যাকে। যেন এই সবকিছুরই উৎস জৈবিক হতে বাধ্য।
অারেকটা যেটা খটকা। এই জিনিসগুলা তো প্রকৃতিতে তাকিয়ে মিল খুঁজে খঁজে একটা ব্যাখ্যাকারী মডেল দাঁড় করানো। এই প্রকল্পগুলোর পরীক্ষণযোগ্যতা কিরূপ? পরীক্ষা পাশের অাগেই একটা বৈজ্ঞানিক মডেল হিসেবে উপস্থাপনটা নিয়ে অামি চিন্তিত। যদিও, এই চর্চা অাপনার অাবিষ্কার তা বলছি না। বিবর্তনীয় মনবিজ্ঞানে তাই সম্ভবত চল।
@ধ্রুব,
মানুষ যদি জীবজগতের অংশ হয়ে থাকে, তবে জৈবিক উৎস খোঁজা অর্থহীন নয়। বরং কেউ যদি বলে পররাথিতার কোন জৈবিক উৎস নেই, তাহলেই বরং আমার কাছে মনে হয় মানুষকে জীবজগতের বাইরে রেখে তার আচরণের একটা ‘স্বর্গীয়’ ব্যাখ্যা হাজির করার প্রয়াস চলছে অবচেতনভাবেই। চিন্তা করে দেখুন, ধর্মবাদী আর থিওলিজিয়ানেরা কিন্তু বহুকাল ধরেই নৈতিকতার ব্যাপারটাকে ঈশ্বরিক প্রলেপ লাগিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। বলা হয়েছে – এগুলোর কোন জৈবিক ব্যাখ্যা নেই। এগুলোর ব্যাখ্যা একমাত্র ঈশ্বর। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা বৈজ্ঞানিক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়নি মোটেই। বরং জৈবিক উৎস তথা বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কীভাবে পরার্থিতা কিংবা সহযোগিতার মতো ব্যাপারগুলো প্রাণীজগতে উদ্ভুত হয়েছে – এটা যখন থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে শুরু করলেন, তখন থেকেই ব্যাপারটা অনেক বিজ্ঞানভিত্তিক হয়ে উঠেছে।
এই ব্যাপারটাই আমি আমার প্রবন্ধটার দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করব। আসলে সত্যি বলতে কি পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু তত্ত্বের সাপেক্ষে একেবারে হাতে কলমে প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি। যেমন আসামী সংকট তথা প্রিজনার্স ডাইলেমার সফল এলগোরিদম হিসেবে টিট ফর ট্যাট উঠে এসেছে। এনাতল র্যাপোর্ট (Anatol Rapoport) নামে এক বিজ্ঞানী একটি প্রতিযোগিতায় এই এলগোরিদম তৈরি করে দেখিয়েছেন যে এটি কাজ করে। পরে প্রতিযোগিতার মূল উদ্যোক্তা রবার্ট এক্সেলর্ড আরেক বিজ্ঞানী হ্যামিলটনের সাথে মিলে সায়েন্স পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন এ নিয়ে – ‘দ্য ইভোলুশন অব কোঅপারেশন’ নামে (Axelrod, Robert; Hamilton, William D, “The Evolution of Cooperation”, Science 211: 1390–96, 1981)। রবার্ট ট্রাইভার্স এর আরেকটি সমরূপ গবেষণায় রেসিপ্রোকাল অলট্রুইজমেরও অনেক উদাহরণ পাওয়া গেছে, এর বিবধ দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা প্রকৃতিতেও। যেমন, ভ্যাম্পায়ার বাদুর নিয়ে জীববিজ্ঞানী গেরাল্ড উইলকিনসন (Gerald Wilkinson)একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন টিট ফর ট্যাট এবং রেসিপ্রোকাল অল্ট্রুইজমের এলগোরিদমগুলো প্রকৃতিতে কাজ করে, এবং এভাবেই পরার্থিতার উদ্ভব ঘটেছে একটা সময়।
দ্বিতীয় পর্বে এ নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
@অভিজিৎ, 🙂
@ধ্রুব,
জৈবিক উৎস কথাটা সঠিক নয়। প্রাকৃতিক উৎস বলাটাই ঠিক হবে। জৈবিক বা অজৈব রসায়নবিদদের সৃষ্টি একটা ক্যাটেগরী যা আলোচনা বা গবেষণার বিভাজনের সুবিধার্থে করা। প্রকৃতি (বা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম) জৈব বা অজৈব এই ভিত্তিতে প্রয়োগ হয় না বা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়্মে জৈব অজৈব এই শ্রেনীবিভাজন নেই। ভাইটালিজম মানে বস্তু বা প্রকৃতির বাইরে সম্পূর্ণ এক কাল্পনিক ও অদৃশ্য শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করে এক ব্যাখ্যার অবভাস দাঁড় করান। বিবর্তনীয় বিজ্ঞানের প্রাকৃতিক উৎসের সন্ধানের চেষ্টা তার ঠিক বিপরীত। সেখানে জানা বস্তু বা প্রকৃতির নিয়মের দ্বারাই সব কিছু বোঝা বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়।
কথাটা হার্ড সাইন্সের ব্যাপারে সঠিক যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পুনরাবৃত্তি সম্ভব। বিশ্বসৃষ্টিতত্বে বা বিবর্তনতত্বে একবার ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার ব্যখ্যা করার চেষ্টা । এখানে পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। এখানে অকামের রেজর অনুসরণ করে সর্বোত্তম প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানই লক্ষ্য। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য গবেষণাগারেই বিবর্তন ঘটিয়ে দেখান সম্ভব হয়েছে। আর মডেল তো পরীক্ষা পাশের আগেই তৈরী করতে হয়। পরীক্ষা পাশের জন্য অনন্ত সময় তো আছেই, যদি না এর মধ্যে মডেলটা ফেল করে যায়। বিজ্ঞানে ফেল করান অনেক সহজ পাশ করানোর চেয়ে। আইনস্টাইনের মহাকর্ষের তত্ব কিন্তু অনেক পরে পরীক্ষা পাশ করেছিল। ওয়াইনবার্গ-সালামের হিগ্স বোসন ভিত্তিক তত্ব তো এখনো ১০০% পাশের অপেক্ষায়। আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায়।
@অপার্থিব,
:yes:
এটা অামার টেকনিক্যাল ভুল। :)। বোঝাতে চেয়েছিলাম, ১) পরীক্ষণযোগ্য হবার অাগে একটা মডেল বৈজ্ঞানিক হতে পারে না। ২) প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশের অাগে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সূত্রের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। এই বিবেচনায় অালোচ্য মডেলটার স্ট্যাটাস কি? অভিজিৎ ভাইয়ের মন্তব্য থেকে অাঁচ করতে পারছি, প্রকল্প পরীক্ষণযোগ্য এবং কিছু প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশও করেছে।
তথাপি, বিজ্ঞানের লেখায় পরীক্ষণযোগ্যতার উপর গুরুত্ব ততটা সর্বদা দেয়া হয় না বা জোর অারোপ করে বলা হয় না সেটার পরীক্ষণযোগ্যতার স্ট্যাটাস কিরূপ।
যদি প্রকল্প পর্যবেক্ষণ দ্বারা যাচাইযোগ্য না হয়, দ্যাট ইজ নট সাইন্স।
বিজ্ঞানের যে সংজ্ঞা অামি বুঝি, তাতে পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয় এমন ক্ষেত্রে অকামের রেজর অনুসরণ করে সর্বোত্তম প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করান কোন ক্রমে বিজ্ঞান নয়। অামি বলছি না, গবেষকরা এই চর্চা করেন না। বিজ্ঞানের সংজ্ঞাও নির্ভেজালভাবে স্থিত নয়। তবে এই অকামের ক্ষুর দিয়ে পুনরাবৃত্তি-অক্ষম বিষয়ের ব্যাখ্যাকে কামিয়ে দেয়াকে অধিবিদ্যা বললে সেটা ফেরানো মুশকিল হবে। বিজ্ঞানের কোন ঘরানার দর্শন সেটা ফেরানোর চেষ্টা করে জানতে পারলে ভালো হতো।
অাপনাকে ধন্যবাদ।
ভাল লাগল। চলুক। :yes: :yes: :yes:
@বিপ্লবঃ আজকের বিভিন্ন ধরণের নৈতিকতা বিবর্তন আসলেই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে পারবেনা।এটা বিবর্তনের আলোচ্যও নয়।তবে নৈতিকতার উদ্ভব কে বিবর্তনের ব্যাখ্যা করতে পারার কথা।
আমার মতে বিবর্তন দিয়ে নৈতিকতার উদ্ভবকে এতটা গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল। এটা ঠিকই যে বিবর্তন থেকে একটা বেসিক টেনেট আমরা পাই কিন্ত মানুষের ব্যাবহারের ওপর জেনেটিক ফেনোটাইপের চেয়ে পরিবেশ এবং সমাজের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী। যেমন দুজন আইডেন্টিক্যাল টুইন এর একজনকে বাংলাদেশ বা ভারতের চোর ডাকাতেদের ফ্যামিলিতে মানুষ করলে আরেকজনকে ইউরোপের রক্ষনশীল পরিবারে মানুষ করলে তাদের নৈতিকতায় বিস্তর পার্থক্য থাকবে। শুধু আইডেন্টিক্যাল টুইন কেন-একজন মানুষ তার ১০,২০,৩০,৪০,৫০ তম বছরে যেভাব সিদ্ধান্ত নেবে একই ব্যাপারে, তা সম্পূর্ন আনকোরিলেড হতে পারে-অনেকটাই নির্ভর করবে সামাজিক অবস্থানের ওপর। যে আগে ধনীছিল পরে গরীব হয়েছে ( বা উলটোটা)-তার ব্যাবহার দুটো অর্থনৈতিক অবস্থানে আকাশ পাতালের পার্থক্য হতে পারে। যে আগে আস্তিক ছিল, এখন নাস্তিক হয়েছে, তার নৈতিকতার মানদন্ড্ও আলাদা হবে।
নৈতিকতার পেছনে সবার একটা নিজস্ব এক্সিওম কাজ করে-এক বা একাধিক হতে পারে। তারপেছনে অর্জিত ভয়ের ( ধার্মিকরা যেমন) বা পার্থিব ভয়ের ( আইন) বিরাট হাত আছে। ছোটবেলাতে বাবা মা কোন টা ঠিক, বেঠিক শেখাচ্ছে, সেটাও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন। রোলমডেলদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ন।
জেনেটিক্স দিয়ে মানুষের ব্যাবহারের কিছু সাধারন ট্রেন্ড পাওয়া সম্ভব-কিন্ত তা আসলেই মানুষের ব্যাবহারের ৫% ব্যাখ্যা করতে পারে কি না সন্দেহ।
@বিপ্লব পাল,
আসলে জেনেটিক্স না বরং আমাদের দেখা উচিৎ বিবর্তনের বিভিন্ন তত্ব দিয়েই। রবার্ট ট্রিভারস হ্যামিল্টনের স্বজাতি-নির্বাচনের উপর ভর করে মাতা-পিতার সাথে সন্তানের দ্বন্দ এবং সহোদরদের মধ্যকার দ্বন্দ নিয়ে আরও দুটি বিবর্তনীয় প্রিন্সিপল ডেভেলপ করেন। যা দিয়ে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন কেন মানুষের ব্যবহারের ভিন্নতা দেখা যায়। এমনকি একই পরিবারে বড় হয়েও কেন দুই ভাইয়ের ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।
এম.আই.টির ফ্রাঙ্ক জে. সালোওয়ে ষোড়শ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দির মোট ৬৫৬৬ জন বিজ্ঞানী এবং ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের উপর ২৬ বছর ধরে গবেষনা করে একটি ডাটাবেজ তৈরী করেন। তার গবেষণার মূল সূরটি ছিলো, কেন একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ভাইবোনদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যে বিশাল পার্থক্য দেখা যায়? এমনকি অনেক সময় আলাদা পরিবারে বড় হওয়া দুজনের থেকেও এই পার্থক্যগুলো অনেক বেশি। তার গবেষণা নিয়ে লেখা বইটার নাম BORN TO REBEL: Birth order, Family Dynamics, and Creative Lives.
উনি বইটিতে বলছেন, “In the history of human development, psychological theories provide proximate-casual explanations of behaviour, analogous to those derived from animal physiology. These theories help us understand how people develop the personality traits that they do, given differing genetic endowments and family histories. Evolutionary psychology deals with different questions: not how family dynamics shape personality, but why they do. It is important to recognize that neither proximate nor ultimate causes alone provide a full acount of behavior. Nor is the story simply the sum of its casual parts. The more a species, such as our own, is capable of life long learning, the more individual behavior needs to be explained as the product of complex interactions between proximate and ultimate causes.” (পৃষ্ঠা:৬৩)
পাঠকদের সুবিধার্থে উইকি থেকে roximate and ultimate cause এর সংজ্ঞা তুলে দিলাম নিচে।
source: http://en.wikipedia.org/wiki/Proximate_and_ultimate_causation
In ethology, the study of animal behavior, causation can be considered in terms of these two mechanisms.
Proximate causation: Explanation of an animal’s behavior based on trigger stimuli and internal mechanisms.
Ultimate causation: Explanation of an animal’s behavior based on evolution. Requires that behavioral traits, like physical ones, are genetically heritable, and then explains behavior using an explanation of why this specific behavioral trait was favored by evolutionary mechanisms such as natural selection.
@হোরাস,
আপাতত জানা যাচ্ছে ব্রেইন খুব প্লাস্টিক এবং কন্ডিশনড করা যায়। তাই একমত না।
:yes: :yes: :yes:
‘স্বার্থপরতা’র বিপরীত হিসেবে ‘পরার্থপরতা’ শব্দটা জানতাম। ‘পরার্থতা’ শব্দটা খুব একটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। ‘পরার্থপরতা’ আর ‘পরার্থতা’ খুব সম্ভবত একই জিনিস বুঝাবে।
@মইনুল রাজু,
অনেক ধন্যবাদ। পরার্থ শব্দটা মনে হচ্ছে আভিধানিকভাবে ঠিক আছে। তবে ‘পরার্থতা’র বদলে ‘পরার্থপরতা’ বা ‘পরার্থপরায়ণতা’ বললে বোধ হয় ঠিক ছিলো। কিংবা পরার্থিতা। ঠিক করে দিব।